এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই

  • তাজা বুলবুলভাজা...
    শ্রী শ্রী উনিজি কথামৃত - সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় ও কণিষ্ক | প্রকাশিত হলো দুই মলাটে বৈদ্যুতিন উনিজি কথামৃত।লিখেছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, এঁকেছেন নবীন শিল্পী কণিষ্ক। শিল্পীর সম্পর্কে বেশি জানা যায়নি, তিনি রাতের অন্ধকারে মেলবক্সে ছবির বান্ডিল ফেলে দিয়ে গেছেন। জানিয়েছেন উনিজির প্রতি অনুগত থাকতে চাইলে মাথা বর্জন করা ভালো, আর অনুগত থাকতে না চাইলে গর্দান যাওয়ার সম্ভাবনা, সুতরাং আগে থেকে মুন্ডু বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়।নামিয়ে নিন, ছড়িয়ে দিন - উনিজি কথামৃত - পিডিএফ সংস্করণ।
    ভক্স পপুলি - যদুবাবু | “In general, a law which has not been voted unanimously involves subjecting men to an opinion which is not their own, or to a decision they believe contrary to their interest. It follows that a very great probability of the truth of this decision is the only reasonable and just grounds according to which one can demand such submission.”        - Marie-Jean-Antoine-Nicolas de Caritat, Marquis de Condorcet (September 17, 1743–March 28, 1794)এই লেখাটা যখন লিখছি, অর্থাৎ এই ২০২৪-এর এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে, আমাদের চারদিকে ভোটের দামামা বেজে গেছে। সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে সমস্তরকম খবরের চ্যানেল ভরে গেছে ভোট-সংক্রান্ত খবরে, হয় দলবদলের অলীক কুনাট্যরঙ্গ, না হলে অপদার্থ রাজনীতি-ব্যাবসায়ীদের তামাশা, অথবা কাদা-ছোঁড়াছুঁড়ির মহড়া। ভোট যত এগিয়ে আসবে, নিউজ়-ফিড ভরে যাবে বিচিত্র-বিবিধ সব “ফলিবেই ফলিবে” গোছের ভবিষ্যদ্বাণীতে, আর সেই নিয়ে নিত্যি তুফান উঠবে চায়ের কাপে আর আড্ডায়-তর্কে।ভোটের ফলের পূর্বাভাস অথবা প্রেডিকশন কিন্তু সেই সমস্ত জটিল ধাঁধার মত—পরীক্ষায় যেসব প্রশ্নের উত্তর মাথা খাটিয়ে হোক কিংবা হল-কালেক্ট করে বা স্রেফ আন্দাজে ঢিল মেরে একবার মিলিয়ে দিতে পারেন, কেউ খুব বেশি মাথা ঘামাবে না ঠিক কেমন করে, কোন মেথডে মিলিয়েছেন। আমাদের ভাষায়, ইন্টারপ্রিটেবিলিটির (“কী করে?”) চাইতে অ্যাকিউরেসির (“কতটা মিলেছে”) দর ও কদর অনেক বেশি। আবার এও ঠিক, যে এই প্রতিযোগিতার পুরস্কার-তিরস্কার দুইই একটু বেশির দিকে। মিলিয়ে দিতে পারলে রাতারাতি সেলিব্রিটি, সবাই এসে থানে গড় করবে—যেমনটা হয়েছে বাবু নেট সিলভারের বেলায়—আর ফস্কে গেলে পাড়ার লোকে এসে বলে যাবে ‘সব ঢপ!’ সেই সঙ্গে, শুধু আপনার না, আপনার গোটা ফিল্ডের পাৎলুন ধরে টানামানি ব্যাপার।সে যাই হোক, আপনাদের যদুবাবু সেফোলজিস্ট নন, রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ পোলিটিক্যাল পানডিট (পন্ডিত) – সেও নন। তবে নেট সিলভারের নামে ধন্যধন্য হয়েছিল যে বছর, যদুবাবুও সেই সময় কিঞ্চিৎ গৌরবে বহুবচ্চন হননি এ কথা বললে ডাহা মিথ্যে বলা হবে। তবে, আজ সে সব না। আজকে প্রেডিকশনের ধারকাছ দিয়েও যাবো না আমরা। বরং আমরা উত্তর খুঁজবো আরও গভীর, কিন্তু আপাতদৃষ্টিতে অতিসাধারণ একটি প্রশ্নের – গণতন্ত্র যে নির্বাচনের ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে, সেই জনমত কি সবসময়েই অভ্রান্ত? Is the vox populi always correct? সহজ করে বললে, একদল মানুষ অর্থাৎ ভোটদাতা কি সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে সবসময়েই ঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেন? আরেকভাবে বললে, যে মেজরিটি ভোটিং-এর উপর আমাদের গণতান্ত্রিক কাঠামোটিই দাঁড়িয়ে, সেই মেজরিটি কি সবসময়েই একটি অবজেক্টিভ (অর্থাৎ নৈর্ব্যক্তিক) সত্যতে পৌঁছুতে পারে? যদি পারে, তাহলে কখন পারে? আর যদি না পারে, তাহলে ঠিক কেমন ব্যাপার হয় সেটা? সামান্য এদিক-ওদিক দিয়ে কান ঘেঁষে না একেবারে বিচ্ছিরিভাবে ভুল? (এখানে ধরে নেওয়াই হচ্ছে যে একটি অবজেক্টিভ (অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ বা নৈর্ব্যক্তিক) সত্যি আছে, অথবা, নির্বাচনের দিক থেকে ভাবলে সবার জন্যই (তর্কাতীতভাবে) মঙ্গলদায়ক এমন নীতি আছে।এই যে সকলে মিলে ঠিক উত্তরে বা ঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছনোর ফেনোমেনন বা ঘটনা, এর-ই পোশাকি নাম “উইজ়ডম অফ ক্রাউড”, বাংলায় “সমষ্টিগত প্রজ্ঞা”। দর্শনে বা বিজ্ঞানের ইতিহাসে উইজ়ডম অফ ক্রাউডকে ব্যাখ্যা করার অথবা সংজ্ঞায় বা সূত্রে ধরার চেষ্টা বহুদিনের। আরও বহু জিনিসের মতোই, এর-ও সুতো ধরে টানতে টানতে পৌঁছে যাই সেই প্রাচীনকালের দার্শনিক অ্যারিস্টোটলের কাছে। ইনফর্মেশন এগ্রিগেশনের, বা তথ্য একত্র করার উপযোগিতার কথা সেই যুগে যারা ভাবতেন, তাঁদের মধ্যে সম্ভবত উনিই প্রথম। তবে, রাশিবিজ্ঞানের ছাত্রের কাছে “উইজ়ডম অফ ক্রাউডের” অতিপরিচিত গল্প অবশ্যই স্যার ফ্রান্সিস গ্যালটনের সেই বিখ্যাত এক্সপেরিমেন্ট, যেটি ছাপা হয়েছিল নেচার পত্রিকার মার্চ ১৯৪৯ সালের একটি নিবন্ধে, শিরোনাম “ভক্স পপুলি”। কীরকম ছিল সেই এক্সপেরিমেন্ট? গ্যালটন বর্ণনা দিয়েছেন প্লাইমাউথের একটি মেলার। সেখানে গেলে দেখা যেত একটি হৃষ্টপুষ্ট দুর্ভাগা ষাঁড় (ফ্যাটেনড অক্স) দাঁড়িয়ে আছে মেলার ঠিক মধ্যিখানে। দাঁড়িয়ে থাকার উদ্দেশ্য দর্শকদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা – এই ষাঁড়টিকে কেটেকুটে পরিষ্কার করার পর সেই মাংসের ওজন কত হবে আন্দাজ করার। প্রতিযোগিতার প্রবেশমূল্য ধার্য করা হল ছয় পেনি, আর সবথেকে কাছাকাছি উত্তরের জন্য একটি পুরস্কার। গ্যালটন লিখছেন, ঐ ছয় পেনি মূল্যের উদ্দেশ্য—যাতে কেউ ইয়ার্কি মেরে ভুলভাল আন্দাজ না করেন (‘prevent from practical joking’), আর পুরস্কার পাওয়ার আশায় যারা আন্দাজ করছেন, তাঁরাও যথাসম্ভব সেরা আন্দাজ-ই করবেন (‘put the best bet’)। আর লিখেছেন, প্রতিযোগীদের বেশিরভাগ হয় চাষি, না হলে পশুপালক বা কসাই – কাজেই একেবারেই অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়ার মত ব্যাপার নয়। ফল কী হল? গ্যালটনের পেপারে পাই, সেইদিনের ৮০০খানা উত্তরের মধ্যে ১৩টি অসম্পূর্ণ উত্তর বাদ দিয়ে যা পড়ে থাকে, তার মধ্যমা (মিডিয়ান) নিলে দাঁড়ায় ১২০৮ পাউন্ড, আসল ওজন—১১৯৭ পাউণ্ডের—এক শতাংশের মধ্যেই, আর গড় (অর্থাৎ মিন) নিলে উত্তর একেবারেই মিলে যাচ্ছে খাপে-খাপ, যাকে বলে নিখুঁত লক্ষ্যভেদ [Wallis, 2014]। উপসংহারে গ্যালটন মন্তব্য করছেন, “This result is, I think, more creditable to the trustworthiness of a democratic judgment than might have been expected.” …শুধু আন্দাজ-মেলানো বা খেলা নয়, সমষ্টিগত প্রজ্ঞার বিভিন্ন ও বিচিত্র উদাহরণ কিন্তু দেখা যায় আমাদের প্রায় সমস্ত উদ্যোগেই, যেখানেই সিদ্ধান্ত নেওয়া (ডিসিশন-মেকিং) আর কিঞ্চিৎ অনিশ্চয়তা (আনসার্টনটি) মিশে আছে এমন সব ক্ষেত্রেই। যদি সত্য ধ্রুবক হয়, আর সমস্ত ভ্রান্তি যদ্দৃচ্ছ, অর্থাৎ এক-একটি ভুল এক-একদিকে টানছে (অর্থাৎ এররগুলো র‍্যান্ডম, সিস্টেমিক নয়), তাহলে গড় নিলে সেই সব ভুলগুলি কাটাকুটি করে ফলাফলের খুঁতশূন্যতা বা অ্যাকিউরেসি বাড়তে বাধ্য। এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনার জন্য পাঠকদের “The Wisdom of the Crowds” [Surowiecki, 2005] বইটি সুপারিশ করে যাই।কিন্তু আজকের গল্প আরও পুরোনো – এরও প্রায় দেড়শো বছর আগের ফ্রান্স যার পটভূমি। ইতিহাস বলে উইজ়ডম অফ ক্রাউডের প্রথম যথাযথ অঙ্কের সূত্র এসেছিল সেই ‘এজ অফ এনলাইটেনমেন্টের’ সময়, ফরাসি বিপ্লবের ঢেউ আছড়ে পড়ার অব্যবহিত আগে। সেই গল্পের নায়ক কনডরসে, পুরো নাম Marie Jean Antoine Nicolas de Caritat, Marquis de Condorcet! কনডরসে-কে বলা হয় “দি লাস্ট অফ দ্য ফিলোজ়ফস”, সেই “আলোকিত যুগের শেষ সাক্ষী” – ফরাসী বিপ্লবের ইতিহাসের একজন অতিমানবিক এবং অবশ্যই ট্র্যাজিক হিরো। তার গপ্পো করতে গেলে গোটা একটা বই-ই লিখে ফেলা যায়, তবু ছোট্ট করে বলি। কনডরসে মানবাধিকার ও সাম্যবাদে বিশ্বাস করতেন – সাম্যবাদ শুধু সব বর্ণের মধ্যেই নয়, সমস্ত অর্থনৈতিক শ্রেণির, এবং পুরুষ ও নারীর মধ্যেও। স্বল্প জীবনকালেই তিনি ওকালতি করেছিলেন শিক্ষাগত সংস্কার, প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার, ঔপনিবেশিক দাসত্বের বিলুপ্তি এবং নারীর সমানাধিকার, বিশেষ করে সব জাতির সমতার জন্য এবং নারীদের ভোটাধিকার (উইমেন্স’ সাফ্রেজ) প্রশ্নের। এবং এই শেষতম প্রশ্নে, কনডরসে সেই আলোকিত যুগেও যেন উজ্জ্বল ব্যতিক্রম [Landes, 2009]।  শেষ জীবনে, সেই কুখ্যাত রেইন অফ টেররের রোবস্পিয়েরের ভয়ে আত্মগোপন করা অবস্থাতেও তিনি লিখে চলেছেন তার সেরা কাজ Esquisse — লিখছেন সমাজের অগ্রগতির (“উন্নয়ন” বা “বিকাশ” আজকাল ব্যাঙ্গাত্মক শোনায়) কাঠামো, যার মূল স্তম্ভ মানুষের অসীম পরিপূর্ণতা (indefinite perfectibility of humankind and society)। কনডরসে-র আরও এক অন্যতম অবদান, “সোশ্যাল অ্যারিথমেটিক” – আজকে দাঁড়িয়ে মনে হয় সমাজের বিভিন্ন জটিল সমস্যায়, আর্থিক পরিকল্পনা থেকে জুরি-র সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অথবা জনস্বাস্থ্য, সর্বব্যাপী রাশিবিজ্ঞান বা সম্ভাব্যতা-তত্ত্বের প্রয়োগের এক্কেবারে শুরুর দিকে চিন্তক ও দার্শনিক উনিই।উইজ়ডম অফ ক্রাউডের গল্পে ফিরে আসি আবার। গ্যালটনের ১৬৪ বছর আগে, এই কনডরসে-ই, প্রথম অঙ্কের সূত্রে বেঁধেছিলেন সংখ্যাগরিষ্ঠের ব্যবহার – সমষ্টিগত প্রজ্ঞা অথবা মূর্খামি, দুইই। সেই বিখ্যাত উপপাদ্যটিই আজকে পরিচিত কনডরসে জুরি থিওরেম নামে, সংক্ষেপে CJT [Condorcet, 1785]। সেই উপপাদ্যটিই এখানে ছোট্ট করে, এবং সহজতম ভার্সনটিই, লেখার চেষ্টা করি। এই নিয়েও অবশ্য আস্ত বই আছে - Goodin and Spiekermann [2018], যদি পাঠকদের কারুর বিশদে পড়তে ইচ্ছে করে।আবারও, ধরে নেওয়া যাক একটি অবজেক্টিভ অর্থাৎ বস্তুনিষ্ঠ সত্যি বা সেরা বিকল্প আছে, সেটা কী—না জানলেও চলবে, কিন্তু সে আছে, সেইটির জন্যেই ভোটাভুটি হচ্ছে। আর ধরা যাক আমাদের n-সংখ্যক ভোটার আছে, n বিজোড় সংখ্যা (অর্থাৎ “টাই” অসম্ভব)। প্রত্যেক ভোটারের ঠিক বিকল্পে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা ধরা যাক pc, এবং সবার ভোট পড়ে গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে “মেজরিটি রুল” অনুযায়ী, অর্থাৎ যে সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, সেটিই আমাদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। কনডরসে-র উপপাদ্যে এও ধরে নেওয়া হয়, যে, প্রত্যেক ভোটার ‘স্বতন্ত্র’, ‘দক্ষ’ এবং ‘আন্তরিক’। ‘স্বতন্ত্র’ – অর্থাৎ যে যার নিজের ভোট দিচ্ছেন বা একজনের পছন্দ আরেকজনকে প্রভাবিত করে না। ‘দক্ষ’ – অর্থাৎ, প্রত্যেকের ঠিক বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকের থেকে বেশি, যত সামান্যই হোক, এক্কেবারে র‍্যান্ডম গ্যেস অর্থাৎ ইকির-মিকির-চামচিকির করে আন্দাজে যা-ইচ্ছে-তাই একটা বোতাম টিপে দেওয়ার থেকে তার প্রজ্ঞা বা দক্ষতা একচুল হলেও বেশি। আর শেষ অ্যাজ়াম্পশনের কথা আগেও লিখেছি, ভোটার-রা ‘আন্তরিক’, সিরিয়াস-ও বলা যায়—কেউ ইচ্ছে করে ভুলভাল ভোট দিয়ে নষ্ট করছেন না।কনডরসে-র উপপাদ্য বলে, এই সমস্ত অ্যাজ়াম্পশন সত্যি হলে, দুটো জিনিস হবেই – প্রথমত, মেজরিটি ভোটিং-এর মাধ্যমে ঠিক বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সম্ভাব্যতা যেকোনো একজন ভোটারের ঐ এক-ই সম্ভাব্যতার থেকে বেশি হবে, আর যত ভোটারের সংখ্যা বাড়বে, ততই ঐ ঠিক উত্তরে পৌঁছনোর সম্ভাব্যতা ১-এর কাছাকাছি (অর্থাৎ ১০০%-এর কাছাকাছি) পৌঁছবে। সোজা বাংলায়, প্রচুর প্রচুর লোকে ভোট দিলে একেবারে ঠিক উত্তরে বা সেরা বিকল্পে পৌঁছনোর গ্যারান্টি দিচ্ছে CJT!অঙ্কের ফর্মুলা এই নিবন্ধে না দিলেও চলে, এবং ইচ্ছে করলেই এই সূত্রটি সোজা টপকে পরের প্যারায় লাফিয়ে চলে যেতেই পারেন, তবে এত সুন্দর ফর্মুলা, যে না দিয়ে থাকতে পারছি না। CJT বলছে, যদি মেজরিটি ভোটিং-এর সিদ্ধান্ত “ঠিক” হওয়ার সম্ভাব্যতা হয় Pn আর এক-একজন ভোটারের “ঠিক” ভোট দেওয়ার সম্ভাব্যতা হয় pc, তাহলে অল্প অঙ্ক করলেই যে সূত্রটি পাওয়া যায় সেটা এইরকম: অর্থাৎ, CJT বলছে pc >1/2 হলে, অর্থাৎ দক্ষ ভোটার হলেই,১) Pn+2 > Pn (মানে একজনের থেকে তিনজনের গড় নিলে ঠিক উত্তরে পৌঁছনোর সম্ভাবনা বেশি) আর২) Pn → 1 as n → ∞  (মানে যত বেশি দক্ষ ভোটার ভোট দেবেন, তত ১-এর দিকে ক্রমাগত এগিয়ে যাব, নিচের ছবির উপরের ভাগে যেমন দেখা যাচ্ছে।) বলাই বাহুল্য, যে এইটি একটু থেঁতো করে লেখা। এই উপপাদ্য একটু এদিক-ওদিক করলেও টেঁকে, যেমন সবার ঠিক উত্তর দেওয়ার সম্ভাবনা সমান নয়, না হলেও চলে, প্রত্যেকের সম্ভাবনা “আধা সে জ্যায়াদা” হলেই কেল্লা ফতেহ। আরো কিছু খোল ও নলচে পাল্টানো যায়, তবে কিনা, সে রাস্তায় আমরা আজকে যাবো না।এই আশ্চর্য সুন্দর অথচ সহজ আবিষ্কারটি কিন্তু বহুদিন হারিয়ে গেছিল ইতিহাসের গর্ভে। তাকে খুঁজে পাওয়া যায় দীর্ঘ সময় পরে, ডানকান ব্ল্যাক ও অন্যান্যদের ১৯৫৮ সালের একটি গবেষণাপত্রে। শুধু জুরি থিওরেম-ই নয়, কনডরসে-র বিখ্যাত ভোটিং প্যারাডক্সটিও। সেটা আবার আরেক আশ্চর্য জিনিস – ধরা যাক তিনটে পার্টি আছে, ক, খ আর গ। তাহলে, মেজরিটি ভোটিং-এর ফলে এমন হতেই পারে, যে মানুষ ক-র থেকে বেশি পছন্দ করে খ-কে, আবার খয়ের থেকে বেশি গ-কে, অর্থাৎ গ > খ, এবং খ > ক, কিন্তু অঙ্কের মত এর মানেই গ > ক ভোট পাবে তার গ্রান্টি নেই, সবাই ভোট দেওয়ার পর হয়তো দেখা গেল ক, গ-কে হারিয়ে দিয়েছে। খটোমটো করে বললে, ব্যক্তিবিশেষের পছন্দ চক্রাকার নয়।এই যেমন নিচের টেবিলটি দেখুন, আপনি যদি বলেন “গ”-ই সেরা, তক্ষুণি রাম আর শ্যাম বলবে – কেন, আমরা তো “গ”-এর থেকে “খ”-কে বেশি ভালোবাসি। আবার যেই বললেন – ঠিক আছে, তাহলে “খ”-কে জয়ী ঘোষণা করে দাও, তখন রাম আর মধু বলবে – সে কী! আমাদের চোখে তো “ক” অবশ্যই “খ”-এর থেকে ভালো। তাহলে কি “ক”-ই প্রধান-সেবক? নাঃ, শ্যাম আর মধু বলছে তাদের চোখে “গ”>”ক”! এ তো মহা মুশকিল! (উপরের টেবিলে যদু কেন মিসিং সে প্রশ্ন প্লিজ করবেন না।)এই ধাঁধার জট ছাড়াতেও আরেকটা গোটা লেখা দরকার, তবে কিনা, এই ছোট্ট ধাঁধার মধ্যেই লুকিয়ে আছে নোবেলজয়ী অ্যারো’জ় ইম্পসিবিলিটি থিওরেমের মূল সুর। যার মোদ্দা কথা – যে একদম সুষ্ঠুতম (ফেয়ারেস্ট) ভোটাভুটি হলেও এতোল-বেতোল লোকে জিতে যেতে পারে, মানে যাকে বলে ডেমোক্রেসির ফুটুরে একাধিক ডুমাডুম, অবশ্যই কিছু কিছু শর্ত সাপেক্ষে।আবার লাইনে ফিরে আসি। এই যে উইজ়ডম অফ ক্রাউডের গপ্পো করে যাচ্ছি, এর প্রভাব বলুন বা প্রয়োগ – তা কিন্তু শুদ্ধু ভোটাভুটির ফলেই নয়, আরও অজস্র সহস্রবিধ চরিতার্থতায়। যেমন, আমাদের এই মেশিন লার্নিং-এর লাইনের আনসাম্বল লার্নার, উদাহরণ র‍্যান্ডম ফরেস্ট, যার আসল কথা এই, যে অনেকগুলো মডেলের প্রেডিকশন নিয়ে গড় করলে অ্যাকিউরেসি হু-হু করে বেড়ে যায়, যদি সেই মডেলগুলোর প্রত্যেকে মোটামুটি কিছুটা স্বতন্ত্র (“কিছুটা” মানে আমাদের লবজ়ে একেবারে ইন্ডিপেন্ডেন্ট না হলেও ডি-কোরিলেটেড, হুবহু টুকলি নয়), আর ‘দক্ষ’ হয় (প্রত্যেকেটা মডেল-ই আন্দাজে ঢিল মারার থেকে ভালো।)আরো একটা অঙ্কের ফর্মুলা দিয়ে যাই, এ-ও স্বচ্ছন্দে রাস্তায় জমে থাকা জলের মত ডিঙিয়ে যেতে পারেন, ক্ষতি নেই। এটা রোমান ভার্শিনিনের বইয়ের অঙ্ক। (রাশিবিজ্ঞানের ছাত্র হলে প্রমাণ করার চেষ্টা করতেই পারো, দুই লাইনের প্রুফ।)Consider a randomized algorithm for decision-making (e.g., determining if a number is prime) that gives correct answers with probability 1/2 + δ, where δ > 0 (i.e., assuming ‘competence’). By running the algorithm n times and taking the majority vote, the probability of obtaining the correct answer would be at least 1 − ε for any ε > 0, as long as, এ তো গেল সব ভালো ভালো কথা, “আমরা চলব আপন মতে, শেষে মিলব তাঁরি পথে” বলে কোরাসে গান গাওয়ার মত জায়গায় পৌঁছে গেছি প্রায়। কিন্তু তাহলে এই যে চাদ্দিকে বিভিন্ন সব অদ্ভুত ঘটনা দেখি – এই যেমন ব্রেক্সিট দেখলাম, ট্রাম্প-ও দেখলাম, আর আমাগো দ্যাশে তো আর কথাই নেই। এরা তো মেজরিটির-ই পছন্দ, তাহলে কোথায় গেলো সেই উইজ়ডম? এই যদি সেই বেড়াল, তবে মাংস কই? আর এই যদি সেই মাংস, তবে বেড়াল কই? তাহলে কি ঐ কনডরসে-র জুরি থিওরেম বাস্তব জগতে আর খাটে না?এবার তাহলে আরেকবার ঝালিয়ে নেওয়া যাক কনডরসে-র উপপাদ্যের অ্যাজাম্পশনগুলো। ভোটার-দের হতে হবে “স্বতন্ত্র”, “দক্ষ”, এবং “আন্তরিক”। এর সবকটিই বিভিন্ন গবেষকের, বিভিন্ন মহলের প্রশ্নের মুখে পড়েছে বারংবার, যাদের কেউ-কেউ সত্যিই মনে করেন, যে এগুলো একসাথে সত্যি হওয়া প্রায় সোনার পাথরবাটির মত ব্যাপার।এই যেমন ধরুন “দক্ষতা”! যদি সত্যিই এমন হয়, যে বেশির ভাগ লোকের-ই পছন্দ ভুল বিকল্পটিকে, অর্থাৎ অঙ্কের ফর্মুলায় ঐ pc < 1/2  হয়ে যায়? উপরের ছবিটির নিচের অর্ধেক দেখুন এইবার। হুহু করে কেমন গ্রাফ শূন্যের দিকে ছুটছে? অস্যার্থ, “ইনডিভিজুয়াল কম্পিটেন্স” অর্ধেকের কম হলে যত ভোটার বাড়বে তত বিপর্যয়, তত ভুল দিকে যাওয়ার রাস্তা মসৃণতর, সেইরকম কেসে শ্রেষ্ঠ জুরির সাইজ় মাত্র ১!আর, “স্বাতন্ত্র্য”? ঐটিকে পলিটিক্যাল সায়েন্টিস্ট ও অন্যান্য সমাজবিজ্ঞানীরা আক্রমণ করেছেন মুহুর্মুহু। তাদের বক্তব্য, যদি সবার-ই এক-ই দিকে ‘সিস্টেম্যাটিক বায়াস’ থাকে, অথবা সবার কানে এক-ই প্রোপাগান্ডা পৌঁছয়? অথবা, সব ভোটারের খবরের সবটুকু অধিকার করে নেয় এক-ই উৎস থেকে আসা ফেক নিউজ বা মিসইনফর্মেশন? যদি সব্বার মধ্যেই এক-ই দিকে ধাবমান পক্ষপাত, একদেশদর্শিতা, এক-ই অন্ধবিশ্বাস, কুসংস্কার? সংখ্যাগরিষ্ঠর মধ্যে বিষক্রিয়ার মতই যদি ছড়িয়ে পড়ে এক-ই বিদ্বেষ? তারা কি সকলে, প্রত্যেকে একা, না পুরোটাই কোনো একটা মতবাদের একটিই অঙ্গমাত্র? এ ভয় কনডরসে-রও ছিল, তিনি লিখেছিলেন গণতন্ত্রের রোগ এই, যে ‘masses suffer from great ignorance with many prejudices’! আজ থেকে আড়াইশো বছর পরেও সে কথা অশ্লীল রকমের সত্যি বলে মনে হয়। তবুও, সেই ‘শেষ সত্য’ নয়!আগেই লিখেছি, আবার-ও মনে করাই। কনডরসে-র জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ Esquisse যখন লিখছেন, তখন তিনি শাসকের চোখে দেশদ্রোহী। আত্মগোপন করে আছেন পরিবারের থেকে বহু দূরে কোথাও, মাথার উপর সাক্ষাৎ গিলোটিন। ভেবে আশ্চর্য লাগে, যে সেই অকল্পনীয় অবস্থায় নিশ্চিত মৃত্যুর অপেক্ষায় বসেও তিনি বলে যাচ্ছেন মানব সভ্যতার সামনে একটিই রাস্তা, সে রাস্তায় সাময়িক বাধাবিঘ্ন থাকলেও রাস্তাটার মুখ সোজা উপরের দিকে, যার শেষে আল্টিমেট পারফেকশন, অন্তিম পূর্ণতা, সে যেন এক ‘অন্তহীন নক্ষত্রের আলো’। এবং সেই শেষ সোপানে পৌঁছলে দেখা যাবে সেই বিশ্বে কোনো অসাম্য নেই, দেশে-দেশে, জাতিতে-জাতিতে মারামারি নেই, কারণ সেই সব-ই তো আসলে সভ্যতার প্রগতির পরিপন্থী! এই আকালেও তাই, আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়, ‘এই পথে আলো জ্বেলে—এ-পথেই পৃথিবীর ক্রমমুক্তি হবে’।১৭৯৪ সালের ২৯শে মার্চ, ঠিক আজ থেকে ২৩০ বছর আগে, কনডরসের মৃত্যু হয় কারারুদ্ধ অবস্থায়, মৃত্যুর কারণ আজও অজানা, কেউ বলেন আত্মহত্যা, কেউ রাজনৈতিক খুন।এই লেখাটার আর কোথাও যাওয়ার নেই আপাতত, অতএব এখানেই ইতি টানছি। শেষ করবো কনডরসে-র একটি অসামান্য উক্তি দিয়ে, এই লেখকের ঘিঞ্জি আপিসের ঘিঞ্জি বোর্ডের এক কোণে যেটি জ্বলজ্বল করে অজস্র আঁকিবুকি আর ভুল থিওরেমের মাঝে। অন্ধকার ও ক্লান্ত রাত্রে নির্জন হাইওয়ে ধরে একলা বাড়ি ফেরার রাস্তায় বহুদূর দিগন্তের জনপদের টিমটিমে আলোর মত সে যেন আমাকে পথ দেখায়।“The truth belongs to those who seek it, not to those who claim to own it.”সূত্রঃDuncan Black et al. The theory of committees and elections. 1958.Marie Jean Antoine Nicolas De Marquis De Caritat Condorcet. Essai sur l’application de l’analyse `a la probabilit ́e des d ́ecisions rendues `a la pluralit ́e des voix. 1785.Francis Galton. Vox populi (1907) nature, n. 1949, vol. 75, pp. 450-451 (traduzione di romolo giovanni capuano©). Nature, 75:450–451, 1949.Robert E Goodin and Kai Spiekermann. An epistemic theory of democracy. Oxford University Press, 2018.Scott Hill and Renaud-Philippe Garner. Virtue signaling and the Condorcet jury theorem. Synthese, 199(5):14821–14841, 2021.Joan Landes. The history of feminism: Marie-jean-antoine-nicolas de caritat, marquis de condorcet. 2009.James Surowiecki. The wisdom of crowds. Anchor, 2005.Roman Vershynin. High-dimensional probability: An introduction with applications in data science, volume 47. Cambridge University Press, 2018.Kenneth F Wallis. Revisiting Francis Galton’s forecasting competition. Statistical Science, pages 420–424, 2014.
    গালুডি - নরেশ জানা | ছবি: রমিত চট্টোপাধ্যায়গালুডিএই সব ভাবতে ভাবতেই কখন যেন ১৮ নম্বর জাতীয় সড়কের ওপর মহুলিয়া বুকে গেছিলাম আমরা। সন্ধ্যা পৌনে সাতটা। গোটা এলাকা নিশ্ছিদ্র অন্ধকারে ঢেকে রয়েছে। ঝম ঝম করে বৃষ্টি পড়ছে, জাতীয় সড়কের আলো গুলো অবধি জ্বলছে না। বুকটা ধক করে উঠল। আজকের মত ঘোরা শেষ। হলদিয়ায় সকাল ন'টায় গাড়িতে চেপছিলাম, প্রায় দশ ঘন্টার জার্নি। মাঝে সব মিলিয়ে হয়ত ঘন্টা দুয়েক গাড়ির বাইরে ছিলাম আমরা। শরীরের কলকব্জা নড়ে যেন ঝনঝন করছে, এই সময় হোটেলের কথা মনে পড়ল আর মনে পড়তেই বুকটা ধক করে উঠল। পাওয়ার আছে তো! ভোর ৫টায় ফোন করেছিলেন দেব কুমার সোনি, আমাদের গালুডি হোটেলের ম্যানেজার, স্যার আপনরা কী আসবেন? কেন? প্রশ্ন করেছিলাম। গত দুদিন ধরে প্রচন্ড ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে স্যার, কাল সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। আমাদের ডিজি আছে কিন্তু চালাতে সমস্যা হবে স্যার। যদি দু'একদিন পিছিয়ে দেন। পেছানোর কোনও প্রশ্নই ছিলনা। এমনিতেই আমার ভুলেই বাংরিপোষি ট্যুর ক্যানসেল হয়েছে । এই কুড়ি একুশ আমাদের বাংরিপোষি প্রোগ্রাম ঠিক হয়েছিল। সঙ্গে থাকা খুদে দুটোর স্কুলের ছুটির কথা ভেবেই। কিন্তু আমি হোটেল বুক করে বসলাম উনিশ কুড়ি। ভুল যখন ধরা পড়ল তখন আর কিছুই করার নেই, ওই দিন হোটেলে আর রুম পাওয়া গেলনা। বুকিংয়ের টাকাও ফেরত হওয়ার নয় তবে অন্য কোনোও সময় গেলে টাকাটা আ্যডজাস্ট করে দেবে ওরা। ওই টাকা ভুলে যাব এমন ক্ষমতা নেই সুতরাং ওই টাকা আ্যডজাস্ট করার জন্যই এবারের মত বাংরিপোষি স্থগিত রাখা হল। গত দু 'বছর বাচ্চারা কোথাও যেতে পারেনি, বাংরিপোষি প্রোগ্রাম ক্যানসেল হতেই মুষড়ে পড়েছিল বেচারারা তাই এই প্রোগ্রামটা সাজিয়েছিলাম। এখন কোনোও অবস্থাতেই এই প্রোগ্রাম ক্যানসেল করতে পারবনা। সোনি কে বললাম, ফ্যান চলবে তো? সোনি বললেন, 'বে-সক্'! ঝাড়খন্ডের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গও তুলকালাম হয়ে চলেছে। আমি বাকিদের কাছেও বিষয়টা চেপে গেলাম। শতদলের শ্যালিকা রুষতির স্বামী শুভাশিষও বললেন, দুনিয়া রসাতলে গেলেও বেড়াতে যাবই। সাহস পেয়ে গেলাম! কিন্তু হোটেলে যাওয়ার পথে আতংকটা চেপে বসল। যদি হোটেলেও পাওয়ার না থাকে খুবই সমস্যা হয়ে যাবে। কারন প্রচন্ড গরম অনুভূত হচ্ছে, প্যাচপ্যাচে গরম, ফ্যানে এই গরম কাটার নয়! হোটেলের গেটে গিয়ে যখন গাড়ি থামল তখন ঝেড়ে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সোনি নিজেই এগিয়ে এলেন অভ্যর্থনা করতে। অমায়িক মানুষ। একেবারে নতুন হোটেল। ঝাঁ চকচকে রুম গুলো। মনে হল আমরাই প্রথম উদ্বোধন করলাম। এই অভিনন্দন অবশ্য পাওয়ার যোগ্য আনন্দবাজারের হলদিয়ার সংবাদদাতা সৌমেন মন্ডল ভাইয়ের। বাংরিপোষি প্ল্যান বাতিল হতে ওই বলেছিল ঘাটশিলা আসতে। আমার প্রথমটা ইচ্ছা ছিলনা। আগে একবার এসেছি। ওকে বলেছিলাম যেতে পারি যদি ঘাটশিলা ছাড়া অন্য কোথাও থাকার ব্যবস্থা করে দাও। আমার আরও আবদার ছিল গালুডিতে থাকার। ওই অনেক খুঁজে পেতে এই হোটেলের ব্যবস্থা করে দিল এবং অবিশ্বাস্য কম দামে। এসি রুম মাত্র চোদ্দশ টাকায়! যদিও বিস্ময় আরো কিছু অপেক্ষা করছিল আমাদের জন্য। বৃষ্টি চলল আরও প্রায় ঘন্টা খানেক। বলা বাহুল্য পাওয়ার নেই, ডিজি চলছে। কিন্তু সোনি আমাদের বলল বিদ্যুৎ দপ্তরের লোকেরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। হোটেলে ক্যান্টিন নেই কিন্তু খুচ পারোয়া নেই। সোনি বলতেই চা চলে এল পাশের দোকান থেকে। ডিনারের মেনু আর রেট চার্ট হোয়াটস অ্যাপ করলেন সোনি। সেই মত কোনও এক রেস্তোরাঁয় ফোন করে খাবার অর্ডার দেওয়া হল। ওরা ঠিক সাড়ে নটায় খাবার পাঠাবেন বললেন। ততক্ষণে চান টান করে ফ্রেশ হয়ে নিয়েছিলাম। পায়ের তলা সুড় সুড় করে উঠল। বৃষ্টি থেমে গেছে, যদিও পাওয়ার আসেনি। বাইরেটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। উঁচু নিচু পাথুরে পথে কাদার কোনও ভয় নেই। টর্চটা হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। শতদলও সঙ্গী হল। হোটেলের সামনেই একটি দোকানে মিটমিট করে আলো জ্বলছিল। দোকানি কে জিজ্ঞাসা করলাম স্টেশনটা কোন দিকে। সে বাঁ দিক দেখিয়ে দেয়। আমি খড়গপুরের ছেলে। জানি যে স্টেশন মানেই নিদেন পক্ষে চা আর পান টা জুটে যাবে। একটা পান খাওয়ায় জন্য মনটা ছটপট করছিল। এখানে পান কিংবা চা পেলাম না, কিন্তু স্টেশনটাকে পেলাম। আর সেটাই আমাদের চমকে দিল!গাঢ় অন্ধকারে ডুবে রয়েছে ভারতের আদিতম রেল স্টেশন। জরুরি কোনও বিদ্যুৎ সংযোগে ছোট্ট স্টেশনটার বাইরে একটা সোডিয়াম ভেপারের আলো পড়েছে টিকিট ঘরের বাইরে টালির চালে বসানো বোর্ডের ওপর। পলিমারের নীল বোর্ডের ওপর সাদা রঙে দেবনাগরী হরফে লেখা গালুডিহি! সেই আলোর এক চিলতে পড়েছে সামনের রেল লাইনের ওপর। অনায়াসে পায়ে হেঁটেই লাইন টপকে আমরা ঢুকে পড়লাম টিকিট ঘরের ভেতর। আমরা দাঁড়িয়ে আছি ১৩৩ বছর আগে তৈরি হওয়া একটি প্রাচীন রেল স্টেশনে! ১৮৮৭ সালে নাগপুর থেকে ছত্তিশগড় রেল লাইন পাততে শুরু করলো বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কোম্পানী যা শেষ অবধি বিলাসপুর হয়ে আসানসোল অবধি এগিয়ে গেল। আর তার অব্যবহিত পরেই শুরু হল মুম্বাই থেকে কলকাতা অবধি রেললাইন পাতার কাজ ভায়া এলাহবাদ! ১৮৮৭ সাল ধরলে অবশ্য বছরটা ১৩৫ হওয়া উচিৎ কিন্তু আরও ২ বছর কমিয়ে বললাম এই কারনে যে প্ল্যাটফর্মের সেই আদি অকৃত্তিম ওজন মাপার যন্ত্রটা দেখলাম মরছে ধরা দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই ওজন তখন মাপা হত স্কেলে। সমস্ত রেল স্টেশনেই এই যন্ত্র সরবরাহ করার মনোপলি ব্যবসা ছিল আ্যভরে ওয়ে ট্রোনিক্স কোম্পানি লিমিটেডের। ইংল্যান্ডের বাকিংহামে তাদের সদর দপ্তর। যন্ত্রটির গায়ে ডব্লু এন্ড টি আ্যভরে লেখার পাশাপাশি বিএনআর বা বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কথাটি ঢালাই করা ছাপ দেওয়া রয়েছে আর প্রতিস্থাপনের বছর উল্লেখ করা হয়েছে ১৮৮৯ সাল! শেষবারের মত পন্যের ওজন মাপক এই যন্ত্রটির যথার্থ ক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে ১১৮ বছর আগে ২৫ নভেম্বর ১৯০৪ সালে! এই সময় খুব মনে পড়ছিল আমার আরেক ভাতৃপ্রতিম বন্ধু বর্তমান পত্রিকার হলদিয়ার প্রতিবেদক শ্যামল সেনের কথা। আমি নিশ্চিত ওকে আর হোটেলে ফেরত নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতনা, আমাদেরও না। গোটা রাত স্টেশনেই থেকে ও গবেষণা চালিয়ে যেত। স্টেশনটা আমাদের হোটেল গায়ত্রী গেস্ট হাউস থেকে জাস্ট দেড় মিনিট! সিদ্ধান্ত নিলাম কাল সকালে উঠেই দিনের আলোতে স্টেশনটাকে দেখব আর এসি চলুক আর নাই চলুক ১৪০০ টাকা করেই রুম প্রতি ভাড়া দেব, কোনোও দরদাম করবনা। অন্ধকার এই স্টেশন চত্বরে পান অবশ্য জুটলো না। কিন্তু পান না চিবুলে বুঝি এই অনাদিকাল ধরে একই রকম দাঁড়িয়ে থাকার স্বাদ পানসে হয়ে যায়। সুতরাং ফের উল্টো দিকে হাঁটা শুরু করলাম। হোটেলটার সামনে দিয়েই যেতে হবে। রিসেপশন থেকে রাস্তাটা নজরে পড়ে। সোনি আমাদের স্বল্প আলোতেও চিনলেন, মৃদু হাসলেন। হয়ত বা ভাবলেন, সুরা সন্ধানী আমরা। অচেনা জায়গায় সুরার খোঁজে এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমরা জাতীয় সড়কের দিকে অর্থাৎ মহুলিয়ার দিকটায় হাঁটছিলাম। একটা মোড় পেরিয়ে জাতীয় সড়কের দিকে বাঁকতেই মিলে গেল দোকান। মুদি আর রকমারি দ্রব্যের সাথে পানও রয়েছে। ঝাড়খন্ড হলেও পান কিন্তু সেই আমাদের এগরা রামনগরের। একটা মুখে পুরে আরও কয়েকটা মুড়ে পকেটে ভরে ফিরলাম। অপূর্ব স্বাদ, হোটেলে ঢোকার আগেই মুখেই মিলিয়ে গেল! হোটেলে ঢুকে দেখলাম পাওয়ার চলে এসেছে, এসি চলছে । মনে মনে বললাম, জয় ঝাড়খন্ড!এক রাত পার। আজই ফেরার দিন। প্রোগ্রাম ছকে ফেলেছি। সকাল ৯টায় গাড়িতে ওঠা তারপর গালুডি ড্যাম ঘুরে সোজা চলে যাব দুয়ারসিনি। সেখান থেকে... না সেকথা এখন থাক। সব থেকে বড় কথা সকাল ৯টার আগেই আরেকবার চক্কর মারতে হবে স্টেশনটায়। আমি আর শতদল ফের স্টেশনের পথে। সকাল ৭টা, মাত্র দেড় মিনিট। এবার স্টেশনের সামনেটাকে স্টেশনের মত মনে হয়। ডালায় করে ভাজা হচ্ছে পুরি, চপ, ফুলুরি, জিলিপি। লুচি দশ টাকায় পাঁচটা, চপ তিন টাকা! ড্যাম থেকে ধরে আনা কুচো চিংড়ি, চারাপোনা, চেড়ি বাটা বিকোচ্ছে। কাছের কোনও গাঁ থেকে আসা লাউ, ঝিঙে, শাক ইত্যাদি সবজি । আমাদের সেই পায়ে হেঁটে পের হওয়া টিকিট ঘরের সামনে থাকা নিচু লাইনটায় একটা মালগাড়ি দাঁড়িয়ে। আমরা সেই আদ্যিকালের আরওবি দিয়ে প্ল্যাটফর্মে নেমে যাই। ওপাশে অনেক দুরে একটা পাহাড় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। স্টেশনে ঢোকার মুখেই সেটা নজরে পড়ে। পুরানো নুড়ি বেছানো প্ল্যাটফর্মে আমরা হাঁটি। এখনও আগের মতই প্ল্যাটফর্মে লোহার ডিম্বাকার ঢালাই করা চাকতিতে গালুডিহি লেখা। না এখন এধরনের লেখা স্টেশনগুলোতে নজরে পড়ে বলে মনে হয়না। টিকিট ঘরের সামনে এখনও সাবেক কালের লালরঙা বালতি গুলো লোহার আংটা থেকে সার দিয়ে দুলছে, অগ্নি নির্বাপনের প্রাচীন ব্যবস্থা। টিকিট ঘরে সেই ওজন মাপার স্কেল যন্ত্রটা তো আছেই কিন্তু তার সাথে আরও আছে লাল ডাকবাক্স আর ট্রেনের ' খবর' হলে যাত্রীদের জানানোর জন্য মাঝখানে কেটে রেল পাতের টুকরো অংশটা! সব আজ প্রাণহীন, নিস্পদ। হৃৎপিণ্ড থেমে যাওয়া যন্ত্র ফসিল। হাত নিশপিশ করে, মনে হয় বাজিয়ে দেই একবার। হুটোপুটি অনাসৃষ্টি বেধে যাক! টিকিট জানলার দিকে তাকাই, জানলাটা কাল রাতের মতই বন্ধ, একটা নোটিশ লটকানো। ঝুঁকে পড়ে লেখাটা পড়ি, টিকিট ঘর স্থানান্তরিত হয়েছে। অনতিদূরেই নজরে পড়ে ঝাঁ চকচকে সাদা ঘরটা। ওদিকে যাইনা, যেতে ইচ্ছা করেনা। আরও দেখতে পাই নতুন একটা ফুট ওভার ব্রিজ গড়ে উঠছে। বড় হচ্ছে গালুডি, নাকি বুড়ি হচ্ছে? মন খারাপ হয়ে যায়। মালগাড়িটা তখনও দাঁড়িয়ে। পুরানো ফুট ওভার ব্রিজ দিয়েই নেমে আসি। আমার আর শতদলের ক্যামেরায় ধরা থাকে কুমারী, অনুঢ়া, গালুডি। আজ রোদ উঠেছে ঝলমলিয়ে, রোদ চশমা হৈ হৈ করে স্টেশন চত্বরে নেমে এসেছে রিয়ান, রুষতি, ঝিলমিল, রাগিণীরা। পেছনে পেছনে শুভাশিসও। ওরা স্টেশনের দিকটায় নেমে যায়। আমি ফিরে তাকাই। স্টেশনের সেই প্রবেশমুখ টালির দোচালার ওপর দিয়ে পাহাড়টা দেখা যাচ্ছে, যেন রোদ থেকে আড়াল করছে লজ্জাবনতা গালুডিকে। ও পাহাড়টা আমার চেনা। ওটাই বড়াপাহাড়। পাহাড়টা যেন আমায় ডাকে। আমি আস্তে করে বলি, আসছি।ঘড়ির কাঁটায় ৯টা। কাল ফেরার পথে গাড়ির স্টেপনি বদল করতে হয়েছিল কিন্তু ঝড় জল আর বিদ্যুৎ বিহীন পথে কেউ পাংচার সারাতে রাজি হয়নি। 'সুবা আও' বলে সবাই হাঁকিয়ে দিয়েছে। মৃত্যুঞ্জয় গাড়িটা নিয়ে সকাল সকাল গ্যারেজে গিয়েছে, এখনও ফেরেনি। আমরা পাক্কা মিদনাপুরিয়া। সঙ্গে আনা মুড়ি, শশা আর বাদাম মেলে দেওয়া হল বিছানার ওপর পেপার পেতে। কিনে আনা তিন টাকাওয়ালা কয়েকটা চপ। গতকাল রাতে রেস্তোরাঁর অর্ডার করা আটার তন্দুরি রুটি, চিকেন কষা আর পনির মশলার হ্যাংওভার দিব্যি হাপিশ করে দিল খাঁটি মিদনাপুরিয়া ব্রেকফাস্ট। ব্যাগেজ করাই ছিল। হোটেলের টাকাও মেটানো হয়ে গিয়েছিল। মৃত্যুঞ্জয় হাজির হতেই একে একে সবাই উঠে পড়ল। ৫ লিটারের দুটো জলের বোতল গাড়িতে তোলার আগে দেখা গেল একটা পুরো খালি, অন্যটা অর্ধেক। সোনিকে বললাম, মিনারেল ওয়াটার কোথায় পাব? সোনি বললেন, বোতল দিজিয়ে। ফাঁকা বোতলটা বাড়িয়ে দিলাম। মিনিট খানেকের মধ্যেই বোতলটা ভরে এনে বললেন, 'বে-ফিকর পিয়ে, গালুডি কি পানি, মিনারেল উনারেল ফেইল হো যায়গা।' গাড়ি ছুটল দু'কিলোমিটার দুরে গালুডি ড্যাম। গাড়ি এসে যখন ড্যামের গায়ে দাঁড়ালো তখন জলের মাতন তুঙ্গে উঠেছে। জলের সেই প্রবল গর্জনে পাশের মানুষের কথাও শোনা যাচ্ছেনা। সুবর্ণরেখার সে কী রূপ! ২১টি স্লুইস গেটের মধ্যে দিয়ে জল আছড়ে পড়েছে। কী সুন্দর, কী অপরূপ সেই দৃশ্য! কিন্তু ভয়ংকর তো কম নয়! দিনটা ২১শে আগস্ট, রবিবার। জল ছেড়েছে গালুডি। আমরা যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই জল দেখছি তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতন, কেশিয়াড়ীতে বিডিও অফিস থেকে মাইক ফোঁকা হচ্ছে, "হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার, গালুডি থেকে এত হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। নদী তীরবর্তী মানুষরা সাবধান থাকুন। আরও জল বাড়লে নিরাপদ দূরত্বে সরে আসুন। প্রশাসন সবরকম পরিস্থিতি মোকাবিলায় তৈরি রয়েছে..... ।" আমাদের কানে অবশ্য সেই ঘোষনা আসার প্রশ্নই নেই, আমাদের সব্বাই তখন ব্যস্ত দাঁতন থেকে ১৫০ কিলোমিটার দুরে গলুডি ব্যারেজের ওপর দাঁড়িয়ে জলের সেই প্রবল তোলপাড় দেখতে। এই সময় আমার নজরে পড়ল দুটি অদ্ভুত ধরনের মৎস্য শিকার। একদল মানুষ ওই অত উঁচু থেকে দড়ির সাহায্যে বাঁশের বাতায় বাঁধা জাল নামিয়ে দিচ্ছেন, তুলে আনছেন। মাছ উঠছে, রামশোল, কালবাউস, বাটা আরও কত কী! ওখানেই বিক্রি হচ্ছে সেই সব মাছ! এই সব মাছ ধরা জালগুলো অনেকটটা ঠিক আমাদের গাঁ ঘরের চাবি জালের মত। যাঁদের চাবি জাল সম্পর্কে ধারনা নেই তাঁদের জন্য বলা যে, একটি বাঁশের বাতার দুটি প্রান্তকে টেনে এনে মুখোমুখি বাঁধলে একটি বৃত্তাকার ক্ষেত্র বা রিং তৈরি হয়। সেই রিং বরাবর বাঁধা হয় জালটি। এমন ভাবে জালটি বাঁধা হয় যাতে ভেতরের অংশটি টানটান না হয়ে একটু ঝুলে থাকে অর্থাৎ বাতার তৈরি রিংয়ের চাইতে গোলাকার জলটি একটু বড় হতে হয়। বস্তুটি একটি ছাঁকনির আকার ধারন করে। এরপর তিনটি বাঁশের খন্ড ওই রিংয়ের তিন প্রান্তে সমান দূরত্বে বাঁধা হয়। এরপর ওই তিনটি বাঁশের মাথা এক জায়গায় টেনে এনে বাঁধা হয়। সব মিলিয়ে ওপরের অংশটি ত্রিভুজাকৃতি গ্রহন করে। সাধারণত জলের কম গভীরতায় দাঁড়িয়ে মাথার ওপর কিংবা বুক বরাবর তুলে রেখে মৎস্য শিকারি দাঁড়িয়ে থাকেন এরপর শোল মাগুর কিংবা ওই জাতীয় মাছের অস্থিত্ব টের পেলে ওই জাল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন। এলাকা বিশেষে ওই জালের বিভিন্ন নাম হয়। কোথাও চাবি জাল কোথাও আবার ঝাঁপা জাল ইত্যাদি। গালুডি ব্যারেজের ওপর দিয়ে যাওয়া আসার রাস্তা বা যেখান থেকে আমরা নিচের জল দেখছি তার মধ্যখানের ব্যবধান প্রায় তিরিশ ফুট। ওই রকম জালের ত্রিকোণ বাতার শীর্ষে বাঁধা দড়ির সাহায্যে শিকারিরা ওপর থেকে নিচে জলের মধ্যে ওই জাল নামিয়ে দিচ্ছিলেন এবং ছেঁকে ছেঁকে মাছ ধরছিলেন। আরেক প্রকার মৎস্য শিকারও আমার নজর কেড়ে নিল যদিও তা মানুষ নয়, সেই শিকার করছিল দুরন্ত পানকৌড়ির দল। সংখ্যায় তারা গোটা আট দশেক ছিল। ব্যারেজের এই অংশে সুবর্ণরেখা পূর্ব থেকে হঠাৎ করেই ঈষৎ দক্ষিণ পশ্চিমে বাঁক নিয়েছে। তোলপাড় জলের রাশি পূর্ব থেকে ২১টি স্লুইস গেটের ফাঁক গলে আছড়ে পড়ছে। প্রকাণ্ড প্রকাণ্ড সব ঘূর্ণি তৈরি উথাল পাথাল হতে হতে জল নামছে খর বেগে। কী পরিমাণ সেই বেগ তা দেখলে কল্পনা করাই মুশকিল। তারই মধ্যে উজানে ঠোঁট বাড়িয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ছে পানকৌড়ি গুলো, জলের গভীরে ঢুকে যাচ্ছে আর প্রায় আধ মিনিট পরে উঠে আসছে। সমস্যাটা বাড়ছে এরপরই, ওই উথাল পাথাল জলে ভর দিয়ে ফের আকাশে ডানা মেলতে রীতিমত নাকানি চোবানি খেতে হচ্ছে পাখিগুলোকে। কখনও কখনও সেই দোমড়ানো মোচড়ানো উথাল পাথাল দুরন্ত কুন্ডলি পাকিয়ে ওঠা জলের ভেতরে একেকটি পাখি এত বেশি সময় ধরে থেকে যাচ্ছিল যে আমার মনে হচ্ছিল সে বোধহয় চিরতরেই তলিয়ে গেল, আর উঠতে পারবেনা। অনন্ত শক্তিধর ওই পাক খেতে থাকা জলস্রোতের বিপরীতে দক্ষ সাঁতারু তো দুরের কথা একটা প্রমাণ সাইজের হাতিকেও হ্যাঁচোড় প্যাঁচোড় করতে হবে কিন্তু পাখি গুলো শেষ অবধি উঠে আসছে, আবার ঝাঁপাচ্ছে। আমি ঘড়ি মিলিয়ে দেখলাম সব চাইতে বেশি সময় নেওয়া পাখিটি প্রায় পঁচাত্তর সেকেন্ড ধরে লড়াই চালিয়ে ফের ডানা মেলল। তারপর সে বেশ খানিকটা দূরে গিয়ে নদীর বাঁধানো কিনারায় বসে ডানা দুটি সটান মেলে রোদে শুকাতে লাগল। হয়ত বৃদ্ধ হয়ে এসেছে সে, শক্তি কমে এসেছে। বাকি গুলো তখনও লুটোপুটি খাচ্ছে জলে। মাছ ধরছে, গিলছে, আবার ঝাঁপাচ্ছে। বড় অদ্ভুত সেই শিকার।আগেই বলেছি সুবর্ণরেখা এখানটায় ঈষৎ দক্ষিন পশ্চিমে বাঁক নিয়েছে। পরে তা ক্রমশঃ দক্ষিণ বাহিনী হয়ে পশ্চিমবঙ্গের ভেতর দিয়ে ওড়িশা প্রবেশ করে বঙ্গোপসাগরে মিলেছে। গালুডির উপরিভাগে নদী খাড়া হয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে নামছে অর্থাৎ নদী এখানে উচ্চ গতি সম্পন্ন। আর এই স্তরে ব্যারেজের ঠিক উপরেই নারোয়া পাহাড় ছুঁয়ে নেমে আসা সেই গুডরু নদী মিলিত হয়েছে। ওখানটায় যেতে হলে ব্যারেজ পেরিয়ে দিগরি আর বড়াপাহাড়কে বাঁয়ে রেখে এগুতে হয়। গালুডি রেল স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার সময় এই পাহাড়টাই আমাকে ডাকছিল। এখন আমি তাকে হাই করে দিলাম। শীতের সময় কিংবা গরমের শুখা মরশুমে যদি গালুডি ব্যারেজে আসেন তবে গুডরু আর সুবর্ণরেখার মিলনস্থলে নেমে পড়তে পারেন। নদীর শুকনো স্রোতে হরেক রকমের পাথর পাবেন। মাইলের পর মাইল জুড়ে নদী তাদের ঠেলতে ঠেলতে এনেছে আসতে আসতে তারা ক্ষয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে তারা নুড়ি পাথর। তাদের কোনওটা গোল, কোনোওটা ডিম্বাকৃতি। সাদা কালো হলদেটে সবুজাভ সেই পাথর কুড়িয়ে নিতে পারেন। কানের কাছে নিয়ে একবার নাড়িয়ে দেখে নিন তো, ভেতরটা ফাঁকা আর ভেতরে কিছু নড়ছে কিনা? যদি নড়ে আপনি পেয়ে গেছেন কোনোও অমুল্য রতন। জানেনই তো চুনী পান্না ক্যাটসআই গোমেদ ইত্যাদি রত্নগুলি বিভিন্ন খনিজ ধাতুর সংমিশ্রণে তৈরি। সেই খনিজ পদার্থ সমূহ যেমন আ্যলুমেনিয়াম, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম, বেরিলিয়াম, সালফার, কপার ইত্যাদি। আগেই বলেছি জাদুগড়া ও তার লাগোয়া পাহাড় সমূহ বিভিন্ন খনিজ সম্পদের ভান্ডার। আগ্নেয়শিলা অধ্যুষিত এই এলাকা একসময় অগ্নুপ্যাত ও অন্যান্য কারনে ভূগর্ভস্থ মৌলিক খনিজগুলি লাভার সঙ্গে মিলে মিশে ভূপৃষ্ঠের ওপরে সঞ্চিত হয়েছে। নদী সেই পথ কেটে কেটে এসেছে হাজার হাজার বছর ধরে আর বয়ে এনেছে কাটা পাথরের খন্ড থেকে নুড়ি। কখনও কখনও তাই ওই সব নুড়ি থেকে রত্ন পাওয়া যায়। সুবর্ণরেখা যেমন নিজেও সেই রত্ন বাহিনী, গুডরুও তাই। রাঁচির পিস্কা থেকে উৎপত্তি হয়ে ওড়িশা অবধি সুবর্ণরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় ৪৭৫ কিলোমিটার এরমধ্যে গালুডি অবধি সুবর্ণরেখার দৈর্ঘ্য প্রায় অর্ধেক এবং পুরোটাই রত্নখচিত পথ। আর গুডরুর যাত্রা খনিজ সমৃদ্ধ জাদুগড়ার ভেতর দিয়ে। সুতরাং এই দুই নদীর মিলনস্থলও যে রত্নগর্ভ হবে বলাই বাহুল্য। জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের নিয়মিত ভ্রমন তালিকায় গালুডি ছিল। শুনেছি অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গালুডি বেড়াতে এসে সাতসকালেই ছুটে আসতেন সেই অমূল্য রতনের খোঁজে। কিন্তু এইবেলা আমাদের সেই খোঁজ সম্ভব হয়নি। আমাদের এবারের যাত্রা সুন্দরী দুয়ারসিনির পথে। আমরা গাড়ি ঘোরালাম উত্তরে মহুলিয়ার পথে। ক্রমশ...
  • হরিদাস পালেরা...
    তোমার বাস কোথা যে… - ৩ - Nirmalya Nag | এই কাহিনীর সব চরিত্র কাল্পনিক। জীবীত বা মৃত কোনো ব্যক্তির সাথে কোনও মিল যদি কেউ খুঁজে পান তা সম্পূর্ণ অনিচ্ছাকৃত এবং কাকতালীয়।  ।। তিন ।।শরৎ কাল আসতে এখনও কিছুদিন দেরি আছে, তবু নীল আকাশে মাঝে মাঝেই সাদা মেঘের ঝাঁক দেখতে পাওয়া যায়। বিনীতার অবশ্য সে দিকে নজর দেওয়ার সময় নেই। যার দিকে খেয়াল রাখতে হচ্ছে, তার অবশ্য ভ্রূক্ষেপ নেই। সেদিনের পর কাশির সাথে আর রক্ত ওঠেনি, আর তাই অরুণাভও সে দিকে খেয়াল রাখার দায় যেন আর নেই। মানুষটা যে শুধু অন্যের ব্যাপারে নির্লিপ্ত তা নয়, নিজের ক্ষেত্রেও তাই। কাশি বন্ধ না হলেও রক্ত আর না ওঠায় সেদিন ডাক্তার দেখানোতেও অনীহা ছিল অরুণাভর। গায়ত্রী আর ওর বর রঞ্জিত একরকম জোর করেই হাসপাতালে নিয়ে যায়।  কোলিয়ারির হাসপাতালের ডাক্তার শ্রীবাস্তব দ্রুত কয়েকটা টেস্ট করতে পাঠান। আর তার রিপোর্ট দেখে তিনি চিন্তিত হয়ে ওঠেন।“টেস্টের রেজাল্ট ভাল নয় স্যার। আপনাদের ইমিডিয়েটলি স্পেশালিস্ট ডাক্তার দেখাতে হবে,” বললেন শ্রীবাস্তব।অরুণাভ চুপ, বিনীতা বলে, “কেন? কী হয়েছে? কোন স্পেশালিস্ট দেখাতে হবে?”শ্রীবাস্তব বিএসসি হসপিটালের ডাক্তার ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের নাম করেন। ওটা বোকারোর একটা বড় হাসপাতাল, সেক্টর ফোর-এ। কিন্তু ইনি কোন রোগের স্পেশালিস্ট? শ্রীবাস্তব জানান বিশ্বাস ক্যানসার বিশেষজ্ঞ।“অঙ্কোলজিস্ট! কেন? ওনার কি… আমরা তো ভাবছিলাম টিবি হয়েছে,” বলল বিনীতা।“না ম্যাডাম। টিবির টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আমার মনে হচ্ছে অঙ্কোলজি রিলেটেড কিছু হয়েছে স্যারের। ডক্টর বিশ্বাসের সাথে আমার ভাল আলাপ আছে। আমি ওনাকে বলে দেব। উনি রোজ বসেন, আপনারা কালই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নিন। আমি ওনার নম্বর আর হাসপাতালের নম্বর দুটোই দিয়ে দিচ্ছি,” বললেন শ্রীবাস্তব।“কাল হবে না,” এতক্ষণে মুখ খোলে অরুণাভ, “কাল অফিসে একটা খুব ইম্পরটান্ট মিটিং আছে।”“কিন্তু স্যার…”“বললাম তো কাল হবে না।” কথা শেষ করে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল অরুণাভ।স্বামীকে ভালই চেনে বিনীতা, তাই কালকের দিন নিয়ে আর কথা বাড়াল না সে। বলল, “আপনি নম্বরটা দিন। পরশুর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করব।”পরশু আবার জরুরী কিছু আছে কি না জানতে চাইল বিনীতা।“সেদিন হয়তো ম্যানেজ করা যাবে, তবে তারপর থেকে আমি বিজি হয়ে পড়ব বেশ কিছু দিনের জন্য,” বলল অরুণাভ।“ঠিক আছে। আমি আজই ফোন করব। আপনি প্লিজ ওনাকে একটু বলে রাখবেন।”শ্রীবাস্তব জানালেন তিনি অবশ্যই ডক্টর বিশ্বাসকে জানিয়ে রাখবেন। *** পরের দিন ঠিক দুপুর বারটার সময়ে কুসুমবনি কোল মাইনের অফিসের মিটিং রুমের দরজা ঠেলে ঢুকলেন জেনারেল ম্যানেজার খুরানা আর আর ল্যাপটপ হাতে অরুণাভ। ভেতরে একটা সাদা স্ক্রিন টাঙানো আছে একটা দেওয়ালের পাশে। বড় ডিম্বাকৃতি টেবিলটার ওপর একটা প্রজেক্টর রাখা। টেবিল ঘিরে বসে আছে জনা দশেক বিভিন্ন বয়সের পুরুষ ও মহিলা। আরও প্রায় হাফ ডজন চেয়ার খালি আছে। এরা দুজন ঢুকতেই সবাই উঠে দাঁড়ায়। খুরানা হাতের ইসারায় সবাইকে বসতে বলেন। অরুণাভ নিজেও একটা চেয়ারে বসে, ল্যাপটপটা সামনে টেবিলে রাখে। জি-এম স্যার অবশ্য বসেন না, নিজের জন্য নির্দিষ্ট চেয়ারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন, সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেন। তারপর বলা শুরু করেন।“আই হ্যাভ আ লিটল অ্যানাউন্সমেন্ট টু মেক। আপনারা জানেন যে আমাদের মেসিনারিজ পুরনো হয়েছে, আর তার জন্য প্রোডাকশনও কিছুটা সাফার করছে। আমাদের নতুন মেসিনপত্র দরকার। তবে ঠিক কী কী লাগবে আর আমাদের এক্সিস্টিং সিস্টেমের ওপর তার কী এফেক্ট হবে, আর কতটাই বা প্রফিট হতে পারে সেটা জানতে হবে,” টানা কথা বলে একটু থামেন খুরানা। এই কাজগুলো সাধারণতঃ বিভিন্ন কনসালট্যান্সি ফার্ম করে থাকে ভাল টাকার বিনিময়ে। কুসুমবনির আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল নয়, হেড অফিস থেকেও বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের তরফ থেকে বিশেষ কিছু জুটবে না। সুতরাং সবাই যখন চিন্তিত যে কী করা যেতে পারে, তখন একজন নিজে থেকেই এই গুরুদায়িত্ব নিতে রাজী হন। এই অবধি সবাইকে জানিয়ে অরুণাভর দিকে হাত তুলে দেখান জি-এম। “অ্যন্ড দ্য পার্শন ইজ নান আদার দ্যান দাস। আপনারা সবাই আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্ট থেকে এসেছেন, তবে আজ থেকে কয়েক মাস উনিই আপনাদের বস। কাজ উনিই বুঝিয়ে দেবেন। আপনাদের ওপর কোম্পানির অনেক আশা। আমি জানি সেই আশা আপনারা পূর্ণ করবেন। থ্যাংক ইউ। ওভার টু ইউ, দাস।”খুরানা বেরিয়ে যান মিটিং রুম থেকে। সবাই এখন দাস সাহেবের দিকে তাকিয়ে। অফিসে যে একটা বড় কিছু ঘটতে চলেছে তা নিয়ে নানা রকম কানাঘুষো শোনা যাচ্ছিল গত কয়েক দিন ধরে, ব্যাপারটা তাহলে এই। অরুণাভকে অফিসের প্রায় সকলেই একটু সমীহ করে চলে, তার কারণ এই অ্যাসিস্টান্ট ম্যানেজারের কাজ নিয়ে খুঁতখুঁতুনি প্রায় প্রবাদের পর্যায়ে চলে গেছে। এমনকি ইউনিয়নের নেতারাও খুব একটা ঘাঁটাতে চায় না তাকে। “চা আসছে। চা খেয়ে আমরা আমাদের কাজ শুরু করব। তার আগে একটু আলাপ পরিচয় করে নেওয়া যাক,” বলল অরুণাভ। “আপনারা আজ এখানে বসে আছেন কারণ আপনাদের ডিপার্টমেন্টাল হেডরা এই কাজের জন্য আপনাদের সিলেক্ট করেছেন। সো আই ক্যান অ্যাজিউম দ্যাট ইউ আর ওয়ান অফ দ্য বেস্ট ওয়ার্কারস ইন ইয়োর ডিপার্টমেন্টস, ইফ নট দ্য মোস্ট এফিসিয়েন্ট ওয়ান। আপনারা প্রায় সবাই আমার সাথে আগে কাজ করেছেন। কেবল দু জন ছাড়া। মিস্টার সামসের আনোয়ার…”বছর ৩৫ বয়সের সামসের উঠে দাঁড়ায়। অরুণাভ তাকে বসতে বলে। টেকনিক্যালের হেড মিস্টার ডিসুজা যে তার খুব প্রশংসা করেছেন সেটাও জানায় সে। এই সব কথার মাঝেই চা-বিস্কুট নিয়ে দু’জন মিটিং রুমে ঢুকে চা দিয়ে যায়। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে হাতের একটা কাগজের দিকে তাকিয়ে বলে, “মিস গীতা সিং ফ্রম এইচ আর ডি।” গীতা সিং-এর বয়স ৩০-এর গোড়ার দিকে, সে উঠে দাঁড়াতে যাচ্ছিল, অরুণাভ ইসারায় তাকে বসতে বলে।  অরুণাভ জানিয়ে দেয় যে সে যাবতীয় অপ্রিয় কথা সে আগেই বলে দিতে পছন্দ করে। বিশেষ করে ওই নতুন দু’জনের জন্য এই কথাগুলো জরুরী কারণ অন্যেরা আগে তার সাথে কাজ করেছে, তার কাজের পদ্ধতি সম্পর্কে তাদের ধারণা আছে। একটু থামে অরুণাভ, একবার কাশে। পাশে রাখা গ্লাস থেকে জল খায় এক ঢোঁক। বাকিরা সবাই চুপ, দু-একজনের চা-এর কাপ রাখার শব্দ ছাড়া ঘরে আর কোনও শব্দ নেই। অনেক বছর ধরে প্রায় প্রতিটা নতুন প্রোজেক্টের আগে এই সব কথাগুলো বলে বলে অরুণাভর প্রায় মুখস্ত হয়ে গেছে। প্রায় যন্ত্রের মতই বলে যায় সে।“এক নম্বর - আগামী ছ’মাস উইকলি অফ আর ইমার্জেন্সি ছাড়া কোনও ছুটি নেওয়া যাবে না। দু নম্বর - আপনাদের অফিসে আসার সময় ফিক্সড থাকবে, যাবার নয়। নাম্বার থ্রি - কখনও কখনও উইকেন্ডেও কাজ করতে হতে পারে, এখনই নয়, পরের দিকে। নাম্বার ফোর - আনোয়ার, আপনাকে ট্রাভেল করতে হতে পারে, পাসপোর্ট রেডি রাখবেন। নাম্বার ফাইভ - আমার মোবাইল আর দরজা সব সময়ে খোলা থাকবে। তবুও, বাই চান্স, যদি আমি অ্যাভেলেবল না হই, আপনারা রামাকৃষ্ণানজীর সাথে কথা বলবেন।রামাকৃষ্ণানজী এদের মধ্যে বয়সে সবচেয়ে বড়, প্রায় ৫৫ বছর বয়স, তিনি উসখুস করছিলেন। অরুণাভ জিজ্ঞেস করল উনি কিছু বলতে চান কিনা। “স্যার, আমার মেয়ের বিয়ে তিন মাস বাদে, কোচিতে। ছুটির জন্যেও আমার বলে রাখা আছে। এই প্রোজেক্ট থেকে প্লিজ আমায় বাদ দিন,” রামাকৃষ্ণানের গলার স্বরে অনুনয়।“এসব কথা আপনার আগেই বলা উচিত ছিল খুরানা সাবকে,” বিরক্তি লোকালো না অরুণাভ।“আমি বলেছিলাম ওনাকে… উনি বললেন আপনাকেই বলতে,” জানালেন রামাকৃষ্ণান।একটু ভাবল অরুণাভ। জিজ্ঞেস করে জানল উনি কুড়ি দিনের ছুটি নিয়েছেন।“কুড়ি দিন!!”“একমাত্র মেয়ের বিয়ে স্যার, বুঝতেই পারেন। প্রচুর কাজ।”“আপনার দুই ছেলেও আছে না?”“হ্যাঁ। দুই ছেলের মাঝে আমার মেয়ে।”“গুড, এখান থেকে ছেলেদের ইন্সট্রাকশন দিয়ে দিন কী কী করতে হবে। আপনি পরে যাবেন।”“বড় ছেলে নেভিতে চাকরি পেয়েছে অল্প দিন হল, মুম্বাইতে পোস্টেড। ছুটি পাবে দেরিতে। আর ছোটটা সবে কলেজে পড়ছে। ওদের দিয়ে সব হবে না স্যার।”“ওকে, পনের দিনের মধ্যে ম্যানেজ করুন।”“স্যার–”“আপনাকে ছাড়া আমি অচল রামাকৃষ্ণানজী। আপনি নিজেও সেটা জানেন। এতজনের সামনে আমার স্বীকার করতে একটুও লজ্জা নেই যে আমি নিজেও অনেক কিছু আপনার থেকে শিখেছি।”রামাকৃষ্ণান কিছু বলেন না; মাথা নিচু করে বসে থাকেন। কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ থাকে।  অরুণাভ কিছু একটা ভেবে নেয়, মিটিং রুমের বড় দেওয়াল ঘড়িটার দিকে একবার তাকায়। মনে মনে কিছু একটা স্থির করে নেয়।“ঠিক আছে। আমরা পরে এই নিয়ে ডিসকাস করব।… নাও অনটু বিজনেস। আমরা প্রথমে একটা প্রেজেন্টেশন দেখব। সেখানে দেখানো হবে আমরা কী অবস্থায় আছি আর কোথায় যেতে চাইছি। এই প্রেজেন্টেশনের কপি আপনারা সবাই পেয়ে যাবেন, কয়েক বার করে সবাই সেটা নিজেদের কম্পিউটারে দেখে নেবেন যাতে সিচুয়েশন ক্লিয়ার থাকে প্রত্যেকের কাছে। পরে আমরা সেপারেট গ্রুপ মিটিং করব ডিপার্ট্মেন্ট-ওয়াইজ। ইউ উইল বি ওয়েলকাম টু পুট ফরোয়ার্ড ইয়োর সাজেশনস দেয়ার। আনোয়ার আর গীতা, মনে রাখবেন সাজেশন পেতে আমার কোনও সমস্যা নেই।”ল্যাপটপ অন করে প্রোজেক্টরেএ সাথে যোগ করে অরুণাভ। দেখে নেয় সাদা পর্দায় ছবি পড়ছে কি না ঠিক মত। তারপর সুইচবোর্ডের কাছাকাছি থাকা বিমলকে বলে ঘরের আলোগুলো নিভিয়ে দিতে। ঘর অন্ধকার হয়ে গেলে প্রেজেন্টেশন শুরু করে অরুণাভ। ***ওদিকে স্কুলে ক্লাস নেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে বিনীতার মাথায় ঘুরতে থাকে কাল ক্যানসার বিশেষজ্ঞর সাথে অ্যাপয়েন্টমেন্টের কথা। কী বলবেন উনি? (ক্রমশঃ)
    দোলজ‍্যোৎস্নায় শুশুনিয়া‌য় - ১২ - সমরেশ মুখার্জী | ঈশু বলে, কিন্তু তুই এতোসব জানলি কী করে?”সুমন বলে, “প্রশ্নটা সংগত। আমি সাধারণ বাংলা মিডিয়া‌ম স্কুলে পড়েছি। ইংরেজি‌তে নড়বড়ে। অংকে দূর্বল। জয়েন্ট ক্লিয়ার করতে না পেরে ডিপ্লোমা পড়ে ডিগ্ৰি করতে এসেছি। তোরা সোনার টুকরো, সরাসরি ডিগ্ৰি পড়ছি‌স। তোদের থেকে শিক্ষাজীবনে আমি চার বছর পিছিয়ে। তবে সেজন‍্য বিশেষ আক্ষেপ বা হীনমন্যতা নেই। কারণ আমি বুঝি সবার যোগ‍্য‌তা এক নয়। আমি পার্টটাইমে পড়ি, তোদের থেকে বয়সে তিন চার বছর বড়, তাও যে তোরা আমায় প্র‍্যাকটিসে খবর দিস, তাতেই আমি আপ্লুত।”তুলি চোখ পাকিয়ে বলে, “যাত্রার মতো মেলোড্রামাটিক ডায়ালগ ঝাড়ছিস কেন - সোনার টুকরো? আপ্লুত? ‌দ‍্যাখ, বন্ধুদের মধ‍্যে এসব শুনতে ভালো লাগে না। তোর অন‍্যের পেছনে লাগা, ক‍্যাম্পফায়ারে প‍্যারোডি, হাজির ইয়ার্কি এসব আমরা এনজয় করি, তাই তোকে ডাকি। এমন প‍্যানপ‍্যান করলে আর ডাকবো না।” - “এটাই কায়দা করে শুনতে চাইছি‌লাম।” - “কী?” - এই যে, তোরা আমার কোম্পানি এনজয় করিস।”- “করিই তো, তা বলে সেটা বলিয়ে ছাড়বি? পাজি কোথাকার। চাস তো ঢ‍্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করি?”তুলির বলার ধরণে চুনি, ঈশু‌র সাথে সুমন‌ও হাসে। এমন সব কথার পিঠে কথায় কখনো কিছু অজান্তে বেরিয়ে আসে। কখনো জমে ওঠা কিছু মিলিয়ে‌ও যায়।সুমন বলে, “বারো ক্লাস অবধি পড়াশোনায়  ফিজিক্স আর বায়োলজি ছাড়া আর কোনো বিষয়ে তেমন আনন্দ পাই নি। কিন্তু ডিপ্লোমা পড়তে গিয়ে, ফলিত বিষয় বলে, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং খুব এনজয় করেছি। পরীক্ষা পাশের জন‍্য নয়, ভালো‌বেসে পড়েছি বলে ডিপ্লোমা থার্ড ইয়ারে আমার GPA 4.8/5 ছিল সেবার পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ‌টা পলিটেকনিকের মধ‍্যে হায়েস্ট। হয়তো আমি একা নয়, আরো কেউ পেয়েছি‌ল। প্রফুল্ল‌চন্দ্র পলিটেকনিকে আমাদের ব‍্যাচের ফাইনালে আমি ছিলাম দ্বিতীয় স্থানে। প্রথমে প্রবীর। ও খুব স্টুডিয়াস। তবে কাউকে ছাপিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা‌র মনোভাব‌ আমার নেই। পাঠ‍্য বিষয়ের বাইরে আমায় যা টানে না, তা নিয়ে লেগে থেকে নিজেকে ইন্টেলেকচুয়াল প্রতিপন্ন করার কোনো তাড়না‌ও আমার নেই।”“যেমন ধর একজন বলেছিল, ও নাকি এক বছর ধরে আদাজল খেয়ে জেমস জয়েসের ফিনিগানস ওয়েক পড়েছে। সাহিত্য‌বোদ্ধাদের কাছে ওটি ধ্রুপদী ইউরোপিয়ান সাহিত্যে‌ দূর্বোধ‍্য‌তম রচনার তকমা ভুক্ত। জয়েস তাঁর সাহিত্য‌জীবনের ঐ শেষ পরীক্ষামূলক কীর্তি‌টি সতেরো বছর সময় নিয়ে সম্পন্ন করেছি‌লেন। সেটা এক বছরে পড়ে রস উপলব্ধি করতে পারা‌ ধ্রুপদী পাঠক হিসেবে বিশেষ এ্যাচিভমেন্ট। আমার পক্ষে অতো চেষ্টা করে অমন কঠিন ব‌ই পড়া অসম্ভব। কিন্তু মানব চরিত্রে‌র প্রবৃত্তি, প্রবণতা, বিচ‍্যূতি এসব নিয়ে আগ্ৰহ ছিল। তবে তার জন‍্যেও লাইব্রেরিতে গিয়ে পড়াশোনা করার সময় বা ধৈর্য্য নেই।”- “তাহলে এতো সব জানলি কি করে?” আবার বলে ঈশু।- “এ ব‍্যাপারে আমি একটু ভাগ‍্যবান। আমাদের পাড়া‌য় দীপ ডাক্তার ছিলেন আর্মি মেডিক্যাল কোরে। আসাম অপারেশনে IED বিস্ফোরণে আহত হয়ে বাঁ পা একটু টেনে টেনে হাঁটেন। স্বেচ্ছায় অবসর নিতে চাইলে আর্মি ছেড়ে দেয়। পার্মানেন্ট কমিশনে ২২ বছর কাজ করেছেন বলে পেনশন পান। পৈতৃক বাড়িতে থাকেন। অবিবাহিত। পয়সার‌ খাঁ‌ই নেই। আমাদের পাড়ায় GP হিসেবে ছোট একটা চেম্বার খোলেন। রাতবিরেতে কেউ অসুস্থ হলে খবর দিলে আসেন। খুব বেশী পেশেন্ট হয় না। একটু আড্ডা‌বাজ টাইপ। তাই রোগী না থাকলে অনেকবার রাতের দিকে ওনার চেম্বারে গিয়ে আড্ডা দিয়েছি। উনি হয়তো আমায় পছন্দ করতেন। মানবচরিত্রের বৈশিষ্ট্য, বিচ‍্যূতি, যৌনতা এসব নিয়ে আমার প্রশ্ন শুনে দীপদা একদিন বললেন, তোমার নানা কৌতূহল মেটানোর সাধ‍্য আমার নেই। তবে আমি তোমায় একজনের কাছে নিয়ে যেতে পারি। তিনি হয়তো তোমার এসব জিজ্ঞাসা‌র সঠিক জবাব দিতে পারবেন।”“কে তিনি?” বলে চুনি।“মনোবৈজ্ঞানিক‍ ডঃ সুশীল মজুমদার, দীপদার বিশেষ পরিচিত। একদিন আমায় ওনার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বললেন, সুশীলদা, এ হচ্ছে সুমন, যাদবপুরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ওর মানব চরিত্র, কমপ্লেক্স এসব নিয়ে খুব কৌতূহল। আমায় নানা প্রশ্ন করে। আমি অনেককিছু‌র ঠিকঠাক জবাব দিতে পারি না। আপনি তো আজকাল বাড়িতে‌ই থাকেন প্রায়। যদি মাঝেমধ্যে ওকে আসতে এ্যালাও করেন, ওর কিছু কৌতূহল নিরসন করেন, ওর ভালো লাগবে।”“সুশীল‌বাবুর তখন সত্তরের কাছাকাছি বয়স। বছর তিনেক আগে পত্নী বিয়োগ হয়েছে। একমাত্র পুত্র বিদেশে সেটলড্। একা থাকেন। রাতদিনের ডোমেস্টিক হেল্প আছে। এই বয়সেও মাথা শার্প। নিয়মিত পড়াশোনা করেন। মনোবিজ্ঞানের ওপর দেশ বিদেশের জার্নাল আনান। কখনো আমন্ত্রিত হয়ে বক্তৃতা করতে যান। ছাত্রাবস্থায় গিরিন্দ্রশেখর বসুর সাথে অনেকবার দেখা করছেন‌। সুশীল বাবুর কাছেই শুনেছি গিরিন্দ্র‌শেখরের ফ্রয়েডের ইডিপাস কমপ্লেক্স তত্বে আস্থা ছিলনা তাও প্রাচ‍্যের‍ এক মনোবৈজ্ঞানিক গিরিন্দ্র‌শেখরের সাথে ফ্রয়েডের দীর্ঘদিন ধরে চিঠিতে নানা ভাবনার আদানপ্রদান হয়েছে।”“দীপদার রেফারেন্স তো ছিল‌ই, হয়তো সুশীলবাবুর‌ও আমাকে কোনো কারণে ভালো লেগেছিল। তাই সস্নেহে বলেছিলেন, বেশ তো আসবে। আমার পক্ষে যতটা সম্ভব চেষ্টা করবো তোমার কৌতূহল নিরসনের।”“কী বিনয়ী ভাব! পেশাগত জীবনের প্রথমে বছর দশেক রাঁচিতে বাকিটা আগ্ৰার ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেল্থ এ্যান্ড হসপিটালে কাজ করেছেন, শিক্ষকতা করেছেন। বিদেশে‌র জার্নালে পেপার পাঠিয়েছেন। এমন মানুষ আমায় বলছেন - চেষ্টা করবো। সেদিন মনে হয়েছিল, প্রকৃত পণ্ডিত বা বিসমিল্লাহ খানের মতো ঐশী শিল্পী‌র ভূষণ - বিনয়। যেমন বলেছিলেন নিউটন - আমার জ্ঞান তো সমূদ্রসৈকতের একটি বালুকণা সদৃশ।”“আমি সুশীল‌বাবুকে বলেছিলাম, স‍্যার আমার তো দিনে কাজ, রাতে ক্লাস নিয়ে সপ্তাহে পাঁচদিন ব‍্যস্ততায় কেটে যায়। যদি আমি মাসে বার দুয়েক শনিবার সন্ধ্যায় আসি, আপনার সময় হবে?   উনি বলেছিলেন, এসো, কোনো অসুবিধা নেই।  পরবর্তী এক বছর, ছেলের কাছে বিদেশ চলে যাওয়ার আগে অবধি অনেকবার ওনার কাছে গেছি। আলোচনা নানা গূঢ় দিশায় চলে গেছে। প্রবীণ মানুষ‌টি একটি বছর বাইশের যুবককে অধ‍্যাপক‌সূলভ নির্লিপ্ত‌তায় মানবমনের নানা জটিলতা, অস্বাভাবিক‌তা, যৌন‍্যতা, বিকৃতি প্রসঙ্গে নির্দ্বিধায় আলোচনা করেছেন। আমার নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। আজ যে তোদের সাথে  এসব নিয়ে আলোচনা করতে পারলাম তা সম্ভব হয়েছে সুশীল‌বাবুর ডিডাক্টিভ মেথডে বক্তব্য শুনে, কিছু পড়ে, নিজের মনে ভেবে।” তবু একে অপরের পরিপূরক"এতক্ষণের আলোচনা‌য় আমরা বুঝেছি ব‍্যতিক্রম‌ ব‍্যতীত পুরুষ প্রকৃতি‌গতভাবে স্বভাবে বহুগামী। তার কামবোধ বেশি। নিয়ন্ত্রণ কম। অর্থাৎ সে একটা জলের কলসি। বিড়ের ওপর না থাকলে সামান্য ছোঁয়ায় গড়িয়ে মেঝে জলময় হবে। বিড়েটা হচ্ছে সামাজিক অনুশাসন, ব‍্যক্তিগত নীতিবোধের লাগাম। তুলনায় নারী হচ্ছে জলচৌকিতে রাখা চালের টিন। সহজে ভারসাম্য নষ্ট হয় না। টিন থেকে খাবলা মেরে কেউ চাল তুলে নিতে পারে। ধাক্কা মেরে ফেলে‌ও দিতে পারে। কিন্তু নিজে থেকে তা সচরাচর উল্টে পড়ে না। তবে হ‍্যাঁ, মরচে ধরে ঝরঝরে হয়ে গেলে, তখন সামান‍্য ঠোক্কর খেয়ে‌ও ফুটো হয়ে চাল গড়িয়ে পড়তে পারে।" "পূরাণে আছে সৃষ্টি‌কর্তা ব্রহ্মা‌ কন‍্যা সরস্বতীর প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাতে উপগত হন। তাই লয়ের দেবতা শিব তাঁকে অজাচারের জন‍্য বিনাশ করেন। তখন আবার ব্রহ্মাপত্নী গায়ত্রী ও কন‍্যা সরস্বতী শিবকে বলেন, হাজার হোক স্বামী, পিতা, ভুল করে ফেলেছে, এবারের মতো মাফ করে দাও। শিব ব্রহ্মা‌কে বাঁচিয়ে তুলে ধমকে দেন, খবরদার, এরকম ভুল যেন আর না হয়। কিন্তু ভুল তো যা হবার তা হয়েই গেছে। ব্রহ্মা‌র শরীর থেকে উদ্ভূত আদিপুরুষ মনু ও আদিনারী শতরূপা ভাইবোন সদৃশ হয়েও স্বামী স্ত্রী রূপে যৌনমিলনের ফলে সৃষ্টি করেন মানবজাতি। লোকমতে তাই মনুর সন্তান‌‌ই মানুষ।""ভাগবত বলছে যৌনক্রিয়া একমাত্র বংশরক্ষার প্রয়োজনেই করা উচিত। আনন্দ উপভোগের নিমিত্তে করলে তা ঈশ্বরে লীন হবার পথে অন্তরায়। যুবতী নারী অগ্নি-স্বরূপা আর পুরুষ ঘৃত-সম ফলে পিতা ও যুবতী কন‍্যার‌ও একান্তে নৈকট‍্য কাম‍্য নয়। তাতে অগ্নিকান্ডের সম্ভাবনা। তাই টিকিধারী সমাজপতিদের মতে নারী‌ হচ্ছে নরকের দ্বার‌। সেই যত নষ্টের মূল।""পুরুষ নিজের আসক্তির ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারলে‌ সেটা দোষের কিছু নয়। যেন ডায়াবেটিসের রোগী গবগব করে কমলাভোগ খেয়ে মিষ্টির দোকানীকে‌ই চোখ রাঙাচ্ছে, তুমি কেন চোখের সামনে শোকেসে সাজিয়ে রেখেছো হে? তথাকথিত মহান মানব সভ‍্যতা এহেন নানা একপেশে সামাজিক অনুশাসন ও নড়বড়ে নীতিবোধ নির্ভর করে বহমান। এই কারণেই নাস্তিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের লেখা‌য় পড়েছি - মনু নামক ব‍্যক্তি‌টি ছিলেন ওনার দু চক্ষের বালাই‌। এমন সামাজিক পরিস্থিতি‌তেই নিয়ত নৈকট্যে বসবাস নারী পুরুষের। তাই ঘটে যায় কিছু সমাজ নির্ধারিত নিয়ম হতে বিচ‍্যূতি। তবে ব‍্যতিক্রম‌ই নিয়মের পরিচায়ক। মনে রাখতে হবে নারী ছাড়া জীবনচক্র অসম্ভব। তেমনি পুরুষ ছাড়াও সৃষ্টি অচল।"চুনি বলে, "তুই  তো কথক ঠাকুরের মতো বলছি‌স রে। ঐসব ভাগবত, পুরাণ-টুরাণ পড়েছি‌স নাকি?"সুমন বলে, "না রে না, অতো নিষ্ঠা  আমার নেই। এখান ওখান থেকে খামচামারা ধারণা। তার থেকে যতটুকু এই আলোচনা প্রসঙ্গে মনে পড়ছে বলছি। আমার কথা‌র ভিত্তি‌তে কাউকে যেন কিছু বলতে যাসনি। চেপে ধরলে মুশকিলে পড়বি। তুই‌‌ও যদি আমায় কী পুরাণ, কোন পর্ব এসব জানতে চাস আমি স্রেফ উদাস হয়ে যাবো। তবে পুরান, মহাভারত কিন্তু বেশ ইন্টারেস্টিং। নানান বিচিত্র ঘটনা ও অজাচারের ছড়াছড়ি। কোথায় লাগে হলিউড, বলিউড ট‍্যাবলয়েড।"পুরুষের বাঞ্ছিত আচরণ ঈশু বলে, "এবার মনে হয় আমি বুঝতে পারছি জেঠু, তুই কিছু ঐতিহাসিক ঘটনা, পৌরাণিক আখ‍্যান, নাটকের চরিত্র, জটিল তত্ত্ব, সার্ভের রেফারেন্স দিয়ে কী প্রতিপন্ন করতে চাইছি‌স। অদম‍্য যৌনতাড়না সম্পন্ন পুরুষ‌ আসলে প্রবৃদ্ধির দাস। তাই অতি নিকট সম্পর্কে‌ও সে দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। সেটা সামাজিক দৃষ্টিতে বিকার হলেও প্রকৃতি‌ই তার মধ‍্যে নানা পদস্খলনের লাইসেন্স দিয়ে রেখেছেন। তাই তার সমস্ত  বিচ‍্যূতি‌ নারী‌র ক্ষমাসুন্দর চোখে দেখা উচিত, তাই তো?"সুমন বলে, "যদি আবার কিলিয়ে কাঁঠাল না পাকাস, তাহলে বলবো, ব‍্যাপার‌টা তুই মোটামুটি ঠিকই বুঝেছি‌স। আমি‌ও বুঝলাম তুই পড়াশোনা‌য় কেন এতো ভালো। কী সুন্দর তুই আমার কথার পাহাড় থেকে সারমর্মটা বলে দিলি। অর্থাৎ যৌনতা অতি আদিম প্রবৃত্তি যার উদ্ভব হয়েছে মানুষের যুক্তিবোধ, নীতিবোধ দাঁনা বাঁধার বহু আগে। যে Libido শব্দটির অর্থ কামেচ্ছা‍ - যেটি একটি ইংরেজি শব্দ হিসেবে ১৯০৯ সালে ফ্রয়েড তাঁর তত্ত্ব ব‍্যাখ‍্যায় প্রথম ব‍্যবহার করেন, সেটি তিনি ধার করেছিলেন ল‍্যাটিন শব্দ Lubido থেকে, যার অর্থ lust বা desire.  ল‍্যাটিনে কিন্তু শব্দটি‌র অস্তিত্ব কয়েক হাজার বছর ধরে আছে।" "প্রাকৃতিক নিয়মে পুরুষের বিচ‍্যূতি হ‌ওয়ায় সম্ভাবনা বেশি। এ পুরুষের অদৃষ্টলিখন ও নারী‌র অভিশাপ। তবে পুরুষের সব বিচ‍্যূতি তো আর প্রকৃতি, প্রবৃত্তি, নিয়তির দোহাই দিয়ে মাফ করা যায় না। উচিত‌ও নয়। তাই সমাজে থাকতে  হলে পুরুষকে‌ও সংযমের অনুশীলন করতে‌ হবে। একটা গোলা পায়রাও কামেচ্ছা জাগলে ঘাড়ের পালক ফুলিয়ে মেয়ে পায়রার চারপাশে ঘুরঘুর করে তার মনোবাঞ্ছা জানায়। লেডি যদি ফুরুর করে উড়ে না পালায় তাহলে তা মৌনং সম্মতি। তবেই তারা মিলিত হয়।" "তবে দুঃখের এবং লজ্জার বিষয় এই যে, প্রতিটি পুরুষ পায়রা যা বোঝে, অনেক পুরুষমানুষ তা পালন করতে পারে না। পুরুষের বিচ‍্যূতির শাস্তি অবশ্যই হ‌ওয়া উচিত। শুধু বিচ‍্যূতি‌র পশ্চাৎপটটি মনে রাখতে পারলে তা হয়তো  অত‍্যাচারিত নারীর অন্তরে‌র জ্বালা কিছুটা প্রশমিত করতে পারে। তাই এতো ফ‍্যানালাম।  ব‍্যতিক্রম বাদে প্রাকৃতিক নিয়মে পুরুষের তুলনায় নারী শারীরিক ক্ষমতায় অপেক্ষা‌কৃত দূর্বল। তাই নারী‌র ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার সাথে জোরপূর্বক যৌনমিলন ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এটা পৌরুষের‌ অপমান। যারা এটা বোঝে না তারা কৃমিকীটের‌‌ও অধম।"
    মুসলমানদের বদলানো যাবেনা - Partha Banerjee | অনেকেই চোখ বুজে বলে দেন, মুসলমানদের বদলানো যাবেনা। হিন্দুরা যতই লিবারাল হোক না কেন, "মুসলমানরা মুসলমানই থাকবে।" এই বিশ্বাসটা শুধু হিন্দুত্ব সন্ত্রাসীদের নয়। বহু লিবারাল, বামপন্থীরাও এই কথা বলে থাকেন।  অথচ তাঁরা মুসলমান সমাজের কোনো খবরই রাখেন না। আমি আগেও আমার বিভিন্ন আলোচনায় ও লেখায় বলেছি, বিশাল সংখ্যক শিক্ষিত লিবারাল হিন্দু একজন মুসলমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেন নি, এবং তাঁদের ব্যক্তিগত জীবনে মুসলমানরা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।  আমিও ঠিক এই রকমই ছিলাম। কালকের গোয়াবাগানের মিটিংয়েও বলেছি, আরএসএসের বিষফল খাওয়ার কারণে সেই ক্লাস ফোরের ঘটনা, যখন কেবলমাত্র আহমেদ নাম হওয়ার কারণে স্কুলের বন্ধু চঞ্চলের ছাতা ভেঙে দিয়েছিলাম। সেসব কথা আমি আমার দেশের জীবনস্মৃতি ঘটিকাহিনি বইতে লিখে রেখেছি।  তারপর ইউনিভার্সিটি জীবনে ও সুন্দরবন কলেজে অধ্যাপনা করার সময়ে প্রথম মুসলমান বন্ধু, ছাত্র ও সহকর্মীদের খুব কাছ থেকে দেখলাম। তাদের বাড়ি গেলাম। তাদের সঙ্গে খেলাম। তাদের ছেলেমেয়েদের আশা আকাঙ্ক্ষা সাধ স্বপ্নের সঙ্গে পরিচিত হলাম। দেখলাম, তাদেরও ঠিক আমাদের মতোই দুটো হাত, দুটো পা, দুটো চোখ, দুটো কান, এবং একটা নাকই আছে। বিশেষ তফাৎ নেই কোনো। বরং আমাদের অনেকের প্রাক-মনুষ্য একটা দীর্ঘ লেজ আছে, যা ওদের নেই।  আমেরিকার দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছরের জীবনে ঘনিষ্ঠ পরিচয় হলো সারা পৃথিবীর মুসলমানদের সঙ্গে। ইরান, ইন্দোনেশিয়া, প্যালেস্টাইনের মুসলমানদের সঙ্গে। এবং বিশেষ করে বাংলাদেশের ও পাকিস্তানের মুসলিমদের সঙ্গে। আমার পাকিস্তানের বন্ধু হায়দার রিজভী কেকেকে ঘাতকদের হাতে প্রায় খুন হলো এগারোই সেপ্টেম্বরের পর, এবং তার কয়েক বছর পরে সত্যি খুন হলো পাকিস্তানের সন্ত্রাসী ইসলামীদের হাতে। আচে দ্বীপের ছেলে আমার রুমমেট জাফর হামজা সিদ্দিক নৃশংসভাবে খুন হলো সি আই এর'র মদত দেওয়া জঙ্গী ঘাতকদের হাতে।  কী লড়াইটাই না করে গেছে, করে যাচ্ছে বাংলাদেশের লিবারাল মুসলমানরা মোল্লাতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আমাদের এখানে ভারতে ও পশ্চিমবঙ্গের হিন্দুরা জানেই না বাংলাদেশে এই দীর্ঘকাল ধরে চলা লড়াইয়ের কথা। যেখানে একুশে ফেব্রুয়ারির ভাষা শহীদদের পাঁচজনের পাঁচজনই মুসলমান। যেখানে কমিউনিস্ট মৌলানা ভাসানী ধর্মপ্রাণ মুসলমান। যেখানে লালন ফকির মুসলমান। শেখ মুজিব মুসলমান, তাজউদ্দীন আহমেদ যিনি মুজিবের অনুপস্থিতিতে একাত্তরের সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলোতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। শহীদজননী জাহানারা ইমাম মুসলমান। বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামাল মুসলমান। তারপর আমাদের বিদ্রোহী নজরুল ইসলাম তো আছেনই সবার ওপরে।  শ্রমিক আন্দোলনের পরিচিত নেতা ও নেত্রীরা মুসলমান এবং হিন্দু। যেখানে মুক্তিযুদ্ধের অগন্তি শহীদদের এক বিশাল অংশই মুসলমান। যেখানে উগ্র ইসলামীরা অভিজিৎ রায়কে খুন করার পর জনসমাবেশ, মিটিং মিছিলে প্রায় সবাই মুসলমান। গায়ক গায়িকা শিল্পী কবি নাট্যকার বাংলাদেশে ৯০% মুসলমান। মাটির ময়নার মতো ল্যান্ডমার্ক সিনেমার পরিচালক তারেক মাসুদ।  এদিকের এরা কেউ খবর রাখেনা। আমাদের আনন্দবাজার, দেশ জাতীয় মগজধোলাই কাগজগুলো, আমাদের বইমেলা, চলচ্চিত্র উৎসব বা লাল নাটকের কেউই এসব কথা কখনোই আমাদের বলেনি। আমরাও চোখ বন্ধ করে থেকেছি।  আধুনিক যুগের আধুনিক মনোভাবের মুসলমানদের কারুর বাড়িতেই চারটি স্ত্রী নেই, এবং অসংখ্য বাচ্চা নেই। আগেকার দিনে হয়তো ছিল, ঠিক যেমন অন্ধকার যুগে হিন্দুদের কুলীন বামুনরা পঞ্চাশটা বিয়ে করতো, আর হিসেব-না-থাকা সন্তানের জন্ম দিয়ে কিশোরী বৌদের বিধবা করে দিয়ে মরতো। সাধারণ ঘরে মুসলমানদের যদি আট দশটা ছেলেমেয়ে হতো, সে তো হিন্দুদের ঘরেও হতো। আমার বাবারা ছিল ন-জন ভাইবোন। আমার মায়েরাও তাই।  বিজেপি আরএসএস বিশ্ব হিন্দুদের মতো উগ্রপন্থীরা তো এসব প্রচার করবেই। কিন্তু লিবারাল বাঙালি হিন্দুরা কি তাদের মনোভাব বদলেছে? ___
  • জনতার খেরোর খাতা...
    আচার অনাচার - Sukdeb Chatterjee | আচার অনাচারআমরা ছোটবেলা থেকে বেড়ে উঠি আচার আচরণে নানান বিধি, নিষেধের আবহে। কোন বাড়িতে মাত্রাটা বেশী, কোথাও একটু শিথিল। এই বিধি নিষেধ গুলো তৈরি হয় মূলত সামাজিক ও ধর্মীয় সংস্কারকে(কু) অবলম্বন করে। ধর্মযাজকেরা বিভিন্ন সময়ে নিজ প্রয়োজনমত ওইগুলি পরিবর্ধন এবং পরিবর্তন করে পরিবেশন করেন। আর আমাদের ঘরে ঘরে তা রুপায়নের দিকটি নিষ্ঠার সঙ্গে তদারকি করেন বয়স্কা মহিলারা। অণু পরিবারে শতেক সমস্যা থাকলেও এই একটা ব্যাপারে তারা তুলনামূলক ভাবে নিরাপদ। অবশ্য কিছু প্রথিতযশা মাসিমা/কাকিমা আত্মীয়পরিজন এমনকি প্রতিবেশীদেরও যে কোন কাজেই, তারা চাক বা না চাক, গিয়ে হাজির হন এবং অবশ্যই কিছু বিধি নিষেধের ফিরিস্তি শুনিয়ে আসেন।দিন দুয়েক হল অভিজিৎ এর মা গত হয়েছেন। খবর পেয়েই পিসিমা চলে এসেছেন। অভিজিৎদের খুব ভালবাসেন। মহিলার সব ভাল সমস্যা একটাই, অতি মাত্রায় সংস্কারাচ্ছন্ন। অভিজিৎ ছোটবেলা থেকেই গ্যাস অম্বলে ভোগে। হবিষ্যির আতপ চাল আর ঘি কোনটাই তার সহ্য হবে না। তাই মেনুতে সামান্য বদল করে আতপের জায়গায় সিদ্ধ চাল আর ঘি এর জায়গায় মাখন খেয়েছিল। প্রথম দিন পিসি একবেলার জন্য বাড়ী গিয়েছিলেন। হবিষ্যি পর্ব নির্বিঘ্নে কেটেছে। পিসি সন্ধ্যেবেলা ফিরে এসেছেন। দ্বিতীয় দিন সকালে হবিষ্যির আইটেম দেখে পিসি আঁতকে উঠলেন। জানালেন যে অবিলম্বে আতপ চাল আর ঘিতে ফিরে না গেলে অভিজিৎ এর ইহকাল এমনকি পরকালেও বিপদের শেষ থাকবে না। শুধু তাই নয়, পুত্রের এ হেন অনাচারের জন্য তার মায়ের নাকি পরলোকে সঠিক পুনর্বাসন পেতে বেশ সমস্যা হবে। এরপর কোন কথা চলে না। অগত্যা অভিজিৎকে সেই সনাতন মেনুতেই ফিরতে হল। ফল পেতে বেশী সময় লাগেনি। দিন পনেরর মধ্যেই গ্যাস্টিকের জ্বালায় ডাক্তার ডাকতে হল।অসুস্থ অভিজিৎকে দেখতে এসে পিসিমার খেদোক্তি– সবই করলি অথচ কেন যে বাবা ওই একদিনের জন্য নিয়মটা ভাঙলি! একটু ভুলের জন্য কত কষ্ট পাচ্ছিস বলত!অভিজিৎ এর বলার কিছু নেই। যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখে ফ্যালফ্যাল করে পিসির মুখের দিকে চেয়ে রইল।এক বৃদ্ধা মারা গেছেন। ভদ্রমহিলা শেষ জীবনটা তাঁর একমাত্র মেয়ের বাড়িতে কাটিয়েছেন। কাকিমার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শুভেন্দু এসেছে। শুভেন্দু মাঝে মাঝে এসে কাকিমার খোঁজ খবর নিত। কাকিমার মুখাগ্নি সে করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের কূল পুরোহিত বিধান দিয়েছেন যে, কয়েকমাস আগে তার আর এক নিঃসন্তান কাকিমার সে মুখাগ্নি করেছে তাই, শুভেন্দুর অশৌচ চলছে। অশৌচ অবস্থায় এই কাকিমার মুখাগ্নি করা তার চলবে না। জামাই সব কাজকর্ম করেছিল। শ্রাদ্ধের জন্য সেই পুরোহিতকেই ডাকা হয়। জামাই একসময় তাকে জিজ্ঞেস করে যে কারো বাবা মারা যাওয়ার কয়েক মাসের মধ্যে যদি মা মারা যায় তাহলে কি হবে? ছেলেটি মার সব কাজকর্ম করবে, না তার অশৌচ চলছে বলে মায়ের ক্রিয়াকর্মের জন্য অন্য লোক খুঁজতে হবে। পুরোহিত কোন সদুত্তর দিতে পারেনি। অবশ্য লোকটা চতুর হলে আর একটা স্বরচিত বিধান দিয়ে বাবা/মায়ের ক্ষেত্রে স্পেশাল ছাড় ঘোষণা করে দিত।ছোট থেকে দেখে আসা নিয়ম-নীতিগুলো নিজের অজান্তেই আমাদের মনে জায়গা করে নেয়। যত না বিশ্বাসে তার থেকে অনেক বেশী অভ্যাস আর লোকলজ্জার কারণে আমরা সেগুলি মানি। ক্লাবের পিকনিক। শুনলাম, বিশুদা যাচ্ছে না কারণ, কিছুদিন আগে মা মারা গেছে আর পিকনিকের দিনেই প্রথম একাদশি। মতটা যদি পাল্টায় এই আশায় ওর বাড়িতে গেলাম। পিকনিকের কথা বলতেই মাথা নাড়িয়ে বলল- আমি তো আগেই বলেছি ওদিন একাদশী, যেতে পারব না।বললাম- তোমার জন্য আলাদা রান্না হবে।--না না, ওখানে সব ঠেকাঠেকি হবে। আর আমি তো সাবু, ফল মিষ্টি, এসব খাবো।এতো মহা গেরোয় পড়লাম। বিশুদা না গেলে তো পিকনিকটাই মাটি। বিশুদা জলের লোক। জলপথেই এগোলাম।মুখটা একটু চিন্তান্বিত করে বললাম- তুমি যাবে না আগে জানলে অতগুলো বোতল কিনতে বারণ করতাম।--মায়ের মুখাগ্নি করেছি। একাদশীর দিনে মদ খাওয়ার কথা বলছিস কি করে?-- চিবাস রিগাল ছাড়াও আরো কি সব দামী দামী মদ এসেছে। নষ্ট হলে গায়ে লাগবে। দেখি ওগুলোর এখন কি ব্যবস্থা করা যায়।টোটকায় কাজ হয়েছে। ব্র্যান্ডের নাম শুনে বিশুদার মুখটাই পাল্টে গেল।বলল— জিজ্ঞেস না করে কিনেই সমস্যা করলি। যাকগে, পাঁচকান করিস না। আমি সময়মত পৌঁছে যাব।স্পটে পৌঁছে চিবাস রিগালের জায়গায় সস্তার মাল দেখে দু পাঁচ কথা শোনালেও অবজ্ঞায় মুখ ফিরিয়ে নেয়নি। পরিচিত একজন তার বাড়ী থেকে পাটিসাপটা এনে দিয়েছিল। সেদিন আচার আর নিষ্ঠার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল বিশুদা। গ্লাসে মদের সাথে পরিমাণ মত সোডা মিশিয়ে পাটিসাপটার প্লেটের পাশে রাখল। তারপর পকেট থেকে বার করল ছোট একটা কাগজের ঠোঙা। ভাবলাম চাঁটের বাদাম বা চানাচুর। আমাদের ভুল প্রমানিত করে ঠোঙা থেকে কটা তুলসি পাতা বার করে গ্লাসে ফেলে চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করল। বুঝলাম দোষ কাটাচ্ছে। তারপর গ্লাসের থেকে মিশ্রিত সুধা অল্প একটু হাতে ঢেলে তা প্লেটের চারধারে ঘুরিয়ে আচমন করে মুখে দিল। ভাবা যায় না। আর পাটিসাপটা দিয়ে পেগের পর পেগ মদ খেতে আমি দ্বিতীয় কাউকে দেখিনি। তবে কথা রেখেছিল। সজ্ঞানে আমিষ স্পর্শ করেনি। চার পেগের পরে অবশ্য আর কোন বিধি নিষেধ কাজ করেনি।জাতপাত আমাদের দেশের এক ভয়ংকর ব্যাধি। সৌভাগ্যবশত পশ্চিমবঙ্গ এর প্রকোপ থেকে অনেকটাই মুক্ত। তবে আজও কুড়াওয়ালা বা মেথরকে ঘরের চেয়ারে বা সোফায় বসতে দিতে অনেকেরই একটু দ্বিধা হয়। হিন্দি বলয়ের মত অতটা না হলেও একটু পিছিয়ে গেলে আমাদের পরিচিত বলয়েও এর প্রাদুর্ভাব ছিল ঘরে ঘরে।শ্রাবণীর তখন ছ সাত বছর বয়স। বাড়ির পাশেই মুদির দোকানে গিয়েছিল লেবু লজেন্স কিনতে। ফেরার সময় দেখে রকে একটা গোলগাল বাচ্চা বসে রয়েছে। ও বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে আদর করতে শুরু করল। বাচ্চাও আদর পেয়ে খিলখিল করে হাসছে। ওদিকে বিধবা ঠাকুমা তখন টুকটুক করে চলেছেন বাড়ী লাগোয়া পুকুরে স্নান করতে। নাতনির কান্ড দেখে বুড়ি আর্তনাদ করে উঠলেন—বৌমা, তোমার মেয়ে জাতধম্ম কিছু আর রাখলে নাকো।চেঁচামেচিতে মালতী বাইরে আসতেই – দেখো, নিজের চোখে মেয়ের কান্ড দেখো। ঘরে ঢোকাবার আগে গায়ে একটু গঙ্গাজল ছিটিয়ে দিও।বুড়ির চেঁচামেচির কারণ শিশুটি মেথরানীর মেয়ে। ওকে বসিয়ে ওর মা আশপাশের ময়লা পরিষ্কার করছে। বুড়ি চোখের আড়াল হতেই মালতী মেয়ের থেকে কটা লজেন্স নিয়ে বাচ্চাটাকে দিয়ে একটু আদর করে ঘরে গেল।বুড়ি যখন কাচা জামাকাপড়গুলো পাশে রেখে ঘাটে স্নান করতে নামছে, মেথরানী তখন বাড়ির পিছনের নর্দমা পরিষ্কার করছে।ওকে দেখেই হুঁশিয়ারি—অহল্যা, জামাকাপড় গুলো যেন ছুয়ে দিস না।--না মা তা কেন হবে?একটু পরেই জলে কিছু পড়ার আওয়াজ হল আর “মাগো, মরে গেলাম” চিৎকার। অহল্যা ফিরে দেখে বুড়িমা আছাড় খেয়ে ঘাটে পড়ে রয়েছেন, শরীরের বেশিটাই জলের নিচে। অহল্যা ভাবছে বৌদিকে ডাকবে কিনা।--হাঁ করে দেখছিস কিরে মুখপুড়ি, মরে গেলে তবে তুলবি।--না মানে আমি তোমায় ছোঁব?--ওরে মাগী, না ছুঁয়ে কি তোলা যায়?হারু পাগলা ওদিক দিয়ে যাচ্ছিল। উদ্ধারকাজে সেও নেমে পড়ল। মাথার দিকটা হারু ধরতে যেতেই ওই অবস্থাতেও ঠাকুমা হা হা করে উঠল—অহল্যা মাথার দিকটা তুই ধর, ওর তালের ঠিক নেই, ফেলে দেবে।মালতীও চলে এসেছে। হারু পাগলা ব্যস্ত মানুষ। পাড়া পরিক্রমায় যাওয়ার আগে বুড়ির দিকে চেয়ে হঠাত বলে উঠল—বলত আমার বাড়ী কোথায়? নেই তো বলবি কি।--বলত আমার জাত কি? নেই তো বলবি কি।এই প্রশ্ন ও উত্তরের সেট জানি না কেন মাঝে মঝেই ও আওড়ায়। হয়ত সাধারণের থেকে একটু আলাদা বলে।নর্দমা পরিষ্কারের সাথে সাথে অহল্যার স্পর্শে সেদিন বুড়ির অন্তরের ময়লাও কিছুটা হলেও সাফা হয়েছিল। কারণ, বুড়ি পরে আর অতটা স্পর্শকাতর ছিল না।
    ভিখারি  - Sukdeb Chatterjee | ভিখারি ডাকটা চেনা হয়ে গেছে। প্রতি সোমবার সকালে খঞ্জনী বাজিয়ে নাম সংকীর্তন করতে করতে হাজির হয় লোকটা। মাথায় সাদা পাগড়ী, অঙ্গে সাদা শার্ট আর ধুতি। চুল দাড়ি ধবধবে সাদা। একহারা টানটান চেহারা। বাড়ির সামনে এসে গান থামিয়ে গৃহস্থের উদ্দেশ্যে হাল্কা করে ডাক “জয় নিতাই”। এক আধ দিন আবার একটু বেশি সকালে চলে আসে। আমরা তখনো হয়ত ঘুম থেকে উঠিনি। তাই ডাকে কোন রেসপন্স না পেয়ে বাধ্য হয়ে তখন কলিং বেল বাজায়।কলিং বেল বাজিয়ে কেউ ভিক্ষা চাইলে আমার মেজাজ গরম হয়ে যায়। তবে মেজাজ যেমনই থাক ওই লোকটিকে কখনো বিমুখ করিনি। সামনে যা দুচারটে পয়সা থাকে দিয়ে দিই। আমার স্ত্রী শ্রাবণী ধর্মপ্রাণা মহিলা। ও এই আধা সাধুটিকে দশ বিশ টাকা, সঙ্গে মাঝে মাঝে চাল, ডাল, আনাজপাতি দেয়। স্বাভাবিক কারণেই লোকটি আমার থেকে আমার স্ত্রীকেই বেশী পছন্দ করে। এ নিয়ে রঙ্গ তামাশা করে শ্রাবণীকে বলি, যে ব্যাটার একটু দোষ আছে। আমার বাড়ির পাওনা গণ্ডা মিটে গেলে অনেক আশীর্বাদ আর ভাল ভাল কথা বলে আবার খঞ্জনী বাজিয়ে গান করতে করতে পরবর্তী গন্তব্যের দিকে রওনা হয়। বাড়িতে নানা রূপে, নানা অছিলায়, অনেক ভিখারি আসে, কিন্তু এই বৃদ্ধের প্রতি আমাদের একটা টান এসে গেছে। কোন সোমবার সকালে “জয় নিতাই” ডাকটা না শুনতে পেলে একটু আশঙ্কা, একটু অভাব বোধ মনে ঘুরপাক খায়।এক রবিবার দুপুরবেলায় সস্ত্রীক আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষার্থে বেরিয়েছি। কিছুটা যাওয়ার পর এক অনাথ আশ্রমের দিকে চোখ পড়ল। আমাদের বাড়ী থেকে কিছুটা দূরে রাস্তার ওপরেই পড়ে আশ্রমটা। বহুবার সামনে দিয়ে যাতায়াত করেছি। ওখানে কিছু সাহায্য করার ইচ্ছে অনেকদিন থেকেই রয়েছে। তবে এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আশ্রম সংলগ্ন ছোট মাঠটায় খাওয়া দাওয়া হচ্ছে। মাঝে মাঝে কোন সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সৌজন্যে এই অভাগা শিশু ও কিশোরগুলি একটু ভালমন্দ খেতে পায়। দেখতে ভাল লাগে। গাড়ি থেকে নেমে আশ্রমের গেটের সামনেটায় গিয়ে দাঁড়ালাম। হঠাত কানে এল “জয় নিতাই”। আরে, এতো চেনা গলা! গেট দিয়ে একটু ভেতরে উঁকি মেরে দেখি হ্যাঁ, সেই লোক। ঘুরে ঘুরে বচ্চাগুলোর খাওয়া দাওয়া তদারকি করছে। কার কি লাগবে জিজ্ঞেস করছে।শ্রাবণী বলল- নিজের বোধহয় কোন বাড়ী ঘর নেই, ও মনে হয় এখানেই থাকে।উৎসাহিত হয়ে আর একটু ভেতরে ঢুকলাম। আশ্রমের লোকজন পরিবেশন করছে। বাড়ির বারান্দার একটা ধারে রান্না খাবার রাখা আছে। একজন বয়স্কা মহিলা একটা ছোট টুলে বসে স্টোর থেকে পরিবেশনের লোকেদের খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। আর একটু ভেতরে যেতেই লোকটি আমাদের দেখতে পেয়ে এগিয়ে এল। মুখে তার খুশির ছটা। -- বাবুরা এখানে ?-- এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম, তোমায় দেখতে পেয়ে চলে এলাম।-- এই দুটো চেয়ার নিয়ে আয়, এস মা জননী...বললাম, এক যায়গায় নিমন্ত্রণ আছে সময় নেই, বসা যাবে না। কোন ওজর আপত্তি না শুনে আমাদের প্রায় টানতে টানতে নিয়ে গিয়ে একটা গাছের ছায়ায় চেয়ার পেতে বসাল।পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল একজন মাঝ বয়সী লোক। আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিল –সুমন্ত, সুমন্ত সরকার। ওই এই আশ্রমের সেক্রেটারি।-- বাবু, তোমরা একটু বস। বাচ্চাগুলো খাচ্ছে, ওখানটা একবার ঘুরে এখনি আসছি।লোকটি চলে গেলে সুমন্তকে জিজ্ঞেস করলাম—উনি কি এখানেই থাকেন?-- না না, গোঁসাইয়ের বাড়ী এখান থেকে দু কিলোমিটার উত্তরে, রুইয়াতে।-- তা এখানে কি করেন?-- আশ্রমের কেউ না হয়েও উনিই আশ্রমের সব, অভিভাবক বলতে পারেন। মাসে একবার অন্তত বাচ্চাগুলোকে পাত পেড়ে খাওয়ান। এ ছাড়া জামা, প্যান্ট, খাতা, পেন তো আকছারই এনে দিচ্ছেন।কথার মাঝেই “জয় নিতাই” ফিরে এল।কথায় কথায় জানলাম, ওর নাম শুকদেব গোস্বামী। পদবী ছিল সরকার, দীক্ষা নিয়ে গোস্বামী হয়েছে।বললাম—আমার নামও তো শুকদেব।-- ওই জন্যই তো এত টান কত্তা।জিজ্ঞেস করলাম — ভিক্ষা কর কেন?-- সে অনেক গল্প কত্তা। মোটামুটি একটা চাকরি করতাম। তারই ভরসায় বিয়ে, ঘর সংসার, সবই করেছি। মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি। ছেলেটাও বড় হয়েছে। কারখানায় কাজ করে, বিয়েও করেছে। রিটায়ার করার পরে সংসারটা একটু বাড়াবার ইচ্ছে হল। ব্যাস ওইখানেই যত বিপত্তির শুরু।--সে তো হবেই। রিটায়ারের পরে সংসার বাড়াবে, এমন কাজ কোন বাড়ির লোক মানবে বল তো?গোঁসাই হেসে বলে—না না, তুমি যেমনটা ভাবছ তা নয়। এই আশ্রমটা তখন সবে হয়েছে। প্রায়ই আসতাম। বাচ্চাগুলোকে দেখে বড় কষ্ট হত। ওরাও তো কারো না কারো সন্তান। মায়ায় জড়িয়ে গেলাম। কিন্তু আমার সঙ্গতি কোথায়? পেনসনের সামান্য কটা টাকায় তো কিছু হবে না। তাই বাড়ী বাড়ী ঘোরা ছাড়া আর তো আমার কোন উপায় নেই।-- এই যে ভিক্ষা কর, বাড়ির লোকে কিছু বলে না।-- বলবে না আবার। প্রথমে বউ, ছেলে, মেয়ে, অনেক মানা করেছে। তারপর বচসা, তিরস্কার, গালমন্দ। তবে ছেলে যেদিন আমার গায়ে হাত তুলতে এল সেদিন গিন্নি আমার পাশে এসে দাঁড়াল। শুধু পাশে দাঁড়ানই নয়, ছেলেকে সেদিনই বাড়ী থেকে বার করে দিল। আর সেই থেকে আমার সমস্ত পাগলামিতে ও সঙ্গ দেয়। কেবল ভিক্ষার সময় সঙ্গে নিই না। বাড়ির বৌ তো মনটা সায় দেয় না।-- ভিক্ষা করাটা তো সকলে দেখছে, কিন্তু এই যে এত দান ধ্যান কর তা ছেলে, মেয়ে, পাড়া প্রতিবেশীরা জানে?-- দান তো তোমরা করছ বাবা মায়েরা, আমি তো কেবল সেগুলো জড় করি। আশ্রমের ব্যাপারটা আমি বরাবর আড়ালে রাখতে চেষ্টা করেছি কিন্তু কেমন করে জানি জানাজানি হয়ে গেছে।-- তুমি একটা ভাল কাজ করছ, তা গোপন করবে কেন? এই ব্যাপারে মহাপুরুষদের পরামর্শের সাথে আমি একমত নই। ভাল কাজের কথা লোকে জানলে তবেই তো এগিয়ে আসবে সাহায্য করতে। তাতে তোমার এই বড় সংসারের মানুষগুলোও আর একটু ভাল থাকতে পারবে।-- এটা তুমি ভুল বলনি বাবু। আগে যারা ফিরেও তাকাত না এখন না চাইতেই তাদের অনেকে মাঝে মাঝে বিশ পঞ্চাশ হাতে গুঁজে দেয়। আশ্রমের খবরাখবর নেয়।মানুষ চেনা বড় সহজ নয়। এতদিনের দেখা এক ভিখারির কি অনন্য রূপ প্রত্যক্ষ করলাম।নতুন করে মানুষটাকে জানলাম।এক দৃষ্টে চেয়ে আছি দেখে ও শুধোলো—বাবু, অমন করে কি দেখছো?-- তোমাকে।-- সেকি, আমারে আবার নতুন করে কি দেখবে? এই ভিখারি তো কবে থেকে তোমাদের বাড়িতে গিয়ে হাত পাতছে।-- গোঁসাই, আমরা সকলেই কোন না কোন সময় ভিক্ষা করি। রাজনীতির কারবারিরা ভোটের আগে বাড়ী বাড়ী গিয়ে ভিক্ষা করে। আবার ভোটে জিতে গদিতে বসার পরে তাদেরই কাছে ইচ্ছায় হোক বা বাধ্য হয়ে আমরা অনেকেই কৃপা ভিক্ষা করতে যাই। জীবনে ওপরে ওঠার তাগিদে মানুষ কতজনের কাছে কতকিছু হারিয়ে নিজের ভিক্ষার পাত্র পূর্ণ করার সাধনায় মেতে থাকে। কেউ উঠতে পারে, কেউ পারে না। এ সবই ভিক্ষা। তবে এর সবটাই নিজের অথবা আত্মজনের জন্য। তোমার ভিক্ষা অপরের জন্য।আপন ঘর, আপন জন,এতেই ব্যস্ত সবাই,কিন্তু পালতে গিয়ে অন্যজনায়ভিক্ষা করে গোঁসাই।-- অপর কেন বলছ কত্তা? আমিও তো নিজের মানুষদের জন্যেই ভিক্ষা করি। এই বাচ্চাগুলো তো আমার পর নয়, এরাও তো আমারই সংসার।এমন ভাবে কজন ভাবতে পারে? গোঁসাইয়ের ভাবনার গভীরতায়, বিশালত্যে, আপন পরের সীমারেখাটা হারিয়ে যায়।-- তোমার এই ভাবনাটা আমাকে ভিক্ষা দাও না গোঁসাই।-- কি যে হেঁয়ালি করে কথা কও কিছু বুঝি না। চল আমার গিন্নির সাথে আলাপ করিয়ে দিই, খুশি হবে।আমাদের নিয়ে গেল রান্নার জায়গায় টুলে বসে থাকা সেই বয়স্কা মহিলাটির কাছে।-- গিন্নি, এই বাবু আর মা জননী তোমার ভিখারি বরকে অনেক সাহায্য করে।মহিলা স্নেহের দৃষ্টিতে আমাদের দেখে বললেন—এর সাথে বেশী মিশোনা বাবু। নিজে পাগল, তোমাদেরও পাগল করে ছাড়বে।নিজের সুখদুঃখ, আয়েশ, সম্পর্ক, অহম্ সবকিছুকে আহূতি দিয়ে তবেই আত্মোৎসর্গের এই যজ্ঞে সামিল হওয়া যায়। এ পাগল তাড়া করে চলেছে সমাজের আভাব, অনটন, দারিদ্রকে।বললাম- অমন পাগল কি যে সে হতে পারে মাসী! আর কত্তার পাগলামোতে তুমিও তো দেখছি বেশ মেতে রয়েছ।-- কি আর করি বল, ছেলে, মেয়ে সব এক এক করে ছেড়ে চলে গেল। আমি পাশে না থাকলে বুড়োটা যে একেবারে একা হয়ে যাবে বাবা। সত্যি কথা বলতে কি ওর ভিক্ষা করার কথা যখন প্রথম কানে এল তখন ছেলে মেয়েদের সাথে আমিও ওকে পাঁচকথা শুনিয়েছি। স্বামী ভিক্ষা করে একথা শুনলে কার না রাগ হয় বল? তারপর এই আশ্রমের কথাটা জানলাম। একদিন এসে আড়াল থেকে দেখলাম। ওকে ঘিরে ধরে বাচ্চাগুলোকে আনন্দ করতে দেখে মনটা কেমন যেন হয়ে গেল। তারপর থেকে আর প্রশ্ন করিনি, পাশে থেকেছি।অনেক দেরী হয়ে গেছে, এবার যেতে হবে। গোঁসাইকে সে কথা জানাতে ও আমতা আমতা করে বলল—বাবু, না গেলেই নয়।বললাম—কেন?-- আমাদের সাথে যদি দুটি ডাল ভাত খেতেন বড় ভাল লাগত।পঙক্তি ভোজে ভিক্ষালব্ধ অন্ন সেবনের এমন আন্তরিক আহ্বান ফেরাবার সাধ্য আমার ছিল না।
    জীবন তরঙ্গ পর্ব ৪০ - Sukdeb Chatterjee | জীবন তরঙ্গ পর্ব ৪০রজতের বৌভাতের পরের দিন নয়ন অফিসে জয়েন করল। কাজ শুরু করার একটু পরেই অভিজিৎ সামন্তর  তলব এল। ঘরে ঢুকতেই পরিচিত গম্ভীর আওয়াজ ভেসে এল—বন্ধুর বিয়েতেই তিন দিন ছুটি!--খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু স্যার। একেবার ছোটবেলা থেকে একসাথে পড়াশুনা করেছি।  --নিজের বিয়ের আপডেট কী? পছন্দের কেউ আছে, নাকি মা বাবাই ভরসা!নয়ন একটু লজ্জা পেয়ে বলল--তেমন কেউ নেই স্যার।  --সেকি? ভাল চাকরি কর, দেখতে সুন্দর, ফাঁকা পড়ে থাকার তো কথা নয়!। যাক, এবার কাজের কথায় আসি। তোমাকে একবার কয়েকদিনের জন্য শিলিগুড়ি যেতে হবে। শিলিগুড়ি অফিসে কিছু কাজ আছে। একটা ব্যাপারে কিছু ক্লারিফিকেশনের দরকার। ওদের কাছে চেয়ে পাঠান যেত, কিন্তু আমি সেটা চাইছি না। আমি চাই তুমি ওখানে গিয়ে একবার সরেজমিনে খাতাপত্রগুলো দেখে এস।  --কবে যেতে হবে স্যার?--একটু তাড়াতাড়ি গেলেই ভাল হয়। নেক্সট উইকে যেতে পারবে?--আমার কোন অসুবিধে নেই স্যার।--আমি তা হলে সামনের মঙ্গলবার যাওয়ার টিকিট করিয়ে রাখছি। ফেরার টিকিট এখনই করাব না কারণ, ওখানে তোমার কাজ শেষ হতে কতদিন লাগবে, তা এখনই বলা মুশকিল।  ফেরার টিকিট পরিস্থিতি বুঝে তুমি এনজেপিতে করিয়ে নিও। আমি ওখানকার ইনচার্জকে একটা চিঠি লিখে দেব, যাওয়ার আগে মনে করে ওটা আমার কাছ থেকে চেয়ে নিও।  --ঠিক আছে স্যার।নয়ন চাকরি পাওয়ার পরেই আহেলি জিজ্ঞেস করেছিল—কিরে, এবার মেয়ে দেখা শুরু করি?নয়ন মাকে বাধা দিয়ে বলেছিল—একদম না। এক বছর পরে ও নিয়ে ভাববে।  নির্ধারিত সময় পার হবার পর নয়ন মাকে আর না করেনি। সবুজ সংকেত পাওয়ার পর,  রমেন আর আহেলি ছেলের বিয়ের জন্য দেখাশোনা শুরু করে দিয়েছিল। রজতের বিয়ের পর তা আরো গতি পেল। যদিও তখনো নোঙর করার মত ঘাট খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরই মাঝে নয়ন অফিসের কাজে শিলিগুড়ি রওনা হল। রাতের ট্রেন,  আহেলি ছেলের জন্য খাবার করে  দিয়েছিল। লাগেজ খুবই কম, একটা মাত্র মাঝারি ব্যাগ। এসি থ্রি টিয়ারে রিজার্ভেসন। নয়নের লোয়ার বার্থ ছিল। গাড়ি ছাড়ার একটু পরেই নয়ন রাতের  খাওয়াটা সেরে নিল।  মিডল বার্থের ভদ্রলোক বর্ধমান আসার আগেই শোয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। মাঝের বার্থ তোলা থাকলে, নিচের বার্থে মাথা নিচু করে বেশিক্ষণ বসে থাকা  যায় না। এত তাড়াতাড়ি নয়নের ঘুমোবার অভ্যাস নেই।  ইচ্ছে না থাকলেও, অসময়েই নয়ন শুয়ে পড়তে বাধ্য হল।ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে বারোটা, পায়ের কাছে ঠেলা লাগতে নয়নের ঘুম ভেঙে গেল। দেখল,  একজন বয়স্কা মহিলা ওর বার্থের একপাশে ঠাঁই করে নিয়েছে। পাশে দাঁড়িয়ে  একজন মাঝ বয়সী লোক, এদিক ওদিক চোখ বুলিয়ে একটু পাছা  ঠেকাবার জায়গার সন্ধান করছে। নয়ন উঠে বসল। টিটির সৌজন্যে কয়েকজন আনঅথরাইজড প্যাসেঞ্জার কামরায় উঠে বার্থের আশায় টিটির পিছন পিছন ঘোরাঘুরি করছে। নয়ন লক্ষ্য করল, দু একজন করিতকর্মা পর্যাপ্ত যৌতুকের বিনিময়ে টিটির অনুগ্রহ লাভ করেছে। অন্যেরা তখনো চেষ্টা চালাচ্ছে। বুড়ির সাথের  লোকটি তখনো কিছু ব্যবস্থা করে উঠতে পারেনি।    লোকটি নয়ন বিরক্ত হয়েছে  বুঝতে পেরে অনুনয়ের সুরে বলল- ভাই আমার মা অসুস্থ, দয়া করে একটু বসতে দিন। একপাশে বসে থাকবে, আপনার শোবার অসুবিধে হবে না। কবে টিকিট কেটেছি, ওয়েটিং আর কিছুতেই কনফার্ম হল না। গাড়িতে ওঠার পর থেকেই একটা  বার্থের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছি, কোথাও কিছু পেলাম না।বসিয়ে তো আগেই দিয়েছে, তারপর মাঝরাতে এই শান্তিপুরী আদিখ্যেতা শুনে নয়নের বিরক্তি  আরো বাড়ল।তা প্রকাশ না করে বলল—ঠিক আছে বসুন।লোকটা নিশ্চিন্ত হয়ে বেটার অপশনের সন্ধানে টিটির সান্নিধ্যে গেল। বেশ খানিকক্ষণ পরেও যখন ফিরল না, তখন নয়ন বুঝতে পারল যে, নিজেরও একটা ব্যবস্থা করে ফেলেছে। এদিকে বুড়ি তো বসার পর থেকেই ঢুলতে শুরু করল। থেকে থেকেই নয়নের গায়ে পড়ছে। একটু পরে  নয়নের পায়ের   কাছে খানিক জায়গা জবর দখল  করে, পুঁটলি পাকিয়ে শুয়ে পড়ল। নয়ন টয়লেটে যাওয়ার জন্য  উঠল। দরজার কাছে গিয়ে দেখে বুড়ির সন্তান চেকারের জায়গায় বসে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছে। টয়লেট থেকে ফিরে বাকি রাতটা নয়নকে বসেই কাটাতে হল। বুড়ি ততক্ষণে ফাঁকা যায়গা পেয়ে হাত পা ছড়িয়ে ঘুমোচ্ছে। রাগও হল আবার মায়াও হল। ডেকে তুলে আর সরাল না। খানিকক্ষণ বাদে ভদ্রলোক মাকে দেখতে এসে নয়নকে বসে থাকতে দেখে খুব লজ্জায়  পড়ে গেল।-- ছিছি আপনি বসে আছেন, দাড়ান আমি মাকে ডেকে সরিয়ে দিচ্ছি।নয়ন বাধা দিয়ে বলল— থাক থাক, ডাকার দরকার নেই। একে বয়স হয়েছে তায় অসুস্থ,   ঘুমতে দিন। আর তো একটু পরেই ভোর হয়ে যাবে।-- আপনাকে  কি বলে যে ধন্যবাদ দেব!ভদ্রলোক ঘুরেফিরেই আসছিলেন। অল্পস্বল্প গল্পগাছাও হচ্ছিল। নামটাও জানিয়েছে “অসিত দত্ত।”  জিজ্ঞেস করলেন- শিলিগুড়িতে আপনার বাড়ি, নাকি কোথাও বেড়াতে যাচ্ছেন? -- বাড়িও নয়, বেড়াতেও যাচ্ছি না। অফিসের কাজে যাচ্ছি, দিন দুয়েক বাদে ফিরে যাব।-- আমি থাকি ক্ষুদিরাম পল্লিতে। আমিও একসময় অফিসের কাজেই এসেছিলাম, তবে  আপনার মত কয়েক দিনের জন্য নয়, বেশ কয়েক বছরের জন্য। এখানে ট্রান্সফার হয়ে আসার পরে যায়গাটা ভাল লেগে যায়। আর ফিরে যাওয়ার  আগ্রহ দেখাইনি। ছেলে মেয়েরা তখন স্কুলে পড়ছে, ফিরে গেলে ওদের পড়াশুনা নিয়েও সমস্যা হত। পরে ছোটখাট একটা বাড়ি করেছি। ফলে এখন শিলিগুড়ির স্থায়ী বাসিন্দা বলতে পারেন। ঠাকুমাও ততক্ষণে উঠে পড়েছেন। সলিড একটা ঘুম দিয়ে শরীর মন বেশ চাঙ্গা হয়ে গেছে মনে হল। আলাপচারিতায় যোগ দিলেন। নয়নের কোথায় বাড়ি, শিলিগুড়িতে কোথায় যাচ্ছে, কেন  যাচ্ছে, কোথায় কাজ করে, বাড়িতে কে কে আছে, অল্প সময়ের মধ্যেই সব তথ্য সংগ্রহ  করলেন। নিজেরও যাবতীয় তথ্য নয়নকে উগরে দিলেন। বুড়ি বেশ রসিক, কথা বলে নয়নের বেশ মজা  লাগছিল। গল্প করতে করতে নিউজলপাইগুড়ি এসে গেল। ট্রেন এখানেই শেষ, ফলে তাড়াহুড়ো করে নামার কোন দরকার নেই। গেটের মুখটা একটু ফাঁকা হতে নয়নরা নামার জন্য উঠে দাঁড়াল। নয়ন বুড়িকে ধরে ধরে নামাল।    প্ল্যাটফর্মে নেমে বুড়ি জিজ্ঞেস করলেন—বাবা এখানে থাকবে কোথায়?নয়ন বলল—এখনো কিছু ঠিক করিনি। আমাদের অফিসের কাছাকাছি কোন একটা হোটেলে থাকব।  অফিসে গেলে ওরাই সব ব্যবস্থা করে দেবে।অসিত জিজ্ঞেস করলেন—আপনাদের অফিসটা কোথায়?--ঠিকানা লেখা আছে, জলপাইগুড়ির উকিলপাড়া।  স্টেশন থেকে কতক্ষণ লাগবে বলতে পারেন?--দূর আছে, এক ঘন্টার ওপর লাগবে। তবে যানবাহন অনেক আছে, অসুবিধে হবে না।  ওদের টাটা করে যেই নয়ন যাওয়ার জন্য পা বাড়াতে যাবে, বুড়ি অত্যন্ত স্নেহের সঙ্গে নয়নের পিঠে হাত দিয়ে বললেন—বাবা, হোটেলে না থাকলেই নয়!  --হোটেল ছাড়া আর কোথায় থাকব ঠাকুমা? এখানে তো আমার কোন আপনজন নেই যে, তার বাড়িতে গিয়ে থাকব। তা ছাড়া অফিসের কাজে এসেছি, হোটেল খরচ তো আর পকেট থেকে যাবে না। অফিসের কাছাকাছি কোন হোটেলে থাকলে সব দিক থেকেই সুবিধে।   --এখানেও তোমার আপনজন আছে। আমাদের পর ভাবছ কেন? কয়েকটা দিনের তো ব্যাপার, আমাদের বাড়িতে চল না বাবা।নয়ন খুব বিব্রত অবস্থার মধ্যে পড়ে গেল। অপরিচিত কারো বাড়িতে গিয়ে থাকাটা খুবই  অস্বশ্তির। আবার বুড়ি এমনভাবে ধরেছে যে, মুখের ওপর না বলতেও খারাপ লাগছে। কি করবে বুঝে উঠতে পারছিল না।বুড়ির দেখাদেখি বুড়ির ছেলেও নয়নকে ওদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য পিড়াপিড়ি করতে শুরু করল।   --কি এত ভাবছেন? চলুন চলুন,  কোন অসুবিধে হবে না। আমরা থাকতে কেন মিছিমিছি হোটেলে উঠবেন? আপনাকে আপনার অফিসে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা আমি করে দেব।এত আন্তরিক আহ্বানকে ফেরান কঠিন। সমস্ত অস্বস্তি আর সংকোচকে বিসর্জন দিয়ে নয়নকে ওদের অনুগামী হতে হল।   চলবে
  • ভাট...
    commentr2h | বাহ, এটা তো চমৎকার ব্যাপার। আগেও দেখেছিলাম। চ্যানেলটা লাইক সাবস্ক্রাইব ইত্যাদি করে রাখি।
    commentlcm | বিশ্বাস রেকর্ডের সঙ্গে এই কাজটা করছি, ২০০+ সিডির গান ইউটিউবে তোলা হয়েছে, কদিন আগে আরও কিছু অপ্রকাশিত রামকুমারের হিন্দি ভজন দেওয়া হল -
     
     
    commentসমরেশ মুখার্জী | "ধোতু" ... নিত্যনতুন অ্যাক্রোনিম শিখি! laugh 
     
    এটা আমি আগেও শুনেছি তবে "গধোতু" হিসেবে where গ = গঙ্গা‌জল। তবে হতে পারে নমমি গঙ্গে প্রকল্প করেও গঙ্গার দূষণ খুব একটা কমেনি বলে আগমার্কা ধোতু বোঝাতে গ বাদ গেছে।
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত