এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  ইতিহাস  শনিবারবেলা

  • পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি – ম্যাসিডোনিয়া ২

    হীরেন সিংহরায়
    ধারাবাহিক | ইতিহাস | ০২ মার্চ ২০২৪ | ৫৫১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • মুদ্রিত দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশ, বইমেলা - ইত্যাদিজনিত নাতিদীর্ঘ বিরতির পর আবার শুরু হল পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি। আন্তর্জালে প্রকাশিত পর্বগুলির পরিমার্জিত ও সম্পাদিত রূপ - মুদ্রিত খণ্ড দুটি তাদের বিস্তার ও বৈচিত্রে সংগ্রহযোগ্য।
    মুদ্রিত বইগুলি নিয়ে পাঠকদের যেকোনও রকম পরামর্শ ও মতামত স্বাগত - এই ৪২তম থেকে বাকি পর্বের পরিবর্ধিত রূপ সম্পাদিত সংকলিত হবে ডায়েরির তৃতীয় ও অন্তিম পর্বে। আমরা আশা করবো পরবর্তীকালে এই গ্রন্থের তিনটি খণ্ড একত্রে শোভন সংস্করণ প্রকাশ করা সম্ভব হলে তা পাঠকদের মতামতে ঋদ্ধ, তথা গুরুচণ্ডা৯র ঘোষিত পাঠক-লেখকের যৌথতার আদর্শের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হবে।

    পূর্ব ইউরোপের ডায়েরি, ম্যাসিডোনিয়া, পর্ব ৪২-এ আপনাকে স্বাগত।
    গ্রিক দোলমাদোকিয়া


    গভর্নরের সঙ্গে এক ঘণ্টা


    লন্ডনে বাস করি, আমার ব্যাঙ্ক আমেরিকান - সেই সুযোগ নিয়ে আমেরিকান ট্রেড টিমের সঙ্গে ভিড়ে প্রথমবার মাসিদোনিয়া গেছি। এই সব ভ্রমণে সুবিধে অনেক। এমন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, একত্র বসার সুযোগ ঘটে যা ব্যাঙ্কার হিসেবে কখনও মেলে না। নিজেদের স্বাধীনতা খানিকটা খর্ব হয় - আমাদের গতিবিধি, কোথায় কখন কার সঙ্গে দেখা হবে সেটা সেই ডেলিগেশানের সঙ্গে এক সূত্রে বাঁধা। তবে ট্রাভেল এজেন্সির ভাষায় আমাদের কিছু মুক্ত সময় থাকতো। কেউ সেটা দোকান বাজারে অথবা শহুরে দ্রষ্টব্য পরিক্রমায় ব্যয় করেন। আমরা কিছু স্থানীয় ব্যাঙ্কের সঙ্গে সাক্ষাৎকার সেরে নিই।

    আমেরিকান দূতাবাসের বাণিজ্যিক আতাশে এলেন ব্রেকফাস্টের পরে।

    সরকারি মিনি বাসে চড়ে গেলাম কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের বহুতল অফিসে। আমাদের মিটিং মাসিদোনিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাঙ্কের অধ্যক্ষ বরকো স্টানোয়েভস্কির সঙ্গে। ক্রোয়েশিয়া বা স্লোভেনিয়াতে এই ধরনের পদে আমরা তরুণতর মুখ দেখেছি – আগের রেজিমের কোন কলুষ যাঁদের গায়ে লাগেনি। স্টানোয়েভস্কির বয়েস ষাটের ওপরে হবে অনুমান করা গেল। জার্মানে শ্লাউয়ার ফক্স ( ধূর্ত বেড়াল ) কথাটা শোনা যায়। তিনি তার জিতা জাগতা নমুনা। মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই কোন ভাবনা চিন্তা তাঁর মাথার ভেতরে খেলা করছে! আমাদের জিজ্ঞেস করার ধৃষ্টতা নেই, প্রয়োজনও নেই প্রথমে শুনে যাই। নিজেই তাঁর সংক্ষিপ্ত সি ভি শোনালেন। ইকনমিকসে এম এ, তারপরে নানান সরকারি অর্থ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন, এমনকি মানি ট্রান্সফার দপ্তর চালিয়েছেন। মানে কমিউনিস্ট জমানায় অর্থ ব্যবস্থার উচ্চপদে আসীন ছিলেন। ক্রেডেনশিয়াল প্রতিষ্ঠা করা শেষ হলে তিনি মানিটারি পলিসি ধরলেন ‘আপনারা সকলেই অবহিত আছেন সোশালিস্ট ফেডারাল রিপাবলিক অফ ইউগোস্লাভিয়ার (এস এফ আর ওয়াই) অন্তিম দিনগুলিতে মুদ্রাস্ফীতি এক ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। আমরা বিলিয়ন দিনারের নোট অবধি দেখেছি। স্বাধীন মাসিদোনিয়া প্রথমে কনভারটিবল ইউগোস্লাভিয়ান দিনারের সঙ্গে ১ : ১ দরে গাঁটছড়া বাঁধে। কিন্তু সেই ইয়ুগোস্লাভ দিনার আর ডলারের সম্বন্ধ এতো দুর্বল যে বিদেশিরা আমাদের মুদ্রা গ্রহণ করতে অস্বীকার করছিলেন। এর সমাধান তাঁর কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক বের করেছে। পার্টনার বদল করে ডয়েচে মার্কের সঙ্গে মাসিদোনিয়ান দিনারের পেগ বাঁধা হয়েছে। তাঁর দেশের অর্থনীতির সাইজ ছোটো কিন্তু ডয়েচে মার্কের সঙ্গে পাকাপাকি সম্পর্ক আছে বলে ব্যাঙ্কার হিসেবে আমরা মাসিদোনিয়ান দিনারের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি। অন্য কিছু রিপাবলিকের মতন তাঁরা দিনার শব্দটি খারিজ করেন নি সে নামটার ঐতিহাসিক স্মৃতি জনগণের মনে আছে। তবে তাঁদের এই দিনার যথেষ্ট শক্তি রাখে।

    দিনার বলিয়া কোরো না হেলা, এ দিনার সে দিনার নহে গো!

    এই সময়ে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি কাস্তে হাতুড়ি বিবর্জিত নতুন পতাকা উঁচু করে ধরলেও নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা ছিল টলোমলো। যেমন পোল্যান্ড ধরেই নেয় যে তাদের জলোতি নিত্যি দুর্বল হতে থাকবে, তাই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক নিজেই প্রতি মাসে সেই মুদ্রার বিনিময় মূল্য ১.৫% কমাতে থাকে, বছরে ১৮%। এই সুযোগে তাঁর তারিফ করতে চাইলাম। হ্যাঁ, বালটিক দেশগুলিতে এই পন্থায় মুদ্রা মূল্যে স্থিতি এসেছে – এস্টোনিয়া ডলারের, লিথুয়ানিয়া মার্কের এবং লাটভিয়া এস ডি আরের সঙ্গে তাদের মুদ্রাকে এক সূত্রে বেঁধে তার মানকে দৃঢ় করেছে। গভর্নর উচ্চ নয়, কোন বাচ্যই করলেন না। ভাবটা এই যে এটি তাঁর নিজের এলেম।বালটিকের দেশ তাঁরই কপি করেছে সম্ভবত! চেজ ব্যাঙ্কের স্টিভ একবার আড়চোখে তাকাল- এখানে তোমার এতো বাহাদুরি দেখানোর কি প্রয়োজন ? আমেরিকান অ্যাতাশে নির্বাক নিস্কল্প। বোকার শত্রু থাকতে পারে, বোবার শত্রু নেই। বাকিটা শুনে গেলাম।
    যখন আমেরিকান আতাশে গভর্নর বরকো স্টানোয়েভস্কিকে মিটিঙের জন্য ধন্যবাদ জানালেন বোঝা গেলো সেটি সভা ভঙ্গের ইঙ্গিত। গভর্নর টেবিলের মাথা ছেড়ে প্রায় দরোজা আগলে দাঁড়ালেন। আমরা যেমন যেমন সেখান দিয়ে মার্চ পাসট করবো, তিনি প্রত্যেকের কর মর্দন করবেন। বেরুতেই দশ মিনিট লেগে গেলো।

    প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টা দুয়েক

    এসেছে আদেশ।
    বেলা বারোটার সময় আমরা যেন পুরনো শহরের একটি পাবে সমবেত হই। সেখানে মাসিদোনিয়ার প্রধান মন্ত্রী মাননীয় ব্রাংকো স্রেভেনকোভস্কি এই আমেরিকান ডেলিগেশানের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করবেন। দুপুরের খাওয়া সেখানেই। খাঁটি মাসিদোনিয়ান খাবার। সঙ্গে স্কপস্কো বিয়ার।

    কোন মিটিঙে বা পথসভায় যখন কোন দেশের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি বা অর্থমন্ত্রী দেখা দেন, তার অনেক আগেই এসে যায় প্রেস বাহিনী - সামনের সারিতে একগাদা ক্যামেরা সহ দাঁড়িয়ে পড়েন। নেতার সঙ্গে বা একটু আগে আসেন সুরক্ষা বল, তাঁদের কারো বুকে আড়াআড়ি বন্দুক ঝোলানো। খুব কম নেতাকেই সময়মত আসতে দেখেছি। তাঁদের চেলা মাইকের সামনে এসে বলেন রাষ্ট্রের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হঠাৎ এসে পড়াতে এই বিলম্ব ঘটেছে। নেতা বিদায় নিলেই হলের জনসংখ্যা অর্ধেক হয়ে যায়।

    মাননীয় স্রেভেনকোভস্কি এলেন প্রায় নিঃশব্দে : এক ঝাঁক ক্যামেরাধারি, চারজন পাহারাদার, মাইক হাতে বাইট নেবার জন্য ধাবিত টি ভির অ্যাংকর – কাউকে দেখা গেলো না।। পাবের মাঝে -যেখানে হয়তো শনিবার রবিবার ডিসকো হয়- প্রশস্ত টেবিল পাতা ছিল। দুজন সহকারী সহ তিনি এসে বসলেন। আমেরিকান দূতাবাসের আতাশে তাঁকে অভ্যর্থনা জানিয়ে আমাদের উদ্দেশ্যে বললেন, এই সভায় কোন দোভাষী থাকবেন না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ইংরেজিতে স্বচ্ছন্দ।

    সেটি সত্বর বোঝা গেলো।

    হয়তো তিরিশের একটু বেশি বয়েস - এই আমাদের দলে ভিড়ে দিব্যি রঙ্গ রসিকতা করতে পারেন! ইনি দেশের প্রধানমন্ত্রী? এতো ঘ্যামা পজিশনে আছেন ?

    প্রথমেই আমাদের পরিচয় নিলেন। সবাই তো ব্যাঙ্কার তবে কে কোথা হতে এসেছি, তাঁর দেশ মাসিদোনিয়ার জন্য আমরা কি করতে পারি। প্রথম প্রশ্নের উত্তর সহজ কিন্তু আমরা কোন বাণিজ্যের পশরা নিয়ে হেথায় আবির্ভূত হয়েছি সেটা বলতে আমরা সবাই একটু আমতা আমতা করতে থাকি। এখন তো এই দেখতে এলেম, ফিরে গিয়ে ভাবনা চিন্তা করব।

    ১৯৯১। দক্ষিণ স্লাভের দেশ ইয়ুগোস্লাভিয়ার মিলনমেলা ভাঙলে পরিবারের সদস্যবৃন্দ একে অপরকে বিদায় জানিয়ে বেলগ্রেড থেকে নিজ নিকেতনে ফিরে গিয়ে আপন উঠোনে বেড়া তুলে দিলেন। এদেশ তোমার আমার নয়, এদেশ কেবল আমার। ক্রোয়েশিয়া বসনিয়া কসভোতে এই ভ্রাতৃবিদায় রক্তাক্ত। মাসিদোনিয়ার স্বাধীনতা আসে প্রায় বিনা যুদ্ধে।

    মাসিদোনিয়ান কারা ? দক্ষিণের প্রতিবেশী গ্রিকদের মতো তাঁরা অর্থোডক্স ক্রিস্টিয়ান, হাতের লেখা করেন সিরিলিক হরফে তাহলে কি তাঁদের রক্তে বইছে গ্রিক রক্ত ? না, তাঁরা গ্রিক নন, তাঁরা স্লাভ। উত্তরে বুলগারিয়ার সঙ্গে তাঁদের মেলে বেশি – এক ধর্ম, এক হরফ, জাতিতে স্লাভ। পাঁচশ বছর ছিলেন তুর্কী শাসনে, মাসিদোনিয়া নামের কোন দেশের নাম তুর্কি তোষাখানায় লিখিত ছিল না। অটোমানরা বলকানে তাঁদের বিস্তৃত রাজত্বের ভাগ করেছিলেন প্রদেশের নামে – বানোভিনা অথবা সঞ্জক –মাসিদোনিয়ার পরিচয় ছিল ভারদার সঞ্জক। তুর্কী শাসনের শেষে আরেক প্রতিবেশী আলবানিয়ার সঙ্গে এঁরা বুলগারিয়ার জারের প্রজা হিসেবে পরিগণিত হয়েছেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বুলগারিয়া পরাস্ত হলে তাঁরা যোগ দিলেন স্লোভেন ক্রোয়াট সার্বিয়ার রজত্বে অচিরেই যার নাম হবে ইয়ুগোস্লাভিয়া। কেউ ক্যাথলিক কেউ মুসলিম কেউ বা অর্থোডক্স ক্রিস্টিয়ান - তাঁরা সবাই স্লাভ এই নতুন রাজত্বে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে টিটো আরেক স্লাভিক জাতি, বুলগারিয়াকে ইয়ুগোস্লাভিয়ার ছাতার নিচে আনতে চেয়েছিলেন। যদিও বুলগারিয়া ও ইয়ুগোস্লাভিয়া দুটি দেশই কমিউনিস্ট, বুলগারিয়া এই মিলনে সম্মত হল না। আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিলেন।

    টিটোর আমলে প্রদেশের নাম ছিল মাসিদোনিয়ান, আলবানিয়ান ও তুরকিক প্রজাতন্ত্র। ১৯৯১ সালে এর পরিচয় হলো মাসিদোনিয়ান জাতীয় প্রজাতন্ত্র, আলবানিয়ান জনগোষ্ঠীর নাম বিলুপ্ত। তাঁরা স্লাভ নন, তাঁরা গ্রিকেদের মতন ইলিরিক। বেশির ভাগ মুসলিম, ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাস করেছেন আজকের বুলগারিয়া, গ্রিস, ইয়ুগোস্লাভিয়ান কসভো এবং মাসিদোনিয়াতে, আপন দেশ আলবানিয়ার বাইরে। সর্বত্র তাঁরা সংখ্যা লঘু, কোথাও একটু বেশি লঘু যেমন বুলগারিয়াতে, আবার কোথাও কম লঘু যেমন কসভো, মাসিদোনিয়া।

    মাসিদোনিয়াতে তাঁরা জনসংখ্যার পঁচিশ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি বললেন জনশ্রুতি এই যে মাসিদোনিয়ান সরকার তাঁদের মৌলিক অধিকার ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আলবানিয়ান ভাষা শেখানো হয় না, ছেলে মেয়েদের আলবানিয়ান নাম দেওয়া নিষিদ্ধ, সরকারি দফতরে, আর্মিতে চাকরি জোটে না। ক্লিনটন সরকার এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন কিন্তু আপনাদের জানাতে পারি এটি সম্পূর্ণ অসত্য। মুশকিল হলো প্রধানমন্ত্রী স্রেভেনকোভস্কি এমন সব রাজনৈতিক ইসু তুলে ধরলেন যার বিষয়ে আমাদের কিছুই জানা ছিল না।

    বিসমার্ক বলেছিলেন রাজনীতিতে কোন কিছু বিশ্বাস করবেন না যতক্ষণ সেটা সরকারিভাবে অস্বীকৃত হয়।

    এ বিষয়ে সমবেত ব্যাঙ্কার গোষ্ঠীর কোন আগ্রহ নেই – এই আলবানিয়ান সমস্যার ভেতরে কোন ইকনমিক অ্যাংগল চোখে পড়ে না। জেনে কি হবে! দলের কয়েকজন সদস্য বিয়ারে বেশি মন দিলেন।

    আমার চোখ প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে এমন সময় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শেষ হলো। তিনি আবার প্রত্যেকের সঙ্গে করমর্দন করলেন! সেদিন জানতাম না যার সঙ্গে হাত মেলালাম দশ বছর বাদে তিনি সে দেশের রাষ্ট্রপতি হবেন, দি ম্যান হু উড বি দি কিং!

    যাবার সময়ে বলে গেলেন, আজকের মধ্যাহ্ন ভোজনে আপনাদের সঙ্গ দিতে পারছি না বটে কিন্তু এই রেস্তোরাঁয় আপনারা খাঁটি মাসিদোনিয়ান খাবারের সঙ্গে পরিচিত হবেন।

    খাঁটি মাসিদোনিয়ান খাবার ? সেটি কি?
    ইস্তানবুলে গ্রিক কফি মেলে না, আথেন্সে তুর্কি কফি চেয়ে আপনি রাষ্ট্র বিপ্লব ঘটাতে পারেন। রোমে পিতসা রোমানা পাওয়া যায় না -মেলে পিতসা নাপোলিতানা। নেপলসে বা নাপোলিতে পিতসা নাপোলিতানা পাবেন না
    – সেটার নাম পিতসা রোমানা! ফ্রাঙ্কফুর্টে ভিনার ( ভিয়েনার )সসেজ পাবেন, ভিয়েনাতে ফ্রাঙ্কফুরটার।

    আমাদের মতো বিদেশিদের কাছে তাতে কিছুই যায় আসে না। যে নামেই ডাকো তুমি সে একই খাদ্য বা পানীয়। বলকানে খাবার টেবিলে ভোজ্য বস্তুর নাম তেমনি নিরন্তর বদলাতে থাকে।



    রোমানিয়ান সারমালে


    পটলের ভেতরে পুর দিয়ে যা প্রস্তুত তাকে আমরা দোলমা বলে চিনি – দোলমা তুরকিক শব্দ ( ফরঘনা থেকে আগত মুঘলদের মাতৃভাষা)। পাঁচশ বছরের বলকান শাসনকালে তুর্কী শাসন ব্যবস্থা শুধু কিছু সেতু ও মিনার উপহার দেয় নি- দিয়ে গেছে নানান খাবার, যাকে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে দেখা যায়। আমাদের দোলমা পটলের – মাসিদোনিয়ান দোলমা বাঁধাকপির পাতায় মোড়া, ভেতরে মাংসের কিমা, ভাত, বুলিওন, তার নাম সারমা বসনিয়াতেও সারমা, রোমানিয়ানে সারমালে, গ্রিকে দোলমাদাকিয়া ( আঙ্গুরের পাতায় মোড়া, ভেতরে একই পুর )।

    আলু বেগুন টমাটো মাংস এক পাত্রে বেক করা খাদ্যবস্তুর নাম মুসাকা, ইতালিয়ান লাসানিয়ার মতো। থেসালোনিকি থেকে বেলগ্রেড, স্কপয়ে থেকে জাগ্রেব সর্বত্র মুসাকার দেখা পাবেন, বানানটা বদলে যায়। এঁরা প্রত্যেকে দাবি করেন এটি তাঁদের অনন্য, ইউনিক আবিষ্কার, অন্যেরা সেরেফ কপি করেছে -সে সব ফেক। যেমন অটোমানদের আরেক দান, বুরেক -ক্রিস্পি পেস্ট্রিতে মোড়া শাক অথবা আলু এবং চিজ। স্থান অনুযায়ী তার নাম বদলায় না কিন্তু চেহারা খানিকটা বদলায় যেমন তুর্কি বা সারবিয়ান বুরেক ফ্ল্যাট বসনিয়া বুরেক শামুক আকৃতির। দেবরেচেন বা নোভি সাদে ওয়েটার বলেছে ভোজন অভিধানে এটি খাঁটি হাঙ্গেরিয়ান অথবা ভয়ভোদিনার মহতী অবদান।



    বসনিয়ান সারমা


    পারস্যের কেবাব তুর্কীতে কেবাপ বা চেবাপ, মাসিদোনিয়াতে চেভাপি, সার্বিয়াতে চেভাপচিচি। আজকে ইউরোপের পাড়ায় পাড়ায় কাবাব কিং বা কেবাপ পালাস্ত খোলার অনেক আগে, চতুর্দশ শতকে ভারতে বসবাসের কালে ইবন বতুত্তা এর স্বাদ গ্রহণ করেছিলেন! গ্রিলড সসেজের নাম অনেক - জানি যথার্থ ভোজন রসিক বলবেন না হে, তফাৎ আছে কিছু। এই যেমন সিজনিংয়ে, মশলার ব্যবহারে। স্বাদু হলে নামের পার্থক্যে অবিশ্যি কিছু যায় আসে না। মেনে নিই সানন্দে!

    কিছু শব্দের মার প্যাঁচ হইতে সাবধান।

    যেমন স্কটিশ স্মোকড সালমন আর স্মোকড স্কটিশ সালমন দুটি কিন্তু সমার্থক নয়। যদি সত্যিকারের স্কটিশ মাছ কিনতে চান, কিনুন স্মোকড স্কটিশ সালমন। দুনিয়ার যে কোন দেশের মেছুরে স্কটিশ স্টাইলে ধোঁয়া দিয়ে তাদের স্থানীয় সালমন মাছ বিক্রি করতে পারে,সেটি হলো “ স্মোকড স্কটিশ সালমন”। দুটোর দামে বিস্তর ফারাক। ক্রেতা হুঁশিয়ার, পরবর্তী ভ্রমণের সময়ে মেনুতে একবার দেখে নেবেন!



    সারবিয়ান সারমা


    ফেতা নিয়ে গ্রিকরা হালে খুব চেল্লা মেল্লি শুরু করেছে –ছাগল ভেড়ার দুধ থেকে তৈরি ফেতা চিজ হল ভোজন জগতে শ্রেষ্ঠ গ্রিক অবদান। তিন হাজার বছরের ইতিহাস, আক্রোপোলিসের হাজার বছর আগে তার সৃষ্টি। স্বয়ং হোমার এটির স্বাদ নিয়ে ধন্য ধন্য করেছেন। গ্রিসের বাইরের কোন দেশ সে নাম ব্যবহার করলে কেবল হোমার নয়, অ্যারিস্টটল, প্লেটো এবং গ্রিসের অপমান হবে। ডেনমার্কের এক ডেয়ারি এই অবিমৃশ্যকারিতার দুঃসাহস দেখায় - ডেনিশ চিজের ফেতা নাম দেখে গ্রিস ইউরোপীয় ইউনিয়নে পেটেন্টের মামলা করে এবং জেতে ( ১৪ জুলাই,২০২২)। আদালত বলেছেন ফেতা নামটি ব্যবহার করার অধিকার একান্ত গ্রিসের, তবে যদি এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে রপ্তানি হয় তাহলে ডেনমার্কের সেই কোম্পানি কেন, যে কেউ ফেতা নাম লাগিয়ে বেচতে পারেন। বিদেশিরা ভালো জিনিসের আর কী বোঝেন।

    ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই সব কাজেই বেশি ব্যস্ত থাকেন। চিজ বানানো প্রক্রিয়ার নির্দেশনামা সঙ্কলিত হয়েছে বারো হাজার শব্দ সম্বলিত ৪৯ পাতার একটা কেতাবে। গোরু মোষ ভেড়া ছাগল স্থানান্তকরনের কাজ, বিশেষ করে ট্রেন বা ট্রাকের ভেতরে কোন তাপমাত্রা বজায় রাখা বাধ্যতামূলক, এইসব জানানো হয়েছে ন হাজার শব্দের একটি পুস্তিকায়। কি ভাগ্যে এগুলো ফিরিতে পাওয়া যায়, চার রকম হরফে, চব্বিশটা ভাষায়।

    স্কপয়ের খানদানি রেস্তোরাঁয় তাঁদের শেফ যখন অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে অরিজিনাল মাসিদোনিয়ান মেনু হুজুরে হাজির করলেন তখন ইংরেজ আমেরিকান অভ্যাগতবৃন্দ নতুন কিছুর সন্ধান মিলল বলে উৎসাহিত হয়ে পড়লেন। বলকানে যাঁদের কিঞ্চিৎ আসা যাওয়া আছে তাঁরা বলবেন আরে ওটাতো আমি চিনি। শুধু নাম বদলেছ বাপু!
    তবে পেটেন্ট বেদখলের দৃষ্টান্ত বহু।

    নাজারেথের বাস ধরব, হাতে অনেকটা সময়। হাইফার এক কোশার রেস্তোরাঁর ঢুকেছি - ওয়েটার বলল আসুন, আপনাকে একটি খাঁটি ইসরায়েলি খাবারের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই। এই দিয়ে আপনার ভোজন শুরু করতে পারেন। গরম রুটির সঙ্গে একটি পোড়া মাটির পাত্রে পোস্তর মতো দেখতে যে বস্তুর আবির্ভাব হলো তাকে বহুদিন আগেই চিনেছি হুমুস নামে (ছোলা, সেসামি বাঁটা, অলিভ অয়েল এবং রসুন ছোঁয়ানো), কুয়েত সিটিতে এক লেবানিজ রেস্তোরাঁয়। কুয়েতিরা সেটিকে আরবি পাকশালার মৌলিক অবদান বলে দাবি করেন নি।

    পাদটীকা
    ট্রিভিয়া প্রেমিকদের জন্য সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় কিছু তথ্য– মাসিদোনিয়ার প্রধানমন্ত্রী তালাত জাফেরির মাসিক বেতন এক লক্ষ টাকা, আলবানিয়ান প্রধানমন্ত্রী এডি রামা পান দেড় লক্ষ, সারবিয়ান প্রধানমন্ত্রী আলেক্সান্দ্র ভুচিচ নব্বুই হাজার, মনটি নিগ্রোর ছত্রিশ বছর বয়েসি প্রধানমন্ত্রী মিলোকো স্পাজিচের পকেটে আসে এক লক্ষ টাকা – (এখানে এক ইউরোতে ৯০ টাকা ধরে হিসেবটা করছি- সূত্র ২০১৮ )। বাসস্থান, জল, বিজলি, গাড়ি অবশ্যই মুফতে মেলে অধিকন্তু। আজীবন পেনশনের রেওয়াজ নেই।



    ক্রমশ...

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ০২ মার্চ ২০২৪ | ৫৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 2607:fb90:eab2:c595:b588:2f45:5560:4881 | ০৩ মার্চ ২০২৪ ০৩:৩১528986
  • বাঃ, এই পর্বটা আমার আলাদা করে আরো বেশি ভালো লাগলো। এত খাবারদাবারের কথা রয়েছে! :-)
  • Amit | 163.116.211.46 | ০৩ মার্চ ২০২৪ ০৮:৩৪528988
  • আবার একটা কোশ্নো হিরেন দা কে :) :) 
     
    এই যে একটা দেশের কারেন্সী আর একটা দেশের কারেন্সী র সাথে ফিক্সেড রেট পেগ করে , এইটা কিভাবে ডিসাইড হয় ? জাস্ট দুটো দেশ নিজেদের মধ্যে এগ্রিমেন্ট করে ফেলে ? নাকি আরো অনেক কিছু এপ্রুভালস লাগে ? আর এটা করার মিউচুয়াল ইন্টারেস্ট গুলো ই বা কি কি ? আর এই পেগ এক্সচেঞ্জ রেট টাই বা এগ্রি করে কিভাবে ? 
     
    মানে ছোট  বা নতুন ইকোনমির ইন্টারেস্ট  গুলো হয়তো একটু বোঝা যায় - কারেন্সী স্টেবিলিটি বাড়ানো,  দেশের ইকোনমি স্টেবল করা ইত্যাদি। কিন্তু অন্য দেশটার ইন্টারেস্ট গুলো কি কি ? 
     
    যেমন কাতারে দেখেছি কাতারি রিয়্যাল ইউএস ডলার এর সাথে ৩।৬ রেট ফিক্সড পেগ। অথবা ব্রুনেই ডলার সিঙ্গাপুর ডলার র সাথে ১:১ পেগ। 
     
    যখন তেলের দাম বেড়ে যায় তখন পেগ না থাকলে তো হয়তো রিয়্যাল বা ব্রুনেই ডলার এর দাম আরো বাড়তে পারতো। অবশ্য যখন কমে যায় তখন উল্টো গল্প। কিন্তু এটা হলে ইউএস বা সিঙ্গাপুর এর সুবিধা কি কি ? এক হতে পারে যে এদের নিজেদের তেলের ইমপোর্ট কস্ট স্টেবিলিটি হয়তো এই দুটো কেস এ একটা বড়ো ড্রাইভার- ব্রুনেই বা কাতার দুটোই মেজর অয়েল & গ্যাস এক্সপোর্টার। 
     
    কিন্তু তাও তেলের দাম যেমন ওঠে নামে বাজারে কয়েক বছর অন্তর অন্তর , সেটাও বুঝিনা সত্যি কতটা বেনিফিট  থাকে এতে। 
     
    কিন্তু মেসিডোনিয়া র সাথে জার্মান কারেন্সী পেগ হলে জার্মানির এতে কি সুবিধে ? মেসিডোনিয়া র ইকোনমি তো জার্মানির কাছে লিলিপুট। 
  • রমিত চট্টোপাধ্যায় | ০৩ মার্চ ২০২৪ ১০:১৫528990
  • দারুণ লাগলো পর্বটা। খাওয়া দাওয়ার বিবরণ গুলো খুব সুন্দর। 
    একটা জায়গায় একটু ধোঁয়াশা লাগল, এক জায়গায় লেখা হয়েছে আসল স্কটিশ মাছ খেতে হলে স্মোকড স্কটিশ স্যামন অর্ডার দিতে হবে, পরে লেখা হয়েছে যেকোনো মেছুড়ে ওই রকম করে রান্না করে স্মোকড স্কটিশ স্যামন বলে দাবি করতে পারে। পরের টা মনে হয় স্কটিশ স্মোকড স্যামন হবে। 
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ মার্চ ২০২৪ ১২:১৪528994
  • যথার্থ  বলেছেন। ধোঁয়া শুধু ধোঁয়া তাতেই গোলযোগ এবং লেখার ভুল। স্কটিশ স্মোকড দু নম্বরী!  সেটা স্কটিশ কায়দায় ধোঁয়া দেওয়া সামন তা নরওয়ে আইসল্যান্ড বা নিউ জিল্যানডের মাছ হোক না কেন! বুঝ গুণী যে জান সন্ধান 
  • Kishore Ghosal | ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৪:১৭529004
  • খাবারের ছবিগুলি দারুণ। নিচেয় দিলাম পটলের দোলমার ছবি- 
     
     
    Image of Potoler Dolma.
     
     
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৪:২৫529005
  • অমিত 
     

    যতদূর ইতিহাসেই যাই না কেন,  দেখি মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা এবং বিনিময় দর  নির্ধারিত হয়েছে তার ধাতব মূল্য ( ইনট্রিনজিক ভ্যালু ) দিয়ে । গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতার গ্যারান্টি ছিল- সেটি উঠে গেল একশ বছর আগে । কাগুজে নোটের কোন ইনট্রিনজিক ভ্যালু নেই-  যে কোন ব্যাঙ্ক নোট আদতে হুন্ডি বা প্রমিস টু পে - অস্ট্রেলিয়া ভারত ইউ কে সর্বত্র সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক গভর্নর বলেন আই প্রমিস টু পে! কার প্রমিসে কে বিশ্বাস করে ? ১৯৯০-৯১ সালের পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ইউগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে কুড়িটা দেশ কুড়িটা কারেন্সি, সরকারি কন্ট্রোলে চালিত অন্যান্য কারেন্সি যেমন ফ্লোরিন চেক ক্রনার  তাদের কোন ট্র্যাক রেকর্ড নেই। তাদের বাণিজ্যিক পার্টনাররা অথৈ জলে – তখন সবাই খুঁজলেন একটা চেনা দাঁড়ি পাল্লা , যেমন ডে মার্ক, ডলার।  অতএব পেগিং! ধরে নিন এবার সেই প্রমিস পাওয়া গেল অন্য কারেন্সির বলে ! দুনিয়া উলটে গেলেও চার এস্টোনিয়া করুণার বদলে  এক মার্ক পাওয়া যাবে – নতুন কিছু নয় , ১৯৮৩ সাল থেকে ৭.৮৩  হংকং ডলারের বদলে এক ইউ এস ডলার মেলে, গালফের বহু কারেন্সি ডলারের সঙ্গে বাঁধা , অন্তত বারোটি কারেন্সি ইউরোর সঙ্গে বাঁধা।  

    মাসিদোনিয়ান অর্থনীতি ক্ষুদ্র কিন্তু ডলারের মতন বড়ো গাছে নৌকো বাঁধতে কোন বাধা নেই- জার্মান বুন্দেসব্যাঙ্কের অনুমতি লাগে না , তাদের কোন ইন্টারেস্ট নেই। এটি শুধু অন্যদের একটা বিশ্বাস দেয় যে দিনার শুধু কাগজ নয় এর সুগ্রীব দোসর আছে ফ্রাঙ্কফুর্ট শহরে । কিন্তু এতে বিপদও আছে, এক ডলারের সঙ্গে এক আর্জেন্টাইন পেসোর গাঁটছড়া বেঁধে সে দেশ ডেকে আনে আরেক অর্থনীতিক বিপর্যয়।

    কিছুই ঠিক করে বলা হলো না কারণ প্রশ্নটি সম্যক আলোচনার দাবি রাখে । আমার বৈঠকি আড্ডায় ব্লগে গুছিয়ে  লিখব।
     
  • হীরেন সিংহরায় | ০৩ মার্চ ২০২৪ ১৪:২৭529006
  • কিশোর 
    পটলের দোলমার ছবিটির জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ - দোলমা দিয়ে  সারমা/ সারমালে /দোলমাদকির বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে মতামত দিন