এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ভ্রমণ  যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে

  • ফারাও-এর দেশে কয়েকদিন - পর্ব ৮

    সুদীপ্ত লেখকের গ্রাহক হোন
    ভ্রমণ | যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | ২৯৮ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • “কবর দাও বা চিতায় পোড়াও, মরলে সবাই মাটি”
     
    না, প্রাচীন মিশরের মানুষ অবশ্যই এভাবে ভাবতেন না, বরং জীবনানন্দের কথা ধার করে বলা যায় “মানুষের মৃত্যু হ’লে তবুও মানব থেকে যায়”; আর মৃত্যুর পরের মানবটির জন্যে গড়ে ওঠে একের পর এক স্থাপত্য, ভাস্কর্য, শিল্পকলা! মরলে মানুষ কোথায় যায়, মৃতেরা এ-পৃথিবীতে না ফিরলেও প্রাচীন মিশরে আনুবিস আর ওসাইরিসের পরীক্ষায় পাশ করলে আর এক সুখের দুনিয়ায় (‘দুয়াত’) পৌঁছে যাওয়া যেত। যেখানে যমদূত-দের চাবুক খেতে না হলেও দেবতাদের তুষ্ট করার জন্যে চাষবাস ইত্যাদি করতে হতো আর মৃত্যুর পরেও জীবিতাবস্থার সুযোগ-সুবিধা ভোগ করা যেত। আত্মা নাকি অবিনশ্বর, তায় যদি পাওয়া যায় তিন তিনখানা আত্মা, তাহলে আর দেখে কে! প্রাচীন মিশরের মানুষ বিশ্বাস করতেন জীবিতাবস্থায় মানুষের একটি আত্মা থাকে, তা হল ‘কা’, এই কা শরীরের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আর মৃত্যুর পর আরও দুই আত্মা এসে হাজির হয়, একজন হল ‘আখ’, আরেকজন ‘বা’। ‘বা’ পাখির রূপ ধরে সমাধি থেকে বেরিয়ে দিনের বেলায় বাইরের পৃথিবীতে ঘুরতে পারে (এরপর মিশরের আকাশে পাখি দেখলে কি মনে পড়বে ভাবুন একবার); আর আখ হল সেই আত্মা যাকে পরীক্ষায় বসতে হয় ওসাইরিস, আনুবিস, মাত প্রমুখ দেবদেবীর সামনে। এই যে পিরামিডে বা পরবর্তীতে ফারাও বা রাণীদের সমাধিতে মমির সঙ্গে কেটে রাখা প্রত্যঙ্গ, ধনদৌলত, ব্যবহৃত জিনিসপত্র এসব দেওয়া হত, তা ঐ কা-এর সুবিধার্থে। মমিফিকেশনের কথা তো আগেই দ্বিতীয় পর্বে বলেছি, এবার বুক অব দ্য ডেড-এর কথা, কারণ আজ আমরা যাব ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ।
     
    আজ আমাদের ক্রুজের শেষ দিন। সেইমতো প্রাতঃরাশ সেরে সব ব্যাগপত্র সহ আমাদের ক্রুজ ‘নাইল স্টোরি’-কে বিদায় জানিয়ে উঠে বসলাম বাসে। আমাদের দলের কিছু পর্যটক অবশ্য্ ভোরবেলা চলে গেছেন নীলনদের অপর পারে, লাক্সর-এর হট এয়ার বেলুন-এ সওয়ারি হতে। এই বেলুন গুলো খুব বেশী এদিক ওদিক যায় না, শুধু উপরে ওঠে আর নীচে নামে, তাই বেলুনে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় সফর করার সঙ্গে একে গুলিয়ে ফেললে চলবে না। তবে উপর থেকে পুরো লাক্সর-এর সুন্দর দৃশ্য দেখা যায়, ঊষর মরুভূমি আর সবুজ শস্যক্ষেত্র পাশাপাশি রেখে, আর নীলনদ তো আছেই। আর শুধুমাত্র ভোরে আর গোধূলির সময় এই বেলুন ছাড়া হয়, কারণ বেলা বাড়লে বাতাসের বেগ বেড়ে গিয়ে বেলুনকে মাঝ-আকাশে বেকায়দায় ফেলতে পারে। আমরা এই বেলুনের বদলে পছন্দ করেছিলাম সাবমেরিন ডাইভ, সেটা হবে হুরগাদায় লোহিত সাগরের গভীরে।
     
    লাক্সরে নীলনদের পশ্চিম পাড়ের উর্বর ভূমি আর আকাশে হট এয়ার বেলুন 

    লাক্সর বন্দর থেকে বেরিয়ে নীলনদ পার হয়ে আমরা এলাম পশ্চিম তীরে। কারণ প্রাচীন মিশরে মৃত্যু পরবর্তী অধ্যায়ের জন্যে পশ্চিম দিকই বরাদ্দ ছিল, যেহেতু আমুন অর্থাৎ সূর্যের দেবতার উদয় হয় পূর্বে আর অস্ত পশ্চিমে, সেইমতো ইহজীবনের তরী পূর্ব থেকে পশ্চিমে বইবার পর মৃত্যুর পরের জীবনের সূচনাও হয় পশ্চিমে। রাস্তার দুপাশে সবুজ ফসলের ক্ষেত আর দূর থেকে আকাশে হট এয়ার বেলুন-এর ওঠানামা দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম কলোসি অব মেমনন-এ। চতুর্দশ শতকে তৈরী ফারাও তৃতীয় আমেনহোটেপের সমাধিমন্দির এটি। কিন্তু প্রবল ভূমিকম্পে বহুযুগ আগেই পুরো মন্দিরটিই প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। সমসাময়িক প্রাচীন মিশরের সবচেয়ে বড় মন্দির ছিল এই মন্দির, এমনকি কার্নাকের মন্দির বা রামেসিয়াম-এর চেয়েও বড়, কিন্তু আজ দুটি আধভাঙ্গা দৈত্যাকার তৃতীয় আমেনহোটেপের প্রস্তরমূর্তি ছাড়া কিছুই তেমন অবশিষ্ট নেই। এই দুটি মুর্তি ছিল আসল মন্দিরের প্রবেশদ্বারের দু-পাশে। এগুলির উচ্চতা প্রায় ষাট ফুট। এদের পিছনে আরও দুটি মুর্তি দেখা গেল মন্দিরের জমিতে, সেগুলোর অবস্থা আরও খারাপ। এর ঠিক পিছনেই দূরে দেখা যায় ভ্যালি অব দ্য কিংস এর পাহাড়। মূর্তির পায়ের দুপাশে রাণী টিয়ে আর রাজমাতার ছোটো মূর্তি। আর পাশের দিকে সেই নীলনদের দেবতা হাপির প্রচলিত রিলিফ খোদাই করা। এই সমাধি-মন্দিরের বহু মূর্তি এবং অন্যান্য ভাস্কর্য এখনও উদ্ধার করার কাজ চলছে। এই কলোসি অব মেমনন এর কাছেই হট এয়ার বেলুন থেকে ফিরে আসা আমাদের দলের বাকি পর্যটকরা মিলিত হলেন।
     
    কলোসি অব মেমনন - পিছনে আরও দুটি আধভাঙ্গা মূর্তি দেখা যাচ্ছে

     
    পায়ের কাছে রাণী টিয়ের মূর্তি পাশ থেকে, আর হাপির রিলিফ

    এখান থেকে বেরিয়ে ভ্যালি অব দ্য কুইনস-কে বাম পাশে রেখে আমরা এগিয়ে চললাম ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর দিকে। পথে ডান পাশে দেখতে পেলাম রামেসিয়াম। ফারাও দ্বিতীয় রামেসিস-এর সমাধিমন্দির। ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর সমাধিক্ষেত্রে নিয়ে যাওয়ার আগে তাঁর দেহ এই মন্দিরে রাখা হয়েছিল। এখন অবশ্য ভগ্নাবশেষ শুধু। বড় বড় থাম আর যথারীতি তাদের সামনে ফারাও-এর বিশালকায় মূর্তির ভগ্নদশা দেখা গেল।  কিছুদূর এগিয়ে আমাদের বাস বড় রাস্তা ছেড়ে অপেক্ষাকৃত ছোটো রাস্তা ধরল, পাহাড়ের গা বেয়ে, এর নাম কিংস ভ্যালি রোড।  ভ্যালি-তে পৌঁছে পার্কিং এ নেমে নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে একটি ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালাম। এখান থেকে ব্যাটারী-চালিত গাড়িতে আট থেকে দশজন করে পর্যটক-কে পাহাড়ি গলিপথ ধরে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সমাধিক্ষেত্রগুলির সামনে। ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ এখনও অবধি ৬২ টি উল্লেখযোগ্য সমাধি আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মধ্যে আয়তনে সবচেয়ে ছোটো এবং সবচেয়ে বিখ্যাত সমাধিটি হলো ফারাও তুতানখামুনের। এখানে বলে রাখি, মিশরের সব মন্দিরের টিকিটের মূল্য মোটামুটি ২০০ থেকে ৪৫০ ইজিপ্সিয়ান পাউন্ড। ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর বাকি সব সমাধি একই টিকিটে দেখা গেলেও তুতানখামুনের সমাধির টিকিট আলাদা। সামাহ আমাদের তাই দুটো টিকিট ধরিয়ে দিয়েছিল প্রত্যেক-কে। এখানে প্রতিটি সমাধিক্ষেত্র-কে নাম দেওয়া হয়েছে ‘KV 1’ থেকে ‘KV62’ পর্যন্ত, কে ভি অর্থাৎ কিংস ভ্যালি।
     
    রামেসিয়াম-এর ভগ্নাবশেষ

     
    রামেসিয়াম-এর ভাঙা মন্দিরের কিছু অংশ 

     
    ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর পথে - ব্যাটারি-চালিত গাড়ি 

     
    ব্যাটারি গাড়িতে চড়ে দুপাশের পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে এঁকেবেঁকে প্রায় দেড়-দুই কিলোমিটার চলার পর আমরা মূল সমাধিক্ষেত্রগুলোর কাছে পৌঁছোলাম। দ্বিতীয় রামেসিস-এর সমাধিক্ষেত্র অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ রয়েছে, পর্যটকদের জন্যে আর কখনো খুলবে কিনা জানা নেই,  তাই আমরা প্রথমে প্রবেশ করলাম ফারাও চতুর্থ রামেসিস-এর সমাধিক্ষেত্রে। চতুর্থ রামেসিস ছিলেন বিশতম রাজবংশের তৃতীয় ফারাও, কিন্তু অকালমৃত্যু হওয়ার কারণে তাঁর রাজত্বকাল ছিল খুবই সংক্ষিপ্ত, সাড়ে ছয় বছরের। যেটুকু  পড়েছি বা শুনেছি প্রাচীন মিশরে শিশুর জন্ম আর মৃত্যু দুয়ের-ই হার ছিল অনেক বেশী, এমনকি অকালমৃত্যুও সংখ্যায় অনেক বেশী; এবং সে জিনিসে রাজা-প্রজায় ভেদাভেদ ছিল না। দেখে মনে হয় পুষ্টিজনিত সমস্যা লেগে থাকত দেশে। ফারাওদের তো কোলেস্টেরল আর দাঁত-মাড়ির সমস্যা ছিল-ই, এন এম ই সি-তে মমি দেখার সময় সেসব বলেছি। এখানে সবকটি সমাধিক্ষেত্রেই লম্বা টানা দালান  পেরিয়ে যেতে হয় মূল সমাধিগৃহে। পুরোটাই পাহাড় কেটে বানানো। আর দালানের দুপাশের দেওয়ালে হায়রোগ্লিফ লিপি আর রঙিন ছবির দুর্দান্ত সমাহার! কোথাও কোথাও নষ্ট হয়ে গেছে রঙ, কোথাও এখনও অটুট। শুধু বুক অব দ্য ডেড নয়, এখানে প্রাচীন বিভিন্ন স্ক্রোল-এর বিবরণ আর ঘটনা  থেকে নেওয়া হয়েছে অসংখ্য ছবি ও রিলিফ, ফারাও-এর নিজের জীবনের ঘটনা তো আছেই। এগুলি হলো বুক অব নুত, বুক অব দ্য নাইট, বুক অব দ্য আর্থ, বুক অব দ্য গেট এরকম আরও কিছু। তুতানখামেনের সমাধি বাদ দিলে বাকি অধিকাংশ সমাধিক্ষেত্রের ভিতরের কারুকার্য প্রায় ষাট শতাংশ একইরকম।  এখানে প্রথম দেখলাম ‘আপেপ’ এর ছবি। আপেপ হল প্রাচীন মিশরের সর্পদেবতা, ইনি হলেন সূর্যদেবতা রা-এর পরম শত্রু।  সূর্য পশ্চিমে অস্ত যাওয়ার পরে, মাটির নীচে সূর্যদেবতা রা-এর যাত্রা শুরু হয় পশ্চিম থেকে পূর্বে নৌকো বেয়ে। তখন তাকে বাধা দিতে আসে এই আপেপ। আপেপ-কে প্রতি রাতে রা যুদ্ধে হারিয়ে দিলে তবেই পূর্বে পরের দিন সূর্যের উদয় হয়। প্রতিটি দরজা বা ছাদে নেখবেত-এর ছবি, চতুর্থ রামেসিস-এর কার্তুশ এসব তো আছেই, সঙ্গে দেওয়ালের পর দেওয়াল জুড়ে হায়রোগ্লিফের গ্রাফিটি, দেবদেবীর ছবি, পরপারের নৌকো, ফারাও-এর রাজ্যাভিষেক, জীবনের গল্প এইসব। কত সময় আর যত্ন নিয়ে এই সমাধিকক্ষগুলি বানানো হয়েছিল ভাবলে অবাক হতে হয়! আর যে শিল্পীরা এই নির্মাণকার্যে নিযুক্ত থাকতেন তাঁদের রাখা হতো এই ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর পাশেই দাইর-এল-মাদিনা নামে একটি গ্রামে। একমাত্র সোবেক ছাড়া প্রায় সব দেবদেবী যাঁদের কথা তৃতীয় পর্বে বলেছি, সকলেরই দেখা মিলল এই সমাধিক্ষেত্রগুলিতে। আর একজনের দেখা মিলল, তিনি হলেন আম্মিত। আম্মিতের মুখটি কুমীরের মতো, সামনের দিকের দেহটি সিংহের আর পিছনের দিকটি জলহস্তীর (সুকুমার রায় মিশরের দেবদেবীদের থেকে কোনোরকম অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন কিনা কে জানে!)। ইনি উপস্থিত থাকেন যমরাজ ওসাইরিসের সভায়, যখন মৃতের হৃৎপিন্ড ওজন করেন আনুবিস। দেবী মাত-এর মুকুটের পালকের চেয়ে হালকা হলে তো কথাই নেই, কিন্তু ভারী হলেই এই দেবতা আম্মিত হৃৎপিন্ডটি খেয়ে ফেলেন আর মৃতের অনন্ত নরকবাস হয়। চতুর্থ রামেসিস-এর মূল সমাধিকক্ষে সার্কোফেগাসটি বেশ উঁচু, আর সেই ঘরের ছাদ জুড়ে রয়েছে দেবী নুত-এর সেই বিখ্যাত ছবিটি দুবার, পিঠোপিঠি, ঠিক যেন আয়নায় প্রতিফলন একে অন্যের।
     
    ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর ম্যাপ ও পরিচিতি - জুম করে দেখলে ভালো বোঝা যাবে

     
    চতুর্থ রামেসিসের সমাধিগৃহের ছাদ 

     

     

     

     
    বারান্দা থেকে অ্যান্টিচেম্বার ও মূল সমাধিকক্ষ - জুম করে দেখলে নুত-এর ছবিটি সমাধিকক্ষের ছাদে বোঝা যাবে

    এখান থেকে বেরিয়ে আমরা গেলাম ফারাও মেরেনপিতাহ-র সমাধিতে, কে ভি ৮। মেরেনপিতাহ ছিলেন দ্বিতীয় রামেসিসের বংশধর। পাহাড়ের গায়ে কিছুটা সিঁড়ি দিয়ে উঠে প্রবেশপথ, তার উপরেই স্কারাব আর আমুন-রা-র ছবি। তারপর লম্বা বারান্দা বা করিডোর, দুপাশের দেওয়ালে অসাধারণ কারুকার্য। ফারাও-এর সঙ্গে রা-হোরাখতির কথোপকথনের একটি প্রায় অটুট থাকা ছবি, আর নেমে যাওয়ার পথ সেই কাঠের পাটাতন ফেলে, মাঝে মাঝে বিট দেওয়া। তবে বেশ কিছু কারুকার্য নষ্ট হয়ে গেছে, মূল গৃহের ছাদেও নুত এর ছবি আর নেই, দেওয়ালে কিছু ছবি এখনও রয়ে গেছে। আর ঘরের ঠিক মাঝে রয়েছে গ্র্যানাইটের উঁচু সার্কোফেগাস, তার বাঁদিকে ফারাও-এর অবয়বের আদলে কফিন। মমিটি অবশ্য এন এম ই সি-তে। মেরেনপিতাহ-র মমিকে অনেকে মোজেসের মমি বলে সন্দেহ করে থাকেন, যেহেতু মমিটি কিছুটা সাদাটে আর ফ্যাকাশে, আগে যেমন বলেছিলাম।
     

     
    মেরেনপিতাহ-র সার্কোফেগাস

     
    মেরেনপিতাহ-র কফিন 

     
    মেরেনপিতাহ-র সমাধি থেকে বেরিয়ে এবার আমাদের গন্তব্য ফারাও তুতানখামুনের সমাধি। সেখানে ঢোকার আগে এবার একটু আসা যাক তুতানখামুনের গল্পে। ফারাও চতুর্থ আমেনহোটেপ অর্থাৎ আখেনাতেন-এর মৃত্যুর পর আমার্না (আখেনাতেনের নির্মিত রাজধানী) এবং গোটা মিশরে কিছুটা অরাজকতা দেখা দিয়েছিল, বেশ কয়েক বছর (প্রায় সতেরো বছর) উত্তরাধিকার নিয়েও চলেছিল সমস্যা, যার প্রধান কারণ ছিল ফারাও-দের আকস্মিক অথবা অকালমৃত্যু। হ্যাৎসেপশুট রাণীদের ফারাও হয়ে ওঠার যে দরজা খুলে দিয়েছিলেন, সে-দরজায় নেফারতিতি প্রবেশ করেছিলেন, আখেনাতেনের সহশাসক হয়ে, তিনি ছিলেন ফারাও-এর সম-মর্যাদাসম্পন্না। তাঁদের কন্যা নেফার-নেফেরু-আতেন এরপর হলেন ফারাও। কিন্তু সে মাত্র বছর তিনেক, তারপর হাতবদল হয়ে ক্ষমতা যায় তাঁদের জামাই স্মেনখেরের হাতে। আর এক বছরের মধ্যে দুই ফারাও-এর মৃত্যু ঘটলে (মৃত্যু বা কিভাবে সিংহাসনের হাতবদল হলো তা নিয়ে সংশয় আছে) নয় বছরের বালক তুতানখামুন বসলেন সিংহাসনে। আখেনাতেনের দুই প্রধানা মহিষী ছিলেন, প্রথমা স্ত্রী কিয়া, যিনি ছিলেন তাঁর সহোদরা, দ্বিতীয়া নেফারতিতি। আখেনাতেন এবং কিয়া-র সন্তান ছিলেন তুত-আঁখ-আতেন (আতেনের জীবিত আত্মা)। পরবর্তীতে, মিশরের বিক্ষুব্ধ পুরোহিত এবং ভিজির সম্প্রদায় আখেনাতেনের আতেন পুজো অভিশপ্ত বলে দাগিয়ে দিয়ে দেবতা আতেন-এর জায়গায় দেবতা আমুন পুনর্বহাল হওয়ার পর, সেই নাম বদলে রাখা হলো তুত-আঁখ-আমুন (আমুনের জীবিত আত্মা)। আমি সুবিধের জন্যে তুতানখামুন-ই বলছি। ওদিকে নেফারতিতি আর আখেনাতেনের সন্তান হলেন আনখেসেনামুন। তুতানখামুন তাঁর সৎ-বোন কে বিয়ে করে সিংহাসনে বসে রাজ্যশাসন শুরু করলেন; যদিও নেপথ্যে রইলেন নেফারতিতি এবং তাঁর পিতা (সম্ভবতঃ) ভিজির আই। দুর্বল স্বাস্থ্য ইত্যাদির কারণে যদিও মাত্র সাড়ে নয় বছর পরে তুতানখামুনের মৃত্যু হয়। তুতানখামুনের রাজত্বকাল ছিল আনুমানিক ১৩৩২ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে ১৩২৩ খ্রীষ্টপূর্ব পর্যন্ত। মিশরের ইতিহাস বললেই তুতানখামুনের নাম যে অঙ্গাঙ্গী-ভাবে উঠে আসে তেমনটা হওয়ার কথা ছিল না। সাড়ে তিন হাজার বছর আগের বাঘা বাঘা ফারাও-দের পাশে তিনি ছিলেন নিছক-ই এক অপটু এবং বালক ফারাও। কিন্তু তাঁর খ্যাতির মূল কারণ ছিল তাঁর সমাধি পুনরুদ্ধারের গল্প আর সমাধি থেকে উদ্ধার হওয়া সম্পদ।
     
    ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর খননকার্যের পৃষ্ঠপোষক লর্ড কার্নারভন প্রশ্ন করলেন “Can you see anything?” হাওয়ার্ড কার্টার বলে উঠলেন “Yes, wonderful things!” ১৯২২ এর নভেম্বরে প্রত্নতত্ত্ববিদ হাওয়ার্ড কার্টার এই সমাধি আবিষ্কার করেন একেবারে অক্ষত অবস্থায়, কে ভি ৬২, এটিই একমাত্র সমাধি বলে মনে করা হয়, যেখানে একেবারেই লুঠপাট হয় নি। তার কারণ হতে পারে বালির আস্তরণে চাপা পড়ে যাওয়া, অথবা বালক ফারাও-এর অভিশাপের ভয়। কাকতালীয়ভাবে এই আবিষ্কারের কিছুদিন পরেই কার্নারভনের মৃত্যু ঘটে, মশার কামড় এবং দাড়ি কাটতে গিয়ে সেই কামড়ের স্থান বিষিয়ে যাওয়ার ফলে, গল্প শুরু হয় ফারাও-এর অভিশাপ ইত্যাদি নিয়ে। কে ভি ৬২-তে ঢোকার আলাদা টিকিট (৪০০-৪৫০ ইজিপ্সিয়ান পাউন্ড)। এখানে প্রবেশপথ থেকে অনেকটা খাড়া নীচে নেমে গেছে সিঁড়ি; এই সমাধিক্ষেত্রের অলিন্দে কিন্তু সেভাবে কোনো কারুকার্য, ছবি বা হায়রোগ্লিফ, কিছুই নেই। দেখে মনে হয় যেন তাড়াহুড়ো করে অযত্ন নিয়ে বানানো। অবশ্য উনিশ বছরের ফারাও কবেই বা তাঁর নিজের সমাধিক্ষেত্র নির্মাণ করবেন! নীচে নেমে লম্বাটে হলঘরের বাঁদিকে শায়িত সেই সুবিখ্যাত মমি। মমি এক্স রে করে নাকি দেখা গিয়েছিল বাঁ-পায়ে সমস্যা ছিল, এমনকি ফারাও-এর মেরুদণ্ডেরও সমস্যা ছিল, যার ফলে ঘাড় ঘোরানো এবং পিঠ সোজা রাখার অসুবিধে ছিল। ম্যালেরিয়ার চিহ্ন-ও পাওয়া গিয়েছিল ডি এন এ-তে।  আর সমাধিক্ষেত্রে পাওয়া বেশ কিছু ব্যবহার্য লাঠি দেখে মনে করা হয় দুর্বল শরীরের তুতানখামুন-কে লাঠি নিয়েই চলাফেরা করতে হত। মমির বাঁ পায়ের পাতা দেখলে ত্রুটিপূর্ণ বলে মনে হয়। এই একটি মমি-ই এখনও ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ রয়ে গেছে। এর ঠিক ডানদিকে গেলে আর একটি ঘর, এটি-ই ছিল মূল সমাধিকক্ষ, মাঝে রয়েছে কোয়ার্টজাইট পাথরে তৈরী সার্কোফেগাস, উপরের গ্র্যানাইটের আবরণটি যদিও ভাঙা; এর ভিতরে তিনটি কফিন, সোনার মুখোশ যা ছিল তা আমরা কায়রোতে ইজিপ্সিয়ান মিউজিয়ামে দেখে এসেছি। এই ঘরের চারদিকেই বেশ বড় আকারের কিছু সুন্দর ছবি, আর ঘরের ডানদিকে নীচের দিকে ছোটো একটি দরজা, এর ভিতরেই নাকি ছিল এই সমাধির অমূল্য সব সম্পদ অক্ষত অবস্থায়, এও আমরা সব কায়রোতেই দেখে এসেছি (দ্বিতীয় পর্ব দ্রষ্টব্য)।
     
    ছবিগুলোর কথা একটু বলি। পুরো ঘরেই দেওয়াল জুড়ে হলুদ রঙের প্রলেপ, তার উপরেই সব ছবিগুলি আঁকা। ঘরের ডানদিকের দেওয়ালে রয়েছে ফারাও-এর সার্কোফেগাস টেনে আনার ছবি। সামনের দেওয়ালে পরপর তিনটি ছবি; একেবারে ডানদিকে হবু ফারাও আই ‘ওপেনিং অব দ্য মাউথ’ অনুষ্ঠান সম্পন্ন করছেন তুতানখামুনের মমির (ওসাইরিড আদলে)। মাঝের ছবিতে দেবী নুত-কে অভিবাদন জানাচ্ছেন তুতানখামুন; আর বাঁদিকের শেষ ছবিতে দেবতা ওসাইরিস-কে  আলিঙ্গন করছেন তুতানখামুন, তাঁর ‘কা’ অর্থাৎ ইহকালের আত্মা অনুসরণ করছেন পিছনে। বাঁদিকের দেওয়ালে রয়েছে বারোটি বেবুনের ছবি আর সঙ্গে দেবতা রা-এর ‘দুয়াত’ নামে পরকালের পৃথিবীতে নৌকোভ্রমণের দৃশ্য। পিছনের দেওয়াল, যেটি রেলিং-এ বেশ ঝুঁকে দেখতে হলো, সেখানে আনুবিসের সঙ্গে দাঁড়িয়ে তুতানখামুন, তাঁকে অমরত্ব দিচ্ছেন দেবী হাথোর। আর আনুবিসের পিছনে রয়েছেন দেবী আইসিস।
     
    তুতানখামুনের সমাধিগৃহের প্রবেশপথ

     
    এই সেই মমি 

     
    তুতানখামুনের সার্কোফেগাস টেনে আনা হচ্ছে - এই ছবির নীচেই সেই লুকনো সম্পদ রাখা ঘরের প্রবেশপথ (জুম করে দেখলে 'ট্রেজারি' দেখা যাবে) 

     
    ভিজির আই (পরবর্তী ফারাও, ডানদিকে) তুতানখামুনের 'ওপেনিং অব দ্য মাউথ' অনুষ্ঠান সম্পন্ন করছেন

     
    তুতানখামুন ও দেবী নুত

     
    বাঁদিক থেকে - ওসাইরিস , তুতানখামুন আর তার 'কা' 

     
    একদিকের দেওয়ালে বেবুন আর নৌকো,আর একদিকে হাথোর , তুতানখামুন , আনুবিস এবং আইসিস (এঁকে ছবিতে ধরানো যায় নি)

     
    তুতানখামুনের সমাধিকক্ষ - সার্কোফেগাস-সহ 

    এই সমাধিক্ষেত্র থেকে বেরিয়ে এসে দুজনেই খানিক থমকে দাঁড়ালাম, ঠিক পিরামিড ছুঁয়ে দেখা পর যেমনটি মনে হয়েছিল, দেখলাম তাহলে! দেখেই ফেললাম! কে ভি ৬২ লেখার সামনে দাঁড়িয়ে যখন ছবি তুলছি, তখনও যেন বিশ্বাস হতে চাইছে না! কলকাতা মিউজিয়ামে আধা-অন্ধকার ইজিপ্ট-এর ঘরটা যেমন রহস্যে ভরা থাকত, সেই রহস্যের যেন উন্মোচন হলো একেবারে প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতার অংশ, খাস ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ এসে, তুতানখামুনের সমাধির সামনে দাঁড়িয়ে, একেবারে অনির্বচনীয় অনুভূতি!
     
    আমাদের জন্যে বরাদ্দ ছিল এই তিনটি সমাধিক্ষেত্র। কিন্তু তখনও দলের অনেকের-ই তুতানখামুনের সমাধিতে প্রবেশ করা বাকি। তাই সামাহ আমাদের উৎসাহ দেখে বলল চট করে রাস্তার ওপারে কে ভি ৬ অর্থাৎ ফারাও নবম রামেসিস-এর সমাধিটাও দেখে আসতে। আর বেরিয়ে আমরা দুজন যেন সোজা ভ্যালি অব দ্য কিংস এর প্রবেশদ্বারের কাছে ফিরে যাই নিজেরা। ততক্ষণে ও বাকি সবাই কে নিয়ে পৌঁছোবে। এখানে বলে রাখি, ভ্যালি অব দ্য কিংস-এ কোনো সমাধিক্ষেত্রেই গাইড ভিতরে ঢোকা নিষেধ। তাই ওই বাইরেই যেটুকু গল্প শোনা আর বাকিটুকু নিজেদের পড়াশোনা। নবম রামেসিস-এর সমাধিক্ষেত্রে ঢুকে তার ছবি আর কারুকাজ দেখে সত্যি মন ভরে গেল। নবম রামেসিস ছিলেন বিংশতিতম রাজবংশের অষ্টম ফারাও। রাজত্ব করেছিলেন প্রায় আঠারো বছর, ১১২৯ খ্রীষ্টপূর্ব থেকে ১১১১ খ্রীষ্টপূর্ব পর্যন্ত। এঁর আমলেই সমাধিক্ষেত্রে লুন্ঠনের কথা প্রথম সামনে আসে এবং অভিযুক্তদের বিচার হয় বলে জানা যায়। এই সমাধিক্ষেত্রের মূল কক্ষটিতে প্রবেশ করা নিষেধ, তুতানখামুনের মতোই, কিন্তু এই ঘরের ছাদে দেবী নুত-এর পিঠোপিঠি ছবি দুটি সবচেয়ে অক্ষত, আর ঘরে সার্কোফেগাস না থাকলেও তার জন্যে খনন করা গর্তটি এখনও বিদ্যমান। 
     

     

     

     

     
    নবম রামেসিস-এর সমাধিকক্ষ - ছাদে নুতের ছবিটি এখানে বেশ পরিষ্কার 

     
    এখান থেকে বাইরে এসে দেখি আমাদের দল ততক্ষণে চলে গেছে সামাহ-র সাথে। আমরা তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে উঠে বসলাম একটি ফিরতি ব্যাটারী-চালিত গাড়িতে। ভ্যালি অব দ্য কিংস-এর হাজার হাজার বছরের ইতিহাস-কে বিদায় জানিয়ে সেই পাহাড়ি উপত্যকা-কে পিছনে ফেলে এগিয়ে চললাম প্রবেশপথের দিকে, সেখানেই আমরা আমাদের দলের সঙ্গে মিলিত হবো।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ভ্রমণ | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ | ২৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:7bc9:caeb:835:b8a1 | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ২১:১৫530625
  • মনে করা হয় ভ্যালি অফ কিংসের বেশিরভাগ সমাধি লুঠ কোন সাধারণ চোর ডাকাতদের কাজ নয়। নিউ কিংডমের শেষ দিকে পুরোহিতরা রাজশক্তির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠে। তারাই অনেক সমাধি লুঠ করেছিল টাকার জন্য। পুরোহিতরা সমাধি লুঠ করে মমিগুলো একটা কবরের মধ্যে গাদা করে রাখত। সেই কবরটা সাধারণ দর্শকদের দেখতে দেওয়া হয়না।
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:7bc9:caeb:835:b8a1 | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ২১:২৮530627
  • এই ভ্যালি অফ কিংস হল পৃথিবীর প্রথম রেকর্ডেড শ্রমিক ধর্মঘটের জায়গা। রামেসিস তিনের সমাধি যারা বানাচ্ছিল তারা রেশন না পেয়ে ধর্মঘট করেছিল। বোঝাই যায় নিউ কিংডম তখন ভেতর থেকে ফোপরা হয়ে যাচ্ছিল। এই সুযোগেই পুরোহিতদের উত্থান, যার কথা আগেই বলেছি।
  • সুদীপ্ত | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৩১530628
  • ধন্যবাদ পলিটিশিয়ান, হ্যাঁ চুরি-ডাকাতিগুলো আমারও মনে হয়েছে অর্গানাইজড।  যেটা লেখার ইচ্ছে সত্ত্বেও কাটিয়ে দিয়েছিলাম, এই নবম রামেসিসের সময়ের ট্রায়াল, যেখান থেকে জানা যায়, ভ্যালি অব দ্য কিংস এলাকার সমসাময়িক একজন উচ্চপদস্থ গভর্নর এরকম বেশ কিছু সমাধি থেকে প্রচুর ধনরত্ন লুঠ করেন, যেটা ফারাও-এর একজন ভিজির (যিনি পুরোহিতও ছিলেন) ধরে ফেলেন। কিন্তু শেষ অবধি বিচারে প্রমাণিত না হওয়ায় প্রাণের ভয়ে সেই ভিজির পালিয়ে যান। সাধারণ চোর হলে হয়ত অভিশাপের ভয় ইত্যাদিতে সমাধির ধারে কাছে ঘেঁষত না, বিশেষতঃ মমি রেখে আসার সময়, দরজার সীল-এ নাকি সেসব লেখা থাকত, বুক অব দ্য ডেড এর ভার্স। পুরোহিত বা গভর্নর হয়ত চুরির পর চোরেদের দিয়ে প্রায়শ্চিত্ত গোছের কিছু করিয়ে নিত   :D
  • পলিটিশিয়ান | 2603:8001:b102:14fa:e27:7ed4:9807:1c15 | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ২১:৪৪530629
  • আমার ধারণা পুরোহিতরা সমাধি লুঠের পাপ মাকড় মারলে ধোকড় হয় বলে কাটিয়ে দিত। ইন্টারেস্টিং হল, পুরোহিতদের সমাধি লুঠ করার ব্যাপারটা কিছুটা রেকর্ডেড। এক স্ক্রাইবের বাড়ী থেকে কিছু প্যাপিরাস উদ্ধার হয়েছিল যেগুলো ওই স্ক্রাইবকে লেখা পুরোহিতদের চিঠি, সমাধি লুঠের প্ল্যান।
     
    কার্নাক মন্দিরে একটা রিলিফ আছে যাতে পুরোহিত আর ফারাও সমান সাইজের। বোঝাই যায় পুরোহিতদের ঔদ্ধত্য ক্ষমতার সাথে বেড়ে উঠছিল।
  • সুদীপ্ত | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ২২:৩৯530631
  • তবে পুরোহিতদের রাজনৈতিক ক্ষমতা বাড়ানোর বা কিং-মেকার হওয়ার প্রয়াস বিশেষ ছিল বলে মনে হয় না, মূলত: ফারাও-এর সমানে সমানে প্রভাব-প্রতিপত্তি বাড়িয়ে প্রজাদের যতটা সম্ভব লুঠ করে ভোগ-বিলাসে থাকাই লক্ষ্য থাকত, মন্দিরগুলোর অতুল ধনসম্পদ তো ছিলই।
    শ্রমিক, কৃষক বা সৈন্যদের মধ্যে বিক্ষোভ তো হতই, আখেনাতেন, পরে হোরেমহেব-এর নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থান, দ্বিতীয় রামেসিসের সময় খরার কারণে খাদ্যের অকুলানের জন্যে বিদ্রোহ, তৃতীয় রামেসিসের সময় সমাধি নির্মাণের কাজ বন্ধ করা এসব ছিলই। প্রথম ধর্মঘট? হতেও পারে।
     
    এতরকম ঝামেলার পরেও এই মুড়ি-মুড়কির মতো ফারাওদের নিজের নাম রোশন করতে  জাইগ্যান্টিক নির্মাণকাজ গুলো রাজকোষের অবস্থা খারাপ করে দিয়েছিল, কিন্তু তাও লোকে ফারাওদের মাথায় তুলে রাখত; অবশ্য আজকের দিনেও এসব হয়ে চলেছে, ইতিহাসের শিক্ষা মানবসমাজে এখন বোধ হয় অর্থহীন,  কোনো কাজে লাগে না।
  • | ১৪ এপ্রিল ২০২৪ ২৩:১৩530632
  • আহ অনেক দিন বাদে এলো। ছবিভুলো বারবার দেখছি। বিশেষ করে তুতানখামেনেরটা। 
    নীচের আলোচনাটাও চমৎকার।
  • সুদীপ্ত | ১৫ এপ্রিল ২০২৪ ০৯:০৬530637
  • থ্যাঙ্কিউ দমদি,  তুতানখামুনের সমাধিতে কিন্তু ঠিক ওই কটাই ছবি, এদিকে অন্য সমাধিগুলোর ছবি তুলে শেষ করা যায় না এত ছবি আর এত সুন্দর কাজ! 
  • শিবাংশু | ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১০530690
  • ছেলেটা খুব খেটে লিখছে। আগে বঢ়ো , 
  • সুদীপ্ত | ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:২০530707
  • থ্যাঙ্কিউ শিবাংশুদা! খাটাখাটনি সব ঘুরতে যাওয়ার আগে হয়ে গেছে, এখন শুধু স্মৃতি -মন্থন, এত সময় লাগার কারণ আপিসের কাজ এবং শরীর-গতিক নিয়ে খানিক নাজেহাল :)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে মতামত দিন