অমরদার সবজি দোকানে নোনা ধরা দেওয়ালে দক্ষিণেশ্বরের মা কালীর ছবির পাশেই থাকতো রামকৃষ্ণ, সারদা মা, মিঠুন, ব্রুসলি, অমিতাভ আর তার পাশেই এক সুন্দর মহিলার মিষ্টি হাসি মুখের ছবি। যেন ঠিক ওপাড়ার বুলিদি। এর আগে তো ছবিটা দোকানে দেখিনি। ওই ছবিটা কার গো? জিজ্ঞেস করলেই কটমট করে তাকায় অমরদা। দোকান খোলার সময় কারো সাথে সে কথা বলে না। যতক্ষণ না তার ঝাঁট দেওয়া হচ্ছে। দোকানের সামনে জল ছেটানো হচ্ছে। ঠাকুরের থালায় বাতাসা দেওয়া হচ্ছে। অন্তত মিনিট পাঁচেক দেওয়ালের ছবির সামনে ধূপ নিয়ে বিড়বিড় করা হচ্ছে। সবটা হয়ে যাওয়ার পরেও আমার প্রশ্নের উত্তর পাওয়া হয়ে ওঠে না। কারণ দেরী হচ্ছে দেখে বাবাও চলে এসেছে। আমার পড়াশুনোয় ফাঁকি দেওয়ার নজির তার সব জানা। দুপুরবেলা লুকিয়ে মিঠাই বরফ খেতে গিয়ে দেখতে পাই শ্রীকৃষ্ণ সিনেমার পোষ্টার কাকুকে। জিন্দালের পাশের দেওয়ালে বেশ রঙ-চঙে এক পোষ্টার সাঁটছে। আর তার মধ্যে সেই সুন্দর মিষ্টি মেয়েটা। কপালে একটা গোল টিপ। কী নাম গো? ছোট্ট বেঁটে খাটো পোষ্টার কাকু তার মই ঘাড়ের ওপর তুলে বলে “ছিরি দেবী। বইটা হেবি হিট করেছে। ছাদমা। তুই আবার বাড়ি থেকে বেড়িয়েছিস কেলো রে? বলবো মাস্তার বাবুকে?” আমি পালাই। কিন্তু আমার চারপাশে ছেয়ে থাকে এক মিষ্টি মতো মহিলা। পোষ্টার কাকুর ছিরি-দেবী। খেলার মাঠে। জামরুল তলায়। রাসবাড়ির গোয়ালে। ঘুড়ির মাঞ্জায়। গঙ্গায় উলটো ড্রাইভ দেওয়ার সময় পোষ্টার কাকুর ছাদমা (সাদমা) আমার পিছু ছাড়ে না। পাড়ার পিকনিক পার্টিতে যখন “এ্যায় জিন্দেগি গলে লাগালে...”। ঠিক তখনি বুড়োর খাটের তলায় লুকোনো সাম্রাজ্যের এ্যালুমনিয়ামের ভাঙা বাক্সে জমতে থাকে এক মহিলার ছবি। আমাদের জীবনের নিষিদ্ধ পাপ। প্রথম না-ছোঁওয়া প্রেম আপনি শ্রীদেবী। শ্রদ্ধা।
270
বার পঠিত (সেপ্টেম্বর ২০১৮ থেকে)