এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

  • মহাবিশ্বের রহস্য

    অনির্বাণ কুণ্ডু লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | ০৩ মে ২০২৪ | ৪২৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • কিশোরদের জন্যে, পুরোনো লেখা। পূর্বে প্রকাশিত: 'বিজ্ঞানের জগৎ', সম্পাদনা -- মৌসুমী ব্যানার্জী, মহাশ্বেতা বায়েন, বিশ্বদীপ চক্রবর্ত্তী  ভাষা সংসদ ২০২২


    রাতের তারা ঝলমলে আকাশ তো সবাই দেখেছো। অতি প্রাচীনকালেও মানুষ দেখতো, দেখে মুগ্ধ হতো, আর এই জ্যোতিষ্কদের রহস্য ভেদ করার চেষ্টা করতো। জ্যোতির্বিদ্যা মানুষের প্রথম বিজ্ঞান। আমাদের সেই গুহাবাসী কিংবা সদ্য কৃষিকাজ শেখা পূর্বপুরুষদের খালি চোখে আকাশ দেখার দিন থেকে আমরা অনেক এগিয়ে এসেছি। বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে, যন্ত্রের উন্নতি হয়েছে, আমাদের দেখার এবং বোঝার ক্ষমতা অকল্পনীয়ভাবে বেড়েছে। তার সঙ্গে বেড়েছে নতুন নতুন উত্তর-না-জানা প্রশ্নের দল। ভাগ্যিস বেড়েছে, কারণ প্রশ্ন না থাকলে—সবই জানা হয়ে গেলে—বিজ্ঞানের তো আর কোনো আকর্ষণই থাকত না! আজ তোমাদের অল্প করে এরকম কয়েকটা উত্তর-না-জানা প্রশ্নের কথাই বলব। পৃথিবীর বহু বিজ্ঞানী এসব প্রশ্নের উত্তর জানার চেষ্টা করে চলেছেন, মানুষের সভ্যতার এ এক অনন্য অ্যাডভেঞ্চার। আশা করব, একদিন তোমরাও এই অ্যাডভেঞ্চারে যোগ দেবে।

    তোমরা জানো, আমরা খালি চোখে যে সব তারা দেখতে পাই, সবাই একটি তারকাপুঞ্জ বা নক্ষত্রমণ্ডলীর মধ্যে আছে। এই তারকাপুঞ্জ বা গ্যালাক্সির নাম মিল্কি ওয়ে, বাংলায় ছায়াপথ। আমাদের সূর্য ছায়াপথের এক ধারে পড়ে থাকা একেবারেই সাধারণ একটি তারা। সূর্যের চেয়ে বহুগুণ উজ্জ্বল, বহুগুণ বড়, আর বহুগুণ গরম তারা যেমন আছে, তেমনি সূর্যের চেয়ে ছোট এবং নিষ্প্রভ তারাও নেহাৎ কম নেই। ছায়াপথে যে কত তারা আছে, তা আমরা আজও ঠিকভাবে গুনে উঠতে পারিনি, তবে সংখ্যাটা বিশাল, দশ হাজার কোটি (অর্থাৎ একের পিঠে এগারোটা শূন্য, ১০১১) থেকে চল্লিশ হাজার কোটির মধ্যে কিছু একটা। বুঝতেই পারছ, এর অতি সামান্য সংখ্যক তারাই আমাদের খালি চোখে ধরা পড়ে।

    এইমাত্র একটা বিরাট বড় সংখ্যা পেলাম, কিন্তু ঘাবড়ে গেলে চলবে না—আকাশ এবং মহাবিশ্ব নিয়ে কথা বলতে গেলে এরকম বিরাট বিরাট সংখ্যারা মাঝেমধ্যেই উঁকি দেবে। দূরত্ব মাপার একক দিয়েই শুরু করি। আলো মহাশূন্যে এক সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার যায়, সূর্য থেকে পৃথিবীতে আলো আসতে প্রায় আট মিনিট লাগে। এক বছরে আলো যতটা পথ পাড়ি দেয়, তাকে বলে এক আলোকবর্ষ। মহাবিশ্বের হিসেবে এটা নিতান্তই চুনোপুঁটি দূরত্ব, আমাদের সবচেয়ে কাছের তারাও চার আলোকবর্ষের বেশি দূরে। বিজ্ঞানীরা আর একটা একক ব্যবহার করেন, পার্সেক—এক পার্সেক প্রায় সোয়া তিন আলোকবর্ষের সমান। ১০০০ পার্সেকে এক কিলোপার্সেক, আর দশ লক্ষ পার্সেকে এক মেগাপার্সেক। মেগাপার্সেক দূরত্বের বৃহত্তম একক, এক মেগাপার্সেক যেতে আলোরও প্রায় সাড়ে বত্রিশ লক্ষ বছর লাগে।

    ছায়াপথ কিছু একমাত্র গ্যালাক্সি নয়। এর ধারেকাছে আরো অনেকগুলো গ্যালাক্সি আছে, যেমন বড় ও ছোট ম্যাগেলানিক মেঘ, বা অ্যান্ড্রোমিডা। এরকম মোট কত গ্যালাক্সি আছে? বিজ্ঞানীদের অনুমান, প্রায় দশ হাজার কোটি। এটা হল যতটুকু মহাবিশ্ব আমরা দেখতে পাই, তার হিসেব, এর বাইরে মহাবিশ্বের আরো বিরাট অংশ হয়তো পড়ে আছে যা আমরা দেখতেই পাই না। কেন পাই না? কারণ সেখান থেকে আলো এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছতেই পারেনি। মহাবিশ্বের বয়েস প্রায় চোদ্দশো কোটি বছর (এই হিসেবটাও বিজ্ঞানীরা খুব নিখুঁতভাবে বের করেছেন), সুতরাং দু হাজার কোটি আলোকবর্ষ দূরের গ্যালাক্সি থেকে তো আলো এখনো আমাদের কাছে এসে পৌঁছবে না।



    ছবি – ১: আমাদের প্রতিবেশী গ্যালাক্সি অ্যান্ড্রোমিডা। ছায়াপথের মত এটিও একটি প্যাঁচ খাওয়া বা স্পাইরাল গ্যালাক্সি। মাঝে একটা ভারি অংশ, যার চারদিকে আছে কয়েকটি স্পাইরাল বাহু। ছায়াপথের এরকম একটি স্পাইরাল বাহুর মধ্যে আছে আমাদের সূর্য এবং সৌরজগৎ, ধীরে ধীরে কেন্দ্রকে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। (সূত্র: David Dayag)


    আলোর কথা বললামই যখন, একটু মনে করিয়ে দিই – আলো হল তড়িৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ, আর দৃশ্যমান আলোর বাইরেও এক বিরাট বর্ণালী পড়ে আছে। তরঙ্গদৈর্ঘ্য বাড়ালে পাব অবলোহিত (যাকে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন লাল-উজানি আলো), তারপর মাইক্রোওয়েভ, রেডিওতরঙ্গ। কমের দিকে অতিবেগুনি, এক্সরশ্মি, গামারশ্মি। এদের সবাইকেই আমরা আলো বলব। মহাকাশ থেকে সব রকম আলোই আসে, কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যের আলো পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে শোষিত হয়ে যায় (না হলে প্রাণের সৃষ্টিই হত না), কাজেই সেই সব আলো ধরতে গেলে পৃথিবীর কক্ষপথে, বায়ুমণ্ডলের বাইরে, দূরবীন বসাতে হয়। হাবল্‌ স্পেস টেলিস্কোপ হল কক্ষপথে বসানো প্রথম দূরবীন, মহাবিশ্বের কত খবর যে আমরা হাবল্‌ টেলিস্কোপের থেকে পেয়েছি তার ইয়ত্তা নেই। জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের নামে এই টেলিস্কোপ, তাঁর কথায় একটু পরেই আমরা আসব।



    ছবি – ২: হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। ১৯৯০ সালে একে পৃথিবীর কক্ষপথে স্থাপন করা হয়, তিরিশ বছর ধরে মহাবিশ্বের পুঙ্খানুপুঙ্খ ছবি পাঠিয়ে চলেছে। (সূত্র: Ruffnax (Crew of STS-125))


    তোমরা সবাই জানো, মৌলিক পদার্থের ক্ষুদ্রতম একক হল পরমাণু। এক সময় বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করতেন, পরমাণু অবিভাজ্য, তাকে আর ভাঙা যায় না, কিন্তু পরে টমসন, এবং রাদারফোর্ড ও তাঁর সহযোগীরা দেখালেন যে পরমাণুকে ভাঙা যায়। পরমাণুর মূল উপাদান তিনটে – কেন্দ্রে ধনাত্মক তড়িৎবাহী প্রোটন এবং তড়িৎনিরপেক্ষ নিউট্রন, আর বাইরে ঋণাত্মক তড়িৎবাহী ইলেকট্রন। সবচেয়ে সহজ পরমাণু হল হাইড্রোজেন গ্যাসের, এর কেন্দ্রে থাকে শুধু একটা প্রোটন, আর বাইরে একটা ইলেকট্রন। হিলিয়ামের কেন্দ্রে আছে দুটো করে প্রোটন আর নিউট্রন। যে কোন মৌলের পরিচয় তার কেন্দ্রে প্রোটনের সংখ্যা দিয়ে ঠিক হয়, নিউট্রনের সংখ্যার একটু এদিক ওদিক হতে পারে, হলে একই মৌলের বিভিন্ন আইসোটোপ পাওয়া যায়।

    বিজ্ঞানীরা বলেন, এক প্রচণ্ড শক্তিশালী বিস্ফোরণে মহাবিশ্বের সৃষ্টি। এই মহাবিস্ফোরণের চলতি নাম হল বিগ ব্যাং। আমরা যে সমস্ত পদার্থ চারপাশে দেখতে পাই, মহাবিশ্ব সৃষ্টির মুহূর্তেই তারা মোটেই তৈরি হয়নি। প্রথম হাইড্রোজেন পরমাণু পেতে আমাদের প্রায় চার লক্ষ বছর অপেক্ষা করতে হবে। নক্ষত্র সৃষ্টি হতে তখনো ঢের দেরি। মহাবিশ্বে আমরা যত পরমাণু দেখতে পাই (বা আছে বলে অনুমান করতে পারি), তার মোট ভরের চুয়াত্তর শতাংশই হাইড্রোজেন। আর চব্বিশ শতাংশ হিলিয়াম। তিন নম্বরে অক্সিজেন, এক শতাংশের সামান্য বেশি। বাকিরা নেহাৎই নগণ্য। এর পরের সাতটা স্থানে আছে কার্বন, নিয়ন, লোহা, নাইট্রোজেন, সিলিকন, ম্যাগনেসিয়াম, আর সালফার, তাদের মোট অবদান আধ শতাংশও হয় কিনা সন্দেহ। এখানে বলে রাখা ভালো, হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম ছাড়া বাকি যে সব মৌলের নাম করলাম, সবাই তৈরি হয়েছে কোনো না কোনো নক্ষত্রের ভেতরে। অর্থাৎ, আমরা সবাই বহুকাল আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া কোনো তারার ধ্বংসাবশেষ।

    দুইয়ের পিঠে তিরিশটা শূন্য বসালে যা হয় (২ X ১০৩০), সূর্যের ভর প্রায় অত কিলোগ্রাম। আগেই বলেছি, মহাবিশ্বে সুর্য নিতান্তই গড় মাপের একটি তারা, আর মোট তারা আছে প্রায় একের পিঠে বাইশটা শূন্য। তাহলে যা পাওয়া গেল, সেটাই কি মহাবিশ্বের মোট ভর? উত্তর, একেবারেই না। সব পরমাণুর অতি সামান্য একটা অংশই তারাদের মধ্যে থাকে, বাকিটা ছড়িয়ে থাকে বিভিন্ন গ্যালাক্সির মধ্যে, মহাজাগতিক ধূলিকণা বা মেঘ হিসেবে। এই মেঘের ঘনত্ব হিসেব করে মহাবিশ্বের সমস্ত পরমাণুর মোট ভর বিজ্ঞানীরা বের করেছেন --- একের পিঠে তিপ্পান্নটা শূন্য বসালে যত হয় (১০৫৩),  প্রায় তত কিলোগ্রাম। বললাম না, আমাদের অনেক বড় বড় সংখ্যা নিয়ে কাজ করতে হবে? সে যাই হোক, এই সংখ্যাটাকে আমরা বলব দৃশ্যমান ভর। অদৃশ্য ভরও আছে। 

    এই অদৃশ্য ভর থেকেই আমাদের গল্পটা শুরু হল। আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে একশো বছরেরও বেশি আগে, ১৯১৪ সালে, যখন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন মহাকর্ষ সম্বন্ধে তাঁর তত্ত্ব উপস্থাপিত করেন। এই তত্ত্বের নাম সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদ, ইংরেজিতে জেনারেল রিলেটিভিটি। এর জটিল অঙ্ক আলোচনার কোন জায়গাই এখানে নেই, সে সব তোমরা বড় হয়ে পড়বে। কিন্তু মূল কথাটা একটু বুঝে নেওয়া যাক।

    এর আগে ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদ বা স্পেশাল রিলেটিভিটি প্রকাশ করেন। এই তত্ত্বের একটা অনুসিদ্ধান্ত হল, মহাশূন্যে আলোর চেয়ে বেশি বেগে কেউ যেতে পারে না (মহাশূন্যে কথাটা গুরুত্বপূর্ণ; জলের মধ্যে আলোর যা বেগ, তাকে দ্রুতগামী ইলেকট্রন হার মানাতে পারে), অর্থাৎ বহুদূরের খবর আনার জন্যে আলোর চেয়ে উপযুক্ত মাধ্যম আর কেউ নেই। আরেকটা বড় অনুসিদ্ধান্ত তোমরা সবাই জানো, যাকে গাণিতিকভাবে প্রকাশ করে যায়: E = mc2. এর মানে হল, ভরকে শক্তিতে বা শক্তিকে ভরে রূপান্তরিত করা যায়। পরমাণু বোমা বা পরমাণু চুল্লি যে শক্তি উৎপাদন করে, তা ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম জাতীয় তেজস্ক্রিয় পদার্থের খুব সামান্য কিছু ভরের শক্তিতে রূপান্তরের ফল। সূর্যের আলো ও তাপের পেছনেও এই সমীকরণ। নক্ষত্রের মধ্যে চারটে হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াস (অর্থাৎ প্রোটন) জুড়ে হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস বা আলফা কণা তৈরি হয়। এতে সামান্য যে ভরের ঘাটতি পড়ে, সেটাই শক্তি হয়ে বেরিয়ে আসে। অত সামান্য ভর থেকে অত বিপুল শক্তি কোত্থেকে আসে? ওই যে আলোর বেগের বর্গ বা c2  দিয়ে গুণ করা আছে।

    কিন্তু বিশেষ আপেক্ষিকতাবাদের আসল জিনিসটাই তো বলা হয়নি। আমরা ছোট থেকে শিখে আসি – দেশ বা স্থানের তিনটে মাত্রা, দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, আর উচ্চতা; আর কাল বা সময়ের একটাই মাত্রা, যাকে ঘড়ি দিয়ে মাপি। আইনস্টাইন দেখালেন, যে, দেশ আর কালকে এভাবে আলাদা করা যায় না, আমাদের মোট চার মাত্রার দেশকালের কথা বলা উচিত। এই যে দেশ আর কালের মাত্রা মিলেমিশে গেল – এটা ধরা পড়বে, যদি কোনো বস্তুর বেগ আলোর বেগের কাছাকাছি হয়, তবেই। দৈনন্দিন জীবনে দেশ আর কাল সম্পূর্ণ আলাদা জিনিস।

    পৃথিবীর চারদিকে চাঁদের ঘোরাই বলি, বা সৌরজগৎ, বা গ্যালাক্সিদের মহাশূন্যে ঘুরে বেড়ানো, মহাবিশ্বের আসল চালিকাশক্তি হল মহাকর্ষ বল। এই বল কীভাবে কাজ করে, বহুদিন আগেই আইজাক নিউটন তা বলে গেছেন --- দুটি বস্তুর ভরের গুণফলের সমানুপাতিক, আর তাদের দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক। বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে এই সূত্রের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে, যেমন একেবারে নির্ভুলভাবে গ্রহণের সময় বা গ্রহদের কক্ষপথের গণনা।

    আইনস্টাইন তাঁর সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদে বললেন, মহাকর্ষ আসলে কোনো বলই নয়। তাহলে কী? আইনস্টাইন বললেন, মহাকর্ষ আসলে চার মাত্রার এই দেশকালের জ্যামিতির খেলা। কাগজের ওপর দু-মাত্রার ইউক্লিডিয়ান জ্যামিতি আমরা সবাই স্কুলে করেছি, তোমরা কেউ কেউ হয়তো তিন মাত্রার জ্যামিতিও করেছ। চার মাত্রার জ্যামিতি, স্বভাবতই, আরো একটু জটিল। 



    ছবি - ৩: টান করে রাখা চাদরের ওপর ভারি একটা বস্তু রাখার ফলে চাদরের বিকৃতি, যেটা বোঝা যাচ্ছে কাটাকুটি লাইনগুলো বেঁকে যাওয়া থেকে। বস্তুটা যত ভারি হবে, বিকৃতি তত বেশি হবে। আবার বস্তুটা থেকে যত দূরে চলে যাব, বিকৃতিও কমে আসবে, আবার সমতল জ্যামিতি ফিরে পাব।


    আইনস্টাইন দেখিয়েছিলেন, কোনো জায়গার জ্যামিতি নির্ভর করে – সেখানে কী পরিমাণ বস্তু (বা শক্তি) আছে—তার  ওপর। যদি কিছুই না থাকে, তাহলে জ্যামিতি হয় সমতল, টানটান করে পেতে রাখা একটা চাদরের মত। বস্তু থাকলে এই জ্যামিতিটা আর সমতল থাকে না, দুমড়ে যায়, যেমন টানটান করে রাখা চাদরের মধ্যে একটা ইট ফেললে সেখানে চাদরটা একটু নেমে যায়। বস্তু যত ভারি হয়, এই দোমড়ানো বা বিকৃতির পরিমাণ তত বেশি হয়, ৩ নং ছবি দেখো। দেশকালের এই বিকৃতিই মহাকর্ষের প্রভাব হিসেবে আমাদের কাছে ধরা দেয়। কতটা বস্তু থাকলে কীরকম বিকৃতি হবে, সেটাই সাধারণ আপেক্ষিকতাবাদের বা আধুনিক মহাকর্ষ তত্ত্বের মূল সমীকরণ, যাকে আইনস্টাইনের সমীকরণও বলা হয়। সমীকরণটি যথেষ্ট জটিল, আর সবক্ষেত্রে এর সমাধানও, অন্তত কম্পিউটার ব্যবহার না করে শুধু কাগজে কলমে—সম্ভব নয়। শুধু বলে রাখা উচিত, বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া নিউটনের তত্ত্ব ও আইনস্টাইনের তত্ত্ব থেকে পাওয়া ফল একদম অভিন্ন।

    আইনস্টাইন প্রথম যখন এই সমীকরণটি লেখেন, তখনো সকলের ধারণা ছিল মহাবিশ্ব স্থির, অর্থাৎ গ্যালাক্সিরা চিরকাল একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। মুশকিল হল, মহাবিশ্ব স্থির ধরে নিলে আইনস্টাইনের সমীকরণে একটা বড় ধরণের অসঙ্গতি থেকে যায়। সেটা কাটানোর জন্যে আইনস্টাইন করলেন কি—তিনি ওই জ্যামিতির হিসেবের মধ্যে হাতে করে আরো একটা জিনিস ঢুকিয়ে দিলেন—যার একমাত্র উদ্দেশ্য ওই অসঙ্গতিটা দূর করা। এই গা-জোয়ারি করে ঢোকানো জিনিসটার নাম তিনি দিলেন কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট, আর একে গ্রিক অক্ষর Λ (বড় হাতের ল্যামডা) দিয়ে চিহ্নিত করলেন।

    মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল্‌ দেখালেন, মহাবিশ্ব মোটেই স্থির নয়। বরং সব গ্যালাক্সি একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে – যে গ্যালাক্সি আমাদের থেকে যত দূরে আছে, তার সরে যাওয়ার বেগ তত বেশি। তার মানে এই নয়, যে, আমরা মহাবিশ্বের কেন্দ্রে আছি। ব্যাপারটা কীরকম জানো? মনে কর, একটা বেলুনের ওপর কয়েকটা ফুটকি কাটা আছে। এবার তুমি বেলুন যত ফোলাবে, প্রত্যেক ফুটকি একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাবে। বিজ্ঞানীরা বললেন, মহাবিশ্বও এইরকম ফুলছে, তার ফলে গ্যালাক্সিরা একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। মহাবিশ্ব স্থির নয়, প্রসারণশীল।



    ছবি - ৪: মহাবিশ্বের প্রসারণ। সূত্র: Eugenio Bianchi, Carlo Rovelli & Rocky Kolb


    মহাবিশ্বের এই বেড়ে চলা হিসেবে নিলে একটা ম্যাজিকের মত ব্যাপার ঘটে। আইনস্টাইনের সমীকরণে ওই অসঙ্গতিটা আর থাকে না, তার ফলে Λ জিনিসটার আর কোনো প্রয়োজনও থাকে না। আইনস্টাইন বললেন, তাঁর নিজেরই নিজের সমীকরণের ওপর আরেকটু ভরসা থাকা উচিত ছিল, তাহলে তিনি নিজেই বলতে পারতেন মহাবিশ্ব স্থির থাকতে পারে না। বিজ্ঞানীরা Λ-কে নির্বাসন দিলেন। আইনস্টাইন বললেন, আমার হিমালয়প্রমাণ ভ্রান্তি। সত্যিই কি তাই? বোধহয় না, কিন্তু সেখানে যাবার জন্যে আমাদের আরো পঁচাত্তর বছর অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে আরো একটা গল্প আছে।

    ১৯৩৩ সালে ফ্রিৎজ জুইকি নামে এক বিজ্ঞানী দেখালেন, মোট পরমাণুর হিসেব থেকে ছায়াপথের ভর বের করতে গেলে একটা গোলমাল হচ্ছে। ছায়াপথের স্পাইরাল বাহুতে যে সমস্ত নক্ষত্র আছে, তারা সকলেই ছায়াপথের কেন্দ্রের চারদিকে আস্তে আস্তে ঘুরছে। ছায়াপথের দৃশ্যমান ভরের প্রায় পুরোটাই এই কেন্দ্র অঞ্চলে অবস্থিত (কেন্দ্রের গল্পটা সংক্ষেপে বলেছি শেষের দিকে। সেখানে যে ঠিক কী আছে, তা দেখানোর জন্যে এই বছর, ২০২০ সালে, রাইনহার্ট গেঞ্জেল এবং আন্দ্রেয়া গেজ নামে দুই বিজ্ঞানী নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন)। কিন্তু তাহলে ওই নক্ষত্রদের ঘোরার বেগ যত হওয়া উচিত, পাওয়া যাচ্ছে তার চেয়ে অনেক বেশি। জুইকি বললেন, এর একমাত্র ব্যাখ্যা মহাবিশ্বের সব ভরই দৃশ্যমান নয়। অনেকটা জিনিস আছে যা আমরা চোখে (অর্থাৎ যন্ত্রপাতি দিয়ে) দেখতে পাই না, শুধু তার মহাকর্ষীয় টান অনুভব করতে পারি। এর নাম দিলেন ডার্ক ম্যাটার বা কৃষ্ণবস্তু।

    কৃষ্ণ কেন? আমরা যা দেখি, সবই কোনো না কোনো রকম আলো দিয়ে দেখি, সে রেডিও তরঙ্গ বা গামারশ্মি যাই হোক না কেন। গাছের পাতার ওপর আলো পড়ে বিক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের চোখে এসে পৌঁছলে পাতাটাকে দেখতে পাই। কৃষ্ণবস্তু হল অন্ধের চোখের মত, সেখানে আলো কোনো সাড়া ফেলে না, তাই আলো দিয়ে তাকে দেখা যায় না। কিন্তু তার ভর আছে বলে মহাকর্ষীয় টান অনুভব করা যায়। তার মানে, কৃষ্ণবস্তু মোটেই সাধারণ পরমাণু দিয়ে তৈরি নয়। কী দিয়ে যে তৈরি, তা এখনো আমরা জানি না—বিজ্ঞানীরা জানার চেষ্টা চালাচ্ছেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বেশ কিছু গবেষণাগার কৃষ্ণবস্তুর চিহ্ন ধরার পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। যেটুকু জানি, তা এই যে আমাদের গ্রহ তারা মহাজাগতিক মেঘ গ্যালাক্সি নিয়ে এই দৃশ্যমান জগৎ কৃষ্ণবস্তুর সমুদ্রে ডুবে আছে। মহাবিশ্বে কৃষ্ণবস্তুর মোট ভর দৃশ্যমান ভরের প্রায় পাঁচ গুণ। অর্থাৎ, বেশিটাই অজানা।

    কী অদ্ভুত, তাই না? কৃষ্ণবস্তু যে কোথা থেকে এলো, কী দিয়ে তৈরি, কিছুই আমরা জানি না। শুধু তারা যে মহাকর্ষীয় বলের নিয়ম মেনে চলে, সেটুকু জানি। গল্পের এখানেও শেষ নয়। এর চেয়েও অদ্ভুত জিনিস আছে।

    এডউইন হাবলের কথা বলছিলাম। তিনি দেখিয়েছিলেন, গ্যালাক্সিরা একে অন্যের থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। কোনো গ্যালাক্সি আমাদের থেকে যত দূরে আছে, তার সরে যাওয়ার বেগ সেই দূরত্বের সঙ্গে সমানুপাতিক। গ্যালাক্সি থেকে যে আলো আসে, তার বর্ণালী বিশ্লেষণ করে সরে যাওয়ার বেগ মাপা যায়। তোমরা অনেকে হয়তো ডপলার ক্রিয়ার কথা পড়েছ, মূল নীতি সেই ডপলার ক্রিয়া। এখন যন্ত্রপাতি অনেক উন্নত হয়েছে, মাপার নতুন নতুন পদ্ধতি বেরিয়েছে, ফলে হাবল যতদূর পর্যন্ত দেখতে পেয়েছিলেন, আমরা তার চেয়ে বহু বহুগুণ বেশি দূর পর্যন্ত দেখতে পাই। অতিদূরের এইসব গ্যালাক্সির বেগ মাপতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা একটা ধাক্কা খেলেন।

    আগে বলেছি, প্রায় চোদ্দশো কোটি বছর আগে এক মহাবিস্ফোরণে মহাবিশ্বের সৃষ্টি। সেই বিস্ফোরণের ধাক্কায় সব কিছুই একে অন্যের থেকে দূরে ছিটকে পড়েছিল, ছিটকে যাবার সে দৌড় এখনো চলছে। কিন্তু দৌড়ের বেগ কমে আসতে বাধ্য, কারণ মহাকর্ষের টান। বেগ কতটা কমবে, তা নির্ভর করে মহাবিশ্বে মোট কতটা ভর (এবং শক্তি) আছে তার ওপরে। প্রায় পঁচিশ বছর আগে দু-দল বিজ্ঞানী দেখলেন, বহুদূরের (কয়েকশো থেকে কয়েক হাজার মেগাপার্সেক পর্যন্ত) গ্যালাক্সিগুলোর দৌড়ের বেগ কমছে তো না-ই, বরং আরো যেন বেড়ে যাচ্ছে। যেন কেউ তাদের আরো জোরে ঠেলে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে।

    এরকম তো হবার কথা ছিল না? মহাকর্ষ বল আকর্ষক, দুটো বস্তুকে একে অন্যের দিকে টেনে আনে, বিকর্ষণ তো ঘটায় না? তার মানে, এখানে কি অন্য কোনো একটা বল কাজ করছে? ঠিক কি যে হচ্ছে বোঝা না গেলেও, বিকর্ষণ যে ঘটছে এ বিষয়ে দু-দল বিজ্ঞানীই নিঃসন্দেহ হলেন। এটা সম্পূর্ণ অভাবনীয়, আমাদের সব প্রচলিত ভাবনাচিন্তার বাইরে। কিন্তু সেটাই তো বিজ্ঞানের মজা। এই আবিষ্কারের জন্যে ২০১১ সালে এঁরা নোবেল পুরস্কার পান।

    যা বোঝা গেল, মহাবিশ্বে এক অদ্ভুত রকমের শক্তির ভাণ্ডার আছে, সেই শক্তিই গ্যালাক্সিদের বেশি জোরে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। এই শক্তি কোথা থেকে এল, কী এর উৎস, এর ধর্মই বা কী, কিছুরই স্পষ্ট কোনো উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা এর নাম দিয়েছেন ডার্ক এনার্জি বা কৃষ্ণশক্তি (কৃষ্ণবস্তুর সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই কিন্তু)।

    মহাবিশ্বের মোট ভর ও শক্তির তাহলে তিনটে অংশ হল। এক, দৃশ্যমান, বিভিন্ন অণু-পরমাণু, আলো, এই সব মিলিয়ে। দুই, কৃষ্ণবস্তু, যার মহাকর্ষের টান আছে, কিন্তু সাধারণ অণু-পরমাণু দিয়ে তৈরি নয়। তিন, কৃষ্ণশক্তি, যা শুধু আছে বলে জানি, তার চেয়ে বেশি কিছুই প্রায় জানি না। এখন মোট ভর ও শক্তির প্রায় ৫ শতাংশ দৃশ্যমান, প্রায় ২৫ শতাংশ কৃষ্ণবস্তু, আর প্রায় ৭০ শতাংশ কৃষ্ণশক্তি! ভেবে দেখ, মহাবিশ্বের ৯৫ শতাংশই কী দিয়ে তৈরি, সে সম্বন্ধে আমাদের কোনো ধারণাই নেই।

    মহাবিশ্ব যখন তার যাত্রা শুরু করেছিল, তখন কিন্তু প্রায় পুরোটাই ছিল দৃশ্যমান বস্তু ও কৃষ্ণবস্তু, কৃষ্ণশক্তির অস্তিত্ব প্রায় ছিলই না। যত দিন যাচ্ছে, কৃষ্ণশক্তির পরিমাণ বাড়ছে, আরো কয়েকশো কোটি বছর পরে কৃষ্ণশক্তিই মহাবিশ্বকে পুরো কব্জা করে নেবে, আর তার প্রসারণের বেগও হু হু করে বেড়ে চলবে। আমরা কেউই অবশ্য সে সব দিন দেখার জন্যে থাকব না।

    কৃষ্ণশক্তি যে কী—সেটা আমরা জানি না, কিন্তু আমাদের চেনা একটা জিনিস আছে যেখান থেকে কৃষ্ণশক্তি আসতে পারে। সে হল বহুকাল আগে ফেলে দেওয়া আইনস্টাইনের সেই হিমালয়প্রমাণ ভ্রান্তি, কসমোলজিক্যাল কনস্ট্যান্ট Λ, যার কথা প্রায় পঁচাত্তর বছর বিজ্ঞানীদের মনেই পড়েনি। দেখানো যায়, যে Λ যদি শূন্য না হয়, তাহলে মহাবিশ্বের এইরকম অদ্ভুত প্রসারণ সম্ভব। এই ব্যাখ্যাটার মধ্যেও কিছু অসঙ্গতি আছে (নইলে তো বলতামই যে কৃষ্ণশক্তি কী আমরা বুঝে ফেলেছি), কিন্তু আপাতত এর চেয়ে ভালো ব্যাখ্যা আমাদের হাতে আর নেই। 

    শেষ যে জিনিসটার কথা বলব, তার নাম তোমরা অনেকেই শুনেছ, হয়তো কাগজে বা টিভিতে ছবিও দেখেছ। এর নাম ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর। নামে মিল থাকলেও এটা অত রহস্যময় কিছু নয়, অন্তত এর বিজ্ঞান আমরা অনেকটাই জানি।

    আইনস্টাইনের সমীকরণের কথা আগে বলেছি। প্রথম যে সব বিজ্ঞানী এর সমাধান করেছিলেন, তাঁদের একজন হলেন কার্ল শোয়ার্ৎসশিল্ট। একটা ফুটবলের মত গোল ভর স্থির রেখে দিলে তার চারপাশে জ্যামিতি কতটা বিকৃত হবে, সেটা তিনি হিসেব করে দেখিয়েছিলেন। তাঁর হিসেব মত, এই গোলকটার ঘনত্ব যত বাড়বে, বিকৃতিও তত বাড়তে থাকবে। অর্থাৎ, পৃথিবীর ভর ঠিক রেখে যদি কেউ তাকে চেপে ছোট করে দিতে পারত, তাহলে পৃথিবীর চারপাশে জ্যামিতির বিকৃতিও বেড়ে যেত। আরেকটু সোজা ভাষায় বললে, অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বেড়ে যেত। ভর ঠিক রেখে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ কমালে যে অভিকর্ষজ ত্বরণের মান বাড়বে, এটা তো তোমরা সবাই জানো। এখন পৃথিবীর টান কাটাতে হলে কোনো জিনিসকে সেকেন্ডে প্রায় ১১ কিলোমিটার গতিতে  ছুঁড়তে হয়, তখন আরও অনেক বেশি গতিতে ছুঁড়তে হবে।  

    তাহলে এবার একটা প্রশ্ন করাই যায় – পৃথিবীকে চেপে কি এত ছোট করে দেওয়া সম্ভব, যে আলোও বেরিয়ে যেতে পারবে না? আলোর বেগ মহাশূন্যে সেকেন্ডে প্রায় তিন লক্ষ কিলোমিটার, এর চেয়ে বেশি বেগে কেউই ছুটতে পারে না, সুতরাং আলো না বেরোতে পারলে আর কারও পক্ষেই বেরোনো সম্ভব নয়। এর উত্তর হল, হ্যাঁ; পৃথিবীর ব্যাসার্ধ যদি একটা মার্বেলের গুলির মত করে দেওয়া যেত, সবটুকু ভর অটুট রেখে, তাহলে সেই বামন পৃথিবীর থেকে আলোও বেরোতে পারতো না।

    সেই পৃথিবীকে কি আমরা দেখতে পেতাম, মঙ্গল বা বৃহস্পতি, বা আরও দূরের কোথাও বসে? পেতাম না, কারণ আলো দিয়েই তো দেখি, আলো যদি না বেরোতে পারে, তাহলে সেই অদ্ভুত জিনিসের খবর কে নিয়ে আসবে? শুধু একটা চিহ্ন রয়ে যাবে – ঐ বিরাট ঘনত্বের ফলে বাইরের জ্যামিতি দুমড়ে মুচড়ে একাকার হয়ে যাওয়া। একেই বলে কৃষ্ণগহ্বর বা ব্ল্যাক হোল।

    এটা খুব কষ্টকল্পনার মত শোনাচ্ছে, কিন্তু শোয়ার্ৎসশিল্ট দেখিয়েছিলেন, যে আইনস্টাইন সমীকরণের সত্যিই এরকম একটা সমাধান সম্ভব, যেখানে দেশকালের বিকৃতি অসীম হয়ে যেতে পারে। দেশকালের জ্যামিতিতে সেরকম বিন্দুর অস্তিত্ব আমরা কেউই চাই না, কারণ প্রকৃতিতে তো আর অসীম বলে কিছু হয় না, কিন্তু অঙ্ক বলছে এরকম বিন্দু থাকতে পারে। এদের বলে ব্যতিক্রমী বিন্দু বা সিংগুলারিটি, y=1/x সমীকরণ সমাধান করে x=0 বিন্দুতে y-এর মান বের করতে গেলে যেরকম হবে আর কি। ভাগ্যক্রমে, এই ব্যতিক্রমী বিন্দু আমরা দেখতে পাই না, কারণ তা থাকে এক অদৃশ্য আবরণের পেছনে।



    ছবি - ৫: M-৮৭ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত কৃষ্ণগহ্বর। বাইরে থেকে যে সব বস্তু কৃষ্ণগহ্বরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তাদের বিকীর্ণ আলোর বলয় দেখা যাচ্ছে ইভেন্ট হরাইজনের বাইরে। এই কৃষ্ণগহ্বরটি নিজের অক্ষের চারদিকে পাক খাচ্ছে বলে আলোকবলয় সর্বত্র সমান উজ্জ্বল নয়। (সূত্র: EHT Collaboration)


    এই আবরণটিকে বলে ইভেন্ট হরাইজন। কোনো বস্তু যতক্ষণ ইভেন্ট হরাইজন পার করেনি, ততক্ষণই তার থেকে আলো এসে আমাদের কাছে পৌঁছতে পারে, একবার ইভেন্ট হরাইজন পেরিয়ে গেলে আলোরও সাধ্য নেই সেই ভয়ঙ্কর আকর্ষণ কাটিয়ে বেরোয়। কৃষ্ণগহ্বর থাকে এই ইভেন্ট হরাইজনের ভেতরে, ব্যতিক্রমী বিন্দু সমেত, সুতরাং কৃষ্ণগহ্বরের সাইজ কীরকম সে আমরা কোনোদিনই জানতে পারব না, একমাত্র ইভেন্ট হরাইজনের সাইজ জানা সম্ভব। তোমরা কৃষ্ণগহ্বরের যে ছবি দেখেছ (৪ নং ছবি), একটা গোল কালো বৃত্তের মত, ঐটাই ইভেন্ট হরাইজন।

    আইনস্টাইনের সমীকরণে ব্যতিক্রমী বিন্দুর অস্তিত্ব কি অবধারিত? আইনস্টাইনের মৃত্যুর এক মাসের মধ্যে, ১৯৫৫ সালে, এই বিষয়ে বিজ্ঞানের বিখ্যাত পত্রিকা ফিজিক্যাল রিভিউ-তে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। ব্যতিক্রমী বিন্দু বিষয়ে যাবতীয় গবেষণার ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে এই প্রবন্ধটিকে ধরা যেতে পারে। এর লেখক সদ্য ত্রিশোর্ধ্ব এক বাঙালি বৈজ্ঞানিক, পরবর্তী জীবনে প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রবাদপ্রতিম অধ্যাপক অমলকুমার রায়চৌধুরী। এই কাজটিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে স্বাধীন ভারতের সর্বশ্রেষ্ঠ তাত্ত্বিক গবেষণা বলে মনে করি। অমলকুমার দেখান, যে দেশকালের মধ্যে দিয়ে কোনো বস্তুকণার গতিপথ যদি আমরা অনুসরণ করি, তাহলে ব্যতিক্রমী বিন্দুর দেখা পাওয়া উচিত। মনে রাখতে হবে, অমলকুমার কৃষ্ণগহ্বর সম্বন্ধে কিছু বলেননি, তাঁর আলোচনার কেন্দ্রে ছিল মহাবিশ্বতত্ত্ব বা কসমোলজি। বস্তুকণার গতিপথের এই সমীকরণটি রায়চৌধুরি সমীকরণ নামে পরিচিত। দশ বছর পরে এই কাজটিকেই আরো অনেক এগিয়ে নিয়ে যান রজার পেনরোজ (যিনি এ বছর [২০২০] নোবেল পেয়েছেন), এবং স্টিফেন হকিং।   

    বেশিরভাগ গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অতি বিশাল এক কৃষ্ণগহ্বর আছে বলে বিজ্ঞানীরা মনে করেন। M87 গ্যালাক্সির কেন্দ্রের কৃষ্ণগহ্বরের ছবি কিছুদিন আগেই মিডিয়ার কল্যাণে সকলের কাছে পৌঁছেছিল (ছবি-৪)। আমাদের ছায়াপথ গ্যালাক্সির কেন্দ্র আকাশে ধনুরাশি বা স্যাজিটারিয়াস নক্ষত্রমণ্ডলীর দিকে। এখানেও এরকম সুবিশাল এক কৃষ্ণগহ্বর আছে বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করতেন। কৃষ্ণগহ্বর থেকে তো আর আলো বেরোয় না, কিন্তু আশপাশের তারা থেকে কৃষ্ণগহ্বর যখন তার মহাকর্ষের টানে জিনিসপত্র লুঠ করতে থাকে, সেই লুঠ হওয়া জিনিসপত্র কৃষ্ণগহ্বরে মিলিয়ে যাবার আগে আলোর চিহ্ন পাঠিয়ে যায়। মুশকিল হল, পৃথিবীতে বসে সেই আলো দেখাও ভারি শক্ত, কারণ ছায়াপথের কেন্দ্র আর আমাদের মধ্যে আছে বিশাল মহাজাগতিক ধূলিকণা ও গ্যাসের মেঘ, তারা প্রায় সব আলোটুকুই শুষে নেয়।

    আর একটা রাস্তা আছে, এই কৃষ্ণগহ্বরকে কেন্দ্র করে যে তারাগুলো পাক খায়, তাদের আবর্তনকাল মেপে কেপলারের সূত্রের সাহায্যে কৃষ্ণগহ্বরের ভর নির্ণয় করা। এটাও যথেষ্ট কঠিন কাজ, কিন্তু বিজ্ঞানীরা সফলভাবেই করেছেন। এই রকম দুটি পর্যবেক্ষক দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন এ বছর পেনরোজের সঙ্গে নোবেল পুরস্কার ভাগ করে নেওয়া রাইনহার্ট গেঞ্জেলআন্দ্রেয়া গেজ। মনে রেখো, নোবেল পুরস্কারের ক্ষেত্রে পর্যবেক্ষণের একটা বড় ভূমিকা আছে, শুধুমাত্র তত্ত্বের ভিত্তিতে নোবেল দেওয়া হয় না—আইনস্টাইনও তাঁর মহাকর্ষের তত্ত্বের জন্যে নোবেল পাননি।

    বিজ্ঞানীরা মাপজোখ করে যা পেয়েছেন, তা সংক্ষেপে এইরকম – ছায়াপথের কেন্দ্রে যে বস্তুটি আছে (এর পোশাকি নাম Sagittarius A*), তার ভর সূর্যের ভরের প্রায় ছত্রিশ লক্ষ গুণ, কিন্তু ব্যাস মাত্র ছ-কোটি কিলোমিটার (পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় পনেরো কোটি কিলোমিটার)। পুরোটা যদি কৃষ্ণগহ্বর না-ও হয়, এর কেন্দ্রে যে এক দানব কৃষ্ণগহ্বর বসে আছে—অন্যান্য গ্যালাক্সির মতই—সে ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত। কিন্তু এ তো আমাদের নিজেদের ঘরের ব্যাপার, পৃথিবী থেকে এর দূরত্ব মাত্রই ছাব্বিশ হাজার আলোকবর্ষ, সুতরাং ভবিষ্যতে এর থেকে যে আরও অনেক চাঞ্চল্যকর খবর পাওয়া যাবে—গেঞ্জেল ও গেজের নোবেল পুরস্কার যেন আরেকবার সেটাই মনে করিয়ে দিল।

    আগামী কয়েক দশক, আশা করা যায়, মহাবিশ্ব সম্বন্ধে আমাদের জ্ঞানকে অনেকখানি এগিয়ে দেবে। ঠিক কোন পথে যে এগোবে, তা আমরা এখনো জানি না। যে কটা প্রশ্নের কথা এখানে বললাম, তার বাইরে আরো বহু প্রশ্ন আছে, এমনকি আমাদের প্রচলিত ধ্যানধারণা চুরমার হয়ে যেতে পারে, এমন সম্ভাবনাও আছে বৈকি। সেইজন্যেই তো গোড়াতেই বললাম, ভেবে দেখো—এই অ্যাডভেঞ্চারে যোগ দেবে কিনা।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ০৩ মে ২০২৪ | ৪২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kk | 172.58.241.244 | ০৩ মে ২০২৪ ২০:০৭531361
  • খুবই ভালো লাগলো। আপনি অনেক কঠিন বিষয়ও এত সুন্দর করে বুঝিয়ে বলেন যে খুব উপভোগ্য হয়। একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করছি। ইচ্ছে না হলে উত্তর না দিতেও পারেন। আপনি কি কখনো আসনসোলে কোর্টমোড়ে থাকতেন? কেমিস্ট্রির অধ্যাপক অনাদি কুন্ডুকে কি কোনোভাবে চেনেন?
  • প্যালারাম | ০৩ মে ২০২৪ ২১:৪৩531366
  • kk: ভদ্রলোকের ছাত্র হিসেবে বলছি: মনে হয় আসানসোলে থাকতেন না, তবে বাকি ইনফো জেনে নিতে হবে।
  • kk | 172.58.241.244 | ০৩ মে ২০২৪ ২৩:১৭531370
  • ওঃ আচ্ছা। থ্যাংকিউ প্যালারামবাবু।
  • &/ | 151.141.85.8 | ০৪ মে ২০২৪ ০১:৩৭531371
  • খুব ভালো লাগল। চমৎকার প্রাঞ্জল করে বোঝানো। কেবল একটা খটকা। ডার্ক ম্যাটারকে কৃষ্ণবস্তু বলা উচিত কি? এ তো কালো বস্তু না। এরা কোনো তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গের সঙ্গেই মিথস্ক্রিয়া করে না বটে, কিন্তু এদের ভেদ করে ওই তরঙ্গেরা চলে আসে। কালো বস্তু হলে আলো শুষে নিত তো। ডার্ক ম্যাটারকে বাংলায় কী বললে সুবিধে হয়? অন্ধকার বস্তু? গুপ্ত বস্তু? অন্য কিছু?
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:957d:d336:8808:3b89 | ০৪ মে ২০২৪ ০৯:৩৪531376
  • এটা পড়তে ভালো লাগলো, বিগিনার লেভেলে এরকম অনেক লেখা খুব দরকার। 
     
    শুধু একটা ব্যপার, "বিজ্ঞানীরা বলেন, এক প্রচণ্ড শক্তিশালী বিস্ফোরণে মহাবিশ্বের সৃষ্টি। এই মহাবিস্ফোরণের চলতি নাম হল বিগ ব্যাং।" এখানে বিস্ফোরন কথাটা ব্যবহার না করলে ভালো হয়। আমার মনে হয় "প্রকাশ" ব্যবহার করা যায়ঃ "বিজ্ঞানীরা মনে করেন, স্থানকাল সৃষ্টির পর সেই স্থানকাল জুড়ে অনেক পরিমাণ এনার্জির প্রকাশ হওয়ার ফলে মহাবিশ্বের সৃষ্টি, আর এই প্রকাশ হওয়ার ঘটনার চলতি নাম হল বিগ ব্যাং।" 
     
    এরকম কিছু, অবশ্যই অনির্বাণবাবু আমার থেকে বেটার লিখতে পারবেন। 
  • &/ | 107.77.232.202 | ০৪ মে ২০২৪ ১০:১৬531379
  • স্থানকালও সৃষ্টি ওই বিগ ব্যাং য়ে( বিগ ব্যাং মডেল অনুযায়ী )
  • dc | 2402:e280:2141:1e8:957d:d336:8808:3b89 | ০৪ মে ২০২৪ ১০:৫৪531381
  • ঠিক। তবে কিনা, শুরুটা যেহেতু আমরা একেবারেই জানিনা, তাই নানা বইতে, পেপারে, য়ুটুব ভিডিওতে এই সিকুয়েন্সটা নিয়ে নানা মত শুনি বা পড়ি। কিছু লেখা বা ভিডিওতে পড়েছি যে প্রথমে স্পেসটাইম অ্যাপিয়ার করেছিল, তারপর প্ল্যাংক টাইমে সেই স্পেসটাইমে (যা পয়েন্টলাইক কিন্তু ইনফাইনাইট) এনার্জি অ্যাপিয়ার করেছিল কোয়ান্টাম ফ্লাকচুয়েশানের ফলে বা ফেস চেঞ্জের ফলে। তারপর ইনফ্লেশান শুরু ও শেষ হয়েছিল ইত্যাদি। এই এনার্জি অ্যাপিয়ারেন্সের ইভেন্টটাকে বিগ ব্যাং বলতে দেখেছি, সেইজন্যই ওপরে লিখলাম। তবে এর নানান ইন্টারপ্রেটেশান আছে। 
  • &/ | 107.77.232.202 | ০৪ মে ২০২৪ ১১:১৪531382
  • হ্যাঁ কোয়ান্টাম গ্রাভিটি তত্ত্ব একেবারে ফুল ফ্লেজেড অবস্থায় যখন পাওয়া যাবে, তখন ভালো করে বোঝা যাবে 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত প্রতিক্রিয়া দিন