এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  অপর বাংলা

  • ১৯৭২ থেকে ২০১১ঃ জুম্মজাতি কি আবার ঐক্যবদ্ধ হবে?

    হরিকিশোর চাকমা লেখকের গ্রাহক হোন
    অপর বাংলা | ০৮ জুলাই ২০১১ | ৬৯৮ বার পঠিত
  • ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়ন কমিটি তৎকালীন সাংসদ ও জুম্ম জাতির মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার (এমএন লারমা) পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্ত্বাগুলোকে সংবিধানে অন্তর্ভূক্তির দাবি এবং সংবিধানে পাহাড়িদেরও বাঙালি হিসেবে পরিচিতি দানের প্রতিবাদ বিবেচনায় নেয়নি। ফলশ্রুতিতে গড়ে উঠেছিল আন্দোলন। সে আন্দোলন এক পর্যায়ে সশস্ত্র আন্দোলনে রূপ নেয়।

    দীর্ঘ তিন দশকের রক্তক্ষয় আর অর্থ সম্পদ ধ্বংসের পর সমস্যার রাজনৈতিক সমাধানে স্বাক্ষরিত হয় পার্বত্যচুক্তি। সমস্যার কি সমাধান হয়েছে? এ প্রশ্নের উত্তরে আদিবাসীরা বলবেন, "না' "না' "না'। আর আওয়ামীলীগ সরকার বলবে "হ্যঁ¡' ।

    আদিবাসীদের মধ্যে যে যে দৃষ্টিকোণ থেকে "না' বলুন না কেন, তার মধ্যে একটা ঐক্যবদ্ধতার সুর দেখা যায়। দীর্ঘদিন এই "না' বলার দু:খবোধ পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা বয়ে বেড়াচ্ছেন। সেই ১৯৯৭ সালের পার্বত্যচুক্তি স্বাক্ষরের পর আদিবাসীদের মধ্যে বিভক্তি শুরু হয়। "না' সুরটাতে ছিল এবং এখনো আছে দুই বিপরীতমুখী অবস্থান। এবার আরও একটা বিষয়ে আদিবাসীদের মধ্যে ঐক্যের সুর ধ্বনিত হচ্ছে। আর তা হলো "আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতি'র দাবি। এই দাবির মধ্যে কোনো বিপরীতমুখী অবস্থান নেই। আছে দৃঢ় ঐক্য আর সংহতির সুর।

    আদিবাসীদের পরস্পরবিরোধী দুই রাজনৈতিক দল পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটি ফ্রন্ট বা ইউপিডিএফ স্ব স্ব অবস্থান থেকে আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবি জানাচ্ছেন এবং আন্দোলনমুখী কার্যক্রমও পরিচালনা করছেন। এমনকি যে সব আদিবাসী সরকারি দল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধী দল বিএনপি করেন তারাও প্রকাশ্যে না হোক মনে প্রাণে নিজেদের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পেতে চান। মাত্র কয়েক মাস আগে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মি. দীপংকর তালুকদার পর্যন্ত নিজেকে আদিবাসী হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করেন বলে জানিয়েছিলেন বান্দরবানের এক সভায়।

    এই যে ঐক্যবদ্ধতার একটা সুর তা শুনতে কী দারুণ সুমধুর। এ সুর কি আরও মধুর করে তোলা যায় না? আমরা যারা রাজনীতি করি না তারা সবাই সেই ঐক্যের মধুর সুরের প্রত্যাশায়। সরকার অন্তত, একটা ইস্যুতে আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করে তুলেছে বলে আমি মনে করছি।

    গত কয়েকদিন ধরে ভাবছি ১৯৭২ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের ক্ষয়িষ্ণু সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায়ও যদি মহান নেতা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার নেতৃত্বে আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে তা হলে একবিংশ শতাব্দীতে কেন গড়ে উঠতে পারবে না। তবে আমি সশস্ত্র আন্দোলনের পক্ষপাতি নই মোটেই। গত শতাব্দীর ৭০ দশকে যখন পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তখন সে রকম আন্দোলনকে বিশ্বব্যাপী "বিপ্লব' বলে সমীহ করা হতো। আর এখন সশস্ত্র আন্দোলনকে বলা হয় সন্ত্রাসবাদ। সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনে কোনো রাষ্ট্র বা গণতন্ত্রমনা মানুষ সমর্থন দেবে না।

    সুতরাং আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে গণতান্ত্রিক পন্থায়। সেখানে বিশ্বব্যাপী পাওয়া যাবে সমর্থন। ইতিমধ্যে সে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

    ১৯৭২ সালে আমাদের পক্ষে কথা বলার মতো বাঙালি বন্ধুর সংখ্যা ছিল খুবই কম। বিশ্বে আমরা অর্থাৎ বাংলাদেশের আদিবাসীরা ছিলাম প্রায় অপরিচিত। আমার এখন জাতিসংঘ পর্যন্ত পৌঁছাতে পেরেছি। এখন অনেক অনেক বাঙালি বন্ধু দেশের আদিবাসীদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে সোচ্চার। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছেন সমতলের আদিবাসী বন্ধুরা।

    আমাদের আন্দোলনে অবশ্যই তাঁদের পাবো। একই সঙ্গে এখন গ্লোবাল ভিলেজের যুগ। বিশ্বব্যাপী আমাদের দাবির সমর্থক দেশ, সংগঠন আর ব্যক্তি আছেন। তাঁদের কন্ঠস্বরও যেন আমাদের সঙ্গে ধ্বনিত হয় তার জন্য গণতান্ত্রিক আন্দোলনের পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে আধুনিক প্রযুক্তি সমৃদ্ধ আন্দোলন।

    ১৯৭২ সালের ভুল সংশোধন করতে লেগেছে ৩০ বছর। এবার আবার সেই একই ভুল সরকার কার প্ররোচনায় করছে তা বলার তেমন প্রয়োজন নেই। সবাই জানেন, বুঝেন। ২০১১ সালের ভুলের সংশোধন করতে সরকারকে কত দিনে বাধ্য করা যাবে তা নির্ভর করছে আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের ওপর।

    আমাদের নেতাদের বিচক্ষণতা আর সামগ্রিক পরিস্থিতি মূল্যায়নে পারদর্শীতার ওপর আমাদের আগামী দিনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। জনগণ কিন্তু "আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে' এই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ।

    মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনি আবার আপনার মহাননায়ক পিতার মহা ভুলের পথ অনুসরণ করলেন। পার্বত্যচুক্তি বাস্তবায়িত না হলেও ইতিহাস সাক্ষী, আপনার মহানুভবতার কারণে সে চুক্তি হতে পেরেছিল। যদিও পরবর্তীতে নানা অপপ্রচার আর চাপে আপনারা চুক্তি বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে পারছেন না।

    এখন আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি না দেওয়ায় সারা বিশ্ব মনে করবে আপনার মহান হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে করা পার্বত্যচুক্তিও ছিল আদিবাসীদের বিরুদ্ধে একটা "মহাফাঁদ'। "দেশে কোনো আদিবাসী নেই' এই নিজস্ব চিন্তা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা না করে আপনি আবার মহানুভবতার পরিচয় দেওয়ার সুযোগ থেকে আবারও বঞ্চিত হলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী!

    নাকি ভাবছেন পার্বত্য শান্তিচুক্তি করে আদিবাসীদের বিভক্তির মাধ্যমে দুর্বল করা গেছে। এখন কিছুই করেত পারবে না। যদি কেউ সেটা চিন্তা করেন তাহলে ভুল করছেন বলে মনে হয়। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিকাংশ আদিবাসী এখন নিজেদের আদিবাসী হিসেবে সাংবিধানিক স্বীকৃতির দাবিতে একতাবদ্ধ।

    হয়তো এই একটি দাবিতে জনগণের চাপে বিভক্ত গ্রুপগুলো ঐক্যবদ্ধ হতে বাধ্য হবে। ২০১১ সাল ফিরিয়ে আনতে পারে ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট।

    সুতরাং...

    লেখাটির উৎস: আদিবাসী বাংলা ব্লগ
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • অপর বাংলা | ০৮ জুলাই ২০১১ | ৬৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • বিপ্লব রহমান | 212.164.212.14 (*) | ২৮ মে ২০১২ ১২:৩২89208
  • গুরুচণ্ডা৯ কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানাই এপারের পাহাড়ের দুঃখগাথা তুলে ধরার জন্য।
    ধন্যবাদ হরিদা, পাহাড়ের চারণ সাংবাদিক। এখন শুধু অপেক্ষার পালা...
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন