চালচিত্র এখন সিনেমাটাও এই রীতি অনুসরণ করেই বানানো। যদিও অত পুরোনো না, এবং অত গভীর অনুসন্ধানেরও প্রয়োজন পড়তনা, কিন্তু সেটুকুও করার দরকার মনে হয়নি। এই সিনেমায় আশির দশকের কলকাতায় দিব্যি ল্যাজ তুলে ঘুরে বেড়ায় নীল-হলুদ বেসরকারি বাস, আশিতে সেসব বাস কেউ চোখে দেখেনি। শব্দ শোনা গেলে তারা হয়তো নিউটাউন-নিউটাউন বলেও হাঁক পাড়ত। দেখা যায়, সবুজ অটো। নায়কের বৌয়ের নাম মাঝেমধ্যেই মিতা থেকে বদলে গীতা হয়ে যায়। এবং মিতা ওরফে গীতা মিনার্ভা থেকে উত্তরপাড়া যেতে নিয়মিত শিয়ালদহ স্টেশনে গিয়ে ট্রেন ধরেন। শিয়ালদা থেকে উত্তরপাড়া ট্রেনে চড়ে যাওয়া একেবারে অসম্ভব কিছু না, কিন্তু সে তো নৈহাটি-ব্যান্ডেল হয়েও যাওয়া যায়, সাধারণভাবে সুস্থ লোকে ওই দিক দিয়ে নিয়মিত যায় না আর কি।
ব্যক্তির জীবনে তিনটি দশক বড় কম সময় নয়। এই দীর্ঘ সময়ে ঘরে বাইরে কত কী বদলায়। পুরানো গাড়ি বাতিল হয়, নতুন গৃহে প্রবেশ হয়, পুরানো সম্পর্কে শ্যাওলা ধরে, নতুন অহং পুষ্ট হয়, পুরানো স্মৃতি ধূসর হয়, নতুন মানে খুঁজতে হয়। এমন নানা পরিবর্তনের প্রভাবে কখনো জীবনের কিছু সরল সমীকরণ ক্রমশ বিবর্তিত হয় জটিল অসমীকরণে। এসবের মাঝে তিন দশক ধরে একটি সামান্য টি-শার্ট কিভাবে এহেন সার্ভিস দিয়ে যায় ভেবে অবাক লাগে
আমার খালার ফোনে ফোন আসল একটা। উনার বিকাশ ( বাংলাদেশের অন্যতম সেরা মোবাইল ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান) একাউন্টের পিন নাম্বারে সমস্যা হয়েছে, ঠিক করাতে হবে। খালার সাথে কথা বলে ওরা বুঝছে এই মহিলা এগুলা কম বুঝে। ওদের আত্মবিশ্বাস এতো যে তারা বলছে যে বুঝে তার কাছে নিয়ে যান। খালা আমার কাছে আসতেছিল পথে মধ্যে আরেক 'বিশেষ ভাবে অজ্ঞ' একজনের সাথে দেখা, তিনি তাদের সাথে কথা বলে যেমন যেমন করতে হয় তেমন তেমন করে কাজ সমাধা করেছেন। খালা এরপরে আসছে আমার কাছে। এসে বলল তোমার কাছেই আসতেছিলাম, বিকাশের পিন ঠিক করতে হব বলে, পথে অমুকের সাথে দেখা, ও ঠিক করে দিল! আমি শুনেই বুঝলাম এইটা গন কেস! বললাম, খালা বিকাশে টাকা কত ছিল? খালা বলল চার পাঁচ হাজারের মতো। আমি বললাম, ব্যালেন্স দেখেন, সম্ভবত এক টাকাও নাই! খালা বলে আরে না, ওরা তো পিন ঠিক করার জন্য বলছে। আমি বললাম, আপনে দেখেন! দেখা হল, ফিনিশ! এক টাকাও নাই!
আশির দশকে যাদবপুরের কয়েকটি ছাত্রছাত্রী শুশুনিয়া পাহাড়ে গেছে শৈলারোহণ অভ্যাস করতে - সেই ভিত্তিতে এই আখ্যান … ঈশু বলে, "দ্যাখ জেঠু, এই ক্যাম্পিংয়ে একমাত্র গৌরব ছাড়া আমরা আর কে কতটা রক ক্লাইম্বিং করতে পারবো জানি না তবে আজকের এই আলোচনাটা খুব এনজয় করলাম। অনেক কিছু জানলাম। এর আগে কোনোদিন এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে এভাবে খোলামেলা আলোচনা কারুর সাথে হয়নি। তাই এই আউটিংটা বহুদিন মনে থাকবে। থ্যাঙ্কস জেঠু। তোকে প্রায়শঃই চ্যাংড়ামি করতে দেখে ভাবতাম তুই একটা লঘুচিত্ত, চপলমতির ছেলে। তুই যে এমন সব সংবেদনশীল বিষয়েও এতো সাবলীল ভাবে আলোচনা করতে পারিস, জানা ছিলো না। এবার চল আমরা শুতে যাই, অনেক রাত হয়েছে। কাল সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে।" তখনও সুমন জানতো না, আগামীকাল গভীর রাতে ওকেই আবার এই কথাটা বলতে হবে ঈশুকে, অন্য পরিস্থিতিতে
যে বাড়িতে সত্যপীরের পালা, সে বাড়ির ছেলে মেয়েরা লোকেদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলে আসতো। সত্যপীরের ভূমিকায় যিনি অভিনয় করতেন তাঁর হাতে থাকতো একটা বিরাট সাদা চামর। সেটা মাথায় বুলিয়ে তিনি আশির্বাদ করতেন। হিন্দু মুসলমান সবাই সেই আশির্বাদ নিতেন। ১০-২০ পয়সা করে দিতেন মায়েরা সত্যপীরের পালায়। কিশোর ঘোষালদা লিখেছেন, ১৯৮০ র মাঝামাঝি সত্যপীর সত্যনারায়ণ হয়ে গেল। তা, সত্যপীরের পালায় হিন্দু মুসলমান একতার কথা থাকতো।
স্যর স্ট্র্যাফোর্ড আর দ্বিতীয়বার দেখা করেননি গান্ধীর সঙ্গে, করে লাভ ছিল না। তিনি অবিশ্যি সত্যি-সত্যিই ভারতের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ছিলেন, সেরকমই পরিকল্পনা ছিল তাঁর, কিন্তু সেই পরিকল্পনার ধার ধারতেন না তাঁর বস, উইনস্টন চার্চিল। সেই সময়কার ভাইসরয় লিনলিদগোও চার্চিলেরই দলে। ক্রিপ্সের মতো অনেক সোশ্যালিস্ট দেখা আছে তাঁদের। হামবাগ সব! জওহরলাল আর সেই সময়কার কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি মৌলানা আজাদ অবিশ্যি ক্রিপসের সঙ্গে একমতই ছিলেন, ছিলেন এমনকি রাজাগোপালাচারিও, যদিও লীগের ব্যাপারে কংগ্রেসের অবস্থানের প্রতিবাদে কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন রাজাগোপালাচারি নিজে। এখন গান্ধী একাই বিরোধীপক্ষ, যদিও নিজে গান্ধী মনে করেন না তা। তিনি মনে করেন সমস্ত দেশবাসী তাঁর পক্ষে। তিনি একবার সঙ্কেত দিলেই প্রায় প্রতিটি ভারতবাসী নেমে পড়বে রাস্তায়, তাদের মুখে থাকবে একটাই কথা, ভারত-ছাড়! যদি নিজে থেকে না ছাড়, আমরাই ছাড়াব তোমাদের। করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে!
প্রতিকূলতার মুখে দাঁড়িয়ে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবনা যেভাবে প্রত্যাঘাত করেছে, সেটাকেই নজরুল শব্দের স্বচ্ছন্দ গতিতে রূপান্তর ঘটিয়ে গেছেন বরাবর, কিছুটা একবগগা এবং ছেলেমানুষের মতই। গূঢ় দর্শন তাঁর লেখার বাঁধনহারা উচ্ছলতায় খাদ মেশায় নি কখনও, তেমনই পুনরাবৃত্তিও পিছু ছাড়েনি। নজরুল ঠিক এখানেই স্বেচ্ছাচারী অসংযমী অসচেতন, এবং তাঁর সৃষ্টির অনেকাংশই গভীর ভাবলোকে অনুত্তীর্ণ। তবে ওই ঐচ্ছিক খামতিগুলোই কি তাঁকে অনন্য করেনি? তিনি তো একাই হয়ে উঠেছেন একটা ঘরানার আদি ও অন্ত। পূর্ব ও উত্তরসূরি না থাকা এক অদ্বিতীয় ধারা। এমনই এক তেজস্ক্রিয়তা, অর্ধ জীবনকালের সূত্র মেনে যার ফুরিয়ে যাওয়াটা নির্ধারিত। সেই ফুরিয়ে যাওয়াতেও অবশ্য তাঁর মস্ত সাফল্য।
শুকনো পাতা দিয়ে বানানো গদিতে ভল্লা শুয়ে আছে। আজ পাঁচদিন হল সে একইভাবে শুয়ে আছে, নিশ্চেতন। তার মাথার কাছে বসে আছেন জুজাকের বউ। জুজাক দাঁড়িয়ে আছেন পায়ের দিকে। আর নিচু হয়ে বৃদ্ধ কবিরাজ হাতের নাড়ি পরখ করছেন ভল্লার। কিছুক্ষণ পর কবিরাজ ভল্লার হাতটা নামিয়ে দিলেন, বিছানায়। সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললেন, “জুজাক, আমার মন বলছে, ছোকরা এ যাত্রায় বেঁচে গেল। হতভাগার বাপ-মায়ের কপাল ভালো বলতে হবে।”
ব্যস, এই সুযোগের অপেক্ষাতেই তো ছেনু ছিল, এক ছুটে দুধের গ্লাস হাতে তেতলার সিঁড়িতে উঠে পড়ল। এবার পা টিপে টিপে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে সিঁড়ি দিয়ে তেতলায় পৌঁছে ভালো করে তাকিয়ে দেখে নিলো কেউ আছে কিনা। যখন দেখতে পেল চারিদিক ফাঁকা, কেউ তার দিকে নজর রাখছে না, তখন গ্লাস থেকে এমন করে এক চুমুক দুধ খেলো, যাতে চলকে কিছুটা দুধ মুখ বেয়ে নেমে আসে, তারপর একটা বিচ্ছিরি মুখ করে কোনোক্রমে ঢোঁক গিলে সেই এক চুমুক দুধ গলা দিয়ে চালান করে নিচু হয়ে বসে ড্রেনের মুখটায় বাকি দুধটা আস্তে করে ঢালতে লাগল। ঢালতে ঢালতেও কড়া নজর চারদিকে, এই বুঝি কেউ দেখে ফেলল। ধীরে ধীরে পুরো দুধটাই ঢালা হয়ে গেলে আস্তে করে উঠে আবার সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এল।
ব্রাতিস্লাভায় সিটি ব্যাঙ্কের নবীন কর্মী মারেক পটোমা বলেছিল নিজের দেশ না হলে আইস হকিতে স্লোভাক প্লেয়ারদের জায়গা জুটবে না তাই আমরা আলাদা হয়েছি! দেশ ভাগের এর চেয়ে জোরালো যুক্তি আমি অন্তত খুঁজে পাই নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে উইলসন ডকট্রিন মাফিক ইউরোপে স্বায়ত্ত শাসনের যে দাবি উঠেছিল তার ফলে পুরনো অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অংশ বিশেষ মিলে তৈরি হলো চেকোস্লোভাকিয়া, এই মাত্তর ১৯১৮ সালে। ক্যাথলিক ধর্মের প্রাধান্য দুই অঞ্চলে, চেকের সঙ্গে স্লোভাক ভাষা প্রায় ৮৫% মেলে; আমার প্রাক্তন সহকর্মী ইভেতার (এখন আবু ধাবিতে) কাছে গল্প শুনেছি – অফিসে সে কিছু নিয়ে আলোচনা করছে এক চেক কলিগের সঙ্গে। আরেক স্থানীয় সহকর্মী জিজ্ঞেস করে, তোমরা কোন ভাষায় কথা বলছ? ইভেতা বলে, নিজের নিজের মতন, আমি স্লোভাক এবং উনি বলছেন চেক! আমাদের হিন্দি/উর্দু সংলাপের মতন।
সাধু হন্টন
৪২% প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে ৬৩ শীত পার করেও আমার লেখ্যভঙ্গিতে লঘু রম্যরসময়তার প্রবণতা গেল না। অথচ ঐ রস উচ্চমার্গীয় আঙ্গিকে পেশ করার যোগ্যতাও নেই। তাই ওসব ধ্রুপদী পাঠকের ঋদ্ধরুচির উপযোগী নয়। ফলে তাঁদের রুচিশীল মন্তব্যে শালীন বিশেষণে অল্পাধিক উষ্মা, বিরক্তির প্রকাশ হয়ে পড়ে - যেমন “ঘাসবিচালি টাইপ রসিকতা”। তাতে অবশ্য আমি বিশেষ বিচলিত হই না। বিড়ম্বিতবোধও করি না। বরং তা নিয়েও আবার “খেলো টাইপস” রসিকতা করে ফেলি - এই যেমন এখন করছি।
প্রকাশিত হলো দুই মলাটে বৈদ্যুতিন উনিজি কথামৃত। লিখেছেন সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়, এঁকেছেন নবীন শিল্পী কণিষ্ক। শিল্পীর সম্পর্কে বেশি জানা যায়নি, তিনি রাতের অন্ধকারে মেলবক্সে ছবির বান্ডিল ফেলে দিয়ে গেছেন। জানিয়েছেন উনিজির প্রতি অনুগত থাকতে চাইলে মাথা বর্জন করা ভালো, আর অনুগত থাকতে না চাইলে গর্দান যাওয়ার সম্ভাবনা, সুতরাং আগে থেকে মুন্ডু বিসর্জন দেওয়াই বিধেয়। নামিয়ে নিন, ছড়িয়ে দিন - উনিজি কথামৃত - পিডিএফ সংস্করণ।
ধরা যাক আমাদের n-সংখ্যক ভোটার আছে, n বিজোড় সংখ্যা (অর্থাৎ “টাই” অসম্ভব)। প্রত্যেক ভোটারের ঠিক বিকল্পে ভোট দেওয়ার সম্ভাবনা ধরা যাক pc, এবং সবার ভোট পড়ে গেলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে “মেজরিটি রুল” অনুযায়ী, অর্থাৎ যে সবথেকে বেশি ভোট পাবেন, সেটিই আমাদের গণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত। কনডরসে-র উপপাদ্যে এও ধরে নেওয়া হয়, যে, প্রত্যেক ভোটার ‘স্বতন্ত্র’, ‘দক্ষ’ এবং ‘আন্তরিক’। ‘স্বতন্ত্র’ – অর্থাৎ যে যার নিজের ভোট দিচ্ছেন বা একজনের পছন্দ আরেকজনকে প্রভাবিত করে না। ‘দক্ষ’ – অর্থাৎ, প্রত্যেকের ঠিক বিকল্প খুঁজে নেওয়ার সম্ভাবনা অর্ধেকের থেকে বেশি, যত সামান্যই হোক, এক্কেবারে র্যান্ডম গ্যেস অর্থাৎ ইকির-মিকির-চামচিকির করে আন্দাজে যা-ইচ্ছে-তাই একটা বোতাম টিপে দেওয়ার থেকে তার প্রজ্ঞা বা দক্ষতা একচুল হলেও বেশি। আর শেষ অ্যাজ়াম্পশনের কথা আগেও লিখেছি, ভোটার-রা ‘আন্তরিক’, সিরিয়াস-ও বলা যায়—কেউ ইচ্ছে করে ভুলভাল ভোট দিয়ে নষ্ট করছেন না।
ঝুপ করে অন্ধকার নামল জঙ্গলমহলে। সাপধরা বুথ পেরিয়ে বাসু ভকতের গাড়ি এগোচ্ছে পিচ রাস্তা ধরে, জামবনির দিকে। জঙ্গলে আবছা অন্ধকারে বাসু ভকত কিংবা চালক গাড়ির দূর থেকে দেখতেও পেলেন না, গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা আটকে রেখেছে ঝাড়খন্ড পার্টির লোকজন। বিকেল থেকেই রাস্তার ধারে গাছের আড়ালে অপেক্ষা করছিল প্রচুর মহিলা-পুরষ এবং তীর, ধনুক নিয়ে সশস্ত্র ঝাড়খন্ডি বাহিনী। সরকারি গাড়ি গাছের গুঁড়ির সামনে থামলেই জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ব্যালট বাক্স নিয়ে চম্পট দেবে তারা। কিন্তু পঞ্চায়েত ভোটের সন্ধ্যায় ব্যালট বাক্সের গাড়ি নয়, পাঁচামির জঙ্গলের ধারে ঝাড়খন্ডিদের তৈরি করা ব্যারিকেডের সামনে এসে থামল বাসুদেব ভকতের গাড়ি।
বিশ্বায়নের সময় জুড়ে পিছিয়ে পড়া দেশগুলিতে লগ্নি পুঁজির ফাটকা প্রসারের হাত ধরে এবং সামন্তশ্রেনীর অংশের মিলিত বন্ধনে গড়ে উঠেছে নব্য আমলাতান্ত্রিক মুৎসুদ্দী পুঁজিপতিশ্রেনী। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, এদেশের আম্বানি-আদানি গোষ্ঠীদের। যাঁদের দ্বারাই আজ মূলত তৃতীয় বিশ্বে(এ দেশে) সাম্রাজ্যবাদীদের একচেটিয়া লগ্নি পুঁজির লুণ্ঠন অব্যাহত। তবে যেহেতু এই সময় সাম্রাজ্যবাদ স্বল্পমেয়াদি সময়ে একচেটিয়া ফাটকা মুনাফার উপরে বেশি ঝুঁকে পড়ে সেহেতু উৎপাদন - উৎপাদনশীলতা বিশ্বব্যাপী ব্যাপকভাবে কমতে থাকে যা পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কে মূলে ধাক্কা দেয়(যা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন বহু পুঁজিবাদী অর্থনীতিবিদেরা)। ফলে অতি-মুনাফার লোভ, বাজার দখলের প্রয়োজনে পুঁজির বর্ধিত পুনরুৎপাদনের স্বার্থে যুদ্ধ প্রায়শই প্রয়োজন হয়ে পড়ে। তবে এ পর্বে সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি সবসময়ই তৃতীয় বিশ্বের ঘাড়ের উপরে বন্দুক রেখে যুদ্ধ চালাতে চায় এবং নিজেরা সরাসরি সেই যুদ্ধে যুক্ত না হয়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অন্যান্য পিছিয়ে পড়া দেশের 'পুতুল' সরকারের মাধ্যমে যুদ্ধ পরিচালনা করতেই তদপর হয়ে উঠে।
কপিশার কোল ঘেঁষে আমার মদিনা
“অঙ্কোলজিস্ট! কেন? ওনার কি… আমরা তো ভাবছিলাম টিবি হয়েছে,” বলল বিনীতা। “না ম্যাডাম। টিবির টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। আমার মনে হচ্ছে অঙ্কোলজি রিলেটেড কিছু হয়েছে স্যারের। ডক্টর বিশ্বাসের সাথে আমার ভাল আলাপ আছে। আমি ওনাকে বলে দেব। উনি রোজ বসেন, আপনারা কালই অ্যাপয়েন্টমেন্ট করে নিন। আমি ওনার নম্বর আর হাসপাতালের নম্বর দুটোই দিয়ে দিচ্ছি,” বললেন শ্রীবাস্তব। “কাল হবে না,” এতক্ষণে মুখ খোলে অরুণাভ, “কাল অফিসে একটা খুব ইম্পরটান্ট মিটিং আছে।” “কিন্তু স্যার…” “বললাম তো কাল হবে না।” কথা শেষ করে দেওয়ার ভঙ্গিতে বলল অরুণাভ। স্বামীকে ভালই চেনে বিনীতা, তাই কালকের দিন নিয়ে আর কথা বাড়াল না সে। বলল, “আপনি নম্বরটা দিন। পরশুর জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট করব।”
গাঢ় অন্ধকারে ডুবে রয়েছে ভারতের আদিতম রেল স্টেশন। জরুরি কোনও বিদ্যুৎ সংযোগে ছোট্ট স্টেশনটার বাইরে একটা সোডিয়াম ভেপারের আলো পড়েছে টিকিট ঘরের বাইরে টালির চালে বসানো বোর্ডের ওপর। পলিমারের নীল বোর্ডের ওপর সাদা রঙে দেবনাগরী হরফে লেখা গালুডিহি! সেই আলোর এক চিলতে পড়েছে সামনের রেল লাইনের ওপর। অনায়াসে পায়ে হেঁটেই লাইন টপকে আমরা ঢুকে পড়লাম টিকিট ঘরের ভেতর। আমরা দাঁড়িয়ে আছি ১৩৩ বছর আগে তৈরি হওয়া একটি প্রাচীন রেল স্টেশনে! ১৮৮৭ সালে নাগপুর থেকে ছত্তিশগড় রেল লাইন পাততে শুরু করলো বেঙ্গল নাগপুর রেলওয়ে কোম্পানী যা শেষ অবধি বিলাসপুর হয়ে আসানসোল অবধি এগিয়ে গেল। আর তার অব্যবহিত পরেই শুরু হল মুম্বাই থেকে কলকাতা অবধি রেললাইন পাতার কাজ ভায়া এলাহবাদ! ১৮৮৭ সাল ধরলে অবশ্য বছরটা ১৩৫ হওয়া উচিৎ কিন্তু আরও ২ বছর কমিয়ে বললাম এই কারনে যে প্ল্যাটফর্মের সেই আদি অকৃত্তিম ওজন মাপার যন্ত্রটা দেখলাম মরছে ধরা দেহ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
৩০ তারিখে আমরা খোঞ্জে পৌঁছলাম, মাটির থেকে অনেকটা উঁচুতে দৈত্যাকৃতির সিকামোর আর বাওবাব গাছের পাতার বিশাল চাঁদোয়ার কারণে জায়গাটা উল্লেখযোগ্য। খোঞ্জের সর্দার চারটে গ্রামের গর্বিত মালিক, তার থেকে সে পঞ্চাশ জন সশস্ত্র লোককে এক ডাকে হাজির করতে পারে; তবুও ন্য়ামওয়েজির বাসিন্দাদের প্ররোচনায় এই লোকটা আমাদের ঠেকানোর জন্য প্রস্তুত ছিল, কারণ আমি তাকে মাত্র তিন ডোটি অর্থাৎ বারো গজ কাপড় হঙ্গা হিসাবে পাঠিয়েছিলাম।
আশির দশকে যাদবপুরের কয়েকটি ছাত্রছাত্রী শুশুনিয়া পাহাড়ে গেছে শৈলারোহণ অভ্যাস করতে - সেই ভিত্তিতে এই আখ্যান … মনোবৈজ্ঞানিক ডঃ সুশীল মজুমদার, দীপদার বিশেষ পরিচিত। একদিন সুমনকে ওনার বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বললেন, সুশীলদা, এ হচ্ছে সুমন, যাদবপুরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। ওর মানব চরিত্র, কমপ্লেক্স এসব নিয়ে খুব কৌতূহল। আমায় নানা প্রশ্ন করে। আমি অনেককিছুর ঠিকঠাক জবাব দিতে পারি না। আপনি তো আজকাল বাড়িতেই থাকেন প্রায়। যদি মাঝেমধ্যে ওকে আসতে এ্যালাও করেন, ওর কিছু কৌতূহল নিরসন করেন, ওর ভালো লাগবে
আধুনিক যুগের আধুনিক মনোভাবের মুসলমানদের কারুর বাড়িতেই চারটি স্ত্রী নেই, এবং অসংখ্য বাচ্চা নেই। আগেকার দিনে হয়তো ছিল, ঠিক যেমন অন্ধকার যুগে হিন্দুদের কুলীন বামুনরা পঞ্চাশটা বিয়ে করতো, আর হিসেব-না-থাকা সন্তানের জন্ম দিয়ে কিশোরী বৌদের বিধবা করে দিয়ে মরতো। সাধারণ ঘরে মুসলমানদের যদি আট দশটা ছেলেমেয়ে হতো, সে তো হিন্দুদের ঘরেও হতো। আমার বাবারা ছিল ন-জন ভাইবোন। আমার মায়েরাও তাই। বিজেপি আরএসএস বিশ্ব হিন্দুদের মতো উগ্রপন্থীরা তো এসব প্রচার করবেই। কিন্তু লিবারাল বাঙালি হিন্দুরা কি তাদের মনোভাব বদলেছে?
গুরুচন্ডালিতে কিছু দুষ্টু গরুর দৌরাত্ম্য রোখার সম্ভাব্য উপায় প্রসঙ্গে এই প্রস্তাবনা। উদার গুরু তা করতে চাইবে কিনা বা চাইলেও তা করা সম্ভব কিনা জানি না
দিলদার নগরের ঠিকানা গুছিয়ে না রাখলে জীবন কোথা?
কদিন বৃষ্টি হয়ে আবার গরম পড়েছে। তার সাথে ভোটের বাজারে - ভাটৈর পাতায় পাল্লা দিয়ে সর্বত্র চড়ছে চাপানউতোরের পারদ। বেরুচ্ছে গাদ। দেখেশুনে বিমর্ষ লাগে। হালকা হতে এই সিরিজে লঘু কিছু লিখি। পড়ে কেউ মজারু মন্তব্য করলে মনে মোর মজা মজে ওঠে। এটাও ছোট্ট হালকা প্রসঙ্গ, তবে শুরুটা কমিক্যাল হলেও - - -
লোকসভায় বিজেপির মুসলিম প্রার্থীর সংখ্যা ছয় থেকে কমে একে নেমেছে। এই প্রায় মুসলিমহীন প্রার্থী তালিকা বিভিন্ন হিন্দু জাতিগুলোর প্রতিনিধিত্বে সাহায্য করে, কিন্তু বাস্তবে কি সেটা হচ্ছে?
ভাটিয়ালিতে ১৭৩৩৮ নম্বর পাতায় ১৮.৫.২৪ / ৫:২০তে কেকের একটি অভিমতের প্রেক্ষিতে আমার অভিমত। প্রসঙ্গটি ভাবালো তাই সেই প্রেক্ষিতে কিছু ভাবনা এখানে রাখছি। ভাটে লিখলে অবিরল বিভিন্ন মন্তব্যের সুনামিতে হারিয়ে যাবে। এখানে রাখলে এ নিয়ে কেউ কিছু বললে এক জায়গায় থাকবে। এ বিষয়ে আরো কিছু লেখা আসতে পারে। তাই এটা এখন "দুষ্টু গরু" সিরিজের প্রথম লেখা হিসেবে পুনরায় পোষ্ট করলাম। যারা এটা আগেই পড়েছেন, পুনরায় না পড়লেও চলবে কারণ শিরোনাম ছাড়া আর কোনো সংশোধন করিনি
জগত কি সত্যিই দুটি ভাগে বিভক্ত – মনোজগৎ আর পার্থিব / বস্তু জগৎ? এ যদি সত্যি হয়, তবে ‘মন’-ই বা কী আর পদার্থ-ই বা কী? মনোজগৎ কি পার্থিব জগতের ওপর নির্ভরশীল, নাকি তার কোনো স্বতন্ত্র ক্ষমতা আছে? এই মহাবিশ্বের অস্তিত্বের কি আদৌ কোনো মোক্ষ / মহত্তর উদ্দেশ্য আছে? কোনো বিশেষ লক্ষ্যের দিকে কি এগিয়ে চলেছি আমরা, আমাদের মহাবিশ্ব? ভৌতবিজ্ঞানের সূত্রগুলির কি সত্যিই অস্তিত্ব আছে, নাকি আমাদের অন্তরে গ্রন্থিত শৃঙ্খলার কারণেই আমরা সেই সূত্রগুলি খুঁজে পাই? একজন জ্যোতির্বিজ্ঞানীর চোখে মানুষ যেমন—একটি ক্ষুদ্রকায়, নগণ্য গ্রহের ওপর অসহায়ভাবে চরে বেড়ানো, ভেজাল-মেশানো কার্বন আর জলের মিশ্রণ—মানুষ কি সত্যিই তাই? নাকি হ্যামলেট তাকে যেভাবে দেখেছিল, তা-ই মানুষের আসল রূপ? নাকি একাধারে দুই-ই? এ কি সত্য, যে, জীবনধারণের কিছু পথ মহৎ, আর কিছু ইতর? নাকি, সবই রাস্তাই আদতে অর্থহীন? কোনো জীবনযাপন যদি সত্যিই মহত্তর হয়, তবে সে রাস্তার ধরন কেমন, আর আমরা কীভাবে সেই রাস্তায় চলতে পারি? যা ভালো—তা কি অনন্তকালই ভালো, নাকি গুটি গুটি পায়ে অবশ্যম্ভাবী প্রলয়ের দিকে চলতে থাকা এই ব্রহ্মাণ্ডেও ‘ভালো’-কে বেছে নেওয়ার অর্থ আছে? প্রজ্ঞা বলে কোনো বস্তু কি আদতে আছে, নাকি তা মূর্খামিরই পালিশ করা চকচকে রূপ?
ঘুরতে ঘুরতে এক মেডিটেরিনিয়ান রেষ্টুরান্টে ঢুকে পড়লাম হল্যান্ড এবং বেলজিয়ামের মাঝের এক জায়গায়। বেশ খিদে পেয়ে গিয়েছিল যেমন আমার পায় আর কি কাছেপিঠে ভালো রেষ্টুরান্ট দেখলেই। এই রেষ্টুরান্টের রেটিং আবার ৪.৭ পাঁচের মধ্যে, মানে যা তা ব্যাপার নয় আর কি! খেতে গিয়ে মেনু দেখেই বুঝলুম যা তা ব্যাপার কেন নয়! বিশাল বড় কিছু মেনু নয় তেমন – মাত্র চার পাতার! কিন্তু সেই মেনু পড়ে বোঝে কার কি সাধ্য কি খাবার অর্ডার দেওয়া হচ্ছে! এদিকে ডাচ, ওদিকে ফ্রেঞ্চ এবং মাঝে মাঝে ইংরাজী – একেবারে ডেডলি সব কম্বিনেশন!
আবারো তন্ন তন্ন করে খুঁজতে আরম্ভ করে দীপ! কিন্তু কোথাও নেই সেই পূর্ণিমা! এক সময় হাল ছেড়ে দিয়ে বিষাদ চিত্তে বিছানায় ঝাঁপ দিয়ে পড়ে দীপ জগটার মত করেই। কিন্তু আর ঘুম আসে না। মাঝে মাঝে ঘড়ির কাটাটার দিকে তাকায় সে, আর ক্রমাগত এপাশ ওপাশ করতে থাকে ঘড়ির কাঁটাটার মত করে, একই তাল ও লয়ে! কিন্তু সূর্যের চোখ খোলার সময় যতই এগিয়ে আসতে থাকে, ঘুমের গাড়ি যেন আরো দূরে সরতে থাকে, আর কপালের ভাঁজগুলি বড় হতে থাকে দীপের! আগামীকালই এমন কতগুলি গুরুত্বপূর্ণ কাজ অপেক্ষা করছে তার জন্য, স্বাভাবিক শরীরেই যার ধকল সহ্য করা কঠিন!
উত্তরবঙ্গে কয়েকটি সপ্তাহ কাটিয়ে বুঝে গেলাম এইবারে এক সম্পূর্ণ আলাদা দুনিয়ায় এসে হাজির হয়েছি। এবং এখান থেকে আর আগের জগতে ফিরে যাওয়ার কথা বড়োরা কেউ ভাবছে না। মন বসাতে সময় লেগেছিল। তারপর একটু একটু করে সেই নতুন জগৎ আমায় ঘিরে নিল। ... টান এক মজার অনুভূতি। যে তিন বছর উত্তরবঙ্গে ছিলাম, যখন তখন ভাবতাম কবে আমাদের দমদম ক্যান্টনমেন্টের ভাড়াবাড়ির ঘরে ফিরব। আর উত্তরবঙ্গ ছেড়ে আসার কয়েকবছর পর থেকে কি যে এক চোরাটান ছেয়ে থেকে অস্তিত্ব জুড়ে – সেই তোর্সাতীর-এর জন্য!
রণোভাইয়ের সঙ্গে আমার বেশ জমে গেল। আমার বাবার মতো দিলদরিয়া গোছের মানুষ। তাঁর সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে কথা বলতে চাইলে বললেন, কাল বাসায় আসুন ১২ টা নাগাদ। ধানমন্ডিতে বাড়ি। দেখলাম সবাই চেনেন বাড়িটি। কথা শেষ ঊঠছি। বললেন, আরে যাবেন কোথায়? খেয়ে যাবেন। একসঙ্গে বের হবো। তাঁর মা, স্ত্রী, ভাই, ভাইয়ের বৌ, মেয়ে রাণা, ভাইঝি পুতুল--সবার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। মেয়ে রাণা তখন দশম শ্রেণিতে পড়েন। আস্তে আস্তে অনুচ্চস্বরে টেলিফোনে কথা বলতেন। খাওয়ার টেবিল দেখি নানান খাবারে ভর্তি। এটা কিন্তু ঘোষিত দাওয়াত না। এত খাবার বাড়ির টেবিলে আগে দেখিনি। আমাদের এখানে তখন তো জামাইকেও আট দশ পদের বেশি খাওয়াতে দেখিনি। আইবুড়ো ভাত হলে আলাদা। ভাত, পোলাও, বিরিয়ানি, ইলিশ, কাঁচকি--সব আছে। এই প্রথম আমার কাঁচকি খাওয়া। খেতে ভালোবাসি। তাও সংকোচ হচ্ছিল। বললেন, আরে এই বয়সে এত ভেবেচিন্তে খেলে হবে, খান।
গিরিবালা দেবী আর প্রমীলা দুজনেই বললেন, নজরুলের সঙ্গে অরবিন্দর সূক্ষ্মদেহে দেখা হবার কথা নজরুল আগেও অনেকবার বলেছে। শুধু তাঁদেরই নয়, বলেছে আরও অনেককেই। কেউ বিশ্বাস করেছে, কেউ করেনি। তাতে কিছুই আসে-যায়নি নজরুলের, তবে এবারের মতো এতটা অসুস্থ হয়ে পড়েনি আগে। এবার এতটাই অসুস্থ নজরুল যে অফিসে যেতে পারল না বেশ কয়েকদিন। এদিকে কলকাতার য়্যুনিভার্সিটি থেকে ইন্টারমীডিয়েট পরীক্ষায় বাংলার পরীক্ষক নির্বাচিত করে তার কাছে একরাশ উত্তরপত্র আর পরীক্ষকের জন্য নির্দিষ্ট নিয়মাবলী পাঠিয়ে দিয়েছে য়্যুনিভার্সিটি। নবযুগে নজরুলের সহকারী কালীপদ গুহ ম্যাট্রিক পরীক্ষার পরীক্ষকের কাজ করেছে আগে। সে-ই উত্তরপত্র পরীক্ষায় নজরুলকে সাহায্য করতে শুরু করল। ফজলুল হক সাহেব নজরুলকে জানিয়েছেন, শরীর যতদিন সম্পূর্ণ ভালো না হয় ততদিন তার অফিসে আসার প্রয়োজন নেই। অমলেন্দু বা কালীপদদের ডাকিয়ে এনে বাড়িতে বসেই পত্রিকা সম্পাদনার কাজও চালিয়ে যেতে পারে সে। এই সুযোগে কালীপদ থাকতেই শুরু করল নজরুলের বাড়িতে, এখন নজরুলের যে অবস্থা তাতে ঘড়ি-ধরে কাজ করা তো সম্ভব নয় তার পক্ষে। চব্বিশ-ঘন্টায় যখনই কাজের মূড আসবে তখনই কাজ! সেই সময় কালীপদ সঙ্গে না-থাকলে কি চলবে?
গতকাল সারা দিন ও রাত একটানা হেঁটেছে ভল্লা। একে তো তার গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। যন্ত্রণা এবং ক্লান্তিতে ভেঙে পড়তে চাইছে তার শরীর। তবু সে হেঁটেছে অবিরাম। আজ রাত্রির আট প্রহরে সে এসে পৌঁছল বিশাল এক সরোবরের পাশে। বীজপুর চটির জনাই তাকে দিক নির্দেশ করে বলেছিল, এই পথ ধরে একদম নাক বরাবর গেলে ডানদিকে একটা সরোবর পাবি। ওই সরোবরটা ছোট্ট একটা পাহাড়ের কোলে। ওখান থেকে নিচের দিকে তাকালে দেখতে পাবি – যতদূর চোখ যায় – ছোটছোট ঝাড়ি আর কাঁটাঝোপের জঙ্গলে ভরা ঢালু জমি। তার মানে তুই নোনাপুর গ্রামের চৌহদ্দিতে পৌঁছে গেলি। ভল্লার মনে হল এটাই সেই সরোবর। জনাই আরও বলেছিল, ওই সরোবরের পশ্চিম পাড়ে দাঁড়ালেই তোর ডানদিকে দেখতে পাবি একটা পায়েচলা সরুপথ নেমে গেছে সাপের মতো এঁকেবেঁকে। ওই রাস্তা ধরে, খুব বেশি না, আধক্রোশেরও কম, হাঁটলেই পেয়ে যাবি, নোনাপুরের গ্রামপ্রধানের বাসা। নাম জুজাক। এমনিতে লোক খারাপ না, তবে বড্ডো বদরাগী। একবার রেগে গেলে দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। তবে ওর বউটা খুব ভালো। মনে খুব মায়া-মমতা।
আমার হপার পাতায় ভোটুৎসবে ভাট সিরিজে নামিয়ে যাচ্ছি নানা বিক্ষিপ্ত হ্যাজ। ডাইভার্সনের জন্য। এমতাবস্থায় গুরুর মূল ভাটে চোখে পড়লো এটা
RISE TO VOTE SIR রাত্তির নটার সময়ে আমাদের পাশের গ্রাম ব্রুকউডের কনট এভিনিউর বাড়িতে বাড়িতে বেল বাজিয়ে যখন গৃহ কর্তা বা গৃহ কর্ত্রী ভোট দিয়েছেন কিনা সেটা যখন জানতে চাইলাম , বহু কাল আগে পড়া শরৎচন্দ্র পণ্ডিত বা দাদা ঠাকুরের সেই বিখ্যাত প্যালিনড্রমটি মনে পড়ল -রাইজ টু ভোট সার! উলটো দিক থেকে পড়লেও সেটা রাইজ টু ভোট সার থেকে যায় ! উওকিং কাউনসিলে দশটি ওয়ার্ড (বাইফ্লিট ও ওয়েস্ট বাইফ্লিট ,কানাল সাইড, গোল্ডসওয়ারথ পার্ক, হিথল্যান্ডস, হো ভ্যালি, হরসেল ,ন্যাপহিল, মাউনট হারমন, পিরফোরড ,সেন্ট জনস) মোট ভোটার সংখ্যা সব ওয়ার্ডে প্রায় সমান , টোটাল আশি হাজার ; তিরিশ জন পৌরপিতা ও মাতা , প্রতি বছর দশজন করে নির্বাচিত হন। চার বছরের কার্যকাল, চতুর্থ বছরে ভোট হয় না। যদিও কারো বাড়ি থেকে মতদান কেন্দ্র ৫০০ মিটারের বেশি দূরে নয় , শতকরা চল্লিশ জন কষ্ট করে পোলিং স্টেশনে আসেন কিনা সন্দেহ । ইউরোপের একমাত্র দেশ যেখানে ভোট হয় কাজের দিনে, বৃহস্পতিবারে।
পুনশ্চর প্রাককথন! সেটা আবার কী মশায়? গেঞ্জির বুকপকেট? নাকি বাইকের সীটবেল্ট? আহা ব্যঙ্গ করেন কেন? মানছি সাধারণত তা হয় না। তবু করতে হচ্ছে। কারণ - পুনশ্চ সচরাচর মূল লেখার থেকে বড় হয় না। তবে যা সচরাচর হয় না তাও তো কখনো হতে পারে। তাই তো বারো হাত কাঁকুড়ের তেরোহাত … বা বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড় গোছের প্রবাদ চালু বাজারে। ছয় ইঞ্জিন - তিনশো ওয়াগন - সাড়ে তিন কিমি লম্বা সুপার বাসুকি মালগাড়ির মতো আপনার দীর্ঘ পুনশ্চ পড়বোই বা কেন? কী লাভ? তা অবশ্য ঠিক, তবে বিগত ৭৭ বছর ধরে এতোবার লাইন দিয়ে তর্জনীতে কালি লাগিয়েই বা কী লাভ হয়েছে? যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ (অথবা পূতানা) মেগা সিরিয়াল তো হয়েই চলছে। তবু তো অনেকে যায় আঙ্গুলে কালি লাগাতে। উঠতি লেখককে উৎসাহ দিতে না হয় দেখলেন একটু পড়ে। ভালো লাগলে এগোবেন। না হলে ছেড়ে দেবেন
‘জামবনি থানা?’ ‘হ্যাঁ, কে বলছেন?’ ‘স্যার, গড়বেতা থেকে দুটো গাড়িতে ১০-১২ জন প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে জামবনি গেছে ভোট করাতে। গাড়ির নম্বর দুটো লিখে নিন।’ ‘আপনি কে বলছেন?’ ‘স্যার, নাম বলতে পারব না। এটুকু বলছি, আমিও সিপিআইএম করি। গড়বেতায় থাকি। গড়বেতার সিপিআইএম অফিস থেকে দু’গাড়ি সশস্ত্র লোক আজ ভোরবেলা জামবনিতে গেছে। গাড়ির নম্বর আপনাকে বললাম। আপনি দেখে নিন।’
শেষ হেমন্তের পড়ন্ত বিকেলে বু্রুডির ভেতর গড়ে যখন পৌঁছলাম তখন মেলা তুঙ্গে উঠেছে। ভীড় উপচে পড়ে গড়িয়ে পড়বে নীল হ্রদের ভেতরে। ঝুটা মতির গয়নার দোকান সার দিয়ে বসে। ওদিকেই ভীড়টা বেশী বটে কিন্তু পাথরের গয়না, ডোকরাও রয়েছে। সংখ্যায় কম হলেও মধুবনি আর ওড়লি ঘরানার ছাপা শাড়ি। এক সদ্য গোঁফ ওঠা তরুনের হাত ধরে বউ টানছে ওদিকে। বসেছে অসাধারণ বাঁশ আর বেতের ঝুড়ি, ঠাকা, কুলা, মান তো আছেই আর আছে পাথরের বাসন কোসন। কোনও এক পাশ থেকে সাঁওতালি যাত্রার ঘোষনা করা হচ্ছে। মেলা থেকে একটু দুরে হাঁড়িয়া বিক্রি করতে বসেছেন মধ্য বয়সী মহিলার দল। হাঁড়ির মুখে গামছা বেঁধে বাসি ভাত ঘষেই চলেছে তাঁরা। সন্ধ্যা গড়ালেই বাড়বে বিক্রি বাটা। জুয়ার চরকি ঘুরছে বনবন। হাব্বাডাব্বার কৌটায় নড়ছে ঝান্ডি, মুন্ডি, চিড়িয়া আর কাফান।
অনবরত আল ধরে ধরে হাঁটা। জনবসতির চিহ্ন যেখানে মুছে গেছে সেখানে মাথা পেতে শুয়ে পড়া। ঘাসে একটু ওম। পোকামাকড়ের কিরকির শব্দ। কুয়োর নীচ থেকে দ্যাখা আকাশ। কতো লেজচেরা কালো কালো পাখি। চোখে জড়িয়ে আসছে ঘুমের আঠায়। এই মাঠ, ধানজমি, পাখি, পুকুর, আকাশ, অস্তরাগের মেঘ এই সমস্তটাই আমার সমাধি, নাভিতে মোম বসানো ছেলে বিড়বিড় করে এইসব ভাবে।
মেঠোবই – বাঙলার জীববৈচিত্র্য পশ্চিমবঙ্গ জীববৈচিত্র্য পর্ষদ
সন্তান নেওয়ার ব্যাপারেও অরুণাভর ইচ্ছে বা অনিচ্ছে কোনওটাই ছিল না। বিনীতার জেদেই তারা আজ বাবা-মা। কিছু বললেই অরুণাভ বলবে, “তুমি কর না যা মন চায়, আমি কিছু বারণ করেছি?” বারণ করা বা না করার ব্যাপার নয়, এই মানুষটার সব কিছুতে নির্লিপ্ত থাকাটা বিনীতা আর নিতে পারছে না। চোদ্দ বছর হয়ে গেছে। এইসব নানা কারণে ওর মন-মেজাজ প্রায়ই ভাল লাগে না। তবে ওর সাথে ঝগড়া করেও লাভ নেই। তবুও মাঝে মাঝে শুধু কথা বলার জন্যই বিনীতা ঝগড়া করে। সেটাও নয়, আসলে এক তরফা বকে যায় বিনীতা, অন্য দিক থেকে কিছু উড়ে আসে না।
এই তমসাচ্ছন্ন তামাশাকালে আমার মতো আত্মকেন্দ্রিকের (এখনো অবধি) কিছু এসে যায় না। ক্রনিক আমাশার মতো মাঝেমধ্যেই ঘুরেফিরে আসা তামাশা দেখে আমি তাই একান্তে বসে পাল্লা দিয়ে করে যাই এন্তার মস্করা, নইলে নিয়ত এসব দেখে শুনে রাতে ঘুমানো দায়
ভোটের মরশুমে দেখে যাও শুধু জনতার দরবারে নেতা নেত্রীদের চাপানউতোর আর প্রতিশ্রুতির প্লাবন। এমন রঙিন তামাশা অতীতে বাবুদের নাচমহলে বাঈজীর ঘাঘড়া ঘুরিয়ে খ্যামটা নাচনকেও হার মানায়। জনতন্ত্রের এমন আন্ত্রিকে আক্রান্ত অবস্থা দেখে ভারাক্রান্ত হয় মন। বলে নাকি Politics is the last resort of scoundrels. এসব দেখেশুনে আমার তিক্ত মনের শুশ্রূষায় Humour is the panacea in despair.
১৭ ই মার্চ।—কোয়ালাহ নদীর কাছে পৌঁছালাম, রুবুগার একজন স্থানীয় বাসিন্দা এই নদীকে ন্যাহুবা বলে, আরেকজন বলে উন্যাহুহা। মাসিকা ঋতুর প্রথম বৃষ্টিপাত হল এই দিনে; উপকূলে পৌঁছনোর আগেই আমার গায়ে ছাতা পড়ে যাবে। গত বছরের মাসিকা ২৩শে মার্চ শুরু হয়েছিল, আমরা তখন বাগামোয়োতে আর শেষ হল ৩০ এপ্রিল। পরের দিন উন্যামওয়েজি সীমান্তের পশ্চিম তুরায় অভিযান থামালাম আর ২০ তারিখে পূর্ব তুরায় পৌঁছালাম; অল্প কিছুক্ষণ পরেই, একটা বন্দুকের জোর শব্দ শোনা গেল, আর ডাক্তারের চাকর সুসি ও হামওয়দা এসে হাজির, সঙ্গে উরেডি ও আমার আরেকজন লোক।
আশির দশকে যাদবপুরের কয়েকটি ছাত্রছাত্রী শুশুনিয়া পাহাড়ে গেছে শৈলারোহণ অভ্যাস করতে - সেই ভিত্তিতে এই আখ্যান … ঈশুর হাত ধরে টেনে বসায় সুমন। "আচ্ছা বাবা, ঘাট হয়েছে। এই হচ্ছে ফেমিনিস্টদের নিয়ে মুশকিল। এতো সিরিয়াস কেন তোরা? রসিকতাও বুঝিস না। তুম চলে যায়োগে তো ইয়ে পুনম ভি অমাওস মে বদল যায়েগী" - নাটকীয় ঢঙে চাঁদের দিকে হাত তুলে দেখায় সুমন। আগামীকাল পূর্ণিমা। তখন তার ঔজ্জ্বল্য চোখ ধাঁধানো। কটমট করে তাকায় ঈশু সুমনের দিকে। কিন্তু সেই দৃষ্টিতে আপাত উষ্মার আড়ালে কি প্রহেলিকাময় সূক্ষ্ম প্রশ্রয়ও লুকিয়ে আছে কুহেলিকার মতো? নাকি তা নিছকই সুমনের বিভ্রম! সুমনের নাটুকেপনা দেখে তুলি আর চুনি খিল খিল করে হাসছে। এবার হেসে ফেলে ঈশুও। সেই দূর্লভ ঐশ্বর্যময় হাসি! কালাহারিতে ইলশেগুঁড়ি! এমন কিছু মাধূর্যের চকিত ঝলক দেখার আশাতেই তো সুমন এসব চ্যাংড়ামি করে