ইতিহাস, এক্কেবারে টিভি চ্যানেলের মতোই বস্তু। কোনটা দেখাবেন, কতটা দেখাবেন, কীভাবে দেখাবেন, তার উপরেই পুরো গপ্পোটা দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগে রামমোহন রায়কে নিয়ে একটা লেখা পড়ছিলাম, পড়তে পড়তে আরেকবার মনে হল। জিনিসটার একটা বিচ্ছিরিরকম মজা আছে। ধরুন, আমি যদি বলি সতীদাহ কী, তাহলে আপনি কী বলবেন? শুধু আপনি কেন, প্রসঙ্গটা এলেই আমি আপনি সবাই দুলে দুলে বলব, পুরাতন ভারতীয় সমাজে ... ...
ডাব্লুবিসিএস পরীক্ষায় বাংলা বাধ্যতামূলক হবার পরই চারদিকে শোনা যাচ্ছে, এতে নাকি প্রচুর অসুবিধে। কথাটা ঠিকই, যাঁরা বাংলা বলতে, লিখতে, পড়তে পারেননা, এতে তাঁদের চাকরি পেতে খুবই অসুবিধে হবে। কিন্তু সমস্যা হল, তাঁরা বাংলা না জানলে আবার জনতার অসুবিধে। এ তো ইংরেজ আমল না, যে, বিলেত গিয়ে খ্যাটখ্যাটে ইংরিজিতে পরীক্ষা দিলেই কেল্লা ফতে ... ...
রাশিচক্রে কার কখন রাহু হয়, কার কখন কেতু, বলা মুশকিল। কিছুদিন আগে পাঁচ সংখ্যাটার শনির দশা যাচ্ছিল। তখন পাঁচশ(নি) টাকার সব নোটের রঙ কালো হয়ে যাওয়ায় বাতিল করতে হয়েছিল। সেই সময় তুঙ্গে বৃহস্পতি ছিল দুই এর। পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দু-হাজারের নোটে বসছিল হাইফাই মাইক্রোচিপ। এমনকি কোনো কোনো নোট তো স্যাটেলাইটের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারত। শ্রীফেকুর পরামর্শে সেই সময় পাঁচকে পলা ধারণ করানো ... ...
কালকের চাকরি-যাওয়া সংক্রান্ত রায়ের খবরটা পড়ে যার-পর-নাই শঙ্কিত হয়ে পড়লাম। পুরো রায় তো দেখিনি, খবরের কাগজের প্রতিবেদন পড়ে যা বুঝলাম, তা মোটামুটি এইঃপর্ষদবাবু প্রচুর লোককে নিয়োগ করেছিলেন সরকারি কাজে। সেই নিয়োগ ঘিরে বেনিয়ম/দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। সিবিআই সে নিয়ে প্রচুর তদন্ত করেও, ঠিক কোন-কোন নিয়োগে বেনিয়ম আছে, তা বার করতে পারেনি। তাই সবাইকে অযোগ্য ঠাউরে প্রথমেই সব লোকের চাকরি কেড়ে নেবার নির্দেশ ... ...
জোড়াসাঁকোয় রবীন্দ্রনাথ বসে আছেন, দেখা করতে এলেন এক ছোটো গুজরাতি বেওসায়ি। ব্যবসায় ছোটো হলেও চেহারায় ইয়াব্বড়ো। এসেই বললেন, গুরুদেব, আমার নাম আমিৎ, গুজরাতে বেয়াপার করি, আপনার কাছে একঠো সাহায্য চাইতে এলাম। রবীন্দ্রনাথ স্মিতহাস্যে বললেন, অমিতজি, আপনি তো ব্যবসায়ী, আমি আর আপনাকে কী সাহায্য করব।ব্যবসায়ী বললেন, আমরা আর কী বেওসা করি গুরুদেব, আপনি আমাদের চেয়ে অনেক বড়ো বেওসায়ি ... ...
বিশ্বভারতীতে যা চলছে, সে নিয়ে আমরা ঠিক কি জানি? কিসুই না। মাঝে অমর্ত্য সেনকে জমিচোর আখ্যা দেওয়া হয়েছিল, এইটুকু জানি। সেও তামাদি হয়ে গেছে। উপাচার্য বলেছিলেন, অমর্ত্য সেন নোবেল পাননি, এটাও জানা। বসন্তোৎসব, পৌষ মেলা, সবই বস্তুত বন্ধ করে বা লাটে তুলে দেওয়া হচ্ছে, মনে হয়, এক আধবার পড়েছি-টড়েছি। কিন্তু আস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটা যে হিন্দুত্ববাদী আধা-ফ্যাসিস্ত অচলায়তনে পরিণত করে ফেলা হচ্ছে, ট্যাঁফো করলেই ছাত্র থেকে শিক্ষক সবাইকে সাসপেন্ড-বহিষ্কার করে দেওয়া হচ্ছে, এবং এটা যে বেশ কয়েক বছর ধরে চলছে, সে নিয়ে বিশেষ নড়াচড়া নেই। যদিও না জানলেও আন্দাজ করতে অসুবিধে নেই, স্রেফ রাজনৈতিক কারণে, অমর্ত্য সেনকে যারা "উনি তো নোবেল পাননি" ... ...
পরিষেবা বেসরকারি হলেই, কেমন তার মান হু-হু করে বেড়ে যায়, এয়ার-ইন্ডিয়া তার অব্যর্থ প্রমাণ। কলকাতা থেকে শিকাগো যাচ্ছিলাম এয়ার-ইন্ডিয়ায়, সেই অব্যর্থ প্রমাণ পেয়ে গেলাম। যাচ্ছিলাম, কলকাতা থেকে দিল্লি হয়ে শিকাগো। এমনিতেই কলকাতা শহর থেকে নেতাজি-সুভাষ বিমানবন্দরে এলেই কেমন একটা বিদেশে চলে এসেছি অনুভূতি হয়। নিরাপত্তারক্ষী থেকে বিমান-সংস্থার কর্মী, প্রায় সবাই ফুর্তিতে, হিন্দি বলতে শুরু করে দেন, এবং উত্তরও হিন্দিতেই চান, যেন এটা লক্ষ্নৌ বিমানবন্দর। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানেও ঘোষণা থেকে বিজ্ঞপ্তি পর্যন্ত সবই হিন্দি এবং ইংরিজিতে। 'কলকাত্তা হাওয়াই আড্ডে মে আপকা স্বাগত হ্যায়' শুনলেই বলতে ইচ্ছে করে, ই কি হিন্দুস্তানি শহরে চলে এলাম নাকি, যার নাম কলকাত্তা হাওয়াই আড্ডে? ব্রিটিশ আমলে ... ...
অধিক ফ্যাচফ্যাচ করে লাভ নেই। আমরা, বাঙালিরা মাতৃভাষার জন্য বিস্তর ঘাম, রক্ত ইত্যাদি ঝরিয়েছি ঠিকই। তার প্রমাণ, আসামের উনিশ, পূর্ববঙ্গের উনিশ, পশ্চিমবঙ্গের একষট্টি। কিন্তু এত যুদ্ধবিগ্রহের পরও আমরা বহুটুকরো, রাজনৈতিকভাবে, এবং তারচেয়েও বড় কথা মনোজগতে। বঙ্গভাষীরা কেউ বিশেষ কারো খোঁজ-টোজ রাখেনা। আসামে এনআরসি নিয়ে হুজ্জুতি হলে, সেটা যে বঙ্গভাষীদের সমস্যা, এটা আমরা প্রতিষ্ঠাই করতে পারিনি। তা, সে পুরোনো কেচ্ছা, এখন বিশ্বের বৃহত্তম ডিটেনশন ক্যাম্প তৈরি হয়ে গেছে আসামে, কঠোর বিকল্পের আর কোনো পরিশ্রম নেই, ফলে ওসব চুকে বুকে গেছে, আমরাও ভুলে মেরে দিয়েছি।পূর্ববঙ্গের ক্ষেত্রেও তথৈবচ। তিনদিন আগে যে রবীন্দ্রমূর্তি চুরি হয়ে গেছে ঢাকায়, পশ্চিমবঙ্গের লোকেদের মধ্যে দেড়জনও তার খবর রাখেন ... ...
এইমাত্র পড়লাম, বিবিসির দিল্লি দপ্তরে আয়কর-দপ্তর হানা দিয়েছে। কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগের তদন্ত চলছে। প্রসঙ্গত, বিবিসি, এই কদিন আগে, শ্রীশ্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র সম্প্রচার করেছিল। সেটা ভারত সরকার নিষিদ্ধ করেছে। তারপরই এই আয়কর হানা।এটা অবশ্যই প্রথম ঘটনা না। এর একটা প্যাটার্ন আছে। কোনোদিন শুনবেন না, যে, আদানির বিরুদ্ধে এক কোটি অভিযোগ আসার পর, তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। এই যে, সরকারের পক্ষে রায় দিয়ে প্রাক্তন বিচারপতিরা ঝপাঝপ যোগ দিচ্ছেন নানা পদে, তা নিয়ে অনুসন্ধান হচ্ছে বলেও জানা নেই। নীরব মোদী লন্ডনে পালানোর আগে, কোনোদিন তাঁর দপ্তরে আয়কর দপ্তর হানা দিয়েছে বলে জানেন? নাঃ। কোথায় দিয়েছে? দিল্লিতে একাধিক সংবাদমাধ্যমের দপ্তরে, ... ...
শঙ্খ ঘোষ নেই, বিশ্বাস হয়না। ঠিক যেমন বিশ্বাস হয়না, রবীন্দ্রনাথ নেই, বা ভারতচন্দ্র নেই। কারণ না থাকাটা অসম্ভব। এপিজেনেটিক্সই বলুন, আর মিউটেশন, মোদ্দা কথা হল, এঁরা বাঙালির হাড়-মজ্জা ছাড়িয়ে ডিএনএ তে ঢুকে গেছেন। আর বার করা সম্ভব না। এখনও কারো অপ্রাপ্তির আফশোষ দেখলে, আমরা তাকে রবীন্দ্রপংক্তি দিয়ে সান্ত্বনা দিই - নদীর এপার কহে... ইত্যাদি, কারও ঢক্কানিনাদ দেখলে বলি, মনে রেখো এক ফোঁটা দিলেম শিশির। আমাদের সন্তানের জন্য "যেন থাকে দুধে-ভাতে", আর "আমার সন্ততি স্বপ্নে থাক" বলে প্রার্থনা মিলে-মিশে যায়। আমাদের শহরের মুখ আজও ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। আমরা আজও তোমাকে ভীষণ বকি আড়ালে, আর মাঝে মাঝে আফশোষ করি, তুমি আর নেই ... ...