অপালার পাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। রাস্তায় একদিন দেখা। বলল, নতুন বাড়ি, ধম্মো-কম্মো-গৃহপ্রবেশ করিসনা, ঠিক আছে, কিন্তু ডেকে চা খাওয়া একদিন। ওদিকে লজ্জার কথা হল, বাড়িতে আমার কিছুই নেই, গ্যাস-ওভেন-ফ্রিজ দূরস্থান, চেয়ার-তোশক-বালিশ পর্যন্ত না। অপালা বলল, যত বাজে ঢপ। আমি বললাম, আরে, সব হলেই তোকে নেমন্তন্ন করব একদিন। শুনে বলল, হ্যাঁ, যেরকম ঢোঁড়াই চরিত মানসটা পড়তে দিয়েছিলি। এসবের আর কী উত্তর দেবে লোকে। মুখে বলে তো বোঝানো ... ...
আমার প্রথম পছন্দ ছিল ঋত্বিকা, কিন্তু সে দেখি প্রেমে পড়েছে এক কাশ্মীরী শালওয়ালার। পুরো হাবুডুবু কেস। ঋত্বিকার দুধে-আলতা রঙ, ধনুকের মতো ভুরু, উচ্চমাধ্যমিকে কান-ঘেঁষে স্ট্যান্ড করেনি। তাকে কোথাকার কে একটা ভাগিয়ে নিয়ে যাবে? আমি প্রথমে খানিক ভয় দেখানোর চেষ্টা করলাম। কীসে আর কীসে, ছেলেটা নির্ঘাত এইট পাশ, নইলে কি আর শাল বেচে? বলতে বলল, তোদের মতো রাত জেগে পড়াশুনো করলে খেঁকুরে বাঙালি হয়। আমি বললাম, ওখানে কিন্তু বছরে আট মাস ইনটারনেট বন্ধ, ভারত সরকার রিল বানানো নিষিদ্ধ করে দিয়েছে। তাছাড়া হিজাবও পরতে হতে পারে। শুনে বলে, ওটা তো চয়েস, শেহলা রশিদও পরে। কে বোঝাবে একে। সে তো কাশ্মীরী। আর তুই ভিনদেশী। ... ...
এই যে চারদিকে মিছিল হলেই স্লোগান শোনেন, 'চলছে-চলবে', কিংবা 'চলছেনা-চলবেনা' - এর উৎপত্তি কোথায় কখনও ভেবেছেন? সেটা ১৯৬৫ সাল। উৎপল দত্ত মিনার্ভা থিয়েটারে নিয়ে এলেন তাঁর প্রবাদপ্রতিম নাটক, কল্লোল। নাটকটা তখনও প্রবাদ হয়নি, কিন্তু প্রথম দিন থেকেই বিতর্কিত। পটভূমিকায় ছিল ১৯৪৬ এর নৌবিদ্রোহ। ব্রিটিশ জমানার শেষ সময়ে নৌসেনাদের বিদ্রোহ, কংগ্রেস এবং মুসলিম লিগের পিছনে ছুরি মারা। তারপর দেশভাগ ... ...
পাড়ায় ফিরে দেখি হেবি ক্যাচাল। জেল থেকে ফিরে কচি গুন্ডা আমাদের ক্লাবঘর ভেঙে দিয়েছে। সেই নিয়ে পচাবাবুর আর মুনিয়াদির নেতৃত্বে প্রতিবাদসভা। থানায় ডেপুটেশন হবে। হুজুগ এলেই আমরা সবাই একপায়ে খাড়া। কিন্তু থানার বড়বাবু সব শুনে বললেন, সবই তো বুঝলাম। কিন্তু জমির কি কোনো কাগজপত্র আছে? কোন ক্লাবের আবার জমির কাগজ থাকে। জাঙ্গিয়ারও বুকপকেট, বারোয়ারি মণ্ডপেরও আধারকার্ড । বড়বাবু বললেন, তাহলে তো আমাদের কিছু করার ... ...
ছিল পাড়ার মোড়ের ফুলের দোকান, অনলাইন কারবার করতে গিয়েই আমার সব্বোনাশ হল। প্রথম দিকে ভালই চলছিল। অর্ডারের চোটে ফুলে-ফেঁপে ঢোল। দোকানে নতুন লোক রাখতে হল। ডেলিভারি আমি নিজেই করতাম। ফুল নিয়ে গেলে গোমড়া-খিটখিটে লোকেরাও ফিল্টার দেওয়া সেলফির মতো মোলায়েম হয়ে যায়। সুন্দরী মেয়েরা লজ্জায় লাল হয়ে হাসি দেয়। পয়সার সঙ্গে সেসব ফাউ। তখন কে জানত, ওসব মধুচন্দ্রিমার ... ...
প্রেম মানেই সমস্যা। বিয়ের আগের দিন দিঠি আমাকে বলল, আমি অহর্নিশকে চুমু খেয়েছি।তাতে কোনো সমস্যা হয়নি, খেয়েছে তো কী আর করা যাবে। তাই আমি কিছু বললামনা। দিঠি একটু থেমে বলল, শুয়েওছি।তাতেই বা আমার কী করণীয়। দিঠি এবার রেগে বলল, তুমি ভাবছ ইয়ার্কি? আমি ওকে ভুলতে পারিনি।আমি এবারও চুপ করে রইলাম। হিংসুটে দৈত্যদের যা করণীয়। দিঠি আরও রেগে বলল, - তোমার তাতেও কিছু বলার নেই?তা অবশ্য ... ...
......বড় চালতা গাছটার তলায় শুয়ে এইসব আকাশপাতাল ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখ লেগে এসেছে বুঝতে পারে নি বংশী। হঠাৎ পায়ের তলায় একটা সুড়সুড়িতে ঘুমটা ভেঙে গেল। বংশী দেখল ঘটিগরম পরম আনন্দে ওর বাঁ পায়ের কড়ে আঙুলটা চেটে চলেছে। অন্য কেউ হলে হয়তো তড়াক করে লাফিয়ে উঠত কিন্তু বংশী মুচকি হেসে পাশ ফিরে শুল। হোক না কুকুর, তবু তো কেউ ওকে ভালোবাসছে। নয়তো আজকাল ... ...
বইমেলা বলতেই আমার প্রথম যে স্মৃতি মনে আসে, তা ক্লাস টু-থ্রির। বাবা-মার সঙ্গে গিয়েছিলাম, বলাবাহুল্য। আগে থেকে বায়না করে রাখা ছিল, আমি নিজের পছন্দে বই কিনব। তা, ঘুরে-ঘুরে কিনলাম, ছবি আঁকা ভয়াল ভয়ঙ্কর সব বই। কেউ কোনো হস্তক্ষেপ করেনি। কী কী মনে নেই, যেটা মনে আছে, সেটা হল, আমার মামাতো দাদার জন্য বই কেনা হয়েছিল মায়ের পছন্দে। সত্যজিৎ রায়ের একডজন সিরিজের কোনো একাটা। প্রথমটাই মনে হয় ... ...
বইমেলা ঘনিয়ে এল। বইয়ের দাম ক্রমশ আকাশছোঁয়া হচ্ছে বলে গুচ্ছের অনুযোগ শোনা যাচ্ছে, এবং যাবে। তা, আমরা, অর্থাৎ গুরুচণ্ডা৯র এই নিয়ে দীর্ঘদিনের বক্তব্য আছে। আমরা আমাদের ডাকনাম বইয়ের নাম রেখেছি চটি বই। বইয়ের উপরে আস্ত দুখানা চটির ছবি ছেপে দিই আমরা। এই ব্যাপারটা, কেউ পছন্দ করেন, কেউ করেননা। চন্দ্রিল, প্রতুলদা পছন্দ করেন বলেছিলেন, মনে আছে। কিন্তু কথা হল, এটা কেন ... ...
বইমেলা ঘাড়ের উপর চলে এলে তবে আমাদের চৈতন্য হয়, যে, এবার বইটই ছাপতে হবে। তার আগে ঘোষণা করতে হবে। সম্পাদনা শেষ করতে হবে। প্রচ্ছদ বানাতে হবে। অনেক কাজ, কিন্তু সময় আর সাড়ে তিন মিনিট । সিনেমায় টাইম বোমার ঘড়িগুলো সবসময়েই কোনো অজ্ঞাত কারণে টিকটিক করে শব্দ করে। কিন্তু ওগুলো পুরোটাই গুলবাজি। বইমেলা নামক সময় বোমা কোনো শব্দ না করেই ঘনিয়ে ... ...