রাত্রে কলতান একটা ফোন করল আশুতোষ মৈত্রকে । — ‘ আজ্ঞে বলুন স্যার ‘— ‘ হ্যাঁ .... আশুবাবু একটু ডিস্টার্ব করছি। ওই যে দেবযানীদেবীর কথা বলছিলেন....— ‘ হ্যাঁ হ্যাঁ ... দেবযানী ঘোষ... কেন কি হয়েছে ?’— ‘ না .... কিছু হয়নি , ওনার অ্যাড্রেসটা দিতে পারবেন আপনি ? ওটা পেলে সুবিধে হয়।’— ... ...
সকাল নটা কুড়িতে আশুতোষবাবু হাজির হয়ে গেলেন। কলতান দরজা খুলে দেখল বছর ষাটেকের মাথায় কাঁচাপাকা চুলওয়ালা মোটাসোটা চেহারার এক ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে আছেন। হাতে একটা গুটিয়ে রাখা ছাতা। ... ...
কলতান দুটো খবরই পেল ঋজুর কাছ থেকে। মোবাইল লোকেশান ট্র্যাক করে জানা গেছে শ্রুতি টালীগঞ্জ এলাকায় ছিল। আর, সৌভাগ্য ভান্ডার ইরাবানেরই দোকান। কিন্তু গত তিনদিন ধরে বন্ধ আছে। অর্থাৎ কাল দোকানে থাকার কথাটা ডাহা মিথ্যে কথা। ... ...
ডেক্সটার অ্যান্ড স্মিথের গেটের উল্টোদিকে একটা মাঝারি আকারের ধাবা। একটা পাঞ্জাবী বুড়ো আর একটা বুড়ি সেখানে বসে আছে দুপুর বারোটা থেকে। ধাবার ভিতরে অবশ্য বসে নেই তারা। ধাবা মালিকের অনুমতি নিয়ে বসে আছে ধাবার বাইরে পাতা একটা বেঞ্চে। তাদের নাকি গাঁওয়ের কোন লোক আসবে। এখানে তাদের অপেক্ষা করতে বলেছে। বুড়ো বুড়ি ঝোলা থেকে বের করে কুটকুট করে মাঝে মাঝে কি যেন খাচ্ছে, আবার ঝোলায় ঢুকিয়ে রাখছে। ... ...
কলতানের ফ্ল্যাটে কিচির মিচির পাখির ডাক ডেকে উঠল সকাল পৌনে এগারোটা নাগাদ। ঠিকানাটা কলতানই জানিয়ে দিয়েছিল। দরজা খুলে কলতান বেশ খানিকটা চমকে গেল। দেখল একজনের বদলে দুজন দাঁড়িয়ে আছে। ইরাবান আর শ্রুতি।— ‘ আরে ... এস এস একেবারে দুই ভাইবোন একসঙ্গে। তা ভালই করেছ। আমার খাটুনি বাঁচিয়ে দিলে।’ কলতান বলে।ইরাবান আর শ্রুতি সংকোচজড়িত ভঙ্গীতে ঘরে ঢুকে সোফায় বসল।— ‘ হ্যাঁ বল .... ‘ , কলতান ওদের মুখোমুখি বসে।ইরাবান একটু চুপ করে থাকার পর বলল, ‘ আমরা দুজনেই খুব ভয়ের মধ্যে আছি। ... ...
সন্ধেবেলা নীলাম্বরবাবু ফোন করে জানালেন যে উচ্চমাধ্যমিকে তার ছেলের ‘পাস আউট ইয়ার’ দু হাজার নয় এবং মেয়ের দু হাজার কুড়ি । কলতান জানাল, ‘ ঠিক আছে ধন্যবাদ। আমি দুদিন বাদে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব। এই দুদিনের মধ্যে আপনার কেসটা সলভড হয়ে যাবে বলে আশা করি। তবে আপনি কিন্তু বাড়ির মধ্যেও সাবধানে থাকবেন। সাবধানের মার নেই।ঠি ক আছে রাখছি এখন ..... গুড নাইট ।’কুলচা নতুন মামলার তীব্র রহস্যের গন্ধ পেয়ে আজ আর আর মামার বাড়ি থেকে নড়তে চাইল না। ... ...
একে ভরা শ্রাবণ, তার ওপর নিম্নচাপ অক্ষরেখা দানা বেঁধেছে গভীরভাবে। ভর দুপুরেও আকাশ অন্ধকার। আকাশ থেকে জল ঝরেই যাচ্ছে কাল রাত থেকে। বউবাজার কলেজ স্ট্রীটে জল থইথই। গোটা রাস্তায় বাসে ট্রামে এ গাড়ি সে গাড়ি ঠেলায় রিক্শায় লেবড়ি চেবড়ি একেবারে। ট্রাফিক পুলিশ নাকানি চোবানি খাচ্ছে মহাত্মা গান্ধী রোডের মোড়ে। রাস্তার হাঁটুজল ঠেলে ঠেলে আপাদমস্তক বর্ষাতিতে ঢাকা একটা লোক বঙ্কিম চ্যাটার্জী স্ট্রীটের মুখে একটা পুরনো বাড়ির দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল। ... ...
ছড়ানো ঝিল ভর ভরন্ত। ওপারে ঝোপঝাড় জঙ্গল। এপারে কাঁচা রাস্তা আবলা খাবলা। শুক্লা রাতে চাঁদের আলো খেলা করে ঝিলের জলে। ওপারের জঙ্গল থেকে শেয়ালের দল ডাকতে শুরু করে আচমকা। এপারে শিবমন্দিরের বাইরে ল্যাম্পপোস্টের আলোর ছটা মাখা আঁধারে বসে রাত বারোটা অব্দি চার পাঁচজনে মিলে এন্তার মদ খায়। মদ গিলতে গিলতেই যে যার ঘর সংসারের জমিয়ে রাখা বিষ বাষ্প উগরে দেয়। নেশা চড়ে গেলে কেউ কাঁদে কেউ হাসে। ... ...
( শেষাংশ ) কালিপুজোর দিন সকালে শিশিরবিন্দু স্পীড পোস্টে একটা লেফাফা পেল। খামের ভেতর একটা চিঠি। কনসার্টের বিচারকদের রায়ে ‘বশিষ্ঠ’ গ্রুপ প্রথম স্থান অধিকার করেছে এবং ঢাকবাদক বশিষ্ঠ বাউরি সর্বসম্মতিক্রমে শ্রেষ্ঠ বাদকের পুরষ্কার প্রাপক মনোনীত হয়েছে। পুরষ্কার মূল্য দু লক্ষ টাকা। ... ...
বশিষ্ঠ নিমগাছটা থেকে একটা কচি ডাল ভাঙল দাঁতন করার জন্য। দাঁত আর কটাই বা আছে। ছিয়াত্তর বছর বয়েস হল। হাতে পায়ে তেমন বল নেই। শুধু ঢাকের দুটো কাঠি হাতে নিলে কি যেন ভর করে হাতে পায়ে। সাত পুরুষের ঢাকির পরিবার। তিন পুরুষ আগে তার কে যেন কলকাতায় রাজা নবকৃষ্ণের শোভাবাজার রাজবাড়ির দুর্গাপুজোয় ঢাকের বোল তুলতে যেত। তার নাম ছিল দুর্গাচরণ। সেই অষ্টমীপুজোর সকাল সন্ধেয় আরতির সময়ে দুর্গাচরণের ঢাকের বোলে রাজবাড়ির আনাচ কানাচ দুলতে থাকত ভাবের দোলায় । এইসব শোনা কথা অবিশ্যি। ... ...