ওখান থেকে লেকের গার্ডেন্সের মোড়ে এসে বাইকটা দাঁড় করিয়ে বউবাজার থানার ওসি বিদ্যুৎ তরফদারকে একটা কল দিল । ----- ' হ্যা ..... কলতানদা ..... কেসটার কদ্দুর ?'----- ' কেন .... এত তাড়া কিসের ? '----- ' আরে কি বলব ..... পার্টি বহুৎ সেয়ানা .... বারবার হুড়কো মারছে ..... খালি বাজে ধান্দা .... একটা নীরিহ গরীব মানুষকে ফাঁসাচ্ছে ..... শেমলেস ....'---- ' তুমি কি বললে ? '----- ' আমি ওসব রংবাজদের কেয়ার করিনা..…. আর যে করে করুক ..... পুলিশে কাজ করি বলে কি ..... ছো : '------ ' সে ঠিক আছে .... তুমি কি বললে ওদের ?' ----- ' ও..ই ক্যাভিয়েট পিটিশানের কপিটা ... ...
----- ' তুমহারা নাম কেয়া হ্যায় ভাই ?'----- ' দীনেশ ' কলতান ফলওয়ালাকে বলল, ' তুম হররোজ ইঁহা ব্যয়ঠতে হ্যায় কেয়া ? ' ----- ' নেহি ..... কভি কভি ব্যয়ঠতে হ্যায় ..... আভি ইয়ে পুরা মাহিনা ব্যয়ঠেগা .... '----- ' আচ্ছা ঠিক ঠিক .... কবতক রহতে ? '------ ' আট , সাড়ে আট তক ..... '----- কাল ভি সাড়ে আট তক থে ? '----- ' হাঁ জি ..... '----- ' আচ্ছা আচ্ছা .... ঠিক হ্যায় .... আজ তো লাগতা জ্যায়দা বিকা নেহি ..... ফিকর মাত করনা ..... ইয়ে লো .... এ ভি রাখ লো ..... 'বলে কলতান আর একটা পঞ্চাশ ... ...
দুপুর প্রায় আড়াইটে বাজে । কলতান বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ল । বৌবাজারের মোড়ে এসে বাঁ দিকে ঘুরল । ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মোড়ে এসে থামল । যাবার রাস্তায় দেখল দত্ত জুয়েলার্সে শাটার নামানো , তালা মারা । কলতান লক্ষ্য করল দত্ত জুয়েলার্স আর তার পাশের দোকানের মাঝখান দিয়ে একটা সরু গলি গেছে ছানাপট্টির দিকে । দীনবন্ধুবাবুরা নিশ্চয়ই বাড়ির দিকে রওয়ানা দিয়েছে এতক্ষণে । হ্যা ... ওরা ঠিকই বলেছে । মোড়ের মাথায় ওদিকের ফুটপাথে একটা পান সিগারেটের গল্লা আছে । ওপরে ছোট একটা টিনের সাইনবোর্ড । তাতে লাল রঙে লেখা আছে -- কস্তুরী । একজন নীল রঙের স্যান্ডো গেঞ্জি ... ...
একে ওকে জিজ্ঞেস করে কলতানের বাড়িটা খুঁজে পেয়ে গেল দীনবন্ধুরা । কলতানরা থাকে তিনতলায় । এরা ঝট করে তিনতলায় উঠে যেতে পারল না । আত্মবিশ্বাসহীন মানুষের যেমন হয় আর কি । ফুটপাথের ধারে দাঁড়িয়ে আবোল তাবোল আলোচনা করতে লাগল । প্রথমত, তারা অনেকক্ষণ ধরে কজন ওপরে যাবে , কারাই বা যাবে , যারা যাবে তারা কিভাবেই বা তাদের সমস্যার কথাটা উপস্থাপন করবে , উনি যদি তাদের কেসটা নিতে রাজি না হন তাহলেই বা কিভাবে অনুনয় করবে , যদি খুব বেশী পারিশ্রমিক চেয়ে বসেন তাহলে কোন ভঙ্গীতে ভদ্রতার সঙ্গে দরাদরি করা উচিৎ, এই ভর দুপুরে ভদ্রলোককে বিরক্ত করা উচিৎ হবে ... ...
দীনবন্ধু জানাকে আপনারা চেনেন না নিশ্চয়ই । কি করেই বা চিনবেন । দীনবন্ধু জানা তো আর কেষ্টবিষ্টু কেউ না । পূর্ব মেদিনীপুরের হেঁড়িয়ায় বাড়ি । কলকাতায় শ্যামবাজারে একটা মেসে থাকে । বউবাজারে একটা নাম করা জুয়েলারির দোকানের কর্মচারি সে । মেসবাড়ি সংস্কৃতি এখন অবলুপ্ত। তবু পুরনো কলকাতায় দু একটা আছে এখনও । সেখানে ঢুকলে মনে হয় চল্লিশ বা পঞ্চাশের দশকে ঢুকে পড়েছি । শ্যামবাজারে এরকম আছে একটা ওই আর জি কর রোডের ওপর । প্রায় অমিয়বাবুর বাজারের ওপর বলা যায় । ওখানে দীনবন্ধুর সঙ্গে আরও পাঁচজনথাকে । তারা হাওড়া, মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূম বিভিন্ন জায়গার লোক । তারা অবসর পেলে তাস ... ...
থানার দুজন উর্দিহীন সাব ইন্সপেক্টর চোখের পলক ফেলতে না ফেলতে কলতানের কাছাকাছি এসে তাকে এদিক ওদিক খুঁজতে লাগল । কলতান বলল , ' এই যে ... আমি এখানে ... ' । এস আই দুজন সঞ্জয় ঘোষ এবং প্রতীক চক্রবর্তী তার সামনে যেতেই সে তার দাড়ি পাগড়ি সব খুলে ফেলল । প্রতীকবাবু বললেন, ' আরে... কেয়াবাত .... আপনার সত্যি জবাব নেই ... কেউ চিনতেই পারবে না ...' । সঞ্জয়বাবু বললেন, ' মেক আপ দুর্দান্ত হয়েছে .... 'কলতানের কানে এসব কথা ঢুকছে না । সে বলল , ' ওসব বাদ দিন । হারি আপ ... কে এফ সি বিল্ডিং..... মারুতি ভ্যান .... ... ...
নটা বাজার মিনিট পাঁচেক আগে কলতান মাথায় একটা পাগড়ি পরে গালে দাড়ি লাগিয়ে নিল চট করে । এত দ্রুতবেগে কাজটা করল যে আশপাশের কেউ কিছু বুঝতেই পারল না । অনেক বছর ধরেই সে এ কাজটায় অভ্যস্ত । বাইকের রিয়ার ভিউ গ্লাসে নিজের মুখটা দেখে নিল । নিজেকে নিজে চিনতেই পারছে না । বারের ভিতরে ঢুকে কাউন্টারের একপাশে দাঁড়িয়ে রইল । ফ্লোরের টেবল দু তিনটে এখনও খালি । বাকিগুলোয় পানরসিকরা উদ্বেল হিল্লোলে ভাসছে । রাত আস্তে আস্তে রঙে রঙে রঙীন হয়ে উঠছে । দারিদ্র, মালিন্য ভরা কলকাতার ভিতরে আর এক কলকাতা । ন নম্বর টেবিলটা একপাশে একটু নিরিবিলিতে ঢিমে বাতির নীচে । ... ...
মাত্র দুবার রিং হবার পর ওদিকে কেউ ফোন তুলল । পুরুষকন্ঠে একটা ছোট আওয়াজ আসল --- ' হুমম্ ' । কুলচা নার্ভ ধরে রেখে গলায় মধু ঢেলে বলল,' হরি ওম ' ।মোবাইল নিঃশব্দ হয়ে গেল । স্পীকার অন করাকরা আছে । বোঝা যাচ্ছে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়নি । ওপারের ভদ্রলোক বোধহয় সতর্কভাবে জল মাপছে .... । কুলচা ক্রিজে বেশ তাড়াতাড়ি সেট হয়ে গেছে মনে হচ্ছে । সে ছোট্ট একটা গিগল মিশিয়ে আবার একবার বলল , ' হরি ... ও..ম ' ।এবার ছোট্ট একটা জবাবও এল ' লিডার 'এবার কি বলা যায় ভেবে না পেয়ে কলতানের কথামতো চুপ করে রইল । কলতান তাড়াতাড়ি ... ...
ফ্ল্যাটের আসল মালিক সরোজ ভরদ্বাজের ফোন নম্বরটা পাওয়ার পর কলতান বলল, ' রাকেশ মিশ্র, মানে যে এসে মাঝে মাঝে থাকে তার ফোন নাম্বারটাও দিন ... ' ভদ্রলোক রেজিস্টার হাতড়ে ফোন নম্বরটা বার করে কলতানকে দিলেন । কলতান ফোন নম্বরটা সঙ্গে মিলিয়ে দেখল সূর্য শ্রীবাস্তবের নম্বরের সঙ্গে মেলে কিনা । নম্বর মিলবে আশা করেনি এবং মিললও না । কলতান বলল, ' বিল্ডারের নাম এবং ফোন নম্বর দিন ' ভদ্রলোক বাধ্য বালকের মতো চুপচাপ একটা কার্ড বার করে কলতানকে দিল । পুলিশে ছুঁলে ছত্রিশ ঘা... । কার্ডে চারটে ফোন নম্বর রয়েছে । রিয়্যালটর কোম্পানির নাম নিলাদ্রি বিল্ডার্স । অভিরূপবাবু বললেন , ' মিস্টার ... ...
মুখের চানাচুর শেষ হলে অচিন্ত্য বলল, ' আপনি কাকে ফোন করেছিলেন ? '----- ' সূর্য শ্রীবাস্তবকে । অবশ্য ওটাই আসল নাম কিনা শিওর নই । কিংবা সেই ফোন ধরল কিনা বলা মুশকিল । যাই হোক ধরে নেওয়া যাক এটাই সূর্যকুমার । তুমি কখনও ফোনে কথা বলেছ ওর সঙ্গে ? '---- ' না না ... পাগল নাকি ? '----- ' ওদের কিছু কোড ল্যাঙ্গুয়েজ জানা আছে তোমার ? '----- ' হ্যা ... হরি ওম-টা জানি । গ্যাঙের মেম্বাররা একজন আর একজনকে এটা বলে ...' ----- ' আর ফক্স টেরিয়ার ? '----- ' হ্যা এটাও জানি ... এটা একটা সতর্কবার্তা। এর মানে হল ... ...