জিততে গেলে বর্ডারকে করতে হবে একশ চুয়ান্ন রান যা এই উইকেটে খুব সহজ নয় । যদিও আস্কিং রেট চারেরও কম । অমিত দত্ত আর বিতান কাঞ্জিলাল বোলিং ওপেন করল । দু ওভার অনায়াসে খেলল ওপেনার দুজন । উইকেটে জুজুর কোন লক্ষ্মণ দেখা গেল না । স্পিনার এলে বোঝা যাবে ওসব । রান বিনা উইকেটে এগারো । বিতানকে আর এক ওভারের জন্য ডাকল সন্ময় । প্রথম বল অফস্টাম্পে হাফভলি । এক্স্ট্রাকভার দিয়ে চার । নিখুঁত টাইমিং । পরের বল একই জায়গায় । একটু কম লেংথে । হালকা আউটসুইং। ব্যাটসম্যান পল্লব বোস আবার চালাল । ব্যাটের বাইরের কানা নিল । বল । বল কাঁধের উচ্চতায় ... ...
চিকিৎসা কর্মীরা ইরাবানের চোখের পাতা ফাঁক করে টর্চের আলো ফেলে চোখের মণির অবস্থা দেখল। রক্তচাপ, পালস বিট, অক্সিজেন স্যাচুরেশানের মাত্রা, জুতো খুলে বাঁ পায়ের তলার সাড় এসব প্রাথমিক পরীক্ষা করল। তেমন হতাশ হতে দেখা গেল না তাদের। ইরাবানকে একটা ইঞ্জেকশানও দিল। দীপেন বাবু এসে প্রায় হুমড়ি খেয়ে পড়লেন ইরাবানের শরীরের ওপর। একজন চিকিৎসা কর্মী তাকে সরিয়ে দিল। দীপেনবাবু বাধ্য হয়ে খানিক তফাতে গেলেন। একজন ছুটতে ছুটতে মাঠের বাইরে গেল। তাকে একটু পরে একটা স্ট্রেচার নিয়ে আসতে দেখা গেল। ইরাবানের শরীরের পাশে স্ট্রেচার পাতা হল। দুজন চিকিৎসা সহায়ক ইরাবানকে দুদিকে খুব ... ...
ক্রিকেট খেলায় ব্যাটসম্যানের আনমনা হবার কোন জায়গা নেই। ক্রিকেট হল ব্যাটসম্যানের কাছে স্রেফ এক বলের খেলা। সামান্য একটা ভুলে ইনিংস খতম। সারা ইনিংসে অখন্ড মনোসংযোগ নিয়ে প্রতিটি বলের মোকাবিলা করতে হয় একজন ব্যাটসম্যানকে। ভাটিয়া পরের ওভারে একজন পার্ট টাইম সিমারকে নিয়ে এল। উইকেট টু উইকেট বল রাখে মাপা লেংথে, যেটা রানের গতিতে লাগাম পরাবার জন্য দরকার। সন্ময়ের স্ট্রাইক। তার মাথায় চিন্তার জট চেপে বসেছে। ইরাবান কেন মাঠে শুয়ে পড়ল ...ওর শরীর ঠিক কি অবস্থায় আছে ... কে বলে দেবে ... অফস্টাম্পের সামান্য বাইরে পুরো লেংথের বল। সন্ময় কি করতে চাইল কে জানে ... ...
হোয়াইট বর্ডারের মাঠেই ম্যাচ। বেশ খটখটে আবহাওয়া। পরিষ্কার আকাশ। সন্ময় টসে জিতে ব্যাটিং নিল। স্বপ্নেন্দু আর আকাশ ইনিংস ওপেন করল। বর্ডারের ক্যাপ্টেন সঞ্জীব ভাটিয়া ধুরন্ধর ক্যাপ্টেন। সে জানে কিরকম উইকেট পাতা হয়েছে। সিমার দিয়ে মাত্র দু ওভার টানাল। দু ওভারে চোদ্দ রান হল। দুজন ওপেনার একটা করে বাউন্ডারি পেল। আকাশ গালির পাশ দিয়ে স্টিয়ার করে আর স্বপ্নেন্দু মিড অন দিয়ে ছবির মতো একটা অন ড্রাইভে। ভাটিয়া এই দু ওভার শেষ হতেই স্পিনার লাগিয়ে দিল। একটা ডানহাতি অফস্পিনার আর একটা বাঁহাতি অফস্পিনার। সাড়ে চার ওভার স্বচ্ছন্দে খেলল ওরা দুজন ... ...
সন্ময় সেদিন মাঠেই বলেছিল, ' হোয়াইট বর্ডারের সঙ্গে খেলাটা কোন মাঠে পড়েছে বড়দা ? ' ---- ' ওদের মাঠেই । '----- ' খুব টাফ টিম । তাছাড়া ওদের মতো উইকেট বানাবে । এই ক'দিনের মধ্যে অন্তত চারদিন সলিড প্র্যাকটিস চাই । এই গেমটা খুব ভাইটাল । এটা জিতে রাখতে পারলে ... অনেকটা অ্যডভান্টৈজ ... ' ইরাবান সন্ময়ের কথাটা সমর্থন করল , ' একদম ঠিক কথা । ওদের ব্যাটিংয়ে ডেপথ আছে । তিনটে ভাল স্পিনারও আছে । ওরা যে স্পিনিং ট্র্যাক বানাবে এটা শিওর .... আর একটা কথা বলে রাখছি , দীপেনদাকে আগেও বলেছি.... আমি কিন্তু উইকে দুদিনের বেশি প্র্যাকটিসে আসতে পারব না ... ...
রাত নটা নাগাদ সন্ময়ের কাছে দীপেন বাবুর একটা ফোন এল । ---- ' হ্যা... বলুন স্যার .... ' ----- ' হ্যা ... সন্ময় একটু ডিসটার্ব করছি ... কাল নেট পড়ছে তো ? '----' হ্যা পড়বার তো কথা আছে ... কেন স্যার ? '---- ' কাল একজন যাবে একটা নাগাদ । তোমার সঙ্গে দেখা করতে বলেছি ... '---- ' কোনও প্লেয়ার ? ' ---- ' হ্যা ... ইরাবান মুখার্জি ... '---- ' ইরাবান মুখার্জি ... মানে বেনিয়াটোলা অ্যথলেটিক্স -এর ওই ... '----- ' হ্যা হ্যা ... ওই । ওর মতো ব্যাটসম্যান এই লেভেলে পাওয়া মুশকিল। অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছি ... ওই চার নম্বরের ... ...
মিনতি এগারো দিন হাসপাতালে ছিল । তার মধ্যে পাঁচদিন স্পেশাল কেবিনে । বাইশ রকম টেস্ট হয়েছে । ব্রেনের সি টি স্ক্যানও বাদ যায়নি । সোডিয়াম পটাশিয়ামের মাত্রা ভীষণভাবে নেমে গেছে । মূত্রে ভালোরকম সংক্রমণ আছে। একটা কিডনি স্বাভাবিকের থেকে আয়তনে ছোট । এনলার্জড হার্টের সমস্যা আছে । হিমোগ্লোবিন বেশ কম । তবে কোন সমস্যাই প্রাণঘাতি নয় । মিনতি শতকরা নব্বই ভাগ সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এল । টোপাই আর লোকনাথ গিয়ে মিনতিকে বাড়ি নিয়ে এল দীপেনবাবুর গাড়িতে । হাসপাতালের মোট বিল হল চার লাখ একুশ হাজার টাকা । তাছাড়া দীপেন বাবুর নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতাল থেকেই এক মাসের ওষুধ কিনে ... ...
স্বপ্নেন্দু ঘোষ আর আকাশ কুন্ডু ইনিংস ওপেন করল । দুজনেরই গত বছরের পারফর্মেন্স মোটেই আশাপ্রদ নয় । অনেক মাজাঘষা করা হয়েছে এই সিজনের আগে । শিবাজীর বোলিং শক্তি তেমন কিছু নয় । টার্গেটও সামান্য । তবু কিছু বলা যায় না ক্রিকেট খেলায় । আকাশ আর স্বপ্নেন্দু স্বচ্ছন্দে স্ট্রাইক রোটেট করতে লাগল প্রথম ওভার থেকেই । দুটো বাউন্ডারি এল স্বপ্নেন্দুর ব্যাট থেকে পঞ্চম ওভারের দ্বিতীয় আর ষষ্ঠ বলে । পাঁচ ওভারে আঠাশ । নতুন ওভার শুরু করতে যাচ্ছে একজন মিডিয়াম পেসার । আকাশের স্ট্রাইক । আগের ওভারে তার পার্টনারকে দুটো চার মারতে দেখে তার মনে হল তারও কিছু করে দেখানো দরকার। প্রথম বল ... ...
পরের ব্যাটসম্যান সুমিত পাঁজা ব্যাট করতে নামছে । সুমিত ব্যাটিং অলরাউন্ডার । মাঝারি মানের অফস্পিনার । কিন্তু রীতিমতো ভাল ব্যাটসম্যান । ফুটওয়ার্ক খুব ভাল । বিতান কাঞ্জিলালের ওভারের পঞ্চম বল । সন্ময় টোপাইকে স্কোয়্যার লেগ থেকে সরিয়ে লেগ স্লিপে নিয়ে এল । লেগ অ্যন্ড মিডলে পুরো লেংথের ইনসুইং। একটু জড়সড় ভঙ্গীতে হাফকক মতো খেলল সুমিত । ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে উইকেটকিপারের পাশ দিয়ে বল বেরিয়ে গেল বাউন্ডারিতে তড়িৎগতিতে , লেগস্লিপ থেকে টোপাই নড়বার আগেই । শেষ বল লেংথে ছোট । অফস্টাম্পের বাইরে । সুমিত ব্যাকফুটে গেল । নিখুঁত পাঞ্চ । কভার আর এক্স্ট্রাকভারের মাঝখান দিয়ে চার । তিন উইকেটে তেইশ । ক্যাপ্টেন শৌভিক ... ...
সকাল সাতটা নাগাদ ঘুম ভাঙল টোপাইয়ের । দেখল মিনতি আগেই উঠে বসে আছে । বাবাও উঠে পড়েছে । বাইরে গিয়ে দাঁত ব্রাশ করছে । রুকু আর ভাই সৌমিক এখনও শুয়ে আছে । টোপাই তাড়াতাড়ি মায়ের পাশে গিয়ে বসল । ----- ' এখন শরীরটা কেমন লাগছে মা ? 'কপালে হাত দিয়ে দেখে জ্বর আছে কিনা । ----- ' এখন ঠিক আছি ... জ্বরটা নেমেছে মনে হচ্ছে ... '----- ' নামলেই ভাল । নাহলে অজিতাভ পালের কাছে নিয়ে যাব সন্ধেবেলা ।'লোকনাথ গামছা দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ঘরে ঢুকল ।----- ' হ্যা ... আবার জ্বর এলে ডাক্তার দেখিয়ে নেওয়া উচিৎ ... চারদিকে যা সব হচ্ছে ... ... ...