কলতান পায়ে পায়ে ডোবাটার দিকে এগিয়ে গেল। বডি পড়ে থাকার জায়গাটা ঘেরা রয়েছে ইঁট দিয়ে । স্পটের পনের মিটার দূরে পৌঁছে কলতানের অ্যড্রিনালিন ক্ষরণ বেড়ে গেল । বৃষ্টি ভেজা নরম মাটিতে স্পষ্ট জুতোর ছাপ । তার মানে কাল রাতে এসেছিল ..... সে এসেছিল। সনাতন অপরাধী মানস ওকে টেনে এনেছিল ঘটনার জায়গায় । কলতান নতুন কেনা জুতোটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জরিপ করতে লাগল উজ্জ্বল চোখে । ডলফিন স্নিকার.... পায়ের মাপ আট নম্বর ... ...
রেলব্রীজের নীচে সারি সারি ঝোপড়া । দুধারে ফাঁকা জমি । মালিকানার ঠিক নেই । রাতের বেলায় শুনশান , নীরব আঁধার । জমির দখল নিয়ে দুটো দলে মারামারি, বোমাবাজি চলে যখন তখন । বিশেষ করে রাতের বেলায় । গুলিও চলে মাঝেমাঝেই । এসব নিয়েই ঘর করে ঝোপড়ার লোকগুলো । এসব গা সওয়া হয়ে গেছে ওদের । এসব অনেক বছর আগের কথা । সুনন্দ তখন ছোট ছেলে । একদিন গুলি খেয়ে এক দলের একজন মারা গেল। পুলিশ এসে ঝোপড়ার সব পুরুষদের ঝেঁটিয়ে তুলে নিয়ে গেল পরদিন সকালবেলায় এসে । মেয়েদের এবং বাচ্চাগুলোকে বাদ দিয়ে । কল্পনা, মিনতি, শাকিলারা কাঁদতে লাগল । বলতে লাগল, ... ...
রাত্রে বাড়ি ফিরে কলতান অনেকক্ষণ বিশ্রাম নিল । একটানা অনেকক্ষণ চিৎ হয়ে চোখ বুজে শুয়ে রইল মাথা সম্পূর্ণ খালি করে । চিন্তাভাবনাগুলো মাথা থেকে উড়িয়ে দিয়ে । এ পদ্ধতিটা কলতান অনেক বছর ধরে অনুসরণ করছে । ফাঁকা মস্তিষ্কে নতুন নতুন তাজা চিন্তাভাবনার অঙ্কুরোদগম হয় । সমস্যা সমাধানের কোন নতুন রাস্তা দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।এ একরকম ধ্যান পদ্ধতি বলা যায় ... ...
উমা আর নীলেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কলতানের মনে হল ওরা কোন কারণে খুব আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছে । ওদের চোখমুখ দেখে তাই মনে হচ্ছে । সেটা অবশ্য খুব অস্বাভাবিক কিছু নয় । আবাসনের চৌহদ্দির মধ্যে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সাধারণতঃ এইসব প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে টানাহ্যাচড়া চলে । ফলে কোন কিছু ঘটলে ভয়ে সিঁটিয়ে থাকে এরা। কলতানের মনে হল ওরা কমপ্লেক্সের মধ্যেই কোথাও থাকে ... ...
সকাল আটটা নাগাদ টয়লেট থেকে বেরিয়ে একেবারে তৈরি হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে বসল। রাধাদি দারুন ফ্রেঞ্চটোস্ট বানিয়েছে । সঙ্গে গরম কফি । খেতে খেতে আবেশে চোখ বুজে আসছিল কলতানের । কুলচা কাল বাড়ি চলে গেছে। যাবার সময়ে বলে গেল, ' কেসে তেমন টুইস্ট এলে খবর দিও কিন্তু বস ..... এখন আসছি .... বা..য় ... ' । বৈশাখী মজুমদারের মোবাইল নম্বরটা সাইবার সেলের ... ...
চব্বিশ তারিখে রাত দশটা নাগাদ বৈশাখীর মোবাইলে একটা কল এল। মোবাইল তুলে বৈশাখী দেখল --- কলতান গুপ্তর নাম ।------ ' হ্যা .... বলুন মিস্টার গুপ্ত ..... আমি এক্ষুণি আপনাকে ফোন করতে যাচ্ছিলাম । ভালই হল .... আমরা তাহলে কবে ..... '------ ' কাল সকাল দশটা থেকে বারোটার মধ্যে আমার বাড়িতে আসতে পারেন । যদি সম্ভব হয় দুজনেই একসঙ্গে আসবেন । '------ ' হ্যা ..... আমি আমার বন্ধুর সঙ্গে কথা বলে দেখি । ওর প্রবলেমটাই বেশি গ্রিম । ... ...
সুনন্দ মলের ভিতর ঘুরে বেড়াচ্ছিল একা। সে আগাগোড়াই একা। তার মতো লোকের কোন সঙ্গীসাথী থাকা মুশ্কিল । ক্লাস টেন পর্যন্ত পড়েছিল। তারপরে আর টানতে পারেনি । মা এবং বাবা কেউই আর নেই। তারা অনেক চেষ্টা করেছিলেন ছেলেকে ঠিকমতো মানুষ করার । হল না । আত্মীয়স্বজন কে কোথায় আছে সুনন্দ জানে না । জানবার কোন আগ্রহও নেই । বত্রিশ বছর বয়স হয়ে গেল । একা একাই থাকে। ... ...
নীলেশ একছুটে ঘরে ফিরে এল। দেখল তার মা কি একটা সব্জী রান্না করছে। তার আগে নিশ্চয়ই চাপাটি বানানো হয়ে গেছে। সব্জী পাকানো হয়ে গেলে মাম্মি তাকে খেতে দেবে। জোর ভুখ লেগেছে। এই সময়টা নীলেশের খুব ভুখ লাগে । সেই রাত্তিরে খেয়েছে । ভুখ লাগলেও নীলেশ কিছু বলে না। বেলা সাড়ে দশটা বাজে। পাপা সকাল নটার মধ্যে কাজে বেরিয়ে যায়। এখন পাপা নেই। ... ...
ঈশানলাল একটা সিগারেট ধরাল। মুখ দিয়ে বকবক করে মদের গন্ধ আসছে। সারাদিন হাড়ভাঙ্গা খাটুনি গেছে। ঠিকাদার তো আর বসিয়ে খাওয়াবে না। ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসছে প্রকাশের। কিন্তু মালিককে তো খুশ রাখতেই হবে। কাজ চলে গেলে নতুন কাজ পাওয়া মুশকিল হয়ে যাবে। ... ...
প্রণবেশ ওপরে উঠে কিচেনে ব্যাগ নামাবার আগেই সোলাঙ্কি তড়িঘড়ি জিজ্ঞাসা করল, ' এত দেরি হল যে ! ' প্রণবেশ থলে নামিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে বলল, ' ওই ..... পাশের ঘরের ভদ্রলোক .... সপ্তাখানেক হল এসেছে এখানে ..... ' ------ ' তো ... কি হল ? ' ------ ' না কিছু না ... আলাপ করছিল আর কি........ অমায়িক লোক ... ও : কি গরম .... ' ... ...