এ অধ্যায়ে ফের শুরু হল উন্যানয়েম্বের জীবনের বর্ণনা ও মিরাম্বোর সঙ্গে আর এক প্রস্থ যুদ্ধ। ... ...
সকালে উঠে ব্রাশ্ করে কচৌরি গলিতে কচুরি খেতে যাওয়ার সময় মনটা লুচি-লুচি হয়ে থাকে। আলতো করে ফুলে ওঠা লুচি। কিন্তু আঙুল দিয়ে টোকা মেরে ফুটো করে গরম বাষ্প বের করে দিলে লুচির যেমন অবস্থা হয়, হঠাৎ মনেরও তাই। কিছুদূর যেতেই তিনজনের সঙ্গে দেখা। ম্যাটাডোরে পাশাপাশি শুয়ে আছেন ওঁরা। পা থেকে মাথা পর্যন্ত কমলা-হলুদ কাপড়ে মোড়া। জ্বলছে ধুপ। ইতস্তত গাঁদার পাপড়ি। সবাই এক আঙুলে প্রণাম সারছে। পথচারী কেউই খুব একটা বিচলিত নয়। তিনজনেরই গন্তব্য মণিকর্ণিকা। মুখ হাঁ হয়ে যায়। এ কি সিস্টেম? আমাদের শ্মশান হয় গ্রামের প্রান্তে, শহরের উপকণ্ঠে। শহরের মধ্যিখানে শ্মশান? না হওয়ার হাজার বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা আছে, জানি। .... অত জানি না। তবে মণিকর্ণিকা কান ধরে শিখিয়ে দেয় - আজ যারা জিলিপি খেতে খেতে প্রণাম ঠুকলে, কাল এই জিলিপি প্রণাম যে তাদেরই প্রাপ্য হবে না - এই গ্যারান্টি খোদ মহাদেবও দিতে পারবেন না। ... ...
আপেল পাই জিনিসটার সাথে যদি আগে পরিচিত না থাকেন, এবং আমস্টারডামে গিয়ে প্রথমবার ট্রাই করেন, তাহলে হয়তো আপনার মনে এটা হালকা ভাবে ভেসে উঠতে পারে, যে – এটা কি আর এমন ব্যাপার, যার জন্য এত নামডাক? খুব বেশি কারিকুরি তো দেখতে পাচ্ছি না এই আপেল পাই-এ! এই ভাবনাটা মনের মধ্যে এলেই নিজেকে একটু ক্যালিব্রেট করে নেবেন – ভেবে নিন আপনাকে কেউ চ্যালেঞ্জ করছে প্যারামাউন্ট-এর সরবত, নকুড়ের সন্দেশ বা আমিনিয়ার বিরিয়ানি নিয়ে! এইসব খাদ্য এমন সুউচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে, যে পার্থিব তর্ক করে কিছু হবে না – যার হয়, তার হয় টাইপের কেস। ... ...
আমরাও বাবার শুনে শুনে খুব জোরে জোরে চেঁচিয়ে আলক্ষ্মী বিদায় করে দিতুম। তারপর বাবা তালপাতার পাখা আর বেতের কুলো নামিয়ে আনত। এগুলো ঠাকুরের জায়গায় তোলা থাকত। তিনজন মিলে সেগুলো নাড়িয়ে নাড়িয়ে ছড়া কেটে বাতাস দিয়ে দিয়ে রাস্তায় গিয়ে অলক্ষ্মীকে তাড়িয়ে দিতুম। কুলোর বাতাস আর পাখার বাতাস দিতে আমাদের দু’ বোনের এত উৎসাহ আর তিড়িং বিড়িং লাফালাফি দেখে বাবা হা হা করে হাসত। বাবা খুব শান্ত, চুপচাপ মানুষ ছিল। কিন্তু ঐ লক্ষ্মীপুজোর দিন বাবা যেন আমাদের সমবয়সী ছেলেমানুষ হয়ে যেত। এখন বুঝি, ঐ সব রীতি বাবার ছোটবেলার স্মৃতিতে মিশে ছিল। আমাদের সঙ্গে নিয়ে বাবা নিজের ছোটবেলায় ফিরে যেত। ... ...
এ অধ্যায়ে স্ট্যানলে ফের শুরু করলেন উন্যানয়েম্বের জীবনের বর্ণনা ও লিভিংস্টোনের খবরাখবর। ... ...
বড়জ্যাঠাইমা খুব ভালো গুড়-আমের মোরব্বা করতে পারত আর সেজজ্যাঠাইমার মা দারুণ চিনি দিয়ে আমের মোরব্বা করতে পারতেন। মোরব্বার ক্ষেত্রে কাঁচা আমের নির্বাচন যদি ঠিক না হয়, তবে ব্যর্থ হতে হবে। আমের আঁটি হয়নি – এতটা কচি আম যেমন চলবে না, তেমন আঁটি শক্ত হয়ে গেছে – এমন আমও নিলে হবে না। দুইয়ের মাঝামাঝি দরকার, মানে নরম আঁটি যুক্ত আম চাই। এবারে আঁটির কষি বাদ দিয়ে আমগুলোকে লম্বায় চারফালি বা ছয়ফালি করতে হবে। কয়ফালি কাটা হবে, সেটা আমের আকারের ওপর নির্ভর করবে। এবারে বড়জ্যাঠাইমা আমগুলো নুনে জরিয়ে রোদে শুকিয়ে নিত। এবারে কড়াতে পরিমাণমত ঘি দিয়ে ঐ শুকনো আমগুলো ভাজত। ভাজা হয়ে গেলে গাঢ় চিনি বা গুড়ের রসে আমগুলো ফুটবে। কারোর ইচ্ছে হলে ঐ পাকে আদার রস মেশানো যায়। মোরব্বা তৈরি হলে আঁচ থেকে নামিয়ে এলাচ গুঁড়ো মেশাতে হবে। ... ...
প্রচুর প্রচুর রেস্টুরান্ট পাবেন লিসবনে, যারা এই ফাদু মিউজিকের সাথে ডিনার অফার করে। তবে কিনা, সব ট্যুরিস্টিক জায়গার মতই, লিসবনেও ফাদু মিউজিক নিয়ে ব্যবসা চালু হয়ে গেছে পুরোদস্তুর। খুব বেশি ট্যুরিস্টের ভিড় হলে যা হয় – অনেক স্ক্যাম টাইপের আছে। মানে ফাদু মিউজিকের নামে আলতু ফালতু গান গেয়ে এবং একদম ফালতু খাবার দিয়ে প্রচুর চার্জ করবে। .... আমার মতে, ভালো জায়গাতে টার্গেট করাই ভালো – খরচ হবে ঠিক আছে, কিন্তু অথেন্টিক জিনিস পাবেন, ঠকার চান্স কম। আর সস্তায় বাজিমাত করতে গেলে সেই তেমন অভিজ্ঞতা হবে, যা আমার একবার হয়েছিল অন্য পাবলিকের অ্যারেঞ্জ করা ডিনার উইথ বেলি ড্যান্সিং-এ গিয়ে। পাশের ছেলে সেই নাচ দেখে আমাকে জিজ্ঞেস করে, “হ্যাঁরে, বেলি ড্যান্সিং-এ কি বেলি নড়বে?” আমি বললাম, “তেমনই তো কথা!”। সে ছেলে হতাশ হয়ে বলল, “অনেকক্ষণ তো নাচ হয়ে গেল, কিন্তু বেলি তো দূরের কথা, শরীরের কোন অঙ্গ নড়ছে সেটাই বুঝতে পারলাম না!” ... ...
এ অধ্যায়ে স্ট্যানলে বর্ণনা করছেন এক আফ্রিকান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধ যুদ্ধের কথা। ... ...
বড়ে কোঠির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সেই শুভ দিন এল ১৮২৯ সালের ২৯শে আগস্ট। সেদিন কেল্লার ভেতরে বহু ইংরেজ আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। নবাব হুমায়ুন জা স্বয়ং সিঁড়ি দিয়ে নীচে নেমে, একটি সোনার ইট গেঁথে, প্রাসাদের ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, যে নবাব নাজিম নিজে প্রাসাদের ভিতের ভিতরে নামলেও, সেখান থেকে উঠতে পারেননি – কারণ ভিত্তি প্রস্থর স্থাপন করে নবাব নাকি সেখানেই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলেন। মাটির নীচে, অত গভীরে হয়তো অক্সিজেন কম ছিল। যাই হোক, অজ্ঞান অবস্থায় তাঁর ভৃত্যরা উপরে তুলে নিয়ে এসে শুশ্রূষা করতেই নবাবের জ্ঞান ফিরে আসে। এই ঘটনাটি সে সময়ে বেশ শোরগোল ফেলেছিল। ... ...
এ অধ্যায়ে স্ট্যানলে বর্ণনা করছেন এক আফ্রিকান গোষ্ঠীর বিরুদ্ধ যুদ্ধের প্রস্তুতির কথা। ... ...
মা রকমারি সরবৎ বানাতে পারত। দেশি লেমোনেড – লেবু চিনির সরবৎ তো ছিলই, এছাড়া কাঁচা আমপোড়া সরবৎ, পাকা আমের ভাজা মশলা দেওয়া সরবৎ, রোজ সিরাপ মিশিয়ে তরমুজের সরবৎ, মিষ্টি দইয়ের ঘোল, টক দই আর পুদিনার সরবৎ - এইসব। হাতিবাগানে সিনেমা দেখতে গেলে, বাবা একটা দোকানে গুঁড়ো বরফ দেওয়া আম আর দইয়ের সরবৎ খাওয়াত। আর ধর্মতলায় গেলে প্যারামাউন্টের সরবতের ভাণ্ডার তো ছিলই। সর্দি-কাশি হলে মা মিছরি, গোলমরিচ, তেজপাতা আর আদা ফুটিয়ে, গরম সরবৎ বানিয়ে, কাপে করে নিয়ে এসে বলত, খেয়ে নে। গলায় খুব আরাম হত। ... ...
আমরা যারা সেই ছুটিতে বাড়ি যেতে পারতাম না, তাদের জন্য গ্রেস হাউসে ক্রিসমাস-ইভে ডিনারের আয়োজন করা হত। আসলে আমরা একটা পরিবারের মতই ছিলাম – তাই আমাদের ওয়ার্ডেন ক্রিস এবং অফিস-কর্মী অ্যালেন-ক্যাথি তাদের পরিবার নিয়ে আমাদের সাথেই ওইদিন ডিনার করত, ক্রিসমাস ট্র্যাডিশনাল ডিনার। ডিনার করে রাতের দিকে আমি যোগ দিতাম জেন আর যোসেফের সাথে, মধ্যরাতের চার্চ সার্ভিসে। রাত বারোটায় চার্চে ওই দিন এক স্পেশাল প্রার্থনার আয়োজন করা হত – আমরা বাড়ি থেকে হেঁটে যেতাম হারবোর্ন চার্চে। সেই রাতের প্রার্থনা আমাকে বারে বারে মনে করিয়ে দিয়েছে মানুষের ধর্ম নয়, নিজেদের মধ্যে ভালোবাসাটাই বড় ব্যাপার – আর সমস্ত ধর্মের মূল কথা তাই। একই ভাবে আমার প্রিয় বন্ধু আহসানের সাথে রমজানের মাসের সময় ইফতার করতে যেতাম স্টুডেন্ট গিল্ডে – সেও সেই ভালোবাসার গল্প, ধর্মের ভেদাভেদের উর্দ্ধে। তবে সেই সব নিয়ে অন্য একদিন লিখব। ... ...
আমাদের গ্রামের বাড়ি বসিরহাটের আড়বালিয়ায়। সেখানে একরকম ছোটো দানা লালচে কমলা রঙের পাতলা পাতলা ভাঙা মুসুর ডাল পাওয়া যেত। দোকানে বলত, মারুতি-ভাঙা ডাল। ঐ ডালে মা ফোড়ন না দিয়ে, শুধু ডালসেদ্ধ করত। কাঁচা ডালে জল দিয়ে, তাতে কাঁচা সর্ষের তেল, নুন, মিষ্টি, কাঁচা লঙ্কা দিয়ে বসিয়ে দিত। সে ডালে কি যে ছিল! ঐ সেদ্ধ ডাল যেন অমৃত লাগত খেতে। আমার বিয়ের পরেও কিছু বছর আড়বেলেতে ঐ ডাল পেয়েছি। আমার কর্তাও ঐ ডালসেদ্ধর প্রেমে মজেছিলেন। কিন্তু এখন আর পাই না। আর মাঝে মাঝে মা রাতে সাদা কাপড়ে ডাল বেঁধে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়িতে ফেলে দিত। তারপর সেই টাইট ডালের বল কাঁচা সর্ষের তেল আর নুন দিয়ে মাখা হত। বেশ খেতে লাগত। ... ...
উন্যানয়েম্বে ১৯ শতকে একটি রাজ্য ছিল। এখানে বাস করতেন মূলত নিয়ামওয়েজি গোষ্ঠীর মানুষেরা। গত দু'অধ্যায় থেকেই স্ট্যানলে বর্ণনা করছেন উন্যানয়েম্বে রাজ্যের মানুষদের কথা। ... ...
ইসকান্দর কাবাব-এর নামকরণ হয় – এটা যিনি আবিষ্কার করেন, সেই শেফ ইসকান্দর এফেন্দি এর নামে – যিনি উনবিংশ শতাব্দীর শেষের দিকে অটোমান সাম্রাজ্যের বুরশা বলে একটি জায়গায় বসবাস করতেন। এই ডিশটি বানানো হয় ডোনার কাবাপ এবং গ্রিলড ল্যাম্বের টুকরো দিয়ে, যা বেছানো থাকবে গরম ট্যামেটো সসের মধ্যে, সাথে পিটা ব্রেড – এবং এই সবের উপর ছড়ানো থাকবে দই এবং কোনো কোনো সময় ভেড়ার দুধের থেকে বানানো বাটার। ... ...
একটা পিঁড়িতে উবু হয়ে বসে মা রান্না করত। রান্না হয়ে গেলে ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে উনুন নিকোনো হত আর উনুন থেকে একটা সুন্দর সোঁদা গন্ধ উঠত, ঠিক বৃষ্টি পড়লে যেমন হয়, তেমন। আমার বোন ঐ গন্ধের লোভে উনুন চাটত। অনেক বারণ, বকাঝকা করলেও তাকে থামানো যেত না। উনুনে সোঁদা গন্ধ উঠলেই, পিলপিল করে দৌড়ে ছোট্ট জিভ বার করে উনুন চেটে দিত। ভাঁড়ে রসগোল্লা বা দই এলেও সেই সব ভাঁড় কামড়াত। এত দুরন্ত, সামলানো যেত না – বাবা ওর নাম দিয়েছিল বিলবিলে বাহাদুর। সকলে যখন জিজ্ঞেস করত, বাবা কি নাম দিয়েছে? – গরবিনী উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করত – বিব্বিলে ভা-দুর। আমি বইপত্র নিয়ে থাকতাম, রান্নাঘরের দিকে অত নজর ছিল না, কিন্তু বোনের ছিল। দুপুরবেলা যখন কেউ দেখত না, ও-ই গিয়ে শিক দিয়ে, বড়দের মত উনুন খোঁচাত। ... ...
কাছে এগিয়ে আমার কেমন যেন সন্দেহ হল – বিশাল কিছু আলো জ্বলছিল না বলে ঠিক ভালোভাবে দেখা যাচ্ছিল না, কিন্তু তবুও, মেক্সিকান এদের তো মনে হচ্ছে না! একদম কাছে গিয়ে খাবারের লিষ্টে চোখ বোলাচ্ছি, মনে হল যে বাংলা ভাষা শুনলাম! আরো ভালো করে বলতে গেলে, আমাদের কলকাতার উচ্চারণে বাংলা নয়, বাংলাদেশের বাংলা। লন্ডনে বাংলাদেশী বাংলা শুনতে পাওয়া কোনো অবাস্তব ব্যাপার নয়, কিন্তু টুপি পরে মেক্সিকান স্টলে খাবার বিক্রি করছে – এমনটাও চট করে দেখা যায় না! আমি জিজ্ঞেস করলাম, “ভাই, বাঙালি নাকি”? একগাল হেসে উত্তর এল, “জি দাদা, আপনে কোথাকার?” ... ...
উন্যানয়েম্বে ১৯ শতকে একটি রাজ্য ছিল। এখানে বাস করতেন মূলত নিয়ামওয়েজি গোষ্ঠীর মানুষেরা। গত অধ্যায় থেকেই স্ট্যানলে বর্ণনা করছেন উন্যানয়েম্বে রাজ্যের মানুষদের কথা। ... ...
উন্যানয়েম্বে ১৯ শতকে একটি রাজ্য ছিল। এখানে বাস করতেন মূলত নিয়ামওয়েজি গোষ্ঠীর মানুষেরা। এই অঞ্চলেরই বর্ণনা করছেন হেনরি মর্টান স্ট্যানলে। ... ...
যদি আপনি খাবার এবং বাজার ভালোবাসেন, তাহলে এখানে ঘুরতে ঘুরতে আপনি আচ্ছন্ন হয়ে যাবেন। অনেক দোকানের সামনে দেখবেন, চাখার জন্য স্যাম্পেল রাখা আছে – ইচ্ছেমত ট্রাই করে যেতে পারেন। খুব ছোট ছোট কিছু রেস্টুরান্ট আছে, যারা দুই-একটা টেবিল বা বসার টুল নিয়ে স্পেশালিটি কিছু খাবার বিক্রি করছে। এখানে খাবার পাওয়ার জন্য খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। ইচ্ছে হলে চট করে খেয়ে নিন – কিন্তু একটা ব্যাপার মনে রাখবেন – জাপানে খেতে খেতে হাঁটা-কে ব্যাড ম্যানারস্ হিসাবে ধরা হয়। ... ...