উন্যানয়েম্বে ১৯ শতকে একটি রাজ্য ছিল। এখানে বাস করতেন মূলত নিয়ামওয়েজি গোষ্ঠীর মানুষেরা। এই অঞ্চলেরই বর্ণনা করছেন হেনরি মর্টান স্ট্যানলে। ... ...
আজকের গল্প ভিয়েতনামের সেই লাঙ-কো টাউ এলাকার ফ্লোটিং রেস্টুরান্টে খেতে গিয়ে। বড়ই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জায়গা – ভৌগোলিক ভাবে দেখতে গেলে এই জায়গাটা হচ্ছে মধ্য-ভিয়েতনামের একদম পূর্বদিকে, লাপ-আন লাগুন এবং ভিয়েতনাম-সি এর মাঝখানে। এই গোটা এলাকাটাই সি-ফুড এর জন্য বিখ্যাত। আপনি ওই ফ্লোটিং রেস্টুরান্টে খেতে গিয়ে অবশ্যই যা ইচ্ছে খেতে পারেন সি-ফুড ছাড়াও – কিন্তু সি-ফুড না খেলে জার্নি অসম্পূর্ণ থাকবে বলেই আমার বিশ্বাস। কত সিম্পল ভাবে রান্না করে সি-ফুডে স্বর্গীয় স্বাদ আনা যায়, তা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া না এলে ঠিক বোঝা যায় না। এখানে বেশ কিছু ফ্লোটিং রেস্টুরান্ট আছে – তবে লাঙ-কো কিন্তু বিখ্যাত তার সেই বিস্তৃত সাদা বালির বিচের জন্যও। তা দেখতে অপরূপ – গোটা জায়গাটা আরো সুন্দর হয়ে উঠেছে ছোট ছোট পাহাড়ের মতো থাকায়। এখানেই কিছু দূরে আছে বাখ-মা্ ন্যাশনাল পার্ক – পাহাড়ের আশেপাশে কিছু উঁচুতে উঠলে আপনি পেয়ে যাবেন প্যানোরামিক ভিউ! দেখে চক্ষু জুড়িয়ে নিতে পারেন খাওয়া দাওয়ার পরে – ... ...
তরুণ সাগারারা সুদর্শন তরুণ আফ্রিকান বর্বরের সৌন্দর্যের আদর্শের উদাহরণ। তার মুখের মরা কালো রং হালকা গৈরিক ছোঁয়ায় বাদামীবর্ণের, তার কপালের উপর চার-পাঁচটি উজ্জ্বল তামার মুদ্রার সজ্জা, প্রতিটি কানে কানের লতিগুলোকে টেনে লম্বা করে একটি করে ছোট্ট লাউয়ের গোড়া ঝোলানো, মাথায় সহস্রাধিক তেলচকচকে কেশচূর্ণ পিতল এবং তামার ছোট ছোট টুকরো দিয়ে সাজানো, মাথাটি সুচারুভাবে পিছনে হেলান, চওড়া বুকটি চিতিয়ে রাখা আর সেই সঙ্গে তার পেশীবহুল বাহু এবং সমানুপাতে পা— সৌন্দর্যের প্রতিনিধিই বটে। ... ...
মালয়েশিয়ার সমুদ্র তীরবর্তী সব শহরেরই সমুদ্রের ধারে পেয়ে যাবেন আপনি স্ট্রিট-ফুড বা হকার-ফুড, যা সত্যিকারের প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে সন্ধ্যে নামার পর। প্রায় সারি দিয়ে বিচের ধার ঘেঁসে আপনি অসংখ্য ফুড-স্টল পেয়ে যাবেন। অনেকে লাইভ বারবিকিউ করছে দেখতে পাবেন। খুবই সিম্পল ব্যাপার – সাধারণ টেবিল একদম সার দিয়ে বসানো, তাতে প্লাস্টিকের টেবিল ক্লথ দেওয়া। যাতে তাড়াতাড়ি টেবিলের টার্ন-ওভার হয় – আপনার খাওয়া শেষ হল, টেবিল ক্লথ পাল্টাবার কোন চাপ নেই। কেউ এসে প্লেট উঠিয়ে নিয়ে ঝটপট করে মুছে দিল টেবিল – আপনি বসে পড়লেন। প্লেট-ও খুব সিম্পল। আপনাকে একটা প্লেট দিয়ে যাবে – বেশির ভাগ সময়েই এগুলো প্লাস্টিকের – আর সাথে দেবে ন্যাপকিনে জড়ানো একটা চামচ এবং কাঁটাচামচ। ... ...
ছোটে নবাব সাহেবের সাথে বিশাল আকৃতির জরাজীর্ণ বালাখানার সামনে এসে দাঁড়ালাম। প্রাসাদের ভাঙা সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় ওঠার সময় নবাব সাহেব জানালেন, বর্তমানে এই বালাখানাই নাকি কেল্লা নিজামতের সব থেকে পুরনো প্রাসাদ। এই প্রাসাদ নিয়ে একটি গল্পও শোনালেন, বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকাজ চলাকালীন, কোনো এক জরুরি কাজে নবাব হুমায়ুন জা-কে নাকি ইংল্যান্ড যেতে হয়েছিল। ইংল্যান্ডে তিনি উঠেছিলেন মহারাণী ভিক্টোরিয়ার বাকিংহাম প্যালেসে। অল্পবয়সী নবাব প্যালেস দেখে মুগ্ধ হয়ে যান, এবং মুর্শিদাবাদে বাকিংহাম প্যালেসের মত একটি প্রাসাদ নির্মাণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হুমায়ুন জা তাঁর সেই ইচ্ছের কথা একদিন সময় সুযোগ বুঝে রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছেও প্রকাশ করেন, এবং সেই মর্মে মহারাণীর কাছ থেকে একটি লিখিত অনুমতিও চেয়ে নিয়ে আসেন। মুর্শিদাবাদে ফিরেই তিনি বালাখানা প্রাসাদের নির্মাণকার্য বন্ধ করে, বাকিংহাম প্যালেসের আদলে একটি নতুন প্রাসাদ নির্মাণ করার আদেশ দেন। সেদিনের সেই প্রাসাদটিই নাকি আজকের হাজারদুয়ারি। ... ...
কনফারেন্সে এমন জবরদস্ত লাঞ্চ হলে, তার নেগেটিভ দিক হচ্ছে, লাঞ্চের পরের টকগুলোতে খুব কম লোক হাজির হবে। যারা হাজির হবে, তারাও অনেকে ঢুলবে! আমাকে দু’একবার কোন কোন সেশনের চেয়ারম্যান হতে হয়েছিল, তাই স্টেজ থেকে একদম সামনা-সামনি দেখি অডিয়েন্স কেমন ঢুলছে! আর যদি কোনো সরকারি কোম্পানির বড় কর্তা টক দেয়, তো রুম ভরে যাবে – সেই ভরা রুমে লোকে ঢেকুর তুলছে, কেউ নিঃশব্দে বাতকর্ম করে দিল ধরুন – মাটন রোগান জুসের ঢেকুর বা পাদের গন্ধ কি আর রুম ফ্রেশনার দিয়ে আটকানো যায়! ... ...
বর্বর জাতিরা যুগে যুগে যে ভাগ্যের ওঠাপড়া দেখে এসেছে, এই সেগুহহা উপজাতির বিশিষ্ট ও ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠাটা আমাদের সামনে সেই ভাগ্য পরিবর্তনের একটা উদাহরণ তুলে ধরে। তিরিশ বছর আগেও সেগুহহারা দেশের একটি সংকীর্ণ অঞ্চলে বসবাস করত। জায়গাটা সাম্বারাদের ও ডোদের দেশের মাঝখানে। উসাগারা পাহাড়ের পূর্বদিকে ডোরা ছিল সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি, কিন্তু দাস-ব্যবসায়ীরা এদের জীবনে ধ্বংস ডেকে এনেছে, এদের সংগঠিত দস্যুদের হাতে তুলে দিয়েছে। দস্যুদের মধ্যে রয়েছে বিশ্বাসঘাতক মৃমারা, পালিয়ে যাওয়া দাসেরা, জাঞ্জিবারের আইনের চোখে অপরাধীরা, আসামীরা ও অপহরণকারীরা- উসাগারা থেকে সমুদ্র অবধি এলাকার জঙ্গলগুলো এই ধরণের লোকে থিকথিক করত। ... ...
একটা সময় ছিল যখন এই নবাবি কেল্লার জৌলুশ ছিল দেখার মত। কেল্লার প্রধান ফটক থাকত উচ্চ নিরাপত্তায় মোড়া। সেই নিরাপত্তা ভেদ করে কোনও মাছিরও কেল্লার ভেতরে প্রবেশের অধিকার ছিল না। কেল্লার সেই প্রধান ফটকের পাশেই ছিল নবাবি সেপাইদের বসবাস করার ঘর। ভাগ্যের পরিহাসে আজ সেই ঘরে বসবাস করেন মুর্শিদাবাদের বর্তমান নবাব বাহাদুর সৈয়দ মহাম্মদ আব্বাস আলি মির্জা ও তার পরিবার পরিজন। নবাবি আমলে কেল্লায় প্রধান ফটক ‘দক্ষিণ দরজার’ মাথায় থাকত নহবৎখানা। সেখানে নবাবের শাহি বাদকরা সকাল-সন্ধ্যা সানাই বাজাত। সানাই-এর সেই সুর কেল্লা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ত দূর-দূরান্তে। আজ সেই দক্ষিণ দরজা অক্ষুণ্ণ থাকলেও, নেই সেই বাদকেরা। শোনা যায় না সানাইয়ের মন মাতানো সেই সুর। ... ...
আমাদের পদযাত্রা এবং অভিজ্ঞতার দৈনন্দিন বিবরণীতে পথচলার সময় সে দেশের প্রকৃতি যেমন ভাবে আমাদের চোখে ধরা দিয়েছে তার একটা ছবি আঁকার চেষ্টা করেছি। ঘোর মাসিকার মরশুমে আমরা উপকূল এলাকা দিয়ে গিয়েছিলাম। বর্ষাকাল যত গড়ায়, আমরাও ঘাসের উপর বৃষ্টির প্রভাব লক্ষ্য করতে থাকি। মাসিকা ঋতু শুরুর সময়ে কদাচিৎ হাঁটুর উপরে ঘাস দেখা যেত; কিন্তু বর্ষার শেষের দিকে, তারা লকলকিয়ে পুরো বেড়ে উঠেছে। বর্ষাশেষের মাসখানেক পরে, ঘাসেরা যখন বেশ রোদে ভাজা ভাজা হয়ে যায়, তখন দেশীয়রা ঘাসে আগুন ধরিয়ে দেয়, আর এর পরের দিনগুলোতে সারা দেশে শুধু ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শব্দ শোনা যায়, কাল ধোঁয়ার ঘন আস্তরণে দেশ ঢেকে যায়, এমনকি ধোঁয়ার থেকে রং ধার করে আকাশও কাল হয়ে যায়। ... ...
আচ্ছা এটা মনে রাখবেন, যে হট পটের সাথে ওই ফন্ডু বলে যে জিনিসটা আছে – তার একটা বেসিক পার্থক্য আছে। হট পটে আপনি খাবার বানাবেন বা ফোটাবেন একটা জলীয় স্যুপে – আর ফন্ডুতে রান্নার তেল ব্যবহার করা হয়। হট পটের স্ট্যান্ডার্ড রান্নার উপাদানগুলি হল – খুব পাতলা করে কাটা মাংসের টুকরো, সবুজ পাতার সবজি, মাশরুম, নানা প্রকারের ন্যুডল্স্, কাটা আলু, টফু, নানাবিধ বিনস্, মাছ বা সি-ফুড। এই সব উপাদানই সরু সরু করে কাটা থাকে – তা না হলে ওই মৃদু আঁচে ফুটতে থাকা স্যুপে সিদ্ধ হয়ে খাওয়ার মত হতে রাত হয়ে যাবে! তা ছাড়া এক্সট্রা সস রাখা থাকে পাশে – আপনি নিজের ইচ্ছেমতন খাবার স্পাইসি বানিয়ে নিতে পারবেন সিদ্ধ হয়ে যাবার পর। ... ...
আমার পাশে যে বসে ছিল তাকে বললাম, “এ তো গামা গাছের ডগাগুলো কেটে দিয়ে গেছে মনে হচ্ছে! সাদা প্লেটে চিজ ছড়িয়ে দিলেই কি গরুর খাবার মানুষের হয়ে যায় নাকি!” পাশের জন বলল “হোয়াট ইজ গামা?” তাকে অনেক কষ্টে আমার বিখ্যাত ইংরাজিতে বোঝালাম, যে এর সাথে ভাস্কো-দা-গামা-র কোন সম্পর্ক নেই। বাড়ির গরুতে খাওয়ার জন্য আমরা জমিতে গামা (বাংলায় অনেক জায়গায় একে গমা বা গ্যামা বলা হয়) চাষ করতাম। এমনি সবুজ লকলকে ডাঁটির মত গাছ জমি থেকে কেটে এনে বাড়িতে খড় কাটার বঁটিতে ঘ্যাঁচ ঘ্যাঁচ করে কুচাও। আমাকে বলা হল এগুলোকে নাকি ‘অ্যাসপারাগস’ বলে! গামা গাছের ডাঁটির বিজ্ঞান সম্মত নাম যে অ্যাসপারাগস, সেটা কে আর জানত! ... ...
কল্পনার চোখে দেখতে পাচ্ছি যে সাদা মানুষেরা এখানকার লোকদের 'মুলুঙ্গু' বা আকাশের দেবতার ভাষা শেখাচ্ছে, তাদের কিভাবে ফসল বপন করতে হয় বা ফসল কাটতে হয় বা বাড়ি বানাতে হয় তা শেখাচ্ছে , শেখাচ্ছে কিভাবে আরও স্বচ্ছন্দে থাকা যায়— মোদ্দা কথা, তাদের সভ্য করে তুলছে। আর পুরোন কাদেতমারের লোকরা সেই দেখে খুশিতে হাত ঘষছে। তবে কিনা সফল হতে গেলে, একজন নাবিককে যেমন দড়িদড়া সামলানো, পাল গোটানো থেকে হাল ধরা অবধি নৌকা চালানোর সব গুণই রপ্ত করতে হয়, মিশনারিকেও তেমন নিজের সব কাজেই পটু হবে। নরম-সরম মেয়েলি মানুষ হলে চলবে না, জার্নাল-লিখিয়ে বা ঝগড়ুটে তার্কিকও চলবে না, রেশমী-পোশাক-প্রিয় পাদ্রী হলেও হবে না— প্রভুর বাগানের একজন উদ্যমী পুরোদস্তুর শ্রমিক হতে হবে তাঁকে – যেন ডেভিড লিভিংস্টোন বা রবার্ট মোফ্যাটের ছাঁচে গড়া। ... ...
ঠাকুমা আর মানিক কাকুর কথার মাঝেই আমি দেবদারু বাগানের নীচে এসে দাঁড়িয়েছি। হাতে গামছায় বাঁধা খাবার আর গায়ে চাদর জড়িয়ে সাদা কুয়াশার ভেতর ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে তাঁতিরা। সেই ছায়া থেকে আমি খুঁজে খুঁজে বের করি কলিম তাঁতি, মকবুল তাঁতি, পরেশ তাঁতি, নিবারণ তাঁতি, মান্নান ড্রাম মাস্টার সবাইকে। আজ অন্যদিনের মতো এগিয়ে গিয়ে আমি ওদের সাথে গল্প জুড়ি না। আমি পা বাড়াই গোলেনূর দাদির বাড়ির দিকে। সে বাড়ির উঠোনে এখনো নিঃস্তব্ধতা। শুধু গোলেনূর দাদির বড়ঘরের টিনের বেড়ায় ঝুলানো কবুতরের খোপ থেকে ভেসে আসছে ডানা ঝাপটানোর শব্দ। ... ...
আমাদের বাঙলার রাজা লক্ষণ সেনের (শুনেছি বখতিয়ার খিলজি যখন বাঙলা আক্রমণ করেন, তখন লক্ষণ সেন নাকি বসে ভাত খাচ্ছিলেন – আক্রমণের খবর শুনে হাত না আঁচিয়েই ঘোড়ায় চড়ে পিছনের দরজা দিয়ে হাওয়া!) মত এই খেমাই রাজাদেরও প্রধান এবং প্রিয় খাদ্য ছিল ভাত – সাথে মেকং এবং টোনলে-স্যাপ নদীর মাছ, গেঁড়ি-গুগলি-শামুক-ঝিনুক, একদম টাটকা ধরা। ট্রাডিশ্যানাল খেমাই ক্যুজিনের প্রধান ডিশগুলি ছিল – স্যুপ, স্যালাড, একটা মাছের কোর্স, একটা মাংসের ডিশ, শাকসবজি এবং ভাত। মুখে জল আনা নানা রকমের সস বানাতে ছিল এরা প্রসিদ্ধ – আর খাবারে নানাবিধ মশলা এবং সুগন্ধি ইনফিউজ করার চেষ্টা করত। আর একটা কথা, কাম্বোডিয়ার রান্না বান্নায় রসুন কিন্তু বেশ দিল খুলে ব্যবহার করা হয়। শেষ পাতের মিষ্টি বলতে তা ছিল ফলমূল এবং নারকেল থেকে বানানো। সব মিলিয়ে বেশ জমকালো ব্যাপার। ... ...
বাগামায়ো ও উসেগুহহার সিম্বামওয়েন্নির মধ্যে আমাদের অভিযান সর্বোচ্চ যে উচ্চতায় পৌঁছেছিল, সেটা হাজার ফুটের বেশি হবে না, আর কিঙ্গারু হেরার উত্তরে, দিলিমা শীর্ষ নামে যে পাহাড়গুলো পরিচিত, এখানে ওখানে তাদের একেকটা পাহাড়চূড়া বাদ দিলে, মিকেসেহের আশেপাশে ভূমি কিন্তু ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠেছে। টানা সমান্তরাল ঢেউ এর মত, পাহাড়ের শিরগুলো গভীর জঙ্গল বা মসৃণ ঘাসে ঢাকা— ঢালগুলো সুচারুভাবে পশ্চিমদিকে তরঙ্গের তলদেশের গভীরে নেমে যাচ্ছে, এর মধ্যে দিয়েই দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমে জল বয়ে গিয়ে উঙ্গেরেঙ্গেরিতে পড়ে। ... ...
ত্রয়োদশ শতকের প্রাচীন শহর কাওলের ধ্বংসাবশেষ। একেই সম্ভবত স্ট্যানলে দুর্গ বলছেন এমবুয়ামাজি থেকে প্রায় ষাট মাইল দক্ষিণে, মাফিয়া বা মনফিয়া দ্বীপের বিপরীতে রুফিজি নদীর সবচেয়ে উত্তরের মুখ: এর থেকে আরও এক ডিগ্রি দক্ষিণে গেলে পড়বে কিলওয়ার বিখ্যাত বন্দর, দাস ব্যবসায়ীদের বিখ্যাত আড়ত। মৃমা নামের এই ভূখণ্ডটি সভ্য বিশ্বের দৃষ্টিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আজকের দিনে যখন দাসেদের প্রশ্নটি বহু উত্তেজিত আলোচনার কেন্দ্রে, তখন আমাদের সকল মনোযোগ এখানেই প্রবলভাবে জড়ো হওয়ার দরকার। আমাদের কাছে এই অঞ্চলের গুরুত্ব তার বন্দরগুলির কারণে – মোম্বাসা, বুয়েনি, সাদানি, হুইন্ডে, বাগামোয়ো, কাওলে, কনডুচি, দার সালাম, এমবুয়ামাজি ও কিলওয়া – আফ্রিকার অভ্যন্তরে ধরে আনা, চুরি করে আনা বা কেনা দাসেদের তিন-চতুর্থাংশ এখান থেকেই বিদেশে পাঠানো হয়। এই কথাটা মনে রাখা উচিত। ... ...
আজকাল আমি পারতপক্ষে ব্যুফে (বা বাফে, যেমন বলবেন)–তে খাওয়া দাওয়া এড়িয়ে চলি। এর প্রধান কারণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারা। ভাবুন একবার, কেউ বলল - যাই খাও বা যতটা পরিমাণেই খাও না কেন, বিলের পরিমাণ একই! এই প্রলোভন জয় করা – আমি তো ক্ষুদ্র মনুষ্য, বড় বড় মহাপুরুষের মানসিক জোরে কুলায় না। বহু সচেতন পাবলিক দেখেছি, যারা, এমনিতে যাকে বলে পুষ্টি এবং ক্যালোরি, হিসেব করে খায় – কিন্তু ব্যুফে-তে গিয়ে অন্য মানুষ হয়ে ওঠে। আমারও প্রায় অনুরূপ অবস্থা, ভিতর থেকে একটা কম্পিটিটেটিভ মনোভাব চাড়া দিয়ে ওঠে। ও খাচ্ছে আর আমি পারব না! বা পয়সা যখন দিয়েছি, তখন খেয়ে শোধ তুলতে হবে – এই চক্করে পড়ে মাঝে মাঝে এত খেয়ে ফেলেছি যে শেষে টেবিল থেকে ওঠার অবস্থা থাকে না! ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’।এই প্রথম বাংলায়। এ অধ্যায়ে উন্যাময়েজি অঞ্চল, যেখানে বর্তমান টাবোরা শহর, তার কাছে রুবুগা নামের জনপদে পৌঁছনর কথা। তরজমা স্বাতী রায় ... ...
ছেলেটা অর্ডার নিতে এলে – পিৎজা এদের স্পেশালিটি কিনা জিজ্ঞেস করলে, হ্যাঁ বলল। আমার কি মনে হল - এও না সেই অন্য রেষ্টুরান্টের মত পিৎজার ইতিহাস ব্যাখ্যা করা শুরু করে! তাই সে-ই কিছু বলার আগেই আমি বললাম – আমি জানি পিৎজা বলে আধুনিক কালে আমরা যে জিনিসটিকে চিনি তার জন্ম হয় ১৮৮৯ সালে ইতালির নেপলস্-এ। একসময়ে নেপলস্-এর বাজারে যা পরিচিত ছিল ‘পিৎজা আলা মোজারেল্লা’ নামে, সেই পিৎজা খেয়েই রাণী মার্গারিটা কুপোকাত – বিশাল ভালোবেসে ফেলে ডিক্লেয়ার করে দিলেন, যে এটাই তাঁর সবথেকে প্রিয় পিৎজা। ব্যাস, সেই থেকে এই পিৎজার নাম হয়ে গেল ‘পিৎজা মার্গারিটা’ সেই ওয়েটার দেখি আমার কান্ড দেখে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে – ... ...
সভ্যতার বহু অর্জনই দারিদ্রের দান। পরিমিত সম্বলকে বাঁচিয়ে গুছিয়ে কালকের দিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মানুষ কালাতিপাত করেছে এযাবৎ ইতিহাস জুড়ে। আর তার মধ্যে দিয়েই বিকশিত হয়েছে তার সংস্কৃতির বিভিন্ন ধারা। মানুষের ইতিহাসের সেরকমই এক উপাদান পান্তাভাত। উপনিষদের ঋষি ব্রহ্মের অন্নরূপে আরাধনার মন্ত্র দর্শন করেছিলেন, সূর্যের আহ্নিক গতির পর্যায় অতিক্রম করে ব্রহ্মের সেই তেজ বিচ্ছুরিত হয়েছে হাঁড়িতে তুলে রাখা পান্তায়, তার আমানি জলে। আধুনিক বিশ্বের দরবারে পান্তাকে পেশ করে সেই ইতিহাসের এক ঝাঁকি দর্শন করিয়েছেন মাস্টার শেফ কিশোয়ার চৌধুরী। এই পর্বে খানিক অবগাহন করা গেল পান্তার পাতিলে। ... ...