ওয়ার্কশপে গেছি। সে আমার প্রথম আম্রিগাবাস। ওয়ার্কশপে বারোটা দেশের তেরোটা ছেলেপুলেদের প্রায় সব কটা ঘোর মালখোর। প্রায়টা জুড়লো, আমার জন্য। তখন আমি মদ টদ মোটে ছুঁতুমটুঁতুম না, মানে বিয়ার মুখে দিয়ে বি গ্রেড নিমের পাঁচন মনে হওয়া আর ওয়াইন খেয়ে মাথা ঘুরে যাবার পরে আর কিছু ছোঁবাটোবার ইচ্ছেটিচ্ছে হয়নি। তো, সে তোরা নিজেরা যা ইচ্ছে খাবি খা, কিন্তু না, আমা হেন ঘোর মদনাস্তিককে দীক্ষিত না করে তাদের আত্মার শান্তি, প্রাণের আরাম কিছুই হচ্ছেনা। বিশেষত আমার রুমমেট হার্মাদ কন্যা তো এই কনভার্টিকরণকে পুরো ধর্মপ্রচারের মতন সিরিয়াসলি নিয়ে নিল। কীসব ফলের ফ্লেভারে বিয়ার দিয়ে আমার ক্লাস শুরু হল। তা, তাতে সবে একটু একটু উন্নতি দেখাচ্ছি বলে টিচার যখন রায় দিচ্ছেন, তখনি সব ভেস্তে দিলেন এক প্রফ। ... ...
প্রায় দুই দশক আগেকার এক সোনারোদ পুজোআসছে শরতের সকাল। তখন আকাশের নীলিমা গভীরতর ছিল, শিউলি তাড়াতাড়ি ও বেশী ফুটত, আসন্ন পুজোর গন্ধে বড় আনন্দ ছিল, পুজোর ধুমধাম অনেক দীর্ঘস্থায়ী ছিল, দিল্লীর বাঙালী ক্লাবসমূহে প্রচুর মেম্বার ছিল, “নাটকটাটকে” আবালবৃদ্ধবনিতার প্রবল উৎসাহ ছিল, সর্বোপরি সকলের ওজন ও রক্তচিনি দুইই অনেক কম ছিল। যথারীতি প্রচুর গবেষণা, ঝগড়া, তিনটি রেজিগনেশন পেশকরণ ও সামান্য সাধাসাধির পর প্রত্যাহার নেওন ইত্যাদির পর "গান্ধারীর আবেদন" বিপুল ভোটে জয়ী হল। ধৃতরাষ্ট্র, দুর্যোধন ইত্যাদি কাষ্টিং হয়ে গেছে, ভানুমতীও রেডী, কেবল গান্ধারী তখনো ফাইনাল হয়নি। ... ...
নতুন জমি/ ভূমি সংস্কার আইন এজন্যেই গুরুত্বপূর্ণ কারণ প্রশাসনের লক্ষ্য সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত করা ও কম্পিউটারাইজ করা। এর জন্য যা দরকার জমি মালিকদের সঠিক জমির হিসেব দেওয়ার সহযোগিতা। জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ফলে প্রচুর জমির মালিকানা গোপন ও বেনামী, অন্যদিকে সরকারি অধিগ্রহণ হলে মালিকরা অবশ্যই চাইবেন সঠিক ক্ষতিপূরণ যার জন্য জমির হিসেব ঠিকঠাক থাকা প্রয়োজন। এই ভাবেই জমি সংশোধন ও অধিগ্রহণের মধ্যে এক সহজ সম্পর্ক আছে। দ্বিতীয় অংশ ঠিকঠাক কাজ করতে হলে প্রথম অবস্থার উন্নতি প্রয়োজন, আর প্রথম ক্ষেত্রে উন্নতি হলে স্বাভাবিক ভাবেই দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অনেক সুবিধে হবে। সঠিক পরিসংখ্যান দিতে মালিকদের উৎসাহ দিতে, কিছু পুরস্কার যেমন, সরকারি সুযোগ সুবিধে দেওয়া যেতেই পারে। সহজে সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ, NREGA, ভর্তুকি, জন বন্টন ব্যবস্থা ইত্যাদির ব্যবস্থাও করা যায়। একই ভাবে গত পঞ্চাশ বছরে জমি সংস্কার বলবৎ করতে আমাদের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে কিছুদিনের জন্য উর্ধ্বসীমা আইন কিছুটা শিথিল করা যেতেই পারে যাতে মালিকরা সঠিক তথ্য দিতে আগ্রহী হন। বিশেষত দেখা গেছে যে জমিসংস্কার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৃষি উন্নতির পরিপন্থী হয়েছে, ও এর দায়ভাগ আরো বেশি বর্তায় জমির উর্ধ্বসীমা আইনের ওপর (Ghatak and Roy, 2007 )। এমনকি জমির রেকর্ড ঠিক করার জন্য ও সঠিক তথ্য জানালে আয়করে ছাড় দেওয়াও যেতে পারে। আদিবাসী এলাকায় কৃষি জমি বিক্রির ওপর অকারণ বিধিনিষেধ আরোপ, আদিবাসীদেরই স্বার্থের বিরুদ্ধে গেছে। এই বিধিনিষেধ তফশিলী জাতি, উপজাতি আদিবাসীদের সঠিক জমি ব্যবহারে সাহায্য তো করেই নি উপরন্তু তাদের জন্য বিকল্প জীবিকা ও গড়ে তোলে নি। আপাতদৃষ্টিতে বৈষম্যের নামে শিল্পায়নে বাধা সৃষ্টি করে আদতে কিছু লাভ হয়নি। জঙ্গল রক্ষা আইন সংরক্ষণের নীতির বিরোধী হয়ে উঠেছে । সম্পত্তি আইনে আওতায় জঙ্গল জমি আনার উদ্দেশ্য অবাধ কৃষি ও বন কাটা নয় বরং, তাদের পুরুষানুক্রমে চলে আসা শিকার ও সংগ্রহণ বৃত্তি থেকে যদি তারা উচ্ছেদ হয় তার প্রকৃত ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থাও করা। সাধারণ ভাবে বলতে গেলে, বাস্তবের সাথে আদর্শের মেলবন্ধন না ঘটাতে পারা আমাদের ব্যর্থতা, ঠিক যেরকম বন্টন ব্যবস্থা শক্তিশালী করার পাশাপাশি সমষ্টিগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় শিল্প স্থাপন ও বন ধ্বংস রোধ করার ভারসাম্য রক্ষা করতেও আমরা সক্ষম হইনি। সামাজিক ন্যায় বিচারের জন্য জমির বন্টন আরো সমান ভাবে হওয়ার সাথে সুষ্ঠু জমি বাজার ও জমির আরো উন্নত ব্যবহার পদ্ধতি গড়ে তোলার মধ্যে যে কোনো সংঘাত নেই সেই সত্যি যত তাড়াতাড়ি বোঝা যায় ততই মঙ্গল। ... ...
২০০০ সালে পৃথিবীতে পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৩ লক্ষ ৭২ হাজার মেগাওয়াট। ২০১৩ সালের শেষেও উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় একই জায়্গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে আসল উৎপাদন কমেছে কারণ জাপানের ৫৪ টি পরমাণু চুল্লি বন্ধ রয়েছে। আমেরিকান ও ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে মিলিয়ে একটি নতুন চুল্লিও চালু হয় নি। বরং চুল্লি বন্ধ করে দেওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে। ঐ সময়কালে ইউরোপীয়ান ইউনিয়নে উৎপাদন ক্ষমতা কমেছে ১৩ হাজার মেগাওয়াট। এর মধ্যে ২০১১ সালে মার্চ মাসে জাপানের ফুকুশিমায় ঘটলো এক মর্মান্তিক দুর্ঘটনা। প্রায় একই সময়ে তিনটি চুল্লির জ্বালানি দন্ড পুরোপুরি গলে বহুদূর পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ছড়াল। শুধু তসি নয়, আজও সেখান থেকে তেজস্ক্রিয় জল ভূগর্ভে এবং সমুদ্রে মিশে চলেছে। দুর্ঘটনার পর জার্মানি, বেলজিয়াম ও সুইজারল্যান্ড তাদের চুল্লি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। ইতালি, অস্ট্রিয়া পরমাণু কর্মসূচী বাতিল করে। ফ্রান্স ২০২৪ সালের মধ্যে অর্ধেক চুল্লি বন্ধ করে দেবে বলে জানায়। ... ...
ডঃ পাত্র এর একটা বিহিত বা হেস্তনেস্ত করার দায়িত্ব নিলেন। অবশ্য এতে ওনার একটা অ্যাকাডেমিক ইন্টারেস্টও ছিল। সময়সুযোগ থাকলে একদিন তিনিও পুরোদস্তুর গবেষণা করতে পারতেন, শুধু ছাত্র ঠেঙিয়েই চাকরির জীবনটি চলে গেল। সে যাই হোক, উনি অনেক আঁকজোঁক করে কিচ্ছু বের করে উঠতে পারলেন না। এই অবস্থায় উনি একদিন কাকভোরে উঠে লেকের মাঠে গাছপালার ঝোপে বান্ধবগড় থেকে কেনা ক্যামোফ্লাজ জ্যাকেট পরে ঘাপটি মেরে কী হয় দেখার জন্য বসে রইলেন। প্রথম দু দিন কিচ্ছু দেখতে পাওয়া গেল না। সুস্থ শরীর ব্যস্ত করে রাতের ঘুম নষ্ট হল। কিন্তু তাতে ডঃ পাত্র দমলেন না। এক সময় তিনি ডক্টরেট করেছিলেন, তাই অকিঞ্চিৎকর জিনিস নিয়ে খামোখা লড়ে যাবার ক্ষমতা তাঁর পুরনো। ... ...
এ তো গেল রাজ্য সরকার। কেন্দ্র সরকার কেন FCI যোগান বন্ধ করতে গোঁ ধরে বসে আছে সে আরেক রহস্য। দ্বিমত নেই শ্রমিকদের রেশন দেওয়ার দায়িত্ব মালিকের। কিন্তু মালিককে তার দায়িত্ব স্মরণ করানোর কাজে কংগ্রেসের রাজ্য সরকার বা ভাজপার কেন্দ্র সরকার, কারোই কষ্মিণকালে আগ্রহ দেখা যায় নি। হরেদরে শস্তা খাদ্য আসছে FCI-এর গুদাম থেকে, অর্থাৎ সরকারি পয়সাতে। যখন সেই যোগান বন্ধ হতে যাচ্ছে মজুরের রেশন মার খাবে, মালিকের কেশাগ্র বঙ্কিম হবে না। হুট করে বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে, আর মালিকের কী করা উচিত উপদেশ বিতরণ করার বদলে, কেন্দ্র সরকার বিভিন্ন পক্ষের (অবশ্যই মালিক ও মজুরপক্ষ) সাথে আলোচনায় বসে সমাধান সূত্র বার করার চেষ্টা করতে পারত। আসলে শ্রমিকের অধিকার কর্তন করাতে কংগ্রেসে ভাজপায় বিশেষ মতভেদ নেই। এই মুহূর্তে ওপরের ঘটনাবলী কংগ্রেসকে ঘ্যানঘ্যান করার সুযোগ দিয়ে দিয়েছেঃ NFSA লাগু করার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা কেন্দ্র সরকার এখনো দেয় নি। মানে, জানুয়ারি থেকে ECA বাদ দিন, NFSA-এর রেশনও পাওয়া যাবে না। ... ...
আবার মই? কি বলি বলুন, স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে মই নিয়ে সে সময় ভারী উৎসাহ ছিল - সত্যজিত রায়ের ট্রেন যেমন অপু-দুর্গার কাছে বৃহত্তর পৃথিবীর প্রতীক হয়ে দেখা দিয়েছে সেরকম ভাবেই হয়ত ঊর্ধ্বগামী মই দেখলেই লোকে দো'তলা তিনতলা ছাড়িয়ে সোজা ছায়াপথের কথা ভাবতে শুরু করতেন। যাই হোক, এ মই নিয়ে এসেছিলেন ইংলিশ চিকিৎসক রবার্ট ফ্লাড। ফ্লাড অবশ্য শুধু চিকিৎসক নন - জ্যোতিষী, গণিতবিদ, অতিপ্রাকৃত-বিশারদ, একই অঙ্গে অনেক রূপ। ফ্লাডের তত্ত্ব অনুযায়ী মইয়ে উঠে গুনে গুনে ঠিক ন'টি সিঁড়ি চড়লেই আপনার আত্মা পৌঁছে যাবে সূক্ষ্মতর ব্রহ্মান্ডে, কিছু সময় বিশ্রাম, তারপর ফের পাশে রাখা দ্বিতীয় মই দিয়ে নেমে আসা। আবারো জগৎসংসারের ঠ্যালা সামলানোর পালা, তারপর ফের মইয়ে চড়া। ফ্লাডের যেহেতু অঙ্কে ছিল বিষম উৎসাহ, উনি দাবী করেছিলেন এই ন'টি স্টেপ নেহাত গাঁজাখুরি ব্যাপার নয়। রীতিমতন পাইথাগোরিয়ান গণিতের সাহায্য নিয়ে তৈরি হয়েছে এ মই, প্রতিটি সিঁড়ি কতটা চওড়া, কতটাই বা লম্বা সবেরই ফিরিস্তি দেওয়া যাবে অঙ্কের হিসাবে। ... ...
দশটা বছর ব্যয় করে এই পর্ণকুটির তৈরি করা আধখানা তার বাতাস থাকে, আধখানা তার চাঁদের বাড়ি কোথায় তোমায় বসতে দেব? বরং তুমি বাইরে এসো। সং সুন নামে পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের এক কোরিয়ান কবির লেখা । রাজদরবারে কাজ করতেন আগে, পরে সব ছেড়ে দিয়ে গ্রামে চলে যান, লেখালিখি নিয়েই জীবন কাটান। এই কবিতাটার পিটার লি-কৃত ইংরেজি অনুবাদ থেকে আমি বাংলা করেছি। এখানে যদি একেকটা লাইনকে দেখা যায় আলাদা করে, বোঝা যাবে প্রত্যেকটায় আসলে দুটো বাক্যাংশ আছে, দুটো ছবি। প্রথম লাইনেই যেমন দুটো স্টেটমেন্ট, একটা বলছে দশ বছর পরিশ্রমের কথা, অন্যটা বলছে বাড়ির কথা। দ্বিতীয় লাইনে তো আধাআধি ভাগ হয়ে গেছে লাইনটাও, বাড়িটারই মত... যার অর্ধেকটায় থাকে বাতাস, আর বাকি অর্ধেকটায় চাঁদ। শেষ লাইনেও অমন দু ভাগ, প্রথম অংশটা বলছে বাড়িতে ঢুকতে/বসতে দেবার জায়গা নেই (যেহেতু বাতাস ও চাঁদ আগেই সবটা দখল করে রেখেছে), আর শেষ টুকরোটা জানাচ্ছে, বাড়ির বাইরেই বরং অতিথিকে গ্রহণ করা হবে। ছোট্ট একটা ছিমছাম কবিতা। তিন লাইনের জাফরির ফাঁক দিয়ে আসা একটুকরো গল্পের আভাস। শিজো আসলে এরকমই। ... ...
সুপ্রীম কোর্টের রায় নিঃসন্দেহে হতাশ করেছিল কিন্তু তার থেকেও বেশি আঘাত দিয়েছিল সেই রায়ের ভাষা। সে সম্পর্কে অন্যত্র লিখেছি তাই এখানে আর লিখছি না। তবে দুঃখ, কষ্ট হতাশার সঙ্গে যেটা যোগ হয়েছিল, সেটা একটা রাগ, একটা হতাশাজনিত ক্ষোভ। শুধু আমার মধ্যে নয়, আমার মত চারপাশের অনেক মানুষের মধ্যেই দুঃখর থেকেও বেশী ফুটে উঠেছিল রাগ, দেশের প্রতি প্রবল অভিমান। সেই সময় সেই অভিমানের অভিঘাত থেকে একটা লেখা লিখেছিলাম। প্রকাশের অযোগ্য ভাষার কারণে সেই লেখাকে সেই সময় প্রকাশ করা যায় নি। আজ এক বছরের মাথায় সেই লেখাটাকেই একটু কাঁচি চালিয়ে সভ্য করে দিলাম। মনে হল, সেই যে প্রবল রাগের অনুভূতি সেটাও ডকুমেন্টেড হয়ে থাকা দরকার। ... ...
এখন আমি কোন কিছু কেয়ার করি না। আমার কর্ম ক্ষেত্রে কিংবা অন্য কিছুতে আমার গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত সঠিক কি না, তা বিচার করবার জন্য অন্য কারুর প্রয়োজন আমি অনুভব করি না। IITতে আমার বন্ধুরা যারা সব সময় আমার যৌনতা নিয়ে প্রকাশ্যে সন্দেহ করত তবুও আমি যাদের বিশ্বাস করতাম, তাদের সবাইকে আমি মেইল করি। তারা আমাকে খুব সাপোর্ট করেছে। এর পর আমি আরও কিছু লোকের সামনে নিজেকে প্রকাশ করলাম, তার পর আরও কিছু লোকের সামনে। আমি খুব মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। কেউ কেউ আমার কথা অবিশ্বাস করেছেন, কেউ বা আমার বক্তব্যকে সম্মান জানিয়েছেন, আমাকে অপমান করেছেন আবার কেউ প্রচণ্ড চমকে গেছেন। হ্যাঁ, IITতে হোমোফোবিক আছে, কিন্তু সব থেকে যেটা প্রয়োজন IITতে অনেক উচ্চমনের ব্যক্তিরা আছেন, তারা আমাকে আশা দিয়েছে। আমি যা ভেবেছিলাম, IIT সেই রকম নয়, কিন্তু সম্পূর্ণ পারফেক্ট বলে কিছু কি পাওয়া যায়? আমি বাস্তব, শেষমেশে ছাত্র সমাজের কণ্ঠ হিসাবে আমার গল্প স্বাধীনতা পেয়েছে। আমি, আমার ক্লাসে কিছু বন্ধুদের পেয়েছি যারা গে-দের ভাল দিক গুলো চিন্তা করে গে হওয়া কতো ভালো তা আমাকে বলে। আমি অনেক প্রোফেসার পেয়েছি যারা আমার কাছে সমকামীদের প্রতি তাঁদের সাপোর্ট প্রকাশ করেছেন। এ সব কিছুর ভিতর দিয়ে আমি দিনের শেষে বিছানায় যাই, জানি আমি এবার নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবো। যদিও আমি অনেক অনুশোচনা, লজ্জা, ডিপ্রেশানের ভিতর দিয়ে গেছি। মেডিক্যাল পরীক্ষা দিয়েছি, আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ছি, সামাজিক বাধানিষেধ পেয়েছি। কিন্তু যখন আমার গল্পটা কতটা ‘প্রেরণাদায়ক’ জানিয়ে আমি আবারও মেইল পাই, তখন আমি অনুভব করি একটা সময় আসবে যখন কোন নতুন সমকামী নিজের প্রকৃত পরিচয় দিতে কখনোই বিব্রত বোধ করবে না, সে কাঁদবে না বরং লজ্জা লজ্জা ভাব নিয়ে টিভি সিরিয়ালের কোন নতুন হিরোর উপর তার ক্রাশের কথা সে তার রুম মেট’দের কাছে গল্প করবে। ... ...
স্বভূমে পরবাসী আমি সেদিন কাজে যাবার পথে স্মার্টফোনের পাতায় খবর দেখতে গিয়ে সেই ঝাপটা খাই। ৩৭৭ ফিরে আসার খবর। মোবাইলে মেসেজ ভেসে আসে। আর ওলট পালট হতে থাকে আমার ভিতর। বাসভূমি থেকেও কি চিরকাল তবে স্বদেশহারা থেকে যাব আমরা? কখনো এ দেশে, শৈশবের মাঠে, কৈশোরের শুঁড়িপথে হাত ধরে হাঁটা হবে না আমাদের, ঠোঁটে ঠোঁট রাখা হবে না বৃষ্টির বোলপুরে, অকারণে অপরাধী হয়ে থাকতে হবে? সন্তান, স্বাগতম, শুভেচ্ছা কিছুই পাব না? আমরা একটিভিস্ট নই, রাজনীতিক নই, নিতান্ত সাধারণ মানুষ। মুখচোরা, পড়ুয়া, হাসিখুশি, চোখে চশমা, ঠিক আর পাঁচজনের মত মানুষ। আমরা ভয় পাই। ক্লান্ত, অন্তহীন লড়াইএর ভয়, অহেতুক আক্রমণের ভয়, ঘৃণার ভয়, কৌতুহলের ভয়, জীবিকা হারানোর ভয়। আর অপমানিত হই। যখন সর্বশক্তিমান ধর্মগুরু বলেন আমাদের সারিয়ে দেবেন যে কোনো দিন। যখন কাগজের পাতা থেকে টিভির পর্দায় আমাদের যৌনজীবনের ঠিক কতটা "এগেইনস্ট দ্য নেচার" এই নিয়ে ডিবেট চলে। যখন ধরেই নেওয়া হয়, আমাদের প্রেম প্রেম নয়, দুটি যৌনাঙ্গের বিকৃত সহাবস্থান মাত্র। একে অন্যকে আঁকড়ে এই ভয় বুকে নিয়ে আমরা ঘুমোই, আর সারাদিন আমার চোখ জ্বালা করে। সারাদিন। ... ...
আলীয়া মাদ্রাসা আর খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার পার্থক্য মানুষকে বোঝাতে হবে। কিন্তু খারিজি বা কওমী মাদ্রাসার সমস্যাগুলি তো তাতে চাপা পড়ে যাবে না। এক বিশাল দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আমরা আধুনিক যুগে জীবিকানির্বাহের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অনুপযুক্ত করে ছেড়ে দিচ্ছি, যাদের একমাত্র রোজগারের রাস্তা, সাঈদী সাহেবের ভাষা্য়, কারো বাপের জানাজা পড়িয়ে ১০ টাকা আয় করা। ধর্মের শিক্ষা সেকুলার প্রতিষ্ঠানে নিরপেক্ষ এবং স্কলারলি ভাবে ক্লাসিকাল ভাষা আর দর্শন চর্চার মাধ্যমেই হওয়া উচিত, এই ধরনের ধর্ম শিক্ষা পরধর্মবিদ্বেষী মধ্যযুগীয় মানসিকতার পরগাছা শ্রেণীর মানুষ তৈরি করে, তৈরি করে হুজুরদের ক্যাননফডার। আল্লামা শফি, জুনায়েদ বাবুনগরী এই গরিবের ছেলেদের নাস্তিকদের ফাঁসির দাবীতে পথে নামান, পুলিশের গুলির মুখে ঠেলে দেন। বিনিময়ে নিজেরা রোজগার করেন প্রভূত অর্থ। আওয়ামী-বামপন্থী জোট সরকারের বামপন্থী শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এই মাদ্রাসাগুলিকে চেয়েছিলেন সরকারের আওতায় আনতে, শফি হুজুররা হুমকি দিয়েছিলেন যে তাহলে দেশে রক্তগঙ্গা বইবে। মাদ্রাসা ছাত্রদের ইংরেজি শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগে জল ঢেলে দেন মুফতি ফজলুল হক আমিনী। এদের দিয়ে মাদ্রাসায় গ্রেনেড তৈরি করাতে গিয়ে দুটি ছেলেকে বিস্ফোরণে মেরে ফেলেন হেফাজতের নায়েবে আমীর মুফতি ইজাহারুল ইসলাম চৌধুরী। তবু চেষ্টা করেছিলেন নাহিদ। বাংলাদেশ পারে, আমরা পারিনা কেন? আপনি গেয়েছেন “শোন তালিবান তালিবান/আমি তোমাদের সাথে নেই/ আমি ধর্মে মুসলমান/ আছি লালনের সঙ্গেই”। লালনের হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরের বাইরের মূর্তি কিন্তু কওমী মাদ্রাসা ছাত্ররা গিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছিল সুমন। আর তালিবানরা সকলেই মাদ্রাসা ছাত্র, তালেবা শব্দের মানেই ছাত্র, তাই থেকেই তালিবান। তাদের চেয়ে বেশি আরবী আপনি নিশ্চয় জানেন না। বরং এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয়না কেন যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কেন গ্রামের গরিব সংখ্যালঘু মানুষকে অবৈতনিক সরকারি শিক্ষা আর মিড ডে মিলের নিশ্চয়তা দিতে পারেনি, কেন তাকে মাদ্রাসায় যেতে হয়? সবাই ছেলেমেয়েকে কোরআনে হাফেজ করতে চান এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। শিক্ষার অধিকারের দাবী পিছিয়ে পড়ল, উঠে এল মাদ্রাসা শিক্ষার অধিকারের দাবী? ... ...
কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছিলাম, শতাব্দী ধরে উন্নয়নের উল্টোপিঠে দুর্ভিক্ষ অশিক্ষা আর অস্থিরতায় ফেলে রাখা 'কোনো এক গাঁয়ের বধূর' নাতনিরাই যে রাজিয়া আমিনা হয়ে বন্দুক তুলে দাঁড়াচ্ছে। দুর্ভাগ্যের বিষয়,সন্ত্রাসবাদ যে আর্থসামাজিক বৈষম্যেরই ফল সেইটা বলার লোক দেখলাম কমে আসছে। দশবছর আগেও অনেকে এগুলো বলতেন। এখন পৃথিবী ক্রমেই একমেরুর দিকে এগিয়ে চলেছে, হয় তুমি আমাদের নাহলে শত্রুপক্ষ- মাদ্রাসা কী ও কেন সেই প্রশ্নে না গিয়েই চলল মাদ্রাসাবিরোধী প্রচার। ডাক্তার-স্বাস্থ্যকেন্দ্র না বানাতে পারলে কোয়াকদের তুলে দেওয়া যায় না। গ্রামে স্কুল না বসিয়ে মাদ্রাসা তোলা যায় না। বসিয়েও যায় কিনা প্রশ্ন। কিন্তু যে রাষ্ট্র নাগরিকদের শিক্ষার সম্পূর্ণ ব্যবস্থা করতে পারেনা, সে কী করে বিকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তোলার কথা বলে সেই প্রশ্ন করার লোকও কমে যাচ্ছে দেখলাম। 'স্লোগান পালটে হয়ে যায় ফিসফাস'। ভারত ক্রমশঃ তার ব্রাহ্মণ্যবাদী চরিত্রটা মেলে ধরছে। অর্থনীতির পাশাপাশি সামাজিক আচারগুলোতেও সংখ্যালঘু-দলিতদের সরিয়ে দেওয়ার পর্যায়টা চলছে। বছরখানেক আগে,হায়দারাবাদ গেছিলাম। জামা মসজিদ ঘোরার সময়ে আমি ও আমার বন্ধু একটি করে ফেজ টুপি কিনে মাথায় পরি। তারপর এদিক ওদিক ঘুরে হুসেন সাগরে নৌকোয় উঠলাম, যাওয়ার সময়ে টুপিটা খোলা ছিল, পাশে কিছু সহযাত্রী বসেছিলেন, আইটিতে চাকরি করেন বা ওরকম। নৌকোয় ফেরার সময়ে টুপিটা মাথায় দিতে দেখি পাশে আর কেউ এসে বসছেন না। পরিতাপের বিষয়,আমাদের দেশে এটাই রিয়েলিটি- মার্জিনের ওপারে এক বিশেষ পরিচিতির বাইরের লোককে ঠেলে দেওয়া। ... ...
সিনেমা আর মোচ্ছব, সবই প্লাস্টিক আর্ট। টাইম-স্পেস টোটাল নড়বড়ে। কখন কী ঘটে যাবে কিচ্ছু বলা যাচ্ছেনা। সবই মাতালের কম্মো। পুজোর সিজনেই নাকি বসন্ত এসে গেছে, আর এই জমানায় ব্রিজ টপকালে তো সারা বছরই নবান্ন। ওদিকে নাকি মদ বন্ধ করার চক্রান্ত চলছে বাংলাদেশে, আর এদিকে গাঁজামদ বন্ধ হওয়ায় এমন কলরব, যে, সরকার নড়ে বসছে। দেয়ালে দেয়ালে প্রজাপতিরা ছবি আঁকছে, ভরদুপুরে ডানা মেলে উড়ে যাচ্ছে গিটার। একে নাকি বলে মাল-টি পারপাস। ওদিকে মাল-আলা একটু তাড়াতাড়িই নোবেল প্রাইজ পেলে কী হবে, আমরা যথারীতি ঢিমে তালে। উৎসব টুৎসব মিটতে চলল, এতদিনে উৎসব স্পেশাল। অবশ্য টাইম-স্পেস দিয়ে হবে টা কী, সবই তো নড়বড়ে, কখন কী ঘটে যাবে কিচ্ছু বোঝাই যাচ্ছেনা, বলা তো দূরস্থান। ... ...
সেই যে দেড়েল মাতালের কথা দিয়ে বাঙালির মাতলামি বা মাতলামির মূলে থাকা মদ খাওয়ার কথা শুরু হয়েছিল, তাঁর পেশা ছিল রিক্সাটানা। তিন চাকার সাইকেল রিক্সাটানা। যাঁরা অমন পরিশ্রমের কাজ করেন তাঁদের নাকি না খেলে চলে না। খেলে অধিকাংশ সময়েই বেসামাল হয়ে পড়েন। তখন ব্যাথার গোড়া উগরে ঢেলে দেন সাহসে কুলোলে জ্যোতিবাবুর ঘাড়ে। আর মিনমিনে মেনিমুখোরা জ্বালা মেটাতে পেটান বউকে, মেয়েকে, ছেলেকে। এই কর্মটি যে নেহাৎ খেটে খাওয়া মানুষের শ্রেণীচরিত্র নয়, তাও স্পষ্ট হয়ে যায় যখন দেখি এক কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসার সাহেব তাঁর রাজ্য সরকারি অফিসার স্ত্রীকে পিটিয়ে পরোটা বানাচ্ছেন শুক্র, শনি, রবিবার। তাঁরা এক নতুন পাড়ায় বাসা নেওয়ার পর বছর চারেক ধরে কর্তাটির শুক্রবার মধ্যরাত্র থেকে শুরু হওয়া পাড়া কাঁপানো খেউড় আর তাঁর প্রহারে আহত, আক্রান্ত কর্ত্রীর আর্তনাদে পাড়া কাঁপলে পরে পাড়ার লোকের মাতাল পেটানোর নেশা হয়। এক শুক্রবার তাঁরা বাড়ির দরজা ভেঙে মাতালকে বার করে নিয়ে বেধে রাখে পাড়ার সব থেকে ক্ষয়াটে ল্যাম্পপোস্টের গায়ে। উন্মত্ত কিছু চড়-চাপড় আর জোর করে তেঁতুল জল দিয়ে নেশা ভাঙানোর প্রয়াস চলে। কেউ পুলিস ডাকে নি। ... ...
সহৃদয় পাঠক, যিনি আমার এই ব্যক্তিগত গদ্যটি এখন এই মুহূর্তে পড়তে বসলেন, আপনি কি নেশা ভাং করেন? আমার ধারণা অতি অবশ্যই করেন। নেশা এমনই এক টান যার পাল্লায় না পড়ে উপায় নেই। গানের নেশা, গল্পের নেশা, নাচের নেশা, সুরের নেশা, তালের নেশা, ছবির নেশা, কবিতার নেশা, সিনেমার নেশা, নাটকের নেশা আপনার কি নেই? আকাশ, বাতাস, সমুদ্র, নক্ষত্র, পাহাড়, সমতল, দিগন্ত এদের পাল্লায় পড়ে আপনি কি ঘন্টার পর ঘন্টা কিচ্ছুটি না করে নিজের ভেতর ঢুকে পড়ে, বুঁদ হয়ে সময় কাটান নি? সূর্যোদয়ের মদ, সূর্যাস্তের গাঁজা আপনি কখনো স্পর্শ করেননি বললে আপনি মিথ্যে কথা বলছেন। অনন্ত রাত্রির কোকেন কখনো কি শোঁকেন নি? এখন মোদ্দা কথাটা হল গিয়ে আপনার সময় নেই। আপনার মাথার ওপর বাঘের মত বস রয়েছে, আপনার বেডরুমে কুমিরের মত হাঁ করে বসে আছে সংসারের হাজার দায়িত্ব।এমনই এক ড্রাগনের সময়ে আমরা বসবাস করতে বাধ্য হয়েছি, যেখানে আমাদের নেশাগুলিকে অর্থাৎ আমাদের গোটা পৃথিবীটাকেই আমাদের কাছ থেকে জোর করে দূরে সরিয়ে রাখা হয়েছে। এমনই ফাঁদে আমরা পড়েছি যে আমাদের হাত পা তো বটেই এমন কি বুদ্ধিবৃত্তি থেকে আরম্ভ করে অনুভূতিগুলিকে পর্যন্ত শিকল টিকল জড়িয়ে বেঁধে মোটা জংধরা তালা লাগিয়ে চাবি দিয়ে সে চাবি আমরা নিজেরাই গিলে নিয়েছি, এবং ভুলে গেছি। ভাবুন মশাই সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত এমনই আপনার জীবন যে আপনার নিজের ইচ্ছে মত কিস্যু করার উপায় নেই। আপনার সময় আপনি বিক্রি করে দিয়েছেন। নিজেই করেছেন, এবং এত কম মূল্যে করেছেন (আমি শুধু আর্থিক মূল্যের কথা বলছিনা) যে সর্বক্ষণ আপনার নিজেকে দেখে নিজেরই লজ্জা লাগে। এই রকম একটা সময়ে আপনি কি করবেন? আপনি কিনবেন। কী কিনবেন? নেশা কিনবেন। আর সেই সব নেশা হবে নকল নেশা। পৃথিবীর নেশার মত, মানুষের নেশার মত তারা আপনার আত্মার উন্নতি ঘটাবে না। বরং প্রভাবিত করবে আপনার শরীরকে, আপনার মাথায়, রক্তে, স্নায়ুতন্ত্রে কিছুক্ষণের জন্য এমন রমরমা ছড়াবে যে আপনার মনে হবে আপনি মুক্ত। আপনি যা ইচ্ছে তাই করতে পারেন। কিছুক্ষণের জন্যেই আপনার এই যে সর্বক্ষণের দাসত্ব সেটা আপনি ভুলে থাকবেন।একসময়ে আপনার শরীর বিদ্রোহ করবে। আর আপনিও আপনার নেশা থেকে সটান আপনার যন্ত্রণার মধ্যে আছড়ে পড়বেন।আছড়ে পড়বেন সেই জন্য যন্ত্রণা আরো বাড়বে। কিন্তু আপনার মনে আছে সেই ইউফোরিক অবস্থাটা, ফলে আপনি আবার নেশা করতে বাধ্য হবেন, এবং আবার আছাড় খাবেন। এই যে ভয়ংকর লুপ সেটা চলতে থাকবে। আপনার শরীর মন উভয়েই দুর্বল হয়ে পড়বে। আপনি নিজেও সেটা বুঝতে পারবেন। তখন এসে হাজির হবে অপরাধবোধ।আর যেহেতু আপনি সবচেয়ে দুর্বল আপনার নিজের কাছে, সেই জন্য, শুধুমাত্র সেই জন্যেই, আপনি আপনার এই অপরাধবোধের ভারটা চাপাবেন তাদের ওপর যারা বয়সে, পদমর্যাদায়, অথবা শুধুমাত্র আপনার ভাবনায়, আপনার থেকে ছোটো। তাদের ওপর যাদের আপনি ছোটো মনে করেন। আপনি জোর গলায় ফতোয়া জারি করবেন, মেয়েরা মদ গাঁজা সিগারেট খাবে না। আপনি ছাত্রছাত্রীদের একসঙ্গে আনন্দ করতে দেখলে পুলিশে খবর দেবেন। আপনি স্লোগান দেবেন “মদ গাঁজা চরস বন্ধ, তাই কি প্রতিবাদের গন্ধ?” কবিদের মদ খেয়ে চিৎকার করে কবিতা আবৃত্তি করতে দেখলে, শিল্পীদের গাঁজায় ধুর হয়ে রঙ নিয়ে রাস্তা রঙ করতে দেখলে, আপনার গালিব, শক্তি, র্যাঁবো, পাবলো পিকাসো কাউকেই মনে পড়বে না, মনে হবে এদের হোক ক্যালানো। ইতিমধ্যে আপনার বয়স বেড়েছে, এবং যে ভয়ংকর লুপে আপনি পড়েছেন, তার ফলে আপনার বয়স বাদে অন্য কিছুই বিশেষ বাড়েনি। আপনার শরীর আর দেয় না, ফলে আপনি কৃত্রিম নেশাটাও ধরুন আর করতে পারেন না। ফলে আপনি আরো চেঁচাবেন বব ডিলনকে বলবেন বদ গাঁজাখোর,জন লেননকে বলবেন মাতাল, কবির সুমনকে বলবেন মাওবাদী, লিওনার্দ কোহেনকে বলবেন মাগীবাজ। নোংরামিটাও একটা নেশা। এটা আপনি বুঝবেন না, কিন্তু এই সর্বগ্রাসী নেশাটি আপনাকে টুঁটি চেপে পাকড়াও করবে। দল বেঁধে ঘেউ ঘেউ করতে যে কি মজা, তা তো আপনার পাড়ার কুকুরগুলি আপনাকে প্রত্যেক রাতে দেখিয়েই দিয়েছে। খিস্তি করার আনন্দে আত্মহারা হয়ে নেশামুক্ত পৃথিবীর দিকে আরো দশ পা এগিয়ে যাবেন। এর ফলে সবথেকে বেশি সুবিধা হবে তাদের যাদের কাছে আপনি নিজেকে বিক্রি করেছেন। বুঝতে পারছেন? সুবিধা হবে ধনতন্ত্রের। এই মাও মাকুদের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে, অথবা এদের সঙ্গে নেশা করে ফেলে যদি আপনি একদিন হঠাৎ বুঝতে পেরে যান কে বা কারা আপনাকে বেঁধে রেখেছে, পঙ্গু করে রেখেছে আপনার চেতনাকে, আপনার গোটা জীবনটাকেই, তবে তো তাদের সর্বনাশ। আপনি যদি একদিন আপনি সত্যি কি চান বুঝে ফেলে সমস্ত বাঁধন দুঃস্বপ্নের মত ঝেড়ে ফেলে অনুভব করেন মাথার চারিদিকে হরিণের দৌড়ে আসার মত বৃষ্টির শব্দ, যদি মেতে ওঠেন স্বাধীনতার নেশায়? যদি বলেন না। যদি বলেন আপনি আর নিজেকে, নিজের সময়কে বিক্রি করবেন না, কারোর কাছে? তাহলে স্যার, ম্যাডাম আপনাকে বলছি শুনুন। আপনারা প্রত্যেকে যদি এটা করেন, তাহলে গোটা মেশিনারিটাই বিকল হয়ে যাবে। সেই যন্তরমন্তর থেকে তখন বেরোবে অন্যরকম মন্ত্র। যেমন ধরুন- “দড়ি ধরে মারো টান রাজা হবে খান খান”। এবারএকটা গল্প শুনুন। কিছুদিন আগেই এক নেশার আড্ডায় এক শিল্পী আমায় এই গল্পটা বলে। বৌদ্ধ গল্প। বুদ্ধের কাছে এক শিষ্য এসেছে একটা প্রশ্ন নিয়ে। প্রশ্ন খুবই গম্ভীর। ... ...
আমার এক কাকু মারা গেলেন। খারাপ লাগা কালকে অটো না পাওয়ার মতো ফেলে দেওয়া মদের বোতলের মতো...ফাঁকা রাস্তায় কলেজ থেকে ফেরা তিনটি মেয়ের ধরিয়ে নেওয়া সিগারেট...তারপর বোসপুকুর ছাড়িয়ে কসবা থানার আগে একটা ওয়াইন শপে একটি মেয়ের কিনে নেওয়া হাফ লিটার...বয় ফ্রেন্ডের সাথে ঝগড়া করার রোপোয়ে...কিন্তু চারদিকের আলো হাতের মেহেন্দির মতো...পায়ের হিলের ছুঁচলো যৌনতায় শহর স্লিপ খায়...যেভাবে অভাবের গায়ে গায়ে উঠে এসেছে আরেকটা দিন...যেখানে অনেকদিনের কাজ করা প্রতিবাদ নিশান বদলে পাঁচিলে উঠে দেখছে...আমার রুচি মিলছে না...আমি এখানে আমি বাফার হয়ে গেছি...আমি বিষাদের বাগানে বেঁজির মতো বিষাক্ত সাপ...যার চোখের মধ্যবিত্ত লেন্স নেই...খুলে গেছে কবে...তবে এই ঘষা-খাওয়া কালচারে আমি নেই...রেপ্লিকা...ম্যানুয়াল লেবার হয়ে গোপনীয়তা বলছে...বাহ কি বানিয়েছে গুরু...কিন্তু প্রথম দিন থেকেই আমি প্রথমের দলে নেই...আমার তো আর সবার মতো ছকে চলে না...সিস্টেমকে অলটার করতে এসে দেখি ওই তো পায়রার বাসা...ওই তো বেলে-ঘাটা,প্রিটোরিয়া স্ট্রিট...কিন্তু জীবন বি-এস-এন-এল...সারা জীবনে বাজে লোকদের সাথেই লড়ে গেলাম।ভালোমানুষ গোটা কতক...যদিও আমার ভিতর ভাল্লুক ও বেড়াল দুজনেই আছে।আমারও সব কিছু করতে ইচ্ছে করলেও সমাজ জানলা টেনে ধরে...কিন্তু আমি যে তাইওয়ানের মতো বেঁচে থাকতে চাই...আমি শেষ সর্ট-এ জেতে ম্যাচ...তবু গিটার বাজাবো ভেবেছিলাম...ভেবেছিলাম নতুন কিছু করবো...সেই আলাদা হতে গিয়ে বিপদে পড়েছি...কারণ সোসাইটি একটা ক্লাবের মতো...এইবার প্ল্যাস্টিক ছেড়ে বেড়িয়ে আসা দালাল স্ট্রিট ...এইবার সব গলি উন্নয়নের মেকি স্বপ্নিং কম্প-প্লেক্স...আমি সাউথ-সিটি কোয়েস্টমল যেতে চাইনা...বাইরের বিশ্বায়ন আমার নয়...আমার কাছে ভিতরটাই দামি...ভিতরে তবু সবাই পিছিয়ে পড়ে আছে/বাইরে আগামি... আবার ভিড়ে ক্লান্ত শহরের গুটিপোকা সুন্দরী...প্রেম-ভাঙা প্রেম-জাগা প্রেমময়...এশিয়ান গেমস...কি হচ্ছে কি হচ্ছে না জানি না...করাপশন...মিডিয়াহাইপ...পেজ থ্রি...জানি না...তাও কবিতা জেগে থাকে...মামমামময়...আমার সততা...উড়ে যাওয়া রেবেল...আমি জানাই...আমি যতই মাথা নিচু করে থাকি,সময় হলেই চে হয়ে যেতে পারি...আমি আপাতত কিছুই জানি না...নকল...ভণ্ডামি আর মধ্য-মেধার বিছুটিতে আমি নেই...আমার খারাপ লাগে।খারাপ লাগে বলেই লিখতে বসে...লেখার উদারতা আমাকে অনেক শিখিয়েছে...তাই এতো কিছুর পরেও জীবনে প্রথম আজ রাত ৭টা থেকে সারা কলকাতা ঘুরবো...কোথাও তোমাদের সাথে দেখা হয়ে যাবে...সিনেমার পর্দায় এখন হাত ডুবিয়েছে মহাকাশ...আপাতত সব সৃষ্টিরা মিশে যাক...যাক মিশে। ... ...
আঁতলামির সঙ্গে মাতলামির এই দ্বন্দ চিরকালের, এ দ্বন্দ সহজে মিটবার নয়। যুগ যুগ ধরে আঁতেলরা মাতালদের হেয় করবার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন গান লিখে, পদ্য লিখে, পোস্টার বানিয়ে, লেকচার দিয়ে, সব রকম ভাবে! ফলে মাতালদের চিরকালের বদনাম! তবে কয়ালের মাঠের ঘটনার পর আপাতত বেশ জোর দিয়েই বলা যায়, অবশেষে মাতালরাও জেগে উঠেছেন। মাতালদের জন্য বিশেষ স্কুল ও কলেজ খোলা হয়েছে – যেখানে সব রকমের মাতলামী সহজ ভাবে শেখানো হবে। মিন্টো পার্কের কাছে লা মাতালিয়া স্কুলে এখন ছাত্র ছাত্রীর কী ভিড়! আর লেক রোডে দারুচন্দ্র কলেজও নাকি দারুন চলছে। খেলা জমে উঠেছে – দেখা যাক শেষ পর্যন্ত কে জেতে।। ... ...
ঢাকায় মদ বেশ দামী। বিশেষত বিদেশী মদের ওপর আবগারী শুল্কের হার অত্যন্ত বেশি। অবশ্য, রেজিস্টার্ড বারের বাইরে শস্তার মদও মেলে। ঢাকাতে আমি সর্বত্র দেখেছি “বাংলা মদ” নামে ঘরে তৈরি সবচেয়ে শস্তার মদ তৈরি এবং বিক্রি হতে। ঢাকার পুরনো এলাকাগুলোতে এই বাংলা মদ এখনও মেলে। এক লিটারের দাম ৩০০ টাকা। এর মূলত খরিদ্দাররা হল ঝাড়ুদার, চামার, ডোম, দেহব্যবসায়ী এবং ইঞ্জিনীয়ারিং আর মেডিকেল কলেজের ছাত্ররা। আসলে এটা হল জীবনদায়ী ওষুধ বানাবার জন্য শস্তায় বিদেশ থেকে আমদানী করা মিথাইল মেশানো অ্যালকোহল। প্রত্যেক বছর এই বিষাক্ত মেথিলেটেড স্পিরিট খেয়ে প্রচুর লোকের মৃত্যু ঘটে। অবশ্য, ঢাকায় খানদানী মদ্যপায়ীর সংখ্যাও কম নেই। তাদের কেউ কেউ সামাজিক স্তরের অনেক ওপরের দিকে বাস করেন, ঢাকার খানদানী এলাকায় তাঁদের বাড়ি, দামি গাড়ি, বিদেশি পাসপোর্ট থাকে তাঁদের কাছে, অথবা খানদানী ক্লাব বা ডিলারদের সঙ্গে তাঁদের ওঠাবসা থাকে। বাকিরা হল মুখ্যত নতুন প্রজন্ম, যারা কর্পোরেট মিডিয়া হাউস, মোবাইল ফোন কোম্পানি, এনজিও বা বিজ্ঞাপন এজেন্সির হাত ধরে বড় হয়েছে। এই বিশাল মাইনের প্রফেশনালরা খুব দ্রুত বেড়ে উঠেছে ১৯৯০-এর মাঝামাঝি থেকে, সামরিক শাসনের শেষ হবার পরে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের সাথে সাথে। ... ...
ড্রাগের জীবন আর মদ্যপানের জীবন একেবারেই আলাদা! মদ্যপানের একটা সামাজিক লেনদেন আছে। তবে ঢাকা আর দেশের বাদবাকি শহরগুলির মধ্যে এক বিরাট ড্রিংকিং-ডিভাইড শক্ত ভাবে প্রতিষ্ঠিত। ঢাকায় থেকে ভাবাই যায় না বাইরের বিভাগীয় শহরগুলির (চট্টগ্রাম স্পেশাল) কী নিদারুণ অবস্থা... জেলা বা উপজেলা তো আবছা... ধনী বা গোছানো কর্পোরেট তরুনদের কথা আলাদা... কিন্তু বাকি মদ্যবিত্তদের কত যে নিপিড়নের আর না পাওয়ার ভিতর দিয়ে যে দিন যাপন করতে হয়! তবে কয়েকটা হটস্পট আছে... একটু যোগাযোগ করলে কেরুর একনম্বর বাংলা মদ পাওয়া যেতে পারে... যা এক কথায় অপূর্ব! আমি যে কয়টার কথা জানি: প্রথমেই স্বয়ং দর্শনা (যেখানে কেরুর ফ্যাক্টরি), কুষ্টিয়া, পার্বতীপুর...বগুড়া/ময়মনসিংহ/টাঙ্গাইল। তবে এই জিনিসটাই বহুহাত ঘুরে প্রান্তিক জনপদে গিয়ে কি হয়, তার একটা নমুনা পাইছিলাম কফিল এর সঙ্গে গিয়ে... কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সদর থেকে ৩/৪ কিলোমিটার দূরে এক নির্জন গ্রামে বসে পান করতে গিয়ে! কই মিল গেটের মিষ্টি গন্ধযুক্ত দেশি সখি... আর কই পলিথিনে আনা কলের পানির সঙ্গে কয়েক ফোঁটা হোমিওপ্যাথি গন্ধ। চেনা লোকের কাছ থেকে আনা বলে এতে সে ঘুমের ঔষধ মেশায় নাই। কিন্তু কোনই মেরিট নাই। ... ...