যেভাবে বারবার 'পরিবেশ, বাস্তুতন্ত্র ধ্বংসকারী' ইত্যাদি হালকাভাবে বলে দেওয়া হচ্ছে – সেটাও খুব তথ্যের ওপর দাঁড়িয়ে নেই। পাওয়ার গ্রিডের বেশ কিছু ক্ষয়ক্ষতি রয়েছে, ডিটেলে ক্ষতির পরিমাণ লিপিবদ্ধও করা আছে। সেগুলো মূলতঃ যখন টাওয়ার বসানো আর তার লাগানো হচ্ছে, সেই সময়কার এককালীন ক্ষয়ক্ষতি। কিন্তু কোথাও এমন উদাহরণ নেই যে চাষের জমির ওপর দিয়ে হাই ভোল্টেজ লাইন গেলে সেখানে আর চাষ করা যায় না। বা ফসলের উৎপাদন মারাত্মক ব্যহত হয়, মাছ মরে যায় – ইত্যাদি ইত্যাদি। বরং এই অভিযোগগুলোর স্বপক্ষে একটাও প্রামাণ্য কেস স্টাডি নেই। সায়েন্টিফিক কমিউনিটির (যারা বিজ্ঞান গবেষণার কাজ করে) মধ্যে এরকম কোনো কনসেন্সাস বা ঐক্যমত্য তো দূরস্থান, 'একাংশের মধ্যে সিরিয়াস কনসার্ন' – এরকম কিছুও শোনা যায় না । গোটা পৃথিবীজুড়ে লক্ষ লক্ষ কিলোমিটার ব্যাপী হাই ভোল্টেজ ট্রান্সমিশন লাইন আছে। চাষের জমি, পুকুর, ভেড়ি – এসবের ওপর দিয়েই আছে বহু দশক ধরে। চাষ, মাছের ভেড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে – এরকম অভিযোগ শোনা যায়নি। সত্যিই যদি যেত, যদি একটা অঞ্চলেরও বাস্তুতন্ত্র পরিবর্তিত হয়ে থাকতো গত পঞ্চাশ বছরে, তাহলে সেটার প্রমাণ থাকতো চোখের সামনেই। সেটা একটা উদাহরণ হয়ে যেত। কিন্তু শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা প্রযুক্তি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। তবে আমাদের চোখ কান সবসময় খোলা রাখা উচিৎ। পৃথিবীতে চাকা আবিষ্কারের সময় থেকে শুরু করে আজ অব্দি একটাও এমন প্রযুক্তি বোধহয় নেই যার কোনো পরিবেশগত কুপ্রভাব নেই। আর বিজ্ঞান, প্রযুক্তি – এই কথাগুলো শুনলেই সেগুলোকে অন্ধভাবে ভক্তি শ্রদ্ধা করারও কিছু নেই। ভবিষ্যতে যদি কোনো ক্ষতি সত্যিই চোখে পড়ে সেগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই দেখতে হবে। ... ...
টিভি যাতে বেশি দেখতে না পারি এই বিষয়ে মালকিনের নজর ছিল অবাক করার মত ,পাঁচ মিনিট দেখতে না দেখতেই রান্না ঘরে অকারণে ডাক পড়ত আর আমার মেজাজ গরম হয়ে যেত , পরে রাগ করে টিভি দেখাই ছেড়ে দিলাম । তবে বিজয় দাদা ‘ কহোনা প্যার হ্যায় ‘ দেখিয়েছিল । বাড়িতে ভিডিও প্লেয়ার এলো , মেঝেতে শতরঞ্চি বিছানো হল আর কিছুক্ষণের মধ্যে ম্যাজিক । এই লোকটা মানুষ ? এই রকম রবারের মত শরীর ব্যাঁকায় কীভাবে । আমি প্রায় পাগলের মত গিলতে থাকলাম । আমি তখন হিন্দির সাথে সড়গড় কিন্তু গল্পে কোন আগ্রহ নেই যত আগ্রহ ওই পাগলের মত শরীর দোলানোতে । সিনেমা শেষ হল । ফিরে গেলাম রান্না ঘরের কোনে আমার বিছানায় ,কিন্তু ঋত্বিক রোশন আমার মাথায় কেমন যেন ঝড় তুলতে থাকলো । একা একা অন্ধকার রান্না ঘরে শুরু হল ঋত্বিক রোশনকে নকল করার চেষ্টা । নেশা ধরে গেল বলতে পারেন । সময় অসময়ে নেচে নিতাম -একদিন হঠাৎ বিজয় দাদা আমার নাচ দেখে হেসেই কুটোপাটি । আমি তো লজ্জায় লাল । পরের দিন বিজয় দাদা কেবল আমার জন্য আবার ভিডিও প্লেয়ার ভাড়া করে আনলেন । চুক্তি হল আমাকে ঋত্বিক রোশনের মত নেচে দেখাতে হবে । ... ...
আমি আলপনা,আলপনা মন্ডল,প্রথাগত অর্থে অশিক্ষিত। দাদার সংসারে ক্লাস ফোর এ ছাত্রবন্ধু কিনে দেয়নি বলে অভিমানে লেখা পড়া ছেড়ে ৯বছর বয়েসে কলকাতা পালিয়েছিলাম।আর পড়াশোনা হয়ে ওঠেনি , আমি আর কোনদিন ছাত্রবন্ধু কিনে উঠতে পারিনি। আমার কম্পিউটার নেই,চালাতেও পারিনা, আধুনিক ফোনও নেই (তবে জিও আছে) এমনকি আপনাদের এই সভায় আমার প্রথম পোস্ট টি লিখতেও কেউ আমাকে সাহায্য করছেন। তবে শিখে যাব,পারবই। গুরুচণ্ডা৯ নাম দেখে আগ্রহ জেগেছিল, কিন্তু গ্রুপে সবাই দেখলাম বামুন/কায়েত তবুও আমার মত চণ্ডাল -অশিক্ষিতা কে জায়গাবদল করবার আমার কথা বলবার সুযোগ দেওয়ার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ। আমাদের কথা কেউ মনেও রাখেনা। আমি এখনও নিজে কম্পিউটার চালাতে জানিনা, কম্পিউটারে কী করে টাইপ করতে হয় জানিনা। আধুনিক ফোন নেই তবে জিও আছে । আমি বলি,ব্যাঁকা ট্যারা করে রুল টানা কাগজে লিখি, কাটি, মুছি, কেউ আমাকে সাহায্য করেন,তিনি সাজান গোছান, আমাকে পড়ান, মতামত নেন তারপর পোস্ট করেন। এখনো আমি পুরোপুরি লেখিকা নই কিন্তু কথা আমার । আমার নিজের জীবনের । ... ...
১৯৪৬ ও ১৯৭৮ সালেও টাকার ডিমনেটাইজেশন ঘটেছিল। তার ফলে কালো টাকা ও জাল টাকা নির্মূল হয়নি। বরং, সময়ের সঙ্গে বেড়েছে। ন্যাশনাল ইনস্টিউট অফ পাবলিক ফিনান্স অ্যান্ড পলিসির হিসাবমতো, ১৯৭৫-৭৬ আর্থিক বর্ষে কালো টাকার পরিমাণ ছিল জাতীয় আয় (জিডিপি) এর ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। ১৯৮০-৮১ তে তা বেড়ে হয় ১৮ থেকে ২১ শতাংশ। বর্তমানে কালো টাকা জাতীয় আয়ের ২৩ থেকে ২৪ শতাংশ। সুতরাং, তত্ত্বের পাশাপাশি সময়ের ধারায় বাস্তবেও এটা প্রমাণিত যে, ডিমনেটাইজেশন নীতি কালো ও জাল টাকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার আদর্শ অস্ত্র নয়। তাত্ত্বিক দিকটা এবার একটু বিশদে দেখা যেতে পারে। আগেই বলেছি যে, কালো টাকা আসল অপরাধী নয়। আসল অপরাধী হল কালো কারবার। অনেকসময়ই ওয়েলথ, অ্যাসেট ও মানি, এমনকী আয়ও সমার্থক ব্যবহার হয়ে থাকে। অর্থনীতিতে এগুলির প্রভেদ গুরুত্বপূর্ণ। ওয়েলথ, অ্যাসেট ও মানি এই তিনটিই স্টক কনসেপ্ট অর্থাৎ, একটি সময়-বিন্দুতে এদের পরিমাপ করা দস্তুর। ... ...
৮ই নভেম্বর, ২০১৬ মোদিজি নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। তারপর প্রায় ৪৫ দিন কেটে গেছে। খুব শিগগিরি ৩০ ডিসেম্বর আসতে চলেছে। দুটো কারণে ৩০ ডিসেম্বর তারিখ গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব বাতিল ৫০০ আর ১০০০ টাকার নোট ব্যাঙ্ক বা ডাকঘরে জমা করতে হবে। দ্বিতীয়ত, মোদিজি এক বিখ্যাত বক্তৃতায় দেশবাসীকে বলেছেন, আমাকে ৫০ দিন সময় দিন।1 ৫০ দিন পর যদি কোনো খামতি বা দুর্নীতি আমার কাজে পান, শাস্তি দেবেন আমায়। মাথা পেতে নেব। তো মোদিজির ৫০ দিনের মেয়াদ ৩০ ডিসেম্বরের আশেপাশে খতম হচ্ছে। এই ৪৫ দিন থেকে কী জানতে পারলাম? ৩০ ডিসেম্বরের পরই বা কপালে কী আছে? ... ...
বাংলার ভাগ্যাকাশে এখন ব্যোমকেশের দুই সত্ত্বাধিকারী, ঈশেন আর সত্যবাহন, ইয়ে মানে দত্তবাবু আর শীলবাবু। দত্তবাবু ল্যাপ শুরু করেছিলেন আগে, অন্যজন সদ্য যোগ দিয়েছেন। ওনার আগের ফিল্মটা দেখে মনে হয়েছিল, বজরা টজরা এনে ট্রিবিউট দিয়ে ফাটিয়ে দিতে চাইলেও, জ্ঞানের বহর প্রথমজনের চেয়ে একটু কম হওয়ায় হয়তো একটু বেশি সহনীয় হবে। কিন্তু এই পর্ব দেখে উপলব্ধি: এটা বাস্তবে দত্ত vs দত্ত। আসলে ট্রিবিউটের মধ্যেই কেলোটা লুকিয়ে ছিল। এতে উনি ট্রিবিউট দিয়েছেন স্বয়ং অঞ্জন দত্তকেই, একটু আদিবাসী নাচে আগন্তুক, রেসকোর্সের বাইরে সীমাবদ্ধ ইত্যাকার কিছু হালকা সত্যজিৎ বাদ দিলে। লোকেশন সেই এক ডুয়ার্স, ভিলেন সেই এক কৌশিক, গ্রেফতারির আগের সেই এক ধাঁচের বক্তৃতা, এবং জ্ঞানের বাটখারা। ফিরে এসে মনে হল ন্যাশনাল এনথেম ও ন্যাশনাল সং দিয়ে মোড়া এই সিনেমাটিতে কী কী চমক লাগলো, তারও লিস্টি করা দরকার। শুরুতে ড্রোন ক্যামেরায় রেল লাইনের বিহঙ্গদৃষ্টি অতি চমৎকার, কিন্তু তারপরেই চমক। রাইটার্সে বসে আছেন স্বয়ং অরিন্দম শীল, টেবিলে লেখা 'মুখ্য সচিব'। এবং তার পর থেকেই সত্যবতী, অজিত, বড় দারোগা সবাই বিন্দাস বলে যাচ্ছে মুখ্য সচিব অমুক, মুখ্য সচিব তসুক। ১৯৪৮এর আগস্টের আগেই 'মুখ্য সচিব' শব্দের এরূপ প্রসার ও গ্রহণযোগ্যতা দেখে তাক লাগার শুরু। আমার সহদ্রষ্টাকে বললাম, ইয়ে তখনও মাউন্টব্যাটেন আছেন, সংবিধান আসতে বহু দেরি তো, তিনি বললেন, চুপ করে দ্যাখ। দেখলাম। এবং এটা হজম করার পর আর কষ্ট হল না যখন দেখলাম সেই মুখ্য সচিবের ঘরের দেওয়ালে অখণ্ড বাংলার ম্যাপ, তিনি নিজেই সান্তালগোলার তদন্তের দায়িত্ব দিতে তো এসেইছেন সরকারের তরফ থেকে, সেই সান্তালগোলার সম্ভাব্য কোন কোন ব্যবসায়ী আসামী হতে পারেন তার লিস্টিও তিনিই পকেটে নিয়ে ঘোরেন, দারোগা নন, এসপি নন, এমনকি সিপিও নন। তা সেই তথাকথিত নগণ্য জায়গার ওসিকে সরাসরি নির্দেশ দেন মুখ্য সচিব, এবং তার পরেও সেই সচিবের পাঠানো খাস গোয়েন্দার সামনে সরাসরি তাচ্ছিল্য, হুমকি ইত্যাদি দেখাতে সাহস করেন আংরেজ জমানার সেই দারোগা। চুপ করে দেখা ছাড়া উপায় নেই। আমি তো কোন ছার, ব্যোমকেশ-ই চুপ। ... ...
এই লেখা যখন লিখছি, ইন্টারনেট তখন উত্তপ্ত আলোচনায় ব্যস্ত। তিরিশে নভেম্বর, দুহাজার ষোলোর যুগান্তকারী রায়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে ছবি শুরুর আগে বাধ্যতামূলকভাবে জাতীয় সংগীত শোনানো হবে। সত্যিই তো, ক্ষতি কি? এতে যখন ক্ষতি কিছু নেই, তাহলে আলোচনাতেও ক্ষতি নেই। মূল আলোচনা শুরু করবার আগে দু-চার বাজে কথা বলে রাখা যেকোনো ভালো লেখার লক্ষণ। যেমন ধরুন, শোনা যায়, চীন-ভারত যুদ্ধ চলাকালীন, ভারতবর্ষের সমস্ত প্রেক্ষাগৃহে, নিয়ম করে জাতীয় সংগীত শোনানো হতো। এই নিয়মের চল নাকি ছিল সত্তর দশকেও। না, এ ধরণের কোনো রায় এর আগে কোনো আদালত না দিয়ে থাকলেও, সরকারবাহাদুর মাঝে মধ্যেই এজাতীয় নীতি বা নিয়ম তৈরি করে থাকে। বস্তুত, এই নীতি নির্ধারণের কাজ সরকারেরই, বা আরো স্পষ্ট করে বলতে গেলে, আইন সভার। নীতি নির্ধারণে কোনো ভুল হচ্ছেনা কিনা, এবং, নির্ধারিত নীতি না মানবার শাস্তি দেয়ার কাজ আদালতের। ... ...
এইসব অর্বাচীনদের লাল চোখকে ভয় পেয়ে তো আর প্রশ্ন না করে থাকা যায় না। প্রশ্ন করাই ভারতবাসীর স্বভাব। নচিকেতা যমকে পর্যন্ত প্রশ্ন করতে ছাড়েনি, আর জিভ কেটে দেওয়ার হুমকি দিয়েও ক্ষণার প্রশ্নবান থামানো যায়নি। তাই আসুন, কয়েকটা সোজা প্রশ্ন করি, তার সোজা উত্তর চাই। রাতারাতি কেন এত টাকা বাতিল করা হল? ... ...
ডিমানিটাইজেশন বা বিমুদ্রাকরণের যে নীতিটি সরকার আম জনতার ওপর চাপিয়ে দিলেন কালো টাকা উদ্ধারের নাম করে, তার নানাবিধ সমস্যা নিয়ে ইতোমধ্যেই প্রবল আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। অধিকাংশ বিরোধী দল সংসদ থেকে রাস্তায় প্রতিবাদে সামিল। জনগণ অবর্ণনীয় কষ্টের মুখোমুখি। ব্যাঙ্ক কর্মী থেকে লাইনে দাঁড়ানো বৃদ্ধ মানুষ - শহীদের সংখ্যা আশি পেরিয়ে গিয়েছে। ... ...
ধার দেওয়ার জন্য বন্ধন ঋণ সংগঠন তৈরি করে দিয়েছিল। তারা ঘাড় ধরে টাকা আদায় করত – সুদ? জিগায়েন না কত্তা। বন্ধন নামেই গ্রামে এখোনো আতঙ্ক ছড়ায় – হপ্তান্তে বন্ধনের নাম শুনলেই বৌ-ঝিদের রক্ত হিম হয়ে যায়। গ্রামে বড় পুঁজি তাদের কাজ দেখে খুশ হয়ে ব্যাঙ্ক বানিয়ে দিয়েছে, যাতে তারা আরও বড় ভাবে গ্রামের টাকাটা লেপেপুঁছে আনতে পারে। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাঙ্ক ইন্দিরা-সিপিআই জামানার পরে গ্রামে ঢুকেও গ্রামীণ মধ্যবিত্তকে সেবা দেওয়া ছাড়া বড় পুঁজির খুব বেশি সেবা করতে পারে নি। ছোট ঋণ সংগঠনের শিশুমৃত্যুর হার খুব বেশি। বড় বড় কর্পোরেট চাকরি ছাড়িয়ে, বড় পুঁজি তাদের সেবা করা সেরা মাথাদের নিয়োগ করেছিল গ্রামের সম্পদ দখলে ছোট ঋণ সংগঠনে। বহু ছোট ধার দেওয়া সংগঠন থেকে সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট থেকে বেছে নিয়েছে বন্ধনকে। খুব বেশি কেউ পারে নি – পারল একমাত্র বন্ধন। তারাই কর্পোরেটদের একমাত্র বাজি। ... ...
৫০০-১০০০ এর নোট বাতিল কেন ? মোদীর এবং সরকারী যুক্তি - ফেক ভারতীয় কারেন্সির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদী,ড্রাগ এবং আর্মস স্মাগলারদের মত সরকারবিরোধী কার্যকলাপের অর্থের স্রোত বন্ধ করে দেওয়া । ৭০ বছর ধরে চলে আসা কালো অর্থ ব্যবস্থার মাজা ভেঙ্গে দেওয়া ইত্যাদি । কিন্তু যদি ধরুন আমাদের নূতন নোট ছাপবার দ্বায়িত্ব সরকার এমন এক কোম্পানির ওপর ন্যস্ত করে যাঁদের ভারত সরকার ইতিমধ্যে পাকিস্তানে নকল ভারতীয় টাকা ছাপানোর কাজে সহায়তা করবার অপরাধে ব্ল্যাক লিস্টেড করে রেখেছে ? চমকে উঠবেন না ! পড়তে থাকুন, আপনার -আমার বিপদের কথা । ... ...
কালো টাকা উদ্ধার করা হবে কোথা থেকে? মানে কালো টাকাদের সাকিন কোথায়? মূলত তিন জায়গায়। এক, বিদেশে। সুইস ব্যাঙ্ক জাতীয় জায়গায়। ডলার বা ইউরোরূপেণ সংস্থিতা। দুই, এক্ষেত্রে সোনা, ফ্ল্যাট, জমি ইত্যাদি বহুরূপেণ সংস্থিতা। মানে বেহিসেবি টাকাগুলো এইসবে কনভার্ট করে নেওয়া হয় বা হয়েছে। তিন, বাড়িতে, বা লোকে যেমন বলছে কমোডে, বালিশের ওয়াড়ে নোট হিসেবেই। আরও সুবিধার জন্য ধরে নিই পাঁচশো-হাজারের নোটরূপে বিরাজিত। বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য কেবলমাত্র তিন নম্বরটা। নিন্দুকেরা বলছে, শতাংশের বিচারে এই তিন নম্বরটা নেহাতই নগণ্য। কত? মাত্র ৬ শতাংশ!! আচ্ছা, ছেড়ে দিন। আমি নিন্দুকের কথা বাদই দিই। কালো টাকার এক্স্যাক্ট স্ট্যাটিস্টিক্সটা যেহেতু ধোঁয়াশাপূর্ণ। তাই বেকার কুযুক্তির অবতারণা হতে পারে। ... ...
কারা নগদে কেনাবেচা করেন? একটা অংশ অবশ্যই অসাধু ব্যবসায়ীরা, কেননা বৈদ্যুতিন কেনাবেচাতে রেকর্ড থেকে যায়। তবে অনুমান করা শক্ত নয় দুর্বল আর্থিক সামর্থের ক্রেতা বিক্রেতাদের “ক্যাশলেস ইকনমিতে” উত্তরণ হয় নি। তাঁরা ওই ৮৬%-এ আছেন। কেন এতো লোক নগদে কেনাবেচা করেন? কারণ খুব কম লোক ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫৪%-এর ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট আছে। আবার মোট এ্যাকাউন্টের ৪৩ % সুপ্ত (ডরম্যান্ট) অবস্থায় পড়ে আছে। অর্থাৎ, মাত্র ৩০% লোক ব্যাঙ্ক এ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেন। এদের মধ্যে একটা ছোট ভগ্নাংশের কাছে আছে প্লাস্টিক টাকা কিম্বা নেট ব্যাঙ্কিং। অর্থাৎ এক বিশাল সংখ্যাগুরু জনতা নগদ দিয়ে কাজকারবার চালাচ্ছে। যাদের কার্ড আছে তারাও অনেক কেনাবেচা নগদে করতে বাধ্য থাকেন। ক্রেডিট কার্ড থাকলেও খুব কম লোকই ক্রেডিট কার্ড দিয়ে পাড়ার বাজার থেকে তিন মুঠো পালং শাক কেনেন, বা রিক্সাওয়ালার ভাড়া চোকান। ... ...
প্রথমে কালো টাকা বা কালো ধন কাকে বলে তা পরিষ্কার হওয়া দরকার। কালো টাকা বা কালো ধন বলতে কিন্তু আমরা অজান্তেই দুটো পৃথক জিনিসের কথা বলি। একটা হলো কালো আয় অন্যটা কালো সম্পদ। কালো আয় হলো সেই আয় যা আয়করের আওতায় পড়া সত্ত্বেও তার ওপর কোনো কর দেওয়া হয়নি অথবা অবৈধ কারবার থেকে করা আয়। কালো সম্পদ হলো কালো আয় জমে জমে যে ধনসম্পদ হয়েছে সেটা। একজন মানুষ কার্যক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে আয় করছে আর সেই আয়ের একটা অংশ জমে জমে হচ্ছে সম্পদ। যেমন কল থেকে যদি টিপ্ টিপ্ করে জল পড়ে সেই পড়ন্ত জল হলো আয় আর সেই কলের নিচে যে বালতিটা রয়েছে আর তাতে যে জল জমা হচ্ছে সেটি হলো সম্পদ। ... ...
দেশপ্রেমীঃ সীমান্তে সেনারা মারা যাচ্ছে আর তুমি দেশের জন্য একটু লাইনে দাঁড়াতে পারবেনা? নির্লজ্জ! জেএনইউ! দেশদ্রোহী! জেএনইউ ছাপ ২ঃ ভাই, দশ টাকা ধার হবে? চা খাবো। যাদবপুর ছাপঃ ভাই, দশ টাকা ধার হবে? চা খাবো। পোতিবাদ করে গলা শুকিয়ে গেছে। ... ...
বারে বারে সে নিজের মাউথ অর্গান তুলে নিয়েছে ঠোঁটে। যা যা সুর শুনছে, সেগুলোকে নকল করবার চেষ্টা চালিয়ে গেছে। সবসময় পারেনি। কিন্তু কোনও কোনও মুহূর্তে তার সুর হুবহু টিলার মাথার সুরের সংগে মিলে গেছে। রোমাঞ্চিত হয়ে উঠেছে তার সারা শরীর। আর যখনই এটা হয়েছে, ডেসমন দেখেছে টিলার মাথায় লোকগুলো গান বাজনা থামিয়ে দিয়েছে। থামিয়ে দিয়ে তার দিকে যেন তাকিয়ে থেকেছে। ডেসমনের গায়ে কাঁটা দিয়েছে। আপনা হতেই চুপ হয়ে গেছে তার মাউথ অর্গানও। তারপর সে দেখেছে, লোকগুলো সকলে যেন কোমরের ওপর থেকে শরীর একটু ঝুঁকিয়েছে তার দিকে। তারপর আবার শুরু করেছে গান। লোকগুলো কি তাকে অভিবাদন জানাল? ডেসমন ঠিক বোঝে না, তবে এরকম ভংগী সিনেমাতে দেখেছে। দেখেছে মাথায় টুপি কালো কোট আর মাছি গোঁফওয়ালা একটা লোকের সিনেমাতেও। কাউকে সম্মান জানাতে হলে মানুষ এমন ভাবে নুয়ে পড়ে। ডেসমনও মাথা ঝোঁকায়। প্রণাম করে মনে মনে। তারপর আবার মাউথ অর্গান তুলে নেয়। ... ...
স্বপ্নে বন্ধু রাসেলের লগে দেখা। কী যানি কইতেছিলাম। উ কইল, কথা সংক্ষেপ কর। মেয়েরে আনতে স্কুলে যাইতে হইব। আমি কইলাম, চল..আমিও যামু…আমারও যাইতে হইব। আমরা একটা মাঠের মধ্যে দিয়া হাঁটতে ছিলাম। মাঠে পানি জমছে। বৃষ্টির পানি। আমরা একটা সরু আলপথ দিয়া হাঁটতে ছিলাম। বৃষ্টির পানিতে মাছেরা সাঁতার কাটতেছে। মাছগুলারে চিনতে পারতে ছিলাম। খইলস্যা মাছ। ... ...
মহানগরের পর্দা সরালেই মহারগড়ের প্রসেনিয়াম! কখনও আপনি দর্শক, কখনও আপনিই নটরাজ। হয় ফ্যালফ্যাল, নতুবা, স্বপ্নের বডি কাঁধে নিয়ে তপ্ত-মটকা ধেই ধেই। কোনও নাট্যকার নেই। যখন ইচ্ছে যেখানে ইচ্ছে যা ইচ্ছে। সিগনাল-তোড়ু বাইক থেকে ভিড়মি-জাগানো মাইক, কোলকাতা পুলিশের কেচ্ছা হইতে পাবলিক প্লেসের পেচ্ছাপ, দাদার হালুম টু চাঁদার জুলুম – মোদ্দা প্লট, কল্লোলিনীর কল খারাপ, আর মিস্তিরিরও ফোন অফ। ছিল তিলোত্তমা, হলো তিলোঃট্রমা! অতেব, টানার যেমন হ্যাঁচড়া, খিচুরির যেমন ছ্যাঁচড়া, কলকাতার তেমন ক্যাচড়া। জড়িয়ে পড়লেন দীপাংশু আচার্য ... ...
দেশভাগের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে আছে অনেক দাঙ্গা, অনেক রক্তপাত, অনেক হানাহানির স্মৃতি। তার কিছু নথিভূক্ত, বেশির ভাগই নয়। যে হত্যালীলা ঘটে গেছে ১৯৪৭ সালে এই উপমহাদেশে, তার তুলনা বিশ্বের ইতিহাসে খুব কমই আছে। আর পুরোটাই ঘটেছে ধর্মের নামে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই, নবগঠিত সরকারের অক্ষমতার ফল হিসেবে, কিংবা তাদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। দেশভাগের রক্তপাত বলতে আমরা মূলত পড়েছি এবং শুনেছি পঞ্জাব আর বাংলার কথা। এর বাইরেও, জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে নীরবে ঘটে গিয়েছিল ভয়ংকর সাম্প্রদায়িক হানাহানি, যে ইতিহাস প্রায় কোথাওই নিরপেক্ষভাবে নথিবদ্ধ করে রাখা হয় নি। বেদ ভাসিন নামটা আমাদের অনেকের কাছেই হয় তো সে রকম পরিচিত নয়। ইনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কাশ্মীরি জার্নালিস্ট। শুধু জার্নালিস্ট পরিচয় দিলে এঁর জীবনের ব্যাপ্তির সম্বন্ধে সম্যক ধারণা করা যাবে না, সারা জীবন ধরে তিনি কাশ্মীর আর কাশ্মীরিদের জন্য প্রচুর কাজ করে গেছেন, ইন্টারনেটে একটু সার্চ করলে অনেক লেখাপত্র পাবেন। ভারত এবং পাকিস্তান, উপমহাদেশের দুটি টুকরোতেই তিনি বিশেষভাবে সমাদৃত ছিলেন। ভারত যখন স্বাধীন হয়, তখন তিনি হাইস্কুলের ছাত্র, সতেরো বছরের কিশোর এবং কাশ্মীরের রাজনীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত। সারা জম্মু কাশ্মীর যখন সাম্প্রদায়িক হিংসার আগুনে জ্বলছে, তখন গুটিকয় শুভবুদ্ধিসম্পন্ন শান্তিকামী ছাত্র তাঁর নেতৃত্বে লড়ে চলেছিল শান্তির পক্ষে। নামকরা কাশ্মীরি দৈনিক কাশ্মীর টাইমসের তিনি সম্পাদক ছিলেন দীর্ঘ ছত্রিশ বছর – ১৯৬৪ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। গত বছর, সাতই নভেম্বর ২০১৫, ছিয়াশি বছর বয়েসে তাঁর দেহাবসান হয়। এই লেখাটি শ্রী ভাসিনের একটি পেপারের বঙ্গানুবাদ, যা তিনি পড়েন ২০০৩ সালে জম্মু ইউনিভার্সিটিতে, Experience of Partition: Jammu 1947 শিরোনামে। কাশ্মীর টাইমসের বর্তমান সম্পাদক, বেদ ভাসিনের কন্যা অনুরাধা ভাসিনের কাছ থেকে এই পেপারটির মূল লিখিত রূপ পাওয়া গেছে সম্প্রতি। মূল ইংরেজি পেপারটি এখনও পর্যন্ত অনলাইনে কোথাও পাওয়া যায় না। ... ...
গত কয়েক দশক ধরে বস্তারে যখন হু হু করে ঢুকে পড়তে লাগল গেরুয়া-ঝাণ্ডা হাতে শঙ্করাচার্য্যের চেলারা, লাল ঝাণ্ডা হাতে মাওয়ের চেলারা, এবং তার পর পর ভয়াল অত্যাধুনিক অস্ত্র হাতে ভারতরাষ্ট্রের সউর্দি চেলারা, তখন সেই প্রহার আর সইতে পারল না এই কৌম-কমনীয় যৌব-যাপন। চিরতরে বন্ধ হয়ে গেলো শান্ত অরণ্যের বিটপীছায়ায় লালিত যৌবনের পাঠশালাগুলো। আর্য্য-হিন্দু সিদ্ধান্ত অথবা কালচারাল-রেভলিউশান-মণ্ডিত সিদ্ধান্ত – কোনোটাতেই যে এর স্থান নেই! গ্রামের গাইতা-প্যাটেলেরাও যে তাদের হাজার হাজার বছরের টোটেম হারিয়েছে পঞ্চায়েতের সরপঞ্চ-সচিবদের অশোকস্তম্ভিত শিলমোহরের সামনে। তাই এখন গ্রামকে গ্রাম অতীতসমৃদ্ধ যাপন-স্মৃতির হারিয়ে যাওয়াদের ব্যথা বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শূন্য ঘোটুল-প্রাঙ্গণ। ... ...