এই গল্প যেন তার নিজের জীবনে খুঁজে বেড়ানো একাকীত্বের যন্ত্রণা থেকে মুক্তির গল্প। এভাবেই সে হারিয়ে যেতে চেয়েছে নানা চরিত্র হয়ে বারবার। অথচ চেনা পাকদণ্ডীর মধ্যেই ঘুরপাক খেয়ে চলেছে এতগুলো বছর ধরে। তার জীবনেও তো আসতে পারত সেই জাদুকর যে তাকে সোনার কাঠি বুলিয়ে ঘুচিয়ে দিত সব বিষাদ। ... ...
ক্ষমতার লোভ বরাবরই ছিল, তার ওপর বড় নেতা আর মন্ত্রী হওয়ার উচ্চাশা তাঁকে নিয়ে গেলো হিন্দু মহাসভায়। তিনি তাঁর ডায়েরিতে লিখছেন যে তৎকালীন সরকারে যোগ দেওয়া তাঁর মত সাচ্চা হিন্দুর পক্ষে সম্ভব নয়। কিন্তু দু'বছরের মধ্যেই, ১৯৪১ সালের ১২ই ডিসেম্বর, তিনি ফজলুল হকের মন্ত্রিসভায় যোগদান করলেন অর্থমন্ত্রী হিসেবে। রাজনৈতিক জীবনে বারংবার তাঁর দল বদল করা কিন্তু শ্যামাপ্রসাদের মনের অস্থিরতার পরিচয় দেয়না। বরং উল্টোটাই। অত্যন্ত 'বিচক্ষণতার' সঙ্গে মওকা বুঝে, হাওয়া যেদিকে যাচ্ছে, বিবেক বিসর্জন দিয়ে সেদিকে যেতে তিনি কখনোই পিছপা হননি। ... ...
সাফল্যের ইতিহাস উল্লেখ্য বিষয় হলেও সেই ইতিহাস লিপিবদ্ধ করা এই প্রবন্ধের মূল উদ্দেশ্য নয়। প্রবন্ধের প্রধান উদ্দেশ্য পাঠকদের কাছে এই সত্য পরিবেশন করা যে প্রাণঘাতী জীবাণুর সঙ্গে মানব সভ্যতায় সংঘাত এই প্রথম নয়। একশ বছর আগে ১৯১৮-র আর একটি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস যাকে স্প্যানিশ ফ্লু বলা হয়, এক বছরে প্রায় পাঁচ কোটি (৫০,০০০,০০০)মানুষের প্রাণ হরণ করেছিল। শিশু, বৃদ্ধ, তরুণ, জওয়ান কেউ রেহাই পায়নি ভাইরাসের কবল থেকে। ১৯১৮র ভয়াবহ প্যান্ডেমিকের পর এক শতাব্দী পেরিয়ে গেছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক, বৈজ্ঞানিক, এবং প্রযুক্তিগত বিদ্যায় অভাবনীয় উন্নতি সত্ত্বেও, স্প্যানিশ ফ্লুএর চেয়ে শতভাগ দুর্বল কোভিড-১৯-এর হাতে এক বছরে সাতাশ লক্ষ (২,৭২০,০০০)মানুষের প্রাণনাশ কি এই প্রমাণ করে যে রক্তপিপাসু প্রকৃতির হাতে মানুষ আজও অসহায়? ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। চলছে সিম্বামওয়েন্নি থেকে উগোগো অঞ্চলের উদ্দেশে পথচলার কথা। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
ষোড়শ শতক। বাধার বিন্ধ্যাচল টপকে মধ্যযুগীয় দক্ষিণি খিচুড়ির খোঁজ। এক আশ্চর্য কুকবুক সুপশাস্ত্র। কন্নড় ভাষায় রচিত। রচনাকার তৃতীয় মঙ্গরস। বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সেরা সময়ের খানদানি খানাদানার সাক্ষী সে কুকবুক। আর আমরা যাকে খিচুড়ি বলে চিনি, কন্নড়ে তাই হুগ্গি! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
দেশভাগ যেহেতু সংঘটিত হয়েছিল ধর্মের ভিত্তিতে, নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষকে লোক বিনিময়ের মাধ্যমে নির্দিষ্ট স্থানে আসার সুযোগ করে দেওয়া ছিল রাষ্ট্রেরই কর্তব্য। রাষ্ট্র সে কাজ তো করেইনি, উল্টে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা উদ্বাস্তুদের ফেরৎ পাঠানো বা ১৯৫০-এর দাঙ্গার পরেও সে দেশেই তাঁরা যাতে থেকে যান, সেজন্য নেহেরু সরকার দুজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পাঠিয়ে তাদের নিরস্ত করেছেন। বাংলাভাগের উদ্দেশ্য মেনে নিলে পূর্ববঙ্গের সংখ্যালঘুরা পশ্চিমবঙ্গের স্বাভাবিক অংশীদার। দীর্ঘদিন কৌশলে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করার পর, ২০০৩-এ পাকাপোক্ত আইনই করে ফেলা হলো। ... ...
আসামের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা দরকার যে অসমিয়াভাষী জনগণকে আসাম চুক্তির ৬ নং ধারা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাংবিধানিক আইনগত প্রশাসনিক সুরক্ষা দেওয়ার নামে শর্মা কমিটি যে শক্তিশেল প্রয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, তাতে গাঁওপঞ্চায়েত হেকে জেলা পরিষদ, পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা পর্যন্ত অসমিয়া ভূমিপুত্রদের জন্য ১০০% সংরক্ষণ নিশ্চিত হবে। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ১০০% জীবিকা তাদের জন্য সংরক্ষিত হবে। এ ছাড়া হরিশঙ্কর ব্রহ্ম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সমস্ত জমি কেনাবেচার অধিকার অসমিয়া ভূমিপুত্রদের জন্য ১০০% সংরক্ষণ করা হবে। ... ...
আফগানিস্তানকে সি এ এর আওতায় রাখা হল, কিন্তু শ্রীলঙ্কাকে হল না, এই বিসদৃশতার পিছনে একটিই কারণ থেকেছে। তা হল, এই আইন ধর্মীয় নিপীড়নের কথা বলেছে, জাতিগত নিপীড়নের কথা বলে নি। ধর্মীয় নিপীড়নের পিছনেও একটি মাত্র ধর্মকে দায়ী করে এই আইনের প্রণয়ন, তা হল ইসলাম। সহজ বাংলায় ইসলাম-বিদ্বেষই এই আইনের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। শ্রীলঙ্কান তামিলদের উপেক্ষা করাও সেই কারণে, যে তাঁদের দুর্গতির পিছনে মুসলিম-প্রধান কোনও রাষ্ট্রকে দায়ী করা যায় না। ... ...
বহু মানুষ আছেন যাঁরা নিজেদের দাবিগুলো মুখ ফুটে বলেই উঠতে পারেন না, এঁদের মধ্যে অনেকে আছেন যাঁদের দাবি বিষয়ে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। দুর্ভাগ্যের কথা, আমরা যারা নিজের এবং অন্যের মন কী বাত নিয়ে খুব বাতচিত করি, তাদের কাছেও এই দাবি তুলতে না পারা অংশটার গুরুত্ব খুব একটা স্বীকৃতি পায় না। ... ...
বিজেপি কোনও রাজ্যে নির্বাচনে যদি হেরেও যা্য়, তবু বিজেপি সেখানে সরকার গড়তে পারে। বিজেপি সম্পর্কে এখন বলা হয়, জিতলে আমরা সরকার গড়ব, আর হারলে, তোমরা বিরোধী আসনে বসবে। মধ্যপ্রদেশ, কর্নাটক, গোয়া সহ বেশ কিছু রাজ্যে হেরে গিয়েও সরকার গড়ে বিজেপি প্রমাণ করে দিয়েছে, ভোট বা নির্বাচন একটা ধাপ মাত্র, সরকার গড়ার জন্য ভোটে জিততেই হবে, তার কোনও মানে নেই। ... ...
টেকনিকালি উদ্ধৃতির মধ্যের বক্তব্যের সরাসরি কোনো দায় নেবার প্রয়োজন না থাকলেও (যিনি বলেছেন, সেটা তাঁর দায়), নৈতিক দায়িত্বের কিছুটা নিশ্চয়ই লেখক এবং সম্পাদকের উপর বর্তায়। সে দায়, অবশ্যই স্বীকার করা দরকার। করছিও। ভবিষ্যতে, আশা করি, যুদ্ধপরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না, হলে, অবশ্যই এই শিক্ষা কাজে লাগবে। কিন্তু একই সঙ্গে এটুকুও মাথায় রাখতে হবে, যে, পরিস্থিতিটি যুদ্ধক্ষেত্রেরই ছিল। ক্ষয়ক্ষতি, খুন-জখম, মানবিকতার বিরুদ্ধে অপরাধ, সব মিলিয়েই। যে সরকারি দল যুদ্ধক্ষেত্রের হত্যালীলার মধ্যে ঠেলে দিয়েছিল নিজের রাজ্যের অধিবাসীদের, তারও সেই ভয়াবহ অপরাধ স্বীকার করার সময় হয়েছে। এই লেখাটির যাঁরা সমালোচনা করেছেন, তাঁরা এই প্রসঙ্গটি পুনরুত্থাপন করেছেন যখন, তখন আশা করি, এই বিষয়টিও মাথায় রাখবেন। ... ...
তিনদিন পরেই প্রয়াত হলেন রমানাথ রায়। গভীর, শাণিত ও তির্যক তাঁর সৃষ্ট গল্প ও উপন্যাস। তথাকথিত বাস্তবতা ও ফ্যান্টাসির ভেদরেখাও লঙ্ঘিত হয় প্রায়শ। সহমর্মিতা তাঁর সাহিত্যের বড়ো সম্পদ। ১৯৬৬। ‘এই দশক’ পত্রিকা প্রকাশ দিয়ে শুরু হয় ‘শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন’। ছিলেন তার প্রথম পাঁচ পদাতিকের একজন। লিখছেন আকৈশোর বন্ধু ও এ আন্দোলনের সহস্রষ্টা শেখর বসু ... ...
গোগা। একটা গল্প। যা আসলে একটা আশ্চর্য উপন্যাস শুরু হওয়ার (অথবা শুরু না-হওয়ার) ঘোষণামাত্র। ইস্তেহার। প্যামফ্লেট। শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলনের মুখপত্র ‘এই দশক’ পত্রিকায় প্রকাশিত ১৯৭০ সালে। রচনা— রমানাথ রায়। নিবিড়পাঠে কবি ও গল্পকার সুদীপ বসু ... ...
কাহিনি, চরিত্র কিংবা স্থান-কাল-পাত্রের পরম্পরা, এসব বাদ দিয়ে গল্পকে করে তুলতে চেয়েছিলেন গল্পকারের স্বাধীন বিচরণক্ষেত্র। গোষ্ঠীবদ্ধ সাহিত্য আন্দোলনগুলি সময়ের নিয়মে যখন থেমে গেছে, গভীরতর অন্বেষণে রমানাথ রায় চলে গেছেন রূপান্তরের পথে। লিখছেন শাস্ত্রবিরোধী আন্দোলন-বিষয়ে গবেষক সৌম্যব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় ... ...
ভট্টাচার্য মশাই ভেতর থেকে একটা তলোয়ার নিয়ে আসেন। খুব ধারালো। খুব পুরোনো। তাতে প্রার্থনা খোদাই করা আছে। মিরকাশিমের তলোয়ার নাকি? কে জানে! এই ভাঙা মহল, ওই তীব্র বুনো গন্ধ, নেতিয়ে পড়া শিমুল, এলিয়ে থাকা সাপের খোলস, তার মধ্যেই উনি এনে দেখান এক সুন্দর বৌদ্ধ তারা মূর্তি। সন্ধে ঘন হচ্ছে জঙ্গলের মাথায়। হাতের কবজিতে তখনও লেগে আছে সকালের আতরের মৃদু গন্ধ। পথে ছোটে নবাবের সঙ্গে দেখা। বর্তমান নবারের ভাই। দুর্গা পুজো কমিটির সভাপতি। ভাগীরথীর ভরসন্ধ্যার বাতাস, পুরোনো হাভেলির সামনে চওড়া মাঠ। ... ...
স্থানীয় লোকদের মধ্যেও খুব প্রভাব পড়লো এগজিবিশনটার। প্রথম কয়েকদিন এখানকার মানুষরা অবাক হয়ে এতো বাইরের লোকের আনাগোনা লক্ষ্য করেছে, কিন্তু ভিতরে ঢুকতে সাহস করেনি। কিন্তু জলধর আর হেমন্ত সে সঙ্কোচ ভেঙে দিলো। কয়েকটা বাচ্চাকে ছবি দেখাতে নিয়ে এলো জলধর। তারা এতো ছবি এক জায়গায় দেখে অবাক। ধীরে ধীরে আসতে শুরু করলো তাদের বাড়ির লোকরা, বাবা-মা, ভাইবোন, সবাই। হেমন্তর উদ্যোগে আদিবাসী ছেলেমেয়েদের একটা 'বসে আঁকো' প্রতিযোগিতাও হয়ে গেলো, এবং প্রতিযোগিতার ছবিগুলোর থেকে গোটা দশেক ছবি প্রদর্শনী কক্ষেও লাগিয়ে দেওয়া হলো। জয়ি বুঝলো শুভেন্দুদা কেন আদিবাসীদের মধ্যে এই ছবির প্রদর্শনী করতে বলেছিলেন। ... ...
সে মালঘরটার খোঁজ করতে লাগল, যে ঘরে আজ দুপুরে একটি সুন্দরী মধ্যবয়সী মেয়ে তার ভারী স্যুটকেসটা রেখে এসেছে। ওর মধ্যেই জমা রয়েছে তার এতদিনের না বলা সব গল্প কিম্বা ভালবাসা। ... ...
আসামে এমন কোনও রাজনৈতিক দল নেই যারা এনআরসি বিরোধী। এবং বিজেপি বাদে বাকি সবাই সিএএ বিরোধী। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার (বিজেপির সহযোগী বা প্রতিযোগী) সব রাজনৈতিক দলই সিএএ বিরোধী, কারণ সিএএ এনআরসি-র মূল অবস্থানটিকেই চ্যালেঞ্জ করে। বাঙালি হিন্দুরা সিএএ-র পক্ষে, কিন্তু বাঙালি মুসলিমরা বিপক্ষে। বরাক উপত্যকার প্রায় সব রাজনৈতিক দল সিএএ-র পক্ষে কিন্তু এনআরসির বিরুদ্ধে। ... ...
২০২০ সালের ছাব্বিশ ফেব্রুয়ারি বুধবার সুখদেব রী শিলচর ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে জামিনে ছাড়া পেলেন। সুখদেব ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সাংবাদিকদয়ের সামনে আমাকে বললেন, “ আপনারা এতোদিন কোথায় ছিলেন ? এখন এসেছেন আমার সঙ্গে কথা বলতে?” ঘর বাড়ি জমি বিক্রি করে 'বিদেশি' হয়েছি, আর এখন এসেছেন আমার সঙ্গে কথা বলতে?” ... ...
উত্তম কুমার সাহা, চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকের একজন। চাকরি যাওয়ার পর অভাবে ছিলেন, তদুপরি ওঁর ৬ বছরের অসুস্থ ছেলের চিকিৎসা করানোর জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছিল। ঋণ-ধার করেও কোনও রকম চালিয়ে গিয়েছেন ছেলের চিকিৎসা। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। ... ...