এই ছবিতে শ্যাম বেনেগাল সচেতনভাবে যে সিদ্ধান্তটি নেন এবং যথার্থ শিল্পী হিসাবেই নেন – তা ছবিটিকে দেশভাগকেন্দ্রিক অন্যান্য ছবিগুলির থেকে স্বাতন্ত্র্য দেয়। মূলত তিনি নিবিষ্ট-চেতনার আলোয় ৭০-এর দশকের সেই গা-ছমছমে সময়ে, একজন প্ৰান্তিক মানুষের অবস্থানকে চিহ্নিত করতে চেয়েছেন। কারণ তাঁর অসামান্য শৈল্পিক মেধা জানত, যে শতাব্দীর শেষে যখন মানুষ একটি নতুন ভোরের খোঁজে আকুল, তখন ৪৫ বছর আগের এক রাজনৈতিক অবিচক্ষণতা মানুষকে আর নতুন করে বিব্রত করতে পারে না। একমাত্র মানবিক সম্পর্ক, স্মৃতি এবং সমকালের সমাজচিত্রের মধ্যে দিয়ে উস্কে দেওয়া সম্ভব সেই দগদগে ঘায়ের ছোপ ছোপ স্মৃতি। ... ...
যাগগে, আমি মূল প্রসঙ্গ থেকে আমার বায়োগ্রাফিতে চলে যাচ্ছি। সরি। যে কথা বলছিলাম, অনেকদিন পর আবার সন্ধেবেলা কাজ থেকে ফেরবার সময় পথের ধারে একটি মেয়েকে চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকতে দেখে অনেকদিন পর আবার মাথা গরম হয়ে গেলো। কিন্তু কাজ, আর বাড়িতে কিছু সমস্যা নিয়ে মাথাটা এতই টেনশনে ছিলো, সেদিন আর বেশিক্ষণ ওখানে দাঁড়ালাম না। বাড়ি চলে এলাম। শুধু মেয়েটির চাঁদের ওপর পা তুলে বসে থাকার দৃশ্যটা মনের ভিতর বাকি রাতটা, পরের সারাটা দিন একটা অস্বস্তি দিয়ে গেলো। দ্বিতীয় দিন ফিরছি। এক দৃশ্য। আজও অস্বস্তি। রাগ কম, অস্বস্তিই বেশি। চেষ্টা করলাম বিষয়টা না ভাবার। এরকম ভাবে কয়েকটা দিন কেটে গেলো। ... ...
বিজয় তেণ্ডুলকর, মহেশ এলকুঁচওয়ার অথবা সতীশ আলেকারের মত নাট্যকারের নাট্যকৃতি দেখা বা পড়ার সুযোগ থাকায় মারাঠি নাটক সম্পর্কে আমাদের একটা ধারণা আছে। মারাঠি উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত গায়ক বা গায়িকাদের বিরাট ঐতিহ্য সম্পর্কেও আমরা সশ্রদ্ধ অনুরাগ পোষণ করি। কিন্তু মারাঠি চলচ্চিত্র বিষয়ে আমাদের বিশেষ কিছু জানা নেই। তার একটা কারণ বোধহয় এই যে আমাদের দেশে আঞ্চলিক ভাষার চলচ্চিত্রের প্রসার এখন ভীষণ অবহেলিত। তার মধ্যে আবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের সর্বোৎকৃষ্ট ছবির শিরোপার ৭১ শতাংশ হিন্দি, বাংলা এবং মালয়ালম ছবির দখলে এসেছে গত ৬৯ বছরের ইতিহাসে। সত্যজিৎ রায় সমেত দশ জন পরিচালক তাঁদের প্রথম ছবিতেই এই সম্মান পেয়েছেন। সেই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন মারাঠি পরিচালক চৈতন্য তামহানের নাম ২০১৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘কোর্ট’ ছবিটির জন্য। ... ...
লেখক সঠিকভাবে দেখিয়েছেন যে বৃটিশ কলোনিয়ালিস্টদের ভারত দখল করার লড়াইয়ে ক্রমশঃ দিল্লির মুঘল, দাক্ষিণাত্যের টিপু আদি মুসলিম শাসক ও বঙ্গে সিরাজদৌল্লাদের প্রতিরোধের সম্মুখীন হতে হয়েছিল। তাদের কাছে মুসলিম শাসকেরা ছিল ভবিষ্যতের কাঁটা। সেই মানসিকতায় এশিয়াটিক সোসাইটিতে উইলিয়ম জোন্সের নেতৃত্বে ভারতাবিদেরা গড়ে তোলে হিন্দু রাজত্বের স্বর্ণিম যুগ ও মুসলিম রাজত্বের মধ্যযুগীয় অন্ধকারের এক সরলীকৃত আখ্যান যা চলে আসে ২০০ বছর ধরে আমাদের পাঠ্যপুস্তকে। এদিকে হ্যালহেড বাংলাভাষার কাঠামো বাঁধতে গিয়ে ব্যাকরণ লিখলেন, কিন্তু প্রচলিত বাংলাভাষার থেকে (অশুদ্ধ?) ফারসী ও দেশি শব্দ ছেঁটে বাংলা ভাষাকে সংস্কৃতের কন্যা সিদ্ধ করে সংস্কৃত শব্দ ঢুকিয়ে ‘শুদ্ধ’ করতে উঠে পড়ে লাগলেন। এ’ব্যাপারে তাঁদের প্রবল সমর্থক ও সহায়ক হলেন ফোর্ট উইলিয়ম ও সংস্কৃত কলেজের পন্ডিতেরা। এঁদের চোখে ভাষাকে হতে হবে উচ্চবর্ণের এলিট, কাজেই সংস্কৃত ঘেঁষা। ... ...
সুতরাং আমরা এই লেখায় অন্তত কয়েকজন এমন ক্রীড়াবিদের নাম লিখে রাখি যাঁদের কথা শোনা যাচ্ছেনা। ধরা যাক দীক্ষা ডগরের কথা। গল্ফে অদিতি অশোকের পাশাপাশি ইনিও ফাইনাল রাউন্ডে খেলছিলেন। গল্ফেই উদয়ন মানে, অনির্বাণ লাহিড়ী পুরুষদের ইভেন্টে ছিলেন। ২০ কিমি রেসওয়াক ইভেন্টে ফাইনাল রাউন্ডে ছিলেন সন্দীপ কুমার, রাহুল রোহিলা, ইরফান থোরি (পুরুষ ), প্রিয়াংকা গোস্বামী এবং ভাবনা জাট (মহিলা )। মহিলাদের ডিসকাস থ্রো তে কমলপ্রীত ক'র । রোইং এ অর্জুন লাল এবং অরভিন্দ সিং। সেইলিং এ পুরুষদের ইভেন্টে বিষ্ঞু সার্ভানন, কে সি গণপতি, বরুণ ঠক্কর, এবং মহিলাদের ইভেন্টে নেত্রা কুমানন। শুটিং এ সৌরভ চৌধুরি। কুস্তির দীপক পুনিয়ার কথা আমরা তাও একটু আধটু শুনতে পেয়েছি, পঞ্চম স্থানে শেষ করায়। হাতে গোনা যে কয়েকজনের নাম এখানে লেখা হলো, এঁরা সবাই স্ব স্ব বিভাগে ফাইনাল রাউন্ডে উঠেছিলেন। এর বাইরে রয়ে গেলেন বহু ক্রীড়াবিদ, যাঁদের অনেকের নাম আর কোনদিনই প্রচারের আলো পাবেনা। প্রসঙ্গত ভারত এবার মোট ১২০ জনের দল পাঠিয়েছিলো, দেশের ইতিহাসে এর থেকে বেশি খেলোয়াড় আগে কখনো অলিম্পিকে অংশ নেন নি। ... ...
মুর্শিদাবাদের একটি বর্ণাঢ্য ইতিহাস ছিল। একসময় দিল্লিকে পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখত মুর্শিদাবাদ। ব্যাংকিং হাউস হিশেবে তার এতো প্রতিপত্তি ছিল যে খোদ দিল্লির বাদশা তার দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সুরম্য সৌধ মিনার অট্টালিকা, নহবতের সুর, আড়ম্বর বিলাসব্যসন নিয়ে যে একটি জবরদস্ত জনপদ গড়ে উঠছিল ভাগীরথীর তীরে তার ছায়া বিলীনপ্রায়। সংরক্ষণের অভাব কেড়ে নিচ্ছে বহু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক স্থান। সংরক্ষণের জন্য সচেতনতার অভাব তার থেকে অনেকগুণ বেশি। কত মূল্যবান স্মারক এইভাবেই আমরা হারাতে বসেছি এককালীন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে। ... ...
পেট পেতে পড়ে থাকতে থাকতে মনে হয় মাটির তলার ঐ কাঁপুনি ওর পেটে একটা বিরাট খোঁদল তৈরি করছে -যেন বিরাট এক হাঁ যেখানে সব ঢুকে যেতে পারে সব কিছু- এই দোকান বাজার, বাড়ি ঘর, কাঁসি, পটল, সুনীল, মা কালী - সব, সব। প্রফুল্ল ধড়মড় করে উঠে আলো জ্বলা বাড়ি খুঁজে বেড়ায় তখন। আগে, এ'অঞ্চলে ব্যান্ডপার্টির চল ছিল- সে' দলের পিছন পিছন চলে যেতে পারলেই টুনি বাল্বের জ্বলা নেবা আর লুচির গন্ধ। গেটের পাশে ঘাপটি মেরে থাকলেই মাংসের ঝোল ভাত একদম গ্যারান্টিড। সুনীলের দোকানের উল্টোদিকেই একটা ব্যান্ড ছিল- জয় মা ব্যান্ড। দোকানের ফুটপাথের ওপর লাল কোট রোদে দিলেই প্রফুল্ল বুঝে যেত আজ মাংস ভাতের দিন তারপর পিছু নিত। মেরে ইয়ার কে শাদি হ্যায় গুনগুন করতে করতে পাড়ায় ফিরত ভর পেটে। ... ...
আমাদের এই ভাঙা-চোরা, কালি-ঝুলি মাখা অপুষ্টিতে ভুগতে থাকা যে গণতন্ত্র আছে সেটাকে রক্ষা করাই আমাদের এখন প্রধান কাজ। ভবিষ্যৎ প্রমাণ করবে, কিন্তু এই মুহূর্তে বলা যায়, সেই কাজে বাঙালি একটা বড় ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করল, এবারের ভোটে বিজেপিকে রুখে দিয়ে। বাঙালি বজেপির বিরুদ্ধে একটা শক্তিকে চেয়েছিল। বিজেপিও তার বহুমাত্রিক, সর্বগ্রাসী আক্রমণ দিয়ে স্পষ্ট করে দিয়েছিল কে তার প্রধান শত্রু। সিপিএমের ‘বিজেমূল’ প্রচারে মানুষ একেবারেই কান দেয়নি। বাঙালির কাছে এই মুহূর্তের বাস্তবতা এটাই যে, তৃণমূল নেত্রী মমতা ছাড়া তাদের কাছে নির্ভরযোগ্য কোনও শক্তি ছিল না। যারা তাঁকে ভোট দিলেন, তাঁদের অনেকেই তৃণমূল নেত্রী অতীতে কী কী বলেছেন, কী কী করেছেন এই সব অসংখ্য প্রশ্ন এবং তর্ক সরিয়ে রাখলেন। বিজেপির পরাজয় তারই পরিণতি। ... ...
ইন্দ্রনীলের স্কুলের বন্ধু গাই বিরনবাউম থাকতো ওয়েস্ট হ্যাম্পষ্টেডে। তাদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের অসম্ভব নৈকট্য গড়ে ওঠে। অনেক সাবাথের সন্ধ্যা কাটিয়েছি তাদের সঙ্গে। বাংলায় আমরা যাকে ভুরি ভোজ বলি সেটা শুক্রবার ইহুদি সাবাথের সান্ধ্য ভোজনের তুলনায় জলখাবার মাত্তর! গাইয়ের মা বিরশেবাকে বলতাম শনিবারের দিনটায় কাজ কর্ম কেন যে মোজেস বারণ করে গেছেন এবারে বুঝলাম। আগের দিনের সেই বৃহৎ ভোজন উৎসবের পরে শনিবার শরীরকে ব্যস্ত না করাই ভালো! ... ...
আসামের পরিস্থিতি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা দরকার যে অসমিয়াভাষী জনগণকে আসাম চুক্তির ৬ নং ধারা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সাংবিধানিক আইনগত প্রশাসনিক সুরক্ষা দেওয়ার নামে শর্মা কমিটি যে শক্তিশেল প্রয়োগের ক্ষেত্র প্রস্তুত করেছে, তাতে গাঁওপঞ্চায়েত হেকে জেলা পরিষদ, পুরসভা, বিধানসভা, লোকসভা, রাজ্যসভা পর্যন্ত অসমিয়া ভূমিপুত্রদের জন্য ১০০% সংরক্ষণ নিশ্চিত হবে। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে ১০০% জীবিকা তাদের জন্য সংরক্ষিত হবে। এ ছাড়া হরিশঙ্কর ব্রহ্ম কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সমস্ত জমি কেনাবেচার অধিকার অসমিয়া ভূমিপুত্রদের জন্য ১০০% সংরক্ষণ করা হবে। ... ...
সুবিনয় রায়ের গান শুনতে গিয়ে দেখলাম সেখানে বিভূতিভূষণ উপস্থিত। " কী অচেনা কুসুমের গন্ধে" জেগে উঠছে ছবি, আর আমি ভাবছি একের পর এক মৃত্যুমিছিলের কথা। যে মানুষ চলে গেলেন, তাঁদের যাওয়া নয়, তাঁদের সঙ্গে সামান্য কিছু কথা, দেখা, কয়েকটি মুহূর্ত। ছোটবেলার বন্ধু, বন্ধুদের বাড়ির লোক চলে গেলেন খুবই অলক্ষ্যে। আরো এমন অনেক মানুষ যাঁদের চিনিনা। কিন্তু শোক ছাপিয়ে এই ভাবনা প্রবল যে এই এঁদের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে সেইসব জমানো মুহূর্তেরা থেকে গেল। এইসব যখন হয়েছে, তখন ভাবিনি কোন কোন পথের বাঁকে আনন্দময় স্মৃতি জমে উঠছে। হেলায় কুড়িয়ে বইয়ের ভাঁজে রাখা সেসব ফুলই অপূর্ব রূপ নিয়েছে এখন। ... ...
মানুন না মানুন,আমরা সকলেই সংস্কারপন্থী। কেউ সু-এর আর কেউ কু-এর। আর পঞ্জিকা এই দুই-কেই ধারণ করে। সেই কাল থেকে এই কাল পর্যন্ত। বিজ্ঞাপন এই সংস্কারের বাহন। আমাদের জীবনযাপনের দৈনন্দিনতায় যে ওঠাপড়া ছড়িয়ে থাকে, তার হিসেব পাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য উপায় বিজ্ঞাপনসেবন। এতে শরীর ও মন স্বতঃই চাঙ্গা থাকে। অঙ্গে অঙ্গে রংমশাল জ্বলতে থাকে। কী ছিল বঙ্গে, তা কী হয়েছে এই অঙ্গে, এর এক সচিত্র ধারাবিবরণ বিজ্ঞাপন মারফত যেমন যেমন পাওয়া যায়, তেমন তেমন সাজিয়ে দিলাম। ... ...
অনেক কিছু বদলে যেতে দেখলাম। নয়ের দশকে জেরুসালেম থেকে বেথলেহেম বা বেথানি (শেষ বারের মত জেরুসালেম আসার আগের রাতটি সেখানে কাটান যিশু) অথবা তেল আভিভ থেকে হাইফা, সেখান থেকে বাস বদলে নাজারেথ যাওয়া যেতো সহজেই। কখনো কোথাও পাসপোর্ট দেখাতে হতো না। প্যালেস্টাইন আর ইজরায়েল যে দুটো আলাদা দেশ তা সব সময় বোঝা যেত না। ইহুদি ধর্মের পবিত্রতম স্থান সলোমনের ভগ্ন মন্দিরের প্রাচীরের (ওয়েলিং ওয়াল) পাশ দিয়ে ভারা বাঁধার মত সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেছি টেম্পল মাউন্টে, স্বর্ণ মণ্ডিত ডোম অফ দি রক চত্বরে। সেটি ইসলামের দ্বিতীয় পবিত্রতম ভূমি। তারপর মুসলিম মহল্লা দিয়ে চলে গেছি গলগথা- যেখানে যিশুকে ক্রুশ বিদ্ধ করা হয়। ফিরে এসে লোককে বলেছি একবার জেরুসালেমে যাও – দুই কিলো মিটারের মধ্যে তিনটি মহান ধর্মের ছায়া মিলে মিশে একাকার হয়ে আছে। এখন সেটি সম্পূর্ণ অসম্ভব। এবার মায়াকে নিয়ে বেথলেহেম যেতে পার হতে হয়েছে কাঁটা তারের বেড়া, সুড়ঙ্গের মতো সীমান্ত। বারে বারে প্রমাণ করতে হয়েছে আমাদের পরিচিতি। ডোম অফ দি রকে যাওয়া অসম্ভব – অনেক জায়গা থেকে অনুমতি নিতে হয়। পদে পদে প্রহরী। ... ...
জুলাইয়ের মাঝামাঝি আমাদের ফ্ল্যাটে এক ইলেক্ট্রিক মিস্ত্রি এসেছিলেন। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম স্কুল খোলার দরকার আছে কিনা? তিনি বলেছিলেন “স্যার, এটা কোনো প্রশ্ন হল? বাচ্চা দুটো বরবাদ হয়ে যাচ্ছে”। SCHOOL এর গবেষকের একই প্রশ্নের উত্তরে প্রত্যন্ত গ্রামের মহিলা অবাক হয়ে বলেন “ইয়ে পুছনে-ওয়ালি বাত হ্যায়? বাচ্চা কা জিন্দেগি তো খতম হো রহা হ্যায়”। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় শহরের এক অসহায় বস্তিবাসী বাবার আকুতির সাথে বিহার/ঝাড়খণ্ডের এক প্রান্তিক পরিবারের মায়ের হাহাকার কি আমাদের বাধ্য করবে না খান দশেক “পুছনে-ওয়ালা বাত” সব ফোরামে তোলার জন্য? ... ...
ভিড়ভাট্টা যে হয়না তা নয় তবে ‘উত্তেজিত মাতাল’ সবিশেষ আসে না। এদের অনুশাসন কড়া। আর চাট বলতে মিলবে শুধুই ফল। তবে এ স্থানটি সঙ্গীত মুখর। মূলত মহঃ রফির গানে এই ঠেক ভরে থাকে। এপ্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একটু পেছনো যাক। যদিও এ সব রচনা মাতলদের পদক্ষেপের মতোই। এগিয়ে পিছিয়ে চলে। একটা সময় খালাসিটোলায় আসতো জন। ফর্সা টুকটুকে চেহারা। নিজেই রফির গান গাইতো। সঙ্গে নাচতো। সে নাচ ছিল দেবদর্শন দুর্লভ। মাঝে মাঝে একটা অদ্ভুত বাংলা গান গাইত – ‘ আমার এল না এল শ্যাম/আমার হলো না মালা গাঁথা’। আর ছিল যাদব। গোটা ঠেকটা ঘুরে বেড়াতো। ... ...
চাঁদ আর খরগোশের সম্পর্ক কিন্তু এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছেনা! পশ্চিম গোলার্ধেও গল্প নেই ভেবেছো? অবশ্যই আছে। মেক্সিকোতে আছে। অ্যাজটেকদের গল্প। উত্তর অ্যামেরিকা আর ক্যানাডার উপজাতিদের মধ্যেও আছে। অ্যাজটেকদের গল্পটা এই এশিয়ার গল্পেরই রকমফের অবশ্য। ওখানে 'কোয়েতজালকোটল' বলে একজন দেবতা অমনি মানুষ সেজে পৃথিবী দেখতে বেরিয়েছিলেন। খিদেয় ক্লান্তিতে যখন আর পা চলেনা তখন ঐ বুনো খরগোশ এসে নিজের মাংস দিয়ে ওঁর পেট ভরানোর প্রস্তাব দিয়েছিলো। শেয়াল টেয়াল অবশ্য ছিলোনা। এদিকে 'ক্রী' উপজাতির লোকেরা একটা অন্য গল্প বলে। তাতে খরগোশ অনেক জাদু জানতো। তার এদিকে চাঁদের ভেতরটা দেখার ভারী শখ। কিন্তু তেমন কোনো জাদু ওর জানা নেই যা দিয়ে আকাশে ওঠা যায়। খরগোশ গিয়ে পড়লো সারস পাখির কাছে। 'স্যান্ডহিল ক্রেন' বলে যেগুলোকে ইংরেজিতে। সারস পাখিদের কিন্তু তখন অমনি লম্বা পা ছিলোনা। অন্য পাখিদের মতই ছোটছোট ঠ্যাং। তা, সারসের মনে দয়া হলো। খরগোশকে বললো -- "আমার পা ধরে ঝুলে পড়ো। উড়ে উড়ে তোমাকে চাঁদে নিয়ে যাবো।" তাই হলো শেষ অবধি। খরগোশ তো সারসের পা ধরে লটকে আছে। এদিকে চাঁদ তো আর কাছে নয়! উড়তে উড়তে ওর টানের চোটে পা গুলো একটু একটু করে লম্বা হতে হতে ঐ আজকের সারসের মত হয়ে দাঁড়ালো। তবে গিয়ে তারা চাঁদে পৌঁছেছে। অতক্ষণ ধরে ঝুলে থেকে থেকে খরগোশের হাতও কেটেকুটে এক শা। সেই রক্তমাখা হাত সারসের মাথায় রেখে সে আশীর্বাদ করলো। সেই থেকে স্যন্ডহিল ক্রেনের মাথায় অমনি সুন্দর লাল ছাপ। ... ...
চারজনে চলল সার দিয়ে। মাথায় দুটো পেটি, পিঠে একখান বোঁচকা, দুই হাতেও দু’টো করে পোঁটলা। একেকজনকে দেখে মনে হচ্ছে চলমান গন্ধমাদন পর্বত। জোয়ান ছেলে, তাকতদার, গাঁ-গঞ্জে এমন বয়েছে ঢের। ওরা মোকসাদকে বেশি কিছু নিতেই দেয়নি। পথ চিনিয়ে নিয়ে যাবে তো সেই, তার উপর বুজুর্গ মানুষ। বুঝলে মিয়া, এই শহরের পথের নিশান বেশ সিধা সিধা, ক্ষেতের আলের মত। সার দিয়ে এইসব ইস্ট্রিট গেছে, ওদিক থেকে আবার তাঁতের মাকুর মত আভেনু এয়েচে সব। নাক বরাবর চলতে থাকো। ... ...
আচ্ছা এটা মনে রাখবেন, যে হট পটের সাথে ওই ফন্ডু বলে যে জিনিসটা আছে – তার একটা বেসিক পার্থক্য আছে। হট পটে আপনি খাবার বানাবেন বা ফোটাবেন একটা জলীয় স্যুপে – আর ফন্ডুতে রান্নার তেল ব্যবহার করা হয়। হট পটের স্ট্যান্ডার্ড রান্নার উপাদানগুলি হল – খুব পাতলা করে কাটা মাংসের টুকরো, সবুজ পাতার সবজি, মাশরুম, নানা প্রকারের ন্যুডল্স্, কাটা আলু, টফু, নানাবিধ বিনস্, মাছ বা সি-ফুড। এই সব উপাদানই সরু সরু করে কাটা থাকে – তা না হলে ওই মৃদু আঁচে ফুটতে থাকা স্যুপে সিদ্ধ হয়ে খাওয়ার মত হতে রাত হয়ে যাবে! তা ছাড়া এক্সট্রা সস রাখা থাকে পাশে – আপনি নিজের ইচ্ছেমতন খাবার স্পাইসি বানিয়ে নিতে পারবেন সিদ্ধ হয়ে যাবার পর। ... ...
সোজা চোখে দেখলে, বাংলা সিনেমা একরকম করে যে ধ্বংস হয়েছে, তার কারণ বাজার নয়, কারণটি রাজনৈতিক। বস্তুত একটি পদ্ধতিগত রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বাংলা সিনেমার 'কলকাতা ঘরানা'টিকে ধ্বংস করা হয়েছে। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধের পর তাঁত শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন সম্পন্ন হয়েছিল ৩০ বছরের মধ্যে। সঙ্গে ছিল মন্বন্তর, এবং কিছুদিনের মধ্যেই হয়েছিল বঙ্গভঙ্গ। ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পর, ৩০ বছরের মধ্যে সিনেমা শিল্পের সর্বাঙ্গীণ ধ্বংসসাধন হয়ে গেছে, এবং একটু আগে থেকে হিসেব করলে মন্বন্তর, বঙ্গভঙ্গ, সবই ছিল সঙ্গে, শুধু কালানুক্রমটি একটু উল্টে পাল্টে গেছে। ... ...
উনি কি আমাদের পি জি উডহাউস? না; উনি একান্ত ভাবে আমাদের অনাবিল বাঙালি হিউমারের ঘরানার। অল্প শিব্রাম, অনেকটা পরশুরাম আর একটুখানি প্রভাত মুখুজ্যে। ওঁর ধর্মবিশ্বাস কী ছিল জানিনা, কিন্তু সমস্ত রচনার শেষে মধুরেণ সমাপয়েৎ আমাদের ভাবতে বাধ্য করে –আছে দুঃখ আছে মৃত্যু; কিন্তু এ’সবের মধ্যেও আনন্দ ও সুন্দরের খোঁজ পাওয়া যায়। লেখার মধ্যে ফুটে ওঠে লেখকের প্রশান্তি । এই প্রশান্তির খোঁজ আমি আজও পাইনি, কিন্তু উনি আমার চেয়ে বয়েসে অনেকটা ছোট হয়েও পেয়ে গেছলেন। কীভাবে? সে রহস্য সমাধানের চাবি বরাবরের মত হারিয়ে গেছে। ... ...