আমাদের ছোটবেলায় একজাতের বই বাড়িতে এবং স্কুলে অবশ্য পাঠ্য ছিল – মহাপুরুষদের জীবনী। তাতে ক্ষুদিরাম, নেতাজি ও সূর্য সেনের মত স্বাধীনতা সংগ্রামী, রামমোহন, বিদ্যাসাগর ও আম্বেদকরের মত সমাজসংস্কারক, রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্রের মত সাহিত্যিক এবং চৈতন্য, রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দের মত ধর্ম সংস্কারক সকলেই একসারিতে জায়গা পেতেন। এঁদের জীবনীর একটি ছাঁচ আছে। এঁরা কোন বিশেষ ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালনে প্রেরিত। এঁদের জন্মসূত্রেই প্রতিভার স্ফুরণ দেখা যায়। এঁরা কখনও ভুল করেন না। কাজেই ভুল স্বীকার করার প্রশ্ন ওঠে না। ... ...
আমরা বাংলা তথা ভারতের নবজাগরণ হিসেবে গণ্য করি যে সময়কে, প্রফুল্লচন্দ্র তারই এক প্রতিভূ।ইউরোপের নবজাগরণের সঙ্গে তুলনীয় নাই হতে পারে আমাদের নবজাগরণ, হওয়া উচিত নয় এবং সম্ভবও নয়। কিন্তু বিজ্ঞান-কারিগরি ও শিল্পের আমূল পরিবর্তন কে বাদ দিয়ে কোনো রকম নবজাগরণের কথাই ওঠে না।সেদিক থেকে দেখলে নিজেদের মত করে বিজ্ঞান ও কারিগরি জ্ঞানের আত্তীকরণ করে, নিজেদের সমাজ সংস্কৃতি ইতিহাসের সঙ্গে সুসমঞ্জস ভারী শিল্পের পথিকৃৎ বলতে হয় প্রফুল্লচন্দ্রকেই। তিনি যেন প্রাচ্যের পার্কিন (স্যার উইলিয়াম হেনরি পার্কিন, কৃত্রিম জৈব রঞ্জক পদার্থের সংশ্লেষণ পদ্ধতির প্রথম উদ্ভাবক এবং শিল্পপতি, ইউরোপীয় শিল্প বিপ্লবের নতুন ঘরানার প্রতিনিধি - বিজ্ঞানী এবং শিল্পপতি)। কিন্তু না, আমাদের ভাবনায় নবজাগরণ আসতে পারে, 'স্বদেশী শিল্প' হতে পারে, কিন্তু 'পুঁজি ‘ ‘শিল্প ' এসব হতে পারে না।আমরা বরং আক্ষেপ করেছি, এ হে, প্রফুল্লচন্দ্রের মত একজন ঋষিতুল্য মানুষ কিনা পুঁজিপতি বনে গেলেন! একটু বিপথে চলে যাচ্ছি বোধহয়।বেঙ্গল কেম-এর মত একটা উদ্যোগ যে শুধুমাত্র একটি উৎপাদনশিল্প, একটি কারখানা নয়, তার উপযোগিতা যে শুধু লাভ ক্ষতির হিসেবে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না, সেটা আমরা বোঝার চেষ্টা করলাম না! ... ...
আমি মহা উৎসাহে বলতে শুরু করলাম – “আরে তোমার মনে নেই – ওই যে কুমড়ো পাইকের গৌরাঙ্গ কাকু গো! চোট খেয়ে দাগি হয়ে যাওয়া কুমড়োগুলো যেগুলো কেউ কিনতে চাইত না আর ঠাকুমা বসে বসে চুন লাগাতো – সেই কুমড়ো একমাত্র কিনত গৌরাঙ্গ-কাকু। আজ বুঝতে পারলাম সেই পচা কুমড়ো নির্ঘাত বিদেশে পাচার করত এমন স্যুপ বানাবার জন্য”। “এই রোমান্টিক সেট-আপে ডিনার করতে এসে তোমার পচা কুমড়োর কথা মনে আসছে! ধন্য চাষা মাইরি”। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হল আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রথম লক্ষ্য বাগামোয়ো শহরে পৌঁছে পাক্কা দেড় মাস আটকে সেখান থেকে একে একে রওনা হয়েছে অভিযানের মোট পাঁচটি কাফেলা। চলছে অভিযানের মূল কাহিনি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। এ অধ্যায়ে এমসালালো-র দিকে রওনা হয়ে মুকনডোকু নামের জনপদ পার করে উয়ানজি নামের গ্রামে পৌঁছনোর কাহিনি। তর্জমা- স্বাতী রায় ... ...
এই লাইনের মানে কী হলো? – জলধর বলে, ধারমুর শেখানো করম পুজো আমরা এখন সবাই মানি; মানি, তাই বাঁচি মাথা উঁচু করে। অনেক দিন আগে, তা প্রায় একশো বছর হবে, আমাদের পূর্ব পুরুষরা নিজেদের ভাষা প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। তখন ইংরেজ আমল, আমাদেরই জঙ্গলের জমি কেটে খনি বানিয়ে ওরা আমাদের বাপ-দাদাদের তখন কুলি বানাচ্ছে, হাজার মাইল দূরে ওদের চা-বাগানে ধরে নিয়ে যাচ্ছে কুলির কাজ করার জন্যে, আর আমাদের বাপ-দাদারাও নিজেদের ভাষা ভুলে ওদের ভাষাই শেখার চেষ্টা করছেন। সেই সময়ে জন্ম নিলেন এক আশ্চর্য মানুষ যিনি অনুভব করলেন মাতৃভাষা মানুষের কাছে কত বড়ো সম্পদ। ... ...
প্রফুল্লচন্দ্রের রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে ব্যস্ত অধ্যায় ছিল খুলনার দুর্ভিক্ষ, উত্তরবঙ্গের বন্যায় কংগ্রেসের হয়ে সেবাকার্যে প্রবেশ করা। সুভাষচন্দ্র বসু প্রশাসনিক ও সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ায়, এই সেবাকার্যের মূল দায়িত্ব প্রফুল্লচন্দ্রের উপর আসে। তিনি মন্তব্য করেন যে এর মাধ্যমে কংগ্রেস বাংলার সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারবে এবং ভোটদেওয়া হোক বা আন্দোলন হোক, এই জনসাধারণ ‘গান্ধী মহারাজের’ শিষ্যদের হাত ছাড়বে না। এর পাশাপাশি তিনি এও দেখেন, যে এই সব দুর্গতিই সরকারি নীতির প্রত্যক্ষ ফল। যেমন, রেলের জন্য অবিবেচনাপ্রসূত বাঁধ দেওয়া বন্যার জলকে নামতে দিচ্ছে না। সাধারণ মানুষ তাঁদের প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতায় এই সমস্যাগুলি বোঝেন, কিন্তু হোয়াইট ম্যানস বার্ডেন কাঁধে নেওয়া সরকারি অফিসাররা বোঝেন উল্টোটা। গ্রামের নিজস্ব সামাজিক সংগঠন ভেঙে যাওয়াই এই বিভিন্ন দুর্গতির পিছনে একটা বড় কারণ হিসেবে তিনি চিহ্নিত করেন। এবং সেই সংগঠনের উপর জোর দেওয়া, কংগ্রেসের কর্মসূচীর মূল ফোকাসে গ্রামপুনর্গঠনের কাজকে গুরুত্ব দেওয়া, ইত্যাদির উপর তিনি জোর দেন। হিন্দু-মুসলিম বৈরিতার সমাধানের পথও এর মধ্যে তিনি দেখতে পান। আসলে, গান্ধি-রাজনীতি বলতে আমরা যা বুঝি, তার একজন চ্যাম্পিয়ন ছিলেন প্রফুল্লচন্দ্র। গান্ধিজি প্রচারের জন্য, আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য যে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন, তার অনেকগুলিকে বৈজ্ঞানিকের অনুসন্ধিৎসা দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র। এর একটা প্রকৃষ্ট উদাহরণ আত্মচরিতে চরকা বিষয়ক অনুচ্ছেদটি। চরকা এমন এক প্রশ্ন, যেখানে জাতীয়তাবাদী বিজ্ঞানী প্রফুল্লচন্দ্র বিশ্বমানবতাপন্থী সাহিত্যিক রবীন্দ্রনাথকে রেহাই দেন নি। চরকা-খদ্দরে অনাস্থাশীল কবি প্রফুল্লচন্দ্রের পত্রাঘাতের উত্তরেই চরকার সমালোচনায় নিয়ে তাঁর বিখ্যাত প্রবন্ধটি লেখেন। কিন্তু, রবীন্দ্রনাথের চরকা-স্মালোচনা যেখানে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের, মুক্ত মানবতার প্রশ্নে, প্রফুল্লচন্দ্রের আত্মচরিতের চরকা অধ্যায়টি বস্তুনিষ্ঠ। ... ...
২০১৯ সালে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দ্বারা প্রকাশিত জনসংখ্যা সম্পর্কিত পূর্বাভাসের দলিলটি এই দুই মুখ্যমন্ত্রী বা তাদের উপদেষ্টারা কেউই পড়ে দেখা জরুরি মনে করেননি বলেই মনে হয়। এই দলিল অনুযায়ী দেখা যাচ্ছে আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উত্তরপ্রদেশের জন্মহার (১৫-৪৯ বছর মহিলাদের গড় সন্তানের সংখ্যা) স্বাভাবিকভাবেই “প্রতিস্থাপনযোগ্য জন্মহার”-এ (যেই জন্মহার দেশে বা রাজ্যে স্থাপিত হলে জনসংখ্যার বৃদ্ধি স্থিতিশীল হয়), অর্থাৎ, প্রতি মহিলার গড়ে ২.১ সন্তান থাকবে। আর আসামের ক্ষেত্রে ২০২০ সালেই সেই হারে পৌঁছে যাওয়া গেছে। তাহলে আসামে যদি সেই হার ইতিমধ্যেই অর্জিত হয়ে গিয়ে থাকে এবং উত্তরপ্রদেশেও ২০২৫ এর মধ্যে এমনিতেই তা অর্জনের পূর্বানুমান রয়েছে, তাহলে হঠাৎ করে এই কঠোর জন্মনিয়ন্ত্রণ নীতির প্রয়োগের কারণ কী? ... ...
মেডিকেল কাউন্সিল প্রায় প্রত্যেক ক্ষেত্রেই দুর্নীতির ছাপ রেখেছিলেন। ১৯৯৫ সালে এই সংস্থার প্রধান হয়েছিলেন ডাঃ কেতন দেশাই। তাঁর আমলে কলঙ্কের ছাপ আরো গাঢ় হয়ে উঠেছিল। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণের ভারপ্রাপ্ত পার্লামেন্টারি কমিট তাঁদের ৯২তম রিপোর্টে তীব্র নিন্দা করেছিলেন এই সংস্থার রীতিনীতি নিয়ে। রিপোর্টে অনেক বক্তব্যের মধ্যে থেকে উদাহরণস্বরূপ কয়েকটা উল্লেখ করা যায়, ১) ইণ্ডিয়ান মেডিকেল রেজিস্টারটি হালনাগাদ করা হয় না বহুকাল। রেজিস্টারে থাকা অনেকেই মারা গেছেন, অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন, খাতায় কলমে তাঁরা সবাই আছেন। ২) রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে যাঁরা তারাও বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক, এবং তাঁদের কারুর কারুর বিরুদ্ধে নিয়মবিরুদ্ধ কাজের অভিযোগ আছে। ৩) অভিযোগ আছে এরকম লোক জন কেবল এম সি আই র সদস্যপদে বসে আছেন তাই নয়, তাঁদের অপসারণের কোনো ক্ষমতাই নেই কেন্দ্রীয় সরকারের। পার্লামেন্টারি কমিটি এরকম আরো অনেক কিছুর প্রমাণ পেয়েই সংস্থাটি বিলোপ করার সুপারিশ করেছেন। ... ...
একদম হালআমলের শিল্পী এবং কবি। মেয়েটির জন্ম পাকিস্তানে, করাচীতে। ইউটিউব,ব্লগ,সোশ্যাল মিডিয়াতে অতি অভ্যস্ত। সমালোচকের বক্তব্য- "...নূর বলেছেন তাঁর নামের অর্থ, দিনের আলো। এই নাম,যথার্থ, কারণ তাঁর বইয়ের প্রতিটি লেখায় আছে এক আলোভরা জাদু। যা, আমাদের কাজ করতে, বেঁচে থাকতে, ভালোবাসতে প্রাণ জোগায়..." ... ...
ছাতা মাথায় দাঁড়িয়ে আছে উৎপল, আর কোদাল হাতে স্কুলের আটটা বাচ্চা লেগে যায় মাটি কাটার কাজে। আটটার মধ্যে তিনটে নেহাৎই দুবলা, ওদের দিয়ে মাটি কাটানো যাবে না। ওরা শুধু কাটা মাটি সরিয়ে সরিয়ে রাখবে। আর মেয়ে তিনটে পুকুর থেকে জল নিয়ে এসে মাঝে মাঝে মাটিতে ঢেলে মাটি নরম রাখবে। ঘন্টায় ঘন্টায় ছুটি, তখন প্রাণ ভরে জল খাওয়া, সঙ্গে মুড়কি আর বাতাসা। তিন ঘন্টার পর গরম ফেনা ভাত আর আলুভাতে। তারপর আবার কাজ, কিন্তু ঘন্টায় ঘন্টায় জল খাওয়ার ছুটিটা থাকেই। দুপুরে ভাতের সাথে ডাল থাকে, সঙ্গে একটা সবজিও। সন্ধ্যের আগেই কাজ শেষ। চানটান সেরে জামাকাপড় বদলিয়ে বাচ্চারা বসে ডাইনিং হলের মেঝেতে খেজুর পাতার চাটাই বিছিয়ে। পাশে একটা চেয়ার পেতে বসে জয়ি, এখন লেখাপড়ার সময়। লেখাপড়া কিন্তু এগোয় না বেশি দূর, ক্লান্ত বাচ্চারা ঢুলতে থাকে একটু পরেই। ... ...
তাহলে অভিজিৎ সেনের এই দুটি উপন্যাসই মানুষকে তার নানা সম্পর্ক, নানা পরিপ্রেক্ষিতের মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়। রোদে সেদ্ধ চাল শুকোনোর মতো কলম দিয়ে উল্টেপাল্টে আউলা ঝাউলা করে ছাড়ে তার প্রতিটি প্রতিক্রিয়াকে। আদর্শ বা পূর্ণ মানবের দেহরেখা আঁকার কোনো চেষ্টাই করে না, অপূর্ণতা আর অসহায়তার রঙে চুবিয়ে তোলে আমাদের সমস্ত অস্তিত্ব। শেষ করে পাঠক ফুঁপিয়ে উঠতে পারে, কিন্তু সেজন্য তার লজ্জা হবে না। এই অপূর্ণতার অশ্রুই আমাদের ভবিতব্য! ... ...
নিঝুম রাতের বেলা হেঁটে হেঁটে ফেরা। বোম্বে বাজারে ফেরার রাস্তায় ওই অন্য রাজ্যে কাজে যাওয়া বাঙালি ছেলে দেখলে চুরি-ছিনতাই-গালাগাল ছিল স্বাভাবিক ঘটনা। আর এই সোনার কারিগরদের আর একটা প্রাপ্তি প্রায় কমন। সামান্য কিছু ভুলভ্রান্তি বা এধার ওধার দেখলেই পিঠে পড়বে মার। অবাঙালি শেঠ মালিকদের হাতে বা লাঠিতে পেটানি। সঙ্গে অবাঙালি মুখের অন্য ভাষার গালাগাল। ওই টাইট রুটিনে সোনার কাজের কারিগরি শিখতে শিখতে মইনুদ্দিন হয়ে উঠল পাকা কারিগর। ওর হাতদুটো ওই সোনালি ধাতুতে কারুকার্য তুলতে হয়ে উঠল পারদর্শী। মইনুদ্দিনের পড়াশোনার বুদ্ধিটা মধ্যশিক্ষা পর্ষদের স্ট্যাম্পমারা রেজাল্টের ছাপা কাগজে ছাপ না ফেললেও বারবার সে বুদ্ধি ছাপ ফেলেছে ওর লেবার জীবনে। ... ...
দেশভাগের পর দখলি জমিতে কলোনি স্থাপনের সময়ই স্কুলের জন্য চারটি জায়গা চিহ্নিত করা ছিল৷ নিজেদের ঘর-বাড়ি তৈরির পাশাপাশি এর-ওর কাছ থেকে পাওয়া দানের টাকায় চলে স্কুল তৈরির কাজ৷ ‘বহিরাগত’ শিবপ্রসাদ নাগ কলোনি আর স্কুলের প্রতিষ্ঠাতাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে রাখতেন৷ পয়সার অভাবে কারও পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাবে, মানতে পারতেন না৷ তবু ম্যানেজিং কমিটির সদস্যেরা, তাঁরা আবার কলোনিরই মানুষ, রোজগার বাড়াতে নিয়ম করলেন, মাইনে এবং পরীক্ষার ফি বকেয়া যাদের, তাদের মার্কশিট দেওয়া হবে না৷ চাপের মুখে হেড স্যার সে নিয়ম মানলেন৷ ফলে বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন দেখা গেল সব ক্লাসেই অর্ধেকের বেশিরভাগ ছাত্র অনুপস্থিত৷ ... ...
লেখক যত্ন নিয়ে দেখিয়েছেন যে ইংরেজ আসার আগে মোগল আমলে ভারতে বিচারপদ্ধতি কী ছিল ও কলোনিয়াল শাসক তাতে কী কী পরিবর্তন করল। উনি বিস্তারিত আলোচনা করে দেখাতে চেয়েছেন যে হিন্দু আইন কতটুকু শাস্ত্র মেনে তৈরি হয়েছিল বা তার কোন অংশটুকু সাহেবরা নিজেদের স্বার্থে বিকৃত করেছে এবং তার ফলে মেয়েরা এবং বিধবারা তাদের প্রাচীন প্রথায় যতটুকু সম্পত্তির অধিকার ছিল তাও হারিয়েছে। এবং সর্বশেষে এই আইন প্রণয়নে এবং তাঁর সংশোধনে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগরের ভূমিকা ঠিক কী ছিল। ... ...
এক দিন কথায় কথায় শ্যামলদা বললেন, ‘চল যাই, গদাধর কর্মকারের সঙ্গে দেখা করে আসি৷’ মদ আছে, মাতলামো নেই, চরিত্রটা বেশ মনে ধরেছিল শ্যামলদার৷ পর দিন সাতসকালে গদাদার দোকানে হাজির হলাম শ্যামলদার ইচ্ছার কথা জানাতে৷ দেখি, চায়ের কাপে পাতি লেবু নিংড়ে রস বের করে এক চুমুকে রস মুখে পুড়ে পাড়া কাঁপিয়ে বললেন, ‘বোম বোলে’৷ শ্যামলদা তাঁর সাক্ষাৎপ্রার্থী হতে চাওয়ার হেতু শুনে বললেন, ‘কিন্তু আমি তো মদ ছেড়ে দিয়েছি৷’ বললাম, সে কী! কবে ছাড়লেন! বললেন, ‘দিনক্ষণ কি মনে থাকে৷ স্বপ্নে বাবা (মানে ত্রিনাথ ঠাকুর) কইল, অনেক খাইসস, আর না৷ এ বার ছাড়৷ ব্যাস, ছাইড়া দিলাম৷ নতুন নেশা লেবুর রস। রোজ সকালে একটা।’ বললাম, ‘আপনি যে বলেছিলেন, ডাক্তার বলেছেন, মদ ছাড়লেই বিপদ৷’ সহাস্যে বললেন, ‘ডাক্তার কি বাবার থিকাও বড় পণ্ডিত?’ ... ...
কখনো কখনো দুয়ের মধ্যে এসে দাঁড়িয়ে থাকেন এক তৃতীয়জন, ‘লার্কিং ভেরিয়েবল’ অথবা ‘কনফাউণ্ডার’। চাদ্দিকে এর মেলাই উদাহরণ, এই যেমন আপনার মাইনেও বাড়ছে আর পাল্লা দিয়ে ব্লাড প্রেশার, হয়তো দেখা যাবে, মাইনে বাড়ছে বয়সের সাথে, রক্তচাপ-ও তাই ... আবার কিছু মাথামুন্ডু নেই এমন জিনিষেও কোরিলেশান বেশি হতেই পারে, Zআনতি পার না। আই-এস-আই-এর একটা মজার গল্প আছে এই নিয়ে। দেবপ্রিয়বাবুর কোর্স, মিড-সেমেস্টারে প্রশ্ন এসেছে, 'মানুষের উচ্চতাও যেমনি বাড়ছে, মাথার চুলের ঘনত্ব তেমনি কমছে ... ক্যায়সে?' আমার এক প্রিয় জুনিয়র দুর্ধর্ষ উত্তর লিখে এলো, 'লম্বা লোকের টাক সূর্যের অনেকটাই কাছে, সেখানে গরম বেশী, খুব ঘাম ... ঘেমো টাকে অল্প চুল যদি না-ই পড়লো, তা'লে আর ঘেমে লাভ কি?' (বলাই বাহুল্য, আসলে হাইট আর জেন্ডারের সম্পর্ক আছে, ‘জেণ্ডার’ এখানে লার্কিং ভেরিয়েবল।) ... ...
সূর্যোদয় বা সূর্যাস্তের সৌন্দর্য কোনো জন্মান্ধ মানুষকে ব্যাখ্যা করে বোঝানো যেমন অসম্ভব, তেমনি, মন যদি সঠিকভাবে গ্রহণক্ষম না হয়, তা হলে রসপোলব্ধি দুষ্কর। ধীশক্তিও সাধারণভাবে বুদ্ধি বলতে যা বোঝায় তা নয়। ধীশক্তি বলতে বোঝানো হচ্ছে প্রজ্ঞা। প্রজ্ঞা দুর্লভ বস্তু, বোধ ও বুদ্ধির এক অতি উন্নত স্তরকে প্রজ্ঞা বলে। বুদ্ধি ও প্রজ্ঞার মধ্যে তফাতটা গুণগত, পরিমাণগত নয়। ধীশক্তির ফসল বিজ্ঞান, দর্শন ইত্যাদি। রসের ফসল সাহিত্য, সঙ্গীত, চিত্রকলা, চলচ্চিত্র ইত্যাদি। এটা খুবই আশ্চর্যের যে এই মাধ্যমগুলির উৎপত্তির মূলে যে সংস্কৃতি নামক জিনিসটি কাজ করছে, তা যে ‘জৈবিক’, নিছক আবেগের ব্যপার নয়, তা মানবসমাজ বহু যুগ পরেও বুঝতে পারে নি। ... ...
ইরফানুর রহমানের ‘‘ব্রেড অ্যান্ড রোজেস’’ সিরিজ থেকে অনুমতিক্রমে নেওয়া এক গুচ্ছ অনুবাদ কবিতা। ... ...
আমরা পাই সারগর্ভ উপদেশ, জ্ঞানের ফুলঝুরি, আমাদের কি করা উচিত ছিল, তার লম্বা ফিরিস্তি, ভবিষ্যতে কি শিক্ষা নেওয়া উচিত, নিজেকে কেমনভাবে পাল্টে নেওয়া উচিত, কি করলে এমনটা ঘটতো না। এ জেনে আমার কি লাভ? আমি কি পালটে ফেলবো এসব জেনে? আমি বিষ খেয়েছি, জেনে বা না জেনে, কিন্তু তোমার কাছে আমি শুধু একটু উপশম চাই। তার বদলে আমরা পাই, পুকুরে ডুবতে থাকা আপনাকে না বাঁচিয়ে, সাঁতার না জেনে আপনার পুকুরে নামা খুব অন্যায় হয়েছে, সেই মতামত, পুকুরের পাড়ে সাবধানে দাঁড়িয়ে থাকা লোকেদের থেকে। আর তারা কে? তারা বলে তারা আপনার বন্ধু। বলে, আমরা তোমার বন্ধু না হলে কি দরকার ছিল আমাদের সময় নষ্ট করে এইসব বলার। কিন্তু আপনি কি চান, আপনার কি দরকার, সেটা কেউ শুনেছে তাদের মধ্যে? ... ...
পখাল একটা বিরাট লেভেলার। রাজা প্রজা, ধনী নির্ধন, সাধু ভণ্ড, সৎ অসৎ, সাহসী দুর্বল, মন্ত্রী জনগণ সব্বাইকে এক পাল্লায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সেটা কী? নিঃশর্ত পখালপ্রীতি। এই একটিমাত্র বিষয় যেখানে কোন মতপার্থক্য চলবে না। রাজার ঘরে যে ধন আছে, টুনটুনির ঘরেও সেই ধন আছে! নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ, পখালরাজের চরণে। এমনকি স্বয়ং শ্রীজগন্নাথদেবও স্নেহ করেন তাকে। ... ...