বাঙালি হিন্দু মেয়েরা নদীতে নাইতে যায়। সিরাজের চরেরা নৌকো নিয়ে ঘুরঘুর করে খবর জোগাড় করে। মেয়েদের তুলে আনে। এইসব করতে গিয়ে সিরাজ রানি ভবানীর মেয়ে তারা সুন্দরীর পিছু ধাওয়া করেন। কিছু সুবিধে করতে পারেন নি। ভরা বর্ষায় বা জোয়ারের সময় পারাপারের নৌকোগুলোকে ইচ্ছে করে ধাক্কা দিতেন, কখনো নৌকো ফুটো হয়ে যেত আর তখন সাধারণ গাঁয়ের মানুষকে ছেলে বুড়ো মেয়ে নির্বিশেষে জলের মধ্যে নাকানি চোবানি খাইয়ে দারুণ মজা পেতেন! অনেকে হয়তো ডুবে যেত কিন্তু উনি খুব আমোদ পেতেন! ... ...
নরেন্দ্র মোদীর নির্বাচনী জয়ে কেঁদেছিলেন। বিপুল পাণ্ডিত্যপূর্ণ গবেষণার পাশাপাশি সহজ ভাষ্যে সাধারণের পাঠযোগ্য লেখালিখি করেছেন প্রচুর। মগ্ন থাকতেন রবীন্দ্রনাথে। সমাজসচেতন বামপন্থী। তবু যা শিক্ষণীয়, নিঃসংকোচে নিতেন ভিন্ন মতের মানুষের কাছ থেকেও। স্মৃতিচারণে কন্যা ইতিহাসবিদ তনিকা সরকার। আলাপে ইতিহাসকার রণবীর চক্রবর্তী ... ...
ঋগ্বেদে কবি নেম ভার্গব ঘোষণা করেছেন, ইন্দ্র নেই, কারণ কেউ তাঁকে দেখেনি। চার্বাক দর্শন বস্তুজগৎকেই একমাত্র অস্তিত্ব বলে মনে করেছে। তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণ বলে, যতদিন জীবন আছে যজ্ঞ ক’রে যাওয়া উচিত, কারণ মৃত্যুর পর মানুষের কী হয় তা অজ্ঞাত। ‘বেদে সংশয় ও নাস্তিক্য’ গ্রন্থে সুকুমারী ভট্টাচার্য তুলে ধরেছেন বৈদিক সাহিত্যে প্রশ্ন, সংশয়, অবিশ্বাসের উত্তরাধিকার। লিখছেন ইতিহাসের অধ্যাপক কণাদ সিংহ ... ...
মহাভারত মহাকাব্যের এই সার কথা। সে মহাগ্রন্থের এমনতর পাঠই শিখিয়েছিলেন সুকুমারী ভট্টাচার্য। এবং শিখিয়েছিলেন প্রাচীন নানা গ্রন্থ যথাযথ পাঠ করে সেগুলিকেই করে তোলা যায় কুসংস্কার ও মিথ্যার প্রবল প্রচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্র। লিখছেন তাঁর ছাত্রী ও সংস্কৃতের অধ্যাপক বিজয়া গোস্বামী ... ...
পিপলস বুক সোসাইটি আমাকে বলেছিল, অতিবৃষ্টিতে বাঁধাইখানায় জল ঢুকে ফর্মা নষ্ট হয়ে গেছে। যারা নতুন লিখতে এসেছিলেন, তাঁরা বইটি পড়তে চান, পি বি এস-এ গিয়ে খুঁজে পান না। আমি হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। এরপর সরকার বদলেছে। ২০১৩ সালে বইমেলায় আমাকে পি বি এস-এর একজন ডাকলেন, আসুন আসুন। আমি পি বি এস-এ যেতাম না বই নিয়ে ঐ ব্যাপার হয়ে যাওয়ার পর। বিরক্ত হয়েই ওঁদের প্যাভিলিয়নে ঢুকে দেখি নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান স্বমহিমায় বিরাজমান। সেই চল্লিশ টাকা দাম। দশ বছর আগের দাম। ঝকঝকে ফর্মা। সেই পুরোন ছাপা। কী হয়েছিল এতদিন? তাঁরা বললেন ফর্মা হারিয়ে গিয়েছিল, খুঁজে পেয়েছেন আবার। ভুল জায়গায় রক্ষিত হয়েছিল। মিসপ্লেসড। এমন হয় আমি শুনিনি আগে। না কি বইটি তাঁরাই বাজার থেকে তুলে নিয়েছিলেন অদৃশ্য চাপে। কিন্তু পি বি এস-এর মানুষগুলি আমার প্রিয়জন। প্রত্যেকে আদর্শবাদী। ত্যাগী। আমি অনীক পত্রিকায় তিরিশ বছর এক নাগাড়ে লিখেছি। দীপঙ্কর চক্রবর্তী এবং রতন খাসনবিশ পরম শ্রদ্ধার মানুষ। অনীকের সঙ্গে পি বি এস সরাসরি যুক্ত না হলেও অনীক পত্রিকা পি বি এস থেকেই বিক্রি হয়। ওঁদের ভিতরে বন্ধুতার সম্পর্ক। অনীক এবং পি বি এস-কে আমি আলাদা করে দেখতাম না। এই ঘটনায় সব গোল পাকিয়ে গিয়েছিল। মনে পড়ে যায় তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই কথা, যাঁরা পার্টি করেন, তাঁদের কাছে সাহিত্য শিল্পের চেয়ে দলের মূল্য বেশি। নিরুদ্দিষ্টের উপাখ্যান উপন্যাস কিন্তু এক দলের নিন্দা করে অন্য দলের সমর্থনে লেখা তথাকথিত পার্টির লেখা নয়। এই উপন্যাস বামপন্থী দলের প্রতি বিষোদ্গারের নয়। কিন্তু ভিখারী পাশোয়ানের নিরুদ্দেশের ঘটনা সেই সময় হিমালয়ের চেয়ে ভারি হয়ে উঠেছিল সরকারের কাছে। পার্টির কাছে। একটি মানুষ যে কত তুচ্ছ, কত অবহেলার-- প্রশাসন, পুলিশ এবং বিত্তবানের কাছে, সেই লেখাই এই লেখা। উপন্যাসটি মুখে মুখে রটেছিল। এক সংবাদপত্রে এর আলোচনা করেছিলেন বিখ্যাত এক লেখক। মুখে আমাকে বলেছিলেন অনেক কথা, মা লিখ। ২৫০/৩০০ শব্দ কোনোরকমে লিখেছিলেন। এই রিভিউ নিয়ে সেই ভবিষৎবাণীই করেছিলেন পি বি এস কর্ণধার প্রশান্তবাবু। মৃণালবাবুর ছবি করা নিয়েও তিনি বলেছিলেন, হবে না। ... ...
রাজুর সাথে দু মেয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেছে। যে কারণে নষ্ট হয়েছে তাতে রাজুর উপর পূরবীর পূর্ণ সহানুভূতি রয়েছে। অনেক বার গোপনে আলোচনা হয়েছে মা মেয়েদের ভেতর। পূরবী ছাড় দিতে চাইলেও ওরা ঘোর আপত্তি জানিয়েছে। সে ক্ষেত্রে পূরবী প্রশ্ন তুলেছে, তোরা কেন এখন কনজারভেটিভ হচ্ছিস ? তোদের বাবার কি অধিকার নেই স্বাভাবিক জীবন যাপনের ? একজন পঙ্গু, খোঁড়া স্ত্রীর সাথে আর কতকাল সে থাকবে? এটা জোর অন্যায় হচ্ছে। তোদের বাস্তবতা বোঝা উচিত। ... ...
ভট্টাচার্য মশাই ভেতর থেকে একটা তলোয়ার নিয়ে আসেন। খুব ধারালো। খুব পুরোনো। তাতে প্রার্থনা খোদাই করা আছে। মিরকাশিমের তলোয়ার নাকি? কে জানে! এই ভাঙা মহল, ওই তীব্র বুনো গন্ধ, নেতিয়ে পড়া শিমুল, এলিয়ে থাকা সাপের খোলস, তার মধ্যেই উনি এনে দেখান এক সুন্দর বৌদ্ধ তারা মূর্তি। সন্ধে ঘন হচ্ছে জঙ্গলের মাথায়। হাতের কবজিতে তখনও লেগে আছে সকালের আতরের মৃদু গন্ধ। পথে ছোটে নবাবের সঙ্গে দেখা। বর্তমান নবারের ভাই। দুর্গা পুজো কমিটির সভাপতি। ভাগীরথীর ভরসন্ধ্যার বাতাস, পুরোনো হাভেলির সামনে চওড়া মাঠ। ... ...
এ তো গেল সামাজিক আচার-বিচার সংক্রান্ত চাপ, যা রবীন্দ্রনাথকে সামলাতে হয়েছিল। কিন্তু এর পাশাপাশি শিক্ষার সামগ্রিক ব্যবস্থাটাকেই ভিতর থেকে বদলে দেবার জন্য রীতিমত অন্তর্ঘাত চলতে থাকে। বস্তুত রবীন্দ্রনাথের নোবেল পাওয়ার পর থেকেই শান্তিনিকেতনে এই মারণ-জীবাণু প্রবেশ করে। নোবেল-প্রাপকের বিদ্যালয়ে সন্তানকে পড়িয়ে আত্মপ্রসাদ ও সামাজিক গরিমাবৃদ্ধির তাড়নায় সেখানে সামাজিকভাবে উচ্চ আর ধনী অভিজাত শ্রেণীর ভিড় বাড়তে থাকে। এই শ্রেণীটির অর্থ এবং তজ্জনিত ক্ষমতার জোর ছিল প্রবল। মূলত তাঁদের চাপেই বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনেক অবাঞ্ছিত পরিবর্তনেও সায় দিতে বাধ্য হন। আগে এখানে মণ্ডলীপ্রথায় শিক্ষা হত, অর্থাৎ ছাত্র-শিক্ষক একই সঙ্গে মাটিতে বসে পড়াশুনা হত। তিরিশের দশকেই তার পরিবর্তে শিক্ষকদের জন্য উঁচু মাটির বেদী তৈরি হয়। খাওয়াদাওয়ার পর ছাত্রদের নিজেদের বাসন মেজে নেবার রীতিও উঠে যায়। ছবি আঁকা, গান, হাতের কাজ, গ্রামসেবা ইত্যাদি বিষয়গুলোকে মূল পাঠক্রম থেকে সরিয়ে ‘আনুষাঙ্গিক পাঠক্রমে’ পরিণত করা হয়। ১৯৩১ সালে বিশ্বভারতীর তরফে আনন্দবাজার পত্রিকায় একটা বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। তাতে শান্তিনিকেতন ওই সময় কী কী বিষয়ে পঠন পাঠন হয় এবং কী কী পরীক্ষা বা ডিগ্রি দেওয়া হয়, তার উল্লেখ ছিল। তাতে এও জানানো হয়েছিল যে, বিশ্বভারতীর ছাত্রদের কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে আই.এ এবং বি.এ পরীক্ষা দেবারও ব্যবস্থা আছে। মহান রাবীন্দ্রিক শিক্ষাদর্শ থেকে মুখ ঘুরিয়ে এই যে বিশ্বভারতীর কেরানী-গড়ার প্রথাগত শিক্ষার দিকে চলন, তা-ই রবীন্দ্রনাথকে হতাশ করে তুলেছিল। ১৯২৫ সালে লেখা একটি চিঠিতে তিনি জানাচ্ছেন, “একদিন এই কলেজের বিরুদ্ধে মাথা তুলেই একলা আমার তরী ভাসিয়েছিলুম --- কিন্তু তরী ঘুরেফিরে এলো সেই কলেজের ঘাটেই। বসে বসে দেখছি … শান্তিনিকেতন আপন আইডিয়ালের গর্ব ভাসিয়ে দিয়ে ছেলে পাশ করাচ্ছে। … ভাগ্যে ছিল আমার কলাভবন এবং শ্রীনিকেতন। আমার শেষ বয়সের সমস্ত চেষ্টা যদি ঐ কলাভবন সংগীত ভবনের জন্য দিতে পারতুম … মনে করতুম জীবন সার্থক হয়েছে।“ ... ...
জাবেদা, রুমেলা, ফতিমা মেয়েটাকে ছেঁকে ধল্লো। পতমত একুন তো হিঁদু মেয়েছেলে মোসলমান মেয়েচেলে আলেদা করা যায় না। বড়ঘরের হিঁদু মেয়েচেলেরাও সিঁদুর পরেনা, শাকা পরে না। আর গরিবঘরে নিয়মমতো হিঁদু মোসলমান মেয়েচেলে আলাদা করাই যায় বটে কিন্ত একুন সবার মুকে ত্যানা। মাতায় মোসলমান মেয়েমানুষের মত কাপড়জড়ানো। এ মেয়েটার হাত ফাঁকা। এমনিতেই হিঁদু না মোসলমান? জাবেদা হাত ধরে জোরে ঝাঁকালো। ... ...
শুরুটাও বেশিদিন আগে নয়। প্রথম স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের নিদর্শন পাওয়া যায় ১৯৩০ সাল নাগাদ। তখনও তার নাম স্টেরয়েড হয়নি। প্রথমদিকে মূলত টেস্টোস্টেরন জাতীয় যৌগ ব্যবহার হ'ত। প্রথমে মুখে খাওয়া হ'ত। পরে জানা যায়, মুখে খেলে অধিকাংশটাই লিভারে ধ্বংস হয়ে যায়। তখন পেশীতে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে নেওয়া আরম্ভ হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সৈন্যদের মধ্যে শক্তিবর্ধক হিসেবে স্টেরয়েড নেওয়ার চল শুরু হয়। নাৎসী ক্যাম্পগুলোতে যুদ্ধবন্দীদের ওপর স্টেরয়েড প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়। শোনা যায়, হিটলার নিজেই নাকি স্টেরয়েড নিতেন এবং তার ফলে তাঁর মধ্যে স্টেরয়েড সাইকোসিসের লক্ষণ দেখা যায়। ১৯৫৬ সালের ওলিম্পিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের অ্যাথলেটরা নিজেদের শরীরে প্রচুর পরিমাণে শারীরিক সক্ষমতা বর্ধক ওষুধ প্রয়োগ করেন এবং খেলায় চোখ টাটিয়ে দেওয়ার মত সাফল্য পান। ১৯৫০ সালে প্রেডনিসোন আবিষ্কার এবং তার বানিজ্যিক উৎপাদন ৫ বছর বাদে। তারপর পরবর্তী ছয় দশকে স্টেরয়েড মডার্ন মেডিসিনের রাজপথ-অলি-গলি চষে বেড়িয়েছে। বর্তমানে মডার্ন মেডিসিনের প্রতিটি সাব-স্পেশালিটির সাথে স্টেরয়েডের অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। ... ...
মিউকর সংক্রমণ চিরকালই ডায়াবেটিস কিংবা রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা যাদের কম তাদের মধ্যেই দেখা যেত। এই বছরও যেসব কোভিড রোগীদের ডায়াবেটিস আছে অথবা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজড রোগ আছে অথবা মাত্রাতিরিক্ত স্টেরয়েড দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যেই এই রোগটির সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে শুধু এটা বললেই চলবে না, তার কারণ কিছু কোভিড রোগী যাদের বয়স কম, যাদের ডায়াবেটিস কিংবা অন্যান্য রোগ নেই, যারা স্টেরয়েড পাননি তাদের মধ্যেও কিন্তু দেখা যাচ্ছে , যা খুবই বিরল। এ থেকে আমরা এই ধারণা করতে পারি যে, করোনা রোগটি মানুষের শরীরে নিশ্চয়ই এমন বিশেষ কিছু করছে যাতে এই ছত্রাক সংক্রমণ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এই প্রসঙ্গে এটাও বলে দেওয়া ভাল যে, সাধারণ মানুষের নাকে এমনিতেই যে মিউকর থাকে তা কিন্তু কোনো ক্ষতি করে না, কারণ যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো আছে তাদের এর থেকে কোনো ক্ষতিই হয় না। শুধু তাদেরই হয় যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে সেটা কোভিড হোক বা ডায়াবেটিস হোক বা অন্যান্য ইমিউনোকম্প্রোমাইজ রোগ হোক বা তাদের এমন ওষুধ দেওয়া হয়েছে যথা স্টেরয়েড বা অন্যান্য ওষুধ যেগুলো কিনা তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয় আর তাদের মধ্যেই এই ধরনের ছত্রাক সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ... ...
তাঁদের বড় আনন্দের দিন আজ। তাঁদের হাসির দমকে রাস্তার গাছপালা কেঁপে ওঠে। বাসায় ঘুমন্ত পাখি চমকে জেগে ডানা ঝাপ্টায়। একা তাঈর শুধু চুপচাপ। তাঁর মুখে আজ হাসি ফুটছে না। ডানহাত খুইয়েছেন বটে, কিন্তু যুদ্ধের দেবতা অঙ্গহানির পরোয়া করেন না। হাতের থেকে অনেক গভীরে আরো বড় এক ক্ষত থেকে অবিরত তাঁর রক্ত ঝরছে। তাঈরের গলার কাছে ব্যথা করতে থাকে। ... ...
রঘুনাথ বললো কাছাকাছি ভাবকান্দি নামে একটা আদিবাসী গ্রাম আছে, সেখান থেকেই আসে বেশির ভাগ লোক। সেই গ্রামটা, আর যে গ্রামের থেকে আমাদের অষ্টমী আসে গোরুর দেখাশোনা করার জন্যে – ডাংলাজোড়া – এই দুটো গ্রামে তুমি আমাকে নিয়ে যাবে? বাড়ি বাড়ি? আমি তো ওদের সবায়ের ভাষা বুঝবো না, তাই তোমার সাথে যাবো প্রথম প্রথম। ওদের গ্রামে গিয়ে আমি ছবি আঁকবো, আর ওদের বাচ্চাদের ছবি আঁকা শেখাবো। ... ...
ফোনটা পেয়েই এই সাত-সকালে বের হতে হলো। জিরো পয়েন্টে একটা ডেড-বডি পাওয়া গেছে। আপাতত এটুকুই জানতে পেরেছি। সাব-ইন্সপেক্টর কল করে জানালেন বিষয়টি। এ আর নতুন কী! প্রথম প্রথম এ-ধরনের সংবাদ শুনে বেশ ঘাবড়ে যেতাম, মনটা বিষিয়ে উঠত, আবার এক ধরনের অ্যাডভেঞ্চারের স্বাদও জেগে উঠতো ভেতরে ভেতরে। এখন হই বিরক্ত— সময়মতো না ঘুমাতে পারার বিরক্ত; খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ঠিকঠাক না হওয়ার জন্য বিরক্ত, স্ত্রী-সন্তানদের সময় দিতে না পারার কারণে বিরক্ত। গিয়ে দেখি একঝাঁক মানুষ জটলা পাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কারও কারও চোখ থেকে ঘুমের ঘোর তখনো কাটেনি। কেউ কেউ বেরিয়েছিল হাঁটাহাঁটি করতে, লাশটা দেখে সংগত দূরত্ব রেখে দাঁড়িয়ে গেছে। সবার দৃষ্টি খানিকটা ওপরে। জিরো পয়েন্টের মাঝামাঝি পরিত্যক্ত পোলের সাথে গলাই দড়ি পেঁচিয়ে ঝুলে আছে মাঝবয়স্ক এক লোক। লোকটির কাঁধে বসে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে একটি কাক। এতগুলো লোক তার দিকে তাকিয়ে আছে দেখে সে কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না। নিজেকে নিরাপরাধ প্রমাণ করার জন্যই কিনা কা-কা-কা করেই যাচ্ছে; কিংবা ঘটনার সাক্ষী দিচ্ছে কি সে? আমাদের পরিভাষায় লোকটার নাম এখন ডেড-বডি। বোঝা গেল কেউ মেরে এখানে টাঙিয়ে রেখেছে। খুনিরা মাঝে মধ্যে পাবলিকের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্যে এ-ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়— কখনো আবার শরীর থেকে হাত-পা-মাথা আলাদা করে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছড়িয়ে দেয়। একবার আমাকে সেরকম একটা কেস সামলাতে হয়েছিল— শরীর মেলাতে মেলাতে হয়রান। মাথাটাই পাওয়া যায় না। শরীর দেখে সরকারি পক্ষের একটা পরিচয় দাঁড় করানো হলো, কিন্তু মাথা পেয়ে দেখা গেল ... ...
গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচনে কেজরিওয়ালকে হারানো সম্ভব হয়নি। তাই তাঁকে গদি থেকে নামানোর জন্য অন্য উপায় অবলম্বন করতে হয়েছে - ঘোষণা হয়ে গেলো যে বিজেপি-নিযুক্ত লেফটেন্যান্ট-গভর্নর এখন একাই দিল্লির 'সরকার', জনগণের ভোটে জিতে ক্ষমতায় আসা আম আদমি পার্টিকে কাজ করতে হবে তাঁর হুকুম মাফিক। আর তাছাড়া যে সমস্ত রাজ্যে বিজেপি সরকার নেই, সেই প্রত্যেকটি রাজ্যের রাজ্যপাল আর তাঁদের ওপরে থাকা দেশের রাষ্ট্রপতির ধমনীতেও তো বয়ে চলেছে গোলওয়ালকারেরই রক্ত। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উপাচার্যরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই একএকজন আরএসএস প্রাক্তন। তাই কানহাইয়া বা উমার খালিদের মতন অপ্রিয় প্রশ্ন করা ছাত্র-ছাত্রী আর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে দেখা যাবে না আজ থেকে দশ বছর পর। ... ...
চলার গতি বাড়ে। সেই সঙ্গে বাড়ে কোমরের দুলুনি। ওই দুলুনি জল বাঁচানোর জন্য। জল, খাবার জল। এই সোঁদরবনের গাঁ গেরামে বড়ো মহার্ঘ এই জল। কেউ একফোঁটা খরচ করে না অকারণে। করতে নেই। কেননা জল এখানে মাথা কুটলেও মিলবে না কোথাও। কেমন মজা বোঝো! মজাটি নিয়ে শরিফা আর ওর মিতেনি জীবন ঢালির বউ নেকি এক সময় খুব হাসাহাসি করত। জলের দেশের মেয়ে ওরা। জলের অভাব ব্যাপারটা মাথায় ঢোকে না কিছুতেই। মুখে বলেও, ধুস তাই আবার হয় নিকি! ভাত নি, কাপড় নি সে তো বুঝি, তা বলে পানি নি! শরিফার স্বামী ময়জুদ্দি হেসে বলে, হয় হয়। এটাই তো মজা র্যা। সোঁদরবনে পানি আছে, তবে লোনা, খাবার পানি খুব কম। হ্যাঁ, দেখেছে শরিফা, উলার চকে আট-আটটা টিউকল বসল। পানি উঠল বালি গোলা। খাওয়া দূরে থাক, মুখে দিলে ওয়াক থুঃ। পুকুরের পানি! সে তো তিন-চার মাস। খেলে পেটে ঘা হয়। বলে আর্সেনিক। তবে পানি কোথায়! হুই ডাঁসা নদী পার হও। ভবানীপুরে ডিপ টিউকল করেছে পঞ্চায়েত। সেখান থে পানি নে এসো। কিন্তু যাবে কীভাবে? বড়ো বাধা যে নদী। ছোটো-বড়ো নাও যা আছে, সব মাছ মারতে যায় বাদায়, চালানি যায় হাসনাবাদে। দু-একখানা নাও যা আছে, সেখানে ফ্যালো কড়ি মাখো তেল। কলসি-বালতি পিছু এক টাকা, নগদা-নগদি। টাকা দাও আর পানি নাও। কার আছে পয়সা! উলার চকের মানুষের চাষবাসের উপর জীবন। ছ-মাস কাজ, বাকি সময় জোন খাটো, নাও চালাও নয়তো বিশপুরের হাটে মাল বও। না হলে উঞ্ছবৃত্তি করে চালাও। তাই পানি নিয়ে চলে টানাপোড়েন। কখনও মারপিট, মেয়ে হলে ইজ্জতের উপর হামলা। অনন্ত ঢালির বউ আয়না এক কাণ্ড ঘটিয়েছে। সে শরীরের রং ঢং দেখিয়ে মাঝিদের বশ করে পানি আনত। কিন্তু রসিক মাঝি সেয়ানা খুব, সুযোগ বুঝে একদিন হামলে পড়ল ওর উপর। আর আয়নাও তেমনি৷ ইজ্জত বাঁচাতে দিল হালের বাড়ি কষিয়ে। এক ঘায়ে কাত রসিক। আয়না এখন জেলে। ওর রুগ্ন ছেলেটা মা মা বলে উলার চকের আকাশ বাতাস ভারী করে চলেছে। ... ...
অলংকার দিয়ে লেখে কবিতা বিস্মৃতির অতলে যাওয়া গপ্পো ফাঁদে তবু তোমার নাম উল্লেখ করে না। প্যালেস্তাইন আমার এই পাহাড়ের গায়ের খুপরি থেকে কত দূরে আমার বুকে বসে খণ্ড খণ্ড করে টুকরো করার কতখানি কাছে। । ... ...
প্রথম কথা লকডাউন ম্যানেজমেন্ট নিয়ে। এই রাজ্যের একটা বড় জনভারের অংশ ইতিমধ্যেই গত লকডাউনের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তার উপর রাজ্যের উপর দিয়ে গেছে আম্ফানের মতন বড় দুর্বিপাক। গ্রামে-গঞ্জে দিকে দিকে কোভিড ছড়িয়ে পড়েও রুটি-রুজি মার খেয়েছে অনেকের। তার উপর এই আচমকা একদিনের নোটিসে লকডাউন। পেটের ভাত জুটবে তো সকলের? উপোষী পেটে কোভিড সংক্রমণ কিন্তু প্রায়-নিশ্চিত মৃত্যুর প্রেসক্রিপশন। কেন “দুয়ারে রেশন” এর মত সুবিধার কথা ভাববে না সরকার? আর শুধু তো রেশন নয়, বেঁচে থাকতে লাগে আরও কিছু জিনিস। যেসব মানুষ লকডাউনের চক্করে সাময়িক জীবিকাহারা হলেন বা আগেই জীবিকা হারিয়ে অসহায় বিপন্নতার দরজায়, সেই অজস্র অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত / একদা-জড়িত মানুষদের জন্য কেন সরাসরি সাময়িক আর্থিক ভাতা দেওয়া হবে না? এবং কেন নিশ্চিত করা হবে না যে সেই অর্থ বিপন্ন মানুষ পাবেন ‘দাদা’ না ধরে, কাউকে তার থেকে ভাগ না দিয়ে? ... ...
পায়ের তলে পদ্মরেণু, মুঠোয় গহন দীঘি চোখের ভিতর উড়ছে আকাশপ্রদীপ আফ্রোদাইতি,ম্যাজিক ছিলো,তোমার গ্রীবাস্থলে ... ...