আপনি যদি বুদ্ধিমান হতেন, এই বক্তব্য রাখার আগে একটু কৌশলী হতে পারতেন। আপনাদের নেতারাই বিগ মিডিয়াতে এবং আইটি সেলে ক্রমাগত জাতীয় সংগীত বদলে ফেলার কথা বলে আসছেন। হিন্দিকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রচার করছেন দিবারাত্র। হ্যাঁ, সাহিত্য আপনারা বোঝেন না, এটাই একমাত্র সত্যি কথা আপনি বলেছেন এখানে। বাংলা সাহিত্য বুঝলে বিজেপি করতেন না। ... ...
যদি ধরেও নিই যে আগামী তিনটি ত্রৈমাসিকেই বৃদ্ধির হার ০ তে আটকে রইল (অর্থাৎ সংকোচন বা বৃদ্ধি কোনোটাই হল না)—যদিও সেটা বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় অবাস্তব ভাবনা, তাহলেও বার্ষিক সংকোচনের হার অন্তত ৬% তে গিয়ে দাঁড়াবে। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে দেখা যাচ্ছে ২০২০-২১ সালে ভারতীয় অর্থনীতির সংকোচনের পরিমাণ স্বাধীনতা-উত্তর ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক ইতিহাসে সর্বাধিক হতে চলেছে। ... ...
একটা পিঁড়িতে উবু হয়ে বসে মা রান্না করত। রান্না হয়ে গেলে ভিজে ন্যাকড়া দিয়ে উনুন নিকোনো হত আর উনুন থেকে একটা সুন্দর সোঁদা গন্ধ উঠত, ঠিক বৃষ্টি পড়লে যেমন হয়, তেমন। আমার বোন ঐ গন্ধের লোভে উনুন চাটত। অনেক বারণ, বকাঝকা করলেও তাকে থামানো যেত না। উনুনে সোঁদা গন্ধ উঠলেই, পিলপিল করে দৌড়ে ছোট্ট জিভ বার করে উনুন চেটে দিত। ভাঁড়ে রসগোল্লা বা দই এলেও সেই সব ভাঁড় কামড়াত। এত দুরন্ত, সামলানো যেত না – বাবা ওর নাম দিয়েছিল বিলবিলে বাহাদুর। সকলে যখন জিজ্ঞেস করত, বাবা কি নাম দিয়েছে? – গরবিনী উচ্চকন্ঠে ঘোষণা করত – বিব্বিলে ভা-দুর। আমি বইপত্র নিয়ে থাকতাম, রান্নাঘরের দিকে অত নজর ছিল না, কিন্তু বোনের ছিল। দুপুরবেলা যখন কেউ দেখত না, ও-ই গিয়ে শিক দিয়ে, বড়দের মত উনুন খোঁচাত। ... ...
কমিউনিস্ট বলতে জনমানসে এক বিচিত্র স্টিরিওটাইপ রয়েছে। তারা দুর্নীতিমুক্ত সৎ হবে, তারা বহুজনহিতায় জীবন উৎসর্গ করবে, তারা সর্ববিষয়ে আদর্শ হবে, তারা প্রতিস্রোত হবে, নীরব সেবাব্রতী হবে ইত্যাদি প্রভৃতি। সমস্যা হল সর্বগুণে গুণান্বিত সিপিএমের এই নব্যপ্রজন্ম আন্দোলনের মধ্য দিয়ে উঠে আসে নি। ফলে এই বিচিত্র স্টিরিওটাইপ তাদের অধিগতও নয়, আকাঙ্ক্ষিতও নয়। তারা অনেক বেশি বাস্তববাদী। ... ...
১৫ ই মার্চ থেকে শুরু হয়ে ছিল সতর্কতামূলক গ্ণসংক্রম পরীক্ষা। প্রথম দিন হয়ত একটু এলমেলো অবস্থা ছিল কিন্তু পরে যথেষ্ট সুষ্টু ভাবে অঞ্চল অনুযায়ী মিশর, লেবানন, সিরিয়া থেকে আসা যাত্রী পরীক্ষা করা হয়। অনুপস্থিতিতে জেল ও নির্বাসন এর ভয়ে সকলেই এই পরীক্ষা নিতে বাধ্য। WHO নিয়মাবলী মেনে উপস্থিত সকলের মধ্যে ১ মিটার দুরত্ব বজায় রেখেই তাদের অপেক্ষা করতে বলা হয়, ছিল খাবার এর ব্যাবস্থা ও। পরীক্ষার জন্যে কুয়েত ফেয়ার গ্রাউন্ড এর হলঘর টিতে ৮ ফিট দূরে দূরে চেয়ার পেতে দলে দলে শয়ে শয়ে মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়, নেওয়া হয় ভ্রমণ বৃত্তান্ত। সপ্তাহব্যাপী এই পরীক্ষা চলা কালীন বাকী কুয়েতবাসী কিন্তু ঘরবন্দী। যেহেতু শপিং মল, পার্ক, সিনেমা হল সমস্ত বন্ধ ছিল, ছিল ‘ঘর থেকে কাজ করবার’ কঠিন নির্দেশ রাস্তা য় একদম দরকার না হলে তেমন লোকজন দেখা যায়নি। ... ...
আজকাল আমি পারতপক্ষে ব্যুফে (বা বাফে, যেমন বলবেন)–তে খাওয়া দাওয়া এড়িয়ে চলি। এর প্রধান কারণ নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পারা। ভাবুন একবার, কেউ বলল - যাই খাও বা যতটা পরিমাণেই খাও না কেন, বিলের পরিমাণ একই! এই প্রলোভন জয় করা – আমি তো ক্ষুদ্র মনুষ্য, বড় বড় মহাপুরুষের মানসিক জোরে কুলায় না। বহু সচেতন পাবলিক দেখেছি, যারা, এমনিতে যাকে বলে পুষ্টি এবং ক্যালোরি, হিসেব করে খায় – কিন্তু ব্যুফে-তে গিয়ে অন্য মানুষ হয়ে ওঠে। আমারও প্রায় অনুরূপ অবস্থা, ভিতর থেকে একটা কম্পিটিটেটিভ মনোভাব চাড়া দিয়ে ওঠে। ও খাচ্ছে আর আমি পারব না! বা পয়সা যখন দিয়েছি, তখন খেয়ে শোধ তুলতে হবে – এই চক্করে পড়ে মাঝে মাঝে এত খেয়ে ফেলেছি যে শেষে টেবিল থেকে ওঠার অবস্থা থাকে না! ... ...
বৈজ্ঞানিকদের পুর্ব-লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে বিশেষ কাজে লেগেছে। সেগুলো হল – (১) করোনা ভাইরাসের দেহের স্পাইক প্রোটিনের ভূমিকা সম্বন্ধে আগাম ধারণা থাকা, (২) ইমিউনিটির ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে “নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি”-র ভূমিকা, (৩) নিউক্লিক অ্যাসিড (যেমন আরএনএ বা ডিএনএ) ভ্যাক্সিন প্ল্যাটফর্মের উন্নত চেহারায় বিবর্তন এবং (৪) ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়াকে ধাপে ধাপে (sequentially) করার পরিবর্তে সমান্তরাল ভাবে (parallel) করা, কিন্তু যারা ভ্যাক্সিন স্টাডিতে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে কোন ঝুঁকি না নিয়ে। পূর্বোল্লেখিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে – “কার্যকারিতা কেবলমাত্র তখনই নির্ধারণ করা যাবে যখন যাদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে এবং অতিমারির হটস্পটের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার (match) করা যায় ... এজন্য প্রাথমিক এন্ড পয়েন্টগুলোকে সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হবে (এ বিষয়ে এর আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি), নির্বাচন করতে হবে স্টাডি-ডিজাইন এবং স্যাম্পেল সাইজের (অর্থাৎ কতজনের ওপরে ট্রায়াল দেওয়া হবে) সম্ভাব্যতার পুনর্মূল্যায়ন বিবেচনায় রাখতে হবে।” ... ...
মানুন না মানুন,আমরা সকলেই সংস্কারপন্থী। কেউ সু-এর আর কেউ কু-এর। আর পঞ্জিকা এই দুই-কেই ধারণ করে। সেই কাল থেকে এই কাল পর্যন্ত। বিজ্ঞাপন এই সংস্কারের বাহন। আমাদের জীবনযাপনের দৈনন্দিনতায় যে ওঠাপড়া ছড়িয়ে থাকে, তার হিসেব পাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য উপায় বিজ্ঞাপনসেবন। এতে শরীর ও মন স্বতঃই চাঙ্গা থাকে। অঙ্গে অঙ্গে রংমশাল জ্বলতে থাকে। কী ছিল বঙ্গে, তা কী হয়েছে এই অঙ্গে, এর এক সচিত্র ধারাবিবরণ বিজ্ঞাপন মারফত যেমন যেমন পাওয়া যায়, তেমন তেমন সাজিয়ে দিলাম। ... ...
পার্মাফ্রস্ট বলে প্রকৃতিতে একটা ব্যাপার আছে যা স্থলভাগের প্রায় ২৪% এলাকা জুড়ে এর অবস্থান করে । পার্মাফ্রস্ট মানে মাটির নিচে সহস্র-অযুত বছর ধরে জমে থাকা চিরবরফ অঞ্চল। এই হিম-মৃত্তিকাই ধারণ করে আছে মানব সভ্যতার আদিম অস্তিত্বকে। এর বুকেই দাফন আছে বরফ-যুগের প্রাণীদের হাড়-কঙ্কাল, এমনকি কিছু গাছপালার অংশও। এগুলি এতটাই গভীর এবং পুরু বরফের স্তর যে, সাইবেরিয় অঞ্চলের বাসিন্দারা মাটি খুঁড়ে ঘর বানিয়ে তাতে শার্কের মত বৃহৎ প্রানীর মাংস অব্দি সংরক্ষণ করে বছরের পর বছর ধরে । বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এই বরফও নাকি এখন দ্রুত গলে যাচ্ছে । কেননা, বিশ্ব-উষ্ণায়ণের জেরে এই সব অঞ্চলের তাপমাত্রা বাড়ছে লাগামছাড়া হারে। ২৩ জুন, ২০২০ জানা গেল যে, রাশিয়ার মস্কো থেকে প্রায় ৪ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উত্তর মেরুবৃত্তের অন্যতম শীতলতম এলাকা ভেরখোয়ানস্ক শহরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস । এখানে সচরাচর লোকজন বছরের বেশরভাগ সময়ে মাইনাস ৫০ ডিগ্রির তাপমাত্রায় জীবনযাপন করতে অভ্যস্ত । বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই অংশে অনেক দ্রুত বরফ গলে যাচ্ছে, তাও ধীরে ধীরে নয়, প্রায় রাতারাতি। ... ...
ওদিকে রাত্রি নটার চেম্বার খোলা রাখতে বাধ্য হয়েছি। যদিও কাকুকে বলে রেখেছি জ্বর আর এমারজেন্সি ছাড়া কোনো ক্রনিক রোগী না রাখতে। কাকু ফোনে তাড়া দিচ্ছে, তাড়াতাড়ি আয়। না হলে ভিড় জমে যাবে। পেটের মধ্যে ততক্ষণে মোচড় শুরু হয়েছে। চার চামচ ল্যাক্সিট প্লাসের আফটার এফেক্ট। যা থাক কপালে, জয় মা কালী বলে বেরিয়ে পড়লাম। কপালে ভালো কিছু ছিল না। খুপরিতে প্রথম রোগী দেখার সময়ই বুঝতে পারলাম জীবনের অন্যতম কঠিন পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়েছি। যে করেই হোক এই পরীক্ষায় সফল হতেই হবে। নইলে আমার মান সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে। দাঁত মুখ খিঁচিয়ে প্রথম আসা নিম্নচাপ সামলে নিলাম। রোগীর বাড়ির লোক জ্বরের ধারা বিবরণী দিচ্ছিলো। আমার মুখের অবস্থা দেখে নির্বাক হয়ে গেল। ওষুধ পত্র লিখে তার হাতে প্রেস্ক্রিপশান ধরিয়ে বললাম, আগে ওষুধ খাও। না কমলে বাকি গল্প শুনব। ততক্ষণে আবার নিম্নচাপ আসছে। ... ...
অনেকেই প্রশ্ন করে, “তাহলে বৌদ্ধধর্মে সরস্বতীর নাম কি?” বৌদ্ধধর্মে অনেক বৈদিক দেবদেবীর নাম পরিবর্তন করা হলেও, কোন কারণে সরস্বতীর নাম পরিবর্তন করা হয়নি। যদিও বৌদ্ধধর্ম ভারতের গণ্ডী ছেড়ে যখন এশিয়ার বিভিন্ন দেশে প্রসারিত হয়, তখন স্থান ভেদে দেবীর নাম পরিবর্তন হতে থাকে। তিব্বতে তাঁর নাম হয় ‘ইয়াং চেন মো’, সঙ্গীতের দেবী হিসাবে প্রাধান্য হলে নাম হয় ‘পিওয়া কার্পো’। মঙ্গোলিয়ায় তিনি হলেন ‘কেলেয়িন উকিন তেগ্রি’। চীন দেশে নাম হল ‘মিয়াওয়িন মু’। জাপানে তাঁকে মিলিয়ে দেওয়া হল দেবী ‘বেঞ্জাইতেন’ বা ‘বেন্তেন’-এর সাথে। যদিও বৌদ্ধ সরস্বতীর সব মন্ত্রে- তা সে যে ভাষাতেই হোক- উচ্চারণ ‘সরস্বতী’ই করা হয়। ... ...
এক যে ছিল ভীষণ কেবলী মেয়ে, টিঙটিঙে রোগা, থাকার মধ্যে মাথায় ঘন চুল, মুখচোরা আর প্র্যাকটিকালে ভয়। কেমিস্ট্রী ছাড়া সবকিছু পড়তে ভালবাসে, পাকপাড়া থেকে বেলগাছিয়া এসে ট্রামে করে কলেজ যায়। আর ছিল এক ডাক্তারীর ছাত্র, বেজায় গম্ভীর, নেহাত দরকার না পড়লে কথাটথা কয় না, সবসময় রামগরুড় মুখ করে ঘোরে কিন্তু পেটে শয়তানি বুদ্ধি গিসগিস করে। সেদিন ডিসেম্বর মাস, অসময়ে প্রবল বৃষ্টি। হাঁচতে হাঁচতে কেবলী কলেজে চলেচে, বগলে তিনটে প্র্যাকটিকাল খাতা, এক হাতে তোয়ালেরুমাল, অন্য হাতে বাসের রড, কাঁধে ঝোলা ব্যাগ। ... ...
বিষয়টা একটু অদ্ভুতই। বস্তুত ধনঞ্জয়ের উকিলই যখন ধনঞ্জয়ের বয়ানের উল্টো কথা বলেন, তখন মনে হয়, এ যেন শুধু নিয়মরক্ষার খেলা। আখ্যানটি পূর্বনির্ধারিতই আছে। যারা এই আখ্যানের বিরোধিতা করছেন, সে শুধু বিরোধিতা করার জন্য। আসলে তাঁরাও অন্য কোনো আখ্যানে বিশ্বাস করেননা। এবং বিরোধিতাটাও শুধু নিয়মরক্ষার্থে এবং সেটাও পূর্বনির্ধারিত এই আখ্যানেরই অংশ। এই সেই আখ্যান যেখানে উকিল ধনঞ্জয়ের পক্ষের সমর্থন করতে গিয়ে এমন কথা বলবেন, যা, ধনঞ্জয়ের বয়ানকেই মিথ্যে প্রমাণ করে সরকারি আখ্যানের ভাষ্যকে জোরদার করবে। দুজন প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ানের অসঙ্গতিগুলিকে উপেক্ষা কিংবা সম্পাদনা করে এমন মাপে নিয়ে আসা হবে, যাতে তারা খাপে খাপে মিলে যায় আদালত-স্বীকৃত আখ্যানের সঙ্গে। যেন জিগস পাজল মেলাতে বসা হয়েছে হাতে একটি র্যাঁদা নিয়ে। এখানে সমাধানটি পূর্বনির্ধারিত। যদি কোনো টুকরো না মেলে, তাকে হয় ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হবে, কিংবা ছেঁটে করে নেওয়া হবে মাপমতো। বিরোধিতাটাও হতে হবে, বিচারপ্রক্রিয়ার স্বার্থে। কিন্তু সেটাও মাপমতো, যাতে সেটা মূল আখ্যানের পক্ষে যায়, বা সরাসরি পক্ষে না গেলেও মূল আখ্যানকে চ্যালেঞ্জ করার মতো বিপজ্জনক না হয়। বিপজ্জনক স্ববিরোধিতাগুলি কেউ কেউ গুরুত্বই পাবেনা আদালত চত্বরে। ... ...
তার গ্রাম মৌচুরিয়ার সেই বন্ধুর নাম বুধন টুডু। বুধন নকশাল ছিল। কলকাতার বাবুদের সঙ্গে বেলপাহাড়ির দিকে বিপ্লব করতে গিয়েছিল। বাবুরা কেউ ধরা পড়েছে, কেউ ফিরে গেছে বাড়ি। বুধনকে পুলিস খুঁজছিল অনেকদিন। কিন্তু পাত্তা করতে পারছিল না। সে খুব বুদ্ধিমান। বার বার পুলিশকে ধোঁকা দিয়েছে। ধরতে পারলে জেলে ঢুকিয়ে দেবে। মেরেও ফেলতে পারে। সে কোথায় থাকে, কোথা থেকে গ্রামে ফেরে, তা পুলিশের খোঁচড় বুঝে উঠতেই পারে না। তার দেড় বিঘে জমিন আছে চাষের। সেই জমিই তাকে টেনে এনেছিল গ্রামে। ধান কাটার সময় গত অঘ্রানে এসেছিল। তখন পুলিস টের পায়নি। যখন খবর গিয়েছিল, সে কাজ সেরে পালিয়েছিল। এই বর্ষার দিনে চাষের টানে আবার ফিরে এসেছিল। গ্রামের চাষিবাড়ির ছেলে, প্রায় ভূমিহীন বুধন। জমি পাবে ভাত পাবে, তাই শহরের বাবুবাড়ির ছেলেদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে বাড়ি ছেড়েছিল। বিপ্লবের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। বাবুবাড়ির ছেলেরা ফিরে গেছে শহরে। ... ...
আজ ষষ্ঠী, রাত ফিকে হলেই সপ্তমী। ভোট, ভাইরাস আর ভিড়ের ভয়েবচ সামলাতে না সামলাতেই এসে পড়েছে আরও একটা উৎসবের উপলক্ষ্য। আর এই বিস্তীর্ণ মানচিত্রের কোথাও কোথাও আলো ক্রমে আসিতেছে, আর তার পাশে মঞ্চের বাইরে মাটিতে, আলোর বৃত্তের বাইরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কেউ কেউ। নতুন নতুন গল্প শুরু হবে এখন-ই, সুতোর টানে আস্তে আস্তে জীবন্ত হয়ে উঠবে এক-এক করে চরিত্র। আসুন তাহলে এই ক'টা দিন, প্যান্ডেলের বাইরে দু'টো চেয়ার টেনে একটু বসা যাক নিরিবিলি আড্ডার মেজাজে, এই তো আমরা-ই ক'জন ... আসুন তার এক ফাঁকে পর্দা তুলে উঁকি মারি মঞ্চের ভেতরে ও বাইরে, ভিড় ছেড়ে চলুন এসে বসি ইন্টারনেটের এই ঠেকে। একটু একটু করে জমে উঠুক কথা ও বার্তা। এবারের শারদ সংখ্যা প্রকাশিত হবে আগামী কিছুদিন ধরে, উৎসবের পুরো মরশুম জুড়েই যতটুকু পুজোর গন্ধ গায়ে মেখে নেওয়া যায়। চোখ রাখুন গুরুর শরৎ ২০২১-এর পাতায়, প্রতিদিন নতুন লেখা জুড়ছে, জুড়বে। পড়তে থাকুন রয়ে সয়ে। ভাল লাগলে ভাগ করে নিন, না লাগলেও। ... ...
কিন্তু আমার যাদবপুরে এম.এ. পড়তে আসাই হত না যদি না সেই গ্রীষ্মশেষের বিকেলে, কফিহাউসে গিয়ে টেবিল দখলের আগে, প্রেসিডেন্সির সিড়ির তলায় অপেক্ষারত প্রদ্যুম্ন ও আমার কাছে রীতিমত উদয় হয়ে, মানব বার্তা দিত, শহরে এক নতুন বিশ্ববিদ্যালয় বসেছে এবং তাতে তুলনামূলক সাহিত্য নামে এক নূতন বিদ্যা চালু হচ্ছে। আমাদের অনার্সের ফল বেরিয়ে গেছে, আমরা স্নাতকোত্তরের দরজায়। মানব জানাল, সে কলকাতায় বাংলা না পড়ে যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য পড়বে। সেই বিভাগের প্রধান, বুদ্ধদেব বসুকে সে চেনে; তিনি তাকে উৎসাহ দিয়েছেন। ... ...
দেবেশ রায় বাংলা গদ্যসাহিত্যে এক অনন্য ঘটনা। লেখায় একদিকে অতি স্পষ্ট রাজনীতি, অন্যদিকে রাজনৈতিক প্রশ্নগুলিকে ক্রমাগত উত্থাপন করে যাওয়া, একই সঙ্গে দীর্ঘ, প্রায় ক্লান্তিকর বর্ণনাধর্মিতা আর পাশাপাশিই ন্যারেটিভকে হেলায় ভেঙে ফেলা, একই লেখায় তত্ত্বরচনা এবং তত্ত্বকে প্রশ্নচিহ্নের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো, সব মিলিয়ে দেবেশ রায়ের কীর্তির যা মাপ, সে বস্তু বিশ্বসাহিত্যেই অতিবিরল। তাঁর জন্মদিনেই প্রকাশিত হচ্ছে গুরুচণ্ডা৯ ই-পত্রিকার প্রথম সংখ্যা - দেবেশ রায় সংখ্যা। ... ...
যাঁরা ব্রহ্মচারীর মতো জীবন যাপন করেন, তাঁদের উপাধি হয় ব্রহ্মচারী। একটি কম সমর্থিত মত হল, যে কেশবচন্দ্র ভারতী শ্রীচৈতন্যদেবকে বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষা দেন। তাঁর বড়দাদা গোপালচন্দ্র ভারতী দীক্ষার পরে নিজেদের মুখোপাধ্যায় উপাধি ত্যাগ করে ব্রহ্মচারী উপাধি গ্রহণ করেন। এদের নবম বা দশম বংশধর হচ্ছেন উপেন্দ্রনাথ ব্রহ্মচারী। এক অনন্যসাধারণ মেধার অধিকারী এই মানুষটির গ্র্যাজুয়েশন ১৮৯৩ সালে হুগলি মহসিন কলেজ থেকে – অংক এবং কেমিস্ট্রি নিয়ে ডাবল অনার্স, Thysetes মেডেল পান। এরপরে ১৮৯৪ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে কেমিস্ট্রিতে এমএ পাশ, সাথে গ্রিফিথ মেমোরিয়াল প্রাইজ। একই সময়ে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। এলএমএস ডিগ্রি পান ১৮৯৯ সালে। ১৯০০ সালে এমবি ডিগ্রি – মেডিসিন এবং সার্জারি দু’টিতেই প্রথম হয়ে গুডিভ এবং ম্যাকলিওডস মেডেল পান। ১৯০২ সালে এমডি পাশ করেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এরপরে ১৯০৪ সালে পিএইচডি অর্জন। বিষয় ছিল “Studies on Haemolysis”। তাঁর পিএইচডির থিসিসের সংক্ষিপ্ত এবং উন্নত চেহারার নতুন গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় বায়োকেমিক্যাল জার্নাল-এ ১৯০৯ সালে “Some Observations on the Haemolysis of Blood by Hyposmotic and Hyperosmotic Solutions of Sodium Chloride” শিরোনামে। এছাড়াও ক্যালকাটা স্কুল অফ ট্রপিকাল মেডিসিন অ্যান্ড হাইজিন থেকে Mente মেডেল এবং এশিয়াটিক সোসাইটির উইলিয়াম জোন্স মেডেল লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে প্রায় সম্পূর্ণ জীবন কেটেছে গবেষণার নির্ভুল লক্ষ্যে। প্রায় ১৫০টি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে নেচার, ল্যান্সেট, ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল, বায়োকেমিক্যাল জার্নাল, ইন্ডিয়ান জার্নাল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল গেজেট-এর মতো জার্নালগুলোতে। ... ...
পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপকতম কোনো বিজেপি-বিরোধী জোট গড়ে উঠবে, সেরকম আশা নেই। কিন্তু মূল বিষয়গুলো, যেমন লকডাউনের অভিজ্ঞতা, অর্থনীতির মন্দা, রোজগারের সমস্যা, কৃষকের সমস্যা এই ব্যাপারটা পশ্চিমবঙ্গেও মোটামুটি একই রকম। একইভাবে কৃষি বিলের প্রভাবও খুব আলাদা কিছু নয়। এইসব গুলোরই একটা সর্বভারতীয় চরিত্র আছে, যেমন সর্বভারতীয় শ্রমিক ধর্মঘটের আছে। এইসবগুলোকে যদি আন্দোলনের রূপ দেওয়া যায়, তাহলে পশ্চিমবঙ্গেও একই রকম আলোড়ন তোলা সম্ভব। কেন্দ্রে বা রাজ্যে আলাদা সরকার থাকাটা এক্ষেত্রে সমস্যা নয়। সমস্যা হল, ২১শে রাম এবং ২৬শে বাম, এরকম একটা কথা ফিসফিস করে ছড়ানো হচ্ছে। এটা নিশ্চয়ই কোনো বামের মাথা থেকে বেরোয়নি, বুদ্ধিটা আরএসএস এর। কিন্তু কথাটা ছড়িয়ে গেছে। বা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেটা বিভাজন তৈরির জন্যই ছড়ানো হয়েছে। কিন্তু সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে, কৃষকদের নিয়ে, শ্রমিকদের নিয়ে, শিক্ষানীতি নিয়ে আন্দোলন করতে পারলে আশা আছে। ... ...
কখনও ভেবেছেন কি সিংহ এদেশে গুজরাত ছাড়া কোথাও পাওয়া যায় না, আর বাঘ প্রায় সব রাজ্যে! অথচ প্রাচীন হিন্দু বা বৌদ্ধ ভাস্কর্যশিল্পে সিংহ সর্বব্যাপী আর বাঘ প্রায় অনুপস্থিত। ভারতের জাতীয় প্রতীক অশোকস্তম্ভের শীর্ষভাগ- সেখানেও সিংহ। রাজারা বসতেন সিংহাসনে। বুদ্ধও শাক্যসিংহ। সিংহ থেকে সিংহল, সিংহ থেকে সিঙ্গাপুর। ... ...