যোনি কাকে বলে জানিস ? জানি-জানি, বললো অমিত, রোজ একঘেয়ে লেকচার শুনে-শুনে ওসব আংরেজি তাকিয়া-কালাম মুখস্হ হয়ে গেছে, ইসকুলে যদি রোজ কেউ অমন লেকচার দিতো তাহলে দেখতে, সব সাবজেক্টে চৌয়া-ছক্কা পেটাতুম । বল তাহলে, কাকে যোনি বলে ? ... ...
স্পিডে যেতে যেতে হঠাৎ খেয়াল করে, পরের সিগনালের চৌমাথার বেশ একটু আগে ওই বাসটা সাইড নিচ্ছে। আরে আরে, এখানে স্টপ নেই তো, বাস দাঁড়াচ্ছে কেন? স্পিড কমিয়ে ব্রেকটা ছোঁয় গিরীশ। ওদিকে বাসে উঠেই শীতল টের পায়, দু’পায়ের ফাঁকে গরম স্রোত নেমে আসছে কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে। ‘আরে আরে মুতনা হ্যায় তো টয়লেট কিঁউ নেহি গ্যয়ে? বদতমিজ আওরত তু ঝল্লি হ্যায় কা?’ কন্ডাকটারের কর্কশ চিৎকারে সারা বাসের লোক ঘুরে ওকে দেখতে থাকে। কয়েকজন হেসে ওঠে, এক মহিলা এসে পিঠে খোঁচা মেরে বাস থেকে নেমে যেতে বলে। বাসের বেশিরভাগ লোক সায় দিয়ে গলা মেলায়। বাস ততক্ষণে পরের সিগনালে। কে যেন জলের বোতল খুলে জল ছুঁড়ে দেয় গায়ে, বাসের মধ্যে হুরডা পার্টি শুরু হয়ে যায়। হেল্পার দুই থাবড়া মেরে বাস থামিয়ে ওকে হাত ধরে টেনে নামিয়ে দেয়। ওকে নামিয়ে দিয়ে হোঃ হোঃ করে হাসতে হাসতে বাসটা চলে যায়। ... ...
মা তিনদিন পর সত্যি সত্যি চলে গেল, কিন্তু শ্মশান থেকে ফিরে আগুন ছুঁয়ে বাথরুমে স্নান করতে করতেই বুঝলাম, বুড়ি কোথাও যায়নি। প্রথমেই নাকের পাশটা সুড়সুড় করছিল বলে একটু ঘষে দিলাম। তারপরই আয়নায় তাকিয়ে দেখি, সেখানে এক খয়েরি আঁচিলের জন্ম হয়েছে। ঠিক যেমনটি মায়ের ছিল। এখনো ছোট, কিন্তু ঠিক জানি, এটা তত বড়ই হবে, যত বড় মায়েরটা ছিল। কান্না পেয়ে গেল। ওমা! দেখি, যেমন ভাবে মায়ের ঠোঁট তিরতির নড়ত কান্না চাপার সময়, অবিকল সেই ভঙ্গিতে আমার ঠোঁট নড়ছে। তাজ্জব হয়ে গেলাম, আমার তো কান্না পাবারই কথা নয়, আমি তো রাবার ক্লথের ওপর গু-মুতের তীব্র গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে মা-কে আর আয়াকে বেদম ধমকাতাম আর রোজ চাইতাম বুড়ি এবার আমায় রেহাই দিক! শুধু আঁচিল বা একরকম ভাবে কান্নার দমক সামলানো নয়, এরপর থেকে অবাক হয়ে দেখলাম আমার প্রতিটা ব্যাপারে মা ঢুকে পড়ছে। ... ...
প্রতি সন্ধেবেলা যখনই অফিসফেরতা বাসটা ঠাকুরপুকুর ছাড়িয়ে ডানদিকে বাঁক নেয় ত্রিদিবের আজকাল পেটের ভেতর হামাগুড়ি দিয়ে ভয় পাকিয়ে উঠতে থাকে। তার মনে হয় কলকাতার সভ্যতা থেকে এবার সে আদিম অন্ধকারের রাজ্যে প্রবেশ করছে। তার নতুন কেনা ফ্ল্যাট হাঁসপুকুর ছাড়িয়ে এক অনন্ত নিঃসীম মাঠের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকে নিঃঝুম হয়ে। চারদিকে ঘাপটি মেরে থাকা অন্ধকার লাফিয়ে পড়তে চায় সুযোগ পেলেই। সেই অন্ধকারকে টর্চের আলোয় চোখ ধাঁধিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা করে দিয়ে দুই পাশের মজা পুকুরের মধ্যেকার সরু রাস্তা দিয়ে পাঁক কাদা আর সাপখোপ এড়িয়ে সন্তপর্ণে মেন গেটের দিকে এগিয়ে যেতে হয় । এই নতুন ফ্ল্যাটের পেছনেই লুকিয়ে রয়েছে গণ্ডগ্রাম। মরা ঝোপ, বুনো জংগল, ক্ষেতের জমিতে সিমেন্ট ফেলে তার ওপর মাথা তুলছে প্লাস্টিক কারখানা, খোলা মাঠের এখানে ওখানে শ্বেতীর মতন জমাট বেঁধে টুকরো টুকরো বাড়িঘর, কলাবন, অবৈধ খাটাল। কলকাতার দিকে কিছুটা এগোলে ঠাকুরপুকুর বাজার। কিন্তু এইদিকটায় বড়ই নির্জন। সন্ধ্যে হয়ে গেলে শুধু টিমটিম করে মোবাইল রিচার্জের দোকান, চায়ের গুমটি অথবা ম্যাড়ম্যাড়ে মুদীর দোকানের আলো জ্বলে। মাঝে মাঝে রাস্তা কাঁপিয়ে বাস বা ট্রেকার চলে যায় গুম গুম করে। এই ধু ধু প্রকৃতির মধ্যে রিয়েল এস্টেট বানাবার কথা সমাদ্দার ছাড়া আর কেউ ভাবতেই পারত না। ... ...
মেয়েমদ্দ বাচ্চারা পালাতে চাইছিল। ওরা মেয়েদের টেনে নিয়ে যাচ্ছিল, বাচ্চাদের আগুনে ছুঁড়ে দিচ্ছিল আর মরদদের মাথায় বাড়ি। বলতে বলতে সুরজ কাঁপছিল, গোঙাচ্ছিল। ইসমাইল ওকে জল খাওয়ায়, জিগ্যেস করে লুটেরারা কোন ধ্বনি দেয় নি? সুরজ কেমন চুপ হয়ে যায়, খুব আস্তে বলে ‘আল্লা হু আকবর’ তারপর বাতাসের স্বরে ফিসফিস করে বলে ‘আমি দেখেছি ওদের অনেকের কপালে কমলা টিকা ছিল, লিডারের হাতে প্রধান নৌকরজির ফোটু ছিল’। ইসমাইল ঝাঁকি দিয়ে সোজা হয়ে বসে সুরজের মুখ চেপে ধরে ‘চুপ চুপ। খবরদার এইসব এখানে আর কাউকে বলবি না, আমার জানও চলে যাবে। ... ...
রইল পড়ে নড়বড়ে টুল, সাদা কাগজে লাল রঙের পোঁচ- আমরা ভাবতে বসলাম। কুমুদির গল্পে ভূষণদা বলত- "পচ্ছন্দ না হইলে চড়িবে না, অত বাক্য কীসের?" আমাদের সেই কথা মনে পড়ে গেল । একেই উল্টোপাল্টা প্রতিষ্ঠান- সকালের কথা বিকেলে পছন্দ হয় না, দুপুরের কথা সাঁঝের ঝোঁকে বদলে দিই । ওরিজিনাল গোলাপী হ্যান্ডবিলেই কাটাকুটি হয়েছে- সময়সীমা বদলে গেছে , বয়স অনুযায়ী নতুন বিভাগ যোগ হয়েছে। "পচ্ছন্দ না হইলে..." এইটাই আসল কথা- আমাদের মনে হল। ... ...
এ তল্লাটে কে না জানে, আজুদের বাড়ির পাশের ঢিবির উত্তর পশ্চিম কোণে চালা পড়ো পড়ো ভিটেয় ঘাপটি মেরে বাস-করা আকালু আসলে এক ভয়ানক গুনিন। যতো গরু ছাগল মরা বাচ্চা বিয়োয়, যতো মেয়েছেলের অসময়ে গর্ভজল খসে, সবের পেছনে ঐ আকালু শালা। ওর নজর পড়লে ফলন্ত লাউ কুমড়ো অব্দি বিলাই কুত্তার শুকনো নাদির মতো খটখটে হয়ে যায়। আবার ভ্যান চালানো ছেড়ে দিয়ে কেউ যদি বিপুল বিষয়আশয়ের মালিক বনে যায় রাতারাতি, ঠিক জানবে তার পেছনে রয়েছে আকালুর দেওয়া মাদুলি আর কবচের কেরামতি। ... ...
বাইরে ডাক্তার ও সুঁইকুমারীর সমবেত গগনভেদী আর্ত্তনাদ, লোকজনের হৈচৈ,পাড়াতুতো কুকুরবাহিনীর উচ্চস্বরে প্রতিবাদ - এতসবের মধ্যেও চেম্বারে ঢুকে প্রথমেই নজরে পড়ল ডাক্তারবাবুর ফোনটি( ততক্ষণে আমরা নিজেদের মধ্যে ফিরে এসেচি, এ দরজা ভেঙে ঢোকার ক্ষমতা গরুর হবে না)। অকম্পিত হাতে ফোন তুলে দৃঢ়স্বরে বাড়ীতে বলে দিলাম বাচ্চাদের ক্যারাটে ক্লাশ থেকে নিয়ে আসতে। কর্ত্তা যথারীতি সামান্য প্রতিবাদ করছিলেন, তোমরা কোথায় আছ? আমি তো ঠিক চিনি না ক্যারাটে ম্যাডামের বাড়ী (পড়ুন - টিভিতে ম্যাচ চলছে) এইসব। তার উত্তরে আরও দৃঢ়স্বরে জানিয়ে দিলাম যে আমাদের গরু তাড়া করেছে, এ জীবনে বাড়ী ফেরা হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়তা নেই। ফিরতে না পারলে সবুজ ব্যাগে ব্যাংকের পাশবই ও টাকা রাখা আছে (সেই সেলফোন, এটিএম কার্ডবিহীন সময়ে ব্যাংকের বইয়ের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল)। ... ...
কন্ডাকটর সাড়ে সাত সেকেন্ড হাঁ করে থেকে, পিছনের দিকে এগিয়ে গেল। অফিসের স্টপ আসতেই বাস থেকে দ্রুত নেমে গেলেন বৃংহণবাবু। রাস্তা পারাপারের সময় আচমকা একটা গাড়ি সামনে এসে যাওয়ায় দুটো বাজে গালাগাল দিলেন। ড্রাইভার না শুনতে পাওয়ায় এই যাত্রায় বেঁচে গেলেন। ঝামেলা ১-০ গোলে হেরে গেল। ... ...
লোকটা হাত নেড়ে বলে, বাতাস না, বাতাস না—ওসব হল গুহ্য কথা—বুঝলেন কিনা! কানের পাশ দিয়ে ফিসফিস করে বয় আর বলে যায়, সাবধান, সাবধান! লোকটা চোয়াল শক্ত করে বলে, হোমে দুটি ছেলে থাকে না? মাজু আর কেল্টু? হারামির হাড় একটা! এই তো সেদিন এদিকের পরিচিত পাগল, নিত্যকে পিটিয়ে মেরে দিল—কেউ কিছু করল না, জানল না, বুঝল না—মেরে খালের জলে ভাসিয়ে দিল দেহ—গুহ্যকথা, গুহ্যকথা! ... ...
বাঘটা সুবিধা দিচ্ছে না। এখন জায়গায় দাঁড়িয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে ডান দিকে তাকাচ্ছে। এখনও গুলি পিছলে যাবার ভয় আছে। আব্দুল ওহাব আবার নিজের পজিশন বদলানোর কথা ভেবে বাদ দিয়ে দেয়। আজকে না পারলে কালকে হবে। কিন্তু উল্টাপাল্টা গুলি করে খামাখা একটা নিশ্চিত শিকার হাতছাড়া করা ঠিক না। এখনও যা বেলা আছে তাতে কাজ শেষ করে বড়ো নদীর ওই পাড়ে খালের ভেতরে দাঁড়ানো মহাজনের ট্রলারে দাঁত-নখ দিয়ে চামড়ার ঠিকানা বলে বেলাবেলিই বাড়ি ফিরতে পারবে। অবশ্য বড়ো নদীতে ফরেস্টারদের সামনা সামনি পড়ে যাবার ভয় আছে। গুলির শব্দ শুনলে টহল বোট নিয়ে তারা হয়ত এদিকে চলে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে অবশ্য আব্দুল ওহাবেরও উত্তর মুখস্থ করা আছে। তাকে যদি জিজ্ঞেস করে সে কোনো গুলির আওয়াজ শুনেছে কি না। সে নির্দ্বিধায় উত্তর দেবে- আপনাগের বন্দুকের একটা দেওড় ছাড়া তো আর কিছু শুনিনি ... ...
যথারীতি রঙ্কির পেট ব্যথা চাগাড় দিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে টিনের দরজা বন্ধ করেছে, কিন্তু এমন পেট মোচড়ানো যে শেকল তুলে দিতে পারেনি। কিন্তু আমাশার যেমন হয়, মোচড়াবে, কিন্তু একবারে ক্লিয়ার হবেনা, রঙ্কি কোঁথ পেড়েই যাচ্ছে ,পেড়েই যাচ্ছে, পেট আর পরিষ্কার হয় না। শেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন এসে উপস্থিত হল,অমনি রঙ্কি গোল গোল চোখে দ্যাখে একজোড়া কালো হাত নিচের টিন কাত করে বড় গামলায় উবুড় করছে। ভয়ে রঙ্কি চিৎকার করতে যাবে। দ্যাখে ওপর দিকে মুখ করে হাসছে তিলোয়া, চুলে অব্দি হলুদ হলুদ কী সব, কিন্তু দাঁতগুলো সাদা ঝকঝকে। ... ...
পানু পাল আঠারোতেই দানা ভরতে শিখে গিয়েছিল। প্রথমবার মাথা ফাটে ষোলোতে। সে আদতে বকুলতলার। সদ্য অ্যাক্সিলেটর গিয়ারের রহস্যভেদ করতে শিখে ধরাকে সরা জ্ঞান করতে শুরু করেছিল। ধাবার মালিক হরদয়ালের ভেস্পা নিয়ে মুচিপাড়ায় গিয়েছিল রং ওড়াতে। কিন্তু বেশি উৎসাহে ভুল জায়গায় আওয়াজ দিয়ে ফেললে তরুণতীর্থ ক্লাবের ছেলেরা তাকে ধরতে আসে। সে ভেবেছিল একবারে ফোর্থ গিয়ারে ফেলে ঝড়ের বেগে উড়ে যাবে। কিন্তু স্ট্যাটিক পজিশন থেকে একবারে ফোর্থ গিয়ারে ফেললে ভেস্পা প্রয়োজনীয় গতিজাড্য পায়না, সামনের চাকা উঠে যায় এবং প্রাণেশ মাটিতে পড়ে যায়। ক্লাবের ছেলেরা এই নবকর্ণকে আচ্ছাসে বানিয়েছিল। প্রথমবারের মত তার মাথা ফাটল। ... ...
‘মা দেখো বুকাই আবার বেডকভার চাপা দিয়েছে’ চেঁচিয়ে, ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় না থেকে চাদর কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করত। পুকাই চিরকালই অস্বস্তিজনকরকম নর্ম্যাল। পরিবেশপরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাজপোশাকে বিশ্বাসী। শীতে বেশি, গরমে কম, সমুদ্রস্নানে আরও কম। কালই দেখলাম, কার্লসবাড বিচে সপরিবারে উল্লসিত স্নানের ছবি আপলোড করেছে, বিকিনিপরিহিত। না, ফেসবুকে নিজের নামে নেই আমি। ফেক থেকে দেখেছি। ... ...
ফোনটা হাতে নিয়ে বসার ঘরে বসে ফেসবুক, খবরের সাইট খোলে রুখু। আসামের ডিটেনশান ক্যাম্পে আটক মহিলাদের নিয়ে একটা প্রতিবেদন। পাহারাদার, কর্তাব্যক্তিদের ধর্ষণ তো সাধারণ ব্যপার সেখানে। পড়তে পড়তে রুখুর হাত পা অবশ হয়ে আসে, পশ্চিমবঙ্গেও রাজারহাট আর বনগাঁয় ডিটেনশান সেন্টারের জন্য জমি নেওয়া হচ্ছে। আচ্ছা রুখুকে ধরলে তো ভিনরাজ্য থেকে ধরে আনতে হবে। তাহলে সেখানকার জেলেই রাখবে? আর সুমুকে ধরলে? মা’কে কে দেখবে তখন? ... ...
এ কি! এটা আবার কার ঘর! তার বেড়াল এঞ্জেলের বদলে মোটা, কালো, মস্ত একটা ল্যাব্রাডর কী করছে? ওরে বাবা!! কামড়ে দেবে না তো! আর ওর সুন্দর ফুল ফুল আঁকা ঘরটা? ওটা তো পুরোটাই গ্রে হয়ে গেছে! মা বাবার ঘরে যাবে বলে যেই না দরজাটা খুলেছে, অমনি ঊর্মি সোজা রান্নাঘরে! রান্নাঘরের দরজাটা খুলে দ্যাখে, রাস্তা!!আর একটা পোস্টারের ওপর কী যেন হাবিজাবি লেখা আছে। একটু তলার দিকে ইংলিশে লেখা আছে, “প্যারিস – ওয়ান কিলোমিটার ইস্ট”। আর তার তলায় লেখা, “লোরেইন – ওয়ান কিলোমিটার ওয়েস্ট।“ ... ...
সবকিছু শেষ হয়ে আসছে শ্যামলী জানে। সুবিমলের মাথার ভেতরের ঐ আলোআঁধারি জগত একদিন ওকে গিলে নেবে; আর ফিরতে দেবে না এই ক্ষয়াটে শহরের বাস্তবতায়। সুবিমল টের পায় সবকিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। বাসে উঠতে গিয়ে পা টলে যায়। ভুল রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে আধঘন্টা পরে বুঝতে পারে ঠিকানা ভুলে গেছে। মাঝে মাঝে মাথার ভেতরটা ছিঁড়ে যায় যন্ত্রণায়। কোনোকিছুতে মন বসাতে পারে না। গভীর রাতে কী যেন অজানা ভয়ে জেগে উঠে শুনতে পায় সারা ঘরময় খুকির খেলনাগুলো, বাঁকুড়ার ঘোড়াগুলি ঠকঠক শব্দে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধীরে ধীরে একলা হয়ে যাচ্ছে ও। ... ...
কলকাতার ধোঁয়া, ধুলো, শব্দ-ব্রহ্ম ও ব্যস্ততা থেকে বাঁচতে দক্ষিণ শহরতলির এক নিরালা অঞ্চলে নতুন ফ্ল্যাট নেয় ত্রিদিব ও বন্যা। কিন্তু তাদের নিরুপদ্রব জীবনে নেমে আসে এক নতুন উপদ্রব। তাদের শান্তি ও স্বস্তি ক্রমশ দূরে সরে যেতে থাকে। অস্থির ত্রিদিব ভেবে পায়না কী করবে? গুরুচণ্ডা৯তে পূর্বপ্রকাশিত শাক্যজিৎ ভট্টাচার্য্যর লেখা ছোট গল্প 'আউশভিত্স' এর শ্রুতি কাহিনী বা অডিও স্টোরি প্রকাশ পেল ইউটিউবে স্টোরিওয়ালাস প্রোডাকশনস-এর হাত ধরে। ... ...
চোখা চোখের তলায় ছিলবিল করছিল ব্যঙ্গ। সন্তুর শান্ত চোখেও এবার হাসি ছড়াচ্ছে, মৃদু, খুব মৃদু। তপোব্রত অপ্রস্তুতের মত, সামান্য। অপরার সংগে সন্তুর প্রেম বোধ হয় কয়েক মাসের। অপরাকে সঙ্গে নিয়ে সন্তু দিল্লি এসেছে। এটা ঠিক, সন্তুই বেসিক্যালি তপোব্রতর বন্ধু, আর অপরাকে ও প্রায় চেনেইনা, এটাও ঠিক। তাহলে? প্রশ্নটা সন্তুকে করায় কি দোষ হয়েছে কিছু? সরাসরি অপরাকেই করা উচিত ছিল? অপরার কি খারাপ লাগল ব্যাপারটায়? না এমনি, ফচকেমি করছে শুধু? মুখ দেখে ত বোঝা যাচ্ছে না, অথচ কথাটা আলটপকা বল্লেউ তার মধ্যে এক ধরনের ঠেশ আছে। সামান্য ঝাঁঝালো। "আমি"র ওপর একটু বেশি জোর। তপোব্রত একটু অফ হয়ে গেল, একটু অন্যমনস্ক। আমি -টা বেশি এই মেয়েটার। কেমন, মেয়েটা? এই অপরা? একটু কৈফিয়ত দেবার মত করে তপোব্রত বলল, আসলে প্যাট্রিয়ারকাল সোসাইটি ত। তাছাড়া তুমি ওর সঙ্গে এসেছো। তাই ওকেই জিজ্ঞেস করা সমীচীন হবে ভাবলাম, বুঝলে না? ... ...
অবিনাশই অনিল বাবুকে দেখা করাল বুধন কাঠুরিয়ার সাথে। সে একগাল হেসে অনিল বাবুকে বলল "হে হে, চিন্তা করবেননি বাবু রাতের অন্ধকারে যা কাজ করবাে না কাকপক্ষীতেও টের পাবেনি। শুধু এইটা পাবাে তাে?" বুধন দুবার হাতের তর্জনী দিয়ে বুড়াে আঙ্গুলে টোকা দিল। অনিল বাবু ইঙ্গিতটা বুঝে গেলেন, পার্স থেকে একটা দুহাজার টাকার নােট বার করে বুধনের হাতে দিয়ে বললেন "এটা অ্যাডভান্স, এরপর আরাে পনেরাে আছে।" "তা, কবে কাজটা করব বাবু?" টাকাটা নিয়ে বুধন জিজ্ঞেস করল। "এই মঙ্গলবার রাতে" বললেন অনিলবাবু। ... ...