জ্যাক কিংএর গল্পটাই ধরুন। জ্যাক কেমিক্যাল এঞ্জিনীয়র। বহু বছর পেট্রোকেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিতে সম্মানের চাকরি। তারপর সাউথ অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অফ এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিংএ যোগ দেওয়া। সমস্যার সূত্রপাত তখনই। জ্যাক কোস্টাল ওয়াটার সংরক্ষণের রিপোর্ট দাখিল করলেন ক্যাবিনেটে। রিপোর্টে পোর্ট পিরির লেড স্মেল্টারটিকে ভারি ধাতু দূষণের দায়ে সাব্যস্ত করলেন জ্যাক। ক্যাবিনেট থেকে নির্দেশ এল পোর্ট পিরির যাবতীয় রেফারেন্স অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার। অথচ ততদিনে সি এস আই আর ও র বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করেছেন লেড স্মেল্টারের ভারি ধাতু কিভাবে মারাত্মক ক্ষতি করছে সে অঞ্চলের জীবজগতের। বলাই বাহুল্য, কিং তাঁর মত থেকে একচুলও বিচ্যুত হ'লেন না। বরং মন্ত্রী, আমলাবর্গের কাছে বারংবার দরখাস্ত করে যেতে লাগলেন। কোনোরকম সাড়া না পেয়ে, বাধ্য হয়ে মিডিয়ায় গেলেন কিং। অর্থাৎ ফুঁ পড়ল বাঁশিতে। সঙ্গে সঙ্গে কিংএর পোজিশন 'রিডানড্যান্ট। এরপর সেই এক গল্প- মানসিক রোগীর তকমা সেঁটে দিয়ে চাকরিটি কেড়ে নেওয়া। ... ...
তা, চিত্রাদি তো দুই হাত নেড়ে “কাট কাট” বলতে বলতে হেলেদুলে এসে ধাঁই ধপ্পাস করে একটি চেয়ারে বসলেন, চেয়ারের অসহায় প্রতিবাদ ও মেয়েদের নীচু গলায় সম্মিলিত হতাশার শব্দ একসঙ্গে শোনা গেল। আর অন্যদিক থেকে ছাত্রীদের উপস্থিতি ভুলে গিয়ে ভীষণ গনগনে মুখে তেড়েমেড়ে উঠলেন পরিচালিকা অপর্ণাদি – “আপনি কাট কাট বলে হঠাৎ এইরকম চ্যাঁচালেন কেন ? দিব্যি হচ্ছিল তো” “দিব্যি হচ্ছিল? অই অর্জুন গানের সঙ্গে এত এক্সপ্রেশন দিচ্ছিল কেন? বেজায় ওভার অ্যাকটিং তো। রোজ বলি,আমি চাই সংযত,সুন্দর অভিনয় –” “অর্জুন কোদ্দিয়ে এল? সে তো চিত্রাঙ্গদায় ছিল, গতবছর হয়ে গেছে। তাসের দেশে অর্জুন?” ... ...
অনেক দূরের একটি নক্ষত্র, যার আলো আর তাপ সে একদা খুব ভালোবাসতো, আর এখনো সে শীত বুঝলে সেই আলো আর তাপের কাছে ফিরে ফিরে যায়, যদিও অনেক কাল খুব একটা দেখাশোনা নেই। এইমাত্র সেই নক্ষত্রপতনের শব্দ হল। লোকটার মন খারাপ লাগছে। তার বেঁচে থাকার টুকরোটাকরা দিয়ে তাই সে লিখে ফেলছে আবোলতাবোল। সেই সব দিনগুলি-রাতগুলির কথা, যাদের মধ্যে একদা সেই নক্ষত্রের আলো, আগুন আর জলের ছাপ পড়েছিল। ... ...
বৈজ্ঞানিকদের পুর্ব-লব্ধ জ্ঞান এক্ষেত্রে বিশেষ কাজে লেগেছে। সেগুলো হল – (১) করোনা ভাইরাসের দেহের স্পাইক প্রোটিনের ভূমিকা সম্বন্ধে আগাম ধারণা থাকা, (২) ইমিউনিটির ক্ষেত্রে স্পাইক প্রোটিন প্রতিরোধের ক্ষেত্রে “নিউট্রালাইজিং অ্যান্টিবডি”-র ভূমিকা, (৩) নিউক্লিক অ্যাসিড (যেমন আরএনএ বা ডিএনএ) ভ্যাক্সিন প্ল্যাটফর্মের উন্নত চেহারায় বিবর্তন এবং (৪) ভ্যাক্সিন তৈরির প্রক্রিয়াকে ধাপে ধাপে (sequentially) করার পরিবর্তে সমান্তরাল ভাবে (parallel) করা, কিন্তু যারা ভ্যাক্সিন স্টাডিতে অংশগ্রহণ করেছে তাদের ক্ষেত্রে কোন ঝুঁকি না নিয়ে। পূর্বোল্লেখিত সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে – “কার্যকারিতা কেবলমাত্র তখনই নির্ধারণ করা যাবে যখন যাদেরকে ভ্যাক্সিন দেওয়া হয়েছে এবং অতিমারির হটস্পটের মধ্যে তুল্যমূল্য বিচার (match) করা যায় ... এজন্য প্রাথমিক এন্ড পয়েন্টগুলোকে সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হবে (এ বিষয়ে এর আগে বিস্তারিত আলোচনা করেছি), নির্বাচন করতে হবে স্টাডি-ডিজাইন এবং স্যাম্পেল সাইজের (অর্থাৎ কতজনের ওপরে ট্রায়াল দেওয়া হবে) সম্ভাব্যতার পুনর্মূল্যায়ন বিবেচনায় রাখতে হবে।” ... ...
আশ্চর্যজনক ভাবে পুলিশ আগমনের কয়েক ঘন্টার মধ্যে লিখে ফেলা এই প্রতিবেদনের সঙ্গে রামধনির খারিজ হওয়া বয়ান হুবহু মিলে যায়। এই মিল আপতিক বা সাজানো হওয়া কঠিন, কারণ সংবাদপত্রের প্রতিবেদকের পক্ষে বহুদিন পরে রামধনি আদালতে গিয়ে কী বলবেন সেটা আন্দাজ করা অসম্ভব। যেটা সম্ভব, সেটা হল, রামধনি হয়তো আদালতে সত্যি কথাই বলছিলেন। এটি অবশ্য একটি সম্ভাবনাই, কিন্তু সেটা ফেলে দেবার মতো নয়। এবং আদালতে সংবাদপত্র প্রসঙ্গটি আসেইনি। রক্তের দাগের প্রসঙ্গটি অবশ্য এসেছিল। হাইকোর্টে ধনঞ্জয়ের কৌঁসুলী প্রশ্ন তোলেন, যে, এই নৃশংস খুনের(হেতালের শরীরে ২১ টি আঘাত ছিল) পরেও কোনো সাক্ষীই কেন ধনঞ্জয়ের হাল্কা রঙের জামাকাপড়ে কোনো রক্তের দাগ দেখতে পায়নি? সরকারপক্ষের আখ্যানে এর কোনো উত্তর নেই। বিচারক রায়দানের সময় এই ধাঁধার সমাধান করেন এই ভাবে, যে, যেহেতু খুনের আগে ধর্ষণ হয়েছে, তাই খুনের সময় ধনঞ্জয়ের শরীরে জামাকাপড় ছিলনা। এবং সেখানে রক্তের দাগ লাগার তাই কোনো প্রশ্নই নেই। ... ...
সবটাই দামোদর নদের বালি উত্তোলন নিয়ে। ও হলো সোনার খনি। তিনি এক ব্যবসায়ীকে নিষিদ্ধ করেছেন চিঠি দিয়ে, সেই ব্যবসায়ী দিন পনের বাদে গাড়ি হাঁকিয়ে আমাকে এসে বলছেন, স্যার বলে পাঠালেন, কাগজপত্র, চালানে সই করে আমার কাজ শুরু করিয়ে দিতে। বললাম, স্যার চিঠি দিয়ে বন্ধ করেছেন, স্যার চিঠি দিয়ে নিষেধাজ্ঞা রহিত না করলে তো আমি কোনো চালানে স্বাক্ষর করতে পারব না, লিজ অর্ডার দিতে পারব না। যাদব মশায় জোরাজুরি করতে লাগলেন। তিনি আমাকে হঠাৎ বলেছিলেন, আপনার বই কী বেরুলো স্যার, কত কপি ছাপা হয়, আমি কিনিয়ে নিবো। অপমানিত লেগেছিল। স্যরি। আপনি নিজেই তো বাংলা পড়তে পারেন না, আমি অফিসে বই বেচতে বসি না। তিনি না পেরে আবার জেলা সদরে ছুটলেন। বলে দিলাম, লিখিত অর্ডার যেন তিনি না নিয়ে আসেন। অফিসিয়াল চিঠি যেভাবে আসে, সেই ভাবেই আসে যেন। স্যার অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, তাঁর পাঠানো ব্যবসায়ীকে আমি প্রত্যাখ্যান করায়। ... ...
নড়াইলে লোহাগড়া সাহাপাড়ায় গত শুক্রবার( ১৫ জুলাই, ২০২২) পরিকল্পিত ভাবে হিন্দু ধর্মালম্বীদের বাড়িঘর, দোকানপাট এবং মন্দিরে হামলা করেছে ধর্মান্ধরা। কারণ? কোন কারণ যদিও লাগে না, এবারও তেমন কোন কারণ নাই। শুক্রবার জুম্মার নামাজ এখন ভিন্ন ধর্মালম্বীদের জন্য আতঙ্কের নাম হয়ে যাচ্ছে। জুম্মার নামাজের পরে হুট করেই তাদের নজরে আসে যে ধর্মের তো প্রচণ্ড অপমান হয়ে গেছে, মান উদ্ধার না করলেই না! তারা মান উদ্ধারে নেমে গেছিল বিকালের মধ্যে। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে কেউ অনুভূতিতে আঘাত করেছে আর সেই আঘাতে কাতর হয়ে এরা গিয়ে নিরপরাধ মানুষের বাড়িঘরে হামলা করেছে! এবং, তাদের ধারণা এতে ধর্মের যে ক্ষতি হয়েছিল তা পূরণ হয়ে গেছে! ... ...
আগুনের আঁচে কিম্বা গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে নষ্ট হল আরও অন্তত কুড়ি-তিরিশখানা ছাউনি এই উপরে বলা সম্পূর্ণ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া দোকান ছাড়াও। সবই নানা রকমের খাওয়ার দোকান। মিষ্টি- ইডলি-দোসা- চা- আখের রস- চাওমিন- শরবৎ এই রকমেরই আর কি। দোকানিদের অধিকাংশই স্থানীয় মানুষ। হাতে গোনা কয়েকটা দোকান চালান বিহার এবং উৎকলবাসীরাও। বাঁশের এবং সরু কংক্রীটের স্তম্ভের ওপরে দরমা-পলিথিন শীট দিয়ে ঢেকে তৈরি এই দোকানগুলো ছিল বেশ কিছু চাকুরের নিত্য প্রয়োজনীয়তা এবং তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভাবে অন্তত দোকানপিছু একটা বা দুটো পরিবারের জীবিকাও। ... ...
যা বোঝা যাচ্ছে, অনুশাসনের সময় ক্রমে আসিতেছে। উচ্ছেদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলেই অনির্দিষ্টকালের জেলবাস। কার্টুন আঁকলেই একরাত্রি হাজতযাপন। পুলিশেরও রেহাই নেই। অনুমতি ব্যতিরেকে সাদাকে সাদা, কালোকে কালো, ধর্ষণকে ধর্ষণ বললেই সিধে ব্যারাকপুরে ট্রান্সফার। অনেক অকর্মণ্য অপোগন্ডোই কদিন আগে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর মাথায় দুটো শিং এঁকে আর মুখে দুটো শ্বদন্ত এঁকে ফেসবুকে সেঁটে দিয়ে অপার আনন্দ লাভ করছিলেন, আর এতদ্বারা কী প্রমাণিত হইল, জিজ্ঞাসা করলেই বুক ঠুকে বলছিলেন "পেইড ব্যাক ইন হিজ ওন কয়েন"। তাঁদের ফুর্তির দিন শেষ। ... ...
যারা ভাবছেন, বিয়ের অধিকার না পাওয়া গেল তো কী এসে গেল, ইকুয়াল ডোমেস্টিক পার্টনারশিপ তো দেওয়াই হচ্ছে, তাদের জন্য একটা ছোট্ট সওয়াল। ধরুন কোন স্কুলে বলা হল, সবাইকে সমান ভাবে পড়ান হবে, একভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, খাতা দেখা হবে, শুধু খাওয়ার জলের কলটা ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছাত্রছাত্রীদের জন্য আলাদা হবে, মেনে নেবেন? জল একই থাকবে, শুধু কলটাকে সবুজ রঙ করে দেওয়া হবে? জানি আপনি মেনে নেবেন না, কেননা আপনি যদি মেনে নেওয়ার দলের হতেন তা হলে এই লেখাটা এতদূর পড়তেন না। দিনের শেষে সাম্যের অধিকার এক মৌলিক অধিকার, যে অধিকারের প্রশ্নে আপোষ করা চলে না। ... ...
রাস্তার ধারে ঝুপসি গাছপালাগুলো অব্দি কুয়াশার কম্বল মুড়ি দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। একটু বাতাস বইলে দেখায় বিশাল দৈত্যের মাথা নাড়ার মতো। ধোঁয়া-ওঠা বুক নিয়ে এলিয়ে পড়ে থাকা নদীর দিক থেকে কেমন একটা গোঁওওও শব্দ ভেসে আসে, যেন কেউ কাঁদে, কষ্টে গা মোচড়ায়, নিজের গলায় নিজের দশ আঙুল চেপে ধরে। তাতে গা শিরশির করলেও অষ্টমী ভালোই জানে আসল বিপদ লুকিয়ে আছে পেছন বাগে। সে বিপদ যে কখন বিদ্যুতের মতো ঘাড়ের ওপর অব্যর্থ লাফিয়ে পড়বে কেউ জানে না। সে এক আশ্চর্য হলদে আগুনের শিখা, তাকে দেখার আগেই নিজের কানেই শুনতে পাবে নিজের ঘেঁটি ভাঙার মট মট শব্দ, আর কিছু বোঝার আগেই এতো আলহাদের শরীরখানা তেনার কষে ঝুলতে থাকবে। যেন তুমি আর মানুষ নও হে, দাঁত বার করা মরা বেড়াল একটা। শিউরে উঠে অষ্টমী তার কালো ফাটা হাতখানি কোঁকড়া চুলে ঢাকা ঘাড়ের ওপর আলগোছে বুলিয়ে নেয়। রক্ষে কর সোনার বন্ন বনবিবি, মা আমার! ভয় তাকে পেড়ে ফেলে, হঠাৎ এমন কাঁপুনি দেয় যে শরীরের সমস্ত রোঁয়া খাড়া দাঁড়িয়ে ওঠে। ... ...
সুবিদিত হলেও, সত্যজিতের পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতের দখলের কথা যত বলা হয় তত বলা হয়না ওনার হিন্দুস্তানী সঙ্গীতের দখল সম্বন্ধে। পশ্চিমি ধ্রুপদী সঙ্গীতে ওনার দখল ও উৎসাহ তখনকার গড়পড়তা সঙ্গীতবোদ্ধাদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল সে কথা বহু-আলোচিত। আমি এমনও শুনেছি বন্ধুমহলে ওনাদের একটা খেলাই ছিল একটি কম্পোজিশনের পিস শুনে চিনতে হবে - কম্পোজার চেনা তো তুশ্চু - কন্ডাকটরকে! কিন্তু আমার ব্যক্তিগত ধারণা হিন্দুস্তানী সঙ্গীতে সত্যজিতের দখল ছিল পশ্চিমি সঙ্গীতের থেকে হয়ত বেশিই। গুগাবার গানের বাজির দৃশ্যটি তার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ছবির দিক দিয়ে দেখতে গেলে গানের বাজির শুরুয়াৎ কিন্তু হাল্লার রাজসভারও আগে, যখন গুপি-বাঘা ভূতের দেওয়া খাবার খেয়ে হাত-মুখ ধুতে ধুতে ও সঙ্গে রাজকন্যার চিন্তা করার সময়ে দোলায় চড়ে টোড়ি গাইতে গাইতে যাওয়া ওস্তাদের সাক্ষাৎ পায়। সেই দৃশ্য শেষ হয় লয় বাড়িয়ে দ্রুতে খেয়াল গাইতে গাইতে যখন "বাপ রে বাপ, কী দাপট"-এর সঙ্গে ওস্তাদজী হাল্লার রাজসভার দিগন্তে মিলিয়ে যান। এও দেখার বিষয় যে গানের বাজিতে একটি কীর্তন আর একটি ঠুংরি ভিন্ন আর সবই যাকে বলে পাকা গানা। ধ্রুপদ ও খেয়াল। মানে পাকা আর আধা-ধ্রুপদীর বাইরে কোন গান নেই। নো লোকগান। নেই যন্ত্রসঙ্গীতও। এটাও স্রেফ একটা অবজার্ভেশান। কোন বিশেষ কারণ নির্দেশ করার চেষ্টা করছি না। ... ...
আমাদের ছেলেবলায় যখন দূর থেকে দেখতাম দুটি ছেলে আসছে তখন কথা না বলেই তাদের শিক্ষা দীক্ষা টের পাওয়ার শ্রেষ্ঠ উপায় ছিলো ছোটো ঢিল ছুঁড়ে মারলেই যে উঃ বলতো সে পাতি বাংলা মিডিয়াম, আর আউচ বললে জানতাম এ তো কোনো সেন্ট মার্কা স্কুলের ছেলে। ৭১' বাংলাদেশ থেকে প্রচুর ছেলে পিলে এসেছিলো এপাড় বাংলায়। একটা বড় গ্রুপের সাথে আলাপ হয়েছিলো। নাম বলতেই সহাস্যে ঝুঁকে পড়ে হ্যান্ড শেক করে জিগালেন 'আপনি কেমন আছেন'? আমি তার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হই, বলি পেট কামড়াচ্ছিলো, ভুটভাট, তো এখন ভালো আছি। তার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। ওম্মা, দ্বিতীয় ও তৃতীয়্জনও একই কায়দায় আলাপ করার পর টের পেয়েছিলাম উটি আসলে হাঊ ড্যু উ ড্যুর বাংলা সংস্করণ। এখন বোধহয় তাও নেই। উদাসীন হাই আওয়াজ ওঠে দু পক্ষেই। নমস্কার আর কে কবে করে? ... ...
অসাম্য, হিংসা, জাতি-লিঙ্গ দ্বেষ রাষ্ট্রীয় বিচারব্যবস্থায় কম নেই। বস্তুত রাষ্ট্রীয় ন্যায় প্রতিষ্ঠাই করা হয় ‘পুলিশ’ নামক হিংসা সংগঠনটির মাধ্যমে। রাষ্ট্রের বিচার ব্যায়বহুল, নিম্নতর পুলিশ থেকে উচ্চতম প্রধান বিচারপতি সকল পেশাজীবীর জন্য রাষ্ট্র যা ব্যয় করে তা সাধারণ মানুষের কাছে অকল্পনীয়। প্রশান্ত ভূষণের এক টাকা জরিমানার পিছনে দেশের মানুষের কয়েক লক্ষটাকা নিশ্চিতভাবে খরচ হয়েছে আদালত-পদ্ধতিতে। ... ...
প্রদীপ হল (হ্যাঁ হল) আদি গঙ্গার পাড়ে। ফলতঃ প্রদীপের ছাদ ও ব্রিজের রাস্তা একই লেভেলে। রাস্তার ওপর টিকিট ঘর। টিকিট কেটে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে হতো। প্রদীপে টিকিট ছিলো ৫০ ও ৬৫ পঃ। ব্যালকনি নাই। কারণ থাকা সম্ভব নয়। থাকলে টিকিটের দাম হতো ১টাকা। ও কেউ কিনতো না। ১টাকা দিয়ে সিনেমা দেখার বিলাসিতা ঐ অঞ্চলে কারুর ছিলোনা। সামাজিক অবস্থান। কে পি রায় লেন, ইউ কে মন্ডল লেন সংলগ্ন অঞ্চল। কলকাতার বেশ পুরোনো লালবাতি এলাকা ও বাংলার ঠেক। একটি সরকারী গাঁজা-চরস-আফিমের আবগারী দোকানও ছিলো। সে সত্যযুগে সরকার এসবও বেচতেন। হাজার হলেও জনকল্যানমূলক রাষ্ট্র। ফলে প্রদীপে সিনেমা দেখতে যাওয়ার নিষিদ্ধ যাত্রা কদাপি বড়দের কানে গেলে কান কামস্কাটকায় চালান অবধারিত। ... ...
সাংবাদিকরা ভেবেছিলেন তাঁরা শ্রমিক নন। তাই বুঝে উঠতে পারেননি চুক্তিভিত্তিক চাকরিতে ঠিকা শ্রমিকের চেয়ে বেশি অধিকার দাবি করা যায় না। আর জোট বেঁধে দাবি পেশ করার অধিকার না থাকলে কোন অধিকারই থাকে না। ... ...
আসলে হাওয়ার রাত ছিল সেদিন। ফুলশয্যার খাটে ঘন নীল মশারি ফুলে ফুলে উঠছিল । তখন নীলকমলকে হাতির গল্পটা বলেছিল স্বপ্না। নীলকমল হাসিমুখ করে শুনছিল তারপর বলেছিল -ধ্যাত, সরু গলিতে হাতি ঢুকবেই না। হাতি বিষয়ে নীলকমল সবই জানে-এরকমই মনে হয়েছিল তার নতুন বৌয়ের। তখন স্বপ্না অন্য গল্প বলবে ভাবছিল- বিরাট উঠোনে জ্যোৎস্নায় লক্ষ্মীপ্যাঁচা নামত, সেই গল্প। নীলকমল ততক্ষণে সুকুমারের গল্প শুরু করেছিল। চাঁদ আর জ্যোৎস্না দিয়েই শুরু করেছিল নীলকমল । বলেছিল সুকুমারের আশ্চর্য বাড়ির কথা। বলেছিল, চাঁদ উঠলে সুকুমারের বাড়ির সামনের রাস্তায় আইসক্রীম ট্রাক আসে। লাল নীল আলো জ্বলে,ঘন্টা বাজায় । নীলকমল বলেছিল সুকুমার আইসক্রীম ভালোবাসে। স্বপ্নারও একটা গল্প ছিল আইসক্রীমের। প্রাচীন এক আইসক্রীমের রেসিপির- যা ও এক মেমসাহেবের থেকে পেয়েছিল কুচবিহারে-ওর বাপের বাড়ির পাড়ায়। জীর্ণ এক বাড়িতে থাকত সেই মেম আর তার অন্ধ কুকুর। স্বপ্না অবশ্য সে গল্প বলে নি তখন। সুকুমারের গল্প শুনেছিল চুপ করে। এক বছর শুনেছিল সুকুমারের গল্প। তারপর বছর ঘুরতেই কুচবিহার গিয়ে রুফাসকে নিয়ে এসেছিল। বলেছিল বাপের বাড়ির কুকুর। বলেছিল ছোটোবেলায় ও ইংরিজি শিখেছিল এক মেমের কাছে। ইংরিজি শিখত আর রান্না। রুফাস আর রান্নার বই এনেছিল কুচবিহার থেকে। বলেছিল মেম দিয়েছে। নীলকমল রান্নার বই উল্টে দেখেছিল। সমস্ত উপকরণ, মাপামাপির হিসেব অচেনা ঠেকেছিল নীলকমলের। বলেছিল -এসব এদিকের বাজারে পাওয়া যায় না। বলেছিল- সুকুমারকে বলে দেব, দেশে এলে নিয়ে আসবে। স্বপ্না সে বই তুলে রেখেছিল। রুফাস তখন ছোটো। স্বপ্না বলেছিল মেমের অন্ধ কুকুরের নাতি রুফাস। মেমই নাম রেখেছে।পরে একদিন তুমুল ঝড় জলে শিয়ালদায় স্বপ্নার পিসতুতো দাদার সঙ্গে নীলকমলের দেখা হয়েছিল। দার্জিলিং মেল ধরার কথা দুজনেরই। ট্রেন লেট ছিল সেদিন। অনেকক্ষণ গল্প করেছিল ওরা। মেমের কথা কিছু জানে না স্বপ্নার পিসতুতো দাদা , বরং, সেদিন সে রুপুর কথা বলেছিল আচমকা। বলেছিল, রুপু স্বপ্নার প্রেমিক ছিল কুচবিহারে। বাড়ি ফিরে স্বপ্নাকে সে সব কিছু বলে নি নীলকমল। প্রথম ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়ে সুকুমারের ট্রেন আটকে পড়েছিল পাটনায়-সে গল্প বলেছিল। ... ...
কিন্তু আজ আর শেষরক্ষা হল না। দানীবাবুর গলা থেকে সাঁই সাঁই আওয়াজ উঠছে। চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসতে চাইছে। গ্যাঁ গ্যাঁ করে কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। পালঙ্কের একটা কাঠের ময়ূরের গলা শক্ত করে চেপে ধরলেন। শঙ্কু জল খাওয়াতে গেল, গলা দিয়ে নামল না। জলের গেলাস পাশের টেবিলে নামিয়ে রেখে শঙ্কু কর্তার মুখে ইনহেলারটা ধরল। প্রবল যন্ত্রণায় মাথা সরিয়ে নিলেন কর্তা। বোঝা গেল, নাকে লাগানোর ক্ষমতাটুকুও আর নেই। শঙ্কু মোবাইল ফোন খুলল। দুর্বল সিগনাল দেখাচ্ছে। এই দুর্যোগ, তার মধ্যে আজকেই এমন বিপদে পড়তে হল? ... ...