কলকাতার কথা। ঘাটের কথা, পথের কথা, সৌধ, ভাঙা বাড়ির কথা, প্রতিষ্ঠানের কথা, ফিল্মস্টার, চিত্রপরিচালকদের কথা, কিন্নরকণ্ঠীদের কথা, আবার একেবারে আটপৌরে মা-মাসিমাদের জীবনের কথাও। হাসি-ঠাট্টার কানায় কানায় ভরা চোখের জলও। ছোট বড় ব্যক্তিগত গদ্যে বিন্যস্ত আড্ডার মেজাজে লেখা দু’ পর্বের একটি বই। পড়লেন লেখক জয়া মিত্র। ... ...
আলব্যের কামু-র মতো কালজয়ী ঔপন্যাসিকের ভাষ্যও আজকের আলজেরিয়ার ফরাসি সাহিত্যে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মুখে। ম্যর্সো, কন্ত্র-অঁকেত (ম্যর্সো, পালটা অনুসন্ধান) নামের সাম্প্রতিক উপন্যাসে L’Etranger বা ‘আউটসাইডার’-এর কাহিনিকে পালটা ভাষ্যে পাঠকের সামনে হাজির করে হইচই ফেলেছেন এ সময়ের ফরাসি সাহিত্যের অন্যতম নাম কামেল দাউদ, যাঁকে হত্যার ফতোয়া জারি করেছেন এক উগ্রপন্থী ইমাম। লিখছেন ইংরেজি ও ফরাসি ভাষার শিক্ষক পার্থপ্রতিম মণ্ডল ... ...
সমস্ত চিকিৎসা বিনামূল্যে হবে শুনে মনে হতে পারে, ‘এই তো! আমাদের সবার জন্যে স্বাস্থ্যের স্বপ্ন সত্যি হল বুঝি।’ কিন্তু আসল ছবিটা কিন্তু সেরকম দাঁড়াচ্ছে না। সব বিনামূল্যে পাওয়া যাবে ঘোষণা হয়ে গেলেও অনেক কিছুই কিন্তু যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না, সব ওষুধ মিলছে না, অপারেশন, রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপির জন্যে রোগীদের লম্বা ডেট দেওয়া হচ্ছে, পেসমেকার, স্টেন্ট, প্রস্থেসিস যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া না যাওয়ার কারণে রোগীদের ঘোরানো হচ্ছে। পরিকাঠামো, ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংখ্যা না বাড়িয়ে সব বিনামূল্যে পাওয়া যাবে ঘোষণা করে দেওয়ায় চিকিৎসার মান ক্রমশ নেমেই চলেছে, কোথাও বাচ্চা পুড়ে যাচ্ছে ওয়ার্মারে, কোথাও পেশেন্ট পার্টি ডাক্তার-নার্স পেটাচ্ছে। আসলে যেটা নেই-ই সেটা ফ্রিতে পাওয়া যাচ্ছে বলে ঘোষণা করে দেওয়ার ফল ভুগছেন রোগী ডাক্তার কর্মচারী সকলেই। ... ...
ইসলামি শাসনকালের রন্ধনপ্রণালীর যেসব তাক-লাগানো কেতাব আমাদের হাতে এসেছে, তার মধ্যে ‘নিমতনামা’ সংকলনটি বেমিসাল। আর তাতে হরেক আজগুবি খানার সঙ্গে পেয়ে গেলাম নানা কিসিমের খিচড়ি, এবং তার সহচরদের। নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
প্রতিবন্ধকতা নিয়ে ততক্ষণই মাথা ঘামাব, যতক্ষণ তা সেলেবল, এবং যতক্ষণ তা টোকেনিজমের গন্ডীর ভেতরে থাকে- উৎসবের প্রাঙ্গনে এর চেয়ে বড় বৈষম্য আর কী হতে পারে? যাক্, যেকথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, "অন্যরকম পুজো" বা চলতি কথায় নিউ নর্মালের পুজো, অনেক নেই-এর পুজো -এ আমাদের, প্রতিবন্ধী মানুষদের বাৎসরিক অভিজ্ঞতা। ... ...
গোমিয়া জায়গাটা আমাদের বাংলার বাইরে। তখন বিহারে ছিল, এখন বোধহয় ঝাড়খন্ডে। সেখানকার খবরের ফলো আপ রিপোর্টিং কোলকাতার কাগজে দীর্ঘদীন ধরে বেরোবে আশা করাই অন্যায়। কলকাতার সমাধান না হওয়া কেসগুলোই কি আর হয়। তবে হ্যাঁ, সেই যে আগের বার বললাম, ‘বিবস্ত্র’ টিবস্ত্র কিছু খুঁজে পেলে হয়, বেশ কিছুদিন ধরেই হয়। ‘সংবাদপত্রের সামাজিক ভূমিকা’ বা এই ধরণের কিছু আর্টিক্ল লিখে পুরষ্কার পাওয়া যেতে পারে কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কিন্তু এখন সংবাদ শুধুই বিক্রয় নির্ভর। আর শুধু সাংবাদিকরাই বা কেন, আমরা সবাই কেমন বিক্রয় নির্ভর হয়ে যাচ্ছি দিন কে দিন। বহুদিন আগে শোনা নচিকেতার গানটা মাথায় কেমন আটকে গেছে – “সবাই পণ্য সেজে, কাকে কিনবে কে যে, সারাদেশ জুড়ে সোনাগাছি। কেন বেঁচে আছি” – ... ...
দাল মে কুছ কালা হ্যায় যারা বলেন তাঁদের আমরা সামগ্রিকভাবে বংশীবাদক—হুইসলব্লোয়ার—আখ্যা দিয়ে থাকি, যুগে যুগে তাঁদের দেখা পাওয়া গেছে। খুব কম ক্ষেত্রেই তাঁদের কথা মানুষ শুনেছে। তবে এক্ষেত্রে বাজারি কানাকানির ভিত্তিতে মিউনিকের টনক নড়ে। তাঁদের তাড়ায় অতি দ্রুত রিয়েচকা বাঙ্কার তদন্তকারি অফিসাররা খাতাপত্র দেখে আবিষ্কার করলেন সব্বোনাশ, এডুয়ার্ড নদিলো বিগত চার বছর (১৯৯৮ থেকে) ডলারের দামের ভবিষ্যৎ নিয়ে ফাটকা খেলেছেন। অনেক লোকসান লুকিয়ে রেখেছিলেন বিভিন্ন বিদেশি মুদ্রার ব্যাবসায়ের আবরণে—তাঁর বসেরা টের পাননি। ... ...
“দরকার হলে এক দেশ আবার পুনর্জন্ম নিতে পারে, কিন্তু দেশের সংস্কৃতি একবার ধ্বংস হয়ে গেলে তাকে পুনরায় উদ্ধার করা অসম্ভব”! তখনকার দিনের এক খুব প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ টি ভি সুং পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন এই কথা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল যে ২০,০০০ ক্রেট (বড় বাক্স) ভরা দুষ্প্রাপ্য চীনের অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত করা হবে প্যালেস মিউজিয়াম থেকে। সব কিছু প্যাকিং হয়ে যাবার পরে এবার অপেক্ষা – ঠিক কবে স্থানান্তর প্রক্রিয়া চালু করা হবে সেই নিয়ে নির্দেশ আসার জন্য মিউজিয়ামের স্টাফেরা অপেক্ষা করতে লাগলো। অবশেষে ৪ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৩ সালে নির্দেশ এল পরিবহন চালু করার। সকাল বেলা গোটা বারো চোদ্দ মোটর গাড়ী এবং ৩০০ মত রিক্স ঢুকলো ফরবিডেন সিটিতে। ব্যস্ততা শুরু হয়ে গেল চরম – সবাইকে ব্যাজ দেওয়া, গাড়িতে স্পেশাল নাম্বারিং করা – এই করতে করতে রাত হয়ে গেল। রাত আটটার সময় তিয়েনমেন স্কোয়ারের সামনের রাস্তা, যেটা সেখান থেকে জেনগ্যায়াংমেন ট্রেন স্টেশনের দিকে গেছে সেখানে কার্ফু-র মত জারি করে দেওয়া হল। একমাত্র পারমিশন নিয়ে এবং স্পেশাল ব্যাজের লোকেরাই এই এলাকায় ঢুকতে পারত সেই রাতের বেলা। রাত নটার সময় সারি দিয়ে গাড়ি গুলি প্যালেস মিউজিয়াম থেকে রওয়ানা দিল স্টেশনের উদ্দেশ্যে, সেই গাড়ির সাথে যোগ দিল আশে পাশের একজিবিশন হল থেকে বোঝাই গাড়িগুলিও। ট্রেন স্টেশনে গিয়ে সব কাঠের ক্রেট বোঝাই হল ২১টা ট্রেনের বগিতে। ... ...
৭৫ বছরে কিছু পাল্টায়নি, কারণ আমাদের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো অনড় হয়ে আছে ঘৃণার পাহাড়। পাল্টাতে হলে সেটাকে সরাতে হবে। দাঙ্গার আগুন আর রক্ত সত্য, সত্য মানুষের নিষ্ঠুরতা। কিন্তু তাকে পেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অনেকগুলো 'তবু', যেগুলোর কাছে যাওয়া খুব কঠিন কাজ। কিন্তু এমন মানুষ তো বিরল নন, যারা দাঙ্গায় সর্বস্ব খুইয়েছেন, কিন্তু তবু সাম্প্রদায়িকতাকে মনে স্থান দেননি। এখনই মনে পড়ছে সদ্য প্রয়াতা সীমা দাসের কথা যাঁর আত্মজৈবনিক "দ্যাশ থেকে দেশে" বইটি প্রচন্ড নাড়া দিয়েছিল। মিহির সেনগুপ্তের সিদ্ধিগঞ্জের মোকাম, অমর মিত্রের দেশভাগ-বেদনার উত্তরাধিকার পড়লেই বোঝা যায় উভয় পক্ষেরই দাঙ্গা-উত্তর মানসিকতা কী হওয়া উচিত। এই আগুন ও রক্ত আর ঐ 'তবু'র মধ্যে নিরন্তর দোল খায় যে পেন্ডুলাম তার নাম মানুষের মন। যখন সে থামে, দেখা যায় তা নিশ্চিত হেলে আছে 'তবু'-র দিকেই। ... ...
১৯৩৬ সালের বসন্ত কাল। আর মাস খানেক বাদেই রয়েছে ইউএসএর স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল বিভাগে ভর্তির পরীক্ষা। সেই পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতেই এখন বেশ কিছুটা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বছর বাইশের তরুণী জিন ফ্রান্সেস ট্যাটলক (Jean Frances Tatlock)। তা নাহলে এতক্ষণে হয়তো তিনি কমিউনিস্ট পার্টির কোনও কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। কমিউনিস্ট পার্টি অব দ্য ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকার সক্রিয় কর্মী তিনি। ট্যাটলকের জন্ম ইউএসএর বিখ্যাত পঞ্চ হ্রদ তীরবর্তী মিচিগান প্রদেশে। তবে বর্তমানে পশ্চিম ইউএসএর ক্যালিফর্নিয়া প্রদেশের বার্কলে শহরের বাসিন্দা তিনি। বার্কলে শহরের কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবীদের ঘরোয়া সভাই হোক বা ডক শ্রমিকদের পথসভা- সর্বত্র হাজির থাকেন তিনি। কিন্তু ইদানীংকালের সভা সমিতিতে বড় একটা দেখা যাচ্ছে না তাঁকে। ওই যে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল বিভাগে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। ... ...
আমার মা ফার্মগেট চিহ্নিত করে রাখে একটা ব্যানার দিয়ে। যাতে লেখা ‘গরু-ছাগলের বিরাট হাট’। পাশ দিয়ে দুইটা বড় বিল্ডিং, তারপর টুকরি-মাথায় কয়টা বেঞ্চি, কিছু গাছ, হ্যাঁ পার্ক, তারপরেই চক্ষু হাসপাতাল। মায়ের চোখে সমস্যা। মা আমাকে চিনতে পারো তো মা? মা-মা! বারবার বলার পরও তার এই বাতিক যায় না। আরে বাবা, অই ব্যানার যে আজীবন থাকবে না—এই জানা কথা তারে কে বোঝায়? এমন তো হইতে পারে একদিন দেখা গেল—সামনে দিয়ে কালো বিড়াল পথ কেটে যায়নি, বাম চোখ সকাল থেকে থেকে-থেকে নাচেনি, আমার মা যাকে বলে চৌখ নাচানি, বলে ডাইন চৌখ নাচলে সুসংবাদ আর বাম চৌখ নাচিলে তোর কপালোত শনি। এমন তো হতে পারে সব পূর্বাভাসের দেবতারা, চিহ্নগুলো উধাও হয়ে গেছে! তখন? মা তারপরেও নাখালপাড়াকে চিনে রাখে ‘এইখানে ভাল হাতের কাজ করা হয়’, ইন্দিরা রোডকে ‘বনসাই প্রশিক্ষণ’ আর নিজের বাসাকে চিনে রাখে তিন রোড আগে একটা মস্ত বড় খাড্ডা দিয়ে। আমার ভয় করে। মা আমাকে চিনতে পারো তো মা? আমি তোমার লাল, মা, আমি তোমার লাল, লাল পান্না। আমি বলি মা পান্নাতো সবুজ। তবু মা টাকা জমায়, বুড়া বয়সে তাকে কে দেখবে? কে? এর কাছ থেকে চেয়ে, আধিয়ারের কাছে তিন ছটাক ধানের প্রাপ্য বুঝে নিয়ে, বাপের পকেট কেটে, আমাদের গিফটের টাকা জমানোর নাম করে, আমার সুন্নতের কচকচি নতুন ২ টাকার বান্ডিলের কথা এইমাত্র মনে পড়ল, এইভাবে নিজের পাত থেকে নিজের স্বাচ্ছন্দ্য সরিয়ে রাখে মা। ‘মা আমি তো আছি’—বলতে পারি না। বলতে পারি না, মা এক ভয়ানক রূপসীর হাত থেকে পালিয়ে আছি, ওরা আমাকে মিষ্টি খাওয়াইতে চায়। মা সুরা পড়ে, ফুঁ দেয়, আমার চোখে মুখে লেপ্টে যায় বর্ণমালা। মা আমার হাতে লেখে ‘পুত্র’, চোখে লেখে ‘নীল’, হাতে-পায়ে ফোঁড়ার দাগের একটু নিচে লিখে দেয়— ‘৮ সোনারগাঁও জনপথ রোড, উত্তরা, মাস্কট প্লাজা থেকে সোজা পশ্চিমে একটা ৪ রাস্তা, তারপরে আরেকটা ৪ রাস্তা, দুই তিনটা বাড়ির পর একটা তিন ডাবগাছঅলা বাড়ি’—যাতে লোকে জিজ্ঞেস করলে বলতে পারি এই আমার বাড়ির ঠিকানা। ... ...
ডিসেম্বর মাসে তার গ্রীনকার্ড সরকার থেকে বাজেয়াপ্ত করা হল। আলেহান্দ্রো এদেশে আসেন ইমিগ্রান্ট হয়ে। ১৭ বছর তার কোন বৈধ পরিচয়পত্র ছিলনা। পড়াশোনায় মেধাবিনী আলেহান্দ্রো অনেক পরিশ্রম শেষে, যোগ্যতা প্রমাণ করে গ্রীনকার্ড পেতে সমর্থ হন। অ্যাবরশন বিরোধী বিল নিয়ে কাজ করতে করতে অ্যাক্টিভিস্ট হয়ে ওঠেন তিনি। অ্যাবরশন বিরোধী বিক্ষোভ ও অবস্থানের জন্য তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। 'রাষ্ট্র-বিরোধী' - এই অভিযোগ দেখিয়ে তার গ্রীনকার্ড কেড়ে নেওয়া হল গত শীতে। অ্যাবরশন নিয়ে আন্দোলন এদেশে পুরাতন ঘটনা। কন্সারভেটিভ নারীরা বিশ্বাস করেননা, তাহারা অপমানিত জীবন কাটাইতেছেন, তাহাদের স্বাস্থ্য-শরীর সম্পর্কিত ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে বাধা আরোপ করা হইতেছে অথবা তাহাদিগকে ধোঁকা দেওয়া হইতেছে। পক্ষী যেরূপ বাঁধা থাকিলেও বন্ধনকারীর শিখানো বুলি আউড়াইতে চাহে ... ...
স্বাধীনতা আন্দোলন বলতে আমরা শুধু ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্তির আন্দোলনকে বোঝাই, ভারতীয় সমাজের অভ্যন্তরে সামাজিক দাসত্ব থেকে মুক্তি সংগ্রামের কথা মাথায় রাখি না। শ্রমিক-কৃষক-খেটে খাওয়া মানুষের অধিকারের প্রশ্নের মতো দলিত জনগণের মুক্তি, আদিবাসী জনগণের মর্যাদা, নারী স্বাধীনতার প্রশ্নও ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল প্রশ্ন হয়ে ওঠেনি। এবং এই সুযোগেই ভারতে ঘটেছে ফ্যাসিবাদের প্রসার ও উত্থান। একটি সাম্প্রতিক বই। লেখক অরুন্ধতী রায়। পড়লেন দীপঙ্কর ভট্টাচার্য ... ...
তবে সবার আগে উনুনে উঠলো জলভরা লোহার কড়াই। এতে বাঁধাকপি ভাপানো হবে। ঠাকুমা খুব ঝুরি করে বাঁধাকপি কাটছে, বাঁধাকপি যত ঝুরি করে কাটা হবে স্বাদ তত খেলবে এর। তবে আমার মনোযোগ বাঁধাকপিতে নেই। সব মনোযোগ ঠাকুমার হাতের শাঁখা-পলা এক অদ্ভুত ছন্দ তুলছে তাতে। ক্রমাগত সে ছন্দ আমার লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছে, ও ঠাকুমা, এবার রথের মেলা থেকে আমাকে ঠিক এমন চুড়ি কিনে দিবা? ... ...
প্রৌঢ় বয়স পর্যন্ত ইচ্ছার বিরুদ্ধে সুলেখাকে মেনে নিতে হতো তন্ময়ের অন্যায় আবদার। হ্যাঁ প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে তৃতীয়বার সন্তানসম্ভবা হয়েছিলেন সুলেখা। লজ্জায় তিনি কলেজে যেতে পারতেন না, তার মেয়েরা তখন কত বড়, শুধু তাই নয় শরীরও যেন নিতে চাইত না সন্তান বহন করবার ধকল। তবু তিনি সবটুকুই মেনে নিয়েছিলেন মুখ বুঁজে। কখনো তিনি গুনগুন করে গান গাইলে যখন তন্ময় ধমকে উঠতেন, আহ! বন্ধ করো তো নাকি কান্না। ... ...
প্রথমেই এখানে যে প্রশ্ন ওঠে সেটি হল কর্মীর যোগ্যতার আগে সেই কর্মীকে দিয়ে কাজ করানো সিস্টেমের যোগ্যতা নিয়ে। কোনো কর্মীর শিক্ষাগত যোগ্যতা, তাঁর প্রাপ্ত নম্বর অথবা একটি কাজ করার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতার পরিমাপ (সেরকম পরিমাপযন্ত্র একমাত্র ছাত্রের মূল্যায়ন বাদে কিছু আছে বলে আমার জানা নেই) যাচাই করার আগে যাচাই করার দরকার গোটা শিক্ষাব্যবস্থাটিকেই। যে ব্যবস্থা দীর্ঘদিন যাবত পূর্ণ সময়ের নিয়োগ না করে, ক্লাস পিছু পূর্ণ সময়ের শিক্ষকদের প্রায় দশ ভাগের এক ভাগ বেতন দিয়ে টিকে আছে (যখন এই কম বেতন পাওয়া কর্মীদের চাকরি নিশ্চিত হয়নি তখন থেকে) সেই সিস্টেমের যোগ্যতা থাকে কি নিযুক্ত কর্মীর যোগ্যতা বিচার করার? বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ামক ইউজিসির নির্ধারিত ক্লাস পিছু অর্থের অনেক কম টাকায় কাজ করিয়ে নেওয়া এই ব্যবস্থা বা অব্যবস্থা যেটুকু ভদ্রস্থ অবস্থায় আছে সেটুকু অবশ্যই এই বৈষম্যের শিকার হওয়া শিক্ষকদের কাঁধে ভর করে। তাই গালভরা ডিগ্রি বা একাডেমিক যোগ্যতার ধুয়ো তুলে (যা অবশ্য এঁদের অনেকেরই আছে) স্যাক্ট শিক্ষকদের খারিজ করার অধিকার কারোরই নেই। ... ...
আইন অমান্য করলে জেল, জমবে এবার আইপিএল। ... ...
একসাথে থাকতে গিয়ে ধর্ম কখনও মাঝখানে এসে দাঁড়ায় নি। মতান্তর হয়েছে অনেক সময় অনেক বিষয়ে, যেমন অন্য যে কোন পরিবারে হয়। তাই বলে কেউ কারো ধর্মীয় মত অন্যজনের ওপর চাপিয়ে দেয় নি। ঈদ বা দুর্গাপুজো দুজনের কাছেই ছিল উৎসব। ... ...
"আদ্যাশক্তি মহামায়া" বা "দুর্গা দুর্গতিনাশিনী" এইসব নামে ছবি হত এককালে। আরো অনেক ছবিতেই মা দুর্গা থাকতেন। মাটির মূর্তির পেছন থেকে জলজ্যান্ত মা দরকারে অদরকারে আসতেন। কিছুটা আবছা মনে আছে। কারণ সেইসময় আলেয়া সিনেমা নামে একটি হল ছিল আর দিদু ম্যাটিনি শো' তে নাতনীকে নিয়ে আদ্যাশক্তির শক্তি দেখতে যেতেন। আমার কিন্তু মনে আছে "অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি"। তনুজা গরদ পরে বেশ বাংলার বধূ হয়ে পিদিম জ্বালাচ্ছেন, গ্রামের লোক ঘরে আগুন লাগাচ্ছে, অ্যান্টনি বাইরে বাইরে কবিগান করে বেড়াচ্ছেন। দুর্গাপূজা এইছবিতে ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না। একটা ইস্যু ছিল। যে ফিরিঙ্গির বাড়িতে তার একদা বাঈজী এখন বধূ দুর্গাপূজার আয়োজন করতে পারে। এটা, এখন মনে হয় একটা গুরুত্বপূর্ণ বৈপ্লবিক ঘটনা। দুর্গাপূজার একটা বিশাল সামাজিক দিক আছে। একটা প্রিজম যেন। অনেক অনেক আলোর বিচ্ছুরণ। তার কিছুটা অ্যান্টনি সাহেবের দুর্গাপূজার আয়োজনে ধরা পড়ে। তাও প্রায় একক আয়োজন। সেটা কতদূর সম্ভব জানি না। মানে কে তাঁকে প্রতিমা গড়ে দিল? কেই বা জোগাড় দিল এই বিশাল পূজার? তবু নাহয় গল্পের খাতিরে মানা গেল যে স্বামী স্ত্রী মিলে একটা যেন আনন্দোৎসব করছেন, ঘটনা তো আসলে উত্তমকুমার। ... ...
কাকে বলব শুভ বুদ্ধি আর কাকেই বা বলি অশুভ বুদ্ধি? পুলওয়ামা কান্ডের পরে সেটাই গুলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।নিতান্ত ছা-পোষা গেরস্ত মধ্যবিত্ত মানুষেরা এতকাল সুখে সোস্যাল-মিডিয়ায় সেলফি-যাপন করছিল। তারাও হঠাৎ হাল্লা রাজার মতন যুদ্ধু- যুদ্ধু বলে লাফিয়ে উঠল। যারা সেই তালে তাল মেলাতে রাজী নয়, তাদের নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের ঝড় উঠল।এই অবধি হলে ঠিক ছিল। এসব চেনা ঘটনা। এ রকম দেশাত্মবোধের জোয়ার ২০১৬ সালেও দেখা গিয়েছিল। কিন্তু এবার ঘটনা গড়িয়ে চলল আরো একটু দূর। একদিকে রাজ্যপাল থেকে সেনা-নেতা, সব তাবড় লোকেরা কাশ্মিরীদের বয়কটের ডাক দিচ্ছেন – পুরো দেশটাকে একটা বাইনারীতে ভেঙ্গে ফেলার মরিয়া চেষ্টা, অন্য দিকে সামান্যতম বিরোধীমতের আভাসে সোস্যাল মিডিয়ায় ভয় দেখান, যৌন-হেনস্থা, নোংরাতম কথা বলা পেরিয়ে শুরু হল বাড়ি ধাওয়া করে হেনস্থা, ভাঙচুর। এবং চাকরী থেকে তাড়ানো। কারণ? ... ...