যতদিন না স্টেট ফান্ডিং চালু হচ্ছে, সিপিএমের এটা একটা অনেক দিনের দাবি, ততদিন ভোটে কোটি কোটি টাকা খরচ না করতে পারলে লড়াই করাই অসম্ভব। বিজেপির হাতে যত টাকা, মায়াবতী, অখিলেশ, চন্দ্রবাবুদের হাতে যত অর্থবল, তৃণমূলের তার সিকি অংশও নেই। সিপিএম নেতা গৌতম দেব অভিযোগ করেছিলেন, ২০১১-র ভোটে তৃণমূলের ফান্ডে চিটফান্ডের টাকা ঢুকেছিল। হয়তো ঢুকেছিল, কিন্তু তা আজও প্রমাণ হয়নি। ২০১৪তেই তৃণমূলের হাতে টাকা যথেষ্ট কম ছিল। বিজেপি তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গ দখলের পরিকল্পনা করে। এবং তারা জানত, মমতাই প্রধান বাধা। দলেরই একজন টাকা দিয়ে নিয়োগ করে এক এজেন্সিকে। যার ফল আমরা দেখেছিলাম, পাঁচ লক্ষ টাকা করে নিচ্ছেন একেক জন নেতা। ... ...
গল্পটা একজন উজ্জ্বল যুবকের, অনেক প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়ে যিনি কানপুর আই আই টি-র মত প্রথম সারির একটা প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে পেরেছিলেন। কিন্তু গল্পটা শুধু তাঁর সাফল্যের নয়, চাকরী পাবার পর সহকর্মীদের তরফ থেকে তিনি যে অহেতুক শত্রুতার শিকার হয়েছিলেন, আর যেরকম শান্তভাবে অথচ দৃষ্টান্তমূলক দৃঢ়তার সঙ্গে তার মোকাবিলা করেছিলেন এটা আসলে সেই গল্প। মানুষের চরিত্র ও নীতিবোধ যে কতখানি ভঙ্গুর হতে পারে, পরশ্রীকাতরতা যে মানুষের নিজস্ব আচরণ কিভাবে ধ্বংস করে দিতে পারে সেটা চাক্ষুষ করার জন্যও গল্পটা সকলের জানা দরকার। ... ...
বিদুর বালকের চোখে দেখলেন এক ঝলসানো ক্রোধ! অর্জুন সোজা তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে। রেখাটা গাঢ় হল মাত্র। বিভাজন ঠেকানো সম্ভব হবে বলে মনে হচ্ছে না। কৌরব বংশ একত্রিত হলে যা হতে পারতো তা শুধু কষ্টকল্পনা এখন থেকে। ওই বালকের ক্রোধ বলে দিচ্ছে গৃহযুদ্ধের দামামা বেজে গেল। এখন এই বালককে আপ্তবাক্য শুনিয়ে লাভ কি? অথচ তিনি বিদুর। দুর্যোধন তাঁরও ভ্রাতুষ্পুত্র, ঠিক এঁদেরই মতন। মহারাজ পাণ্ডু আর মহারাজ ধৃতরাষ্ট্রের বিবাদেও তিনি কিন্তু পক্ষ নেননি কোনো। শুধু পাণ্ডবদের ন্যায্য অধিকারের জন্যই কুরুসভায় দাঁড়িয়েছিলেন। তাহলে এখন তাঁকেও কি পক্ষ নিতেই হবে? গাঙ্গেয়র মতন তিনি যে এড়িয়ে যেতে পারছেন না। গাঙ্গেয় তাঁর মতন সম্পর্কের, মোহের অথবা প্রেমের বাঁধনে যে বাঁধা নেই। তিনি, ধর্মবেত্তা বিদুর যে প্রথম প্রেমের কাছে সদা সমর্পিত, তাঁর কী হবে? ... ...
এবচর সাবোন মাসের শেষে, তেমন বিষ্টির দ্যাকা নেই, কোলকাতা ডেঙ্গি জ্বরে কাঁপচে, রোদে চাঁদি ফাটিয়ে দিচ্চে, এমন সময় কাগজের স্টলগুলো পুজো সংখ্যার বোইতে ছেয়ে গ্যালো। বুজলুম মা আসচেন, মানে তাকে ঘেঁটি ধোরে আনার উজ্জুগ চলচে। আগে আমাদের যকোন বয়েস কম ছিলো, তকোন পিত্তিপোক্ষের তপ্পণের পর দেবীপোক্ষের শুরুতে এরা সব একে একে দেকা দিতো, আজকাল ভুবনবাজারের হুজুগে সবার আগে পুঁজির বাজার দখলের পুজো, এমনকি বোধয় সিদ্ধিদাতা গণেশেরও আগে। তাই পুজোসংখ্যাওলাদের একোন হোয়েচে - কী ছাপলুম, তার চেয়ে বড়ো কতা, কে কার আগে সেজেগুজে গলির মোড়ে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়তে পারলুম কি পারলুম না। চাড্ডি খোদ্দের ধোরতে পারলে ঘরের কড়ি ঘরে ঢোকে। ... ...
৮ মার্চ, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নারীরা বলবেন। আন্তর্জাতিক। প্রাদেশিক। নাগরিক। আঞ্চলিক। গ্রামীণ। নিম্নবর্গ। কতটা কণ্ঠ ছাড়ে। কতটা আটকাট। উক্ষীবীক্ষি। আটকাট কথাগুলো বলার জন্য। রাগ। দুঃখ। হতাশা। অভাব-টভাব। কেন্দ্রের। রাজ্যের। সংসারের। প্রভুর। মালিকের। ভাতারের। সব ঠিকঠাক বলতে পারবে কি? ভাষা-টাষা ঠিক থাকবে তো? ... ...
কালো টাকা উদ্ধার করা হবে কোথা থেকে? মানে কালো টাকাদের সাকিন কোথায়? মূলত তিন জায়গায়। এক, বিদেশে। সুইস ব্যাঙ্ক জাতীয় জায়গায়। ডলার বা ইউরোরূপেণ সংস্থিতা। দুই, এক্ষেত্রে সোনা, ফ্ল্যাট, জমি ইত্যাদি বহুরূপেণ সংস্থিতা। মানে বেহিসেবি টাকাগুলো এইসবে কনভার্ট করে নেওয়া হয় বা হয়েছে। তিন, বাড়িতে, বা লোকে যেমন বলছে কমোডে, বালিশের ওয়াড়ে নোট হিসেবেই। আরও সুবিধার জন্য ধরে নিই পাঁচশো-হাজারের নোটরূপে বিরাজিত। বোঝাই যাচ্ছে, সরকারের এই সিদ্ধান্তের লক্ষ্য কেবলমাত্র তিন নম্বরটা। নিন্দুকেরা বলছে, শতাংশের বিচারে এই তিন নম্বরটা নেহাতই নগণ্য। কত? মাত্র ৬ শতাংশ!! আচ্ছা, ছেড়ে দিন। আমি নিন্দুকের কথা বাদই দিই। কালো টাকার এক্স্যাক্ট স্ট্যাটিস্টিক্সটা যেহেতু ধোঁয়াশাপূর্ণ। তাই বেকার কুযুক্তির অবতারণা হতে পারে। ... ...
স্বাধীনতার পর আমি রোকেয়া হলে ফিরে আসি। এক রুমে আমরা তিনজন থাকতাম। রুমে এসে দেখি আমাদের ডেস্ক উলটাপালটা, বইপত্র ছড়ানো ছিটানো, আমার বিছানা বেয়নেটে ক্ষতবিক্ষত। রক্তাক্ত বিছানা, বড় বড় রক্তের ছোপ, ততদিনে কালো হয়ে গেছে। এখানে কোনো মেয়েকে ধরে এনে ধর্ষণ করে বেয়নেট দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। সারা ঘরে রক্তের পচা গন্ধ। এখনো মনে হয়—কোন মেয়ে ছিল সে? পাকিস্তান আর্মির যে মেজর ছিল, সে নাকি মন্ত্রী হয়েছিল পাকিস্তানের। তাদের কোনো বিচার হয়নি এখন পর্যন্ত। ... ...
ভ্যাকসিন নিয়ে সবার মধ্যে এতো ভয়, অথচ করোনা নিয়ে কারও মন কোনো ভয় আছে বলে মনে হচ্ছে না। সব দলই ভোটের আগে জনস্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য ইশতেহারে দারুণ দারুণ কথা লিখেছেন। কিন্তু সেসব দলের মিছিল, জনসভা দেখলেই টের পাওয়া যায়, ওই কথা গুলি কেবল কথার কথা। নিশ্চিতভাবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন বাংলায় ঢুকে পড়েছে, তখনও তারা জনসভায়, মিছিলে ভিড় বাড়াতে ব্যস্ত। যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, মাস্কের ব্যাবহার ইত্যাদির কোনো অস্তিত্ব নেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে নীতি- আদর্শগত নানা রকম পার্থক্য আছে, কিন্তু এই একটা ব্যাপারে তারা মোটামুটি একই রাস্তায় হাঁটছে। ... ...
যদি কৃষকরা লাল কেল্লার ঐতিহাসিক কাঠামোর কোনও অংশ ভেঙে ফেলার চেষ্টা করতেন, যদি লাল কেল্লা থেকে জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলার চেষ্টা করতেন, যদি লাল কেল্লাতে ঢুকে জাতীয় পতাকার উপরে অন্য কোনও পতাকা ওড়ানোর চেষ্টা করতেন, তাহলে অবশ্যই কৃষকরা ভারতের সংবিধানের উপরে আঘাত করেছেন বলা যেত, এবং কৃষক আন্দোলন যাঁরা করছেন তাঁদের এই ব্যাপারে দায়িত্ব নেওয়ার প্রশ্ন আসত। ... ...
গত বছরে যে সব সূচক ধরে মাপা হয়েছিল, এ বছরে তার অনেক ক'টিই পরিত্যক্ত হয়েছে। আবার গত বছর রাখা হয়নি এমন কিছু সূচক এ বছরে এসেছে। আমরা আগে দেখতাম দারিদ্র্যরেখার নীচে অবস্থানকারী মানুষজনদের চিহ্নিত করার সূচক কোনো দুটি পর্বে এক থাকতো না। ফলে আগের বছরের গরিব এ বছরেও গরিব কি না তা বোঝার উপায় থাকতো না। কেবল বোঝা যেত এ বছর, ওঁদের মাপকাঠিতে কারা গরিব। এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে সংশ্লিষ্ট কর্তারা জানাতেন এটা উন্নততর সূচক, অতএব অকারণে প্রশ্ন করো না। পরে দেখেছিলাম অমর্ত্য সেন, জঁ দ্রেজ রাও এই প্রশ্ন তুলেছিলেন। ... ...
আসলে, নিজের জীবনের বাইরে একটা লাইন-ও না লেখার সমস্যা এটাই। এক সময়ে ক্লান্তিকর পুনরাবৃত্তির আবর্তে বাঁধা পড়তে হয়। সেটাকে তখন চালাতে হয় ফর্ম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে। নাহলে 'রুবি কখন আসবে' লেখার পরে 'এখন আমার কোনো অসুখ নেই' লেখার কোনো মানে হয়না। পাড়ার বেকার ছেলের সাথে কিশোরী কন্যার পালিয়ে যাবার কাহিনি 'কুকুর সম্বন্ধে'তে লিখে দেবার পর 'রিক্তের যাত্রায় জাগো'তে লেখার দরকার পড়ে না। তাও এক-ই রকম ভংগীতে। 'স্বর্গের নির্জন উপকুলে' উপন্যাসটাই অদরকারী হয়ে পড়ে। আবার 'কুকুর সম্বন্ধে' আর 'আমি আরব গেরিলাদের সমর্থন করি' লেখার পর 'ভারতবর্ষ' লেখার কোনো দরকার পড়ে না। যদিও বুট পরা শ্রীরামচন্দ্রের পদধ্বনি নিয়ে না লিখলে সমাজ সচেতন হওয়া যাবে না, বা ব্যর্থ বিপ্লব নিয়ে না লিখলে, এরকম ভাবনা অপরাহ্নের সন্দীপনকে তাড়িয়ে বেড়িয়েছিল কিনা জানি না। 'হিরোশিমা মাই লাভ'কে অনেকে সন্দীপনের শ্রেষ্ঠ উপন্যাস বলে, কেন জানা নেই। সেটা কি এই কারণে যে একমাত্র এই উপন্যাসেই রাজকুমারের তরবারী নামিয়ে রেখে চলিত জং ধরা সাহিত্যভাষার অনেক কাছাকাছি এসেছিলেন, যাতে মানুষ আইডেন্টিফাই করতে পারে সহজে? আর, এই সম্ভাবনার কথা মাথায় আসলে সন্দীপন নিজেই হয়ত মাথায় কালির দোয়াত ঠুকে আত্মহত্যা করতেন। ... ...
আমি গেছি দূর মফঃস্বলে চাকরি করতে। তখন যা দিন, মোবাইল ফোন কেন সেই মফঃস্বলে ইলেকট্রিকের আলো ছিল না, পোস্ট অফিস ছিল না। চিঠি ফেলতে ভিন গাঁয়ে যেতে হত। চিঠি দিলে একমাস আগে কলকাতা পৌঁছত না। বাস থেকে নেমে এক ঘন্টা পঁয়তাল্লিশ মিনিট হাঁটতে হত অফিস মানে হল্কা ক্যাম্পে পৌঁছতে, এমনই সে জায়গা। ছোটনাগপুরের মালভূমির লেজা সেই অঞ্চল। তাঁর জ্যেষ্ঠপুত্রের একটি কন্যা। বয়স তার আড়াই তিন। সে তার ঠাকমাকে বলল, ছেলেধরা নিয়ে গেছে বাবুজিকাকাকে। হারিয়ে গেছে, আর ফিরবে না। শিশু যা শোনে তাই বলে। তাকে যা বলে ভয় দেখান হয়, সেও তাই বলে ভয় দেখায় ঠাকমাকে। মা তখন পিতামহী। মায়ের ঘুম আসে না। ছুটিতে বাড়ি এলে জিজ্ঞেস করে মা রাধারানি, কী খাই, কেমন জায়গা। ডাল আলু সেদ্ধ আর কুঁদরি পোস্ত ? মাছ হয় না? মাংস ? সকাল বিকেল মুড়ি, কেন পরোটা লুচি করে দিতে পারে না ? জানেই না মা ওসব। আমাদের দেশটা আসলে খুব গরিব। গ্রামটা আরো গরিব। শুনতে শুনতে মা চুপ। বুঝতে চাইছিলেন দেশটাকে আমার চোখ দিয়ে। ধরা গলায় বললেন, তুই বরং চাকরি ছেড়ে দিয়ে আয়, অন্য কিছু দেখ। না, চাকরি আমার কাছে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, দেশটাকে আমি চিনতে পারছি দিনে দিনে। মা চুপ করে থাকলেন, অবশেষে বললেন, দেশ সব জায়গা থেকে চেনা যায়। জমি মাটি মানুষ না চিনলে বড় হওয়া যায় না। মা বলল, বড় হবি তুই ? কী করে, প্রমোশন কবে হবে ? প্রমোশন না মা, লিখতে চাই, গল্প লিখছি, শুনবে? আমি কী বুঝব, কিন্তু তুই যদি নিজে বুঝিস হচ্ছে, তবে ছাড়বিনে, ধরে রাখবি, ছাড়বিনে একদম। মন্ত্র পেয়ে গিয়েছিলাম। ... ...
আমি যদি মুর্শিদাবাদ জেলার ডোমকল অঞ্চলের কথা ধরি… যেখানে অষ্টাশি শতাংশ মুসলিম… কজন মুসলমান মেয়ে এখানকার গার্লস হাইস্কুলে শিক্ষকতা করে? কিম্বা হসপিটালে চাকরি করে? কিম্বা কোর্টে ওকালতি করে? কিম্বা এসডিও-বিডিও অফিসে চাকরি করে? এত মেজরিটি থাকা সত্বেও শুধু ডোমকল না, পুরো মুর্শিদাবাদ জেলায় যেখানে ৭৩% মুসলিম সেখানেও চাকরির ক্ষেত্রে, শিক্ষার ক্ষেত্রে আমরা লক্ষ করছি মেজরিটি কিন্তু হিন্দুরা, মুসলিমরা নন। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে এটা দেখছি। মেয়েরা তো আরও পিছনে, অ-নে-ক পিছনে। দু’একজন মেয়ে ফাঁক ফোঁকর দিয়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। ... ...
- মা দেওয়ালে এত রাক্ষুসী কে আঁকে বল তো? - রাক্ষুসী? ও! ঐ ইন্দিরা গান্ধীকে আঁকে। - ই-ন্দি-রা গান্ধী! সে তো দারুণ দেখতে। দিল্লীতে থাকে। সিনেমার আগে, যার সিনেমা হয় – সে-ই তো? তার হাতে তারা-হাতুড়ি-কাস্তে থাকে? রাক্ষুসীর পাশে আঁকা থাকে। - আমি ওসব বলতে পারব না। বাবাকে জিজ্ঞেস কর। বাবা ব্যাপারটা মোটামুটি বুঝিয়ে দিল। মাঠে ফুটবল খেলা হলে যেমন কয়েকটা দল থাকে, দেশ চালাতে গেলেও তেমন। ... যে জিতে যায়, সে দিল্লিতে থাকে। মনে মনে হিসেব কষে নিলাম। ইন্দিরা গান্ধী দিল্লিতে থাকে, মানে জিতে গেছে। ... তবে কি বড় হলে ইন্দিরা গান্ধীই চিঠি দেবে আমাকে? কিন্তু হঠাৎ একদিন শুনলাম ইন্দিরা গান্ধী খেলায় হেরে গেছে। থমথমে মুখে ঘুরতে লাগলাম, আমার চিঠির কী হবে? ... ...
আমি গিয়ে ভাব করি ইনশাস রাইফেল নিয়ে ব্যাজার মুখে দাঁড়িয়ে থাকা ছত্তিশগড় আর্মড পুলিশের দুই জোয়ানের সঙ্গে। একজন চেয়ে নেয় সাক্ষরতার একটি ম্যাগাজিন। বলে -- আমি উত্তরপ্রদেশের গ্র্যাজুয়েট। বই পড়তে ভালবাসি, এখানে কিছু পাইনে। রোদ্দূর চড়ছে। আমরা দুজন হ্যান্ডপাম্প থেকে জল খেতে একে অন্যের সাহায্য করি, জানতে পারি সকাল থেকে ওর পেটে কিছু পড়েনি। ভোর ছ'টার থেকে ডিউটি লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। সেই দুপুরে লাঞ্চের সময় কিছু জুটবে। জিগাই-- রাত্তিরে মশারি? জঙ্গলে ওডোমস? -- ওসব সি আর পি'র জোয়ানরা পায়, হাজার হোক কেন্দ্রীয় সরকারের সেপাই। আমাদের কে পোঁছে? ইতিমধ্যে সর্দারজী টাটা সাফারিতে চড়ছেন দেখে সরকারি ছোট আমলাদের মধ্যে টেবিলে সাজানো কাজু-কিসমিস- বিস্কুট-কলা-আঙুর খাবলে নিয়ে পকেটে পোরার অশ্লীল প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। দেখতে দেখতে টেবিল সাফ। আমার পকেটে কিছু বিস্কুট, আর কিসমিস। তার থেকে গুনে ক'টি দেই ওই ছয়ফুটিয়া সেপাইকে, ও হেসে ধন্যবাদ দেয়। সলওয়া জুড়ুম শিবিরের জনতাকে মন দিয়ে দেখেছি। মনে হয় ওদের আজ গাঁয়ে ফিরিয়ে নিয়ে গেলেও ফিরে যাবে না। মানুষ অভ্যাসের দাস। সেই খাঁচার পাখি, বনের পাখি গল্প। -- এই মালী, চৌকিদার, রাঁধুনি, এস পি ও (স্পেশাল পোলিস ফোর্স)। -- আমাদের সাক্ষরতা অভিযানের উদ্দেশ্য সরকারি চাকরি পাইয়ে দেয়ার চেয়েও পেশাগত দক্ষতা হাসিল করে সেল্ফ এমপ্লয়মেন্টের দিকে যাওয়া। আর শিক্ষিত কে? যে লোকটি এম বি এ করে দিল্লিতে মাল্টিন্যাশনালে চাকরি করে রাত্তিরে মত্ত অবস্থায় বৌকে পেটায় সেই শিক্ষিত? ... ...
সুকোভ কোনও সময় টুপি পরে খাবার খায় না। সেটা খুলে সে হাঁটুর ওপর রাখে। তার দিয়ে তৈরি করা একটি চামচ যেটা সেই ১৯৪৩ সাল থেকে তার সঙ্গী সেটা সে তার পায়ের ছেঁড়া ন্যাকড়াগুলোর মধ্যে থেকে বার করে। চামচ দিয়ে দুটো বাটির তরল নাড়িয়ে দেখে। গরম, ধোঁয়া উঠছে। এক চামচ সে মুখে দেয়, আরও এক চামচ। উষ্ণতা তার শরীরের জমে থাকা হিম ভেদ করে অঙ্গপ্রত্যঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। আঃ স্বর্গীয়! তার মুখ উদ্ভাসিত, কোনও কষ্টই তার কাছে আর কষ্ট নয়। লপসিটা সে নাড়ায়, চলে যাবে, মাছের একটা সেদ্ধ ক্ষীণ কাঁটাও আছে যেটার সঙ্গে ফুলকো পাখনার টুকরাটাকরা লেপটে আছে। প্রতিটি কাঁটা সে শুষে নিঃশেষিত করে ফেলে, ছিবড়ে করে টেবিল ভরিয়ে দেয়। ৎসজারের বাটিতে আবার একটা বরফঘেয়ো আলু! কোনও তাড়াহুড়ো নেই তার, ধীরে সুস্থে খায়। আলুটা মিষ্টি, কিন্তু শক্ত। সুকোভ একটা বাটির তরল শেষ করে অবশিষ্টটা কাচিয়ে দ্বিতীয় বাটিতে ঢেলে দেয়। সেটাও চেটেপুটে চকচকে করে দিয়ে তবে তার শান্তি। ... ...
প্রথমেই যা নিবিষ্ট করে তা হল এই বইয়ের অত্যন্ত সুলিখিত ভূমিকাটি। লেখক পাঠক দুইয়ে মিলেই তো সাহিত্যের সেতু গড়া। "সকলে কি লেখেন? কত নিবিষ্ট পড়ুয়া আছেন, খুঁজে খুঁজে বার করে আনেন সাহিত্যের মণি-মুক্তোগুলি। ভালো পড়ুয়া আছেন বলেই অনেক মহৎ লেখক বেঁচে ওঠেন বিস্মৃতি থেকে।" এইরকম পাঠকেরাই খুঁজে বার করেছেন কতোদিনের হারিয়ে যাওয়া গল্পগুলি। তাদের অনেকগুলিই বিশ্বমানের, অথচ তাদের স্রষ্টারা আজ বিস্মৃত। এদের সংগ্রহ করে এবং একত্রে সংকলিত করে আমাদের ধন্যবাদার্হ হয়েছেন সাহিত্যিক অমর মিত্র, প্রকাশনার জন্য গুরুচন্ডা৯। আমাদের সাগ্রহ অপেক্ষা থাকে পরবর্তী খন্ডগুলির জন্য, কারণ "এই সংকলন যেন আমাদের বংশলতিকা খুঁজে বের করা। সেই খোঁজের শুরু হলো মাত্র।" ... ...
যখন এই লেখা লিখছি তখন গাজাতে শিশুমৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। খবরের কাগজের পাতা থেকে শুকনো রক্তের গন্ধ এসে লাগছে নাকে, টিভির স্ক্রিন থেকে রক্ত চুঁইয়ে নামছে মাটিতে। আর তার মাঝে বসে আমরা গরম সিঙ্গাড়ায় কামড় দিতে দিতে বোঝার চেষ্টা করছি, দোষটা কার বেশি, ইজরায়েলের না হামাসের। আর যেই বাচ্চাটা ঝলসে গেল, এক্কেবারে মরে গেল, তার কতটা দোষ ছিল? আহা, সে তো কোল্যাটারাল ড্যামেজ। আতঙ্কবাদের বিরূদ্ধে লড়তে গেলে কয়েকশ বাচ্চা তো মারা যাবেই। কেন, ইরাকে যায় নি? আফগানিস্থানে যায় নি? যেমন মাওবাদীদের শায়েস্তা করতে গেলে বিনায়ক সেনকে জেলে পুরতেই হবে, সোনি সুরির যৌনাঙ্গে ধারালো পাথর পুরে দিতেই হবে ওদের সবক শেখানোর জন্য, উন্নয়নের জন্য উচ্ছেদ হতে হবে বনবাসীদের, শহরে আলো দেওয়ার জন্য ডুবিয়ে দিতে হবে গ্রাম কে গ্রাম, ঠিক তেমনি বিশ্বজুড়ে শান্তিকল্যাণ প্রতিষ্ঠার জন্য শেষ করে দিতে হবে পরবর্তী প্যালেস্তাইনি প্রজন্ম, হত্যা করতে হবে উত্তরকালের গর্ভস্থ পরীক্ষিতকে। ... ...
বিভিন্ন বিমানবন্দর এবং দপ্তর এ যে তাপীয় স্ক্যানারগুলি লাগান হয়েছে তা দিয়ে শুধুমাত্র জ্বর হয়েছে কিনা তা সনাক্ত করা যায় তবে কারো করোন ভাইরাস আছে কিনা তা সনাক্তকরণের একমাত্র স্বীকৃত পদ্ধতি হল RTPCR। আর সমস্ত ভাইরাল সংক্রমিত অসুখের যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, ইনফ্লুয়েঞ্জা বি, সার্স (SARS) এবং এইচ১এন১ (H1N1) মতনই COVID19 নিশ্চিত করতে সুচারু ভাবে সুনির্দিষ্ট ল্যাবরেটরি তেই রুগীর গলার পেছন থেকে সোয়াব, বা লালা নমুনা, এবং নিম্ন-শ্বাসনালী এর তরল নমুনা বিশ্লেষণ করা হয়। ... ...
আমি তো স্থানীয় ভারতীয় নই, আগন্তুক। আমার কাছে কৃষ্ণাঙ্গ, শ্বেতাঙ্গ, খয়েরি চামড়া এ সবের মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সেসময়ের মধ্যেই আমি বুঝে ফেলেছিলাম যে, আমরা সবাই মানুষ। আমাদের সংস্কৃতি আলাদা, খাদ্যাভ্যাস আলাদা, ধর্ম আলাদা—কিন্তু আমরা সবাই মানুষ। শিরায় একই রক্তে বইছে। তুমি এটাকে কেতাবি দর্শন বলতে পার, কিন্তু এটা আমার অভিজ্ঞতা। আমাকে দেখেই ওরা বুঝেছিল যে আমি আফ্রিকান নই। এমনকি আমাকে জিজ্ঞাসাও করল, আমি ‘মুইন্ডি’ নাকি। ... ...