১৯৭৬ সালের ২৬নভেম্বর। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বিশ্বভ্রণে বেরিয়ে পড়লেন দুই তরুণ। আফ্রিকা। একজন হাল ছাড়েন কিছু পরেই। অন্যজন চলতে থাকেন—১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
৭ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ হর্ষ বর্ধন ঘোষণা করছেন যে আমরা অতিমারির শেষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছি; ৩০ মার্চ বলছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে; ২৭ এপ্রিল বলছেন সরকার মারির মোকাবিলায় শারীরিক ও মানসিক ভাবে অনেক বেশি প্রস্তুত, সারা দেশে যখন খোলা আকাশের নীচে লাইন দিয়ে চুল্লি জ্বলছে তখন নির্লজ্জ ভাবে মিথ্যা বলছেন যে বেড, অক্সিজেন, ওষুধের কোনও অভাব নেই; ২৯ এপ্রিল গর্ব করছেন মৃত্যুহার সারা বিশ্বে ভারতেই সবচেয়ে কম (১.১১%); পরের দিন আবার গর্ব করছেন যে ২.৬৯ লক্ষ মানুষ আরোগ্য লাভ করেছে, ২.২৮ কোটি মানুষ টীকাকরণের জন্য নাম লিখিয়েছে এবং আবারও নির্লজ্জ ভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন যে কোনও রাজ্য সরকারের কাছে টীকা মজুত নেই। এর সাথে আছে হিমালয়সম দম্ভ, স্বেচ্ছাচারিতা এবং হিরো সাজবার উদগ্র বাসনা। ২৮ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সারা বিশ্বের কাছে ত্রাতা সাজলেন। নাটকীয় ভঙ্গিতে ঘোষণা করলেন যে, ভারত বহু দেশকে টীকা সরবরাহ করে পৃথিবীকে সর্বনাশের হাত থেকে রক্ষা করেছে। তিন মাসের মধ্যে দেখা গেলো টীকার অভাব এতোই প্রকট যে নিজের দেশের বরিষ্ঠ নাগরিকদেরই দু ডোজ দিতে পারা যাচ্ছে না। তিনি এতোই বেপরোয়া, বাংলার মসনদ দখলে এতোই মত্ত যে ১৭ এপ্রিল যখন কোভিড ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তখনো নির্বাচনী সভায় সদম্ভে দাবি করলেন যে এতো মানুষ এর আগে কোনও সভায় তিনি দেখেননি। ... ...
বাষট্টি অধ্যায়-বিশিষ্ট ৩৩৬ পৃষ্ঠার এই উপন্যাসটির পট উত্তোলিত হয় বীরাঙ্গনা দাসীর প্রসঙ্গায়নে। বীরাঙ্গনা নামটি আমাদের মনে পড়িয়ে দেয় মাইকেল সৃষ্ট বীরাঙ্গনা কাব্যের শকুন্তলা, তারা, রুক্মিণী, কেকয়ী, সূর্পনখা, দ্রৌপদী, ভানুমতি, দুঃশলা, জাহ্নবী, উর্বশী, জনাকে। এই বীরাঙ্গনা ওপার থেকে এপারে এসেছে, পুত্র বা কন্যার সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল; কিন্তু কলকাতা, বসিরহাট, অনায়াস যাতায়াত করেছে। তার নিরন্তর পথিক বৃত্তি, সবাইকে হাস্যমুখ করানাের চেষ্টা বিস্মিত করে। কিন্তু সাদা থান, সেমিজ, বগলে পুঁটলি নিয়ে প্রৌঢ়া কপােতাক্ষ স্বপ্নে বিভাের, মধুসূদনের রচনা, মধুজীবনী সে লােকজনকে শুনিয়ে বেড়ায়, মধুজীবন ও রচনা পাঠে বালক বৃদ্ধ সকলকে উৎসাহ জোগায়। তার এই নিরন্তর মাইকেলচর্চা নিজের ও অন্যের দুঃখ ভােলায়। ইনি নাকি মাইকেলের দৌহিত্রী, সবার কাছে মাইকেল দিদিমা। আর অসম্পৃক্ত পাঠকের কাছে বীরাঙ্গনা মাইকেল প্রসঙ্গের চারণ কবি, ফরাসী এবাদুরদের মতােই। পুত্র কোর্টের মুহুরি, মেয়ের শ্বশুর বাড়ি দিল্লিতে। পথপরিক্রমা জীবনেরই, বুড়ি বীরাঙ্গনাকে মাইকেল উদ্বুদ্ধ করে, কপােতাক্ষ তাকে দেয় স্নেহ ও বিষাদ। তবে বিরলে ছাড়া এ অনুভব জাগে না। নিরন্তর তার চোখ ছলছল করে - "কেমনে ফিরিব—হায়রে কে কবে মােরে, ফিরিব কেমনে শূন্য লঙ্কাধামে আর।' বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ-দুটোই শূন্য হয়ে গেছে তার মতে। দিদিমা অভিরামের বেলগাছিয়ার বাড়িতে প্রায়ই এসে ওঠে, যেন আপনজন। হাবুলের পাকিস্তান মানি না জেহাদ বুড়ি মানে না। চারপাশের লোককে সময়ে অসময়ে সে মধুজীবন, মধু রচনা শোনায়। ... ...
পুজোর পর এক বন্ধু ফোন করল,তুমি কি জানো,স্বপন আর নেই। গত ফেব্রুয়ারিতে মারা গেছে। নিঃশব্দে চলে গেছে। তার স্ত্রী কাউকে জানায়নি। এমনকী রবিকেও না। রবিকে আমি ফোন করলাম খবর নিতে,তুমি কি জানো রবি,স্বপন বেঁচে নেই? সে জানত না। একটু বাদে ফোন করে আমাকে বলল,সত্য। স্বপনের খবর তার জানা ছিল না। বাড়িতে ফোন করে জানল এখন। কোনো বন্ধুই জানে না। বিকাশ,সর্বজিত,ভাস্কর,অদীপ কেউই না। কাউকে জানায়নি ওর স্ত্রী। অসুস্থ সন্তান নিয়ে সে বেঁচে আছে। সেই জানার দু'মাসের মাথায় ডিসেম্বরে রবি চলে গেল। লেখক রবিশংকর বল। স্বপন সেনের সঙ্গে নিশ্চয় তার দেখা হয়েছে। অনুজপ্রতিম দুই বন্ধু চলে গেছে। বাইরে বসন্ত আসছে। নতুন পাতা ফুটছে শালবনে। চারদিকে নতুন জীবনের গন্ধ। আমি লিখছি এই শোক গাথা। হায়! ... ...
করোনা ভাইরাস এর অতিমারী বিলেতে একটু বেশি মাত্রায় সমস্যা সৃষ্টি করছে। সেই সঙ্গে আর একটা ব্যাপার দেখা গেছে, কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয়ান (মানে উপমহাদেশীয়, ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রী লঙ্কা), এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মানুষেরা এই নতুন রোগটিতে আক্রান্ত হলে, তাঁদের মৃত্যুর সম্ভাবনা শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে বেশি। এই ব্যাপারে স্বভাবতই এই গোষ্ঠীর লোকেদের মধ্যে খানিকটা আতঙ্ক ছড়িয়েছে, সেই সঙ্গে অনেক রকম "তত্ত্বের" পর্যালোচনাও আরম্ভ হয়েছে। ... ...
চন্দননগরের এক ব্যস্ত চিকিৎসক। সামনের ফ্ল্যাটে ‘করোনা বেরিয়েছে’। ক্লাবের ছেলেরা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে এসে বলল, ডাক্তারবাবু, চেম্বার বন্ধ করে দিন—রোগীদের বিপদ, আপনিও সপরিবারে থাকেন। ডাক্তারবাবু বুঝতে পারছিলেন না এটা কি হুমকি, নাকি সত্যিই শুভাকাঙ্ক্ষী এরা। শুভাকাঙ্ক্ষী বলেই মনে হল যখন, তখন বুঝিয়ে বললেন। বাজারে বাসে দোকানে না-জানা করোনা রোগীর কাছ থেকেই বিপদ, কারণ আমাদের দেশে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা হয় না, সবাই মাস্ক ঠিকমতো পরতে জানেন না। সামনের ফ্ল্যাটে করোনা হয়েছে সেটা তাঁরা জানেন ও ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আলাদা আছেন, বাড়ির বাইরে করোনা-আক্রান্ত বেরচ্ছেন না। ক্লাবের ছেলেরা বুঝল। তারপর ডাক্তারবাবু বললেন, একটা কাজ করবেন? ওদের বাড়িতে নিয়মিত রান্না করা খাবার পৌঁছে দেবেন? ... ...
চেনা দৃশ্য, পরিচিত মানুষজন হয়ে ওঠে বর্ণময়। আর সেই রঙিন মোড়কের আড়ালে রয়েছে এক হিংস্র ও নিষ্ঠুর জীবনের ছবি। পাঠক নিমজ্জিত হন এক চমকপ্রদ মায়াবী জগতের ভিতর। ছোটা ছোটো মোচড়ে পরতে পরতে ফ্যান্টাসি জড়ানো গল্পগুলির মধ্যে বারবার নানা চোরাটান, ঘূর্ণি ও অভিঘাত তৈরি হতে থাকে। একটি গল্পসংকলন। লেখক সুদীপ বসু। পড়লেন রাহুল দাশগুপ্ত ... ...
যতই হোক, কাকভোরে ওঠাটা তিরিশ বছরের অভ্যাস বলে কথা। সে অভ্যাস তার জীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে। এসব নানা ভাবনার মাঝেই কুরুরু কুরুরু করে রাতের শেষ পালার বা দিন শুরুর ঢ্যাড়া-ঘোষণ দিতে প্যাঁচা ডেকে ওঠে। রাইসমিলের পুব দিকের গেটের পাশের আমড়াগাছে একজোড়া কোটরেপ্যাঁচা থাকে। সুকুমণি শব্দ শুনে নির্ভুল দিক গণে দিতে পারে। সেই ডাকে শেষ রাতটা কেমন ঝমঝম করে ওঠে। উসখুশ ভাব জাগে আকাশে বাতাসে। মিল থেকে লরীর শব্দ আসে। ইঞ্জিন গর্জে উঠে খানিক মকসো করে বেরিয়ে যায় লোড করা চাল নিয়ে কোন হিল্লিদিল্লি। ড্রাইভার খালাসীদের গলা খাঁকারি শোনা যাবে তখন। কারও বা আচমকা জোরে ডেকে ওঠায় কেমন যেন পরিবেশটা সজাগ হয়ে উঠে চোখ কচলে বড় করে তাকাবে। আরও বেশ খানিক পরে মশাগ্রাম থেকে বাঁকুড়াগামী দিনের প্রথম ট্রেনটিও এসে পড়বে হুড়মুড়িয়ে। ... ...
ব্যাঙ্কসি কে, বা তাঁকে কেমন দেখতে, তিনি শ্বেতাঙ্গ নাকি তাঁর গাত্রবর্ণ গাঢ় - সেকথা কেউ জানেন না। অথচ, তিনি ভুবনবিখ্যাত। ক্যামেরার সামনে নিজের মুখটিকে অষ্টপ্রহর ভাসিয়ে রাখার এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টার যুগে, তিনি নিজেকে আড়ালে রাখেন - এবং, অনেকে বলেন, এই আড়ালে রাখার সচেতন প্রয়াসই, সম্ভবত, তাঁর বিপণন-কৌশল - আর, সেটাকে যদি কৌশল বলে মেনেই নেন, মেনে নিতেই হয়, সে কৌশল অসম্ভব কার্যকরীও বটে। তিনি পথশিল্পী - রাস্তার ধারের দেওয়ালে তিনি ফুটিয়ে তোলেন নিজের শিল্প - তিনি গ্রাফিত্তি-শিল্পী - এক নিজস্ব ধাঁচের স্টেনসিলে দেওয়ালে আঁকেন সময়ের ধারাভাষ্য। গ্যালারিতে নিয়মিত শো না করেও তিনি বিশ্ববিখ্যাত। ... ...
সত্যি বলতে কি খবরটা পড়ে প্রথমে বেশ রাগ হয়েছিল। কাজল লাগাতে না পারা আত্মহত্যার কোন কারণ হল! তারপর ভাবলাম আমিই বা তবে খুঁজেপেতে স্মাজ-ফ্রি কাজল কিনি কেন? রোজ না হোক, যেদিনগুলোতে পড়াতে হয়, সেমিনার দিতে হয়, কমপ্যাক্ট দিয়ে তেলতেলে মুখ মেরামত করি কেন? হয়ত কাজল ধেবড়ে গেলে আত্মহত্যার ইচ্ছে জাগে না। কিন্তু নিজেকে সুন্দর দেখানোর মহাযজ্ঞে আমিও নাম লিখিয়েছি এবং এর মধ্যে কোথাও আমার নিজস্ব সৌন্দর্যাকাঙ্খা লুকিয়ে নেই। যদি চুল না আঁচড়ে, টি-শার্ট আর র্যাপ অ্যারাউন্ড পরে, তেলতেলে মুখে ক্লাসে ঢুকলে আমার একটুও সমালোচনা হবে না এমন ভরসা কেউ দিত, তাহলে আমি একদম এসব করে সময় নষ্ট করতাম না। ... ...
পরলোকের জীবনকে পান-ভোজনের মাধ্যমে উদযাপনে বিশ্বাস করত এট্রাস্কানরা, তাই কফিনের ঢাকনা আর দেয়ালচিত্র দুই জায়গাতেই এই ছবি। যৌনতা ও নাচগানের দেয়ালচিত্রও সমাধিগৃহে থাকত। দুই, নারী-পুরুষের বৈষম্যও এট্রাস্কান সমাজে কম ছিল। কীভাবে বোঝা যায়? এই ধরনের পানভোজনের দৃশ্যে, গ্রীক সংস্কৃতিতে নারী-পুরুষকে কখনওই একসাথে দেখা যেত না। গ্রীক নারী ছিল মূলতঃ অন্তঃপুরবাসিনী- রাজনীতি ও সমাজে তার ভূমিকা ছিল সীমিত। অতএব গ্রীক কুমোরশিল্পে গোষ্ঠীগত পানভোজনের দৃশ্যগুলোতে পুরুষেরাই একে অপরের সাথে থাকত। রোমানরাও এই ব্যাপারে গ্রীকদের থেকে খুব আলাদা ছিল না। অন্যদিকে এট্রাস্কানদের পানভোজনের দৃশ্যে নারী-পুরুষ একত্রে সামাজিকতা করত। ... ...
বগটুই গণহত্যাকাণ্ডের অব্যবহিত পরে কবি জয় গোস্বামীর লেখা কবিতা নিয়ে ‘দগ্ধ’ নামে একটি পুস্তিকা আমরা প্রকাশ করেছিলাম। বগটুই এবং তার পরবর্তীকালে আরও কয়েকটি নারীনির্যাতন, ধর্ষণ এবং হত্যার প্রতিক্রিয়ায় জয় গোস্বামী আরও কিছু কবিতা লিখেছিলেন। সেই সবকটি লেখা নিয়ে আমরা প্রকাশ করতে চলেছি আরেকটি বই – ‘নিজের বিরুদ্ধে’। পার্টি-প্রশাসন-পুলিশের হাতে আক্রান্ত অসহায় নির্যাতিতা এবং তার পরিজনদের দুরবস্থার এক দলিল হয়ে থাকবে এই কবিতাগুলি। এই লেখাগুলির প্রেক্ষিত সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা হলেও, পরিসর আরও ব্যাপ্ত। যে শাসনকাঠামোয় আমরা জীবন কাটাচ্ছি, তার সুযোগ-সুবিধাগুলি নিয়ে দুধেভাতে সংসার প্রতিপালন করছি, সেই কাঠামোর নৃশংসতা নিশ্চিতভাবে আমাদের নিজেদের দিকেও আঙুল তুলে দেয়- এই উপলব্ধির আয়না আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন কবি। ... ...
পায়ের তলে পদ্মরেণু, মুঠোয় গহন দীঘি চোখের ভিতর উড়ছে আকাশপ্রদীপ আফ্রোদাইতি,ম্যাজিক ছিলো,তোমার গ্রীবাস্থলে ... ...
আমার বন্ধুদের মধ্যে যেন বোমা পড়ল। কেউ ভাবতে পারেনি আমি ওই সম্পর্কে কখনও থাকব না, এমন হতে পারে। আর কারণটা জানাতে শুরু করলাম সবাইকেই, কিছু না লুকিয়ে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিছু মানুষের সঙ্গে আলাপ হল। সমকামী ও রূপান্তরকামী নারীপুরুষ সকলে। একটা অদ্ভুত জগৎ। সবটার সঙ্গে নিজেকে না মেলাতে পারলেও, চেষ্টা করতাম – যতটা পারা যায় জ্ঞান সঞ্চয় করতে। মনে হত, আর কোনও পরীক্ষা কি আছে, যা থেকে বোঝা যাবে আমি কী? আমার তো কোনও সমকামী সম্পর্কও নেই। কী করে প্রমাণ দেব, যে আমি সমকামী? কী করে বাকিদের বোঝাব, যে আমার সম্পর্ক ভাঙার আর কোনও কারণ নেই এটা ছাড়া? কী করে জাস্টিফাই করব আমার দাবি? ... ...
বন্যার জলের মত অভিযোগ আসতে লাগল। ভুল চিকিৎসায় পা কেটে বাদ দেওয়া, যে সব চিকিৎসা করাই হয়নি তার অর্থ আদায় করা, বিদেশে ভ্রমণরত...... , মৃত রোগীকে বাড়ির লোকের অমতে ভেন্টিলেটরে চাপিয়ে দশ লক্ষ টাকার ফর্দ ধরানো, হৃদধমনীর মধ্যে যে ‘স্টেন্ট’ বসানো হয়েছে বলে টাকা নেওয়া হয়েছে – রোগীর মৃত্যুর পর ময়নাতদন্তে সেই বস্তুগুলির অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়া, এককথায় গুণতে গেলে গুণের নাই শেষ। বহু দিনের পুঞ্জীভূত অবরুদ্ধ অভিযোগ, অশ্রু, ক্ষোভ, ভুল চিকিৎসায় বা অবহেলায় স্বজন হারানর যন্ত্রণা এবং বারবার প্রতারিত হওয়ার ক্রোধ হড়পা বানের মতো নেমে এল মুদ্রিত ও বৈদ্যুতিন মাধ্যমের পাতায় পাতায়। সাংবাদিক মহলে হৈ হৈ পড়ে গেল – কে কত রোমাঞ্চকর, অশ্রুসিক্ত, ভয়াবহ ঘটনা তুলে ধরতে পারেন এই বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবসাকে কেন্দ্র করে। ... ...
বরযাত্রীরা হিন্দুদের বিয়েতে ছাদনাতলাতেই খেতেন। মাথায় শামিয়ানা টাঙানো হতো। চারদিক সমান মাথা। সেখানে। গ্রামের মানুষদের বাড়ির দাওয়া বা আঙিনায়। কেউ কেউ গোয়াল ঘর পরিষ্কার করেও খাওয়াতেন। হিন্দু মুসলমান আলাদা বসানোর রীতি তেমন ছিল না, কিন্তু জাতপাত মানা হতে দেখেছি। শ্রাদ্ধ বাড়িতে বামুন তো আগে খেতোই, বিয়ে বাড়িতে শেষে খেতে দেওয়া হতো তফশিলি জাতির মানুষদের। বিশেষ করে বাগদি মুচিদের। আমাদের গ্রামের প্রশান্ত মজুমদার নামে ব্রাহ্মণ সন্তানের বিয়েতে এই ভেদ উঠে যায়। ... ...
ট্রপিকাল থেকে ছাড়া পেয়েছি প্রায় দু’মাস। এখনও দুই সপ্তাহান্তে একবার যেতে হয় হাসপাতালের আউটডোরে। লাইন দিতে হয়। টিকিট কাটতে হয়। অপেক্ষায় থাকতে হয়, কখন খিটখিটে দিদিটা নাম ধরে ডাকবে। কোন ডাক্তার যে দেখবে, ভগা জানে। কমবয়সী ডাক্তারগুলো হেসে কথা বলে, আমার সঙ্গে নয় সবার সঙ্গে। মৃদু কথা বলে। কেন? এখনও তালেবর হ’য়ে ওঠেনি তাই ? আমাকে ওরা পরীক্ষা করে, তারপর বসিয়ে রাখে ডাক্তার সাহার জন্য। তিনি এলে আবার পরীক্ষা করেন। ওষুধ লিখে দেন। সে ওষুধের জন্য ফার্মাসীতে দীর্ঘ লাইন দিতে হয়। তারপর উইণ্ডোতে পৌঁছালে ভোরিকোনাজল আছে কি না সেটা দেখতে স্টোরে পাঠানো হয়। থাকলে পেয়ে যাই। নৈলে পরদিন লাইন। একদিন তো অধৈর্য হয়ে বেরিয়ে যাবার মুখে ডাক্তার সাহার সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। ‘দাঁড়ান, দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন’ বলে রাস্তার পাশে একটা হাফ ওয়ালে বসেই পেট টিপে, স্টেথো লাগিয়ে, অজস্র প্রশ্ন করে তবে ছাড়লেন। লাইনে দাঁড়ানো অসংখ্য রুগী সাক্ষী রইলেন এই অপূর্ব চিকিৎসার। ... ...
বিধানসভা নির্বাচনের প্রেক্ষিত মাথায় রেখে রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলগুলি এই ধর্নামঞ্চের দিকে যে লক্ষ্য রাখছে সে কথা নিশ্চিত করে বলা যায়। সংগঠকদের কথা মত গ্রাম ও শহরতলি থেকে ক্রমশ কৃষক ও তাঁদের সমর্থক, অন্যান্য সাংস্কৃতিক ও গণআন্দোলনের কর্মীরা নিয়ত আসা-যাওয়া শুরু করলে যে মেলবন্ধন তৈরি হবে, তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। ... ...
সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার যেটা, সেটা হল রায়া সরকার এবং আরও কয়েকজন, যারা মেহমুদ ফারুকি আর খুরশিদ আলম ধর্ষণ মামলায় সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান নিয়েছিলেন, তাঁদের ভোল বদলানো বা পালটি খাওয়া। কিছু স্বাক্ষরকারীর মতে উভয় ক্ষেত্রেই যেহেতু বিশেষভাবে ধর্ষণের অভিযোগই করা হয়েছে, তাই তার বিচারের ক্ষেত্রে নির্ধারিত পদ্ধতিতেই এগোন দরকার। মেহমুদ ফারুকির মত খুরশিদ আলমও আমাদের অনেকের কাছেই পরিচিত ছিলেন। উভয়ক্ষেত্রেই যে নারীবাদীরা অভিযোগ সমর্থন করেছিলেন, উদার বামপন্থী নারীবাদী বৃত্তের ভেতর থেকেই তাঁদের ‘ফেমিনাজি’ বলে আক্রমণ করা হয়েছিল। ‘ফেমিনাজি’ অর্থাৎ কোনও প্রমাণ ছাড়াই যারা পুরুষের বিরুদ্ধে আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কিন্তু আমাদের অবস্থানটা হল এইরকম যে যেকোন অভিযোগকে বিচার পাওয়ার দিকে এগিয়ে দেবার আগে আমরা তার ‘প্রমাণ’ চাইব না কিন্তু আশা করব যে কি ধরণের অভিযোগ জানানো হছে সে বিষয়ে অভিযোগকারীর যেন পরিষ্কার ধারণা থাকে। আমরা জানি খুরশিদের ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণী মধু কিশওয়র অভিযুক্তের সঙ্গে তাঁর একটা ভিডিও রেকর্ডিং বানিয়েছিলেন আর প্রথামাফিক অভিযোগ জানানোর আগেই সেটা গণমাধ্যমে ছেড়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন। কিন্তু এঁরা যখন অন্য নারীবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তখন তাঁরা এইভাবে এগোনোর বদলে সঠিক পদ্ধতিতে অভিযোগ দায়ের করতে উৎসাহিত করেছিলেন। দুঃখজনকভাবে খুরশিদ আত্মহত্যা করায় এই মামলা বন্ধ হয়ে যায়। যে নারীবাদীরা এই দুই ক্ষেত্রে অভিযোগকারিণীদেরসমর্থন করেছিলেন, তাদেরই ফেমিনাজি বলা হয় কারণ তাঁরা গণমাধ্যমের বিচারে (মিডিয়া ট্রায়ালে) আগ্রহী, যার সবটা তাঁদের আয়ত্তে থাকে না। আশ্চর্যজনকভাবে রায়া সরকার, যিনি একদিন কবিতা কৃষ্ণণকে সাম্প্রদায়িক আর ফেমিনাজি হওয়ার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণ পর্যন্ত করেছিলেন (সেই সব পোস্ট অবশ্য পরে ডিলিট করে দিয়েছেন), তিনিই আজ কোনও প্রেক্ষিত বিচার না করেই যেকোনও পুরুষের ওপর যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনাকে উৎসাহ দিচ্ছেন। অন্য নারীবাদীরা যারা সেই সময় আমাদের আক্রমণ করেছিলেন আশ্চর্যজনকভাবে তাঁরাও দিক বদলে অন্য দিকে চলে যাচ্ছেন অতি দ্রুত। তাহলে কে এই দুই বিপরীত পক্ষ তৈরী করে তাদের লড়িয়ে দিল আর কোন দিকটাই বা বেশি ক্ষমতাবান! ... ...