তুমি উৎসব, তুমিই সেই চাঁদ দেখে ছুটি দিয়েছো কত চাঁদকে আঁকার ঘরে তোমাকে ঘিরে ছিল যারা সবাই এতক্ষণ ঘুমিয়ে গেছে ওদের চুলে হাত বুলিয়ে শুতে গেছে অন্য কেউ এঁকেছে চোখের পাতায় চুম্বন ... ...
বিরান ঘাটে সেই সময় নজর পড়লো ত্রপার ওপর। বুকের কাছে কয়েকটা বই, একটা লম্বা খাতা জড়ো করে দাড়িয়ে আছে। স্কুল ড্রেস পরণে ছিলো না। তাই অনুমান করা গেলো যে, কলেজ ছাত্রী। একবার ভেবেছিলাম, কথা শুরু করা যাক। কিন্তু সেটা বড্ড বেশী সিনেমাটিক হয়ে যেতো। তাই চুপ করে রইলাম। কথাটা শুরু হলো দূর্ঘটনাচক্রে। দূর্ঘটনা আমিই ঘটলাম। ... ...
ফের এবছর ভয়াবহ বন্যার কবলে নিম্ন দামোদর এলাকা। ১৯৭৮ এবং ২০০১ সালের বন্যাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এর তীব্রতা। তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে ডিভিসি-র বাঁধগুলির কার্যকারীতা এবং পরিচালনা। একটি বড়ো দৈনিকে হেডিং হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জলে ডুবল বাংলা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দুটো প্রশ্ন তুলেছেন, এক) ডিভিসির জলাধারগুলোতে ড্রেজিং করছে না কেন কেন্দ্র সরকার? দুই) জল ছাড়ছে ডিভিসি। এই অবস্থায়, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ‘ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা হলো’ – এটা লব্জে পরিণত হয়ে গেছে যেমন, তেমনি সম্ভবতঃ সামনের দিনে আরেকটি লব্জ তৈরি হতে চলেছে, ‘ঝাড়খণ্ডের জলে বন্যা বাংলায়’। মুশকিল হলো, এই কথাটা বলা আর ‘সূর্যের তাপে খরা বাংলায়’ বলার মধ্যে কোনো তফাত নেই। এই ধরনের কথা, সমস্যাটি ঠিক কী, তা গুলিয়ে দেয়। সমস্যাটির সমাধান করার উদ্যোগ নিতে বাধা দেয়। এবং একইসাথে ভেতরে ভেতরে, এটা কোনো সমস্যা না, এই বোধও তৈরি করে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল নিষ্ক্রিয়তা। আমরা একটা উদ্যোগ নিয়েছি, সমস্যাটি ঠিক কী, তা প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে তুলে ধরার। এবং তা এখনও পর্যন্ত দামোদরের বন্যা নিয়ে যা যা গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর ওপর দাঁড়িয়ে। তার মধ্যেই থাকবে, কী করা যায়, কতটা করা যায়, সেসবও। আমরা অবশ্যই বাস্তবের মাটিতে দাঁড়ানোর পক্ষপাতী। সমস্যাটিকে বর্তমানের নিরিখে বোঝার পক্ষপাতী। এবং আমরা প্রশ্ন তীক্ষ্ণতর এবং সূক্ষতর করার পক্ষপাতী, যাতে ফারাকটিকে চেনা যায়। মোটা দাগের কোনো মতামতের তুলনায় সূক্ষতর প্রশ্নের মধ্যেই সমস্যাটি এবং তার মোকাবিলার ভবিষ্যৎ নিহিত বলে আমরা মনে করি। তাই পাঠকরাও যদি পারেন, সাহায্য করুন, সূক্ষতর প্রশ্ন করে। বা তার উত্তর দিয়ে। ... ...
ডাঃ খান বললেন, “বাজে বকিস নে ঐন্দ্রিল। বাষট্টি পেরিয়ে তেষট্টি হল। আমার এখন এক এবং একমাত্র লক্ষ পঁয়ষট্টি ক্রস করে এই হেলথ সার্ভিস থেকে পালানো। মাঝরাতে এসব ঝামেলার রোগী দেখলে কাউন্সিলিং তো দূরের কথা, গালি দিতে ইচ্ছে করে।” ... ...
কলকাতা-কেন্দ্রিক ন্যাকাচিত্তির সাহিত্যের এঁদো কপচাবাজি এবং তার ভেক্টর প্রতিষ্ঠানের মুখে জোর থাপ্পড় মেরে তার গিল্টি-করা দাঁত উখড়ে তার ভেতরকার মালকড়ি ফাঁস করে দিতে আজ থেকে তিপ্পান্ন বছর আগে দানা বেঁধেছিল বাংলা সাহিত্যের প্রথম আভাঁগার্দ আন্দোলন ----- হাংরি জেনারেশন। যা ছিল আক্ষরিক অর্থেই কলকাতার বাইরের কবি-লেখকদের নয়াল সংযোজন। তাঁরা এসেছিলেন এমন এক মিলিউ থেকে যেখানে বাংলার তথাকথিত ভদ্রায়তনিক সংস্কৃতির কোনও শিস-ই গজাবার নয়। জীবনের অনেকরকম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় যেখানে। হাংরি সাহিত্যের কলিন অধ্যয়নে এই প্রেক্ষাপটটি সর্বাগ্রে মাথায় রাখতে হবে। এই হাঙ্গামার প্রধান স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরীর শৈশব অতিবাহিত হয়েছিল বিহারের ভয়ঙ্কর কুচেল অধ্যুষিত বাখরগঞ্জ বস্তিতে। তাঁর টায়ার ছোটবেলা অতিক্রান্ত মুসলিম অধ্যাসিত দরিয়াপুর মহল্লায়। সেই অস্বাচ্ছন্দ্য, অখল জ্বালা, ক্ষোভ আর বিদ্রোহকে বুকে করে মলয়ের বেড়ে ওঠা। সংস্কৃতির একেবারে নিচেকার পাদানি থেকে আসা, নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে ওঠার প্রতিটি মানুষী শঠতার সাক্ষী, স্পেঙলারের সংস্কৃতি ও অবক্ষয়কালীন সর্বগ্রাস তত্ত্বে তা-খাওয়া একজন বাইশ-তেইশ বছরের কৃষ্টিদোগলা বা কালচারাল বাস্টার্ড লেখালেখির মাঠে এলে যা ঘটবে, সেটা তো রফা হয়েই ছিল। ... ...
এটাই নাকি চিত্রকর গ্রাম। ভরতপুর। মোটে পনেরো ঘর চিত্রকর। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়তে গেলাম প্রথম বাড়িতেই। সঙ্গে দেবাশীষ মুখার্জি ভাই--- আগে এসেছে কিনা। বলল--দাঁড়ান ওই খানটায় , অনিলকে ফোন লাগাই। একটা পুরোনো গরীব কুয়ো --ডুমুর অশথ গাছের শেকড় জল ছোঁয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। ঝুঁকে দেখতে দেখতেই ডাক এল। গাঁয়ের একটি সিমেন্ট বাঁধানো দাওয়ায় ওরা ছবি বিছিয়ে দিচ্ছে। এটাই নিয়ম। বাইরের কেউ এলে পনেরো ঘরে কানাকানি করেই খবর পৌঁছে যায়--যার যেটুকু পুঁজি এনে সাজায় সেই দাওয়ায়। ... ...
গঙ্গাধর গ্যাডগিল মরাঠী সাহিত্যে ছোট গল্পের জন্য খ্যাতনামা। সেদিন তাঁর সঙ্গে আলাপের পর বেরিয়ে এসে বন্ধুদের অভিজ্ঞতার কথা বলতে, তুষার বলল, কেঁচিয়ে দিয়েছিস, এখান থেকে আমেরিকায় যাওয়ার সাহিত্য প্রতিনিধি নির্বাচন করবে, তোর হলো না। হাসাহাসি হলো। সেদিন ছিল শেষ দিন। ইউথ হোস্টেলে ফেরার বাসে সঙ্গে ছিলেন তামিল ভাষার প্রবীণ লেখক অশোক মিত্রণ। এটি তাঁর লেখার নাম। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, গ্যাডগিলের সঙ্গে কী কথা হলো ? আমি বলতে, তিনি পরামর্শ দিলেন, “তোমার লেখার পদ্ধতি তোমার, তা নিশ্চয় মিঃ গ্যাডগিল দেখতে যাবেন না, কিন্তু এই সমস্ত মানুষের কথাকে সাময়িক সমর্থন করতে হয়, উনি তো তোমাকে নিয়ে বিরক্ত হয়ে থাকলেন।” ... ...
উপসংহারে লেখকরা লিখছেন, “ফাঁসীর আগে ধনঞ্জয় বলেছিল সে নিরপরাধ। গরিব বলে তার ফাঁসী হচ্ছে।" অতি সাধারণ কথা। যেকোনো ফাঁসীর আসামীই একথা বলতে পারে। পুরো বইটা পড়বার পরে এই বাক্যের অভিঘাত কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। একটা সিস্টেমের কাছে মানুষ কি পরিমাণ অসহায়, সেটা বারবার মনে হচ্ছিল এই লাইনটা পড়ে। বইটা যেদিন শেষ করি, সেটা কালীপূজোর রাত। যেরকম হয়, রাতের স্তব্ধতা ভেঙে মাঝে মাঝে পটকা কি তুবড়ির আওয়াজ আসছে। আমার কাছে তখন কিরকম অবাস্তব লাগছিল সবকিছু। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমার ধারণা, বইটা পড়লে যে কারোর মধ্যেই এই ঘোরটা তৈরি হবে। মানুষ যে framework এ বাস করে, তার ভিত ধরে টান দিলে এরকম হয়। ... ...
প্রশ্ন করা যাক, এই সংস্কারে কাদের লাভ, কতখানি লাভ। ভারতে এখনও সত্তর শতাংশ বিদ্যুৎই তাপবিদ্যুৎ। সবচেয়ে বেশি কয়লা খরচ হয় তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজেই— ২০১৭-১৮ সালের হিসেব বলছে, ভারতে শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়েছিল মোট ৮৯৬.৩৪ মিলিয়ন টন কয়লা, তার মধ্যে তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবহৃত হয়েছিল ৫৭৬.১৯ মিলিয়ন টন, অর্থাৎ ৬৪.৩% । কাজেই, কয়লাখনি বিক্রি হলে কাদের লাভ, সেই খোঁজ করতে গেলে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থার খোঁজ না নিয়ে উপায় নেই। ভারতে সবচেয়ে বড় বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থার নাম আদানি পাওয়ার লিমিটেড— মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ১২,৪১০ মেগাওয়াট। আছে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স পাওয়ার— উৎপাদন ক্ষমতা ছ’হাজার মেগাওয়াটের কাছাকাছি। সস্তায় কয়লার ব্যবস্থা হলে মন্দ কী? এ ছাড়াও লাভবান হবে টাটা পাওয়ার, জেএসডব্লিউ। প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির জন্যও বিবিধ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন অর্থমন্ত্রী। এটা অনুমান করার জন্য কোনও নম্বর নেই যে দেশের পয়লা নম্বর বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থার মালিকের নামও গৌতম আদানি। ... ...
উনিশ শতকে নারীর লেখক হয়ে ওঠার যুদ্ধ বহুমাত্রিক অবদমনের গল্প, যার প্রারম্ভে আছে লেখিকার নির্বাসিত মননকল্পনার জিজ্ঞাসা আর অন্য পিঠে এর পরিণামে তার creative unity র ভেতর থেকে উঠে এসেছে বিবাহিত জীবনের ক্লীবত্বের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিশোধস্পৃহা। ... ...
শাহ আব্দুল করিমের লেখায় ব্যাপক জায়গা জুড়ে আছে সাম্যবাদ৷ শাহ আব্দুল করিমের দুর্দশাগ্রস্ত জীবন এবং রাজনৈতিক কর্মতৎপরতা এর বড় কারণ। গণমানুষের অধিকারের ব্যাপারে তিনি বরাবরই সচেতন ছিলেন। শাহ আব্দুল করিম সম্পর্কে আলোচনার একটা বিশেষ সুবিধা হলো ‘করিমের পদই পদের ব্যাখ্যা’। অর্থাৎ শাহ আব্দুল করিমের পদ মনোযোগ দিয়ে দেখলে বাড়তি কোনো ব্যাখ্যা পড়তে হয় না। অত্যন্ত সরলভাষায় পদ রচনা করতেন তিনি। তাই তাঁর পুঁজিতন্ত্র বিরোধী পদ মানুষকে জাগ্রত করেছে ও উৎসাহিত করেছে লড়াইয়ে। শ্রেণীসংগ্রাম থেকে বিপ্লব কী নেই তাঁর পদে। এত সূক্ষ্মদৃষ্টি হয়তো অনেক মার্ক্সবাদী তাত্ত্বিক কিংবা নেতাদেরও ছিল না। ... ...
আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এতই কুৎসিত যে এখানে নকলের মত অপরাধ করে হলেও ক্লাস নাইনের মেয়ে কে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হয়। আর আমাদের শিক্ষকগণ এতই মহান যে এতে নিজেদের অপরাধ, নিজেদের নৈতিকতা কে একবারের জন্যও প্রশ্ন না করে সেই ছাত্রী কে, তার বাবা মা কে অপদস্থ, অপমান করে। এমন ঘটনা যদি দেশের মফস্বল শহরের অখ্যাত কোন স্কুলে ঘটত তাহলে এটা হয়ত মানুষজনের নজরেও আসত না। কিন্তু এমন ঘটনা ঘটে বসে আছে দেশের সেরা স্কুলে।সেরা স্কুলের চেহারা যদি এমন হয় আশা করি বাকিদের অবস্থা খুব সহজেই অনুমেয়। তাই বাকিদের নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য আজ পর্যন্ত হয়নি, সম্ভবত আর হবেও না। ... ...
মার্কের সিনেমার যে সমালোচনা মজুররা করেছেন তা মার্কের চোখ খুলে দেয়। গদারদের রাস্তাটা ছিল লেনিনের উপর থেকে সংস্কৃতি আসার লাইন। সেই লাইনে সচেতন শ্রেণীর কাজ মজুরকে নেতৃত্ব দেওয়া এবং গদারের কথা অনুসারে মার্কেদের কাজটা মোটেও সেই কাজ নয়। কাজটার মধ্যে গদার একটা 'গ্যাপ' খুঁজে পেয়েছিলেন। মেডভেডকিন গ্রুপের কাজ ছিল মেডভেডকিনের মতই। মেডভেডকিনের সেই প্রখ্যাত সিনে-ট্রেন-এ তিনি নিজে ছাড়া আর কারোর ন্যূনতম সিনেমা শিক্ষাও ছিল না। মার্কেরাও সিনেমায় অশিক্ষিতদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন নিজের ভাষা, নিজের কন্ঠস্বর খুঁজে নেওয়ার জন্য। অর্থাৎ সোজা কথায় সিনেমাকে প্রফেশনালদের হাত থেকে মুক্ত করার কাজ করেছিলেন। গুঁড়িয়ে দিয়েছিলেন বুর্জোয়া সুলব সিনেমা ভাবনাকে যা বলে সিনেমা শুধুমাত্র যারা শিক্ষিত এই মাধ্যমে তারাই বানাতে পারে। এমনকি গদার নিজেও জানতেন যে ভের্তভ গ্রুপ বানানোর আগে অব্দি তাঁর কাজগুলো খুব বেশী হলে 'ব্যাক্তিগত বিদ্রোহ' ... ...
আমার মা খুব নাটকীয় ভঙ্গিতে গপ্পো বলতে পারতেন। নোনা জলের খাড়ির মধ্যে দিয়ে বৈঠা বেয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। চারিপাশে ঢেউ এর মতো পর পর চাইনিজ জাল বিছোনো। মাঝে মাঝে জল থেকে একটা গ্লোব্ব গ্লোব্ব শব্দ উঠছে। ঠিক তক্ষুণি শুরু হত মায়ের গপ্পো। বিষয় নতুন কিছু না। এই আধঘন্টা আগে যে সিনেমা টা দেখে এলুম সেটাই।অথচ দেখুন আজ এতদিন পড়ে সেই সিনেমা গুলোকে বিলকুল ভুলে গেছি কিন্তু মায়ের বলা গল্পগুলো ছবি হয়ে গেঁথে আছে আমার স্মৃতি তে। গুহাচিত্রের মতো। আর হঠাৎ হঠাৎ সেই বাচিক চলচ্চিত্র বা ওরাল সিনেমার মধ্যে ঢুকে পড়তো পট্টন। তার সেই অদ্ভুত হাত নাড়া –সংকেত আর অদ্ভুত সব আওয়াজ নিয়ে।তখন বৈঠা যেত থেমে, চারদিক নিস্তব্ধ। যেন এক অলৌকিক বহুমাত্রিকতায় দর্শকের সামনে পরিবেশিত হচ্ছে ওরাল সিনেমা। আমার মা আবার এতটাই সৃষ্টিশীল ছিলেন যে পট্টনএর ভাষা শুধু বুঝতেন এবং অন্যদের বুঝিয়ে দিতেন তাই নয় সেখান থেকে আবার নতুন নতুন মাত্রা খুঁজে বের করতেন। ... ...
পক্ষীরাজের বয়েস হচ্ছিল। কলকব্জা গুলো বিগড়োচ্ছিল একে একে। এর মধ্যে অনিমেষ একটা বাস কিনে ফেলেছে৷ ৩বি /৩ডি ৩ডি/১ হয়ে সেই বাস আমাদের পাড়া থেকেই ছাড়ে রোজ৷ পক্ষীরাজ আর চলতে পারলো না ছিয়ানব্বুই এর গোড়া থেকেই৷ স্থায়ী ঠিকানা হল দত্তবাগান মোড় এর পেট্রল পাম্প৷ অনিমেষ ভাবে থাক ওখানেই। বিক্রী করবে না৷ কিন্তু লোক আসতে থাকে ওর কাছে। পক্ষীরাজকে স্ক্রাপ হিসেবে কিনতে চায় তারা। অনিমেষ রাজী হয় না৷ তারপর একদিন আসেন এক কালোয়ার। অনিমেষ তাকেও বলে ও বিক্রী করবে না পক্ষীরাজকে। সেই কালোয়ার ভদ্রলোক তখন এমন একটি কথা বলেন অনিমেষকে যে অনিমেষ তাঁকেই বিক্রী করে দেয় নিজের পক্ষীরাজকে। উনি বলেছিলেন - স্যার, আপনি তো এই গাড়িটাকে নিজের বাড়ির লোকের মত দেখেন। তো আপনার বাড়ির কেউ মারা গেলে কী তাকে বাড়িতেই রেখে দেন? ... ...
কিছুদিন পরে ল্যাবের বড় দাদা মানে জগাদা আমাকে ডাকল – - কি রে! TUMPA-র সঙ্গে এত গল্প করছিস, ব্যাপার কী? - টুম্পার সঙ্গে গল্প মানে? আমার নাম তো টুম্পা। - কী! তোর ডাকনাম টুম্পা? তুই তাহলে টুম্পা ওয়ান। অমনি সবাই হো হো হা হা করে হাসতে লাগল। - কী ইনোসেন্ট রে, তুই TUMPA জানিস না?.... ... ...
আমার সুযোগ না হলেও ভোরের বাতাস গায়ে মাখতে বাবা বের হয়ে গেছে এরই মধ্যে। সাথে রহিম চাচা। যমুনার ধার ঘেঁষে হাঁটতে হাঁটতে বাবা চলে যায় বটতলার শ্মশান ঘাটের দিকে। ওই ঘাট পার হলেই জেলখানার ঘাট। সেখানে সারারাত জাল ডুবিয়ে বসে থাকা জেলেদের জালে এসময় মাছের বাড়বাড়ন্ত। বেলা উঠলেই ঘাটের পাড়ে শুরু হয় সদ্য নদী থেকে তোলা মাছের বিকিকিনি। সেখানে খালুই ভরা—কখনো আইড়-ভেউশ, কখনো রূপালী পাবদা। সেসব খালুই থেকে বেছে বেছে সেরা মাছ বাবার জন্য তুলে নেয় রহিম চাচা। ... ...
এই তো একবছর হয়নি, আমার অজাতশত্রু বোন, আমার অজাতশত্রু ভাই পূর্ণ মেজাজে ডালপালা মেলে ধরেছে। তাদের পাতা ঝরে পড়ছে। পাতাগুলো ঝাঁটিয়ে রাখা হচ্ছে তাদেরই ছায়ার নীচে মাটিতে। এছাড়া মাটিকে আচ্ছাদিত করে আছে কিছু প্যারা ঘাস, লজ্জাবতী, দুর্ব্বো। ভাইয়ের গায়ে লতিয়ে উঠছে অপরাজিতা। ঝরাপাতা বাদামী থেকে কালো হয়ে উঠেছে। ঘাস-পাতা-গুল্ম আচ্ছাদিত মাটি রসে টইটম্বুর। সেখানে প্রতিনিয়ত মাননীয় মিলিপেড, সেন্টিপেড, কেঁচো, শামুক, পিঁপড়ে ও অন্যান্য (আমার নাম না জানা) পোকাদের চলাফেরা। তারাই তো মাটির স্বাস্থ্য, মসৃণতা এইসব বজায় রাখবেন – যাতে মাটি গ্যালন গ্যালন জল ধরে রাখতে পারে তার পেটের ভেতরে। আর ফুল-পাতা-ঘাস যা ঝরে পড়বে সবাইকে জারিয়ে করে দেবে মাটির খাবার। মাটি সমৃদ্ধ হয়ে উঠবে। ... ...
উনিশশ আটচল্লিশে প্যালেস্টাইনের তিন ভাগ করে দিয়ে ইংরেজ বীরদর্পে পশ্চাদপসরণ করে – ভাগ ঠিক সমান হয় নি, খানিকটা পেলো ইসরায়েল, খানিক প্যালেস্টাইন এবং ইস্ট জেরুসালেম সহ বাকিটা জর্ডান। তারপরে যে আরব ইসরায়েলি লড়াই হলো (ইসরায়েল যাকে বলে স্বাধীনতার প্রথম যুদ্ধ) তার শান্তিচুক্তি অনুযায়ী নতুন করে এক সীমারেখা টানা হয় – আরমিসটিস লাইন অফ ১৯৪৯। সাতষট্টির যুদ্ধে জর্ডান হারাল তার অংশ, প্যালেস্টাইন পরিণত হলো ইসরায়েলের অঙ্গরাজ্যে। রাষ্ট্রসংঘের আধ ডজন রেসোলিউশন সত্ত্বেও ইসরায়েল সাতষট্টি সালের স্ট্যাটাস কো বজায় রেখেছে। ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক কথাটা বারবার শোনেন - সেটা ওই জর্ডান নদীর পশ্চিম কুল বলে, পূর্বে জর্ডান দেশ। ... ...