২০১৬ সালে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক হঠাৎ এই সমিতিকে মাওবাদী প্রভাবিত আখ্যা দেয়। তার উদ্দেশ্য কী সে তো দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। জমির ওপর অধিকার কায়েম রাখবার দুই হাতিয়ার হল ল্যান্ড একুইজিশন অ্যাক্ট, ২০১৩ এবং ফরেস্ট রাইট অ্যাক্ট, ২০০৬। এইসব মানবিক আইনি অধিকার ক্রমাগত সংশোধনের চেষ্টা চলছে সরকারি তরফে। বলা বাহুল্য সে সংশোধন কর্পোরেটের কোলেই ঝোল টেনে দিচ্ছে। ... ...
সাম্প্রতিকতম ন্যাশনাল ফ্যামিলি হেলথ সার্ভের পরিসংখ্যান জানান দিচ্ছে যে সদ্যোজাত এবং পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হার গুজরাটের তুলনায় পশ্চিম বাংলায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। প্রতি ১০০০-এ গুজরাটে গড়ে ৩১.২ জন শিশুর (পাঁচ বছরের কম) মৃত্যু হয়। বাংলায় সেই সংখ্যা ২২। সদ্যোজাত শিশুর মৃত্যুর ক্ষেত্রে দুই রাজ্যের সংখ্যা যথাক্রমে ২১.৮ আর ১৫.৫। গুজরাটে অপুষ্ট শিশুর সংখ্যাও অনেক বেশি বাংলার থেকে। ... ...
এখানে একেবারে বিপরীত একটি নির্মাণ চোখে পড়েছে, ধর্ম প্রতিবাদীর অবলম্বন হয়ে উঠছে অথচ এখানে ধর্ম সহাবস্থানের, হানাহানির নয়। আন্দোলনে ধর্মীয় এই বাতাবরণ একটা দিক, কিন্তু আন্দোলনের চালকের ভূমিকায় আছে কীর্তি কিষাণ ইউনিয়ন, ক্রান্তিকারী কিষাণ ইউনিয়ন, বিকেইউ একতা (উগ্রাহাঁ), বিকেইউ (ক্রান্তিকারী), কিষাণ সংঘর্ষ সমিতি, কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির মত সংগ্রামী ধারার সংগঠনগুলি। আন্দোলনের হার না মানা মনোভাব এবং আপোসহীন সংগ্রামের অঙ্গীকার এবং সাধারণ কৃষকদের সচেতন রাজনৈতিক ভাষ্যে কোথাও খামতি নেই। ... ...
আপনি যদি বুদ্ধিমান হতেন, এই বক্তব্য রাখার আগে একটু কৌশলী হতে পারতেন। আপনাদের নেতারাই বিগ মিডিয়াতে এবং আইটি সেলে ক্রমাগত জাতীয় সংগীত বদলে ফেলার কথা বলে আসছেন। হিন্দিকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রচার করছেন দিবারাত্র। হ্যাঁ, সাহিত্য আপনারা বোঝেন না, এটাই একমাত্র সত্যি কথা আপনি বলেছেন এখানে। বাংলা সাহিত্য বুঝলে বিজেপি করতেন না। ... ...
ওয়াইসির মতো একজন পোড় খাওয়া নেতা যেখানে হালে পানি পাচ্ছেন না, সেখানে পিরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির মত নবাগত কিসের জোরে ভোটে লড়ার কথা ভাবছেন? তাঁর জোর তো একটিই— গোটা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ফুরফুর সরিফের মুরিদরা। পিরের শিষ্য বা ভক্তদের বলা হয় মুরিদ। ফুরফুরা শরিফের পির আবু বকর সিদ্দিকি (১৮৪৫-১৩৩৯) বা দাদাপির সাহেব ছিলেন একজন সুপ্রসিদ্ধ ইসলামি পণ্ডিত ও ধর্মগুরু। ... ...
অনেকের মনে হচ্ছে একটা বার্তা দেওয়া দরকার যে সব বাঙালি একেবারে সাচ্চা হিন্দু রামভক্ত বিজেপির বানরসেনা হয়ে যায়নি। অতএব শুভ কাজে বিলম্ব না করে কয়েকজন মিলে শুরু করে দেওয়া হোল একটা ছোট্ট উদ্যোগ – বিজেপি বিরোধী বাঙালিদের গ্রুপ – বর্গী এল দেশে। ... ...
উত্তর প্রদেশ সহ গোবলয়ে ঠাকুররা আক্ষরিক অর্থেই দেবতা। অর্থাৎ ঠাকুর সম্প্রদায়ভুক্তরা। ঠাকুররা উচ্চবর্ণীয়, ফলে হিন্দি বলয়ের হিন্দুস্তানে, ঠাকুররা দেবতার আসনে বিরাজ করেন। এ হেন বুলন্দশহরে অহিন্দু এক দোকানি, নিজের দোকানে বিক্রি করছিলেন ঠাকুর লেখা জুতো। শুধু লেখা নয়, জুতোর সোলে খোদাই করে লেখা ছিল ঠাকুর। ... ...
পশ্চিমবঙ্গের বাঙালির আর সম্মান নিয়ে বাঁচার আর কোনো জায়গা থাকবে না। রবীন্দ্রনাথকে একেবারে একটা গৌণ একটা চেহারা দেবে। জাতীয় সঙ্গীত বদল করে ফেলার কথা ওরা অনেকবার বলেছে, রবীন্দ্রনাথের মূর্তি ভাঙ্গার চেষ্টা করেছে অনেক জায়গাতে, তার জায়গায় নাথুরাম গডসের স্ট্যাচু হবে। ... ...
খসড়া প্রস্তাবের বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় এদিনের সভায়। শুরুতেই বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক অনিকেত চট্টোপাধ্যায় একটি বিষয় সম্পর্কে তাঁর সংশয়ের কথা জানান। তিনি বলেন, বিজেপি-কে ভোট দিতে না-বলার ডাক দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, কাকে ভোট দিতে হবে, সে প্রসঙ্গের উল্লেখও জরুরি। ... ...
গণভোট প্রত্যক্ষ গণতন্ত্রের অংশ। অর্থাৎ যেমন বিধানসভা নির্বাচনে বিধায়করা জিতে মুখ্যমন্ত্রী বানান, কিংবা লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সাংসদরা স্থির করেন প্রধানমন্ত্রী, তার থেকে অনেক বেশি করে জনমতের সরাসরি প্রতিফলন গণভোট। সেই প্রত্যক্ষ পথে যিনি নির্বাচিত হন, ধরাকে সরা জ্ঞান করার অধিকার তার অনেক বেশি। সেই মহান নেতাকে যে অন্যান্য নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা কিছুটা দমিয়ে রাখবেন সেই সুযোগ কম। তাই যেসব দেশে সরাসরি জনগণের ভোটে রাষ্ট্রনায়ক নির্ধারিত হয়, সেখানে একনায়কতন্ত্রের অধিকার প্রত্যক্ষ করা যায় আরও বেশি তীব্রতায়। ... ...
আমাদের মস্তিষ্ক বাইনারি চয়েসে বেশি অভ্যস্ত। সাদাকালোতে বেশি অভ্যস্ত। বলা যায় গ্রে-স্কেলে দেখতে শিখতে হয়। সরকার গঠনের জন্যে নির্বাচনে এই দুটি বর্গই তো সম্ভব। যে রাজনীতি সরকার গঠনে বিশ্বাস করে না, অথচ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় তাদের চয়েসের সমস্যার কথাই বলা হচ্ছে এখানে। কিন্তু সেটা স্পষ্ট করে দেওয়া দরকার। সমাজসেবী কেউ সরকার গঠনে বিশ্বাস করলে তার এই দুটি বর্গে সমস্যা থাকবে না। ... ...
মানুষ কেন ভোট দেয়? নব্বই কোটি ভোটারের দেশে এ প্রশ্নের অন্তত এক কোটি আলাদা উত্তর পাওয়া যাবে। বছর পাঁচেক আগে চমকে দিয়েছিলেন একজন রেলের হকার, বলেছিলেন ভোট না দিলে ভোটার কার্ড ভ্যালিড থাকবে না. পরবর্তীতে জানতে পারি এইরকম অদ্ভুত গুজব গ্রামেগঞ্জে প্রচলিত, এমনকি শহরেও। ভোটার কার্ড ভ্যালিড না-থাকাটা খেটে খাওয়া মানুষের কাছে এক দু:স্বপ্নের ব্যাপার। ... ...
আমরা দুজনে ভাগ হয়ে যাই, একজন গাইড সহ দলটিকে নানাবিধ প্রশ্ন করতে থাকে। বিশেষত তারা যখন হেডগেওয়ারের কলকাতা পর্বের ছবিগুলির সামনে। অন্যজন আরএসএস হেডকোয়ার্টারের ‘আইন’ অমান্য করে ছবি তোলে, এবং সঙ্গে সঙ্গে তা হোয়াটসঅ্যাপে আমরা গ্রুপে শেয়ার করে দেয়। বলাবাহুল্য মোবাইল কেড়ে নেওয়ার বা জোর করে ছবিগুলি ডিলিট করার সম্ভাবনা ছিলই। এই ঘৃণ্য ঘটনার ছবি তোলা যাতে আরএসএস-এর প্রতিষ্ঠাতার নিরীহ মুসলমানদের রক্তপাত করে ‘শৌর্য’ প্রকাশ করা যায়, তা আমাদের মানবিক কর্তব্য বলেই আমরা মনে করেছি। ... ...
জানা জরুরি হিন্দুত্বের তত্ত্ব ও তা রূপায়ণের হালহকিকত, যার মধ্যে হিন্দুত্ব সন্ত্রাসের পরিকল্পনা ও প্রকল্প গ্রথিত আছে। পশ্চিমবঙ্গের ঝাড়খণ্ড সীমান্ত সংলগ্ন গ্রামগুলিতে আরএসএস নতুন নতুন শিবিরের উদ্বোধন করে চলেছে। বিভিন্ন লোকসংস্কৃতি সংগঠনের মাধ্যমে লোকসংস্কৃতিতে ভক্তি ও সহজিয়ার চিরায়ত পথে হিন্দুত্বের মিশেল ঘটাতে সচেষ্ট থাকছে। ‘আমরা, এক সচেতন প্রয়াস’ এই সব কিছু জানতে এবং রাজনৈতিক ধর্মের স্বরূপ উন্মোচনে প্রায় দশক-অধিক কাল তথ্যানুসন্ধান চালাচ্ছে। আরএসএস সদর দপ্তরে যাওয়া সেই ধারাবাহিকতার এক অংশ মাত্র। ... ...
কৃষি-বিলের ফলে কৃষকের অবস্থা এক থাকলেও শস্য ব্যবসার উদ্বৃত্ত যদি স্থানীয় ব্যবসায়ীর পরিবর্তে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজির পকেটে ঢোকে তাতে আর্থিক অসাম্য আরো বাড়বে যেটা মোটেই কাম্য নয়। দ্বিতীয়ত সমস্যাটি দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য সংক্রান্ত। স্থানীয় পুঁজির বদলে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজির হাতে টাকা গেলে দেশের রাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে যাবে। স্থানীয় পুঁজি আঞ্চলিক দলের অর্থের জোগানদার, যেখানে জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পুঁজি অর্থ যোগায় জাতীয় দলগুলিকে। কৃষিতে স্থানীয় পুঁজির আধিপত্য শেষ হলে লাভ বিজেপির মত জাতীয় দলের, ক্ষতি আঞ্চলিক দলগুলির। এতে অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় স্বার্থ বিঘ্নিত হতে পারে। ... ...
আমরা কারিগর ব্যবস্থার মানুষেরা, বড় কৃষক বা কুলাক আর কর্পোরেট কৃষকের মধ্যে মৌলিক ভেদ করি। কুলাকেরা গ্রামের মাটিতে থাকে। সে বৃহত্তর গ্রাম সমাজের অংশ, গ্রামের ওঠাপড়া, অন্যান্য সমাজের ভাল থাকা মন্দ থাকায় তার যায় আসে, গ্রামের কারিগরদের, তার কৃষির কাজের অঙ্গাঙ্গী হাতিয়ার। সে সাধারণত একফসলি চাষ করে না – তাই সামগ্রিকভাবে যান্ত্রিক পুঁজিনির্ভর কৃষি তার পথ নয়। তার উৎপন্ন ফসলের বাজার গ্রামে বা তার আশে পাশে। তার মূল লক্ষ্য বিদেশের বাজার নয়, স্থানীয় বাজার, উদ্বৃত্ত সে বিদেশে পাঠায়। কিন্তু কর্পোরেট কৃষকেরা দেশিয় চাষের জোর, তার মৌলিকতা, ফসল বৈচিত্র বিষয়ে চরম উদাসীন। ... ...
সরকার যে শুধুমাত্র চাষির স্বার্থ ভেবে নতুন ব্যবস্থা আনছেন না তা শুধু এই উদ্যোগেই বোঝা যায় যে, এই বিল প্রস্তাব করার ক্ষেত্রে প্রাথমিক ভাবে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যের জায়গাটি রাখা হয় নি এবং চাষির আইনি পরিসর বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। প্রান্তিক চাষির সুবিধা যদি প্রাথমিক লক্ষ্য হয়, তবে প্রাথমিক শর্তও হবে তার আইনি ও অর্থনৈতিক সুরক্ষার দিকটি মজবুত করা। স্বাভাবিকভাবে একজন প্রান্তিক চাষি শিক্ষা, প্রযুক্তির ব্যবহার ও আইনি সুবিধায় অনেকটা পিছিয়ে। বড় কর্পোরেটের সাহেবদের সঙ্গে এঁটে ওঠা তার পক্ষে কঠিন। ... ...
আইন তিনটি আপাতদৃষ্টিতে কৃষি বিপণনে কর্পোরেটদের আরো বেশি সুবিধা করে দেবার বন্দোবস্ত। কৃষি বিপণনে কর্পোরেটরা আছে অনেকদিন ধরেই। পেপসি আলুর চুক্তি চাষ আজ এক দশক কি তারও বেশি দিন ধরে চলছে। কিন্তু জমছে না। মেট্রো ক্যাশ এন্ড ক্যারিও প্রায় আট বছর হতে চলল, মান্ডি বা এপিএমসি লাইসেন্স নিয়ে কিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্যে পাইকারি ব্যবসা করছে। খুচরো ব্যবসায় টাটা বিগ বাস্কেট, রিলায়েন্স ফ্রেশ, আদানি বিগ বাজার চলছে কিছুদিন হল। আগরওয়াল এঞ্জিন তেল, আদানি ফরচুন তেল, টোডি ইমামি তেল -- এসব তো আরো বহুদিনের ব্যাপার। কিন্তু কৃষি বিপণনে থাকলে শুধু ঠিক জমছে না, কৃষি বিপণনে থাকার ছদ্মবেশে চাষ বা কৃষিকে নিয়ন্ত্রণ করা, এক দায়িত্ববিহীন ক্ষমতা -- এ নাহলে আর কর্পোরেট কেন? ... ...
১৯৮৯ সালে পিনোচেতের একনায়কতন্ত্রে দাঁড়ি টানার পর চিলি দেখেছে গণতন্ত্র এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের মেলবন্ধন। কারণ একেবারে সহজ। পিনোচেত রাজত্বে বড়লোক গরিবের যে পাঁচিল, তা তো আর একদিনে ভাঙার কথা না। তাই গণতন্ত্র যেমন বৃষ্টিধারার মত সবার মাথায় পড়ল, তেমনভাবে কিন্তু দেশের সম্পদ চটজলদি জনগণের মধ্যে ভাগ হল না। ... ...
১১ নভেম্বর, মেক্সিকোর বিদেশমন্ত্রী মার্সেলো এব্রার্দ মোরালেসকে রাজনৈতিক আশ্রয়দানের কথা ঘোষণা করেন। কিউবা, মেক্সিকো, নিকারাগুয়া, উরুগুয়ে এবং ভেনেজুয়েলার সরকার বলিভিয়ার ঘটনাকে ‘সামরিক-আমলাতান্ত্রিক ক্যু’ হিসেবে ঘোষণা করে। পরদিন, ১২ নভেম্বর, অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন অতি দক্ষিণপন্থী জেনাইন অ্যানেজ। মোরালেস মন্ত্রিসভার সমস্ত সদস্যকে পদত্যাগে বাধ্য করানো হয়। এমনকী ৩৮ সদস্যের ইলেক্টোরাল কমিশনের সমস্ত সদস্যকেই বরখাস্ত করা হয়। ... ...