অমিলপয়ার ছন্দে ফাল্গুনের এক বসন্তসন্ধ্যা নেমে আসছিলো আমাদের গ্রামে। বেঙ্গল ক্লাবে সারা রাতের অনুষ্ঠান। বুধাদিত্য বাজাবেন সেদিন। তিনি তখন যুবক এবং অদ্ভুত চাঞ্চল্য সৃষ্টিকারী নবীন প্রতিভা। সন্ধে আটটা নাগাদ অনুষ্ঠানের শুরু। সামনের দিকে সাকচি হাইওয়ের তেলেভাজার দোকানের পাশে বাইকটি লাগিয়ে আমি আর সুগত হলের দিকে এগোচ্ছি। অন্ধকার থেকে গেটের হ্যালোজেন আলোয় আসতেই দেখি সামনে পর্ণা আর একটি মেয়ে। প্রথম গেটে কার্ড দেখাচ্ছে। ঠিক পিছনেই আমরা। ময়ূরপঙ্খি রঙের সিল্ক থেকে মৃদু খসখস শব্দ আর অচেনা কোনও সুরভির অস্পষ্ট ইশারা। চুপ করে দাঁড়িয়েই ছিলুম। মুখ ফেরাতে দেখতে পেলো। ... ...
দাঙ্গাশ্রান্ত ভারতে বসন্ত এসে গেছে। চাঁদের নিজের কোন আলো নাই বলিয়া তাহার হসন্ত উড়ে গেছে। চারিদিক কড়া ও কনফিউজড রোদ্দুর। জবানিতে। জবানি ছাড়িয়ে শরীরে। উদ্ভিন্ন যৌবনা মেয়েদের পিঠে। এভাবে শুরু হতেই পারত। কিন্তু প্রভূত ফেসবুকীয় আভালানসের পর কিন্তু শুরুতেই প্রশ্ন এসে যাচ্ছে। এলিট নয়, মজুর নয় এমন কে বা কারা সমাজকে মাঝের আঙুল দেখাতে চেয়েছে। গেল গেল, ধর ধর তো হবেই। হোকনা তারা রেবেল উইদাউট আ কজ। না বুঝে করেছে। কাউন্টার কালচার জানেনা। আ্যন্ডি ওয়রহোল দেখে উজ্জিবীত হয়নি কখনও। ফেমিনিজম মেনে পরিকল্পনা করেনি। হয়ত, ডেঁপো। ঈষৎ পেছনপাকা। নেহাত-ই ফক্কর। কথা হচ্ছে, আপনি যাই বলুন ঘটনা কিন্তু ঘটে গেছে। এখন যতই তর্জনী তুলুন, মাঝের আঙুলটা তারা এই বঙ-সমাজকে সপাট দেখিয়ে দিয়েছে। ... ...
মর্মে সার-জল পড়েনি বহুদিনই... ... ...
আজকাল আর মন খারাপের খবর দেখতে-শুনতে-পড়তে ভালো লাগে না। বয়স বাড়ছে, বড্ড মানসিক অস্থিরতা জন্মায়। হয়তো বা পলায়ন প্রবৃত্তি, ঠিক জানিনা। বড় ভালো লাগে আশার, ভালোবাসার কথা পড়তে, শুনতে, দেখতেও। আসলে আমি স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসি। আশা করি সব্বাই মিলে মিশে হাতে হাত ধরে খুব ভালো থাকবে। তাই আজকাল হতাশার কথা শুনলেই এড়িয়ে চলি। কিছু সুদিনের গল্প শোনাতেও ভালো লাগে তাই। ... ...
প্রতিভা সরকার পাঠ সহজ কথা নয়, ইজি চেয়ারে এলিয়ে চায়ের কাপে অলস বিকালে হালকা-পাতলা গড়নের বইটির ১৩টি গল্প একদমে পড়ে ফেলা আদৌ সম্ভব নয়। গল্প, চরিত্র ও কথনে একেকটি কাহিনী পাঠককে থমকে দেয়, চেনা জগত থেকে টেনে হিঁচড়ে নামায় নির্মম বাস্তবতায়, কোনো কোনো গল্পের পাঞ্চ লাইন, এমনকি পুরো গল্পও পাঠককে গভীর ভাবনায় ফেলে, মুখস্ত নীতি-নৈতিকতায় অস্ত্রপচার, কখনো রাহাজানিও করে। প্রতিটি গল্পের ধরণ, বিষয়বস্তু, প্রেক্ষাপট, ইতিহাস-ভূগোল আলাদা। আর নিছকই এসব শুধু সাধারণ মেয়েদের গল্প নয়, যদিও তারাই প্রধান উপজীব্য, কিন্তু এগুলো মূলত প্রান্ত নারী, সমাজের ঊনমানুষ যারা, তাদের নিষ্পেষণ ও ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প; আবার একই সঙ্গে ভারতে সংখ্যালঘু মুসলিম, দলিত, আদিবাসী বা ছিন্নমূল মানুষের নিত্যদিনের জীবন- ইনক্রেডেবল ইন্ডিয়ার গল্প। ... ...
সমকামিতাকে কিভাবে ডারউইনীয় বিবর্তনের কাঠামোয় রাখা যায়? সমকামিতা কি বিশুদ্ধ প্রেমেরই একটা রূপ যেখানে সন্তানধারণের তাগিদের থেকে বৃহত্তর কোনো উদ্দেশ্য কাজ করে? ... ...
আমি এখনো কেঁপে কেঁপে উঠছি সেইদিনের স্মৃতি মনে করে। আর তোমাদের মুখ দেখে অবাক হচ্ছি! কি চমৎকার মুখোশ পরে থাকো তোমরা সবাই ... ...
প্রথমটি বেশ রমরমিয়ে হানা দিয়েছে আমার দেশে। প্রথম দুদিনেই দুজন করে মৃত। এদেরই ধরা পড়েছিল, ফলে হান্ড্রেড পার্সেন্ট ফেটাল। মারা যাবার আগে আরো কতোজন যে সংক্রামিত হয়েছে কে জানে ! ঘিঞ্জি শহর, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, সচেতনতা ও পরিকাঠামোর অভাবে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে বিপুল সংখ্যায় এই মহামারীর শিকার হব আমরা। দ্বিতীয়টি, মানে দাঙ্গা এই উপমহাদেশেরই অন্যতম বৈশিষ্ট্য , একেবারে হাতে গরম হালে দেখিয়ে দিয়েছে আমার দেশবাসী। মৃতের সংখ্যা ৪৬ জন ছাড়িয়েছে, তবু এখনো দিল্লির নালানর্দমা থেকে এমন গলিত শব উদ্ধার হচ্ছে যে ডিএনএ টেস্ট ছাড়া তাদের পরিচয় বোঝা যাবে না, হিন্দু মুসলমান তো পরের কথা। ... ...
তিনটি বিষয়ঃ ১) ২০০০ সালের পরে যাদের জন্ম, সেই শিশুদের জন্ম- পঞ্জীকরণের সঠিক অবস্থা কি? কজন মা-বাবা যেতে পারেন শিশুর জন্মের পরে সার্টিফিকেট আনতে- যার ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব স্থির করবেন? , ২) গো-মাতা পূজন ও গো-মাতা পালন- নতুন CSR (কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি ) !! কিভাবে কোম্পানীর কাজ হয় গরু পালন?? , ৩) বিচারব্যবস্থায় আস্থা হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু কেন? কিভাবে ধাপে ধাপে ভেঙ্গে পড়ছে গণতন্ত্রের তৃতীয় স্তম্ভ? ... ...
অনেক দিন ধরেই মনের ভেতর কিছু কথাবার্তা বুজগুরি কাটছিল। আজ এক বন্ধুর ফোন করে সোজা পথে হাঁটতে চাওয়ায় কি ভীষণ প্রতি পদে ঠোক্কর খেতে হয় তার রাগী রাগী উগরে দেওয়া অভিমান ভরা কথাগুলো ঠেলে গুতিয়ে আমাকে একটা কথাই বলিয়ে নিল, 'চলো অলক্ষ্মী হয়ে যাই'। ... ...
সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে মতামত। এই সিরিজে দুটো বা তিনটে সাময়িক বিষয়ের আলোচনা। ... ...
এই লেখাটি Age of Big Cats নামে একটি ডকুমেন্টারি সিরিজ এর ধারাবাহিক অনুবাদ। এখানে বিগ ক্যাটদের বা প্যান্থেরাদের, মানে বাঘ, সিংহ, জাগুয়ার, চিতা, স্নো লেপার্ড - এদের বিবর্তনীয় ইতিহাস বা উৎপত্তি, টিকে থাকার রহস্য, স্থলভাগকে ডোমিনেট করার রহস্য, আর আজকে এদের অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য রয়েছে। ইভোল্যুশনারি বায়োলজি, নেচার, ওয়াইল্ড লাইফ, ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন নিয়ে যাদের ইন্টারেস্ট আছে, কিন্তু ডকুমেন্টারিটি এখনও দেখেননি, বা কখনও দেখা হবে না বলে মনে করছেন তারা পড়তে পারেন। ... ...
যে কোনও কিছুর শুরু আর শেষের মধ্যে একটা বর্ণময় আলো-আঁধারি থাকে। থাকে এক অনন্য প্রাপ্তি। অসীম নীলাকাশ। আর সীমাহীন বারিধি। যেখানে জীবন ঢ্যালা মাটির সাথে মণিমাণিক্যও কুড়িয়ে নেয়। রোদের কস্তূরী ভেঙে ভেঙে ঐরাবত মেঘগুলো ধেয়ে আসে বাঁধনের শিকল কেটে। মুক্তি। উল্লাস। চাওয়া পাওয়ার বাষ্প জমলেই ক্লান্তি নামবে বুকের পাঁজর ঘেঁষে। রোমকূপে বাসা বাঁধে তখন মন খারাপের ঢেউ। মহাবিশ্ব জুড়ে জমতে থাকে চাপ চাপ রক্তের মতো আলকাতরা অন্ধকার। হয়তো বা এটাই সেই উলঙ্গ সত্য। নির্মম বাস্তব। ... ...
এক এক সময় প্রবীর ঘোষ-কে আমার ওই রিচার্ড ডকিন্স টাইপের মনে হয়। বড় বেশী র্যাডিকাল কথাবার্তা বলে ফেলে কখনও কখনও – ফলে হয় কি, প্রচলিত অর্থে মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলতে বা লিখতে গিয়ে এরা নিজেরাই অপ্রচলিত অর্থের মৌলবাদী হয়ে ওঠেন। সেই জন্যই বলাই বাহুল্য সব কথার সাথে একমত হওয়া যায় না। কিন্তু আজকাল যা শুরু হয়েছে – মনে হচ্ছে এর থেকে বেড়িয়ে আসার জন্য সেই প্রবীর ঘোষের দাওয়াই-টাই ঠিক। সেই যে কি বলে না ইংরাজীতে – “ডেসপারেট টাইমস্ নীডস ডেসপারেট মেজারস্”, আমাদের দেশের সেই অবস্থা এসে গেছে মনে হয়। ... ...
সারমর্ম আবার কী? বাংলা মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছি নাকি? ... ...
পৃথিবীর ভূতাত্বিক ইতিহাসে অনকবার স্থলভাগ ভেঙে গিয়ে তৈরি হয়েছে নতুন নতুন মহাদেশ ৷ আগে স্থলভাগ ছিল একটাই ; সেটা ভেঙে তৈরি হয়েছিল ‘নতুন পৃথিবী’ বা আমেরিকা আর আন্টারটিকা ৷ আফ্রিকা ভেঙে ভারত চলে এসেছিল এশিয়ায় , আবার আমেরিকা ছিঁড়ে ব্রিটেন চলে এসেছিল ইউরোপে ৷ এইরকমই আরও একটা মহাদেশ ভাঙার কাজ চলছে ডালোলের ফাটলগুলোতে ; বলছে অনেক দূরের ভবিষ্যতের এক অন্য ভুগোলের রূপরেখা ৷ ... ...
খুনির আর ধর্ষকামীর মন, মানসিকতা একই পাড়াতে বাস করে সামান্য দূরত্বে দুটো আলাদা রাস্তায়। আত্মগোপন করে থাকতে থাকতে প্রায়ই এরা ভুলে যায় এদের আত্মপরিচয়। অথচ ভদ্রপাড়ায় বাস করবার জন্য যে পরিচয়েই এরা বাসা ভাড়া নিক না কেন, ফেক আত্মপরিচয় বহন করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে এরা এমন কিছু করে বসে বা এমন কিছু বলে বসে যে একটু চেষ্টা করলেই এদের আইডেন্টিফাই করা যায়। এই বিশেষ মানসিক গঠনই সংখ্যাগুরু। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই, এরা অপোনেন্টকে রেপ করতে চায়, শেষ করে করে দিতে চায়। বিরাট এই সংখ্যাগুরু 'হতাশ' মানুষের দল, একদল সত্যিই ডিপ্রাইভড, আর অন্য এক দল, যাদের সেই অর্থে কোনো বিপক্ষকে চিহ্নিত না করতে পারাতেই হতাশ হয়ে সম্ভবত বিভিন্ন ক্ষেত্রের সংখ্যালঘুকে বেছে নিয়ে এক কল্পিত যুদ্ধের অবতারণা করে, এবং সেই যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করতে চায়। ... ...
কাল একটা নাম প্রকাশ হতেই রে রে করে তেড়ে এসেছিল কিছু চাড্ডি, সে আসবেই জানা কথা। কেউ কেউ তো প্রমাণ না দিয়ে লিখেছি বলে পুলিশ টুলিশের ভয়ও দেখালো। তা সে দেখাক গে। কি আর করা যাবে। ধরে ফরে নিয়ে গেলে কদিন বিনি পয়সায় লপসি খাওয়া যাবে। কিন্তু একটা প্রশ্ন, নাম ভুল, নামের মধ্যে আমরা হিন্দুত্ব খোঁজার চেষ্টা করছি সেসব মেনে নিলাম। কিন্তু প্রশ্নটা হলো ঠিক নির্বাচনের পরপরই দিল্লির এই দাঙ্গা কেনো? আর দাঙ্গাই যদি হলো তাহলে বেছে বেছে ইস্ট দিল্লিতে কেনো? ইস্ট দিল্লির চেয়ে অনেক বেশি মুসলমান দিল্লির অন্যান্য অংশে আছে, সবচেয়ে বড়ো কথা শাহিনবাগেও হতে পারত দাঙ্গা, কিন্তু না হলো ইস্ট দিল্লিতেই। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠে, ভোট পরপরই দাঙ্গা কেন? দাঙ্গার কারণ আদৌ দিল্লি তো, দাঙ্গার মোড়কে আসল লক্ষ্যটা পশ্চিমবঙ্গ নয়ত? একটু খতিয়ে দেখা যাক না হয়। ... ...
এই সিনেমার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য আমার মনে হয় যখন ক্যামেরাটা ঋ-এর কোমরের নিচে নেমে গিয়ে ওপাশে কাশ্মীরে গিয়ে উঠলো গোলাবারুদের শব্দের মধ্যে। দু'হাজার সাত। অথবা নয়। তখনও পিতৃতন্ত্র, রাষ্ট্র, ধর্ষক; এই শব্দগুলো খুব চট করে পাশাপাশি বসে পড়তো না। তখনও চিলি থেকে "দ্য রেপিস্ট ইজ ইউ, ইট'স দ্য কপ্স, দ্য জাজেস, দ্য স্টেট, দ্য প্রেসিডেন্ট" ভেসে আসতে দশ অথবা বারো বছর। এই ছবিটা এইখানে, মানে, কলকাতায় আর কাশ্মীরে তৈরী হয়েছিল। ... ...
কার হাতে আজ খুন হয় কে কে খুন করে কাকে এক জলমাটি এক আঙিনায় বেড়ে ওঠা সহোদর ... ...