করোনাসময়ের প্রেক্ষিতে একটি উপন্যাস - - বিকেলে কখন সে ঘুমিয়ে পড়েছিল।যখন ঘুম ভাঙল তখন সন্ধে নেমে গেছে। একটা বিশ্রী গুমোট।পাশের ঘর থেকে টিভির শব্দ আসছিল।কোনো হিন্দি ছবি চলছে। সে কোনোমতে পা দিয়ে চটিজোড়া টেনে নিয়ে হাউসকোটের ফিতে আঁটল। ... ...
রয়টার্স নাকি ২০১২ সালে ইংল্যান্ডের পর্যটকদের মধ্যে একটা সার্ভে করেছিল, যেখানে তাদের বেছে নিতে বলা হয়েছিল স্ট্রিট ফুডের জন্য পৃথিবীরে বিখ্যাত শহরগুলিকে। তার মধ্যে মালয়েশিয়ার পেনাং আসে তৃতীয় স্থানে – এবং ইন্টারেষ্টিংলি প্রথম দুটি জায়গাও এই এশিয়ার শহরই দখল করেছে – প্রথম স্থানে থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্কক এবং দ্বিতীয় স্থানে সিঙ্গাপুর। ষষ্ঠ স্থানে আছে ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটি। সত্যি কথা বলতে কি এই র্যাঙ্কিং নিয়ে বিশেষ দ্বিমত হবার চান্স নেই – এশিয়ার যে শহরগুলির নাম করা হয়েছে, তাদের স্ট্রীট ফুড সত্যিই অসাধারণ। তবে আমাকে বললে, আমি হয়ত সিঙ্গাপুরের জায়গায় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরকে রাখতাম। আর প্রথম দশটি স্থানে যেখানে ঠাঁই নিতে পেরেছে এশিয়ার চারটি শহর, তাই এই কথা মেনে নিতে কোন বাধা নেই যে, স্ট্রীট ফুডের স্বর্গ হল এই এশিয়ার নানা শহর। ... ...
আজকাল চারপাশে বেকড রসগোল্লা, বেকড সন্দেশ, চকোলেট মিষ্টি ইত্যাদি চোদ্দরকম হাবিজাবি দেখতে দেখতে মাঝে-মাঝে যখন বড় অবসন্ন লাগে তখন মনে পড়ে যায় লীলা মজুমদারের কথা। সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির রান্নাবান্না নিয়ে তাঁর মন্তব্য: "মন্দ জিনিস যে উপভোগ করে, তার চাইতেও শতগুনে অভাগা হল সেই মানুষ যে ভালো জিনিস উপভোগ করতে পারে না।" প্রাক-করোনাকালের অফিস-ফেরতা কোনও বিষণ্ণ বিকেলে হঠাতই তাই মনে পড়ে যায় আমার ঠাকুমার কথা। যাঁকে আমরা আদর করে ডাকতাম 'বাবুমা' বলে। অসাধারণ ছিল তাঁর নিরামিষ রান্নার হাত। আর দুধ, ছানা, ক্ষীর, সুজি, ময়দা, নারকেলের উপকরণে এমন সব খাবার-দাবার বানাতেন যার স্বাদ ছিল অমৃতসম। সে সবের নামও ছিল বাহারি। বাবুমা খোয়া ক্ষীর এবং ছানা দিয়ে এক স্বর্গীয় মিষ্টি বানাতেন যার নাম ছিল, 'ভাজা বরফি'। ... ...
হারিয়ে যাওয়া রান্না - আমাদের বাড়ির বাইরের দিকটাকে আমরা বাইরবাড়ি বলতাম। বাইরবাড়ির বারান্দা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। সেখানে ছিল একটি বড় নকশা করা কাঠের বেঞ্চ। সেই বারান্দা আর বেঞ্চ ছিল আশেপাশের সকল বাড়ির মানুষের অবসরে সময় কাটানোর জায়গা। কারণ এই বারান্দাই ছিল সেই পাড়ার সদর জায়গা। ... ...
রাতের বেলা ছেলেরা খেতে বসলে কথাটা ওঠে ফের। অতু, পুতু আর নান্টু। বড় বৌমার কানে কলতলার কথাটা উঠেছে। সে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলে, "মায়ের যেমন কান্ড! ছেলেপিলে নিয়ে ঘর, ওই মানুষ মারা গুণ্ডাদের কাছে আবার জানতে গেছেন, কই লইয়া যাও।" অতু-পুতু দুই ছেলেই একটু বিরক্ত মুখে বড় বৌ এর দিকে চায়। মায়ের মুখে মুখে ঝাঁঝানো এ বাড়িতে এখনো চালু হয় নি। বুড়িও একটু লজ্জিত হয়। বিড়বিড় করে বলে, "নারানরে তো জন্মাইতে দ্যখছি , তাই ভাবি নাই আগুপিছু।" ... ...
পটলওলা ফিলসফিক্যাল পটলতোলা বুঝতে পারে নি বলে সক্রেটিস ঈষৎ খাপ্পা হয়ে গেছেন – আশাপাশে তখন তাঁর প্রিয় ছাত্র – গোলগাপ্পাস, হোগাসপোগাস, ফাষ্টোকেলাস, হলুদঅমলতাস, গপগপখাস ও একদমঝাক্কাস। ফাষ্টোকেলাস এমনিতে খাই খাই করলেও সে বেশী খেতে পারত না, তার আহিঙ্কেটাই ছিল ষোলআনা। খেত বেশী গপগপখাস – নিঃশব্দে খেত, যা পেত খেত। উত্থাপম খেয়ে সক্রেটিসের মতই তারও ঠিক জমে নি। তাই পটলের পাশের ঝুড়িতে কচি শসা দেখতে পেয়েই তুলে নিয়ে দিয়েছে কামড়। সব্জীওলা কমপ্লেন করলে সাথে সাথে, “স্যার দেখুন, কেমন কামড় দিচ্ছে আমার শসায়!” ... ...
আম্ফান পরবর্তী করোনাকালীন - বাড়িটার গঠন বেশ আকর্ষণীয় । ঠাকুর্দার আমলের বাড়ি ভেঙে চুরে অনিল এবং পলি নিজেদের পছন্দে বাড়ি বানিয়েছেন।একবার ইনসাইড আউটসাইড পত্রিকাটি তাঁদের এই গৃহটি ফিচার করেছিল। পলি খোলামেলা পছন্দ করেন।তাই এই দোতলা গৃহের অন্তর্বর্তী একটি নালুকেতু রয়েছে।নালুকেতু অবশ্য আগে থেকেই ছিল।পলি বাড়িটির অনেক আধুনিকীকরণ করেছেন।বাড়ির মধ্যে খোলামেলা হাওয়া চলাচল করবে।নালুকেতু হল খোলা উঠোন।অনিলের পূর্বসূরি এই গৃহটি এক হিন্দু পরিবারের কাছ থেকে কিনেছিলেন। ... ...
কবি শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় -এর কাব্যগ্রন্থিকা নিয়ে আমার আলোচনা, শেষ পর্যন্ত আমাকে তুলে নিতে হচ্ছে। কেননা কবির মনে হয়েছে, যে আমি তাঁর বইটির প্রতি যথাযথ সুবিচার করিনি ... ...
Women's Equality Day এল আর চলেও গেল| তাতে কি ভাগ্যি বাড়লো জানি না, তবে ফিরে দেখার ইচ্ছে হলো একশো বছরের সালতামামি| সত্যিই কি কিছু বদলেছে? এ লেখার সব চরিত্র সত্যি, ইতিহাস থেকে নেওয়া| শুধু নায়িকার নামটি বদলে দিয়েছি| দুটি ভাগে লেখা এটি| একইসঙ্গে দিলাম| ... ...
ভোর হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। সক্রেটিস ঘরের দরজা খুলে বেরিয়ে এসে জোব্বার ফাঁক দিয়ে হাতদুটো বের করে একটু গা-টা ছাড়িয়ে নিতে লাগলেন। সকালের দিকে এমন জোব্বা গায়ে চাপাতে ভালো লাগে না, কিন্তু একেবারে উদোম গায়ে যাওয়া ঠিক নয়। বউ অনেক করে শিখিয়েছে শুধু জ্ঞান ছড়ালেই হয় না, ইমেজ গড়ে তুলতে হবে একটা। সকালে দিকে গোটা পাঁচেক শিষ্য আসে, তারা অলরেডি চলে এসেছে দেখলেন। সকালে দিকে উঠোন ইত্যাদি ঝাঁট-টাঁট এরাই দেয় – হালকা প্রাতরাশ এরাই নিয়ে আসে। ... ...
গল্প। ... ...
আমাদের বিষন্নতা, সংস্কৃতি এবং রবীন্দ্রনাথ বিষয়ে কিছু বিচ্ছিন্ন ভাবনা চিন্তা। ভাবছেন ফার্মা'র শেষ উপপাদ্যের সাথে এসবের সম্পর্ক কি? তাহলে পড়েই দেখুন না! ... ...
ভবেশ দেখছিলো শীতের সূর্যের আলোয় বাবার পিঠের চামড়ায় একটা ধাতব আঁকশি চকচক করে উঠছে। ভবেশের অবাক লেগেছিলো। পরে একদিন রাত্রিবেলা বাবার পাশে শুয়ে ভবেশ বাবাকে জিজ্ঞেস করে আঁকশিটার কথা। বাবা প্রথমে অস্বীকার করে যায় ব্যাপারটা, যেন কিছুই জানে না। যেন ভবেশ ভুল দেখেছে, আর গোটাটাই তারই ভ্রম। কিন্তু ভবেশ ছাড়েনি। সে বাবার পিঠের আঁকশিটায় হাত রেখে বলে, "এই যে, এইটা। এইটা কী?" --- বাবা থমকে যায়। যেন এইটুকু একরত্তি ছেলে হয়ে ভবেশ আঁকশিটা দেখে ফেলবে এটা বাবা ভাবতে পারেনি। কিন্তু তারপরও উত্তর দেয়নি বাবা। হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলো। আর বলেছিলো, "তুই ঘুমো। কাল সকালে নইলে প্রেয়ার লাইন মিস হয়ে যাবে।" ... ...
“Chocolate can only be made with love.” বলেছিল বেলজিয়ামের চকোলেটিয়ার লুকাস পেটার্স| কোকা বিনের জাদুকর সে| ভেনেজুয়েলা থেকে এসে সেরা কোকা বিন তার হাতের জাদুতে তুলতুলে চকোলেট হয়| বংশপরম্পরায় চকোলেটিয়ার তারা| লুকাসের বাড়ি কম ফ্যাক্টরি দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল গতবছর, ব্রাসেলসে| ভালোবাসার নৌকোয় পাড়ি দিয়ে কেমন করে সে পার হলো করোনা-সাগর, আজ তারই গল্প| ... ...
ঝড়ে লিভিংরুমের দেওয়ালজোড়া কাঁচ খানখান হয়ে পড়ে যাবার পর ও বুঝতে পারলো সিকিউরিটি বলে কোনো চিরকালীন আড়াল নেই। সামনে বাবা হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ।বাবার সারা হাত পায়ের রক্ত চোখে এল প্রথমে। তারপর গেঁথে যাওয়া কাঁচের টুকরোগুলো। বাবার মুখটা কেমন ভয়ে, বিস্ময়ে, ব্যথায় বেঁকে বেঁকে যাচ্ছিল আর ও চিৎকার করছিল। আসলে ও আর বাবা কাঠের বিশাল ফ্রেমটা চেপে ধরেছিল দুজনে দু'দিক থেকে।এই মহার্ঘ্য কাঁচের পার্টিশন বাবা আনিয়াছে সিঙাপুর থেকে। ... ...
২০১৬ সালের ইন্ডিয়া টুডে এর একটি সংবাদ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, অ্যাপলের কো-ফাউন্ডার স্টিভ ওজনিয়াক বলছেন "ভারতীয়রা কঠিন পড়াশোনা করে এবং এমবিএ পায়, মার্সিডিজ কিনতে পারে ,কিন্তু সতাদের মধ্যে সৃজনশীলতার অভাব রয়েছে"। প্রতিবেদনটির প্রথম অনুচ্ছেদটির অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "ভারতীয়রা সৃজনশীল হতে পারে না। ভারতেও অনেক মানুষ এই সন্দেহ করেছে। এখন এটা অ্যাপলের আরেক স্টিভ, স্টিভ ওজনিয়াকেরও মতামত। ওজনিয়াক ওরফে ওজ, যিনি অ্যাপলের প্রথম কম্পিউটার অ্যাপল ১ এর পেছনে ছিলেন এবং স্টিভ জবসের সাথে কোম্পানির সহ-প্রতিষ্ঠাতা, তিনি বলেন যে ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা অধ্যয়নশীলতা-ভিত্তিক ( based around studiousness), কিন্তু তা সৃজনশীলতাকে উৎসাহিত করে না।" ... ...
এই যে ব্যক্তিমানুষটির যাপন বা আদর্শকে এড়িয়ে গিয়ে তাঁর লার্জার-দ্যান-লাইফ ইমেজটির অনুষঙ্গ ব্যবহার করে কিঞ্চিৎ গৌরব অর্জন, ব্যাপারটা শুধু নির্দোষ ব্যক্তিগত সংগ্রহের আত্মপ্রসাদ লাভে সীমাবদ্ধ থাকলে অতোখানি সমস্যা হত না। কিন্তু, ইদানীং ইমেজের সদব্যবহার বা অপব্যবহার করে নিজেদের অ্যাজেন্ডা গুছিয়ে নেওয়ার ধারাটি পুরোদমে চালু হয়ে গিয়েছে - আর পুরো পরিস্থিতির পাঠটাই খুব সহজেই কেমন গুলিয়ে দেওয়া যাচ্ছে। যেমন দেখুন... একদিকে গান্ধীজির হত্যাকারীর নামে মন্দির তৈরী হচ্ছে এবং আরেকদিকে গান্ধীহত্যার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত সংগঠনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে গৌরবান্বিত প্রধানমন্ত্রী গান্ধীজির স্মৃতিসৌধে মালা দিয়ে থাকেন। গান্ধীজির প্রতিস্পর্ধী হিসেবে সর্দার প্যাটেলকে খাড়া করে ফুটেজ খাওয়ার ব্যবস্থা হয় এবং মোদি-শাহ জুটিকে প্রায় বল্লভভাই প্যাটেলের উত্তরসূরী হিসেবে প্রোজেক্ট করা হয়, যদিও প্যাটেল স্বয়ং আরএসএস-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন এবং সাভারকারকে জেলে ঢোকানোর ব্যাপারে বদ্ধপরিকর ছিলেন, যা থেকে তাঁকে নিরস্ত করতে বিস্তর চিঠিচাপাটি লেখেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। ... ...
প্রায়ই শহর থেকে বাসে করে স্কুলে আসার সময় শুনি গতরাতে ওমুক গঞ্জ কি তমুক ছড়ার স্কুলে আগুন লেগেছে। বেশিরভাগ টিনের চাল আর বাঁশ বা কাঠের ওপর প্লাস্টার করা স্কুল বাড়ি। দৃষ্টিশোভণ কিন্তু সহজ দাহ্য। একদিন দেখি বাসে একজন বয়স্ক মাষ্টারমশাই নীরবে চোখের জল ফেলছেন, স্কুল পুড়ে গেছে, পুড়ে গেছে তাঁর সার্ভিসবুক। সামনে রিটায়ারমেন্ট। একরকম একদিন স্কুলে যাওয়ার জন্য বাসে উঠে একটা জানালার ধারে সীট পেয়ে গুছিয়ে বসেছি তখনই শুনলাম আগের রাতে আমাদের স্কুলে আগুন লেগে অফিস ব্লকসহ অনেকখানি পুড়ে গেছে। ... ...
আম্ফান পরবর্তী করোনাকালীন । সমসাময়িক ভারতবর্ষের কিছু গল্প। আস্তে আস্তে অন্ধকার সরে যাচ্ছিল।ভোর হবার একটু আগে দুধের সরের মতো সাদা অন্ধকার যেন লেগে আছে চারপাশে।বাড়িঘর।গাছপালা।যেন কিছু নেই।পাখির ডাক সাধারণত এই সময় থেকে শোনা যায়।বিশেষ করে এই অঞ্চল বেশ সবুজ।কিন্তু আজ কোনো পাখি ডাকছে না এখন। মৃতের শহর।মৃত্যুনৈঃশব্দের ভোর।একটা অতিপ্রাকৃতিক নৈঃশব্দ্য যেন চেপে বসেছে চারদিকে। শুধু শন শন হাওয়ার তুমুল তাণ্ডব এখনো পাক খেয়ে খেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ... ...