স্রোতস্বিনী নিশ্চিত হতে চেয়েছিল। সে চেয়েছিল তার ম্যাজিকটা সারাজীবন তারই থাক। তার জন্য চেষ্টার কসুর সে করেনি কখনও। রোজ বিকেলে সে ঘন্টাখানেকের জন্য ম্যাজিকটাকে একা ছেড়ে দিত শুরুতে। যাতে ম্যাজিকটা নিজের মতো ঘুরেফিরে একটু শ্বাস নিয়ে আসতে পারে। তার বিশ্বাস ছিল তার ম্যাজিক যখন তার কাছেই ফিরে আসবে নিশ্চয়ই। কিন্তু ম্যাজিকটা একদিন ফিরলো না। বাধ্য হয়ে স্রোতস্বিনী তখন তাকে খুঁজতে বেরোলো। পাক্কা দেড়দিন পর দেখা গেলো সেখান থেকে তিনটে পাড়া পেরিয়ে একটা হলুদ বাড়ির দোতলায় একজন বয়স্ক মহিলার কোলে শুয়ে ম্যাজিকটা তখন চাঁদের বুড়ির গল্প শুনছে ... ...
আমি কেন আই-ফোন কিনলাম? এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সোজা, অমৃতার চাপে পড়ে! প্রশ্ন উঠতে পারে, অমৃতা তাহলে আই-ফোন কিনল কেন? পরিপার্শ্বের চাপে পরে? পিয়ার প্রেসার? স্টেটাস সিম্বল? – হতে পারে এর অনেকগুলোই কিছু কিছু সত্যি। শুধু অমৃতা নয়, একটু ভেবে দেখেছেন কি আই-ফোনে কি ভাবে ‘দ্যা মোবাইল’ হয়ে উঠল বা আজকাল আমজনতা কেন যে দামেই আই-ফোন বেরুচ্ছে সেই দামেই কেনার জন্য অগ্রীম অর্ডার দিচ্ছে বা রাত জেগে লাইন লাগাচ্ছে? তাই আসল প্রশ্ন অমৃতা কেন আই-ফোন কিনল সেটা নয় – প্রশ্ন হল, কিভাবে অসংখ্য অমৃতা-দের মনে হতে শুরু করল যে আই-ফোন-ই সেই মোবাইল যা তাদের চাই? আর এই যে আমি গুচ্ছ আঁতেল - এতো কিছু জেনেও তাহলে আমি আই-ফোন কিনলাম সত্যিই কি শুধু অমৃতার চাপে পড়ে? নাকি তার বাইরেও কিছু আছে? এই সব নিয়ে গভীরে ঢোকার আগে একটা গল্প শুনে নেওয়া যাক - কালো মুক্ত-র (ব্ল্যাক পার্ল) গল্প। ১৯৭৩ সাল নাগাদ একবার দক্ষিণ ফ্রান্সের কাছে সমুদ্রে নিজের ইয়াট-এ করে ছুটি কাটাতে গিয়ে সালভাদর এর সাথে আলাপ হয়ে গেল বরুইলে নামের এক স্টাইলিশ ফ্রেঞ্চ ব্যবসায়ীর সাথে। মুক্ত প্রসঙ্গে উঠতে বরুইলে জানালেন তিনি এক অদ্ভূত জিনিসে সন্ধান পেয়েছেন – এমনিতে তিনি এক তাহিতি কন্যার প্রেমে পড়ে তাকে বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি ওদিকে ঘোরার সময় লক্ষ্য করেছেন যে দক্ষিন প্রশান্ত মহাসগারে তাহিতির কাছেকাছি ওদিকেটা একধরণের কালো-মুখো ঝিনুকে ভর্তি – আর সেই সেই ঝিনুক থেকে নাকি বেরিয়ে আসে এক বিষ্ময়কর বস্তু ‘কালো মুক্তো’ ... ...
মানুষের ভীতি এবং যৌন উত্তেজনার মধ্যে কোন সম্পর্ক আদৌ আছে কিনা ডোনাল্ড ডাটন এবং আর্থার আরন নামে দুই গবেষক তা তলিয়ে দেখার চেষ্টা করছিলেন! তাঁরা অনুমান খাড়া করেছিলেন এই মর্ম যে ভীতি বা উদ্বেগ জনিত অবস্থা যৌন উত্তেজনা বাড়াবে কারণ সেই অবস্থায় আমাদের মস্তিষ্ক ভুলভাবে সনাক্ত করবে যৌন উত্তেজনা জাগরণের মূল কারণ (“মিস-অ্যাট্রিবিউশন অফ আর্যাউজাল”)। এই থিওরী অনুযায়ী, যদি আমরা এমন কোন অবস্থার মধ্যে থাকি যা আমাদের মধ্যে খুব বেশী আবেগ জাগিয়ে তোলে, তাহলে আমরা বেশীর ভাগ সময় ভুল ভাবে আবেগের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করি আমাদের সাথে থাকা মানুষটার সাথে – আসলে যেখানে আমাদের চালিত করছে সেই মুহুর্তে কোন পরিস্থিতিতে আছি মূলত সেটাই। এ তো গেল হাইপোথিসিস – কিন্তু এটা প্রমাণ করা যাবে কিভাবে? ভ্যাঙ্কুভার শহরের কাছে মানুষ পারাপারের ক্যাপিলানো ঝুলন্ত ব্রীজ। যাঁরা কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার দিকে গেছেন তাঁরা জানেন যে ওখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য খুব সুন্দর। আর এই ব্রীজটা ঠিক বাণিজ্যিক ব্রীজ নয় বরং খুব সুন্দর প্রাকৃতিক জায়গার মধ্যে বেড়াতে গিয়ে ব্যবহার করার জুলন্ত সেতুর মত – প্রায় ৪৫০ ফুট মত লম্বা – পুরোটাই কাঠ এবং দড়ি দিয়ে তৈরী, এবং খুব সরু। বুঝতেই পারছেন কাঠের পাটাতনের উপর দিয়ে এই ব্রীজ পেরোবার সময় বেশ ক্যাঁচ ক্যাঁচ শব্দ হত – আর পায়ের নীচে দেখা যেত প্রায় ২৫ তলা বাড়ির সমান গভীর পাথুরে খাদ। হাওয়া দিলে বা জোরে চলার চেষ্টা করলে সেই কাঠের সেতু দুলত – এবং কিছু এদিক ওদিক হয়ে গেলে নীচে পাথরের উপর পরে গেলেই ব্যাস গল্প খতম! ১৯৭৪ সালের কোন এক দিন - এক খুব সুন্দরী মহিলা সেই ঝুলন্ত সেতুর উপর যে সমস্ত একাকী যুবক পারাপার করছিল তাদের কাছে (এক সময়ে একজনের কাছে) এগিয়ে, একহাত দিয়ে সেই ঝুলন্ত দুলতে থাকা ব্রীজের ধারের দড়ি ধরে নিজের ব্যালেন্স রাখার চেষ্টা করতে করতে মিষ্টি তাকালো - ... ...
মেয়েদের হেঁসেল ঠ্যালার গল্প কি সারা পৃথিবী জুড়েই এক, এমন কি আজকের দিনেও? পাপুয়া নিউ গিনি-র কাছে একটা দ্বীপ আছে যার নাম ‘ভানাটিনাই’ – তো এই দ্বীপটা অনেক অ্যান্থ্রোপলজিষ্ট-দের আগ্রহের বিষয় হয়েছে ইদানিং কালে কারণ এদের সমাজে মেয়েদের যে সম্মান তা নাকি পৃথিবীতে বিরল – এমনকি চরম আধুনিক পশ্চিমা সমাজেও। এদের সমাজে এমন কোন ধারণার বহিঃপ্রকাশ পাওয়া যায় নি যেখান থেকে পুরুষেরা মেয়েদের থেকে শ্রেষ্ঠ তার ইঙ্গিত পায়। মেয়ে এবং ছেলেরা সমভাবেই সব কর্যকলাপে অংশগ্রহণ করতে পারে – তা সে উৎসবের আয়োজনই হোক, বা নৌকা নিয়ে শিকারে বেরোনোই হোক – বা পশুপালন, চাষআবাদ, যুদ্ধ, জমির উত্তরাধিকার, কোথায় বাড়ি বসতি গড়ে তোলা হবে তার সিদ্ধান্ত, কি বাণিজ্য হবে তা ঠিক করা – সবেতেই। মহিলা এবং পুরুষ যে কেউ নিজেদের দক্ষতায় সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদমর্যাদা লাভ করতে পারত। গার্হস্থ্য হিংসা এবং মারপিট প্রায় নেই বললেই চলে – নিজেদের কাজের ব্যালেন্স নিয়েও খুব বোঝাপড়া সেখানকার ছেলে-মেয়েদের মধ্যে। কে কেমন ভাবে সময় কাটাবে তা ঠিক করার স্বাধীনতা আছে সবার – মানে যাকে বলে এক স্বর্গরাজ্য লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে। যদি জানতে চাই এবার - আপনার কি মনে হয় সেই ভানাটিনাই সমাজে বাড়ির রান্না কে করত! ... ...
দিনা বরাবরই জে’র খুব প্রিয়। অনেক পরে, একদিন এই দিনা জে’র চোখে চোখ রেখে বলবে সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে বিয়ে করতে চায়। দিনাকে জে তাঁর বোনের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন, সে সম্পূর্ণ মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত। কিন্তু তার পছন্দের মানুষটি ধর্মে পার্সি, নাম নেভিল ওয়াদিয়া। জে ক্ষুব্ধ হবেন, আর ইতিহাস ঘরের ইজিচেয়ারে বসে দোল খাবে আর মুচকি হাসবে। দিনার মা কে? সেটা কি সত্যিই ভুলে গেলেন নাকি জে? বার্ধক্যের ভ্রম না নিয়তি এড়িয়ে যাওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টা? ... ...
ঘরকন্না ও নিজের পায়ে দাঁড়ানোর গল্পযে জীবন ফড়িং-এর দোয়েলের, মানুষের সাথে তার যে দেখা হয় না, সেকথা জানাই ছিল। কিন্তু যেসব জীবন মানুষের-মানুষীরই, তাদের আশেপাশেই থেকেও সেইসব জীবনের সাথেও যে মানুষের আসলে দেখা হয় না, তাও মাঝে মাঝে এমনভাবে জানতে পেরে অবাক হতে হয়। এই ক’দিন আগে আনন্দবাজারে প্রকাশিত প্রবন্ধ ‘ঘরের কাজের জন্য মাইনে দেবেন না কেন ?’ পড়ে নানাজনের কাছ থেকে পাওয়া মতামতগুলো পড়তে পড়তে কথাগুলো মনে হল। সেদিনটা দোলের ছুটির পরের দিন, কাগজের প্রিন্ট বেরোয় নি তাই লেখাটা শুধু আবাপ’র ওয়েব স ... ...
এক গলা জলে দাঁড়িয়ে দুটি ছেলেমেয়ে দেখছে, এক কোমর জলে দাঁড়ানো স্কুলশিক্ষক জাতীয় পতাকা ওড়াচ্ছেন - আমার কাছে ওই বাচ্চাদুটি আমার দেশ - আর মাথার ওপরে পতপত করা ওই পতাকাটা রাষ্ট্র। মাটির থেকে দূরে, নিজ গর্বে উড্ডীয়মান, নীচের দেশটিই তাকে তুলে ধরেছে কিন্তু তার সঙ্গে সম্পর্ক বিরহিত। তাকে "ভালবেসে" কিছু করা যায় না কারণ তাকে ভালবাসা যায় না। ... ...
আলাদা বলেই এর একটা নাম রেখেছিলেন বিপ্লব - সানাই। ছোটবেলায় বাঁকুড়া জেলার খাতড়ায় যে পাড়াতে ওঁরা থাকতেন সেখানে একটা রাস্তার কুকুরের ওই নাম ছিল। কুকুরটা ডাকতো একটা অদ্ভুত গলায়, কেউ একজন ওই নাম দিয়েছিল, সেটা চালু হয়ে যায়। নামের কথা ভাবতে গিয়ে ওইটাই মনে এসেছিল তাঁর। এতদিন কোথায় ছিলে? ফিস ফিস একটা বনলতা সেনীয় প্রশ্ন করলেন বিপ্লব। ... ...
ফেব্রুয়ারি ২০, ১৯১৮। সেদিন সকাল থেকেই বুকটা দুরুদুরু কাঁপছে। আজ আমার ১৮ বছরের জন্মদিন। সকাল থেকে গোলাপের তোড়া আর হরেক কিসিমের কেকে ভেসে যাচ্ছে বোম্বের বাড়িটা। বাবা-মা দু’জনেই মহা-ব্যস্ত, একমাত্র মেয়ের জন্মদিন বলে কথা। বাবুর্চি-খানসামায় ঘর ছয়লাপ। আমাদের বোম্বের বাড়িটায় তো সব অতিথিকে বসানোই যাবে না। সামনের লনটায় প্রচুর আয়োজন করা হয়েছে। খাবার-দাবার, আলো-ফুলে ছয়লাপ কাণ্ড। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার আছে। সকাল থেকে আমি খুব খুশি। সেই জে বাবার সাথে কথা বলে যাওয়ার পর থেকে এরম খুশির দিন আমার জীবনে আর আসে নি। আজ আমায় একজন মস্ত বড়ো একটা উপহার দেবেন। নিশ্চিত দেবেন। কিন্তু মজাটা কি জানেন, আমি ছাড়া আর কেউ জানে না আমায় সব থেকে বড়ো গিফ্টটা কে দিচ্ছে? আপনি জানেন কে? একটু ভাবুন তো। না না দুর। বাবা-মা নন, অন্য কেউ। না, হলো না। জে’ও নন। জে কি করে আমায় উপহার দেবেন? তিনি তো আজকে নিমন্ত্রিতই নন। বাবা বোম্বে হাইকোর্ট থেকে একটা রিস্ট্রেইনিং অর্ডার বার করেছেন। রুট্ঠি নাবালিকা, তাই তার বিষয়ে সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব তার পরিবারের। মহামান্য আদালত আদেশ দিয়েছেন রুট্ঠি আর জে দেখা করতে পারবে না। কোনো প্রকাশ্য স্থানে জে’কে যেন রুট্ঠির সাথে দেখা না যায়। হ্যাঁ, যা বলছিলাম। বলুন দেখি সেরা উপহারটা কে দিলো? আগের প্যারাগ্রাফে আপনাকে কিন্তু একটা ক্লু দিয়েছি, ভাবুন দেখি। বুঝতেই পারছেন কোনো রাজা-মহারাজা-নবাবের দেয়া উপহার এটা নয়। এ উপহার যার দেয়া, তার কাছে কোনো রাজা-মহারাজা পাত্তা পায় না। সারা পৃথিবীর মানুষ এর কাছে মাথা নিচু করে কুর্নিশ করে। ভাবুন ভাবুন, না পারলে এই একটু পরেই বলে দেবো’খন। ... ...
বাবা-মা চায় না আমি এইসব গল্প শুনি। কিভাবে তারা সব হারিয়ে এখানে এসে আবার গোড়া থেকে জীবন শুরু করেছে, রিফিউজীর জীবন, সেটা মা-বাবা-ঠাকুমা কেউ বেশী বলতে চায় না। কিন্তু বীণা পিসী আমায় চুপি চুপি তার গল্প বলে, আমি চুপি চুপি শুনি। আমি ভেবে পাই না লোকে কেন বর্ডার দেয়। কেন বর্ডার পার হতে হয়। এমন হয় না, পৃথিবীতে কোথাও কোন বর্ডার থাকবে না? ... ...
সে সময় পুরুলিয়া মানে কিষেণজি। আমাদের যাওয়ার সপ্তাহ খানেক আগে বাঘমুন্ডির দু'জন স্কুল শিক্ষককে অপহরণ ও হত্যা করা হয়। সে ঘটনায় তখন সারা পশ্চিমবঙ্গ উত্তাল। ... ...
গুরুচণ্ডালীতে একজন লিখেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ মৃদু মানুষের ঈশ্বর। উপযুক্ত বিশেষণ। নারায়ণ সান্যালের অবশ্য সেরকম কোনো বিশেষণ নেই। ইনি হুমায়ুনের তুলনায় বেশ খানিকটা কম জনপ্রিয়। সম্ভবতঃ একটি বিশেষ প্রকাশনা গোষ্ঠীর কাছে মাথা নত না করতে পারায় তাঁর লেখার প্রাপ্য প্রচারে অনেকটা খামতি থেকে গেছে। ‘বিশ্বাসঘাতক’ এখনও প্রচুর বিক্রি হয়। কিন্তু ‘আনন্দে’ না থাকতে পারলে ‘টপ টেনে’ টিকে থাকা বড়োই মুশকিল। নারায়ণ সান্যালের অনেকগুলো স্টাইলের মধ্যে একটি অনবদ্য স্টাইল ছিল - যেটা কিছুটা ইতিহাস, কিছুটা কল্পনা। এই স্টাইলটাকে সঠিকভাবে ভাষায় বর্ণনা করা মুশকিল। চেষ্টা করছি। এককথায় বলতে পারেন ইতিহাসের শূন্যস্থান পূরণ। ইতিহাসের বিকৃতি বলবেন না, প্রেম আর যুদ্ধের থেকেও সাহিত্যে গণ্ডি বেঁধে দেয়া আরো বেশি কষ্টকর। এবারের লেখা নারায়ণ সান্যালের সেই স্টাইলে। স্টাইলের নাম? – ওই যে বললাম 'ইতিহাসের শূন্যস্থান পূরণ'। ... ...
উপন্যাসদুটির কথা মাথায় উঠে এল মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে এখানে প্রকাশিত সংকলনের লেখাগুলি পড়ে; লক্ষ্য করে দেখলাম অনুবাদক, শিক্ষক বা কবি হিসেবে মানববাবুর পরিচিতি ঘটালেও, ওনারই যুবা বয়সের লেখা এই দুটি ঊপন্যাস - চন্দ্রাহত ও পুনরুত্থান - সংকলনের লেখাদুটিতে অনুল্লেখিত। অনুমান করি হয়ত এই লেখাদুটি প্রায় অপঠিত বা অল্পপঠিত অথবা মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের যা লেখক পরিচিতি - প্রধানতঃ অনুবাদক হিসেবে হলেও তির্যক ও মিতকায় কবিতাগুলিও আলোচিত হয়েছে কখনও - তার সাথে এই লেখাদুটির হয়ত সখ্যতা খুঁজে পাওয়া যায় না। ... ...
চাকরি করার সময়, অফিসে ফ্ল্যাগ তুলে একটু সিঙ্গাড়া মিষ্টি খেয়েই প্রশাসক হিসেবে দেশভক্তির যথেষ্ট প্রমান দেওয়া যেত। চাকরির একটা নির্দিষ্ট ধাপের পর থেকে স্বাধীনতা দিবসে বিকেলে মাননীয় রাজ্যপাল চা পানের নিমন্ত্রণের একটা কার্ড পাঠাতেন, তবে ঐ অত আমলার ভীড়ে এক আধজন কে দেখা না গেলে বুঝতে পারবেন না বলে অনেক সময়েই…বুঝলেন না ……হে…… হে । বছর ষোল আগে হঠাৎ নেমন্তন্য করলেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষকরা, ওঁদের আচার্য পল্লীর আবাসনে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে। এটা এড়ানো মুশকিল, আমার পুত্র তখনো মিশ ... ...
দ্য সাইলেন্ট ক্রাই -- কিছুটা আকস্মিক ভাবে হাতে এসে পড়া একটি বই পাঠের এক অত্যাশ্চর্য অনুভব। নোবেলজয়ী জাপানী উপন্যাসিকের এই লেখা পাঠের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল যে তা শুধুমাত্র একটি ভাল বই পড়ার অভিজ্ঞতা হয়েই থাকে না। আমার স্থান আর কালের বাস্তবতায় জারিত হয়ে, কী এক অদ্ভুত ম্যাজিকে ১৯৬৭ সালে লেখা এক জাপানী উপন্যাস হয়ে ওঠে আমারই শহরের গল্প, যা দেশ-কালের ব্যবধান কে উড়িয়ে দিতে পারে ফুৎকারে, মিলিয়ে দিতে পারে আমার ইতিহাসের সাথে আমার ভবিষ্যৎকেও। ... ...
পূর্ণেন্দু পত্রী মশাই মার্জনা করবেন - তোকে আমরা কী দিইনি নরেন? আগুন জ্বালিয়ে হোলি খেলবি বলে আমরা তোকে দিয়েছি এক ট্রেন ভর্তি করসেবক। দেদার মুসলমান মারবি বলে তুলে দিয়েছি পুরো গুজরাট। তোর রাজধর্ম পালন করতে ইচ্ছে করে বলে পাঠিয়ে দিয়েছি স্বয়ং আদবানীজীকে, কড়ি নিন্দার সাথে আশীর্বাণী পাঞ্চ করিয়ে খাইয়েছি তোকে। সমস্ত বিরোধী দল, বিরোধী জাতকে বলেছি সরে যাও, নরেন এখন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার খেলা খেলবে। তোকে আমরা কী দিইনি নরেন? মঞ্চে আদবাণী, মুরলী মনোহরদের সাইড করে ... ...
ফাউয়ের দুনিয়া - আমার ছোটবেলার প্রথম স্কুলে আমার সবচেয়ে প্রিয় দিনটি ছিল ১৫-ই আগস্ট। সকালবেলায় স্কুলে যাওয়া হত। কিন্তু তারপর কোন ক্লাস হত না। ছোট ছোট পতাকা হাতে নিয়ে ছেলে-মেয়ে সবাই মিলে-মিশে বেড়িয়ে পড়তাম মিছিল করে। প্রভাতফেরী। ... ...
সে ছিল এক রংদার কফি হাউসের দুনিয়া– এক টেবলে ভাগাভাগি করে পাশাপাশি বসে সত্যজিৎ রায়, চিদানন্দ দাশগুপ্ত, কমলকুমার মজুমদার, মৃণাল সেন, সমর সেন, ও পাশের টেবলে গর্জন করছে সদ্য-ছাপা কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর প্রথাচ্যুত জোয়ান কবিদের দঙ্গল! এই ধরতাইটুকু, এই দীপ্ত আধুনিকতা এবং পঞ্চাশের দশকের কলকাতার প্রেক্ষাপট বুঝে না-থাকলে আজকের কবরখানা কলকাতায় দাঁড়িয়ে সত্যজিতের শতবর্ষ-সেলিব্রেশন অর্থহীন হয়ে যায়। ... ...
ধারাবাহিক - ওয়ার্ক ফ্রম হোম ইজ ওভারওয়ার্ক অ্যাকচুয়ালি। সকাল। দুপুর। রাত। যে কোনো সময় মিটিং বসছে। অ্যাকাউন্টস। মার্কেটিং । ম্যানেজমেন্ট । সকাল। দুপুর । রাত। অন্তহীন মিট টু প্রোমোট কনসিউমারিজম। ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন ত্রিদিব । ... ...
ঝাড়খন্ডের আদিম জনজাতির 'হাজারিবাগ চিত্রশৈলী' কে বিপন্নতা থেকে বাঁচিয়ে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছেন একজন মানুষ--তাঁর কথা ... ...