পোস্ট কলোনিয়াল সময়ে রান্নাঘর মেয়ে পুরুষ সবার জীবন থেকেই উঠে গেল। পড়ে রইল রেস্তোরাঁ, টেক অ্যাওয়ে, রেডি টু ইট, প্যাকেজড ফুড, রান্নার লোক প্রমুখের তৈরী রান্না। অ্যালিয়েনেশন ঘটল টোটালি। রান্নার প্রক্রিয়ায় যে আনন্দ আছে, এটা যে সবাই মিলে ভাগ করে নিয়ে করার মত জিনিস, খেতে যতটা ভাল লাগে, রান্না করতেও ততটাই ভাল লাগা উচিত, এসব কথা পাশ্চাত্যকে আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন সামিন নোসরতের মত অনেকে। আমাদের কবে ভ্রমমুক্তি ঘটবে কে জানে। ... ...
“গারো আদিবাসীর ফসলের বীজ বোনার উৎসব রংচুগালার আয়োজন ক্রমেই কমে আসছে, সংক্ষিপ্ত হচ্ছে। এর কারণ, সাংসারেকরা ধর্মান্তরিত হচ্ছেন, বা খ্রিস্টান হচ্ছেন, এমন নয়. সাংসারেকদের যে প্রবীন প্রজন্ম এই রীতিনীতি পালন করেন, তারা প্রত্যেকেই অনেক বয়স্ক, তাদের বয়স ৭০ বা ৮০ বছর। প্রতি বছরই একজন-দুজন করে তারা মারা যাচ্ছেন। সাংসারেক ধর্মটি এমন নয় যে, কাউকে দীক্ষা দেওয়া যায়। তাকে আসলে জন্মগতভাবেই সাংসারেক হতে হয়। আবার অনেকে নতুন করে খ্রিস্টান ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন।” ... ...
প্রীতম বসু যেভাবে বাংলা তথা ভারতের জ্ঞান বিজ্ঞান জগতের বিশিষ্ট অর্জনগুলিকে একের পর এক তুলে আনেন, তার ধারাবাহিক চর্চার কথা বলেন – তা আমাদের জাতিগত গৌরবকে পুনঃনির্মাণের এক জরুরী চেষ্টা। আমাদের গণিতশাস্ত্র ও জ্যোতির্বিজ্ঞান চর্চার ব্যুৎপত্তিই হোক বা ভেষজ চিকিৎসাশাস্ত্রের বিষ্ময়কর বিকাশই হোক, অনেক পরিশ্রমসাধ্য গবেষণার মধ্যে দিয়ে প্রীতম তার স্বাদু পরিবেশন করেছেন এখানে। অনেক প্রচলিত ধারণাকে উলটে পালটে দিয়েছেন। অনেক নতুন তথ্যের সমাবেশ ঘটিয়ে আমাদের অতীতের প্রতি বিষ্ময়মুগ্ধ ভালোবাসার বোধ জাগিয়ে তুলেছেন, যা চৌথপীর চর্যাপদের অন্যতম অবদান। ... ...
ফেলে আসা মুহুর্তেরা, স্মৃতির সরণী বেয়ে, তুচ্ছ নিতান্ত, আজ আছে, কাল নেই। ... ...
রাহেলার শরীর ভালো যাচ্ছে না কামাল সেটা আগে থেকেই জানতো। গার্মেন্টস বন্ধ হওয়ার পরও বউটাকে গ্রামে নিয়ে যাবার ব্যাপারে তার কোনো সাড়াশব্দ ছিল না। এরকম সময়ে গর্ভবতী মেয়েদের নিরাপদ জায়গায় সরে থাকা উচিত। সেসব নিয়ে কোনো চিন্তা না করে ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা রাহেলাকে ফেলে ছুটির আমেজে বাইরে বাইরে আড্ডা মেরে বেড়াচ্ছিল কামাল। ... ...
'গহনারবাক্স' বিরতির আগে পর্যন্ত দারুণ ছিল। হুট করে সেখানে 'বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ' টেনে আনা এবং কিছু আরোপিত বিষয় খানিকটা জোর করে গুঁজে দেবার কারণে ভালো হতে হতেও শেষ পর্যন্ত সেটা ভালো লাগেনি তেমন। পরেরটা ছিল 'আরশিনগর'। ওফফ! বার বার নিশ্চিত হওয়ার আর্জি জেগেছিল 'আরশিনগর' দেখতে দেখতে, সিনেমাটা কি আসলেই অপর্ণা সেনের! পরেরটা নিয়ে আমার ব্যাপক ব্যাকুল প্রতিক্ষা আর আশা ছিল। 'সোনাটা(Sonata)'। ভাগ্যিস শাবানা আজমি ছিলেন এটাতে। নইলে পর্দার অরুণা চরিত্র, যেটা পরিচালক স্বয়ং করেছিলেন, সে চরিত্রের আরোপিত কাঠিন্য দর্শক হিসেবে এই নাদানকে কেমন একটা দমবন্ধের অনুভূতি দিয়েছে সারাক্ষণ। অথচ অপর্ণা কত পছন্দের একজন! শাবানা আজমির চরিত্রটা 'সোনাটা'র প্রাণভোমরা বিশেষ। যাঁর উপস্হিতি দর্শকের জন্য স্বস্তিময় ছিল। ... ...
কোরোনা নিয়ে নতুন কিছু আমার বলার নেই যেটা এখানে কেউ না কেউ ইতিমধ্যেই বলে ফেলেছে। ডাক্তার ও আমি নোই, সুতরাং কোনো আশ্বাস , সমাধান দিতে পারিনা। কিন্তু যেটা করতে পারি সেটা হচ্ছে মডেল করার চেষ্টা যে কিছুদিন এর মধ্যে আমাদের দেশে কিরকম ভাবে আক্রান্ত এর সংখ্যা বাড়বে (বা কমবে) ... ...
দুধসাগর জলপ্রপাত, তারকরলি সমুদ্রসৈকত -- দু’চারমাস বাদে বাদে একবারটি এদিক সেদিক ঘুরে না এলে তো বদ্দিবুড়ির হাড় মুড়মুড়ি, কান কটকট শুরু হয়ে যায়। জীবন এদিকে তার কালো সাদা ধুসর মাটিপাথর রক্তপুঁজ ফুলফুলুরি উপুড় করে দিয়েই যায় --- বদ্দিবুড়ি একবার ভাবে জীবন বড় রঙীন আরেকবার ভাবে জীবন কেমন পাঁশুটে কুচ্ছিত। হাত পা ছটফটায় পালাতে চায় তো বদ্দিবুড়ি না বেরিয়ে করেটা কি? ... ...
গোটা মানব জাতির অনেক ভাই বোন ছিল। বাকী ভাই বোনেরা এখন প্রয়াত। কেবল বেঁচে আছে হোমো সেপিয়েন্স প্রজাতিটি। অন্যান্য যে সব প্রজাতি ছিল আমাদের মানব জাতির তার মধ্যে আছে - ১) হোমো হ্যাবিলিস ২) হোমো ইরগাস্টার ৩) হোমো ইরেক্টাস ৪) হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস ৫) হোমো অ্যান্টেসেসর ৬) হোমো হাইডেলবার্গনেসিস ৭) হোমো নিয়ান্ডারথালেনিস এই সাতটি (এখনো অবধি জানা) প্রজাতির কেউ আর এখন বেঁচে নেই। বেঁচে আছে কেবল ৮) হোমো স্যাপিয়েন্স। এদের গল্পটা একটু শোনা যাক ... ...
ঘরবন্দী স্মৃতিকথন -- ছোটবেলায় যে বাড়িতে ভাড়া থাকতাম, সেটি ছিল টালির ছাউনির দু'কামরার ঘর। বারান্দা প্লাস্টারের। তার ওপর সিমেন্টের সর নেই। এবড়ো খেবড়ো হেতনেয় বসে চলত হুটোপুটি। খানিক পা ঘষলেই চামড়ায় সরু সরু দাগ পড়ত...সমান্তরাল; যেন স্কেল দিয়ে মাপজোখ করে কেউ বুঝি খোলস থেকে কয়েক পরত রং তুলে নিয়েছে। তিন হাত উঁচু সেই বারান্দার পাশেই ছিল ঘেঁটু ফুলের জঙ্গল। ... ...
আমরা এখনো যারা ধর্মের মালা জপতে জপতে, জানোয়ার কমিউনাল রাজনৈতিক নেতাদের প্ররোচনায় পা দিয়ে ওপাড়ায় গিয়ে ওদের ঘরে আগুন লাগিয় দিচ্ছি, বারবার কথায় কথায় ধর্মের কথা তুলে এনে ওদের গায়ে ভিনধর্মের ট্যাগ চাপিয়ে দিচ্ছি, ধর্মের দোহাই দিয়ে অশিক্ষিতের মত বলে চলেছি যে ওদের জন্যই আরও বেশি করে এই অতিমারি ছড়িয়ে পড়ছে তারা আসলে নিজেদের ধ্বজাধরা উগ্র জাতীয়তাবাদী মতকে প্রশয় দিয়ে ধর্মের মালা জপছি। আর মহম্মদরা রামেদের জন্য নিজেদের জীবনকেও বাজি রেখে দিচ্ছে। আর সুপ্রিম কোর্ট বলছে কারা রাস্তায় হাঁটবে সেটা তাদের দেখার কথা নয়। প্রধানমন্ত্রী কুম্ভিরাশ্রু ঝড়িয়ে বলছে তার ভুল হয়ে গেছে তিনি আগে শ্রমিকদের কথা ভাবেননি। এদিকে এখনও হাজার হাজার শ্রমিক হেঁটে বা ট্রাকের মাচায় ভেড়ার পালের মত ঘরে ফিরছে। ... ...
‘কেন? আমরা ভাষাটা, হেসে ছেড়ে দেবো?যে ভাষা চাপাবে, চাপে শিখে নেবো?আমি কি ময়না?যে ভাষা শেখাবে শিখে শোভা হবো পিঞ্জরের?’ — করুণারঞ্জন ভট্টাচার্যস্বাধীনতা-পূর্ব সরকারি লোকগণনা অনুযায়ী অসমের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাষাভাষী মানুষ ছিলেন বাঙালি। দেশভাগের পরেও অসমে বাঙালি ছিলেন মোট জনসংখ্যার এক তৃতীয়াংশ। স্বাভাবিক কারণেই সেই সময় অসমিয়া প্রধান সরকারি ভাষা ঘোষিত হলেও সমগ্র অসমে সরকারি স্তরে দ্বিতীয় ভাষা হিসেবে চালু ছিল বাংলা। কিন্তু তার পর শুরু হয় ঠান্ডা মাথায় ছক কষার কাজ। অসমের প্রথ ... ...
শ্রদ্ধেয় গুলজার সাহেবের লেখা হিন্দি কবিতার অনুবাদ: মহামারী লেগেছিল, ঘরের রাস্তা ধরে হেঁটেছিল যত মজদুর কারিগর সব শহুরে মেশিনগুলো একে একে থমকে গেছিল ওগুলো থেকেই তো চলত হাত পা ইত্যাদি নইলে জীবনের চারা, বরাবরই পোঁতা ছিল গাঁয়ের মাটিতে ... ...
স্রোংচান গামপোর সময় তিব্বত সাম্রাজ্য সবচেয়ে বড় আকার ধারণ করে। নেপালের রাজকুমারী ভৃকুটি এবং চীনের রাজকুমারী ওয়েনচেঙের সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক তিব্বতের সাথে এই দুই দেশের রাজনৈতিক সম্পর্ককে দৃঢ় করে। আর এই দুই রাণীর হাত ধরে তিব্বতে প্রবেশ করে বৌদ্ধ ধর্ম। ... ...
তোনমি সম্ভোট তিব্বতের লিপি তৈরী করলেন। কিন্তু ঠিক কোন লিপি থেকে জন্ম নিল তিব্বতি বর্ণমালা? ... ...
পরশু প্রায় কিলোমিটার পঁচিশেক পেরিয়ে যখন জলঙ্গী পৌঁছাই, রাস্তায় বার তিনেক আটকে থেকেছি। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কুশপুতুল দাহন আর প্ল্যাকার্ড হাতে মৌন মিছিলের প্রতি পূর্ণ সমর্থন ক্রমশ বিপরীতমুখী হয়েছে রাস্তায় গাড়ি আটকে ইঁট ছোঁড়াছুঁড়ির ঘটনায়। অথচ আমি জানি, সাধারণ মানুষকে হ্যারাস করে 'কাটার বাচ্চা আর মোল্লার দল হিংসা ছড়াচ্ছে' বলে বেড়ানো দু'মুখো কালসাপের ভুবনজোড়া ফাঁদে পা না দেবার মতন সাধারণ বোধবুদ্ধি আপামর 'আন্দোলনকারীর' নেই, সেটা হতে পারে না। তবু সেটাই হয়েছে... হচ্ছে। কারণ 'চতুরের ছলের অভাব হয়না'। ... ...
জানিস পেখম রাস্তা,বিদ্যুৎ, জল,যাতায়াত ব্যবস্থা সবকিছুই আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে কিন্তু আমরা এক গভীর অসুখে ভুগছি রে, কবে যে নোংরা রাজনীতির ভাইরাস আমাদের প্রত্যেকের মনকে সংক্রমণ করেছে। এ রোগও মরশুমে প্রকট হয়। মরশুম বলতে ভোটের সময়। ফুটবল মাঠের মত ভোটের মাঠেও নিজের দলের খেলোয়াড় ছাড়া সবাই প্রতিদ্বন্দ্বী।আর কোন পরিচয় থাকেনা। সারা বছর ভুলাভালা সাদাসিদা ছেলেটাও তখন রয়েল বেঙ্গল টাইগার । হাসিখুশি মিশুকে বৌদিটাও তখন গুপ্তচর। যত পৌরুষ,যত বীরত্ব, যত বুদ্ধিমত্তা আশ্বিনমাসে ধানের শিষের মত ফুলে বেরোয়। ... ...
এই লেখাটা খুব সাজিয়ে গুছিয়ে বিশেষ লেখা হবে না, যখন যেমন মনে হবে সেরকমই লিখে ফেলব হয়ত - যেমন, আজকের আনন্দবাজারে প্রথম পতায় বাঁ দিকে ছোট করে এক প্যারাগ্রাফের একটি খবর দেখছি। বড় লেখা দেখছি না, ভবিষ্যতে সেরকম কোন লেখা ছাপা হলে অবাকই হব, কারণ দেবেশ রায় আনন্দবাজারের লেখক ছিল না। ... ...
তার পক্ষ হইতে এক লোক আইসা খাবার দিয়া যাইত ও সন্ধ্যার দিকে আইসা বাক্সগুলি নিয়া যাইত। সেই লোকও অদ্ভুত, চোখে সব সময় কালা চশমা পইরা থাকত, আর কথা বলার সময় এর গলা থেকে চি চি শব্দ বের হইত। অনেকটা পাখির মত। ... ...