প্রশ্নটা স্রেফ এনআরসি নিয়ে নয়। "অবৈধ অনুপ্রবেশ"এর সন তারিখ ১৯৫১ বা ৭১ বা ৮১ বা ২০১১ যাই হোক না কেন, তাতে কিস্যু এসে যায়না, কারণ প্রশ্নটা সালতামামি নিয়ে নয়। প্রশ্নটা "অবৈধ অনুপ্রবেশ" নামক একটি অদ্ভুত ধারণাকে নিয়ে। বলা ভালো "অবৈধ অনুপ্রবেশ" নামক বস্তুটির বৈধতা নিয়েই। "অনুপ্রবেশ" শব্দটি নতুন। বৃটিশ ভারত এই শব্দটির অস্তিত্ব জানতনা। ভারতে তখন শাসক ছিল, শাসিত ছিল, শোষক ছিল, শোষিত ছিল, ঔপনিবেশিক ছিল, সায়েবসুবো ছিল, জমিদার ছিল, জাতপাত ছিল, চোর-চোট্টা-চিটিংবাজ ছিল, ধান্দাবাজ্ব রাজনীতিবিদ ছিল, বহু রকম উঁ ... ...
ফেলুদা ধপ্ করে একটা শব্দে বইটা বন্ধ করে, নীচু টেবিলটার উপরে রাখা ডান পায়ের উপরে বাঁ পাটা লম্বা করে তুলে, তুড়ি মেরে সিগারেটের ছাইটা ছাইদানিতে ফেলে বললো, "শার্লক হোমস।" ফেলুদা এতক্ষণে ধরে দুটো বই প্রায় একসাথে পড়েছিল। দুমাস আগে বিহারের শিমূলতলায় একটা খুনের ব্যাপারে অপরাধীকে জুতোর সাইজের গোলমালের সাহায্যে ধরে দিয়ে, বেশ মোটা রোজগার করে বসে আছে। ... ...
কর্ণ শীল লিখিত ছায়াসপ্তক বইটির আলোচনা। ... ...
আজকাল দেখছি পাখিদের লাফালাফি বেড়ে গেছে চতুর্গুণ। সক্কাল সক্কাল, পাশবালিশটা চেপে ধরে তৃতীয় দফার ঘুম দেবার চেষ্টা করছি প্রাণপন, দেখি জানলায় ঠক্ ঠক্ করে টোকা দিচ্ছে কে যেন। এই লক করে দেওয়া জীবনে কার এত অনুপ্রবেশের উৎসাহ? বাধ্য হয়ে বাঁ চোখটা কোনরকমে খুলে দেখি এক ব্যাটা ছাতার পাখি দিব্যি গা ফুলিয়ে মোটাসোটা হয়ে ঠোঁট দিয়ে ঠুকে চলেছে কাঁচের জানলায়। ... ...
অধ্যাপক ধীরেশ ভট্টাচার্য, বাবু কমলকুমার মজুমদার, খালাসিটোলার 'আইকন' কালী সাহা মশাই আর শিল্পী সুনীলমাধব সেন --- সবাইকে নিয়ে চলেছেন জন্মখ্যাপা শক্তি, যেন আতাচোরা পাখিটি। ... ...
মন্দির টন্দির নিয়ে আমি বিশেষ কিছু জানিনা। সবরীমালা না শবরীমালা, স না শ, তাও জানতামনা, এখনও জানিনা। বাঙালি গড়পড়তা বাঙালি মধ্যবিত্তও আমার চেয়ে বেশি কিছু জানে বলে মনে হয়না। দক্ষিণের একটি মন্দিরে মানুষের মাথায় নারকেল ফাটানো হয় রিচুয়াল হিসেবে, এরকম একটা ভিডিও দেখে হেসেছিলাম মনে আছে। তারপর এই শবরীমালা। সেই মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের ঢোকা বারন, এরকম পড়লাম চারদিকে। তা নিয়ে দিগ্বিদিকে প্রবল হইচই, কোর্টের রায়, মানবীপ্রাচীর। অবশেষে দুজন অ্যাটিভিস্ট ঢুকে পড়লেন মন্দিরে। তারপর আরেকদফা হইচই। চতুর্দিক ... ...
আসাম তার চূড়ান্ত নাগরিক পঞ্জি প্রকাশ করেছে। জায়গা হয়নি ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের। বাদ পড়ারা আবেদন করতে পারবে। অনেকের কাছেই এই তালিকা বিস্ময় হিসেবে এসেছে। সংখ্যা এত কমে যাবে ভাবেনি খোদ বিজেপি সরকার। তার ওপরে এই উনিশ লাখের মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা বেশি। এতে আরও ক্ষিপ্ত বিজেপির নেতারা। যেই আওয়াজ তুলে এত ঘটা করে এই নাগরিক তালিকা করা হল তা পুরোটাই ভেস্তে যেতে বসেছে। রাজ্যের গণপূর্ত, স্বাস্থ্য ও অর্থ বিষয়ক মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা রীতিমত হতাশা ব্যক্ত করেছেন এই তালিকা নিয়ে। বাংলাদেশী মুসলিম তাড়ানোর যে পরি ... ...
কৌশিক মজুমদার লিখিত তোপসের নোটবুক বইটির আলোচনা। ... ...
কলকাতা শহর এথেন্স বিশেষ। বুদ্ধিজীবীর সন্ধান মিলত দেশপ্রিয় পার্ক তথা রাসবেহারীর ফুটপাতে নিয়ত। দু দশক আগেও। বুলেভার্ডে সবুজ গাছে লাল থোকা ফুল, শরত এসে গেল! বস্তুত, উনিশ শতক যদি উত্তরের মননে ধরা দেয়, বিশ শতক দক্ষিণের। তো, এ হেন কলকাতায় পথচলতে প্রায় ধাক্কা-মেরে-চলে-যাওয়া অটোর মতোই চলে গেছেন বুদ্ধিজীবীরা। কানা ঘেঁষে। বার্লিনে মেঘ করলে, জল ঝড়েছে ফার্ন রোডে..দিনরাত্তির.. দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর নতুন কলামে এবারে ধরে রাখবেন, সেসব স্মৃতি, সত্তা ও ভবিষ্যৎ। যা দু দশক পেরিয়েও, পুরোনো বই দোকান ও প্রবীণ নাগরিকের স্মৃতি হাতড়ে তিনি খুঁজে পান; হরপ্পা সভ্যতা। বলবেন, যে সব বিচিত্র মানুষদের দেখেছেন তিনি, তাঁদের নিয়ে। যারা যতটা পাড়ার ততটাই দুনিয়ার..এই মাত্র ফুটপাতের বই তুলে নিয়ে ঘাটছিলেন, একটু পরেই তাঁকে দেখা যাবে কন্সতানতিনোপলের সদর রাস্তায়..এ বাঙালির ভবানীপুর ছিল। রাজারহাট ছিল না। স্বপ্ন ছিল। টাকা ছিল না। সত্তরকে নব্বইয়ের প্রজন্মর এই আকুল খোঁড়ার পিছনে কি রয়েছে? ফ্যাসিবাদের হাওয়ার হিউমিলেয়াশান? নাকি পোস্ট-ট্রুথ ডিস্টোপিয়া? চল্লিশ বছরের অন্ধকারের ব্যবধানে ক্রাইসিস কি মেলাচ্ছে আবার দুটো প্রজন্মকে? ... ...
".... সামান্য তলিয়ে ভাবলেই বোঝা যাবে যে দেশের মানুষরা যে কর্মসূচিগুলি পালন করলেন; পরোক্ষে তা হিন্দুধর্মাবলম্বীদের পালনীয় ধর্মীয় উৎসবের কিঞ্চিৎ রূপান্তর মাত্র। সর্বোপরি রামনবমীর ঠিক পরেই রাত "নটায়", "নয় মিনিট" আলো নিভিয়ে বাতি জ্বালানোর প্রসঙ্গ এলে দুর্জনে তো একটু নিন্দেমন্দ করবেই।...." ... ...
এক বন্ধুর কাছে শুনলাম আই.আই. টির এন্ট্রান্স টেস্ট নাকি পৃথিবীর কঠিনতম পরীক্ষাগুলোর মধ্যে অন্যতম। সেই প্রসঙ্গে খানিক আলোচনা হলো বন্ধুদের সঙ্গে। কিছু তথ্য, ফিটজি ইত্যাদি সংস্থা, এম সি কিউ, বইপত্তর ইত্যাকার বিষয়ে খানিক খোঁজ নেওয়ার পর একটি আশ্চর্য তথ্য পেলাম। যেখান থেকে এই লেখা লিখতে প্ররোচিত হলাম।আই আই টির এন্ট্রান্স যারা ক্র্যাক করেন তাঁরা নিঃসন্দেহে প্রতিভাবান, তাঁদের অনেকেই বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হন, কেউ হন নামী সংস্থার সি ই ও, কেউ বা গবেষণায় সফল, বিশেষত পলিসি মেকিং এও তাঁদের ভূমিকা থাকবেই। ... ...
আর, দিল্লীর বাসস্ট্যান্ডে জড়ো হওয়া শুকনো মুখ, বান্দ্রা রেলস্টেশনে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে যাওয়া মানুষের চটির স্তূপ, মাঠ-ঘাট পেরিয়ে কাঁধে শিশু নিয়ে হেঁটে চলা মানুষের সারি, গ্রামে ফিরেছেন এই অপরাধে সারি দিয়ে বসে যাঁদের গায়ে ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে ডিসইনফেক্ট্যান্ট…. কোল্যাটারাল ড্যামেজ… আজ না হোক কাল, করোনার বিরুদ্ধে লড়াইটায় আমরা জিতব নিশ্চিত - কিন্তু, এঁরা?? ... ...
এর কিছুদিনের মধ্যেই দিগম্বরী দেবীর মৃত্যু ঘটে। দিগম্বরী বেঁচে থাকতেই যে সম্পর্কে ভাটার টান লেগেছিল, তাঁর মৃত্যুতে সে সম্পর্কের পরিসমাপ্তি ঘটে নিশ্চিতভাবেই। তারপরও কি দ্বারকানাথ তাঁর অভ্যাস বদলেছিলেন একটুও? ইতিহাস জানান দেয় – না। সম্পর্কের দীর্ঘশ্বাস এভাবেই পাক খেয়েছিল সেবার, ঠাকুরবাড়ির দেওয়ালে-দেওয়ালে। ... ...
তখন প্লাষ্টিকের ব্যাগ আসে নি। আমাদের সকলের বাড়িতে চটের থলে নামের একটা জিনিস থাকত। আজকের দুনিয়ায় চারিদিকে প্লাষ্টিক বর্জ্য বিষয়ে অনেক চর্চা হচ্ছে। এতো আলাপ-আলোচনায় আমাদের সচেতনতা কি বাড়েনি? অবশ্যই আমরা এই নিয়ে ভাবছি, বিকল্প খুঁজছি। আমরা কাপড়ের আর কাগজের ব্যাগ ব্যবহার করছি আজকাল, পরিবেশ সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছি। আসুন, একটু তলিয়ে দেখা যাক। ... ...
"যদি বেঁচে যাও এবারের মতো যদি কেটে যায় মৃত্যু ভয়, জেনো বিজ্ঞান একা লড়েছিল মন্দির মসজিদ নয়" কথা গুলো নিয়ে অনেকের আপত্তি আছে। অনেকে একে ব্লাসফেমি মনে করছে, উদ্ধত্য মনে করছে এই উক্তিতকে। আসলেই কী তেমন মনে করার সুযোগ আছে? আমার মনে হয় না। তবে কথাটা আমার কাছে সম্পূর্ণ মনে হয়নি। বিজ্ঞান একা লড়েছে ঠিক আছে, তবে মসজিদ মন্দির একাই যে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে তা না, লড়াই শব্দটার সাথে যা যা জড়িত সেই সবও তাকিয়ে দেখছে শুধু। কোটি কোটি ডলারের মারণাস্ত্র, নিমিষে দুনিয়া ধ্বংস করে দেওয়ার মত পারমানবিক বোমা, যুদ্ধ বিমান, যুদ্ধ জাহাজ, কামান, গোলা- বারুদ এই সমস্ত কিছুও অকেজো হয়ে পরে রইছে। ... ...
পরশু, প্রায় কেউ জানতেন না, অবরোধ কেন, কী নিয়ে, কারা করছে। পরশু রাত থেকে প্রায় গোটা দেশ জানে এগুলো। কেন জানে, বলুন তো? কারণ সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়েছে। তারা টের পেয়েছে যে এ বড় সুখের সময় নয়। আচ্ছে দিন আসলে গল্প। ... ...
তোত্তো-চানের নামের অর্থ ছোট্ট খুকু। তোত্তো-চানের অত্যাচারে তাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে। যদিও সেই সম্পর্কে তোত্তো-চানের বিন্দু মাত্র ধারনা নেই। মায়ের সঙ্গে নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার জন্য সে চলছে। নানা বিষয়ে নানা প্রশ্ন, নানান আগ্রহ তার। স্টেশনের টিকেট চেকার থেকে শুরু করে আশেপাশের সব দিকেই তার সমান আগ্রহ। অন্যদিকে মায়ের দুশ্চিন্তা হচ্ছে নতুন স্কুলে তোত্তো-চান টিকতে পারবে কিনা তা নিয়ে। স্কুল দেখেই তোত্তো-চানের সমস্ত মনোযোগ স্কুলের দিকে চলে গেল। ও বিশ্বাসই করতে পারছিল না এমনও কোন স্কুল হতে পারে। প্ ... ...
চিংড়ির হলুদ গালা ঝোলকোলাপোতা গ্রামটার পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কপোতাক্ষ। এছাড়া চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে খাল বিল পুকুর। সবুজ জংলা ঝোপের পাশে সন্ধ্যামণি ফুল। হেলেঞ্চার লতা। উঠোনের কোন ঘেঁষে কাঠ চাঁপা। পঞ্চমুখী জবা। সদরের মুখটায় শিউলি। সাদা আঁচলের মতো পড়ে থাকে ফুলগুলো। উঠোনের মাঝখানে বড় তুলসী মঞ্চ। অষ্টপ্রহরের সময় ঘুরে ঘুরে কীর্তন হয় সেখানে। বাড়ির পেছনে আছে নারকেল গাছ বেয়ে ওঠা চুইঝাল। রান্নায় এতোটুকু ঝালের দরকার হলে মা টুক করে গিয়ে ছোট্ট ডাঁটি পেড়ে নিয়ে আসে। একটু ছেঁচে ফেলে দেয় ঝোলের মধ্যে। না ... ...
সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় লিজিয়ঁ দ্য-নর পাবার পরে কিছু বিদগ্ধ জনের আলোচনাতে প্রসঙ্গ হিসেবে এনার নামটিও উঠে এসেছে। কারণ ইনি ছিলেন আমাদের সেরিব্রাল ঐতিহ্যের অন্যতম প্রতিনিধি, যাঁর লেখা রবীন্দ্রনাথের পর সবথেকে বেশি ফরাসী ভাষায় অনুবাদ হয়েছে, এবং ইংরেজি ভাষাতে অনুবাদ না হবার দরুন অ্যাংলোসেন্ট্রিক বাঙালী তাঁকে মনে রাখেনি। অথচ তিনিও সৌমিত্র-র মতই ফরাসি সরকারের সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। লোকনাথ ভট্টাচার্য্য (1927-2001) ছিলেন সেই বিরল হয়ে আসা সেরিব্রাল ধারাটির প্রতীক, যিনি বাংলা ভাষায় লিট ... ...