চার বন্ধু জীবনের সামনে টুইস্টের লোভে বিপজ্জনক কাজে নিজেরা জড়িয়ে যাচ্ছে।সেটা নিয়েই এই উপন্যাস। ... ...
আম তেলবিয়ের পরে সবুজ রঙের একটা ট্রেনে করে ইন্দুবালা যখন শিয়ালদহ স্টেশনে নেমেছিলেন তখন তাঁর কাছে ইন্ডিয়া দেশটা নতুন। খুলনার কলাপোতা গ্রামের বাড়ির উঠোনে নিভু নিভু আঁচের সামনে ঠাম্মা, বাবার কাছে শোনা গল্পের সাথে তার ঢের অমিল। এতো বড় স্টেশন আগে কোনদিন দেখেননি ইন্দুবালা। দেখবেনটা কী করে? এই যে প্রথম ট্রেনে উঠলেন তিনি। নামলেনও। মাথার ওপর রাজপ্রাসাদের মতো ছাদ দেখলেন। এতোবড় বাড়ি দেখলেন। এতো লোক। সবাই যেন মাথা নীচু করে সামনের দিকে ছুটছে। কেউ কারো সাথে দু-দন্ড দাঁড়িয়ে একটুও কথা বলছে না। কুশল বিন ... ...
আর্য শব্দের উৎস ও এই নামে পরিচিত জনগোষ্ঠীর উৎস- দুটো নিয়েই আমাদের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। ইতিহাসের একটা প্রশ্নের উত্তর কখনই একটা সূত্র থেকে পাওয়া যায় না, বিশেষ করে প্রশ্নটা যখন প্রাগৈতিহাসিক যুগকে ঘিরে। তাই আমরা পাঁচরকম আঙ্গিকে উত্তরটা খোঁজার ও বোঝার চেষ্টা করব- সাহিত্য, ভাষা, জেনেটিক্স, আইকোনোগ্রাফি ও শিল্প। এগুলি সবই ইতিহাস গঠনের রসদ। ... ...
“চিঠি” - সাদা পাতায় লেখা এক মনকেমনের কাহিনী, “চিঠি” - সেই দূরবর্তী মানুষটিকে জানান দেওয়া, যে “ভালো আছি” ও জানতে চাওয়াও তাঁর ভালো থাকার কথা। যারা নিয়মিত চিঠি লিখতে ও পড়তে ভালোবাসেন তাদের সাথে এই “পত্র দিও” ওতোপ্রোত ভাবে জড়িয়ে। একখানি চিঠি যে কি পরিমান ভালো থাকা দিতে পারে তা যারা পেয়েছেন একমাত্র তাঁরাই বুঝবেন। এমন অনেক সময় হয়, মানুষটি যখন কাছাকাছি, তখন সব কথা বলা হয়ে ওঠে না। কিন্তু দূরত্ত্ব বাড়ার সাথে সাথে সেই কথাই একটি চিঠির আকার নেয়...আর কি থাকে না সেই চিঠিতে!...প্রাত্যহিক জীবনের গল্প থেকে শুরু করে সমস্তটা উঠে আসে তাতে, আর যিনি পান সেই সময় তাঁর উপলব্ধিটাও অসামান্য। চিঠির মধ্যে ঐ মানুষটার প্রতিচ্ছ্ববি অজান্তে তৈরী হয়ে যায় আমাদের মনের ভেতরে...চিঠিকে তখন আরো বেশি আপণ মনে হয়। তাই হয়তো প্রিয় মানুষটির একটি চিঠির জন্য আমাদের এত অপেক্ষা, আর তেমনই তা না পেলে মনখারাপ-মনখারাপ। ... ...
ইদানিং মাঝেমাঝেই দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত্যুশয্যায় শায়িত এক দাড়িওয়ালা বৃদ্ধ মানুষের ছবির নিচে লিখে দেওয়া হয় ‘উইলিয়াম রোদেনস্টাইন অঙ্কিত মৃত্যুশয্যায় রবীন্দ্রনাথের বিরল ছবি’। স্বভাবতই এ ছবি দেখে বাঙ্গালী আবেগের স্রোতে ভেসে পড়েন, হাজারে হাজারে ‘লাইক’ দেন আর শয়ে শয়ে শেয়ার করে একটি অদ্যন্ত ভুল তথ্যকে চক্রবৃদ্ধি হারে মহামারীর মত ছড়িয়ে দেন দেশে দেশে, দিশে দিশে। অথচ তাঁরা একবারও ভেবে দেখেন না কলকাতায় রবীন্দ্রনাথ যখন মৃত্যুশয্যায়, তখন চিত্রকর রোদেনস্টাইন রয়েছেন ইংল্যান্ডে, কিভাবে তিনি এমন একটি ছবি আঁকতে পারেন? ... ...
ডাক্তার সৌম্যকান্তি পন্ডা লিখিত ডা. নন্দ ঘোষের চেম্বার নামক বইটির আলোচনা। ... ...
আজ সক্কাল সক্কাল উঠতে হয়েছে। টেলিফোন অফিস থেকে লোক আসবে। ভোরটা তরতাজা। কারণ উঠেই নিয়মমত হাফ গ্লাস সবুজ রসের সামনাসামনি হতে হল না আজ। না, রসতত্ত্বের নবীন কোন রস নয়, নির্ভেজাল করলার থকথকে নির্যাস, যা খেলে অন্তরাত্মাও খিঁচড়ে যায় সারাদিনের জন্য। সেটাই পান করি রোজ প্রাতঃকালে। ফলত, ক্লাসে যাই তেতো মুখে, লেকচার দিই তেতো স্বরে, নম্বর বসাই তিতকুটে। প্রেমের কথা যদি বলার হত, তবে বোধহয় তাও বলতাম তিক্ত সুরে। তবে রক্ষে এই যে, আমার এই আধবুড়ো বয়সে অত ঝুঁকি নিতে কেউ সাহস পায় না। ... ...
এক লোক হাটে যাচ্ছিল। রাস্তায় ছেলের শ্বশুর বাড়ি পড়ায় সেখানে একটু ঢুকছে। খালি মুখে আলাপ চলল কিছুক্ষণ। পরে বেয়াই যখন উঠতে যাচ্ছে বেয়াইন তখন বলছে যদি পান থাকতো, নাহয় সুপাড়িটা অন্য কারো থেইকা আইনা দিতাম। কিন্তু চুন-ই তো নাই! সব দোষ হচ্ছে চুনের! আসলে কিন্তু কিছুই নাই। করোনা মোকাবেলা বাংলাদেশের অবস্থা এখন অনেকটাই এমন। কোন পরিকল্পনা খুঁজে পাওয়া যায়নি, নিরাপত্তা সরঞ্জামের তীব্র অভাব, চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব। কিন্তু দোষ সব গিয়ে পরছে চুনের ওপরে মানে ডাক্তারদের ঘাড়ে! আসলে আমাদের পান সুপারি ও চুন কোনটাই নাই! ... ...
“…আমি পরিমান বা সংখ্যাকে প্রাধান্য দেই না। যেমন, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের সংখ্যা মাত্র কয়েকটা, কিন্তু সুনীল গাঙ্গুলীর প্রায় চারশ’। অথচ বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমবাবুকে কেউ অতিক্রম করতে পেরেছেন? লেখকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মেধাবী রচনা লেখা। লেখকের যদি লেখার প্রতি কমিটমেন্ট না থাকে”… বিশিষ্ট লেখক, চিন্তক আহমদ ছফা, নয়ের দশকের আলাপচারিতায় ... ...
নবনীতা দেবসেনের মতো করে বলতে আর পারলুম কই – “হালের কাছে মাঝি আছে – এটা অস্থি-মজ্জায় জানি” (গৌরচন্দ্রিকা, ট্রাকবাহনে ম্যাকমাহনে)? তাই প্রতিমুহূর্তের মৃত্যু জানান দেয় এখনো বেঁচে আছ। এমনটাই হয় হয়ত আমাদের সাধারণের ঘরকন্নার সাথে। যা নেই, তাই দিয়েই বুঝি কী ছিল। পায়েতে বেড়ি যতদিন না পড়ল, ততদিন ভুলেও ভাবিনি যে ছাড়া আছি। আজ যখন শারীরিক দূরত্বের সাথে সাথে মনে বাসা করেছে সন্দেহ, সংকোচ আর ভয়ের অগুণতি ঠাণ্ডা রক্তের পোকা, তখন বুঝতে পারলাম ভালোবাসার জন্য পড়েছিল এই অপার পৃথিবী। তবু তেমন করে ভালোবাসতে পারি নি। ... ...
শিক্ষিত মধ্যবিত্তের তাহলে কী হবে? অ্যাবানডানড? যারা এই দুঃসময়েও পার্টিকে ভোট দিল, পাশে দাঁড়াল, তারা অপাংক্তেয়? তা অবশ্যই নয়। কমিউনিস্ট পার্টির প্রাথমিক অভিমুখ অবশ্যই গরীব, মেহনতি মানুষ - কৃষক, শ্রমশিল্পী - কিন্তু মধ্যবিত্ত মানুষ তার বাইরে পড়ে না। বহু মধ্যবিত্ত পরিবার আসলে নামেই মধ্যবিত্ত, শ্রেণীগতভাবে তাদের অবস্থান নিম্নবিত্তের থেকে খুব একটা ভাল নয় - এটা ভুললে চলবে না। কিন্তু "শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ" না হলে এই মধ্যবিত্তদের ভবিষ্যৎ কোথায়? এই প্রশ্নটাও, আবারও, প্রশ্নটা যত কঠিন, উত্তরটা তত নয়। বৃহৎ শিল্প মধ্যবিত্তের কর্মসংস্থান বাড়ায় বলে যে মিথ প্রচলিত আছে, সেই মিথ বার্স্টিং করার সদিচ্ছের মধ্যেই লুকিয়ে আছে এই প্রশ্নের সহজ উত্তর। ... ...
দীপেন ভট্টাচার্য’র লেখা নিয়ে সম্প্রতি গুরু’তে আলোচনা, চালাচালি পড়লাম। তার “মাউন্ট শাস্তা” গল্পটি আমি রিভিউ করেছিলাম, ২০১৬ নাগাদ। বিজ্ঞানী/লেখক দীপেন ভট্টাচার্য কে পড়া হয়েছে অবিশ্বাস্য কম। এটা দুর্ভাগ্য। আর সৌভাগ্য হচ্ছে, এতে দীপেন ভট্টাচার্য দ্বিগুণ স্থিতিশীলতায় নতুন নতুন ফর্মের সন্ধান করার অবকাশ পেয়েছেন, কোন বিপুল, চটুল জনপ্রিয়তার দায়ে একমুখী সফল সন্ধান নিয়ে ব্যস্ত থাকেননি। ... ...
যে কোনো শিক্ষকের ক্ষেত্রেই একথাগুলো প্রযোজ্য, বিশেষ করে প্রযোজ্য শ্রমজীবীর শিক্ষাব্রতীদের (আমার নিজের তো বটেই) সম্পর্কে।এই প্রশ্নগুলো/কথাগুলো মাথায় এল বলে লিখে ফেললাম। আপনাদের কী মনে হয় জানতে পারলে একটা আলোচনা করা যেতে পারে।১) আপনি কি বাচ্চাদের অপছন্দ করেন? যে বয়সের বাচ্চাদের আপনি পড়ান তাদের মধ্যে থাকার সময় আপনি কি আনন্দ পান? না কি বিরক্ত বোধ করেন?২) যে বিষয়টি আপনি পড়ান তা কি আপনার ভালো লাগে, না কি, ক্লান্তিকর মনে হয়? ‘বিষয়টি কেন পড়ান’, জিগ্যেস করলে আপনি এই উত্তরগুল ... ...
পর্ব – ১হুমায়ুন আহমেদ একবার তাঁর লেখায় তাজমহল প্রথমবার দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেছিলেন – লিখেছিলেন যে তিনি মনে মনে তাজমহল যত বড় এবং সুন্দর বলে ভেবে রেখেছিলেন বাস্তবের তাজমহল নাকি তার থেকেও বড় এবং জমকালো। সেই প্রথমবার কোন কিছু দেখার বাস্তবতা তাঁর কল্পনাকে হার মানিয়ে দিয়েছিল। তেল (এই লেখায় তেল অর্থে পেট্রোলিয়াম ওয়েল-কে বোঝানো হবে), তেল কম্পানি এবং তেল ব্যবসা সম্পর্কে কিছু লিখতে বসে ... ...
মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন লিখিত রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনো খেতে আসেন নি নামক বইটির আলোচনা। ... ...
দেবযানী ভট্টাচার্য লিখিত কলিকাতার কসবি কিস্সা বইটির আলোচনা। ... ...
আজকাল চারপাশে বেকড রসগোল্লা, বেকড সন্দেশ, চকোলেট মিষ্টি ইত্যাদি চোদ্দরকম হাবিজাবি দেখতে দেখতে মাঝে-মাঝে যখন বড় অবসন্ন লাগে তখন মনে পড়ে যায় লীলা মজুমদারের কথা। সাধারণ মধ্যবিত্ত বাড়ির রান্নাবান্না নিয়ে তাঁর মন্তব্য: "মন্দ জিনিস যে উপভোগ করে, তার চাইতেও শতগুনে অভাগা হল সেই মানুষ যে ভালো জিনিস উপভোগ করতে পারে না।" প্রাক-করোনাকালের অফিস-ফেরতা কোনও বিষণ্ণ বিকেলে হঠাতই তাই মনে পড়ে যায় আমার ঠাকুমার কথা। যাঁকে আমরা আদর করে ডাকতাম 'বাবুমা' বলে। অসাধারণ ছিল তাঁর নিরামিষ রান্নার হাত। আর দুধ, ছানা, ক্ষীর, সুজি, ময়দা, নারকেলের উপকরণে এমন সব খাবার-দাবার বানাতেন যার স্বাদ ছিল অমৃতসম। সে সবের নামও ছিল বাহারি। বাবুমা খোয়া ক্ষীর এবং ছানা দিয়ে এক স্বর্গীয় মিষ্টি বানাতেন যার নাম ছিল, 'ভাজা বরফি'। ... ...
লতা মঙ্গেশকর -- বিশাল মাপের এক শিল্পী চলে গেলেন। তাঁকে শেষ বিদায় ও শ্রদ্ধা জানালাম। এবং তার পরে কয়েকটা "শাস্তিযোগ্য" কথা লিখলাম। ... ...
ছ্যাঁচড়াকোন এক বর্ষার সকালে জন্ম হয়েছিল ইন্দুবালার। কোন এক মাঘের কুয়াশা ভরা ধান ক্ষেতের আল দিয়ে হেঁটে বাবার হাত ধরে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। শুধু এইটুক মনে আছে ফুল ফুল ছাপ একটা ফ্রক পড়েছিলেন। গায়ে ছিল মায়ের বোনা সোয়েটার। মাথায় উলের টুপি। ঠাম্মার কাছে শোনা রূপকথার রানী বলে মনে হচ্ছিল সেদিন নিজেকে। ঠাকুরদার টোলটা তখনও চলছে টিম টিম করে। সেই টোলে বর্ণপরিচয়, ধারাপাত এইসব টুকটাক শিখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু বেশি দিন সেখানে পড়া হলো না। আমের গাছে মুকুল ভরিয়ে, সরস্বতী পুজোয় হাতে খড়ি দিয়ে দাদুর বড্ড তাড় ... ...