একই সাথে গবেষণা এবং স্মৃতিকথার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বারোটি পরিচ্ছদের কাহিনী-মালা। প্রতিটি পরিচ্ছদ-ই এক বা একাধিক কাহিনী। টানটান লেখার বাঁধুনিতে ছোট ছোট স্কেচ। প্রতিটি পরিচ্ছদের শেষে উল্লেখ করেছেন সেই বই বা তথ্যের যা তাঁকে ঐ পরিচ্ছদটি সৃষ্টিতে সাহায্য করেছে। ফলে সমগ্র সৃষ্টিটি হয়েছে চুম্বকে এক বিশ্বাসঘাতক সময়ের বেদনা আর তার থেকে উত্তরণের এক মনোগ্রাহী দলিল। এ এক আশ্চর্য সমন্বয়। ... ...
ধর্মের সৃষ্টি হয়েছিল হয়তো সামাজিক বিধি-বিধান থেকে অথবা আশঙ্কা ও উদ্বেগ থেকে মুক্তির আশায়। কিন্তু সেই ধর্মই এখন সারা বিশ্বের অন্যতম উদ্বেগের মূল কারণ ... ... ...
কুরবানি ঈদ আসলেই এগুলা মনে পরে এখন। মনে পরে আমাদের যখন কুরবানি দেওয়ার উপায় ছিল না তখনের কথা। আব্বা আম্মা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যেতেন আমাদের, আমার যেন এর জন্য মন খারাপ না হয়। আমার যে খুব মন খারাপ হত তাও না, আবার মাঝেমধ্যে যে খারাপ একেবারেই লাগত না তাও না। রোজার ঈদের কষ্ট হচ্ছে নতুন কোন জামা কাপড়ই হয়ত জুটে নাই আমার আর কুরবানির ঈদের কষ্ট ছিল আমাদের কুরবানি দেওয়া হচ্ছে না এবার! সবই এখন মধুর স্মৃতি। দুঃখ গুলাও এখন মনে করে ক্যামন জানি সুখ পাওয়া যায়। কারণ হয়ত ওই সব স্মৃতির সাথে আব্বা আম্মা মিশে আছে, আমাদের বৃহৎ পরিবারের সকলেই মিশে আছে। ... ...
সেইরকমই তিনটে চরিত্র- দামিনী গান গায়, সরকারী চাকরি করে- সর্বজিত সুপুরুষ, অভিনেতা- শান্তনু দামিনীর সঙ্গী, অন্যরকম, অন্য মনের l সর্বজিত উভয়ের বন্ধু l আরবান ডিক্শনারিতে মিউচুয়াল ফ্রেন্ড এখন খুব পরিচিত শব্দ l সর্বজিত অনেকটা তাই l তবে সে যে প্রাথমিকভাবে দামিনীর বন্ধু সেকথা শান্তনু জানে না এমনটা নয় l আমরা সবাই সব জানি l ব্রেনের হেমিস্ফিয়ারগুলো, লোবগুলো, থ্যালামাস, হাইপোথ্যালামাস l জানি এসব l জেনে গেছি প্রথম ক্রেনিয়াল নার্ভ অলফ্যাক্টরি আমাদের গন্ধ চেনায় l ঘ্রাণের বোধ ব্রেনের সেনসরি ক্রিয়া l পরিচিত ... ...
যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডে, আমরা তিনজন। আমি, অমিতাভ দা আর তিতলি। প্ল্যান কিছুটা এইরকম – দিন দশেকের আশ্রমিক জীবন কাটানো। প্রথমে আলমোড়া, তারপর মায়াবতী, আর সবশেষে শ্যমলাতাল। প্রথম ও শেষ জায়গায় আমাদের ঠিকানা হবে রামকৃষ্ণ মিশনের দুটি আশ্রম; আর মায়াবতীতে নিশিযাপনটুকু বাদ দিলে বাকি সময়টা কাটবে অদ্বৈত আশ্রমে। ... ...
আমাদের প্রথম চিন্তাই, আরে ওরা বাংলা বলবে? কী আশ্চর্য! 'আমনে আমাত্তে বেশি বুঝেন' আমাকে বুঝাল আরে আমরা হিন্দি পারি, এইটা আমদের একটা কৃতিত্ব না? ওরা একটা ভাষা জানে বা ইংরেজি সহ দুইটা জানে, আমরা ইংরেজি সহ তিনটা জানি, এইটা ভাল না? অবশ্যই ভাল! এর চেয়ে ভাল উত্তর আর কী হতে পারে? ... ...
গত শতাব্দীর প্রথম দশকে ১৯০৯ সালে আমেরিকা আসেন। এর ষোলো বছর আগে বিবেকানন্দ শিকাগো এসেছেন, এর তিন বছর পরে রবীন্দ্রনাথের ইলিনয়-তে আরবানা-শ্যাম্পেন এ প্রথমবার আমেরিকা আসবেন - তখনও তিনি নোবেল প্রাইজ পান নি, তেমন নামডাকও হয় নি। তারও দুবছর বাদে শুরু হবে ইউরোপে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এমন এক সময়ে, আজ থেকে প্রায় ১০৮ বছর আগে মেদিনীপুরের তমলুকের উনিশ বছরের ছেলে কিভাবে আনডকুমেন্টেড লেবার হিসেবে আমেরিকা এলেন, ক্যালিফোর্নিয়ায় পড়াশোনা করতে শুরু করলেন, ইংরেজিতে লেখালেখি শুরু করলেন, ইস্ট-কোস্টে বাসা বাঁধলেন, আমেরিকার শ্রেষ্ঠ শিশুসাহিত্যের পুরস্কার পেলেন, আগাগোড়া লেখালেখিকে সম্বল করে জীবিকা চালিয়ে গেলেন এবং ১৯৩৬ সালে আত্মহত্যা করে মারা গেলেন - সেই কাহিনী ... ...
সফর ইভেন্টটা ভারী পছন্দ হয়েছিল। আর তাছাড়া ভেবে দেখতে গেলে গোটা জীবনটাই তো একটা সফর। একটা ট্রেন জার্নির মতন, প্রতি স্টপ এ থামে, কিছু ঘটনা ঘটে, কিছু লোকের সাথে আলাপ হয়, কেউ মনে থাকে, কেউ বা থাকেনা। এখানকার যাঁরা বড় লেখক তাদের মতন কল্পনাশক্তি বা লেখনী নেই, তাই গল্প লিখতে হলে নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাই ভরসা। কাজেই সে গল্প গুলো আমার ব্যক্তিগত সফরনামা ছাড়া আর কি? কাজেই এনামেই শুরু করলাম, পাঠকের ভালো লাগলে না হয়, আরো লিখব।বছর চার-পাঁচ আগের কথা। তখন ম্যানহাটানের ওয়াশিংটন স্কোয়ার ... ...
মুখের কথা শুনেই তিনি বলে দিচ্ছিলেন কে কোথাকার বাসিন্দা : লিসন গ্রোভ , হক্সটন, হ্যাম্পটন কোর্ট! তা এঁরা তো সবাই নেহাত লন্ডনের বাসিন্দা ! তাঁকে একটি একটি কঠিন কেস দেওয়া হলো -এই যে কর্নেল পিকারিং, ইনি নানা জায়গায় ঘুরেছেন , বলুন দিকি কোথায় কোথায় ? তাঁর মুখের কথা শুনে হিগিনস অবলীলাক্রমে বললেন, চেলটেনহ্যাম, হ্যারো , কেমব্রিজ, ইন্ডিয়া ! চমৎকৃত পিকারিং জানতে চাইলেন কোন মায়াবলে হিগিনস এই অসাধ্য সাধন করেন , হাও ডু ইউ ডু ইট? উত্তরে হিগিনস বললেন,সিম্পল ফোনেটিকস , দি সায়েন্স অফ স্পিচ ! তিনি তো বলেই খালাস কিন্তু আমাকে যে নেশাটি ধরিয়ে দিলেন সেটা আজও কাটিয়ে উঠতে পারি নি । ... ...
গত ১৪ এপ্রিল তসলিমা নাসরিন তার ফেসবুক পেজে নববর্ষ পালন নিয়ে একটা পোস্ট লিখেছেন। উনার দেশের বাইরে থাকা নিয়ে আহাজারি আছে, থাকাটা খুব স্বাভাবিক। দেশে আসতে না পারার তীব্র বেদনা অনুভব করা যায় উনার প্রায় লেখাই। উনার এই কষ্ট নিয়ে কিছু বলার নাই। আশাবাদ করতে পারি একদিন রাষ্ট্র সকলে জন্য সমান অধিকার দিতে বাধ্য থাকবে এবং দিবে, তিনি দেশে আসবেন। কারো বা কোন গোষ্ঠীর হুমকির মুখে কাওকে জীবন বাঁচানোর জন্য দেশ ত্যাগ করতে হবে না আর।উনার দেশের জন্য যে কষ্ট তা নিয়ে আমার কিছুই বলার নেই আসলে। আমি বলতে চাচ্ছি ... ...
আমার মতে, যিনি ফ্যান আবিষ্কার করেছিলেন তিনি পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দার্শনিক। যেকোনো মুহূর্তে খুলে মাথায় পড়তে পারে জেনেও নিচে আরামে শুয়ে থাকতে পারা, শুধুমাত্র আরামের জন্য - এ জিনিস পৃথিবীর সর্বকালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দর্শন। ... ...
*********বাউণ্ডুলে পিঁপড়ের গল্প*******মহারাজ গল্প টল্প লেখেন না, যা দেখেন তাই। তা আমার সাথে সেদিন এক মক্কেলের মুলাকাত হয়েছিলো, নচ্ছারটা যদিও আমায় নানান কু কথা বলেছে, তাও বন্ধুত্বের খাতিরের ওর কথা গুলো বলে গেলাম। 'এই শোন একটা গাড়ি আসছে বুঝলি একটু চমকাবি নাকি?''ইয়েস পাগলা, সন্ধ্যে থেকে বৃষ্টি, একটা লোক নেই বাইরে যে তাড়া করবো, লেজটা নেতিয়ে পড়ে আছে তখন থেকে। চল যাই।''দাঁড়া আরেকটু কাছে আসুক, নে রেডি ওয়ান টু থ্রি... ঘ্যাঁক ঘ্যাঁক ঘৌ ঘৌ ঘোঁয়াওওও'।লাল আর কালো রঙ ... ...
আমাদের বন্ধু ব্যাচে হাবাই সর্বপ্রথম অবৈধ সন্তান উৎপাদনে সক্ষম হয়েছিল ক্লাস ইলেভেনে পড়ার সময়। ক্ষ্যাপা মাষ্টারের কাছে প্রাইভেট টিউশনি শেষ করা এবং ইস্কুলের গণ্ডী পেরোবার সীমারেখা থেকেই হাবা-র কাছে তার নিজেরই ‘রঞ্জিত’ নামটি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গিয়েছিল। ক্ষ্যাপা মাষ্টার আজ আর নেই – আমাদের গ্রাম থেকেই টিউশনি পড়িয়ে ফেরবার পথে জি টি রোডে লরির ধাক্কায় প্রাণ হারাণ। এই ঘটনা আমাদের বিষাদগ্রস্ত করেছিল কিছুদিন কারণ খ্যাপা মাষ্টার আমাদের নিমো গ্রামের অনেক ছেলেরই কৈশোরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল। আমরা তাই ক্ষ্যাপা ... ...
একদিন অঙ্কের খাতার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম আমার অবধারিত প্রশ্ন বুঝতে পেরেই আগেভাগে বলে উঠেছিল - এ মেলানোর অঙ্ক নয় ... ...
অর্থোডক্স ইহুদী ৱ্যাবাইদের নেতৃত্বে প্রো-প্যালেস্টাইন মিছিল! এই খোদ নিউ ইয়র্কে! ... ...
ঋষিকেশকে বিদেশীদের মধ্যে আরো জনপ্রিয় করেছে ষাটের দশকের শেষদিকে বিটলসদের এখানে আগমন। বিটলসরা এসেছিলেন মহেশ যোগীর কাছে 'ট্রান্সেন্ডেন্টাল মেডিটেশন' শিখতে। আশ্রমটা ছিল সরকারের থেকে লিজে নেওয়া জায়গা। লিজ শেষ হয়ে যাবার পর পুরো আশ্রম পরিত্যক্ত হয়ে যায় এবং প্যান ট্রিনিটি দাসের মত হিপি শিল্পীরা ঢুকে ভাঙা বাড়িগুলোর সর্বত্র গ্রাফিত্তি করে যেতে থাকে। এতদিন রাজাজী জাতীয় উদ্যানের জঙ্গল ধীরে ধীরে খেয়ে নিচ্ছিল আশ্রমের ভাঙা ঘরবাড়ি। সরকার জায়গাটা ঘিরে দিয়েছে যাতে বন্য জন্তু না ঢুকে পড়ে। কিছু কিছু বাড়ি সারানো হয়েছে। ... ...
ফেলে আসা সেই সব দিনের কথা এমন দিনেই বলা যায়। ... ...
নিজের সঙ্গীত প্রতিভা নিয়ে আমার কোনোকালেই সংশয় ছিলনা। বাথরুম থেকে ক্যান্টিন, সর্বত্রই আমার রাসভনন্দিত কন্ঠের অবাধ বিচরণ ছিল।প্রখর আত্মবিশ্বাসে মৌলিক সুরে আমি রবীন্দ্রসংগীত গাইতুম।তবে যেদিন ইউনিভার্সিটি ক্যান্টিনে বেনারস থেকে আগত আমার সহপাঠীটি আমার গানের গলার প্রশংসা করে বসলেন সেদিন বিস্তর সন্দেহ জেগেছিল মনে।টাকা নাকি বই,কোনটা ধার নেওয়ার তালে আছে সে ভাবনাও মাথার মধ্যে উঁকি দিয়েছিল।দিনকতক পরে সেই সহপাঠীর ঘরে গেছি।আমায় বসিয়ে তিনি গান শোনালেন।পাক্কা চল্লিশ মিনিট। নাজিদের কন্সেন্ট্রেশন ... ...