দুধসাগর প্রপাত হয়ে একশোফুট আছড়ে পড়ার পরে মান্ডভী বা মান্ডাওয়ি নদী নেমেছে ব্রাগাঞ্জাঘাট ঘুরে ঘুরে পশ্চিমঘাটের গভীর অরণ্যের মধ্যে দিয়ে পথ করে। দুধসাগরের সবচেয়ে নীচের ধাপটায় পৌঁছানোর অভিজ্ঞতাও ভবিষ্যতের জন্য অমুল্য স্মৃতি। ... ...
কিন্তু চকোলেটের ‘আধুনিক’ যুগের সূচনা বলতে গেলে ১৮২৮ সালের পর। যখন কর্মাশিয়াল ভাবে চকোলেটের আরো বেশী করে উৎপাদন শুরু হল। এর এইখানেই ডাচ্-দের অবদান। কোয়েনার্ড ভ্যান হুটেন নামে এক ডাচ্ কেমিষ্ট উদভাবন করে ফেলল কোকো জগতে যুগান্ত কারী এক জিনিস। তিনি উদভাবন করলেন এক হাইড্রোলিক প্রেস যার মাধ্যমে প্রসেস করা কোকো বিনস্ থেকে কোকো বাটার-কে আলাদা করে ফেলা গেল খুব সহজে, আর পরে রইল চকোলেটের/কোকো-র গুঁড়ো। ব্যাস আর পায় কে! কিন্তু ভ্যান হুটেন এতেই থামলেন না, তিনি আরো গবেষণা করে সেই চকোলেটের পাওডারের সাথে ক্ষারক জাতীয় লবণ (অ্যালকালাইন সল্ট) মিশিয়ে এই পাওডার-কে এমন করে তুললেন যে সেই পাওডার এবার খুব সহজেই কোন তরলে মিশে যায়। এই প্রসেসটা তিনি পেটেন্ট করেছিলেন এবং তা কালক্রেমে পরিচিত হয় ‘ডাচিং’ পদ্ধতি নামে। বলতে গেলে এই ডাচিং প্রসেস ছাড়া হয়ত আজকের এই চকোলেট বিপ্লব সম্ভব হত না। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২১. বুকটা ছ্যাঁৎ করে ওঠে। আহা রে - মরে গেছে নাকি! তার শুয়ে থাকার ভঙ্গি - পিছনে ঘুরঘুর করা কুকুর দেখে আচমকা মনে পড়ে যায় সুদানের দুর্ভিক্ষের ওপর তোলা, দক্ষিণ আফ্রিকার ফটো-জার্নালিস্ট কেভিনের ছবিটির কথা - The Struggling Girl. ছবিটি ১৯৯৪ সালের মার্চে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিল। কেভিনের জন্ম আমার দশদিন আগে কিন্তু আজ থেকে প্রায় ৩০ বছর আগে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে সে স্বেচ্ছায় চলে গেছে এই ধরাধাম ছেড়ে। পুরস্কৃত হওয়ার চারমাস পরেই সে আত্মহত্যা করে। ব্যক্তিগত দারিদ্র্যর সাথে সুদানের মর্মান্তিক দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ্য করার মর্মপীড়া হয়তো তাকে ঠেলে দিয়েছিল জীবনের কিনারায়। ছবিটি দেখলে আমার একটাই ক্যাপশন মাথায় আসে - The waiting vulture. তবে কেভিনের ছবিটির মতো ধৈর্য্যসহকারে অপেক্ষারত মরা মাসখেকো হুডেড ভালচার নয় - সমাজে চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে নানা পোষাক পরা শকুন, তাদের তীক্ষ্ম নির্মম ঠোঁটে বহুকিছু ছিঁড়ে খেতে - জীবিকা - জীবন - সম্মান। তাদের কেউ কেউ দৃশ্য - অনেকেই অদৃশ্য ... ...
মিনিট পঁয়তাল্লিশ বাদে তিনি উঠে দাঁড়ালেন, অর্জুন পাশের গাড়ি সরাতে বললেন আমরা রওনা দেব বাঘের গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। রাস্তার (মানে জঙ্গলের ভেতরের কাঁচা পথ) দিকে খানিক এগিয়ে এসে এত গাড়ি দেখে বিরক্ত হয়ে তাড়ুবাবু আবার জঙ্গলের গহীন গহনে ঢুকে গেলেন। অর্জুন কিছু নির্দেশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে গেলেন এক জলাশয়ের পাশে, তাড়ু জঙ্গলের ভেতর দিয়ে দিয়ে এখানেই নাকি আসবে। আর সত্যিই এলোও। ধীরেসুস্থে এসে জলে নামল তারপর মুখ তুলে তাকালো। উফফ স্বাভাবিক পরিবেশে একদম খোলা জায়গায় খোলা গাড়িতে বাঘের সাথে প্রথম চোখাচোখি ... সে রোমাঞ্চ মানুষের জীবনে একবারই আসে, পরের পরের বারেরা শুধুই প্রথমবারের সাথে তূলনীয় হয়ে চলে। ... ...
যাচ্ছি উত্তরাখণ্ডে, আমরা তিনজন। আমি, অমিতাভ দা আর তিতলি। প্ল্যান কিছুটা এইরকম – দিন দশেকের আশ্রমিক জীবন কাটানো। প্রথমে আলমোড়া, তারপর মায়াবতী, আর সবশেষে শ্যমলাতাল। প্রথম ও শেষ জায়গায় আমাদের ঠিকানা হবে রামকৃষ্ণ মিশনের দুটি আশ্রম; আর মায়াবতীতে নিশিযাপনটুকু বাদ দিলে বাকি সময়টা কাটবে অদ্বৈত আশ্রমে। ... ...
শীতল মরুভূমি স্পিতি উপত্যকায় সারে তিনদিন ... ...
লাইট অ্যান্ড সাউন্ড শো-এর জন্যে আমরা ঢুকলাম গিজা কমপ্লেক্সের পিছন দিকে। এখান থেকে প্যানোরামিক একটি ভিউ পাওয়া যায় পুরো অঞ্চলটির। খোলা শান-বাঁধানো চত্বরে প্রায় হাজার খানেক বসার চেয়ার। এর একেবারে সামনেই রয়েছে ফারাও খাফ্রের পিরামিড, তার ডানপাশ ঘেঁষে সামনেই গ্রেট স্ফিংক্স। আরও ডানদিকে ফারাও খুফুর পিরামিড। আর খাফ্রের পিরামিডের বাঁদিকে বেশ কিছুটা দূরে ফারাও মেনকাউরে-র পিরামিড। দিনক্ষণ দেখে আসিনি বটে, শুধু আমাদের বিশেষ দিনটুকু মধ্যমণি করে আসা, তাও যখন এই আঁধারে অপ্রত্যাশিতভাবে পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় চারদিকে ‘সমুদ্র সফেন’, আর সেই অপূর্ব জ্যোৎস্না সাড়ে চার হাজারের ইতিহাস ধুইয়ে দিচ্ছে চোখের সামনে, সেটুকু দেখে আনন্দে মন ভরে উঠবেই। এই আমাদের প্রথম পিরামিড দেখা, এমন অপার্থিব আবহে! একবার বিরাট থালার মতো চাঁদের দিকে তাকাই, আর একবার পিরামিডের দিকে, সে-শোভা বর্ণনা করার ভাষা নেই! কাঁটায় কাঁটায় সাড়ে সাতটায় শুরু হলো আমাদের শো। মিশরের ফারাও যুগের প্রাচীন ইতিহাস আর সঙ্গে আলোর খেলা - পিরামিড, স্ফিংক্স, আর পাথরের গায়ে প্রাকৃতিক প্রোজেক্টর স্ক্রীন-এর উপর। ... ...
ঝটিকা দার্জিলিং সফরের টুকিটাকি ... ...
আমষ্টারডামে শহরে রাজ করে কারা জানেন? যদি ভেবে থাকেন কপি শপের গাঁজাখোররা – তাহলে ভুল ভাবছেন। এই শহরে জুড়ে দাদাগিরি করে বেড়ায় সাইক্লিষ্ট-রা। এদের জন্য রাস্তায় হাঁটা দুষ্কর হয়ে হয়ে ওঠে – ইন্দোনেশীয়ার জাকার্তা শহর যেমন বাইক বা মোপেডের শহর, তেমনই আমষ্টারডাম শহর ভ্যান গগ, রেমব্রান্ট বা আনা ফ্রাঙ্কের নয় – এই শহর সাইকেলের। ... ...
সারাদিন পাহাড়পথ ভেঙে আপনি ক্লান্ত। আরাম করে বসুন এই ছোট্ট ক্যাফেটায়, আমার উল্টো দিকের চেয়ারে। টেবিলে দু'টো বিয়ারের বোতল। ব্যাকগ্রাউন্ডে বাজছে হিমালয়ান্ ব্লুজ। ... ...
সময়টা ১৯৪০ সালের আশেপাশে – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তখন জাপানের অবস্থা ভালো নয়, নানা দিকে পিছু হটছে জাপানী ইম্পিরিয়াল বাহিনী। সাধারণ লোকেরাও বুঝতে পারছে যে এই যুদ্ধে জাপানের পরাজয় প্রায় আসন্ন। কিন্তু তখনও সম্রাট এবং তার বাহিনী শেষ কামড় দিতে লড়ে যাচ্ছে। নিত্য নতুন সৈন্য নিয়োগ হচ্ছে – প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে যুবক সম্প্রাদয় নিযুক্ত হচ্ছে যুদ্ধে যাবার জন্য। পরিবার জানাচ্ছে সেই সব তরতাজা যুবকদের বিদায় – মুখে বলছে সবাই, কারো বাবা-মা, কারো প্রিয়তমা, কারো ভাই, কারো স্ত্রী – “শপথ করো আবার দেখা হবে” – কিন্তু প্রায় সকলেরই চোখের কোণের জল টের পাচ্ছে যে এই শপথ রক্ষার প্রায় কোন উপায়ই নেই! সেদিনের দেখাই শেষ দেখা! ঠিক এমন ভাবেই বিদায় জানাচ্ছিলেন মাসাকি তাকাওকা তাঁর ছাত্রদের। মাসুকি তখন ইহিমে পার্বত্য এলাকার এক ছোট্ট গ্রামের কৃষি বিদ্যালয়ে পড়াতেন। সেই বিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে ছিল এক বিরাট চেরী গাছ। মাসাকি জানতেন আসল সত্যি – কিন্তু তবুও প্রত্যেক ছাত্রের হাতে হাত রেখে অঙ্গীকার করছিলেন যে আবার দেখা হবে স্কুল প্রাঙ্গণে ফুল ফুটে ভরে ওঠা চেরী গাছের তলায়। যুদ্ধের পর যেন তারা সবাই আবার স্কুল প্রাঙ্গণের চেরী গাছের তলায় ফিরে আসে। ... ...
তিনতলা বাড়িতে প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে সময় অনুযায়ী। মানে যত ওপরের দিকে যাবেন তত আধুনিক সময়ের ছবিগুলো দেখা যাবে। একইভাবে দেখা যায় নানা ঘরানা কিভাবে শিল্পীদের মধ্যে গড়ে উঠছে। বদলে যাচ্ছে ছবি আঁকার মাধ্যমও। প্রথমে ছিল তেলরং , তারপর এল ডিমের সাদা অংশের সঙ্গে আবির মিশিয়ে তৈরী টেম্পেরা এবং জলরং। আরো পরে এল অ্যাক্রালিক। কাগজের ওপর ছবি আঁকা ছেড়ে এল কাপড়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এল প্রিন্টমেকিং। এভাবে নানা মাধ্যম মিশে যেতে থাকল। ... ...
এই দিকের গেটের একটু পাশেই ভোপাল ইন্টারস্টেট বাস স্ট্যান্ড। সোজা জাতীয় সড়ক ৪৬ চলে গেছে ওবাইদুল্লাগঞ্জ হয়ে সাতপুরা জাতীয় উদ্যান , পাঁচমারি ইত্যাদি হয়ে হোসাঙ্গাবাদের দিকে। ওবাইদুল্লাগঞ্জের পরেই ডানদিকে কিছুটা বেঁকে গিয়ে বিন্ধ্য পর্বতের কোলে রাতাপানী ব্যাঘ্র প্রকল্পের মধ্যে ভীমবেটকা। মহাভারতের ভীম বনবাসের সময় নাকি কিছুদিন এখানে ছিলেন , সেই ভীমের বৈঠক থেকে জায়গার নাম স্থানীয়দের মতে ভীমবেঠকা। ভীমের জন্য নয় , জায়গাটা আদিম মানুষদের গুহাচিত্রের জন্য বিখ্যাত। আদিম মানুষ এখানে গুহায় রাত্তিরবেলা থাকত , সকালবেলা বাইরে বেরিয়ে শিকার করত , হান্টার গ্যাদারার তারা চাষবাস শেখেনি তখনও। একসময় তারাই সেখানকার পাহাড়ের আশ্রয়গুলোর দেওয়ালে আঁকতে শুরু করে। প্রথমে সরলরেখায়। কাঠির মাথায় আলুর দম। আলতামিরায় বা ফ্রান্সের ল্যাসকো , শোভে ইত্যাদি গুহাগুলোতে রঙিন টানা স্কেচের মত যেসব ছবি দেখা যায় তার থেকে ভীমবেটকার ছবি অনেকটা আলাদা। দশহাজার বছর আগে তারা জ্যামিতি না জানলেও পরিষ্কার ত্রিভুজ , বর্গক্ষেত্র ইত্যাদি আঁকতে পারত। ভীমবেটকা ছাড়াও এই রকম নব্য প্রস্তর যুগের গুহাচিত্র পাওয়া গেছে আশেপাশের সাতধারা , জাওরা এবং পাঁচমারিতে। ... ...
আলেকজান্দ্রিয়া – ৩৩২ খ্রীষ্টপূর্ব – ম্যাসিডোনিয়ার সম্রাট তৃতীয় আলেকজান্ডার (ওরফে আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট) পারস্য জয় করে আজকের গাজা পার হয়ে এসে ঢুকে পড়লেন মিশরে। পারস্যের অত্যাচার আর লুন্ঠন থেকে বাঁচতে মিশর-ও বাধ্য হয়ে বেছে নিল ‘লেসার ইভিল’ আলেকজান্ডারকে (যদিও তাঁর দিগবিজয়ে যাঁরা বাধা দিয়েছেন তাঁদের উপর অত্যাচারের কোনো মাত্রা রাখেননি , পুরু বা পোরাসের গল্প সত্যি ইতিহাস কিনা তা নিয়ে আজকের দিনে ধন্দ আছে) , তায় আবার যুদ্ধবিগ্রহে তিনি মিশরের প্রাচীন ফারাওদের মতো-ই পারদর্শী! তার উপর প্রথমেই মিশরে এসে তিনি দেখতে চাইলেন ‘এপিস বুল’-কে এবং সম্মান জানালেন! ব্যস, মিশরীয়রা মুগ্ধ, নির্ঘাৎ সেই প্রাচীন যুগের-ই কোনো মহান ফারাও এসে গেছেন তাঁদের রক্ষা করতে। সুতরাং নীলনদের উপত্যকা সহজেই বিনা বাধায় ম্যাসিডোনিয়ান সাম্রাজ্যের আওতায় এসে গেল। কিন্তু আলেকজান্ডার আরও উত্তরে গেলেন হোমারের ওডিসি-তে পড়া ফারোস দ্বীপের সন্ধানে, পেলেন এবং তাঁর নিজের নামে একটি শহর স্থাপন করলেন , ব্যবসা-বাণিজ্য আর ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ আর রাজ্যগুলিতে যাতায়াতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগকারী স্থান হিসেবে। ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ২২. পরদিন সকালে শৈলেশকে পয়সাকড়ি মিটিয়ে দিয়ে বলি, ইচ্ছে তো করছে এখানেই থেকে যাই আরো দিন দুয়েক। এমন নির্জনতা বহুদিন পাইনি কোথাও। কিন্তু আরো কিছু জায়গা দেখার বাসনা নিয়ে বেরিয়েছি বাড়ি থেকে, তাই আজ এগারোটা নাগাদ বেরিয়ে পড়বো। শৈলেশ বলে, তিনদিন থাকলেন এখানে, একদিনও খেলেন না আমাদের কাছে। আমার বৌয়ের মাথার গণ্ডগোল হলেও রান্নাটা কিন্তু খারাপ করে না। আপনি বুজুর্গ ব্রাহ্মণ, একটু অতিথি সেবার সুযোগ অন্ততঃ দিন। এতে গৃহস্থের মঙ্গল হয়। ... ...
চন্দ্রতাল লেককে ঘিরে একাধিক উপকথা, লোককথা প্রচলিত। পুর্নিমার রাতে নাকি পরীরা নামে স্নান করতে। একটা গল্প চন্দ্রদেবের কন্যা চন্দ্রা আর সূর্যদেবের পুত্র ভাগা একে অপরের প্রেমে পড়ে, কিন্তু অভিভাবকরা নারাজ বিয়েতে। তাদের দেখা হয়েছিল বরলাচা-লায়, সেখান থেকে পালিয়ে বিয়ে করতে গিয়ে বিস্তর বাধাবিঘ্নের পরে তান্ডিতে গিয়ে মিলন হয়। তো লুকিয়ে থাকার জন্য দুজনে দুটো হ্রদ বানিয়ে নেয়, চন্দ্রতাল আর সুরজতাল। দেবদেবীদের ছেলেপুলেরা কি পরিমাণ প্রিভিলেজড দেখুন, হুট বলতেই দুখানা কাকচক্ষু জলের হিমবাহী হ্রদ(গ্লেসিয়াল লেক) বানিয়ে ফেলল। আরেকটা গল্প প্রচলিত যে একে একে সব ভাই ও দ্রৌপদী মারা যাবার পরে ইন্দ্র তার রথ নিয়ে এসে যুধিষ্ঠিরকে চন্দ্রতাল হ্রদ থেকেই সরাসরি স্বর্গে নিয়ে গেছিল। ... ...
গিজা থেকে দাশুর প্রায় ঘন্টাদেড়েকের রাস্তা, পঞ্চাশ কিলোমিটার মতো, দুই-তৃতীয়াংশ যাওয়ার পর যেখান থেকে মেমফিসের রাস্তা আলাদা হয়ে গেছে, শুরু হলো ম্যাজিক। রাস্তার দুপাশের ছবি যেন হঠাৎ কোনো জাদুকাঠির ছোঁয়ায় বদলে গেল! সবুজ শীতের ফসলের ক্ষেত আর খেজুর গাছের সারি। ঘন নীল আকাশের গায়ে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, অপূর্ব শোভা এই রাস্তার, সঙ্গে ভর-দুপুরে প্রাণ-জুড়নো ঠান্ডা হাওয়া! সায়িদি বললো, সাক্কারা আর দাশুরের খেজুরের বাগান খুব প্রসিদ্ধ। আর এখানকার এক বাগানের খেজুরের স্বাদ আর মিষ্টত্ব অন্য বাগানের থেকে আলাদা! পরে খেয়ে দেখেওছিলাম সত্যি তাই। আমরা সাক্কারার রাস্তা ছাড়িয়ে আগে চলে গেলাম দাশুরের পথে। দূর থেকে স্টেপ পিরামিড দেখতে পেলাম। দাশুরের পিরামিড চত্বর একেবারেই খাঁ খাঁ মরুভূমির মধ্যে, ঢোকার সময় রীতিমতো গাড়ির লাইসেন্স ইত্যাদি দেখেশুনে ঢুকতে দেওয়া হলো, এই এলাকাটি মিশরীয় সেনার আওতায় ... ...
"একা বেড়ানোর আনন্দে" - এই সিরিজে আসবে ভারতের কিছু জায়গায় একাকী ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এটি পর্ব - ৬ - - - তেমাথায় দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক দেখছি। কী খুঁজছেন? কমল মিত্রর মতো রাশভারী গলা শুনে ঘুরে তাকাই। বছর পঞ্চাশের প্রশ্নকর্তার লম্বা চওড়া সুঠাম চেহারা, ব্যক্তিত্বময় মুখ, মর্মভেদী দৃষ্টি। বলি, হনুমান মন্দির। কোত্থেকে আসছেন? নিক্ষিপ্ত হয় দ্বিতীয় প্রশ্নবাণ। কলকাতা। ধেয়ে আসে তৃতীয় মিসাইল, ওখানে কী দরকার? অচেনা কারুর এহেন অবাঞ্ছিত প্রশ্নমালা শুনে ভ্রু কুঁচকে যায়। ভাবি ইনি কেন এতো সওয়াল করছেন? মন্দিরে কেন যায় লোকে? বাজার করতে নিশ্চয়ই নয়। কিন্তু তখনই একটু খটকা লাগে। অজনবীর ভাবিত মুখে পড়েছে অন্য ছায়া - স্বগতোক্তির ঢঙে বিড়বিড় করেন, ক ল কা তা! পরক্ষণেই আবার দারোগার মতো সওয়াল, আপনি কী বাঙ্গালী? ভাবি কলকাতা কী কিরিবাতি আইল্যান্ডের মতো দূরবর্তী না বাঙ্গালী নর্থ সেন্টিনেলীসদের মতো দুর্লভ? কলকাতা শুনে, বাঙ্গালী ভেবে অবাক হওয়ায় কী আছে? সাহারা থেকে সাইবেরিয়া - খুঁজলে দু এক পিস বাঙালি কোথায় নেই। সম্মতিসূচক মাথা নাড়ি। প্রশ্নকর্তার দৃষ্টি নরম হয়। এগিয়ে আসে একটা বলিষ্ঠ হাত। ... ...
মৃত্যুর পর মৃতদেহের মমি তৈরীর পদ্ধতি ছিল যথেষ্ট সময় আর খরচ-সাপেক্ষ। তাই ফারাও, তার পরিবার বা বিশিষ্ট ব্যক্তি ছাড়া মমি বানানোর চল কম-ই ছিল। মৃত্যুর পর মমি তৈরীর পারদর্শী পুরোহিতের তত্ত্বাবধানে মামিফিকেশনের জন্য নির্দিষ্ট বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হত মৃতদেহ। সেখানে ‘ইবিউ’ নামক স্থানে দেহ ধুয়ে শুদ্ধ করে নেওয়া হতো। তারপর ‘পার নেফার’ নামক স্থানে শুরু হতো সেই দেহের সৌন্দর্য্যায়ন বা মামিফিকেশন। এর বিশদ বর্ণনা অধিকাংশটাই দিয়ে গেছেন গ্রীক পন্ডিত হেরোডোটাস। প্রথমে সরু আর সামনের দিকে বাঁকানো একটি যন্ত্র নাকের গর্ত দিয়ে ঢুকিয়ে মস্তিষ্ক কুরে কুরে বের করে নেওয়া হতো আর সেই ফাঁকা জায়গায় নল দিয়ে পাঠানো হত ক্ষয়রোধী জৈব রস আর সুগন্ধী। এরপর পেটের বাঁদিক চিরে বের করে নেওয়া হতো ফুসফুস, অন্ত্র, যকৃৎ আর পাকস্থলী, ভালো করে নুন মাখিয়ে সেসব রাখা হতো চারটি আলাদা ঢাকা দেওয়া পাত্রে (ক্যানোপিক জার)। এই চারটি পাত্র আবার চারজন দেবতা রক্ষা করতেন। তাঁরা হলেন দেবতা হোরাসের চার ছেলে – ইমসেতি, হাপি, দুয়ামুতেফ আর কেভসেন্যুফ। ... ...
"৮৭৬ সালে , মাঘ মাসের উজ্জ্বল অর্ধের দ্বিতীয় দিনে সবাই এই মন্দিরে সমবেত হয়েছে যা ভৈলবভট্টের ছেলে আল্লা ২৭০ হস্ত দৈর্ঘ্য এবং ১৮৭ হস্ত প্রস্থের ওপর বানিয়েছেন। এছাড়াও একটা ফুলের বাগানের জন্য পুরো নগর অর্থ দান করেছে যাতে এই মন্দিরের পুজোর জন্য দিনে ৫০টা করে ফুলের মালা তৈরী হতে পারে।" [১ হস্ত ~ ৪৫ সেন্টিমিটার] গণিতজ্ঞ ব্রহ্মগুপ্ত এর প্রায় দুশো বছর আগে পাটিগণিতের নিয়মগুলো লিখে ফেলেছিলেন। ১৯৩১ সালে ৬৮৩ সালের ক্যাম্বোডিয়ার একটা মন্দিরের লিপিতে শূন্য পাওয়া যায়। আপাতত সেটাই পৃথিবীর সবথেকে প্রাচীন শূন্য। গ্বলিয়র দ্বিতীয় স্থানে। আরেকটা প্রাচীন শূণ্য পাওয়া গেছে পাকিস্তানের বাকশালী পুঁথির বার্চ গাছের ছালের পাণ্ডুলিপিতে , যেটা রাখা আছে অক্সফোর্ডের বোডলেইন লাইব্রেরীতে। শূন্যের ইতিহাসে আগে যদি কোনোদিন গ্বলিয়র শিলালেখের উল্লেখ দেখে থাকেন তাহলে বুঝে নেবেন এটাই সেই জায়গা। ... ...