এই বসুন্ধরা সিটির সামনেই আমার তিনজন বন্ধু এক সাথে ধরা খাইল। ভোর বেলা বাস থেকে নেমে মেসে ফিরছে। তিনারা হাজির। ওরা আলগোছে সব দিয়ে দিছে। একজনের ছিল সিটিসেল মোবাইল। সিটিসেল মোবাইল তখন অনেকেই ব্যবহার করত। সিটিসেল ছিল সিডিএম সেট, মানে হচ্ছে এই সেটের সিম থাকে না। কেউ সেট অফিসে ফোন করে বন্ধ করে দিলে, ওইটা আর চালানোর উপায় থাকে না। তাই ছিনতাইকারীরা ওই সেট খুব অপছন্দ করত। আমার যে বন্ধুর হাতে সিটিসেল মোবাইল ছিল তাকে এমন অপমান করছিল সেদিন যে ও পারলে ওইদের জন্য ওইদিনই সেট কিনে! সবার সেট নিলেও ওর সেট যে নাই নাই, এইটা বুঝাতে সময় লাগছে বেশ অনেকক্ষণ! ... ...
এরপর ক্লিক ক্লিক, অনেকগুলো ছবি আর ফেসবুক জুড়ে পোস্ট...তাতে এখন অসংখ্য লাইক ছড়িয়ে পড়ছে... এদিকে শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রহরও...আবারও একটা বছর পর... স্টল প্রায় খালি করে চলে যাচ্ছে সবাই...এক এক করে, এক এক গন্তব্যে... আর ভেতরে একটা আশ্চর্য হু হু... শূন্য হয়ে যাওয়ার মতন অনুভব। যদিও এই তিন জুটির সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবারের বইমেলা মনে রাখার মতন... রুদ্র কথা দিল, যোগাযোগ রাখবে...কথা দিল শ্রীপর্নাও... দেবারতীর সাথে নম্বর আদান প্রদান হলো সৌরভের...আর অল্প কথা কিছু… এবার থেকে প্রোফাইলে ছবি দেবে তো? দেবারতী হাসল শুধু...তারপর বেরোনোর পথে বলে গেল... তোমার নতুন কবিতার অপেক্ষা থাকবে, সৌরভ। দিও ... ... ...
হল তো "এক দুগুণে শূণ্য" - তারওপর থানা-পুলিশ-আইন-আদালত...ওফ্...তার চে এ যা হল মুখরক্ষা হল... ... ...
মূল্যস্ফীতির স্পিডমিটারটি যদি ঠিকমত ঘুরানো যায়, তাহলে ‘মূল্যস্ফীতির’ দেখা হয়ত মিলবে, কিন্তু ‘অতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি’কে শত হাত দূরে থাকবে। দুঃখ হল, অনেক দেশের অসৎ প্রশাসন স্পিড লিমিটকে ছাড়িয়ে এমন রুদ্ধশ্বাসে ছোটে যে, এক সময় মূল্যস্ফীতির চাকা বিষ্ফোরিত হয়ে ধোঁয়া উঠতে থাকে। যারা সরকারকে ঋণ দিয়েছিল, মূল্যস্ফীতির তোড়ে তাদের সুদ আয় উড়ে যায় না শুধু, আসল টাকার বাঁধও দুলে উঠে। আর যারা টাকা ধরে রেখেছিল হাতের মুঠোয় বা ঘরের সিন্দুকে, তারাও ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মাথা চাপড়াতে থাকে। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ভবিষ্যত নাগরিকেরা, কারণ দেশটি পরে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ পায় না। এইসব দেশের সরকার তখন টাকা ছাপিয়ে হলেও তার সামরিক যন্ত্রকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বড় করতে থাকে আর এভাবে নিজের মসনদকে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালায়; এক্ষেত্রে জনগনের কাছ থেকে কর আদায় করা হচ্ছে না সত্য; তবে তাদের টাকার মূল্য ব্যাপক অবনমন ঘটে, যা অর্থনীতিবিদগনের কাছে মুদ্রাস্ফীতি কর নামে পরিচিত। রুপি করের একটা কবিতায় আছেঃ ‘আমি জল/এত নরম/যে জন্ম দিতে পারি/এত কঠিন/যে ডুবিয়ে দিতে পারি।‘ জলের সাথে অনেক মিল টাকার। আমাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় ব্যাংকে রেখে ভাবি ‘আসল’ টাকাটা নিরাপদ থাকবে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি তাও খেয়ে ফেলে; পুঁজিবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করে কেউ যদি ১০% মূলধনী মুনাফা অর্জন করে, তাহলে তার পুরোটাই গ্রাস করতে পারে সমহারের একটি মূল্যস্ফীতি। সম্পত্তি পুনর্বন্টনেও খেল দেখায় মূল্যস্ফীতি; আমি যদি ১০০ টাকার ঋণ করি ১০ টাকা সুদে, তাহলে আমার সুদাসল ১১০ টাকা ৫৫ টাকা হয়ে যাবে ১০০% মূল্যস্ফীতিতে। মানে, মূল্যস্ফীতি ব্যাংকের জন্য খারাপ, কিন্তু ঋণগ্রহীতার জন্য স্বর্গ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২১ সালের একটি স্থির সুদের বন্ধকি ঋণের পুরোটাই শোধ করা যেত ১৯২৩ সালের একটি পত্রিকার মূল্য দিয়ে। লাতিন আমেরিকায় ৩০ বছরের মর্টগেজ এখনো প্রায় নিষিদ্ধ। মূল্যস্ফীতির অমোঘ টানেই বাংলাদেশে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের জন্য পাগলপারা হয়ে ছুটতে দেখা যায় অনেককে। ... ...
অনেক বড়ো মানুষ হয়েও যাঁদের মনটা ছোট - আরে নাঃ যা ভাবছেন তা নয় - বলতে চাইছি - যাঁদের মন অবরে সবরে ছোটবেলায় ফিরে যেতে চায় - এ গল্প তাঁদের জন্যে। ... ...
একটা অসমাপ্ত নকশা তৈরি হত, বদলেও যেত প্রতিদিন- এই সব হিসেব না মেলা সংখ্যাদের জ্যান্ত দেখাতো- আলাদা রং, আলাদা শেপ- যেন একটা বোর্ড গেমের ঘুঁটি সব- খেলার নিয়ম তৈরি হওয়ার অপেক্ষা করছে; মনে হত, আমাকেই এই গেমের রুল ঠিক করতে হবে- তার আগে নকশাটা চিনে নেওয়া খুব জরুরী । নকশা বা একটা গল্প -স্পাই বলেছিল। ... ...
বোঝো, সবে জাল গোটানো চলছে, তখনই কি না পুলিশের উৎপাত... শেষমেষ কী হবে... ... ...
আপনি খেয়াল করে দেখেন রাস্তাঘাটে এত কুকুর, অথচ কয়টা কুকুর গাড়ির নিচে চাপা পরে মরে? আমাদের বাচ্চাকে আমরা সাবধানে রাখি, রাস্তা পাড় হাওয়া শিখাই। ওদেরকে কে শিখাইছে? ওদের মস্তিষ্ক বিবর্তনের মাধ্যমে পরিবর্তন হয়েছে। আজকে থেকে দুই তিনশ বছর আগের কোন কুকুরকে যদি আজকের রাস্তায় ছেড়ে দেওয়া যায় চোখের নিমিষে গাড়ির নিচে পরে মরে যাবে। কিন্তু এখনকার কুকুরেরা ঠিক নগর সভ্যতার সাথে অভিযোজিত হয়ে গেছে। এমন অনেক প্রাণী আছে যারা বিবর্তনের মাধ্যমে প্রকৃতিতে টিকে আছে। আর এগুলাই বিবর্তনের পক্ষের যুক্তি। ক্ষুদ্র জীবাণুতে এর উপস্থিতি আরও পরিষ্কার বুঝতে পারা যায়। এই যে অ্যান্টি বায়োটিক খান আর কয়দিন পরেই বলেন যে কাজ করে না, অন্য আরেকটা দেন, পাওয়ার বাড়ায় দেন, কেন বলেন? ওই ব্যাকটেরিয়া সমানে বিবর্তনের মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করে চলছে। অ্যান্টি বায়োটিক যেটা ওকে মেরে ফেলছে ওইটার প্রতিরোধ নিয়ে পরেরটা আসছে, বিবর্তনের মাধ্যমেই এই কাজ হচ্ছে। মশার কয়েলে কাজ করে না বলে চিল্লাফাল্লা করেন, কাজ করে না কেন? মশাও বিবর্তিত হচ্ছে, আপডেট কয়েল না ফলে মশা তাড়াতে পারবেন না। ... ...
অই ননচ্যালান্স! বাংলার আদি ইমোশন। গনেশ জননী হোক বা সতীর দেহত্যাগ বা বটতলার হত্যাকাণ্ডের গপ্প -- পটের মুখাবয়ব জুড়ে সেই টানা টানা চোখ, শরীরে মন্থর রেখার আনাগোনা। যেন অবাক চোখে শুধু দেখে যাওয়া। তাতে ক্রোধ - দুঃখ - ভয় কিছুরই আধিক্য নেই। যেন সব চোখই শিশুর চোখ। তার সামনে কখনো দাদুর বুড়ো আঙুল কেটে নিয়ে যায় নেংটি ইঁদূর, কখনো ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেয় হাতির পাল, কখনো বা পুষি বেড়ালকে গিলে খায় পাড়ার হুমদো কুকুর। ... ...
হ্যারল্ড ক্রিক এক সকালে জানতে পেরেছিল, যে, তার জীবনটা তার নিজের নয়—এক লেখিকার গল্পের সে মুখ্য চরিত্র। মহিলার আবার বদনাম আছে—নিজের সব মুখ্য চরিত্রকেই তিনি গল্পের শেষে টুক করে মেরে ফেলেন। সক্কাল সক্কাল নিজের জীবনের ধারাবিবরণী শুনতে শুরু করা হ্যারল্ডের সঙ্গে অবশেষে একদিন দেখা হয় তার জীবনের লেখিকার... হ্যারল্ডের মত নেপথ্য-কথকের কণ্ঠস্বর আমরা শুনতে পাইনে ঠিকই, কিন্তু কোনো কোনো ধূসর মুহূর্তে সকলেই নিশ্চয়ই ভেবে আকুল হয়েছি: নিজেদের জীবনের—যার ওপর মালিকানা ঘোষণা করতে আমাদের একটুও সমস্যা হয় না—তার কতটুকু আমার নিজের লেখা? ... ...
সজীবকে জানানো হয়েছিল সাপোর্টিং হ্যান্ড আসছে; কিন্তু কে ভাবতে পেরেছিল, সে হবে স্কুল বালিকার মত দেখতে, আর মুখ ফোলাবে কথায় কথায়! তিথী সজীবের সব কাজ নিজেই করে দিতে চাইতো, আর প্রায়ই আটকে যেয়ে ‘ভাইয়া’ ‘ভাইয়া’ স্বরে এমন চেঁচাতো যে সজীবকে গোল্লাছুট লাগাতে হতো। সেদিন কয়েকটা সেলস্ সেন্টার পরিদর্শনে বের হচ্ছিল, তিথী যেন ঘরের মেয়েটির মত বায়না ধরল। রেশমী চুলের ঢেউ তার মুখের বিস্তীর্ণ উপকূলকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল, গোলাপী ঠোঁট দুটো ভিজে সপ্সপ্ করছিল । সজীব কথা না বাড়িয়ে সোঁ সোঁ করে রিকশায় উঠে গেল আর তারপর তিথীর দিকে রোমশ হাতটা বাড়িয়ে দিল; কিন্তু তিথী কি কারণে কি মনে করে ইঞ্চিখানেক পিছিয়ে গেল। এরপর রিকশার বাহু ধরে গদিতে নিজে নিজেই উঠে বসলো, যদিও পুরো পথ জুড়ে একটা ফাঁক রাখল তাদের দুজনের মধ্যে, সেই ইঞ্চিখানেক। ... ...
সে ঘাড় দুদিকে নেড়ে নেড়ে বলে ‘তু ডেঞ্জার হ্যায় রে ম্যাডাম নেই নেই ম্যায় আ যাউঙ্গা’। ঠিক আছে বাবা, তাই হবে। একটু বিশ্রাম নিয়ে বিকেল ৪.১৫তে আবার বেরোই পায়ে হেঁটে এদিক ওদিক ঘুরতে। চারিদিক একেবারে শুনশান, সমস্ত দোকানপাট বন্ধ হয়ে গেছে শুধু একটা সেলুনের একপাল্লা খোলা। মিনিট চল্লিশেক এদিক ওদিক হেঁটে ফিরি নশরিঙে আবার। কাল খুব সকালে বেরোন তাই আজকেই টাকাপয়সা মিটিয়ে রাখতে হবে। রাতের খাবারে অর্ডার করি ডিমাসা টাইপ ফ্রায়েড রাইস আর চিকেনের ঝোল। এই ফ্রায়েড রাইসে দেখি বেশ কয়েকরকম শাক দিয়েছে কুচিয়ে, পালং ছাড়া বাকী শাকেদের চিনতে পারলাম না। ... ...
ইনশেরিন হচ্ছে আয়ারল্যান্ডের ছোট একটা দ্বীপ। গল্পটা এই দ্বীপকে ঘিরেই। খুব সহজ সরল জীবন এখানে। নিরুত্তাপ নিশ্চল জীবন এখানে। এই দ্বীপেই বাস করে পদ্রেইচ সুলেভান ও তার বোন সিওভান সুলেভান। পদ্রেইচের তেমন কোন কাজ নাই, গরুর দুধ বিক্রি করে, বন্ধু কমের সাথে আড্ডা মারে বারে, মদ খায় বাড়ি ফিরে। পদ্রেইচের বুদ্ধি একটু কম, বলা চলে সহজ সরল ছেলে পদ্রেইচ, তার তুলনায় সিওভান বেশ সপ্রতিভ, বুদ্ধিমান, বইপত্র পড়ে, দিন দুনিয়ার খোঁজ খবর রাখে। গল্পটা শুরু হয় একদিন দুধ বিক্রি করে যখন পদ্রেইচ কমকে ডাকতে যায় তখন। কম পদ্রেইচের ডাকে সাড়া দেয় না। ঘরে থেকেও সাড়া না দেওয়ার কারণ খুঁজে পায় না পদ্রেইচ। উল্টো দেখে পিছন দরজা দিয়ে কম চলে যাচ্ছে দ্রুত পায়ে। পদ্রেইচ বারে গিয়ে খুঁজে পায় কমকে। কম কোন কথাই বলতে রাজি না পদ্রেইচের সাথে। কী দোষ করল, কোথায় ভুল হল জানতে চায় পদ্রেইচ। কিন্তু কম কথাই বলবে না। চাপাচাপির পরে কম বলে এক অদ্ভুত কথা, জানায় ওর বয়স হয়ে যাচ্ছে, জীবনের বাকি যে সময় টুকু আছে তা সে সংগীতের পিছনে দিতে চায়, এমন কিছু সুর সৃষ্টি করে যেতে চায় যা আজীবন মানুষ মনে রাখবে। মোজার্ট বেটোফেন মত কিংবদন্তীর সুরকার হতে চায় ও। এ জন্য পদ্রেইচের সাথে সময় নষ্ট করতে কম রাজি না! কম শর্ত দেয় এক অদ্ভুত শর্ত, যদি এরপরে কখনও কমের সাথে কথা বলে তাহলে সে তার নিজের একটা আঙুল কেটে ফেলবে! আবার কথা বললে আরেকটা আঙুল কাটবে। ... ...
টাকা ডবলের পুজো হল সাঙ্গ ... এবার তবে... ... ...