তিন-চারদিন পরের কথা। রাস্তার নারকীয় জ্যাম আমার অফিস টাইমের আয়ু আধা ঘন্টা কমিয়ে দিয়ে মেজাজকে সপ্তমে তুলে রেখেছিল। এই সময়টুকুতে কতটুকু এগিয়ে যেতে পারতাম দিনের কাজে, যতবারই ভাবছিলাম, আমার স্নায়ুদেশ ক্ষতবিক্ষত হচ্ছিল। কোন কাজে মন বসছিল না। নিতান্ত অনিচ্ছায় সেদিনের স্থিতিপত্র হাতে তুলে নিতেই চোখ চলে গেল ঋণের ফিগারে। বেড়েই চলেছে, প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ে, মনে হয়, দুনিয়ার শেষদিন পর্যন্ত বেড়ে চলবে, কারণ যত না ঋণ শোধ হয়, তার থেকে অনেক অনেক বেশী ঋণ অশোধিত থাকে এই পৃথিবীতে। প্রায় মগ্ন হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু একটা ছায়া সংকেত আমায় চোখ তুলতে বাধ্য করল, দেখি দুলাল একটা ফাইল হাতে দাঁড়িয়ে, সেই আগের মত, কিছুটা বাঁকানো, ঝুঁকে পড়া দেহ, আর চোখ তেমনি আবডালে রাখা। ... ...
বহুদিন ধরে জনৈক "হরিদাস পাল" হয়ে - "ধর্মাধর্ম" রচনা করেছিলাম এই গুরুচণ্ডা৯-তে - এখন গুরুচণ্ডা৯ প্রকাশন প্রকাশ করেছে "ধর্মাধর্ম" গ্রন্থ - লেখার সময় আপনাদের যেমন সহযোগিতা পেয়েছিলাম, আশা করব এখন গ্রন্থ হিসেবেও এটি একই রকম সাড়া পাবে। ... ...
একজিট নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলাম শুনশান গলিতে। এফ এম বন্ধ করে দিলে এখন শুধু মেটাল বডি আর জলের ঠোকাঠুকি, ওয়াইপারের সুইশ সোয়াশ, সুইশ সোয়াশ আর রেনওয়াটার পাইপ থেকে গবগব করে জল বেরোনোর ননস্টপ আওয়াজ। লাল, হলুদ, নীল, সবুজ একতলা, দোতলা, তিনতলা বাড়ির দেওয়াল বেয়ে জল নামছিল নিঃশব্দে, গড়ানো ঢালের গলি বেয়ে বড় রাস্তায় পড়ছিল। ওদিকের দেওয়াল ঘেঁষে একটা শেড, তার পাশে আগাগোড়া প্লাস্টিক ঢাকা ঠ্যালাগাড়ি- ট্রেনে কাটা পড়া ডেডবডি যেন। শিউলিদের গলির কথা মনে হ'ল। ... ...
আলপনা দেওয়া কবিতার নিকোনো উঠোনের মাঝে একটি দামড়া বাইক আড়াআড়ি দাঁড় করিয়ে পাশের দোকানে বিড়ি ধরাতে চলে গেছেন তিনি। আর ক্যানভাস জুড়ে এঁকে রেখেছেন একটি অসহ্য স্থির ছবি যার দিকে তাকিয়ে বাকিরা ভেবেই চলেছে শালা এরা নড়ছে না ক্যানো! ... ...
এককের সাম্প্রতিকতম কবিতার বই - "বিনাহ বিতাস" ... ...
এই বসুন্ধরা সিটির সামনেই আমার তিনজন বন্ধু এক সাথে ধরা খাইল। ভোর বেলা বাস থেকে নেমে মেসে ফিরছে। তিনারা হাজির। ওরা আলগোছে সব দিয়ে দিছে। একজনের ছিল সিটিসেল মোবাইল। সিটিসেল মোবাইল তখন অনেকেই ব্যবহার করত। সিটিসেল ছিল সিডিএম সেট, মানে হচ্ছে এই সেটের সিম থাকে না। কেউ সেট অফিসে ফোন করে বন্ধ করে দিলে, ওইটা আর চালানোর উপায় থাকে না। তাই ছিনতাইকারীরা ওই সেট খুব অপছন্দ করত। আমার যে বন্ধুর হাতে সিটিসেল মোবাইল ছিল তাকে এমন অপমান করছিল সেদিন যে ও পারলে ওইদের জন্য ওইদিনই সেট কিনে! সবার সেট নিলেও ওর সেট যে নাই নাই, এইটা বুঝাতে সময় লাগছে বেশ অনেকক্ষণ! ... ...
এরপর ক্লিক ক্লিক, অনেকগুলো ছবি আর ফেসবুক জুড়ে পোস্ট...তাতে এখন অসংখ্য লাইক ছড়িয়ে পড়ছে... এদিকে শেষ হয়ে যাচ্ছে প্রহরও...আবারও একটা বছর পর... স্টল প্রায় খালি করে চলে যাচ্ছে সবাই...এক এক করে, এক এক গন্তব্যে... আর ভেতরে একটা আশ্চর্য হু হু... শূন্য হয়ে যাওয়ার মতন অনুভব। যদিও এই তিন জুটির সমস্ত অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এবারের বইমেলা মনে রাখার মতন... রুদ্র কথা দিল, যোগাযোগ রাখবে...কথা দিল শ্রীপর্নাও... দেবারতীর সাথে নম্বর আদান প্রদান হলো সৌরভের...আর অল্প কথা কিছু… এবার থেকে প্রোফাইলে ছবি দেবে তো? দেবারতী হাসল শুধু...তারপর বেরোনোর পথে বলে গেল... তোমার নতুন কবিতার অপেক্ষা থাকবে, সৌরভ। দিও ... ... ...
হল তো "এক দুগুণে শূণ্য" - তারওপর থানা-পুলিশ-আইন-আদালত...ওফ্...তার চে এ যা হল মুখরক্ষা হল... ... ...
মূল্যস্ফীতির স্পিডমিটারটি যদি ঠিকমত ঘুরানো যায়, তাহলে ‘মূল্যস্ফীতির’ দেখা হয়ত মিলবে, কিন্তু ‘অতি উচ্চ মূল্যস্ফীতি’কে শত হাত দূরে থাকবে। দুঃখ হল, অনেক দেশের অসৎ প্রশাসন স্পিড লিমিটকে ছাড়িয়ে এমন রুদ্ধশ্বাসে ছোটে যে, এক সময় মূল্যস্ফীতির চাকা বিষ্ফোরিত হয়ে ধোঁয়া উঠতে থাকে। যারা সরকারকে ঋণ দিয়েছিল, মূল্যস্ফীতির তোড়ে তাদের সুদ আয় উড়ে যায় না শুধু, আসল টাকার বাঁধও দুলে উঠে। আর যারা টাকা ধরে রেখেছিল হাতের মুঠোয় বা ঘরের সিন্দুকে, তারাও ক্রয়ক্ষমতা হারিয়ে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে মাথা চাপড়াতে থাকে। সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের ভবিষ্যত নাগরিকেরা, কারণ দেশটি পরে বিশ্বের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ঋণ পায় না। এইসব দেশের সরকার তখন টাকা ছাপিয়ে হলেও তার সামরিক যন্ত্রকে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে বড় করতে থাকে আর এভাবে নিজের মসনদকে ধরে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা চালায়; এক্ষেত্রে জনগনের কাছ থেকে কর আদায় করা হচ্ছে না সত্য; তবে তাদের টাকার মূল্য ব্যাপক অবনমন ঘটে, যা অর্থনীতিবিদগনের কাছে মুদ্রাস্ফীতি কর নামে পরিচিত। রুপি করের একটা কবিতায় আছেঃ ‘আমি জল/এত নরম/যে জন্ম দিতে পারি/এত কঠিন/যে ডুবিয়ে দিতে পারি।‘ জলের সাথে অনেক মিল টাকার। আমাদের কষ্টার্জিত সঞ্চয় ব্যাংকে রেখে ভাবি ‘আসল’ টাকাটা নিরাপদ থাকবে, কিন্তু মূল্যস্ফীতি তাও খেয়ে ফেলে; পুঁজিবাজারে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ করে কেউ যদি ১০% মূলধনী মুনাফা অর্জন করে, তাহলে তার পুরোটাই গ্রাস করতে পারে সমহারের একটি মূল্যস্ফীতি। সম্পত্তি পুনর্বন্টনেও খেল দেখায় মূল্যস্ফীতি; আমি যদি ১০০ টাকার ঋণ করি ১০ টাকা সুদে, তাহলে আমার সুদাসল ১১০ টাকা ৫৫ টাকা হয়ে যাবে ১০০% মূল্যস্ফীতিতে। মানে, মূল্যস্ফীতি ব্যাংকের জন্য খারাপ, কিন্তু ঋণগ্রহীতার জন্য স্বর্গ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯২১ সালের একটি স্থির সুদের বন্ধকি ঋণের পুরোটাই শোধ করা যেত ১৯২৩ সালের একটি পত্রিকার মূল্য দিয়ে। লাতিন আমেরিকায় ৩০ বছরের মর্টগেজ এখনো প্রায় নিষিদ্ধ। মূল্যস্ফীতির অমোঘ টানেই বাংলাদেশে ঋণ পুনঃতফসিলিকরণের জন্য পাগলপারা হয়ে ছুটতে দেখা যায় অনেককে। ... ...
অনেক বড়ো মানুষ হয়েও যাঁদের মনটা ছোট - আরে নাঃ যা ভাবছেন তা নয় - বলতে চাইছি - যাঁদের মন অবরে সবরে ছোটবেলায় ফিরে যেতে চায় - এ গল্প তাঁদের জন্যে। ... ...
একটা অসমাপ্ত নকশা তৈরি হত, বদলেও যেত প্রতিদিন- এই সব হিসেব না মেলা সংখ্যাদের জ্যান্ত দেখাতো- আলাদা রং, আলাদা শেপ- যেন একটা বোর্ড গেমের ঘুঁটি সব- খেলার নিয়ম তৈরি হওয়ার অপেক্ষা করছে; মনে হত, আমাকেই এই গেমের রুল ঠিক করতে হবে- তার আগে নকশাটা চিনে নেওয়া খুব জরুরী । নকশা বা একটা গল্প -স্পাই বলেছিল। ... ...
বোঝো, সবে জাল গোটানো চলছে, তখনই কি না পুলিশের উৎপাত... শেষমেষ কী হবে... ... ...