আমি তো সিংহরাশি, মাংস খাচ্ছি বাসি, তোমরা বদ্ধ পাগল, খাচ্ছ কচি ছাগল ... ...
গতদিনের মেঘ আর কুয়াশার পর এই দৃশ্য যে দেখব, আমরা কেউ-ই ভাবিনি, আনন্দে আত্মহারা হয়ে ক্যামেরা বের করতেও ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়! ডানদিক থেকে আলোর একটা সরু রেখা হঠাৎ আকাশকে রাঙিয়ে দিতেই সম্বিৎ ফিরল! তখনো এভারেস্ট দেখার কথা ভাবিনি। তার জন্যে আমাদের আর-ও একটু বাঁদিকে সরে যেতে হবে ফালুটের রাস্তায়। এরপর শুরু হয়ে গেল আশ্চর্য অপার্থিব রঙের খেলা, একেবারে টুকটুকে লাল থেকে কমলা হয়ে উজ্জ্বল স্বর্ণাভ হয়ে ওঠার পালা, ডানদিক থেকে একে একে পান্ডিম, কাঞ্চনজঙ্ঘা, শিমোভো, গ্যেচা বা গ্যোচা, কাবরু ডোম, কাবরু উত্তর ও দক্ষিণ, রাথোং, আর সবশেষে কুম্ভকর্ণ ১ ও ২ – দিগন্তজোড়া তথাগত-শরীর, শায়িত এবং নিদ্রিত। ‘Sleeping Buddha’। সবচেয়ে আশ্চর্য হল, একটুকরো মেঘ ঠিক কাঞ্চনজঙ্ঘা শিখরের উপরে জমে রয়েছে যেন যুবরাজ সিদ্ধার্থের রাজছত্র হয়ে। আমরা এসে দাঁড়িয়েছি সেই রাজদরবারে, একেবারে যথার্থ রাজদর্শন বটে! ... ...
মাঝে মাঝে আমার মনে হয়, আমি এক আবাসন কারখানায় বসবাস করছি। যেখানে তাকাই সেখানেই আবাসন ব্যবসা, প্রতি মুহূর্তে জন্ম নিচ্ছে এই ব্যবসা। যাঁরা বাপ-দাদার কাছ থেকে সম্পত্তি পেয়েছেন, তাঁরা তো আছেনই, পাশাপাশি অবসরপ্রাপ্ত পেশাজীবী, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, উকিল, ইমাম, আমলা—সবাই নেমে পড়ছেন এই ব্যবসায়। কিছুদিন আগে একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়েছিলাম। কয়েকজন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে একটি প্লট কিনেছেন দুই বছর আগে, ফ্ল্যাট বানানোর জন্য এখন গৃহঋণ চাই তাঁর, বিস্তারিত শুনে বললাম, ‘স্যার, এসব ক্ষেত্রে তো গৃহঋণ হয় না, রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার হলে করে দেওয়া যেত।’ প্রধান শিক্ষক মহোদয় উৎসাহের সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘আমি তো ডেভেলপারই, আপনি আমাকে রিয়েল এস্টেট লোনই করে দিন।’ ... ...
অনেকের সঙ্গে আমিও ... ...
সত্তর দশক আর সত্তর দশকের কবিদের নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয় না, তাই ... ...
শীতের বিকেলে অবিশ্রান্ত পাতা ঝরছিল - ছাউনির ফাঁক গলে হলুদ পাতা প্রাচীন কূপের অভ্যন্তরে খসে খসে পড়ছে। মাথার ওপরে ঝকঝকে আকাশ আর রোদ , দিন শেষ হতে যেন অনেক বাকি- হাতে যেন অগাধ সময়; এই সব সময়ে ঝরা পাতার সম্পূর্ণ গতিপথ নিরীক্ষণ করার কৌতূহল জাগে। ইঁদারার দেওয়ালে কালচে সবুজ শ্যাওলা- ভেলভেটের মত ; চটে যাওয়া পলেস্তারা, এবড়োখেবড়ো ইঁট কারুকার্য ফর্ম করেছে -যাকে ব্যাকড্রপে রাখলে খসে পড়া পাতাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না; বিভ্রম ঘটে কখনও - পড়ন্ত পাতাকে স্থবির মনে হয়, পরক্ষণেই শ্যাওলাকে পাতার মত লাগে, তারপর নিম্নগতি পাতাকে আবার ঠাহর করতে গেলে, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না, সে' পাতা কুয়োর তলদেশ স্পর্শ করে গেছে ততক্ষণে। পাতা পড়তে থাকে, আরও পাতা, অজস্র পাতা, তাদের গতিপথ সম্পূর্ণ গোচরের আগেই আবার যাবতীয় বিভ্রম পুনরায় ঘটে যেতে থাকে। ... ...
আমার মনে হচ্ছিল, অনীক আর আমার সমস্যাটা যেন কিছুটা বুঝতে পারছি- আবছা আবছা- যেন একটা মাকড়শার জালের মতো, গাছের দুটো ডালের মাঝখানে আঠালো সুতোর একটা নকশা হচ্ছিল আস্তে আস্তে । আরো মনে হচ্ছিল, স্বপ্নার নদী পেরোনোর ঐ মোমেন্টটার মত আমরাও একটা মুহূর্তর সন্ধানে আছি- দ্য স্বপ্না মোমেন্ট- আমি আর অনীক, দুজনেই। মুহূর্তটা এসে গেলেই আমরা আর একসঙ্গে থাকতেই পারব না। ... ...
আজ একটা বিচিত্র ভ্রমণের গল্প বলবো আপনাদের। প্ল্যান করে তো সবাই ঘুরতে যায়। দুপুরে খেতে বেরিয়ে কখন ঋষিকেশ চলে গেছেন? আমি গেছি। ... ...
#একাকী_ভ্রমি_বিস্ময়ে - হাফলং ... ...
টাকা ডবলের পোক্কিয়া শুরু হলে বলে, ওফ্ খী উত্তেজনা... ... ...
কলেজ স্ট্রিট এলাকার সাড়ে চার দশকের নানা আখ্যান ও স্মৃতি বিষয়ক রচনা ... ...
আজ পৌষ বা মকর সংক্রান্তির ভোরবেলায়, ১ মাস ব্যাপী টুসু উৎসবের শেষ দিন রাঢ়বাংলার বিশেষত পুরুলিয়া, বীরভূম, বাঁকুড়া, মেদিনীপুরের গ্রামীণ মেয়েরা দলবদ্ধভাবে যখন টুসুগান গাইতে গাইতে টুসুদেবীর ভাসানের জন্য চলেছেন জলাশয়ে বা নদীতে। যখন টুসুর জাগরণের শেষ দুই রাত জেগে গান গেয়ে গেয়ে ঘরে ঘরে তাঁরা তৈরি করেছেন গড়গড়্যা বা বাঁকা বা উধি পিঠা, পুর পিঠা আর নানারকম মিষ্টি । ঠিক এরকমই এক সময়ে আজ থেকে ঠিক ৭দশক আগে মানভূমের আপামর বাঙালি আর বাংলাভাষী ভূমিজনেরা তাঁদের টুসুপরবকে উদযাপন করেছিলেন মাতৃভাষার মর্যাদা আর স্বীকৃতির দাবিতে লেখা অসংখ্য রাজনৈতিক টুসুগানের কথায় সুরে। খেটে খাওয়া গরিব গ্রামীণ মানুষের এই সর্বতোভাবে অহিংস সত্যাগ্রহ আন্দোলনটির একমাত্র হাতিয়ার ছিল টুসুগান। আর ঠিক এ কারণেই এই আন্দোলন আজও অনন্য হয়ে রয়েছে 'টুসু সত্যাগ্রহ' নামে। ... ...
আওয়াজকে অনুসন্ধান করতে মোরসালিনের দিকে প্রশ্নাতুর চোখে তাকায় ছেলেটি। এক সময় সেখানে ফুটে উঠা আস্বাসের উপর ভর রেখে ছুটতে শুর করে… ব্লকের ঢালে গড়িয়ে যেতে যেতে সে পতঙ্গে মিলিয়ে যেতে থাকে। মোরসালিনের চোখ যতই ক্ষুদে বণিকটির পিছু ধাওয়া করতে থাকে, ততই যেন ব্রিজটি সামনে এগিয়ে আসতে থাকে। ছেলেটা যত নীচু হতে থাকে, ব্রিজটা ততই উঁচু হতে থাকে তার দৃষ্টিসীমাকে অদ্ভুত সব কনিক উপহার দিয়ে। ... ...
এই সিঁড়ি তৈরির সময় না জানা গেলেও ওই শিলালিপি থেকে এটা জানা যায় যে কোপানের তেরো-তম রাজা তার পূর্বসূরী স্টেলা (৬৩) কে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানাতে এই সিঁড়ি নির্মাণ করেছিলেন। হায়ারোগ্লিফিক সিঁড়িটি একুশ মিটার (৬৯ ফুট) দীর্ঘ, দশ মিটার (৩৩ ফুট) চওড়া এবং এতে মোট বাষট্টিটি ধাপ রয়েছে আর প্রতি ১২তম ধাপের কেন্দ্রে একটি বড় ভাস্কর্যযুক্ত চিত্র রয়েছে। আরেকজন প্রধান মায়া দেবতার নাম কুকুলকান। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সর্পদেবী মনসার সঙ্গে এই দেবতার বেশ মিল রয়েছে। কুকুলকান হলো মায়ানদের সর্পদেবতা, তার বাবা হলেন সর্পদের রাজা। কুকুলকান মূলত ডানাওয়ালা এক সরীসৃপ, যাকে মায়ারা শ্রদ্ধাভরে পূজা করতো। এই পূজার জন্য নবম ও দশম শতকের মাঝামাঝিতে তারা তৈরি করেছিল ১০০ ফুট উচ্চতার একটি পিরামিডসদৃশ উপাসনালয়। চারদিকে ৯১টি করে সিঁড়ির ধাপ, আর একেবারে ওপরে উঠার জন্যে একটি ধাপ, সব মিলিয়ে ৩৬৫টি ধাপ ছিল এই উপাসনালয়ে। ... ...
আগের পর্ব : পর্ব - ১ পর্ব - ২ পর্ব - ৩ মেঘমা থেকে বেরিয়ে ঘন্টাখানেক চলার পর বেশ কিছুটা উঠেই দেখি গাড়ির রাস্তা হাজির। তবে এই সময়ে গাড়ির ঝামেলা তেমন নেই, যারা যাওয়ার, চলে গেছে এতক্ষণে। রাস্তা থেকে দূরে চেয়ে দেখি মেঘের আড়ালে পাহাড়ের লুকোচুরি আর রোদের আলো-ছায়ার খেলা তখন-ও চলছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা আমাদের পাহাড়ের ঠিক উল্টোদিকে, টোংলু পৌঁছনোর আগে তার দেখা পাওয়া যাবে না। গেলেও এত বেলায় এই মেঘ আর কুয়াশায় সে মুখ দেখাবে বলে মনে হয় না। নিত্যম কিছুক্ষণ পরে জানালো, আর ঠিক তিনটে বাঁক পার হলেই টোংলু। প্রথমদিনের টার্গেট শেষ করার আনন্দে আমরা হই হই করে উঠলাম। শেষ বাঁকটা পার হয়ে ... ...