নিকোলাস পাড়া। নাফাখুম থেকে প্রায় চার পাঁচ ঘন্টা ঝিরি পথ দিয়ে হেঁটে পাহাড় টপকে এক অদ্ভুত জায়গায় পৌছালাম।এই পাড়া প্রতিষ্ঠা করেছে নিকোলাস ত্রিপুরা। পদ্মা নদীর মাঝির হোসেন মিয়ার মত নতুন এক নতুন ঠিকানা তৈরি করেছে নিকোলাস। তার গল্প পুরোপুরি আমি জানি না, আমি যা এখন পর্যন্ত জানি তা হচ্ছে এ এক অদ্ভুত জায়গা। আমরা এসে পৌছাতে পৌছাতে সন্ধা নেমে এসেছিল। তারপর থেকেই জাদুবাস্তবতার জগতে চলে গেছি যেন। এখানে পাহাড়ের কোলে কুসুম গরম সুর্য টুপ করে ঢলে গেল। কয়েক বাড়ি আদিবাসিদের সন্ধ্যা আসল সরল পথে। যে সমাজ আমরা দেখে অভ্যস্ত তার সাথে তুলনা কই? শিশুরা অবাক দৃষ্টিতে আমাদের দেখছে। আমরা আমাদের নিয়ে ব্যস্ত। খাড়া পাহাড় উঠে আমরা ক্লান্ত, তারচেয়ে আসলে আমরা ব্যস্ত নতুন জায়গার চারপাশ দেখতে। এরপরই যেন শুরু হল জাদুর খেলা। শা করে তারা চলে আসল আমাদের কোলে। ঝকঝকে লাখ লাখ তারা যেন আমাদের ঘিরে নেচে চলছে। আমাদের সাথে মজা নেওয়ার জন্যই যেন দুই একটা তারা দৌড়াচ্ছে এদিক ওদিক। হুট করেই খেয়াল করলাম আমাদের সকল কাজের সমাপ্তি হয়েছে। আগামীকাল ভোরে নতুন পথে রউনা হওয়ার আগে আমাদের ঘুম আর খাওয়া ছাড়া কোন কাজ নাই। এই গ্রামের মানুষ অন্য সময়ে কী করে এই সময়ে? সন্ধ্যায় চা নাস্তা খাওয়া মানুষ আমরা। এরপর নানা অকাজে ব্যস্ত থাকা আমরা বুঝেই উঠতে পারছি না এদের জীবন। এই গ্রামে পানির ব্যবস্থা নাই। পানি নিয়ে আসে ওরা অনেক নিচে থেকে। নেই কোন পয়নিস্কাশনের সুস্থ কোন ব্যবস্থা। নেই মানে নেই। বন হচ্ছে এদের ভরসা স্থল। এই সমাজ কীভাবে আমাদের বুঝে আসবে? আসার কোন সম্ভাবনা আছে? আমার মনে হয় না। ছনের ঘর। ঘর উঁচু করেছে বাঁশ দিয়ে খুটি দিয়ে। তাড়াই বাঁশের বেড়া হচ্ছে মেঝে। আমরা যা দেখি তাই মুগ্ধ হই, বা মুগ্ধ হওয়ার ভান করি। কৃত্রিমতায় পূর্ণ জীবন কি জানে সত্যিকার মুগ্ধ হওয়া কাকে বলে? ... ...