![]() বইমেলা হোক বা নাহোক চটপট নামিয়ে নিন রঙচঙে হাতে গরম গুরুর গাইড । |
প্লাবনভূমি
পরিমল ভট্টাচার্য
একাত্তরে বাংলাদেশ যুদ্ধের পর সেই ইতিহাসটা আবার রিপিট হল। দুর্ভাগা এই রাজ্য! এমনিতেই জমি বাড়ন্ত, ব্যবসাবাণিজ্য সব চলে যেতে শুরু করেছে তখন, কলকারখানাগুলো ধুঁকছে। তার ওপর এসে আছড়ে পড়ল এই বিপুল মানুষের ঢেউ। ফের একটা বেঁচে থাকার লড়াইয়ে শামিল হওয়া। তারপরে তো ক্ষমতায় এল পার্টি। অপারেশান বর্গা হল। দশটা বছরে ভূমিহীনদের মধ্যে যত পাট্টা বিলি হয়েছে, স্বাধীনতার পর এতগুলো বছরে সারা দেশে আর কোথাও হয়েছে কি? খোঁজ নিয়ে দেখো। যদিও সেটা শেষ কথা নয়। সেটা হতে পারত একটা শুরু। হল না।
কিন্তু মেজকা, ভূমিসংস্কার করতে গিয়ে গ্রামের আসেপাশে সব পতিত নাবাল জলা জংলা জমিগুলোকে খাস করে নেওয়া হল। ওর মধ্যে কিন্তু নদীর প্লাবনভুমিও ছিল, বছরের পর বছর পড়ে থাকত ওড়কলমি শেয়াকুল বনডুমুরের ঝোপঝাড়ে ভরা। সবার জন্য অবারিত - গ্রামের আতুরি বুড়িরা পাতালকোঁড় হিঞ্চে-ব্রাহ্মী-গিমে শাক শাপলা তুলে নিয়ে বাজারে আসত। পুজোপার্বণে গরীবগুর্বো মেয়েবউরা তুলে আনত আকন্দকুঁড়ি ধুতরোর ফুল, দুর্ভিক্ষের সময় গেঁড়িগুগলি। পাঁচ-দশ বছরে একবার বড়োসড় বন্যা হলে জলে ভরে গিয়ে বসতিগুলোকে বাঁচাত, কিন্তু ...
বানভাসিরা
রুখসানা কাজল
দাড়িওয়ালাদের অবির্ভাব ঘটল। তীব্র অসন্তোষে গনগন করছে ওদের মুখ, আমাদেরও তো ঘর ভেসেছে ---
রায়হান গা বাঁচায়, আরে ভাইসাব আমরা তো সামান্য সাংবাদিক। এই যে ছবি টবি তুলে নিলাম এগুলো পত্রিকায় দিয়ে নিউজ করলে আপনাদের জন্যে ত্রাণ চলে আসবে। সুন্দর চেহারার এক দাড়িওয়ালা চোখ ঘোঁচ করে জানতে চায়, কিন্তু লিস্টি যে করলেন আপনারা আমাদের নাম তো লিখলেন না? রায়হান মাখনের মত হাসে, ভাইরে আপনারা ত এখানে ছিলেন না তাই লেখা হয়নি। এবার হবে দেখবেন। কায়দা করে দাড়ি রাখা বেঁটে মত একজন সামনে এসে মারমুখী দাঁড়ায়, এখন ত এসেছি, নিন আমাদের নাম লিখেন লিস্টিতে।
মিত্রর পত্র
অভিজিত মজুমদার - অনুবাদ সায়ন কর ভৌমিক
আজ সেই বহুপ্রতীক্ষিত ও বহুপ্রতিশ্রুত ৫০ (x ৬) দিন পর আমাদের দেশ দুর্নীতিগ্রস্ত মশা থেকে মুক্ত, গঙ্গা নদীতে বইছে পবিত্র টাকা, বয়স্কদের ওষুধের জোগান নিশ্চিত, সন্ত্রাসবাদ, নক্শালপন্থা, মাওবাদ, জালটাকার বাণিজ্য, ড্রাগ ব্যবসা, মানব পাচার সব কিছু উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে গেছে।
প্রধানমন্ত্রী মহোদয়, এখন দয়া করে সেই 'অর্ধেকের বেশি সাংসদ', যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপনার যুদ্ধকে বাধা দিয়েছিলেন, তাদের নাম গুলো প্রকাশ্যে আনুন। দুই তৃতীয়াংশের বেশী সাংসদ তো আপনারই জোটের। দয়া করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন তাদের ওপর। অন্তত আপনার ঘরের সাংসদদের ওপর তো বটেই। ইংরেজীতে কথাই আছে, চ্যারিটি বিগিনস অ্যাট হোম, তাই না?
এক টুকরো নাইলনের দড়ি
সম্বুদ্ধ বিশী
উপসংহারে লেখকরা লিখছেন, “ফাঁসীর আগে ধনঞ্জয় বলেছিল সে নিরপরাধ। গরিব বলে তার ফাঁসী হচ্ছে।" অতি সাধারণ কথা। যেকোনো ফাঁসীর আসামীই একথা বলতে পারে। পুরো বইটা পড়বার পরে এই বাক্যের অভিঘাত কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। একটা সিস্টেমের কাছে মানুষ কি পরিমাণ অসহায়, সেটা বারবার মনে হচ্ছিল এই লাইনটা পড়ে। বইটা যেদিন শেষ করি, সেটা কালীপূজোর রাত। যেরকম হয়, রাতের স্তব্ধতা ভেঙে মাঝে মাঝে পটকা কি তুবড়ির আওয়াজ আসছে। আমার কাছে তখন কিরকম অবাস্তব লাগছিল সবকিছু। একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। আমার ধারণা, বইটা পড়লে যে কারোর মধ্যেই এই ঘোরটা তৈরি হবে। মানুষ যে framework এ বাস করে, তার ভিত ধরে টান দিলে এরকম হয়।
পশ্চিমবঙ্গে নিম্ন দামোদরের বন্যা কেন হচ্ছে? কী করণীয়? >> (১) ডিভিসি প্রকল্পের আগে ব্রিটিশ আমলে
আজাদি লাইভ
ফের এবছর ভয়াবহ বন্যার কবলে নিম্ন দামোদর এলাকা। ১৯৭৮ এবং ২০০১ সালের বন্যাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এর তীব্রতা। তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে ডিভিসি-র বাঁধগুলির কার্যকারীতা এবং পরিচালনা। একটি বড়ো দৈনিকে হেডিং হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জলে ডুবল বাংলা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দুটো প্রশ্ন তুলেছেন, এক) ডিভিসির জলাধারগুলোতে ড্রেজিং করছে না কেন কেন্দ্র সরকার? দুই) জল ছাড়ছে ডিভিসি। এই অবস্থায়, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ‘ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা হলো’ – এটা লব্জে পরিণত হয়ে গেছে যেমন, তেমনি সম্ভবতঃ সামনের দিনে আরেকটি লব্জ তৈরি হতে চলেছে, ‘ঝাড়খণ্ডের জলে বন্যা বাংলায়’। মুশকিল হলো, এই কথাটা বলা আর ‘সূর্যের তাপে খরা বাংলায়’ বলার মধ্যে কোনো তফাত নেই। এই ধরনের কথা, সমস্যাটি ঠিক কী, তা গুলিয়ে দেয়। সমস্যাটির সমাধান করার উদ্যোগ নিতে বাধা দেয়। এবং একইসাথে ভেতরে ভেতরে, এটা কোনো সমস্যা না, এই বোধও তৈরি করে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল নিষ্ক্রিয়তা।
পশ্চিমবঙ্গে নিম্ন দামোদরের বন্যা কেন হচ্ছে? কী করণীয়? >> (২) ডিভিসি জলাধার ও নিম্ন দামোদরের বন্যা
আজাদি লাইভ
ফের এবছর ভয়াবহ বন্যার কবলে নিম্ন দামোদর এলাকা। ১৯৭৮ এবং ২০০১ সালের বন্যাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে এর তীব্রতা। তীব্র প্রশ্নের মুখে পড়েছে ডিভিসি-র বাঁধগুলির কার্যকারীতা এবং পরিচালনা। একটি বড়ো দৈনিকে হেডিং হয়েছে, ঝাড়খণ্ডের জলে ডুবল বাংলা। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী দুটো প্রশ্ন তুলেছেন, এক) ডিভিসির জলাধারগুলোতে ড্রেজিং করছে না কেন কেন্দ্র সরকার? দুই) জল ছাড়ছে ডিভিসি। এই অবস্থায়, বন্যাদুর্গতদের মধ্যে ‘ডিভিসি-র ছাড়া জলে বন্যা হলো’ – এটা লব্জে পরিণত হয়ে গেছে যেমন, তেমনি সম্ভবতঃ সামনের দিনে আরেকটি লব্জ তৈরি হতে চলেছে, ‘ঝাড়খণ্ডের জলে বন্যা বাংলায়’। মুশকিল হলো, এই কথাটা বলা আর ‘সূর্যের তাপে খরা বাংলায়’ বলার মধ্যে কোনো তফাত নেই। এই ধরনের কথা, সমস্যাটি ঠিক কী, তা গুলিয়ে দেয়। সমস্যাটির সমাধান করার উদ্যোগ নিতে বাধা দেয়। এবং একইসাথে ভেতরে ভেতরে, এটা কোনো সমস্যা না, এই বোধও তৈরি করে। যার অবশ্যম্ভাবী ফল নিষ্ক্রিয়তা।
সর্বজনীন
প্রতিভা সরকার
এইখানে, ঠিক এইখানে তার নাড়ীর ওপর হাত রাখে দুর্বার মহিলা সমণ্বয় সমিতি। আলেকজান্দ্রা কলন্তাই যখন দেহোপজীবিনীর সংজ্ঞা দেন এই বলে যে সে এমন এক ব্যক্তি যে অন্যদের ওপর বেঁচে থাকে, যার শক্তি যৌথতার জন্য ব্যবহৃত হয় না, যে "শ্রমপরিত্যাগকারী", তখন তার সামনে যে বিষয়গুলি অনুপস্থিত থেকে যায় তা হল হিউম্যান ট্র্যাফিকিং, রাজনৈতিক মদত আর ব্যক্তিস্বাধীনতার চূড়ান্তকরণ। হ্যাঁ, তার কথা ঠিক, শুধু উঁচু হিলের জুতোর জন্য এই পেশায় যায় কিছু মেয়ে, কিন্তু সংখ্যায় তারা নগণ্য। গতকালের TOI তে খবর আছে পুণে থেকে উদ্ধার করা এক বাঙালি মেয়ের হাসপাতালে শুয়েও যে আরো চারজনকে উদ্ধার করার কাজে সার্থক হয়েছে একটি এন জি ও র সহায়তায়। একজন বাংলাদেশি মাইনর। কাজ দেবে বলে নিয়ে গিয়ে যে ব্রথেলে বিক্রি করা হয়েছিল তার মালিক এক শিবসেনা নেতা। ভয়ে পুলিশ প্রথমদিকে নিকম্মা হাবভাব করছিল। পরে যাই হোক সাহায্যও করে।
নষ্ট তৈজসে সমলৈঙ্গিক গিল্টি
অজিত রায়
কলকাতা-কেন্দ্রিক ন্যাকাচিত্তির সাহিত্যের এঁদো কপচাবাজি এবং তার ভেক্টর প্রতিষ্ঠানের মুখে জোর থাপ্পড় মেরে তার গিল্টি-করা দাঁত উখড়ে তার ভেতরকার মালকড়ি ফাঁস করে দিতে আজ থেকে তিপ্পান্ন বছর আগে দানা বেঁধেছিল বাংলা সাহিত্যের প্রথম আভাঁগার্দ আন্দোলন ----- হাংরি জেনারেশন। যা ছিল আক্ষরিক অর্থেই কলকাতার বাইরের কবি-লেখকদের নয়াল সংযোজন। তাঁরা এসেছিলেন এমন এক মিলিউ থেকে যেখানে বাংলার তথাকথিত ভদ্রায়তনিক সংস্কৃতির কোনও শিস-ই গজাবার নয়। জীবনের অনেকরকম শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকতে হয় যেখানে। হাংরি সাহিত্যের কলিন অধ্যয়নে এই প্রেক্ষাপটটি সর্বাগ্রে মাথায় রাখতে হবে। এই হাঙ্গামার প্রধান স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরীর শৈশব অতিবাহিত হয়েছিল বিহারের ভয়ঙ্কর কুচেল অধ্যুষিত বাখরগঞ্জ বস্তিতে। তাঁর টায়ার ছোটবেলা অতিক্রান্ত মুসলিম অধ্যাসিত দরিয়াপুর মহল্লায়। সেই অস্বাচ্ছন্দ্য, অখল জ্বালা, ক্ষোভ আর বিদ্রোহকে বুকে করে মলয়ের বেড়ে ওঠা। সংস্কৃতির একেবারে নিচেকার পাদানি থেকে আসা, নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে ওঠার প্রতিটি মানুষী শঠতার সাক্ষী, স্পেঙলারের সংস্কৃতি ও অবক্ষয়কালীন সর্বগ্রাস তত্ত্বে তা-খাওয়া একজন বাইশ-তেইশ বছরের কৃষ্টিদোগলা বা কালচারাল বাস্টার্ড লেখালেখির মাঠে এলে যা ঘটবে, সেটা তো রফা হয়েই ছিল।
অলীক মানুষঃ সৌন্দর্য ও বিষাদের প্রতিমা নির্মাণ
বিপুল দাস
উপন্যাসটি বিবৃত হয় কখনও সহজ বর্ণনায়, কখনও লম্বা-নেকো সেপাই নামের এক পাহারাদারকে আচাভুয়ার মত দাঁড় করিয়ে মনোলগের আকারে, কখনও টুকরো সংলাপে। উপন্যাসে বিধৃত হয় মাটির মায়াবন্ধন, ভোগবাসনার এই দুনিয়া, জীবনের রহস্যময়তা, শফির ক্রমাগত মেটামরফোসিস, ক্রমশ কিংবদন্তীর দিকে উড্ডীন এক নাচার পিরের অসহায় আত্মসমর্পন এবং জীবনের প্রতি ঘৃণা ও ভালোবাসার টানাপোড়েনে তৈরি একটি আলো ও অন্ধকারের নকশাদার জামদানি। কিন্তু আশ্চর্য এই যে, ওই নক্শায় আলো ও অন্ধকারের চৌখুপি সমান উজ্জ্বল। এমন কী, অন্ধকার যেন তীব্রতায় আচ্ছন্ন করে প্রচলিত সমস্ত বোধ, আমাদের বেস্ট-সেলার গ্যাদগেদে রচনাসমূহ। নির্মাণকৌশলের ভেতরে চারিয়ে যাওয়া Negetivism এক অসামান্য দক্ষতায় প্রচলিত, মান্য এবং তথাকথিত শাশ্বত জীবনবোধকে অতিক্রম করে। অন্য এক অপরিচিত ভয়ংকর সত্যের মুখোমুখি দাঁড় করায় পাঠককে। সাদা জিন ও কালো জিন সমস্ত উপন্যাসজুড়ে অদৃশ্য দোরঙা সুতোর বিনুনি বুনতে থাকে। লৌকিক আর অলৌকিকের দ্বন্দ্বে জমিনে ফোটে বিস্ময়কর কুসুম।
মহার্ঘ্য গ্যাস - একটি অচ্ছে সমাধান
সেখ সাহেবুল হক
আপনাদের মনে প্রশ্ন আসতেই পারে। দেশে এখনো পর্যাপ্ত পরিমানে প্রাকৃতিক গ্যাস রয়েছে। তবুও সকাল সকাল এমন মানবগ্যাসের দুর্গন্ধময় আইডিয়া কেন ছড়িয়ে দিতে চাইছি। না পেটখারাপ হয়নি, আপনি হয়তো জেনে গেছেন গ্যাসে ভর্তুকির খবর। এই অবস্থায় গ্যাসে রান্নার অভ্যাস ছেড়ে মাটির উনুনে ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। বিদ্যুতের বিলের কথা মাথায় রেখে ইন্ডাকশন কুকার বা হিটার চালানোর আগেও আপনাকে ভাবতে হবে। সাধারণ পরিবারের এসব কিনে ওঠার সামর্থ্য নেই। সর্বোপরি আপনি যদি প্রকৃত দেশপ্রেমিক হন, দেশের ছাপান্ন ইঞ্চির ছাতিধারী প্রাণপ্রিয় প্রধানমন্ত্রীর মা-বোনেদের গ্যাসে রান্নার স্বপ্নকে সফল করতে এই মানবগ্যাসের সাহায্য নিতে হবে। কারন স্বাভাবিক এল.পি.জি কেনার মতো পরিস্থিতি হয়তো আগামীতে থাকবে না।
মানবগ্যাস ব্যবহারে উদ্যোগী হয়ে অচ্ছেদিনের এই ধারাকে এগোতে দিন। বেশি চিল্লাচিল্লি করলে পাকিস্তান টুরিজম আছে...। সরকার যখন ভর্তুকি দিতে অপারগ, তখন আমাদের আম্বানী বা আদানীদের মতো দেশপ্রেমীদের মুনাফার কথা চিন্তা করে চড়া দামে গ্যাস কিনতে হবে। নচেৎ চুপ থাকতে হবে, কারন সেনারা সীমান্তে লড়ছেন। কাজেই মধ্যপন্থা হিসেবে মানবগ্যাসের ব্যবহার অতি উত্তম উপায়।