এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • শীতের গপ্প---পৌষের সেই অন্যরকম দিন গুলো

    shrabani
    অন্যান্য | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ | ৯৬৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৭:০৪432486
  • পুজোর মত শীতকালেরও অনেক গল্প আছে, ছুটির গল্প বেড়ানোর গল্প, পিকনিকের গল্প। লেপের মধ্যে ঢুকে টর্চ জ্বালিয়ে গল্পের বই পড়ার, ঘর অন্ধকার করে ছুটিতে এক হওয়া ভাইবোনেদের ব্ল্যাক আউট খেলার গপ্প। সেসব লিখুক সবাই।
    আমি লিখব একটি গ্রামের শীতকাল কেমন হয়, মেলাটেলা ছাড়া পিঠেপাব্বণ সংক্রান্তি এসব গ্রাম্য উৎসব নিয়ে ।
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৭:২০432529
  • শীতকাল টা যে কি ভালই লাগে শুধু সকালে ওঠা টা ছাড়া। একবার অ্যানুয়াল পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলে তারপরে মজা ই মজা। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ানো, মামাবাড়ি চিড়িয়াখানা,ছাদের ওপর চড়ুইভাতি। সকালে একটু পড়ে নিলেই সারাদিনের ছুটি। তখন বেরিয়ে পড় এধার ওধার। আজ এখানে এই মেলা ঐ মেলা, কাল ওখানে অমুক উৎসব। বাতাসে হিমেল হাওয়ার সাথে মিশে যায় ছুটির হাওয়া। অতি বড় ঘরকুণোও তার ছোঁয়ায় হয়ে ওঠে ঘরছাড়া।
    শুধু নানা উৎসব নয়, এর সাথে আছে হরেক রকমের শীতের খাওয়া দাওয়া। কড়াইশুঁটির কচুরি আর নতুন গুড়ের সন্দেশ আমার ফেভারিট। মামাবাড়ী গেলে রোজ বিকেলে পাওয়া যায় বাতাসা পাটালি, চুষতে চুষতে যাও পার্কে খেলতে। মাঝেমাঝে লীগ্যালী চুরমুরও খাওয়া হয়, স্কুল, পড়া এসব তেমন নেই বলে ছাড় পাওয়া যায়।

    পরীক্ষার পরেই মা জানাল এবার আমরা যাব দেশের বাড়ীতে, পুরো ছুটিটা। ইস, শুনে অবদি আমাদের মুখ চুন, এখানে এত হরেক রকমের মজা ছেড়ে সেই ধ্যাদ্দেড়ে গোবিন্দপুর! পুজোর সময় সেখানে অনেকে আসে, বাড়ীর পুজো জমজমাট। তখন যেতে ভালই লাগে কিন্তু শীতকালে দেশে কি আছে!

    বাবা প্রতিবছর যায় ধান ঝাড়ানোর সময়। আশ্বাস দিল, "চলনা, গিয়ে দেখবি। প্রতিবছর তো এখানে একই রকম। অন্যরকম ভালও তো লাগতে পারে।"
    অবশ্য একটাই রক্ষে, পৌষমাস শেষেই ফিরে আসা। শীত একেবারে যাবেনা তখনও, মাঘ থাকবে। আর মা তো বলে মাঘ মাসই আসল শীত। "মাঘের শীতে বাঘে পালায়"।

    অগত্যা কি আর করা! মুখ চুন করে দুই বোনে গোছাতে লাগলাম একমাসের নিজেদের দরকারী জিনিসপত্র। বড়দের যেতে হবেনা। তাদের বড় ক্লাস, কলেজ, পরীক্ষা। এই ছোট হওয়ার যে কি জ্বালা!

    বই খাতাও নিতে হল কিছু, ছুটিটা একেবারে ফাঁকি দিয়ে কাটানো যাবেনা। তিনজনের দলে মা ই একমাত্র বেবাক খুশী, অনেককাল পরে সংক্রান্তি তে থাকবে। সংক্রান্তি মানে নাকি মহা উৎসব। আমাদের চিড়িয়াখানা, পিকনিক, মেলা বঞ্চিত হৃদয়ে একরাশ অভিমান। সারা বছর এই ছুটিটার দিকে তাকিয়ে বুকবেঁধে পরীক্ষার নদী টা কোনোরকমে পার করি, সেই ছুটির প্রোগ্রামই ভ্যাস্তা!
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৭:২৬432540
  • পৌষ মাস পড়ার একদিন আগে রওনা হলাম বাবা মা আর আমরা দুজন। কারণ পৌষ মাসে যাত্রা নাস্তি, ঘর ছেড়ে বেরোতে নেই, যে যেখানে আছ সেখানেই থাক।
    "বারে বাবা যে আমাদের রেখে কদিন বাদেই ফিরে আসবে আবার সেই সংক্রান্তির সময় আনতে যাবে?"
    "চুপ করে থাক, বড়দের কথায় কথা বোলোনা।"
    মায়ের চাপা ধমক। পরে বুঝেছি আসলে এসব মানামানির ও অনেক কাটান ছাড়ান। সেইরকম কিছু একটা দিয়ে বাবা বেরিয়ে যাবে। এইসব নিয়মকানুন যখন আলগা শিথিল হতে শুরু হয়েছিল তার প্রথম সুবিধেটা পুরুষেরা পেয়েছিল, "বেটাছেলের দোষ হয়না" টাইপের রায়ে। মেয়েদের অনেককাল ভুগতে হয়েছে সংস্কারের পাশবন্ধনে।

    এবার আর পুজোর মত সাত সকালে নয়, দুপুরে খেয়েদেয়ে গুছিয়ে বেরনো। গাড়ীতে দুটো জানলাই দিদি আর আমি দুজনে পেয়ে যাই, তবু মুখে হাসি নেই। শহর ছেড়ে গাড়ী যখন হাইওয়ে তে তখন চোখ জলে টুবুটুবু। আমি তো দু:খে মায়ের কোলে ঘুমিয়েই পড়লাম খানিকটা। ফুলদি গোঁ হয়ে বসে রইল, আশেপাশের দিশ্যি না দেখেই। বড়দের চা খাওয়ার জন্য গাড়ী থামল যখন আমাদের এক ঘুম হয়ে গেছে। পড়ন্ত রোদের আলোয় লালচে ধূসর বিকেল। গাড়ীর গরমে সোয়েটার খুলে ফেলেছিলাম। মা পরিয়ে দিল, বাইরে গেলাম, শিরশিরে শীত। রাস্তার শুকনো ধুলোর আর চারপাশের ঘন ঝোপঝাড় গাছপালার কেমন একটা সোঁদা গন্ধ। সব মিলিয়ে কেমন একটা মন কেমন করা বেলা।

    চাপর্বের শেষে গাড়ী আবার চলতে শুরু করে। একসময় ঝুপ করে অন্ধকার নেমে আসে। রাস্তায় আলো নেই, গাড়ীর হেডলাইটে দু পাশে গাছপালা ডোবা খাল ঠিকমত ঠাহর হয়না। যখন একটা করে বাজার বা বাস স্ট্যান্ড আসে কিছু টিমটিমে বাল্ব বা কালিপড়া হেরিকেন লণ্ঠন ঝুলতে দেখা যায়। সেই আলোতে চারপাশের অন্ধকারকে আরো গাঢ় লাগে। যত এগোয় গাড়ী আর সন্ধ্যে, তত আশেপাশে লোকের সংখ্যাও যেন কমতে থাকে। সব মিলিয়ে শুরুটাই বিচ্ছিরি। কলকাতার আলো ঝলমল দোকানপাট রাস্তা লোকজন মনে করে আরো মনখারাপ হয়ে ওঠে।

    এভাবেই চলতে চলতে কখন যে গ্রামের এলাকায় ঢুকে পড়েছে গাড়ী বুঝতেই পারিনি। আসলে বাইরে কিছু দেখা যাচ্ছিলনা বলে দুজনে বাধ্য হয়ে অন্তাক্ষরী খেলছিলুম এবং তাই নিয়ে ঝগড়া। মাও একটু চুপচাপ, আমাদের বকতে যেন ভুলে গেছিল। এর মধ্যেই গাড়ী এসে পাড়ার দোরগোড়ায়। যাক আলো আছে, লোকের জানালা দিয়ে লাইট দেখা যাচ্ছে। বাড়ী অবদি হেঁটে যাওয়ার পথে ঠান্ডা মালুম হচ্ছিল, মা নামার আগেই স্কার্ফ বেঁধে দিয়েছিল তবু ঐটুকু যেতেই দাঁতে দাঁতে ঠকঠক!
    বাড়ী পৌঁছে কোনোরকমে জামাকাপড় ছেড়ে খেয়ে দেয়ে লেপের মধ্যে। লেপগুলো রোদে দেওয়া ছিল তাই যা আরাম! শুতে যাবার আগেই দুজনে একসাথে ঠিক করে ফেলেছি আর কোনোবার মা এলেও আমরা মামাবাড়ীতে রয়ে যাব, কিছুতেই আসবনা।
    "তুই ই তো সবার আগে ম্যা ম্যা করে কাঁদতে বসবি মাকে ছেড়ে", বড়র ধমক ছোটকে। আমি একটু দ্বিধায়, তারপরে ভেবেচিন্তে রায় দি, "সামনের বছর তো আরেকটু বড় হয়ে যাব, কাঁদব না।"

  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৭:৩৮432551
  • ঐ ঠান্ডায় সকালে সহজে ঘুম ভাঙলনা। বেশ ডাকাডাকিতে যখন শেষমেশ উঠলাম সকালের রোদে ঘর ভরে গেছে। নীচে উঠোনে হই হই। বাজার এসে গেছে, একদিকে মাছ কাটা হচ্ছে। মা একবার সবজি দেখছে, একবার মাছ। "কি ভালো, কি টাটকা। কপিগুলোর কি সুন্দর বাঁধুনী, কইমাছগুলো খাবি খাচ্ছে যে রে।"

    কাল রাতে আশপাশ দেখা হয়নি। মুখে ব্রাশ নিয়ে ছুট্টে বাগানে, চারদিক কেমন ভেজা ভেজা , মাটি গাছপালা। রাতভোর শিশির পড়েছে, পাতার ওপরে মুক্তোর বিন্দু, দুহাতে ধরে বিন্দুটাকে না ভেঙে পাতাটাকে এদিক ওদিক দোলানোর খেলা। অনেকটা জায়গা জুড়ে ঘাসের বন কেমন সাদা সাদা। খুঁটিয়ে দেখলে আসলে ঘাসের আগায় খুব ছোট ছোট শিশিরদানা। লাফিয়ে লাফিয়ে পুকুরঘাটের শেষ ধাপে নেমে জলে আঙুল ঠেকাই। কি কনকনে ঠান্ডা রে বাবা!
    বাড়ির পিছনে ছোটখামারে আমাদের সারি সারি ধানের গাদা। এক একটা গাদা কেমন সুন্দর করে সাজানো দেখে ছোট কুঁড়েঘর মনে হয় খড়ের চাল সহ।

    সকালের জলখাবারের পাট শেষ করে বাবা বসে খামারে চাষীদের সাথে হিসেবে। কাজের কাকীমা রান্নাঘরের কয়লার উনুনে আঁচ দেয়, মা স্নানে ঢোকে। ঠান্ডায় কেউই পুকুরে নামবেনা, ঘরেই স্নান গরম জলে। পুজোর সময় কত শোরগোল আর এখন চারপাশটা শান্ত। তাও কতক্ষণ ঘরে বসে থাকা যায়?
    গুটি গুটি পায়ে সদর দরজা দিয়ে বাইরে যাই। দেখে অবাক লাগে যে বিরাট মাঠ টা ঘিরে পুরনো পাড়ার আমাদের সবার বাড়ীগুলো সেই খালি মাঠটা আর খালি নেই। আদ্ধেকটা জুড়ে বড় ছোট নানা ধানের গাদা। ও বলা হয়নি, ধানের গাদা যেখানে বসানো হয় সেখানে জমি আগে ঘাস তুলে গোবর আর মাটি দিয়ে নিকিয়ে মসৃণ করা হয়। তারপরে বাঁশের পাটা পেতে তার ওপর গাদা বসানো হয়।

    মাঠে বড়জেঠু ছোড়জেঠু ও আরও কাদের কাদের গাদা। বাকী মাঠটাও নিকিয়ে পরিস্কার করা। সেখানে যেন মেলা বসে গেছে। পাড়ার কেউ আর বাড়ীতে নেই। এখানে ওখানে এর ওর মাদুর পাতা। ধারিতে সব বাড়ীর লেপ কম্বল রোদে। সবাই রোদ পোয়াচ্ছে, কেউ গল্প করছে। ছেলেমেয়েদের সামনে পড়ার বই খাতা। সকালে মাঠেই পড়া হয়েছে, এখন আড্ডা চলছে ছোটদের বড়দের। ভারী মজা লাগল, আমরাও গিয়ে একটা মাদুরে ঢুকে পড়লাম। সবার যা কাজ কারবার সব মাঠের রোদেই। গিন্নীরা চাল বাছছে, কেউ কেউ বড়ি দিচ্ছে। আচার লঙ্কা কুল শুকোচ্ছে এক দিকে। একটু বয়সী ঠাকুমা জেঠীরা শ্যেণ দৃষ্টিতে আচার বড়ি পাহারা দেয়, বউমা সংকীর্তনের ফাঁকে ফাঁকে।

    যারা বাড়ির ভেতর অফিসের ভাত রান্নায় ব্যস্ত তারাও এসে মাঝে মাঝে আড্ডায় যোগ দিচ্ছে। একপাশে ওরই মাঝে চান করে এসে যাদের বেরনোর খেয়ে বেরিয়ে যায়, অন্যরা নরক গুলজার করে।

    ব্যস, আমাদের আর পায় কে! জমে গেল হুটোপুটি, সারা দিনমানে আর বাড়ির মুখটি দেখা নেই। দুপুরবেলা মাঝমাঠের রোদ চলে গেলে মিত্তিরদের উঠোন দুয়ার আছে, এদিকে সেদিকে আরো কিছু বার দুয়ারে রোদ আসে। তখন মাঠের মাদুরগুলো সব দুয়ারে ওঠে পড়ে।

    খাওয়াদাওয়ার পরে গিন্নীদের ঠিকঠাক অবকাশ। এতক্ষণ তো ঝোলে ঝালে ফোড়ণের মাঝেসাঝে যা হয়। এবার হাতে আসন বা উল নিয়ে রোদে বসা। বড়দাদের দুয়ারে বসে একটু পাকা গিন্নীদের বিন্তির আসর। বিন্তি নামটা কেউ শুনেছে? তাসের একটা খেলার নাম। কি মজাই না হত। পানের ডিবে নিয়ে গিন্নীরা বসতেন। সেই প্রথম দেখলাম জেঠী কাকীরা রান্নাবান্না ছাড়াও খেলাধূলাও করে। মাঝে মাঝেই খেলুড়ে বদলে যায়, সবাইকে সুযোগ করে দিতে। আর খেলার ফাঁকে যাবতীয় গল্প, নিন্দে চর্চা সব চলে, হাতের তাসের দানের মতই পড়ে নানা খবরের পাতা!
  • Manish | 117.241.228.239 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৮:০২432562
  • কি সুন্দর নকশি কথার ঠাস বুনন। শ্রাবনী চালিয়ে যান।
  • M | 59.93.210.148 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৯:৫৪432573
  • দারুন হচ্ছে, আমারো কত কি মনে পড়ছে।
  • Manish | 117.241.228.239 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২০:১১432584
  • @ M , মনে পড়া কথাগুলো লিখিত ভাবে দেখতে চাইইইইইই।
  • Nina | 66.240.33.43 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২১:১২432595
  • বাহ! খুব ভাল লাগছে। এত সুন্দর করে লেখা, যেন মনে হচ্ছে আমিও পিঠে রোদের তাপ পাচ্ছি।

    কিকিয়া তুই ও তোর গল্পের টই এ তোর মন ও উজাড় কর।

  • ranjan roy | 115.184.4.209 | ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ২৩:০৮432606
  • শ্রাবণী! সব যেন জলরঙে আঁকা ছবির মত দেখতে পাচ্ছি। একটা যেন ঘোর ঘোর ভাব। এই ঘোর যেন না কাটে!
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১০:৫৪432487
  • রোজ দুপুরে বড়রা যখন আড্ডা তাস খেলা বা সেলাই বোনাইয়ে ব্যস্ত, আমরা ছোটরা খেলতাম লুকোচুরি। লুকোচুরি খেলাটা চিরাচরিত হলেও লুকোনোর জায়গা গুলো অভিনব। সেজন্যেই শীতের স্পেশাল খেলা এটা। চতুর্দিকে ধানের গাদা, দুই গাদার মাঝখানে সরু একটু ফাঁক, কোথাও গলির মতো, লুকোও না কত লুকোবে। এছাড়া আছে গাদার নীচ, একটু বড় অত্যুৎসাহীরা গাদার ওপরেও উঠে বসে। অবশ্য ধরা পড়লে ছড়ি পেটা। মা লক্ষী না, তার ওপরে চড়ে বসতে আছে। পুঁচকেরা কেউ কেউ আবার চুপচাপ ভালোমানুষের মত গিয়ে তাসের আসরে পাশাপাশি দুই খেলুড়ের মাঝে তাদের আঁচলের তলায় লুকোতো। এরা অবশ্য একেবারেই দুধেভাতে। তাই ইচ্ছে করেই এদের সহজে খুঁজে পাওয়া যেতনা।

    রোদ ফুরোলে সবাই একে একে ঘরে ঢুকত। ছোটদের গায়ের ধুলো, খড়কুটো সাফ টাফ করে হাত পা ধুইয়ে এবার গায়ে উঠত শীতবস্ত্র। কর্তারা ঘুম থেকে উঠে চা খেয়ে আড্ডা জমাত দুগ্গামন্দিরের আটচালায় বা একটু দুরে গ্রামের পঞ্চানন্দতলায়। বেলা পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঠান্ডাটা জমে উঠত।
    বিকেলে একটু বড় ছেলেমেয়েরা খেলত গজ বা গিজা। শীতের শুরুতেই রীতিমত কোদাল আর চুন দিয়ে ছেলেরা গজ খেলার ঘর টানত বেল তলায়। সারা শীত এই ঘর থাকত। বেলতলার পাশেই আটচালা। বড়রাও আড্ডার ফাঁকে উৎসাহী দর্শকের ভূমিকায়। চিৎকার চেঁচামেচি দুদলের হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে জমে উঠত খেলা।
    গজ খেলায় আমি চান্স পেলাম না পুচকে বলে, তবে ফুলদি লম্বা হওয়ার দরুন মাঝে সাঝে রেগুলার খেলোয়াড়ের অনুপস্থিতিতে "আড়ি" হবার সুযোগ পেল বেশ কবার। "লম্বী" যে হত সে বাড়ির সবচেয়ে লম্বা ছেলে। সেইসময়ে আটচালার খুঁটি ধরে পাক খেতে খেতে খেলা দেখতাম আর মনে মনে সংকল্প নিতাম একদিন বড় হয়ে এমন লম্বা হব যে লম্বী হওয়ার চান্স না পেলেও অন্তত আড়ি হওয়া আমার কেউ রুখতে পারবেনা!
    ভালো কথা গজ খেলা কিন্তু মিক্সড ম্যাচ, বাড়ির ছেলেমেয়ে একসাথে।

    বড় হলাম, লম্বাও কম হলাম না তবে তখন পুরনো আমলের গাঁঘরের আরো অনেক খেলার মত গজ খেলাও হারিয়ে গেছে, লোকে ভুলে গেছে। সেখানেও এসবের জায়গায় এসে গেছে ব্যাডমিন্টন ইত্যাদি ঠুকঠাক শৌখীন শহুরে খেলা, বাচ্চাদের বিকেলবেলা গান নাচের ক্লাস করতে যাওয়ার ইঁদুর দৌড়!

    প্রথম দুদিন ধানের গাদায় ধামসানোর (মার ভাষা) ফল টের পাওয়া গেল তৃতীয় রাত্তিরে। সারা গায়ে চুলকে চুলকে দাগ হয়ে গেল, ঘুমোতে পারছিনা। মা অস্থির, কারণ খুঁজে পাচ্ছে না। পুকুরের পচা জলেও (মা উবাচ) নামিনি। গা চুলকাচ্ছে কেন? পরদিন সকালে জেঠী এসে কারণ বার করল, একে শুকনো হাওয়া তারপরে ধানের ধারালো খড়কুটোর টুকরোতে গা লাগছে সব্বদা। এখানকার ছেলেমেয়েদের কিছু হয়না কেন তারা নাইতে যাবার আগে ভাল করে সর্ষের তেল ঘসে গায়ে।
    মায়ের মত ছিল খেলতে না দেওয়া, জেঠী এক কথায় নস্যাৎ করে দিল। কচি ছেলেরা খেলাধূলা করবেনা এই সামান্য কারণে। অতএব ধরে সর্ষের তেল মাখাও সারা গায়ে চান করতে যাবার আগে। আমাদের যদিও তেলের গন্ধ অসহ্য লাগে তবু খেলার কথা ভেবে টুঁ শব্দ করলাম না। মাও রাতে আমাদের পাশে শুতে হবে ভেবে বিরক্ত হয়ে গজগজ করতে করতে তেল মাখালো। দেশের এই নিয়ম, মাকেও এখানে তার বড়দের কথা শুনতে হয়। তবে তেলের গন্ধ সহ্য হয়ে যাওয়ার পরে দেখা গেল চুলকানির সমস্যা সত্যি সত্যি শেষ, শুধু লেপের বালিশের ওয়াড়, বিছানার চাদর ফি হপ্তায় সাবান সোডার জলে সিদ্ধ করতে হত!
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১১:২১432498
  • এত মজা তাও অন্যরকমের, আমরা তো চিড়িয়াখানা আর মেলা ভুলতেই বসেছিলাম।
    বড়দিনে হল বনভোজন। সে এক বিরাট কান্ড। সেদিন সবারই ছুটি। বড় বাগানটা বেশ অনেকটা বড়, ঝোপ ঝাড় গাছপালা অনেক বেশী, গা ছমছমে। কত অদ্ভুত অদ্ভুত গাছ ছিল বাগানে, আমি প্রথম নাম শুনলাম। কদবেল, মাদার, ডুমুর। একা একা ছোটদের ভেতরে যাওয়া বারন, কেউ বোধহয় সাহসও করত না। শুধু বাগদী পাড়ার কিছু সাহসী লোকজন ঢুকত কাঠপাতা কুড়োতে, ফল পাড়তে।

    বাগানের সামনের দিকে একটু দুরে জঙ্গল পরিস্কার হল। বড় বড় উনুন খোঁড়া হল। রান্নার জায়গায় চারদিকে চারটে খুঁটি পুঁতে ওপরে ছাউনি করে দেওয়া হল। বিয়েবাড়ীর মত লাগছিল। এক উনুনে আমিষ মাংস মাছভাজা আর এক উনুনে নিরামিষ খিচুড়ি। পাড়ার সবাই সেদিন একসাথে খাবে।নিরামিষ যারা খাবে তাদের তরকারী বাড়িতে হল।

    বনভোজনের নিয়ম অদ্ভুত। চাঁদা তোলা হয় তবে শুধু পয়সার নয়। পয়সা বাইরের জিনিস যেমন ছাগল, পেঁয়াজ আর তেল মশলা যা বাইরে কিনতে হয় তার জন্য। এটা আগেই হিসেব করে নিয়ে নিল বড়রা। ভোর ভোর সব বাজার চলে গেল ছেলে ছোকরারা। কর্তারা উনুন খোঁড়া ইত্যাদির তদারক করতে থাকল। আমরা ছোটরা মেয়েদের সাথে বাড়ি বাড়ি গেলাম মুড়ি চাল ডাল আলু শুকনো লঙ্কা হলুদ এইসব চাঁদা তুলতে হাঁড়ি আর ব্যাগ নিয়ে। সবাই নিজেদের বাড়ির জন গুণে চাল ডাল আলু এইসব দিল। সাধ্যমত প্রয়োজনের বেশীই দিল। যাদের একটু অবস্থা খারাপ তাদের কাছে পয়সা তো নেওয়াই হলনা, চালডালও নামমাত্র শুধু নিয়মরক্ষে তোলা হল।

    সে যা হুল্লোড়ের দিন বলে বোঝানো যাবেনা। রাঁধতে বসল একটু বড় বাড়ির পুরুষ সদস্যরা, এত রান্না মহিলারা হ্যান্ডেল করতে পারবেনা। অবশ্য সাহায্যে রইল বড় জেঠী, ছোট কাকীদের মত এক্সপার্টেরা। কুটনো কোটা ইত্যাদি পুরোটাই মেয়েদের দায়িত্বে, কাজের লোকও থাকল কিছু জল তুলতে কাঠ আনতে।
    গোটা পাঁঠা কিনে এনে একটু দুরে মাঠের ধারে ছাড়ানো হল।আমরা ছোটোরা দাঁড়িয়ে দেখলুম মাংস কাটা। তখন এদিকে মাছভাজার কড়া চেপে গেছে আর জলখাবারের মুড়ি বেগুনীর বেগুনী ভাজা হচ্ছে। বিশাল কড়ায় তেল দেখে মনে হয় আমার মত একটা ওর মধ্যে পড়লে আরামসে ছাঁকা তেলে ভাজা হয়ে যাবে। ভয়ে একটু দুরে দুরেই রইলুম!

    নানা কান্ডের পরে বিশাল বিশাল হাঁড়িতে মাংস আর খিচুড়ী বসল যখন তখনই বেলা হয়ে গেছে। প্রাথমিক গোলযোগ কেটে গিয়ে সবাই একটু থিতু হল।মা আর কাকীমারা তারই মধ্যে বাচ্চাদের খাওয়ার মোয়া নাড়ু হাতের কাছে নিয়ে রাখল।মোটামুটি এদিন বাড়ির মেয়েরা ফ্রি। এক একটা জায়গায় বিভিন্না দলে নানা অ্যাক্টিভিটিজ শুরু হয়ে গেছে। তাস খেলা, গানের লড়াই, ক্যারম, কোথাও আবার শুধুই গপ্প!

    বেলা প্রায় তিনটে নাগাদ মাংসের হাঁড়ি নামিয়ে বাবা কাকারা একটা যুদ্ধ জয়ের হুংকার দিল। আর সাথে সাথে চারিদিকে সাড়া পড়ে গেল। হুটোপাটিতে ক্লান্ত ঘুমন্ত কচিকাঁচাদের নড়া ধরে মায়েরা তুলতে লাগল। তাদের চ্যাঁ ভ্যাঁ তে মুখরিত মাঠবন, অন্যান্য পাড়ায় জানান গেল রায়েদের বনভোজন হচ্ছে।
    একধারে শতরঞ্চি ভাঁজ করে পেতে খাওয়ার জায়গা হল, সারি সারি কলাপাতা পড়ে গেল। গেলাস যে যার ঘর থেকে আনা। বড়জেঠু আবার মাটিতে বসে খেতে পারেনা, তার জন্য চেয়ার পাতা হল। মা একটা থালায় করে খিচুড়ি মাংস মাছভাজা আর চাটনি তুলে দিল জেঠুকে।
    আমার মাংসটা একটু ঝাল লাগলেও দারুন লেগেছিল, খিচুড়ি দিয়ে টকটক টাকনা মেরে অনেকটা খেয়ে নিলুম। মা তাই দেখে স্থির করল এবার থেকে বাড়ির তরকারীতেও ঝাল দেওয়া হবে, আমার জন্য নাকি সব তরকারীই আঝালা করতে হয়, স্বাদ হয়না।

    কতদিন কেটে গেল, এরপরে অনেক পিকনিক করেছি, অনেক জায়গায় অনেক ফিস্ট, সব হাইফাই মেনু, ঝাঁ চকচকে ব্যবস্থা। কিন্তু ছোটোবেলার এই বনভোজনের মত এত আনন্দ বোধহয় আর কিছুতে কোনোদিন পাইনি!

  • pagla baba | 59.177.165.241 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:২৬432509
  • এইযে ! একটা জিনিশ ছেড়ে গেলেন যে। সকলে খেতে যাওয়ার আগে সমস্ত কিছু সাজিয়ে গুজিয়ে বনের মধ্যে এক পরিস্কার জায়গায় বনদেবীকে খেতে দেওয়া। এটাও মহা উৎসাহের সঙ্গে পালন করা হয়।
  • pagla baba | 59.177.165.241 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:২৯432520
  • * জিনিস ... sorry
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৪:৫৬432523
  • অন্তত এটা ছাড়িনি!
    এ হল আমাদের বাড়ির পরিবারের গল্প, মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত দেবতারা ছাড়া আর কোনো দেবদেবীর সিন নেই! বনে ভোজন তাই নাম বনভোজন, দেবীটেবীর কোনো ব্যাপার কোনোদিন ছিলনা! :)
  • . | 220.253.71.161 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:০২432524
  • ভালই লাগছে পড়তে, কলকাতায় বাড়ী, দেশে (county) যাওয়া, গাড়ী, প্রাচুর্য্য। বেশ হিন্দী ফিল্ম টাইপ (যদি ও জানি এটা সত্যি স্মৃতিচারণ), কেবল রামু কাকা কে দেখতে পেলাম না।
    পশ্চিম বাঙলার গ্রাম? যে থাকে সেই জানে- কি বস্তু!
  • . | 198.96.180.245 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:০৪432525
  • পুঁদিচ্চেরি!

    বিধিসম্মত সতর্কীকরণ: আমার কোনো শাখা নাই।
  • .. | 220.253.71.161 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:১৫432526
  • এবার?
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:১৮432527
  • কলকাতায় বাড়ী কি করে বুঝলেন? গ্রামের লোকে চাকরির জন্য কলকাতায় বা শহরে যেতে বা থাকতে বাধ্য হত তখন, এখনকার মত ওসব দিকে এত চাকরীর সুবিধে ছিলনা আমার বাবা দাদুদের।

    যাতায়াতও এত সুগম ছিলনা তাই বেশীদিনের জন্য জিনিসপত্র বাচ্চা সহ যেতে হলে টানা গাড়ী ভাড়া করে যেতে হত। সারা দিনে দু চারটি বাস, ট্রেন তাতে রাজ্যের ভীড়! গাড়ী শুনেই নিজের গাড়ী?

    হ্যাঁ যেটা ছিল সেটা হল জমিজায়গা, তাই ধান উঠত নবান্ন হত তবে এ বামফ্রন্টের ভূমি সংস্কারের কিছু আগে। এখন মধ্যবিত্তদের আর গ্রামের জমির সে ঠাট নেই।যারা চাষ করত তারা এখন মালিক আর দয়া করে যেটুকু দেয় সে দিয়ে সাধারণ মধ্যবিত্তদের চলেনা!তবে আগে চলে যেত, অনেক বাড়িতেই চাল কিনতে হতনা।

    আর একটা ছিল সেটা হচ্ছে প্রচন্ড একটা আত্মীয়তা, পাড়ার মানুষদের মধ্যে আত্মিক যোগাযোগ, হয়ত সেটাও আজকাল নেই। বচসা ঝগড়াঝাঁটি মনোমালিন্য যে ছিলনা তা হয়ত নয় তবে সেসব তো একটা ছোট্টো মেয়ের ছুটির আনন্দের মাঝে চোখে পড়ার বা মনে রাখার কথা নয়।:)
  • Manish | 117.241.228.173 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:২৭432528
  • শ্রাবনীর সুন্দর লেখা পড়ে একটু নস্টালজিক হয়ে গেছি। গ্রামবাংলার আরো কিছু ফলের নাম দিলাম,গাছগুলো হারিয়ে গেছে বা কম দেখতে পাওয়া যায়।
    যজ্ঞ্যডুমুর,ডেউয়া,গাব,গোলাপ জাম্বুল,ফলসা।
    আর একটি ফল যাকে সুজি ফল বলতাম অনেকটা আশ ফলের মতো দেখতে,ফলটা টিপলেই মিস্টি সুজির মতো দানা দানা রস বেরিয়ে আসতো।
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:৪১432530
  • বনভোজনের পরে বাবা ফিরে গেল। আমরাও আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে উঠলাম গ্রামের রোজকার রুটিনে। নিত্য একই সব তবু প্রতিটা দিন একটা অন্যরকম স্বাদ নিয়ে আসে। সকালে ঘুম থেকে উঠে যেই মনে পড়ে কোথায় আছি মুখ হাসিতে ভরে ওঠে। মাঝে বৈচিত্র বলতে একদিন পাড়ার বউ মেয়েদের সিনেমা যাওয়া।

    দু মাইল দুরে সবচেয়ে নিকটবর্তী হল। কে একজন জানালো ভালো বই এসেছে। ব্যস তোড়জোড় শুরু। কোনো বাড়ী থেকে একলা সিনেমা চলে যাবে বাড়ির বউ বা মেয়েরা কেউ এ ভাবা যেতনা তখন। আর কর্তা গিন্নী একসাথে সিনেমা যাওয়া বিশেষ করে হিন্দি, সে তো একেবারে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ। এরকম দু একটা কেস যে ঘটেনা বিশেষ করে কমবয়সী দম্পতিদের মধ্যে তা নয়, তবে তাদের নিয়ে সমালোচনাও হয় বহু, মেয়েদের দ্বিপ্রাহরিক আড্ডায়! সেরকমটা হলেও সাহসী কর্তাটি আগে আগে সাইকেলে চলে যায়, বধূ একা বা সখী ননদিনী সমভিব্যাহারে রিক্সায় আলাদা। হলে গিয়ে এক হোন দুটি প্রাণ!

    দু তিনটি উৎসাহী মেয়ে ও বউ সব বাড়ি গিয়ে গিয়ে সবাইকে যাওয়ার জন্য ধরতে লাগল। নয় নয় করেও ছোট বড় মিলে জনা পঁচিশেকের দল হল। যেতে হবে অফিস কাছারীর দিন যখন কর্তারা থাকবেনা, ম্যাটিনী শো, বাবুদের বাড়ি ফেরার আগে ফিরে আসতে হবে। যাব বললেই তো হবেনা, টিকিটের দাম রিক্সার ভাড়া এসবের ব্যাপার আছে। মহা উৎসাহে কজন লেগে গেল চাঁদা তুলতে। দুদিন আগে থেকে দশ খানা রিক্সা বলা হল। সকাল বেলা বাড়ির বেকার ছেলে দুজনকে পাঠানো হল অ্যাডভান্স টিকিট কাটতে।
    ঐদিন সকাল থেকেই সাজ সাজ রব। রান্না বাড়ার পাট তাড়াতাড়ি মিটিয়ে তৈরী হতে হবে। মাঠের আড্ডা তেমন জমেনা। বিকেলের জলখাবারের পাটও সেরে রাখতে হয়। বর্ষীয়সী যারা তারা অবশ্য রোজের মতই মাঠে বসে চাদর কোলের ওপর গুটিয়ে। ঠাকুরের বই নয় জেনে চাপাস্বরে বাড়ির বউয়েদের অধ:পাতে যাওয়ার আলোচনা করতে করতে কপাল চাপড়ায়!

    আমাদের মত ভাগ্যবান বাচ্চারা যাদের মায়েরা তাদের সঙ্গে নিয়ে যাবে, খেলায় সেদিন আর তাদের উৎসাহ নেই। যারা যেতে পারবেনা তারা একটু তফাতে দাঁড়িয়ে পুরো তোড়জোড় নিরীক্ষণ করছে আর দাঁত কিড়মিড় করছে। বড়রা টেরও পায়না কিভাবে পাড়ার ছোটরা পরিস্কার দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে, আকাশে বাতাসে রণ দামামা। একদলের চোখে "কাল তো আবার আমাদের সাথে খেলতে আসবি তখন দেখে নেব" তো আর একদলের পরিস্কার "কালের কথা কাল দেখা যাবে, আজ বয়েই গেল" দৃষ্টি।

    যখন শেষমেশ সেই যাত্রার শুভক্ষণ এল তখন দেখার মত সিন। লাইন দিয়ে দশটা রিক্সা বেরোচ্ছে পাড়া থেকে। ছোটরা কেউ কেউ কোলে, কেউ আবার জায়গার অকুলানে পাদানিতে। আমি মায়ের কোলে, দিদি জেঠীমার। তবে ফুলদি এ নিয়ে প্রচুর বিদ্রোহ করেছে সকাল থেকে, ও এখন বড় হয়ে গেছে। কোলে বসালে যাবেই না বলে দিয়েছে। মা একটু সমস্যায় পড়েছিল, একা মেয়েকে ঘরে রেখে যাবেনা। অথচ ছোট মেয়েদের জন্যে আলাদা রিক্সা করলে লোকে কি ভাববে, পয়সা দেখাচ্ছে!

    অনেক কাকুতি মিনতি আর ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ওকে রাজী করানো গেছে এই শর্তে যে আমাদের গাড়ীর পাদানিতে কেউ বসবেনা, বিচ্ছিরি লাগে। আমার কোনো সমস্যা নেই। মায়ের কোলে বসতে আমার দারুন লাগে বিশেষ করে মা যখন বাইরে যাবার জন্য সাজে। কি সুন্দর সব নানা গন্ধ পাই মায়ের গা থেকে আর তার সাথে শাড়ীর খড়মড়। অবশ্য ফুলদি জেঠীমার কোলে বসে নাক কুঁচকে থাকে, পান দোক্তার গন্ধ নাকি ওর দুটি চক্ষের বিষ!

    বাস রাস্তার ধারে হল। গ্রামের সিনেমা হল হলেও মোটামুটি নতুনই ছিল, খুব একটা খারাপ নয়। সিট গুলোতে গদিটদি আঁটা। ছবি শুরুর আগে আর শেষে দুটো গান বাজত, হয়ত একটাই রেকর্ডে। পরেও অনেকবার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় শুনতে পেয়েছি ঐ গানদুটো। গান বদলেছে বলে মনে পড়েনা, বোধহয় বন্ধ হয়ে গেছে অথবা আমাদের যাওয়া কমে গেছে। গানদুটো ছিল "চন্দন পালঙ্কে শুয়ে" আর "ঝরাপাতা ঝড়কে ডাকে"। আমি এ দুটো গান আর অন্য কোথাও শুনিনি, আগেও নয় পরেও নয়!
    সিনেমার নামটা এখন আর মনে নেই, সাদা কালো। বোধহয় উত্তমকুমার ছিল। শুধু মনে পড়ে সিনেমা হলের লাগোয়া সিঙাড়া মিষ্টির দোকান। ছবি শেষে বড়রা চা আর মুচমুচে ভাজা সিঙাড়া খায়, আমরা শুধু সিঙারা খেয়ে ফেরার রিক্সায় উঠি।
  • quark | 202.141.148.99 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৬:৪৭432531
  • সন্ধ্যা মুখুজ্যের অমন বিখ্যাত গান, পরে আর শোনেন নি?
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৭:২০432532
  • ধান ঝাড়াই শুরু হয়ে গেল। আমাদেরও ধানের গাদায় লুকোচুরি খেলা তখনকার মত বন্ধ। তবে এও এক অন্যরকম উত্তেজনা। যেদিকে কান পাতা যায় শুধু ঝাড়াইয়ের শব্দ আর তার ধুলোয় ধুলোক্কার সারা পাড়ার বাতাস। সকাল থেকেই কাজের লোকজন চলে আসে, বিকেল অবধি চলে ধান ঝাড়া। রোজকার ধান ঝেড়ে বেছে বস্তা বন্দী হয়ে উঠে যায় হামারে। ঝাড়া হয়ে গেলে খড়গুলোও গাদা করে রাখা হয় যতদিন না সেগুলো বিক্রি হয়।

    এইসময় বাড়ি বাড়ি ডবল ব্যস্ততা। এতগুলো মজুর লাগে তাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা, এছাড়া নিত্যকম্ম। আমাদের বাড়ীতে খাবারের ব্যবস্থা ছিলনা তার বদলে টাকা দেওয়া হত। প্রতিবার তো বাবা একলা আসে তাই এই নিয়ম। তবে জলখাবার দেওয়া হয়। মুড়িমাসী এইসময় সব বাড়ীতে রোজ টিন টিন মুড়ি দিয়ে যায়। আমরা যখন মুড়ি খেতাম, মা আলুভাজা চানাচুর কত কি দিয়ে মেখে দিত। মজুরদের মুড়ি দেওয়া হত বড় বড় কানা তোলা কাঁসিতে। তার সঙ্গে এই বড় একডেলা গুড়, কাঁচালঙ্কা আর পেঁয়াজ বা পেঁয়াজ সাই। আমি হাঁ করে ওদের খাওয়া দেখতাম। এই মুড়ির পাহাড় কে কেমন জল ছড়া দিয়ে নত করত আর এত বড় বড় গ্রাস তুলে অচিরেই থালা খালি করে দিত তা আমার কাছে বিস্ময় ছিল।
    আমার খুব ইচ্ছে ছিল ওরকম পেঁয়াজ কামড়ে গুড় মুড়ি খাব। কিন্তু মা দিত না। কাঁচা পেঁয়াজ মা নিজে খেতনা, আমাদেরও খেতে দিতনা, মুখে গন্ধ ছাড়ে।

    একদিন রাত্রিবেলা খিড়কী দোরে ঘাটের কাছে কি শব্দ। তারপরে চিৎকার, "ও কাকী দরজাটা খোল।" আমরা তখন রান্নাঘরে দরজা বন্ধ করে উনুন ধারে। সন্ধ্যে তে পড়া সেরে ঢুকে যেতাম। আঁচের তাপে গরম হয়ে থাকত ঘরটা। রান্না হয়ে গেলে ওখানেই থালা পেতে বোসো। গরম গরম রুটি সেঁকা হয়ে সোজা উনুন থেকে পাতে।
    মায়ের খুব সাহস, দুটো বাচ্চা নিয়ে মাঠের ধারে একটেরে বাড়ী তবু সঙ্গে সঙ্গে আলো জ্বালিয়ে "কে রে" বলে দরজা খুলতে গেল। আমরা নিশ্চিত চোর। এখন কথা হচ্ছে চোরে কি কাকী বলে ডাকবে? দিদির বক্তব্য ডাকতেও পারে। গ্রামের চেনা চোর হবে। এখানে অমনিই, চোর টোর কেও সবাই চেনে চোর বলে। চুরি হলে তাদের ধরলে গেরস্তর দরকারী জিনিস ফেরত পাওয়া যায়। গ্রামের চোর কখনও মুড়েমুচড়ে চুরি করেনা, রয়েসয়ে অল্প দরকারী জিনিস নিয়ে যায়।

    এত জল্পনা কল্পনার মধ্যেও জানি মা আছে যখন ভয় নেই। মায়ের একা ডাকাত তাড়ানোর গল্প পরিবারে সবার মুখে ফেরে। তবু আমরা রান্নাঘরের দরজাটা বন্ধ করে বসে থাকি। মায়ের ধাক্কানো শুনে অনেক কষ্টে দরজা খুলি। খুলেই দুজনে দুটো চাঁটা খাই মাথায়। ওমা, চোর কোথায়, মায়ের সাথে তো নতুন বাড়ীর বাবুদা। ডান হাতটা চেপে ধরে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মা ফুলদিকে ওপরের ঘর থেকে তুলো আর ডেটল আনতে বলে।

    ফার্স্ট এড দেওয়ার পর জানা গেল এই রাত্তিরে মক্কেল কই মাছ ধরতে বেরিয়েছিলেন। একখানি বৃহৎ মৎস ছিল, ঠিকমত কায়দা করতে পারেনি, হাতে কাঁটার ঝাপটা মেরে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে। আমাদের মহা উৎসাহ, কই মাছ ধরা দেখব। কিন্তু সেদিন আর দাদা সাহস করলনা কইদের সাথে পাঙ্গা নিতে। ঠান্ডায় কই মাছেরা মাঝ পুকুর ছেড়ে ঘাটের কাছে অল্প গভীরে উঠে আসে উষ্ণতার আশায়। ওপর থেকে টর্চ ফেলে তাদের তাগ করে শিকারীরা, তারপরে একরকম সরু ফলার মত ছুরি দিয়ে মাছের মাঝামাঝি ফর্কের মতো গেঁথে তুলে ফেলে। এক গাঁথুনী তে না তুলতে পারলেই মাছেরা ঘুরে অ্যাটাক করে আত্মপক্ষসমর্থনে। কইমাছের কাঁটার ধাক্কা বেশ জ্বালাময়ী হয়। এহেন অবস্থায় শিকারীর দশা দাদার মতো হতে পারে!
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১৭:৩৫432533
  • ধান উঠলে শুরু হল চাল তৈরীর ব্যস্ততা। নতুন ধানের চাল লাগবে সংক্রান্তিতে। সংক্রান্তি আসার আর বেশী দেরী নেই। প্রতি বছরই বাড়িতে পিঠে হয় নানা রকমের, কিছু খেতে ভালো লাগে কিছু খাইনা। যা যা লাগে তা তৈরী হয়ে যায় আমাদের বাড়িতে। তার জন্য যে এত কিছু করতে হয় সেই ধারণাটাই ছিলনা। তবে চতুর্দিকে একটা তোড়জোড়, উৎসবের মেজাজ। আমাদের বাড়ী ধান সেদ্ধ হয়না, একেবারে তৈরী চাল আসে। আমি অন্য বাড়ী যেখানে ধান সেদ্ধ হয় দেখতে যাই, গন্ধটাই দারুন লাগে। এ কাজ নাকি সবাই পারেনা, সব বাড়ীতেই কিছু চিহ্নিত মহিলা আছেন যারা ধান সেদ্ধ মুড়িভাজাতে এক্সপার্ট। অন্যান্যদের তুলনায় আমার মার কাজ কম। মা এখন অনেক সময় দিতে পারে আমাদের, নানা গল্প শুনি মায়ের মুখে পুরনো দিনের, লোকেদের। ভালো লাগে নিজেদের এক অন্য পরিচয়।

    ---
    অগ্রহায়ন মাসে নবান্ন ধান ঘরে ঘরে
    পৌষ মাসে পিঠে পাব্বণ বাউনি বাঁধে খড়ে
    মাঘমাসে শ্রীপঞ্চমী ছেলেদের হাতে খড়ি
    ফাল্গুন মাসে দোলযাত্রা ফাগ ছড়াছড়ি ---- ইত্যাদি।

    এভাবেই বাংলার বার মাসের তের পার্বণের বর্ণনা হয়ে এসেছে ছড়ায় মেয়েদের মুখে মুখে।

    নতুন ধানের চাল এসে গেলে শুরু হয় চাল গুঁড়ো করার পালা। শহরে বাড়ির জন্য বড় জোর দুতিন কেজি চালের গুঁড়ি। এখানে বাড়ি বাড়ি বস্তা ভরে চাল যায় গুঁড়ো হতে। যাদের অনেক বেশী লোকজন আসন্তিযাওন্তি, চাল গুঁড়ো অনেক বেশী লাগে, তারা কলে পাঠাল চাল পিষতে। একটু বেশী নাক উঁচুরা আবার ঢেঁকিতে গুঁড়ো না হলে খাবেই না পিঠে! আগে নাকি শুধু ঢেঁকিতেই ভাঙা হত ধান, তখন ঘরে ঘরে না হলেও এক পাড়ায় একাধিক ঢেঁকি ছিল। পুরনো লোকেরা এখনো ঢেঁকি ছাঁটা চালের জয়গান করতে করতে নাকমুখ ভেটকে কলের চালের ভাত খায়। এখন ধান ভাঙতে ঢেঁকি ব্যবহার হয়না বললেই চলে। সারা গ্রামে দু চারটে ঢেঁকি আছে, জানাশোনা লোকজন হলে, অল্প চাল হলে পয়সা নিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।

    চাষীপাড়ায় জেঠাইয়ের বাড়িতে ঢেঁকি। সেখান থেকেই গুঁড়ো হয়ে প্রতিবছর যায় আমাদের চাল। এবারে চাল গুঁড়োতে আমরা নিজেরা গেলাম জেঠইয়ের বাড়ী অবশ্য আমাদের চাষ করে যে তার মেয়ে প্রমীলাদির সাথে। এই প্রথম ঢেঁকি দেখলাম আমি। কেমন ঢিকঢিক করে মেয়েরা ঢেঁকিতে পাড় দিচ্ছে। পাড় দেওয়া নাকি সোজা, গর্তে হাত ঘুরনো সবচেয়ে কঠিন। একটু অমনযোগী হলেই হাতে ঢেঁকি চাপা পড়ে রক্তারক্তি কান্ড! হাত ঘুরোয় তাই জেঠাই নিজে বা তার মত পাকাপোক্ত মহিলারা। পাড় দেয় একটু কমবয়সীরা। দুপুরবেলা সব কাজ সেরে ঢেঁকির কাজ শুরু হয়। আমি পাড় দেব বলে ঢেঁকিতে চড়ে বসলাম, তাও তাকে এক চুল নড়াতে পারলাম না। আর দেখলাম গল্পে সিনেমায় যেমন মেয়েরা সেজেগুজে কোরাসে গান গাইতে গাইতে ধান ভাঙে সেসব কিছু না। গল্পটল্প করে, হি হি হা হাও চলে, তবে গানটান গায়না!
  • titir | 128.210.80.42 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০১:১১432534
  • খুব সুন্দর লেখা, নিজের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। হামার ঘর, খড়ের গাদা,উবু দশ , গজ তা আমদের কাছে গোজি ছিলো। বড্ডো সুন্দর সে সব দিন। কোথায় হারিয়ে গেলো সোনালি বিকেলগুলো!!!!!!!
  • vikram | 78.16.61.210 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ০৪:০৮432535
  • পকেটে খুঁজে দেখো...
  • shrabani | 124.124.86.102 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১২:০৩432536
  • চাল গুঁড়ো হয়ে এলে এবার পিঠে না হওয়া পর্যন্ত রোদে শুকোবার পালা।
    ধান ঝাড়াই শেষ। গাদা আবার পুরনো জায়গায়, তাতে শুধু ধানের বদলে খড়। দুকুরবেলার লুকোচুরি খেলা আবার পুরোদমে চালু। মাঠে বসার জায়গা দখল হয়ে গেল, সব বাড়ীর চালগুঁড়ি ভরা কুলো অনেকটা জায়গা নিয়ে নিচ্ছে। যদ্দিন না পিঠে হচ্ছে তদ্দিন রোজ রোদে গরম করতে হবে, তবেই না ভালো পিঠে হবে।
    ছোটদের ঐ দিকে যাওয়া মানা, খেলতে খেলতে বেভুলে পা ঠেকে গেলে অনত্থ হবে। চালগুঁড়ি নিয়ে বড় বাড়াবাড়ি করে এখানের লোকে, বাসী কাপড়ে ছোঁয়া চলবেনা হ্যান ত্যান কত্ত নিয়ম। এমনি মা কিছু মানেনা, পিঠে আর পাঁচটা সাধারণ খাবারের মত করেই তৈরী হয় আমাদের বাড়ীতে। কিন্তু এখানে মাকেও চাপে পড়ে এসব খেয়াল করতে হচ্ছে। আমার বেশ বিরক্তই লাগে।

    এদিকে সংক্রান্তি যত এগিয়ে আসছে তত আমাদের যাবার সময়ও হচ্ছে। দৌড়ঝাঁপ খেলাধুলার ফাঁকে ফাঁকে মনে পড়ে গেলে একটু উদাস মতো হয়ে যাচ্ছি। কথা উঠলে খেলার সাথীরাও একটু দু:খ দু:খ দেখাচ্ছে তবে সেটা আমরা চলে যাব বলে কতটা আর কতটা স্কুল খোলার, রেজাল্টের সময় হয়ে আসছে বলে এ সম্বন্ধে আমার ঘোর সন্দেহ।

    তিনদিনের পিঠে পাব্বণ, সংক্রান্তির আগের ও পরের দিন নিয়ে। এই উপলক্ষ্যে অনেকেই বাড়ী এসেছে, শহরে চাকুরিরতরা ও কলেজ পড়ুয়ারা হোস্টেল থেকে। আমাদের বাড়ীতেও বাবা দাদা এসেছে। খেলার মাঠের খানিকটা অংশ বড় ছেলেদের ভলিবলের নেট ঘিরে নিয়েছে। বাউনি বাঁধা হয় সংক্রান্তির আগের দিন। সকালেই প্রমীলাদি বাড়ী থেকে বাউনি বানিয়ে দিয়ে গেল।

    আমার আর ফুলদির অনেকদিন থেকে এই বাউনি বাঁধা নিয়ে সন্দেহ ছিল। আসার আগে যখন শুনেছিলাম বাউনি বাঁধতে হয়, নিজেদের মধ্যে আলোচনাও করেছিলাম ব্যাপারটা কি হতে পারে তা নিয়ে কিন্তু কাউকে ঠিক জিজ্ঞেস করা হয়নি।
    আমাদের এখানে যারা থাকে তারা অনেক কথা অন্য ভাবে বলে, মা বলে এটা এদেশের ভাষা, একটু অন্যরকম। প্রথম প্রথম আমরা শুনে বুঝতে পারতাম না, এখন পারি। এরা ব্রাহ্মণ কে বামুন বা বাউন বলে। তাই মনে করেছিলাম বাউনি বোধহয় বামুন কাকার বউ। সংক্রান্তি তে হয়ত তাকে বেঁধে টেঁধে কিছু করা হবে। একটু অস্বস্তিও হয়েছিল ভেবে যে এ আবার কি নিয়ম রে বাবা!

    পরে ভুলেই গেছিলাম। প্রমীলাদি যখন একগোছা খড়ের মতো কিছু নিয়ে এসে বলল, "এই নাও মা বাউনি", তখন আমাদের চোখ কপালে। কয়েকগাছি খড় কে বিনুনীর মতো করে পাকিয়ে আগে পিছে গিঁট দেওয়া, তাতে সর্ষে ফুল আর আমপাতা গোঁজা। এরকম অনেকগুলো বাউনি বানিয়ে নিয়ে এসেছে দিদি।

    দুপুরের খাওয়াদাওয়ার পাট মিটলে রান্নাঘর পুরো সাফ করা হল, উনুন মেঝে সব নিকিয়ে। ভাঁড়ার কাম পুজোর ঘরও নিকিয়ে, মাঝখানে আল্পনা দিয়ে মাটির নতুন ছোট হাঁড়ি রাখা হল চালগুঁড়ো ভরে। তার গলায় আমপাতার মালা। দুপুরে একটু বিশ্রাম করে মা কাপড় টাপড় কেচে বসল পিঠে বানাতে। এদিন হল সরুচাকলি ও আসকে পিঠে। সন্ধ্যেবেলায় সন্ধ্যে দেখানো হয়ে গেলে মা ফুলদিকে পাঠালো বাউনি বাঁধতে। সঙ্গে আমি রইলাম টর্চ হাতে আর দীপাপিসী শাঁখ বাজালো। তার আগে ফুলদি খেল প্রথম পিঠে, নিয়মরক্ষে। প্রথমেই বাঁধা হল ঘরের ভেতরের চালগুঁড়ি ভর্তি হাঁড়িতে। বাউনি বেঁধে তিনবার বলল,

    "আউনি বাউনি পিঠে ভাত খাউনি
    দুরদেশ না যেও
    তিনদিন ধরে ঘরে বসে পিঠে ভাত খেও।"

    সাথে সাথে দীপাপিসীর শাঁখে ফুঁ তিনবার পুউ উ পুউউউউউ!
    হয়ে গেল পাব্বণের শুরু। এরপর একে একে খামারের গাদায়, সমস্ত দরজার কড়ায়, তুলসীতলায় ও আরো কোথায় কোথায় যেন বাউনি বাঁধা হল।

    শেষ হলে শুরু হল পিঠে খাওয়া। প্রত্যেক বাড়ীতেই পিঠে হয়, তবু সবাই পিঠে বিলোয় এবাড়ী ওবাড়ী। সেটাও একটা মজার ব্যাপার। মা আমাদেরই পাঠালো অন্যদের বাড়ী। এমনি করে বাড়িতে পিঠের পাহাড়। তবে আমার মনে হল আমার মায়ের বানানো সরুচাকলিটাই বেস্ট। কিছুই নষ্ট হলনা। গ্রামে সব বাড়ীতে ঠিক এভাবে তিনদিন পাব্বণের নিয়ম কড়াকড়ি, তাই বাবা অনেক বন্ধুদের তিনদিনই খেতে বলে।
    এরকম সব বাড়ীতেই, অত নিয়ম করে কিছু নয় তবু মৌখিক নেমন্তন্ন থাকে চেনাজানার। এসেও যায় অনেকে, এছাড়া দেওয়াথোয়া করে করে যতই না বানানো হোক, শেষ হয়ে যায়। জেঠীমার বাড়ি থেকে সরুচাকলি ছাড়াও গুড় পিঠে আর লাউয়ের পিঠে আসে। লাউয়ের পিঠেটা আমার বেশ পছন্দ হল। গুড়পিঠে আমি খেলাম না তার একটা কারন আছে। আমি যখনই ঠোঁট উলটে বায়না করি ফুলদি মাকে বলে,
    "মা দ্যাখো, গুড় পিঠে উল্টে গেল।"

    আমার তখন খুব রাগ হয়। যদিও মা গুড়পিঠে করেনা বলে আমি এর আগে কোনোদিন ফুলদির কথা ছাড়া গুড়পিঠের নাম শুনিনি। তবু কেমন যেন এই পিঠের সঙ্গে আমার একটা জন্মের আড়ি আছে মনে হল!

  • shrabani | 124.124.86.102 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১২:০৭432537
  • নিয়ম কড়াকড়ি নেই*
  • de | 59.163.30.4 | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১২:৫২432538
  • শ্রাবণী,
    খুব সুন্দর লাগছে পড়তে, রূপকথার মতো!
  • shrabani | 124.124.86.102 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১২:৪৮432539
  • পিঠে খাওয়া হল নতুন গুড় দিয়ে। শিকেতে কৌটোয় তোলা কাকভোরে উঠে সংগ্রহ করে নিয়ে আসা টাটকা নতুন গুড়!

    খেজুরের নতুন গুড় জ্বাল দিয়ে তৈরী হয় খুব ভোর ভোর, একটু বেলা হলেই রস গেঁজে যায় তাই। একসাথে অনেক গুড় পাওয়া যায়না,তাই আগে থেকেই সবার বাড়িতে রোজ গুড় সংগ্রহ করে জমা করার ধুম পড়ে যেত। গরম চাদরে আপাদমস্তক ঢেকে শীতের সকালে অন্ধকার থাকতেই কৌটো হাতে খেজুরতলায় খদ্দেরের ভীড়।
    এমনিতে আমরা ভোরে উঠিনা কিন্তু গুড় আনতে যেতে হবে বললে ঠিক সকালে উঠে পড়তাম। পাড়া থেকে সবাই দলবেঁধে যেত, আমরা দুইবোনও তাদের সঙ্গী হতাম। অনেক গুড় লাগে এই কদিন বিশেষকরে, পিঠে খাওয়ার প্রধান উপাদানই তো নতুন গুড়!

    মাঠের ধারের খেজুরতলায় কাঠপাতার গনগনে আঁচে গুড়ের হাঁড়ি, হু হু ঠান্ডায় সবাই জড়ো তারপাশে। কারুর মুখে কোনো কথা নেই। খোলা মাঠের ধার বলে কুয়াশা আরো গাঢ়, আবছা আঁধারে চাদরে গামছায় চোখ নাক ছাড়া গুড় বানাতো যারা সেই লোকগুলোর মুখের কিছুই দেখা যেতনা। প্রথমটায় আমি শক্ত করে ফুলদির হাত ধরে রাখতাম, কেমন ভয় ভয় লাগত। সবশেষে যখন আমাদের পালা আসত তখন চারিদিক অনেক ফর্সা, ভীড় বেড়েছে, শোরগোলে চারধারের স্তব্ধতা উধাও। মুখের ঢাকা সরিয়ে হাসি হাসি মুখে কৌটোতে গুড় ঢেলে দিয়ে অচেনা লোকটি চেনা বেরোত, তখন আমরাও ভয় কাটিয়ে খুশী খুশী।

    সংক্রান্তি, আমাদের বাড়িতে পৌষ সংক্রান্তির চেয়ে মকর সংক্রান্তি বলার চলই বেশী। আমার আর ফুলদির এই প্রথম। আগে দিদি দাদা যখন ছোট ছিল তখন মাও প্রতিবছর আসত এই সময়। তারপরে নানা কারণে আসা বন্ধ হয়ে গেছিল। এবার আসতে পেরে মা খুব খুশী। মন্দির চত্বরে কদিন আগে থেকেই ঝোপঝাড় কেটে ঘাস চেঁছে পরিস্কারের কাজ শুরু হয়ে গেছে।

    সবচেয়ে মজার হল মন্দির থেকে বেরিয়েই একটা আধা মন্দির আছে আমাদের। মাথার ছাদ নেই সামনে দরজা নেই এমন একটা তিন দেয়ালের ঘর। মেঝে মাটি থেকে বেশ কয়েক ধাপ উঁচুতে। সবাই ভোগমন্দির বলে। সেখানে ঠাকুর থাকেনা তাই ওঠার কোনো বাধা নিষেধ নেই,আমাদের ছোটদের একটা বেশ ভালো খেলার জায়গা বলেই জানি। বিশেষ করে পুজোর সময় একটু বড় বাচ্চারা ওখানে চারদিকে শাড়ী টাঙিয়ে স্টেজ বানিয়ে নাচ গান নাটক করে, সিরিয়াস কিছু নয় অডিয়েন্সও আমাদের মতো বাচ্চারাই। তাদের বসিয়ে রাখার জন্য প্রোগ্রামের উৎকর্ষতার থেকে লেবু লজেন্সের মহিমাই বেশী কাজ করত।
    এই প্রথম দেখলাম ভোগমন্দির ও তার সামনের উঠোন নিখুঁত ভাবে পরিস্কার করা হচ্ছে জল ঢেলে, মুছে, গোবর গঙ্গাজলের ছড়ায়। আমাদের ঠাকুর মন্দিরে অন্নভোগ নেননা। তাই অন্নভোগ যেদিন দেওয়া হয় ঠাকুর আসেন ভোগমন্দিরে। আজকে ঠাকুরের অন্নভোগ, নতুন চাল সবাই খাবে আর ঠাকুর খাবেনা তা কি করে হয়!
  • shrabani | 124.124.86.102 | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০ ১২:৫৪432541
  • মা আমাদের সকাল সকাল উঠিয়ে দিল। আজ বাড়ির মহিলাদের সব মন্দিরে ডিউটি। একবার সেখানে ঢুকে গেলে আর বাড়ির দিকে দেখার ফুরসত হবেনা অনেকক্ষণ। উনুনে আঁচ ও পড়ে গেছে প্রতি বাড়িতে সময়ের অনেক আগে। জলখাবারের ঝামেলা নেই বলে অবশ্য একটু সুবিধে। শুধু পিঠে গরম করে ধরে দেওয়া। মা ভাত আর অল্প কিছু রান্না সেরে নিয়ে স্নানে দৌড়য়, "ব্যস আমাকে আর পাবেনা তোমরা এখন, যা পারো নিজেরা করো।"

    আমরাও দেরী করিনা। খেয়ে দেয়ে চান করে একটু ভালো জামা পরে (এই আশায় যে মন্দিরে যদি কিছু কাজে নেয়) মন্দিরে পৌঁছলাম যখন তখন সেখানে অনেকেই এসে গেছে। দালানে সার সার ঝুড়িতে ধুয়ে রাখা নানা ফল। মহিলারা বেশ কয়েকজন বঁটি নিয়ে বসে ফল কুটতে। ভেতরে ঠাকুরও রেডি সেজেগুজে ফুলের ও সোনারূপোর গয়নায়। ঠাকুরের সামনাসামনি একটু তফাতে রাখা বিশাল মকরের জালা। তাতে আগের রাত থেকে ভেজানো নতুন ধানের চাল। বামুন কাকার সহকারী হাত দিয়ে যতটা পারছে চাল ভাঙার চেষ্টা করছে। নারায়ণের মকরের চাল শিলে বাটা বা গুঁড়ো করা হয়না (এসব নিয়ম কেন কেউ বলতে পারেনা)। তাই যতটা পারা যায় হাত দিয়ে ভেঙে দেয়। এছাড়া শীতলা ঠাকুরের মকরও একই মন্দিরে হয়, তার পরিমাণ অনেক অল্প থাকে ও চাল ভিজিয়ে বাটা হয়।

    ফল কুটছে মেয়েরা আর আমরা ছোটরা তাদের ঘিরে দাঁড়িয়ে। মায়ের দিকে অনেকবার করুণ মুখে তাকানোর পর ফুলদি পেয়েছে কমলালেবু ছাড়ানোর ভার। মকরের ফল কোটার সময় কথা বলতে নেই, দরকারে ইশারায় কাজ চালায় সবাই। খুব মজা লাগে, উঁ উঁ উঁ উঁ নানা স্কেলে, তার সাথে মূকাভিনয়!
    ফল কেটে কেটে বারকোশে করে মকরের জালায় চলে যাচ্ছে, তার সাথে মিশছে আদাকুচি বাতাসা সন্দেশ তিলকূট ইত্যাদি নানাবিধি। একটু পরে মা আর একজন কাকী চলে গেল শীতলার মকরের ফল কাটতে। এই ফল কাটা হয় খুব মিহি সরু সরু করে। তাতে মেশে চালবাটা ও আরো সব।

    এদিকে ভোগমন্দিরে জড়ো হচ্ছে ভোগ বানানোর সরঞ্জাম, নতুন হাঁড়ি, দুধ, চাল আর নতুন গুড়। রাখা আছে কাটা আখ। মন্দিরের মাথা ঢাকা হয়েছে ত্রিপল দিয়ে। উঠোনে নতুন উনুন তো আগের দিনই খোঁড়া হয়ে গেছে। উনুনের পাশে রাখা আছে পাটকাঠি আর সরু চ্যালাকাঠ ধুয়ে শুকোনো। বাড়ির সবচেয়ে বড় পুরুষ সদস্য ভোগ রান্না করে। বড় জেঠু এসে গেছে চান করে পাটের কাপড় পরে। এই শীতেও খালি গা, একাআধ বার কেশে উঠল। জেঠুর হাঁপের টান আছে। এমনিতে ভোগ না রেঁধে চাও খেতে পাবেনা। আমার কাশি শুনে একটু কষ্ট হল, জেঠু তো আমাকে কাকী বলে আর নিজেকে আমার বুড়ো ছেলে বলে, তাই। আমার আবার বাড়ির কারু শরীর টরীর খারাপ হলে খুব মন খারাপ হয়ে যায়।

    আমার দলের বাচ্চারা সব গিয়ে ভোগ মন্দিরে জুটেছে, ফল কাটা দেখে দেখে বোর হয়ে মনে হয়। আমি নড়িনা কারন ফুলদি ওখানে। এমনিতে প্রায়ই ঝগড়া করলেও আমি ফুলদির পেছনেই ঘুরি সব সময় বিশেষ করে দেশে টেশে এলে।
    ফল কাটতে কাটতে গীতাদির হাত থেকে একটা বড় নারকেল কুল পড়ে গেল গড়িয়ে দালান পেরিয়ে মাটিতে। গীতাদি আমাকে ইশারা করতে লাগল ওটা কুড়িয়ে খেয়ে নিতে। আমি নিলাম না, দাঁড়িয়েই রইলাম। গীতাদি মোটাসোটা গেরাম্ভারী মেয়ে, দুএকবার ইশারা করে আমার দিকে চোখ পাকালো। আমি তাই দেখে ওখান থেকে সরে ভোগমন্দিরের দিকে গেলাম, বাবা বসে ছিল চৌকিতে। বাবার কোলে উঠলাম, খুব অপমান লাগছিল, কান্না কান্না। আমাকে বাড়িতেও কেউ এভাবে চোখ দেখায় না। পরে ফল কাটা হয়ে গেলে গীতাদি আমার খুব নিন্দে করছিল, "শহরের মেয়ে তাই স্টাইল বেশী। ফল পড়ে গেছে তুলে খেতে বললাম, কোথায় খুশী হয়ে খাবে তা না চলে গেল ওখান থেকে। কাকীমার মেয়েগুলো খুব ত্যাঁদড়, একটা কথা শোনেনা।"

    মার কানেও কথাটা উঠেছিল। পরে বাড়িতে এসে মা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল কেন খাইনি। আমি বলেছিলাম সরস্বতী পুজো হয়নি তো তাই। মা হেসে ফেলেছিল আর খুব আদর করেছিল আমাকে।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে মতামত দিন