এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প: অন্য কোথায় অন্য কোনোখানে

    shrabani
    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ | ৬১৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ১২:০৩428307
  • --------------------------------------------------------------------------
    পরদিন সকালে আলোকের ফোন এল, ওর কাজ মিটে গেছে। বিকেল নাগাদ এসে পড়বে। ভালই হল, আলোক বাড়িতে থাকবে, ও নিশ্চিন্তে যেতে পারবে অভির সঙ্গে।
    যা ভেবেছিল তাই, বিকেলে বাড়ী ফিরে দেখল আলোক এসে গেছে। মেয়ে তাকে ঘিরে আছে, এতদিনকার প্রচুর কথা, মায়ের নামে নালিশ এসব চলছে। রাই অফিসের ড্রেস চেঞ্জ করে আবার বাইরে যাওয়ার পোষাক পরে এল। আলোক তাই দেখে একটু অবাক,
    -"বেরোবে নাকি কোথাও?"
    রাই "হ্যাঁ" বলে টুপাইকে নীচে খেলতে পাঠাল। তারপরে আলোককে মোটামুটি ঘটনাবলীর একটা সংক্ষিপ্ত বিবরন দিল। এরকম নিউজ চাপা থাকেনা। আলোকও এর ওর কাছ থেকে কিছু না কিছু শুনতে পাচ্ছিল কানাঘুষো। সবারই সন্দেহ অতীশকে, ওর এই আগের স্ত্রীর ব্যাপারটাও কেমন করে জানাজানি হয়ে গেছে।

    সন্ধ্যে প্রায় সাড়ে সাতটা নাগাদ অভিনব এল। এসে আলোককে দেখে খুব খুশী হয়ে নানা বিষয়ে গপ্প করতে বসে গেল। মনেই হচ্ছেনা ও একটা সিরিয়াস তদন্তে ব্যস্ত। রাই কফি আর খাবার নিয়ে বসার ঘরে ঢুকে একটু রাগ দেখিয়েই বলে উঠল,
    -"কিরে, তোকে দেখে মনে হচ্ছে লীনার খুনের সমাধান হয়ে গেছে। তাই তুই এখন বিশ্ব ক্রিকেটের সমস্যা নিয়ে পড়েছিস।"
    অভি ওকে দেখে নিয়ে আলোকের দিকে তাকিয়ে মজা করে বলে উঠল,
    -"আচ্ছা আলোক তুমি কি করে ম্যানেজ কর বলতো, এরকম একটা গোয়েন্দা বউকে নিয়ে? যা ডিডাকশনের বহর, তাতে তো আমার তোমার আর টুপাইয়ের জন্য দু:খ হচ্ছে।"
    রাই হেসে ফেলল,
    -"বা:, এতো যার জন্যে চুরি করি সেই বলে চোর! যা, আমার কি? তোর বসেরা যখন দেবে অকাজের বলে ঝুমরিতলাইয়া তে পোস্টিং করে তখন বুঝবি।"
    আলোক হাসতে হাসতে বলে,
    -" তোমাদেরও তাহলে খুব অসুবিধে হত বল স্কুলে? এরকম একজন ক্লাসে থাকলে তো ধরা পড়ার ভয়ে কোনো প্র্যাঙ্ক ও করা যাবেনা।"
    আলোক এবার একটু যেন চিন্তা করল।
    -"না: আমার মনে হয় তখন ওর এই কোয়ালিটীটা ডেভেলপ করেনি। এটা রিসেন্ট ডেভেলপমেন্ট।"
    রাই এরপর কি আসছে ঠিক ধরতে পারছিলনা। অভিটা বরাবরের ফাজিল। আলোক কে একটু উৎসাহী দেখাল,
    -"কেন কেন? কিছু হয়েছিল নাকি? "
    -"রাই, তোর মনে আছে ক্লাস টুয়েল্‌ভের ব্যাপারটা?" রাই মাথা নাড়াল, কি নিয়ে বলছে বুঝতে পারলনা।
    -"কি ব্যাপার বল তো?"
    আলোক মজা করে ফোড়ন দিল,
    -"কেন তোমাদের ক্লাস টুয়েলভে অনেক ব্যাপার ছিল নাকি? অবশ্য স্বাভাবিক, বয়সটাই তখন ওমনি। তা শুনি কি ঘটনা।"
    অভি হা হা করে হেসে উঠল। রাই না বুঝে অভির দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। অভি আলোককে বলল,
    -"আরে, সেরকম কিছু না। চিঠি, মানে ঐ বয়সে যা হয়। কোনো একজন ছেলে একটি মেয়ের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে মেয়েদের যে দিকে বসত সেখানে কোন না কোন সীটে রেখে দিত। কোনো সম্বোধন থাকতনা। শুধু বোঝা যেত একটি মেয়েকে উদ্দেশ্য করে লেখা।"
    আলোককে একটু হতাশ দেখাল।
    -"এটা আর এমন কি রহস্য! এরকমটা তো সবারই হয়েছে,পরে জানাজানিও হয়ে যায়।"
    তখন রাইয়ের মনে পড়ে গেল ঘটনাটা। সেসময় এটা নিয়ে খুব তোলপাড় হয়েছিল। অভিকে থামিয়ে সেই এবার বলতে শুরু করে,
    -"তাতো হয়ই। কিন্তু ঠিক মনে পড়ছেনা এখন তবে চিঠি গুলো সাধারন ছিলনা, কিছু একটা বিশেষত্ব ছিল। তাই না অভি?"
    -"ঠিক তাই। কিন্তু তোরা অনেক গোয়েন্দা গিরি করেও কে কাকে চিঠি লিখত ধরতে পারিসনি।"
    -"পারিনি আবার কি? সেরকম চেষ্টা করিনি তাই পারিনি। তখন বোর্ড, সবাই পড়াশোনায় ব্যস্ত। আমার তো অমিত কে সন্দেহ হত, ও শালিনী কে লিখত।"
    -"কিন্তু অমিত আর শালিনী তো ইলেভেন থেকেই কাপল, ওদের ওভাবে চিঠি লেখার দরকার কি ছিল?"
    আলোক এবার বন্ধুদের খুনসুটিতে যোগ দিল।
    -"কিন্তু অভি ইয়ার, তোমরা ছেলেরা নিশ্চয় জানতে? তবে এটা আমার বউ বিখ্যাত হলে তার কেস ফাইলে আনসলভড কেস হিসেবে যাবে। কিন্তু যে লিখেছিল তার ফীলিং যদি জেনুইন ছিল সে ওভাবে লুকিয়ে থাকল কেন?"
    অভি ঘড়ির দিকে তাকাল। না অনেক আড্ডা হয়েছে এবার উঠতে হয়। আলোকের কথার উত্তরে উঠতে উঠতে হেসে বলল,
    -"কে জানে, হয়ত তোমার বউয়ের জন্যই লিখেছিল। যেরকম মেয়ে, সাহস হয়নি বেচারার এর চেয়ে বেশী কিছু করার। হতে পারে পরে ভেবেছিল আত্মপ্রকাশ করবে, হইচই হতে ভয় পেয়ে চুপ করে যায়।"
    হাসিঠাট্টার মধ্যে আর দেরী না করে ওরা রওনা হয়ে পড়ে।

    যেতে যেতে অভি জানাল, ক্যুরিয়রের অন্যান্য লোকগুলোর সম্পর্কে ব্যাপক খোঁজখবর নিয়েছে ওর লোকে। কারোরই কোনো ক্রিমিন্যাল রেকর্ড নেই, সব ছাপোষা লোক। ব্রিজনাথের এখনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
    ওরা গেস্ট হাউসে পৌঁছল যখন চারিদিকে লোকজন কেউ নেই। লিফটে তিনতলায় গেল। একটা দিকে দুটো পাশাপাশি রুমে অতীশরা আছে। দুরে কোণের দিকে একটা রুমে মৌলির মা সোমা আছে বলে অতীশ জানাল। রাইকে দেখে অতীশ একটু অবাক হলে রাই জানাল অভির সঙ্গে ওর বন্ধুত্বের কথা। আর অভি বলল যে সোমার সঙ্গে আলোচনাকালীন ও একজন ওর দেশীয় মহিলা থাকলে সুবিধা হবে বলে রাইকে নিয়ে এসেছে। অতীশ শুনে আর কিছু বললনা।

    অভি আর রাই সোমার দরজায় গিয়ে নক করল। দরজা খুলতেই রাই দেখল শম্পা খুব কিছু ভুল বলেনি। ওদেরই বয়সী মহিলা তবে বেশ সুন্দরী, লীনা এর ধারে কাছে আসত না। ওদের পরিচয় শুনে ভেতরে বসাল। একটু কৌতূহলী, তবু মুখটাকে দু:খী দু:খী করে বলল,
    -"বিশ্বাস করুন আমি এখনও ভাবতে পারছিনা লীনা নেই। এত ভাল একটা মেয়ের এরকম পরিণতি! ওকে মৌলির সঙ্গে দেখে আমার চোখ জুড়িয়ে গেছিল। মেয়েটার জন্য একেবারে নিশ্চিন্ত হয়ে গেছিলাম। ওর সাথে প্রায়ই ফোনে কথা হত তারপর থেকে। শুনে লোকে আদিখ্যেতা ভাববে কিন্তু সত্যিই আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব হয়ে গেছিল।"
    রাই বুঝল সোমা শুধু সুন্দরীই নয় গুছিয়ে কথা বলতেও জানে। অভির দু চারটে মামুলী প্রশ্নর জবাব একেবারে নিখুঁত দিল। অভি এবার রাইয়ের দিকে ইশারা করল। রাই সোমার দিকে তাকিয়ে শুরু করল,
    -"সোমা, আপনি হঠাৎ এতকাল বাদে এদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন কেন? এর আগে কোনোসময় কি আপনার মৌলির জন্য চিন্তা হয়নি?"
    সোমা একথায় একটু মুখ নীচু করে থাকল। তারপরে রাইয়ের দিকে সোজা তাকিয়ে বলল,
    -"মৌলি আমার প্রথম সন্তান। আমার আর একটি ছেলে আছে ছ বছরের। মৌলিকে আমি কি করে ভুলব? মৌলির বাবা লীনাকে বিয়ে করার আগে আমি এদের চিঠি লিখেছি, মৌলিকে দেখতে চেয়েছি। কিন্তু এরা আমাকে দেখতে দেয়নি। আমাকে ডিভোর্স এই শর্তে দিয়েছে আমি মৌলির থেকে দুরে থাকব। লীনাকে আমি অল্প চিনতাম। ওদেরই গ্রামের মেয়ে। ওর সাথে বিয়ে হওয়ার পরে আমি খোঁজখবর করেছি। যা শুনেছি তাতে মনে হয়েছে লীনা মৌলিকে খুব ভালবাসে, ওরা ভালই আছে। তাই অনেকদিন আর যোগাযোগ করতে চেষ্টা করিনি। আমার বাপের বাড়ি এদের দেশের বাড়ির কয়েকটা স্টেশন পরেই। বছরখানেক আগে কলকাতা থেকে ফেরার সময় ট্রেনে লীনার সঙ্গে দেখা হয়। ও একাই ছিল, কাজে কলকাতা গেছিল। একই কম্পার্টমেন্টে উঠি দুজনে। আমি ওকে ঠিক চিনতে পারিনি। ঐ চিনতে পেরে যেচে এসে কথা বলে। ওর সাথে কথা বলে খুব ভাল লাগে। ওকে দেখে মৌলিকে দেখবার ইচ্ছেটা আবার হয়। ওকে সে কথা বলতে ও বলে মেয়েকে আর তার বাবাকে জিজ্ঞেস করে ও জানাবে। ফোন নাম্বার দেয় আমাকে। পরে ওরা ফেরার পথে কলকাতায় দেখা করে আমার সঙ্গে।"
    -"আপনি এখন কেন এসেছেন? "
    -"মৌলির কথা ভেবে। ও লীনার খুবই কাছের ছিল। এরকম একটা দুর্ঘটনায় ও কতটা আঘাত পেয়েছে ভেবেই ছুটে এসেছি।"
    -"আপনার হাজব্যান্ড ছেলে এদের নিয়ে এলেননা যে?"
    -"আসলে আমার হাজব্যান্ড সব কথা জানলেও ছেলে জানেনা। ওকে আনতে চাইনি। ওকে দেখার জন্য হাজব্যান্ড ও রয়ে গেছে।"
    -"আচ্ছা আপনি তো মাঝেসাঝেই লীনার সঙ্গে কথা বলতেন। আপনার কি মনে হয় লীনা এরকম একটা বিপদ আঁচ করতে পেরেছিল?"
    -"না:। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা, সেরকম কিছু কোনোদিন ওর কথায় বুঝিনি। বাইরের চোর ডাকাত ছাড়া একাজ কে করবে?"
    -"লীনার কাজ অফিস এসব নিয়ে কোনোদিন কোনো কথা হয়েছে?"
    সোমা একথায় একটু ভেবে বলে,
    -"না:, সেরকম কিছু নয়। তবে ওর বস একজন বাঙালী ভদ্রমহিলা আর উনি বেশীরভাগই আজকাল কলকাতায় থাকেন এরকম কিছু একটা কথাপ্রসঙ্গে বলেছিল।"
    রাই এবার সরাসরি বলে,
    -"আপনার শ্বশুর শাশুড়ী বা অতীশ এরা লোক দিয়ে করাতে পারে।"
    সোমা একটু অবাক হয়, কথাটা ঠিকমত বুঝতে সময় নেয়। তারপরে হেসে বলে,
    -"আমার পক্ষে ওদের নাম নেওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল। তবে এক্ষেত্রে সত্যি কথাই বলব। ওরা অত সাহসী নয়। বউ মারার মত সাহস থাকলে ওরা আমাকেই মারত। আমার শ্বশুর শাশুড়ী দুর্ব্যবহার করে আপনার জীবন ওষ্ঠাগত করে তুলতে পারে, কিন্তু খুন করতে বা করাতে মনে হয় পারে না।"

    আরো দু চারটে কথার পর ওরা সোমার ওখান থেকে বেরিয়ে আসে। অতীশের ওখানে এসে জানতে পারে দাহকাজ ঠিকঠাক হয়ে গেছে। পরদিনই কালীবাড়িতে শ্রাদ্ধশান্তি হবে, অপঘাতে মৃত্যু তাই অশৌচ মানা নেই। অতীশ অভিনবকে জিজ্ঞেস করে ওরা কবে নাগাদ বাড়ির চাবি হাতে পাবে। ওর মা সামনের ঘরে রঙটঙ করে একটু পুজো টুজো করাতে চায় ফেরার আগে। অভি অতীশকে পরদিন আসতে বলে থানায় চাবি নিতে। অতীশের ওখানে ওর মামাতো ভাই তুষারের সঙ্গে দেখা হল। বয়স বেশী না, বছর দুয়েক হল দিল্লীতে এসেছে চাকরি নিয়ে। সাউথ দিল্লীর দিকে চার বন্ধুর সাথে শেয়ারে একটা ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে। অতীশের কথায় ও নীচে এল এদের গাড়ি অবধি ছাড়তে, তখনই অভির কথার উত্তরে এসব জানাল।

    -"তুমি তো এবাড়ীতে প্রায়ই আস, মিসেস রায় যে চাকরি করত তুমি জানতে না?"
    -"আসলে আমি খুব কমই আসি। আমার নিজের কোনো গাড়ী নেই, বাসটাস ঠেঙিয়ে এত দুর আসা হয়ে ওঠেনা। আমাদের শুধু রবিবার একদিনই ছুটি। শেষ এসেছি সেই মৌলির জন্মদিনে। সেদিন অত কথা হয়নি। বৌদি যে চাকরিতে ঢুকেছে আমায় কেউ খেয়াল করে বলেনি।"
    -"তোমার কি মনে হয়, কে খুন করল এভাবে? এদের বাড়ির সঙ্গে বা তোমার বৌদির সঙ্গে কার শত্রুতা থাকতে পারে?"
    -"আমার তো খুবই অবাক লাগছে। আমাদের ফ্যামিলী সাধারণ ফ্যামিলী, এধরণের ঘটনা এই প্রথম দেখছি।"
    অভি এবার এদিক ওদিক না করে সরাসরি বলে,
    -"সবার কিন্তু মনে হতে পারে তোমার দাদাই একাজ করিয়েছে। এরকম একটা সন্দেহ যে আসতে পারে তোমার মনে আসেনি?"
    তুষারের মুখটা একটু ফ্যাকাশে হয়ে গেল। একটু আমতা আমতা করে বলে উঠল,
    -"না, মানে অতীশদা এরকম করতেই পারেনা। কেন করবে, ওরা তো হ্যাপীই ছিল।"

    অভি আর কথা বাড়ায় না। ফেরার পথে গাড়ীতে অভির পাশে বসে রাইয়ের কি মনে হতে বলে,
    -"অভি, তোর ঐ স্কুলের ব্যাপারটা এখনও মনে আছে। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।"
    অভি নিজেই গাড়ী চালাচ্ছিল, হাত স্টিয়ারিং এ, চোখ সামনের দিকে। তাই জন্যে হয়ত সন্ধ্যের মত হেসে উঠলনা। আলতো স্বরে বলল,
    -"যার জন্যে লেখা হয়েছিল সেও হয়তো তোর মতই ভুলে গেছে। যে লিখেছিল সে ভুলতে পেরেছে কিনা কে জানে!"

    রাইয়ের কেমন জানি মন খারাপ করতে লাগল। এখনও ফিরে তাকালে মনে হয় কি সুন্দর ছিল সেই বয়সটা, কি সবুজ সেই মন। না বুঝে হাসাহাসি করে কে জানে কে কার মন ভেঙেছিল!
  • a | 59.161.99.65 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৩:৪৪428308
  • এখানেও কি "হলেও হতে পারতো" প্রেম :)
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৪:৫৭428309
  • -----------------------------------------------------------------
    পরদিন সকাল থেকে একের পর এক চাঞ্চল্যকর খবর আসতে থাকে আর তার চক্করে শেষে ও অফিসটাই গোল মেরে দেয়।
    প্রথমে ভোর ছটার সময় অভির ফোন আসে। গতকাল রাতে মীরাট হাইওয়ের ধারে কিছুটা ভেতরে একটা আখের ক্ষেতের পাশে ঝোপের মধ্যে ব্রিজনাথের বডি পাওয়া গেছে। গুলি করে মারা হয়েছে, ডাক্তারের হিসেবে প্রায় তিন চারদিন আগে। পুলিশের কাছে ওর ছবি ছিল। তাই দেখে শনাক্ত হয়েছে, ক্যুরিয়র কোম্পানীর লোকেদের ও খবর দেওয়া হয়েছে, তারা সকালে আসবে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ কথা হল বডির পাশে একটা ছুরি পড়েছিল, সার্জিক্যাল নাইফের মত। মনে হচ্ছে ওটা দিয়েই খুন করা হয়েছিল লীনাকে।

    এছাড়া অতীশের মোবাইল কোম্পানির থেকে ওর গত একবছরের কলের হিসেব পাওয়া গেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে গত ছমাস ধরে ওর কাছে সোমার ফোন এসেছে রেগুলার। এখন ব্রিজনাথের সম্পর্কে আরো খবর বার করতে পুলিশ তোলপাড় করছে। অভি দু তিনবার ফোন করল ওকে। দুটো কাজ করতে হবে রাইকে। মৌলির টীচারের কাছে আয়ুষের বাবার স্টেটমেন্টটা একবার যাচাই করে নিতে হবে, আর অভির একজন লোকের সাথে লীনার সংস্থাতে গিয়ে ডিটেলে একটু দেখেশুনে আসতে হবে। ওদের যে হেড সেই ভদ্রমহিলার আজ আসার কথা। যদি এসে যান তার সাথেও কথা বলে আসতে। মনে হল যদিও অভির সমস্ত মনোযোগ এখন অতীশের দিকেই তবু অন্য দিকগুলো নিয়েও কোনো সংশয় সে রাখতে চাইছেনা।

    আলোক অফিস বেরিয়ে গেলে রাইও দরজায় তালা লাগিয়ে বেরিয়ে পড়ল। অভি মৌলির টীচারের নাম ঠিকানা ফোন নাম্বার দিয়ে দিয়েছিল। এও বলে দিয়েছিল পুলিশের অনুরোধে উনি সকালে বাড়িতেই থাকবেন। কাছেই বাড়ি, রাই দুমিনিটেই পৌঁছে গেল। ভদ্রমহিলা মুখচেনা, একই মহল্লা তো,পথেঘাটে দেখেছে রাই। একটু নার্ভাস মনে হল। পুলিশ ফোন করে কিছু জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একজন আসবে জানিয়েছে, আর কিছু বলেনি। রাইকে দেখে ওনারও চেনা লাগল। রাই ওনাকে আশ্বস্ত করল ওর আসার আসল কারণটা বলে।
    মি: সায়গল ওনার এখানে আসেন ঐদিন আয়ুষকে নিতে। সাধারণত অন্যান্যদিন ওনার স্ত্রীই আসেন। তবে ওপরে আসেননা কোনোদিন, সেদিন আয়ুষের বাবাও আসেননি। নীচে গেট থেকে ফোন করে গাড়িতে অপেক্ষা করছিলেন। ঠিক সময়টা ওনার খেয়াল নেই তবে পৌনে আটটার একটু পরেই উনি ওদের ছেড়ে ছিলেন। লীনার সঙ্গে ওনার আলাপ ছিল, কাছেই তো থাকত। দু একবার এসেওছে লীনা, এছাড়া ফোনে কথা হত। লীনার হাজব্যান্ডের সঙ্গে ওর পরিচয় নেই। মৌলি পড়াশুনায় মোটামুটি তবে শান্ত মেয়ে। আয়ুষ খুব বুদ্ধিমান কিন্তু ততটাই ছটফটে।

  • baps | 203.199.41.181 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৬:১১428310
  • যদিও বেশ তাড়াতাড়ি ই কিস্তি গুলো পাওয়া যাচ্ছে .... তবু শ্রাবণী.... অপেক্ষা করা টা বেশ .... হাত চালিয়ে হাত চালিয়ে.... ব্যাপক উত্তেজনা হইত্যাসে।
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৭:২৩428311
  • ---------------------------------------------------------------------

    ওখান থেকে বেরিয়ে নিজের বাড়ির গেটে ঢুকতে যাবে একজন ভদ্রলোক এগিয়ে এসে নমস্তে জানাল। ইনিই মি: ভার্মা, কেসের ইন-চার্জ, তবে এখন অভিনবের কাছে রিপোর্ট করছেন। সিকিউরিটীরা চিনিয়ে দিয়েছে ওকে,ভার্মাকে অভি পাঠিয়েছে ওর সঙ্গে লীনার অফিসে যাওয়ার জন্য। ভার্মা সাদা পোশাকে, সঙ্গে একটি ইন্ডিকা গাড়ী ড্রাইভার সহ। রাই ওকে বলল বাড়ীতে এসে চা খেতে, উনি রাজী হলেননা। রাইও আর জোর করলনা। ওপরে গিয়ে একটু মুখটুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে আলোককে ফোন করল। আলোককে ব্যস্ত মনে হল।
    -"কটা নাগাদ ফিরবে তুমি? লাঞ্চে আসবে?"
    -"কি জানি, লীনার অফিস তো বেশী দুরে নয়। এখন সাড়ে দশটা সবে, হয়ত লাঞ্চ নাগাদ এসে পড়ব।"
    এরপর রাই বেরিয়ে পড়ল। গাড়ীতে ভার্মার সঙ্গে বেশী কথা বললনা ড্রাইভারের সামনে। শুধু এর মধ্যে অভি ফোন করে জানিয়ে দিয়েছিল যে এর আগের দিন ভার্মাই গিয়েছিল লীনাদের এন জি ও অফিসে, ও সব জানে। অভি ফোনে বেশী কিছু বলল না তবে আভাসে মনে হল ও কিছু একটা লীড পেয়েছে।

    আধঘন্টা লাগল রাইদের পৌঁছতে। অফিসটা রাস্তা থেকে একটু ভেতরে গিয়ে দিল্লী হরিয়ানার বর্ডারে। জায়গাটা গ্রামের মতন, চারিদিকে ক্ষেত টেত। একটা গাছপালা ঘেরা কম্পাউন্ডের মধ্যে ছোট্ট দুকামরার অফিস। ভেতরে জায়গা বেশী নেই, গাড়ী বাইরে রেখে ওরা ভেতরে গেল। বাইরে একটি ছেলে ছিল এই অ্যাটেনডেন্ট গোছের। সে ভার্মাকে চিনতে পেরে নিয়ে গেল ভেতরে। একটা বড় ঘরে তিন চারটি বসার টেবল চেয়ার, একদিকে কম্পিউটার, ফোন, ফ্যাক্স। একদম কর্ণারে পার্টিশন করা ছোট্ট চেম্বার বোধহয় হেডএর। ঘরে দুজন ছিল, একটি মেয়ে ও একটি বছর ষাটের ভদ্রলোক।
    মেয়েটি কম্পিউটারে কি করছিল আর লোকটি নিজের টেবিলে খাতাপত্র খুলে বসেছিল। ওদের সঙ্গে কথা বলে নতুন কিছু জানা গেলনা, তবে ওদের যে প্রধান উনি নাকি ফিরেছেন এবং আজই অফিসে আসার কথা। ভদ্রলোকের নাম যোশী। প্রথম থেকেই আছেন এই অফিসে, উনিই এখানকার সবচেয়ে পুরনো লোক। রাই ওদের সেন্টার সম্বন্ধে জানতে চাইলে উনি জানান, সেন্টারটি কাছেই মিনিট দশেকের হাঁটাপথ। কাজকর্ম ভালই হয় এখানে, এডটেডও ভালই পাওয়া যায়। তবে মাইনেপত্তর খুব বেশী নয়। তাই লোকাভাব আছে। এদেরই একটা অফিস আছে কলকাতায়, যেখানে আগে লীনা ছিল। এখন যিনি হেড, উনি বাঙালী, কলকাতা অফিস থেকে এসেছেন বছরখানেক। উনিই লীনাকে এখানে নিয়ে আসেন।
    যোশী রাইদের নিয়ে গিয়ে ম্যাডামের অফিসে বসালেন। জলটল খাওয়ালেন। ভার্মা রাইকে বলল যে ওরা আগের দিন লীনার টেবিল, ড্রয়ার সব দেখেছে। সেরকম কিছু পায়নি। সবই অফিস সংক্রান্ত, পার্সোন্যাল কোনো পেপার এখানে থাকতনা।

    কিছুক্ষন বসার পর ম্যাডাম এলেন। তাকে বোধহয় যোশীজী বাইরেই বলে দিয়েছিল ভেতরে কারা। উনি ঢুকে ওদের দিকে তাকিয়ে সোজা বললেন,
    -"আমিই এখানকার ইন চার্জ, শমিতা গাঙ্গুলী।"
    রাই তাকিয়ে দেখল ফরসা ছোটখাট গোলগাল চেহারা, পঞ্চাশের ঘরে বয়স হবে। চোখে চশমা, পরনে সাধারণ সিল্ক একটা, তবে ব্যক্তিত্বময়ী। রাই নিজের পরিচয় দিয়ে ওনাকে বসতে বলল। কথা হচ্ছিল হিন্দীতে তবে রাই মাঝে মাঝেই দু একটা বাংলা ঢুকিয়ে দিচ্ছিল। ভার্মা বোধহয় অভির নির্দেশেই নীরব শ্রোতার ভূমিকায় রইল। রাইয়ের প্রশ্নের জবাবে শমিতা যা বললেন তা নিম্নরূপ।

    লীনাকে উনি ওর কলেজে পড়ার সময় থেকে জানতেন। ওর এক প্রোফেসর ওনার বন্ধু। লীনার সব কথাই জানতেন উনি। আগে কলকাতায় মাঝে মাঝে ও আসত ওনাদের সঙ্গে কাজ করতে। পরে পড়া শেষে ও যখন অনেকদিন চাকরিবাকরি পাচ্ছিলনা তখন উনি চেষ্টাচরিত্র করে এই সংস্থায় ওর কাজের ব্যবস্থা করে দেন। এসব জায়গায় মাইনেপত্র সেরকম নয়, যারা কাজ করে তারা অনেকটা সেবার মন নিয়েই করে। যাদের সত্যিকারের চাকরির প্রয়োজন তারা এসব জায়গায় বেশীদিন থাকেনা। লীনা খুবই ডেডিকেটেড ছিল, স্বভাব হাসিখুশী, মিষ্টি মেজাজ সবাই ভালবাসত। বিয়ের প্রস্তাব আসতে ও একটু দ্বিধায় ছিল, পরে শমিতাই ওকে পরামর্শ দেন বিয়ে করতে। শমিতার সঙ্গে চিঠিতে ও পরে ফোনে ওর যোগাযোগ ছিল। কখনো কলকাতা গেলে দেখাও হত। শমিতার স্বামী আই এ এস অফিসার, দিল্লীতে বদলি হয়ে এসেছেন বছর দেড়েক হল। তাই শমিতা ওর বড়কর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে তারা সানন্দে ওকে দিল্লীতে নিয়ে আসেন। এখানে এসেই উনি জোর করেই লীনাকে আবার নিয়ে আসেন দিশাতে। লীনার শাশুড়ীর বোধহয় আপত্তি ছিল, তবে ওর স্বামী খুব সাপোর্ট করে।

    এখানেও লীনা অল্পদিনেই বেশ নাম করে ফেলেছিল। ও আর একটি মেয়ে পালা করে ওদের সেন্টারের দায়িত্বে থাকত। শমিতার আগে যে ভদ্রমহিলা এখানকার চার্জে ছিলেন উনি সেন্টারটা নিজেই দেখতেন, যোশীজী ওনাকে সাহায্য করত। শমিতা এসে সব কিছু বেশ অগোছালো পান। একটু চলে যাচ্ছে ধরণের ব্যাপারস্যাপার, কোন কিছু খুব একটা সিস্টেমেটিক নয়। উনি লীনার ওপর ভার দেন সব কিছু ঠিকঠাক করার। নিজে অত সময় দিতে পারেননা, ওনাকে অনেক এদিক ওদিক ঘুরতে হয়। লীনা খুবই ভাল কাজ করছিল, বুদ্ধিমতী ছিল।
    লীনা কে ওরা অস্ট্রেলিয়াতে পাঠাচ্ছিলেন, ওখানে ওনাদের সংস্থার হেড অফিসে একটা স্টাডি প্রোগ্রামে। এরকম ট্যুরের সুযোগ মাঝেসাঝেই আসে তবে সবাই এই যেতে চায়না বিশেষ করে মেয়েরা। এতদিনের জন্যে ঘরসংসার ছেড়ে, তা ছাড়া বিদেশে খরচের টাকাপয়সাও যথেষ্ট পাওয়া যায়না। লীনা রাজী হতেই তাই ওরা ওর কাগজপত্র প্রসেস করতে শুরু করে দেন। আর মাসখানেক বাদেই লীনা যেত। লীনা ওনাকে অনেক কথাই বলত। ইদানীং মাঝেমাঝে একটু চুপ হয়ে যেত তবে সেটা ওনার মনের ভুলও হতে পারে।
    গত দুমাস ধরে উনি বেশীরভাগ সময়টা কলকাতাতেই ছিলেন, ব্যস্ত। ওঁর বাবা খুব অসুস্থ, তাকে দেখাশোনা করার জন্য। মাঝে দুএকদিনের জন্যে এসেছেন আবার চলে গেছেন। লীনার সঙ্গে আলাদা করে বসার সময় হচ্ছিল না। ও দুএকবার সেন্টার নিয়ে রিপোর্ট দিতে এলে উনি ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তবে সেরকম গুরুতর ব্যাপার হলে তো লীনা ওকে ফোনই করতে পারত, তা তো করেনি।
    ভদ্রমহিলা বেশ শক্তমত হলেও লীনার মৃত্যুতে খুবই আপসেট মনে হল। বারবার বলতে থাকলেন,
    -"কে এমন কাজ করল? লীনার সঙ্গে কার কি শত্রুতা থাকতে পারে, এত ভাল ছিল মেয়েটা। খুব খারাপ হল।"

    উনি থামলে রাই জিজ্ঞেস করল,
    -"আচ্ছা এই সেন্টারে কি কি হয়? যাওয়া যায় একবার?"
    -"হ্যাঁ যেতে পারেন। এখান থেকে বেশী দুরে নয়। বয়স্কদের থাকার ব্যবস্থা আছে। একটা ক্লিনিক আছে তাতে বাসিন্দারা ছাড়াও বাইরের বয়স্ক লোকেদের চিকিৎসার সুবিধে আছে। এছাড়া আমাদের ফিল্ড ওয়ার্কাররা আছে যারা বিভিন্ন এলাকায় ছোট্ট সেন্টার চালায়, বয়স্কদের সমস্যা নিয়ে। ওষুধপত্র সব আমাদের বাইরের সাহায্যে আসে। অনেক ডাক্তার বিনাপয়সায় প্রাথমিক চিকিৎসা করেন, স্পেশালিস্ট কাউকে কাউকে আমরা নিয়ে আসি কখনোসখনো। ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্প, চক্ষু চিকিৎসা শিবির এসবের ব্যবস্থাও করা হয় মাঝে মাঝে। গুরুতর চিকিৎসা বা অপারেশন ইত্যাদি কেস বেসিসে হাসপাতালে পাঠানো হয়। রোগীদের অবস্থা মত আমরা এড স্যাংশন করি। হসপিটালের সুযোগ সুবিধার জন্যে আমরা জীবনলোক হাসপাতালের সঙ্গে যুক্ত।"

    রাই আর ভার্মা শমিতার ব্যবস্থামত যোশীজীর সঙ্গে ওদের সেন্টারে গেল। কাছেই, গাড়ীতে মিনিট কয়েক লাগল। সেন্টারটিও একটি কম্পাউন্ড ঘেরা একতলা বাড়ি। তবে একটু বেশী জায়গা নিয়ে এলাকাটা। মূল বাড়িটি ছাড়াও আলাদা দু চারটি কুঠি আছে। অফিসঘর, ক্লিনিক, সিকিউরিটী ও কাজের লোকেদের থাকার ব্যবস্থা। ক্লিনিকে একজন ডাক্তার বসেছিল। চার পাঁচজন পেশেন্ট ছিল, বয়স্ক গরীব মনে হয় দেখে। ক্লিনিকের লাগোয়া একটা ছোট্ট অফিসঘর। সেখানে কম্পিউটারের সামনে একটি মহিলা বসেছিল, বিবাহিতা, তিরিশের কাছাকাছি বয়স হবে। যোশীজী আলাপ করিয়ে দিলেন, লীনার সহকর্মী মধু। মধু আর লীনাই সেন্টার দেখত, যোশীও হেল্প করেন।

    রাই একটু ঘুরে ফিরে অফিস দেখতে লাগল। জানালা দিয়ে দেখল বাগানের বেঞএ দু একজন বৃদ্ধ বৃদ্ধা বসে আছে, ওরা বোধহয় থাকে এখানে।
    মধুও লীনার প্রশংসাই করতে লাগল। দিদি খুব ভাল ছিল। রাই ভার্মাকে বলল সেন্টারের খাতাপত্র দেখতে আর নিজে বসল কম্পিউটারে। যোশীজী ভার্মাকে সাহায্য করতে থাকল আর তাকে মধু। কম্পিউটারে বেশী কিছু নেই, মামুলী কিছু তথ্য। বিভিন্ন সময়ে যারা এখানে থাকতে এসেছে তাদের নামধাম, যারা ওদের এনেছে সেইসব ফিল্ড ওয়ার্কারদের রেফারেন্স ইত্যাদি। ফাইল গুলো বরং ইন্টারেস্টিং। অনেকগুলোতেই লীনার হাতের লেখা আছে, মন্তব্য আছে। মাসিক খরচের হিসেব নিকেশ, কাজের লোকেদের মাইনে পত্র, জমা খরচ।

    ওখানে দেখেশুনে রাইরা ক্লিনিকে গেল। বাইরে তখন আর পেশেন্ট নেই। ডাক্তার আর একটি নার্স সব গুছিয়ে তুলছে। ডাক্তারটি সদ্য পাস করে বেরিয়ে কাছের একটি সরকারী হাসপাতালে আছে। সপ্তাহে একদিন এখানে আসে বিনা পারিশ্রমিকে রোগী দেখে দেয়। আলমারীতে গুটিকয়েক ফাইল রাখা আছে, তাতে রোগীদের ডিটেলস। পাশে একটা ঘরে থরে থরে ওষুধের ভান্ডার মজুত। এসব ওষুধপত্র বিদেশী সাহায্যে এসেছে। ফাইলগুলো দেখতে গিয়ে রাই দেখে প্রায় সব রোগীদেরই হাসপাতালে রেফার করা আছে। যোশীকে জিজ্ঞেস করলে উনি জানান সাধারণত যেসব রোগীদের রেফার করা হয় তাদের ই ফাইল বানানো হয়। অন্য দের হয়না। এত রোগী আসে সবার রেকর্ড রাখতে গেলে প্রচুর লোকবল দরকার হত। ভাল করে দেখতে দেখতে রাই খেয়াল করে পুরনো রেকর্ডগুলো খুব একটা নিয়মিত নয়, বেশ অনেক অনেক দিনের গ্যাপ আছে।

    যোশীজীকে বলতে উনিও খুঁটিয়ে দেখেন।
    -" আমি তো রেকর্ডের ব্যাপারটা ঠিক দেখিনি কোনোদিন। আগের ম্যাডাম দেখতেন, লীনাজী আসার পর থেকে রেকর্ড কি কোথায় রাখা হত সে সব সেই জানত। মধু হয়ত বলতে পারবে।"
    মধুকে ডেকে জিজ্ঞেস করতে সেও কিছু বলতে পারলনা। ফাইল ভরে গেলে অন্য ফাইল খোলা হত। হয়ত ফাইলে ম্যাডাম কিছু কাজ করছিল, অন্য কোথাও রেখেছে। রাইরা আবার লীনাদের অন্য অফিসে গিয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজল, কিন্তু কিছুই পেলনা। শমিতাও কিছু বলতে পারলেননা।
  • Hukomukho | 76.111.94.232 | ০৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৪:১০428312
  • বাহ হেভী জমেছে, ঘোর রহস্য, আমার কেমন মনে হচ্ছে এবারে বিদেশী ড্রাগ্‌স স্মাগলিং চক্র এইসব আসতে পারে। লীনা কি বিদেশী ড্রাগ্‌স পাচারে যুক্ত ছিল ? অভি কি রাইকে ভালোবাসত ? এসবের জন্য অপেক্ষা করুন পরের কিস্তির জন্য। কিন্তু শ্রাবণী কোথায় গেলেন ?? এদিকে দু দুটো খুন হয়ে গেল আর পাঠকদের এভাবে বসিয়ে রাখা কি উচিত ??
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:৫৫428313
  • -----------------------------------------------------------------
    সব দেখেশুনে বেরোতে বেরোতে দেড়টা বেজে গেল। জ্যাম ট্যাম পেরিয়ে বাড়ী ঢুকল আড়াইটায়। টুপাই সেই ফিরেছে আর আলোক খেয়ে অফিস বেরিয়ে গেছে। রাই খেয়েদেয়ে অভিকে ফোন করল। মোবাইলে পেল না, কে জানে কোথায় আছে! সকালের ধকলে ক্লান্তিতে বিছানায় শুতে না শুতেই ঘুম এসে গেল। উঠল যখন পাঁচটা বাজে। মোবাইল তুলে দেখল কোনো মিসড কল আছে কিনা, নেই। টুপাই হোমওয়ার্ক করছিল। নিজের জন্যে চা করে কাপ হাতে নিয়ে বারান্দায় গেল।
    শম্পা দাঁড়িয়ে ওদের ছোট বারান্দায়। ওকে দেখতে পেয়ে বলল,
    -"আজ অফিস থেকে এত তাড়াতাড়ি যে?"
    রাই ওকে সত্যিটাই বলল,
    -"না গো আজ যাইনি। একটু অন্য কাজে গেছিলাম।"
    শম্পার ষোলাআনা ইচ্ছে থাকলেও জিজ্ঞেস করতে পারেনা কোথায় গেছিল। তবে শম্পার চ্যানেল বেশ সক্রিয় সেটা বোঝা গেল ওর পরের কথায়,
    -"তুমি তো কাল মিস্টার গুপ্তার সঙ্গে অতীশদাদের ওখানে গেছিলে। সোমাকে কেমন দেখলে?"
    -"হ্যাঁ, অভিনব নিয়ে গেছিল। সোমা হিন্দী ঠিক বুঝতে না পারে যদি তাই। ভালই তো দেখলাম, লীনার প্রশংসায় পঞ্চমুখ।"
    শম্পা একটু গম্ভীর হয়ে গেল।
    -"কি জানি? প্রবীর বাজারে দেখেছে অতীশদা ঐ সোমা আর মৌলিকে নিয়ে ঘুরছে, ফ্যামিলির মত। আর বাচ্চা মেয়েটাও কি বেইমান দেখ, এরমধ্যে লীনাকে ভুলে দিব্যি আসল মায়ের সাথে ঘুরছে।"
    রাই নীচের দিকে তাকিয়ে দেখল আলোকের গাড়ী ঢুকছে। শম্পার থেকে ছাড়া পাওয়ার এই সুযোগ। ও শম্পাকে বলে ভেতরে গেল।
    আলোক ঘরে ঢুকল, একটু ক্লান্ত। রাই তাড়াতাড়ি চায়ের জল বসাল ওর জন্য। আলোক পোষাক পাল্টে আসতে আসতে চা হয়ে গেছিল। দুজনে এসে বসল বসার ঘরে। রাই আলোকের প্রশ্নের উত্তরে সারাদিন কি হয়েছে সব বলল।
    কথাবার্তার মাঝে ফোন বেজে উঠল। অভি।
    -"রাই, বাড়ীতে?"
    -"হ্যাঁ।"
    -"থাক, আসছি পাঁচ মিনিটে।"
    বলেই অভি কেটে দিল ফোনটা। রাই এতটাই আশ্চর্য হল অভির কথায় যে আর কিছু জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেল। আলোক চা খাচ্ছিল, অভি আসছে শুনে খুশী হল।
    প্রায় মিনিট পনের বাদে অভির পায়ের আওয়াজ পেল করিডরে, ভারী পুলিশী জুতো। দরজা খোলাই ছিল। ঝড়ের মত ঢুকেই আলোকের পাশে বসল অভি।
    -"জল দে, তারপর কফি দে। সঙ্গে কিছু খেতে দিস।"
    রাই, আলোক দুজনেই ওর অবস্থা দেখে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আলোক একদিকে কফি বানাতে লেগে গেল, রাই চটপট উপমা আর বড় চীজ অমলেট বানিয়ে ফেলল আর একদিকে। সঙ্গে মিষ্টিও ছিল, সব খাবার গুছিয়ে খেয়ে আয়েস করে কফিতে চুমুক দিয়ে ওদের দিকে তাকাল অভি।
    -"সারাদিন ঘুরছি, শুধু কিছু ফ্রুটস টুটস আর জুস খেয়ে আছি। তারপর তোর খবর বল প্রথমে। আমার অনেক কিছু বলার আছে।"

    রাই ওর সবকথা আর একবার বলল। অভি চুপচাপ শুনে গেল। শেষ হলে নিজের অভিজ্ঞতা শোনাল। বডি টা ব্রিজনাথেরই, ক্যুরিয়র কোম্পানীর একাধিক লোকে আইডেন্টিফাই করেছে। ব্রিজের ঘর সার্চ করে ওর কাগজপত্রে ললিতপুরের এক গ্রামের ঠিকানা পাওয়া যায়। সেখানে লোক গেছে। তারা ব্রিজের বাড়ি খুঁজে পেয়েছে। বাবা মা ভাই বোন বউ ও দুই ছেলে আছে। অল্প জমি যা আছে তাতে কিছুই হয়না, মূলত ব্রিজের আয়েই সংসার চলে। অনেকদিন থেকেই সে এখানে থেকে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে বাড়িতে টাকা পাঠাত। ইদানীং বছর দেড়েক হল তার ভাইও তার সঙ্গে থেকে দোকানে কাজ করত। মাস কয়েক আগে ভাই খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিডনির অসুখ। অনেকদিন হাসপাতালে ছিল। কিছুদিন আগে ছাড়া পেতে ব্রিজ তাকে গ্রামে রেখে আসে। ভাইয়ের চিকিৎসায় অনেক খরচা হয়ে গেছিল। ব্রিজ বলেছিল যে তার অনেক ধারদেনা হয়ে গেছে। এখন ভাইকে শহরে বসে বসে খাওয়াতে পারবেনা, তাছাড়া তাকে কাজে বেরোতে হবে ভাইয়ের দেখাশোনা কে করবে।

    এদিকে তার ব্যাঙ্কের পাসবইয়ে দেখাচ্ছে তার হাজার তিরিশেক টাকা আছে। হতে পারে এটাকা সে লীনাকে মারার বরাত নিয়েছিল। কাজ শেষ হওয়ার পরে বাকী টাকা পাওয়ার ছিল। যে খুন করিয়েছে লীনাকে সে ব্রিজকে টাকা দিয়ে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার নাম করে মেরে ফেলে। মৃত্যুর সময়ের হিসেবে মনে হচ্ছে লীনার খুনের রাতেই ব্রিজকেও মেরে ফেলা হয়।
    এর মধ্যে একটাই কথা আছে লীনাকে কি ব্রিজ চিনত কোনোভাবে? লীনা ওর জন্য চা বানিয়ে ওকে আপ্যায়ন করবে কেন? কে লীনাকে মারতে পাঠায় আর কেন!

    অভির কথা শুনতে শুনতে রাইয়ের একটা কথা মনে হল,
    -"ক্যুরিয়র কোম্পানির আগে ব্রিজ কোথায় কাজ করত?"
    -"ওর ভাই ঠিকমত জানেনা বলছে। ও নাকি একসঙ্গে অনেক ছুটছাট কাজ করত। সেদিন ব্রিজনাথের এ¾ট্রীর সময় আছে সন্ধ্যে পৌনে সাতটা নাগাদ। এক জায়গায় ও ক্যুরিয়র ডেলিভারী দিয়ে তারপর ধরলাম লীনাদের ওখেনে গেছে। এদিকে সাড়ে সাতটার সময় সায়গল লীনাকে ফোন করেছে। খুন করতে গিয়ে আধঘন্টা ওয়েট করার মত রিস্ক নিল কি করে? ওর মধ্যে যদি লীনার শাশুড়ী বা মেয়ে এসে যেত।"
    -"অভি একটা কথা তো পরিস্কার যে লীনা ওকে ভালই চিনত। বসিয়েছে, চা করেছে ওর জন্য। হয়ত লীনাকে বেকায়দায় পাওয়ার জন্য ওয়েট করেছে, পেশাদার খুনী তো নয়। তাতেই সময় গিয়েছে। কিন্তু লীনার যা সোশ্যাল সার্কল তাতে ব্রিজের মত লোকের সঙ্গে আলাপ মানে ভালভাবে আলাপ থাকার মত নয়। একটাই জায়গা আছে, লীনার অফিসের সেন্টার। সেখানে নানা ধরণের লোক আসতে পারে। ঐ লোকটাও বিভিন্ন ধরণের কাজ করত। আমার মনে হচ্ছে কোনোভাবে সেন্টারেই লীনার সঙ্গে ওর পরিচয় হয়েছে। তুই কাল সেন্টারে আর লীনার অফিসে খোঁজ করতে পাঠা। সবাইকে যেন লোকটার ফোটো দেখান হয়।"
    অভি বলে,
    -"আমিও এটা ভেবেছিলাম। কিন্তু ব্রিজ যে খুনী সেটা আমাদের ডিডাকশন। এখনো সেরকম প্রমাণ কিছুই নেই। ছুরিটায় অবশ্য ব্রিজনাথের হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। কিন্তু ওটা কেউ ব্রিজের বডির পাশে ফেলে রেখে যেতে পারে। লীনাকে খুনের মোটিভ ব্রিজের কোথায়?"

    দুজনেরই একটা নাম মনে পড়ে আর এ ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চুপ করে যায়।

    অভি চুপ করে ভাবল কিছুক্ষণ,
    -"কেসটা জটিল হয়ে যাচ্ছেরে। অতীশ লীনার খুনে থাকলেও ব্রিজকে খুন করানো তার পক্ষে সম্ভব ছিলনা। ব্রিজের ফোটো অতীশকে দেখিয়েছি, সে তাকে চেনার কোনো আভাস দেয়নি। অতীশ বম্বে থেকে আসার পর থেকে চব্বিশ ঘন্টা তার মুভমেন্টের ওপর আমরা নজর রাখছি। সে একটা সাধারন ছাপোষা লোক, মাফিয়া ডন নয় যে ফোন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একে তাকে খুন করাতে পারবে। কিন্তু সোমাকে দেখার পর থেকে একমাত্র অতীশের মোটিভই স্ট্রং মনে হচ্ছে লীনাকে খুন করার। ওর সঙ্গে কথা বলা দরকার।"
    আলোক চুপ করে ওদের কথা শুনছিল। এতক্ষণে মুখ খুলল,
    -অতীশের কোনো লোক এখানে থাকতে পারে।সমস্ত ব্যাপারটা তার পরিচালনায় হতে পারে।"
    অভিকে একটু অন্যমনস্ক ভাবে ঘাড় নাড়ে এ কথায়। কিছু বলেনা।

    রাই অভিকে সেদিনে সেন্টারে কি হয়েছে বিশদ জানাল। সব কথা শুনে অভির ভ্রু কুঁচকে গেল। আসলে মুখে স্বীকার না করলেও লীনার অফিসের দিকটা ওরা খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। তাই বোধহয় নিজের ওপরেই রেগে গেল।
    দু একটা কথার পর অভি উঠে পড়ল। ও চলে যাওয়ার পর লীনার খেয়াল হল অভিকে জিজ্ঞেস করা হয়নি ওরা লীনার জিনিসপত্রের মধ্যে কোনো অফিস সংক্রান্ত কাগজপত্র পেয়েছিল কিনা!
  • shrabani | 204.138.240.254 | ০৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ১২:৫৯428314
  • -------------------------------------------------------------
    বৃহস্পতিবারে সকালে একটা জরুরী মিটিং ছিল। রাইকে অফিসে যেতেই হল। এছাড়া রোজ রোজ ছুটি নেওয়া যায়না। অফিসে বসে আছে, হঠাত ভার্মা ফোন করল।
    -"ম্যাডাম, আমি সেন্টার থেকে বলছি। এখানকার সিকিউরিটী ব্রিজের ছবি দেখে চিনতে পেরেছে, বলছে ও নাকি জীবনলোক হাসপাতালের থেকে আসত। এও বলছে যে মাস খানেক বা দেড় মাস ধরে আসছিল না। কিন্তু গাঙ্গুলী ম্যাডাম বা অফিসের অন্য কেউ ফোটো দেখে চিনতে পারেনি। মিসেস মধু আজ সেন্টারে আসেনি এখনও। স্যার বললেন আপনাকে জানাতে।"
    রাই একটু ভেবে নিল, তারপরে বলল,
    -"মধুর জন্য অপেক্ষা করতে হবেনা। আপনি জীবনলোক হাসপাতালের ঠিকানাটা নিয়ে লাঞ্চের পরে ওখানে চলে যান। আমিও চেষ্টা করব আসবার।অখোঁজ নিয়ে দেখতে হবে ব্রিজ কি কাজ করত ওখানে আর কাজ ছেড়ে দিল কেন। "

    ভার্মার ফোনের পরে আর কিছুতেই ও কাজে মন বসাতে পারছিল না। অভিকে ফোন করে দুজনে কথা বলে কর্তব্য স্থির করে নিল। অভির একটা মিটিং আছে দুপুরে, বিকেল থেকে ও ফ্রি হবে। রাই কোনোরকমে লাঞ্চ অবধি কাটালো। আলোককে অফিসে কিছু বললনা, বাড়ি ঢুকে সব বলল। ঠিক হল ও ছুটি নিয়ে নেবে। আলোক গিয়ে যা হয় একটা বাহানা করে দেবে ওর বসের কাছে। আলোক খেয়েদেয়ে অফিস বেরিয়ে পড়তেই রাইও দ্বিতীয় গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। তার আগে ফোনে ভার্মার সঙ্গে কথা বলে নিল।
    জীবনলোক হাসপাতাল দিল্লীতে হলেও ওদের ওখান থেকে বেশী দুরে নয়। আধঘন্টার মধ্যেই পৌঁছে গেল। বাইরে গেটে ভার্মা অপেক্ষা করছিল ওর আসার। দুজনে মিলে গেল জীবনপ্রকাশের ডিরেক্টর কুসুম ত্রিবেদীর চেম্বার। অভি আগেই ওনাকে ফোন করে দিয়েছিল, সেইমত ভার্মাও এতক্ষণ এসে ওনার সঙ্গে কথা বলে নিয়েছিল। সমস্ত রেকর্ড এনে দেখা হল, ওদের এমপ্লয়ী লিস্টে ব্রিজনাথের নাম নেই।

    রাই ওনাকে জিজ্ঞেস করল,
    -"আচ্ছা আপনাদের সঙ্গে মিসেস গাঙ্গুলীর সংস্থা দিশার কি রকম বন্দোবস্ত? ওখানে আপনার এখান থেকে লোক কেন যায়?"
    : ত্রিবেদী বললেন,
    -"আমাদের এখান থেকে কোন কোন ডাক্তার ওদের ক্লিনিকে বসে। অবশ্য বাইরে থেকেও অন্য ডাক্তার আসে। এছাড়া মেশিনপত্র নিয়ে অ্যাম্বুলেন্স যায় কোনো কোনো দিন। রোগী আনাও হয়। ওষুধ নিয়ে যায় ও নিয়ে আসে রেগুলার স্টোরের লোক কেউ। আসলে ওদের কাছে বাইরের এডে প্রচুর ওষুধ আসে দামী দামী। ওখানে যা লাগে বাকী ওরা এখানে পাঠিয়ে দেয় হিসেব করে। ওখানকার পেশেন্টদের চিকিত্‌সার সবরকম ব্যবস্থা অপারেশন ইত্যাদি এখানে করা হয়। ওদের কাছ থেকে আমরা ওষুধ পাই বলে এখানে অনেক কম রেটে চিকিত্‌সা করা হয় দিশার পেশেন্টদের।"
    রাইয়ের মাথায় আইডিয়া খেলে যায়।
    -"ড:, আপনি স্টোরের লোকজনকে ডেকে পাঠান তো, আমার কিছু জিজ্ঞাস্য আছে।"

    স্টোরের চার্জে যে ছিল তাকে ডেকে পাঠানো হল। রাইয়ের ইশারায় ভার্মা তাকে বাইরে নিয়ে গিয়ে ব্রিজের ফোটো দেখায়। তারপরে দুজনে ভেতরে আসে।
    ভার্মা রাইকে বলে,
    -"ম্যাডাম, ব্রিজনাথ স্টোরে কাজ করেছিল। এ চিনতে পেরেছে।"
    : ত্রিবেদী একটু অবাক হলেন, লোকটির উদ্দেশ্যে বললেন
    -"তোমার এমপ্লয়ী রেকর্ডে তো এ নাম নেই নরিন্দর। তুমি ভাল করে দেখে বলছ তো, কিছু ভুল হচ্ছেনা?"
    নরিন্দর নামের লোকটি একেবারে ঘাড় নীচু করে প্রায় মাটিতে ঠেকিয়ে উত্তর দিল,
    -"হ্যাঁ ডক্টর সাব, আমার ভুল হচ্ছেনা। লোকটা আসলে ঠিকাদারের লোক হিসেবে ডেলি ওয়েজে কাজ করত। লেখাপড়া জানত, কাজ ভাল করত দেখে ওকে স্টোরে কাজ দেওয়া হয়েছিল।"
    : ত্রিবেদী এবার একটু স্বস্তির নি:শ্বাস ফেললেন।
    -"ও তাই বল। তাহলে ওর সব কিছু আপনি ঠিকাদারের কাছে পাবেন। কোন ঠিকাদার নরিন্দর?"
    -"ম্যাডাম, একটা ঠিকাদার নয় তো। দু তিনজনের হয়ে কাজ করেছে। ও কাজ জানত বলে ঠিকাদার পাল্টালেও আমরা ওকে রেখে দিতাম।"
    এবার রাই প্রশ্ন করে,
    -"আচ্ছা নরিন্দর,এই লোকটি অর্থাত ব্রিজকে কি রোজ "দিশা" র সেন্টারে পাঠানো হত? কতদিন কাজ করেছে সে এখানে?"
    -"কাজ তা প্রায় বছর তিনেক করেছে। "দিশা" তে তো রোজ স্টোর থেকে লোক যেতনা, মাঝে মাঝে যেত। এও গেছে অনেকবার।"
    -"কাজ ছেড়ে দিয়েছিল কেন? এখানে তো ওর রোজগার ভালই ছিল মনে হয়।"
    -"ঠিক জানিনা। ওর ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ে। তার চিকিত্‌সা এখানে করা হয়েছিল। ডাক্তাররা কিছুটা সাহায্য করেছিল, কিন্তু অপারেশনের খরচ কুলোয়নি। ধার দেনা হয়ে যায় অনেক। তারপর থেকেই ও একটু অনিয়মিত হয়ে গেছিল, এদিক সেদিক ছুটছাট অনেক কাজ নিয়েছিল। আমরা বকাবকি করতাম। শেষে মাসখানেক আগে কাজই ছেড়ে দেয়।"

    রাই নরিন্দরকে ছেড়ে দেয়। কি মনে হতে ড: ত্রিবেদীর অফিসে বসে হাসপাতালের কাগজপত্র বিশেষ করে "দিশা" র সঙ্গে ডীলিং এর যেসব ফাইল তা দেখে আর নোট করতে থাকে।
    -"দিশার চার্জে এখানকার কোন ডাক্তার আছে, তার সঙ্গে একটু কথা বলা যায়?"
    : ত্রিবেদী এ কথায় একটু ভেবে বলেন,
    -"সেরকম আলাদা করে চার্জে কেউ নেই। তবে ড: রেখা স্টোরের দায়িত্বে আছে। তাই দিশার ব্যাপারটাও ঐ দেখে। আর পেশেন্ট একবার এখানে নিয়ে এলে দিশার বলে আলাদা কোন ব্যবস্থা নেই। হসপিটালের নিয়মমাফিক সব ডাক্তাররাই তাদের দায়িত্ব অনুসারে কাজ করেন।"
    -"ড: রেখার সঙ্গে কথা বলা যায়?"
    -"ও তো বোধহয় ও ছুটিতে আছে। কাল এসে যাবে, আপনারা কাল আসুন।"
    রাই আর কথা না বলে বেরিয়ে এল জীবনলোক থেকে।
    বাইরে এসে ভার্মাকে বলে "দিশা"র সেন্টারের দিকে যেতে। ও নিজের গাড়ীতে ভার্মার গাড়ির সাথে সাথে যায়। মধু এসে গেছে ততক্ষণে। ও মধুকে বলে ক্লিনিক সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র, অ্যাকাউন্টস রোগীদের রেকর্ড সব নিয়ে আসতে। ভার্মা সব চেক করে দেখে কোথাও কোন কাগজ বাদ না পড়ে। সমস্ত দুজনে মিলে দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে যায়। সেন্টার থেকে বেরিয়েছে যখন ওর মাথায় তখন অনেক প্রশ্ন। ভার্মা ওর কথামত রিসিট লিখে দিয়ে পুলিশের তরফ থেকে কিছু কিছু পেপার সীজ করে।

    সন্ধ্যেবেলায় যখন বাড়ি ফিরল তখন ও প্রায় হাক্লান্ত। আলোক ওর অবস্থা দেখে কিছু না বলে এক কাপ স্ট্রং কফি করে এনে দিল। কফিটা খেয়ে একটু চাঙ্গা হল। চোখ বুজে কিছুক্ষণ বসে রইল, ওর কেমন একটা ধন্দ লাগছে, কি যেন মিসিং। কিন্তু সেটা কি? অভির ফোন এল যখন তখনও ওর মাথায় লীনার অফিসের কাগজপত্র ঘুরছে। অভিকে ও বলল এ নিয়ে খোঁজখবর করতে, কোথাও কিছু পাওয়া যায় যদি।

  • baps | 203.199.41.181 | ০৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৪:৫১428315
  • শ্রাবণী কুঠে গেলি। পট্‌কন পট্‌কন।
    ডি: মারাঠি বলার চেষ্টা করছি। রাজ থ্যাকারের জমানা বলে কথা। জনগন দোষ লিবেন না।
  • shrabani | 124.124.86.102 | ০৩ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৬:৫৮428317
  • পরদিন সকালে উঠে রাইয়ের অফিস যেতে ইচ্ছে করলনা। সবাই বেরিয়ে যাওয়ার পর চুপচাপ পেপারটা নিয়ে সামনের ঘরে বসেছিল। ইন্টারকম বেজে উঠল। শম্পার ফোন।
    -"রাই, তুমি আজ অফিস যাওনি? আলোকদা একা গেল দেখলাম।"
    রাই বিরক্ত হল। শম্পার চোখ এড়িয়ে এ সোস্যাইটীতে কিছুই ঘটতে পারেনা। সাতসকালেই সে যে অফিস যায়নি সে খবরটাও শম্পা জেনে গেছে। একটু এলানো গলায় বলল,
    -"না গো একটু জ্বর জ্বর লাগছে, তাই গেলাম না।"
    শম্পা দু চারটে এদিক ওদিকের কথা বলার পর একটু যেন সংকোচে বলে উঠল,
    -"লীনার কেসটার কি আর কিছু জানা গেল? মি: গুপ্তা কিছু বলেছেন তোমাকে?"
    শম্পাকে সব কথা বলার কোনো দরকার মনে করলনা। তাই এড়িয়ে যাবার মত করে বলল,
    -"না তো, সেরকম কিছু শুনিনি তো।"
    -"সোমা তো এখনও রয়েছে।"
    রাই একটু অবাক হল। সোমা স্বামী পুত্র সংসার ছেড়ে এখনও বসে আছে। এ নিয়ে মন্তব্য করলেই শম্পা গসিপ শুরু করে দেবে তাই বলল,
    -"সে তো ভাল কথা, অন্তত মৌলির পক্ষে।"
    শম্পা আবার অভির কথা তুলল,
    -"উনি তো পরশু এসেছিলেন তোমার বাড়িতে?"
    এবার একটু কড়া করেই বলে রাই,
    -"শম্পা, অভি আমার বন্ধু, আমার বাড়ী এমনি আসতে পারে না? তুমি কিছু ভেবনা, সেরকম কিছু হলে আমি তোমায় আগে জানাব।"
    ফোন রেখে দিল।

    ঘরে বসে বসে বোর হচ্ছিল, ভাবল লাঞ্চের পর অফিসটা ঘুরে আসবে। অফিসে গিয়ে দেখল এখনও দু চারজন বাঙালীর মাঝে লীনাকে নিয়ে আলোচনা চলছে।
    বস ওকে দেখে খুশী হল,
    -"কি এখন শরীরটা ভাল একটু? দরকার হলে আরও রেস্ট নিয়ে নাও, স্ট্রেন করার দরকার নেই।"
    এই রে, আলোক ঠিক ওনাকে কি বলেছে রাইয়ের না আসার কারণ সেটা তো জিজ্ঞেস করে নেওয়া হয়নি! তাও একটু দেঁতো হাসি হেসে ম্যানেজ করার চেষ্টায় বলল,
    -"হ্যাঁ এখন বেটার। রেস্ট নেব ভেবেছিলাম কিন্তু বাড়িতে বসে বসে বোর হয়ে যাচ্ছি, তাই এলাম।"
    বলেই ভাবল, ভগবান কি মিথ্যে বলছি, গত এক হপ্তায় একবারও একটু বোর হবার মত ফুরসত কি পেয়েছি! উনি হাঁ হাঁ করে উঠলেন,
    -"না না তাহলে তুমি মিটিং টিটিং গুলো ছাড়, লাইট কিছু কাজ কর। এই যে তোমার এই নোট টা নিয়ে জি এমের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। উনি বললেন লিখেছ ভালই তবে এতে কোয়ালিটীর একটা অ্যাপ্রুভাল থাকলে ভাল হয়। তুমিই নাহয় কোয়ালিটী তে গিয়ে ওদের জি এমের সই করিয়ে নিয়ে এস। এমনি ডাকে পাঠালে আননেসেসারি লেট হবে, সামনাসামনি বুঝিয়েও দিতে পারবে ব্যাপারটা। "
    কোয়ালিটী ডিপার্টমেন্টে অতীশ কাজ করে, কে জানে অফিস জয়েন করেছে কিনা। অভির সঙ্গে এ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। রাইয়ের একটু গিয়ে দেখার কৌতূহল হল।

    নোটটা নিয়ে গুটিগুটি পায়ে দু ফ্লোর নীচে অতীশদের ডিপার্টমেন্টের দিকে গেল। গিয়ে দেখল অতীশ এখনও অফিসে আসছে না, ওর সীট খালি। পাশের সীটে মজুমদারদা বসে। ওকে অতীশের সীটের দিকে তাকাতে দেখে একটু মুচকি হাসলেন। তারপর নিজের সামনের খালি চেয়ার দেখিয়ে বললেন,
    -"রাই যে, এস বস। অনেককাল এদিকে আসতে দেখিনা যে। কোথায় আসা হয়েছিল, অতীশের কাছে?"
    রাই বসে পড়ে বলল,
    -"না না, এই পেপারটাতে আপনার বড়কর্তার একটা সই চাই। অনেক এক্সপ্ল্যানেশন দিতে হবে, তাই নিজে এলাম।"
    -"অতীশের ব্যাপারটা শুনেছ তো? চিনতে তো ওর বউকে, মানে যে বউ খুন হয়েছে? দ্যাখো কান্ড, এতদিনের জলজ্যান্ত বউটা মরে গেল আর যাকে সবাই মরা বউ বলে জানত সে জ্যান্ত হয়ে ড্যাং ড্যাং করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।"
    এই বলে দারুন একটা রসিকতা হয়েছে ভাব করে হা হা করে হেসে উঠলেন। রাইয়ের মনে হল ভদ্রলোক একটু গসিপগন্ধী। তাই দ্বিধা না করে শুরু হয়ে গেল,
    -"মজুমদারদা, অতীশদার কি বাইরে যাওয়ার কথা হচ্ছিল? কিছু জানেন?"
    -"বাইরে মানে বিদেশ?"
    -"হ্যাঁ, এই অস্ট্রেলিয়া টিয়া। একটা কানাঘুষো শুনছিলাম যেন।"
    -"ধুর, তুমি কোত্থেকে শুনলে? আমি অতীশের সিনিয়র, আমারই এখনও টার্ণ আসেনি ফরেন ট্যুরের। তোমাদের মত আমাদের এখানে এত ঘন ঘন বিদেশী ট্যুর ট্রেনিং আসেনা। এরকম কিছু এলে অতীশের আগে লাইনে অনেকে আছে যাবার জন্য।"
    মজুমদার কে একটু অসন্তুষ্ট মনে হল। রাই তাড়াতাড়ি কথা ঘুরিয়ে বলল,
    -"আপনার কি মনে হয় দাদা, এই মৃত্যুতে অতীশদার হাত আছে?"
    -"দেখ, অতীশ আমার পাশে বসত ঠিক কথাই, কিন্তু এরকম একটি ইনট্রোভার্ট পদার্থ আমি জিন্দেগীতে দুটি দেখিনি। সারাদিনে কটি কথা বলত, গুনতে পারা যায়। এসব লোকের মনের খবর দেবা ন জানন্তি। তারওপর শুনছি পুরনো বউটা মারকাটারি সুন্দরী। কিছু মনে কোরোনা মেয়েদের জন্য পৃথিবীতে বড় বড় হাঙ্গামা যুদ্ধ হয়ে গেছে আর এতো সামান্য একটা খুন।"
    -"কিন্তু অতীশদা তো বম্বে তে ছিল?"
    -"আরে, সে শোনোনি। ভাড়াটে খুনী খুন করেছে যে। সেই খুনীটার বডিও তো কোথায় পাওয়া গেছে।"
    রাই বুঝল কিছুই চাপা থাকেনা, খবর বাতাসে রটে। তবু রাই বলে,
    -"কিন্তু আমি তো শুনেছি লীনার খুনী বলে যাকে মনে করছে পুলিশ, তাকেও সেই রাতেই খুন করা হয়েছে। সেটাও কি তাহলে আর একটা ভাড়াটে লোক করেছে?"
    মজুমদারদার গোয়েন্দা গল্পের লজিক সূত্র এসবের ওপর খুব বেশী আস্থা নেই মনে হল।
    -"কে জানে কি ভাবে করেছে, তবে আর কারই বা কি লাভ মেয়েটাকে খুন করে। অতীশের ঐ একটা মামাতো না খুড়তুতো ভাই আছে না? ওটাও তো বদ, নিজের রোজগার উড়িয়ে পুড়িয়ে প্রায়ই এখানে এসে অতীশের কাছে টাকা নিয়ে যেত। সেই শুক্রবারেও তো এসেছিল, অতীশ বম্বে গেছে জানতনা। আমার কাছে এসে বসল, বিনি পয়সার ফোনে ঘন্টা ধরে গপ্প মারল। কি করি, অতীশের ভাই, আমিও চা টা খাওয়ালাম। তা, দেখগে যাও সেই হয়তো সব বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। এরকম তো এদিকে আকছার হয়, পরিবারের সবাই মিলেই মেরেছে বউটাকে।"

    তুষার শুক্রবারে এদিকে এসেছিল? সে যায়নি তো অতীশকে অফিসে না পেয়ে লীনার কাছে! সেদিন যে সে এ শহরে এসেছিল কথাটা চেপে গেল কেন?

  • Rajdeep | 125.22.62.70 | ০৪ ডিসেম্বর ২০০৯ ১২:১৬428318
  • কেন? পরের সংখ্যা আসছে না কেন?
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০৪ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৫:৩৭428319
  • -------------------------------------------------------------
    সন্ধ্যেয় বাড়ী ফিরেই ও অভিকে ফোন করল আগে। অফিসে মজুমদারদার সাথে যে সব কথা হয়েছে তা বলল ওকে। অভি শুনে অবাক!
    কথা হল অতীশকে ডেকে পাঠিয়ে ওর সঙ্গে কথা বলবে পরদিন। এছাড়া তুষারেরও খোঁজখবর নিতে লোক পাঠাবে। লীনার অফিসের কাগজপত্র ওরা একজন ভাল অডিটরকে দিয়ে চেক করিয়েছে, বেশ কিছু ফাঁক পাওয়া গেছে। এ নিয়ে কাল ভার্মা যাবে শমিতার সঙ্গে কথা বলতে, তবে শমিতা তো এই বছরখানেক এসেছে। দেখা যাক সে কি বলে!

    শনিবার সকালে অভিনবের ফোন এল। রাত্রেই অতীশের সঙ্গে কথা হয়েছে।
    তুষারের ব্যাপারে ভার্মা খোঁজ নিয়েছে, মক্কেলের একটু জুয়া ইত্যাদির দোষ আছে, এদিকে রোজগার অত্যন্ত মামুলী। মামার অনুরোধে অতীশই ওর চাকরির ব্যবস্থা করে দিল্লীতে। মাসের শেষে প্রায়ই টাকাপয়সার টানাটানি পড়ে, তখন অতীশের কাছে এসে হাত পাতে। অতীশ ওর দোষ সম্বন্ধে কিছু জানেনা, পুলিশ খবর নিয়ে বার করেছে। ভাবত দিল্লীর মত শহরের খরচ বেচারা কুলিয়ে উঠতে পারেনা। অতীশের মা বাবা ওকে বিশেষ পছন্দ করে না, ওদের লুকিয়ে অতীশ টাকা দেয়। তাই বাড়িতেও খুব একটা আসতনা। এসব কথা অতীশ জানিয়েছে। তুষারকে অভি থানায় ডেকে পাঠিয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য, হয়ত এসে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যেই। রাই যদি ফ্রী থাকে আসতে পারে থানায়। সত্যি কথা বলতে আজকাল অফিস গেলেও রাইয়ের মাথায় কেসই ঘুরছে চব্বিশ ঘন্টা। আজ ছুটি হলেও অফিসে যাবার ছিল, বাইরে থেকে কিছু লোক আসবে। অফিসে আসতে একটু দেরী হবে ফোন করে দিয়ে ও চলল থানার দিকে।

    থানায় পৌঁছে অভির ঘরে গেল। ওকে সবাই বেশ চিনে গিয়েছে বড় সাহেবের বান্ধবী বলে। ভার্মা এল সঙ্গে সঙ্গেই, কফিও।
    অভির প্রথম দিককার কনফিডেন্স একটু ধাক্কা খাচ্ছে মনে হচ্ছে। কোনো দিকেই কোনো স্ট্রং মোটিভ পাচ্ছেনা। অতীশেরও না। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে সোমাকে আবার বিয়ে করার জন্যই বা লীনাকে মেরে ফেলতে হবে কেন! একটু হতাশ স্বরে বলল,
    -"তাই তো রে, খুনের মোটিভ না পেলে বড়ই মুশকিল হয়ে যাবে।"
    -"ব্রিজনাথের ওদিকটা আর কিছু খবর পেলি?"
    -"ওর ভাই আসছে, বডি ওকেই দেওয়া হবে। হয়ত কিছু পাওয়া যাবে। কিন্তু যেখানেই কাজ করেছে সবাই একবাক্যে বলছে কাজের লোক ছিল, ঠিক ক্রিমিন্যাল টাইপের ছিলনা। কিছু বুঝতে পারছিনা, হয়ত আদৌ ও খুন করেনি লীনাকে, ওকে ফ্রেম করা হয়েছে। তা হলেও আমরা মোটিভ কেন বুঝতে পারছিনা!"

    রাই একবার সোমার উল্লেখ করতে অভি খুব একটা সায় দিল না। যেই খুন করাক ব্রিজ পিকচারে আসে কি করে এটাই এখন ওর মাথায় ঘুরছে।

    একটা কনস্টেবল এসে খবর দিল তুষার এসেছে। ঠিক হল পাশের ঘরেই ভার্মা তুষারকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে বা কড়কাবে। কানেক্টিং ডোর টা হাল্কা খোলা থাকবে। লীনা আর অভিনব এ ঘরে বসেই শুনতে পাবে সব। পরে দরকার হলে ওকে অভির কাছে আনা হবে।
    সেইমত ভার্মা গেল আর একটু পরেই পাশের ঘরে লোকজনের আওয়াজ শোনা গেল। রাইয়ের কান খাড়া। কথাবার্তা হল এরকম।

    -"আর তুষারজী, আপনি কোথায় চাকরি করেন, অফিস টাইম কটা থেকে কটা?"
    -"ওখলায় একটা ফ্যাক্টরিতে, সকাল নটা থেকে সাড়ে পাঁচটা।"
    -"তা ওখলা তো এখান থেকে বেশী দুরে নয়, আপনার এদিকে আত্মীয়ের বাড়ি আসার সময় হয়না কেন?"
    -"না মানে, আমি থাকি দুরে, এখানে এলে বাড়ি ফিরতে অনেক রাত্রি হয়ে যায়, বাসটাসও ঠিকমত পাওয়া যায়না।"
    ভার্মার হাতে একটা খাতা, সেটায় চোখ বুলিয়ে বলে,
    -"আপনার ভাবীর মার্ডারের কতদিন আগে আপনার সাথে ওনার শেষ দেখা হয়?"
    -"আমি তো আগেই বলেছি, মাস কয়েক আগে মৌলির জন্মদিনের দিন আমি ও বাড়ীতে এসেছিলাম, তখন দেখা হয়েছিল।"
    -"এর মধ্যে আর আপনি এদিকে আসেননি?"

    প্রশ্নটা করে ভার্মা তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তুষারের দিকে তাকিয়ে রইল। সেই চোখ দেখে তুষার বোধহয় একটু নার্ভাস হয়ে গেল।
    -"না, ওদের বাড়ীতে আসিনি।"
    -"বাড়ীতে আসেননি কিন্তু এদিকে এসেছেন। কোথায়, মি: রায়ের অফিসে? কেন?"
    -"অতীশদা বলেছে আপনাদের? আমি দাদার অফিসে কাজে এসেছি মাঝেসাঝে, আমার এক বন্ধু স্টেশনারী সাপ্লাই করে, ওকে নিয়ে এসেছি।"
    -"আপনি ওনার কাছে টাকা নেন।"
    -"হ্যাঁ নিয়েছি এক আধবার দরকারে। আমার দাদা হন, দরকারে তার সাহায্য নিতেই পারি। তার সঙ্গে এ কেসের কি সম্পর্ক?"
    তুষার একটু উদ্ধত ভাবে বলে উঠল।
    ভার্মা একটুও উত্তেজিত না হয়ে শান্ত ভাবে বলল,
    -"সে তো নিশ্চয়ই। এটা আপনাদের পার্সোন্যাল ব্যাপার। পুলিশের এতে কোন মাথাব্যথা থাকা উচিৎ নয়। তা অফিসেই কবে শেষ এসেছিলেন মনে পড়ে? অতীশ আপনাকে মিসেস রায়ের ব্যাপারে কোন কিছু কোনোদিন বলেছিল? কোনো অস্বাভাবিক কিছু লক্ষ্য করেছিলেন?"
    এ কথায় তুষার আগের থেকে একটু সহজ হল মনে হল, মুখের টান টান রেখাগুলো অল্প শিথিল।
    -"অফিসেও প্রায় মাসখানেক আগে এসেছিলাম। অতীশদা বৌদিকে নিয়ে কোন কথা আমাকে কোনোদিন বলেনি।"

    ভার্মা অত্যন্ত মৃদুভাষী, এতক্ষণ কথাবার্তা স্বাভাবিক স্বরেই আস্তে আস্তে বলছিল। হঠাৎ এমন একটা হুঙ্কার দিয়ে উঠল যে রাই চমকে গেল,
    -"দিল্লগী হচ্ছে পুলিশের সঙ্গে, হ্যাঁ? শীগগির বল এই শুক্রবারে কেন গিয়েছিলি অতীশের অফিসে? অতীশকে না পেয়ে কি করলি, ওর বাড়ি গেলি? "
    তুষার একেবারে কুঁকড়ে গেল ঐ চিৎকারে। হাঁউমাউ করে বলে উঠল,
    -"না না বাড়ি যাইনি। নিজের বাড়ি ফিরে গেসলাম। অতীশদা বম্বে গেছে জানতাম না, বিশ্বাস করুন। মোবাইলে ফোন করছিলাম, সুইচড অফ আসছিল। আর্জেন্ট কিছু টাকার দরকার ছিল, তাই চলেই এলাম অফিস ছুটির পরে। এসে শুনি দাদা নেই।"
    -"আর তাই বাড়ীতে ভাবীর কাছে টাকা নিতে গেলি। সে টাকা দিলনা বলে তাকে মেরে ফেললি, তাই তো?"
    এবার তুষার কেঁদে ফেলল,
    -"না, স্যর। আমি দাদার অফিস থেকেই বৌদির মোবাইলে ফোন করলাম অনেকবার। কেউ তুলল না। তাই ভাবলাম বৌদিও হয়ত বাড়ি নেই, গিয়ে লাভ হবেনা। বাড়ি ফিরে গেলাম। আপনি আমার রুমমেটদের জিজ্ঞেস করুন স্যর।"
    -"তোর অফিস তো সাড়ে পাঁচটায় বন্ধ হয়। এখানে অতীশের অফিসে কখন পৌঁছস? মিসেস রায়কে কটায় ফোন করেছিলি অফিস থেকে?
    -"ঘড়ি দেখিনি, সাড়ে ছটা নাগাদ পৌঁছই। এখানেও তখন দু একজন করে লোক বেরোচ্ছিল। দাদা সাতটা অবধি অফিসে থাকে জানতাম, আমি এসময়েই আসতাম। দাদার পাশে যিনি বসেন তিনি চা খাওয়ালেন, ওনার সঙ্গে একটু গল্প টল্প করে সাতটা সোয়া সাতটা নাগাদ বেরিয়ে পড়েছিলাম। বাইরে এসে গেটের ফোন থেকে বৌদিকে ফোন করেছিলাম।"
    -"এসব আগে বলিসনি কেন পুলিশকে?"
    -"সরি স্যর। আমি ভেবেছিলাম আমি তো ওদিকে যাই ই নি, কিছু জানিই না। খামকা এসব বলে ঝুটঝামেলায় পড়ে যাব।"

    ভার্মা তুষারকে ছেড়ে বাইরে এসে অভির ঘরে ঢুকল।
    -"কি মনে হচ্ছে স্যর?"
    অভি বলল,
    -" সোস্যাইটীর সিকিউরিটীরা তুষারকে সেদিন আশেপাশে দেখেছে কিনা একবার খোঁজ কর ওকে নিয়ে গিয়ে। গেটে এ¾ট্রী না করে ও ভেতরে যাবে কি করে? আর লীনার মোবাইলের রেকর্ড তো তোমার কাছেই আছে, নিয়ে এস তো একবার। মিসড কলে তুষারের কল থাকার কথা। ও সত্যি বলছে কিনা বোঝা যাবে। রাই, তুই তোদের অফিসের গেটের নাম্বার চিনতে পারবি?"
    রাই ঘাড় নাড়ে।
    ভার্মা একজনকে ডেকে বলল গাড়ী রেডি করতে আর লীনার মোবাইলের রেকর্ড আনতে।
    রাই একটু ভেবে বলল,
    -"অভি, তুষার যদি সত্যি কথা বলে তাহলে ও যখন ফোন করেছিল লীনা তখন ডেড, তাই ফোন তোলেনি। এদিকে সায়গল লীনার সঙ্গে সাড়ে সাতটায় কথা বলেছে, লীনাদের বাড়ির ইনকামিং কলের রেকর্ড তাই বলছে।"
    -"নট নেসেসারিলি। তুষার আগে আমাদের একথা বলেনি কেন, লুকিয়েছে কেন সেটা দেখতে হবে। লীনা হয়ত চা বানাতে ব্যস্ত ছিল বা সায়গলের ফোন অ্যাটেন্ড করছিল এও হতে পারে।"
    লীনার মোবাইলের রেকর্ড এল। আটটা থেকে প্রচুর মিসড কল। তার আগে রাই দেখল ওদের অফিসের বোর্ডের নাম্বার, সাতটা কুড়িতে ফোন এসেছে। হয়ত এই তুষারের কল। অভির কপালে ভাঁজ, কেস জটিল হচ্ছে।
    ভার্মা বেরিয়ে গেল তুষারকে নিয়ে লীনাদের সোস্যাইটীর দিকে। রাইও উঠে পড়ল। বাড়ি গিয়ে খেয়ে দেয়ে লাঞ্চের পরে অফিসে ঢুকল।

    অফিসে গিয়ে সীটে বসতেই চোখ পড়ল আগের দিনের নোটটার দিকে। যেটা নিয়ে অতীশদের বসের কাছে গিয়েছিল। হাতে সময় ছিল, ফোন করে দেখল অতীশদের বস আজ দোকান (ওদের অফিসের মজার নাম) খুলেছেন, ওর পি এ ও আছে। নোটটা ফাঁকায় সই করিয়ে নেবে বলে গেল অতীশদের ফ্লোরে।
    আজ ছুটি, মজুমদারদার সীটও তাই ফাঁকা। বেঁচে গেল। সোজা ঢুকল জেনারেল ম্যানেজারের অফিসে। ভেতরে লোক ছিল, বাইরে অপেক্ষা করতে থাকল। ওনার পি এ ইন্দু আগে রাইদের ওখানে ছিল, জোর করে নিজের কাছে বসিয়ে চা আনতে পাঠাল। একথা ওকথায় হঠাৎ রাইয়ের চোখ পড়ল টেবিলের ওপর রাখা ফাইলের বান্ডিলের সবচেয়ে ওপরে রাখা ফাইলটির দিকে। অতীশ রায়ের নাম। কোথাও কেউ নেই, ইন্দু একবার কি কারণে ভেতরে যেতেই ও চট করে ফাইলটা খুলে দেখে একটা নোটশীট।
    অতীশ স্টাডি লীভের অ্যাপ্লাই করেছে, তার বেসিসে এইচ আর অ্যাপ্রুভাল নোটশীট বানিয়ে ওর বসের সইয়ের জন্য পাঠিয়েছে। নোটটা অনেকদিন ধরে ঘুরছে, প্রায় একমাস। এতদিনে অনেক জায়গায় সই হয়ে ফাইন্যালি ওদের বসের কাছে এসেছে। যে ইউনিভার্সিটীতে পড়তে যাচ্ছে বলে লিখেছে তার ডিটেলসও দিয়েছে নোটের সাথে। ইউনিভার্সিটী টা অস্ট্রেলিয়ার!

    তার মানে শম্পার কথাই ঠিক। অতীশও অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছিল।কিন্তু অতীশ অস্বীকার করল কেন? ও কি বুঝতে পারছেনা যে এই ব্যাপারটা পুলিশ জানলে ওর ওপরে সন্দেহটা অনেকটাই কমে যাবে!

  • a | 59.161.121.7 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:২৪428320
  • তুলে দিলুম
  • shrabani | 59.94.107.9 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২০:১৭428321
  • ---------------------------------------------------------------------
    কোনোরকমে বাকী সময়টা অফিসে কাটিয়ে বাড়ি ফিরেই অভিকে ফোন করল। অভি আর দেরী না করে অতীশকে থানায় ডেকে পাঠিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল। রাই উত্তেজনায় দু চারবার ফোনে কথা বলে ফেলল। অভি একটু কেমন যেন অন্যমনস্ক। ব্রিজনাথের ভাই এসেছে, তার সাথে পুলিশের কথাবার্তা চলছে।

    একটু পরে অভি জানাল অতীশের সঙ্গে কথা হয়েছে। অফিসের নোটের কথা বলে জোর করতে ও স্বীকার করেছে অস্ট্রেলিয়ায় যাবার কথাটা। বাবা মায়ের অশান্তির ভয়ে আগে চেপে গেসল, এছাড়া মেয়েকেও জানাতে চায়নি । সোমা ওকে ফোন করত কারণ তার বর্তমান স্বামীর বিজনেসের অবস্থা ভাল যাচ্ছিলনা। ওদের অবস্থা বেশ খারাপের দিকে। অতীশের সাহায্য চাইত। অতীশ রাজী না হওয়ায় ও মৌলিকে রেগুলার ফোন করে করে নিজের বশ করে নিচ্ছিল। মৌলি আজকাল লীনাকেও বিশেষ মানতে চাইতনা,মুখে মুখে উত্তর দিত। ওরা খুব অশান্তিতে ছিল। ঠিক এইসময়ই লীনার বাইরে যাবার প্রস্তাবটা আসে। ওরাও ঠিক করে মৌলিকে সোমার থেকে আলাদা করতে আপাতত বিদেশে গিয়ে সেটল করবে।

    অতীশ যদি দোষী না হয় তাহলে দোষী কে? এতো কেঁচে গন্ডুষ করতে হবে মনে হচ্ছে। আচ্ছা সোমা এখনও এখানে কেন? বর্তমান স্বামীর অবস্থা পড়ে গেছে, হয়ত সম্পর্কও খারাপ হয়ে আসছে সেই কারণে। এমন নয় মৌলির নাম করে থেকে মৌলির বাবার সাথে পুরনো প্রেম ঝালিয়ে নিতে চায়। ওকে দেখে প্রচন্ড চালু টাইপের মনে হয়েছে, কথাবার্তা মধুঢালা। এই সময় অতীশ একটা ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, এসময় ওকে মানসিক আশ্রয় দিয়ে তার মন ও ফেরাতে পারে নিজের দিকে। অথবা মৌলিকে নিজের সাথে নিয়ে গিয়ে অতীশের কাছে টাকা পয়সা পাওয়ার একটা পথ করে নিতে পারে! লীনা বেঁচে থাকলে এসব হতনা। অভিকে বলে সোমার বরের একটা ইন্টারভিউয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

    ভাবতে ভাবতে মাথাটা ভারী হয়ে এল। আলোক টুপাইকে নিয়ে ক্যারাটে শেখানোর ওখানে বেরিয়ে গেল। ও খেয়াল করল না। কাজের মেয়েকে যাইহোক একটু রুটি সবজি করতে বলে চুপচাপ কফি নিয়ে বসে রইল। মাথার মধ্যে অনেক কিছু ঘুরছে। হঠাৎ কি মনে হতে ইন্টারকমে ডায়াল করল। ভাগ্যি ভাল শম্পা বাড়িতেই, ওর কিটি চলছে।
    -"আচ্ছা শম্পা, লীনা দরকারী কাগজপত্র বাড়িতে কোথায় রাখত জান? পুলিশ অনেক খুঁজেও ওর কাগজপত্র সেরকম কিছু পায়নি।"
    শম্পা একটু চুপ করে রইল প্রথমটায়, তারপর বলল,
    -"রাই, আমি তোমায় আগে বলিনি। বিশ্বাস কর একদম মনে ছিলনা। এটা যে দরকারী খেয়াল হয়নি। ওর ঐসব বাইরে যাওয়ার কাগজপত্র ডকুমেন্টস লীনা বাড়িতে রাখেনি পাছে ওর শ্বশুর শাশুড়ী দেখতে পেয়ে যান। আসলে ওদের বাড়িতে আলমারি চাবি বন্ধ করার চল ছিলনা, কোনো প্রাইভেসী ছিলনা। আমার কাছে একটা অফিসের ব্যাগে করে সব রেখে দিয়েছিল। সেসব দেখলেই তুমি বুঝবে ও বাইরে যাচ্ছিল, আমার কথাই ঠিক কিনা।"
    শম্পার মাথায় অতীশ যে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে সেটা ঘুরছে।

    রাইয়ের চিন্তা অন্য। ওর ঝিমিয়ে পড়া ভাবটা চলে গেল। ও নিশ্চিত যা চাইছিল তা পেয়ে যাচ্ছে। শম্পার কথাটা ওর আগে কেন মনে আসেনি, ওতো শুধু লীনার বন্ধু না আত্মীয়ের মত ছিল। উত্তেজিত স্বরে ও শম্পাকে বলল তক্ষুনি ঐ ব্যাগটা নিয়ে আসতে। শম্পা ওর গলার আওয়াজে কি বুঝল কে জানে মিনিট দশেকের মধ্যেই একটা কালো অফিসের ব্যাগ হাতে করে হাজির হয়ে গেল।
    রাই ব্যাগ ঘেঁটে দেখল যা ভেবেছে ঠিক তাই। উত্তেজনায় অভির ফোন লাগাল। ফোনে বেশী কিছু না বলে ওর যে অভির সঙ্গে এখনই দেখা করা দরকার সেটা বলল। শম্পা হাঁ করে ওদের কথা শুনছিল। অভি মিটিংএ ছিল। ওকে বলল থানায় চলে আসতে, গাড়ী পাঠাচ্ছে। পাড়া জানিয়ে পুলিশের গাড়ী করে যাওয়াটা রাইয়ের ঠিক মন:পুত হলনা। ও নিজের গাড়ীতেই যাবে ঠিক করল। আলোক আর টুপাই ফিরলে ও লীনার ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ল থানার দিকে।
    অভি তখনও আসেনি। ভার্মা ছিল, খাতির করে বসাল। অভির চেম্বারে বসে বসে কাগজে কলমে ও ঘটনাগুলোকে সাজাতে থাকে। ভার্মা কফি পাঠায়। ভদ্রলোক রাই এর সঙ্গে দুদিন ঘোরার পর ওকে বেশ খাতির করতে শুরু করেছেন। অবশ্য বড় সাহেবের বান্ধবী বলে কথা!

    প্রায় ঘন্টাখানেক পরে অভি এল। এসেই চিৎকার,
    -"কিরে, অনেকক্ষণ বসে আছিস? আরে কি বলব মিটিং শেষ হয়েও হয়না। তোকে কফি দিয়েছে? দাঁড়া আমি কফি খাই, তারপর শুরু করিস। তোর মুখ দেখে মনে হচ্ছে তুই কিছু একটা খুঁজে পেয়েছিস।"
    রাই ধৈর্য্যসহকারে অভির কফি শেষ হওয়া অবধি অপেক্ষা করল।
    তারপরে অভিকে ওর থিওরী বোঝাল। দেখতে দেখতে অভির মুখ গম্ভীর। রাই তাকিয়ে দেখল তার হাসিখুশী ফাজিল বন্ধুর মুখের আড়ালে ওর পুলিশী ব্যক্তিত্ব। রাইয়ের সঙ্গে কথা বলতে বলতেই ও দ্রুত একটা চিটে কিসব লিখে ফেলল। তারপরেই কয়েকটা ফোন করে ফেলল। ভার্মাকে ডেকে কিছু নির্দেশ দিয়ে রাইকে বলল,
    -"তোর কথাই ঠিক মনে হচ্ছে। এখন শুধু প্রমাণ যোগাড় করতে হবে। ভাবছি প্রথমে ওটাকে শুধু জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে থানায় নিয়ে আসি। এটা কনফেস করলে আটঘাট বেঁধে তবে অন্যগুলোকে তুলব। ব্রিজের ভাইকে দিয়ে আইডেন্টিফাই করাতে হবে। তুই এখন বাড়ী যা, কাউকে কিছু বলিসনা।"
    রাই একটু ক্ষুন্ন হল, তারই ডিডাকশন, আর আসল সময়েই সে বাড়ীতে বসে থাকবে। অভি ওকে বোঝাতে থাকল যে এসব ব্যাপারে ওর না জড়ানোই ভাল। অফিস টফিসে শুধুশুধু একটা পাবলিসিটী হবে যেটা ওর হয়ত ভাল লাগবেনা। রাই তাও শুনবেনা। শেষে অভি ওকে রাঘব বোয়াল খেলিয়ে তোলার সময় সঙ্গে নেবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আপাতত বাড়ী পাঠিয়ে দিল।

  • shrabani | 59.94.107.9 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২০:৩৬428322
  • ----------------------------------------------------------------------------
    বাড়ী এসে ও শুধু অপেক্ষা করতে লাগল পরদিনের। অন্যমনস্ক ভাবে ডিনারে বসল। আলোক ওর মুখ দেখে কিছু অনুমান করে থাকবে। কিন্তু রাই কিছুতেই কেস প্রসঙ্গে কোনো কথা তুললনা, অন্যান্য কথা বলতে লাগল।
    ছুটির দিন, তাও কাকভোরে উঠে বসে রইল। সবাই অঘোর ঘুমে। একা এঘর ওঘর করতে লাগল, সাততাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট রেডি করে ফেলল। নিজে স্নানটান সেরে রেডি। শেষমেশ টিভি খুলে বসে রইল।
    আটটা নাগাদ অভির ফোন এল, ওকে সেদিন বাড়ীতেই থাকতে বলল। জাল গুটিয়ে এনেছে, সম্ভবত আর কয়েক ঘন্টার অপেক্ষা। রাই উত্তেজনায় ঘরবার করতে থাকল। সময় আর কাটেনা। অভিদের আসতে আসতে বেলা দুপুর হয়ে গেল।

    খাওয়াদাওয়া শেষ করে সবে উঠেছে, অভি আর ভার্মা এল। একটুও দেরী না করে ওরা তিনজনে বেরোল। এই প্রথম এরকম ভাবে পুলিশের অভিযানের সঙ্গী হচ্ছে, রাইয়ের বুক ধুকপুক। সেক্টর চল্লিশের মার্কেটের পিছনে এসে গাড়ীটা পার্ক করল ওরা। তারপরে হেঁটে বাড়ীটার দিকে গেল। চারিদিক শুনশান ভর দুপুরে, অভি গেটের বাইরে বেলে হাত দিল।
    একটু পরেই এক মধ্যবয়স্ক একজন বোধকরি কাজের মহিলা, তবে বেশ ধোপদুরস্ত, বেরিয়ে এল, চাবি হাতে করে গেটের দিকে। অভির পরনে পুলিশের পোশাক, মহিলা দেখে একটু ইতস্তত করতে,রাই এগিয়ে গিয়ে বলল,
    -"আমি আয়ুষের বন্ধু মৌলিদের ওখান থেকে আসছি। আয়ুষের মা বাবার সাথে একটু দরকার ছিল।"
    মৌলি এবাড়ীতে আসে, মহিলাটি তাকে চেনে। দ্বিধা কাটিয়ে গেট খুলে ভেতরে নিয়ে গেল। জানাল সাব বাড়ী নেই তবে ম্যাডাম ফিরেছেন, খাচ্ছেন। ও খবর দিচ্ছে। একটু পরে রাইদের বয়সী এক মহিলা ঢুকলেন বসার ঘরে। ঢুকে একটু অবাক হয়ে রাইয়ের দিকে দেখলেন। একটা কিছু বলতে যাচ্ছিলেন, চোখ পড়ল পুলিশের পোষাকে অভির দিকে। চুপ করে গেলেন। অভি এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিয়ে রাইয়ের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিল লীনার বন্ধু বলে। ভদ্রমহিলা এই অসময়ে এদের দেখে একটু বিরক্ত হলেও মুখে কিছু না বলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকালেন।

    রাই অবাক হয়ে দেখল অভি গলাটাকে গম্ভীর করে একদম অন্যরকম স্বরে বললে,
    -"মিসেস সায়গল, আমি এর আগে এক দিন এসেছিলাম আপনার বাড়ীতে, আপনার হাজব্যান্ডের সঙ্গে কথা বলতে। আপনি ছিলেননা।
    মিসেস সায়গল ওদের বসতে বলে, নিজেও বসলেন।
    -"হ্যাঁ, হেমন্ত বলছিল বটে। কিন্তু আমার হাজব্যান্ড তো এখন বাড়ীতে নেই। আপনি ফোন করে আসতে পারতেন।"
    -"আমার দরকারটা আপনার সাথেও।"
    -"আমার সাথে?"
    ভদ্রমহিলার কন্ঠে বিস্ময়।
    -"হ্যাঁ আপনার সাথে। আপনি তো ডাক্তার। তা আপনি কোন হসপিটালে আছেন?"
    ভদ্রমহিলা যতটা নরম সরম দেখতে ততটা হাল্কা নন বোঝা গেল ওনার পাল্টা প্রশ্নে,
    -"কেন বলুন তো মিস্টার গুপ্তা। আমার হসপিটাল সম্বন্ধে কেন জানতে চাইছেন আপনারা, কি হয়েছে?
    অভিও গম্ভীর হয়ে বলল,
    -"আমি যা জানতে চাইছি তার ঠিক ঠিক উত্তর দেবেন মিসেস সায়গল। কেন জিজ্ঞেস করছি সব ক্ষেত্রে বলা পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়, জরুরীও নয়।"

    রাই চমৎকৃত হল। এভাবে জোর করে সঙ্গে না এলে অভির এই পুলিশী রূপ তার না দেখাই রয়ে যেত।
    মহিলা একটু ধাক্কা খেল মনে হয়। আর কথা না বাড়িয়ে বলল,
    -"জীবনলোকে।"
    -"আপনি দিশাতে গেছেন কখনও?"
    -"না। যাইনি।"
    -"মিথ্যে কথা। আপনি দিশাতে রোগী দেখতে যেতেন। জীবনলোকের অন্যান্য ডাক্তারদের সঙ্গে। দিশার দায়িত্বে আপনিই ছিলেন জীবনলোকের তরফ থেকে। আপনাদের হেড ড: ত্রিবেদী আপনার নাম করেছেন ড: রেখা সায়গল।"
    মিসেস সায়গল ভ্রু কুঁচকে বলল,
    -"ও আপনি এন জি ও দিশার কথা বলছেন? সেটা পরিস্কার বলবেন তো, আমি বুঝতে পারিনি।"
    -"লীনা রায় যে দিশার সেন্টারের ভারপ্রাপ্ত, আপনি জানতেন? সে কথা আপনার হাজব্যান্ড আমাদের আগে বলেননি কেন?"
    -" দিশার সব লোকেদের আমি চিনিনা। ওনাকেও আমি সেরকম ভাবে চিনতাম না। আশ্চর্য, আমার হাজব্যান্ডের সঙ্গে এসব নিয়ে কথা হতে যাবে কেন! উনি জানতেন না।"
    -"লীনা আপনার ছেলের বন্ধুর মা, আপনি ওকে চিনতেন না?"
    -" খুবই সামান্য। উনি অল্পদিন হল এসেছেন। আমি আজকাল দিশায় রেগুলার যাইনা, জুনিয়র ডাক্তাররা যায়। আমার খেয়াল হয়নি।"
    -"ব্রিজনাথকে চেনেন তো? যে জীবনলোকের স্টোরে কাজ করত, খুন হয়েছে।"
    -"নাম ঠিক মনে পড়ছেনা। হাসপাতালে কাজ করত যখন দেখলে হয়ত চিনতাম।"
    অভি আর মেজাজ ঠিক রাখতে পারল না, চেঁচিয়ে উঠল
    -"চমৎকার! সে রোজ দিশায় যেত, আপনি দিশা সংক্রান্ত ইন-চার্জ, তাকে চেনেন না। আপনার হাসপাতালে তার ভাইয়ের চিকিৎসা হল, আপনার দয়ায় নিখরচায়। তাও আপনি তাকে চেনেন না। শুনুন মিসেস সায়গল, আপনাকে আমার সঙ্গে আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় যেতে হবে।"

    রাই একটু অবাক হল। অভি কি ভদ্রমহিলাকে অ্যারেস্ট করবে? কিন্তু সেরকম তো কথা ছিলনা। ঠিক এই সময়ে হেমন্ত সায়গল ঢুকল। মুখচোখ রাগে লাল। ওনার পিছন পিছন বাড়ির কাজের মহিলাটি। সেই মনে হয় বাবুকে মোবাইলে খবর দিয়েছে। রবিবারে দোকান বন্ধ, তাই বাবু বোধহয় দিল্লীতে নয়,এখানে কাছে পিঠেই ছিল নাহলে এত তাড়াতাড়ি তো পৌঁছতনা।
    -"কি ব্যাপার? আমরা তো আপনাদের সব কথা বলেছি, আবার এরকম ভরদুপুরে ভদ্রলোকের বাড়িতে বিরক্ত করতে এসেছেন কেন?"
    এবার অভি ওর ভদ্রতার মুখোশটা ত্যাগ করে গর্জে উঠল,
    -"কেন? আপনি কি ভেবেছিলেন পুলিশ বোকা গাধা? আপনার স্ত্রী জীবনলোকের সঙ্গে যুক্ত আর তার মাধ্যমে দিশার সঙ্গে, সেকথা আমরা তদন্তে জানতে পারবনা? আপাতত আমি আপনাদের মিসেস রায়ের ও ব্রিজনাথের খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার করছি।"
    সায়গলের মুখটা একটু যেন ফ্যাকাশে হয়ে গেল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
    -"এসব কি যাতা বলছেন? আমরা খুনের সঙ্গে জড়িত? পুলিশকে হেল্প করতে গেছিলাম আর আপনারা আমাকেই সন্দেহ করছেন। জীবনলোকের সঙ্গে একশটা ডাক্তার যুক্ত আছে। এই কারণে আপনারা আমাদের গ্রেফতার করবেন? "
    অভিনব ধীরে ধীরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
    -"না শুধু ঐ কারণে নয়! যোশীর সঙ্গে মিলে আপনাদের দীর্ঘদিনের দিশার ওষুধ আর চিকিৎসার দুনম্বরী ব্যবসা চলছে। আপনার স্ত্রী যবে থেকে জীবনলোকে আছেন ততদিন থেকে। আপনার ওষুধের দোকান জীবনলোকের সাথে যুক্ত। জীবনলোকের স্টোরের নাম করে সেখানে দিশার দামী দামী ওষুধ ঢুকে যায়, যোশী কনফেস করেছে। রোগীদের মিথ্যে করে বড় বড় চিকিৎসার নাম করে রেফার করেন আপনার স্ত্রী, তারপর তার দরুন টাকাপয়সা দিশার কাছে নিয়ে আত্মসাৎ করেন। লীনা রায় এসব কারচুপি শুধু যে আঁচ করেছিল তাই না, কিছু প্রমাণও পেয়েছিল। উনি বোধহয় যোশীকে সন্দেহ করেননি, তাকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। যোশী ভয় পেয়ে আপনাদের জানায়। আরও প্রমাণের অপেক্ষা ও শমিতার অনুপস্থিতিতে লীনা ব্যাপারটা নিয়ে কোনো স্টেপ নিতে চাননি। আর সেই সুযোগটা নিয়েছেন আপনারা। ব্রিজনাথ কে পাঠিয়েছিলেন লীনা রায়কে মারতে, পরে আবার নিজে তাকে মেরে বডিটা হাইওয়ের ধারে ক্ষেতের মধ্যে ফেলে দিয়েছিলেন। আর কিছু বলতে হবেনা, থানায় গিয়ে বলবেন যা বলার।"
    সায়গল কি বলতে গিয়ে চুপ করে গেল। তারপরে শুধু বলল,
    -"আপনি এসব কি বলছেন, ঐ মার্ডারের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা ভদ্রলোক, মার্ডারার নই। আর কে ব্রিজনাথ? আমি এরকম কাউকে চিনিই না।"
    -"তাই বুঝি? যাকে সুপারিশ করে জীবনলোকে কাজে লাগিয়েছেন তাকে চেনেননা। যার ভাইয়ের চিকিৎসা আপনার স্ত্রীর স্পেশ্যাল রেকমেন্ডশনে জীবনলোকে হয়েছে তাকে তিনি চেনেননা। ব্রিজের ভাই এসেছে, থানায় আছে, আপনাদের শনাক্ত করবে। তার কঠিন অসুখ হয়েছিল। সম্ভবত চিকিৎসার সমস্ত খরচ আপনি দিয়েছিলেন এই শর্তে যে ব্রিজ লীনা রায়কে সরিয়ে আপনাকে নিষ্কন্টক করবে। বেচারা গরীব ভাইকে বাঁচাতে আপনার এই মরনখেলাতে রাজী হয়েছিল। এছাড়াও আপনার নানা কাজ সে করত, এ বাড়ীতে আসত। আপনাদের ড্রাইভার ও কাজের লোক তার ছবি দেখে চিনতে পেরেছে। সেদিন সন্ধ্যেয় আপনি ড্রাইভারকে ছুটি দিয়েছিলেন। পরদিন গাড়ী ধুতে গ্যারাজে পাঠান, কেন? ব্রিজনাথের খুনের চিহ্ন মেটাতে?"
    হেমন্ত তাও গর্জে উঠল।
    -"আপনি জানেন আমি কে! আমাদের কি টাকার অভাব? যে টাকার জন্য আমি এসব করতে যাব?"
    -"এখন হয়ত অভাব নেই, কিন্তু একদিন নিশ্চয়ই ছিল। কেন লোভ করেছেন তা আপনিই জানেন। বেশী কথা না বলে চুপচাপ চলুন।"

    হেমন্ত ধপ করে সোফায় বসে পড়ল। রেখা উকিলকে ফোন করতে লাগল।
    সায়গল দম্পতি হাঁউমাউ করে আরো কিসব বলতে থাকল। রাইয়ের কিছুই কানে যাচ্ছিলনা। ওর বড় ক্লান্ত লাগছিল। চোখের সামনে একটা বাচ্চার,টুপাইয়ের মত কারুর মুখ ভাসছিল। আয়ুষের কি হবে? ভাল লাগছিল না আর। চুপচাপ ঘরের থেকে বেরিয়ে এসে বাইরে দাঁড়াল।
    একটু পরে ভার্মা আর অভি সায়গলদের নিয়ে বেরিয়ে এসে পুলিশের গাড়ীর দিকে গেল। কিভাবে যেন রটে গিয়ে চারপাশে একটা ছোটখাট ভীড়।
    গাড়ীতে উঠতে গিয়ে হঠাৎ অভির চোখ গেল একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা রাইয়ের ফ্যাকাশে মুখের দিকে, ও এগিয়ে এল।
    -"তুই থানায় যাবি? তোকে একটু কেমন লাগছে।"
    -"না রে ইচ্ছে করছেনা। আমি রিকশা নিয়ে বাড়ী চলে যাই। ফোন করিস।"
    অভি ওর দিকে তাকাল। বাইরে নিজেকে টাফ প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও সেই স্কুলের সময় থেকেই মেয়েটা আসলে নরমসরম। পুলিশী ব্যাপারস্যাপারে ঘাবড়ে গেছে। ভীষণ মায়া হল ওর, ইচ্ছে করছিল নিজে রাইকে বাড়ী পৌঁছে দেয়, কিন্তু উপায় নেই। মন শক্ত করে ভার্মাকে বলে ম্যাডামকে একটা রিকশায় উঠিয়ে দিতে।
  • shrabani | 59.94.107.9 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২১:১১428323
  • --------------------------------------------------------------------------
    বাড়ি ফিরে রাই চুপচাপ শুয়ে পড়ল, মাথাটা ফাঁকা লাগছিল। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি। বিকেলবেলায় আলোক কফি নিয়ে এসে ডাকতে শেষে অনেক কষ্টে উঠল ও। মুখ হাত ধুয়ে এসে কফি নিয়ে বসল। আলোক দু একবার কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেল। সংসারের কাজকম্ম চলতে লাগল।

    রাত তখন আটটা হবে অভির ফোন এল। বেশী কিছু বললনা, ব্যস্ত আছে। সায়গলরা প্রভাবশালী দম্পতি। খুব সাবধানে কেস সাজাতে হচ্ছে, কোথাও যেন কোন গলতি না হয়। ওকে দু একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ফোন করেছে। রাত্রে বাড়ি ফিরে ডিটেলে কথা বলবে।ফোন শেষ করে ও ড্রয়িং রুমে আলোক বসেছিল সেখানে বসল গিয়ে। অভির সাথে কথা বলে এখন অনেক ফ্রেশ লাগছে।
    একটু মিটিমিটি হেসে বলল,
    -"তোমার সব কিছু খুব জানতে ইচ্ছে করছে না? সব বলব তবে আমার মনে হয় শম্পা আর প্রবীরদাকে ডেকে নিলে ভাল হয়। শম্পার জন্যই এ কেসে আমি ঢুকেছিলাম। ওকে লীনার নাম করে বারন করলেও কি ও সবাইকে সবকিছু বলে বেড়াবে বলে তোমার মনে হয়?"
    আলোক উত্তর না দিয়ে একটু হেসে ইন্টারকম ডায়াল করল।

    শম্পা আর প্রবীর সঙ্গে সঙ্গেই চলে এল। ওরা বসলে রাই ওদের তিনজনের দিকে তাকিয়ে বলল,
    -"আলোক অনেকটাই জানে, তবে আমি তোমাদের সুবিধের জন্য সবকিছু গোড়া থেকে বলব। প্রথমেই বলে রাখি এই কেস যে এত অল্প সময়ে সলভ হল এর বেশীরভাগ ক্রেডিটটাই শম্পাকে যাবে। শম্পার আন্তরিক অনুরোধেই অভি বা আমি এই কেস নিয়ে এতটা চিন্তা ভাবনা করেছি। শুধু তাই নয় মেন লীড ও প্রমাণ ও শম্পার কাছ থেকেই এসেছে।"
    শম্পা একটু লজ্জা লজ্জা ভাব করে, আর প্রবীর তার বউয়ের দিকে একটা প্রশংসার দৃষ্টি হানে যদিও সেই বোধহয় উপস্থিত সবার থেকে কম জানে এই কেস সম্বন্ধে।"
    রাই একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে,
    -"এ কেসে প্রথম থেকেই মনে হচ্ছিল খুনটা আসলে কেউ করিয়েছে। আর স্বভাবতই সেক্ষেত্রে সবার আগে অতীশের নামটাই আসে। তবু খুব স্ট্রং কোনো মোটিভ সেখানেও পাওয়া যাচ্ছিলনা। শম্পার বয়ান থেকে সোমা অর্থাৎ অতীশের আগের বউয়ের কথা জানা যাওয়ার পর থেকে অতীশের প্রতি সন্দেহ আরো গাঢ় হয়। ব্রিজনাথের বডির কাছে তার হাতের ছাপসহ লীনা হত্যার অস্ত্র পাওয়া গেল। ব্রিজনাথ খুনী, কিন্তু সে কেন খুন করবে লীনাকে? এদিকে সোমা পৌঁছে গেছে, অতীশের সঙ্গে তার ফোনে যোগাযোগ ছিল এও প্রমাণ হয়েছে।
    আমার প্রথম খটকা লাগে অতীশের অস্ট্রেলিয়া সংক্রান্ত কথায়। অতীশ অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার কথা মেনে নিলে ওর ওপর সন্দেহটা কিছু কম হত, আমাদের হয়রানি কমে যেত। যে লোক তার বউ মেয়েকে নিয়ে বিদেশে যাবার ব্যবস্থা করছে সে হঠাৎ করে বউকে খুন করাতে যাবে কেন? সব দেখে শুনে এটা প্রিপ্ল্যানড মার্ডারই মনে হচ্ছিল। অতীশ একটু অন্যরকম লোক, তার প্রতি পুলিশের সন্দেহটা সে ধরতে পারেনি। পারলে অস্ট্রেলিয়া যাবার কথাটা লুকতো না।

    এবার ব্রিজনাথের কথায় আসি। খুন করা হয়েছে সার্জিক্যাল দক্ষতায়। ব্রিজনাথ হসপিটালে দীর্ঘদিন কাজ করেছে। লীনার পরিচিত ও ঐদিন অকুস্থলে তার উপস্থিতি ঠিক ঐ সময়ে। এসব দেখে শুনে সেই যে খুন করেছে এ বিষয়ে সন্দেহ রইল না। কিন্তু কেন? তার কোনো ক্রিমিন্যাল রেকর্ড নেই, সে এদিক ওদিক নানা ধরণের কাজ করে রোজগার করে। কোনোমতেই সে ভাড়াটে খুনী নয়। অতএব খুন সে করতে পারে দুটো কারণে। এক, তাকে কেউ ভয় দেখিয়ে বা কোনো কারণে ব্ল্যাকমেল করে এ কাজ করতে রাজী করিয়েছে। অথবা তার নিজের কোনো মোটিভ আছে। তবে একটা ব্যাপার পরিস্কার যে লীনা তাকে খুব ভাল চিনত। সে বাড়ী এলে তাকে চা দিয়ে আপ্যায়ণ করার মত পরিচিতি ছিল লীনার সঙ্গে। বাড়ির কেউ ব্রিজ কে চেনেনা অথচ লীনা চেনে। যোগাযোগটা লীনার অফিসে হওয়াই স্বাভাবিক। আর সেই খোঁজ করতেই পুলিশ পৌঁছে যায় জীবনলোকে।

    আর একজনও সন্দেহের তালিকায় থাকে, সোমা। সে হয়ত আবার নিজের পুরনো সংসারে ফিরে আসতে চাইছে, অতীশের আর মৌলির কাছে। অতীশ লীনাকে ডিভোর্স করে তাকে আবার বিয়ে করবেনা। তাই ভালমানুষীর ভান করে লীনার সবকিছু জেনে নিয়ে লীনাকে খুন করিয়ে পথের কাঁটা সরানোতে তার হাতও থাকতে পারে। সোমাকে দেখে খুবই বুদ্ধিমতী মনে হয়। সে এধরনের কাজ করলেও করতে পারে। কিন্তু তার সম্বন্ধে খোঁজ করে এদেশের সঙ্গে তার কোনোরকম যোগাযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়না। সে এদিকে আগে আসেওনি। ব্রিজের সঙ্গে তার যোগাযোগ হওয়া প্রায় অসম্ভবই বলা চলতে পারে।
    সব দেখেশুনে আমার কেমন মনে হয় লীনার অফিসের আশেপাশেই আছে এই রহস্যের সমাধান।
    আর একটা ব্যাপার আমাকে ভাবায় সেটা হচ্ছে লীনার মৃত্যুর সময়। খুব কম সময়ে হত্যাকান্ড টা ঘটেছে। দেখতে গেলে লীনার একা বাড়িতে থাকার চান্স শুধু ঐ সন্ধ্যেবেলায় কিছুক্ষণ। অতীশ ও তার বাবা নেই। শাশুড়ী প্রতিদিনই মন্দিরে যান, লীনা এসময় সাধারণত রান্নাবান্না সারতে থাকে। মেয়ে সপ্তাহে দুদিন পড়তে যায়, এটা জানা সহজ। অন্যসময় হয় শাশুড়ী নয় মেয়ে বাড়িতে। সকালে লীনা অফিসে যায়, দুপুরে ফেরে। রাস্তাঘাটে তাকে প্রকাশ্যে মারার রিস্ক ব্রিজের মত অপেশাদার খুনী নিতে পারেনা।

    আমার ধারনা হেমন্ত খুব প্ল্যান করে ব্রিজকে লোক্যাল ক্যুরিয়র অফিসে কাজ নেওয়ায়। হয়ত ব্রিজ আগেও এসে লীনার সঙ্গে দেখা করে গেছে। লীনা তাকে জীবনলোকের লোক বলে চিনত। টেম্পোরারী চাকরি, চলে গেছে বলে ক্যুরিয়রে চাকরি নিয়েছে। লীনা সহানুভূতি দেখিয়েছে, পুরনো চেনা লোক। সেদিন সন্ধ্যেতেও ব্রিজ এসে হয়ত কোনো কিছু মিথ্যে প্রবলেমের গল্প ফেঁদেছে, ভাইয়ের অসুখ ইত্যাদি। লীনা এন জি ও তে কাজ করা মেয়ে। সে এধরনের প্রবলেম ডীল করতে অভ্যস্ত। সে ব্রিজকে ভেতরে বসিয়েছে, চা করে দিয়েছে। চা রেখে যখন ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ভরতে গেছে, এই ভেবে যে তারপরে ধীরে সুস্থে ব্রিজের কথা শুনবে তখনই পেছন থেকে এসে ব্রিজ ওকে আক্রমণ করে। বেশী কিছু করতে হয়না, কড়া ডোজের বেহুঁশীর ইঞ্জেকশন দেয়। ব্রিজ দীর্ঘদিন হাসপাতালে কাজ করেছে। ইঞ্জেকশন, ছুরি এসব ব্যবহারে সে দঢ়। ব্রিজের হাতে সময় অত্যন্ত কম ছিল। মন্দির থেকে আরতিটারতির পরে ওর শাশুড়ী ফেরে আটটা নাগাদ এটা সে জানত। এদিকে এখন সাতটায় অন্ধকার হয়। আলো থাকতে থাকতে সে এরকম কাজ করে বেরনোর সাহস করবে না, যেহেতু সে পেশাদার নয়।

    হেমন্ত তার স্টেটমেন্টে বলেছে সে সাড়ে সাতটায় ফোন করে লীনার সাথে কথা বলে। অর্থাৎ লীনা তখন বেঁচে। এটা প্রথম থেকেই আমায় ভাবায়। কিন্তু সায়গলের সাথে এ কেসের কোন যোগাযোগ নেই। সে কেন মিথ্যে বলবে? প্রথমে মনে হয় সে সময়টা গুলিয়েছেন। তবে মৌলিদের টীচারের সঙ্গে কথা বলে দেখলাম সময়টায় খুব ভুল নেই। তাহলে?
    সাড়ে সাতটার পরে যে কোন মুহুর্তে লীনার শাশুড়ী চলে আসতে পারেন, খুনীর পক্ষে বহুত রিস্কি হয়ে যাচ্ছে। সে সাতটা থেকে সাড়ে সাতটা অতক্ষন অপেক্ষা করবে কেন খামকা। তাহলে? হেমন্ত সায়গল মিথ্যে বলছে, সে আদৌ লীনার সঙ্গে কথা বলেনি। আবার এমনও হতে পারে খুনী কোন মহিলা বা খুনীর সাথে কোন মহিলাও ছিল যে হেমন্তের সঙ্গে ফোনে লীনা সেজে কথা বলেছে। সে সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ এই কারণে যে সেই মহিলাকে জানতে হবে মৌলির টীচারের বাড়ির নাম্বার। আবার পরিচিতা কেউ হলে সে শুধু লীনার শাশুড়ী হতে পারেন। কিন্তু উনি এসেছেন সাড়ে আটটায়, গেটের লোকে দেখেছে।

    শম্পার ভাষায় ওদের বাড়ির সবাই চায়ের পোকা। শাশুড়ীর উপস্থিতিতে খুন হলে তার চায়ের কাপও থাকার কথা টেবিলে।
    শাশুড়ীকে খুনীর সাহায্যকারী হিসেবে ভাবাটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু সায়গল কেন মিথ্যে বলবে, মোটিভ কি? এদিকে অতীশ আর সোমার ব্যাপারটাও মাথায় ছিল।
    এই সময়ের ব্যাপারটা পরিস্কার হয় তুষারের জবানীতে। তুষার জুয়াড়ী, অতীশের কাছে টাকা নেয় সময় অসময়ে। অতীশের সাথে মিলে লীনাকে খুনের প্ল্যান করতেই পারে। কিন্তু তাহলে ব্রিজ আসে কোত্থেকে, ব্রিজের সঙ্গে এদের কোনো কানেকশন পাওয়া যায়নি। তুষার তার শুক্রবারে এই এলাকায় উপস্থিতির কথা চেপে গেছে। কেন? তুষারকে সিকিউরিটীর লোকেরা কেউ দেখেনি, সে সেদিন ওবাড়ী যায়নি। তার কথা তার মানে সত্যি। লীনার মোবাইল রেকর্ড বলছে তুষার ফোন করেছে সাতটা কুড়িতে। এক হতে পারে তুষারের ফোনের সময় লীনা ডেড অথবা ব্যস্ত চা তৈরী করতে বা মেশিন চালাতে, তাই ফোন ধরেনি। ওদের বাড়িতে ল্যান্ডলাইন নেই, স্বামী শাশুড়ী মেয়ে সব বাইরে। যত জরুরী কাজই করুক, লীনা মোবাইল নিজের থেকে বেশী দুরে রাখবে বা ফোন তুলবেনা এটা সম্ভব হওয়া খুব টাফ। তাহলে? আবার যদি সেইসময় লীনা ডেড হয় তাহলে সায়গল মিথ্যে কথা বলছে। তুষারের কথার পরেই আমরা সায়গলের দিকটা ভাল করে নজর দিই।

    সেন্টারে গিয়ে ওখানকার কাগজপত্র দেখে জীবনলোক হাসপাতালের নামটা পেলাম। ব্রিজের সঙ্গে জীবনলোকের যোগাযোগ পাওয়া গেল। জীবনলোক ও দিশার মধ্যেকার লিঙ্ক ব্রিজনাথ। তার নিত্য আনাগোণা ছিল দিশাতে। কিন্তু সে একজন টেম্পোরারী ঠিকাদারের লোক। ড: ত্রিবেদীর কাছে দিশা সংক্রান্ত ডকুমেন্টে ওখানকার এক ডাক্তারেরই সই দেখা গেল সব কিছুতে। তিনি হলেন ডক্টর রেখা। ড: রেখাই যে মিসেস রেখা সায়গল এ কথাটা এ কেসে কোথাও আসেনি। রেখা সইয়ে তার পদবী ব্যবহার করতনা। হেমন্তের মিসেসের কথা জিজ্ঞেস করেনি অভি। আমার কিন্তু আগেই সায়গলের স্টেটমেন্ট নিয়ে খটকা লেগেছিল। তবু লীনার অফিসের সঙ্গে সায়গলের কোনো কানেকশন পাচ্ছিলাম না।
    সেন্টারের সমস্ত কাগজপত্র আবার দেখতে শুরু করলাম ভাল করে। জীবনলোকের ডকুমেন্টের সঙ্গে সেন্টারের রোগীদের রেকর্ডে অসঙ্গতি পেলাম। সোজা ভাষায় বেশ কিছু রোগী বা রোগের বিবরণ আমার জালি মনে হল। কিন্তু সেটা কেন কি জন্যে আর তার সাথে লীনার মৃত্যুর সম্পর্ক হতে পারে এ ব্যাপারে আদৌ শ্যুর হতে পারছিলাম না। ওষুধের হিসেবের গন্ডগোল অ্যাকাউন্টস ফাইল দেখে অভির অডিটর বার করেছে। যোশী পয়সা খাইয়ে উল্টোপাল্টা অডিটর দিয়ে অডিট করাত। যিনি আগের হেড ছিলেন উনি এসবে মন দিতেন না।যোশীই সর্বেসর্বা ছিল।

    গন্ডগোলের ফাইল সব শম্পার কাছে পাওয়া লীনার ব্যাগে ছিল। তার থেকে ব্যাপারটা পরিস্কার হয়ে গেল। ঐ ফাইল গুলো ছিল অ্যাকাউন্টের, এবং সেগুলোর গোঁজামিল রোগীদের রেকর্ড সব মিলিয়ে বেশ বড়সড় টাকার খেলা বুঝতে পারলাম। ড: রেখার অজান্তে এই গোলমাল হওয়া সম্ভব নয় কিছুতেই, দিশার সব ডীলিংস এই ঐ ভদ্রমহিলা থাকেন। সায়গলদের সম্বন্ধে ভাল করে খোঁজখবর নিতেই জানা গেল রেখা আসলে হেমন্তের স্ত্রী। হেমন্তের পারিবারিক ব্যবসা আসলে ওষুধের দোকান। তখন দুইয়ে দুইয়ে চার করতে সময় লাগলনা। আমার কথায় অভি আরও বিশদ খোঁজ নেয় সায়গলদের ব্যবসা,ব্যাঙ্ক সেভিংস ইত্যাদির ব্যাপারে।

    লীনার আগে দিশার সেন্টারের হিসেবপত্র যোশীই দেখত। সে অনেকদিন থেকে ওখানে আছে। কেন? সাধারণত এসব জায়গায় মাইনে কম, কেউ তাই বেশীদিন থাকেনা। মাঝবয়সী সংসারী যোশীজীর দিল্লীর মত শহরে এত কম মাইনেতে সংসার চলা খুবই অসুবিধের। এত বছর ধরে এত অসুবিধে সয়ে সে কেন আছে? যোশীর কাছ থেকে সত্য অভিরা বার করে নিয়েছে এতক্ষনে। আমার মনে হয় সায়গলেরা আসার আগে সে টুকটাক দামী বিদেশী ওষুধপত্র এদিক ওদিক বেচে পয়সা রোজগার করত, কম স্কেলের চুরি। মিসেস সায়গল জীবনলোকের তরফে দিশার দায়িত্ব নেওয়ার পরে তাঁর স্বামী ওখান থেকে বাণিজ্যের একটা ভাল সোর্স দেখল। হেমন্তের ওষুধের ব্যবসার হিসেবপত্রেও পুলিশ কারচুপি পেয়েছে। দিশাতে ওষুধ ছাড়াও ফলস রোগী, আসল রোগীর মিথ্যে রোগের হিসেব দেখিয়ে এরা ভাল ইনকাম করতে লাগল। যোশী সেন্টারের খাতায় গোলমাল করতে লাগল, একমাত্র পুরনো কর্মচারী, তাকে ধরার মত অভিজ্ঞ কেউ দিশায় নেই। ব্রিজ সায়গলের হয়ে অন্য হাসপাতালে কাজ করত। তাকে জীবনলোকে নিয়ে এসে স্টোরে রাখল, দিশার কাজে মিসেস সায়গলের সহায়ক হিসেবে।

    মুশকিল হল শমিতা আসার পর। উনি কিছুদিনের মধ্যেই লীনাকে নিয়ে এলেন। মনে হয় উনি নিজেও যোশীর এই সর্বেসর্বা হয়ে ওঠাটা ঠিক পছন্দ করেননি তাই সেন্টারের দায়িত্ব লীনাকে দেন। লীনা প্রথম দিকে যোশীর ওপরেই নির্ভর করতে লাগল। তখন অবধি সব ঠিকঠাক চলছিল। কোনোভাবে এই অ্যাকাউন্টের ফাইল ও রোগীদের রেকর্ড লীনার হাতে আসে। সে বুদ্ধিমতী, অভিজ্ঞ এন জিওর কাজে। সে একটা কারচুপি আন্দাজ করে। এ নিয়ে যোশীকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। ঠিক এই সময় থেকেই শমিতাকে নিজের ব্যক্তিগত ঝামেলায় প্রায়ই কলকাতায় যেতে হয়। লীনা হয়ত ভাবে শমিতা একটু ফ্রি হলে তাকে সব জানাবে। ততদিন সে কড়াভাবে সেন্টার চালাতে থাকে। এদিকে যোশীর কাছে সব শুনে সায়গলেরা ভয় পেয়ে যায়। জানাজানি হলে রেখার কেরিয়ার শেষ হয়ে যাবে, কোনো হাসপাতাল তাকে রাখবেনা, বদনাম হলে প্রাইভেট প্র্যাকটিসও যাবে। হেমন্তের ও জীবনলোকে পাট উঠবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শীগগিরি ওরা নিজেদের হাসপাতাল খুলতে যাচ্ছে, জমি নেওয়া হয়ে গেছে। এইসময় এধরণের স্ক্যান্ডালে শেষ হয়ে যাবে তারা। সব দিক ভেবে চিন্তে খুব দ্রুত হেমন্ত প্ল্যান করল। পেশাদারের সাহায্য নেওয়ার অনেক হ্যাপা। খবর নিয়ে দেখল লীনার মেয়ে আর ওদের ছেলে একসঙ্গে পড়ে, ভাল বন্ধু। তাতে সবদিক থেকেই সুবিধে হয়ে গেল। ছেলের কাছে লীনাদের বাড়ি সম্বন্ধে সব খবর পেয়ে গেল, কে কখন বাড়ি থাকে ইত্যাদি।

    ব্রিজের ভাইয়ের চিকিৎসা জীবনলোকে হয়, খরচা দেয় হেমন্ত আর রেখা। রেখা থাকায় কিছু সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেয় যা এমনিতে ব্রিজ পায়না কারণ সে ওখানকার এমপ্লয়ী নয়। এর ফলে ব্রিজের কাছে প্রচুর টাকা পাওনা হয় ওদের। তার বিনিময়ে ওরা ব্রিজকে বাধ্য করে লীনাকে খুন করতে। বেহুঁশীর ইঞ্জেকশন, সার্জিক্যাল নাইফ সবই হাসপাতালের, সহজ অস্ত্র। আমার ধারণা ব্রিজ হেমন্তের সঙ্গেই আসে লীনার বাড়ি। ব্রিজ ওপরে গেলে, হেমন্ত নীচে রইল। প্ল্যান মত সাড়ে সাতটায় ফোন করলে জানার জন্য কাজ হয়েছে কিনা, হলে ব্রিজকে নীচে আসতে গ্রীন সিগন্যাল দিল ফোনে। যদি কাজ না হত, লীনা ফোন ধরলে ও টীচারের বাড়ির নম্বর জিজ্ঞেস করত।
    ছেলে একবছর ধরে পড়ছে যার কাছে সেই টীচারের বাড়ি জানেনা, এদিকে একদিন এসেই তার বন্ধুর বাড়ি চিনে গেছে!

    ব্রিজ এরপরে লক টেনে দিয়ে নীচে নেমে আসে। সুবিধের জন্য পার্কের কাছে আলোছায়া মতন, একধারে গাছের নীচে গাড়ি রেখেছিল। ব্রিজ এসে ওর গাড়িতে লুকোয়। পুলিশী তদন্তের কথা ভেবে সময়টার হিসেব করে ছেলের টীচারের ওখেনে ফোন করে। এদিকে ব্রিজকে আগে ছেড়ে আসতে হবে সবার চোখের আড়ালে। ছেলে নীচে না আসা অবধি অপেক্ষা করে। বাচ্চারা এলে ওদের আইসক্রীম দিয়ে ঐ হয়ত সাজেস্ট করে পার্কে যাওয়ার কথা। মন্দির যাওয়ার নামে ব্রিজকে কোথাও ছেড়ে আসে।

    পরে রাত্রে গাড়িতে ব্রিজকে তার গ্রামে নিয়ে যাওয়ার নাম করে তাকে খুন করে হাইওয়ের ধারে আখের ক্ষেতের মধ্যে বডি ফেলে দেয়। এইসময় আখের ক্ষেতের দিকে কেউ যাবেনা, কাটার সময় হয়নি। তার বডির পাশে লীনার খুনের অস্ত্র ব্রিজের হাতের ছাপ লাগিয়ে রেখে দেয়। যেখানে লীনার বাড়িতে ব্রিজের কোনো হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি সেখানে সেই অস্ত্র তে ছাপ রয়ে যায় কি করে? অতএব ব্রিজের খুনী চায় যে ব্রিজ লীনার খুনী সাব্যস্ত হয়। হেমন্তের ড্রাইভারকে ধরে ওর গাড়ী সার্চ করে রক্তের ট্রেস পেয়েছে পুলিশ যা ব্রিজর রক্তের গ্রুপের সঙ্গে ম্যাচ করে।
    ব্রিজ হয়ত খুন করার পরে লীনার আলমারিও ঘেঁটেছিল কাগজপত্রের জন্যে। কিন্তু কিছু পায়নি। তাই সায়গল ভেবেছিল হিসেবের খাতাপত্র সব সেন্টারেই আছে। লীনাকে সরিয়ে দিয়ে ভেবেছিল যোশীকে বলে সেন্টারের ফাইলটাইল যা প্রমাণ আছে গায়েব করে দেবে। আর ঐ ফাইলগুলো না পেলে আমাদেরও সায়গলদের ওপর সন্দেহটা সেরকম দানা বাঁধত না। লীনা যে ফাইল বাড়িতে নিয়ে এসে শম্পার কাছে রেখে দিয়েছে ওরা ধারণা করতে পারেনি।"

    এই পর্যন্ত বলে রাই চুপ করে। ওর শ্রোতারাও স্তব্ধ। একটু পরে নীরবতা ভেঙে শম্পা বলে ওঠে,
    -"লীনা সব কথা বলত আমাকে। এসব কথা ও ঘুনাক্ষরেও বলেনি কাউকে, আমাকেও নয়। বলে দিলে তো এমনিভাবে মরতে হতনা ওকে।"
    -"কি থেকে যে কি হয়। আসলে লীনা সহজসরল ছিল। কারচুপি ধরলেও তার গুরুত্বটা বুঝতে পারেনি। এরকম লোকেরা যারা এসব চক্র চালায় তারা কতটা ভয়ঙ্কর হয় বুঝতে পারেনি।"
    -"তুমি যাই বল, দোষ অতীশদারই। সে যদি লীনার সঙ্গে আর একটু বন্ধুর মত হত তাহলে তাকে নিশ্‌চয়ই লীনা সব জানাত। জানাজানি হয়ে গেলে লীনা খুন হতনা। কি বদমাশ দ্যাখো! ডাক্তার মানুষের জীবন দেয়, সেই ডাক্তারই পয়সার লোভে মানুষের জীবন নিচ্ছে। ওদের ফাঁসি হওয়া উচিৎ!"
    শম্পার কথাটা ছেলেমানুষের মত শোনালেও ওরা কেউই আপত্তি জানায় না। ঠিকই তো বলেছে। মানুষের লোভ তাকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে কেউ বলতে পারেনা!
    সব মীমাংসা হয়ে ঘরের আবহাওয়া হাল্কা হয়ে ওঠে। সবাই একসাথে কথা বলতে থাকে , আলোকরা অফিসের গল্পে মেতে ওঠে। রাই উঠে কফি করতে রান্নাঘরে যায়। গ্যাসে জল বসিয়ে জানালা দিয়ে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকায়। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সেই প্রথম আলাপের দিনে লীনার হাসি হাসি মুখটা মনে পড়ে যায়। হঠাৎ খেয়াল হয় শম্পা এসে ওর পাশে দাঁড়িয়েছে নি:শব্দে। দুজনে দুজনের দিকে তাকিয়ে হাতে হাত রাখে, এক গভীর অনুভবে।

    ওরা চলে যাবার পরে খাওয়াদাওয়া সেরে রাই অপেক্ষা করতে থাকে অভির ফোনের জন্য। আলোক বেডরুমে টিভি চালিয়ে শুয়ে পড়েছে। ও একটা গল্পের বই আর মোবাইল হাতে টুপাইয়ের ঘরে ঢোকে। মেয়ে তখনও জেগে, কি সব আঁকাজোকা করছে।
    -"কি আঁকছিস দেখি?"
    -"কাল আমার এক বন্ধুর বার্থডে, তাই কার্ড আঁকছি।"
    হঠাৎ কি মনে হতে টুপাই বলে ওঠে,
    -" আদিরও তো বার্থডে নেক্সট শুক্রবার। আদি আমাকে ইনভাইট করেছে। বলেছে তোমাকে রেনু আন্টি ফোন করবে। মা, দ্যাখ আদি কি সুন্দর ইনভিটেশন কার্ড বানিয়ে দিয়েছে।"
    রাই একটু অন্যমনস্ক ভাবে কার্ডটা হাতে নেয়। চোখ বুলোতে গিয়ে চমকে ওঠে। মিরর ইমেজ স্ক্রিপ্ট! লাল নীল সবুজ স্কেচপেন দিয়ে আঁকা। টুপাই ওর মুখ দেখে হাসতে থাকে।
    -"বুঝলে না তো? এটা আয়নার সামনে ধরতে হয়, এমনি দেখলে কিছু বোঝা যায় না।" টুপাই একটা ছোট আয়না নিয়ে এসে কার্ডটা তার সামনে ধরে।
    রাই একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আয়নাতে।

    একটু বেশী রাতেই মোবাইলটা বেজে ওঠে। অভির ফোন। হ্যালো বলতেই কত কি বলে যায়, যোশী কি বলেছে, সায়গলদের উকিল এসেছে। রাই ধৈর্য্য ধরে সব শোনে।
    সব বলে অভি থামতেই ও বলে ওঠে,
    -"অভি, আজ আদির বার্থডের ইনভিটিশন দেখলাম। কি সুন্দর বানিয়েছে। লাল নীল সবুজ কালি দিয়ে, মিরর ইমেজে লেখা।"
    একটুর জন্য চুপ, তারপরে হো হো হেসে ওঠে অভি। রাইও হাসেনা।
    হাসি থামিয়ে অভি স্বভাবসিদ্ধ মজার গলায় বলে,
    -" যাক, স্বীকার করছি আমিই অপরাধী। এই হেঁয়ালীটা স্কুলে আমার খুব প্রিয় ছিল। আদিটাকে কেন যে শেখাতে গেছিলাম মজা করে, তুই ধরে ফেললি। অবশ্য ভালই হল, তোর ফাইলে তাহলে একটাও আনসলভড কেস থাকবেনা।!
    -"অভি, কে? মানে কাকে?
    -"তুই কি রে! এতদিন পরে ছাড়না। বীতে হুয়ে পল হমেশা হসকে ইয়াদ করনা চাহিয়ে। ওরকম ইমোশন্যাল গলায় সেন্টী দিচ্ছিস, পাগলী এক্কেরে। যাক বাদ দে ওসব, এদিকে ভার্মা তো সারা অফিসে ম্যাডামের গুণগান করছে। আমার চাকরি থাকলে হয়। ভাবছি সময় থাকতে তোকে আমার স্পেশ্যাল অ্যাডভাইসর এর পোস্টটা অফার করে রাখব কিনা!
    ও, রেনু তোদের সবাইকে আসতে বলছে শুক্রবারে। চলে আয়, চুটিয়ে আড্ডা দেব। প্রচুর ঝামেলা গেল তোর আমার দুজনেরই, উই ডিজার্ভ আ ব্রেক।"

    এ নিয়ে আর কথা না বাড়িয়ে দু এক কথার পর ফোন রেখে দেয় রাই। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। আস্তে আস্তে দরজা খুলে বারান্দায় গেল, তারাভরা আকাশ,রাত কি রানীর গন্ধ চারিদিকে। অন্ধকারে লীনার কথা মনে হল। দুদিন আগেও ছিল, আজ কোথাও নেই মেয়েটা। হয়ত অন্য ভাবে আছে, কে জানে এ রহস্য!
    বেঁচে থেকেও কেউ কি এক থাকে, কিছুই কি এক থাকে? আজকের সেইই তো কালকে অন্য রাই হয়ে যাবে। বাইশ বছর আগে যে রাই ছিল সে কি আজকের রাই!
    অনেকক্ষণ তারাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজের অজান্তেই কার্নিশে মাথা রেখে হু হু করে কেঁদে উঠল, লীনার জন্য না অন্য কোনো রাইয়ের জন্য কে জানে!

    (শেষ)
  • d | 117.195.38.191 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২২:৫৬428324
  • ওমা এখানেও একটা হ হ পা প্রে!

    যাইহোক দিব্বি হয়েছে। দারুণ হয়েছে। চমৎকার হয়েছে।
  • tkn | 122.173.186.215 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২২:৫৯428325
  • একবারে পুরোটা পড়লাম। খুব ভালো লেগেছে।
  • shrabani | 59.94.107.9 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:০২428326
  • এ তো মহা জ্বালা! গোয়েন্দাদের একটু মানবিক বানাতে গিয়ে গুরুর ছকে পড়ে যাচ্ছি!এটা মোটেই হ হ পা প্রে নয়! কোথাও বলা হয়নি কাকে লেখা কি লেখা!:)))))
  • shrabani | 59.94.107.9 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:০৬428328
  • টিকেন,
    থ্যাঙ্কস!
    আর সবাই যারা পড়েছে ও পড়তে পড়তে উৎসাহ দিয়েছে তাদের ধন্যযোগ! এতদিন দিইনি ফ্লো ভাঙার ভয়ে!
  • d | 117.195.38.191 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:২৬428329
  • এইরে! ভিস্তাকে বদলে এক্সপি করতে পার। ফাফকে বদলে আই ই।
    না: এই তেকোনা সত্যিই রঞ্জনদারও এককাঠি ওপরে।
  • d | 117.195.38.191 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:২৭428330
  • অ্যাল্‌ল্‌ল!
  • dd | 122.167.40.63 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:৩০428331
  • হ্যাঁ। শ্রাবনীর লেখা পড়লেই বোঝা যায় খুব অভ্যস্ত ও স্বচ্ছন্দ মাউস। আর গোঈন্দাদের মানবিক ক্যানো পারমানবিক হিসাবেই তো দ্যাখানো উচিৎ। তেজষ্ক্রিয় অপিচ গুবগুবে। ভাল্লাগ্লো।

    গোঈন্দা গল্প খুব হিসেব কষে লিখতে হয়,কোনো লজিকে পিছলে পরা যাবে না। খুব কঠিন ব্যাপার।

    একটাই ইসে মন হোলো, গপ্পোটায় পোচুর কনভার্সেসন আছে, মানে ডায়ালগ। কিন্তু বিভিন্ন লোকের হলেও কথাবার্ত্তার ইশ্‌টাইল টা একই রকমের লাগছে যে।
  • aka | 24.42.203.194 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:৪৯428332
  • পড়ে ফেললাম। সায়গল দম্পতির কথা মাথাতেই আসেনি।
  • san | 123.201.53.2 | ০৫ ডিসেম্বর ২০০৯ ২৩:৫২428333
  • ব্যাপক। টানটান। চমৎকার।
  • Dummy | 76.126.166.183 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ০০:০৩428334
  • অসাধারণ লাগল। শ্রাবণীর লেখা আগের গোয়েন্দাগল্প টাও দারুণ লেগেছিল। তবে এটা আরেকটু বেশী ভাল হয়েছে। আর প্রতি কিস্তির জন্য বেশী অপেক্ষা করতেও হয়নি - সেটা একটা ভাল ব্যাপার।
    অনেক ধন্যবাদ, এত ভাল গল্প পড়ানোর জন্য। আরো লিখবে - এই আশা।

  • Tim | 71.62.121.158 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ০১:৫০428335
  • শ্রাবণীদির এই গল্পটা সবচে টানটান হয়েছে। দারুণ বললে কমই বলা হয়। :)
  • Du | 71.240.162.91 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৫:০৯428336
  • যাকে বলে লোমহর্ষক। দারুন হয়েছে শ্রাবণী ! আমিও চুপচাপ ছিলাম ফ্লো ভঙার ভয়েই। সবচয়ে কোয়েনসিডেন্স যে কদিন আগে ঐ ব্যাংক খুনের লোকটাকে দুদিনের মধ্যে পুলিশ যখন ধরলো তখনই ভেবেছিলাম তুমি বা টিম যদি ওটা নিয়ে লিখতে আর তার কদিনের মধ্যেই এই লেখটা শুরু হল।
  • Paramita | 24.4.99.4 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৬:৩৭428337
  • হেবি লেগেছে।
  • Arpan | 122.252.231.12 | ০৬ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৯:৩৫428339
  • গুরুতে যতগুলি রহস্য গল্প পড়লাম এইটা সবচেয়ে ভালো হয়েছে। বেশ কয়েক কদম এগিয়ে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন