এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  অন্যান্য

  • রহস্য গল্প: অন্য কোথায় অন্য কোনোখানে

    shrabani
    অন্যান্য | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ | ৬২২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ১৭:০২428283
  • "ট্রিংং ং ং ং "
    গভীর ঘুমের মধ্যে থেকে রাইয়ের মনে হল অনেকক্ষণ ধরে ফোন বেজে যাচ্ছে কোথাও। আস্তে আস্তে চোখটা অর্ধেক খুলে দেখল কর্ডলেসটা টেবিলের ওপর এবং নি:শব্দ। তা হলে?

    এবার পুরোপুরি চোখ খুলে গেল আর ফোনের ঘন্টাটাও বন্ধ হয়ে গেল। মনে হয় কেউ ড্রয়িংরুমে রাখা ইন্টারকমে ফোন করছিল। এই এক জ্বালা, ইন্টারকমের কানেকশন খালি সামনের ঘরের এক কর্ণারে। ফোন এলে সারা ফ্ল্যাট পার হয়ে যেতে যেতেই লোকে বিরক্ত হয়ে ফোন কেটে দেয়। কবে থেকে আলোককে বলছে একটা কর্ডলেস কিনে ইন্টারকমে লাগাতে, সে আর বাবুর সময় হয়না।

    শুয়ে শুয়ে ঘড়ির দিকে তাকায়। ধুস, মোটে সাতটা বাজে, এই ছুটির সকালে কোনো মানে হয়! কার এত জরুরী দরকার পড়ে গেল এই সাতসকালে ফোন করার মত। পাশে তাকিয়ে দেখল টুপাই অঘোরে ঘুমোচ্ছে। কাল দুজনে মিলে সিনেমা দেখেছে রাত একটা অবধি জেগে। ভেবেছিল আজ দশটার আগে আর উঠবেনা। আলোক ট্যুরে, শনিবার, টুপাইয়ের ছুটি। কাজের মেয়েটাকে তাই দেরীতে আসতে বলেছে। অন্যান্য শনিবারে ওদের অফিস ছুটি থাকলেও টুপাইয়ের স্কুলের জন্য সেই সকালেই উঠতে হয়। এই ফোনের আওয়াজ সব মাটি করল! ও ঘুম ভেঙে গেলে এমনি বিছানায় শুয়ে থাকতে পারেনা এক মুহুর্তও। উঠে জানালা দরজা গুলো খুলল। সামনের দরজা খুলে দুধের প্যাকেট আর পেপার তুলতে গিয়ে একবার ইন্টারকমটার দিকে নজর গেল। কে হতে পারে এত সকালে? কি ভেবে রিসিভার তুলে গেটে সিকিউরিটীর নম্বর ডায়াল করল। না:, গেট থেকে কেউ ফোন করেনি, কেউ আসেনি। মরুক গে যাক, আবার করবে যার এত দরকার!

    ব্রাশ করে নিজের জন্যে চায়ের জল বসাতে কিচেনে গেছে আবার ফোন বেজে উঠল। এবার আর দেরী করেনা, গিয়ে ফোন তোলে সঙ্গেসঙ্গে। ওদিক থেকে শম্পার গলা,
    -"হ্যালো, রাই?"
    শম্পা ওরই বিল্ডিংয়ে পাঁচতলায় থাকে। রাই একটু অবাক হল। শম্পা চাকরীবাকরী করেনা, এমনিতেই রোজ দেরী করে ওঠে। প্রবীরদা, শম্পার বর, মেয়েকে তৈরী করে স্কুলে পাঠায়, অফিস যাবার সময় দরজার লক টেনে দিয়ে যায়। শম্পা পরে ধীরেসুস্থে ওঠে, তারপরে চানটান করে কোনোরকমে টুকটাক রান্না সেরে বেরিয়ে পড়ে আড্ডা মারতে। বাড়ি ফেরে সেই মেয়ে আসার আগে, দুপুরে। বর লাঞ্চে আসেনা, ওর চিন্তা নেই। শুধু এই সোস্যাইটীর কেন, ও প্রায় এই শহরেরই গেজেট, বিশেষ করে বাঙালীদের। সবার সব খবর ওর নখদর্পণে।

    রাই আর আলোক দুজনেই এক কোম্পানিতে চাকরী করে। অফিসের কাছাকাছি এই জায়গায় যখন অফিসেরই লোকজন মিলে হাউসিং কোঅপারেটিভ করে ফ্ল্যাটবাড়ী তৈরী করতে শুরু করে, ওরা তখন খুব আগ্রহের সঙ্গেই যোগ দিয়েছিল। বাড়ী হওয়ার পর প্রথম প্রথম এসে ভালই লাগত, নিজের ফ্ল্যাট। কিন্তু আজকাল রাই একটু বিরক্ত হয়ে যায়, বড্ড প্রাইভেসীর অভাব। সারাদিন অফিস বাড়ী সামলে আর বেশী সামাজিকতা করতে ওর ভাল লাগেনা, একটু নিজেদের জন্যেও সময়ের দরকার হয়। কিন্তু তা এখানে হবেনা, আর কিছু বলাও যায়না, একই কম্পানিতে কাজের সূত্রে সবাই চেনা। দিল্লীর খুব কাছে হলেও এই শহরে আধুনিকতার সাথে সাথে মফস্বলী ভাবটা এখনও পুরোপুরি বিদায় নেয়নি।

    এত সকালে শম্পার ফোন মানে কোনো গুরুতর ব্যাপার হতেও পারে, নাও হতে পারে! না চাইলেও শম্পাকে একটু পাত্তা দিতেই হয়। এখানে কয়েকটাই বাঙালী ফ্যামিলি আছে। নিজেদের মধ্যে একটু জানাশুনো রাখতে হয়, দুর্গাপুজো, সরস্বতী পুজো, পয়লা বৈশাখ! তবে শম্পার গতিবিধি কেবল বাঙালী বাড়িতে সীমাবদ্ধ নয়, ও সবার সঙ্গেই সম্পর্ক রাখে, সকলের ঘরে ঢুকে পড়ে।
    রাই একটু বেজার হল, শম্পার ফোনের জন্যে সকালে উঠতে হল তাহলে! বিরক্তিটা ঝেড়ে ফেলে বলল,
    -"হ্যাঁ বলছি, কে শম্পা নাকি?"
    -"রাই, সরি। তোমার ঘুম ভাঙালাম বোধহয়? তুমি শুনেছ খবরটা?"
    -"কি খবর?"
    -"লীনার খবর। লীনা মারা গেছে কাল রাতে, শোননি?"
    রাইয়ের এক সেকেন্ড লাগল ভাবতে শম্পা কার কথা বলছে। তারপরেই মনে পড়ল, ও:, লীনা, মানে শম্পার বন্ধু লীনা।
    -"সেকী! কি হয়েছিল?"
    -"শোনো, সবকথা ফোনে বলা ঠিক হবেনা। আমি খুব আপসেট, আলোকদা তো নেই, একটু আসব তোমার কাছে? অসুবিধে হবে?"
    রাই একটু অবাক হল। লীনা শম্পার বন্ধু, ওদেরই বয়সী হবে, তাই শম্পার খুব খারাপ লাগছে এটা বোঝা যায়। কিন্তু শম্পা ওর কাছে কেন আসবে সান্ত্বনার জন্য? ওর সঙ্গে শম্পার সেরকম সম্পর্ক নয়, তা ছাড়া এই সোস্যাইটী ও আশপাশ মিলিয়ে শম্পার যাবার মত গন্ডাখানেক বন্ধু আছে কাছেই। যাই হোক তবু বলে,
    -"অসুবিধে হবে কেন! এসে যাও তুমি, টুপাইও ঘুমোচ্ছে, আমাদের কেউ ডিসটার্ব করবেনা।"
    ফোনটা রেখে সসপ্যানে আরেক কাপ জল দিয়ে গ্যাসে বসাল। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই লীনার কথা মনে পড়ল। লীনার সঙ্গে প্রথম আলাপ এই রান্নাঘরেই। তখন ওদের ফ্ল্যাট হাতে পেয়ে সবাই ভেতরের কাঠের কাজ করাচ্ছে। রাই আর আলোক দুজনেই খুব শৌখীন আর ঘর সাজানোর শখও দুজনেরই। তাই অনেক প্ল্যান করে খেটেখুটে ফ্ল্যাট সাজাচ্ছিল। পাশাপাশি তখন সবারই কাজ হচ্ছে। সবাই এ ওর কাজ দেখতে যেত নিজের বাড়ীর তদারকির ফাঁকে ফাঁকে। রাইয়ের রান্নাঘরের ডিজাইন অনেকেরই খুব পছন্দ হয়েছিল, একটু ইউনিক ছিল, সবার থেকে আলাদা। ওর এক বন্ধু আর্কিটেক্ট তার লোক দিয়ে করাচ্ছিল।
    সেদিন রাইরা এ বাড়ীতে শিফট করছিল। ও প্রথমে আনপ্যাক করে রান্নাঘরটা গুছোচ্ছিল, ঠিক সেইসময় শম্পার সঙ্গে লীনা এল ওর রান্নাঘর দেখতে। সেই প্রথম আলাপ। লীনা এই সেক্টরেই থাকে কিছুটা দুরে পার্কভিউ অ্যাপার্টমেন্টে। আলাপ করে জানল ওর বরও রাইদের অফিসেই আছে, অন্য ডিপার্টমেন্টে। পরে একদিন আলোক দেখায় ভদ্রলোককে, অতীশ রায়, লীনার স্বামী!
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ১৭:১৩428294
  • -----------------------------------------------------------
    খুব খোলামেলা মেয়ে ছিল লীনা। একটু মোটাসোটা তবে মুখটা মিষ্টি। সবসময় নিজের চেহারা নিয়ে ইয়ার্কি করত। আর ইয়ার্কি করত ওর বরকে নিয়ে, ওর কথামত পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বেরসিক লোক।
    পরে শম্পা আর অন্যান্যদের কাছে জানতে পারে, লীনা অতীশের দ্বিতীয় পক্ষ। প্রথম বউটি বিয়ের বছর তিনেক পরেই মারা যায়, কয়েকমাসের একটি মেয়ে রেখে। তখন অতীশ অন্য জায়গায় চাকরি করত, সেই বউকে এখানকার কেউ দেখেনি। কোনো কারণে অতীশ আগের চাকরি, জায়গা সব ছেড়ে এখানে আসে নতুন চাকরি নিয়ে। বাচ্চা মেয়েটা তখন দু বছরের। ওর বাবা মা থাকতেন সঙ্গে। ওরা কেউ বাইরের কারোর সঙ্গে খুব একটা মেলামেশা করত না , কেউ কিছু সঠিক জানতও না ওদের সম্বন্ধে, অনেক কিছুই লোকে আন্দাজ করে নিত। এর কিছুদিন পরে লীনাকে বিয়ে করে নিয়ে আসে অতীশ। লীনা একদম অন্যরকম ছিল, হাসিখুশী, হইহই করছে সবসময়। সবার সঙ্গে আলাপটালাপ করে নিজেই গিয়ে গিয়ে। সব জায়গায় ওকে দেখা যেত, পুজো, ফাংশান, নেমন্তন্নে বাচ্চা মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে। মনেই হতনা মেয়েটা ওর নিজের নয়।
    লীনা অতীশের গ্রামেরই মেয়ে। মা বাবা ছিলনা, মামাবাড়ীতে মানুষ। পড়াশোনা ভালই করত, বিএ পাশ করে স্যোশিওলজিতে। অল্প মাইনেতে কলকাতায় একটা এন জিওতে কাজ করছিল, সেরকম চাকরি বাকরি কিছু পায়নি। বয়স হয়ে যাচ্ছিল, মামাদের নিজেদের মেয়ে ছিল, খরচখরচা করে বিয়ে দেবার মত অবস্থা তাদের ছিলনা। একদিন অতীশের মা ওদের কাছে লীনার সঙ্গে অতীশের বিয়ের প্রস্তাব দেন। ও অতীশকে ছেলেবেলা থেকে চিনত, রাজী হয়ে গেল। লীনাই এসব কথা তার বান্ধবীদের বলেছে।

    রাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে এরপরে অনেকবার, দেখা হলেই খুব গল্প জুড়ে দিত লীনা। ওর বরকে বরং কখনো হাসা তো দুরের কথা ভাল করে তাকাতে পর্যন্ত দেখেনি, যদিও অফিসে আসতে যেতে অনেকবারই চোখাচোখি মত হয়।

    জল ফুটতে চা পাতা দিয়ে ঢাকা দিয়েছে, বেল বাজল। শম্পা ঢুকল। রাতের ড্রেসটা পাল্টে একটা সালোয়ার কামিজ পরেছে তবে চুলটুল গুলো উস্কোখুস্কো হয়ে আছে, তাড়াতাড়িতে আঁচড়ায়নি। এমনিতে শম্পা খুব ফিটফাট, রেগুলার বিউটি পার্লারে চক্কর লাগায়। আজ একটু শিথিল, দিশেহারা দেখাচ্ছে।
    ওকে সোফায় বসিয়ে রাই দু কাপ চা ছেঁকে নিয়ে আর একটা প্লেটে বিস্কিট নিয়ে ওর সামনে এসে বসল। প্রথমে শম্পা চা খাবেনা বলছিল, তারপর রাইয়ের জোরাজুরিতে নিল। রাই চায়ে চুমুক দিয়ে বলল,
    -"এবার বল তো কি ব্যাপার? লীনাকে তো আমি এই আগের শুক্রবারের হাটে দেখলাম। দেখে তো অসুস্থ মনে হচ্ছিল না। তোমার কাছেও কিছু শুনিনি। কি হয়েছিল হঠাৎ?"
    শম্পাকে খুবই শোকাচ্ছন্ন লাগছিল,বলল,
    -"খুন, মার্ডার।"
    এবার রাইয়ের পালা চমকাবার, গলায় চা চলকে প্রায় বিষম খায় আর কি!
    -"কি বললে? খুন, মানে লীনা খুন হয়েছে? কি বলছ যাতা!"

    শম্পা ওর প্রাথমিক শোকের ভাবটা কাটিয়ে খবর পরিবেশনার উত্তেজনায় টানটান হয়ে বসল।
    -"হ্যাঁ গো, লীনা খুন হয়েছে। কাল এই রাত্রি সাড়ে আটটা নাগাদ ওর শাশুড়ী মন্দির থেকে ফিরে দেখে লীনা দরজা খুলছেনা। মেয়েটা পড়তে গেছিল। অতীশদা বম্বেতে ট্যুরে। ওর শ্বশুরমশাই কিছুদিন হল গ্রামের বাড়ীতে গেছেন। অনেকক্ষন দরজায় বেল বাজিয়ে শেষে পাশের ফ্ল্যাট থেকে ফোন করে। তখনও কেউ দরজা খোলেনা। দরজায় তো আমাদের মত অটোমেটিক লক। টেনে দিয়ে গেলেই তালা পড়ে যায়। প্রথমে ভেবেছে লীনা বোধহয় দরকারে দোকান টোকান গেছে। তখন মেয়েটাও ফিরেছে। লীনার কোনো সাড়াশব্দ নেই। মোবাইলে ফোন করছে তো রিং হয়েই যাচ্ছে। গোলমাল শুনে দু চারজন প্রতিবেশী জড়ো হয়ে যায়। দেখেশুনে সবাই সন্দেহ করে হয়ত ভেতরে অসুস্থ হয়ে পড়েছে, দরজা খুলে দেখা দরকার। শেষকালে অনেক চেষ্টাচরিত্র করে তালা ভেঙে ঘরে ঢুকে দেখে ঐ কান্ড।"
    এতটা একসাথে বলে শম্পা থামে, সেই ফাঁকে রাই প্রশ্ন করে,
    -"কিভাবে বুঝলে খুন, লীনা সুইসাইড করেনি তো?"
    শম্পা একটু ম্লান হাসে,
    -"নিজের গলা কেটে কেউ সুইসাইড করে?"
    -"কি ভয়ংকর! গলা কেটে? চুরিটুরি হয়েছে? কিন্তু ওদের গেটে তো সিকিউরিটী আছে, চোর বা ডাকাত ঢুকল কি করে?"
    এবার শম্পা একটু সিরিয়াস হয়ে যায়।
    -" এখানেই তো আমার খটকা লাগছে রাই। কাল রাতে ওর প্রতিবেশীদের একজন আমার বরকে ফোন করে, রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ। প্রবীর সঙ্গে সঙ্গে যায়। ওর শাশুড়ী আর মেয়েকে পাশের বাড়িতে রেখেছিল। তখন সামনের পুলিশচৌকি থেকে দুটো পুলিশ এসে ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিল, কাউকে ঢুকতে দিচ্ছিলনা। বড় থানাতে খবর দেওয়া হয়েছিল, সেখান থেকে অফিসাররা রওনা হয়েছিল। প্রবীরের কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে ওরা বম্বেতে তোমাদের অফিসের গেস্ট হাউসে অতীশদাকে ফোন করে। অতীশদা গেস্ট হাউসে ওঠেনি, মোবাইলও বন্ধ ছিল। ওরা ওখান থেকে বম্বে অফিসের একজনকে কনট্যাক্ট করে। সেই লোকটির কাছ থেকে অতীশদা যে হোটেলে আছে তার নাম জানা যায়। পরে সেখানে ফোন করে অতীশদাকে খবর দেওয়া হয়েছে। সে আসছে আজ ভোরের প্রথম ফ্লাইটে।
    পুলিশের লোক এসে ওদের ফ্ল্যাটে ঢোকে, ডাক্তার টাক্তার সঙ্গে নিয়ে, বডি পাঠিয়ে দেয় থানায় বোধহয় পোস্টমর্টেমের জন্য। পরে ওরা দু একজন প্রতিবেশীদের ডাকে। প্রবীরও গেছিল ভেতরে।
    তুমি তো কোনোদিন যাওনি লীনাদের বাড়ি। ওদের ওয়াশিং মেশিনটা রাখা আছে ড্রয়িং আর ডাইনিংয়ের মাঝে, রান্নাঘরের পাশে। মেশিনে কাপড় ছিল, সেই সন্ধ্যেতেই দিয়েছিল বোধহয়। পাশে একগাদা কাপড় ডাঁই করা ছিল, আবার কাচার জন্যে। সেন্টার টেবিলে দু কাপ চা রাখা ছিল ট্রেতে। গ্যাসে কড়া রাখা ছিল, পাশে সবজি কাটা, নুন হলুদ মাখানো মাছ। লীনা রান্না করতে যাচ্ছিল, কাপড় কাচছিল। কেউ এসে পড়ায়, রান্না বন্ধ রেখে চা করে নিয়ে গেছিল ড্রয়িংরুমে। ঘরের মেঝেতে পড়েছিল ওর দেহটা। আলমারি টালমারি সব ঠিকঠাক বন্ধ, চাবি জায়গায় রাখা, লীনার হাতে গলায় যে টুকটাক গয়না তাও ছিল। কিছু চুরি হয়নি।
    প্রবীর কাল অনেক রাতে ফিরে শুয়েছে। আমি সব শুনে ভাল করে ঘুমোতে পারিনি। সকাল হতেই তোমায় ফোন করেছি।"

    রাইয়ের চা শেষ হয়ে গেছিল অনেকক্ষন। ও একমনে শম্পার কথা শুনছিল, আর চোখের সামনে লীনার মুখটা ভাসছিল। ঐ হাসিখুশী সরল মুখের পেছনে কি এমন রহস্য ছিল যে এরকম দুর্ভাগ্যজনক পরিণতি ঘটল মেয়েটার!
  • a | 59.161.82.5 | ২৫ নভেম্বর ২০০৯ ১৮:৫৬428305
  • এটা পুরো proffessional standard লেখা হচ্ছে
    দারুণ!!! হাত চালিয়ে পিলিজ!!!
  • a | 59.161.120.92 | ২৬ নভেম্বর ২০০৯ ১০:১২428316
  • তাপ্পর?
  • aishik | 122.166.17.203 | ২৬ নভেম্বর ২০০৯ ১১:০৭428327
  • খুব ভালো। কিন্তু তার্পরে কি হল?
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৬ নভেম্বর ২০০৯ ১১:৩৩428338
  • ------------------------------------------------------
    শম্পা চুপ করতে ও বলে ওঠে,
    -"শম্পা, প্রবীরদা সব ঠিকঠাক দেখেছে বা শুনেছে তো? তাই যদি হয়, এতো সামান্য চুরিডাকাতি হত্যা নয়, এর মধ্যে রহস্য আছে মনে হচ্ছে। দুটি না খাওয়া চায়ের কাপ থেকে তো মনে হচ্ছে খুনী সেই লোক যাকে লীনা চা দিয়েছিল। সম্ভবত সে তার অচেনাও নয়, কারন এদিকে কোনো অচেনা লোককে সাধারনত বাইরে থেকেই বিদায় করা হয়। ভেতরে ঢুকিয়ে কথা বললেও তাকে খাতির করে চা দেওয়ার চল তো একেবারেই নেই। যদি সেরকম কেউ মান্যিগণ্যি অচেনা এসেও থাকে,গেটের খাতায় নিশ্চয় এ¾ট্রী হয়েছে লীনাদের বাড়িতে কে কে এসেছিল। সেটা পুলিশ দেখেছে কি?
    এ¾ট্রী যদি না থাকে ধরতে হবে স্যোসাইটীর ভেতরের লোক এসেছিল, সেটা বাড়ির সদস্যও হতে পারে। বাড়ির সদস্য বলতে ওর শাশুড়ী। তিনি যদি কোনো কারনে লীনাকে মারতেও চান, এরকম বীভৎস ভাবে হত্যা করা তাঁর মত বয়স্ক মহিলার পক্ষে অস্বাভাবিক, অসম্ভবই বলা চলে।"
    শম্পার মুখচোখ উঙ্কÄল হয়ে উঠল রাইয়ের অয়ানালিসিস শুনে।
    -"এই কারণেই আমি তোমার কাছে এসেছি রাই। প্রবীর সবসময় বলে রাই অত্যন্ত বুদ্ধিমতী। সেই যে সেবারে চিনির স্কুলের খাতা চুরির ব্যাপারটা তুমি কেমন ঘরে বসে সব শুনে ঠিক সমাধান বার করে ফেলেছিলে।"
    চিনি শম্পার মেয়ের নাম।
    -"কিন্তু আমি বুদ্ধি খাটিয়ে তো আর লীনার খুনীকে ধরতে পারবনা। সেসব গোয়েন্দা গল্পে হয়, এখানে তো পুলিশকেই এ কাজ করতে হবে। দ্যাখ, এসব দেশে পুলিশ কতটা কাজের হয় কে জানে! আশেপাশের ল অ্যান্ড অর্ডার সিচুয়েশন দেখলে মনে তো হয়না পুলিশ খুব বেশী কিছু করে।
    যা হবার তো হয়েই গেছে শম্পা, তুমি এ নিয়ে বেশী ভেবনা। যাই কর, লীনা তো আর ফিরে আসবে না।"
    এবার শম্পার চোখ দুটো একটু ছলছল করে উঠল।
    -"পরশুও আমার বাড়ী এসেছিল দুপুরে। একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া করে শপিং সেন্টারে গেলাম টেলরের কাছে। তুমি লীনার সব কথা জানই। মেয়েটার কেউ কোথাও ছিলনা। মামারা তো ঘাড় থেকে নামিয়ে দিয়ে বেঁচেছিল। ও কিন্তু অন্যরকম ছিল। প্রায় বছরখানেক হল ও একটা এন জি ওর সঙ্গে কাজ করছিল। তাই নিয়ে বাড়ীতে শাশুড়ী খুব অশান্তি করতেন। খুব দু:খ করত আমার কাছে।
    ওর বর ওকে কোনোদিনই সেইভাবে সময় দেয়নি, সংসার থেকে কিছুই পায়নি ও। অথচ মেয়েটাকে কি ভালবাসত। ঐ এন জিও গ্রুপ থেকে ওকে তিনবছরের জন্য অস্ট্রেলিয়ায় পাঠানোর কথা হচ্ছিল। কাগজপত্র সব তৈরীও হয়ে গেছিল। কেউ জানতনা, শুধু ওর বর জানত আর আমরা। এইপ্রথম ও জীবনে কোনো কিছু পেতে চলেছিল নিজের যোগ্যতায়, কারুর দয়ায় নয়। কি খুশী ছিল, বলত ওখানেই পাকাপাকি রয়ে যাবে। মেয়েটাকে সঙ্গে নিয়ে যাবে আর বরকেও রাজী করিয়ে কিছুদিন পরে ওখানে নিয়ে চলে যাবে।
    ঠিক এইসময়ই এরকম একটা ঘটনা আমি মেনে নিতে পারছিনা। দু:খের সাথে সাথে খুব রাগ হচ্ছে আমার। মনে হচ্ছে ওর খুনী শাস্তি পাক, ফাঁসী যাক। কিন্তু আমার আর কি ক্ষমতা বল তো? তুমি যা বললে তা প্রবীরও বলবে, ঝামেলায় জড়াতে কেউ রাজী হবেনা।"

    এই পর্যন্ত বলে একটু চুপ করল। কি ভেবে এরপর বলল,
    -"তোমার কাছে আসার আরও একটা কারন আছে রাই। সেদিন তোমার বাড়ীতে এক লম্বামত ভদ্রলোক এসেছিলেন, তুমি বললে না তোমার স্কুলের বন্ধু, পুলিশের অফিসার। তাকে একটু অনুরোধ করতে পারনা যদি লীনার কেসটা ভাল করে দেখেন?"

    রাই একটু অবাক হল। এতদিন শম্পাকে ও একজন গসিপ পাড়াবেরুনি মহিলা বলে বেশ অবজ্ঞার চোখেই দেখে এসেছে। আজ হঠাৎ ওর এই রূপ, মৃত বান্ধবীর জন্য এরকম ফীল করতে দেখে, ওর প্রতি ধারনাটা একটু বদলে গেল। আর শম্পার কথায় মনে পড়ে গেল অভিকে। অভিনব গুপ্তা, রাইয়ের স্কুলের বন্ধু!
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৬ নভেম্বর ২০০৯ ১১:৫৫428349
  • ---------------------------------------------------------------------------------------------------
    রাই বাঙালী হলেও ওর ছেলেবেলা কেটেছে উত্তরপ্রদেশের এক শহরে। সেখানেই স্কুলে ওর সঙ্গে পড়ত অভিনব। স্কুল শেষ করে সবাই এদিক ওদিক চলে গেছিল। রাই কলেজ করেছে কলকাতায়, অভিনবের আই পি এস জয়েন করার খবর ও পেয়েছিল। এতকাল পরে এই শহরে অভিনবের সঙ্গে দেখা ওদের আর এক কমন স্কুল ফ্রেন্ড সঞ্জয়ের জন্যে। সঞ্জয় গুরগাঁওতে থাকে। কিছুদিন আগে ওর কাছেই জানতে পারে অভি ওদের শহরে পোস্টেড হয়ে আসছে। অভিও ওর ফোন নাম্বার পেয়েছিল সঞ্জয়ের কাছে, এবং এখানে এসেই ওকে ফোন করেছিল। বেশীদিন হয়নি মাসছয়েক হল এখানে এসেছে ডিএসপি হয়ে। ব্যস্ততার মধ্যেও ওদের বাড়ী এসেছে স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে। রাইও গেছে বারদুয়েক ওদের কোয়ার্টারে। ওর বউ রেনু খুব মিষ্টি মেয়ে, ছেলে আদিত্য আবার টুপাইয়ের স্কুলেই ভর্তি হয়েছে। অভির সঙ্গে যা সম্পর্ক তাতে তার সঙ্গে লীনার মৃত্যু নিয়ে কথা বলা যেতেই পারে। রাই ঠিক করল আজ একবার টুপাইকে নিয়ে অভির ওখানে চলে যাবে। যাবার আগে অবশ্য রেনুকে ফোন করে নেবে ওদের কোনো প্রোগ্রামটোগ্রাম আছে কিনা!
    ও শম্পার হাতে হাত রাখল।

    -"শম্পা, আমি চেষ্টা করব অভিনবের সাথে কথা বলে কিছু যদি করা যায়। তবে যা এখানে পুলিশের অবস্থা তাতে খুব বেশী আশা রেখনা। একা একজন পুলিশ অফিসার তো আর সিস্টেম পালটে দিতে পারেনা, তার ওপর আমার বন্ধু সদ্য এসেছে এখানে। আর এ কেস ওর কাছেই যে আসবে তার ই কি গ্যারান্টী!"
    -"সেই তো গো। কিন্তু খুব খারাপ লাগছে। কেমন যেন অসহায় লাগছে নিজেকে।"
    -"তুমি খুব আপসেট আছ শম্পা আর সেটাই স্বাভাবিক। বাড়ী গিয়ে একটু দৈনন্দিন কাজে মন দাও। প্রবীরদার রাতে অনেক ধকল গেছে, চা ব্রেকফাস্ট বানাও। এভাবে মনটাকে অন্য দিকে নিয়ে যাও। নাহলে শুধুই কষ্ট পাবে, কোনো লাভ তো তাতে হবেনা, লীনা তো ফিরবে না। যখন কাজের শেষে লীনার কথা ভাববে ওর যা কিছু ভাল স্মৃতি সেগুলো মনে করবে।"

    শম্পা একটু ফোঁসফোঁস করে নাকটাক টেনে উঠে পড়ল। ওকে নিয়ে রাইয়ের বেশী চিন্তা নেই। শম্পার এতদিকে এত অকুপেশন যে ও শুধুমাত্র লীনার ব্যাপারটা নিয়ে বেশীক্ষণ থাকতে পারবেনা। স্বাভাবিক হতে ওর বেশী সময় লাগবেনা।

  • baps | 203.199.41.181 | ২৬ নভেম্বর ২০০৯ ১১:৫৬428359
  • আরে: এ ত টান টান উত্তেজনা। বেশ জমেছে। এট্টু তাড়াতাড়ি হাত চালিয়ে।
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৬ নভেম্বর ২০০৯ ১২:০২428360
  • ----------------------------------------------------------
    দরজা বন্ধ করে পেপারটা হাতে নিল। শনি রবি বারেই একটু আয়েস করে খুঁটিয়ে পেপারটা পড়া হয়। অন্যদিন তো সকালে মুখ তোলবার ফুরসত থাকেনা। আরেক কাপ চা বানালে হত, ঐসব আলোচনার মাঝে চাটা জুত করে খাওয়া হয়নি। যেই ভাবা সেই কাজ। চা করে নিয়ে এসে ড্রয়িংরুমের রকিং চেয়ারটায় বসল। কিন্তু কাগজের পাতায় আজ মন বসাতে পারলনা। বারবার লীনার কথাই মনে হতে লাগল। রাই গোয়েন্দা গল্পের পোকা, এই মৃত্যুরহস্য টা ওর খুব সহজ মনে হলনা।

    গলা কেটে হত্যা করা হল বলতে গেলে প্রায় ভর সন্ধ্যেবেলায়। তাও একটা ফ্ল্যাট বাড়ি, স্যোসাইটীতে, একানে কোনো বাড়িতে নয়। নীচে লনে, রাস্তায় করিডরে লোকজন যাতায়াত করছে হরবখত। কোনো চিৎকার চেঁচামেচি শোনা গেছিল কিনা, ধ্বস্তাধস্তি এসবের চিহ্ন ছিল কিনা কে জানে! যদি তা না হয় তবে গলা কাটার আগে কোনোভাবে আঘাত করে বা কিছু ভাবে ওষুধ দিয়ে লীনাকে ধরাশায়ী করা হয়েছিল নির্ঘাত। পুরো ব্যাপারটা না জানলে বোঝা যাবেনা।

    না: বসে থাকলে হবে না। উঠে পড়ল, অভিকে ধরতে হবে, শম্পার অনুরোধ বলে নয়, ওর নিজেরই এখন প্রচুর কৌতূহল হচ্ছে। শোবার ঘরে গিয়ে টুপাইকে তুলল। বিছানা টিছানা তুলে ঘর গুছোতে গুছোতে কাজের মেয়ে এসে গেল। আর শুরু হল ফোনের ঘন্টা বাজা। সক্রিয় হয়েছে বিভিন্ন মহিলাদের নিউজ চ্যানেল, লীনার খবরটা দিতে অনেকেই ফোন করছে। অনেকের মতে অতীশই দায়ী, ভাড়াটে লোক দিয়ে খুন করিয়েছে। অবশ্য মোটিভ সম্বন্ধে তারা খুব একটা শিওর নয়। কেউ আবার শাশুড়ী শ্বশুরকে দোষ দিচ্ছে। একদলের মতে কোনো বাইরের ডাকাতের কান্ড, সিকিউরিটীর সঙ্গে যোগসাজশে ঘরে ঢুকেছে। তবে সেরকম কোনো কিছু চুরিটুরি হয়েছে বলে ধরা পড়েনি কেন সেটা তারা বলতে পারছেনা!
    ব্রেকফাস্ট সেরে টুপাইকে পড়তে বসিয়ে চানে গেল। চানটান করে পুজোর ঘরে ঢুকেছে আবার ফোন বাজল, এবার মোবাইল। আসন থেকে উঠে ফোন তুলে দেখে অভির নম্বর। টেলিপ্যাথিইই!!!!

    -"হ্যালো। কোথায় তুই? বাড়িতে না অফিসে?"
    শনিবারও মাঝে মাঝে দরকার পড়লে অফিসে যায় রাই এটা বোধহয় অভিকে বলে থাকবে, তাই এই প্রশ্ন।
    -"না রে আজ ছুটি, বাড়িতেই আছি। কেন?"
    -"আরে আমি তোর বাড়ির দিকেই এসেছিলাম একটা কাজে। সময় পেলে একটু ঘুরে আসব ভাবছিলাম তোর ওখান থেকে , অবশ্য তুই যদি ফ্রি থাকিস।"
    এ যে না চাইতেই জল! রাই একমুহূর্তও না দ্বিধা করে বলল,
    -"চলে আয় যখন খুশী, আমি আজ বাড়িতেই সারাদিন।"

    অভি আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিল। রাইয়ের কেমন যেন মন বলছিল অভি বোধহয় লীনার কেসটা নিয়েই এসেছে। নাহলে এদিকে অভির মত অফিসারের আসার মত আর কি ঘটেছে! তা হলে তো আরও সহজ হয়ে যাবে ওকে এ ব্যাপারে একটু ভাল করে দেখতে বলা। এতক্ষণ ধরে একটা দোটানায় ছিল এই ভেবে যে এতবছর পরে যোগাযোগ হয়েছে স্কুলের বন্ধুর সাথে, শুরুতেই তার কাছে এরকম ধরনের আবদার নিয়ে গেলে ভাল দেখায় কিনা। অভি স্কুলে খুবই হাসিখুশী মজার ছিল, পপুলারও। এখনও সেরকমই মজা করে কথা বলে, আলোক টুপাই ওদের তো খুব ভাল লেগেছে ওকে। কিন্তু পুলিশ অফিসার হিসেবে সে কিরকম তাতো রাই জানেনা।

    একটা সমস্যা মিটল বলে একটু হাল্কা পায়ে গিয়ে ফ্রিজ খুলল, মিষ্টির স্টকের কি অবস্থা দেখতে। অভি এলে কিছু তো সামনে ধরে দিতে হবে, সেই স্কুল থেকেই ও খুব খেতে ভালবাসে। এর আগে দুবারই এসেছে যখন এলাহী ব্যবস্থা করেছে রাই। আজ কি করবে বুঝতে পারছে না! একটু বাড়িতে বানানো কেক আছে, মিষ্টিও আছে অল্প। এলে না হয় একটু স্যান্ডউইচ আর কফি বানিয়ে দেবে। সেই মত কেটেকুটে সেদ্ধ করে রাখল। তারপরে নিজের আর মেয়ের জন্য সংক্ষিপ্ত লাঞ্চ তৈরী করল, ভেজ পোলাও আর মুর্গীর ঝোল।

    অভি এল তখন বেলা প্রায় বারোটা। পুলিশের পোষাক দেখে গেটেও বোধহয় আটকায়নি। সোজা এসে দরজায় বেল বাজিয়েছে। প্রথমে দু চারটে এদিক সেদিকের কথা হল। আলোক ট্যুরে, সেকথা ওকে আগে বলা হয়নি। টুপাই আসতে ওর সঙ্গে একটু লাগল, রাই খাবার দাবার সাজিয়ে দিল। শেষে দুকাপ কফি নিয়ে এসে বসল ওর কাছে। কথা বলতে বলতে অভিকে একটু অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল। রাই ওর খাওয়া শেষ হওয়ার জন্য ওয়েট করছিল। হতেই টুপাইকে ভেতরে যেতে বলে সরাসরি জিজ্ঞেস করল,
    -"অভি, তুই এদিকে কোথায় এসেছিলি রে? কি হয়েছে?"
    অভিনব একটু ওর দিকে তাকিয়ে ভাবল, তারপর বলল,
    -"তোদের এখানে কাছেই একটা মার্ডার হয়ে গেছে কাল। অন সেকেন্ড থট, মহিলার হাসব্যান্ড তো তোদেরই অফিসের, তুই শুনিসনি কিছু?"
  • aranya | 173.54.108.10 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ০৯:০৩428284
  • গপ্পোটা ঘ্যামা জমেছে, কেয়াবাৎ।
  • san | 170.252.160.1 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ১০:২০428285
  • তারপর?
  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ১১:১৪428286
  • ----------------------------------------------------------------------------
    পুলিশ বন্ধুর কাছে মিথ্যে বলার দু:সাহস রাই করলনা।
    -"তুই লীনার কথা বলছিস তো, লীনা রায়? শুনেছি, ওর হাজব্যান্ড অতীশ রায় আমাদের অফিসেই আছে। "
    -"গুড, তাহলে তুই জানিস। এসব খবর খুব তাড়াতাড়ি ছড়ায়, নো ডাউট। সেই কারনেই আমি তোর কাছে এলাম, তোর পরিচিত হবে মনে করে, যদি ইনার স্টোরি কিছু পাওয়া যায়।"

    রাই অভিকে লীনা আর অতীশ সম্বন্ধীয় যা যা জানত সবই বলল। কিছুটা অলরেডি অভি জেনেছে লীনার শাশুড়ীর জবানবন্দী থেকে। তবে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ব্যাপারটা জানতনা।
    -"অভি সব তো শুনলি, এবার তুই আমাকে বল তো কি হয়েছে, কি কি দেখলি ওখানে। অবশ্য যদি তোর তাড়া না থাকে।"
    -"না: তাড়া কিসের! এখন লাঞ্চ করতে সোজা বাড়ি যাব তোর এখান থেকে, রেনু অপেক্ষা করবে, আদিরও আজ ছুটি। তাছাড়া পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট আসবে সেই বিকেলে, তাই বাড়ি হয়ে বিকেলে অফিসে যাব। এমনি থানার ইন চার্জ কেসটার দায়িত্বে। কিন্তু তোদের অফিস থেকে বড় কর্তার কাছে ফোন গিয়েছিল, কোনো ফলস পাবলিসিটী যেন না হয়। তাই তড়িঘড়িতে উনি আমায় ওভার অল সুপারভিজনের দায়িত্ব দিয়েছেন।
    অতীশরা এখন তোদের গেস্টহাউসে চলে গেল, বাড়ি আমরা সীল করে দিয়েছি।"

    ঠিক, রাই এটা এতক্ষণ খেয়াল করেনি। ওদের কোম্পানির এইচ আর এসব ব্যাপারে খুব প্রম্পট। আর কিছু না হোক চাকরিরত কোনো কর্মচারী যদি পুলিশী ঝামেলায় জড়ায় তাহলে এইচ আর থেকে তাকে সবরকম সাপোর্ট দেওয়া হয়। আর এই কেসে সবদিক থেকে সবচেয়ে বেশী ঝামেলায় অতীশই পড়বে। ওদের কোম্পানি এসব ব্যাপারে একটু গোঁড়া প্রকৃতির। তবে এত তাড়াতাড়ি ফোনটোন করে ফেলেছে, বেশ করিতকর্মা বলতে হবে তো লোকজন।

    এরপর অভিনব ওকে একটু একটু করে যা বর্ণনা দিল তাতে ব্যাপারটা এরকম দাঁড়াচ্ছে।
    মৃত্যুর কারন আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে ধারাল অস্ত্র দিয়ে গলার নলি কাটা। কোনো ধ্বস্তাধস্তির চিহ্ন নেই, অন্য কোন আঘাতেরও কিছু দেখা যাচ্ছেনা তবে এসব পাকাপাকি ভাবে বলা যাবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট এলে তবেই। সন্ধ্যে সাতটা থেকে আটটার মধ্যে খুনটা হয়েছে বলে ডাক্তার অনুমান করছেন। লীনার শাশুড়ী প্রায় সাড়ে আটটা নাগাদ আসেন, তার আগেই খুন হয়ে গেছে। অতএব সময়টা ওরকমই হবে। মেয়ে পড়তে গেছিল ছটা নাগাদ, তার একটু পরেই শাশুড়ী ভদ্রমহিলাও বেরিয়ে যান। হত্যাকারী খুব কম সময়ে অত্যন্ত নিপুণভাবে কাজ সেরে বেরিয়ে গেছে। আর তা থেকে মনে হচ্ছে এটা একটা প্রিপ্ল্যানড মার্ডার। পুলিশ ছটা থেকে সাড়ে আটটা অবধি যারা যারা বাইরের থেকে ওদের স্যোসাইটী তে এসেছে তাদের তল্লাশ করছে সিকিউরিটী রুমের এ¾ট্রী খাতা দেখে। লীনাদের বাড়িতে কেউ আসেনি, অন্তত খাতার হিসেবে। ওদের ফ্লোরে চারটে ফ্ল্যাট, সেসবের বাসিন্দারাও কিছু অস্বাভাবিক দেখেনি শোনেনি। তবে সবাই হয় বাইরে, নয় বাড়ির ভেতরে ছিল সে সময়টায়, না দেখা বা খেয়াল না করাটা খুব আশ্চর্যের কিছু নয়।

    চারজন সিকিউরিটীকে পুলিশ থানায় নিয়ে গেছে ভাল করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। বাড়ি থেকে কিছু খোয়া যায়নি, ওর শাশুড়ী আর অতীশ সেটা কনফার্ম করেছে। কাল সন্ধ্যেয় কারো আসার কথা ছিল কিনা ওরা জানেনা। সকাল থেকে ওদের বাড়িতে একজন ক্যুরিয়রের লোক আর একজন ওয়াশিং মেশিন সারানোর লোক ছাড়া আর পুরুষ কেউ আসেনি। মেয়ের দুজন বন্ধু এসেছিল বিকেলে, তাদের সাথেই মেয়েটা পড়তে যায়। লীনা সকালে বেরিয়েছিল কাছেই দোকানে, তখন ওর শাশুড়ী বাড়িতে ছিলেন।
    সেরকম কারো সাথে খারাপ সম্পর্ক ছিলনা। শাশুড়ী তো কেঁদে আকুল। পাড়াপড়শীরা প্রশংসাই করছে, খুব নাকি আমুদে হাসিখুশী ভাল মেয়ে ছিল। মেয়ে সৎ হলেও কেউ বলে না দিলে বোঝা যেতনা, মা মেয়ে এতটাই ক্লোজ ছিল। অবশ্য রাই ও সেরকমই জানে।

    সব কথা বলে অভি রাইয়ের দিকে চাইল,
    -"কি রে, কিরকম মনে হচ্ছে?"
    -"আমার কি মনে হবে? পুলিশ তো তুই। তবে আমার মনে হয় কে মারল কিভাবে মারলর চেয়েও বড় ধাঁধা কিন্তু কেন মারল!"

  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ১২:১৭428287
  • ----------------------------------------------------------------------------
    রাই অবশ্যই চাইছিলনা অতীশের কথা তুলতে,তাই চুপ করে থাকে।
    অভিই কথাটা ওঠালো,
    -"সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে এটা একটা সিম্পল বর মেরেছে বউকে কেস হওয়াই স্বাভাবিক। তোর কথা থেকে মনে হচ্ছে মেয়েটি যতই ভাল হাসিখুশী হোক, ওর স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কটা ঠিক স্বাভাবিক ছিলনা। আর স্বামী ভদ্রলোকটিও একটু অদ্ভুত টাইপের।
    তবে সে নিজে কিছুতেই খুন করতে পারেনা। ওকে বম্বেতে ট্রেস করার সাথে সাথেই আমরা ওখানকার পুলিশকে ইনফর্ম করি ওর হোটেলে খবর নিতে। ওরা কিছুক্ষণ আগেই আমায় ফোন করেছিল, হোটেল স্টাফ সবাই একবাক্যে বলেছে ভদ্রলোক কাল সন্ধ্যে থেকে হোটেলেই ছিল, নটায় ডিনার করেছে ডাইনিং হলে। অবশ্য নিজে না খুন করে ভাড়াটে লোক দিয়ে খুন করালে এক কথা। সেক্ষেত্রে এটাই আইডিয়াল সময়, যখন ভদ্রলোকের একটা সলিড অ্যালিবি আছে।
    কিন্তু মোটিভ, যেই মারুক মোটিভ কি?"
    রাই একটু ভাবে,
    -"অভি, ভদ্রলোককে আমি চিনিইনা বলতে গেলে। আলোক অল্পবিস্তর চেনে, তাও কাজের সূত্রে তার বাইরে নয়। এখানে অনেকের সঙ্গেই লীনার সম্পর্ক ছিল, যাতায়াত ছিল, কিন্তু ভদ্রলোকের ছিলনা। উনি শুধু অফিস আর বাড়ি করেন শুনেছি। বাড়িতেও নিজের কাজকর্ম পড়াশোনা নিয়ে থাকত, অবশ্যই লীনার কথা অনুযায়ী। ইন ফ্যাক্ট লীনার বন্ধুদের কাছে শুনেছি, কথা যা একটু বলত তা লীনার সাথেই তাও জোরাজুরিতে। আর কেউ ওর ধারেকাছে ঘেঁসত না। এরকম লোকেদের মনে কি থাকে তা ভগবানই জানে।"
    -"আচ্ছা এই লীনার এনজিওর সঙ্গে কাজ করা বা অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ব্যাপারটা তুই ঠিক শুনেছিস তো?
    -"তুই কি লীনা কিছু করত কিনা জিজ্ঞেস করেছিলি?"
    -"করেছিলাম, তবে অতীশকে নয়, ওতো এই সকালে এসে পৌঁছল। ওর সাথে ভাল করে কথা আমি বলিনি এখনও। অতীশের মাও বেশ শকড, একটু জবুথবু হয়ে আছেন। বিশেষ কথা হয়নি। ওর এক কাজিন দিল্লীতে থাকে, খবর পেয়ে এসেছে। তাকে জিজ্ঞেস করতে বলল, হাউসওয়াইফ। "
    -"সে হয়ত ঠিক জানেনা, এবার গেলে অতীশকে জিজ্ঞেস করিস। কেমন দেখলি তুই ওকে? লোকটাকে যা দেখেছি যদি দোষী হয়, শোকের অ্যাকটিং করবে বলে মনে হয়না।"
    -"অ্যাকচুয়ালি, সেরকম শোক দেখলাম না, তবে সেটা ইনট্রোভার্ট হওয়ার কারণেও হতে পারে, বাইরে প্রকাশ নেই। একটু গুম হয়ে আছে, আর বেশ কনফিউজড। কথা বলতে তোতলাচ্ছে অনেক সময়।"
    -"যাক তুই যে খোলা মনে তদন্ত করছিস, এককথায় লোকটাকে ভিলেন বানিয়ে দিসনি এটা একটা ভাল পুলিশের লক্ষণ।"

    অভি হা হা করে হেসে উঠল বন্ধুর প্রশংসায়। তারপরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
    -"এবার উঠতে হবে রে। তবে তার আগে চট করে লীনার বান্ধবী ঐ শম্পার সঙ্গে একটু কথা বলব ভাবছি। তুই চল তো আমার সঙ্গে, তোদের নীচেই তো?"
    রাই একটু ইতস্তত করে বলে,
    -"অভি, তারচেয়ে আমি ফোনে শম্পা কে এখানে ডাকি। ও লীনার খুবই ক্লোজ বন্ধু, আর ওর যা স্বভাব লোকের হাঁড়ির খবর বার করার, তাতে বাইরের কেউ যদি লীনাদের সম্বন্ধে স্কুপ দিতে পারে তো সে ঐ শম্পাই পারবে। আমরা ওর বাড়ি গেলে ওর বরও থাকবে। প্রবীরদার সামনে কিন্তু ও মুখ খুলবেনা।"
    অভি কথাটা বুঝে সম্মতি দিল শম্পাকে ওখানেই ডাকার। রাই ফোন করে দেখল শম্পা বাড়িতেই। ও অভির কথা না বলে, তক্ষুনি ওর বাড়ী আসতে বলল, দরকার আছে।

  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ১৬:৫৯428288
  • ---------------------------------------------------------------
    শম্পা এল যখন মুখটা একটু হাসিহাসি, সকালের সেই দু:খী ম্লান ভাবটা অনেকটাই গেছে। ঘরে ঢুকেই অভিকে দেখে থমকে গেল। অভি উঠে দাঁড়িয়ে দু হাত জড়ো করে বলল,
    -"আমি অভিনব গুপ্তা, রাইয়ের বন্ধু। লীনা রায়ের মৃত্যুর তদন্তে এসেছিলাম এদিকে, ভাবলাম রাইয়ের সঙ্গে দেখা করে যাই। তা শুনলাম আপনি নাকি মিসেস রায়ের খুব ভাল বন্ধু। আমি সত্যিই অত্যন্ত দু:খিত।
    পুলিশের তরফ থেকে আমি এ কেস সলভ করে খুনীকে সাজা দিতে চাই। আপনার কাছে আমি মিসেস রায়ের সম্বন্ধে জানতে চাই, তাতে আমার কেসে সাহায্য হবে। প্লীজ বসুন আপনি।"

    শম্পা একটু থতমত খেয়ে প্রতিনমস্কার জানিয়ে সোফায় বসে পড়ল তড়িঘড়ি করে। রাই ওর দ্বিধাটা কাটাতে বলল,
    -"বিশ্বাস কর শম্পা, আমি অভির সাথে নিজে যোগাযোগ করিনি, তার আগেই ও এখানে এসেছে। আর এটাও কাকতালীয় যে ওকে এই কেস দেওয়া হয়েছে। তুমি তো তাইই চাইছিলে, ভগবানই তোমার কথা শুনেছেন। এখন আমাদের, বিশেষ করে তোমাকে অভিকে সাহায্য করতে হবে।"

    শম্পা এই কথায় একটু সহজ হয়, বলে
    -"আমি যা জানি রাইকে বলেছি, তবু আপনি প্রশ্ন করুন আমি উত্তর দেব। আমাকে কোর্টেটোর্টে সাক্ষী দিতে যেতে হবেনা তো?"
    অভি এই কথায় হেসে ওঠে আর হাসলে ওকে বেশ ছেলেমানুষ লাগে, গুরুগম্ভীর অফিসার লাগেনা। আবহাওয়াটা অনেক তরল হয়ে যায় ওর হাসির শব্দে। শুরু হয় প্রশ্নোত্তরের পালা।

    -"আচ্ছা শম্পা, আপনি তো লীনার খুব বন্ধু। ওদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা কি সত্যিই খুব জটিল ছিল, যেরকম বাইরে থেকে মনে হয়? লীনা শুনেছি সবার কাছে স্বামীকে নিয়ে হাসি মজা করত, ভেতরে ভেতরে কি কষ্টে ছিল,আপনাকে কোনোদিন কিছু বলেছে?"
    -"দেখুন, আপনি রাইয়ের কাছে শুনে থাকবেন আমি একটু লোকজনের খবরাখবর রাখতে ভালবাসি। যেসব প্রশ্ন সাধারণে করেনা আমি তাও অনেকসময় করে ফেলি। আমি কিন্তু লীনার কাছে অতীশদার সম্বন্ধে খারাপ কিছু শুনিনি। ওর কমপ্লেন ছিল এই যে অতীশদা লোকজনের সঙ্গে বা বাড়ির লোকের সঙ্গে মেশেনা, কোথাও বেড়াতে যায়না, কোনো শখসাধ নেই আর পাঁচটা মানুষের মত, একটা কেমন অন্যজগতে থাকে এই নিয়ে। ওর সঙ্গে বা আর কারোর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে এরকম কোনোদিন বলেনি। উল্টে অনেক ব্যাপারে লীনার কথাই থাকত, অতীশদা বাধা টাধা দিতনা। বিশেষ করে ওদের মেয়েটার ব্যাপারে। মেয়েটাও জানে লীনা ওর সৎমা, কিন্তু লীনার সাথে তার যেরকম ভাব ভালবাসা তা অনেক সময় নিজের মেয়ের সাথেও হয়না। ওর সবকিছু লীনা দেখত, লীনাকে ঘিরেই ওর জগত। অতীশদা বোধহয় মেয়ে কোন ক্লাসে পড়ে তা জিজ্ঞেস করলেও বলতে পারবেনা। এটা লীনাকে বেশ কষ্ট দিত। হয়ত মেয়েটার মনের দু:খ কিছু ও ফীল করেছিল।"

    রাই শম্পার নিজের সম্বন্ধে অকপট স্বীকারোক্তি শুনে হাসি চাপলেও মুগ্‌ধই হল! এই একবেলাতেই শম্পার কতরূপ দেখছে!

  • shrabani | 124.30.233.102 | ২৭ নভেম্বর ২০০৯ ১৭:০৭428289
  • -"ওর শাশুড়ী শ্বশুর এদের সঙ্গে লীনার কেমন সম্পর্ক?"
    -"এমনি ভালই ছিল। তবে ওরাও একটু ঘরকুনো টাইপের, লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা বিশেষ করেনা। তাই মাঝে মাঝে এক আধটু অশান্তি হত। গ্রামের লোক, অনেক গোঁড়ামিও ছিল, আচার বিচার। তবে লীনা খুব বুঝদার মেয়ে ছিল, ছোট থেকে অন্যের বাড়ি মানুষ হয়েছে, ও সামলে নিত। ইদানীং ওর এই এন জি ও তে কাজ করা নিয়ে ওর শাশুড়ী খুব অশান্তি করছিল। একটু তাই বিরক্ত ছিল তবে কাজটা ও ছাড়েনি। ওখানকার হেড যিনি তিনি ওর পুর্বপরিচিত ছিলেন তাই অনুমতি নিয়ে নিজের সুবিধে মত যেত আসত, বাঁধাধরা টাইম ছিলনা।"

    -"কেন আপত্তি করছিল তা কিছু বলেছিল ও?"
    -"সেরকম কিছু বলেনি, হয়ত ওনাকে ঘর আগলে থাকতে হচ্ছিল, বেশী করে ঘরের কাজ করতে হচ্ছিল তাই।"

    -" রাই বলল আপনি বলেছেন লীনা নাকি অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিল কিছুদিনের মধ্যেই।"
    -"হ্যাঁ, ওর সব কাগজপত্র হয়ে গেছিল। ভিসার জন্য বোধহয় জমাও দিয়ে দিয়েছিল। ও কাউকে বলতে বারন করেছিল, শুধু নাকি অতীশদা জানত।"
    -"আপনি ঠিক জানেন অতীশ জানত?"
    -"তাই তো বলেছিল। এও বলছিল মেয়েটাকেও নিয়ে চলে যাবে। কোনোভাবে অতীশদাও নাকি চলে যাবে, ওরা এখানে থাকতে চাইছিলনা।"

    অভিনব একথা শুনে একটু থমকাল, তারপর তীক্ষ্মদৃষ্টিতে শম্পার দিকে তাকিয়ে বলল,
    -"আপনি কি আমাকে কিছু বলছেননা শম্পা? ওরা সপরিবারে এদেশ থেকে চলে যাবার প্ল্যান করছিল কেন? অতীশের বয়স্ক বাবা মা ওদের সঙ্গে থাকে, অতীশ একমাত্র ছেলে। তাদের ছেড়ে ওরা অস্ট্রেলিয়ায় সেটল করার কথা ভাবছিল, এটা অদ্ভুত। লীনার কথা তবু বোঝা যায়, তার সেরকম নিকট বলতে কেউ নেই, পিছুটান নেই, কিন্তু অতীশ?"
    রাই তাকিয়ে দেখল শম্পা একটু দোটানার মত, হাত দুটো জড়ো করছে খুলছে,একবার রাইয়ের দিকে তাকাল। রাই একটু বুঝে বলল,
    -"শম্পা, তুমি যদি বল আমি পাশের ঘরে চলে যাচ্ছি। তুমি প্রাণ খুলে অভির সঙ্গে কথা বল। পুলিশের কাছে কোনো কিছু লুকোলে আননেসেসারি ওদের তদন্তে দেরী হবে। জানতে তো ওরা পারবেই সবকিছু সে আজ না হয় কাল।"
    শম্পা এই কথাতে বোধহয় মনস্থির করে ফেলে হাঁ হাঁ করে ওঠে,
    -"না না সেকী রাই তুমি থাক। তোমার জন্যই তো মিস্টার গুপ্তা কেসটা নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।"

    রাই ওর ভুলটা ভাঙায় না, চুপ করে থাকে। শম্পা অভিনব কে বলে,
    -" এটা বোধহয় আর কেউ জানেনা, আমি ছাড়া। আমি কাউকে বলিনি, লীনার একান্ত অনুরোধ ছিল। কথায় কথায় একদিন ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে যায়। সবাই জানে অতীশদার আগের বৌ মারা গেছে। ওরা তাকে নিয়ে কোনো কথা বলতনা। কিভাবে সবার মুখে রটে যায় সে মারা গেছে। আসলে কিন্তু তা নয়, মেয়েটার যখন ছমাস বয়স সে তখন পালিয়ে যায় অন্য একজনের সাথে। তার বাড়ির অবস্থা খুব ভাল ছিল, বাবা ভাইয়েদের বিরাট ব্যবসা। পরে সে ডিভোর্স নিয়ে নেয়, আবার বিয়ে করে। লীনা তো অতীশদাদের গাঁয়ের ই মেয়ে, সব জেনেশুনেই বিয়েতে রাজী হয়।
    ও বলত তার বেশী দোষ দেওয়া যায়না, অতীশদার মা বাবা ভীষণ ডমিনেটিং। অতীশদাও ওদের গ্রামে রাখবেনা, নিজের সঙ্গে রাখবে। এইসব নিয়ে প্রচুর অশান্তি ছিল। মেয়েটি বড়লোকের, খোলামেলা পরিবেশে মানুষ। যার সঙ্গে চলে গেছিল সেই লোকটি মেয়েটির বন্ধু ছিল, এমনিতে কিছু ছিল না বিয়ের আগে। মনে হয় এদের ওপর বিরক্তিতে ও শেষমেশ এই রাস্তা বেছে নেয়।
    তা এতদিন তো সেই বউ মেয়ের খোঁজখবর নেয় নি। হঠাৎ একদিন কোথা থেকে ফোন নাম্বার জোগাড় করে ফোনটোন করে। বছরখানেক আগে যখন ওরা গ্রামে যায় তখন সে কলকাতায় মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে চায়। লীনার কেন জানিনা তার প্রতি খুব সহানুভূতি ছিল। ঐ অতীশদাকে রাজী করিয়ে মা মেয়ের দেখা করায়। এসব অতীশদার মা বাবার অগোচরে হয়। ওরা তো দুবেলা তাকে গালাগাল না করে জল খায়না টাইপের ব্যাপারস্যাপার। তাই তাদের বলতে যায়নি এরা।"

    অভি আর রাই দুজনেই একটু হতবাক হয়ে যায় শম্পার কথা শুনে। কি বলবে ভেবে পায়না। সত্যি মানুষের বাইরে থেকে কত কম জানা যায়!
  • Sayantan | 159.53.78.142 | ২৮ নভেম্বর ২০০৯ ০১:০৪428290
  • দারুণ হচ্ছে শ্রাবণীদি। অনেকদিন পূজাবার্ষিকী না পড়ার দু:খ ভুলে যাচ্ছি।
  • ranjan roy | 115.184.88.193 | ২৯ নভেম্বর ২০০৯ ২১:১০428291
  • শ্রাবণী,
    বোধহয় বছরখানেক পরে নতুন গল্প লিখছেন। এবার বাংলার গাঁয়ের চমৎকার স্কেচ্‌ যুক্ত বিজয়-সিরিজের জায়গায় নাগরিক জীবন।
    এই স্বাদবদল ও বেশ ভালো লাগছে, আর প্রত্যাশার অনুরূপ তাড়াতাড়ি লিখছেন, আগ্রহ নিয়ে পড়ছি।
  • shrabani | 124.124.86.102 | ৩০ নভেম্বর ২০০৯ ০৯:৪০428292
  • রঞ্জনদা, গল্প মানে রহস্য গল্প!

    আমার যদিও ইনফর্মাল হতে একটু সময় লাগে তবুও আপনি আপনি আপনি করলে নিজেকে খুব গুরুগম্ভীর লাগবে!
  • shrabani | 124.124.86.102 | ৩০ নভেম্বর ২০০৯ ১০:০৯428293
  • --------------------------------------------------------------
    অভি অবশ্য সঙ্গে সঙ্গেই সামলে নিয়ে আবার প্রশ্ন করা শুরু করে।
    -"আচ্ছা, আপনি তো বলছেন লীনাই অতীশের আগের বউয়ের সঙ্গে তার মেয়ের দেখা করাতে উদ্যোগ নিয়েছিল, তাহলে আবার লীনা সেই বউয়ের জন্যে এখানকার বাস তুলে দিতে চাইবে কেন? কি এমন করেছিল সে, জানেন কি? আর একটা কথা, ওদের মেয়ে, তাকে ওরা কি বলেছিল? সেকী জানত যে তার মা বেঁচে আছে?"
    -"না সেরকম আমি কিছু জানিনা। তবে ওদের মেয়ে মৌলি যখন ফোর্থ স্ট্যান্ডার্ড এ পড়ে, একটু বোঝবার মত বয়স হয়েছে তখনই ওরা ওকে সব কথা বলে দিয়েছিল। সে জানত ওর মা চলে গেছে আর লীনা ওর সৎমা। কিন্তু লীনার ব্যবহারে হোক আর যাই হোক ও লীনাকেই মা বলে মেনেছে। এমনি যে কারনেই হোক মৌলিকে দেখেছি বয়সের তুলনায় বুদ্ধিসুদ্ধিতে বেশ ম্যাচিওরড, লীনাও তাই বলত। খুব ধীরস্থির মেয়ে, একটু অতীশদার মতই ইনট্রোভার্ট। আসল মাকে দেখে ওর মনে কিছু হলেও বাইরে সেরকম কিছু অস্বাভাবিক রিয়্যাকশন দেখায়নি। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম লীনাকে।"
    -"আর একটা কথা, যেটা লীনার বাড়িতেই জিজ্ঞেস করা উচিত ছিল আমার, ভুলে গেছি। তবে আপনি ওর ঘনিষ্ঠ, আপনি নিশ্চয় জানবেন। লীনা চা খেত তো? মানে ওদের ড্রইংরুমের সেন্টার টেবিলে দু কাপ চা রাখা ছিল। রান্নাঘরের সিঙ্কে চায়ের বাসন। এমন তো নয় দুজন অতিথির জন্য দু কাপ চা বানিয়েছিল? সেক্ষেত্রে খুনী একা ছিলনা, তার সঙ্গে কেউ ছিল।"
    শম্পা ঘাড় নাড়ে,
    -"না তা হবেনা। লীনা চায়ের পোকা ছিল। শুধু লীনাই নয় ওদের বাড়ির সবাই। ওদের চায়ের কোনো সময় ছিলনা, যখন তখন খেত। লীনা চা করবে অথচ নিজে এক কাপ নেবেনা এটা প্রায় অসম্ভব।"
    এবার রাই কি মনে হতে বলে ওঠে,
    -"অভি, চা তো কেউ খায়নি, না? আচ্ছা চায়ের সঙ্গে খাবার বা বিস্কিট কিছু ছিলনা?"
    অভি বলল,
    -"না চা কেউ খায়নি বলেই মনে হয়। দুটো কাপ ই ভরা ছিল। ওপরে সর পড়ে গেসল। টেবিলে আর কিছু ছিলনা, খাবারের প্লেট টেট। ঘরে কোথাও কোন হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি, কাপেও শুধু লীনার আঙুলের ছাপ। মেঝেতেও পায়ের ছাপ পায়নি, হয়ত মুছে দিয়েছে হত্যাকারী।"
    শম্পা বলে,
    -"ওদের বাড়িতে কেউ এসে বসলে আগে লীনা তাকে চা করে দিত। খাবার টাবার পরে খাওয়াত কে কতক্ষণ বসে তার ওপরে।"
    -" আমার মনে হয় লীনা চা করে টেবিলে রেখে কিছু একটা করতে যাচ্ছিল, তখনই খুনী ওকে বেকায়দায় ধরে।"

    রাইয়ের একটা কথা মনে হয়। সে জিজ্ঞেস করে ওঠে,
    -"আচ্ছা যেভাবে মেরেছে তাতে তো খুনীর গায়েটায়ে রক্ত লাগার কথা। সে নিশ্চয়ই খুন করে নিজের জামাকাপড় ধুয়েটুয়ে বেরোয়নি। সিকিউরিটীর চোখে পড়লনা এরকম লোক।"
    -"এটা খুব একটা বড় ব্যাপার নয়। ডার্ক শেডের জামাকাপড় থাকতে পারে পরনে। খুন করার আগে বেহুঁশ করার পরে উইন্ডচীটার জাতীয় কিছু ব্যাগ থেকে বার করে পরে নিতে পারে। তবে প্রাথমিক ভাবে দেখে ডাক্তার বলছেন যে খুব নিখুঁত ভাবে ঠিক জায়গায় আঘাত করেছে, স্যার্জিক্যাল দক্ষতায়। তাই রক্তপাত খুব একটা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে।"

    অভির আপাতত আর কিছু জিজ্ঞাস্য ছিলনা শম্পাকে। ও ওকে ধন্যবাদ দিয়ে উঠে পড়ল। রাই গেল নীচে তাকে গাড়ী অবধি ছাড়তে, শম্পাও ওদের সঙ্গেই বেরিয়ে নিজের ফ্ল্যাটের দিকে গেল।

    নীচে গেটের বাইরে এসে অভি গাড়ীতে উঠতে যাবে রাই কি মনে হতে বলে,
    -"অভি, একবার লীনাদের ফ্ল্যাটে নিয়ে যেতে পারিস আমায়? বইয়ে এত পড়েছি, কেমন যেন ক্রাইম সিনটা দেখতে ইচ্ছে করছে।"
    অভি একটু অবাক হয়ে তাকাল ওর দিকে। পরমুহূর্তেই মজার মুখভঙ্গী করে বলল,
    -"কি রে মিস মার্পল হবার সাধ হচ্ছে নাকি? কোনো ব্যাপার নয়, চল। তবে কেস সলভ করতে পারলে ক্রেডিট টা এই গরীব নাকাম পুলিশকে দিস।"

    ওরা গাড়ীতে ওঠে। দু মিনিটও লাগেনা লীনাদের বাড়ি এসে যায়। যদিও কাছেই, তবু এদিকটায় রাই খুব একটা এসেছে বলে মনে পড়েনা। সেক্টরের শপিং কমপ্লেক্সটা যেখানে শেষ হয়েছে সেখান থেকে একটা রাস্তা গেছে হাইওয়ের দিকে। আশপাশে অনেক খালি জমি, একটু দুরে দুরে দু তিনটে অয়াপার্টমেন্ট। মাঝে একটা বড় পার্ক মতন, অথরিটীর গ্রীন এরিয়া, বড় বড় গাছে ঘেরা। কিছুই নেই পার্কে, কয়েকটা বেঞ্চ ইতস্তত ছড়িয়ে আছে, একটা সিমেন্টের ওয়াকওয়ে।

  • shrabani | 124.124.86.102 | ৩০ নভেম্বর ২০০৯ ১০:৩৫428295
  • -----------------------------------------------------------------------------------
    লীনাদের সোস্যাইটীর সামনের রাস্তায় লোক চলাচলও বেশ কম। ওরা গেট দিয়ে ঢুকল, সিকিউরিটী ছেলেটা মস্ত সেলাম ঠুকল অভিকে দেখে। কোথা থেকে একটা পুলিশের লোক দৌড়ে এল বড় সাহেবকে দেখে। ভেতরেও কেউ কোথাও নেই, কোনো জটলা নেই, এমনি দেখলে বোঝাও যায় না যে এই সোস্যাইটীতে কাল রাতেই এরকম একটা ভয়ংকর ঘটনা ঘটে গেছে!

    ওরা দুজন লিফটে করে সোজা চারতলায় এল, লীনাদের ফ্ল্যাটের সামনে। এত বেলায় আশেপাশের সবাই যে যার ঘরে নাওয়াখাওয়ায় ব্যস্ত। চারিদিক তাই বোধহয় অদ্ভুত শান্ত নীরবতা। দরজার সামনে একজন প্রহরারত পুলিশ, অভি তাকে চাবি খুলতে বলল। সে চাবি খুলে বাইরেই রইল। অভি আর রাই ঢুকল ভেতরে। ড্রইং রুমে ঢুকেই চোখ গেল মেঝের খড়ির দাগের দিকে, অভি ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় জানাল, ওখানেই ছিল মৃতদেহ। কেমন গা ছমছম করে উঠল ঘরের ভেতরকার আলো আঁধারীতে। অস্বস্তিটা কাটাতেই বোধহয় অভি ব্যালকনির দিকের দরজাটা খুলে দিয়ে একটা চেয়ারে বসে পড়ে বলল,
    -"তুই ঘুরে দ্যাখ, আমার কাল থেকে অনেকবার দেখা হল। কিছুতে সেরকম হাত টাত দেওয়া হয়নি, সকালে অতীশরা শুধু দরকারী জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে তোদের গেস্টহাউসে চলে গেছে।"

    অভি এই বলে মোবাইলে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। রাই এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগল। সেরকম সাজানোগোছানো কিছু নয়, একটু অপরিস্কার অগোছালৈ। লীনারও বোধহয় বন্ধু শম্পার মতোই ঘুরে বেড়ানো স্বভাব ছিল। অবশ্য বাড়িতে লোকও অনেক, তাই সবসময় নিটোলভাবে মেন্টেন করা বোধহয় চাপের। রান্নাঘর পরিস্কার, কাটা মাছ সবজি টবজি মনে হয় ফেলে দেওয়া হয়েছে। সিঙ্কে কিছু বাসন পড়ে আছে। শোবার ঘরে একটা আলনায় না ভাঁজ করা শাড়ি, লীনারই হবে, ওকে শাড়িই বেশী পরতে দেখেছে রাই। চেহারাটা মোটাসোটা বলে বোধহয় অন্য কিছু পরতনা।
    একটু চোখ বুজে চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইল, যদি কিছু টের পায় কোনো অশরীরি উপস্থিতি, এখনও চব্বিশ ঘন্টা হয়নি কথামত লীনার আত্মার আশেপাশেই থাকার কথা। কিছুই ফীল করলনা, অভির হাঁক এল,
    -"রাই, এবার চল রে।"
    ও বাইরের ঘরে আসতে আসতে একবার ওয়াশিং মেশিনের দিকে তাকাল, ভেতরে ধোয়া কাপড় পাশে ময়লা কাপড়ের স্তুপ, যেমনটি শম্পা বলেছিল। অভি আবার ফোনে, রাই এসে একটা সিঙ্গল সোফায় বসল পাশের সাইড টেবিলে রাখা ফোন। নতুন যন্ত্র, এইরকম ফোন তাদের অফিসেও প্রত্যেক টেবিলে আছে, বেশী দামী নয় কিন্তু কায়দার, কলার আই ডি আছে। অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
    -"এই ফোনের আই ডি গুলো চেক করেছিলি?"
    অভি মোবাইল বন্ধ করে ওর দিকে তাকায়,
    -"এটা ইন্টারকম, এই সোস্যাইটীর বাইরে ফোন যায় বা আসেনা। এদের বাড়ীতে ল্যান্ডলাইন নেই, সবাই মোবাইল ব্যবহার করে। কলার আই ডি দেখেছি, বেশীরভাগই গেটের ফোন।"
    রাই বোতাম টিপে টিপে নাম্বারগুলো দেখতে থাকল, ৩০০ নাম্বারটাই বেশী, বোধহয় গেটের নাম্বার। রাত্রে অনেক ফোন হয়েছে, বডি পাওয়ার পরে পুলিশরাও করতে পারে। দেখতে দেখতে ওর ভ্রু কুঁচকে গেল, সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় গেটের ইনকামিং কল।
    -"অভি"।
    -"কি?"
    -"এইটা দেখেছিস, সাড়ে সাতটায় গেট থেকে ফোন এসেছে। সেটা তো হিসেবমত খুনের সময় বলা হচ্ছে। অথচ গেটে কোন লোক আসার এ¾ট্রী নেই। কেন ফোন করেছিল কিছু বলেছে সিকিউরিটীরা?"
    অভি একটু চিন্তা করল।
    -"দেখি, ভার্মার সঙ্গে কথা বলে তোকে জানাব। ওরা সিকিউরিটীকে জিজ্ঞেসবাদ করেছে। ভার্মা কেসের অফিসার ইন চার্জ। সাড়ে সাতটার সময় দিনের শিফট ছিল, শিফ্‌ট চেঞ্জ হয় আটটায়। নীচে চল, এখন যারা আছে তাদের জিজ্ঞেস করে দেখি।"

    ওরা বাইরে এলে, বাইরের পুলিশটি দরজায় চাবি দিয়ে ওদের লিফট অবধি এগিয়ে দিল। নীচে এসে ওরা সিকিউরিটীর ঘরের কাছে গেল। সবাই বেরিয়ে এল। একজন বোধহয় সুপারভাইজার গোছের, হাতে রেজিস্টার নিয়ে এসে নমস্তে জানাল। নীচে পাহারার পুলিশের লোকটিও গেটে ছিল, এগিয়ে এল। অভি সুপারভাইজারকেই জিজ্ঞেস করল সাড়ে সাতটার ফোনের কথা। অনেক মাথা চুলকে টুলকেও কেউই কিছু বলতে পারলনা। একটু পরে হাল ছেড়ে দিয়ে বাইরে এল ওরা।
    ড্রাইভারকে রাইয়ের বাড়ী হয়ে যেতে নির্দেশ দিল অভি। রাই মানা করছিল, শুধু শুধু, কাছেই বাড়ী ওর। অভিকে একটু চিন্তিত দেখাল। রাই নামছে যখন তখন বলল,
    -"ফোনটা ইম্পর্ট্যান্ট হতেও পারে নাও হতে পারে বুঝলি। অনেক কারণে গেট থেকে সিকিউরিটী ফোন করে, কোনো কিছু জানাতে। ভুল করে নাম্বার লাগাতে পারে, উত্তর না পেয়ে দ্বিতীয়বার ঠিক নাম্বারে লাগিয়েছে এও হতে পারে। তবে ফোনটা সম্বন্ধে জানা গেলে, মৃত্যুর সময়টা নিয়ে ধারনাটা আরও পাকা হত।"
    রাই কিছু বলে না, অনেক ভাবতে হবে। শুধু গেটে ঢোকার আগে অভিকে অনুরোধ করে পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট এলে ওকে জানাতে। অভি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানিয়ে বিদায় নেয়।
  • shrabani | 124.124.86.102 | ৩০ নভেম্বর ২০০৯ ১০:৪৭428296
  • -------------------------------------------------------------------------
    সন্ধ্যে থেকেই রাইয়ের একটু অস্থির লাগছিল। অন্যদিন বাড়ীতে থাকলে এইসময় নীচে পার্কে হাঁটতে যায়। আজ আর গেলনা। যদিও অভি ফোন করলে মোবাইলেই করবে তবু নীচে অনেক লোকজনের মাঝে ঠিকমত কথা বলা যাবেনা। এছাড়া আজ সর্বত্রই লীনার কথা হবে, অনেক কাহিনী শোনা যাবে। সেসব শুনে নিজের চিন্তাভাবনা গুলিয়ে দিতে চায়না। এমনিতেই ফোনে বা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দু চারটে যা এপাশ ওপাশ কথা চালাচালি হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে সবাই অলরেডি অতীশকে দোষী সাব্যস্ত করে ফেলেছে!
    ফোনটা এল রাত এগারোটায়। ও প্রায় হতাশ হয়ে পড়েছিল, কিন্তু পাছে কাজে ব্যাঘাত করা হয় তাই নিজেও অভিকে ফোন করেনি। মোবাইল হাতে নিয়েই দেখল অভির নাম্বার।

    -"সরি, সময় পাইনি তোকে আগে ফোন করার। এই বাড়ি ফিরলাম। রেনু খাবার গরম করছে, সেই ফাঁকে ফোন করছি।"
    রাই কি আর বলবে, বুঝতে পারছে পুলিশের কাজটাই তো অন্যরকম, বাঁধাধরা সময়ের নয়। বলল,
    -"আরে ঠিক আছে। আমি জেগেই আছি, তুই না হয় খেয়ে দেয়ে ধীরেসুস্থে করিস ফোন।"
    -"না না ঠিক আছে। জাস্ট তোকে সংক্ষেপে বলছি। কোনো ধারাল অস্ত্র, স্যার্জিকাল ছুরি টাইপের জিনিস দিয়ে লীনার গলা কাটা হয়েছে এবং যা অনুমান করা হয়েছিল তাই, বেশ দক্ষতায়, এক টানেই শেষ। কোনো পেশাদার লোকেরই কাজ মনে হচ্ছে। এমনিতে দেহে আর কোথাও কোনো আঘাত নেই, তবে হাতে সিরিঞ্জের দাগ, বেহুঁশীর ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে।
    এখন সবচেয়ে যেটা ধাঁধা তা হল এরকম কোনো পেশাদার খুনীকে লীনা কেন ঘরে ঢুকতে দিল, চা করে খাওয়াতে গেল। তুই একবার শম্পাকে জিজ্ঞেস করে দ্যাখ তো লীনার পরিচিত বা আত্মীয়দের মধ্যে সেরকম কোনো নটোরিয়াস কেউ আছে কিনা। আমি কাল সকালে অতীশকে প্রশ্ন করব বলে থানায় ডেকেছি। বাই দ্য ওয়ে, তুই কোনোভাবে ওর মেয়েটার সঙ্গে একটু কথা বলতে পারবি?"

    রাই একটু চিন্তা করে। ও কখনো লীনার বাড়ি যায়নি। অবশ্য এসময় নিশ্চয় অনেকেই আসছে, কেউ খেয়াল করবেনা। শম্পাকে সঙ্গে করে গেলে কোনোভাবে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। মেয়েটা বা বাকী সবাই ঐ বাড়ীতেই আছে কি কোথায় আছে কে জানে! তবু ও বলে,
    -"ঠিক আছে আমি কাল সকালে চেষ্টা করব। কিন্তু কি জিজ্ঞেস করব বল?"
    -"সে তুই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে করিস, সেরকম জরুরী নয়। তবে অনেক সময় বাচ্চারা অনেক কিছু জানে যা আমরা বড়রা ভাবতেও পারিনা যে ওরা জানতে পারে। তুই তো এখনও অবধি যা কিছু এই কেসের সবই জানিস, ম্যানেজ করে নিস,আমি পরে দেখে নেব। এক কাজ কর, সকালে কথা বলে, দুপুরে তুই আর টুপাই বাড়ী চলে আয়, এখানেই খাবি। কাল রবিবার, আমিও তাড়াতাড়ি চলে আসব, যা করার আমার লোকেরাই করবে, আমি শুধু ফোনে যোগাযোগ রাখব।"

    রাই রাজী হয়ে গেল, ও এই কেসের মধ্যে ঢুকে পড়েছে অভির সাথে। এখন মাথা আর মন খোলা রাখতে হবে।
    -"ঠিক আছে আসব কাল। আচ্ছা অভি, তোরা না সিকিউরিটীর লোককে থানায় নিয়ে গিয়েছিলি? নতুন কিছু জানতে পারলি ওদের থেকে?"
    -"না:। আসলে ওরা বাইরের লোকজনের ঐ এ¾ট্রী করিয়েই খালাস। আসেও প্রচুর আলতু ফালতু লোক। খাতার বাইরে ওদের থেকে কিছুই জানা গেলনা। গরীব সব লোক, বারো ঘন্টা ডিউটী করে ওদের আর কিছু বোধশক্তি থাকেনা। আমার লোক প্রচুর জেরা করেছে, অল্প মারধোরও করেছে, কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। আমি ওদের ছেড়ে দিয়েছি।"

    অভির গলায় অল্প হতাশা।
    হঠাৎ রাই কি মনে হতে বলে ওঠে,
    -"এমনও তো হতে পারে কোনো লোক এ¾ট্রী করেছে অন্য কোনো ফ্ল্যাটের নাম্বার লিখে, অথচ গেছে লীনাদের ফ্ল্যাটে?"
    -"চান্স কম। ওরা গেট থেকে ইন্টারকমে ফোন করে জেনে নিয়ে তবে যেতে দেয়।"
    -"সে ঠিক আছে, সেতো আমাদের এখানেও করে। কিন্তু ধর ক্যুরিয়রের নাম করে এল, ফোন করে জিজ্ঞেস করলে কেউ বারণ করেনা। তাছাড়া আমার এখানেও হয়, ক্যুরিয়র বা পিওন এরা একটা ফ্ল্যাটের নাম করে এ¾ট্রী করে অথচ যায় অনেকগুলো ফ্ল্যাটে।"
    অভি চিন্তা করে,
    -"তা হতে পারে, তবে ক্যুরিয়র ওয়ালাকে লীনা ঘরে বসিয়ে চা খাওয়াবে?"
    -"আরে সে তো এমনিতে লীনার পরিচিত, কিন্তু ক্যুরিয়রের নাম দিয়ে এসেছে। আর গেটে তো আর লীনার কাছে ক্যুরিয়র নিয়ে যাচ্ছে বলেনি, অন্য ফ্ল্যাটের নাম করেছে।"
    -"এটা আমি ভেবে দেখিনি রাই। খুব ক্ষীণ হলেও একটা সম্ভাবনা রয়েছে তোর যুক্তিটার। এক কাজ করি, আমি কালই একজনকে লাগাচ্ছি যে গেটের রেজিস্টার দেখে কোন কোন ফ্ল্যাটে এইধরণের ক্যুরিয়র বা পিওন অথবা অন্য কোনো জেনেরাল ভিজিটর এসেছে আলাদা করে নোট করে নেবে। তারপরে এই ফ্ল্যাট গুলোতে খোঁজ নেবে সত্যিই কেউ এসেছিল কিনা বা এলেও কোন কোম্পানী থেকে আসে। জেনুইন হলেও ঐ কোম্পানী গুলোতে খোঁজ নিতে হবে। এই লাইনে একটা ইনভেস্টিগেশন চালাতে হবে। বাইরের লোক কে এসেছিল বা কেউ এসেছিল এটা প্রমাণ হলে আমার তদন্তে সুবিধা হবে।"
    অভির গলার স্বরে ধন্যবাদের সুর আর প্রশংসার আওয়াজ। রাই ফোন রেখে খুশী মনে ঘুমোতে গেল।

  • shrabani | 124.30.233.102 | ৩০ নভেম্বর ২০০৯ ১১:০০428297
  • correction:

    ---- রাই একটু চিন্তা করে। ও কখনো লীনার বাড়ি যায়নি। অবশ্য এখন নিশ্চয়ই অনেকেই আসছে, কেউ খেয়াল করবেনা।শম্পাকে সঙ্গে করে গেলে কোনোভাবে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে। মেয়েটা বা বাকী সবাই ঐ বাড়িতেই আছে কিনা কে জানে! -----

    পরিবর্তে পড়তে হবে:

    -----রাই একটু চিন্তা করে। ও কখনো লীনার বাড়ি যায়নি। লীনা ছাড়া আর কারও সঙ্গে আলাপও ছিলনা। এসময় হুট করে ওদের সাথে দেখা করতে যাওয়া কি ঠিক হবে! এক, শম্পাকে সঙ্গে করে গেলে কোনোভাবে মেয়েটার সঙ্গে কথা বলা যেতে পারে।-----
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৯ ১২:১৭428298
  • পরদিন রবিবার। তাও রাই সকাল সকাল উঠে পড়ল। নিত্যকর্মের ফাঁকে লীনার মেয়ে মৌলির সঙ্গে কিভাবে কথা বলা যায় সেটাই ছকতে থাকল। চা টা খেয়ে বারান্দায় গাছে জল দিচ্ছে এমন সময় চোখ পড়ল শম্পার বারান্দার দিকে। শম্পার ছোট বারান্দাটা ওর বড় ব্যালকনি থেকে কোনাকুনি দেখা যায়। চিনির পাশে আর একটা অল্পবয়সী মেয়ে দাঁড়িয়ে। ওরা দুজনে রাইয়ের দিকে পেছন ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে কি সব কথা বলছে, রাই মেয়েটার মুখটা দেখতে পাচ্ছে না কিন্তু কেমন যেন ওর মনে হল ঐ বোধহয় লীনার মেয়ে মৌলি!

    মনে হতেই ও জল দেওয়ার ঝারিটা রেখে ভেতরে গেল, ইন্টারকমে শম্পার নাম্বার ডায়াল করল। ওদিকে তিন চারবার রিং হতে ভারী পুরুষ গলায় শোনা গেল ,
    -"হ্যালো।" শম্পার স্বামী প্রবীর।
    -"প্রবীরদা গুড মর্নিং, শম্পা আছে মানে উঠেছে? আমি রাই বলছি।"
    -"আরে রাইবিনোদিনী, তোমায় আজকাল দেখা যায়না, খুব ব্যস্ত? কি চলছে তোমাদের ডিপার্টমেন্টে, শর্মাজীর তো হয়ে এল, এবার কে আসছে তোমাদের জি এম হয়ে?"
    রাই বিরক্ত হল। এই স্বভাব এখানকার লোকগুলোর। কথা শুরু করলেই অফিসের টপিক এনে হাজির করে। তবু কি করে, ভদ্রতা দেখাতেই হয়।
    -"কি জানি প্রবীরদা। শর্মাজী তো এখনো দু মাস আছেন। তার মধ্যে অনেক কিছু হতে পারে, ইক্যুয়েশন ভাঙা গড়া, এখনই প্রেডিক্ট করা ঠিক হবেনা। আসুন একদিন বাড়ীতে, অনেকদিন আড্ডা হয়না।"
    -"আসব একদিন, সময় পাইনা। আলোকও তো নেই বোধহয়?"
    -"এসে যাবে শুক্রবারে। প্রবীরদা, একটু শম্পাকে দেবেন, খুব দরকার।"
    -"আরে হ্যাঁ হ্যাঁ এই নাও, তোমার নাম শুনে শম্পা হাত বাড়িয়েই আছে ফোন ধরবার জন্য।"
    শম্পার গলা শোনা যায় এবার, রাই বলে,
    -"শম্পা, চিনির সাথে বারান্দায় একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মৌলি কি?"
    -"হ্যাঁ, কাল রাত্রে ওকে নিয়ে এসেছি। আসলে ওদের ফ্ল্যাটটা পুলিশ সীল করে দিয়েছে। দরকারী জিনিসপত্র নিয়ে অতীশদা আর মাসিমা তোমাদের কোম্পানী গেস্টহাউসে গিয়ে আছে। কাল রাতে আমরা গেছিলাম দেখা করতে। তা আমিই বললাম মেয়েটাকে নিয়ে যাই, চিনিও আছে। ওর মনটা একটু অন্যদিকে যাবে। তাছাড়া ওতো চিনিদের স্কুলেই পড়ে, এক জায়গায় গানও শিখতে যায়। সবদিকেই সুবিধে।"
    -"খুব ভাল করেছ শম্পা। এই বয়সে এরকম একটা দুর্ঘটনা দেখল, যত তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হয়ে ওঠে তত ভাল। ও বেশী আপসেট নয় তো?"
    -"না সেরকম কিছু অন্তত বাইরে বোঝা যাচ্ছেনা। আমার সাথে খুশী হয়েই এল। আসলে ওতো বাড়িতে লীনার সাথেই ক্লোজ ছিল, ঠাকুমা বাবার সাথে সেরকম ঘনিষ্ঠ নয়। তাই বোধহয় চলে এল। আমরা ওর সামনে আর এই খুনের প্রসঙ্গ বা লীনার কথা বলছিনা। প্রবীর বারন করেছে।"
    রাই একথায় একটু আমতা আমতা করে বলে,
    -"হ্যাঁ মানে এটা তো খুব ভালই বলেছে প্রবীরদা। তবে কি জান, এখনকার বাচ্চারা অনেক বুদ্ধি ধরে আর তুমি তো বলছিলে মৌলি খুব ম্যাচিওরড ওর বয়েসের তুলনায়। তাই ওর সামনে লীনার নাম একেবারে না নেওয়াটা বিশেষ করে তুমি যখন লীনার এত বন্ধু ছিলে সেটাই আমার মনে হয় বেশী অস্বাভাবিক লাগবে।"
    -"সেটাও তুমি ঠিকই বলছ।"
    শম্পা এরকমই, গসিপটসিপ করে বেড়ায় তবে নিজের বুদ্ধি বিশেষ খাটায় না। রাই সুযোগ বুঝে কথাটা পাড়ে,
    -"যেজন্য ফোন করেছি, আমি একটু মৌলির সাথে কথা বলতে চাই। দু একটা প্রশ্ন আছে অভিনবের মানে পুলিশের, সেগুলো জিজ্ঞেস করব আরকি। তুমি কি একটু ওকে নিয়ে আসবে বা চিনির সঙ্গে পাঠিয়ে দেবে ধর ব্রেকফাস্টের পর?"
    শম্পা যাতে কিছু না ভাবে তাই অভির নামটা জুড়ে দিল।
    -"কিন্তু মৌলি আর চিনি তো এখন গানের স্কুলে যাবে, প্রবীর দিয়ে আসবে দুজনকে। ওরা দুজনেই তো গান পাগল, সপ্তাহে এই একটা দিন ক্লাস থাকে, মিস করতে চাইবেনা।"
    -"ফিরবে কখন?"
    -"মানে আজ আসলে আমাদের একটু দিল্লী যাওয়ার আছে, ওদের ক্লাসের পরে তুলে নিয়ে আমরা চলে যাব। ফিরতে তো সেই বিকেল হয়ে যাবে। আমি ওকে সন্ধ্যের দিকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দেব বরং।"
    রাই একটু হতাশ হল। ও চাইছিল অভির বাড়ি যাওয়ার আগেই মৌলির সঙ্গে কথা বলতে যাতে অভির সঙ্গে ডিসকাস করতে পারে। অবশ্য মৌলির কাছ থেকে কিছু তথ্য যে পাওয়াই যাবে এর কোনো স্থিরতা নেই। যাই হোক, সন্ধ্যায় কথা বলার প্ল্যানই ঠিক রইল।
    অভির কথামত লীনাদের আত্মীয়স্বজনের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতে কেউ বদমাইশ টাইপের আছে কিনা সেরকম কিছু বলতে পারলনা শম্পা।
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৯ ১২:৫৪428299
  • -----------------------------------------------------------
    রবিবারে বাড়ির অনেক কাজ থাকে, কাচাকুচি ঝাড়ামোছা। তবু আজ রান্না নেই। তারই মধ্যে টুপাইকে আঁকা শিখতে নিয়ে যাওয়া। আলোক থাকলে এই কাজটা সেই করে। সব কিছু সেরে তৈরী হতে হতে বেলা একটা বেজে যায়। অভির বাড়ী অবশ্য বেশী দুরে নয়, গাড়িতে মিনিট পনের লাগে। গেটে দুজন পুলিশ পাহারায়, বোধহয় বলা ছিল, ওর গাড়ী দেখে সেলাম ঠুকে গেট খুলে দিল। পুরনো দিনের বাংলো প্যাটার্ণের কোয়ার্টার, রক্ষনাবেক্ষনে সুন্দর আছে। গাড়ী পার্ক করতেই ভেতর থেকে আদি আর রেনু দৌড়ে এল। আদির এই কবারেই টুপাইদির সঙ্গে দোস্তি হয়ে গেছে, দুজনে দৌড়ল বাড়ির পেছনে উঠোনে পোষা খরগোশ আর টিয়াদের কাছে। বারান্দায় চেয়ার পাতা ছিল। রেনু নিয়ে গেল ওকে, সাথে সাথে কাজের মেয়েটা এসে আমের পানা দিয়ে গেল। অভি এখনও আসেনি। এটা সেটা গল্প করতে রইল ওরা দুজনে, বেশ কিছুদিন পরে দেখা, টপিকের অভাব হয়না।

    অভি এল সেই বেলা দুটোর পরে। ততক্ষণে বাচ্চারা খেয়ে নিয়েছে, অভি এলে ওরাও খেতে বসে গেল। খাওয়ার পরে তিনজনে কিছুক্ষন বারান্দায় বসে টুকটাক গল্প করছিল। রেনুকে অভি বোধহয় বলেছিল ও কেন আসছে। একটু পরে রেনু উঠে গেল টুপাই আর আদিকে নিয়ে টিভিতে সিনেমা দেখতে। অভি ওর দিকে তাকাতেই রাই বললে,
    -"আমি এখনো মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে পারিনি রে।"
    ও অভিকে পুরো ব্যাপারটা বলে।
    -"আরে ঠিক আছে, ও পরে বলে নিস কোনো সময়।" অভিনবকে একটু ক্লান্ত দেখায়।
    -"তুই বরং একটু রেস্ট নে, নাহয় ঘুমিয়ে নে। আমি রেনুর কাছে গিয়ে বসি। পরে কথা বলব।"
    -"না, ঘুমোতে লাগবেনা। তার চেয়ে চল ভেতরে গিয়ে বসি আরাম করে।"
    ভেতরে গিয়ে অভি রেনুকে ডেকে একটু চায়ের ব্যবস্থা করতে বলে ডিভানের ওপর গড়িয়ে নেয়। রাই সোফায় বসে। রেনু আসে চা নিয়ে। রেনুকেও ডেকে নেয় ওদের কথার মাঝে। চায়ে চুমুক দিয়ে অভি অতীশের সঙ্গে ওর কি কথা হয়েছে সে বিষয়ে বলে।

    অতীশ ওর আগের স্ত্রীর সম্বন্ধে শম্পা যা বলেছে তা সবই সত্যি বলে স্বীকার করে নিলেও, অস্ট্রেলিয়াতে রিলোকেট করার ব্যাপারটাকে উড়িয়ে দিয়েছে। লীনার যাওয়ার কথা হয়েছিল একটা অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে ওর এন জি ওর থেকে। সে ব্যাপারে কাগজপত্রের কাজও কিছুটা এগিয়েছিল তবে ডেট ঠিক হয়নি। কিন্তু লীনা মৌলিকে নিয়ে যাবে আর পরে অতীশও যাবে, এরকম নাকি কোনো কথাই হয়নি। অতীশ এও বলেছে যে ওর আগের বউ সোমা ঐ দেখাসাক্ষাতের পর থেকে লীনাকেই দু তিনবার ফোন করেছে। অতীশের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ হয়নি। মুম্বাই যাবার আগে অবধি অতীশ সবকিছু স্বাভাবিক দেখে গেছে। লীনাকে কোনো কিছু নিয়ে চিন্তিত বা উদ্বিগ্ন দেখেনি। ওদের মধ্যে ভালই সম্পর্ক ছিল, তবে অতীশ বরাবরই চুপচাপ আর লীনা একটু হুল্লোড়ে তাই বাইরে থেকে অনেকসময় অন্যরকম মনে হয়। ওদের বছর দশ বিয়ে হয়েছে, লীনার নিজের কোনো সন্তান নেই বলে ওকে কখনো দু:খ করতে দেখেনি কেউ, মৌলি লীনারই মেয়ে। মৌলিকে নিয়েই ওর জগত ছিল।
    -"বুঝলি অতীশের কথাতে খটকাটা এই অস্ট্রেলিয়া যাওয়া নিয়ে। লীনা শম্পাকে একরকম বলল, অতীশ আবার সেটা একেবারেই উড়িয়ে দিল। তবে এর সাথে লীনার মৃত্যুর তেমন সম্পর্ক আছে বলে মনে হচ্ছেনা। আমি রেকর্ড চেক করতে বলেছি। আজ রবিবার তাই অস্ট্রেলিয়া এমব্যাসীর ওখানে বা লীনার এন জিও অফিসে কাউকে পাওয়া যাবেনা। কাল জানা যাবে এই অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার চক্করটা কি!
    অতীশের মায়ের সাথেও কথা বলেছি। উনিই ইন ফ্যাক্ট লীনাকে শেষ জীবিত দেখেছেন, খুনী ছাড়া। সেদিন ওদের বাড়িতে সেরকম কেউ আসার ছিলনা। কদিন ধরে ওয়াশিং মেশিন খারাপ পড়েছিল। সেদিনই সকালে মিস্ত্রী এসে ঠিক করে গেছিল। লীনা দুপুরে ফেরে অফিস থেকে। অনেক কাচাকুচি জমে গেছিল, তাই বিকেলে বেরোয়নি। নাহলে বিকেলে উনি বেরোলে লীনা হয় ওনার সাথেই যেত নয় এদিক ওদিক কারো ওখান থেকে একটু আড্ডা মেরে আসত।
    উনি এও বললেন যে নেহাত পরিচিত না হলে বা সেরকম কোনো ইম্পর্ট্যান্ট কেউ না হলে ওরা মানে উনি নিজে বা লীনা সাধারনত কাউকে ভেতরে বসিয়ে চা দিয়ে আপ্যায়ন করতে যাবেননা।"

    রাই শুনছিল সব কথা, অতীশ মিথ্যে বলেছে বলে মনে হয়না। অতিরঞ্জন টা শম্পার দিক থেকেই সম্ভব। তবু একটু কিন্তু থেকে যায়, শম্পার বানিয়ে বলার ক্ষমতার সীমা সম্পর্কে রাইয়ের সন্দেহ আছে। লীনার এই সপরিবারে বাইরে সেটল হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ও কিছুতো শুনেছে নির্ঘাত। ওকেই জিজ্ঞাসা করতে হবে। হঠাৎ কি মনে হতে অভি রাইকে বলে,
    -"ও তোকে বলা হয়নি আমি আজ দুজনকে তোর কথামত ঐ সিকিউরিটীর এ¾ট্রী রেজিস্টার ধরে ধরে চেক করতে লাগিয়েছিলাম ওখানে ওদের অয়াপার্টমেন্টের গেটে বসে। বিকেল চারটার পর থেকে পাঁচটা এ¾ট্রী পাওয়া গেছে যারা ক্যুরিয়রের লোক। এর মধ্যে তিনজন যা ফ্ল্যাট নাম্বার লিখেছে সে ফ্ল্যাটে আদৌ যায়নি। এই প্রাথমিক রিপোর্ট আমি পেয়েছি ওদের কাছ থেকে ফোনে। একজন অফিসার এই লাইনে ডিটেলস খোঁজ করে আমাকে সন্ধ্যায় রিপোর্ট দেবে।
    তবে বলতেই হবে এটা তোর একেবারে দারুন একটা ডিডাকশন। আমার তো এখন বেশ আশা জাগছে যে অন্তত খুনী কে সেটার একটা আন্দাজ এবার পাব।"

    রাই খুব খুশী হল। রেনু এতক্ষন সব আধাখ্যাঁচড়া শুনেছিল, রাই ওকে পুরো ব্যাপারটা মোটামুটি বোঝাতে লাগল আর অভি এইফাঁকে আলতো করে দিবানিদ্রা দিয়ে দিল।
    বাড়ী ফিরতে সন্ধ্যে হয়ে গেল। টুপাইকে আদি ছাড়তে চাইছিলনা। রেনুও জোরজার করছিল একেবারে ডিনার সেরে যাওয়ার জন্য। এমনিতে হয়ত রাই আপত্তি করতনা কিন্তু সন্ধ্যেবেলায় মৌলির সঙ্গে কথা বলার ছিল। কাল থেকে আবার অফিস, স্কুল সব শুরু হয়ে যাবে, এমন সুযোগ হবে কিনা কে জানে। ও তাই বিকেলের চা নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়ল। অভিও বেরোল নিজের অফিসের দিকে।
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৭:৩১428300
  • ------------------------------------------------------------------
    সাতটা নাগাদ শম্পার মেয়ে চিনির সাথে মৌলি এল। মেয়েটাকে আগেও দেখেছে রাই লীনার সাথে তবে খুব ভাল করে লক্ষ্য করেনি। টুপাইয়েরই বয়সী হবে তবে একটু শান্ত গোছের। রাই ওদের দুজনকে টুপাইয়ের ঘরে পাঠাল। কম্পিউটার খোলা ছিল, ওরা নতুন গেম টেম দেখতে থাকল। খেলার মাঝে রাই গিয়ে কেক মিষ্টি দিয়ে এল।
    এইসময় শম্পার ফোন এল। শম্পার কৌতূহল প্রচুর, কেসের কি হচ্ছে না হচ্ছে। রাই ওকে জানাল অভির অতীশের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা। অতীশ অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ব্যাপারটা অস্বীকার করেছে শুনে শম্পা একটু ঘাবড়ে গেল।
    -"রাই, আমি কি জানি? আমাকে লীনা যা বলেছিল আমি তাই বলেছি।"
    রাই ওকে আশ্বস্ত করল। এরকম তো হতেই পারে, যে লীনা ভেবে রেখেছিল পরে অতীশকে ওর কাছে যেতে রাজী করিয়ে নেবে আর তখনই তাকে বলবে।

    ফোন রেখে রাই মৌলিকে ডেকে নিল। শম্পা বোধহয় ওকে বলে রেখেছিল, তাই মেয়েটা অবাক হলনা। রাই ওকে সাথে নিয়ে ড্রইংরুমে গিয়ে বসল।
    ওর একটু নার্ভাস লাগছিল, তবু সেটা কাটিয়ে বলল,
    -"মৌলি, তুমি জান তোমার মাকে কে মেরেছে, অপরাধীকে খুঁজে বার করার ভার আমার এক বন্ধুর ওপরে এসেছে। তাই সেই আঙ্কলের কথামত আমি তোমাকে কয়েকটা কথা জিজ্ঞেস করব। তুমি যা জান সেগুলো ঠিক ঠিক বলবে আমাকে, ঠিক আছে?"

    ড্রইংরুমে শুধু দুই কোণে দুটো সাইড ল্যাম্প জ্বালানো ছিল, বড় টিউব নেভানো ছিল। আলো আঁধারিতে রাইয়ের মনে হল মৌলির চোখটা একটু ছলছলিয়ে উঠল লীনার নাম শুনে। ইস, এত ছোট্ট মেয়ে, এরকম একটা ঘটনা ওর জীবনে না ঘটলেই ভাল হত। কিন্তু নিয়তিকে কে আটকাতে পারে! তবে মেয়েটা বুঝদার আছে, চোখদুটো মেলে ওর দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে ঘাড় নেড়ে ওর কথায় সম্মতি জানাল। রাই শুরু করল।
    -"সোনা, ঐদিন তুমি কখন পড়তে গেছিলে, কটার সময়?"
    -"এই সিক্স ও ক্লক হবে।"
    -"তুমি কি একাই পড়তে যেতে, মা ছাড়তে যেত না?"
    -"না:। আন্টী তো কাছেই থাকে, রোড ক্রস করতে হয়না। তাই মা যেতনা।"
    -"তুমি কি রোজই ঐ সময় যাও?"
    -"হ্যাঁ। তবে রোজ নয়, ফ্রাইডে আর মানডে।"
    -"ঠাম্মা কি তোমার পরে বেরিয়েছিল?"
    -"হ্যাঁ, আমি যখন যাই, ঠাম্মা আর মা বাড়িতে ছিল।"
    -"তোমার সঙ্গে তো মায়ের খুব ভাব ছিল। তোমায় মা কি কিছু বলেছিল? ধর কেউ মাকে বিরক্ত করছে বা ধমকাচ্ছে কিনা, মায়ের অফিসে কোনো গন্ডগোল হচ্ছে কিনা এধরনের কিছু?"
    মৌলি একটু ভাবল। তারপরে বলল,
    - "না সেসব কিছু নয়। তবে মায়ের অফিসে কিছু না কিছু হত প্রায়ই। মা কিছু মজার হলে আমায় বলত, অন্য কিছু বলত না।"
    -"তোমার মা অফিস থেকে অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছিল, তুমি জান?"
    -"হ্যাঁ, জানি।"
    -"মা তোমাকেও নিয়ে যাবে বলেছিল?"
    -"কৈ না তো।"
    -"নিয়ে গেলে তুমি যেতে, বাবা ঠাম্মা দাদুকে ছেড়ে?"
    মৌলি এ কথার সরাসরি উত্তর দেয় না, চুপ করে থাকে।
    এবার রাই আসল প্রসঙ্গে আসে,
    -"মৌলি, তোমার আসল মায়ের সঙ্গে তোমার দেখা হয়েছিল কলকাতায়?"
    মৌলি একটুও কোনো ইমোশন না দেখিয়ে, আসল মা কথাটাতে কোনো আপত্তি না করে ঘাড় নাড়ল,
    -"হ্যাঁ, হয়েছিল।"
    -"তোমার ঐ মা তোমাকে বা তোমার বাবাকে ফোনটোন করে?"
    -"হ্যাঁ, মায়ের মোবাইলে ফোন করত, মা আমাকে দিত।"
    তাহলে অতীশের কথাই ঠিক। সোমার সাথে লীনারই যোগাযোগ ছিল।
    -"কি বলেছে সেই মা তোমাকে?"
    -"বেশী কিছুনা। ভাল করে স্টাডি করতে। গান কেমন চলছে এসব নিয়ে কথা।"
    -"আর তোমার বাবার সঙ্গে কথা বলেন না?"
    -"জানিনা তো। আমাকে তো মা ফোন দিত।"
    -"সেই কলকাতার পর আর দেখা হয়নি তাঁর সঙ্গে? শেষ কথা হয়েছে কবে? উনি জানতেন তোমার মায়ের বাইরে যাবার কথা?"
    -"না, আর দেখা হয়নি। এখানে তো ঠাম্মা দাদু আছে। মা বলত ওরা পছন্দ করবেনা তাই এখানে আসত না। মাসে একবার ফোন করত। লাস্ট স্যাটারডে বোধহয় ফোন এসেছিল। মায়ের সাথে কি কথা হত আমি অত শুনতাম না।"
    -"আচ্ছা মৌলি পরশুর কথা বল তো মনে করে। সেদিন কে কে এসেছিল তোমাদের বাড়িতে? সন্ধ্যেবেলায় কারোর কি আসবার কথা ছিল, তুমি জান?"
    -"আমি তো সকালে স্কুলে গেছিলাম। দুপুরে আমার বন্ধুরা এসেছিল, একসাথে ম্যাথস করব বলে। আমার ঘরেই ছিলাম। কেউ এসেছিল কিনা দেখিনি। তারপরে আমরা একসাথে পড়তে চলে যাই।"
    -"তোমার বন্ধুরা, স্কুলের বন্ধু? কে কে ছিল?"
    -"হ্যাঁ, স্কুলের। আয়ুষ আর মেঘা।"
    -"ওরা কি তোমাদের বাড়ির কাছেই থাকে না দুরে?"
    -"মেঘা তো এই পাশে আনন্দধামে থাকে। আয়ুষ সেক্টর চল্লিশে থাকে। এমনিতে আয়ুষের মাম্মী সন্ধ্যেবেলায় ওকে নিতে আসে। ঐদিন ওর মাম্মী ছিল না বলে ওর পাপা এসেছিল। আঙ্কল আন্টীর সোস্যাইটি চিনতনা কিন্তু আমাদেরটা চিনত, এর আগে এসেছে আমার বার্থডে তে, আয়ুষকে নিতে। তাই আঙ্কল আমাদের গেট থেকে মাকে ফোন করে আন্টীর বাড়ি জেনে নেয়।"
    রাই একটু চমকালো। মৌলিরা ছটা থেকে পড়তে গেছিল, এই আয়ুষের বাবা ভদ্রলোক যখন ফোন করেছে লীনা জীবিত। অভিদের হিসেব অনুযায়ী লীনার মৃত্যুর সময় সাতটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে। ভদ্রলোক কখন ফোন করেছিলেন, এক্ষেত্রে উনি তো একজন ভাইটাল উইটনেস। সে মৌলিকে এ নিয়ে কিছু বলেনা, শুধু বলে,
    -"মৌলি, তোমরা কটা অবধি পড়েছিলে সেদিন?"
    -"আটটা অবধি হবে।"
    -"তুমি কি তাহলে ঠাম্মার আগে বাড়ী ফিরেছিলে?"

    মৌলি একটু আমতা আমতা করে।
    -"না আন্টী। পড়ার পরে আঙ্কল শপিং কমপ্লেক্স থেকে আমাদের তিনজনকে আইসক্রীম কিনে দিল। তারপরে আমরা তিনজন গিয়ে পার্কে বসলাম কিছুক্ষণ। আমি যখন বাড়ি পৌঁছলাম, ঠাম্মা তখন এসে গেছে, আমাদের দরজার সামনে অনেক লোক।"
    এই পর্যন্ত বলে চুপ করে যায়। রাই কথাটা ঘুরিয়ে জিজ্ঞেস করে,
    -"মেঘা আনন্দধামে কোন ফ্ল্যাটে থাকেরে? আর আয়ুষের অ্যাড্রেসটা জানলে একটু বলতো মা।"
    -"ফোরটীন। আর আয়ুষ দের বাড়ী চল্লিশের মার্কেট টা আছে না, তার পেছনে, মাদার ডেয়ারীর পাশেই। নাম্বারটা জানিনা।"
    -"নাম কি আয়ুষের পাপার?"
    -"জানিনা তো।"
    -"আয়ুষের সারনেম জানিস?"
    -"হ্যাঁ, সায়গল।"

    রাই আর কিছু জিজ্ঞাসা না করে মৌলিকে ভেতরে টুপাইদের কাছে পাঠিয়ে দিল। অভিদের উচিত ছিল মৌলিকে আগেই জিজ্ঞাসাবাদ করা। এই মি: সায়গলের ব্যাপারটা ওর বেশ কনফিউজিং লাগছে। অভিকে মোবাইলে ধরতে গিয়েও কি ভেবে ফোন করলনা। বাচ্চাগুলো চলে যাক আগে। একটু পরে শম্পা এসে ওদের নিয়ে গেল।
    টুপাইয়েরও ঘুম পেয়ে গেছিল। ওরা খেয়ে নিল। টুপাইকে বিছানা করে শুইয়ে শম্পা অন্য ঘরে এসে অভিকে ফোন করতে যাবে তখনই আলোকের ফোন এল। আলোককে ও লীনার খবরটা হাল্কা করে বলেছিল, এত কান্ড জানায় নি। কথা বলতে বলতে বেশ দেরী হয়ে গেল। আর তখনই অভির ফোন এল। রাই তাকে সায়গলের কথা বলতেই অভি পুরো এক্সাইটেড। সব কথা শুনতে শুনতেই দ্রুত বোধহয় কর্তব্য স্থির করে ফেলল।
    -"আর একবার বলতো ভদ্রলোকের বাড়িটার ডিরেকশন। এখন দশটা বাজে। আমার এখান থেকে বেশীক্ষণ লাগবে না। আমি আজই ঐ সায়গলের সঙ্গে কথা বলতে চাই।"
    রাই আবার ওকে মৌলির বর্ণনামত সায়গলের বাড়িটা বুঝিয়ে দিল। অভি প্রায় সাথে সাথেই ফোন রেখে দিল কোনো বিদায়ভাষণ না করেই।
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০১ ডিসেম্বর ২০০৯ ১৭:৪৪428301
  • -------------------------------------------------------------------
    খুব ভোরে ঘুম ভেঙে গেল রাইয়ের। মনে পড়ল আজ অফিস আছে, টুপাইয়ের স্কুলও আছে। উঠে কাজকম্ম সারতে সারতেই টুপাই উঠে পড়ল। ওর স্কুল বাস সাতটায় আসে। গেটের সামনেই বাস আসে বলে রাই আর ওকে তুলতে নীচে যায়না, বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। টুপাই বেরিয়ে যাওয়ার পরে একটু ফাঁকা, কাজের মেয়ে আটটায় আসে, ও অফিস বেরোয় নটায়। চায়ের কাপ আর কাগজ নিয়ে বাইরের ঘরে বসে। একটু পরে ফোনটা বেজে ওঠে, অভির ফোন। রাই একটু অবাক হয়, কি হল আবার এত সকালে। ওর গলার স্বরে সেটা বুঝতে পেরে অভি একটু অপ্রস্তুত হয় বোধহয়,
    -"না মানে এমনিই ফোন করলাম। টুপাই চলে গেছে স্কুলে?"
    রাই বুঝতে পারে অভি হয়ত কালকের ব্যাপার নিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে। অফিসে ফোন করাটা ঠিক হবেনা বলে এখন করছে। ও তাই একটু উৎসাহেই বলে ওঠে,
    -"হ্যাঁ চলে গেছে। অভি, কাল কি হল রে? দেখা হল আয়ুষের বাবার সঙ্গে?"

    অভি এই কথাতে স্বাভাবিক হয়ে গেল, গড়গড় করে হেমন্ত সায়গলের কাছে কি জেনেছে বলে গেল। সায়গল বেশ ভদ্রলোক, ছিমছাম পরিবার। দিল্লীতে ওর ফ্যামিলি বিজনেস।ওদের ছেলে আয়ুষ মৌলির ভাল বন্ধু, স্কুলে একই সেকশনে আছে। প্রায় বছরখানেক হল ওরা একই জায়গায় ট্যুইশন পড়তে যায়। আয়ুষ পড়তে একাই যায় রিক্সায়। ফেরার সময় অন্ধকার হয়ে যায় বলে ওর মা গাড়ি নিয়ে আনতে যান। সাধারনত বাড়ির সব ব্যাপার ও আয়ুষের সব কিছু ওঁর স্ত্রীই দেখে। তবে রবিবারটার হলে উনিও চেষ্টা করেন আয়ুষের সাথে সময় কাটাতে। এভাবেই মাস কয়েক আগে এক রবিবার মৌলির বার্থডেতে উনি আয়ুষকে ছাড়তে আর নিতে গিয়েছিলেন ওদের বাড়ি। তখন লীনা আর অতীশ দুজনের সঙ্গেই অল্প পরিচয় হয়।

    আয়ুষের মাকে ওদিন দুপুরেই লখনৌ যেতে হয় তার মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে। তাই হেমন্ত ঠিক করেন তাড়াতাড়ি ফিরে উনিই আয়ুষকে নিয়ে আসবেন। সেইমত উনি পৌঁছন ঐ সেক্টরে। পৌঁছে খেয়াল হয় যে উনি টীচারের সোস্যাইটীর নামটা জেনে নেননি। আর ওনার স্ত্রীরও বোধহয় তাড়াহুড়োতে খেয়াল হয়নি যে উনি ঠিকানা নাও জানতে পারেন। এদিকে স্ত্রী রাস্তায়, তখনো হয়ত পৌঁছননি, উনি তাই তাকে ডিসটার্ব করতে চাননি। বুদ্ধি করে মৌলিদের বাড়িটা উনি চিনে বার করেন। উনি জানতেন টীচারের বাড়ি মৌলিদের বাড়ির কাছেই। ওখানে রাস্তার ধারে গাড়ি পার্ক করে মৌলিদের সোস্যাইটীর গেটে এসে ইন্টারকমে ওদের বাড়ি ফোন করেন। সময় টা খুব সঠিক বলতে না পারলেও সাড়ে সাতটার কাছাকাছি বলছেন। ফোন লীনাই তোলে এবং টীচারের বাড়ির ঠিকানা বলে দেয়। একদমই কাছে ওখান থেকে। এর বেশী কিছু কথা হয়না, হেমন্ত ধন্যবাদ জানিয়ে ফোন রেখে দেয়, তারপরে টীচারের সোস্যাইটীতে গিয়ে ওনার বাড়িতে ফোন করে জানিয়ে দেন যে উনি গাড়িতে অপেক্ষা করছেন। বাচ্চারা বেরিয়ে এলে উনি ওদের সবাইকে শপিং সেন্টারের সামনের ঠেলা থেকে আইসক্রীম কিনে দেন। ওরা পার্কে যেতে চায় আইসক্রীম নিয়ে। ওদের রেখে উনি কিছুক্ষণের জন্য পাশের সেক্টরের শিব মন্দিরে যান। আধ ঘন্টা পরে ফিরে এসে আয়ুষকে নিয়ে বাড়ি যান।

    ডাক্তারের রিপোর্ট অনুযায়ী লীনার মৃত্যু হয় সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটার মধ্যে। হেমন্তের কথামত লীনা সাড়ে সাতটার আশেপাশে বেঁচে ছিল। হয়ত এই ফোনের পরে পরেই বেহুঁশ করা হয়েছে লীনাকে, ফোনের সময় খুনী সেখানেই ছিল!!

    হেমন্ত সায়গলের ব্যাপারটা ছাড়াও অভি আরও জানায় যে ওর লোক ঐ পাঁচজন ক্যুরিয়রের লোকেদের খোঁজখবর করেছে। কোম্পানী গুলো সবই ঠিকঠাক,তবে মামুলী। লোকগুলো কেউই বেশীদিন কাজ করছে না, মাস ছয়েক ম্যাক্সিমাম। আসলে এসব জায়গায় মাইনে কম খাটনি বেশী তাই সবসময়ই লোক ছাড়ছে ঢুকছে, বেশীদিন কেউ থাকেনা একজায়গায়। সবার সাথে দেখা হয়েছে, শুধু একটি লোক ছাড়া। তার বাবা অসুস্থ তাই সেদিন ডেলিভারী দিয়েই গ্রামে রওনা হয়ে যাবে বলে ছুটি নিয়ে গেছে। লোকটির নাম ব্রিজনাথ, মাসখানেক এসেছে ঐ কোম্পানীতে। সে ডেলিভারী ঠিকঠাক করেছে,যে ফ্ল্যাটে বলেছে সেই ফ্ল্যাটেই গেছে। তার ঠিকানায় অভির লোক গিয়ে দেখেছে ঘর বন্ধ, পাশের লোকে বলেছে গ্রামে গেছে। গ্রাম কোথায় কেউ জানেনা। তবে লোকটির ছবি পাওয়া গেছে, ওর অফিস থেকে। বিভিন্ন থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে ছবি।

    বাকী চারজনকে জিজ্ঞেস করে সেরকম কিছু পাওয়া যায়নি। তিনজন যারা যে ফ্ল্যাটের নাম দিয়েছে অথচ সেখানে যায়নি, তাদের বক্তব্য অনুযায়ী ওদের কাছে অনেক চিঠি ছিল, ব্যাঙ্কের। ওপরের তলা থেকে শুরু করেছে। ঘুরে ঘুরে যখন যে ফ্ল্যাটের নাম্বার গেটে লিখিয়েছে সেখানে পৌঁছেছে তখন সে বাড়ির লোক বেরিয়ে গেছে। এরকম নাকি হয়েই থাকে মাঝে মাঝে।

    ফোন রাখার আগে অভি জানাল যে সেদিন সে লীনার এনজিও অফিসে যাবে। এন জি ওর নাম হল "দিশা", বয়স্কদের নিয়ে কাজ করে। অস্ট্রেলিয়ার একটি সংস্থার থেকে ওরা এড পায়।

  • hukomukho | 76.111.94.232 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ০৭:০০428302
  • অসাধারণ হচ্ছে গল্পটা , এখনও পর্যন্ত কোন খুঁত নেই, পুরো প্রফেসনাল স্ট্যান্ডার্ড। কিন্তু পাঠকদের এত অপেক্ষা করালে খেলব না। Just Kidding
    দারুণ হচ্ছে শ্রাবনী, তাড়াতাড়ি পরের কিস্তি নামান, অপেক্ষায় রইলাম।
  • san | 123.201.53.3 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:১৩428303
  • দারুণ হচ্ছে !
  • Tim | 71.62.121.158 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ১০:২৩428304
  • খুব ভালো হচ্ছে । :-)
  • shrabani | 124.30.233.102 | ০২ ডিসেম্বর ২০০৯ ১১:৪৮428306
  • ----------------------------------------------------------------------
    অফিসে সোমবার এমনিতেই প্রচুর ব্যস্ততার মধ্যে কাটে রাইয়ের। দুদিনের ছুটি মানে দুদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যু জমা হতে থাকে। সারাদিন মিটিং হেনা তেনা তেই কেটে যায়। লাঞ্চে এসে এক ফাঁকে টুপাইকে বাস থেকে নামিয়ে, দুজনে খেয়ে দেয়ে ও আবার অফিসে যায়। সন্ধ্যেতে ফিরতেও বেশ দেরী হয়ে গেল। টুপাই বার কয়েক ফোন করে ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকল। মা না এলে ও নীচে খেলতে যেতে পায়না, রাইয়ের মানা আছে। সাড়ে সাতটা নাগাদ ফিরল যখন মেয়ের মুখ হাঁড়ি। তবে ও এত ক্লান্ত ছিল যে সেটা নিয়ে মাথা ঘামাতে ইচ্ছে হলনা। রান্নার মেয়েটাকে চা করতে বলে স্নান করতে ঢুকল। স্নান করে বেরিয়েছে শম্পা এল।

    -"জান, সোমা এসেছে, মৌলির মা। অতীশদার বাবাও এসে গেছে। মনে হয় গ্রামে খবর গেছিল সেখান থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়েছে, সোমাও জেনেছে। ওর বাপের বাড়ি তো ওখান থেকে বেশী দুরে নয়। অতীশদা ফোন করেছিল প্রবীরকে অফিসে, মৌলি স্কুল থেকে ফিরলে আমি সঙ্গে করে ছেড়ে এলাম গেস্ট হাউসে। ওখানেই আছে সোমাও। অতীশদার বাবা মা তো গজগজ করছে, কিন্তু বাইরে খুব কিছু বলতে পারছেনা, জানাজানির ভয়ে।"
    -"সোমার এখনকার হাজব্যান্ড আসেনি?"
    -"না: একাই এসেছে। "
    -"এত শীগগির এল কি করে?"
    -"তাই তো, শুনলাম ফ্লাইটে এসেছে। গরজটা দ্যাখ!" শম্পা বেশ অসন্তুষ্ট।
    -"আমি মৌলিকে নিয়ে যেতে অতীশদাই ওর রুমে গিয়ে ওকে ডেকে আনল। তবে খুব সুন্দর দেখতে কিন্তু এখনও। মৌলি ওর রূপ পায়নি।"
    -"মৌলির কি রিয়্যাকশন মাকে দেখে।"
    -"কি জানি, একটু জড়সড় মত হয়ে ছিল। এখানে তো চিনির সাথে বেশ স্বাভাবিক খেলাধুলা করছিল। ওখানে গিয়েই আবার সেই চুপচাপ। কাল সকালে থানা থেকে বডি নিয়ে সৎকার করতে যাবে। প্রবীর কাল অফিস যাবেনা। ওদের তো আত্মীয়স্বজন বলতে ঐ এক মামাতো ভাই দিল্লীতে থাকে। অতীশদার বন্ধুবান্ধবও তো সেরকম কেউ নেই। আমরা সবই লীনার পরিচিত ছিলাম। তবু ওরই মধ্যে দেখতাম প্রবীরের সঙ্গেই একটু আধটু কথা ছিল অতীশদার, প্রবীর তো কেমন নাছোড়বান্দা জানই।"
    রাইয়ের আর ইচ্ছে করছিলনা শম্পার সঙ্গে এ নিয়ে বেশী গসিপ করতে। দু এক কথার পরেই ওকে হাই তুলতে দেখে শম্পা উঠল,
    -"তুমি খুব টায়ার্ড বোধহয় না? অফিস থেকে ফিরলেও তো দেরীতে। আমি আজ উঠি।"
    -"সরি শম্পা। আজ আর পারছিনা। আজ তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়ব। কাল পারলে সন্ধ্যেয় তোমার ওখানে যাব একবার।"

    শম্পা একথায় খুব খুশী হয়ে বিদায় নিল। রান্না যতক্ষণ হচ্ছিল, ও টুপাইকে নিয়ে বসল তার হোমওয়ার্ক দেখতে। মেয়েটা চলে যাবার পর ওরা খেয়ে টেয়ে বিছানায়। টুপাই কি যেন দেখছে টিভিতে। রাই অভিকে ফোন লাগাল। অতীশের আগের বউ আসার ব্যাপারটা জানাতে হবে। অভির ফোন বিজি। কয়েকবার চেষ্টা করে শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে আলোটালো নিভিয়ে টিভি অফ করে মা মেয়ে দুজনেই শুয়ে পড়ল। ঘুমটা সবে ধরেছে মোবাইলটা বাজতে শুরু করল। প্রথম চটকায় ঘুম ভেঙে রাই ভাবল ভোরের অ্যালার্ম বাজছে বোধহয়। তারপরে খেয়াল হল, না: মোবাইল, বেডসাইডের ল্যাম্প জ্বালিয়ে পাশ থেকে তড়িঘড়ি ফোনটা তুলে নিল। অভির ফোন।
    -"কিরে, তোর মিসড কল দেখলাম।"
    -"হ্যাঁ সে তো অনেকক্ষণ আগে। এতক্ষণে তোর সময় হল।"
    -"অনেকক্ষণ কোথায়, একঘন্টাও হয়নি। যাক কেন ফোন করেছিলি?"
    হঠাৎ ঘুম ভাঙানোয় আচ্ছন্ন ভাবটা কাটেনি, রাই মনে করার চেষ্টা করে কেন ফোন করেছিল অভিকে। অভি আবার বলে,
    -"কি হল রে। কিছু জানতে পারলি নাকি লীনার কেসটার।"
    লীনা নামটা শুনেই রাইয়ের মনে পড়ে গেল।
    -"অভি, অতীশের আগের বউ সোমা এসেছে।"
    অভি একটু ভাবল,
    -"হুঁ, খবর পেল কোথায়?"
    রাই শম্পার কাছে যা শুনেছে বলল। অভি বলল,
    -"কাল সকালে তো ওরা দাহটাহ করতে যাবে। বিকেলের দিকে একবার যাব ঐ ভদ্রমহিলার সাথে কথা বলে দেখতে। তুই যাবি?"
    রাই প্রস্তাবটায় একটু চমকাল। ওতো কেসটাতে দুরে থেকেই অভিকে হেল্প করবে ভেবেছিল। একেবারে ভেতরে ঢুকে পড়া কি ঠিক হবে? চরিত্র গুলোকে একবার সামনে থেকে দেখবার লোভও হচ্ছে। তাই বলল,
    -"আমি? যেতে তো ইচ্ছে করছে, কিন্তু কখন যাবি বল?"
    -"কাল আমাকে একটু বাইরে যেতে হবে অন্য একটা ব্যাপারে। হাজারটা ঝামেলা। ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে যাবে। এই ধর আটটা নাগাদ যাব। তোর ওখানে এসে তোকে নিয়েই যাব।"
    -"বেশ। তুই আজ লীনার অফিসে গেছিলি, কি হল?"
    -" না রে আমি যেতে পারিনি, বড় সাহেবের ডাক এসেছিল। আমাদের অফিসার ভার্মা গেছিল। যে ভদ্রমহিলা ওদের হেড, উনি ছিলেননা, কলকাতায় গেছেন। ওদের অফিসে চারপাঁচজন যারা বসে, তাদের ইন্টারভিউ নিয়েছে। সবাই বলেছে একই কথা, লীনা খুবই ভাল ছিল, কোনো শত্রু ছিলনা। ওর সহকর্মী একজন শুধু অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ব্যাপারটা জানত। সেই ওর কাগজপত্র প্রসেস করছিল। তবে এটা খুবই স্বাভাবিক। ওদের মধ্যে প্রায় সবাই এরকম গেছে আগে। লীনা নতুন তাই প্রথম যাচ্ছে। তবে লীনার একটু বেশীদিন থাকার কথা হচ্ছিল। আসলে কেউই বেশীদিন পরিবার ছেড়ে থাকতে রাজী হয়না। লীনা কেন জানিনা চাইছিল বেশীদিন থাকতে।
    ওদের ফিল্ডে যারা কাজকর্ম করে তাদেরও দু একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সেরকম কিছুই জানা যায়নি। লীনা অফিসেই কাজ করত আর ওদের একটা সেন্টার আছে সেখানেও যেত। সেন্টারটায় আমার লোক কাল যাবে।"
    -"সেন্টার? কি হয় সেখানে?"
    -"ঐ বয়স্কদের থাকার ব্যবস্থা, তবে বেশী সীট নেই। আসলে ওটা ঠিক হোম নয়, যাদের ওরা উদ্ধার করে তাদের কোনো হোমে পাঠাবার আগে অবধি থাকার জন্য। তবে সেখানে একটা পুরোদস্তুর ক্লিনিক চালায় গরীব বৃদ্ধবৃদ্ধাদের জন্য। বিভিন্ন ডাক্তাররা বিভিন্ন দিনে বিনাপয়সায় অথবা খুব কম পয়সা নিয়ে রুগী দেখে দেয়। ওষুধ বিষুধ, ও অন্যান্য চিকিৎসার ব্যবস্থা সংস্থা করে।"
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন