এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • টইপত্তর  বইপত্তর  জীবনানন্দ

  • জীবনানন্দ ও সঞ্জয় ভট্টাচার্য: ভূমেন্দ্র গুহ

    I
    বইপত্তর | ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ | ৫৩৮৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 59.93.223.65 | ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ২১:৫৩403816
  • *ভট্টাচার্য (ডানদিকে বাংলা আসে না)
  • I | 59.93.223.65 | ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:০৩403923
  • ভূমেন্দ্র গুহকে আলাপ করিয়ে দেবার কি দরকার আছে? কবি , প্রবন্ধলেখক ও জীবনানন্দ-গবেষক, অনেকখানি এঁর কারণেই আমরা নানান অপ্রকাশিত জীবনানন্দ ছাপার অক্ষরে দেখতে পেয়েছি। এবং হ্যা, ইনি ডাক্তারও বটে। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কার্ডিওথোরাসিক সার্জারীর বিভাগীয় প্রধান ছিলেন, এখন অবসৃত।

  • d | 117.195.34.109 | ২৬ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:৩৩403934
  • তারপর?
  • I | 59.93.209.113 | ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:০১403945
  • বইটি মুখ্যত: জীবনানন্দ নিয়ে বিভিন্ন লেখালিখির একটি সংকলন। সঞ্জয় ভট্টাচার্য কিছুটা গৌণ, যদিও সংকলনের প্রথম লেখাটি শুরু হয়েছে তাঁকে দিয়ে, এবং দ্বিতীয় লেখা-যদিও জীবনানন্দময়-সঞ্জয়বাবুর উপস্থিতি সেখানে অপ্রধান নয়, একথা বলা যেতে পারে।
    মোট প্রবন্ধসংখ্যা বারো-পাঁচভাগে ভাগ করে যার মধ্যে কিছু সাযুজ্য আনার চেষ্টা হয়েছে; সে চেষ্টাকে আমি সফল বলে মনে করি। প্রসঙ্গত: , লেখাগুলি দীর্ঘ দশ বছরের কালসীমায় ছড়ানো-ছিটোনো, তাদের এক মলাটের মধ্যে আনার প্রয়াসে গাঙচিল আমাদের সালাম পাবেন। এই ছোট প্রকাশন সংস্থাটি বাংলা বই প্রকাশনা জগতের পাঁচমাথার মোড়ে যে এক ভিনকলমী ছায়াপাদপ আবাদ করেছেন, তা আজ আর স্বীকার না করে উপায় নেই।
  • I | 59.93.209.113 | ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:১৫403956
  • লেখালিখিগুলি নামানুসারে এইরকম :

    .
    সঞ্জয় ভট্টাচার্য, জীবনানন্দ ও পূর্বাশা
    জীবনানন্দস্মৃতি ময়ুখ'এর গল্প

    .
    জীবনানন্দ'র পান্ডুলিপি-সংসর্গ

    .
    অস্পষ্ট রহস্যময় বড়ো পৃথিবী, তার অধিবাসী
    জীবনানন্দ দাশ: খ্রি ২০০৫
    প্রসঙ্গকথা: জীবনানন্দ'র খ্রি ১৯৩৭-৩৮'এর কবিতা

    .
    জীবনানন্দ'র ডায়েরি : প্রারম্ভিক পাঠ
    জীবনানন্দ'র অপ্রকাশিত "লিটারারি নোটস'(ডায়েরি) : উদ্ধার ও ভাষ্য

    .
    সম্মুখ নাবিকী
  • I | 59.93.209.113 | ২৭ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:৩২403967
  • লেখাগুলি খানিকটা স্মৃতিকথা, খানিকটা বিশ্লেষণ; কোথাও-কোথাও তা পরিষ্কার লাইনটানা, কোথাও আবার লাইন গুলিয়ে যাওয়া,সচেষ্ট ভুলে যাওয়া,যেমন করে স্মৃতি আওড়ানোর খোপে ঢুকে পড়ছে আলোচনা, কবিতা-সমাজ-রাজনীতির ব্যাখা; অথবা তার বিপরীত। কিন্তু তা-ও বলি, গল্পকিস্যা শোনানোর কালে ভূমেনবাবুকে যতখানি সহজ আর দাপুটে লাগে, কবিতার অর্থাৎ কিনা সমাজতত্বের শরীর ঘাঁটাঘাঁটির কালে ততটা নয়, তা সে যতই তিনি উত্তরাধুনিক আলখাল্লা পরুন না কেন; ও তাঁর গায়ে ফিট করে না, মনে হয় যেন জোর করে, জবরদস্তির মুদ্রায় অদর্শন খলিফাসাহেব আমাদের প্রাবন্ধিক-লেখককে ঈষৎ অস্বচ্ছন্দ করে দিলেন, লেখক স্বয়ং ঐ খলিফার ভূমিকা না নিলেই পারতেন।
  • I | 59.93.216.151 | ২৮ ডিসেম্বর ২০০৮ ২০:৫২403978
  • সঞ্জয় ভট্টাচার্যের সঙ্গে আলাপ, হাতড়ে দেখলাম, ১৯৯২ সালে। অশোক মিত্রের(অর্থনীতিবিদ) একখানা বই কোনোভাবে হাতে এসেছিল, "পটভূমি' নামে-অনেকেই হয়তো পড়েছেন সে বই- তারই একটি লেখা "তৃষার দিশাহারা তীরে'। সঞ্জয় ভট্টাচার্য ও তাঁর অগ্রজ, সুরকার অজয় ভট্টাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিলেখা। কুড়ি-একুশ বছরের বেতসতারুণ্য তখন, ব্রণ ও বিষাদ জানছি মফ:স্বলী ছেলে। কলেজে আঁটো যুবতীর তিলফুলে আর নারীগন্ধে মজতে মজতে কলকাতা চেনা হয়; ভয় পাই স্টিলেটো হীলে, ভয় পাই ইংরেজী ভাষায়। বাড়ি ফেরার রিক্সাপথে যেসকল দৃশ্যের জন্ম হয়, তারাই আমার চেনা প্রিয় পাশবালিশ; পানা সরিয়ে চান করছে অলসগমন মাঝবয়সী, বসন্তের বিকেলে লিরিল সাবানের গন্ধ শ্যাওলামজা ঘাটলায় ম' ম করে। অথবা সন্ধ্যার ধুনো , শীতের উনুনের আঁচ।

    এইরকম দিনকালে, যখন প্রথম কবিতা পড়ছি রবীন্দ্র-সুকান্ত-নজরুল-সত্যেন্দ্র-সুভাষের বাইরে, আমার সঞ্জয় ভট্টাচার্য অনুগমন। কিংবা বাড়াবাড়ি হল, নিছকই এক পা সঙ্গে হাঁটা। কেননা পক্ষপাত, মৃত্যুর প্রিয় সন্তানদের প্রতি, আমার সেই বয়সেই গড়ে উঠছে। কেননা " প্রখর সূর্য জীবনের মুখের উপর-তখন রাত্রির ছায়া জীবনের স্নায়ুর উপর'-আমার দু:খ বানিয়ে নেওয়ার স্বভাব,আমার বিষাদের সূত্রপাত, বিষণ্ন মানুষকে আমার ভাই বলে, বন্ধু বলে মনে হবে তখন থেকেই। এহ বাহ্য, একলা আমি, থাম্বেলিনা চিনিনা বলে, এনিড ব্লাইটন পড়িনি বলে অভিমানী আমি, আমায় তো সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে ভালো লাগতেই হবে, ভালো লাগতে হবে সব-সব বাঙালী কবিকে।
  • ranjan roy | 122.168.28.186 | ৩০ ডিসেম্বর ২০০৮ ০০:০৩403989
  • ইন্দো,
    ভাই নীচের কবিতাটা মনে পড়ছে? পড়লে তুলে দেবেন দয়া করে?
    "" বিকেল সুর্যের দিকে ঠিক যেন ভোরে পাওয়া মন,
    আমি এক মহিলাকে দেখছি এখন।
    ----------
    ---------
    শুধু ঠোঁটে খেলছে বিদ্যুৎ,
    শুধু ভয় হয় যদি রাত্রি আসে
    কালিমাখা ভূত।

    (সঞ্জয় ভটাচার্য)
  • I | 59.93.200.79 | ৩০ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:১৮404000
  • না:, রঞ্জনদা পড়ি নি। শ্রেষ্ঠ কবিতা খুঁজে দেখলাম। নেই।
  • ranjan roy | 122.168.23.56 | ৩০ ডিসেম্বর ২০০৮ ২৩:৫৯403817
  • ইন্দো,
    এটা ষাটের দশকে বুদ্ধদেব বসু সম্পাদিত "" আধুনিক বাংলা কবিতা'' তে আছে। আমার কপি হারিয়ে গেছে।
    আচ্ছা, মণীশ ঘটকের কোন কবিতা?
    "" পরমা''? আর সেইটে চিরন্তন নারীর উদ্দেশে?
    "" দেবী তো নহ, বলতো তোমায় কেমনে পূজা করি?
    তোমার মুখে দিব্য বিভা বৃথাই খুঁজে মরি।
    আছে তোমার নিটোল বাহু, সুডোল দুই স্তন,

    ----- তপ্ত আলিঙ্গন--। ইত্যাদি।
  • I | 59.93.208.160 | ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:০৬403828
  • অশোক মিত্রের সেই অসম্ভব সুখপাঠ্য লেখা পড়ে পাগলাটে, গোলমেলে সঞ্জয় ভট্টাচার্যের একটা ছবিই আঁকা হয়ে যায় মনে; সে ছবি অবশ্য পরে ভেঙে যাবে ভারবি-প্রকাশিত সঞ্জয় ভট্টাচার্যের শ্রেষ্ঠ কবিতার মলাটে এসে। লাল রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে রঞ্জন মুখোপাধ্যায়ের আঁকা স্কেচের সঙ্গে, না, মিলল না, আমার কল্পনার সঞ্জয় ভট্টাচার্যের ছবি। সঞ্জয়বাবু কি এরকম টেকো হবেন, এমন ভ্রুকুটি কুটিল চাহনি, ওষ্ঠাধরে এতটাই কঠিনতা ! কিন্তু মিত্রজা তো বলেই রেখেছেন-"অনেক স্ববিরোধিতায় ঠাসা ব্যক্তিত্ব', আবেগময় প্রেমের কবিতা ও জটিল তত্ববোনা উপন্যাস-উভয়েরই রচয়িতা, "বাংলাভাষা নিয়ে তাঁর কূপমন্ডুক অহমিকা প্রায় পাগলামির পর্যায়ে পৌঁছনো অথচ ট্রটস্কির মহাভক্ত',"স্তালিনে যেমন , রবীন্দ্রনাথের গানে-কবিতায়ও তাঁর সমান অরুচি'...
    আর এমনকি সেকথা সত্যি প্রমাণ করবার দায় নিয়ে যেন পাতা ওল্টানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই একই ছবি আরো বড় আকারে, আর একেবারে ভিন্নতর মাত্রা নিয়ে এসে হাজির হয়। ভ্রুকুটিময় চোখ ঢেকে উঠতে থাকে কুয়াশার ভাপ, উন্নত নাকের দুপাশ দিয়ে নেমে আসে অবেলার ছায়া, রাত্রির ছায়া , জীবনের স্নায়ু ঘিরে "উত্তরপঞ্চাশ'এর কবিতা যেমন, মানসিক অবসাদ, বিকলন, আর ভারসাম্যহীনতার দিনগুলির ফাঁকে-ফোকড়ে যেসব কথামালা গেঁথে তুলবেন অবসন্ন , অকৃতদার , বর্জিত এক যূথপতি।
    না, সম্পূর্ণ বর্জিত তিনি কখনো হন নি। জীবনের শেষদিন অবধি পাশে ছিলেন সত্যপ্রসন্ন দত্ত,অকৃতদার তিনিও; ভবিষ্যতে হয়তো, কবিতার ঈশ্বর জানেন, কোনোদিন এই যুগলের সম্পর্কের মাঝখানে সমকাম আবিষ্কার করে বসবেন কোনো উন্নতললাট গবেষক; কিংবা, সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে নিয়ে কে আর গবেষণায় বসবেন এই শপিং মল-মাল্টিপ্লেক্স- শাসিত কলকাতা শহরে !
  • I | 59.93.208.160 | ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ ২২:২৮403839
  • রঞ্জনদা নিশ্চয়ই আমাকে বাংলা কবিতার এনসাইক্লোপিডিয়া ভাবছেন না। তাহলে বাকি যে সম্ভাবনা থাকে, সেটা হল-পাতি প্যাঁক দিচ্ছেন।
    রঞ্জনদা, আমি মনীশ ঘটক অত পড়েছি নাকি? মাত্র দুয়েকটা কবিতা আমার সম্বল, তার মধ্যে আপনার ফরমায়েসী পদ্য নেই।
  • I | 59.93.208.160 | ৩১ ডিসেম্বর ২০০৮ ২৩:০৪403850
  • এমনি হয়তো ছিলেন সঞ্জয় ভট্টাচার্য, এমন মানুষের মত , টাটকা মানুষেরই মত স্ববিরোধী। স্বভাব-অন্তর্মুখী, অথচ কবিতা-আন্দোলনের দায়ভার কাঁধে পেতে নেওয়া নেতাব্যক্তি; "পূর্বাশা' লিমিটেডের পুঁজি বাড়ানোর জন্য যশোরে মডেল ফার্মিং করছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ব্যাংকিং -বিপর্যয় আর দেশভাগে সে ব্যবসার ভরাডুবি ঘটলে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন, বিষাদ ও বিপর্যয়ে তবুও কবিতা লিখছেন,আবার জড়ো হচ্ছেন নতুন ও পুরনো কবিরা ভাঙা নাওয়ের কাঁকলাস -কাঠামো ঘিরে, আবার গান হচ্ছে বদর-বদর, আলকাতরার পোঁচ পড়ছে ঘুণকাঠে, মানুষের সৃষ্টি-সৃজন-উদ্যম ভেসে পড়ছে অজান-উজান দরিয়ায়, সে শুধু ঘূর্ণি-তুফানে ভেঙে টুকরো হওয়ার প্রিল্যুড হিসাবে; এমনতরো হাঁটা তাঁর, মোমমাখানো দড়ির ওপর দিয়ে,সুখ ও অসুখ দুই দৈত্য মুখ হাঁ করে রয়েছে দুপারের দুই অতলে-মাঝখান দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন একা এক মানুষ, মানুষের নেতা,ডানায় আগলে ছোট-বড়ো কবি-লেখক কতজনাকে, তাঁদের একজনের নাম জীবনানন্দ দাশ।

    হয়তো তেমন বড় কবি ছিলেন না, হয়তো সম্পাদকের ছায়া তাঁর কবিতাকে আড়াল করে রেখেছিল, ভালো কবি হওয়ার পক্ষে বড় বেশী পন্ডিত ও তত্বপ্রেমী ছিলেন তিনি; তবু, সব মিলিয়ে যা ছিলেন তিনি,তার তুলনা তিনি নিজেই, সঞ্জয় ভট্টাচার্য। তৃষার দিশাহারা তীরে, আষাঢ়ের কলকাতায় নির্বাসিত যক্ষ এক," বড় একা, পাশে কেউ নেই, কেউ নেই, তুমি ছাড়া যারা তোমার মতন হতে পারে'।।
  • ranjan roy | 122.168.31.27 | ০১ জানুয়ারি ২০০৯ ০৭:১১403861
  • ইন্দো,
    না ভাই, কবিতার ব্যাপারে আমি পাতি-প্যাঁক দেব না। ওটা অসভ্যতা মনে করি। আসলে আমি অনেকদিন আউট অফ টাচ্‌। আমারো সম্বল ঐরকম স্মৃতিনির্ভর বহুবছর আগে পড়া কিছু।
    কিন্তু তোমার লেখা থেকে মনে হয়েছে তুমি ডাক্তারীপেশার অসম্ভব চাপের মাঝখানে একজন অতিসংবেদনশীল কবিতাপাগল মানুষ। কবিতা নিয়ে লেখার যোগ্যতা সবার থাকেনা, নি:সন্দেহে তোমার আছে,ঈর্ষণীয় ভাবে আছে।
    আর এইধরণের কম জনপ্রিয় কবিদের লেখার বৈশিষ্ট্য আমাদের কাছে চমৎকার ভাবে তুলে ধরছো। চালিয়ে যাও।
    হ্যাঁ, একটি ব্যক্তিগত অনুরোধ, ডাক্তার ইন্দোর কাছে। আমাকে বাঁদরে আঁচড়ে দিয়েছে। ডাক্তার বলেছে রাবিপুর( না কি রাবিপার?) ফুল কোর্স, ছ'টা ইঞ্জেকশন নিতে। কিন্তু তার ইরিয়ডিসিটি ( তিনদিন-সাতদিন ইত্যাদি) উনি জানেন না। ওষুধের প্যাকেটে লিটারেচারে দেখে নিতে বল্লেন। কাল কিনে প্রথমটা লাগিয়েছি, কিন্তু কোন লিটারেচার দেখলাম না। তুমি কি ঐ পিরিয়ডিসিটি'' টা আমাকে বলতে পারবে?
  • I | 59.93.173.129 | ০১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৩:১৭403872
  • রঞ্জনদা,
    কোর্স এইরকম :
    ০, ৩, ৭, ১৪, ২৮(৩০)তম দিন।
    সাধারণত:, খুব বিচ্ছিরি Lacerated injury না হলে ৬-নং ডোজ লাগেনা। পাঁচটাতেই কাজ চলে যায়। আঁচড়ের জন্য পাঁচটাই কাফি।
  • r | 125.18.104.1 | ০১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৩:৩৭403883
  • অ্যাঁ, আপনাকেও! আমাকেও আঁচড়ে কামড়েছিল, ছোটোবেলায়। একটিপ চুন লাগিয়ে নিয়েছিলাম। এখনও পর্যন্ত নাতিদীর্ঘ মানসিক লাঙ্গুলের ক্রমোন্মেষ ছাড়া অন্য কোনো অ্যাবারেশন পরিস্ফুট হয় নাই। ;-)
  • b | 203.199.255.98 | ০২ জানুয়ারি ২০০৯ ১০:৩৬403894
  • (এরূপ রসাভাস পিতৃজন্মেও দেখি নাই।)

    ডাক্তারবাবু, প্রেসকৃপশন ছেড়ে একটু স্বধর্মে ফিরুন।
  • pi | 69.251.184.3 | ০২ জানুয়ারি ২০০৯ ১৩:৩১403905
  • উপরের দাবীতে ডিট্টো দিলাম ।
  • I | 59.93.202.60 | ০৫ জানুয়ারি ২০০৯ ২২:৩৫403916
  • সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে নিয়ে স্মৃতিচারণের শুরুটা এইরকম, একটু ভূমেন্দ্রবাবুকে উদ্ধৃত করা যাক :

    সেই সুদূর '৫১-'৫২ জনৈকা তরুণীকে দু'-চারটে ব্যক্তিগত কথা বলার ছিল। তাঁর সামনে উন্নতির সোপানগুলি মনোযোগ আকর্ষণের বিষয় ছিল তখন, তাঁর শুনবার মতো মন বা সময় কোনওটাই ছিল না। সেই সময়টিতে আমি হয়তো কথঞ্চিৎ পীড়িত বোধ করেছিলুম, মনে নেই;তবে খুব একটা ব্যর্থতা বোধ করেছিলুম, মনে পড়ে না। আমাদের কবিদের কাছ থেকে তখন এই কথাটা আমার জানা হয়ে গিয়েছিল যে, এরকম হয়, এবং পর্যায়ক্রমে হতে থাকে, বলার কথা জমতে থাকে, শোনার জন্য মহিলারা সাধারণত: ব্যগ্র হন না। এই সব হওয়া বা না হওয়া ধনাত্মক, টুকরো-টাকরা নিয়ে আর এক জন মহিলার শরীর গড়ে উঠতে থাকে অজান্তেই, স্বত:, এবং কখনও কখনও প্রায় সমান অজান্তেই সেই পুনর্ভবা মহিলার মত আর একজন কেউ এসে জমে-থাকা গেঁজে যাওয়া কথাগুলি শুনবার জন্য করুণাঘন দাবী জানান; তখন সময় কুড়ি-কুড়ি বছর পেরিয়ে যায়, এবং সঞ্জয় ভট্টাচার্য'র কণ্ঠে বলতে হয় : হায় মেয়ে, তুমি যদি আসতে সকালে !

    এই রকম কথা বলাবলি তখন মাথার ভিতরে খুবই ঘোরাফেরা করছিল, এতদিন পরে আন্দাজ করা যায়, এবং হয়তো সেকারণেই তখন আমি পুরাণের কালে শরীর পেয়েছেন এমন একজন নানা শরীরের শ্রেষ্ঠত্বের অংশভাগিনী রমণীকে উপজীব্য করে একটি পদ্য লিখে ফেলেছিলুম মনে আছে, সময়টা তখন ফাল্গুন মাস। পূর্বাশা মাসিক পত্রিকার তখন খুব নাম-ডাক, সম্পাদক সঞ্জয় ভট্টাচার্য'ও নামী এবং সম্মানিত , আমি কিছু না ভেবেচিন্তেই , মারি তো গণ্ডার লুটি তো ভাণ্ডার-এইরকম একটা গোঁয়ার্তুমির বশবর্তী হয়ে পদ্যটা দুম করে পূর্বাশা পত্রিকায় ডাকযোগে পাঠিয়ে দিলুম।
  • I | 59.93.209.83 | ১১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৮:৪৯403924
  • ৫১-৫২-র সে কলকাতায় আমাদের নবীন কবি ও ডাক্তারী ছাত্র এরপর অস্বস্তির মাছের কাঁটা গলায় বিঁধিয়ে ছটফট করতে থাকবেন। কেন পাঠালাম, না পাঠালেই হত , ঐ বালখিল্য পদ্য অমন ভারী পত্রিকায় পাঠিয়ে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে কেনই বা- এইমত নানান অশান্তির ঘরবারে নাজেহাল তরুণটি অবশেষে ফাল্গুনের কোনো এক দিনে সঞ্জয় ভট্টাচার্যের চিঠি পেলেন : তাঁর কবিতাটি মনোনীত হয়েছে, তিনি যদি সম্পাদকের সঙ্গে একবার দেখা করতে পারেন, তাহলে সম্পাদক খুশী হবেন। কোলকাতার, সেই পঞ্চাশ-ষাটের কোলকাতার তখনো ফাল্গুনধর্ম অটুট ছিল, ভূমেন্দ্র অন্তত: তা-ই জানাচ্ছেন। দেখা পেলেম ফাল্গুনে-র দুরুদুরু বুক খানিক দুরস্ত হলেও অমন ভারিক্কি সম্পাদকের মুখোমুখি হওয়ার সাহস আর জুটিয়ে উঠতে পারা যাচ্ছিল না; শেষমেশ যে যাওয়া হয়ে উঠল, তার পিছনে ফাগুনের নবীন আনন্দ অথবা গোলদীঘির জলের প্রচ্ছদে ভারী কুয়াশার মধ্যে কচি সবুজ প্রথম আলোকরেখার ভূমিকা থাকতে পারে,ভোরের প্রথম স্নানের সজলতা থাকতে পারে, আমি সঠিক জানিনা, ভূমেন্দ্র জানান নি, ওঁকে জিজ্ঞেস করুন।

    সাক্ষাৎকারের বিবরণটি লেখকের মুখেই শুনুন নাহয় :

    বাড়িটার কাছে যতই এগোচ্ছি বুকের ঢিপঢিপ শব্দটা ততই বাড়ছে, গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আসছে , আর না এগিয়ে হস্টেলে ফিরে গেলেই হয়তো ভালো হয়, তাও যে না ভাবছি তা নয়, কিন্তু আমাকে সে যাত্রা বাঁচিয়ে দিলেন সত্যপ্রসন্ন দত্ত। তখন তো তাঁকে চিনতুম না।
    ...... ধপধপে ধুতি-পাঞ্জাবি পরনে, গাত্রবর্ণ আদর করে বললেও শ্যামলা বলা যাবে না, কালো-ই। প্রথম স্বরাভাসেই মালুম হল, মেজাজ বেশ কড়া কঠিন খটখটে।
    বললেন, কী চাই।
    আমি থতমত খেয়ে গিয়ে বললুম,এই-মানে-
    উনি সোজাসুজি জানিয়ে দিলেন, বইএর দোকান পেরিয়ে এসেছেন, বেরিয়ে গিয়ে ডানদিকে, চলে যান-
    আমি অত্যন্ত অপ্রস্তুতের মত বললুম,না, -মানে,- আমি তো পূর্বাশা অফিসে এসেছি, সঞ্জয় ভট্টাচার্য চিঠি লিখে দেখা করতে বলেছে, তাই-
    দেখি, চিঠিটা দেখি, উনি হাত বাড়িয়ে দিলেন।
    আমি সহসা আবিষ্কার করলুম যে, খুব একটা ভুল করে ফেলেছি, চিঠিখানা তো সঙ্গে আনা হয় নি; অসহায় ভাবে বললুম, চিঠিটা আনতে ভুলে গিয়েছি-
    উনি বললেন, তা হলে চিঠিটা নিয়ে আর এক দিন আসবেন, আজ সঞ্জয়বাবু খুব ব্যস্ত আছেন।

    রাগও হল, দু:খও হল। আমি ধীরে ধীরে রাস্তায় নেমে এলুম।....
  • I | 59.93.209.83 | ১১ জানুয়ারি ২০০৯ ১৯:০৪403925
  • তবু-ও এরপরেও কথা থাকে, কবিস্বভাব লাজুক মানুষেরও পাঁজরের তলায় সাহসের চারা কখন কিভাবে গজিয়ে ওঠে আল্লামিঞাই জানেন, ভূমেন্দ্র আবারো সঞ্জয় ভট্টাচার্যকে একখানি ছোট চিঠি লিখে বসেন। এবার সহজ হয় সাক্ষাৎ, সঞ্জয়বাবু এমনকি বেশ একটু প্রশংসাই করে বসেন তরুণ কবির, একটু পিঠ-চাপড়ানি থাকে -তুমি তো একেবারেই ছেলেমানুষ হে-এই কথায়। আলাপ বেশ খানিকটা এগোয়, মাস্টারমশাইয়ের মত (মাস্টারের ছবিখানাই আঁকা ছিল সঞ্জয়বাবু সম্বন্ধে, ভূমেন্দ্র-র মনে) কবিতা লেখার ছক্কা-পঞ্জা,তান-সরগম নিয়ে খানিকদূর বিদ্যেবিতরণ করার পরে, কিম্বা যাকে বলে মেপে নেওয়া-সেসবের পালার মাঝে যেন হঠাৎ মনে পড়ে গেল, এমনধারা ভঙ্গিতে বলে ওঠেন-ভালো কথা, তুমি কী পড়ো, কোথায় পড়ো, বলো নি তো-
    আমি বললুম, মেডিকেল'এ পড়ি, ফার্স্ট ইয়ার-
    সঞ্জয়বাবু এতক্ষণ যে-রকম উৎসাহের উত্তেজনায় কথা বলছিলেন, তাতে যেন জল ঢেলে দেওয়া হল। প্রায় হতাশ কণ্ঠে বললেন, তা হলে তো ভালো ছেলে, পাশটাশ করে খ্যাতিমান হবে, বড়োলোক হবে, অনেক টাকা আয় করবে, কবিতা লিখতে এলে কেন তবে? লিখতেই যদি হয় , গল্পটল্প লেখার ধান্ধা করো-
    আমি অসহায়ের মত বলতে পারলুম-গল্প লেখা তো আমার আসে না-
    তিনি উদাসীনভাবে বললেন, কবিতাও তো আসত না, এসে গেছে; ডাক্তারী গল্প আরও সহজে আসবে-

    প্রথম আলাপের সেখানেই ইতি।

  • I | 59.93.209.83 | ১১ জানুয়ারি ২০০৯ ২০:০২403926
  • কিন্তু হায়, নিয়তি কেন বাধ্যতে ! সন্ত্রাসীর সর্বনাশের মত, পূর্বনির্ধারিত মৃত্যুর ছুরি কিম্বা ফাঁসির দড়ির মত কবিতার বিষ ভূমেন্দ্রকে দিয়ে পূর্বাশার আড্ডাবাজির কাজ করিয়ে নেবে; মূলত:, প্রুফ দেখার কাজ, নিয়মিত, এবং ক্কচিৎ কবিতা ও প্রবন্ধ লেখালিখি(ভূমেন্দ্র অন্তত: তা-ই বলছেন)। স্বভাব- ইমপালসিভ সঞ্জয়বাবুও যেন কিছুটা প্রাচ্চিত্তির আর অনেকটা স্নেহ মিশিয়ে ভূমেন্দ্র-র জন্যে পায়েস রাঁধবেন মাঝে-মধ্যেই-রান্না ছিল তাঁর প্রধান বিনোদন এবং রান্না বলতে তিনি এক এবং একমাত্র পায়েস রান্নাই বুঝতেন,যেমন করে অবন ঠাকুর পাথর বলতে বুঝতেন কেবল হীরে।
    হ্যা, আড্ডা কথাটা যখন বলে ফেললাম, জেনেবুঝেই তা বললাম। তেমন- তেমন আড্ডা তো হত মাঝেমাধ্যেই পূর্বাশা আপিসে, আসতেন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত, তারাশঙ্কর কখনো, কদাচিৎ নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়, এক-আধবার এমনকি মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় (পদ্মানদীর মাঝি বেরিয়েছিল পূর্বাশাতেই, যেক্ষণে মানিক "ভারতবর্ষে' কিস্তিতে কিস্তিতে লিখছেন পুতুলনাচের ইতিকথা), সন্তোষকুমার ঘোষ, জ্যোতিরিন্দ্র নন্দী, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, নরেশ গুহ, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, রমাপদ গুহ, সত্যপ্রিয় ঘোষ.....
    সাহিত্যের কথা হত ও দর্শন, সাœÑ তখন ছিলেন অনিবার্য, কামু-ও, অস্তিত্ববাদ নিয়ে অনেকের তখন উত্তেজনা, স্বপ্নঘোর। রাজনীতি কি আর না এসে পারে? স্তালিনের বিপরীতে সঞ্জয়বাবু তুলে আনতেন ট্রটস্কি, যদিও তাঁর পক্ষপাত দিন আরো ঘোর হয়ে এলে, ছায়া লম্বা হয়ে এলে ঢলে পরেছিল গান্ধিবাদের দিকে। সমসময়ের বাংলা কবিতায় তিনি মানতেন এক ও একমাত্র জীবনানন্দকে (ভূমেন্দ্র-র ভাষ্য তাই), রান্নায় যেমন পায়েস, পাথরে যেমন হীরে। ইংরেজ/আমেরিকান কবিদের মধ্যে,- বলতে পারলে কোন পুরস্কার নেই- স্বভাবত:ই আসতেন এলিয়ট, ডিলান টমাস, ওয়াল্ট হুইটম্যান। আবৃত্তি করে শোনাতেন,"Ah, but we die to each other daily/What we know of other people/Is only our memory of the moments/During which we knew them........'।
  • I | 59.93.209.83 | ১১ জানুয়ারি ২০০৯ ২০:১৭403927
  • আড্ডায় যিনি কখনো-ই আসতেন না, তাঁর নাম জীবনানন্দ দাশ। সম্পর্ক রাখতেন অতি-সংক্ষিপ্ত সব চিঠিপত্রে, একটিও বাড়তি কথা নয়, এবং কিছু "ধন্যবাদ'। আসতেন অবশ্য কখনো কখনো হাঁফাতে-হাঁফাতে গনেশ অ্যাভেন্যুর ফ্ল্যাটে, কিন্তু সে আসাটা , ভূমেন্দ্র গুহ যেমন লিখেছেন "...প্রায়শই তাঁর জীবনযাপনের ছন্দে কোনো গিঁট পড়ে যাওয়ায় উৎসৃষ্ট অস্বস্তির কারণে.... সেইসব অস্বস্তির একটা কাজ চালানোর মত সুসমাধানের জন্যও তাঁর শেষ-জীবনে তিনি পূর্বাশা-র উপরে অনেকটা নির্ভর করেছিলেন'।
  • I | 59.93.209.83 | ১১ জানুয়ারি ২০০৯ ২১:২৬403928
  • একটা দিনের গল্প বলাই যায় :
    .... জীবনানন্দকে খুব উত্তেজিতভাবে বিস্রস্ত অসহায়তায় পূর্বাশা'র অফিসে চলে আসতে দেখেছিলুম। এতই চাপা আবেগে আক্রান্ত ছিলেন তখন তিনি যে, তাঁর সারা শরীর প্রায় কাঁপছিল, কথা বলা জড়িয়ে যাচ্ছিল, এবং এসেই কোনও অবতরণিকা ছাড়াই চেয়ারে বসে পড়ে কপালের ঘাম ধুতির খুঁটে মুছে নিতে-নিতে কী বলতে গিয়ে চুপ করে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাতে তাঁর অবরুদ্ধ আবেগের বিচ্ছুরণ কিছুমাত্র অপ্রকাশিত থাকে নি।সঞ্জয়বাবু জীবনানন্দকে ঢুকতে দেখেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠেছেন, মুখ তুলে তাড়াতাড়ি বলেছেন, আরে! আসুন, আসুন, বসুন, মনে হচ্ছে কোনো অঘটনে খুব অস্থির হয়ে পড়েছেন-
    জীবনানন্দ, মনে হল, বলবেন কী না ভেবে দেখছেন, তার পর বিষয়টাকে জল-ভাতের মতো সাধারণ করে দেবার ভঙ্গিতে বললেন, না, তেমন কিছু না-
    ...সঞ্জয়বাবু যেন পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারেন নি, এমনই সন্দিগ্‌ধ কণ্ঠে বললেন, তা এসেছেন, খুব ভালো করেছেন, ভালো লাগছে, চা খাবেন তো-
    বলে নিজেই চা বানাতে তিনি উঠে গেলেন। তাঁদের কাজের মেয়ে অথবা রান্নার মাসি-কাউকেই এখন এই দুপুরবেলা পাওয়া জাবেনা।
    দুহাতে দু কাপ চা নিয়ে ফিরে এলেন তিনি। জীবনানন্দর কাপটা টিপয়ের উপর রাখতে রাখতে বললেন, চিনি ছাড়া-
    তার পর নিজের কাপটি পাশের টেবিলে রেখে দিয়ে বললেন, ভূমেন, তোমার চা তুমি নিয়ে এসো গিয়ে-
    আমি চা আনতে উঠলুম, যেতে যেতে শুনলুম বলছেন, যা-ই বলুন, কিছু একটা অঘটন ঘটেছে। বলুন, ঠিক কী না-
    জীবনানন্দ চায়ে চুমুক দিতে গিয়ে বললেন, তা, তেমন কিছু না। কিছু টাকার জন্য খুব ঠেকে পড়েছিলুম কী না-
    সঞ্জয়বাবু বললেন, তা কী হয়েছে, এত অস্থির হয়ে পড়েছেন কেন-;দেখুন, জীবনবাবু, আপনাকে কথাটা খুলে বলতে হবে আমাকে, কেউ কিছু অন্যায় বলেছে কি? কার কাছে বলতে গিয়েছিলেন, আমরা তো নেই-নেই করেও আছি এখনো !
    জানি তো আপনাদের নানান অসুবিধে, আপনারাও তো খুব স্বস্তিতে নেই, নইলে আপনাদের বলতে আটকায় কখনও আমার ! ভাবলুম, দেশ-কে বলে দেখি, কয়েকটি কবিতার বিনিময়ে যদি অগ্রিম-
    সঞ্জয়বাবুর চোখ দুটি তৎক্ষনাৎ বেশ বড়ো দেখাল তাঁর চশমার পিছনে, বললেন, গিয়েছিলেন তো-কী বলল?

    বললেন, অগ্রিম সম্মানমূল্য তাঁরা দেন না; এতগুলো কবিতারও তাঁদের দরকার নেই ; দুটো-তিনটে রেখে গেলেই চলবে; যখন ছাপা হবে, টাকা পাঠিয়ে দেবেন। আমি বলতে চেয়েছিলুম, বাছাই করে এনেছিলুম-পছন্দ না হলে অন্য কবিতা পরে পাঠিয়ে দিতে পারি। তা উনি বললেন, না,না, তার দরকার নেই। চা খাওয়ালেন, অনেক দিন পরে দেখা হল বলে শরীর-স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিলেন।'

  • I | 59.93.243.54 | ১২ জানুয়ারি ২০০৯ ২২:২৯403929
  • "সঞ্জয়বাবু নীরস স্বরে বললেন, তা, আপনি কী করলেন, দু-তিনটি কবিতা দিয়ে এলেন?
    নিচু গলায় জীবনানন্দ বললেন, তা দিয়ে এলুম, ভবিষ্যতের কথা ভেবে। তারপর ওঁর চায়ের আপ্যায়ন শেষ হলে উঠে পড়লুম।
    সঞ্জয়বাবুর টেবিলের ওপর তাঁর চা ঠান্ডা হতে লাগল। তাতে সর পড়ে এল। উনি আর ঠোঁটে তুলবার সময় পেলেন না। তক্তপোশ থেকে উঠে পড়লেন। ঘর থেকে বেরিয়ে পাশের ঘরে চলে গেলেন।
    একটু পরেই ধুতি-পাঞ্জাবি পরে ধোপদুরস্ত হয়ে চলে এলেন। বললেন, ভূমেন, তুমি জীবনবাবুর সঙ্গে থাকো, ওঁকে কমপ্যানি দাও, একটু ঘুরে আসছি, বেশি সময় লাগবে না। জীবনবাবু, চলে যাবেন না যেন, কষ্ট করে বসুন একটু।

    সঞ্জয়বাবু দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। সিঁড়িতে তাঁর জুতোর শব্দ থাকে থাকে নেমে গেল, শুনতে পেলুম।
    জীবনানন্দ একেবারে নিরিবিলি হয়ে গেলেন, নিশ্চুপ। একবার শুধু নিজের হাতের পাতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বললেন, না, কাজটা ঠিক হল না। না বললেই ভালো হত-
    আমি বুঝতেই পারলুম না এই কথার প্রত্যুত্তরে কিছু বলা চলে কী না। আমি ওঁর পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলুম শুধু। দেখলাম, ওঁর পায়ের পাতাদুটি দ্রুততালে নড়ছে, অর্থাৎ তাঁর হাঁটুদুটি তালে-তালে পরস্পরের কাছে ঘেঁষে আসছে, আবার সরে যাচ্ছে, অর্থাৎ তিনি ভিতরে-ভিতরে খুব অস্থির হয়ে উঠছেন।
    উনি যদি নিজে থেকে কথা না বলেন, আমি আর কী বলব তাহলে। উনি জানালার বাইরে তাকাচ্ছেন, আবার নিজের হাতের দিকে তাকাচ্ছেন, তারপর এক সময় জানালার বাইরে গাছ-গাছালির দিকেই তাকিয়ে রইলেন এক-নাগাড়ে। আমি গ্যালি প্রুফগুলো সামনে নিয়ে বসে রইলুম কাঠ হয়ে, এবং আশ্চর্য, টেবিলের উপর টাইমপিসটার টিকটিক শব্দও শুনতে পেলুম।
    ঘন্টা দেড়-দুই পরে সঞ্জয়বাবু ফিরে এলেন, সঙ্গে সত্যপ্রসন্ন দত্ত। বোঝা গেল, সঞ্জয়বাবুর রাস্তায় বেরিয়ে পড়ার সময় তাঁর সঙ্গ আর ছাড়েন নি তিনি।সঞ্জয়বাবুর ফর্সা চেহারায় একটু লালচে আভা লেগেছে, রোদের রাস্তায় যাওয়া-আসার জন্য হতে পারে। তিনি এসে তক্তপোশে বসতে বসতে তাঁর ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ের কাপের দিকে তাকালেন একবার, তারপর সোজাসুজি জীবনানন্দের দিকে তাকালেন। জীবনানন্দ জানালার বাইরের থেকে চোখ ফিরিয়ে আনতে পেরে স্বস্তি পেয়েছিলেন, তিনিও জিজ্ঞাসু চোখে সঞ্জয় ভট্টাচার্যের দিকে তাকিয়ে ছিলেন।
    সঞ্জয়বাবু বললেন, সুরেশ মজুমদারের কাছে গিয়েছিলুম আমি শুধু এই কথাটা বলতে যে, সামান্য কিছু টাকার জন্য জীবনানন্দ কিছু লেখা নিয়ে আজ এসেছিলেন আপনাদের কাছে; আপনারা নেন নি, ফেরত দিয়েছেন; তাতে জীবনানন্দ অপমানিত হন নি, তিনি মান-অপমানের উর্দ্ধে, সময় এক দিন তা বলবে; অপমানিত হয়েছি আমরা সবাই, যারা সাহিত্যসেবা করি বলে ভাবি।'
  • I | 59.93.222.126 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৯ ২২:৩৬403930
  • এই যে , আপনেরা কেউ কিছু ল্যাখেন না কেন, হ্যা? কত কষ্ট করে রাত্তিরে খাওয়ার সময় লোকের গালাগাল শুনতে শুনতে টাইপ কত্তে হয়,- ছেলে নেই এখন তাই একটু সহজ হয়েছে,- তা সেসব পড়েন-টড়েন তো? মনে তো হচ্ছে না !
  • Arpan | 122.252.231.10 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৯ ২২:৪৬403931
  • ইন্দো, টই খুলে লাস্ট পোস্টটা অনেকবার পড়েছি গতকাল ও আজকে। অন্তর দিয়ে শুষে নিয়েছি। আর কীই বলতে পারি। লেখা থামায়ো না।
  • san | 123.201.53.136 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৯ ২২:৫৫403932
  • এ কি , দিনে দশবার করে খুলে দেখি এগোল কিনা! নেহাৎ আমরা ভালো টই এর মধ্যে বাজে বকে নষ্ট করতে চাইনা , তাই বলে এমন কথা !
  • nyara | 67.88.241.3 | ১৩ জানুয়ারি ২০০৯ ২৩:৫১403933
  • ডাক্তার, বেড়ে হচ্ছে তো। এটা চলুক। শেষ হলে (বা পাশকথা হিসেবে) অন্তিম ধ্রুবপদে ভূমেন্দ্র গুহর লেখাটা নিয়েও একটু হয়ে যাবে কি?
  • Abhyu | 128.192.7.51 | ১৪ জানুয়ারি ২০০৯ ০০:০৯403935
  • এমনকি আম্মো পড়ি। যত্ন করে। কিছু বলি না বলে ভাবো কি?
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আদরবাসামূলক মতামত দিন