এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুকি | 49.207.219.172 | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:১৪733652
  • গ্রীষ্মের রাত – ফুরফুর হাওয়া বইছে পাশের ফাঁকা মাঠ এবং দিঘীর জলের উপর দিয়ে।  আমরা নিমো স্টেশনের আপ প্লাটফর্মের সামনের দিকে বসে ভাঁট দিচ্ছি।  এমন সময় গ্রামেরই এক ভাই বিশাল জোরে হিরো সাইকেল চালিয়ে ল্যান্ড করল আমাদের সামনে – হন্তদন্ত হয়ে।  সরাসরি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল, 


    “সুকানদা, আজ রাতের মধ্যে একটা চিঠি লিখে দিতে হবে। কাল সকালে দেবার আছে”।  


    পাশ থেকে চাঁদু জিজ্ঞেস করল 


    “কাকে দিবি?” 


    জানা হল যে সেই চিঠি যাবে পালপাড়ার এক মেয়ের কাছে।


    এতক্ষণ বেঞ্চটার ওপাশে বাপন চুপচাপ বসে ছিল – আসলে তাকিয়ে ছিল প্লাটফর্মের ঠিক পাশে গঙ্গা ময়রার লাগানো কলাগাছে বড় হয়ে আসা কাঁদিটার দিকে উদাস ভাবে।  এবার মুখ খুলল,


    “তুই বাঁড়া ভালো চাস তো সুকানদা কে দিয়ে চিঠি লেখাস না”।  


    আমার মান সম্মানের ব্যাপার – জানতে চাইলাম কেন রে? বাপন বলল,


    - আবার জিজ্ঞেস করছ কেন? সেবার মনে নেই তোমার কাছে চিঠি লিখিয়ে নিয়ে গিয়ে মেয়েটাকে দেবার পরের দিন কি ক্যালানি খেলাম? আলবাল সব লিখেছিলে ক্যালানি খাবার পরে চিঠিটা পড়ে দেখি! ‘তুমি যেখানেই হাত রাখো, আমি চিত হয়ে থাকি সেখানেই’ – এই সব লিখেছিলে 


    - আমি এমন লিখেছিলাম?


    - আরে সোজা করে এমন লিখলে হয়ত বেঁচে যেতাম। কবিতা মারিয়েছিলে – বোঝা যাচ্ছিল না মানে।  আমাকে ক্যালাচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে, ‘বল এর মানে কি বলতে চেয়েছিস তুই’? বাঁড়া, আমি কি মানে জানি যে বলব, পড়িই নি তো কি লেখা ছিল চিঠিতে!


    আমার মনে পড়ে গেল কি লেখা ছিল –  


    - আরে ওটা চিত নয়, চিত্ত লেখা ছিল 


    - চিত হোক বা চিত্র, ক্যালানির কিছু কমতি রাখে নি সেদিন।


    - তবে তোর ক্যালানি খাবারই দরকার ছিল – তুই অরিজিন্যাল আমার হাতের লেখা চিঠিটা কি ভেবে দিয়ে দিলি মেয়েটাকে? বারবার বললাম, কপি করে আসলটা ফেরত দিবি! আরো অনেককে দেবার আছে।


    - দ্যাখো সুকান-দা, তোমার কাছে চিঠি নিয়ে গিয়ে কপি করা শুরু করেছি – কিন্তু তুমিই বল, আমার হাতের লেখা কি আর তোমার মত। আর তারপর বাঁড়া মহাভারত লিখেছো যেন, দুই-পাতা একেবারে।  আমার অত ধৈর্য্য ছিল না, তাই তোমার লেখাটাই খামে ভরে দিয়ে দিই! 


    তেমন ভাবে দেখতে গেলে বাপন জাষ্ট একটা আনফচ্যুনেট ইনসিডেন্ট এর স্বীকার হয়েছিল। আমি যে মুহ্রুর্তে বিজনেস মডেল চেঞ্জ করছি, ঠিক সেই মুহুর্তে বাপনের রিকোয়েষ্ট আসে।  তখন আমার কাছে এত বেশী চিঠি লিখে দেবার অনুরোধ আসছে যে নিজের পক্ষে আর কবিতা বিয়ানো সম্ভব হচ্ছিল না – আমি তো আর সুনীল গাঙ্গুলি নই! 


    বর্ধমান বইমেলা বেড়াতে গিয়ে চোখে পড়ে যায় আনন্দ পাবলিশার্স এর একটা বই, “দুই বাঙলার আধুনিক কবিতার উদ্ধৃতি সংগ্রহ” – তাতে বেশ কিছু প্রেমের কোটেশনও চোখে পড়ল। বই কিনে নিয়ে চলে আসি – বাপনকে যে চিঠিটা দিই তাতে ছিল নির্মলেন্দু গুণের কবিতার কয়েকটা লাইন, এই বই থেকে ঝাড়া (১৮৯ পাতা)   


    “তুমি যেখানেই হাত রাখো, আমার উদগ্রীব চিত্ত থাকে সেখানেই,


    আমি যেখানেই হাত পাতি সেখানেই অসীম শূন্যতা, তুমি নেই”।


    বলাই বাহুল্য বাপন এই কবিতার লাইনগুলি ক্যালানি খাবার আগে পড়েই নি। তাই বলেই চলেছে সেই অন্য ছেলেটাকে


    - তুই ভালো চাস তো সুকান-দার কিচ্ছু চিঠি নিস না।  কোন আক্কেলজ্ঞান আছে? প্রথম দিনেই চিঠিতেই যেখান সেখান  হাত রাখার কথা! 


    আমি এবার খোলসা করলাম - 


    - আচ্ছা, চাঁদুর কাছেই যা তা হলে, কিন্তু একবার চাঁদুকে জিজ্ঞেস কর, ও চিঠি গুলো কোথা থেকে পায়! দ্যাখ বাপন, তুই আর রাগ পুষে রাখিস না। তোর ওই ঘটনাটার পর থেকে আমি ক্লাস এইটের নীচে অর্ডার নেওয়া ছেড়ে দিয়েছি, আর এখন চিঠির অরিজিন্যালও কাউকে দিই না, জেরক্স করে রেখে দিয়েছি।


    সেদিন স্টেশনে যেটা আর বাপন-কে বোঝাতে যাই নি – তা হলে আমি কিভাবে চিঠির স্ট্যানর্ডাইজেশন করেছিলাম।  ক্লাস এইটের নীচে অর্ডার নেওয়া ছেড়ে দিই। নাইন-টেন একটা গ্রুপ করি, এদের জন্য এক ধরণের সিলেকটেড কোটেশন দিয়ে চিঠি, ইলিভেন-টুয়েলভ একটা গ্রুপ, আর কলেজ ঢুকে গেলে আর একটা গ্রুপ। 


    আমার ডায়েরিতে লেখা ছিল এই সব গ্রুপের জন্য কোটেশন – বইটা থেকে টোকা, কয়েকটা উদাহরণঃ 


    নাইন-টেন এর জন্য


    “তুমি তো জানো কিছু – না জানিলে


    আমার সকল গান তবুও তোমারে লক্ষ্য করে”।


    “আমি যেন বলি আর তুমি যেন শোনো


    জীবনে জীবনে তার শেষ নেই কোনো”।


    ক্লাস ইলেভেন-টুয়েলেভ এর জন্য


    “তোমার প্রেমের স্মৃতি মাধুর্যের উৎস অফুরান


    সে-ঋদ্ধির পাশে তুচ্ছ চক্রবর্তী রাজার সম্মান”।


    “কে তুমি আমাকে ছুঁয়ে গেলে আজ স্বপ্নে


    পায়রা-পাখায় কোঁকড়া বাতাসে হালকা,


    একা-শয্যায় শীতের নিথরে দ্বিতীয় প্রাণ –


    কে তুমি, আমার লিবিডোসজল স্বপ্ন!”


    কলেজ ছাত্রদের জন্য 


    “এখন আমার হৃদয়ে কোনো ক্ষত নেই।


    ছোটখাট দুঃখগুলোর লতায় পাতায় আজ


    পুষ্পবতী তুমি!”


    “তোমাকে কী করে আমি অস্বীকার করি –


    ডানদিকে বসে আছে বর্তমান, বুকের বাঁদিকে তুমি”।

  • সম্বিৎ | ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:৩১733653
  • 'একদিন তো দেখলাম একজন লাইব্রেরীর আলমারী থেকে উষাবালা দাসীর গিফট করা আশুতোষ রচনাবলীর খন্ড গুলো নিয়ে রশিদ চাচার বাঁশবাগানে ফেলতে যাচ্ছে! জিজ্ঞেস করলে জানালোবাঁড়া বোতল রাখার জায়গা হচ্ছে নাআলমারীতে বই রাখবে! '

     

    এই হচ্ছে স্পিরিট। এইটা যেদিন চলে যাবে নিমোর সঙ্গে আর কোন জায়গার তফাত থাকবে না।

  • Amit | 120.22.11.141 | ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:৩৩733654
  • সুকির সেই ভাই এর কি বিয়ে হলো শেষ অবধি ? 

  • সুকি | 49.207.210.172 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:১৮733659
  • না অমিতাভদা এখনো কিছু হয় নি! ছেলে খুব মুষড়ে আছে 

  • সুকি | 49.207.210.172 | ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৯:১৯733660
  • কাউকে স্টেজে তোলবার আগে জেনে নেবেন সে কি বলতে চাইছে বা বলতে পারে। নাহলে আর কি - চমক খেতে থাকবেন!
     
    আমাদের নিমো গ্রামের শিক্ষার ব্যাপারে ক্ষ্যাপা মাষ্টারের অবদান বিশাল। তেনার কাছে কে যে পড়ে নি আমাদের গ্রামে সেটাই খুঁজে বের করতে হবে। বেশীর ভাগ সময়ে মাষ্টার আমাদের গ্রামেই পড়াতে আসত - মাত্র কিছু ছেলে ক্ষ্যাপা মাষ্টারের বাড়িতে যেত প্রাইভেট পড়তে। আজকে যে আমি ইংরাজীতে নাম সই করতে পারি, দুই একটা বাক্যো লিখতে পারি, তার ভিত্তি স্থাপন করেছিল ক্ষ্যাপা মাষ্টারই।
     
    ক্ষ্যাপা মাষ্টার আজ আর নেই – আমাদের গ্রাম থেকেই টিউশনি পড়িয়ে ফেরবার পথে জি টি রোডে লরির ধাক্কায় প্রাণ হারান। এই ঘটনা আমাদের বিষাদগ্রস্ত করেছিল কিছুদিন কারণ খ্যাপা মাষ্টার আমাদের নিমো গ্রামের অনেক ছেলেরই কৈশোরের এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল আগে যেমন লিখেছি।
     
    আমরা তাই ক্ষ্যাপা মাষ্টারের স্মৃতি চারণার আয়োজন করেছিলাম ইনফরম্যাল কেবল আমাদের এই ছেলে ছোকরাদের মধ্যে। কেউ বলল মাষ্টেরের কাছে পড়ে কিভাবে সে দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় মাধ্যমিকে ইংরাজীতে পাস দিয়েছিল – কেউ বলল ক্ষ্যাপা মাষ্টারের কাছে পড়েও সে উচ্চমাধ্যমিকে ইংরাজী ডিঙোতে পারে নি, তবে তাতে মাষ্টারের কোন দোষ ছিল না, নিজের বংশের দোষেই সে পাস দিতে পারে নি।
     
    সব শেষে এল হাবার টার্ণ। হাবা বর্ণনা করল কিভাবে ক্ষ্যাপা মাষ্টারের প্রবল কোপে পড়েছিল বীচি টিপে দিয়ে। ক্ষ্যাপা মাষ্টার পাজামা পড়ে পড়াতে বসত। এবং মাঝে মাঝে পাশে বসা হাবাকে রিকোয়েষ্ট করত পা দুটো একটু টিপে দিতে। বারবার রিকোয়েষ্টে তিতি বিরক্ত হয়ে সেই বার হাবা পা টিপতে টিপতে আর একটু উপরের দিকে উঠে মাষ্টারের পৌরুষের প্রতীক দুটিকে দুটি খুব জোরে টিপে দেয়। হাউ মাউ চিৎকারে খ্যাপা মাষ্টার হাবাকে তাড়া এবং আর কোন দিন পড়াবে না বলে প্রতিজ্ঞা করে। পরে অবশ্য মাষ্টারের বউ অর্থাৎ তুফানের মায়ের হস্তক্ষেপে হাবা আবার টিউশনিতে ফিরে আসে।
     
    হাবার বলা শেষ হলে সভাপতি কি বলবে বুঝতে পারল না - "আশা করি ক্ষ্যাপা স্যারের বেশী লাগে নি। আর লেগে থাকলে এখন তো আর কিছু করার নেই - ক্ষমা করে দিন স্যার এই অবোধ বালকদের"
     
    সভা শেষ হল
  • সুকি | 49.207.197.3 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১৭:২৭733872
  • আমাদের গ্রামের ঠিক বাইরে পুব দিকে একটা খুব বড় দীঘি টাইপের আছে, যার নাম ‘গরাঙ্গে’। এই দীঘির একপাড়ে আছে আমাদের গ্রামের শ্মশান এবং অপর একপাড়ে আছে পাশের গ্রামের শ্মশান। অর্থাৎ মড়া পোড়া, পোড়া কয়লা, ভূত ইত্যাদি নিয়ে কারবার এই দীঘির।
     
    এই গরাঙ্গে নিয়ে একটু চাপ আছে। ছোটবেলা থেকে ভুত, সাধু – সন্ন্যাসী, মরা পোড়ানো নিয়ে এই শ্মশান এবং তার বিশাল অশ্বত্থ গাছ। মাঝে মাঝি তান্ত্রিক টাইপের সব আসত – একবার নাকি এসেছিল এক অঘোরী বাবা! দেখে তেমন কিছু মনে হয় না – কিন্তু একজন গোপন সূত্রে খবর দিল যে সে আগের দিন গরাঙ্গের পারে এক আধজলন্ত চিতা থেকে মাংসের টুকরো তুলে খেতে দেখেছে সেই অঘোরী বাবাকে।
     
    টেনশন বিশাল বেড়ে গেল - আগে নিমোতে অঘোরী বাবার আগমণের ইতিহাস নেই। আজকে চিতা থেকে মাংস খাচ্ছে, কালকে অন্য কি খাবে সেটা কে প্রেডিক্ট করবে!
     
    আলোচনা সভা বসল - কিভাবে ঠিক হবে কখন 'এনাফ ইজ এনাফ' বলা হবে সেই অঘোরী বাবাকে। কোণের দিকে একজন বসে সিগারেটে গাঁজা ভরার চেষ্টা করছিল - আমাদের আলোচনায় বিরক্ত হয়ে সে বলল,
     
    "চিতা থেকে মাংস তুলে খাচ্ছে তো বাঁড়া তোদের কি! খাচ্ছে খাক না! আমাদের ক্লাবের ফিষ্টি-তে এসে মাংস না চাইলেই হল!"
     
    পরের কাজে ফালতু নাক না গলানোর শিক্ষা সেখান থেকেই শুরু -
  • সুকি | 49.207.197.3 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১৭:২৯733873
  • সেবারে কি একটা পার্টিতে আলতু-ফালতু আলোচনা চলছে – শুরু হয়েছিল বেশ ভালোভাবে, কিন্তু রাত বাড়ার সাথে এবং নেশা চড়ার সাথে সাথে যা হয় আর কি, পাবলিক যা ভালো করে জানে না সেই নিয়ে বেশী উৎসাহী হয়ে পরে।  এমন সময় আলোচনায় উঠে এল, স্যোশাল সায়েন্স কি আদপে সায়েন্স? যে যা পারছে বকে যাচ্ছে – বলাই বাহুল্য এই নিয়ে আমার কোন জ্ঞান নেই বলে চুপ করেই ছিলাম।  কচি পাঁঠার মাংস খাওয়ার পরে ঢেঁকুর তোলা এড়ানো সম্ভব হলেও, মাতাল-দের এড়ানো অসম্ভব।

    বললাম স্যোশাল সায়েন্স কি আমি জানি না। একজন বলল তুই ওটাকে সমাজবিজ্ঞান ধরে নিয়ে তোর মতামত দে।  বেশ খানিক ভেবে জানালাম সমাজের ব্যাপার স্যাপারের সায়েন্স ঢোকানো আমার মতে চাপের।  সবাই উথলে উঠল – কেন কেন?

    আমাকে বলতেই হল এরপর সমাজের বেহিসাবী আচরণ।  নিমোর পাশের গ্রাম ছিনুই-য়ের পিন্টুর বোন একবার এক বিয়ে বাড়িতে ৩২টি রসগোল্লা খেয়ে কি ভাবে সামাজিক ট্যারাত্বের স্বীকার হয়েছিল সেই ঘটনা।  তখনকার দিনে আপ লোকাল ছিল সকালে নিমো স্টেশনে ৯.৫০-এ।  ছেলে এবং মেয়েরা সেই ট্রেনে স্কুল যে – পিন্টুর বোন পড়ত বৈদ্যডাঙ্গার মেয়েদের ইস্কুলে। একদম শান্ত মেয়ে – দামালপনার কোন ইতিহাস বা ফিসফাস নেই।  কিন্তু যেদিন রাতে বিয়ে বাড়ি খেতে গিয়ে ৩২টা রসগোল্লা খেয়ে ফেলল পর্যাপ্ত ফ্রায়েড রাইস এবং চিকেন খাবার পরেও, তার পরের দিন থেকেই আশেপাশে গ্রাম সমেত চালু হয়ে গেল পিন্টুর বোন এতগুলো রসগোল্লা খেয়েছে!

    সামাজিক ইন-ইকুইলিব্রিয়াম তৈরী হল – পাড়ার ঠাকুমারা রায় দিয়ে দিল এ মেয়ের বিয়ে দেওয়া চাপের। ছেলে ছোকরারা শুনে বলল, বাপরে এ মেয়ের সাথে কে প্রেম করবে! পকেট এমনিতেই খালি – এর সাথে প্রেম করলে তো বিকেলে ইস্কুল থেকে ফেরার সময় ট্রেনে ভিক্ষা করতে হবে! পিন্টুর বোন নিজের বান্ধবী হারাতে থাকল একে একে – ও স্টেশনে যে কৃষ্ণচূড়া গাছটার তলায় অপেক্ষা করে ট্রেনের জন্য, সেখানে আর কোন মেয়ে দাঁড়াচ্ছে না – কারো ভয় ঢুকে গেছে বিয়ে না হবার, কারো বা প্রেমিকহীন থাকার! বেচারী শান্ত ছিপছিপে পিন্টুর বোন একদম মিইয়ে গেছে – মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। 

    আমাদের নিমো ভারত সেবক সমাজের ছেলেরাও কম নয় – এমনিতে সকালে আমাদের আড্ডার সময়।  কোন কোন ছেলে সাইকেল নিয়ে বলছে, যাই চট করে প্লাটফর্ম দিয়ে ঘুরে আসি, দেখি পিন্টুর বোনের গায়ে গত্তি  লেগেছে নাকি, ৩২টা রসগোল্লা খেয়েছে, মুখের কথা নাকি! একজন বলল, একদিন বিয়ে বাড়িতে রসগোল্লা খেয়েই ওজন বেড়ে যাবে! উত্তর এল – আজকে না হয় শুনেছিস ঘটনাটা কেউ ফাঁস করেছে বলে, কতদিন ধরে খাচ্ছে কে জানে! আর একজন বলল, যাচ্ছিস যখন তাহলে একবার জিজ্ঞেস করে নিস তো কিভাবে স্লিম আছে এখনো! আমার তো মনে হচ্ছে এবার ছত্রিশ সাইজ প্যান্ট লাগবে! কিছুতেই আটকাতে পারছি না ওজন – তাও তো আমি কোন বিয়ে বাড়িতে ২০টার বেশী রসগোল্লা ওই জন্য খাই না!

    যাই হোক, আমার এই গল্প শুনে পার্টির জনতা খেই হারিয়ে ফেলছে – বলছে, তোর এই গল্পের সাথে স্যোশাল সায়েন্সের সম্পর্ক কোথায়! 

    বললাম, আমিও জানি না ঠিক। কেবল একটাই কথা বলার – বিজ্ঞান মেনে চললে এই ফোকাস কিন্তু থাকার কথা ছিল ওই একই ট্রেনে যাওয়া অমুকের বউয়ের উপর। কারণ সেই বৌদি আমাদের গ্রামের অন্য এক ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়েছিল বাড়ি থেকে। দীঘা নাকি আরো কোথায় এক মাস থেকে আবার এখন নিজের স্বামীর কাছে ফিরে এসেছে – কোন সামাজিক টেনশন দেখা গেল না কেন এই ক্ষেত্রে? অবৈধ প্রেমের তুলনায় কি ভাবে ৩২টা রসগোল্লা খাওয়া বেশী সামাজিক গুরুত্ব পেতে পারে! তোমরাই বল! এ জিনিস বিজ্ঞান হলে কেমন বিজ্ঞান?

  • সুকি | 49.207.197.3 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৩১733874
  • সেদিন নিমো ভারত সমাজের রোয়াকে বসে সকালের দিকে গুলতানি করছি, তাপসের মা সামনের রাস্তা দিয়ে গ্রামের ভিতরে যাবার সময় আমাদের দেখে দাঁড়িয়ে গেল। আমার পাশে চাঁদু বসেছিল, তাকে দেখতে পেয়ে কাকিমা এগিয়ে এসে বলল –

     

    “চাঁদু, তোমাকেই খুঁজছিলাম – আমার ছেলেটাকে তোমরা বাঁচাও”।

     

    আমরা গেলাম ঘাবড়ে – তাপস তখন কাজ করতে গেছে মহিন্দ্রা গাড়ি কোম্পানীরে চেন্নাই-য়ের কারখানায়। সেই কাজ করতে যাবার মূলে চাঁদুই ছিল। পাশ টাশ করে বাড়িতে বসেই ছিল, তো চাঁদু বলল তাপসে যে জর্জ টেলিগ্রাফ হাতে কলমে কাজ শেখার যে মেকানিক্যাল ট্রেনিং দেয় সেখানে ঢুকে যেতে। চাঁদুই সব খুঁজে পেতে ভর্তি করে দেয় সেই ডিপ্লোমা কোর্সে। কোর্স  শেষ হলে চেন্নাইয়ে চাকুরী পায় তাপস – বাড়ি থেকে ছাড়বে না, অনেক অনুনয় বিনয় করে বাক্স প্যাঁটরা বেঁধে তাপসকে নিমো স্টেশন থেকে চোখের জলে বিদায় জানানো হয়েছিল। এই হল ব্যাকগ্রাউন্ড।

    - কেন কাকিমা কি হল তাপসের?

    - আর বোলো না, মা হয়ে আর কি বলব – জিজ্ঞেসও করতে পারছি না তাপসকে খুলে সব ব্যাপার

    - আরে তুমি আমাদের বলো না কি হল

    - ছেলে আমার মনে হচ্ছে ওখানকার কোন মেয়ের সাথে ভাব করেছে

    - বলো কি কাকিমা? তা এতে বাঁচাবার কি হল?

    - অতটুকু ছেলে ভাব ভালোবাসার কি বুঝবে বলো তো? চাপ নিতে পারছে না

    - তুমি কি করে বুঝলে?

    - মায়ের মন বাবা – মাঝে মাঝেই ফোনে কথার ফাঁকে বলে, “মা, রসম্‌-এর জ্বালায় জ্বলে গেলাম”। অন্যএকদিন বলল, “রসম্‌ পিছু ছাড়ছে না মা – সকাল বিকেল সব জায়গাতেই রসম্‌”। ওদিকে মেয়েদের নামও বলিহারি, রসম্‌

    পাশ থেকে কে একজন বলে উঠল – “তা ভালোই তো কাকিমা, তোমাকে আর কষ্ট করে সমন্ধ করতে হবে না। বিদেশী বৌমা ঘরে আসতে তোমার”।

    কাকিমা বলল, “ইয়ার্কি করছ তো তোমরা – কিন্তু যদি দুটো মনের কথাই না বলতে পারব, তাহলে আর তেমন বৌমা নিয়ে ঘর করে কি সুখ! ওদেশের মেয়েরা কি আর বাংলা বুঝতে পারবে”।

    এবার আমাদের খটকা লাগলো – তাপস সেখানে প্রেম করছে আর আমাদের কাছে তার কোন ইন্টিলিজেন্স নেই! আর তা ছাড়া রসম্‌ আবার কি ধরণের নাম – নাকি কাকিমা পান শুনতে ধান শুনেছে!

    তাপস-কে ফোনালো হল – ‘কি করে লাইন মারছিস? তাও আবার মেয়ের নাম রসম্

    সে পড়ল আকাশ থেকে! তাকে খেই ধরিয়ে দেওয়া হল কাকিমার কথা বলে। তাপস সব শুনে রেগে ফায়ার – উদুম খিস্তি করতে শুরু করল আমাদের – “বাপের ভাতে বেগুন পোড়াচ্ছো দিন রাত আর কি বুঝবে! রসম্‌ যদি খেতে হত না, জানতে কত ধানে কত চাল। লাইফ জ্বলে গেল, ভাতে রসম্‌, রুটির সাথে রসম, এমনকি পায়েসের সাথেও বালের রসম্‌”।

    তাপসের মা প্রফুল্ল চিত্তে অগ্রসর হইল গ্রামের দিকে ইয়া জানিয়া যে রসম্‌ কোন মেয়ের নাম নহে!

    কিন্তু ফেরার পথে আবার খুব কান্নাকাটি – চাঁদু, তুমি তাপসকে ফিরিয়ে নিয়ে এস। চাষার ছেলে হয়ে দুবেলা দুটো ভাত খেতে পারবে না! মা হয়ে আমি এই শুনে কি করে মুখে খাবার তুলব এবার! ওমন চাকুরী চাই না –

     

    তাপস ফিরে এসেছে – আমাদের খামারে সকালের দিকে গল্প করে, মাঝে মাঝে পুঁটি মাছ ধরতে বসে, এখন শুনলাম দুর্গা মন্দির নির্মাণ কর্মে ব্যস্ত আছে।

  • সুকি | 49.207.197.3 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৩৫733876
  •  

    আমাদের আট কাঠা জমিটায় আলু তোলা হচ্ছিল বলে সকালে একটু মাঠ দিয়ে ঘুরে এলাম । কমলদা লাঙল টানছিল, গেস করতে বলল কত বস্তা আলু হবে - বললাম খান চল্লিশেক। বাবু বলল  বিয়াল্লিশ - দেখা যাক কার অনুমান ঠিক হয়।

     

    এর মাঝে মাঠে এল মঙলাকাকা। কমলদাকে দেখে বলল, তুই টানছিস লাঙল! কমলদা বলল আর কে টানবে? কেন তোমার কে টানছে?

     

    মঙলাকা বলল, আর বলিস না, তাতারপুরের কেষ্ট জমিতে কাজ করতে এল। বোকাচোদা খানিক পরেই বলছে, কাকা, লাঙলে হাত দিলেই আমার মাথা ঝিম ঝিম করতে, মনে হচ্ছে শরীর অবশ হয়ে যাবে।

     

    আমি মঙলাকাকাকে জিঞ্জেস করলাম, তুমি কি বললে কেষ্টকে?

     

    - কি আর বলব, বললাম ওকে যে তোর তো এই শুরু। মাঠে মারা যাবি তুই। ঘরে ভালো বউ থাকতে তুই কি বলে ওই বামুনের বউটাকে নিয়ে পালালি? বেচারা বামুন শুকনো মুখে পুজো করে বেড়াচ্ছে এখন। পাপ বলে কিছু তো একটা আছে নাকি ব্যাপার?

     

    আমার দিকে ঘুরে বলল, তুই থাকিস না সুকান, কি আর বলব। এর ওর বউকে নিয়ে পালানো এত বেড়ে গেছে!

     

  • সুকি | 49.207.197.3 | ০৩ এপ্রিল ২০২১ ১৭:৩৭733877
  • এবারে নিমোতে গিয়ে একদিন খুব সকালে ফালতু কর্কশ সংগীতে ঘুম ভেঙে গেল। মধুর ভাবে গাইলে হরিনাম শুনতে ভালো লাগে - কিন্তু বাউরি পাড়ার সুশীলের মত গাইলে!

     

    বলাই বাহুল্য ঘুমের ঘোরে খানিক বুঝতে সময় লাগলো সংগীতটা কি! পরে চা খেতে গিয়ে তল্লাশ করে জানলাম যে আমাদের সাথে ফুটবল খেলা সুশীল মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেবার পর পুরোপুরি হরিনামে মেতে উঠেছে। পাশের গ্রামে মেয়ের বিয়ে দিয়েছে। সুশীল কবে মেয়ের বাড়ি যাবে সেই ব্যাপারে নিজের মেয়ের থেকে গ্রামের লোকের উৎকন্ঠা ছিল বেশী। কয়েকদিন নিস্তার পাওয়া যাবে হরিনামের থেকে।

     

    কিন্তু সুশীল নাকি মেয়ের বাড়ি যায় সেখানে অন্য কারো কাছ থেকে গান শিখবে বলে। কি গান শিখে ফিরে আসছে সুশীল তার জন্য টেনশনে থেকে থেকে অনেকে মনে হচ্ছে সাম্য ডাক্তারের পেশেন্ট হয়ে যাবে। 

     

    এর পিছনে গ্রামের গুরুজনেরা দায়ী করল নারাণের অদূরদর্শীতাকে। আগে নিমোর হরিনামের দলে নারাণ হারমোনিয়াম এবং মাঝে মাঝে খোল বাজাত, সুশীল সেখানে খঞ্জনী। গান ছিল এক্টাই পেটেন্ট করা - "নীল যমুনা কালো জলে ইত্যাদি ইত্যাদি"।  নারাণ মরার আগে নাকি কথা বন্ধ হয়ে যায়, পাশে রাখা হারমোনিয়ামের গায়ে হাত বুলিয়ে ইহলোক ত্যাগ করে।

     

    তখন পাশে ছিল সুশীল - সে দাবী করে হারমোনিয়ামের গা থেকে হাত নামাবার সময় একটা আঙুল নারাণ তুলেছিল তার দিকে। এর ইন্টারপ্রিটেশন সুশীল করল এই মর্মে যে নারাণের শেষ ইচ্ছে ছিল হারমোনিয়ামের ভারটা সুশীল নিক।

     

    সেই শুরু হয়েছে - খালি গলায় গানে আপত্তি ছিল না কারো। কিন্তু খুব ভোরে মাইক লাগিয়ে রোজ হরিনাম চালু হওয়াতে অনেকে সুশীলকে থামাবার রিকোয়েষ্ট করতে লাগলো।

     

    সেদিন খুব ভোরে উঠে গেছি সুশীল আর কি গান শিখেছে শোনার জন্য - হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ করতে করতে হঠাৎ থেমে গিয়ে শুনি সুশীল বলছে, "মহাপ্রভু, তোমার নাম গান করি এটা অনেকেই চাইছে না। পাশের বাড়ির রামের বউ আমাকে গালমন্দ করছে, তুমি কিছু একটা করো প্রভু"।

     

    আবার গান শুরু হল

  • aranya | 2601:84:4600:5410:2d86:96e1:b6f7:e215 | ০৪ এপ্রিল ২০২১ ১০:১৭733887
  • নিমো রকস, সুকি রকস :-)

  • Arpita Ghosh | ০৫ এপ্রিল ২০২১ ১৬:৫৬733913
  • কুরিয়ার কোম্পানি এড্রেস চেয়েছিলো উইথ ল্যান্ডমার্ক আর সুকির ফোনে ল্যান্ডমার্ক বোঝানো ইংল্যান্ড থেকে। লেখাটা খুঁজছি জনগণ কে ফরওয়ার্ড করার জন্য। পাচ্ছি না। কোথায় পড়েছি তাও মনে নেই। একটু যদি সুকি স্যার খুঁজে দেন! থ্যাংকু!

  • সুকি | 49.207.197.3 | ০৫ এপ্রিল ২০২১ ২১:১৯733917
  • এই থ্রেডেরি দ্বিতীয় পাতায় আছে। কপি করে দিলামঃ

    • সুকি | 7845.15.788912.51 | ১১ মার্চ ২০১৯ ১৪:০৮381942
    • ১২ই ফেব্রুয়ারী পর থেকে আমি আশঙ্কা করে যাচ্ছিলাম যে একটা ডিজাষ্টার হতে যাচ্ছে – মানে যখন ওই HDFC ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বাই ফোর্স আমার নিমোর ঠিকানায় ‘ল্যান্ডমার্ক’ উল্লেখ করতে বলে। 

      বলাই বাহুল্য আমার আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হল এই ৬ই মার্চ। চাপাচাপিতে পরে আমাকে ল্যান্ডমার্ক হিসাবে উল্লেখ করতে হয়েছিল ‘বারোয়ারী’ তলা। 

      সেই মুহুর্তে আমি লণ্ডনে – ইম্পিরিয়াল কলেজে একটা মিটিং করছি হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠল। একটা বিশেষ কারণে ফোন সচল রাখতে হয়েছিল – আমি ভাবলাম সেই কারণেই হয়ত ফোনটি এসেছে। মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে এলাম কল রিসিভ করব বলে – হাই হ্যালো কিছু নেই, ডাইরেক্ট প্রশ্ন –

      - নিমো বারোয়ারী তলা কি ডান দিকে নাকি বাঁ-দিকে পড়বে?

      আমি ভাবলাম স্প্যাম কল – কেটে দিতে যাচ্ছি, তারপর ভাবলাম, ওয়েট! স্প্যাম কলে তো কার লোন বা ক্রেডিট কার্ড নেবার কথা জিজ্ঞেস করে। নিমো বারোয়ারী তলা নিয়ে তো স্ক্যাম কোনদিন শুনি নি!

      - হ্যালো, আপনি কে বলছেন?

      - বলছি দাদা HDFC ব্যাঙ্ক থেকে চিঠি তো চলে এসেছে

      এমন ভাবে বলল যে মনে হচ্ছে ব্যাঙ্ক থেকে আমার চাকুরীর খবর এনেছে! আমার মাথায় ফ্ল্যাশ ব্যাক খেলে গেল – কারণ আমার মাথাতেই ছিল যে ‘ল্যান্ডমার্ক’ নিয়ে কেউ না কেউ একটা কেলো করবে। এই ব্লু-ডার্টের ছেলে নিমো এসে এবার ল্যান্ডমার্ক খুঁজছে।

      - আরে সামনের কাউকে জিজ্ঞেস করো না সুকান্তর বাড়ি যাব – দেখিয়ে দেবে।

      ফোন কেটে দিলাম – মিটিং-য়ের মধ্যে আর বেশী কথা বলে কি হবে। মিটিং এ গিয়ে এদিকে মন বসছে না! যদি ডেলিভারী না দিয়ে চলে যায়! ওদের তো লিখে দিতে পারলেই হল ‘আন-ডেলিভারড’ – তার পরের হ্যাপা তো আমাকে পোয়াতে হবে! 

      আবার ফোন – ব্লু-ডার্টের আমার কথা বিশ্বাস হয় নি! এদিকে আমার বেশী কথা বলতেও মন চাইছে না – ইনকামিং কল তো আর পুরোপুরী ফ্রী নয়! কিন্তু দায়ে পরে বলতে হল 

      - বাঁদিকে যাব নাকি ডান দিকে?
      - বাঁ দিকে
      - ডান দিকে নয়?
      - ভাই, তুমি কোন দিকে মুখ করে আছে – মেমারী নাকি রসুলপুর?
      - মেমারীর দিকে
      - তাহলে ডান দিকে যাও

      ফোন রেখে দিলাম – এবং বুঝে নিলাম যে এ ছেলে ‘ল্যান্ডমার্ক’ ট্র্যাক করেই ছাড়বে। খানিক পরে যথারীতি –

      - নিমো বারোয়ারী তলা এসে গেছি – আপনি এসে নিয়ে যান চিঠিটা, এখানে দাঁড়িয়ে আছি
      - ভাই ইম্পিরিয়ালে আছি মিটিং-এ তো
      - আরে তাতে কি হয়েছে! টুক করে মিটিং থেকে বেরিয়ে চিঠি নিয়ে আবার ঢুকে পড়বেন! আর হ্যাঁ আই ডি কার্ড আনবেন কিন্তু।

      আমি বুঝলুম যে আমার মাথা খারাপ হয়ে গ্যাছে – ভুল জায়গায় মুখ খুলে ফেলেছি। বললাম

      - বাড়িতে মা আছে একটু গিয়ে দিয়ে এসো না ভাই আমার। আশেপাশে কাউকে সুকান্তর বাড়ি বললেই দেখিয়ে দেবে
      - ঠিক আছে আমি বাড়িতে দিয়ে আসছি – আপনি বলুন ল্যান্ডমার্ক থেকে কি করে আপনার বাড়ি যাব

      বারবার ‘ল্যান্ডমার্ক’ শুনে আমার মাথা গেল খারাপ হয়ে। ইম্পিরিয়াল কলেজের ‘রয়েল স্কুল অব মাইনস’-এর করিডোরে হেনরী বিসিমার এর আবক্ষ মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আমি প্রায় চিৎকার করে ব্লু-ডার্টকে ডাইরেকশন দিতে লাগলাম আমার বাড়ি যাবার

      - বারোয়ারী তলা থেকে দক্ষিণ দিকে তাকালে দেখবে মোড়লদের রঞ্জুর একটা কালো রঙের বাইক দাঁড় করানো আছে ওর বাড়ির সামনে – নতুন কিনেছে এল আই সি তে ভালো মাল কামিয়ে। সেই বাইক ছেড়ে প্রায় পনেরো মিটার এগিয়ে গেলে তুমি পাবে গিয়ে ডান হাতে ডাক্তারদের গাব গাছ। তোমার লাক ভালো হলে বাঁদিকে দেখবে নিতাই-য়ের গরু বাঁধা আছে পচা-গেড়ে পুকুরের পাড়ে। আরো দশ মিটার এগিয়ে গেলেই বাঁদিকে দেখবে সৈকতদের বাড়ি – সেই বাড়ির সামনে সৈকতের বাবাকে খড় কাটতে দেখার প্রবল সম্ভাবনা। সেটা ছাড়িয়ে ডানদিকে গণশা পালের গোয়াল। সেই গোয়ালের পাশে দিয়ে রাস্তাটা হালকা পুব দিকে বেঁকে গ্যাছে। রাস্তা হালকা ঘুরেই দেখবে সেটা প্রায় খানিক গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে কার্তিক হাজরার দুয়ারে। ওখান থেকে রাস্তা আবার আমাদের খামারের দিকে বেঁকে গ্যাছে। তবে অতটা যেতে হবে না – তার আগেই বিশ্বেসদের খেঁদির বাড়ি – আগে ওর বাড়ি মাটির ছিল, ইদানিং পাকা বাড়ি হয়েছে, তবে মাঝে মাঝে মনে হয় পাকা বাড়ির দেওয়ালেও মনে হয় খেঁদি ঘুঁটে দেয়। ওই খেঁদি আর পালেদের ভাদুর বাড়ির মাঝ দিয়ে যে সরু রাস্তাটা পাবে সেখান দিয়ে গেলেই 

      আমাকে আর কথা বলতে দিল না – ব্লু-ডার্টের ছেলে নিজেই এবার ফোন কেটে দিল। টেনশনে আছি – কি জানি আমার বাড়ি শেষ পর্যন্ত সে খুঁজে পেয়েছিল কিনা!
  • Arpita | 2607:fea8:4aa2:f54d:597e:bf7:e00b:a96f | ০৭ এপ্রিল ২০২১ ০৪:৪৬733938
  • অনেক ধন্যবাদ। 

  • সুকি | 49.207.211.67 | ১৬ মে ২০২১ ১৬:৩১734401
  • কয়েকসপ্তাহ আগের কথা - শনিবারের কলামে আইফেল টাওয়ার নিয়ে লেখাটা কমপ্লিট করতে হবে – তাই সন্ধ্যেবেলা একটু পড়াশুনা করে নিচ্ছি এমন সময় ফোন এল নিমো থেকে এক দাদার 

    - কি রে, কি করছিস?

    - তেমন কিছু না, খানিক পড়তে হচ্ছে

    - কি নিয়ে পড়ছিস

    - ওই আইফেল নিয়ে

    - তা ভালো করছিস, যা যুগ আসছে সামনে, ঘরে ঘরে রাইফেল রাখতে হবে। তোদের বাড়ির রাইফেলের লাইসেন্সটা ফালতুই সারেন্ডার করতে গেলি, কত বারণ করলাম

    - আরে, রাইফেল নয় – আইফেল

    - সেটা আবার কি?

    - আইফেল টাওয়ারের নাম শোনো নি? যার নামে টাওয়ার

    এখানেই আমার থেমে যাওয়া উচিত ছিল – কিন্তু মাঝে মাঝে মানুষ তো ভুল করেই। আমিও তাই করে যোগ করলাম

    - আইফেল কি বলেছিলেন জানো?

    - কি বলেছে সেই ভিডিওটা তুই হোয়াটসঅ্যাপ করে দিস, যদি বুঝতে পারি কি বলছে শুনে দেখব

    - উনি অনেক দিন মারা গেছেন, বইতে পড়ছি। উনি বলেছিলেন, আমি সারা জীবন বড় বড় জিনিস বানাতে গিয়ে অনেক কিছুর সাথে যুদ্ধ করেছি, কিন্তু আমার প্রধান শত্রু  ছিল বায়ু।  শেষ দিন পর্যন্ত আমাকে জ্বালিয়ে গেছে বায়ু

    - এ আর নতুন কথা কি, বায়ু এমন জিনিস ভাইরে, সাহেব হোক বা ভেতো বাঙালি – কাউকে ছাড়ে না। এই দ্যাখ না, কাল সন্ধ্যেবেলা লোভে পরে নকুর দোকানে একটা এগরোল খেলাম। একটু রাত হতেই কি বায়ু সরতে শুরু করল! শেষে তো তোর বৌদি আমাকে ভোর রাতে প্রায় ঘরে থেকে বের করে দেয় আর কি!

    আইফেল বেঁচে থাকলে  কি ভাবতেন কে জানে! 

  • সুকি | 49.207.197.5 | ১৭ মে ২০২১ ১০:২২734406
  • একটা স্বগতোক্তি টাইপের করে রাখি এখানে - বই ছাপা নিয়ে তেমন উৎসাহী ছিলাম না দীর্ঘদিন। কিন্তু লকডাউন আর তার পরে এই সাম্প্রতিক মৃত্যু ঘটনা সমূহ আমাকে অন্য ভাবে ভাবালো কিছুটা। যখন কিছু ভালো লাগে না, নিজেই নিজের নিমোর গল্প পড়ি - ছুঁয়ে ফেলতে চাই সেই প্রিয়জন, কাছের মানুষদের। এও এক আশ্রয় যেন - নিজের মত করেই! কবে যে নেই হয়ে যাব কোন গ্যারান্টি নেই! 


    তো যাই হোক, নিমোর গল্প নিয়ে আগে বেশ কয়েকজন বলেছিলেন বই করতে চান - বেশীর ভাগই কথার কথাই হয়ে থেকে গেছে যেমনটা হয়, আর কিছু ক্ষেত্রে আমার ইন্টারেষ্ট ছিল না। কিন্তু উদানিং সময় ব্যায়, নিমোর সব গল্পগুলিকে একজায়গায় করে রাখলাম, নয় নয় করে প্রায় ৩০০ পাতা হয়ে গেছে! আমি নিজেই অবাক।


    বাকি কোন বই হোক আর নাই হোক, নিজে কোনদিন নেই হয়ে যাবার আগে নিমোর গল্পগুলো নিয়ে বইটা দেখতে চাই।আমার নিজের জন্য, নিমোর লোকেদের জন্য - দেখা যাক কি হয়।     

  • সুকি | 49.207.197.5 | ১৭ মে ২০২১ ১০:২২734405
  • একটা স্বগতোক্তি টাইপের করে রাখি এখানে - বই ছাপা নিয়ে তেমন উৎসাহী ছিলাম না দীর্ঘদিন। কিন্তু লকডাউন আর তার পরে এই সাম্প্রতিক মৃত্যু ঘটনা সমূহ আমাকে অন্য ভাবে ভাবালো কিছুটা। যখন কিছু ভালো লাগে না, নিজেই নিজের নিমোর গল্প পড়ি - ছুঁয়ে ফেলতে চাই সেই প্রিয়জন, কাছের মানুষদের। এও এক আশ্রয় যেন - নিজের মত করেই! কবে যে নেই হয়ে যাব কোন গ্যারান্টি নেই! 


    তো যাই হোক, নিমোর গল্প নিয়ে আগে বেশ কয়েকজন বলেছিলেন বই করতে চান - বেশীর ভাগই কথার কথাই হয়ে থেকে গেছে যেমনটা হয়, আর কিছু ক্ষেত্রে আমার ইন্টারেষ্ট ছিল না। কিন্তু উদানিং সময় ব্যায়, নিমোর সব গল্পগুলিকে একজায়গায় করে রাখলাম, নয় নয় করে প্রায় ৩০০ পাতা হয়ে গেছে! আমি নিজেই অবাক।


    বাকি কোন বই হোক আর নাই হোক, নিজে কোনদিন নেই হয়ে যাবার আগে নিমোর গল্পগুলো নিয়ে বইটা দেখতে চাই।আমার নিজের জন্য, নিমোর লোকেদের জন্য - দেখা যাক কি হয়।     

  • b | 14.139.196.16 | ১৭ মে ২০২১ ১০:৪৩734407
  • হোক, হোক। শুধু তোমার বা নিমোর লোকেদের জন্যেই নয়, আমাদের জন্যেও। 

  • π | ১৭ মে ২০২১ ১০:৫৬734408
  • এ বই আশা করি শিগগিরিই আসবে! 

  • | ১৭ মে ২০২১ ১১:০৩734409
  • হ্যাঁ হ্যাঁ শিগগির আসুক। হার্ড কপি হুতো পাইরা দেখুক। আমরা ইবুকএর ব্যপারটা দেখে নেব। 

  • manimoy sengupta | ১৭ মে ২০২১ ২০:০৭734410
  • সনির্বন্ধ অনুরোধ করছি, বইটা 


    প্রকাশিত যাতে হয়, তার উদ্যোগ নিন। নয়তো 


    খুব লোকসান হয়ে যাবে। আপনার পাঠকদের লোকসান হবে। খুব। 

  • সুকি | 49.207.197.3 | ২৪ জুন ২০২১ ২১:২৯734635
  • আমার ভাই বাবু বেশ কয়েকদিন হয়ে গেল শ্বশুর বাড়ি গিয়ে বসে আছে, ফেরার নাম নেই।  এদিকে ধান রোয়ার সময় বয়ে যাচ্ছে – বীজতলা হেজে গেল প্রায় আর যা ধান ভেজানো ছিল সব কল বেরিয়ে খাটের তলাতেই ধান জমি হয়ে গেছে।


    বাবুর ডান হাত ম্যানেজার কমলদা বার বার ফোন করছে, “বাবু আয় রে! আর কতদিন থাকবি শ্বশুর বাড়ি? এই বেলা ধান না রুইলে পরের বার শ্বশুর বাড়ি যাবার গাড়ির তেলের দাম উঠবে কোথা থেকে!”


    ওদিকে বাবু নানা বাহানা বানিয়ে যাচ্ছে।  শ্বশুর ঘর গেলে ভালো মন্দ খাওয়া দাওয়া হয় বলে তিনি এমনিতেই ফিরতে চান না চট করে।  কমলদা শেষ পর্যন্ত এও বলল যে, “খাসির মাংস বাড়িতেই ব্যবস্থা করে দিতে বলব কাকিমা-কে।  তুই ফিরে আয়!”


    কিন্তু বাবু ঠিক ক্লিয়ার উত্তর দেয় না। আর একটু চাপাচাপি করলে যুক্তি দেয় – এত বৃষ্টিতে কি করে বাইক চালিয়ে ফিরব!


    ওদিকে কমলদা রেগে ফায়ার  - “বাঁড়া, চাষার ছেলে হয়ে তুমি বর্ষাকালে জল-কে ভয় পাচ্ছো! আজকে বিকেলের মধ্যে না ফিরলে আমি আর এর মধ্যে নেই – তোর চাষ তুই বর্ষাকালে করবি নাকি শীতকালে নিজে বুঝে নে!”


    সেই থ্রেট দেবার পর তিনি ফিরেছেন কাল বিকেলে –


    আজ সকালে বলে, “আসলে বলিস না, শ্বশুর পুরো শয্যাশায়ী – বাড়িতে শোকের ছায়া, এই অবস্থায় কি করে ফিরব”!


    শুনে টেনশন হয়ে গেল – চারিদিকে যা হচ্ছে করোনা ইত্যাদি নিয়ে! জানতে চাইলাম টেষ্ট করিয়েছে কিনা।


    কিন্তু বাবু এক্সপ্লেন করল তেমন কেস নয়।  বাবুর শ্বশুরের গরু একমাস আগে একটা এঁড়ে বাছুর বিইয়েছিল। তা দিন পাঁচেক আগে সেই বাছুরটা মারা যায় – এবং সেই শোকে শ্বশুর পুরো বিছানা নেয়! 


    বাবু বলল, “দাদা কি বলব রে – করোনা-তে মানুষ এমন কাবু হয় না, বাছুরের শোকে শ্বশুর যা কাবু হয়ে আছে”।

  • সুকি | 49.207.197.3 | ২৪ জুন ২০২১ ২১:৩০734636
  • ভ্যাকসিন    


    ------------------


    গত সপ্তাহে ভ্যাকসিন নিলাম।  ভ্যাকসিনের অ্যাপোয়েন্টমেন্ট পাবার পর থেকে সে যে কি হারে পরামর্শ বর্ষিত হতে লাগল কি বলব! নিমোর ছেলেছোকরার বিয়ে হলে ফুলশয্যার দিন ছেলে কি করবে তা নিয়ে ছেলের থেকে তার বন্ধুদের যেমন টেনশন বেশী থাকত অনেকটা সেরকম কেস।  


    জ্বর যে আসবেই সেটা বোঝা হয়ে গেল।  প্যারাসিটামল উপহার পেলাম – কেউ আবার বলল আগে থেকেই প্যারাসিটামল খেয়ে রাখতে! বললাম, 


    “উঁহু, সেটি হবার নয়! আগে থেকে প্ল্যান করে কাজ করে নিমোর তথা ঘোষবাড়ির নাম ডোবাবো নাকি?” 


    আমার চোদ্দ পুরুষ আগে থেকে ভেবে চিন্তে কাজ করে নি। আগে অ্যাকশন – পরে দেখা যাকে, এই রীতিতে মানুষ হয়েছি আমরা।  তর্ক, কথা কাটি কাটি, মারামারি এই সব ব্যাপারে নিমোতে সাধারণত দু-দিন পরে আমরা জানতে পারি যে কি নিয়ে মারপিট করে এলাম!


    তো যাই হোক, আমি যেটা কনসিডারে আনলাম তা হল – জ্বর এলে খাবো কি! জিবে যদি স্বাদ না থাকে বা উঠে গিয়ে খাবার যদি এনার্জি না থাকে বডিতে! যা বুঝলাম ভ্যাকসিন নেবার ঘন্টা সাতেক পর থেকে জ্বর আসতে পারে, আর থাকবে তার পরের পুরো দিন।  মানে আমার তিনটে মেন মিল মিস হতে পারে – ভ্যাকসিনের রাতের ডিনার, আর পরের দিনের লাঞ্চ আর ডিনার।


    আমি তিনবারের খাবারের অর্ডার দিয়ে দিলাম – ইতালিয়ান, মেক্সিকান আর আমেরিকান বার্গারের মিশ্রণ। কে জানে কবে আবার জিবে স্বাদ ফিরবে।  দুপুরে ভ্যাকসিন নিয়ে এসেছিলাম – সন্ধ্যা সাতটা থেকে খাওয়া শুরু করলাম – সব শেষ করে, একবোতল কোক খেয়ে বিশাল একটা ঢেঁকুর তুললাম। 


    বার বার চেক করছি কপালটা – গা এখনো গরম হচ্ছে না। ভাবলাম ঘুমুতে গিয়ে গা গরম হয়ে যাবে -  এই ভেবে শুতে গেলাম।  ভোর তিনটের দিকে ঘুম ভেঙে গেল – সঙ্গে সঙ্গে মাথায় হাত দিয়ে দেখলুম, কিচ্ছু গরম হয় নি বডি। তাহলে ঘুম ভাঙলো কেন – এই নিয়ে মহা চিন্তায় পরে গেলাম।  বেশ খানিক পরে বুঝতে পারলাম এর কারণ পেট গুরগুর করা আর তার উপর অম্বল এবং চোঁয়া ঢেঁকুর।  ঘাবড়ে গেলাম – এটা কি ভ্যাকসিনের সাইড এফেক্ট নাকি ইতালিয়ান, মেক্সিকান আর আমেরিকানরা পেটে গিয়ে বিপ্লব করছে!


    গুগুল সার্চ করতেই হল কারণ এই নিয়ে আগে খোঁজ নিয়ে রাখি নি। প্রথমে সার্চ দিলাম, ‘এফেক্ট অফ ইতালিয়ান ফুড পোষ্ট ভ্যাক্সিনেশন’ – গাদা গুচ্ছের ইতালির কোভিড ডাটা চলে এল।  অনুরূপ ভাবে মেক্সিকান দিয়েও সার্চ করলাম কিছুই পেলাম না – তাই সার্চ পাল্টাতে হল “সিনারজিষ্টিক এফেক্ট অব মাল্টিকারচারাল ফুড অন পোষ্ট ভ্যাক্সিনেটেড স্টমাক”।   এতেও কিছু পেলাম না – বাঙলায় টাইপ করতে গেলাম ‘চোঁয়া ঢেঁকুর’, কিন্তু আইপ্যাডে চন্দ্রবিন্দু খুঁজে না পেয়ে, ছোঁয়া দিয়ে রেজাল্ট চলে এল – এমনকি অনুরাগের ছোঁয়া সিনেমার নাম এবং গানও! 


    এই করতে করতে পায়খানা পেয়ে গেল – ছুটে পায়খানা দিয়ে ঘুরে এসে দেখলাম অনেকটা প্রশমিত হয়েছে পেট।  যা বোঝার বুঝে গেলাম –


    মেন্টালি রেডি ছিলাম যে পরের দিন জ্বর আসবে আর অফিসে সিক লিভ নেব।  আর তাছাড়া জ্বর এলে নাকি এফেক্ট বেশী হচ্ছে ভ্যাকসিনের এমন একটা ব্যাপার আছে – তাই জ্বরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে বসে ছিলাম।  কিন্তু সেটাও হল না – পরের দিন নো এফেক্ট।  বন্ধুরা শুনে বলল, তোমার বডি ফিট। সেই শুনে বেশ গর্বিত হলাম 


    কিন্তু একজন সন্দেহের বীজ বুনে দিয়ে বলল, তোমাকে আদৌ ভ্যাকসিন দিয়েছে তো? নাকি স্যালাইন জল দিয়ে ছেড়ে দিয়েছে! 


    সেই শুনে আমার প্রবল টেনশন বেড়ে গেল – ভ্যাকসিনের পয়সাটা পুরো ঠকিয়ে নিল নাকি? এদিকে নামে শেষে এদের একটা অভ্যাস আছে ফালতু ‘h’ জুড়ে দেওয়া, তাই সার্টিফিকেটে সেটা দেখতে গিয়ে খেয়াল করি নি কি দিয়েছে আমাকে ভ্যাকসিন!


    বাঁ হাতটা, যেখানে ইঞ্জেকশন দিল সেখানটা টিপে টিপে ব্যাথা করে ফেললাম – মানে খুঁজতে চাইছিলাম যে স্যালাইন জল দিলেও ছুঁচ ঢোকাবার ব্যাথা তো থাকবে নাকি! যা দেখলাম ব্যাথা আমি নিজে টিপে সৃষ্টি করেছি –


    এখনো আমি ধ্বন্দে – কি দিল কে জানে!

  • Amit | 193.116.204.56 | ২৫ জুন ২০২১ ০৩:২৮734638
  •  ২৪ জুন ২০২১ ২১:২৯ তে একটু ​​​​​​​খানি আপত্তি ​​​​​​​রইলো ​​​​​​​হে ​​​​​​​সুকি। ঘরে পোষ্য থাকলে তাদের ওপর এতো বেশি মায়া পড়ে যায় , সেটা যাদের নেই তাদের পক্ষে একটু হলেও বোঝা মুশকিল. নিজের ছেলে মেয়ের ওপর ভালোবাসা থেকে ওগুলো কোনো অংশে কম নয়। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। 

  • সুকি | 147.161.172.249 | ২৫ জুন ২০২১ ১৪:০৩734641
  • অমিতাভদা, ঠিক এই কথাটাই আরো কয়েকজন বলেছিলেন লেখাটি পড়ে এবং আমি একমত। এই লেখাটায় মজার ছলে মনে হচ্ছে - কিন্তু পোষ্য হারানোর বেদনা খুবই মর্মান্তিক হতে পারে সেই বিষয়ে কোন সন্দেহই নেই।


    আসলে নিজের জীবনের  ইমোশনাল বা দুঃখের ঘটনা লিখি না খুব একটা বেশী তেমন। আমরা যারা গ্রামে মানুষ হয়েছি পোষা কুকুর ছাড়াও (যেটা তুলনা মূলক কম বাড়িতে থাকত - আমাদের একটা অ্যালসেসিয়ান ছিল টমি) মূলত আমাদের পোষ্য সংক্রান্ত বেদনা ছিল গরু নিয়ে।


    একটা ঘটনা মনে আসছে - আমাদের কালো গরুটার বাচ্ছা হব হব করছে, একদিন গোয়ালে ঢোকার সময় পড়ে গিয়ে অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। পেটের বাচ্ছাটা নষ্ট হয়ে যার - অনেক ব্যাপার, ছোট করে বলতে গেলে - পেটের মৃত বাচ্ছাটা বের না করলে কালো গরুটাও মারা যাবে। আমরা যাকে পাশ করা ডাক্তার বলতাম (মানে ভেটেনারী পাশ করা) সে পারল না, পাশের গ্রামের লঙ্কা এসেও পারল না - শেষে আমাদের গ্রামের জগা জেঠ্যু যে গরুর ডাক্তারি করত, সে এসে বলল স্পেশাল আঁঙটা বানিয়ে টেনে বের করতে হবে পেট থেকে।


    সে দৃশ্য দেখা যায় না - ঠাকুমা কালো গাইয়ের মুখে হাত বুলাচ্ছে "একটু কষ্ট করে নে, না হলে তুই বাঁচবি না" - যন্ত্রনায় চিৎকার করছে, কিন্তু তেমন নড়ছে না সুবিধা করে দেবার জন্য - চোখ দিয়ে জল পড়ছে কালো গরুর - 


    এমন অনেক ঘটান আছে - তবে এটা এখনো ভুলতে পারি না -   

  • π | ২৮ জুলাই ২০২১ ০১:৩৮734783
  • আসিতেছে।

  • Abhyu | 47.39.151.164 | ২৮ জুলাই ২০২১ ০১:৫৬734784
  • সুকির বই বেরোচ্ছে খুব ভালো খবর।

  • :|: | 174.255.131.127 | ২৮ জুলাই ২০২১ ০৩:০৬734785
  • বইতে স্ল্যাং গুলি একটু কি কেটে ছেঁটে দেওয়া হবে নাকি গুরুর পাতায় যেমন প্রকাশিত হয়েছে ঠিক সেই রকমই প্রকাশিত হবে? 

  • সুকি | 117.214.45.171 | ৩১ জুলাই ২০২১ ১৮:৩২734790
  • মনে হচ্ছে সামনের সপ্তাহেই এসে যাবে! বই কেউ আজকাল তেমন কেনে না বলে আমার যে ধারণা আছে তাতে সম্মতি না দিয়ে  বলা হয়েছে নিমোর বই কিনবে পাবলিক 


    আমাকে ভুল প্রমাণের এই এক সুযোগ! ফ্রীতেই চিরকাল গল্প শুনিয়েছি, ভবিষতেও শোনাবো। কিন্তু নিমোর মুখ চেয়ে বইটা কেউ কিনলে খুশি হব।


    আমি না হয় কেউকেটা লেখক নই, কিন্তু গ্রাম হিসাবে নিমোর তো একটা ব্যাপার আছে নাকি!


    সেই ব্যাপার রক্ষার দায়িত্ব এখন আপনাদের হাতে

  • সুকি | 117.214.45.171 | ৩১ জুলাই ২০২১ ১৮:৩৭734791
  • নিমোর মান রক্ষা করতে যা এফর্ট দিচ্ছি নিজে পি এইচ ডি করতে গিয়েও তত খাটুনি ভাবতেই পারি নি! 


    অনলাইনে বই পাওয়া যাচ্ছে এই লিঙ্কে:


    https://www.collegestreet.net/Nimo_Graamer_Golpo

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন