এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • ন্যাড়া | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:২১381934
  • ছুটি-টুটি ম্যানেজ করে এখনই একবার নিমো ঘুরে এস। খুব চিন্তায় আছি।
  • র২হ | 342323.176.011212.241 | ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২২:৩২381935
  • আমার ধারনা ছিল চড়াম অনুব্রত’র কয়েনেজ, আসলে দেখছি প্রচলিত বাগধারা।

    আর অন্ডকোষের সেন্টি দিয়ে মুকুলবাবুকে ফিরে পাওয়া যায়না? খুবই ভ্যালিড পয়েন্ট তো। যাই হোক উদ্বেগে রইলাম।
  • amit | 340123.0.34.2 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৫:৪৭381936
  • এই মুকুলের বাপটা কি পাষণ্ড মাইরি, নিজের বংশধরকে এরকম বাঁশ দিতে দুবার ভাবলো না ?

    তবে প্রেমালাপটা সলিড। কাজের ছেলে একদম, বেকার না হেজিয়ে একদম পয়েন্ট বাই পয়েন্ট।
  • b | 4512.139.6790012.6 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৬:৪৬381937
  • অহে সুকি, তোমরা অন্ডকোষ জাতীয় শব্দ ব্যবহার করতে? বিশ্বাস করতে বলো?
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৭:০৬381938
  • অন্ডকোষ অবশ্যই ব্যবহার করতাম না। হাতুরে ডাক্তার কেজা গ্রামের মানু-কে দেখাতে গেলে সে তো অন্ডকোষ কি জিনিস বুঝতেই পারল না! বীচি-ই বলা হত। লেখাটা ফেসবুকে দিয়েছিলাম বলে এই পরিবর্তন
  • সুকি | 90045.205.012323.46 | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:৩৬381939
  • নষ্টালজিয়া এক অসুখের নাম – আর আমি সেই ফাঁদে বার বার পা দিই, যেমন আগের দিন কবি অরুণ ষোষের লেখা ‘শুয়োর’- সিরিজের কবিতাগুলি পড়তে গিয়ে দিলাম। সে দিন সকাল বেলা বিশেষ কোন কাজ না থাকায় কি মনে করে পুরানো ফাইল পত্র ঘাঁটে গিয়ে অরুণ-দার কবিতার খাতাটা পেয়ে গেলাম। পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে ১৭ নম্বর কবিতাটি দিয়েই শুরু করলামঃ

    শুয়োর – ১৭
    --------------------
    এখনও শুয়োরের বাচ্চারা জন্মায়
    বহুত পয়সা কামায়
    টাকা থাকলেই শুয়োর হয় না
    আবার শুয়োর পুষলেই টাকা হয় না
    শুয়োরের বাচ্ছা
    দিল কি তোদের সাচ্চা?
    লোকের পিছনে কাঠি করে
    সারে জাঁহা সে আচ্ছা ।।

    কবি অরুণ ঘোষ মানে আমাদের নিমোর অরুণ – ভারত সেবক সমাজের প্রিয় অরু-দা! অরুন-দা হল গিয়ে আমাদের নিমো গ্রামের বাল্মীকি – আদিকবি। অনেকে ফেসবুকে আমার লেখা পড়ে ভাবতে পারেন যে, আমি হয়ত নিমো গ্রামের লেখা লিখির জগতে কেউকাটা ছিলাম – ফার ফ্রম ইট! পড়াশুনার সাথে যে আমার কোন সম্পর্ক থাকতে পারে, মায় সাহিত্য ইত্যাদি নিয়ে, তাই আমাদের গ্রামের অনেকের কাছে কল্পনাতীত ছিল। বুদ্ধিমান পাঠক প্রশ্ন করতে পারে – ভাই, অরুণের কবিতার খাতা তোমার কাছে এল কি করে? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হল – আরো বাকি অনেক কিছুর মত আমি নিজের বাঁশ নিজেই টেনে এনেছিলাম। ঘটনা খুলে বলতে গেলে বেশ জটিল।
    মেমারী স্টেশনের ডাউন প্লাটফর্মের ছাউনির তলায় বহুদিন যাবত এক হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকা বেরোত – যার নাম ছিল “কলমের মুখ”। আমাদের বন্ধু বাচ্চুর দাদা চালাত মূলত সেই পত্রিকা – রফিকদাই সম্পাদক, অবসর সময়ের ‘পাদুকালয়’ জুতোর দোকানের মালিক। জুতোর ব্যবসা বলতে গেলে সিজিন ব্যবসা গ্রামের দিকে। তাই পুজোর এবং বর্ষার সময় সেই হাতে লেখা দেওয়াল পত্রিকা অনিয়মিত হয়ে যেত, কারণ সম্পাদক স্যানডাক ও অজন্তা বিক্রি করে হাঁপাত। বছরের বাকি সময় রফিকদা কলমের মুখ নিয়ে ব্যস্ত, আগুন ঝরে পড়ত লেখাতে। এই আগুন ঝরা বক্তব্য আমার নয় – বাচ্চুই একদিন বলল যে দাদার লেখা নাকি ফুলকি ছোটাচ্ছে। মনে রাখবেন মেমারী সেই সময় সি পি এম পার্টির প্রাণকেন্দ্র – বুদ্ধদের কাছে বোধিগয়া যেমন।

    লাইফে যেমন চিরকাল নিজের পায়েই নিজে কুড়ুল মেরে এসেছি – সেই দিনও আবার একবার মারলাম। বাচ্চুর মুখে তার দাদার কথা শুনে কি মনে করে বলে ফেললাম, “বাচ্চু, তোর দাদাকে বলে দ্যাখ না, যদি আমার একটা কবিতা ছাপতে রাজী হয়! আমি পুরো তুবড়ী ছুটিয়ে লিখেছি”। বাচ্চুর সাথে কবিতার সম্পর্ক ততটাই যতটা হল ওয়াটার পোলোর সাথে এমনি পোলো খেলার। বাচ্চু বলল, “দে তাহলে তোর লেখা যেটা কড়া আগুন ঝড়ানো কবিতা আছে”। আমি খাতা খুলে ভাবতে বসলাম যে কোন কবিতা দেওয়া যায় যাতে সম্পাদক ঝট করে ঘায়েল হইয়ে যায়। বেছে দিলাম সেই কবিতা যার শুরু হচ্ছে এইভাবে,

    “ছুঁড়ে দেব তোর কলমের মুখে একদলা থুতু
    মাঠ থেকে ধান ওঠার পরই না হয়
    কবিতা করিস আবার
    এখন গিয়ে গরুর গাড়ির চাকাটা ঠ্যাল!”

    জমি থেকে ধান তুলতে গিয়ে গরুর গাড়ির চাকা বসে গ্যাছে নরম মাটিতে কিন্তু আসে পাশে কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না ঠেলার জন্য – সেই ফ্রাশটেশন থেকেই এই আগুন কবিতার জন্ম। মনে হয় রফিক-দা রিলেট করতে পেরেছিল – এই কবিতা ছাপা হয়ে গেল পরের মাসের দেওয়াল পত্রিকায়! ব্যাস আমার শান্তির শেষ। নিমো গ্রামের দু-একজন জানতে পেরে গেল আমি নাকি কবিতা লিখি! হ্যাটা করা শুরু করে দিল – কিন্তু তার মাঝেই আরো বেশী প্রবলেমে পরে গেলাম অরুণ-দা আমার লেখা কবিতা দেখে ফেলায়! কারণ অরুণ-দা তখন নিমো গ্রামের ভিতর মধ্যে তার কবিতার খাতার উত্তরাধিকারী খুঁজে বেড়াচ্ছে পাগলের মত। সেই খাতা যার মধ্যে পুরো ‘শুয়োর’ সিরিজের কবিতাগুলি লেখা আছে!

    অরুণ এবং তার ভাই বরুণ বার্ণপুর ইস্পাত কারখানা থেকে একদিন ফিরে এল গ্রামে – কেন ঠিক জানি না। লোকে শহর থেকে গ্রামে ফিরে পয়সা এবং শরীরে চর্বি নিয়ে। এই দুই ভাই ফিরে এল – গাঁজার নেশা এবং ভগ্নস্বাস্থ্য নিয়ে। অরুণ-দার সাথে বাড়তি ছিল কবিতার খাতা। আবার পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে চলে গেলাম সেই ২২ নম্বর কবিতায়ঃ

    শুয়োর – ২২
    ------------------
    সভায় আগত সব শুয়োরের দল
    করে কলবল
    আর ভেউ ভেউ
    যেন বাঘের পিছনে ফেউ
    কে করেছে রে তোদের পয়দা?
    আটা ছেড়ে খাস ময়দা
    ময়দার লুচি হয় আটার রুটি
    কোরো না ভ্রুকুটি
    সামনের সারি
    শুয়োরের দলও মারে ঝারি
    কি যুগ এল মাইরি!

    আমার মনে পড়ে গেল এই কবিতা অরুণদা পাঠ করেছিল নিমো সাহিত্য সভায়। আমাদের নিমো বারোয়ারী তলায় প্রতি বছর দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিনে বিকেলে হত এক ‘সাহিত্য সভা’। সে সভাতে আশে পাশের গ্রামের সাহিত্য মোদী পাবলিক, উঠতি কবি, এবং স্কুল মাষ্টারেরা আসত। নিমোতে এটা শুরু করেছিল সামাদ সাহেব। সামাদ সাহেবের গল্প অন্য একদিন করব, তবে সেই সাহিত্য সভা ঠিক ৬০ বছর চলার পর গত কয়েক বছর হল থেকে যায়। সামাদ সাহেব এবং তার পরে শচীন মাষ্টার এই দুই প্রধান উদ্যোক্তার মৃত্যুই এর প্রধান কারণ।

    নিমোর পার্টিসিপেশনের মধ্যে ছিল সঞ্চালক অরুণ-দা, সামনের সারিতে জেলেদের তপি, মহাদেব পাইন, খ্যাপা গোপলা, পান গিন্নি, ডাক্তারদের কেনো এবং তদসহ আরো অনেক বড়, মেজ, ছোট পাবলিক। আমার কোন সাহিত্য সংযোগ ছিল না এই সভার সাথে – আমি কেবল চা বিলি করেই আমার কর্তব্য সীমাবদ্ধ রাখতাম। একবার দেখলাম বর্ধমান থেকে কোন এক পত্রিকার সম্পাদক-কে ডেকে আনা হয়েছে। তিনি ঠিক কি বললেন আমি বুঝতে পারলাম না – বারোয়ারী তলার সামনের কেয়া-ভাইঝি দের বাড়ি চা-টা গরম করে আনতে গেলাম, ভিতরে ঢুকে শুনি সাহিত্য সভা থেকে আওয়াজ আসছে “ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও – চলবে না, চলবে না” ইত্যাদি। এই সব আওয়াজ সি পি এম আমলে আমাদের গ্রামে নিত্য ঘটনা হলেও, আগে কোন দিন সাহিত্য সভায় এমন আওয়াজ শুনি নি! চা গরম না করেই ছুটে গিয়ে দেখি, সেই বর্ধমানের পত্রিকা সম্পাদক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিচ্ছেন কিভাবে কলকাতার সাহিত্যিকেরা জেলার সাহিত্যিকদের বঞ্চিত করে রেখেছেন। কলকাতার কালো হাত নিয়ে কিছু করার দাবী জানিয়েছেন – এবং ততখনাত নিমো পাবলিকের কমন সাবজেক্ট পেয়ে ‘কালো হাত ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও বলে চিৎকার করতে শুরু করে দিয়েছে!

    আরো নষ্টালজিক হয়ে পড়ালাম এটা মনে পড়ায় যে, এই সাহিত্য সভায় চাঁদা তুলতে গিয়েই ‘ঘোড়ার বাঁড়া’-র সাথে পরিচয়। নিমো প্রাইমারী ইস্কুলের পাশের খোকা-কার বাড়িতে যখন চাঁদা তুলতে পৌছালাম তখন বাইরের দুয়ারে বসে খোকার ভাই বুড়ো দাড়ি কামাচ্ছিল। আমার সাথে ছিল ময়রাদের চাঁদু। গিয়ে বললাম, “ও কাকা, চাঁদাটা দাও”। বুড়ো অবাক হয়ে জানতে চাইল, কিসের চাঁদা! সাহিত্য সভার চাঁদা চাইতে এসেছি জানতে পারার পর বুড়োকা বলল, “কি হবে সাহিত্য করে”? বলাই বাহুল্য এ উত্তর আমাদের জানা ছিল না – যেমন জানা ছিল না ‘লোকহিত’ নামক রবি ঠাকুরের প্রবন্ধও আমাদের পড়ে কি হয়। আমরা বললাম, “কাকা ওত জানি না, তুমি চাঁদাটা ছাড়ো না, আমরা অন্য বাড়ি যাই”। আমাদের তাড়া শুনে সাহিত্য করে কি হবে তার জবাবটা বুড়োকা নিজেই দিয়ে দিল, “সাহিত্য করে ঘোড়ার বাঁড়া হবে”। চাঁদা পাব না বুঝে গিয়ে ফেরার সময় চাঁদু-দা কে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি দেখেছ ঘোড়ার বাঁড়া”? তার মেজার খিঁচড়ে ছিল – “নিমোতে ঘোড়া আছে যে দেখব”?

    অরুণদা কংগ্রেস করত – তাই তার কবিতাতে সি পি এমের কথাও এসেছেঃ

    শুয়োর – ২৫
    ----------------------------
    এসো শুয়োরের দল হাত ধরাধরি করে বলি
    ভালোবাসি ভালোবাসি
    তুমি তো খেতে ভালোবাস খাসি
    খিল খিল হাসি
    আবার নির্জনে বলি
    আনারকলি আনারকলি
    এমন দিন আয়েগা
    দলে দলে শুয়োরভি গায়েগা
    সা রে গা মা নি
    তদপরে সিপিএম-র উদুম ক্যালানি।

    সেই সি পি এমের সময়ে গ্রামের রাস্তা অত্যন্ত জঘন্য ছিল – সেই নিয়েও আক্ষেপ রয়ে গ্যাছে অরুণদার কবিতায় –

    শুয়োর – ৩৩
    --------------------------
    শুয়োরের দল রাস্তাটা দিল না করে
    রাস্তারই পাশে, নিদারুণ সুবাসে
    ছড়নো গু তোরা খা প্রাণ ভরে
    আমি চিৎকার করে বলি
    আনমনে চলি
    লেকিন কিঁউ লেকিন কিঁউ
    কি বাজে ভিউ, কি বাজে ভিউ
    ওরে শুয়োর, এই ভাবে কি পাওয়া যায় ভোট
    যে যা পারিস লোট
    তোদের যতই শেখাই, চামড়ায় তেল মাখাই
    আদপে শুয়োরই তো
    তেমনি হাগো মোতো।

    এই ভাবেই কুমুদরঞ্জন, জসিমুদ্দীন নয় – আমাদের গ্রামের সময়ের দলিল হয়ে আছে এই ‘শুয়োর’ সিরিজের কবিতা।
  • dd | 90045.207.5656.182 | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৮:৫১381940
  • অরুণবাবুর কিছু কবিতা তো আমার সংগ্রহেও আছে,

    ঘোঁত ঘোঁত ঘোঁত ঘতাস
    ধামসা শুয়োর নাক ঝাড়ে না
    আমি বড়োই হতাশ।

    এম্নি গরম, চরম গরম
    মারছে ছ্যাঁকা কাঠের খড়ম
    শুয়োরদের তো ভ্রুক্ষেপও নেই
    গিলছে লুএর বাতাস

    কিংবা যখন শীতের রাতে
    মাদুর পেতে শুইছি ছাতে
    শিশির মাখা হিমেল বাতাস
    হচ্ছে হাড়গুলো সব হিমও

    তখনো সেই শুয়োর গুলো
    মাখছে কাদা মাখছে ধুলো
    এমনি গেরাম নিমো।।

    আপনেরা তো সবাই বুঝতেই পারলেন ইটি আদতে শুয়োর বিষয়ক পদ্য নয়। ইটি সাক্ষাত গ্লোবাল ওয়ার্মিং বিষয়ে এক প্রকৃতি সচতেন কবির নির্নিমেষ আকুতি ও হেঁচকি।
  • সুকি | 7845.15.788912.51 | ১১ মার্চ ২০১৯ ১৪:০৫381941
  • ১২ই ফেব্রুয়ারী নাগাদ HDFC ব্যাঙ্ক যা দাগা দিল আমায়, এমন যাতনা, বেদনা, দুঃখ আমায় বহু দিন কেউ দেয়নি! ঠিকানা পরিবর্তন করার জন্য আমি কাগজ পত্র সব ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে এলাম – ওদের সিষ্টেমে এবার আমার নিমো গ্রামের ঠিকানা থাকবে। বাড়ি ফিরে আসার পর বিশাল এক কাজ করে এসেছি ভেবে খেয়ে দেয়ে একটু ন্যাপ নিতে গেছি, ওমা দেখি ব্যাঙ্কের ম্যানেজার ফোন করেছে। জিজ্ঞেস করে কি, “আচ্ছা, আপনার নিমো-র বাড়ির ঠিকানাটায় ‘ল্যান্ডমার্ক’ কি লিখব ?”

    আমি বাকরুদ্ধ! নিমো গ্রামে ঢুকে সুকান্ত ঘোষের বাড়ি যাব, এটা সাফিসিয়েন্ট না? আমার বাড়ি বোঝাতে ‘ল্যান্ডমার্ক’ লাগবে? আমার কাছ থেকে এটুকুও তুমি কেড়ে নিলে! এই গরীবের আর বিশেষ কিছু ছিল না, গ্রামে এক ডাকে সবাই চেনে এই প্রাইড ছাড়া। অবশ্য এই একডাকে সবাই চেনে ব্যাপারটা নিমোতে শুধু আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এমন নয় – ভেলু বাপন, তবলা, পালেদের গণশা জ্যাঠা, মোটা শৈলেন, সুমন কুমার সহ আমরা প্রায় সবাই নিজেরা নিজেদের ল্যান্ডমার্ক! আমি এই কথোপকথন ভাবছিঃ

    - দিদি, সুকান্ত ঘোষের বাড়ি যাব – কোনদিকে বলতে পারেন?

    জেলেদের জয়ন্তী ঘুঁটে দিতে গিয়ে থেমে গিয়ে প্রশ্নকর্তাকে জিঞ্জেস করছে

    - কোন সুকান্ত ঘোষ? ‘ল্যান্ডমার্ক’ জানা আছে বাড়ির?

    এটা ভেবে আমার ঘুম এল না দুপুরে – খুব মন খারাপ করে শুয়ে রইলাম। চিরকাল চিঠি এসেছে, “সুকান্ত ঘোষ, নিমো, বর্ধমান, ওয়েষ্ট বেংগল” এই ঠিকানায়। সেই বিশে হালদার পোষ্টমাষ্টার – মিতা ময়রার চিঠি বিলি – আর গোষ্ট হালদারের ডাক নিয়ে আসা কম্বিনেশন থেকে ইদানিং সৃষ্টির পোষ্টমাষ্টার বউ আর সৃষ্টির নিজের চিঠি বিলি করা – এর কোন কিছুর মাঝেই তো ‘ল্যান্ডমার্ক’ আসে নি!

    সুকান্ত ঘোষের চিঠি আসবে নিমো গ্রামে আর তাতে ‘ল্যান্ডমার্ক’ লেখা! এমন দিনও দেখতে হল প্রভু!
  • সুকি | 7845.15.788912.51 | ১১ মার্চ ২০১৯ ১৪:০৮381942
  • ১২ই ফেব্রুয়ারী পর থেকে আমি আশঙ্কা করে যাচ্ছিলাম যে একটা ডিজাষ্টার হতে যাচ্ছে – মানে যখন ওই HDFC ব্যাঙ্কের ম্যানেজার বাই ফোর্স আমার নিমোর ঠিকানায় ‘ল্যান্ডমার্ক’ উল্লেখ করতে বলে।

    বলাই বাহুল্য আমার আশঙ্কা সত্য প্রমাণিত হল এই ৬ই মার্চ। চাপাচাপিতে পরে আমাকে ল্যান্ডমার্ক হিসাবে উল্লেখ করতে হয়েছিল ‘বারোয়ারী’ তলা।

    সেই মুহুর্তে আমি লণ্ডনে – ইম্পিরিয়াল কলেজে একটা মিটিং করছি হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠল। একটা বিশেষ কারণে ফোন সচল রাখতে হয়েছিল – আমি ভাবলাম সেই কারণেই হয়ত ফোনটি এসেছে। মিটিং ছেড়ে বেরিয়ে এলাম কল রিসিভ করব বলে – হাই হ্যালো কিছু নেই, ডাইরেক্ট প্রশ্ন –

    - নিমো বারোয়ারী তলা কি ডান দিকে নাকি বাঁ-দিকে পড়বে?

    আমি ভাবলাম স্প্যাম কল – কেটে দিতে যাচ্ছি, তারপর ভাবলাম, ওয়েট! স্প্যাম কলে তো কার লোন বা ক্রেডিট কার্ড নেবার কথা জিজ্ঞেস করে। নিমো বারোয়ারী তলা নিয়ে তো স্ক্যাম কোনদিন শুনি নি!

    - হ্যালো, আপনি কে বলছেন?

    - বলছি দাদা HDFC ব্যাঙ্ক থেকে চিঠি তো চলে এসেছে

    এমন ভাবে বলল যে মনে হচ্ছে ব্যাঙ্ক থেকে আমার চাকুরীর খবর এনেছে! আমার মাথায় ফ্ল্যাশ ব্যাক খেলে গেল – কারণ আমার মাথাতেই ছিল যে ‘ল্যান্ডমার্ক’ নিয়ে কেউ না কেউ একটা কেলো করবে। এই ব্লু-ডার্টের ছেলে নিমো এসে এবার ল্যান্ডমার্ক খুঁজছে।

    - আরে সামনের কাউকে জিজ্ঞেস করো না সুকান্তর বাড়ি যাব – দেখিয়ে দেবে।

    ফোন কেটে দিলাম – মিটিং-য়ের মধ্যে আর বেশী কথা বলে কি হবে। মিটিং এ গিয়ে এদিকে মন বসছে না! যদি ডেলিভারী না দিয়ে চলে যায়! ওদের তো লিখে দিতে পারলেই হল ‘আন-ডেলিভারড’ – তার পরের হ্যাপা তো আমাকে পোয়াতে হবে!

    আবার ফোন – ব্লু-ডার্টের আমার কথা বিশ্বাস হয় নি! এদিকে আমার বেশী কথা বলতেও মন চাইছে না – ইনকামিং কল তো আর পুরোপুরী ফ্রী নয়! কিন্তু দায়ে পরে বলতে হল

    - বাঁদিকে যাব নাকি ডান দিকে?
    - বাঁ দিকে
    - ডান দিকে নয়?
    - ভাই, তুমি কোন দিকে মুখ করে আছে – মেমারী নাকি রসুলপুর?
    - মেমারীর দিকে
    - তাহলে ডান দিকে যাও

    ফোন রেখে দিলাম – এবং বুঝে নিলাম যে এ ছেলে ‘ল্যান্ডমার্ক’ ট্র্যাক করেই ছাড়বে। খানিক পরে যথারীতি –

    - নিমো বারোয়ারী তলা এসে গেছি – আপনি এসে নিয়ে যান চিঠিটা, এখানে দাঁড়িয়ে আছি
    - ভাই ইম্পিরিয়ালে আছি মিটিং-এ তো
    - আরে তাতে কি হয়েছে! টুক করে মিটিং থেকে বেরিয়ে চিঠি নিয়ে আবার ঢুকে পড়বেন! আর হ্যাঁ আই ডি কার্ড আনবেন কিন্তু।

    আমি বুঝলুম যে আমার মাথা খারাপ হয়ে গ্যাছে – ভুল জায়গায় মুখ খুলে ফেলেছি। বললাম

    - বাড়িতে মা আছে একটু গিয়ে দিয়ে এসো না ভাই আমার। আশেপাশে কাউকে সুকান্তর বাড়ি বললেই দেখিয়ে দেবে
    - ঠিক আছে আমি বাড়িতে দিয়ে আসছি – আপনি বলুন ল্যান্ডমার্ক থেকে কি করে আপনার বাড়ি যাব

    বারবার ‘ল্যান্ডমার্ক’ শুনে আমার মাথা গেল খারাপ হয়ে। ইম্পিরিয়াল কলেজের ‘রয়েল স্কুল অব মাইনস’-এর করিডোরে হেনরী বিসিমার এর আবক্ষ মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে আমি প্রায় চিৎকার করে ব্লু-ডার্টকে ডাইরেকশন দিতে লাগলাম আমার বাড়ি যাবার

    - বারোয়ারী তলা থেকে দক্ষিণ দিকে তাকালে দেখবে মোড়লদের রঞ্জুর একটা কালো রঙের বাইক দাঁড় করানো আছে ওর বাড়ির সামনে – নতুন কিনেছে এল আই সি তে ভালো মাল কামিয়ে। সেই বাইক ছেড়ে প্রায় পনেরো মিটার এগিয়ে গেলে তুমি পাবে গিয়ে ডান হাতে ডাক্তারদের গাব গাছ। তোমার লাক ভালো হলে বাঁদিকে দেখবে নিতাই-য়ের গরু বাঁধা আছে পচা-গেড়ে পুকুরের পাড়ে। আরো দশ মিটার এগিয়ে গেলেই বাঁদিকে দেখবে সৈকতদের বাড়ি – সেই বাড়ির সামনে সৈকতের বাবাকে খড় কাটতে দেখার প্রবল সম্ভাবনা। সেটা ছাড়িয়ে ডানদিকে গণশা পালের গোয়াল। সেই গোয়ালের পাশে দিয়ে রাস্তাটা হালকা পুব দিকে বেঁকে গ্যাছে। রাস্তা হালকা ঘুরেই দেখবে সেটা প্রায় খানিক গিয়ে ধাক্কা খাচ্ছে কার্তিক হাজরার দুয়ারে। ওখান থেকে রাস্তা আবার আমাদের খামারের দিকে বেঁকে গ্যাছে। তবে অতটা যেতে হবে না – তার আগেই বিশ্বেসদের খেঁদির বাড়ি – আগে ওর বাড়ি মাটির ছিল, ইদানিং পাকা বাড়ি হয়েছে, তবে মাঝে মাঝে মনে হয় পাকা বাড়ির দেওয়ালেও মনে হয় খেঁদি ঘুঁটে দেয়। ওই খেঁদি আর পালেদের ভাদুর বাড়ির মাঝ দিয়ে যে সরু রাস্তাটা পাবে সেখান দিয়ে গেলেই

    আমাকে আর কথা বলতে দিল না – ব্লু-ডার্টের ছেলে নিজেই এবার ফোন কেটে দিল। টেনশনে আছি – কি জানি আমার বাড়ি শেষ পর্যন্ত সে খুঁজে পেয়েছিল কিনা!
  • | 3490012.113.8945.7 | ১১ মার্চ ২০১৯ ১৫:১৩381944
  • ওরে বাবারে মারে সেজপিসীমা রে ফুলকাকা রে :-)))) আমি মিটিঙে মিউট করে হা হা করে হাসছি। পাশের ডেস্কের সহকর্মীও বধ্য হয়ে মিউট করে জিগ্যেস করছে "আররে কেয়া হুয়া? পগল হো গৈ কেয়া?"
    :-))))
  • pi | 2345.110.894512.212 | ১২ মার্চ ২০১৯ ২০:২৫381945
  • কী ভাগ্যে অফিসে পড়িনি!! :D :D
  • পারমিতা দাস | ১৪ মার্চ ২০১৯ ০৮:২৭381946
  • ফাইন্ডিং নিমো এন্ড লাভিং ইট।
  • শঙ্খ | 2345.110.015612.42 | ১৪ মার্চ ২০১৯ ১২:৩৮381947
  • সুকি | 348912.82.1223.58 | ২০ মার্চ ২০১৯ ২০:২৯381948
  • পচা মোড়লের নাতি আলম হল গিয়ে আমার সেই ছোট বেলার জিগড়ি দোস্ত। আমার বাবার ধারণা ছিল এই যে আলমের সাথে নিমো শিবতলায় গুলি বা ভ্যাঁটা খেলে খেলেই আমার পড়াশুনা সংক্রান্ত অধ:পতনের শুরু এবং ফলতঃ একটা সময়ের পর বাবার হাল ছেড়ে দেওয়া। মাধ্যমিক পরীক্ষার পর বাপ একটা চক্রান্ত টাইপের করেছিল আমাকে রামকৃষ্ণ মিশন নাকি ওই জাতীয় ইস্কুলে হোষ্টেলে পাঠাবে! সে এক অসহযোগ আন্দোলন – নিমো গ্রামের পীড়িতি, ক্রিকেট, ভ্যাঁটা খেলা, স্টেশনের আড্ডা, নিমো ভারত সেবক সমাজ, মোড়লদের খামার এই সব ছেড়ে রামকৃষ্ণ মিশনে পড়তে যাবার মূর্খতা কি করে আমি করতে পারি বাপ কি করে ভেবেছিল কে জানে!

    যাই হোক – আলম ছিল আমাদের নানা বিষয়ের গাইড। ক্রিকেট নিয়ে গল্পে আলমের কেস কিছু লিখেছি। খেলা ছাড়াও লটারী এবং জুয়াতেও সেই ছিল আমাদের কান্ডারী। কিছু দিন গ্যাপের পর দেখা হয়ে গেলেই আজকাল দেখছি আলম ‘তুমি’ করে বলতে শুরু করে এবং তার সাথে ‘তুই’ মিশিয়ে ফেলছে। এই সপ্তাহ কয়েক আগে, নিমো গেছি খুব কম সময়ের জন্য – রাস্তায় আলমের সাথে দেখা – রশিদের জমিতে চারটে ছাগল বাঁধতে যাচ্ছে। আমি বললাম,

    -কি রে কি খবর?

    -আরে তুমি কবে এলে? খবর আর কি, জানিস আমি তো মরে যাচ্ছিলুম আর একটু হলে পরে। শালার ডাক্তার আমাকে প্রায় মেরে ফেলেছিল!

    কি কেস জানতে চেয়ে বুঝতে পারলাম, আলমের পেটে বেশ কিছুদিন ধরে ব্যাথা হচ্ছে। ব্যাথা আগেও হত – সেই জন্য কিছু দিন হল মদ খাওয়া একটু কমিয়েছে, যদিও দাবী করে একদম খায় না। মেমারীতে এক ডাক্তার নাকি দেখে বলেছে আলমের পেটে জল জমেছে। সেই জল বের না করলে নাকি যন্ত্রণা কমবে না। তো সেই ডাক্তার শিয়ালদহের কাছে ডঃ মাসুদ না কি নাম, তার কাছে রেফার করে। আলমে যেটা বলল, সেই ডাক্তারের কাছে দেখাতে গিয়েছিল ‘প্লেট’ করে নিয়ে! এবার প্লেট মানে আল্ট্রাসাউন্ড নাকি এক্স-রে তা সে বলতে পারল না। মাসুদ দেখে বলে, বেশী কিছু চিন্তা নেই – পেটে জল জমেছে দেখা যাচ্ছে। হালকা আপারেশন করেই জল বের করে দেবে – পুরো অজ্ঞান করারো দরকার নেই। খানিকটা অবশ করেই কাজ হাসিল।

    এই পর্যন্ত শুনে আমি বললাম,

    -ভালোই তো – তাহলে প্রবলেম হল কোথা থেকে?

    -আরে বাঁড়া শোন না। আপারেশন করাতে তো গেছি – পেটে ফুটো করে আঙুল ঢুকিয়ে বোকাচোদা মাসুদ জল খুঁজছে। আমি বলছি, ডাক্তার বাবু লাগছে কিন্তু। শালা বলেই যাচ্ছে, “আরে এই খানেই তো জল দেখলুম জমে রয়েছে। আর একটু খুঁজলেই পেয়ে যাব!” এই করে করে আমি ককিয়ে উঠছি – শেষে না পেরে আমি ঝেড়ে মেরে উঠে পড়ে পালিয়ে এলুম পেটে হাত চাপা দিয়ে। তুই বললে বিশ্বাস করবি না সুকান – বালের ডাক্তার প্লেট উলটো করে দেখেছে। আমার জল জমেছে ডান দিকে, সে খুঁজছিল বামদিকে।

    -তা তুই কি করে জানলি জল কোনদিকে জমেছে?

    -সেই তো মাসুদের নার্সিং হোম থেকে, আমি ছেলেকে বলনু, ব্যাঙ্গালোরে আমাকে নিয়ে না গেলে বাঁচব না। তৎকালে টিকিট পেলাম না। শেষে পেটে বালিশ চাপা দিয়ে প্লেনে করে ব্যাঙ্গালোরে গেনু বুঝলি। ওখানের ডাক্তার দেখেই তো বলল, তোমারে পেটে উলটো সাইডে ফুটো করে দিয়েছে কলাকাতায়। কলকাতায় বাঁড়া মানুষ যায় ডাক্তার দেখাতে! এর থেকে আমাদের কেজার মানু ডাক্তার অনেক ভালো।

    আলমের দাদু পচা মোড়ল ছিল গিয়ে আমাদের গ্রামে চাল পোড়া, হাঁড়ি চালা, জল পোড়া, বাণ মারা – এই সব ব্যাপারে সাবজেক্ট ম্যাটার এক্সপার্ট। আমরা জোর জবরদস্তি করে আলমকে ওর দাদুর কাছ থেকে ক্রিকেট ম্যাচে টসে জেতার ডার্ক আর্টটা শিখে নিতে চাপ দিয়েছিলাম। আলম আমাদের নন-প্লেয়িং ক্যাপ্টেন ছিল না ঠিকই – কিন্তু আমাদের হয়ে টস করতে ওই যেত। কেন না পচা মোড়লের নাতি আলম যে টসে জিতবে প্রতিবার এমনি আমাদের বিশ্বাস ছিল

    শীতকালে আলমের ফুলটাইম জব ছিল ক্রিকেট কর্মকর্তা, গ্রীষ্মের সময় তখনও ফুটবল খেলা হত, ফলতঃ ফুটবল নিয়ে ব্যস্ত, বর্ষা আর শরতের মাঝের সময়টায় সে ব্যস্ত থাকত মাছ ধরা নিয়ে – আর বছরের বাকি সময়টায় সে বড় ভাইয়ের আন্ডারে জামা কাপড়ের টেলারিং কাজ করত। এবং সমস্ত সময়েই আলমের কনস্ট্যান্ট সাথী ছিল লটারী এবং জুয়া। তবে সেই লটারী এবং জুয়া খেলার গল্প অন্য সময়। ওই বিষয় গুলি জটিল, অনেক গবেষণা এবং অনেক উত্থান-পতন তার মধ্যে জড়িয়ে আছে।

    পচা মোড়ল জীন, পরী, আধিভৌতিক ব্যাপার নিয়ে কারবার করত বলে ওদের বাড়িতে একটা ছমছমে ব্যাপার ছিল। এবং সেই জন্যই মনে হয় বাকি অনেক বিষয়ে ডাকাবুকো হলেও আলমের ভূতের ভয় ছিল প্রচুর। তেমনি এক ঘটনা দিয়ে এখনকার মত আলম কাহিনী শেষ করব। আলমের কাকা নাকি কোন সময় বাড়িতে ইলেক্ট্রিকে হুকিং করত। তখনকার দিনে গ্রামে গঞ্জে বেআইনী হুকিং বেশ চলত এবং তাই মেমারী ইলেকট্রিক অফিস থেকে মাঝে মাঝে গাড়ি নিয়ে লোক আসত ধরপাকড় করতে। একদিন ভোররাতে আলমদের বাড়ির সামনে দুটো হেডলাইট জ্বালিয়ে একটা গাড়ি দাঁড়াতে দ্যাখে আলমের মা। সেই সময় আলমের কাকা নাকি নাইট ডিউটিতে গিয়েছিল – চোরের মন বোঁচকার দিকে থাকার জন্য আলমের মা মনে করে ইলেক্ট্রিক অফিস থেকে গাড়ি নিয়ে ধড়তে এসেছে হুকিং পার্টিকে। আলমের মা গেল আলমকে ঘুম থেকে উঠাতে দরজায় কড়া নেড়ে – দরজায় কাছে গিয়ে ফিস ফিস করে বলল –

    -এ্যাই আলম, আলম

    বেশ কিছু ক্ষণ ডাকাডাকির পর আলমের ঘুম ভাঙে। কিন্তু সেই ফিস ফাস ডাক শুনে আলমের হয়ে গ্যাছে

    -কে, কে ডাকছে
    -কে কি রে? আমি তোর মা – দরজা খোল, জরুরী দরকার আছে

    আলমের হয়ে গ্যাছে ভয়ে – এই ভাবেই নাকি ভোর রাতে নিশি ডাকে গলা নকল করে। কিন্তু যাচাই না করে তো আর দরজা খোলা যায় না। তাই আলম জানতে চাইল

    -তুমি যদি আমার মা হও, তাহলে বলত মা আমি কি দিয়ে সন্ধ্যেবেলা ভাত খেয়েছিলাম?

    -রাতের বেলায় ফাজলামো হচ্ছে? ওই তো পুঁটি মাছ যেগুলো ধরে আনলি সেটা বাটি ভাজা করে দিলাম।

    আলমের ডাউট ক্লিয়ার হল – দরজা খোলার পর মা ওকে বলে চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তায় এগিয়ে গিয়ে যেন ওর কাকা বাড়ি আসতে বারণ করে। কারণ বাড়ি এলেই পাকড়াবে।
    এর পরের কথা আলমের মুখে

    -জানিস বাঁড়া, বাড়ির সামনে দিয়ে তো বেরোতে পারছি না – গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে হেডলাইট জ্বেলে। তাই পাঁচিল ডিঙিয়ে ওই রাতে পুকুরের জল পেরিয়ে রাস্তার ওপারে কাকাকে খবর দিতে গেলাম। লুঙ্গিটা খুলে হাতে নিয়ে পুকুরটা হেঁটেই পেরিয়ে গেলাম – জল তো খুব বেশী ছিল না। ফেরার সময় ভাবলাম, সামনে দিয়েই ঢুকব বাড়িতে – যা হয় হবে। শালা বাড়ির সামনে এসে দেখি, কোথায় ইলেক্ট্রিক অফিসের গাড়ি! সন্তুদের পুকুরে মাছে ধরতে এসেছে ছোট হাতি নিয়ে – মাছ ধরে দূর্গাপুর নিয়ে যাবে! হেডলাইট দেখেই মা ভয় খেয়ে যায়।

    আলমের ভূতের ভয় এখনো আছে – পরের বারে লটারী আর জুয়ার গল্প।
  • গবু | 2345.110.674512.18 | ২০ মার্চ ২০১৯ ২১:৫০381949
  • উফফ, সব ভারী লেখার মাঝে একদম প্রানের আরাম! ন্যারাপোড়াতে যেমন হলো, দোলেও হবে কি?
  • সুকি | 2312.204.0123.253 | ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৪২381951
  • নিমোর নাপিতদের বুড়ো তোয়ালে পরে কাজলের মত নাচটাই দিয়েছিল – মানে সেই ডি ডি এল জে সিনেমায় “মেরি খোয়াবো মে যো আয়ে” গানটার কথা বলছিলাম আর কি, যেখানে কাজল উথালি-পাথালি নাচ আমাকে অবাক করে দিয়েছিল। অবশ্য নাচ নয়, আমাকে অবাক করে দিয়েছিল অন্য একটা ব্যাপার। ঘর থেকে তোয়ালে পরে বাথরুমে যেতে গিয়ে আমার মিনিমাম তিনবার তোয়ালে খুলে যাবার অবস্থা হয়। সেখানে ওমন উষ্টুম-ধুষ্টুম নাচ নেচেও কাজলের তোয়ালে নিজে থেকে খুলে গেল না কেন – সেই চিন্তাটাই আমাকে এত কুড়ে কুড়ে খেয়েছিল যে বাকি সিনেমাটায় আমি মনোযোগ দিতে পারি নি। আর বুড়োর নাচটা আমি কাজলের ‘মত’ বললাম তার মূল কারণ হলঃ

    ১। কাজল তোয়ালে পরে নেচেছিল, যেখানে নাপিতদের বুড়ো একটা প্রায় ট্রান্সপারেন্ট গামছা।

    ২। কাজল সেই বুকের কাছে বাঁধা গিঁট খুলেছিল ঘরের দেয়ালের দিকে মুখ করে - একাকী। আর বুড়ো গিঁট খোলে ঘরের দরজার সামনা সামনি – দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে যাতে দরজা খুলেই ঘরের অতিথিরা তার নগ্ন নৃত্য পরিদর্শন করতে পারে।

    এই সব ঘটনা বুড়ো ঘটাচ্ছে তারাপীঠের একটা হোটেলে। সেবার গ্রাম পঞ্চায়েতের ভোটে বিপুল ভাবে জয়লাভের পর সুমন কুমারের নেতৃত্বে নিমো সোনার বাংলা ক্লাবের অ্যাক্টিভ ১৬ জন সদস্য তারাপীঠ যায়। তারাপীঠ জায়গা বেছে নেবার কারণ হল নিমো থেকে খুব সহজেই ট্রেনে করে তারাপীঠ যাওয়া যায় আর তার থেকেও বড় কথা সেখানে গিয়ে মদ, গাঁজা, মাংস ইত্যাদি খাওয়া-দাওয়া নিয়ে আশে পাশের পাবলিক খুব একটা মাথা ঘামায় না। বেশী চিৎকার চেঁচামেচী না করলেই হল।

    মদ খাওয়া হবে সেটা কোন বড় কথা নয় – মদ খেয়ে বাওয়ালী কি ভাবে করবে সোনার বাংলার পাবলিক সেটা প্রডিক্ট করে আমি যে অ্যালগরিদম বানিয়েছি, সেটা প্রায়ই জনতা ফেল করিয়ে দিত। মদ খাবার – এমনকি মত ছোঁবার কিচ্ছুক্ষণের মধ্যেই তাদের ব্যবহার র‍্যান্ডাম হয়ে যেত। একমাত্র দেখলাম আমার ভাই বাবু-ই স্থিরতার মাপকাঠি ঠিক রাখতে পেরেছে – আমাদের বাড়িতে জমিতে কাজ করা রাম-দা আজ বেঁচে থাকলে খুব খুশী হত। রয়্যাল স্ট্যাগ একটা সাড়ে সাতশোর বোতল খেয়েও বাবুর কিছু হচ্ছে না! এই তো সরস্বতী পূজার পার্টিতে দেখলাম একটা সাড়ে সাতশো একা সাবার করে ঠাকুর নামালো নেতৃত্ব দিয়ে – ঠাকুর বরণ করালো – ঠাকুর বিসর্জন করে দু-থালা খিচুড়ী খেয়ে এল তাসা-ব্যাঞ্জনওলাদের সাথে। আবার বাড়ি এসে যদি মা চেঁচামেচী করে বাড়ির রুটি নষ্ট হবে বলে, তাই রাত সাড়ে বারোটায় বাড়ি ফিরে ছটা আটার রুটিও খেলো!

    কিন্তু বুড়ো বাবুর লেভেলে এখনো উঠতে পারে নি – মানে মাতলামো কেসে মোক্ষ লাভ করতে পারে নি। মদ খাবার বেশী ক্ষমতা নেই, কিন্তু মদের নাম শুনলেই তার চোখ কেমন আবেশী হয়ে যায়। বারোয়ারী মদ ভাগ থেকে সে কবে এক পেগ পাবে, তার জন্য অপেক্ষা করা তার সইত না। নিজে ওই ছোট কোল্ড ড্রিংসের বোতলে মদ ঢুকিয়ে করে চুক-চুক করে খেতে খেত যেত সব জায়গাতেই – মানে যেখানে আমরা যেতাম ফুর্তি করেতে আর কি। এর ফলে যখন নিমোর সোনার বাংলার পাবলিক তারাপীঠ পোঁছালো তখন নাপিতদের বুড়ো অলরেডি মাতাল।

    তারাপীঠ পোঁছে হোটেল চেক ইন করে কাজের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হল। চেক ইন মানে দুটো ঘরে ১৬ জন ছেলে ঘুঁসে যাওয়া আর কি। কেউ গেল পুজো দিতে, কেউ গেল মদ কিনতে, বাবু গেল খাসির মাংসের সন্ধানে। এই সব জায়গায় এমন ব্যবস্থা থেকে যে মাংস এনে দিলে রেঁধে দেয় – নিমোর পাবলিক সেই অ্যারেঞ্জমেন্ট বেশ পছন্দ করত – কারণ নিজের মত করে ঝাল ঝোল দিয়ে রান্না আর কি। তো সবাই বেরিয়ে গেলেও বুড়োর যাবার ক্ষমতা ছিল না – ফলতঃ সে ঘরেই থেকে গেল।

    দৃশ্য কাট – অনেকক্ষণ পরে সুমন কুমার ওরফে রাজু পুজো দিয়ে ফিরছে, হোটেলে ঢুকেই রিসেপশনের ছেলে বলে –

    - দাদা, তোমাদের এখুনি হোটেল ছেড়ে দিতে হবে। তুমি তোমার ছেলে পুলে নিয়ে বেরিয়ে যাও এখান থেকে

    - (অবাক হয়ে) কেন হোটেল ছাড়ব কেন? এই তো এলাম ফুর্তি করতে

    - আর ফুর্তি করতে হবে না – তোমার দলের এক ছেলে অলরেডি বেশী ফুর্তি করে ফেলেছে। আমাদের অন্য গেষ্ট কমপ্লেন করেছে।
    রিসেপস্যানের ছেলে তো আর রাজুকে চেনে না – তদন্ত না করে দুম করে সে কি করে সিদ্ধান্ত নেয়! তাই বলল

    - তুমি দুম করে বললেই তো আর ছেড়ে চলে যাব না। কি হয়েছে বল বিস্তারে – আমি দেখি কোন ছেলে আমার বেশী ফুর্তি করেছে।

    তো হোটেলের ছেলে যে বলল তার সারমর্ম হচ্ছে – নিমোর বাকি সব পাবলিক বেরিয়ে যাবার পর বুড়ো নাকি ২৬ নম্বর রুমে গিয়ে দরজায় নক করতে থাকে। সেই ২৬ নম্বর রুমে এক ভদ্রলোক আছেন তার বউ আর এক মেয়ে নিয়ে। বুড়ো নাকি ডি ডি এল জে সিনেমায় কাজলের মত গামছা পরে ২৬ নাম্বার দরজায় গিয়ে বেল বাজায়। সেই মেয়ে দরজা খুলে দিলে, তার সামনে দাঁড়িয়ে বুড়ো গামছা সরিয়ে নিয়ে নাচ দেখায়। বুড়োর সেই থলথলে চর্বি এবং বিভৎস খালি গা দেখে মেয়ে ভয় খেয়ে যায়। বুড়ো ফিরে আসে। প্রথমবার মেয়ের বাবা কিছু কমপ্লেন করে নি – মেয়ে শেলশকড্‌ হয়ে গেলেও ঝামেলা এড়ানোর জন্য রিপোর্ট করতে চান নি। খানিক পরে নাচের দ্বিতীয় পার্ট দেখানোর জন্য বুড়ো আবার গিয়ে দরজায় বেল বাজায় – এবার দরজা খোলে মেয়ের বাবা। এবং বুড়ো কোন এক কারণে তেনাকেও নাচ দেখায় – নগ্ন নৃত্য। ভদ্রলোক এবার অবস্থার গুরুত্ব বুঝতে পারেন – মেয়ে কেন শেলশকড্‌ সেটাও হালকা টের পান এবং গিয়ে রিপোর্ট করেন।

    সব ঘটনা শুনে রাজু বুঝে গেল – এমনটা হতেই পারে। এবং মনে হয় না হোটেল ওয়ালারা মিথ্যে কথা বলছে না। তবুও বলল, “আমি একটু ছেলেদের সাথে ডিসকাস করে ডিসিশন নিচ্ছি”। ঘরে দিয়ে রাজু ব্যাপার খুলে বলে – ঘরে তখন জোর কদমে মদ খাওয়া চলছে – রাজুর নিজের ভাই বুলবুল মুডে চলে এসেছে। রাজু তখনো মাতাল হয় নি বলে প্রস্তাব দিল যে এখনি হোটেল ছেড়ে অন্য জায়গায় চলে যেতে, কারণ তারাপীঠে বাওয়ালি করলে ক্যালানি খেয়ে যাবার সম্ভাবনা। কিন্তু বুড়ো বেঁকে বসল – প্রবল ভাবে বালিশে ঘুঁসি মারতে মারতে বলল –

    - রাজুদা, তুমি এই ভাবে আমায় অপমান করতে পারো না

    - যা বাঁড়া, এতে অপমানের কি হল!

    - আমি এই সব করতেই পারি না। ওরা মিথ্যে কথা বলছে। আমি গামছা পরে বাইরে বেরোই নি। এই মা কালীর নামে দিব্যি করে বলছি

    রাজু কালী ভক্ত পাবলিক – মা কালীর দিব্যি শুনে একটু থমকে গেল। এবার বাজার ধরে নিল বুলবুল – “হোটেল ছেড়ে দিতে বললেই হবে! সি সি টিভি ফুটেজ দ্যাখাতে হবে”। ঘর ময় মাতাল সকল উলু দিয়ে উঠল – “সি সি টি ভি ফুটেজ চাই, ফুটেজ চাই”। দলবেঁধে নিমো সোনার বাংলা গিয়ে ম্যানেজারকে ঘিরে ধরল। “আপনি ফুটেজ দেখান যে আমাদের ছেলে এই করেছে, আমরা মেনে নেব – দিয়ে হোটেল ছেড়ে দেব”। ম্যানেজার বলে, “দ্যাখো, তোমাদের ছেলে কিন্তু ন্যাঙটো হয়ে নেচেছে, আমার কর্মচারী ব্রেকফাষ্ট দিতে অন্যরুমে যাচ্ছিল, সেও দেখেছে। তাই বলছি কি, বেশী বাড়াবাড়ি করো না। ওই ভদ্রলোক যদি পুলিশে কমপ্লেন করে দ্যান – তোমাদের ক্যালানির শেষ থাকবে না”। পুলিশের নাম শুনেই বুলবুলের আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল –

    - আপনি পুলিশের ভয় দেখাচ্ছেন? জানেন আমরা কারা? দূর্গাপুরে ভোট করাই আমরা – আর আমাদের আপনি তারাপীঠের পুলিশের ভয় দেখাচ্ছেন? অ্যাই, আমার ফোনটা নিয়ায় তো রুম থেকে – বর্ধমান সদরে কল করে দেখি এখানে ও সি কে আছে। আমাদের বাঁড়া পুলিশের ভয়! পুলিশ আমাদের এক গ্লাসের ইয়ার!

    পুলিশ আমাদের এক গ্লাসের ইয়ার কথাটা মিথ্যে নয় – কারণ তপন, পল্টু, রাকেশ – সবাই তো পুলিশেই চাকুরী করে! নিমোর ছেলে জোর ধরে বসে থাকে, সি সি টি ভি ফুটেজ চাই এই চাই। ম্যানেজার সি সি টি ভি দেখাতে চাইছে না বলে সন্দেহ আরো বাড়ছে।

    ম্যানেজার বলে – “দ্যাখো, আমাদের মেকানিকটা ছুটিতে গ্যাছে বাড়ি। এখন রিওয়াইণ্ড করে দেখাবার লোক নেই”। নিমোর ছেলে শুনবে না। অনেক চাপাচাপির পর ম্যানেজার মেকানিককে ফোন লাগায় – সে মিনিট ২০ এর মধ্যে এসে সি সি টি ভি রিওয়াইন্ড করে।
    সি সি টি ভি তে দেখা যাচ্ছে বুড়ো গামছা পরে ২৬ নম্বর রুমের দিকে যাচ্ছে – নিমো ছেলেদের মুখ আসতে আস্তে শুকিয়ে যাচ্ছে। পুরো ফুটেজ শেষ করার আগেই ফুটেজ দেখার রুম ফাঁকা –

    ছেলেরা বিপদ টের পাচ্ছে। ফুটেজ শেষ হলেই ম্যানেজার তার কর্মচারীদের হাঁক দিল –

    - তোরা গেটটা বন্ধ কর তো – একটাও যেন পালাতে না পরে। সব কটাকে ক্যালানি দিতে হবে আপাদমস্তক। আর ওই পিংলেটাকে বেশী করে দিবি – হুঁ বলে কিনা থানার ওসি কে ফোন করবে! ওর হাতে ফোন দিয়ে নাম্বার ডায়াল করতে বলবি আর ডায়াল টোনের তালে তালে ক্যালাবি।

    নিমো ছেলেরা তখন দুরদার করে পাঁচিল টপকে কাটছে – হাতের কাছে যা ছিল গুটিয়ে নিয়ে ব্যাগ ট্যাগ দৌড়। বুড়োকে টানতে টানতে নিতে যাচ্ছে বামুনদের লাল্টু। বুড়ো বলে যাচ্ছে – “মা কালীর দিব্যি, আমি কিছু করি নি”। লালটু বলছে, “এখন দৌড়ো – পরে বেঁচে থাকলে দিব্যি গালবি আবার।

    সবাই মোটামুটি দৌড়ে, টোটো নিয়ে স্টেশনে। কার মনে পড়ল, “হ্যাঁরে, বাবু তো খাসির মাংস কিনতে গ্যাছে। ওকে বারণ করে দে যেন হোটেলে না ফেরে, ডাইরেক্ট স্টেশনে চলে আসে যেন”। ফোন করা হলে বাবু জানায় সে চার কিলো খাসির মাংস অলরেডি কিনে ফেলেছে। তাকে বলা হয়, তুই মাংস কাউকে দিয়ে না হয় ফেলে দিয়ে স্টেশনে চলে আয়। আর যেন হোটেলের দিকে পরাতপক্ষেও যাস না।

    বর্ধমানের কাছে এসে বুড়োর ঘোর কাটে – বলে, “অ্যাই কি হয়েছিল, আমরা তারাপীঠ থেকে চলে এলাম কেন”? বুড়োকে বলে আসার কারণ বলা হয় – প্রথমে মানতে চায় না। পরে বলে, “জানো তো তোমরা, আমি মাতাল মানুষ, কি করতে কি করতে ফেলেছি অজান্তে। এঃ আমার জন্য তোমাদের প্ল্যান বাতিল হয়ে গেল!”। রাজু বলে,

    “মাতাল তো বুঝলাম, কিন্তু জ্ঞান না থাকলে তুই দুই-বারই কি করে ঠিক গিয়ে ২৬ নম্বর রুমের বেল টিপলি? পাশের রুমের বেল টিপিস নি তো! তুই চল নিমোতে, তোমার মাতলামোর জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে পঞ্চায়েত থেকে”।

    বুড়োকে নাকি ব্যান করা হয়েছে কয়েক মাসের জন্য। তাই সরস্বতী পূজোতে তাকে দেখলাম না – আশা করি এই সামনের চৈত্রের গাজনের আগে সেই ব্যান উঠে যাবে।
  • সুকি | 2312.204.0123.253 | ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৪২381950
  • পিওর চাষার ছেলে হিসাবে বিশাল কিছু চাওয়া পাওয়ার নেই – আর বলতে কি, তেমন এলেমও নেই। ‘স্ট্যাটিসস্টিক্যালি স্পিকিং’ বলা ছাড়া স্ট্যাটিস্টিকস নিয়েও যেমন আমার কোন জ্ঞান নেই। আমার অবস্থা ভারতীয় ক্রীড়াবিদ-দের অলিম্পিকে অংশ গ্রহণের মত। এক্সপেটেশন এতই কম যে, যা করি তাতেই ওভার-অ্যাচিভ হয়ে যায়!

    সরকারী চাকুরী পাওয়া ছিল বেঞ্চ মার্ক – ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে গিয়ে সেই মার্ক আমি ক্রশ করে ফেলেছি, ধাতুবিদ্যা কি জিনিস তা দিয়ে বাপকে চিরকাল ধোঁয়াশায় রেখে। বাপকে একবার উদাহরণ দিয়ে বোঝাবার চেষ্টা করেছিলাম, বললাম, “ধাতুবিদ্যা এক প্রাচীন ইঞ্জিনিয়ারিং – ওই যে দিল্লীর লৌহস্তম্ভ দ্যাখো, সেটা সেযুগের ধাতুবিদ ইঞ্জিনিয়াররা বানিয়েছিল”। বাপের পালটা প্রশ্ন এল, “তাহলে তোর আর কামারদের নেউল-এর মধ্যে পার্থক্য কি”। নেউল বাপের বাল্যবন্ধু – আমি চেপে গেলাম।

    বাপের অ্যাডভাইস ছিল, সৎপথে থাকার চেষ্টা করতে। সেই চেষ্টা মোটামুটি বজায় রাখতে পেরেছি জ্ঞানত। তবে বাপের ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইস থেকে একটু বিচ্যুত হয়েছি – তাই নিয়ে মাঝে মাঝে মরমে মরে থাকি। বাপ আমাকে বার বার বলেছিল, টাকা থাকবে চার জায়গায় ভাগ হয়ে, স্টেট ব্যাঙ্ক যার মধ্যে অন্যতম। প্রথম চাকুরী করতে গিয়ে এইচ ডি এফ সি ব্যাঙ্কে স্যালারী অ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছিল – সেই নিয়ে বাপের যা চিন্তা ছিল, আলুর দাম নিয়েও বাপকে কোনদিন অত ভাবতে দেখি নি। ইদানিং আবার আই সি আই সি আই ব্যাঙ্কে একটা অ্যাকাউন্ট খুলেছি, আমার সেই অধঃপতন দেখা যাবার জন্য বাবা আজ আর বেঁচে নেই।

    তো এই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে যখন মাঝে মাঝে যখন শুনি কোম্পানিতে ম্যানেজার বলে, “তোমার মধ্যে পোটেনশিয়াল আছে” – আমার খুব চাপ আসে। অনেক বাড়তি কথা ও পরিশ্রম করতে হয় এটা প্রমাণের জন্য যে আমার কিস্যু পোটেনশিয়াল নেই – ওটা তেনার ইল্যুউশন। কিন্তু ভবিতব্য কে খন্ডায়! আজকাল আমি ম্যানেজার টাইপের কিছু একটা হয়েছি।

    আমি ম্যানেজার হিসাবে প্রথম যেটা করলাম তা হল, একটা হোয়াটস -গ্রুপ খুললাম আমার আন্ডারে থাকার লোকজন নিয়ে। তার মধ্যে আবার এক অসমিয়া আছে, যে বাংলায় লেখা বই পড়ে! আমাকে বলে কি সে নাকি ফেলুদা সব বাংলায় পড়ে ফেলেছে! একদিন জানা গেল সে তরুণ ভাদুড়ীর লেখা ‘চম্বলের দস্যু’ও পড়ে ফেলেছে! সেটা জানার পর আমার কাছে টিম-মিটিং এবং ওই হোয়াটস্যাপ গ্রুপটার এক অর্থ এল। আগে গ্রুপে কি লিখব সেটাই বুঝতে পারতাম না! ‘ওয়েল ডান’ দু-একবার লিখলাম, পাবলিক ঘাবড়ে গিয়ে জানতে চাইল কিসের জন্য ‘ওয়েল ডান’ বলা হচ্ছে! আমি আবার চাপে পড়ে গেলাম, এমন প্রশ্ন আমি প্রত্যাশা করি নি। এখন মোটামুটি সামলে এনেছি – গ্রুপে দেদার নিজের লেখার লিঙ্কগুলি ফরোয়ার্ড করি এবং টিম মিটিং-য়ে এক নির্ধারিত সময় আমি ব্যোমকেশ নিয়ে ব্যায় করি। সেই আসামী-কে ফেলুদা থেকে উত্তীর্ণ করে ব্যোমেকেশে এনে ফেলাটা আমি ২০১৯ এর নিজের কর্পোরেট টার্গেটের এক্তিয়ারে ফেলেছি।

    মিটিং ছাড়া অনেকটা সময় আমি গুগুল সার্চ করে মেশিন আর ইন্সট্রুমেন্ট কিনি। এই সব বাদ দিয়ে যেটুকু সময় থাকে, তখন আমি ট্রেনিং করি, মানে যেগুলিতে আমাকে ট্রেনিং-য়ে ঠেলেঠুলে পাঠানো হয় আর কি। তো বাকি সব কিছু মোটামুটি চাষারে ব্যাখ্যায় এনে ফেলেও, কর্পোরেট ট্রেনিং নিয়ে আমি এখনো ধ্বন্ধে আছি। টেকনিক্যাল পার্ট তবুও ঠিক আছে, কিন্তু সো কলড ‘সফট স্কিল’ টেনিং গুলো আমাকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে। আট-ভাঁট বকে বকে মাথা খারাপ করে দেয়। তিনটে ম্যানেজমেন্ট বই পড়া পাবলিকের কাছে ফিলোসফিক্যাল কথা বার্তা শোনা যে কি চাপের সে যারা শুনেছেন তারাই জানেন!

    এমন একটি ট্রেনিং-এ প্রথম শুনলাম ছবি এঁকে নাকি নিজের নাম-পরিচয় বোঝাতে হবে! ছবি আঁকতে হবে আমাকে! সেই আমাকে, যার ক্লাস এইটে বায়োলজি অ্যানুয়াল পরীক্ষায় ব্যাঙ আঁকা হলে, আনোয়ার স্যার ছুটে গিয়ে হেড স্যার-কে ডেকে আনলো। আমার আঁকা জিনিস্টা ব্যাঙ নাকি ঝোপের উপর থেকে চিতা বাঘ ঝাঁপ দেবার জন্য তৈরী হচ্ছে, সেই নিয়ে দুই স্যারের মধ্যে প্রবল আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

    ট্রেনিং-এর শুরু গুলি ক্রমশঃ ফালতু থেকে ফালতু তর হতে থাকল। এমনি একবার আমাদের জিজ্ঞেস করা হল – বিশাল চমকে দিয়েছে বা অবিশাস্য হয়েছে তোমার নিজের অভিজ্ঞতায় এমন এক ঘটনার উল্লেখ করতে। ট্রেনিং হচ্ছে ‘দি হ্যেগ’ শহরের থেকে কিছু দূরে ‘ডেলফট’ নামক যে আর এক শহর আছে তার পাশে আমাদের কোম্পানির ট্রেনিং সেন্টারে। পাবলিক কি সব একজাম্পেল দিচ্ছে – কেউ বলছে

    ১) সে নাকি পোলার বিয়ারকে সামনা সামনি পেচ্ছাপ করতে দেখেছে,

    ২) কেউ বলছে নরওয়ে নাকি ওদিকে ছেলে মেয়েদের চেঞ্জ রুম এক,

    ইত্যাদি ইত্যাদি।

    নানা দেশের পাবলিক, ভারত থেকে এসেছে এক সিনিয়ার এমপ্লয়ী – সারা জীবন ভারতীয় কোম্পানীতে কাজ করে এই শেষ বেলায় ঢুকেছেন মাল্টিন্যাশানাল কোম্পানীতে। এই দুই-য়ের মিশ্রণ কি যে জটিল জিনিস, তা কেবল যাঁরা অনুভব করেছেন তারাই বলতে পারবেন। তবে সেই ভদ্রলোকের চমকে যাবার ঘটনা একমাত্র আমার রিয়্যালিটির কাছাকাছি এল – তিনি সরল মনে বললেন যে,

    “১৯৮৩ সালের ফাইন্যালটা যে আমরা জিতব এটাই আমার কাছে অবিশাস্য ছিল”!

    ট্রেনিং রুকে গেল – ১৯৮৩ সালে কি ফাইন্যাল সেটা বোঝাতে হল।
    আসতে আসতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে বলার পালা – আমি কি বলব বুঝতে পারছি না। আমার জীবনে বিষ্মিত হবার মত ঘটনা খুব একটা ঘটে নি তখনও পর্যন্ত। মানে ওই যে এক লেখক বলেছিলেন না যে সবার মধ্যে বিষ্মিত হবার ক্ষমতা থাকে না। সেটা খুব সত্যি কথা এবং আমি যে কেন কিছুতেই বিষ্মিত হতে পারছি না, তাই নিয়ে দোলচালে ছিলাম। অনেক ভেবে আমি বললাম যে,

    “মেমারী থেকে যে কোনদিন সিপিএম চলে যাবে, এটা আমার কাছে অবিশাস্য ছিল”।

    আবার ট্রেনিং রুকে গেল – আপনারা এবার ভেবে নিন, ট্রেনিং এর ভিতর মেমারী, মমতা এই সব ঢুকে পড়লে কি হতে পারে!
  • সুকি | 2312.204.0123.253 | ০৭ এপ্রিল ২০১৯ ২১:৪৩381952
  • সে অনেক কাল আগের কথা – নিমোর সুমন কুমার (ওরফে রাজু) তখনো শিল্পপতি হয় নি। ধীরুভাই আম্বানী রিলায়েন্স গড়ে তোলবার আগে যেমন আলু বেচত ফুটপাথে, ঠিক তেমনি নিমো গ্রামের প্রথম এবং একমাত্র শিল্পপতি হয়ে ওঠার আগে রাজু সলতে পাকাচ্ছিল। ‘ইষ্ট ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে নিমো গ্রামের ভিতর রাজুর প্রথম কারখানা তখনো স্থাপিত হয় নি। রাজু পলিটেকনিক ইত্যাদি পাশ করে, ইটাচুনা কলেজে মারামারি, পার্টি, তার ফাঁকে কিছু পড়াশুনা করে একটু আগোছালো এবং হাঁফিয়ে পড়েছিল। রাজুর বাবা সুনীল কুমার মানে আমাদের প্রিয় ন্যাড়াকাকা তখন বলল, “বাড়িতে ফালতু বসে থেকে কি হবে। চাকুরী যবে হবে হবে – এই ফাঁকে তুই বরং একটা দোকান দে”।

    তো সেই মত দোকান কোথায় হবে বিচার বিবেচনা করে ঠিক করা হল এবং কিসের দোকান হবে তাও নাকি ভাবা হল। দোকানের জায়গা তো ঠিক হল নিমো স্টেশনের কাছে ঘুমটি প্রথম দিকে – কিন্তু ব্যবসার বিষয় যে কেনো ‘ইমিটেশনের দোকান’ তা এখনো আমার জানা নেই! তবে সেই সময় গয়না পত্রের খুব চল ছিল আর গ্রামের ভিতরেও ফ্লিপকার্ট, আমাজন আসে নি সে কথা হলফ করে বলতে পারি। গল্প রাজুর ইমিটেশনের দোকানের নয় – সেই দোকান গড়ে ওঠার সাথে যুক্ত ঘটনা নিয়ে।

    সেই ইমিটেশনের ঘুমটি গড়ে তুলতে গিয়ে রাজুর প্রতিবেশী হয়ে গেল বাউরি পাড়ার হারা। হারা তখন সবে মাঠে খাটা ছেড়ে হাওড়া-বর্ধমান মেন লাইনে মশলা মুড়ি বেচতে শুরু করেছে। কেন যে হারা মশলা মুড়ি বেচা শুরু করল সেটাও একটা রহস্য। এবং নিমোর ছেলেরা যে প্রথম দিকে হারার মুড়িমশলা বেচাকে ত্যাড়াচে চোখে দেখত, সেটাও কিছু আশ্চর্য ছিল না। যারা রেল যাত্রী তারা হয়ত লক্ষ্য করেছেন, জংশন স্টেশন-গুলোতে একটা আলাদা “সেট অব হকার” থাকে। মানে ধরুণ বর্ধমান, ব্যান্ডেল বা হাওড়া স্টেশনে ট্রেন দাঁডিয়ে থাকা কালীন যারা মালপত্র বিক্রী করে তারা ট্রেন ছাড়লে করে না। এবং ভাইস ভার্সা। কোন চলন্ত হকার বর্ধমান পোঁছে গেলেও, সে বিক্রী করবে না যতক্ষণ না ট্রেন প্লাটফর্ম ছাড়ছে। এ সব আন্ডার স্ট্যান্ডিং এর ব্যাপার।

    একদিন আমরা নিমোর পাবলিক কয়জন বর্ধমান থেকে ফিরছি, দেখি পিছন দিক থেকে থার্ড কমপারমেন্টে হারা দাঁড়িয়ে আছে – চশমা পড়ে! মানে সানগ্লাস নয়, একটু ফ্যাশানেবল চশমা। ব্যাস পাবলিক খোঁচাতে শুরু করল –

    - ওই বাঁড়া হারা, তুই আবার চশমা পরতে শুরু করেছিস কেন?
    দুই একবার বলার পর হারা সারাশব্দ দিল না – আমরাও যে যার বিজি হয়ে পড়লাম। আসল চমক তখনো বাকি ছিল – ট্রেন বর্ধমান ছেড়ে গাংপুরে ঢোকার পরে দেখি, হারা মুড়ি মশলার ওই টিনের ডাব্বা নিয়ে মশলা মুড়ি বিক্রী করতে শুরু করেছে। আমরা তো অবাক – হই চই শুরু হয়ে গেল –

    - তোর মুড়ি খাবে কে রে বোকাচোদা। নিজে কোন দিন এক গ্লাস জল গড়িয়ে খেয়েছিস যে মুড়ি মশলা বানাচ্ছিস?

    কেউ বলল

    - এটা মানুষের খাবার হারা, ধানের খাবার ভেবে ইউরিয়া ছড়িয়ে দিস না যেন!

    প্রসঙ্গত উল্লেখ্য ধানের বীজ জমিতে সার ছড়ানো মাঠে কাজ করার সময় হারাকে হামেশাই করতে হত।

    ইত্যাদি ইত্যাদি – হারা খুবই অপ্রস্তুত এবং কুপিত হয়ে নেমে গেল সেই কামরা থেকে। আমার অ্যানালেসিস বলে, সেই থেকেই হারার মধ্যে নিমোর যুবক সম্প্রদায়ের উপর প্রতিশোধ স্পৃহা জমে ওঠে। তবে সেই রিভেঞ্জ কেমন হবে তার অনুমান ছিল না আমাদের কাছে।

    রাজুর ইমিটেশনের ঘুমটি দোকান চালু হয়ে গেলে রাতে একটা পাহারার ব্যবস্থাও করতে হয়। মানে কাউকে সেই দোকানে শুতে হবে মাল পত্র পাহারা দেবার জন্য – অনেক টাকার মাল আছে। রাজুর আবার একা একা শোবার অভ্যাস নেই। সেমত অবস্থায় পরিত্রাতা হয়ে দেখা দিল হারা। হারার গুমটি ছিল পাশেই – রাতে সেখানেই সে থাকত এবং তার ঘরে অনেক বাকি হকাররা তাদের ঝাঁকা রেখে যেত। হারা বলল –

    - ভাই, তুই আমার ঘরে থেকে যা। দুজনে একসাথে থাকলে সমস্যা নেই কিছু, তুইও আর ভয় খাবি না।

    রাজুর প্রস্তাব ভালো লেগে গেল। প্রথম দিন রাজু সেই মত শুতে গ্যাছে হারার ঘরে। হারা নাকি ইতিমধ্যে কালি ভক্ত হয়েছে প্রবল। রাজুর কথামত রাত বাড়তে লাগলে হারা শুরু করল কালী পুজো করা। অং বং মন্ত্র কি সব বলে চলল। রাজু বলছে, না পাড়ছি জাগতে, না পাড়ছি ঘুমাতে। এই ভাবে অনেক ক্ষণ পুজো চলার পর, হারা খাটের তলা থেকে বার করল একটা মড়ার খুলি এবং দুই পিস হাড় – টিবিয়া – ফিবুলা। ধীরে ধীরে সেই খুলি এবং টিবিয়া-ফিবুলা তে হারা সিঁদুর মাখালো। রাজুর ঘুম চটে গ্যাছে তখন – সে খাটে বসে দেখছে এবং ক্রমশঃ হারার কাজকর্ম দেখে তার বীচি টাকে উঠছে। সিঁদুর ইত্যাদি মাখানোর পর আবার খানিক পুজো চলল এবং পুজোর শেষে মাথার খুলিতে ঢেলে মদ্যপান। মদ-টাদ খাওয়া শেষে নেশা চড়ার পর হারার খেয়াল হয় কালী পুজোর অন্তিম স্টেপটাই বা বাকি থাকে কেন!

    হারা রাজুকে বলে খাটের তোষকের একপাশে সরে যা – রাজুর সরে গেলে তোষকের তলা থেকে একটা চকচকে খাঁড়া বার করে হারা। বলে

    - বুঝলি রাজু, তুই এসেছিস আজকে ভালোই হয়েছে। মা আমাকে অনেক দিন ধরেই কাজটা করার তাগাদা দিয়ে যাচ্ছে স্বপ্নে। ঠিক মত সময় সুযোগ হচ্ছে না। আর তা ছাড়া আজকাল জানিস তো বাঁড়া নরবলি দেওয়াও ঝামেলা। বাচ্ছা ধরে আনবি সে চিল চিৎকার করবে। আর তা ছাড়া এই নিমো ষ্টেশনের ধারে নিরিবিলিই বা তেমন কোথায়। ওই তো খানি দূরেই হাবাদের কেবিনের ঘর, আর তার পাশে সুধীরের চায়ের দোকান। তার উপর বাঁড়া সকাল আড়াইটে থেকে বাঙাল-দের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়।

    রাজু তখনো হালকা ঘুমচোখে ঠিক অনুধাবন করতে পারছে না ঘটনার গতিবিধি। তবে এটুকু বোঝার মত বুদ্ধি তার আছে যে কিছু একটা হতে যাচ্ছে –

    - হারা কি আলবাল বকছিস মাল খেয়ে?

    - রাজু তোর ভাগ্য ভালো রে – তোদের নিজের বাড়িতেও তো কালিপুজো হয়।

    - তাতে কি হয়েছে

    - তুমি ভেবে দ্যাখ মা আমাকে কতদিন বলি দেবার জন্য তাগাদা দিচ্ছে। আর আজকে অমাবস্যার দিনই তুই আমার ঘরে শুতে এলি! মা-ই পাঠালো তোকে

    - তা বলির সাথে আমার ঘরে শুতে আসার কি সম্পর্ক? একটা ছাগল বলি দিয়ে দে মানসিক করে!

    - বলেছিলাম রে আগের দিন মা-কে। আসলে মায়ের আমার মানুষের রক্ত খেয়ে স্বাদ বদলের ইচ্ছা হয়েছে। যাক গে, বেশী কথা বাড়াস না। পুজোর মুহুর্ত চলে যাচ্ছে – তাড়াতাড়ি আয়

    - মানে?? তুই কি আমায় বলি দিবি নাকি?

    - রাজু, বাঁড়া ভ্যানতাড়া মারাস না – এক কথা কতবার বলব।

    রাজু বুদ্ধিমান ছেলে – বুঝতে পেরে গ্যাছে যে হারা মাল খেয়ে আউট। মা-য়ের নির্দেশে সে আজ নরবলি দিয়েই ছাড়বে!

    পরের দৃশ্যে – রাজু বারমুডা টাইপের কিছু পরে বাঁচাও, বাঁচাও বলতে বলতে নিমোর ষ্টেশনের পাশের রাস্তা দিয়ে ছুটে গ্রামের ভিতরে যাবার চেষ্টা করছে। তার পিছনে পিছনে উলঙ্গ হারা এক সিঁদুর মাখানো খাঁড়া হাতে রাজুকে তাড়া করেছে – “কাছে আয়, কাছে আয়, পালাস কেনো” বলতে বলতে। রাজু নাকি এর ওর ঘরে দরজায় ধাক্কা মেরে হারার হাত থেকে তাকে বাঁচাতে আকুতি জানাচ্ছিল। ঠিক মনে পারছি না যে রাজুকে সেদিন কে বাঁচিয়েছিল আখেরে। রাজু আমার ফেসবুক লিষ্টে আছে, এই লেখা পড়লে সে হয়ত মনে করে বলতে পারবে।

    ভ্যাগিস সেদিন হারা রাজুকে নরবলি দিতে পারে নি! তাহলে নিমো গ্রাম তার একমাত্র শিল্পপতিকে হারাতো পয়দা হবার আগেই।
  • সিকি | ১০ এপ্রিল ২০১৯ ০৭:০২381953
  • সুকি, পড়ছি কিন্তু।
  • গবু | 2345.110.674512.181 | ১০ এপ্রিল ২০১৯ ২০:৫৫381955
  • একদমে পড়ছি, যখনই আসছে!
    অপেক্ষায়!
  • সুকি | 348912.82.0123.56 | ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:১৪381957
  • তাপদগ্ধ, গিজ-গিজে ভিড়ের শেয়ালদা স্টেশনও যে কখনও কখনও মনে আনন্দের জোয়ার আনতে পারে তা কাল টের পেলাম।

    এমনিতে তো হ্যাঠা খেতে খেতে অভ্যস্ত এয়ারপোর্টের বিজনেস ক্লাসের লাইনে দাঁড়ালেই! তা সে না হয় সাদা পাবলিকদের দেশে ওদের মুখ চেয়ে মানিয়ে নিয়েছি – ওরা ‘তোমার লাইন ওদিকে’ বলে না হয় একটু দুষ্টুমি করতেই পারে। কিন্তু তা বলে আমাদের দেশের ভাইলোগের কাছে তুরুশ্চু! একবার তো কলকাতা এয়ারপোর্টের লোকটা আমাকে বলেই ফেলল, “আপনাকে কে যে বিজনেস ক্লাসের টিকিট দিয়েছে কে জানে!” নেহাত আমি নিমো গ্রামের ছেলে বলে আমার ইনহেরেন্ট নমনীয়তা, স্থিতিস্থাপকতা, অ্যাডজাষ্টমেন্ট পাওয়ার দিয়ে মুচকি হেসে মানিয়ে নিয়েছি “আমিও জানি না – ওরা না বললেও শোনে না” বলে।

    হালকা কষ্ট হত হাওড়া স্টেশনে নামতে বা উঠতে গেলে মাঝে মাঝে – প্রায়শঃই আমাকে, মানে চারিদিকে দুর দার লোকের ভিড়ের মাঝে কেবল আমাকেই লোকাল ট্রেন অ্যাটেন্ড করা মুটে গুলো টার্গেট করে বলত, “দাদা ভেন্ডর থেকে মাল নামাতে/উঠাতে হবে”? সেও নিজেকে প্রবোধ দিয়েছিলাম, আফটার অল পারিবারিক ব্যবসা তো আছে, তাই মনে হয় চলনে বলনে ছাপ রয়ে গ্যাছে আমার।

    চলছিল এইভাবেই। কালকে বিকেলে শেয়ালদা স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসছি, একজন এগিয়ে এসে দেখি জিজ্ঞেস করল, “স্যার, এয়ারপোর্টের গাড়ি লাগবে”? আমি অন্য-মনস্ক ভাবে ‘না’ বলে এগিয়ে গেলাম। খানিকটা এগিয়ে গিয়েই আমার মাথায় বিদ্যুত চমকের মত খেলে গেল, আরে এ প্রশ্নের তো আমার লাইফে এক সুদূর প্রসারী প্রভাব থাকতে পারে! গাদা গাদা লোক বেরিয়ে আসছে, আর সেই ট্যাক্সি দালালটা কিনা সবাইকে ছেড়ে আমাকেই জিজ্ঞেস করল, এয়ারপোর্টের ট্যাক্সি লাগবে কিনা! তাও আবার স্যার বলে! আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারলাম না। শেষ সিঁড়ি থেকে ঘুরে আবার স্টেশনে ভিতর ঢুকে গেলাম। এক বোতল ঠান্ডা জল কিনে (১৫ টাকা নিল), পান করে আমার উত্তেজনা নিবারণের চেষ্টা করলাম। হালকা মনে করার চেষ্টা করলাম, আমি খানিক আগে কি মুড নিয়ে হাঁটছিলাম। ভেবে নিয়ে দুরুদুরু বুকে এবার পিলার-এর অন্য পাশ দিয়ে নামতে এগুতে লাগলাম বাইরের দিকে। আবার সেই ডাক, এবার অন্য একজন, “স্যার, এয়ারপোর্টের গাড়ি লাগবে”? আমি কিভাবে আনন্দ প্রকাশ করব বুঝতে পারছিলাম না – ইয়াহু বলে উঠতে গেলাম, সামনে ভোট, কে কি মনে করবে ভেবে কিছু করলাম না।

    মনে খুবই পুলক জাগলো – বিজনেস ক্লাসের পেডিগ্রী-তে না উঠতে পারি, হাওড়া-বর্ধমান লোকাল ট্রেনের ভেন্ডার পেডিগ্রী থেকে তো উত্তরণ হল! এই বা কম কি। পার্কিং এ গিয়ে দেখলাম আমার ড্রাইভার পুরোদমে এসি চালিয়ে গাড়ির ভিতর ঘুমাচ্ছে – মন মেজাজ এত খুশবুদার ছিলো যে তাকে পর্যন্ত কিছু বললাম না!
  • সুকি | 348912.82.0123.56 | ২৭ এপ্রিল ২০১৯ ১৭:১৪381956
  • সিকি, গবু,
    সরি, আমি বুঝতে পারি নি যে এটা কেউ পড়ছে বলে! ধন্যবাদ তোমাদের।
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ০৬ মে ২০১৯ ১৭:৩৭381958
  • ডাব ও ক্যালানি সংক্রান্ত
    ----------------------------------

    স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা – সে সব ঠিক আছে, কিন্তু ছেলে মানুষ করার অন্যতম ইনগ্রেডিয়েন্ট যে ‘ক্যালানি’ বা ‘প্যাঁদানি’ সেই বিষয়ে নিমো গ্রামের অভিভাবকগণের মনে কোন সন্দেহের অবকাশই ছিল না। নিমো উন্নত অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াকালীন একদিন বাউড়ি পাড়ার দুলু স্কুলে এসে সিরাজ মাষ্টারকে বলল, “মাষ্টার – তোমরা বাঁড়া আজকাল খুব কুঁড়ে হয়ে গ্যাছো। ছেলে পিলেকে ক্যালানো তো ইস্কুলে প্রায় উঠেই গ্যাছে। (এবার নিজের ছেলেকে দেখিয়ে) এই শুয়োরের বাচ্ছা এত হারামি হচ্ছে দিন দিন তা মাষ্টার তোমায় কি বলব। এই আমি বলে যাচ্ছি, নিয়ম করে ক্যালাবে সব কটাকে”।

    নিমোর সব বাবারা মাষ্টারকে ‘বাঁড়া’ বলে সম্বোধন না করলেও, মোটামুটি বেসিক প্রিন্সিপ্যাল সব একই ছিল। সেই নিয়ম মেনে আমিও বাপের কাছে উত্তাল ক্যালানি খেয়েছি মাঝে মাঝেই। স্বীকার করতে আজ আর দ্বিধা নেই – বেশির ভাগ কাজ কর্মই ক্যালানি খাবার যোগ্য ছিল। নারকেল বাখড়া ভেঙে গেল, বাঁশের কঞ্চি জুত হল না, ধান মাপার দাঁড়ি পাল্লা বাঁধার জন্য ওই কাঠের ডান্ডিটা পড়েছিল উঠোনের কোনে – সেটা দিয়ে কিছুক্ষণ চলল। তবে সেইদিন বাপের জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিল - ওই দাঁড়ি পাল্লার ডান্ডি দিয়ে গায়ে হাতে দিচ্ছিল ঠিক আছে, কিন্তু যেই মাথায় দিয়েছে এক ঘা – সে ডান্ডি গ্যাছে ভেঙে! কুড়ি কেজি ওজন মিনিয়াম নেবার কথা সেই ডান্ডার – কি করে এক ঘায়ে ভেঙে গেল, সেই নিয়ে এবার আলোচনা। ডান্ডা ভেঙে যাবার শোকে সেই দিন আর ক্যালানি কন্টিনিউ হল না!

    বাপ যেটা বুঝতে পারে নি তা হল – প্রবলেম ডান্ডার ছিল না। কারিকুরি ছিল আমার হেঁড়ে মাথার। আমার মাথা যে বিশাল কিছু শক্ত তা আমি সেই দিনের পর টের পেলাম। এই এখনো সাধারণের মাথা দিয়ে সেলুনের নাপিত গুলো আমার মাথাকে জাজ করতে চায়! ওরা বুঝতে পারে না, ম্যাসাজের যে জ্যাক হ্যামার টাইপের মেশিনটা ওরা ব্যবহার করে, তার সবচেয়ে হাই সেটিংটা দিয়ে আমার মাথায় ঘা মারলে আমার কাছে তা সুরসুরি মনে হয়। এর পর থেকে আরো কিছু ঘটনা জুড়ে গিয়ে আমার নিজের কনফিডেন্স বাড়তে থাকে আমার মাথার গাম্বাটত্ব নিয়ে। আমার ধারণা হয়ে গিয়েছিল যে আমার মাথা প্রায় অভেদ্য!

    কিন্তু আমার সেই ফলস্‌ কনফিডেন্সে প্রথম থাবা বসায় আমার মাসতুতো ভাই পার্থ। তখন আমার ক্লাস সেভেন – মামারবাড়ি সব ছুটিতে ঘুরতে গেছি। পার্থ আরো একটু ছোট আমার থেকে। যারা ঘটনা দেখছিল, যার মধ্যে আমার ছোটমামাও আছে – তাদের মতে ঘটনার দোষ পুরোপুরি আমার! বাট আই অ্যাম নট সিওর! মামার বাড়ির পেয়ারা গাছের আশেপাশের ঘটনা – আমি পেয়ারা পেরে খাচ্ছিলাম এবং খেতে খেতে একটা পাটকাঠি নিয়ে নাকি পার্থর পায়ের মাঝখানে মাঝে মাঝে কাঠি করছিলাম। এক সময় পার্থর ধৈর্যচ্যুত হয় – গাছে ঝুলছিল পেয়ারা পারার একটা বাঁশের আঁকশি (আমরা বলি ‘আঙরো’) – সেটা টেনে নিয়ে পার্থ স্যার দিলেন আমার মাথার ডানদিক চেপে এক বিশাল ঘা। সেই প্রথম ‘লোড’ (বল) আর প্রেশার (চাপ) এর মধ্যে ট্যেকনিক্যাল পার্থক্য টের পাওয়া। মাথা গেল ফেটে – দরদর করে রক্ত – বলতে নেই নিমোর খাঁটি দুধ খেয়ে আমার শরীর বেশ পুষ্টই ছিল তখন – ছোটমামা ছুটে এসে গামছা চাপা দিল – একটা গামছা পুরো রক্তে ভিজে গেল। সেলাই না দিলে যে রক্ত ঠিক ঠাক থামবে না সেটা বোঝা গেল। ফলতঃ সাইকেলে করে জামালপুর গ্রামীণ হাসপাতাল।

    স্বভাবতই গ্রামীন হাসপাতালে ঠিক সেই মুহুর্তে মাথা সেলাই করার লোক পাওয়া গেল না – ছোটা হল স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে ডাক্তার নাম ভুলে গেছি (মামা বা পার্থ কেউ লেখাটা পড়লে ডাক্তার নামটা মনে করে বলবে) – সে ডাক্তার নেই – তার কমপাউন্ডার অনন্ত-কে পাওয়া গেল খুঁজে পেতে, সে তখন লুঙ্গি গেঞ্জী পরে বসে বসে বিড়ি খাচ্ছিল – বলল, চেম্বারের চাবি নেই, তবে বাড়িতে স্টিচ করার করার সূচ-সুতো পড়ে থাকতে পারে। কি আর করা, নর্দমার ধারে কাঠের বেঞ্চে শুয়ে পড়লাম। সেই ভোঁতা সূচ দিয়ে অনন্ত মাথায় আটটা স্টীচ দিল। আর বলল ছেলে শক্ত আছে – কাঁদার তো কোন ব্যাপার নেই দেখছি। কাঁদার কোন কারণ আমি খুঁজে পাই নি – মাথায় ফেট্টি বেঁধে তার পরের দিন থেকে আবার ক্রিকেট। ইট মারলে পাটকেলটি খেতে হবে – এটা বিলক্ষণ জানা ছিল সেই ছোট বয়েস থেকেই – তাই ফালতু আতুপুতু করে টাইম ওয়েষ্ট করার কোন মানে ছিল না।

    তবে পার্থর মাথা ফাটিয়ে দেওয়ার এক ঐতিহাসিক তাৎপর্য ছিল – আমার লাইফ যারা কাছ থেকে দেখেছে তাদের মতে সেই লাঠির ঘা মাথায় পড়ার পর থেকেই আমার বুদ্ধি খুলে যায়। পরবর্তীকালে যা কিছু অ্যাকাডেমিক অ্যাচিভমেন্ট, তার সবেরই সূত্রপাত নাকি সেই মাথায় চোট পাওয়া। আমি আর প্রতিবাদ করি না – হতেও পারে – না হলে কে কম্মিকালে ভেবেছিল নিমোর ছেলে বিদেশ যাবে পড়াশুনা করতে! ব্যাক না পেয়ে এক চান্সে ক্লাস টুয়েলভ পাস করলেই আমাদের গ্রামে সেটা বিশাল ব্যাপার ছিল এককালে।

    নারকেল গাছে উঠেই প্রথম বাপের হাতে পর্যাপ্ত ক্যালানি – বাকি সব প্রকার গাছে উঠতে পারলেও আনুষ্ঠানিক নারকেল গাছে ওঠার শুরু আমার সেই ক্লাস সিক্স থেকে, ন-জ্যাঠুর বাড়ি। সেই ছোটবেলায় শনিবার কাকারা হাফ-বেলা করে দোকান বন্ধ করে ফিরলে আমরা ক্যারাম খেলাতে যেতাম ন-জ্যাঠুর বাড়ি। ওদের বাড়িতে তিনটে নারকেল গাছ ছিল। একদিন ক্যারাম খেলার শেষে কি কারণে ডাব খাওয়া নিয়ে কথা উঠল – নেপালদা বলল, “সুকান তুই যদি গাছ থেকে ডাব পারতে পারিস তা হলে পেট ভরে ল্যাংচা খাওয়াবো”। মানে এক প্রকার চুনতি যাকে বলে। একে তো পৌরষত্ব- নিয়ে চ্যালেঞ্জ, তার পরে ল্যাংচা খাবার অমোঘ লোভ – সে এক ডেডলি কম্বিনেশান। আমি গাছে উঠে নারকেল পারলাম – সবাই খেলাম – বাড়ি ফিরে রাতের বেলা বাপের হাতে প্রবল ক্যালানি। কোন এক বিভীষণ বাপের কানে গিয়ে কথা তোলে – শান বাঁধানো মেঝেয় যদি পড়তাম গাছ থেকে তা হলে মারা যেতাম এটা সত্য –

    এর পর নানা জায়গায় গাছে উঠে নারকেল পেড়েছি – গাছ থেকে নেমে দাঁতে করে নারকেল ছাড়িয়ে আমি বহুদিন প্যাকেজ সার্ভিস প্রদান করেছি। নিমোর নানা লোকের গাছে, ইনক্লুডিং মোড়লদের বাগান এবং দূর্গা দালানের পিছনের গাছ গুলোয়, নিজেদের গাছ তো আছেই – মামার বাড়ি, মায়ের মামার বাড়ি, পিসির বাড়ি – সে কভারেজ ভালোই ছিল বলতে গেলে। বাপ জানতে পারলেই ক্যালাত –

    এই ডাবের জন্যই আমার ইংরাজী সেকেন্ড পেপারে প্রায় ১০ নম্বর কমে গিয়েছিল সেটাও আগে লিখেছি। হয়েছে কি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার প্রথম দিনে বাপ এসেছে টিফিন নিয়ে। এসে দ্যাখে কি তামাম ছেলের বাপ-মা ডাব ধরে আছে, আর ব্রেকের সময় ছেলেরা সেই ডাবে চুমুক দিতে দিতে নোটস-এ চোখ বোলাচ্ছে। তো তাই দেখে বাপও এসেছে দ্বিতীয় দিনে আমার জন্য ডাব! বাপ ডাব ধরে আছে আর আমি খাচ্ছি, সেই ভেবেই আমি যা শক্‌ পেয়েছিলাম আর কি বলব – সেই শকের চোটেই আমার নম্বর কমে যায় সেকেন্ড পেপারে।

    জীবনের দাম বাড়তে শুরু করার পর (আদপে শরীর ভারি হতে শুরু করলে) আসতে আস্তে নারকেল গাছে উঠা কমে যায়। খুব বেশী লম্বা গাছে উঠতে গেলে হাঁপ ধরে যায় – আমি ক্রমশ শহুরে খোকা হয়ে উঠি। একবার ইংল্যান্ড থেকে ছুটিতে এসে বললাম, “যাই খামারে গিয়ে ডাব পেরে আনি”। বাপ হাইঁহাই করে উঠল – বিলেত ফেরত ছেলে ডাব পারবে কি।! ডাকো কমল-দা কে। কমলদা আমাদের বাড়িতে কাজ করে এবং বাপের রাইট হ্যান্ড টাইপের চাষ বাসের ব্যাপারে। কমল-দা বলল, “আমারো বয়স হচ্ছে, তবে তোর খাতিরে তো উঠতে হবেই”। এর পর আস্তে আস্তে কমলদা ডাব গাছে ওঠা ছেড়ে দেয়। আমার বিয়ের সময়ে বিদেশি বন্ধু-বান্ধবী গুলো এলে সেই শেষ বারের মত কমলদা বুড়ো বয়েসে নারকেল গাছে ওঠে। গ্রীক মেয়ে আইরীন কমলদাকে একটা বিদেশী সিগারেট দেয় – তাতে কমলদা আপ্লুত, মেমের কাছ থেক সিগারেট পাওয়া! নারকেল গাছে ওঠা তো তুচ্ছ তো তার কাছে।

    আমার প্রচুর অধঃপতন হয়েছে আজকাল – আমি এখন বিগবাসকেট থেকে অনলাইন ওর্ডার করে ৪০ টাকা দিয়ে ডাব কিনি – ডাবের জলে চুমুক দিয়ে বিড়বিড় করে বলি – “কি যুগ পড়লো মাইরি”!
  • সুকি | 90045.205.232323.195 | ০৬ মে ২০১৯ ১৭:৩৮381959
  • ধেনো এবং ইংরেজী বিদ্যা সংক্রান্ত
    ------------------------------------------------

    পড়াশুনার রেফারেন্স পয়েন্ট নিয়ে নিমোতে একটু ডাউট হয়ে গিয়েছিল একবার – কেন বলতে পারব না। এমনিতে আমার গ্রামের ন্যাঙটো বেলার বন্ধুরা কেউই বেশি পড়াশুনা করে চাকুরী ইত্যাদি করার দিক মারায় নি। কেবল চাঁদুই যা ইস্কুল মাষ্টারী করছে এখন – আর বাকি আমার জিগরী দোস্তরা কেউ আলুর ব্যবসা, কেউ জাভেদ হাবিব এর দোকানে স্টাইলিষ্ট মাষ্টার, কেউ লটারীর ধান্দা, কেউ মোনহারী দোকানে মাল সাপ্লায়ার, কেউ বড় ভাইয়ের টেলারিং দোকানে জামা কাপড় কাটছে, কেউ বর্ধমানের মল্লিক বাজারে ফার্ণিচারের দোকানের ম্যানেজার, কেউ নিমো স্টেশনে পান-বিড়ির দোকান দিয়েছে, কেউ রেল লাইনে পাথর ঠ্যালে – এই সব মিলিয়ে মিশিয়ে আর কি।

    বলাই বাহুল্য আমাদের ভাঁটের মাঝে আর যাই হোক কোনদিনই ভুল করেও পড়াশুনার আলোচনা উঠত না। আমরা বিকেলের দিকে আড্ডা মারতাম নিমো স্টেশনে – একদিন সবাই বিকেলে বসে আছি, পাঁচটা বারোর আপ লোকালটা বরাবরেই মতই লেট ছিল। তাই আশে পাশে অনেক প্যাসেজ্ঞার দাঁড়িয়ে আছে। ফুরফুরে বাতাস – জোরদার ভাঁট চলছে। একটা সুন্দরী মেয়েও দাঁড়িয়ে রয়েছে পাশে – মনে হয় কারো বাড়ি কুটুম্ব এসেছিল। এমত অবস্থায় দেখা গেল এপারের বাউরি পাড়ার সুবল-দা মদ খেয়ে টলতে টলতে ফিরছে স্টেশন দিয়ে। সুবলদা আমাদের বাড়ি মাঠে কাজ করত – ফলে হয়ত বাড়িতে কোন আলোচনা শুনে ধারণা করে নিয়েছিল আমি নাকি পড়াশুনা করছি লাগামছাড়া, মানে নিমো গ্রামের টলারেবল লিমিটের বাইরে। এবার বুঝে নিতে হবে, সুবল-দা মদ খেলে দু-চার লাইন ইংরাজী বলে ফেলত। ভগবান জানে কোথা থেকে শিখেছিল – শোনা যায় যৌবন বেলায় কাঠে কাজ করে ফিরে সুবল-দা তার মাকে বলেছিল, ‘এএএ মা, গিভ মি এ গ্লাস অফ ওয়াটার”! মোদ্দা কথায় ইংরাজী ভাষার প্রতি সুবলদার এক ফ্যাসিনেশন ছিল।

    তো সেই দিন মাল খেয়ে কি মনে করে আমাদের দিকে এগিয়ে এল সুবলদা স্টেশনে – আমাকে দেখে বলল, “শুনলাম সুকান তুই নাকি ইংরেজী শিখছিস জোরকদমে”? আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সুবলদা, “দেখি কেমন শিখেছিস – বলতো দেখি কচুপাতার ইংরেজী কি”? আমার অবস্থা তখন একটু অপ্রস্তুত – বন্ধুদের নিয়ে বা গ্রামের লোক নিয়ে মাথাব্যাথা নেই – কিন্তু সামনে একটা সুন্দরী দাঁড়িয়ে রয়েছে। বলাই বাহুল্য কচুপাতার ইংরাজী আমি তখনো জানতাম না, আর এখনো জানি না। সুবলদা কিন্তু আমাকে টাইম প্রেশারে ফেলে নি – আমাকে অ্যাম্পেল টাইম দিল – সেই মেয়ে দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে অনুসন্ধিৎসু চোখে। খানিকক্ষণ ওয়েট করে সুবলদা ভারডিক্ট দিল, “ইংরাজী তো বাঁড়া দেখছি কিছুই শিখিস নি”!

    আবার কি দয়া হলে আমার উপর – জানালো, “ইংরাজী তো পারলি না, দেখি বাংলা কেমন শিখেছিস। আচ্ছা বল তো, সব পূর্ণিমায় অমাবস্যা হয় না কেন?” আমি তো এবার সিরিয়াসলি ঘাবড়ে গেলাম – এবার কিন্তু বেশী টাইম দিল না – গজগজ করতে করতে সুবল-দা এগিয়ে গেল আমাদের কাছ থেকে – “তোর বাবা তো বাঁড়া শুনলাম সেদিন বলছে ছেলে নাকি কলকাতা ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যাবে! বাল যাবে! শালা কারখানা তে কাজ করতে যাবে সেটাকে ছেলে পড়তে যাবে বলে চালাচ্ছে মনে হয়! কিস্যু তো শেখেনি!” সুবলদা আমাকে সেই যে অপমান করেছিল – তার পর থেকে হল কি গাইডের ধ্যাতানি, ম্যানেজারের না-পসন্দ, এয়ারপোর্টের বিসনেস ক্লাসে চাপতে গেলে হ্যাঠা, ইমিগ্রেশান অফিসারের তুরুশ্চু – কিছুই গায়ে লাগে না! আমার অপমানিত হবার স্কেল-টাই চেঞ্জ করে দিয়েছিল সুবলদা।

    এই ভাবে মদ খেতে খেতে সুবলদা একদিন মারা গেল। মনে রাখতে হবে মদ মানে তখন ধেনো। তখনো পাউচ প্যাকে মদের চলন হয় নি – মদ খেতে যাবার মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চারাস ব্যাপার ছিল। আমাদের দিকে তখন ভাটিখানা বলতে ‘পদ্দেরে’ পুকুরের পাড়, মাশডাঙা এবং আরো দু একটা ছুপা জায়গা। পদ্দেরে পুকুরের পাড়ে মাঝে মাঝেই পুলিশ আসত – এসে লাঠি দিয়ে হাঁড়ি ইত্যাদি ভেঙে ভাঁটিখানা বন্ধ – তারপর কিছু দিন বাদে আবার চালু। এই ভাবেই চলছিল। এর অনেক অনেক দিন পর একবার গ্রামে গিয়ে দেখি সন্ধ্যাবেলা নিমো স্টেশনের থেকে কোলেপাড়া যাবার রাস্তায় ওইখানে অন্ধকারে সাইকেল থেকে ব্যাগ ঝুলিয়ে কেউ পাউচ প্যাক বিক্রী করছে – আমি অবাক, নিমোর পাবলিক আবার কবে থেকে পাউচ প্যাকে জল খেতে শুরু করল! আমার ভুল ভাঙিয়ে জানানো হল – উহা জল নহে, উহা ধেনো। পাউচ প্যাক হয়ে খুব সুবিধা হয়ে গ্যাছে নাকি আজকাল। বোতল ফেরত দেবার ঝামেলা নেই – বসে খেতে হবে এমন কোন রেষ্ট্রিকশন নেই – খেতে খেতে চলে যাওয়া যেতে পারে যেমন ভাবে লোকে ট্রেনে আমের সরবত খায় পাউচে।

    মদ খাওয়া দেদার চলত – মদ মানে দেশী, ধেনো যাকে বলা হত বা চুল্লু বা কান্ট্রী। কিন্তু বিষ মদ খেয়ে অনেকে মারা গ্যাছে এমন ঘটনা আমি মনে করতে পারছি না। যারা মদের লাইনের লোক তাঁরা জানবেন যে চুল্লু ডীষ্টিল করার সময়, ফার্ষ্ট কাট বলে একটা ব্যাপার থাকে। ফার্ষ্ট কাটের মাল বিষাক্ত হতে পারে – তখন ওতে মিথাইল অ্যালকোহল থাকে। সেটাকে ফেলে দেবার পর ইথাইল অ্যালকোহল খেয়ে মদের ফুরফুরে ইত্যাদি।

    ধেনো খেয়ে নিমোতে অনেকেই মারা যায় – তার মধ্যে আমাদের মাঠে কাজ করার নাগাড়ে কিষেণ সুবল-দা (আগে যার কথা বলেছি), রাম-দা এবং কালো-দা আছে। আর আছে কেষ্ট জামাই। সেই আমাদের ছোটবেলায় পয়লা ভাদ্রে নিমো-গ্রামের ঝাপানের সময়, আমাদের বাড়িতে মদ তৈরী হত - ভাত পচিয়ে এবং তাতে সেই গুলি মিশিয়ে। রাম, সুবল, কালো এরা সবাই তখন আমাদের বাড়িতে কিষেণের কাজ করত – তবে ওদের অকালে মারা যাওয়ার সাথে সেই মদ তৈরীর ডাইরেক্ট কোন সম্পর্ক ছিল না মনে হয় – এতো আর রেডিয়েশন নিয়ে কারবার নয় যে আশেপাশে থাকলেই প্রভাব পড়বে! আর তা ছাড়া বছরের একদিন তৈরী মদ খেয়ে কি আর অকালে মারা যাওয়া যায়?

    এদের তাও একটু বয়স হয়েছিল, একদম হালকা বয়েসে মারা যায় ও-বাউরি পাড়ার রামা। সে ধেনো খাওয়া প্রায় এক অন্য পর্যায়ে নিয়ে চলে গিয়েছিলো – জল প্রায় খেতোই না – সকালে মুখ ধুচ্ছে ধেনো দিয়ে, জলখাবার বেলা মাঠে জলখাবার নিয়ে গিয়ে দেখা গেল রামা ধেনো দিয়ে মুড়ি খাচ্ছে। এই অ্যাতো মদ খেলে যায় হয় আর কি – শরীরের ভিতরে পেটের দিকে থাকা যা কিছু যন্ত্র-পাতি সব ফেল করল – পেট ফুলে গেল – ডাক্তার জবাব দিয়ে দিল। রামা কোন বিকার নেই – মাঠে কাজ করার ক্ষমতা রইল না একসময় – নিমোর লোকে বলল, “আহা ছেলেটা মারা যাচ্ছে, ওকে একটু ধেনো কিনে দাও গো – আমরা থাকতে ছেলেটা না খেতে পেয়ে মারা যাবে!” এইভাবেই সবার আদর লভ্য ধেনো খেতে রামা তিরিশ পেরোবার আগেই দেহ রাখল।

    একদিন দেখা গেল রাম-দার মাল খাবার পয়সা শেষ – বৌদি গ্যাছে মাঠে কাজ করতে। বাড়িতে শুধু ওদের ছোটছেলে সাধু – সে তখন খুবই ছোট। তো রামদা দরজার পাল্লা খুলে নিয়ে বেচে মদ খাবে বলে পাল্লা কাঁধে দিয়ে রাস্তাপারের দিকে রওয়ানা দিল – পিছনে সাধু ফলো করতে করতে বলছে, “এ বাপ – উটা বেচিস না রে”। কে শোনে কার কথা! তবে দরজার পাল্লা বেচে মদ ওই একবারই – অন্য জিনিস পত্র বেচে বা বাঁধা রেখে ধেনো খাবার উদাহরণ অনেক।

    তো ঘটনা হল – বাউরি পাড়ার ওরা মাল খেলেও ওদের কাউকে ‘মাতাল’ বলে ডাকনাম দেওয়া হয় নি। কিন্তু জেলেপাড়ার কার্তিক-দা আমার কাকাদের কাছ থেকে ‘মাতাল’ উপাধি পেয়ে বসল। কার্তিক-দা আমার থেকে অনেক বয়সে বড় – আমাদের কাকার বয়সী। আমার বড় জ্যাঠাই ওকে চাকুরী করে দিয়েছিল কংগ্রেস পিরিওডে মেমারী সেটেলমেন্ট অফিসে। বাই ডিফল্ট পাবলিক চাকুরী সংক্রান্ত ব্যাপারে অকৃতজ্ঞ হয় – মানে কারো সাহায্যে চাকুরী পেলে সেটা স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু কার্তিকদা ছিল তার প্রবল ব্যতিক্রম – জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সে আমার জ্যাঠার এবং আমাদের পুরো ঘোষ পরিবারের প্রতি অনুগত ছিল। এই কার্তিকদার হাত ধরেই আমার মদ খাবার শুরু – তখন ক্লাস সেভেন-এইট।

    হয়েছে কি আমার পিসির ছেলে নিখিলদা বি এস এফ এ চাকুরী পেল। ফলে দুর্গা পুজোর সময় বি এস এফ ক্যান্টিন থেকে সস্তায় বিলেতী মাল আনা শুরু নিখিলদার। তা বাড়ির নিখিলদার সমবয়সী দাদা-কাকাদের ব্যাচ সেই মাল খাবে – কিন্তু মদের চাট পাওয়া যাবে কোথায়? সেই আমলে বাড়িতে পুজোর সময় মাংস রান্নার বাধানিষেশ ছিল। ফলতঃ মাংসের চাটের দায়িত্ব গিয়ে পরে কার্তিকদার উপর। সে হাসি মনে কিছু বছর এই কাজ করার পর বুঝতে পাল মদের ভাগ ঠিক মত পাচ্ছে না সে – এবং তার পর আমার সাথে জোট বাঁধল। আমাকে বলল, “সুকান, নিখিলের ব্যাগে দেখবি মদের বোতল গুলো আছে। তুই ওরই মধ্যে দু-চারটে বোতল খুলে একটু করে মদ ঢেলে নিবি অন্য শিশিতে – দিয়ে জল দিয়ে মেকআপ করে দিবি। ওরা বুঝতে পারবে না। আমি এদিকে মাংসে চাট সরিয়ে রাখব কিছু। শুধু তুই আর আমি চুপিচুপি খাব ওই মালটা”। এই ভাবেই আমার মদ খাওয়া শুরু কার্তিকদার ভালোবাসার হাত ধরে।

    কার্তিকদা ভালো মনের সরল মানুষ ছিল – তখন সেটেলমেন্ট অফিসের স্থান ছিল মেমারী স্টেশানবাজারের আমাদের দোকানের সামনের বিল্ডিং-এর তিন তলায়। কার্তিকদা মাঝে মাঝে ঘুষ পেত দশ-কুড়ি টাকা। যেদিন পেত, সেদিন তার ফুর্তি দ্যাখে কে! আমি মেমারী ইস্কুল থেকে ফেরার সময় দোকানে এলে কার্তিকদা তক্কে তক্কে থাকত – তিনতলার উপর থেকে চিৎকার, “সুকান, আজ কুড়ি টাকা হয়েছে”। তারপর আমরা দুজনে গিয়ে লক্ষীর এগরোল বা নীরেন ময়রার দোকানে মিষ্টি খেতাম। ভোট এলেই আমার মনে পরে যায় কার্তিকদার কথা – তার গ্র্যান্ড প্ল্যানের কথা। গ্রামের দিকে ভোটের (প্রাক ভোটিং মেশিন) সাথে যাদের পরিচয় আছে তারা জানেন যে, ভোটদেবার জায়গাটা বানানো হত ঘরের কোণের দিকে চট দিয়ে ঘিরে এবং ভিতরে টেবিলে অনেক সময় একটা হ্যারিকেন থাকত। কার্তিকদার দীর্ঘদিনের লোভ ছিল সেই হ্যারিকেনের প্রতি। আমার তখনো ভোটের বয়স হয় নি – আমার সাথে কার্তিকদা প্ল্যান করল যে সে যখন ভোট দিতে ঢুকবে ফাঁকায় ফাঁকায়, তখন আমি যে জানলার পাশে ওয়েট করি। বলল, “সুকান, আমি জানলা দিয়ে হ্যারিকেনটা গইলে দোব, তুই নিয়ে পাইলে আসবি”। পঞ্চায়েত ভোটে সেই হ্যারিকেন গলল না নিমো প্রাইমারী ইস্কুলের জানালার রডের ফাঁক দিয়ে। পরের বিধানসভা এবং লোকসভাতেও তাই। আমার আর কার্তিকদার হ্যারিকেন সরানোর প্ল্যান অধুরাই থেকে গেল।

    কার্তিকদাও অকালে মারা গেল হঠ করে একদিন – আমি তখন গ্রাম থেকে অনেক দূরে বিদেশে। এতো কম বয়সে তো মরে যাবার কথা ছিল না! তাহলে কি কার্তিকদার ‘মাতাল’-নামটা কাকারা জেনেশুনেই দিয়েছিল? এ মৃত্যুও কি ধেনোর সাথে জড়িত? কার্তিকদার কাছ থেকে সেটা জানার আর সুযোগ হয় নি।
  • একক | 12.39.235612.216 | ০৬ মে ২০১৯ ১৯:০৯381960
  • এটা তো আপডেট হলেই পড়ি , কেও পড়ছেনা আবার কী ঃ))

    মামু একটা "পড়ছি কিন্তু " বাটন বানিয়ে দাও না। লাইক ফাইক না।
  • Du | 237812.58.450112.202 | ০৬ মে ২০১৯ ২৩:৩০381961
  • nimor galp parhe haasabaar jany duniyaar Jaabateeya imo kam parhe. :)))_÷
  • Du | 237812.58.450112.202 | ০৬ মে ২০১৯ ২৩:৩৩381962
  • নিমোর গল্প পড়ে হাসবার জন্য দুনিয়ার যাবতীয় ইমো কম পড়ে। ঃ)))
  • Amit | 340123.0.34.2 | ০৭ মে ২০১৯ ০৫:২৭381963
  • সুকি, ফেবুর ছবি গুলো এখানেও পোস্টিয়ে দিতে পারো। ভালো লাগবে আরো।
  • aranya | 236712.115.4545.102 | ০৭ মে ২০১৯ ০৫:৫২381964
  • দূর্দান্ত! সুকি আমাদের সব্বাই-কে নিমো প্রেমী করে ছেড়েছেন :-)
  • Ela | 230123.142.6789.62 | ০৭ মে ২০১৯ ০৭:৩৭381966
  • পড়ছি তো বটেই, গিলছিও বলা যায়। কথা বলে ফ্লো-টা নষ্ট করতে চাই না।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি প্রতিক্রিয়া দিন