এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  পড়াবই  মনে রবে

  • শৈলবালা ঘোষজায়া - অসাম্প্রদায়িকতার পাঠ ও পুনরাবিষ্কার

    দিলীপ ঘোষ
    পড়াবই | মনে রবে | ২৬ মার্চ ২০২৩ | ১৯৭৬ বার পঠিত | রেটিং ৪.৮ (৫ জন)


  • ২রা মার্চ ছিল তাঁর জন্মদিন। ফেসবুকে তাঁর নাম দিয়ে  সার্চ করলাম সেই তারিখের কয়েকদিন পরে। কোনো পরিশ্রম ছাড়াই উঠে এল ৩৩ টা ছবি, আর অন্তত গোটা পঞ্চাশেক পোস্ট।  ছবি এবং পোস্টগুলোর অনেক ক-টাই একই বা ছবি বা লেখার কপি, কিন্ত প্রকাশিত হয়েছে আলাদা আলাদা ফেসবুক পেজে। অনেকেই জানেন তাঁর বিষয়ে।

    গত শতকের নব্বই দশকের প্রথমার্ধেও বাংলা বইয়ের অ্যাভারেজ পাঠককে শৈলবালা ঘোষজায়ার নাম জিজ্ঞেস করলে ভুরু কপালে তুলে বলতেন, ‘না, পড়েছি বলে মনে পড়ছে না!’ 

    শৈলবালা পুনরাবিষ্কৃত হলেন, কারণ বাবরি মসজিদ ভাঙা পড়ল। 

    শৈলবালা আমার প্রথম শিক্ষাগুরু, তিনি আমাকে সাক্ষর করেছিলেন। সম্পর্কে আমি তাঁর নাতি, তিনি আমার বাবার কাকিমা। বাবারা তাঁকে ডাকতেন 'নতুন- মা' নামে, আমাদের তিনি নতুন-ঠাকুমা।

    খুব বেশিদিন তাঁর সঙ্গ পেয়েছি এমন নয়। শৈশব আর কৈশোরের সন্ধিক্ষণের বেশ কিছু দিন কেটেছে তাঁর সান্নিধ্যে, সেটুকুই আমার ব্যক্তিগত স্মৃতি তাঁকে নিয়ে। উইকিপিডিয়ায় (শৈলবালা ঘোষজায়া - উইকিপিডিয়া)  তাঁর কথা যেটুকু পাওয়া যায়, শুকনো তথ্যের নিরিখে তার থেকে খুব বেশি কিছু সরবরাহ করতে পারব না, কারণ আমি ভাল করে কিশোর হওয়ার আগেই তিনি তাঁর শ্বশুরবাড়ি (এবং আমার দেশের বাড়ি) মেমারি থেকে চলে গেছেন। আমিও মেমারির স্থায়ী বাসিন্দা ছিলাম না, যেতাম ছুটিছাটায়। 

    মেমারিতে আমাদের পৈতৃক বাড়িটির আমাদের অংশটিতে  ঠাকুমা একাই থাকতেন। টোটাল ম্যাট্রিয়ার্কি (বোধহয়  গ্র্যাণ্ডম্যাট্রিয়ার্কি বলা ভাল) কেমন হতে পারে  আমার বাবার পৈতৃক বাড়িতে সেটা বুঝতে পারতাম । 
    পৈতৃক ভিটের  আমাদের অংশের গোটা আষ্টেক ঘরসমেত তিন তলা বাড়িটায় আমার ঠাকুমার  আটটি সন্তানের একজনও স্থায়ীভাবে  থাকতেন না।  তাঁরা পূজাপার্বণে  কিংবা ছুটিছাটায় আসতেন । 

    আমার দাদু তখনো বেঁচে, তবে থাকেন তাঁর বড় ছেলেকে নিয়ে হাওড়ায় আলাদা বাড়ি করে। আমার অজ্ঞাত  কোনও কারণে ঠাকুমা (যাঁর বাবা সেকালের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট  ছিলেন, এবং ঠাকুমার ব্যক্তিত্বও সেই পেডিগ্রির অনুরূপ ছিল)-র সঙ্গে তাঁর ইঞ্জিনিয়ার স্বামীর কোনো একটা বিষয়ে মতানৈক্য হয়েছিল। বাড়ির কর্তা হিসাবে দাদু তাঁর মতামত ঠাকুমার ওপরে চাপানোর চেষ্টা করেননি নাকি চেষ্টা করে সফল হননি—সেটা আজও  আমার জানা নেই। তবে অবসরের পর পৈতৃক বাড়িটি ঠাকুমাকে ছেড়ে দিয়ে তিনি হাওড়ার বাজেশিবপুরে একটি বাড়ি বানিয়ে থাকতে শুরু করলেন (আমার দাদু  স্বেচ্ছা-নির্বাসনে ছিলেন প্রায় কুড়ি বছর। দাদু মারা যাওয়ার অল্প কিছুদিন আগে ঠাকুমা অবশ্য হাওড়ায় এসেছিলেন। প্রায় আশী বছরের বৃদ্ধ পত্নীকে পেয়ে একগাল হেসে টাক্সিতে চড়ে বসলেন মেমারির ট্রেন ধরতে। সেখানেই মারা যান কিছুদিন ঠাকুমার যত্ন আত্তি পেয়ে। সেটা অনেক পরের কথা। অন্য এক জমকালো প্রেমের গল্প)।

    মেমারিতে আমাদের বাড়িটাকে স্রেফ বাড়ি না বলে পাড়া বলাই ভাল। বাবাদের  কাকিমা, পিসিমা মিলে সেখানে অনেক ঠাকুমা। এঁদের মধ্যে তিনজন ছিলেন বিশেষ ঘনিষ্ঠ। আমার ঠাকুমা, হেমনলিনী; বাবার বিধবা কাকিমা এবং সেই আমলের মোটামুটি প্রতিষ্ঠিতা লেখিকা শৈলবালা ঘোষজায়া বাবা কাকারা সবাই যাঁকে নতুন মা বলতেন, এবং বাবার বিধবা পিসিমা, যাঁকে সবাই কনে মা বলে ডাকতেন। কনেমার আসল নামটি আমি ভুলে গেছি, বরাবর তাঁকে কনে ঠাকুমা বলেই জেনে এসেছি। 

    আমার যখন বছর চারেক বয়েস,  তখনও বাবা মা বহু চেষ্টা করেও  বইপত্তরের সঙ্গে কিছুতেই আমার ভাব ভালোবাসা গড়ে তুলতেন পারছিলেন না। আমরা তখন থাকতাম অসমের শিবসাগর জেলার শিমালুগুড়ি নামক একটি জংশন স্টেশনের রেল কলোনীতে। সেখান থেকে তিন দিন তিন রাত ট্রেনে কাটিয়ে, স্টিমারে গঙ্গা আর ব্রহ্মপুত্র নদী পার হয়ে তবে শিমালুগুড়ি থেকে মেমারি আসা যেত তখন। সেবার মেমারি এসে বাবা ঠিক করলেন মাকে আর আমাকে ঠাকুমার কাছে রেখে যাবেন কিছুদিন। এই সিদ্ধান্তের পেছনে আমার ঠাকুমার প্রত্যক্ষ মদত ছিল। আমার পড়াশোনার হাল দেখে ঠাকুমা বাবাকে বলেছিলেন নতুন বৌকে বল (নতুন ঠাকুমাকে ওই নামেই ডাকতেন আমার ঠাকুমা), ও ঠিক শিখিয়ে দেবে। 

    কালোকুলো গোলগাল নাতিটিকে সুনজরেই দেখতেন নতুন ঠাকুমা। এক কথায়  ‘চ্যালেঞ্জ নিবি না নাতি’ বলে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কিমাশ্চর্যম, করেও ফেলেছিলেন।

    পড়ানোর ভারি মজার টেকনিক ছিল নতুন ঠাকুমার। শুরুতে বইও খুলতেন না, ছবিও দেখাতেন না, খালি মুখে মুখে গল্প বলতেন, সেই সব গল্পের হিরো আমি। ছুটিছাটায় খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো, পিসতুতো ভাইবোনেরা আসত, সন্ধ্যাবেলা গল্পের আসরে তারাও জুটতো তখন। নতুন ঠাকুমার মুখে মুখে বানানো  তাৎক্ষণিক গল্পের প্লট এবং চরিত্র সংখ্যা বেজায় ফ্লেক্সিবল। গল্পের আসরে যারাই এসে বসছে  সবাই চরিত্র হয়ে উঠছে। যে সারাদিন বেশি দুষ্টুমি করেছে, গল্পে তাকে নানারকম কষ্ট পেতে হচ্ছে, আর যাদের সঙ্গে দুষ্টুমি করেছে  তারাই  ওকে গল্পে উদ্ধার করেছে।

    গল্পে গল্পে বই কখন খোলা হলো, অক্ষর জ্ঞান কখন হল কিছুই মনে নেই আমার। নতুন ঠাকুমার তত্ত্বাবধানে মাস ছয়েক কাটনোর পর যখন বাবার কর্মস্থলে ফিরে গিয়েছিলাম, তখন আমি সাক্ষর এবং শিশু সাহিত্য সংসদ প্রকাশিত খান ছয়েক বইয়ের মালিক।

    পড়তে শেখা মনে না থাকলেও লিখতে শেখার খানিকটা মনে পড়ে। আমরা খুড়তুতো জ্যাঠতুতো ভাইরা তখন চারপাশ থেকে কানে আসা শব্দগুলির মধ্যে থেকে গালাগালগুলি ব্লটিং পেপারের মত শুষে নিচ্ছি এবং প্রাণপণে প্রয়োগ করছি। কে কাকে কী খারাপ কথা বলছে তাই নিয়ে নালিশও হচ্ছে বড়দের কাছে। সেটা ঠিক আগের প্রজন্মের কারুর কাছে হলে তাৎক্ষণিক চড় থাপ্পড় জুটছে, আর তারও আগের প্রজন্মের হলে বকুনির ওপর দিয়ে যাচ্ছে। 

    নতুন ঠাকুমা এই নালিশকেই লেখা প্র্যাকটিস করার কাজে লাগালেন। নিয়ম করলেন, কোনো মৌখিক নালিশ চলবে না। সবাইকে লিখে নালিশ করতে হবে। একদম 'শ্রীকান্ত' -এর মেজদার স্টাইলে। কিছুদিনের মধ্যেই নতুন ঠাকুমার ঘর ঝাঁট দেবার সময় নানান সাইজের টুকরো কাগজে নানা ধরণের আঁকাবাঁকা অক্ষরে লেখা নাতিদের নালিশ পাওয়া যেতে লাগলো। “ন’দা আমাকে শালা বলেছে”, কিম্বা “সেজদা পেছন থেকে কুমকুমকে মাগী বলেছে”। নালিশ লিখতে লিখতেই দাদারা খানিক লেখাপড়া শিখে ফেলল। যে খারাপ কথা বলেছে তাকে শাস্তিস্বরূপ অনেকটা লিখতে হত, আর কনে ঠাকুমার কঠিন ব্যক্তিত্বের সামনে শাস্তি না মানার কথা ভাবতেই পারতাম না আমরা।

    সন্ধ্যাবেলা নাতি নাতনিদের গল্প বলা তথা সাক্ষর করার পালা শেষ হলে একটা হারিকেন ঘিরে শুরু হত তিন ঠাকুমার আড্ডা। কখনো তাস খেলা হত, কখনো নিছক আড্ডা।  সে আড্ডার ভূগোল এবং ইতিহাস দুটোই ক্রমান্বয়ে বিস্তৃত হত। পারিবারিক ইতিহাস থেকে সামাজিক ইতিহাস, প্রদেশ ছুঁয়ে দেশ। মেঘন পিসি, বড় বৌমার উপাখ্যান থেকে শুরু হলেও  গড়াতো বিধান রায়, গান্ধী, নেহেরু, জিন্না মায় চার্চিল অবধি। মেমারি বর্ধমান কলকাতা, দিল্লি হয়ে, কাবুল-লন্ডনের নামও কানে ঢুকত সেখানে। পৃথিবী কত বড় তার প্রাথমিক ধারণা তৈরি হয়েছিল ওই আড্ডায় বসে। অনেক পরে খেয়াল করেছিলাম আড্ডায় আলোচিত অনেক কিছু ঢুকে পড়েছিল তাঁর নানা লেখায়। ওই সান্ধ্যকালীন আড্ডা ছিল তাঁর প্লটের সাউন্ডিং বোর্ড। কাবুল শহর নিয়ে নানা গল্প শুনতাম সেই আড্ডায়। পরে আবিষ্কার করেছিলাম নতুন ঠাকুমার একটি উপন্যাস ছিল কাবুলের পটভূমিতে।

    আমি ভাল করে বড় হওয়ার আগেই নতুন ঠাকুমার বড়  উপন্যাসগুলো লেখা হয়ে গেছে। সে বইগুলো তৎকালীন ক্ল্যাসিফিকেশন অনুযায়ী ‘বড়দের বই’ শ্রেণিভুক্ত, আমার পড়ার অনুমতি ছিল না। ছোটদের লেখা বেরোলে একটা পোস্টকার্ড পেতাম তাঁর কাছে থেকে প্রকাশের খবর জানিয়ে। অসমের যে প্রান্তে আমার শৈশব কেটেছে সেখানে কোনো বই বা ম্যাগাজিনের দোকান ছিল না। ডাকযোগে আসত কেবল শুকতারা, শিশুসাথী। ও দুটোতে যা বেরোত, সেগুলোই পড়তাম শুধু। 

    মায়ের আলমারিতে নতুন ঠাকুমার বইগুলো সাজানো থাকত।  অনেক কটার নাম রোজ দেখতে দেখতে মুখস্থ হয়ে গেছিল। এখনো মনে পড়ে, 

     "শেখ আন্দু", "মঙ্গল ঘট", "আড়াই চাল", "শান্তি", "মনীষা", "নমিতা", "ইমানদার", "বিভ্রাট", অবাক", "স্নিগ্ধা", "বিনীতাদি", "চৌকো চোয়াল", "রঙিন ফানুস", "জয় পতাকা", "তেজস্বতী", "অন্তরের পথে", "বিপত্তি" , "অভিশপ্ত সাধনা",  "জন্ম-অভিশপ্তা,  "শুভ পরিণয় ইত্যাদির কথা। 

    এটা সম্পূর্ণ তালিকা নয় অবশ্যই। শ্রী পুলক কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় ১৬ই সেপ্টেম্বর ২০১৮ র আনন্দবাজার অনলাইনে ‘প্রেমের বার্তা দিলেন শৈলবালা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধে জানিয়েছেন যে “উপন্যাস, গল্প, আত্মকথা, শিশুসাহিত্য, ঐতিহাসিক কাহিনি, নাটক—সব মিলিয়ে তাঁর প্রকাশিত-অপ্রকাশিত রচনাসম্ভার পঞ্চাশের কম তো নয়ই।” 

    তাঁর অনেক লেখাই  না পড়া রয়ে গেছে আমার।  যে ফেসবুক পোস্টগুলোর কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম সেগুলিতেও প্রায় সবাই বলেছেন  শৈলবালা ঘোষজায়া  "প্রায়- বিস্মৃতির" পর্যায়ে চলে গেছেন। 

    এই বিস্মৃত হওয়ার ব্যাপারটা বোধহয় পুরো সত্যি নয়, যদিও আমি যখন বড় হচ্ছি তখন আমার সমবয়সীরা কেউই শৈলবালাকে পড়েছে এমন দেখিনি। তিনি মারা যাওয়ার বেশ কিছু আগে থেকেই বাঙালি পাঠককুল তাঁকে নিয়ে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিল। আমার মায়ের প্রজন্মের পাঠকেরা বিশেষ করে মহিলা পাঠকেরা  অনেকেই অবশ্য পরিচিত ছিলেন তাঁর লেখার সঙ্গে। কিন্ত যাঁদের মতামত ‘ম্যাটার’ করে, তাঁদের কেউই পাত্তা দেননি শৈলবালাকে। 

    অ্যাকাডেমিক মহল বেশ উদাসীন ছিলেন  শৈলবালা সম্পর্কে।  "বঙ্গ সাহিত্যে উপন্যাসের ধারা" নামক ৫৭৭ পৃষ্ঠার  বইয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রামতনু লাহিড়ী অধ‍্যাপক  শ্রীকুমার বন্দোপাধ্যায় "স্ত্রী-ঔপন‍্যাসিক" হিসেবে প্রভাবতী দেবী সরস্বতী ও শৈলবালা ঘোষজায়া সম্পর্কে তিনটি বাক্যে মূল‍্যায়ণ করেছেন। তিনি লিখেছেন, "প্রভাবতী দেবী সরস্বতী ও শৈলবালা ঘোষজায়া অনেকগুলি উপন্যাস রচনা করিয়াছেন। কিন্তু ইহাদের মধ্যে নূতন ধারা প্রবর্তনের বিশেষ কোনও পরিচয় পাওয়া যায় না। মোটের উপর ইহারা সকলেই কম বেশী পুরাতন আদর্শ-সংঘর্ষের যুগে পুরাতনেরই পোষকতা করেন।" (বঙ্গ সাহিত্যে উপন্যাসের ধারা, তৃতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা-২৮৪: শ্রীকুমার বন্দোপাধ্যায়।)

    বুঝতেই পারছেন, বন্ধুমহলে “ওরে, জাত সাহিত্যিকের হাতে আমার হাতেখড়ি হয়েছিল রে!” জাতীয় স্টেটমেন্ট করে কলার তোলার কোনো অবকাশই ছিল না আমার। বাবার বদলির চাকরি। ঘুরতে ঘুরতে নতুন ঠাকুমা নিজের যে সমস্ত বই মাকে উপহার দিয়েছিলেন  তার অনেকগুলো হারিয়ে গেল। বহু জায়গায় মা কাউকে কাউকে পড়তে দিতেন তাঁর শাশুড়ির লেখা বইগুলো, সেগুলো ফিরে পেতেন না সেই স্টেশন ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার আগে, পুরো কলেকশানটাই আস্তে আস্তে ভ্যানিশ করে গেল। মায়ের বইয়ের আলমারিতে আমাদের স্মার্ট বাংলা আর ইংরেজি বই জায়গা করে নিতে শুরু করল। 

    গত শতকের সাতের দশক পর্যন্ত বাঙালি মধ্যবিত্ত বিয়েবাড়িতে বই উপহার দেওয়ার প্রথা ছিল। মলাটে নানা গয়নাগাটি পরা সুন্দরী নববধূর মুখের ছবি দেওয়া একটি হার্ড বাউন্ড বই, নাম "শুভ পরিণয়” এর একাধিক কপি উপহারস্বরূপ পেতেন নবদম্পতিরা। আমাদের বাড়িতেই সব ভাই বোন মিলে প্রায় খান দশেক কপি ছিল বইটার। লেখিকা শৈলবালা ঘোষজায়া। আমি নিশ্চিন্ত নই, কিন্তু আমার ধারণা ওই একটা বই ওঁর গ্রাসাচ্ছাদনের অনেকটা ভার বহন করেছিল। 

    আমাদের জ্ঞাতি গোষ্ঠীর একটা অংশ যাঁরা মেমারিতেই থাকতেন,  তাঁদের জীবিকার প্রধান উৎস ছিল পারিবারিক জমি  থেকে আয়। নিজেদের অংশটি অপ্রতুল হওয়ায় অন্যের অংশে থাবা বসানো তাদের যাপনক্রিয়ার অঙ্গ । বিধবাদের সম্পত্তির মত সহজলভ্য আর কিছু হয় না। এঁদের হাত এড়িয়ে বেঁচে থাকা বিশেষ করে অনাথা বিধবাদের পক্ষে খুব শক্ত কাজ। আমার ঠাকুমাকুল বহু দিন পর্যন্ত সেই লড়াই চালিয়েছিলেন। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদেরও ক্ষমতা কমে এসেছিল। নতুন ঠাকুমা উত্যক্ত হয়ে মেমারি ছেড়ে এক আশ্রমে চলে যান। সেখানেও উৎপীড়িত হয়ে আর এক ভাসুরপোর বাড়িতে শেষ জীবন কাটান। তিনি লড়তে পেড়েছিলেন শেষ পর্যন্ত তার প্রথম এবং প্রধান কারণ তিনি  অক্ষরের ক্ষমতা অর্জন করেছিলেন।  সেই সব জ্ঞাতিদের বেশ অনেকেরই দেখা পেয়েছিলাম “শুভ পরিণয়” -এ, নিখুঁত ভাবে ধরা পড়েছিল চরিত্রগুলির নানা ম্যানারিজম। আস্তে আস্তে বিয়েতে বই দেওয়ার প্রথা লোপ পেল, ‘শুভ পরিণয়’-ও বাজার থেকে অন্তর্হিত হয়ে গেল। ততোদিনে অবশ্য নতুন ঠাকুমাও চলে গেছেন।    

    ১৯৯২ সালে ভাঙা হল বাবরি মসজিদ। বাবরি মসজিদ ভাঙা পড়ার পরবর্তী দিনগুলো ছিল একটা আতঙ্কিত অস্থির সময়। সেই সময়ে আমার প্রতিবেশী ছিলেন অগ্রজপ্রতিম সহকর্মী কবি আনন্দ ঘোষ হাজরা, তখন বোধহয় পশ্চিমবঙ্গের ডিরেক্টর অফ কালচার। হঠাৎ একদিন সন্ধ্যাবেলা এসে হাজির হলেন আমার বাড়িতে। “আপনি আমায় বলেছিলেন না, আপনি শৈলবালা ঘোষজায়ার নাতি হন?” মানতে হল, এরকম দাবি করেছি। বললেন, “আপনাকে আবদুর রউফ সাহেব, ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার সম্পাদক  ফোন করবেন আমার রেফারেন্স দিয়ে, ধরবেন দয়া করে।” ‘চতুরঙ্গ’ চেনা পত্রিকা, রউফ সাহেবকেও নামে চিনি, কিন্তু আমায় কেন খুঁজবেন বুঝলাম না। 

    রউফ সাহেবের ফোন এলো খুব তাড়াতাড়ি, “আমরা শৈলবালা ঘোষজায়ার ‘শেখ আন্দু’ প্রিন্ট করতে চাই, আপনার কাছে কপি থাকলে যদি আমাদের পাঠান, আর কপিরাইটের ব্যাপারটাও যদি জানান?” আমি কোনো কাজে লাগলাম না রউফ সাহেবের। আমার কাছে শেখ আন্দুর কোনো কপি ছিল না, আর দ্বিতীয়ত, নতুন ঠাকুমা যেহেতু নিঃসন্তান ছিলেন, তাঁর ওয়ারিশ কে তাও নিশ্চিত ভাবে জানা ছিল না। আমার ধারণা আমার যে জেঠার কাছে তিনি শেষ জীবন কাটিয়েছেন কপিরাইটটা বোধহয় তাঁরই হবে। সেটাই জানিয়েছিলাম, বাকিটা রউফ সাহেব নিজ উদ্যোগে করে নিয়ে ১৯৯৪ সালে  নতুন করে ছাপিয়েছিলেন ‘শেখ আন্দু’। 

    নতুন ঠাকুমা মুসলমান যুবককে নায়ক এবং হিন্দু তরুণীকে নায়িকা করে লিখেছিলেন  এই উপন্যাস। এটি  প্রথমে ধারাবাহিক রূপে প্রকাশিত হয় প্রবাসীতে ১৯১৫ নাগাদ। গ্রন্থাকারে প্রথম সংস্করণ প্রকাশিত হয় ১৩২৪ সালে এবং দ্বিতীয় সংস্করণ ১৩২৮-এ।  তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিiত  ঢাকা থেকে ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে। বোঝা যাচ্ছে  দুই বাংলাতেই সমান জনপ্রিয় হয়েছিল ‘শেখ আন্দু’। 

    শিবনারায়ণ রায়  বাঙালি পাঠকদের সঙ্গে বইটির নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য লিখেছিলেন “শৈলবালা ঘোষজায়া ও শেখ আন্দু” শিরোনামের একটি দীর্ঘ প্রবন্ধ। সেখানে লিখেছিলেন, “হিন্দু যুবকের প্রতি মুসলমান তরুণীর অনুরাগ নিয়ে কাহিনি রচিত হয়েছে, কিন্তু মুসলমান যুবকের প্রতি হিন্দু তরুণীর অনুরাগ ‘শেখ আন্দু’ প্রকাশের আশি বছর পরেও হিন্দু সমাজে অথবা হিন্দুদের রচিত উপন্যাস সাহিত্যে খুব বেশি নজরে পড়ে না। ... বস্তুত ১৯১৫-১৬ খ্রিস্টাব্দে শৈলবালা যে কাহিনী প্রকাশ করেছিলেন তা শুধু সে যুগে বিস্ময়কর নয়, এখনো প্রায় বৈপ্লবিক ঠেকে। ... প্রবাসী পত্রিকায় উপন্যাসটির ধারাবাহিক প্রকাশ শেষ হবার পরই শৈলবালা চট্টগ্রামের একটি হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন এবং তার সহকারী শিক্ষক মোহাম্মেদ এয়াকুব আলি চৌধুরীর কাছ থেকে যুক্তভাবে স্বাক্ষরিত একটি চিঠি পান। এয়াকুব আলি নিজে সুপ্রতিষ্ঠিত লেখক। ‘মানব মুকুট’ (১৯২২) তাঁর শ্রেষ্ঠ রচনা। তাঁরা শৈলবালাকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন যে বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে মুসলমান স্ত্রী পুরুষদের যে ‘জঘন্য চরিত্র চিত্র’ আঁকা হয়েছিল তা হিন্দু মুসলমানের মিলনের পথে গভীর বাধা সৃষ্টি করে। হিন্দু সাহিত্যিকরা সেই পথেই এখনো চলেছেন। শৈলবালা এক্ষেত্রে অনন্যা। ‘সামান্য মুসলমান যুবকের মধ্যে সর্বাবয়বপুষ্ট আদর্শ মানব-চরিত্রের সৃষ্টি করিয়া এবং ‘দাদাজি’র মধ্যে গোঁড়ামির স্পর্শমুক্ত নির্মম নিষ্কলঙ্ক উদারতার বিকাশ ঘটাইয়া আপনি হিন্দু মুসলমানের মিলন সাহিত্যক্ষেত্রে, জাতীয় সমবেত শ্রদ্ধার মধ্যে গৌরবের সর্বশ্রেষ্ঠ আসন অধিকার করিয়াছেন। এই দিক দিয়া আপনার আসন বঙ্কিম, রবীন্দ্রনাথ অপেক্ষাও ঊর্ধ্বে, বহু ঊর্ধ্বে’ (২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৯১৫)। লেখাই বাহুল্য যে শিল্পী হিসেবে বঙ্কিম রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে শৈলবালার কোনো তুলনা চলে না, কিন্তু বঙ্গীয় ভাবুকতার ইতিহাসে তাঁর স্থান নিঃসন্দেহে খুবই বিশিষ্ট, কারণ তিনি নতুন মূল্যবোধ নিয়ে হিন্দু-মুসলমানের সম্পর্কটি দেখেছিলেন এবং তাঁর সেই দেখা সুদূর চট্টগ্রামের মুসলমান শিক্ষিত পাঠকের দ্বারা সংবর্ধিত হয়েছিল।” (স্বদেশ স্বকাল স্বজনঃ শিবনারায়ণ রায়; প্যাপিরাস, কলকাতা : ১৯৯৬)

    বাবরি মসজিদ বস্তুত হেলাছেদ্দার অতল থেকে তুলে আনল শৈলবালা ঘোষজায়াকে। শুধু ‘শেখ আন্দু’ তেই আটকে থাকলেন না পাঠক, প্রকাশক আর অ্যাকাডেমিশিয়ানরা। 

    অধ্যাপক মালিনী ভট্টাচার্য  যাদবপুরের স্কুল অফ উইমেন স্টাডিজ এর ডাইরেক্টর থাকার সময় নতুন ঠাকুমার ছোট গল্পের একটি সংকলন প্রকাশ করেছিলেন দে'জ পাবলিশিং এর সঙ্গে যৌথ ভাবে,  ২০০০ সালে। এই সংকলনের ভূমিকা লিখেছিলেন সৌরীন ভট্টাচার্য।

    ২০১১ য় মিত্র ঘোষ প্রকাশ করেছেন "শৈলবালা ঘোষজায়া - সেরা পাঁচটি উপন্যাস"।

    ২০১৫ সালে আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন এক তরুণী, নাম মোনালিসা ঘোষ। বললেন শৈলবালা ঘোষজায়াকে নিয়ে গবেষণা করছেন। আমার স্বল্প পুঁজি থেকে তাঁর বিশেষ উপকার হল এমন নয়। তিনি নিজের চেষ্টাতেই  যোগাড় করে ফেললেন প্রয়োজনীয় তথ্য। সম্ভবত ২০১৮ সালে মোনালিসা ঘোষের সম্পাদনায় প্রকাশিত হল  ‘শৈলবালা ঘোষজায়ার অগ্রন্থিত রচনাসংকলন’। 

    বর্তমান প্রজন্ম শৈলবালাকে বিস্মৃত হয়েছে এরকম অভিযোগ করতে পারি না আর। বস্তুত আমাদের প্রজন্মের চেয়ে এই প্রজন্ম অনেক কম উন্নাসিক। 

    আর পাঁচটি হিন্দু বিধবার মতই আচারনিষ্ঠ ছিলেন নতুন ঠাকুমা। স্নান করে উঠে পুজো করতে যাওয়ার সময় আমরা ভুল করে  ছুঁলেও আবার চান করতে যেতেন। ‘এঁটো’, ‘আমিষ’, ইত্যাদিও মানতেন খুব। প্রবল আগ্রহ ছিল জ্যোতিষে, গ্রহ নক্ষত্র অশ্লেষা মঘা ইত্যাদিতে বিশ্বাস ছিল খুব দৃঢ়। এই বিশ্বাস প্রতিফলিত হয়েছে বেশ কিছু উপন্যাসে। তাঁর অন্তত দুটো বই জ্যোতিষশাস্ত্রের দাপাদাপি ঠেলায় শেষ করিনি, একটি ‘অভিশপ্ত সাধনা’ আর অন্যটি বোধহয় ‘জন্ম অভিশপ্তা’। 

    মজার ব্যাপার, আমার মা খুব একটা জ্যোতিষ নিয়ে মাতামাতি করতেন না, কিন্তু এই দুটো বইই তাঁর খুব প্রিয় ছিল। আমি বিরূপ সমালোচনা করায় মা খুব চটে গিয়ে বলেছিলেন আমি সাহিত্যের কিছু বুঝি না। আমার নিজের ধারণা এই ধরনের কয়েকটা উপন্যাসের জন্যই  ‘পুরাতন’ পোষণ করার অভিযোগ তুলেছিলেন শ্রীকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। 

    উল্টোদিকে ধর্মের প্রশ্নে তিনি আশ্চর্য রকমের উদার। শুধু শেখ আন্দু নয়, তাঁর একাধিক উপন্যাসে মুসলমান নারী পুরুষের চরিত্র খুব উজ্জ্বল, তুলনায় অনেক উচ্চবর্ণের হিন্দু চরিত্রকে দেখা গেছে খলনায়কের ভূমিকায় ।

    শৈশবে তাঁর কাছে শোনা গল্পগুলো আমার মানসিকতায় খুব দৃঢ়ভাবে গেঁথে দিয়েছিল অসাম্প্রদায়িকতা। সব ধরনের সাম্প্রদায়িকতাই  যে অসহনীয় লাগে আমার, সেটা পুরোপুরি নতুন ঠাকুমার কাছ থেকে পাওয়া। 

    ওঁর থেকে যেটা সবচেয়ে বড় শিক্ষা আমার সেটা এই যে নিজের ধর্মে নিষ্ঠাবান মাত্রেই যে সাম্প্রদায়িক এটা ভাবার কোনো কারণ নেই, আবার যাঁরা ধর্মনিষ্ঠ নন তাঁরা যে অসাম্প্রদায়িক এ ভাবনাও ভিত্তিহীন। 

     


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • পড়াবই | ২৬ মার্চ ২০২৩ | ১৯৭৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Aranya | 2601:84:4600:8230:fd84:8f3:3a19:5f7 | ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৫:৪৯517915
  • বাঃ 
  • ইমানুল হক | 2401:4900:7072:4105:7891:bbff:fe52:343a | ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৭:২৫517918
  • খুব ভালো 
  • যোষিতা | ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৭:৩০517919
  • অনেক আধুনিক মনের মানুষ ছিলেন তিনি
  • দীপঙ্কর দাশগুপ্ত | 2409:40e0:1001:b590:1c46:8aff:fe91:298c | ২৭ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫০517920
  • দারুণ লাগল পড়তে। ইন্টারনেট আর্কাইভে শৈলবালা ঘোষজায়ার বেশ কয়েকটি বই রয়েছে - বিপত্তি, মোহের প্রায়শ্চিত্ত (নাটক) যেটি প্রকাশিত হয়েছিল গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় থেকে। বইটি উৎসর্গ করা হয়েছে স্নেহের সোদর, কমলকুমার  নন্দীকে এবং নিচে লেখা শুভার্থিনী নূতন দি। সেই বইয়ের পাতাতেই তাঁর অন্যান্য বইয়ের ঘোষণা -- নমিতা, শেখ আন্দু, মিষ্টিসরবৎ,, আড়াই - কাল, জন্ম অপরাধী, ইমানদার। পড়ার জন্যে রয়েছে আরও বই শৈলবালা ঘোষজায়ার গল্প সংকলন,  করুণা দেবীর আশ্রম, বিপত্তি, তেজস্বতী, রঙিন ফানুস, অকাল কুষ্মান্ডের কীর্তি, মঙ্গল-মঠ ইত্যাদি। 
    ভারতবর্ষ ১০ম বর্ষ, পৌষ ১৩২৯ সংখ্যায় পড়েছিলাম তাঁর লেখা ছোট গল্প জামাইবাবু। 
    ভেবে ভালো লাগে, একালে তাঁর লেখা বই বাজারে যদি নাও পাওয়া যায়, উৎসাহী পাঠক এই নারী সাহিত্যিককে সহজেই আবিষ্কার করতে পারবেন তাঁর বিভিন্ন বইয়ের ডিজিটাল সংস্করণের মাধ্যমে। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৭ মার্চ ২০২৩ ১১:১৮517921
  • মন  ভরে গেল। সেই কোনকালে কিছু পডেছি আজকের সকালটি সমৃদ্ধ হলো । আজকের দিনে তাঁকে যেন বারবার মনে রাখি। 
  • | ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৪:৩৭517927
  • আমার মামাবাড়িতে এঁর কিছু বই ছিল আর ছিল শরৎ স্মৃতি পাঠাগারে। তখন তো ছাপার অক্ষর পেলেই গিলে ফেলতাম, কাজেই এগুলোও পড়েছি। এবং ঐ কিছু 'প্রাচীন  পোষণ'এর জন্যই আগ্রহ হারিয়েছিলাম। মামাবাড়িতে 'শুভ পরিণয়' বইটা ৪ কপি ছিল মামাদের বিয়েতে উপহার পাওয়া। smiley
     
    এই লেখাটা ভাল লাগল, লেখিকার কিছুটা অন্তরঙ্গ্ পরিচয় বেশ লাগল। 
  • Kuntala | ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৪:৪৩517928
  •  কি যে মিষ্টি করে লিখেছেন, মন ভরে গেল।
  • সুকুমার ভট্টাচার্য্য | 2401:4900:7080:b5de:b996:bc1:22e1:acba | ২৭ মার্চ ২০২৩ ১৬:৪৭517933
  • অসাধারণ মানুষের দারুণ স্মৃতিচারণ। ঠাকুমা ও নাতির মানসিক বন্ধনই বোধহয় এটা সম্ভব করেছে। ব্যতিক্রমী মহিলাদের তৎকালীন সমাজে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হোত,আজকের যুগের চেয়ে অনেক বেশী। শৈলবালা ঘোষজায়া নিশ্চয় অনেক  লড়াই করে সাহিত্যের জগতে নিজের জায়গা করেছিলেন। প্রবাসীতে লেখা ছাপা হওয়া তখন সহজ ছিল না। আমাদের সৌভাগ্য তাঁর সুযোগ্য নাতিকে (এই প্রবন্ধের লেখক) আমাদের সমৃদ্ধ করতে দায়িত্ব নিতে তৈরী করে দিয়ে গিয়েছেন।
    প্রণাম জানাই এই অসামান্য মহিলাকে।
  • সুদেষ্ণা মৈত্র | 2405:201:8019:2982:126:d60:d8bd:2fbc | ২৭ মার্চ ২০২৩ ২১:৫৪517941
  • খুব ভালো লাগল 
  • প্রতিভা | 2401:4900:3be5:68fa:4e4e:78d6:2b46:995f | ২৭ মার্চ ২০২৩ ২১:৫৫517942
  • খুব  ভাল লেখা। সিদ্ধান্তটি সঠিক এবং স্বতসিদ্ধ 
  • Sara Man | ২৭ মার্চ ২০২৩ ২২:১৭517943
  • ভালো লাগল পড়ে।
  • শ্যামল চক্রবর্তী | 2409:4060:2d8f:88ea:6a75:233a:ddc1:61d4 | ২৭ মার্চ ২০২৩ ২২:৩৮517945
  • শ্যামল চক্রবর্তী 
    খুন আনন্ড হল পড়ে l উনার সম্পর্কে অনেক তথ্য ও ঘটনা জেনে রিদ্ধ হলাম। এবার উনার বইগুলো পড়ব। মেমরিতে ও ওই অঞ্চলে আমি বহু বছর চাকরি করেছি l শৈলবলে ঘোষজায়া ঠিক কোন অঞ্চলে থাকতেন , খুব জানতে ইচ্ছে করছে l শ্রী দিলীপ ঘোষ মহাশয় জানালে ভালো লাগবে l
  • দিলীপ ঘোষ | 115.96.68.46 | ২৮ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৮517951
  • শ্রী শ্যামল চক্রবর্তী জানতে চেয়েছেন শৈলবালা ঠিক কোন অঞ্চলে থাকতেন? 
     
    আমি যে সময়ের কথা লিখেছি তখন তিনি থাকতেন অবিভক্ত বর্ধমান জেলার মেমারিতে। পরে পুরুলিয়ার একটি আশ্রমে কিছুদিন থাকেন, আর শেষ বয়সে থাকতেন আসানসোলে এক ভাসুরপোর কাছে। 
  • sourit dey | 223.223.155.137 | ২৮ মার্চ ২০২৩ ১৯:২৪517967
  • লেখাটি খুব ভাল লাগল. কিন্তু সঙ্গের ছবিটি প্রখ্যাত গায়িকা শৈল দেবীর(১৯১৮-১৯৪৪). সাহিত্যিক শৈলবালা ঘোষজায়ার ছবি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত এই লেখায় আছে~
    https://www.anandabazar.com/rabibashoriyo/a-write-up-on-sailabala-ghoshjaya-s-novel-1.864923
  • Subhadeep Ghosh | ২৮ মার্চ ২০২৩ ২২:২১517976
  • খুব ভালো লাগলো পড়ে। অনেক ধন্যবাদ।
  • Sanhita Modak | ২৯ মার্চ ২০২৩ ১৩:০৪518002
  • খুব ভালো লাগলো
  • Irfanur Rahman Rafin | ২৩ এপ্রিল ২০২৩ ১৯:৫৮518941
  • হুমায়ুন আজাদের লেখা পড়ে উনার নাম জেনেছিলাম। লেখিকার প্রতি শ্রদ্ধা! তাঁর জন্ম অপরাধী উপন্যাসটা বাংলাদেশে কীভাবে পাব?
  • ফয়জুল লতিফ চৌধুরী | 45.120.115.238 | ২০ জুলাই ২০২৩ ০৯:১২521460
  • অতি চমতকার ও অতিপ্রয়োজনীয় একটি স্মৃতিচারণ। লেখককে অভিনন্দন। তাঁর রচনাশৈলীতে রস আছে। কিছু অজানা তথ্যও পওেয়া গেল।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন