এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  অর্থনীতি

  • হীরা ফেরি 

    হীরেন সিংহরায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | অর্থনীতি | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১২৫ বার পঠিত | রেটিং ৪.৩ (৩ জন)
  • পর্ব ১ | পব ২ | পর্ব ৩
    হীরা ফেরি
     
    প্রথম পর্ব 

    এক :    মাশুল মুক্তি

    মরিশাস একটি দ্বীপের নাম

    সাল ১৯৮৯ :স্থান সিটিব্যাঙ্ক ৩৩৬  স্ট্র্যানড লন্ডন

    আমার সুযোগ্য সহকারী সেমুর হলকে পাশে নিয়ে আলোচনায় বসেছি সিটিব্যাঙ্কের ধুরন্ধর উকিল স্টেফান স্কালস্কির সঙ্গে । পশ্চিম ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠানের বৈদেশিক বাণিজ্য নিয়ে আমার কারবার  সে সময় । রপ্তানি কারক ইউরোপীয় , ক্রেতা ভারতীয়  -  দিবে আর নিবে অথবা কিনিবে বেচিবে । এই তো ব্যাপার । ক্রেতার টাকা যেন সুরক্ষিত থাকে এবং সেটি যথা সময়ে বিক্রেতার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউনটে জমা হয়- তাহলেই খদ্দের তুষ্ট , জগৎ তুষ্ট। মোদ্দা কথা  ভারতীয় ক্রেতার  যথা সময়ে আমদানির মূল্য চোকানোর ঝুঁকি  যে ব্যাঙ্ক বহন করতে সক্ষম ব্যবসা তারই কপালে নাচছে ।  অনেক ব্যাঙ্ক সেটা করতে পারে  । তাহলে আমাদের, মানে সিটিব্যাঙ্কের বাড়তি  এলেম কোথায়?  কি দিয়ে প্রমাণ করতে পারি আমাদের দর দাম বেশি কিন্তু পরিষেবা পরিবেশনে সিটি ব্যাঙ্কের জুড়ি নেই  ? ইউ এস পি কথাটা তখনও চালু হয় নি । আমরা বলতাম অতিরিক্ত অবদান বা  অ্যাডেড ভ্যালু ।   স্টেফানের কেরামতি ছিল করের বিষয়ে ,  কর ফাঁকি দেওয়া নয়  ফাঁক ফোকর খোঁজার দরুন।   স্টেফান  স্কালস্কি ( জন্মে পোলিশ , সকল প্রকার বিদ্যে এবং বদমাইশিতে কাঠ ব্রিটিশ, তার বান্ধবী সুজানে জার্মান)  বললে কভেনট গার্ডেনে দুটো বিয়ার খাওয়াও  দিকি,  আমি তোমার এই সামান্য ভারতীয় ট্রেড ফাইনান্সের  ব্যবসার ভ্যালু বাড়িয়ে দেবো।একটা সম্পূর্ণ আইনি ট্যাক্সের খেলা আছে – অবশ্য সেটা তোমাদের ব্যাংকিং খাতাপত্রে কিভাবে দেখাবে তার ব্যাপারে আমি কোন মত দিতে পারি না ।  বুদ্ধিটা শুধু আমার কিন্তু সে কাজটা তোমাদের ।

    ইন্টারনেট আসার আগে সিধু জ্যাঠা সুলভ জ্ঞানের ভাণ্ডারীদের খুব খাতির ছিল।

    সেই বিকেলবেলা মেইডেন লেনের পোর্টারহাউস পাবে স্টেফানের কাছে একটি দ্বীপের কাহিনী শুনলাম।

    আফ্রিকার পূর্ব উপকূলের নিকটবর্তী একটি দ্বীপ আছে। সেখানে ভারতের সন্ধানে বৈঠা মেরে ক্লান্ত পর্তুগিজ নাবিক দু দণ্ড বিশ্রামের জন্য থামলেন কয়েক বার । জন মনিষ্যির বাস নেই , এক কাপ চা এগিয়ে দেবে না কেউ। ধুত্তোর বলে তাঁরা পাল তুলে কালিকটের পানে গেলেন । এবার ঝাণ্ডা ওড়ালেন ডাচেরা , আখের চাষ শুরু করলেন, আপন দেশের রাজার সম্মানে  দ্বীপের নাম দিলেন মরিশাস।  কিন্তু  মশলার গন্ধে ডাচের মন উড়ু উড়ু – নিউ আমস্টারডাম ( নিউ ইয়র্ক ) ফেলে সুমাত্রা গেছেন , এবার মরিশাস ফেলে জাভা ।  তারপরে এলেন ফরাসি এবং সবশেষে , যেমনটা আকছার দেখা যায়, ইংরেজ এসে তার দখল নিলে। ঠিক সেই সময়ে ইউরোপে চিনির চাহিদা উঠেছে তুঙ্গে। এই দ্বীপে আখের চাষ হতো তার জন্য প্রয়োজন বহু খেত মজুর। সেই কাজটা সুসম্পন্ন করার জন্যেই তো আমেরিকার দক্ষিণে দাসপ্রথা প্রচলিত হয়েছিলো । কিন্তু কোন অজ্ঞাত অজুহাতে  ইংরেজের বিবেক জেগে উঠলো নিতান্ত বেয়াড়া ভাবে – পার্লামেন্টে বক্তৃতা শোনা গেল, লন্ডনের কাগজে লেখা হল এই দাসপ্রথা অত্যন্ত বর্বর । অতএব ১৮৩৩ সাল নাগাদ তাকে বেআইনি ঘোষণা করে অনেক হাততালি কুড়োবার পরে ইংরেজ  আরেক ফাঁপরে পড়ল – ক্যারিবিয়ান থেকে মরিশাস অবধি এই আখের খেতে চাষ করবে কে ?  তখন তার  উর্বর মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত হল এক প্ল্যান – দাস নয়,  চুক্তিবদ্ধ মানুষের দল মরিশাস যাবেন।  বেতন যৎসামান্য,  উইক এন্ড বা বাৎসরিক ছুটি নেই । তাঁরা তিন বা পাঁচ বছর বাদে দেশে ফিরতে পারবেন।  ১৮৩৫ সালে থেকে কলকাতার সুরিনাম ঘাট  হতে বর্ষে বর্ষে দলে দলে বিহার উত্তর প্রদেশের চুক্তিবদ্ধ অজস্র মানুষ গেলেন মরিশাসে শ্রমিক রূপে দাসত্ব করতে। ফেরেন নি অনেকেই । সে দেশের টাকায় হিন্দিতে সংখ্যা লেখা থাকে,  ভোজপুরি প্রায় লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা। বিমান বন্দরের নাম শিওসাগর রামগুলাম । মাত্র বারো লক্ষ মানুষ সেখানে বাস করেন।

    ভারতের সঙ্গে সেই যে বন্ধন গড়ে উঠেছিল ১৮৩৫ সাল থেকে তার প্রতিফলন দেখা গেছে ভারত ও মরিশাসের মধ্যে স্বাক্ষরিত নানান চুক্তিতে ।

    স্টেফানের কাছে জানলাম  ১৯৮৩ সালে  স্বাক্ষরিত মরিশাস /ভারতের কর চুক্তির আখ্যান ।  এটি একেবারে অনন্য , ইউনিক।  সারা পৃথিবীতে আর কোন দেশের সঙ্গে তখন ভারতবর্ষের এহেন কোন কর ছাড়ের চুক্তি নেই! মরিশাসে নথিভুক্ত কোন কোম্পানি যদি ভারতে  ধন নিবেশ করে , তার ভারতে  অর্জিত  সকল মুনাফা কর মুক্ত।  সেই আয়ের ওপরে কর কেবল মাত্র মরিশাসে দেয়।  এই দ্বীপের রাজা বা রাষ্ট্রপতি ভারতীয় বাণিজ্যের   ব্যাপারে সাতিশয়  উদার এবং প্রজা প্রেমী । মরিশাসে প্রাতিষ্ঠানিক করের উচ্চ সীমানা ১৫% , ব্যাক্তিগত করের সীমানা ১০% , বেশি আয় করলে ১৫% । উত্তরাধিকারের কর শূন্য।

    ইয়ে দোস্তি অমর রহে ।

    সেদিন, ১৯৮৯ সালে কভেনট গার্ডেনের পোর্টারহাউস পাবে বসে সেমুর আর আমি যখন এই গল্প শুনি তখন ভাবতে পারিনি অতি স্বল্প মূল্যের ট্রেড ফাইনান্সে সামান্য কিছু কর বাঁচিয়ে ইউরোপীয় বিক্রেতার অভিনন্দন ও ব্যবসার  জন্য যে কলটির সন্ধান পেলাম সেটি আর তিন বছর বাদে একটি জলপ্রপাতে পরিণত হবে । ১৯৯১ সালের জুলাই মাসে তাঁর বাজেট বক্তৃতায় ডক্টর মনমোহন সিংহ ভারতীয় অর্থনীতিক ব্যবস্থার শেকলবেড়ি খুলে দিলেন । যেমন রাষ্ট্রপতিরা স্টেডিয়ামে গ্রিস থেকে আনা  আগুন জ্বালানো হলে পর অলিম্পিকে খেলাকে উন্মুক্ত বলে ঘোষণা করে থাকেন !

    পরবর্তী ষোল বছরে ভারতীয় ব্যবসায় নিবেশকারীদের জন্য এক রাজপথ , এক বিশাল অটোবান খুলে গেলো – ভারতীয় শেয়ার বাজারের নিবেশকবৃন্দ টাকার গাড়ি পাঠালেন চিরাচরিত নিউ ইয়র্ক লন্ডন প্যারিস নয়, আপাত অখ্যাত এক শহর পোর্ট লুই থেকে ( জনসংখ্যা সওয়া লক্ষ) ।  বিদেশি ব্যাঙ্ক সেখানে নেই তাই তাঁরা তাদের ডলার পাঠান স্থানীয় ব্যাঙ্কে , তা দিয়ে কেনা হয় রাশি রাশি ভারা ভারা ভারতীয় শেয়ার । দাম বাড়লে বেচেন , ট্রেডিং করেন , ট্যাক্স দেন মরিশাসে যার হার ব্রিটেন ফ্রান্স জারমানির তুলনায় নস্যি । ভারতীয় কর বিভাগ উদার দৃষ্টি উন্মীলন করে থাকেন । সরকারি ভাবে এর নাম দেওয়া হল বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক নিবেশন (ফরেন ইন্সটিটিউশনাল ইনভেসটরস)। কাগজে  কলমে এঁরা বিদেশি নিবেশক কিন্তু খুঁটিয়ে দেখে কে ? পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি না হলে মালিক নৌকর চাকরের ঠিকানা ড্রাইভিং লাইসেন্স বিজলি বা জলের বিল ব্যাঙ্কের কাছে জমা দিয়ে আপন বৈধতা প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নেই । টাকা বা রুপিয়া আসছে নানান দিশা থেকে , যাচ্ছে শুধু ভারতের পানে,  যেমন একদা পর্তুগিজ ডাচ ইংরেজ জাহাজ যেতো ।

    মরিশাসের পোয়া বারো – আখের ব্যবসা সুবিধের নয় , দেশটা বাঁচে আপনার আমার মতো টুরিস্টের বদান্যতায়।  যদিও আইনত  তারা আফ্রিকা মহাদেশের অংশ , মরিশাস সে মহাদেশের বাকি পঞ্চাশটা দেশকে তেমন পাত্তা দেয় না।  মরিশাসের গর্ব তাদের ভারতীয় চরিত্র ( এমন সব হিন্দু পাল পার্বণের ছুটি সে দেশে দেখেছি যাদের নাম আগে কখনো শুনি নি ), গ্রাঁ বেসিনের বিশাল হ্রদ , গঙ্গা তালাওতে  শিবের প্রকাণ্ড মূর্তি,  ছট পরবের দিনে চার লক্ষ মানুষ সেখানে সমবেত হন । মরিশাসের হৃদয়ে ধ্বনিত হয় বহু দূরে , আরা বালিয়া ছাপরাতে ফেলে আসা ধর্ম কর্ম রীতিনীতির স্মৃতি।
     


    গংগা তালাও 
    গ্রাঁ বেসিন 
     
     
    আর থেকে যায় ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি অসামান্য করের চুক্তি - মাশুল বিহীন আয়ের সনদ ।

    দুই

    নাম না জানা অর্থের ভাঁড়ার

    জুরিখ জেনিভা

    নয়ের দশকে আমার কর্ম জীবনের মোড় ঘুরে গিয়েছিল। লন্ডন আমস্টারডাম হামবুর্গ প্যারিস গোটেবর্গের খ্যাতনামা কোম্পানিদের কাছ থেকে বিদেয় নিয়ে উন্নয়নশীল বাজারের ব্যাঙ্ক,  কর্পোরেট এবং সরকারের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে অর্থ সংগ্রহের প্রচেষ্টায় পথে নামি। সেনেগালের বাদাম, কেনিয়ার চা বিক্রেতা , কলকাতার ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি , পোল্যান্ডের জাহাজ নির্মাতাকে আমাদের ব্যাঙ্ক সবে দু পয়সা ধার দিচ্ছে । আমাদের নিজেদের মুরোদ অত্যন্ত সীমিত । তবু খদ্দেরকে হাম হ্যাঁয় না বলে বাড়তি  ঋণ কিংবা বন্ডের টাকা যোগাড়ের ধান্দায় নানান পথ সভা করে বেড়াচ্ছি । আই এন জি ব্যাঙ্কের  দে লাঙ্গে বলেছিল ওটাকে শোক সভাও বলতে পারো! টাকা জুটবে কিনা, পেলে কত সুদে ,  কতদিনের জন্য সেটা কেউ জানে না ।  শেয়ার বাজার, বিদেশি মুদ্রা বিনিময়, সুদের হার ইত্যাদি জানা এবং জানানোর  জন্য রয়টার ব্লুমবেরগ ছিল, আছে  – কোন দামে ইন্দোনেশিয়ান কোম্পানি পাঁচ বছরের জন্য টাকা ধার করতে পারে সেটা জানতে সিধু  জ্যাঠা কেন গুগল বা ইয়াহুর  দ্বারস্থ হয়েও জ্ঞান সঞ্চয়ের আশা বিরল।

    আমার বাঁধা বুলি ছিল চাকরি ছাড়া আমার হারানোর আর কিছুই নেই।

    একদিন আমার অফিসে বসে বিশ্বের যাবতীয় সমস্যা , আর্সেনাল এবং মোহনবাগানের ধারাবাহিক ব্যর্থতা ও তার সঙ্গে একটি ভারতীয় টেলিকম কোম্পানির জন্য কিভাবে সাত কোটি ডলার বাজার থেকে তোলা যায় সেই চিন্তা করছি এমন সময়ে ববের আবির্ভাব হল।  বব তখন মুম্বাইতে বসেন , আমাদের ভারতীয় বাজারের প্রধান ক্রেডিট গুরু , তার অনুমোদন ছাড়া কাউকে এক পয়সা ধার দেওয়া যায় না।  আমার হাতে যে টেলিকম ডিলটি আছে তাতে এক কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার ব্যপারে সম্মতি তিনি  দিয়েছেন।  আমার সঙ্কট হল বাকি ছ কোটির জন্য কার দুয়োরে হত্যে দেব ?  লন্ডনে এসেছেন দু দিনের জন্যে।  দর্শন দিতে এলেন।  কফি  পান করবার সময় ববকে আমার হৃদয় বেদনার কথা  জানালাম – আমার ধনের মানুষ যে, কোথায় পাবো তারে ?

    -           আমি যেমন ভারতীয় দেনদারদের চিনি বা চেনার চেষ্টা তুমি নিশ্চয় তোমার বাজার চেনো। তোমার
    কাছ থেকে ভারতীয় ঋণে যোগদানের আমন্ত্রণের অপেক্ষায় তাইওয়ানের কোন প্রতিষ্ঠান বা আপার অস্ট্রিয়ার কোন বন্ধকি ব্যাঙ্ক  টাকার পোঁটলা নিয়ে হাঁ করে বসে আছে!

    -           বাজে কথা ছাড়ো । সময় কঠিন বব । ভবি ভুলছে না।  এই ভারতীয় টেলিকম সংস্থাটি আহামরি কিছু নয়, আগে কখনো বিদেশের মাঠে খেলে নি  যে নিবেশকরা তাদের  বটুয়ার বাঁধন আলগা করবে !
     
    • কোথায় কোথায় তুমি বা তোমার দল হানা দিয়েছে জানি না তবে যদি নিতান্ত ঠেকায় পড়ো , সুইস ব্যাঙ্কগুলোর কথা মনে রেখো , বিশেষ করে ইউলিউস বেয়ার ।
     
    • ঠাট্টা হচ্ছে  বব ? বাঙ্কহাউস ইউলিউস বেয়ার একেবারে মার্কা মারা প্রাইভেট ব্যাংক-  দুনিয়ার ধনী মানুষের বেহিসাবি টাকা জমা রাখে আর তা দিয়ে  নানান দুষ্কর্মের ইন্ধন সরবরাহ করে । তাদের গোপনতা সর্বজন বিদিত - আজ অবধি কোন কর্পোরেট সিনডিকেশন বা বন্ডের লিগ টেবিলে তাদের নাম দেখি নি । তারা কেন একটা মাঝারি সাইজের ভারতীয় টেলিকম কোম্পানির তিন  বছরের লোনে টাকা ঢালবে ?
     
    • আমার প্রিয় বালক , যতদূর জানি এই টেলিকম প্রতিষ্ঠানের মালিক, মনোজের বহু বেনামি টাকা ইউলিউস বেয়ারে জমা আছে । সেটা কোম্পানির নয়, মনোজের আপন ধন তবে বিভিন্ন কোম্পানির নামে , যার সঙ্গে মনোজের যোগসূত্র খুঁজে বের করতে শারলক হোমসকে আহ্বান করতে হবে । নিতান্ত প্রয়োজন হলে এই রকম কোন অজানা অচেনা ফাণ্ড অকস্মাৎ মনোজের দু নম্বরি  টাকা মনোজের কোম্পানিকেই ধার দেবে । মাঝখানে ইউলিউস বেয়ার পরের ধনে পোদ্দারি করে দু পয়সা কামিয়ে নেবে । বাজারে রটে যাবে ভারতীয় টেলিকম প্রতিষ্ঠানকে সুইস ব্যাঙ্ক ধার দিচ্ছে । সেটা এমন হাওয়া তুলে দেবে যে  অন্যান্য ব্যাঙ্ক উৎসাহী হয়ে বাকি ধারের যোগাড় করে দেবে।

    শেষ অবধি ইউলিউস বেয়ারের অর্থ সম্পদ অথবা মালিক মনোজের লুকোনো টাকা দিয়ে আমাদের আন্তর্জাতিক ঋণের তহবিল ভর্তি করতে হয় নি। আমাদের ছেলে মেয়েরা প্রভূত পরিশ্রমে অনেক অচেনা নিবেশকের নাম পরিচিত জনতার সরণিতে এনে সে কাজটি সম্পন্ন করে। ববের পরামর্শটি বাকি দিনগুলিতে মনে রেখেছি। ধনী ভারতীয়দের বিদেশে বে আইনি ভাবে গচ্ছিত ধনের উপযোগ নানাবিধ-  কখনো  তা দিয়ে কেনা হয় আপন কোম্পানির বন্ড , কখনও বা সেটির অংশ  নিবেশিত হয় ভারতে গঠিত কোন প্রতিষ্ঠানের বিদেশি শেয়ার নিবেশকের ছদ্মবেশে।  

    দেশ ছেড়েছি অনেক দিন । এই উন্নয়নশীল দেশগুলির জন্যে অর্থ সংগ্রহ করার কারণে আপন দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থার সঙ্গে নতুন করে  পরিচয় হল নয়ের দশকে । ব্যাংকিং ব্যবসায় ধোয়া তুলসী পাতা অথবা জর্ডান নদীর জলে আদ্যোপান্ত চোবানো কোন দলিল দস্তাবেজের অস্তিত্ব কেউ কোন দিন দেখে নি। কিন্তু  আধোয়া তুলসী পাতার চেহারাটা চিনতে সময় লেগেছিলো

    কফি এবং আমার সময়ের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে অফিস থেকে বেরুনোর সময়ে বব বললেন
     
    • তুমি ১৯৮৫ সালে সিটিব্যাঙ্ক লন্ডনে যোগ দিয়েছিলে, তাই না ? তখন তোমার কর্পোরেট জীবনের সঙ্গে ভারতবর্ষ কতটা জড়িয়ে ছিল আমি জানি না।  কিন্তু ১৯৮৫/৮৬ সাল নাগাদ একজন ভারতীয় উদ্যোক্তা লন্ডনে কিছু পথসভা করেন- জানান তিনি এক মহতী প্রতিষ্ঠান গড়তে যাচ্ছেন  ।  তাঁর  কোম্পানির নাম কেউ জানতো না , বিদেশি ব্যাঙ্কগুলি ধার দেওয়ার জন্যে হামলে পড়ে নি, পড়ার কথাও নয় । তিনি আবেদন জানান প্রবাসী ভারতীয়দের যাদের মধ্যে অনেকে সেই প্রতিষ্ঠানকে ঋণ অথবা বন্ডের মাধ্যমে ধার দেন।  
     
    • বব আমার মনে হয় আমি তেমন একটি পথসভায় গিয়েছি ,সিটির উলটো দিকে ওয়ালডরফ হোটেলে । তুমি ধীরুভাই আম্বানির কথা বলছ , রিলায়েন্স কোম্পানির জন্য টাকা তুলছিলেন।
     
    • ঠিক । সেই সঙ্গে এটাও মনে রেখো শুধু প্রবাসী ভারতীয় নয়, বিদেশে রক্ষিত ভারতীয়দের কালো টাকাকে সাদা করার একটি প্রকৃষ্ট পন্থার উদ্ভাবক ছিলেন প্রয়াত ধীরুভাই আম্বানি । এখন সেটা অনেক পরিমার্জিত স্তরে উঠে এসেছে।  

    আমাকে প্রায় বাকশুন্য দেখে বব প্রস্থান করলেন ।

    পুঃ  আমাকে পছন্দ করতেন বব । তাঁর অবসর ঘোষণার দিন জানিয়ে আমাকে আমন্ত্রণ করেন- বলেছিলেন দু দশক কাজ করেছি , আসতে বলেছি তোমাকে নিয়ে মাত্র বারোজনকে।

    ক্রমশঃ   
     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    পর্ব ১ | পব ২ | পর্ব ৩
  • আলোচনা | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ১১২৫ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Amit | 120.22.206.155 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:৩০516725
  • এইটা জব্বর একটা ইস্যু নিয়ে শুরু হয়েছে। আর টাইমিং একেবারে ইম্যাকুলেট। একেবারে সিংহের খাঁচায় ঢোকা যাকে বলে। দুর্দান্ত। এগিয়ে চলুক এটা। 
  • Asish kumar Sinharay | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:৪২516728
  • অন্য লেখাগুলোর স্থানের চরিত্রের নাম খটমট,এটাতে বুঝতে সুবিধে হচ্ছে। 
  • তপন | 2405:201:8006:58d3:a0df:abdc:795d:3d67 | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৫:৩৬516750
  • যতই পড়ি ততই আগ্রহ বাড়ে...ইনটারেস্টিং।
  • Kishore Ghosal | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১৮:১৮516755
  • বাঃ। ভারত এবার জগৎসভায়। দারুণ। ভীষণ কৌতূহল রইল - পরের পর্বের জন্যে। 
  • Ranjan Roy | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৫:৩৭516773
  • অমিতের প্রত্যেকটি শব্দের সঙ্গে সহমত।
    ক্যা ধমাকেদার শুরুয়াৎ!
    মরিশাস মেঁ কা বা? 
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০০:৩১516819
  • "মোদ্দা কথা  ভারতীয় ক্রেতার  যথা সময়ে আমদানির মূল্য চোকানোর ঝুঁকি  যে ব্যাঙ্ক বহন করতে সক্ষম ব্যবসা তারই কপালে নাচছে ।"
    ঝুঁকিকে ঘিরে এই ব্যবসা এর নাম তাই দেয়া উচিৎ বিজনেস অব রিস্ক,আমার মতে।  
    "তখন তার  উর্বর মস্তিষ্ক থেকে উদ্ভূত হল এক প্ল্যান – দাস নয়,  চুক্তিবদ্ধ মানুষের দল মরিশাস যাবেন।" 
    এই ইতিহাস জানা ছিল না। ইন্টারেস্টিং। 
    "পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি না হলে মালিক নৌকর চাকরের ঠিকানা ড্রাইভিং লাইসেন্স বিজলি বা জলের বিল ব্যাঙ্কের কাছে জমা দিয়ে আপন বৈধতা প্রমাণ করার কোন প্রয়োজন নেই ।" আমাদের দেশে যে প্রপ্রাইটরশিপকে যৌথ মালিকানার আন্ডারে নিয়ে আসা হয়েছে। 
    "সেই সঙ্গে এটাও মনে রেখো শুধু প্রবাসী ভারতীয় নয়, বিদেশে রক্ষিত ভারতীয়দের কালো টাকাকে সাদা করার একটি প্রকৃষ্ট পন্থার উদ্ভাবক ছিলেন প্রয়াত ধীরুভাই আম্বানি । এখন সেটা অনেক পরিমার্জিত স্তরে উঠে এসেছে।" দারুণ এন্ডিং। 
    এই নতুন সিরিজের সাথে লেগে থাকব। শুভ কামনা। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:৫৭516825
  • অশেষ ধন্যবাদ । ১৯৮৯-২০১৫ ঢাকার সংগে সম্পর্ক ছিল গভীর। ক্ষীণ হয়েছে ২০১৫ র পর । জানবার ইচ্ছা রইল। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। হাত মক্সো করতে মতামত দিন