এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  দোল

  • স্যাটেলাইট ট্রান্সফার

    মোহাম্মদ কাজী মামুন
    ইস্পেশাল | দোল | ০৭ মার্চ ২০২৩ | ১০৩৬ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)

  • চোখটা মেলেই সে দেখতে পেল শম্পা দাঁড়িয়ে আছে দরজার মুখে, একগাদা ফাইল হাতে। অন্যদিন হলে মাথাটা উঁচু করে কয়েক সেকেন্ডের একটা পলক ফেলে আবার ডুবে যেত সামনের হাঁ করে থাকা কম্পিউটার স্ক্রিনটাতে। কিন্তু আজ তার তরুণী সহকর্মীটির দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে রইল কিছুটা ক্ষণ। তারপর সামনের চেয়ারটি দেখিয়ে বসতে বলে জিজ্ঞাসা করলো, ‘বাসার সকলে ভাল তো?’ ঘটনাটা এত আকস্মিক ছিল যে, এত সাধারণ একটি প্রশ্নের উত্তর করতেও ব্যর্থ হল শম্পা। কিন্তু সেদিকে ভ্রূক্ষেপ না করেই যখন ‘আপনার বাসা কই? কে কে আছে বাসায়? কিভাবে সামলান?’ ইত্যাদি ঝড়ের মত আসতে লাগলো, শম্পা শক্ত করে আঁটকে রাখল নিজেকে চেয়ারটির হাতলে, আর অপেক্ষা করতে লাগলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণের – যখন ছাড়া পাবে চেম্বারটি থেকে, আর অন্যদের কাছে গিয়ে পাড়বে, ‘স্যারের যেন কি হইছে! স্যার ….’

    চেম্বারটির সাথেই একটা জানালা ছিল, সে জানালাটা ধরে দাঁড়িয়ে ছিল মোরসালিন। শম্পা চলে যাওয়ার পর ফাইলগুলো নিয়ে বসেছিল, এর মধ্যে তো একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, একটি বিশাল বিজনেস প্লান, কোম্পানির এই শাখা অফিসটার চেহারা একাই বদলে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু কিছুদূর যেয়ে মাথাটা গুলিয়ে গিয়েছিল! এত দিন ধরে মেহনত করেছে যার জন্য, যার পুরো রূপরেখাটা তার দেয়া, সেই কাঠামোটাই যেন খুব অচেনা লেগেছিল, আর মাথাটা ঘুরতে শুরু করেছিল। জানালাটার বাইরে তখন চলচ্চিত্রের রিলের মত ছুটে চলেছিল মানুষ, যানবাহন। এমনকি একটা নেড়ি কুকুরকেও রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ুতে দেখা গেল, কি এক গুরুত্বপূর্ণ মিশনে রয়েছে যেন সে, কিসের যেন এক তাড়া! এমনই এক তীব্র চলার স্রোত জানালার নীচের রাস্তাটিতে যে মনে হয়, জড় দোকানপাট ও বিপনিবিতানগুলোরও চাকা গজিয়েছে!

    হঠাৎ একটা অদ্ভুত আলোড়ন উঠতে দেখা গেল সেখানে! জানালার স্রোতটা প্রথমে খাবি খেতে লাগলো, তারপর একটা সময় পুরো থেমে গেল। ভূপাতিত রিকশাটা যখন উঠানো হল, দেখা গেল, মা ও মেয়ে দুজনেই অক্ষত রয়েছে। তবু তাদের ধরাধরি করে যতক্ষণে কয়েক গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা ক্লিনিকটাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, রাস্তাটায় এক অভেদ্য জট তৈরি হয়ে গেছে, যার কূল ও কিনারা দৃষ্টিগোচর হচ্ছিল না এর বাসিন্দাদের। মায়ের কিছু জায়গায় ছিলে গেলেও মেয়ের এক চিলতে জায়গাও পাওয়া গেল না যেখানে একটা স্টিচ সেঁটে দেয়া যায়। কিন্তু বিপদ বাড়ত, যদি না বিপরীত দিক থেকে দানবীয় গতিতে ধেয়ে আসা টেম্পুটা কয়েক ফুট আগেই থেমে পড়তে পারতো। মোরসালিন ঘাড়টা নামিয়ে ড্রাইভারটিকে দেখার চেষ্টা করে, একটা বারো-তেরো বছরের কিশোর; নিশ্চিত তার কোন লাইসেন্স নেই! বুক কেঁপে উঠে মোরসালিনের। মাথাটা গুলিয়ে যায় আবার!

    শহরটা দিন দিন আরো বিপদজনক হয়ে উঠছে, হাঁপাতে হাঁপাতে চেয়ারটিতে মাথা গলিয়ে দেয়ার পর আপন মনেই বিড়বিড় করতে থাকে মোরসালিন। নাহ্,, যেনতেন জায়গায় বদলি হলে চলবে না তার; কিছু স্যাটেলাইট শহর গড়ে উঠেছে রাজধানীর সীমান্তে; বাসার কাছেই অফিস, স্কুল, বাজার, হাসপাতাল। অত্যাধুনিক এই শহরগুলোতে কোন কিছুরই না কি অভাব নেই! এর একটিতে ট্রান্সফার জোটানো চাই-ই তার। বউ আর মেয়েটা তাহলে চোখের সামনেই থাকবে, আর একটু বেশী করে সময় দিতে পারবে ওদের। বদলী আদেশ তার হাতে না, তা ঠিক; কিন্তু সবসময় যে উপরের মর্জি মাফিক হয়, তাও তো না! একটা ভাল বদলির জন্য মানুষ কত কিছুই না করে! আর একটা ভাল বদলি সে ডিসার্ভও করে। অনেকদিন তো হল এখানে। হাঁপিয়ে উঠেছে সে এই জায়গাটার এঁটো ঘাঁটতে ঘাঁটতে! এমনকি হেডকোয়ার্টারের লোকেরও অজানা নেই যে, কোম্পানির সবচাইতে নিষ্প্রাণ বাজারগুলির একটি তার এই শাখাটা। কি না করেছে সে এই শাখাটিকে লাভজনক করতে! মোরসালিনের ঘনিষ্ঠজনেরা প্রায়ই বলাবলি করে, সে অফিসকেই তার দ্বিতীয় বউ বানিয়ে নিয়েছে। হ্যাঁ, এই ঊষর মরুভূমিতেই ফুল ফোটানোর চেষ্টা করে গেছে মোরসালিন, চোখের সামনের বড় ফাইলটাই তো তার স্বাক্ষর। এজন্যই কিনা, আজ সকালে হেড অফিসে ডেকে পাঠানোর পর যখন বলা হল, আগামী জানুয়ারিতেই তার বদলি হচ্ছে, ফাইলটার কান্না তার মনের কোণে গুমরে মরছিল, চাপা দিয়ে রাখছিল খুশীর হিন্দোল!

    অফিস থেকে আজ একটু তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়েছিল মোরসালিন। অনেক চেষ্টা করেছিল সে একটি বিধিমালার মধ্যে নিয়ে আসতে নিজেকে। যেন নিজেকেই প্রেসক্রিপশন লিখছিল সে - সময় বেশী নেই, গুছিয়ে নিতে হবে দ্রুত, হাতের কাজগুলি শেষ করা দরকার… কিছু বিষয় দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে, একটা মীমাংসা না করে গেলেই নয়। কিন্তু মনটা পড়েছিল অন্য কোথাও; সেই কোথাওটাকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও যখন পেল না, তখন বাসার ঘাটেই নোঙ্গর ফেলতে সে ছেড়ে দিয়েছিল নিজেকে রাস্তার বুকে। কিন্তু যত ঘনিয়ে আসছিল বাসা, শরীরটা শিথিল হয়ে আসছিল তার আর হাত পা-মাথা ছেড়ে দিচ্ছিল। তবে সেসবের তোয়াক্কা না করে গাড়ির গতিবেগ ক্রমেই বাড়িয়ে দিচ্ছিল মোরসালিন। রাস্তায় দেখা কুকুরটার মতই তারও যেন কিসের এক তাড়া! এভাবে ঝড়ের গতিতে বাসায় পৌঁছল সে, কিন্তু দরজার সামনের বিশাল স্যান্ডেল স্তূপটা ফের মাথাটা গুলিয়ে দিল তার, আর ঘোরাতে শুরু করলো চক্রাকারে। বাসাটা আজ আবার ওরসখানা হয়ে গেছে নিশ্চিত। বাবা আগে বছরে দু’বার করতেন এই মাহফিল, এখন মাসে একবার করে করেছেন। কি জানি, সামনের বছর হয়ত সময়ের ব্যাপ্তিটা সপ্তাহে নামিয়ে আনবেন।

    বাবা যে পুণ্যকর্ম করতে ছেলের কাছে হাত পাতেন, তা না। সরকারের ডাক বিভাগের উচ্চপদস্থ না হলেও মিড র্যাঙ্কের অফিসার ছিলেন, সেখান থেকে মাস গেলে একটা সম্মানজনক চেক পান। তবে পেনসন ছাড়াও বাড়তি অর্থ সংকুলানের বন্দোবস্ত আছে বাবার। গ্রামে যে জমিজিরাতগুলি পড়ে থাকে, আর তারই কাছের ও দূরের আত্মীয়স্বজন ভোগ করে, সেখান থেকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে যা আসে, এক এক করে যোগ করলে তাও ফেলে দেয়ার মত হয় না। আর বাবা সেগুলো ফেলেও দেন না, অকাতরে ব্যয় করেন এতিম-মিসকিনদের মাঝে। বাবা জানেন, শুধু ইবাদত করলেই হাশরের ময়দানে নিষ্কৃতি মিলবে না, সাদকাহ্-দান-খয়রাত প্রয়োজন পড়বে। সেজন্যই হয়ত রোযার ঈদে যাকাত-প্রত্যাশীদের ভিড় লেগে যায় তাদের বাড়িতে। আর কোরবানির বড় ঈদ তো নিয়ে আসে আরও দীর্ঘ সময় ধরে সাদকাহ্ আমলের বরাত। সে সময় এক সপ্তাহ আগেই বাড়ি চলে যান বাবা, কৃষকদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে সব থেকে সুন্দর ও স্বাস্থ্যবান গরুগুলি কিনে নেন, মাংসের সব থেকে বড় পাহাড়টা তার বাড়ির উঠোনেই গড়ে উঠে, আর সে মাংস বিলনো চলে প্রায় এক মাস ধরে, তাও ফুরোয় না পুরোপুরি।

    মৌসুমি সাহায্যপ্রার্থীদেরই দিয়েই অবশ্য শেষ হয়ে যায় না বাবার আখেরাতি আমল। দেখা গেল, গাঁয়ের রুস্তম শেখের চিররুগ্ন বউটা চুলা থেকে পাতিলটা নামাতে গিয়ে নিজেই পড়ে গিয়েছে জ্বলন্ত চুলায়। তো তাকে তড়িঘড়ি করে ঢাকায় নিয়ে আসলে একটা হাসপাতালে ভর্তি করা তো চাই, তারা গ্রামের মুখ্যসুখ্য মানুষ, তারা কি কিছু চেনে, না জানে! না ডাক্তারের সাথে একটা ভাল-মন্দ কথা বলতে পারে! দিনরাত ধরে হাসপাতালে ভর্তির সব যোগাড়যন্ত্র সেরে যখন বাসার পথ ধরেন, সেই সময় রুস্তমের হাতে বড় অংকের কয়েকখানা নোটও দিয়ে আসেন বাবা, নিতে না চাইলে নির্বুদ্ধিতার জন্য ধমক খেতে হয় রুস্তমকে। এছাড়া, গাঁয়ের কন্যাদায়গ্রস্ত পিতারা তাদের মেয়ের বিয়ের বিষয়ে কোন কথা এক পাও আগায় না বাবাকে ছাড়া। এরপর মেয়েকে বরের হাতে বুঝিয়ে দেয়ার ফাঁকে বাবা যখন সেই পিতার পাঞ্জাবির পকেটে কিছু গুঁজে দিতে যান, অনেক কচলাকচলি করেও বাবার মুঠোকে ফেরত দেয়া যায় না। তবে এসব নৈমিত্তিক ঘটনার সাথে ইদানীং একটা নতুন ইমানি দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে বাবার উপর। গাঁয়ের মুসলমানদের নামায পড়তে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়, বাবা কিছু জায়গা লিখে দিয়েছেন একটি নতুন মসজিদের জন্য, এবং কিছু প্রাথমিক কাজও সাড়া হয়ে গেছে। কিন্তু একা করলে তো হয়না, সবাইকে হাজিরনাজির করতে বাবা এখন ঘরে ঘরে যাচ্ছেন, চাঁদার খাতা নিয়ে দিনশেষে প্রবল হিসেব-নিকেশে ব্যস্ত থাকছেন!

    রাতে খাবার টেবিলে যখন কথাটা পাড়ল মোরসালিন, তখন বাবাও ছিল সেখানে। মাহফিল কিছুক্ষণ আগেই শেষ হয়েছে। একটা থমথমে অবস্থা বিরাজ করছিল, বাবাই ভাঙলেন, ‘স্যাটেলাইট শহরে বদলি হইতে চাইতেছো, ভাল কথা। তয় আমারে নিয়া টানাটানি কইরো না। আর যে কয়ডা দিন আছি দুনিয়ায়, গ্রামের বাড়িতে আল্লা বিল্লা কইরা কাটায় দিতে চাই। অনেকদিন তো থাকলাম তোমাগো লগে, এখন আল্লার রাস্তায় থাইকা চোখটা বুজতে পারলেই বাঁচি।“ তার ক্ষীণ কণ্ঠ থেকে যখন ভেঙে ভেঙে বেরুচ্ছিল কথাগুলি, বাবার জন্য বিশেষভাবে রান্না করা নিরামিষ বাটিটার উপর ফুড়ুৎ করে উড়ে আসছিল একটা পোকা। ছেলের বউ ব্যস্তসমস্ত হয়ে তাড়াতে গেলে, বাবাকে বাঁধা দিতে দেখা গেল, ‘আহ্, থাকতে দাও এরে, মা। আল্লার এই দুনিয়ায় সব প্রাণীরই হক আছে, সে যতই ক্ষুদ্র হোক! ওরে সরায় দিলে পরকালে জবাব দিতে হইব।"

    মোরসালিন কোন জবাব দেয় না, বাবা যে বেঁকে বসবে এ অনুমানটা আগেই করে রাখা ছিল তার। ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মা চলে যাওয়ার পর থেকে বাবা এরকম হয়ে গেছেন। পরকালই এখন তার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। সুযোগ পেলেই মানুষকে নসিহত করেন, হাশরের ময়দানের মিযানের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, সওয়াবের পাল্লা ভারী করার পরামর্শ দেন অনেকটা গায়ে পড়েই। যেন নিজে আমল করলেই হচ্ছে না, অন্যকে পরকালমুখী করাও একটা আমল। বাবার একটা চোখ সারাক্ষণ ঝুঁকে থাকে মসজিদের জানালায়, আর অন্য চোখটা উঁকি মারতে থাকে বেহেশতের বারান্দায়। আর শুধু বাক্যব্যয়ই না, অকাতরে ব্যয়িত হচ্ছে যে অর্থও! সে নিয়ে যদিও কোন মনস্তাপ নেই মোরসালিনের, তার রোজগার কখনো সে পর্যায়ে নামেনি যে বাবার কাছে হাত পাততে হবে। কিন্তু শুধু অর্থ না, অন্য কোন কিছুর জন্যও সে বাবার ধারেকাছে ঘেঁষে না অনেকদিন হল। মাঝে মাঝে তো বাবা বেঁচে নেই বলেও ভ্রম হয় তার। ওদিকে মোরসালিনের বউ রিমি অবশ্য বাবার কাছে হরহামেশাই যেত; বাবাকে সামনে পেলেই বিভিন্ন বিষয়ে শলাপরামর্শ করার ইচ্ছে জেগে উঠত তার মধ্যে। তবে কোন সাংসারিক কথা উঠলেই বাবা হয় থামিয়ে দিতেন, বা আস্তে করে জায়গাটা ছেড়ে চলে যেতেন। বাবা নিজের কাজ নিজেই করতে পছন্দ করতেন। এরপরও এই বিষয়, সেই বিষয় নিয়ে বাবার কাছে ধর্না দিত রিমি, কিন্তু একদিনের একটি ঘটনা তাও থামিয়ে দিল।

    সাধারণত অফিস যাওয়ার সময় মেয়েকে স্কুলে দিয়ে যায় মোরসালিন। সেদিন একটা জরুরি মিটিং ধরতে আগেভাগেই বেরিয়ে পড়ে সে। এদিকে সাতটা ছাড়িয়ে আটটা পেরিয়ে গেলেও বুয়ার দেখা যখন মিলছিল না, নিতান্ত অনিচ্ছাতেই রিমি বাবার কাছে যেয়ে দাঁড়িয়েছিল। বাবা প্রথমটা বুঝতেই পারেননি; পরে যখন বুঝলেন, কিছুক্ষণ চুপ মেরে থাকার পর হুংকার ছাড়লেন "তোমরা কি মনে কর, আমার কোন কাজ-কাম নাই, আমি আজুইরা বইসা থাকি? দুইশ জন সম্মানিত মেহমান আমার জন্য অপেক্ষা করতেসে পুলপারের মাহফিলে।" এরপর যখন গটগট করে বেরিয়ে গেলেন দৃশ্যপট থেকে, তখন তার মুখে বঞ্চনা, রাগ, না, অভিমানের ছায়া ফুটে উঠতে দেখেছিল, মনে পড়ে না; কিন্তু সেই কালো ছায়া আজও তাকে শিউরে দেয়। ঘটনাটার পর রিমি বাবার কাছে যাওয়া নিজেই শুধু কমিয়ে দেয়নি, মেয়ে ইলামনিকেও বারণ করে দিয়েছে। হলে কি হবে, দাদুকে নিয়ে ইলামনির আগ্রহের পারদ যেন আরো উঁচুতে চড়েছে, তার দাদু হয়ে উঠেছেন বইতে পড়া এক রহস্যমানব। এমনিতে সে দাদুকে মাহফিল, আর মানুষ দিয়েই ঢাকা দেখতে পায় সব সময়। একটা সময় যখন বৈঠকখানার ঘরটা শূন্য হতে শুরু করে, আর দাদু নিজের ঘরটিতে ঢুকে পড়ে দরজা ভেজিয়ে দেয়, তখন সে মাঝে মাঝে দুই দরজার মাঝে ইঞ্চিখানেকের ফাঁকটাতে চোখটা মেলে দেয় আর আবিষ্কার করে, কী এক হিসেব-নিকেশ নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত তার দাদু! কিন্তু দমে যায় না ইলামনি, রহস্যমানবের উপর নজরদারী চলতেই থাকে তার।

    রাতে বিছানায় শুয়ে হাতে ধরা স্মার্ট ফোনের পর্দায় তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিল মোরসালিন! নবনির্মিত স্যাটেলাইট শহরটা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল সে, এক পর্যায়ে নিজের অজান্তেই বের হয়ে আসে মুখ থেকে, "একটা বেহেশত বানায় রাখছে!" আসলেই বেহেশত থেকে কম কিছু না। কি নেই এখানে! একজন স্থাপত্যবিদ তো এই শহরের নাম দিয়েছেন গিগাসিটি, আর এখানে নাকি কল্পনার থেকেও বেশী সুযোগ-সুবিধা মিলবে! এখানে থাকবে গিগাবিট প্যাসিভ অপটিকাল নেটওয়ার্ক, এই স্মার্ট সিটিতে জড়ো করা হবে বিপুল ব্যান্ডউইথ যার আওতাভুক্ত থাকবে হাই স্পিড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট। এলাকাটার সর্বত্র পপ অ্যাক্সেস থাকবে। ঢাকার ঠিক লাগোয়া এই উপশহরের সাথে মূল ঢাকার সংযোগ সেতু হিসেবে নির্মিত হয়েছে আট লেনের এক্সপ্রেসওয়ে যেখানে নেই স্টপওভার পয়েন্ট, আর সিগনালিং সাইন এর ঝুটঝামেলা। সুন্দর প্রশস্ত সব রাস্তা, দুইধারে গাছ, বাচ্চাদের স্কুল, প্লেগ্রাউন্ড, আধুনিক রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, প্রতিটা দালানের সামনে উন্মুক্ত সরোবর, খোলা উদ্যান, বিনোদন পার্ক, শহরটার বুক চিরে বইছে লেক তিরতির করে -সব কিছু একটা পাঁচিলের মধ্যে, এতটা উঁচু যে বাহিরের পৃথিবীর নাক গলাবার কোন সুযোগ নেই। এখানে চাহিবামাত্র সব হাজির হয়ে যায়, শুধু ইচ্ছেটুকু প্রকাশ করতে হয়; পুরো শহরের সব কিছু বিদ্যুয়িত, যন্ত্রচালিত, সিসিটিভি নিয়ন্ত্রিত। আর্টিফিসিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর ভর করে এমন ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে যে কেবল সুখ আর সুখ! কোন দুঃখ, খুনোখুনি, মারামারির সুযোগ নেই! মোরসালিন কেমন একটা অস্থিরতা অনুভব করে, নাহ্, এই নতুন গড়ে উঠা শহরে সে নতুনভাবে শুরু করবে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে সে এখনকার অফিসটাতে, এরকম একটা বদলি তার প্রাপ্য। আর মাত্র তিনটে মাস, তারপরই…ভবিষ্যৎ সুখ কল্পনায় বিভোর হয়ে পড়ে সে, সারা শরীরে এক অদ্ভুত স্রোত বয়ে যেতে থাকে, ঝড়ের বেগে ঝাপটাতে থাকে শরীরের রোমগুলো!

    হঠাৎ ফোনটা শব্দ করে উঠে মোরসালিনকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনে। আর একটি বার্তা দেখে তার উজ্জ্বল মুখটা সঙ্গে সঙ্গে কালো হয়ে যায়। একটা মিটিংয় কল করা হয়েছে হেডকোয়ার্টার থেকে, একদিনের ব্যবধানে আরেকটি কল, তবে ভিন্ন বিষয় নিয়ে। গত মাসে যারা টার্গেট পূরণ করতে পারেনি, তাদের ডাকা হয়েছে সেখানে। মিটিংয়ে সেও একজন আমন্ত্রিত অতিথি। অন্য সময় হলে চিন্তার কিছু ছিল না, পেছনে থাকার অনেকগুলো বলার মত কারণ তার রেডিই থাকে। কিন্তু আর তিন মাস পরেই যখন তার একটা ট্রান্সফার, আর স্যাটেলাইট শহরের মত একটা বেহেশত যখন তাকে দুবাহু বাড়িয়ে ডাকছে, তখন কী করে সামলাবে এই পুলসিরাত, ভাবতেই গলা শুকিয়ে যায়! যদিও তাকে বদলীর সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে, কিন্তু কোথায় হবে, তা বলা হয়নি। সে জানে, একটা ভাল বদলীর জন্য অনেকেই লবিইস্ট নিয়োগ করে, সেখানে অনেক হাতের নীচের কারবার হয়ে থাকে। মোরসালিন ভাবল, তার অত কিছু করতে হবে না, উপরে কয়েকজন স্যার আছে, তাদের কাছে একটা জোরদার ফরিয়াদ করতে হবে শুধু! কিন্তু এই হাই প্রোফাইলের লোকগুলিকে এক সাথে জড়ো করাও তো কঠিন কাজ। পরে সিদ্ধান্ত নিলো, খুব শীঘ্রই তাদের সবাইকে নিয়ে একটি ট্রিটের ব্যবস্থা করবে টি ভ্যালিতে, শহরের সব থেকে নামী রেস্টুরেন্ট। সে কিছু উপহারও চিন্তা করে রাখল তাদের জন্য। সঞ্চয়পত্রটা ভাঙতে হবে মনে হচ্ছে, কিন্তু কিচ্ছু করার নেই, স্যাটেলাইট সিটির মত একটি বেহেশত পেতে হলে মানুষ তো আরও কিছু করবে! একটি জমি বিক্রি করা গেলে অবশ্য সঞ্চয়পত্রটি ভাঙতে হয় না, কিন্তু এ কথাটা পাড়ার পর বাবার মুখের অবস্থাটা কল্পনা করে শিউরে উঠলো মোরসালিন, আর সঙ্গে সঙ্গে আইডিয়াটা ত্যাগ করল।

    বাবার প্রতি মনটা ভয়ানক বিষিয়ে ছিল, হয়ত এই কারণেই বাবার ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বাবাকে মনে পড়ে গেল তার, আর একটু ঢুঁ মারার ইচ্ছে জেগে উঠলো। প্রতিদিন শুয়ে পড়ার আগে পুরো বাসাটা একবার পায়চারি করে আসা প্রায় প্রতিদিনকার রুটিন মোরসালিনের। বাবার ঘরে ঢুকতেই একটু চমকে উঠল সে। বাতিটা যথারীতি নিভানো ছিল, কিন্তু খালি বিছানাটা আবিষ্কার করতে অসুবিধে হল না তার। বাতিটা জ্বালাতে গিয়েও কি মনে করে পিছিয়ে এলো মোরসালিন। বাবা নিশ্চয়ই জিকির আসগরে মেতে রয়েছে, বাড়ি ছেড়ে পড়ে রয়েছে আশেপাশের কোন মাহফিলে! যিনি নিজের ভাবনা নিজেই ভাবতে পারদর্শী, তাকে নিয়ে আর অন্যের ভাবনার কি আবশ্যক! নিজের ঘরে ফিরে বালিশটাতে মাথা দিয়ে ফের স্মার্ট ফোনে চোখটা পেতে দেয় সে। পুরোটা দেখে শেষ করতে পারেনি এখনো।

    স্যাটেলাইট সিটির অফিস পাড়াটা ঘুরতে ঘুরতে তার সম্ভাব্য বদলীস্থল, মানে, তাদের শাখা অফিসটাতে যখন চলে এসেছিল, ইলামনির চিৎকার থামিয়ে দিল। শব্দটার দিক অনুসরণ করে দৌড়ুতে শুরু করলো সে, আর আস্তে আস্তে ইলামনির ছায়ামূর্তিটা স্পষ্ট হতে লাগলো। উৎসস্থলে যেয়ে ইলামনির কাছেই আর একটা ছায়ামূর্তি দৃশ্যমান হল, তবে সে ইলামনির মত দাঁড়িয়ে ছিল না, টাইলসের মেঝেতে অদ্ভুত ভঙ্গিতে শুয়ে ছিল। বাবাকে দেখতে পেয়েই ইলামনি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরেছিল; কিন্তু মোরসালিনের মধ্যে কোন ব্যগ্রতা দেখা গেল না। সে হতভম্বের মত দাঁড়িয়েই রইল, সামনের দৃশ্যটি তার সারা শরীর অবশ করে দিয়েছে! এতক্ষণে চলে এসেছিল রিমিও। ছুটে গিয়ে সে বাথরুমের দরজার সামনে বসে পড়ল। রক্তশূন্য মুখটায় হাত রাখার পর তার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল; পরে বাবার নাকের কাছে নিজের হাতটা কিছুক্ষণ ধরে রাখল সে – নাহ্ , নিঃশ্বাস চলছে। কিন্তু তিনি অচেতন, হয়ত হার্ট অ্যাটাক …সময় নষ্ট না করে দ্রুত গাড়িতে উঠানো হল বাবাকে।

    প্রায় দুদিন পর অফিসে এসেছে মোরসালিন। এ দুদিন মানুষে আর যমে টানাটানি গেছে। কোন অফিস করতে পারেনি। তবে বাবা এখনো বিপদমুক্ত নয়। আরো কয়েকবার মাইল্ড অ্যাটাক হয়ে গেছে। ডাক্তার নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। রিং পরানো বা সার্জারি বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিল মোরসালিন; কিন্তু ডাক্তারের ধমক খেয়ে থেমে গেছে। মাঝে মাঝে অবশ্য বাবার জ্ঞান ফিরে আসে, আর তখন মোরসালিনের ডাক পড়ে। অন্য আর কাউকে এলাউ করছেন না ডাক্তার এ মুহূর্তে। আজ অফিসে আসার সময় বাবার মাথায় যখন হাতটা রেখে বুলিয়ে দিচ্ছিল, তখন বাবা হঠাৎ শব্দ করে ককিয়ে উঠেছিলেন। যখন মোরসালিনের হাতটা ধরে ‘বাবারে, আমারে এই নরক থেইকা নিয়া যাও। আর আযাব দিও না আমারে! বাসায় যামু আমি। বাসায়।‘ তারপর শক্তি ফুরিয়ে গেল হাতটা ছেড়ে দিয়ে পাশ ফিরেছিলেন তিনি। ততক্ষণে রোগীর গায়ে চাপানো হাসপাতালের সাদা চাদরটা ভিজে গিয়েছিল, তবে পিতা, না পুত্র - কার চোখের অবদান বেশী ছিল সেখানে, তা নিরূপণ করা উপস্থিত ভিজিটরদের জন্য দুঃসাধ্য ছিল। অবশ্য তারা অন্য রোগীর ভিজিটর ছিল। রিমি ও ইলামনির কোন প্রবেশাধিকার ছিল না সেখানে। মোরসালিন আজ অবশ্য ওদের বসিয়ে দিয়ে এসেছে বাবার পাশে। অনেক কাকুতিমিনতি করতে হয়েছে তাকে ডাক্তারের কাছ ওদের জন্য দুটো পাস যোগাড় করতে। দুটো দিন ঝড়ের মধ্য দিয়ে পার করার পর যখন সে আইসিইউ থেকে বেরিয়ে এসেছিল, কেমন যেন ফুরফুরে লাগছিল তার! কিন্তু অল্পক্ষণই স্থায়ী হয়েছিল অনুভূতিটা, কারণ বেরুনোর সময় বাবার বিড়বিড় করা কথাগুলি "আল্লা, আর কয়ডা দিন দাও আল্লা, কাজগুলি শেষ, আল্লা…" অচিরেই তার মস্তিষ্ককে দখল করে ফেললো, আর কুঠারের ন্যয় আঘাত করতে লাগলো পুরো রাস্তা জুড়ে!

    আজ অফিসের কাছাকাছি আসতেই ধপ্ করে ইলেকট্রিসিটি চলে গিয়েছিল। এতে বরং কিছুটা খুশীই হল যেন মোরসালিন। যে করিডোরটা প্রতিদিন অভ্যর্থনা জানায় তাকে, সে আজ দুবাহু বাড়িয়ে আকর্ষণ করল তাকে, অন্ধকারে কি জীবন্ত দেখাচ্ছে সব কিছু! খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছিল সে পুরো গলিপথটা। দেয়ালগুলো দেখতে সমস্যা হচ্ছিল না, ফাঁকফোকর পেলেই সূর্যের যে আলোটুকু নির্ধিধায় প্রবেশ করতো এই পুরনো দালানটিতে, সে যে আজ প্রাণের বেগে দিশেহারা! তবে বেশ ধুলো জমে গেছে পথটাতে, জায়গায় জায়গায় তার পাহাড় গজিয়েছে। কতদিন দেখেনি, তবু তার মনে হল, যুগ যুগান্তর ধরে এদের সাথে তার পরিচয়! একই রকম মনে হল অফিসের মানুষগুলিকে। তার অফিসে এতগুলো মানুষ কাজ করে, আর কি অক্লান্ত শ্রমই না দেয়! একটু অবাক হয় সে, প্রতিদিনই তো দেখে, কিন্তু এভাবে তো ভেবে দেখেনি! এতদিন ভাল করে তাকানোর সময় পায়নি, আজ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করলো সবাইকে। সবার সাথে যেচে কথা বললো সে, এমনকি অফিসের পিয়ন দারোয়ানরাও বাদ পড়লো না। অফিসটার মধ্যে সাজিয়ে রাখা গাছগুলিও বঞ্চিত হল। কিছু গাছ চোখে পড়ল মোরসালিনের। এত সুন্দর ডালপালা মেলেছে তারা আর থোকা থোকা ফুলে ভরে উঠেছে যে মনে হচ্ছে স্বর্গের পারিজাত নেমে এসেছে ধরায়!

    এরপর এক সময় চেম্বারে ঢুকে চেয়ারটিতে বসতে যেয়েও উঠে পড়লো মোরসালিন। আগে খেয়াল করেনি, চেয়ারের পোশাকটা ছিঁড়ে গেছে কয়েক জায়গায়। কিন্তু বসতে খুব একটা অসুবিধে হয়নি তার এতদিন। হাতের আঙুল দিয়ে কিছুক্ষণ চেয়ারটির বাঁধন আর শরীরটা ছুঁয়ে দেখল। এরই মাঝে চোখ চলে গেল কাচ-ঘরের ঠিক বাইরে অবস্থান করা কোণার টেবিলটিতে। এক মনে কাজ করে যাচ্ছে তার এক সহকর্মী। এক মনে চেয়ে থাকলো তার দিকে, একটা কাজ থেকে আরেক কাজে যাচ্ছে, খুব সিরিয়াস চিন্তার ছাপ সেই চোখ-মুখ-কপালে। কিছু একটা চাপ যাচ্ছে নিশ্চিত! ডেকে জিজ্ঞাসা করতে হবে, ভাবল মোরসালিন। হঠাৎ একটা গন্ধ এসে আলোড়ন সৃষ্টি করলো তার নাসারন্ধ্রে, টেবিলে ইতোমধ্যে হাজির হয়েছে ধোঁয়া উড়তে থাকা একটি চা-ভরতি কাপ। কি সুন্দর হয়েছে চায়ের রঙটা! আর কাপটাও কি সুশ্রী! খেয়ে মনে হল, পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর চা। যে ছেলেটা চা বানায় তাকে ডাকতে হবে তো!

    একটা সময় মোরসালিন আবার কাজে ডুবে গেল। অনেক কাজ জমে ছিল। সে খুব দ্রুত সারছিল কাজগুলি, দেখেশুনে গুছিয়ে নিচ্ছিল সব কিছু, কোন কাজ ফেলে রাখা যাবে না, এই কাজগুলির উপরই নির্ভর করছে সবকিছু। হঠাৎ একটা কাশির শব্দ শুনে চোখ তুলতেই দেখতে পেল শম্পাকে; মনে হয়, অনেকক্ষণ এসে দাঁড়িয়ে ছিল, আর এরকমই তো হয় সব সময়। মোরসালিনকে ধ্যানগ্রস্তের মত তাকিয়ে থাকতে দেখে এক পর্যায়ে অনুমতি না নিয়েই ফাইলগুলো নামিয়ে রাখল শম্পা। এরপর মোরসালিনের সপ্রশ্ন দৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই সে জিজ্ঞাসা করলো, ‘‘স্যার, সবাই বলাবলি করছে, আপনার নাকি ট্রান্সফার হবে সামনেই? ভাল জায়গায় চলে যাবেন আমাদের ছেড়ে?’’ মোরসালিনের মাথাটা স্যাটেলাইটের মত ঘুরছিল, অনেক দূরের এক কক্ষপথে, একটি অর্ধবৃত্তাকার পথে ছিল তার অবস্থান। অনেকটা যন্ত্রের মত উত্তর এলো সেখান থেকে, ‘‘ট্রান্সফার তো উপরের হুকুমে হয়, আমাদের হাত নাই। তবে সুযোগ পেলে ফরিয়াদ জানাবো, যেন আপনাদের সাথে যেন আর একটা সিজন থাকার সুযোগ পাই।’’


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ইস্পেশাল | ০৭ মার্চ ২০২৩ | ১০৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ০৭ মার্চ ২০২৩ ১৮:৩৩517093
  • রুদ্ধ শ্বাসে পডে নেওয়া লেখা। সকালটা সুন্দর হয়ে গেল
  • মিতা ঘোষ | 203.171.246.140 | ০৭ মার্চ ২০২৩ ২১:৫০517101
  • শেষ হয়ে হইল না শেষ। অতৃপ্তি রয়ে গেল। যা কিনা ছোটগল্পের প্রধান প্রসাধনী।
  • ইয়াসমিন পারভীন | 2409:40e0:52:f36e:8000:: | ০৭ মার্চ ২০২৩ ২৩:৪৪517103
  • খুব সুন্দর লিখেছ ভাইয়া
  • প্রতিভা | 115.96.110.94 | ০৮ মার্চ ২০২৩ ১০:৫০517109
  • গল্পটা শুরুর দিকে দুর্দান্ত। শেষে যেন আরও কিছু প্রত্যাশা থেকে গেল। 
     
    টাইপো রয়েছে। আইসিইউ আরও কী কী যেন চোখে পড়ল।
  • এস এস অরুন্ধতী | ০৮ মার্চ ২০২৩ ১৬:০২517130
  • মামুনের লেখায় মাঝে মাঝে কমেন্টের ভাষা খুঁজতে হয়। দারুণ  মর্মভেদী লেখা। 
  • | ০৯ মার্চ ২০২৩ ২০:১৮517186
  • আচ্ছা এ গল্পটা হরিদাস পালে পড়েছিলাম না? নাকি আমি গুলাচ্ছি? কিন্তু আগে পড়েছি নির্ঘাৎ। 
     
    ভাল গল্প, টানটান। 
  • যদুবাবু | ০৯ মার্চ ২০২৩ ২১:২৩517194
  • আমার লেখা ঠিক হচ্ছে কি না জানি না, কিন্তু এটা সম্ভবতঃ ভুল করে (অর্থাৎ,গুরুর ক্লান্ত রোবোটদের হাত ফস্কে) "পাবলিশড = হ্যাঁ" হয়ে গেছিলো অনবধানে, তবে হরিদাস পাল না, এমনিই। আই ব্লেম ইট অন বইমেলা-ফ্যাটিগ। 

    এতে লেখকের কোনো দোষ বা দায় নেই। আপনি সেটা হয়তো বলতেও চাননি। কিন্তু কাউকে একটা বকুনি দিতে ইচ্ছে করলে বা দু-নম্বর কেটে নিতে ইচ্ছে হলে সেটা আমাকেই দিতে পারেন স্বচ্ছন্দে। :) 

    (মামুন, আপনার লেখাটা যে ভালো হয়েছে সে আগেও বলেছি। আবার-ও বলে গেলাম। লেখায় থাকুন, উপগ্রহের প্রদক্ষিণ চলুক।)  
  • | ০৯ মার্চ ২০২৩ ২১:২৯517196
  •  আরে না না খামোখা বকব কেন? আগে পড়েছি কিন্তু মনে পিড়ছে না - এটায় মারাত্মক মন খুসখুস করে তো। সেইজন্যই জিগ্যেস করলাম।
  • | ০৯ মার্চ ২০২৩ ২১:২৯517197
  • *পড়ছে না
  • যদুবাবু | ০৯ মার্চ ২০২৩ ২১:৪২517199
  • হ্যাঁ তাহলে সেই সময়েই পড়েছেন নিশ্চয়ই। :) 
  • অমিত চক্রবর্তী | 2600:8803:2b1c:ac00:a1fd:c4a4:4cc9:e614 | ১০ মার্চ ২০২৩ ০০:২০517204
  • পড়লাম আগ্রহ নিয়ে। খুব গুছনো লেখা। অনেক অনেক শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন রইলো ভাই । সবচেয়ে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে এই লেখাটায় প্যারালাল স্টোরির গাঁথনি, যেন একটা dual lattice -- 
    একটায় সোডিয়াম অ্যাটম আর অন্যটায় ক্লোরিণ অ্যাটম বসে বসে চোখের লবণ তৈরী করছে, 
    বুকের দীর্ঘশ্বাস। 
     
    অমিত চক্রবর্তী
  • Md Rakibul Islam | 103.140.235.91 | ১১ মার্চ ২০২৩ ১০:৫১517271
  • Well Written!!! Best wishes!!! 
  • তুষার কান্তি মাহাতো | 2401:4900:3820:2b64:c087:75fd:519c:f875 | ১১ মার্চ ২০২৩ ১৫:১৭517283
  • পড়লাম। সত্যি দারুন লাগলো। বেশ একটা ব্যতিক্রমী ঘরানার গল্প।
    বুনোনশৈলী অসাধারণ। বিষয় বৈচিত্রে অনন্য। তোমার এই মুহূর্তের সেরা গল্প।
  • Debiprasad Batabyal | 2409:4088:ae87:858d::abc8:6309 | ১২ মার্চ ২০২৩ ২০:২৯517327
  • লেখার শৈলীটা বড় ভালো। কয়েকটা ঘটমান সাংসজৈবৃত্তিক আকছার ঘটনাকে কথকতার চুড়ান্ত বর্ণনে  অনুভূতির অন্তিম পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে মতামত দিন